সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান
আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মুহাম্মাদিঁও ওয়া আলে মোহাম্মদ
পর্ব ২
❤️❤️❤️❤️❤️২৪ জিলহজ ঈদে মোবাহেলা দিবস__+__ আল্লাহ __১___+___২__+___৩__+__৪___+__৫___+ আল্লাহ❤️❤️❤️❤️❤️
নাজরানের প্রতিনিধি দল সাদামাটা পোশাক পরে এবং সোনার আংটি খুলে রেখে মহানবী (সাঃ) এর নিকট উপস্থিত হয়ে তাঁকে সালাম জানালে তিনিও সম্মাানের সাথে তাদের সালামের জবাব দেন এবং তারা যে সব উপঢৌকন এনেছিল , সেগুলোর কিছু কিছু গ্রহণ করেন ।
আলোচনা শুরু করার আগে প্রতিনিধিরা বলেছিল , তাদের প্রার্থনার সময় হয়েছে ।
মহানবী (সাঃ) তাদেরকে মদীনার মসজিদে নববীতে নামায ও প্রার্থনা করার অনুমতি দেন এবং তারা পূর্ব দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করে ।
সূত্র – সীরাতে হালাবী, ৩য় খণ্ড, পৃ. ২৩৯ ।
নাজরানের প্রতিনিধিদের আলোচনা —
কতিপয় সীরাত রচয়িতা , মুহাদ্দিস (হাদীসবিদ) এবং ঐতিহাসিক মহানবী (সাঃ) এর সাথে নাজরানের প্রতিনিধিদের আলোচনার মূল বিষয় উদ্ধৃত করেছেন । তবে সাইয়্যেদ ইবনে তাউস এ আলোচনা এবং মুবাহালার ঘটনার সমুদয় বৈশিষ্ট্য অন্যদের চেয়ে সূক্ষ্ম ও ব্যাপকভাবে বর্ণনা করেছেন ।
সূত্র – মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ্ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ্ ইবনে বুহলুল ইবনে হুমাম ইবনে মুত্তালিব (জন্ম ২৯৭ হিজরী এবং মৃত্যু ৩৮৭ হিজরী) ।
তিনি মুহাম্মদ ইবনে আবদুল মুত্তালিব শাইবানীর ‘মুবাহালা’ গ্রন্থ এবং হাসান ইবনে ইসমাঈলের৮ ‘যিলহজ্ব মাসের আমল’ গ্রন্থ থেকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মুবাহালার ঘটনার সমুদয় বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন ।
সূত্র – দেখুন ইকবালুল আমাল, পৃ. ৪৯৬-৫১৩ ।
তবে এ ক্ষুদ্র পরিসরে এ মহা ঐতিহাসিক ঘটনার সমুদয় দিক , যেসবের প্রতি দুঃখজনক হলেও সত্য যে , কতিপয় ঐতিহাসিক , এমনকি সামান্য ইঙ্গিত পর্যন্ত করেন নি , সেসব উদ্ধৃত করা সম্ভব হবে না । আর তাই হালাবী তাঁর সীরাত গ্রন্থে মহানবী (সাঃ) এর সাথে নাজরানের প্রতিনিধি দলের আলাপ-আলোচনা যা উদ্ধৃত করেছেন , তার অংশ বিশেষের প্রতি আমরা ইঙ্গিত করব ।
সূত্র – সীরাতে হালাবী, ৩য় খণ্ড, পৃ. ২৩৯ ।
মহানবী (সাঃ) বলেন , “আমি আপনাদেরকে তাওহীদী (একত্ববাদী) ধর্ম , এক-অদ্বিতীয় মহান আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগী এবং তাঁর বিধি-নিষেধ মেনে চলার আহবান জানাচ্ছি ।” এরপর তিনি পবিত্র কুরআনের কতিপয় আয়াত তাদেরকে তেলাওয়াত করে শুনালেন ।
নাজরানের প্রতিনিধিগন বলেন , “আপনি যদি ইসলাম বলতে বিশ্বজাহানের এক-অদ্বিতীয় স্রষ্টা মহান আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসকেই বুঝিয়ে থাকেন , তা হলে আমরা আগেই তাঁর প্রতি ঈমান এনেছি এবং তাঁর বিধি-নিষেধ মেনে চলছি ।”
মহানবী (সাঃ) বলেন , “ইসলামের (মহান আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণ) কতিপয় নিদর্শন আছে । আর আপনাদের কতিপয় কর্মকাণ্ড বলে দেয় যে , আপনারা ইসলামে যথাযথ বাইয়াত হন নি । আপনারা কিভাবে বলেন যে , আপনারা এক-অদ্বিতীয় আল্লাহর ইবাদতকারী , অথচ আপনারা একই সময় ক্রুশের উপাসনা করেন এবং শূকরের মাংস ভক্ষণ থেকে বিরত থাকেন না , আর মহান আল্লাহর পুত্রসন্তানেও বিশ্বাস করেন ?”
নাজরানের প্রতিনিধিরা বলেন , “আমরা তাঁকে (হযরত ঈসা মসীহ্) ‘আল্লাহ্’ বলে বিশ্বাস করি । কারণ তিনি মৃতদের জীবিত এবং অসুস্থ রোগীদের আরোগ্য দান করতেন এবং কাদা থেকে পাখি তৈরি করে আকাশে উড়িয়ে দিতেন । আর এ সব কাজ থেকে প্রতীয়মান হয় , তিনি আল্লাহ্ ।”
মহানবী (সাঃ) বলেন , “না , তিনি মহান আল্লাহর বান্দা ও তাঁরই সৃষ্টি, যাকে তিনি হযরত মারিয়াম (আঃ) এর গর্ভে রেখেছিলেন । আর মহান আল্লাহ্ই তাঁকে এ ধরনের ক্ষমতা প্রদান করেছিলেন ।”
একজন প্রতিনিধি বলেন , “হ্যাঁ, তিনিই মহান আল্লাহর পুত্র । কারণ তাঁর মা মারিয়াম (আঃ) কোন পুরুষের সাথে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ না হয়েই তাঁকে জন্ম দিয়েছিলেন । তাই অনন্যোপায় হয়ে বলতেই হয় যে , তাঁর পিতা হচ্ছেন স্বয়ং মহান আল্লাহ্, যিনি বিশ্বজাহানের স্রষ্টা ।”
এ সময় ওহীর ফেরেশতা হযরত জিবরীল (আঃ) অবতরণ করে মহানবী (সাঃ) কে বললেন : “আপনি তাদেরকে বলে দিন : হযরত ঈসা মসীহর অবস্থা এ দিক থেকে হযরত আদম (আঃ) এর অবস্থার সাথে সদৃশ যে , তাঁকে তিনি তাঁর অসীম ক্ষমতা দিয়ে বিনা পিতা-মাতায় মাটি থেকে সৃষ্টি করেছিলেন ।
সূত্র – সূরা আলে ইমরানের ৫৯তম আয়াত
) إنّ مثل عيسي عند الله كمثل آدم خلقه من تراب ثمّ قال له كن فيكون(
“ নিশ্চয়ই মহান আল্লাহর কাছে ঈসার উপমা হচ্ছে আদমের উপমা সদৃশ; আদমকে তিনি মাটি থেকে সৃষ্টি করেছিলেন এবং এরপর তিনি তাকে বলেছিলেন :‘ হয়ে যাও’ , আর সে হয়ে যায় ।”
তাই পিতা না থাকা যদি তিনি (ঈসাঃ) যে খোদার পুত্র- এ কথার প্রমান বলে বিবেচিত হয় , তা হলে হযরত আদম (আঃ) কে এ আসনের জন্য অধিকতর উপযুক্ত বলে বিবেচনা করা উচিত । কারণ হযরত আদম (আঃ)-এর পিতা ছিল না , আর তাঁর মাও ছিলেন না ।”
নাজরানের প্রতিনিধিরা বলল , “আপনার বক্তব্য আমাদের সন্তুষ্ট করতে পারছে না। আর পথ হচ্ছে এটাই যে, একটি নির্দিষ্ট সময় আমরা পরস্পর মুবাহালা করব এবং যে মিথ্যাবাদী, তার ওপর লানত (অভিশাপ) দেব এবং মহান আল্লাহর কাছে মিথ্যাবাদীকে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য প্রার্থনা করব । ”
সূত্র – বিহারুল আনওয়ার, ২১তম খণ্ড, পৃ. ৩২ । তবে মুবাহালার সাথে সংশ্লিষ্ট আয়াত এবং সীরাতে হালাবী থেকে প্রতীয়মান হয়, মুবাহালা করার প্রস্তাব স্বয়ং মহানবীই দিয়েছিলেন ।
ঠিক একইভাবেتعالوا ندع أبنائنا … (এসো, আমরা আমাদের সন্তানদের আহবান করি এবং তোমরা তোমাদের সন্তানদের আহবান করো…)-এ আয়াত থেকেও এ বক্তব্যের সমর্থন মেলে ।
তখন ওহীর ফেরেশতা মুবাহালার আয়াত নিয়ে অবতরণ করে মহানবী (সাঃ) কে জানান, যারা তাঁর সাথে অযথা বিতর্কে লিপ্ত হবে এবং সত্য মেনে নেবে না , তাদেরকে মুবাহালা করতে আহবান জানাবেন এবং উভয় পক্ষ যেন মহান আল্লাহর কাছে এই বলে প্রার্থনা করেন যে, তিনি মিথ্যাবাদীকে স্বীয় দয়া থেকে দূরে সরিয়ে দেন ।
فمن حاجّك فيه من بعد ما جائك من العلم فقل تعالوا ندع أبنائنا و أبنائكم و نسائنا و نسائكم و أنفسنا و أنفسكم ثمّ نبتهل فنجعل لعنة الله علي الكاذبين
“আপনার কাছে সঠিক জ্ঞান আসার পর যে কেউ এ বিষয়ে আপনার সাথে বিতর্ক করে (এবং সত্য মেনে নিতে চায় না) তাকে বলে দিন : এস , আমরা আহবান করি আমাদের পুত্র সন্তানদের এবং তোমাদের পুত্র সন্তানদের, আমাদের নারীগণকে এবং তোমাদের নারীগণকে , আমাদের নিজেদেরকে এবং তোমাদের নিজেদেরকে , অতঃপর আমরা (মহান আল্লাহর কাছে) বিনীতভাবে প্রার্থনা করি এবং মিথ্যাবাদীদের ওপর মহান আল্লাহর অভিশম্পাৎ করি ।”
সুরা – আলে ইমরান / ৬৩
প্রচারে মোঃ শামসীর হায়দার
মন্তব্যসমূহ