পোস্টগুলি

নভেম্বর, ২০২২ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

শিয়া অর্থ অনুসারী শেষ পর্ব অবশ্যই উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে যে কোরআন শরিফের আয়াত অনুযায়ী 'নবুওয়াত' বিষয়টিও নবীদের বংশে উত্তরাধিকার হিসেবে ছিল। কোরআন শরিফে বলা হয়েছে : 'ও অবশ্যই আমরা নুহ ও ইব্রাহীমকে পাঠিয়েছি এবং নবুওয়াত ও কিতাবকে তাদের বংশে স্থিত করেছি' (সূরা তুর, আয়াত নং-২৬)। উদ্দেশ্য হচ্ছে যে, যারা নবুয়াত প্রাপ্তির প্রয়োজনীয় যোগ্যতার অধিকারী ছিল (অর্থাত্ত যারা আল্লাহ তা'য়ালার পক্ষ থেকে মনোনীত হওয়ার জন্য উপযুক্ত যোগ্যতার অধিকারী ছিল) তারা হযরত নুহ এবং ইব্রাহীম (আ.)-এর বংশ থেকে নবুওয়াতের দায়িত্ব লাভ করেছিল। উপরোক্ত হাদীস এবং ইমামত বিষয়ের হাদীস (যা পরবর্তিতে বলা হবে) ছাড়াও অন্যান্য দলিল আছে যেগুলি পর্যালোচনা করলে, শিয়া নামের এক গোষ্ঠী বা দল কে হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর সময়ে সৃষ্টি হওয়াকে একটি স্বাভাবিক বা জরুরী বিষয় বলে মনে হবে। যেমন, মক্কায় যখন হযরত মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহ তা'য়ালার পক্ষ থেকে তার নিজ আত্মীয় স্বজনদের দাওয়াত করেন এবং সরাসরি ইসলাম প্রচার করার দায়িত্বে নিযুক্ত হন, হযরত মুহাম্মাদ (সা.) তাদেরকে নিজ গৃহে দাওয়াত করেন এবং প্রয়োজনীয় খাবার প্রস্তুত করেন। খাওয়া শেষে হযরত মুহাম্মাদ (সা.) তাঁর রিসালাত সম্পর্কে বলেন এবং উপস্থিত মেহমানদেরকে ইসলাম ধর্মের প্রতি দাওয়াত দিয়ে এরূপ বলেছিলেন: তোমাদের মধ্যে যে ইসলাম ধর্মকে মেনে নিয়ে আমাকে সাহায্য করবে, আমার “ওয়াছি” ও 'প্রতিনিধি' হবে। সবাই চুপ করেছিল। শুধুমাত্র যে ব্যক্তি হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর ইসলাম দাওয়াতে জবাব দিয়েছিলেন, তিনি হলেন আলী (আ.) এবং তখন তিনি তের বছরের কিশোর ছিলেন। হযরত মুহাম্মাদ (সা.) আলী (আ.) -কে বসতে বললেন এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয় বার পুনরায় ইসলামের প্রতি দাওয়াত করলেন। প্রত্যেক বারই, শুধুমাত্র আলী (আ.) তাঁর আহবানে সাড়া দিয়ে ছিলেন। অতঃপর, হযরত মুহাম্মাদ (সা.) আলী (আ.)-এর প্রস্তুতি এবং আল্লাহ তা'য়ালার ইচ্ছার প্রতি তার আত্মসমর্পণকে মেনে নিয়ে, আল্লাহ তা'য়ালার নির্দেশে আলী (আ.)-কে তার স্থলাভিষিক্ত হিসেবে ঘোষণা করেন (এই ঘটনাটি, শিয়া ও সুন্নি মাযহাবের বিভিন্ন সূত্রে উল্লেখিত হয়েছে। সুন্নি সূত্রের মধ্যে বলা যেতে পারে যেমন; তাবারী, তারিখুল উমাম ওয়াল মুলুক (ম ৩১০ হিজরি), খণ্ড-৩, পৃ.-৬২,৬৩। ইবনে আছির, আলকামিলু ফিততারিখ, (ম ৬৩০ হিজরি), খণ্ড-২, পৃ.-৪০, ৪১। মুসনাদে ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল, মুসনাদে আল আশারাহ বিল জান্নাত, হাদীস নম্বর ৮৪১)। একটি গুরুত্বপুর্ণ বক্তব্যে হযরত মুহাম্মাদ (সা.) আলী (আ.)-কে সর্বদা হক্বের সাথে, অর্থাত্ত সমস্ত ভুল-ভ্রান্তি ও অযথা কাজ থেকে মুক্ত বলেছেন। প্রকৃতপক্ষে প্রাসাঙ্গিক ভাবে মুসলমান এবং সমস্ত সত্য-সন্ধানীদের কাছে চেয়েছেন যে তাকে আলী (আ.) অনুসরণ করে। উম্মে সালামা বলেন যে, হযরত মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন: "আলী (আ.) সর্বদা হক্বের সাথে এবং কোরআন ও হক্ব সর্বদা আলী (আ.)-এর সাথে আর কিয়ামত পর্যন্ত একে অপরের থেকে পৃথক হবে না' এই হাদীসটি ইবনে আববাস, আবু বকর, আয়েশা, আবু সাইদ খুদরি, আবু লাইলি এবং আবু আইয়্যুব বর্ণনা করেছেন (গাফ্ফারি, শিয়া বা প্রকৃত ইসলাম, গ্রন্থ অনুযায়ী, পৃ.-১০, এই হাদিসটি শিয়া সূত্র ছাড়াও অন্য মাযহাব থেকে পনেরটি সূত্র হতে উল্লেখিত হয়েছে। যেমন; দেখুন: হাকিম নিশাবুরির মুস্তাদরাক গ্রন্থে, ইবনে হাজারের ছাওয়ায়িকুল মুহরিকাহ গ্রন্থে, মুত্তাকি হিন্দির কানযুল উম্মাল ও ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দাহ গ্রন্থে)। এছাড়াও হযরত মুহাম্মাদ (সা.) থেকে বর্ণিত যে তিনি বলেছেন: 'আল্লাহ তা'য়ালা আলী (আ.)-কে রহমত করুন। হে আল্লাহ, সর্বদা হক্বকে আলী (আ.)-এর সাথে স্থিত কর (আত তিরমিযি, সুনান, কিতাবুল মানাকিব, হাদিস নং-৩৬৪৭)। হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এরূপ কয়েকবার আলী (আ.)-কে ইসলামের বিষয়ে তাঁর সাহাবাগণের মধ্যে সর্বজ্ঞানী হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। যেমন, হযরত মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন: 'হিকমতের (প্রজ্ঞার) দশটি ভাগ আছে যার নয়টি আলী (আ.)-কে এবং শুধুমাত্র একটি সমস্ত মানুষের মধ্যে ভাগ করা হয়েছে (ইবনে কাছির ( মৃত্যু-৭৭৪ হিজরি), আলবিদায়া ওয়ান্নিহায়াহ, খণ্ড-৭, পৃ.-৩৫৯)। অনেক পরে, দ্বিতীয় খলীফা হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর এই বক্তব্যগুলির প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেছিল: 'আল্লাহ তা'য়ালা যেন আলী (আ.)-এর অনুপস্থিতিতে আমাকে কোন জটিল সমস্যার সম্মুখীন না করেন' (উদাহরণ স্বরূপ, দেখুন এই গ্রন্থে, ইবনে হাজার, আল ইছাবাহ ফি তামিযিস সাহাবাহ এবং ইবনে কাছির, আল বিদায়াতু ওয়ান্নিহায়াহ, খণ্ড-৭, পৃ.-৩৬)। উপরোক্ত বক্তব্য ছাড়াও, ইসলামের জন্য ইমাম আলী (আ.)-এর আত্মোসর্গী ভূমিকা পালন ছাড়াও যে গুরুত্বপুর্ণ কাজগুলি করেছেন, তা আমাদের সবার জানা প্রয়োজন। কেননা, সেগুলি জানলে মুসলমানদের মাঝে ইমাম আলী (আ.)-এর স্থান ও মর্যাদা বুঝা যাবে। উদাহরণ স্বরূপ, যখন মক্কার মুশরিকরা হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-কে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল, আল্লাহ তা'য়ালা হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-কে ঐ পরিকল্পনাটি অবগত করেন। হযরত মুহাম্মাদ (সা.) আলী (আ.)-এর কাছে জিজ্ঞেস করলেন, 'তুমি কি প্রস্তুত আছো আমার স্থানে শয়ন করতে। যাতে করে শত্রুরা মনে করবে যে, মুহাম্মাদ বাড়িতেই আছে এবং আমি কোন অসুবিধা ছাড়াই মক্কা থেকে হিজরত করতে পারি'। আলী (আ.) এই কাজটি অতি আনন্দের সাথে গ্রহণ করেন। আর এই সত্য ঘটনার প্রেক্ষাপটে এই আয়াত নাযিল হয়: 'এবং মানুষের মধ্যে এমন কেউ আছে যে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজের জীবন উত্সর্গ করে দেয়' (সূরা বাকারা, আয়াত নং-২০৭)। আর হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের দিন থেকেই ইসলামী পঞ্জিকা শুরু হয়েছিল। আলী (আ.) ইসলামের স্বার্থে অনেক কাজ করেছেন, যা ইতিহাসের গ্রন্থগুলিতে, শিয়া ও সুন্নি হাদীস গ্রন্থসমূহে এসেছে। যেমন, হযরত আলী (আ.)-এর বদরের যুদ্ধে, খন্দকের যুদ্ধে, হুনাইনের যুদ্ধে ... অংশগ্রহণ ও মৌলিক ভূমিকা পালন করা। পূর্বে যেরূপে বলা হয়েছে, সঠিকভাবে ইমামত সম্পর্কে এবং বিশেষভাবে হযরত আলী (আ:)-এর ইমামত সম্পর্কে রাসুল (সা.) বর্ণিত হাদীসগুলি স্বতন্ত্রভাবে আলোচিত হওয়া উচিত্। কিন্তু এখানে আমরা সুপরিচিত 'হাদীসে গাদীর' সম্পর্কে বলে বক্তব্য শেষ করব। হযরত মুহাম্মাদ (সা.) তাঁর শেষ হজ্ব সফর (হাজ্বাতুল বিদা) থেকে ফিরে আসার পথে, তার সাথে থাকা হাজার হাজার মুসালমানদেরকে, ঐ স্থানে অবস্থিত ক্ষুদ্র জলাশয় যার নাম ছিল 'গাদীর' একত্রিত হতে বললেন। হযরত মুহাম্মাদ (সা.) একটি উঁচুস্থানে (যা উটের পিঠের উপর বসার আসন তৈরি করা হয়েছিল) দাড়িয়ে বললেন: 'আমি যার মাওলা ও অভিভাবক, এই আলী হচ্ছে তার মাওলা ও অভিভাবক'। আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মাদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মাদ ওয়া আজ্জিল‌ ফারাজাহুম নিবেদক মোঃ জাহিদ হোসেন