সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান
মক্কা শরীফ থেকে হজ সেরে মদীনা শরীফ ফেরার পথে রসুলে পাক (স:) মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফের মধ্যবরতী স্থান গদীরে খুম নামক স্থানে আল্লাহ তা'লার হুকুমে সমস্ত সাহাবী দিগকে একত্রিত করে হযরত আলী (আ:) এঁর বেলায়াতের উপর একটি ভাষণ প্রদান করেছিলেন।
তাই এই ভাষণটিকে গদীরে খুমের ভাষণও বলা হয়।
সেদিন উপস্থিত জনতা অরথাত সাহাবীদের সংখ্যা ছিল এক লাখ চব্বিশ হাজার।
উঁটের পিঠের হাওদা গুলো দিয়ে স্টেজ তৈরী করা হল।
রসুলে পাক (স:) তাতে আরোহন করে আল্লাহ পাকের হামদ ও সানা পড়লেন অতঃপর বললেন ঃ আমি অতি শীঘ্রই আল্লাহ-র ডাকে সাড়া দিয়ে তোমাদের থেকে বিদায় নেব।
আমি নিজেও একজন দায়িত্বশীল এবং তোমরাও তোমাদের ব্যাপারে দায়িত্বশীল।
আমি দেখবো তোমরা আমার ব্যাপারে কিভাবে সাক্ষ্য দিবে ।
জনগণ উচ্চস্বরে বলতে লাগল আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি আপনি আপনার রেসালাতের দায়িত্ব পালন করেছেন; আমাদেরকে নসীহত করেছেন, আল্লাহ আপনাকে জাযা ও খায়র প্রদান করুন।
অতঃপর হুযুর (সঃ) বললেন ঃতোমরা কি আল্লাহ-র একত্ববাদ, আমার নবুয়াত ও কেয়ামতের দিন মৃত ব্যক্তিদের জীবিত হওয়ার সেই সত্য কথার সাক্ষী প্রদান করবে না?
সকলেই বলল হ্যাঁ সাক্ষ্য দিচ্ছি। তিনি (সঃ) বললেন হে আল্লাহ সাক্ষী থেকো।
অতঃপর হযুর (সঃ) বললেন যা ইমাম তিরমিযী হাযরত যায়েদ বিন আরকাম (রাঃ) হতে বরননা করেছেন, " নিশ্চয় আমি তোমাদের মধ্যে এমন দুটি গুরুত্বপূরন জিনিস ছেড়ে যাচ্ছি যদি তোমরা সে দুটিকে আকড়ে ধর তাহলে আমার পর তোমরা কখনোই পথভ্রষ্ট হবে না।
এ দুটির মধ্যে একটি অপরটি অপেক্ষা অত্যন্ত বড়।
আল্লাহ-র কেতাব (কুরান মজীদ) এবং আমার খানদান আমার আহলে বায়েত আসমান থেকে যমীন পর্যান্ত বিসতৃত রশি।
আর এ দুটি হাওযে কওসারে আমার সাথে মিলিত না হওয়া পর্যন্ত কখনোই একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন হবে না।
সুতরাং দেখ যে,তোমরা আমার পর এদুটির সাথে কিরূপ ব্যবহার কর।
(তিরমিযী শরীফ, ২য় খণ্ড, ২২০ প্রিষ্ঠা)
তারপর রসুলুল্লাহ (সঃ) মওলা আলী (আঃ) এর হাত উচু করে তুলে ধরে বললেন,-
"ইয়া আয়্যোহাননাস ইন্নাল্লাহা মওলায়া ওয়া আনা মওলাল মু'মিনীনা ওয়া আনা আওলা বেহিম মিন আনফুসিহিম ফা মান কুনতু মওলাহু ফা হাযা মওলাহু য়া'নি আলীয়ান আলায়হিসসালাম।"
তরজমা ঃ
"হে মানব জাতি নিঃসন্দেহে আল্লাহ আমার মওলা আর আমি সমগ্র মুমিনদিগের মওলা এবং আমি তাদের জানের থেকেও অধিক নিকটবরতী।
সুতরাং আমি যার মওলা ইনি অর্থাৎ আলী (আঃ) তার মওলা। "
এই বাক্যটি নবী পাক (সঃ) তিন বার কারো মতে চারবার পুনরাবৃত্তি করলেন।
অতঃপর আসমানের দিকে হাত দুটি তুলে বললেন,
" হে আল্লাহ যে ইনার সাথে বন্ধুত্ব্ব রাখে তুমি তার সাথে বন্ধুত্ব রাখো।
এবং যে ইনার সাথে শত্রুতা রাখে তুমি তার সাথে শত্রুতা রাখ।
এবং যে ইনাকে ভালোবাসে তুমি তাকে ভালোবাস।
এবং যে ইনাকে হিংসা করে তুমি তাকে হিংসা কর।
এবং যে ইনাকে সাহায্য করে তুমি তাকে সাহায্য কর এবং যে ইনাকে সাহায্য করা ছেড়ে দেয় তুমিও তাকে সাহায্য করা ছেড়ে দাও।
এবং যে স্থানেই ইনি যান সত্যকে ইনার সাথে রাখ। "
১। তাবারাণী : আল মু'জামুল কবীর, ৩ : ৬৭
২। হায়সামী : মাজমাউয যাওয়ায়েদ, ৯ : ১৬৪
৩। ইবনে কাসীর : আল বেদায়া ওয়াননেহায়া, ৫ : ৪৬৩
৪। ইবনে হজর মক্কী : আস সোয়ায়েকুল মুহরিকা প্রিষ্ঠা - ৩৫ (মিশর প্রিন্ট)
৫। গদীর এ খুম এর চূড়ান্ত ঘোষণা, প্রিষ্ঠা - ২৭-২৯
বিঃদ্রঃ এই কারণে এই দিনটি কে ঈদ এ গদীর বলা হয়। অর্থাত এই দিনটি আমাদের সকলের জন্য খুব আনন্দের দিন।
মন্তব্যসমূহ