সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান
আমিরুল মোমেনীন আলী ইবনে আবি তালিব আঃ এর বাণী
নাহজুল বালাগা খুৎবা
তিনি (আল্লাহ),
সৃষ্টি করেছেন সব কিছুকেই।
কোন দৃষ্টান্ত বা উদাহরণ এবং কোন পরামর্শ দাতার পরামর্শ বা কোন সাহায্যকারীর সাহায্য ছাড়াই। (খুতবা:১৫৫)
পৃথিবী
তিনি (আল্লাহ),
সৃষ্টি করেছেন এই পৃথিবীকে।
তা আবার ঝুলিয়েও রেখেছেন।
তা ধরে রেখেছেন কোন অবলম্বন ছাড়াই।
এমনভাবে তৈরী করেছেন যা পা ছাড়াই দাঁড়িয়ে রয়েছে।
আর তা উঁচু করে রেখেছেন কোন খুঁটি ছাড়াই। (খুতবা:১৮৫)
বাতাস
তিনি (আল্লাহ),
সৃষ্টি করেছেন এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে তাঁর স্বীয় ক্ষমতায়।
আর আসমান ও জমিনের মধ্যে বাতাসকে প্রবাহীত করেছেন সহানুভূতির সাথে। (খুতবা:১)
চাঁদ
তিনি (আল্লাহ),
সজ্জিত করেছেন আসমানকে উজ্জল নক্ষত্র ও উল্কার আলোকচ্ছটা দিয়ে।
এর সাথে স্থাপন করেছেন দীপ্তশালী সূর্যকে।
আর স্থাপন করেছেন উজ্জল চাঁদকে, যা স্বীয় কক্ষ পথের চতুর্দিকে আবর্তন করছে। (খুতবা:১)
রাত
তিনি (আল্লাহ),
সমস্ত প্রশংসা একমাত্র তাঁর জন্য।
যখন রাত্র পতিত হয় ও অন্ধকার নেমে আসে।
আর সমস্ত প্রশংসা শুধুমাত্র তাঁর জন্যেই।
যখন নক্ষত্ররাজী ঝিকিমিকি করে এবং তা আবার ডুবেও যায়।
(খুতবা:৪৮)
সূর্য
লক্ষ্য কর:
সূর্য ও চাঁদের দিকে,
ঘাষ, লতা-পাতা ও বৃহদাকার গাছগুলোর দিকে,
পানি ও পাথরের দিকে,
সাগরের বড় বড় ঢেউয়ের দিকে,
বিশাল বিশাল পর্বতশৃঙ্গ ও তার উচ্চতার দিকে।
লক্ষ্য কর:
ভাষার পার্থক্য ও তার বৈচিত্রতার দিকে।
আরো লক্ষ্য কর রাতের পর দিন ও দিনের পরে রাতে পালাবদলের দিকে। (খুতবা:১৮৫)
পিপড়া
তিনি (আল্লাহ),
সৃষ্টি করেছেন পিপড়াকে।
লক্ষ কর এই পিপড়ার ছোট্ট সুন্দর দেহটার দিকে।
চেয়ে দেখ কেমন করে সে জমিনের উপর বুক দিকে হেটে চলে এবং কিভাবে সে জীবিকা সংগ্রহ করে,
কিভাবে শষ্যদানা বহন করে নিজের ঘরে এনে সেগুলোকে আবার গুদামজাত করে।
সে গরমকালে খাদ্য সঞ্চয় করে রাখে শীতকালের জন্য এবং শক্তি সঞ্চয় করে রাখে ওই সময়ের জন্য যখন সে দূর্বল হয়ে পড়বে।
(খুতবা:১৮৫)
পদতল
তিনি (আল্লাহ),
সমস্ত প্রশংসা একমাত্র তাঁর জন্যই।
তিনি পিপড়া ও মাছির পদতল দিয়েছেন,
আবার তিনিই সৃষ্টি করেছেন পিপড়া ও মাছির থেকেও বড় কিছু,
আর তা হচ্ছে তিমিমাছ ও হাতি। (খুতব:১৬৫)
কীট-পতঙ্গ
যদি তুমি চাও,
তাহলে আমি তোমাকে ওই কীট-পতঙ্গ সমন্ধে বলবো।
আল্লাহ তাকে দুটি লাল চোখ দিয়েছেন, যা অনুরূপ চাঁদের মত।
তাকে ছোট্ট দুটি কান দিয়েছেন, যা তার মুখমণ্ডল উপযোগী।
তাকে সুতিক্ষ্ম ইন্দ্রীয় দিয়েছন ও মুখের অগ্রভাগে দুটি ধারালো দাঁত,
যা দিয়ে সে বিভিন্ন কিছু কাটতে পারে।
তাকে কাস্তের মত দুটি পালক দিয়েছেন, যা অনুরূপ পায়ের মত, যার সাহায্যে সে শক্তভাবে দড়াঁতে পারে। (খুতবা:১৮৫)
পাঁখি
পাঁখিরা আল্লাহর নির্দিশের আজ্ঞাবহ।
তিনি জানেন তাদের পালকের সংখ্যা এবং তাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের হিসাব।
আর পানি ও মাটির উপর দাড়াঁনোর জন্য তাদের পাগুলোতে শক্তি দিয়েছেন।
আর তিনি জানেন তাদের সব প্রজাতির ব্যাপারে, যেমন: কাক, ঘুঘু, ঈগল ও উট পাখি। (খুতবা:১৮৫)
ময়ূর
তাঁর (আল্লাহর),
সৃষ্টিত সব পাখির মধ্যে সর্বাধিক বিস্ময়কর হচ্ছে এই ময়ূর।
যাকে তিনি সৃষ্টি করেছেন অধিক সুন্দর সমতান, সূর লালিত্য দিয়ে।
আর তাকে সাজিয়েছেন সুন্দর রং, বর্ণ ও রূপ দিয়ে, যা অধিক সুন্দর্জিত।
তার ডানাগুলো এবং বিভিন্ন রংয়ে রঙ্গিন লম্বা লেজটি যেন একত্র নরম হাতে নিখুতভাবে বাধানো। (খুতবা:১৬৫)
বাদুড়
বাদুড় হচ্ছে তাঁর সুন্দর সৃষ্টির একটি দৃষ্টান্ত।
এটি একটি অলৌকিক বিষয় তাঁর সৃষ্টিতে, একটি রহস্যময় নমুনা তাঁর বিজ্ঞতার।
এগুলোর সবই আমরা একটি বাদুড়ের মধ্যে দেখতে পাই।
যা সংকুচিত হয়ে যায় সূর্যের আলোয়।
যদিও সূর্যের আলো সব কিছুকেই ততপর করে তোলে তাদের প্রয়োজনের তাগিদে।
কিন্তু সে একবিন্দু পরিমাণ নড়াচড়া করে না।
সে ততপর হয়ে ওঠে রাত্রে।
যদিও রাতের অন্ধকার থামিয়ে অন্য সকল প্রকার জীবন্ত প্রাণীর ততপরতাকে।
আল্লাহর অস্তিত্বের জীবন্ত প্রমাণ হচ্ছে এটাই। (খুতবা:১৫৫)
মাছ
তিনি (আল্লাহ),
সৃষ্টি করেছেন মাছকে।
তিনি অবগত আছেন গভীর জঙ্গলের মধ্যে পশুদের দলনেতা, গভীর সমুদ্রের তলদেশে মাছদের ঘোরা ফেরা, মানুষের নিতান্ত গোপন পাপগুলো সমন্ধে এবং আরো অবগত আছেন প্রবল বাতাসের মাধ্যমে সৃষ্ট সমুদ্রের বড় বড় ঢেউয়ের মাটির বুকে আছড়ে পড়ার শব্দ সমন্ধে। (খুতবা:১৯৮)
জীবিকা
তিনি (আল্লহ),
একমাত্র জীবিকা দানকারী।
সব কিছুই তাঁর প্রতি আত্মসমর্পন করে আছে।
তাঁর কারণেই সব কিছুর অস্তিত্ব বিরাজমান।
তিনি তো সকল অসহায়ের একমাত্র অবলম্বন, সম্মানদাতা বিনয়ীদের, শক্তিদাতা শক্তিহীনদের, সান্তনাদাতা দু:খিদের।
তিনি প্রতিটি বক্তার সব কথাই শ্রবণ করেন।
তিনি ওই সকল ব্যক্তির গোপন চিন্তা সমন্ধে জানেন যারা নি:শ্চুপ অবস্থায় বসে আছে।
তিনিই তো জীবিকা দান করেন প্রতিটি জীবন্ত প্রাণীকে।
আর সব কিছুই প্রত্যাবর্তন করবে তাঁর কাছে মৃত্যুর মাধ্যমে।
(খুতবা:১০৯)
দাউদ (আ.)
তিনি ছিলেন একজন ধর্মসঙ্গীতের গ্রন্থকার (অর্থাৎ বেহেশ্তের দাওয়াত প্রদানকারী)।
আর ছিলেন আবৃত্তিকারক রাজ প্রাসাদের বাসিন্দাদের (অর্থাৎ নিয়ামত আনায়নকারী সঠিক পথ গ্রহণকারীদের জন্য)।
তিনি খেজুর গাছের পাতা দিয়ে ঝুড়ি বুনতেন এবং খুলে যাওয়া ঝুড়ির তলাগুলো নিজের হাতে ঠিক করতেন।
তিনি একদিন তার সঙ্গী-সাথীদের প্রতি বললেন: “কে আছো তোমাদের মধ্যে আমাকে সাহায্য করতে পার, এই ঝুড়িগুলো বিক্রয়ের জন্য”?
তিনি যবের আটার রুটি খেয়ে জীবন-ধারণ করেছিলেন, যা ঝুড়ি বিক্রিত টাকা দিয়ে কিনতো।(খুতবা:১৬০)
লতা-পাতা
মুসা (আ.) বললেন: “হে আমার আল্লাহ নি:সন্দেহে তুমি যা কিছু আমার জন্য পাঠাও আমি সেগুলোর মুখাপেক্ষি”।
আল্লাহর কসম, তিনি আল্লাহর কাছে শুধুমাত্র খাওয়ার জন্য রুটি ছাড়া অন্য কিছুই চান নি।
কেননা, তিনি খাদ্য হিসেবে মাটিতে উৎপাদিত লতা-পাতাই ব্যবহার করতেন।
একারণেই শেষ পর্যায়ে লতা-পাতার সবুজ রং তার পেটের চামড়ায় প্রতিয়মান হয়ে ছিল।
যার কারণে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। (খুতবা:১৬০)
শীতকাল
আমি তোমাদেরকে ঈসা (আ.) সম্পর্কে বলবো:
তিনি মারইয়াম (সা. আ.)-এর সন্তান,
তার ছিল একটি পথরের বালিশ,
তিনি পরিধান করতো মোটা বস্ত্র এবং মোটামুটি খাবার খেত।
অন্ধকার রাতে চাঁদই ছিল তার একমাত্র আলোর উৎস।
শীতকালে পৃথিবীর পশ্চিম হতে পূর্ব পর্যন্ত এই বিস্তীর্ন আকাশ ছিল তার ঘরের ছাদ।
মরুভূমিতে গবাদি পশুর জন্য কিছু উৎপন্ন করাই ছিল তার পছন্দের বিষয়। (খুতবা:১৬০)
সুসংবাদ
অবশেষে আল্লাহ রাব্বুল আ’লামিন হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে পাঠালেন (আল্লাহ্ তাঁর ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর শান্তি বর্ষণ করুন)।
আল্লাহর সাক্ষী অনুযায়ী, নবী (সা.) একজন সুসংবাদের দুত এবং ভয় প্রদর্শন ও সতর্ককারী।
তিনি শ্রেষ্ট সৃষ্টি হিসেবে একটি নি:ষ্পাপ শিশুর মত এবং মানবজাতির মধ্যে পবিত্রতম ব্যক্তি পূর্ণ বয়স্ক হিসেবে।
সব কিছু পরিচালনার জন্য এমনকি সব বিষয়ে তিনি ছিলেন নি:স্কলংকের নি:স্কলংক এবং সর্বাধিক উদার ছিলেন তাদের জন্য যারা স্বীয় উদারতাকে প্রকাশ করত। (খুতবা:১০৫)
আরবের অধিবাসী
আল্লাহ হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে (আল্লাহ তাঁর ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর শান্তি বর্ষন করুন) পাঠিয়েছেন পৃথিবীর মানুষদেরকে সতর্ককারী ও স্বীয় সত্য দ্বীন প্রকাশের তত্বাবধায়ক হিসেবে।
সে সময় তোমরা ওহে আরবের অধিবাসী! কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধর্মের অনুসারী ছিলে আর তোমাদের এলাকাটি তখন অতি খারাপ জায়গা হিসেবে পরিচিত ছিল।
তোমরা বসবাস করতে পাহাড়ের গুহার মধ্যে, যার আসে পাশে থাকতো বিষাক্ত সাপ।
তোমরা পান করতে কর্দমাক্ত ঘোলা পানি এবং খেতে নিম্নমাণের খাবার।
তোমরা একে অপরের রক্ত ঝরাতে এবং নষ্ট করতে নিজেদের মধ্যকার সম্পর্ক।
মুর্তিগুলো তোমাদের মনের মধ্যে স্থান করে নিয়েছিল।
আর পাপগুলো তোমাদের চেপে ধরেছিল যখন তোমরা মুর্তিগুলোর দাসত্য করতে। (খুতবা:২৬
প্রচারে বিধি তুমার ধর্ম কি
মন্তব্যসমূহ