আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদনবী করিম মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শুভ জন্মপর্ব ৭[আয়াতুল্লাহ জা’ফর সুবহানী প্রণীত ‘ফুরুগে আবাদিয়াত’ গ্রন্থের বাংলা অনুবাদ ‘চিরভাস্বর মহানবী (সা.)’-এর প্রথম খণ্ড থেকে সংকলিত।][1]. সূরা ত্বাহা : ৪১-৪৩।[2]. সূরা মরিয়ম : ১৮-৩২।[3]. তারিখে ইয়াকুবী, ২য় খণ্ড, পৃ. ৫; বিহারুল আনওয়ার, ১৫তম খণ্ড, পৃ. ২৪৮; সীরাতে হালাবী, ১ম খণ্ড, পৃ. ৬৪।[4]. আল ইমতা’ গ্রন্থের ৩ পৃষ্ঠায় মাকরীযী মহানবীর জন্মদিন, মাস ও সাল সংক্রান্ত যত অভিমত আছে সেগুলো উল্লেখ করেছেন।[5]. কাফী, ১ম খণ্ড, পৃ. ৪৩৯।[6]. একমাত্র তুরাইহী ‘মাজমাউল বাহরাইন’ গ্রন্থে ‘শারক’ (شرق) ধাতু সম্পর্কে এমন এক ব্যক্তির উদ্ধৃতি নকল করেছেন যার পরিচয় অজ্ঞাত।[7]. মহানবী (সা.) এ সত্যটি নিম্নোক্ত বাক্যের মাধ্যমে বর্ণনা করেছেন,و إنّ الزّمان قد اشتداز كهيئته يوم خلق السّماوات و الأرض ‘‘যে বিন্দু থেকে সময়ের সূচনা হয়েছিল সেখানেই (আজ) তা (সময়) ফিরে গেল। আর ঐ বিন্দুটি হলো ঐ দিন যেদিন মহান আল্লাহ্ আকাশসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছিলেন।’’[8]. বিহারুল আনওয়ার, ১৫তম খণ্ড, পৃ. ২৫২।[9]. সীরাতে হালাবী, পৃ. ৯৭।[10]. অন্য এক দল লোকের মতে মহানবীর নাম নয়, বরং এগুলো পবিত্র কোরআনের হুরুফে মুকাত্তায়াতের অন্তর্গত।[11]. সীরাতে হালাবী, ১ম খণ্ড, পৃ. ৯৩; কেউ কেউ বিশ্বাস করে যে, طه (ত্বাহা) ও يس (ইয়াসীন) শব্দদ্বয় মহানবীর নামসমূহের অন্তর্গত।[12]. انسان العيون في سيرة الأمين و المأمون গ্রন্থের ১ম খণ্ড, পৃ. ৯৩-১০০।[13]. বিহারুল আনওয়ার, ১৫তম খণ্ড, পৃ. ৩৮৪; ইবনে শাহরআশুব প্রণীত মানাকিব, ১ম খণ্ড, পৃ. ১১৯।[14]. সীরাতে ইবনে হিশাম, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৬২-১৬৩।[15]. বিহারুল আনওয়ার, ১৫তম খণ্ড, পৃ. ৪৪২।[16]. সীরাতে হালাবী, ১ম খণ্ড, পৃ. ১‘‘এক মহান তারা ঝিলমিল করল ও সভার মধ্যমণি হলোআমাদের ব্যথিত অন্তরের অন্তরঙ্গ বন্ধু ও সুহৃদ হলো।’’জাহেলিয়াতের কালো মেঘ সমগ্র আরব উপদ্বীপের ওপর ছায়া মেলে রেখেছিল। অসৎ ও ঘৃণ্য কার্যকলাপ, রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ-বিগ্রহ, লুটতরাজ ও সন্তান হত্যা সব ধরনের নৈতিক গুণের বিলুপ্তি ঘটিয়েছিল। তাদের জীবন-মৃত্যুর মধ্যকার ব্যবধান মাত্রাতিরিক্তভাবে সংক্ষিপ্ত হয়ে গিয়েছিল। এহেন পরিস্থিতিতে সৌভাগ্যরবি উদিত হলো এবং সমগ্র আরব উপদ্বীপ মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর শুভ জন্মোপলক্ষে আলোকোজ্জ্বল হয়ে গেল। আর এ পথেই একটি অনগ্রসর জাতির সৌভাগ্যের ভিত্তিও স্থাপিত হলো। অনতিবিলম্বে এ নূরের বিচ্ছুরণে সমগ্র জগৎ আলোকোদ্ভাসিত হলো এবং সমগ্র বিশ্বে এক সুমহান মানব সভ্যতার ভিত্তিও নির্মিত হয়ে গেল।মহান মনীষীদের শৈশবপ্রত্যেক মহামানব ও মনীষীর জীবনের প্রতিটি অধ্যায় গভীরভাবে অধ্যয়ন করা উচিত। কখনো কখনো কোন ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব এতটা মহান ও ব্যাপক যে, তাঁর জীবনের সমস্ত অধ্যায়, এমনকি তাঁর শৈশব ও মাতৃস্তন্য পান করার সময়কালের প্রতিও বিশেষ দৃষ্টি দেয়া হয়। যুগের প্রতিভাবান ব্যক্তিবর্গ, সমাজের নেতৃবৃন্দ ও সভ্যতার কাফেলার অগ্রবর্তীদের জীবন সাধারণত আকর্ষণীয়, সংবেদনশীল ও আশ্চর্যজনক পর্যায় ও দিক সম্বলিত। তাঁদের জীবনের প্রতিটি ছত্র যেদিন তাঁদের ভ্রূণ মাতৃজঠরে স্থাপিত হয় সেদিন থেকে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত রহস্যাবৃত। আমরা বিশ্বের মহামানবদের শৈশব ও বাল্যকাল অধ্যয়ন করলে দেখতে পাই যে, তা আশ্চর্যজনক ও অলৌকিক বিষয়াদি দিয়ে ভরপুর। আর আমরা যদি এ ধরনের বিষয় বিশ্বের সেরা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে মেনে নিই তাহলে মহান আল্লাহ্র প্রিয় নবী ও ওলীদের ক্ষেত্রে এতদসদৃশ বিষয়াদি মেনে নেয়াও খুব সহজ হবে।পবিত্র কোরআন হযরত মূসা (আ.)-এর শৈশব ও বাল্যকাল অত্যন্ত রহস্যময় বলে ব্যাখ্যা করেছে এবং এ প্রসঙ্গে বলেছে : মূসা (আ.) যাতে জন্মগ্রহণ করতে না পারে সেজন্য ফিরআউন সরকারের নির্দেশে শত শত নিষ্পাপ শিশুর শিরোশে্ছদ করা হয়েছিল। মূসা (আ.)-এর জন্মগ্রহণ ও এ পৃথিবীতে আগমনের সাথেই মহান আল্লাহ্র ঐশী ইচ্ছা জড়িত হয়েছিল বিধায় শত্রুরা তাঁর ক্ষতিসাধন তো করতে পারেই নি, বরং তাঁর সবচেয়ে বড় শত্রুও (ফিরআউন) তাঁর প্রতিপালনকারী ও পৃষ্ঠপোষকে পরিণত হয়েছিল। পবিত্র কোরআন এরশাদ করেছে : ‘‘আমরা মূসার মাকে ওহী করেছিলাম যে, সন্তানকে একটি বাক্সে রেখে সমুদ্রে ফেলে দাও, তাহলে সমুদ্রের তরঙ্গ ওকে মুক্তির সৈকতে পৌঁছে দেবে। আমার ও তার শত্রু তার প্রতিপালন করবে; আমি শত্রুর বুকে তার প্রতি গভীর ভালোবাসা ও মমত্ববোধের উদ্ভব ঘটাব। আর এভাবে আমি পুনরায় তোমার সন্তানকে তোমার কাছেই ফিরিয়ে দেব।’’মূসার বোন ফিরআউনের দেশে গিয়ে বলল, ‘‘আমি এক মহিলার সন্ধান দেব যে আপনাদের প্রিয় এ শিশুটির লালন-পালনের দায়িত্ব নিতে পারে। তাই ফিরআউন-সরকারের পক্ষ থেকে মূসার মা তাদের (ফিরআউনের) প্রিয় শিশুর (মূসার) লালন-পালনের দায়িত্বভারপ্রাপ্ত হলেন।’’[1]হযরত ঈসা (আ.)-এর মাতৃগর্ভে বিকাশ, জন্মগ্রহণ এবং লালন-পালনকাল হযরত মূসা (আ.)-এর চেয়েও অধিকতর আশ্চর্যজনক। পবিত্র কোরআন হযরত ঈসা (আ.)-এর জন্ম ও শৈশব কাল বর্ণনা করে বলেছে, ‘‘ঈসার মা মরিয়ম নিজ সম্প্রদায় থেকে পৃথক হয়ে গেলেন। পবিত্র আত্মা (জিবরাইল) মানুষের আকৃতি ধারণ করে তাঁর সম্মুখে প্রকাশিত হলেন এবং তাঁকে সুসংবাদ দিলেন যে, আপনাকে একটি পবিত্র সন্তান দানের জন্য আমাকে আদেশ দেয়া হয়েছে।’’ মরিয়ম তখন আশ্চর্যান্বিত হয়ে বললেন, ‘‘কেউ আমাকে স্পর্শ করে নি এবং আমিও তো ব্যভিচারিণী নই।’’ আমাদের দূত তখন বললেন, ‘‘এ কাজ মহান আল্লাহ্র কাছে অত্যন্ত সহজ।’’ পরিশেষে মহান আল্লাহ্র নির্দেশে ঈসা মসীহ্ নূর হযরত মরিয়মের গর্ভে স্থাপিত হলো। প্রসববেদনা তাঁকে খেজুর গাছের দিকে নিয়ে গেল। তিনি তাঁর নিজ অবস্থার ব্যাপারে দুঃখভারাক্রান্ত ছিলেন। আমরা বললাম, ‘‘খেজুর গাছ বাঁকাও, তাহলে তাজা খেজুর নিচে পড়বে।’’ সন্তান জন্মগ্রহণ করলে মরিয়ম নবজাতক সন্তানসহ নিজ সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে আসলেন। আশ্চর্যান্বিত হয়ে জনগণের মুখের ভাষা যেন থেমে গিয়েছিল। এরপর মরিয়মের উদ্দেশ্যে তীব্র প্রতিবাদ, আপত্তি ও অসন্তোষের ঝড় উঠেছিল। মরিয়মকে পূর্বেই মহান আল্লাহ্ নির্দেশ দিয়েছিলেন যাতে তিনি বুঝিয়ে দেন যে, তারা যেন এই শিশুকে তাদের সকল প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে। তারা বলেছিল, ‘‘যে দুগ্ধপোষ্য শিশু দোলনায় শায়িত সে কি কথা বলতে সক্ষম?’’ তখন হযরত ঈসা (আ.) ঠোঁট খুলে বলে উঠলেন, ‘‘আমি মহান আল্লাহ্র বান্দা (দাস)। তিনি আমাকে কিতাব (ঐশী গ্রন্থ) দিয়েছেন এবং আমাকে নবীদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন।’’প্রচারে মুন্নি আক্তার
আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদ
নবী করিম মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শুভ জন্ম
পর্ব ৭
[আয়াতুল্লাহ জা’ফর সুবহানী প্রণীত ‘ফুরুগে আবাদিয়াত’ গ্রন্থের বাংলা অনুবাদ ‘চিরভাস্বর মহানবী (সা.)’-এর প্রথম খণ্ড থেকে সংকলিত।]
[1]. সূরা ত্বাহা : ৪১-৪৩।
[2]. সূরা মরিয়ম : ১৮-৩২।
[3]. তারিখে ইয়াকুবী, ২য় খণ্ড, পৃ. ৫; বিহারুল আনওয়ার, ১৫তম খণ্ড, পৃ. ২৪৮; সীরাতে হালাবী, ১ম খণ্ড, পৃ. ৬৪।
[4]. আল ইমতা’ গ্রন্থের ৩ পৃষ্ঠায় মাকরীযী মহানবীর জন্মদিন, মাস ও সাল সংক্রান্ত যত অভিমত আছে সেগুলো উল্লেখ করেছেন।
[5]. কাফী, ১ম খণ্ড, পৃ. ৪৩৯।
[6]. একমাত্র তুরাইহী ‘মাজমাউল বাহরাইন’ গ্রন্থে ‘শারক’ (شرق) ধাতু সম্পর্কে এমন এক ব্যক্তির উদ্ধৃতি নকল করেছেন যার পরিচয় অজ্ঞাত।
[7]. মহানবী (সা.) এ সত্যটি নিম্নোক্ত বাক্যের মাধ্যমে বর্ণনা করেছেন,
و إنّ الزّمان قد اشتداز كهيئته يوم خلق السّماوات و الأرض ‘‘যে বিন্দু থেকে সময়ের সূচনা হয়েছিল সেখানেই (আজ) তা (সময়) ফিরে গেল। আর ঐ বিন্দুটি হলো ঐ দিন যেদিন মহান আল্লাহ্ আকাশসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছিলেন।’’
[8]. বিহারুল আনওয়ার, ১৫তম খণ্ড, পৃ. ২৫২।
[9]. সীরাতে হালাবী, পৃ. ৯৭।
[10]. অন্য এক দল লোকের মতে মহানবীর নাম নয়, বরং এগুলো পবিত্র কোরআনের হুরুফে মুকাত্তায়াতের অন্তর্গত।
[11]. সীরাতে হালাবী, ১ম খণ্ড, পৃ. ৯৩; কেউ কেউ বিশ্বাস করে যে, طه (ত্বাহা) ও يس (ইয়াসীন) শব্দদ্বয় মহানবীর নামসমূহের অন্তর্গত।
[12]. انسان العيون في سيرة الأمين و المأمون গ্রন্থের ১ম খণ্ড, পৃ. ৯৩-১০০।
[13]. বিহারুল আনওয়ার, ১৫তম খণ্ড, পৃ. ৩৮৪; ইবনে শাহরআশুব প্রণীত মানাকিব, ১ম খণ্ড, পৃ. ১১৯।
[14]. সীরাতে ইবনে হিশাম, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৬২-১৬৩।
[15]. বিহারুল আনওয়ার, ১৫তম খণ্ড, পৃ. ৪৪২।
[16]. সীরাতে হালাবী, ১ম খণ্ড, পৃ. ১
‘‘এক মহান তারা ঝিলমিল করল ও সভার মধ্যমণি হলো
আমাদের ব্যথিত অন্তরের অন্তরঙ্গ বন্ধু ও সুহৃদ হলো।’’
জাহেলিয়াতের কালো মেঘ সমগ্র আরব উপদ্বীপের ওপর ছায়া মেলে রেখেছিল। অসৎ ও ঘৃণ্য কার্যকলাপ, রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ-বিগ্রহ, লুটতরাজ ও সন্তান হত্যা সব ধরনের নৈতিক গুণের বিলুপ্তি ঘটিয়েছিল। তাদের জীবন-মৃত্যুর মধ্যকার ব্যবধান মাত্রাতিরিক্তভাবে সংক্ষিপ্ত হয়ে গিয়েছিল। এহেন পরিস্থিতিতে সৌভাগ্যরবি উদিত হলো এবং সমগ্র আরব উপদ্বীপ মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর শুভ জন্মোপলক্ষে আলোকোজ্জ্বল হয়ে গেল। আর এ পথেই একটি অনগ্রসর জাতির সৌভাগ্যের ভিত্তিও স্থাপিত হলো। অনতিবিলম্বে এ নূরের বিচ্ছুরণে সমগ্র জগৎ আলোকোদ্ভাসিত হলো এবং সমগ্র বিশ্বে এক সুমহান মানব সভ্যতার ভিত্তিও নির্মিত হয়ে গেল।
মহান মনীষীদের শৈশব
প্রত্যেক মহামানব ও মনীষীর জীবনের প্রতিটি অধ্যায় গভীরভাবে অধ্যয়ন করা উচিত। কখনো কখনো কোন ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব এতটা মহান ও ব্যাপক যে, তাঁর জীবনের সমস্ত অধ্যায়, এমনকি তাঁর শৈশব ও মাতৃস্তন্য পান করার সময়কালের প্রতিও বিশেষ দৃষ্টি দেয়া হয়। যুগের প্রতিভাবান ব্যক্তিবর্গ, সমাজের নেতৃবৃন্দ ও সভ্যতার কাফেলার অগ্রবর্তীদের জীবন সাধারণত আকর্ষণীয়, সংবেদনশীল ও আশ্চর্যজনক পর্যায় ও দিক সম্বলিত। তাঁদের জীবনের প্রতিটি ছত্র যেদিন তাঁদের ভ্রূণ মাতৃজঠরে স্থাপিত হয় সেদিন থেকে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত রহস্যাবৃত। আমরা বিশ্বের মহামানবদের শৈশব ও বাল্যকাল অধ্যয়ন করলে দেখতে পাই যে, তা আশ্চর্যজনক ও অলৌকিক বিষয়াদি দিয়ে ভরপুর। আর আমরা যদি এ ধরনের বিষয় বিশ্বের সেরা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে মেনে নিই তাহলে মহান আল্লাহ্র প্রিয় নবী ও ওলীদের ক্ষেত্রে এতদসদৃশ বিষয়াদি মেনে নেয়াও খুব সহজ হবে।
পবিত্র কোরআন হযরত মূসা (আ.)-এর শৈশব ও বাল্যকাল অত্যন্ত রহস্যময় বলে ব্যাখ্যা করেছে এবং এ প্রসঙ্গে বলেছে : মূসা (আ.) যাতে জন্মগ্রহণ করতে না পারে সেজন্য ফিরআউন সরকারের নির্দেশে শত শত নিষ্পাপ শিশুর শিরোশে্ছদ করা হয়েছিল। মূসা (আ.)-এর জন্মগ্রহণ ও এ পৃথিবীতে আগমনের সাথেই মহান আল্লাহ্র ঐশী ইচ্ছা জড়িত হয়েছিল বিধায় শত্রুরা তাঁর ক্ষতিসাধন তো করতে পারেই নি, বরং তাঁর সবচেয়ে বড় শত্রুও (ফিরআউন) তাঁর প্রতিপালনকারী ও পৃষ্ঠপোষকে পরিণত হয়েছিল। পবিত্র কোরআন এরশাদ করেছে : ‘‘আমরা মূসার মাকে ওহী করেছিলাম যে, সন্তানকে একটি বাক্সে রেখে সমুদ্রে ফেলে দাও, তাহলে সমুদ্রের তরঙ্গ ওকে মুক্তির সৈকতে পৌঁছে দেবে। আমার ও তার শত্রু তার প্রতিপালন করবে; আমি শত্রুর বুকে তার প্রতি গভীর ভালোবাসা ও মমত্ববোধের উদ্ভব ঘটাব। আর এভাবে আমি পুনরায় তোমার সন্তানকে তোমার কাছেই ফিরিয়ে দেব।’’
মূসার বোন ফিরআউনের দেশে গিয়ে বলল, ‘‘আমি এক মহিলার সন্ধান দেব যে আপনাদের প্রিয় এ শিশুটির লালন-পালনের দায়িত্ব নিতে পারে। তাই ফিরআউন-সরকারের পক্ষ থেকে মূসার মা তাদের (ফিরআউনের) প্রিয় শিশুর (মূসার) লালন-পালনের দায়িত্বভারপ্রাপ্ত হলেন।’’[1]
হযরত ঈসা (আ.)-এর মাতৃগর্ভে বিকাশ, জন্মগ্রহণ এবং লালন-পালনকাল হযরত মূসা (আ.)-এর চেয়েও অধিকতর আশ্চর্যজনক। পবিত্র কোরআন হযরত ঈসা (আ.)-এর জন্ম ও শৈশব কাল বর্ণনা করে বলেছে, ‘‘ঈসার মা মরিয়ম নিজ সম্প্রদায় থেকে পৃথক হয়ে গেলেন। পবিত্র আত্মা (জিবরাইল) মানুষের আকৃতি ধারণ করে তাঁর সম্মুখে প্রকাশিত হলেন এবং তাঁকে সুসংবাদ দিলেন যে, আপনাকে একটি পবিত্র সন্তান দানের জন্য আমাকে আদেশ দেয়া হয়েছে।’’ মরিয়ম তখন আশ্চর্যান্বিত হয়ে বললেন, ‘‘কেউ আমাকে স্পর্শ করে নি এবং আমিও তো ব্যভিচারিণী নই।’’ আমাদের দূত তখন বললেন, ‘‘এ কাজ মহান আল্লাহ্র কাছে অত্যন্ত সহজ।’’ পরিশেষে মহান আল্লাহ্র নির্দেশে ঈসা মসীহ্ নূর হযরত মরিয়মের গর্ভে স্থাপিত হলো। প্রসববেদনা তাঁকে খেজুর গাছের দিকে নিয়ে গেল। তিনি তাঁর নিজ অবস্থার ব্যাপারে দুঃখভারাক্রান্ত ছিলেন। আমরা বললাম, ‘‘খেজুর গাছ বাঁকাও, তাহলে তাজা খেজুর নিচে পড়বে।’’ সন্তান জন্মগ্রহণ করলে মরিয়ম নবজাতক সন্তানসহ নিজ সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে আসলেন। আশ্চর্যান্বিত হয়ে জনগণের মুখের ভাষা যেন থেমে গিয়েছিল। এরপর মরিয়মের উদ্দেশ্যে তীব্র প্রতিবাদ, আপত্তি ও অসন্তোষের ঝড় উঠেছিল। মরিয়মকে পূর্বেই মহান আল্লাহ্ নির্দেশ দিয়েছিলেন যাতে তিনি বুঝিয়ে দেন যে, তারা যেন এই শিশুকে তাদের সকল প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে। তারা বলেছিল, ‘‘যে দুগ্ধপোষ্য শিশু দোলনায় শায়িত সে কি কথা বলতে সক্ষম?’’ তখন হযরত ঈসা (আ.) ঠোঁট খুলে বলে উঠলেন, ‘‘আমি মহান আল্লাহ্র বান্দা (দাস)। তিনি আমাকে কিতাব (ঐশী গ্রন্থ) দিয়েছেন এবং আমাকে নবীদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন।’’
প্রচারে মুন্নি আক্তার
মন্তব্যসমূহ