সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান
গাদিরে খুম
পর্ব ২
ঘটনা ও ভাসন
মহানবীর আদেশএসব বার্তা অন্যদের কাছে পৌঁছে দিতে উপস্থিত সবার প্রতি নির্দেশ দেন। তখনও সমবেত হাজীরা ওই স্থান ত্যাগ করেননি। এরই মধ্যে হযরত জিব্রাঈল (আ.) আল্লাহর বাণী অবতির্ণ হলেন, মহান রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেছেন:-
'আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করলাম, তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন বা জীবন বিধান হিসেবে মনোনীত করলাম।' ( সূরা মায়েদা; আয়াত-৩)
এই হাদীসটি বিভিন্ন তাফসীরকারক ও মুফাসসীরগণ তাদের নিজ নিজ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। তন্মধ্য কিছু গ্রন্থের নাম এখানে উল্লেখ করা হল। সহিহ মুসলিম, ২য় খণ্ড, পৃ:-৩৬২; সহিহ তিরমিযি, হাদীস নং:-৪০৭৮; মুসনাদে আহমাদ, ২য় খণ্ড, পৃ:-৪১২; সুনানে ইবনে মাজা, ১ম খণ্ড, পৃ:-৪৫; মুসতাদরাকে হাকেম, ৩য় খণ্ড, পৃ:-১১৮; তারিখে ইয়াকুবী, ২য় খণ্ড, পৃ:-৪৩; তারিখে তাবারী, ২য় খণ্ড, পৃ:-৪২৯; সুনানে নাসাই, ৫ম খণ্ড, পৃ:-১৩২; আল মুসনাদ আল-জামে, ৩য় খণ্ড, পৃ:-৯২; আল মুজাম আল-কাবির, ৪র্থ খণ্ড, পৃ:-১৬; কানজুল উম্মাল, ১৩ তম খণ্ড, পৃ:-১৬৯; তারিখে দামেশক, ২য় খণ্ড, পৃ:-৪৫।
আয়াতটি নাজিল হওয়ার পর রাসূল (সা.)বলেন, 'আল্লাহু আকবার। তিনি ধর্মকে পূর্ণাঙ্গ করেছেন, অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করেছেন এবং আমার রেসালাত ও আমার পরে আলীর নেতৃত্বের ওপর আল্লাহ সন্তুষ্ট।' এর পরপরই সবাই আলী(আ.)-কে অভিনন্দন জানাতে থাকেন।
সবার আগে আবু বকর ও ওমর এগিয়ে এসে বললেন, 'হে আবি তালিবের সন্তান, তোমাকে অভিনন্দন। আজ তোমার ওপর দায়িত্ব এসেছে। তুমি আমাদের এমনকি সব নারী ও পুরুষের অভিভাবক।'
ইবনে আব্বাস বললেন, 'আল্লাহর কসম। আলীর নেতৃত্ব মেনে নেয়া সবার জন্য ওয়াজিব।' এ অবস্থায় বিশিষ্ট কবি হিসান বিন সাবেত রাসূলকে উদ্দেশ্য করে বললেন, 'হে রাসূলুল্লাহ। আলীর শানে একটি কবিতা বলার অনুমতি চাচ্ছি।' রাসূলের অনুমতি পাওয়ার পর হিসান তার কবিতা শুরু করেন। তার কবিতার মূল বক্তব্য ছিলো এ রকম:
'গাদির দিবসে মহানবী ডেকে বললেন সব মুসলমানকে
বলোতো,তোমাদের মওলা ও নবী কে?
সমস্বরে এলো উত্তর-তোমার রবই আমাদের মওলা,তুমিই নবী নি:সন্দেহে। তোমার কথার বরখেলাপ করবে না কেউ এ জগতে।
রাসূল বললেন-হে আলী ,আমার পরে তুমিই হবে সৃষ্টিকূলের নেতা, জাতিকে দেবে নির্দেশনা।
আমি যাদের নেতা আলীও তাদেরই নেতা। আমার নির্দেশ সবার প্রতি-সবার ভেতর থাকে যেন আলী-প্রীতি।
খোদা,তোমার কাছে আর্জি আমার
আলী যাদের ভালোবাসা, তুমিও তাদের ভালোবেসো
যারা তাকে শত্রু ভাবে,তুমিও তাদের শত্রু হইও। '
গাদিরে খুমের ঘটনা মানব ইতিহাসে নজিরবিহীন। ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা আর দ্বিতীয়টি ঘটেনি। গাদিরে খুমের ঘটনা মুসলিম জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও শিক্ষণীয়। গাদিরে খুমে রাসূল যে ভাষণ দিয়েছিলেন, তা মেনে চললে বিভ্রান্ত হওয়ার আশংকা অনেকাংশে কমে যায়।
রাসূল (সা.)-র ওফাতের পর শান্ত মুসলিম সমাজ যাতে ক্ষমতা নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে না পড়ে এবং স্বার্থান্বেষীরা ওই শোকাবহ ঘটনাকে যাতে অপব্যবহার করতে না পারে সেজন্য রাসূল (সা.)-কে এ দায়িত্ব দেয়া হয় যে, তিনি যাতে তার পরবর্তী নেতার নাম ঘোষণা করেন। রাসূলে খোদা বিদায় হজ্বের পর এক সমাবেশে আলী(আ.)কে তাঁর স্থলাভিষিক্ত ঘোষণা করেন।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হযরত আলী (আ.) সম্পর্কে বলেনঃ
هَذَا أَخِي وَ وَصِيِّي وَ خَلِيفَتِي مِنْ بَعْدِي، فَاسْمَعُوا لَهُ وَ أَطِيعُوه. এ হলো আমার ভাই, আর আমার পরে আমার ওয়াসী এবং খলীফা। তার নির্দেশের প্রতি কর্ণপাত করো এবং তার আনুগত্য করো।
(তারীখে তাবারী ২:৩৩১; মাআলিমুত তানযীল ৪:২৭৯; আল কামিল ফিত তারীখ ২:৬৩, শারহে নাহজুল বালাগা – ইবনে আবিল হাদীদ ১৩:২১১; কানযুল উম্মাল ১৩:১৩১)
**রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ "আমি আর আলী একই বৃক্ষ থেকে, আর অন্যেরা (মানুষ) বিভিন্ন বৃক্ষ থেকে"। (আল মানাকিব-ইবনে মাগাযেলী ৪০০/৫৩; কানযুল উম্মাল ১১;৬০৮/৩২৯৪৩; আল ফেরদৌস ১;৪৪/১০৯, মাজমাউল যাওয়ায়েদ ৯;১০০।)
**রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ "তুমি আমা থেকে আর আমি তোমা থেকে"। ( সহিহ বুখারী ৪:২২, ৫:৮৭; সুনানে তিরমিযী ৫:৬৩৫/৩৭১৬; মাসাবিহুস সুন্নাহ ৪:১৭২/৪৭৬৫ ও ১৮৬/১০৪৮; তারীখে বাগদাদ ৪:১৪০)।
মন্তব্যসমূহ