আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদনবী করীম মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শুভ জন্মপর্ব ৫প্রাচ্যবিদদের ভুলভ্রান্তিপবিত্র কোরআন মহানবী (সা.)-কে দু’বা ততোধিক নামে পরিচিত করিয়েছে।[10]সূরা আলে ইমরান, সূরা মুহাম্মাদ, সূরা ফাত্হ ও সূরা আহযাবের ১৩৮, ২, ২৯ ও ৪০ নং আয়াতে তাঁকে ‘মুহাম্মাদ’ নামে এবং সূরা সাফের ৬ নং আয়াতে তাঁকে ‘আহমদ’ নামে অভিহিত করা হয়েছে। তাঁর এ দু’নাম থাকার কারণ হচ্ছে এই যে, মহানবীর মা হযরত আমেনা দাদা আবদুল মুত্তালিবের আগেই তাঁর নাম ‘আহমদ’ রেখেছিলেন। আর এ বিষয়টি ইতিহাসেও উল্লিখিত হয়েছে।[11]অতএব, কতিপয় প্রাচ্যবিদ যে দাবি করেছেন, সূরা সফের ৬ নং আয়াতে পবিত্র কোরআনের স্পষ্ট উক্তি অনুযায়ী ইঞ্জিল শরীফ যে নবীর আবির্ভাবের সুসংবাদ দিয়েছে তাঁর নাম আহমদ, তিনি মুহাম্মাদ নন; আর মুসলমানগণ যে ব্যক্তিকে তাদের নিজেদের নেতা বলে বিশ্বাস করে তিনি মুহাম্মাদ, তিনি আহমদ নন’’- তাঁদের এ দাবি সর্বৈব ভিত্তিহীন। কারণ পবিত্র কোরআন আমাদের নবীকে ‘আহমদ’ নামেও পরিচিত করিয়েছে এবং কতিপয় স্থানে তাঁকে ‘মুহাম্মাদ’ নামে অভিহিত করেছে। যদি এ নবীর নাম সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে তাঁদের দলিল পবিত্র কোরআনই হয়ে থাকে (আর এ ক্ষেত্রে প্রকৃত ব্যাপার ঠিক এটিই) তাহলে এ ক্ষেত্রে বলতে হয়, পবিত্র কোরআন তাঁকে এ দু’টি নামেই অভিহিত করেছে অর্থাৎ একস্থানে তাঁকে ‘মুহাম্মাদ’ এবং অন্যস্থানে ‘আহমদ’ নামে অভিহিত করেছে। এ আপত্তিটির মূলোৎপাটন করার জন্য আমরা নিচে আরো বেশি ব্যাখ্যা দেব।আহমদ মহানবী (সা.)-এর নামসমূহের একটিমহানবী (সা.)-এর জীবনেতিহাস সম্পর্কে যাঁদের সংক্ষিপ্ত তথ্য ও জ্ঞান রয়েছে তাঁরা জানেন যে, হযরত মুহাম্মাদ (সা.) শৈশব ও বাল্যকাল থেকেই ‘আহমদ’ ও ‘মুহাম্মাদ’ এ দু’নামে পরিচিত ছিলেন। জনগণের কাছে তিনি এ দু’নামে পরিচিত ও প্রসিদ্ধ ছিলেন। দাদা আবদুল মুত্তালিব তাঁর জন্য ‘মুহাম্মাদ’ এবং তাঁর মা আমেনা ‘আহমদ’ নামটি মনোনীত করেছিলেন। এ বিষয়টি ইসলামের ইতিহাসের অকাট্য বিষয়াদির অন্তর্ভুক্ত এবং সকল সীরাত রচয়িতা এ বিষয়টি বর্ণনা করেছেন এবং এতৎসংক্রান্ত বিশদ বর্ণনা সীরাতে হালাবীতে রয়েছে যা পাঠকবর্গ পড়ে দেখতে পারেন।[12]দাদা আবদুল মুত্তালিবের মৃত্যুর পর পিতৃব্য আবু তালিব হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর লালন-পালনের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। তিনি বর্ণনাধিক ভালোবাসা, মমতা ও স্নেহ দিয়ে পুরো ৪২ বছর মহানবীর পবিত্র অস্তিত্ব প্রদীপের চারদিকে পতঙ্গের মতো লেগে থেকেছেন। তিনি মহানবীর প্রাণ রক্ষা করার জন্য তাঁর নিজ জান-মাল উৎসর্গ করতে কুণ্ঠাবোধ করেন নি। তিনি তাঁর ভাতিজা মহানবীর শানে যে কবিতা আবৃত্তি করেছেন তাতে তিনি কখনো তাঁকে ‘মুহাম্মাদ’ নামে আবার কখনো ‘আহমদ’ নামে অভিহিত করেছেন। আর সে সাথে এ বিষয়টি থেকে প্রতীয়মান হয়ে যায় যে, তখন থেকেই ‘আহমদ’ নামটি তাঁর অন্যতম প্রসিদ্ধ নাম হিসাবেই প্রচলিত ছিল।এখন আমরা নিচে নমুনাস্বরূপ আরো কতিপয় পঙ্ক্তির উদ্ধৃতি দেব যেগুলোতে তিনি মহানবী (সা.)-কে ‘আহমদ’ নামে অভিহিত করেছিলেন।إن يكن ما أتى به أحمد اليوم سناء و كان في الحشر دينا‘‘আজ আহমদ যা আনয়ন করেছেন তা আসলে নূর (আলো) এবং কিয়ামত দিবসের পুরস্কার।’’و قوله لأحمد أنت أمرء خلوف الحديث ضعيف النسب‘‘শত্রুরা বলছে : আহমদের বাণী ও কথাগুলো নিরর্থক এবং সে নিম্নবংশীয় অর্থাৎ দুর্বল বংশমর্যাদার অধিকারী।’’و ان كان أحمد قد جاء هم بحق و لم يأتهم بالكذب‘‘নিঃসন্দেহে আহমদ তাদের কাছে সত্যধর্ম সহকারে এসেছেন, তিনি কোন মিথ্যা ধর্ম নিয়ে আসেন নি।’’ارادو قتل أحمد ظالموه و ليس بقتلهم فيهم زعيم‘‘যারা আহমদের ওপর জুলুম করেছে তারা চেয়েছিল তাঁকে হত্যা করতে, কিন্তু এ কাজে তাদের নেতৃত্ব দেয়ার মতো কেউ ছিল না।’’ইতিহাস ও হাদীসশাস্ত্রের গবেষক, পণ্ডিত ও আলেমগণ যে সব কবিতা আবু তালিবের সাথে সম্পর্কিত বলে উল্লেখ করেছেন সেগুলোতে তিনি তাঁর ভাতিজা মহানবী (সা.)-কে ‘আহমদ’ নামে অভিহিত করেছেন। যা কিছু এখন আমরা বর্ণনা করেছি তার সব কিছুই আমরা তাঁর দিওয়ান (কাব্যসমগ্র)-এর ১৯, ২৫ ও ২৯ পৃষ্ঠা হতে নিয়েছি। এ ব্যাপারে আগ্রহী পাঠকবর্গকে আমরা নিম্নোক্ত দু’টি গ্রন্থ অধ্যয়ন করার অনুরোধ করছি। গ্রন্থদ্বয় হলো :১. আহমাদ, মওউদুল ইঞ্জিল (ইঞ্জিলের প্রতিশ্রুত নবী আহমদ), পৃ. ১০১-১০৭;২. মাফাহীমুল কোরআনপ্রচারে মুন্নি আক্তার
আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদ
নবী করীম মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শুভ জন্ম
পর্ব ৫
প্রাচ্যবিদদের ভুলভ্রান্তি
পবিত্র কোরআন মহানবী (সা.)-কে দু’বা ততোধিক নামে পরিচিত করিয়েছে।[10]সূরা আলে ইমরান, সূরা মুহাম্মাদ, সূরা ফাত্হ ও সূরা আহযাবের ১৩৮, ২, ২৯ ও ৪০ নং আয়াতে তাঁকে ‘মুহাম্মাদ’ নামে এবং সূরা সাফের ৬ নং আয়াতে তাঁকে ‘আহমদ’ নামে অভিহিত করা হয়েছে। তাঁর এ দু’নাম থাকার কারণ হচ্ছে এই যে, মহানবীর মা হযরত আমেনা দাদা আবদুল মুত্তালিবের আগেই তাঁর নাম ‘আহমদ’ রেখেছিলেন। আর এ বিষয়টি ইতিহাসেও উল্লিখিত হয়েছে।[11]অতএব, কতিপয় প্রাচ্যবিদ যে দাবি করেছেন, সূরা সফের ৬ নং আয়াতে পবিত্র কোরআনের স্পষ্ট উক্তি অনুযায়ী ইঞ্জিল শরীফ যে নবীর আবির্ভাবের সুসংবাদ দিয়েছে তাঁর নাম আহমদ, তিনি মুহাম্মাদ নন; আর মুসলমানগণ যে ব্যক্তিকে তাদের নিজেদের নেতা বলে বিশ্বাস করে তিনি মুহাম্মাদ, তিনি আহমদ নন’’- তাঁদের এ দাবি সর্বৈব ভিত্তিহীন। কারণ পবিত্র কোরআন আমাদের নবীকে ‘আহমদ’ নামেও পরিচিত করিয়েছে এবং কতিপয় স্থানে তাঁকে ‘মুহাম্মাদ’ নামে অভিহিত করেছে। যদি এ নবীর নাম সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে তাঁদের দলিল পবিত্র কোরআনই হয়ে থাকে (আর এ ক্ষেত্রে প্রকৃত ব্যাপার ঠিক এটিই) তাহলে এ ক্ষেত্রে বলতে হয়, পবিত্র কোরআন তাঁকে এ দু’টি নামেই অভিহিত করেছে অর্থাৎ একস্থানে তাঁকে ‘মুহাম্মাদ’ এবং অন্যস্থানে ‘আহমদ’ নামে অভিহিত করেছে। এ আপত্তিটির মূলোৎপাটন করার জন্য আমরা নিচে আরো বেশি ব্যাখ্যা দেব।
আহমদ মহানবী (সা.)-এর নামসমূহের একটি
মহানবী (সা.)-এর জীবনেতিহাস সম্পর্কে যাঁদের সংক্ষিপ্ত তথ্য ও জ্ঞান রয়েছে তাঁরা জানেন যে, হযরত মুহাম্মাদ (সা.) শৈশব ও বাল্যকাল থেকেই ‘আহমদ’ ও ‘মুহাম্মাদ’ এ দু’নামে পরিচিত ছিলেন। জনগণের কাছে তিনি এ দু’নামে পরিচিত ও প্রসিদ্ধ ছিলেন। দাদা আবদুল মুত্তালিব তাঁর জন্য ‘মুহাম্মাদ’ এবং তাঁর মা আমেনা ‘আহমদ’ নামটি মনোনীত করেছিলেন। এ বিষয়টি ইসলামের ইতিহাসের অকাট্য বিষয়াদির অন্তর্ভুক্ত এবং সকল সীরাত রচয়িতা এ বিষয়টি বর্ণনা করেছেন এবং এতৎসংক্রান্ত বিশদ বর্ণনা সীরাতে হালাবীতে রয়েছে যা পাঠকবর্গ পড়ে দেখতে পারেন।[12]
দাদা আবদুল মুত্তালিবের মৃত্যুর পর পিতৃব্য আবু তালিব হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর লালন-পালনের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। তিনি বর্ণনাধিক ভালোবাসা, মমতা ও স্নেহ দিয়ে পুরো ৪২ বছর মহানবীর পবিত্র অস্তিত্ব প্রদীপের চারদিকে পতঙ্গের মতো লেগে থেকেছেন। তিনি মহানবীর প্রাণ রক্ষা করার জন্য তাঁর নিজ জান-মাল উৎসর্গ করতে কুণ্ঠাবোধ করেন নি। তিনি তাঁর ভাতিজা মহানবীর শানে যে কবিতা আবৃত্তি করেছেন তাতে তিনি কখনো তাঁকে ‘মুহাম্মাদ’ নামে আবার কখনো ‘আহমদ’ নামে অভিহিত করেছেন। আর সে সাথে এ বিষয়টি থেকে প্রতীয়মান হয়ে যায় যে, তখন থেকেই ‘আহমদ’ নামটি তাঁর অন্যতম প্রসিদ্ধ নাম হিসাবেই প্রচলিত ছিল।
এখন আমরা নিচে নমুনাস্বরূপ আরো কতিপয় পঙ্ক্তির উদ্ধৃতি দেব যেগুলোতে তিনি মহানবী (সা.)-কে ‘আহমদ’ নামে অভিহিত করেছিলেন।
إن يكن ما أتى به أحمد اليوم سناء و كان في الحشر دينا
‘‘আজ আহমদ যা আনয়ন করেছেন তা আসলে নূর (আলো) এবং কিয়ামত দিবসের পুরস্কার।’’
و قوله لأحمد أنت أمرء خلوف الحديث ضعيف النسب
‘‘শত্রুরা বলছে : আহমদের বাণী ও কথাগুলো নিরর্থক এবং সে নিম্নবংশীয় অর্থাৎ দুর্বল বংশমর্যাদার অধিকারী।’’
و ان كان أحمد قد جاء هم بحق و لم يأتهم بالكذب
‘‘নিঃসন্দেহে আহমদ তাদের কাছে সত্যধর্ম সহকারে এসেছেন, তিনি কোন মিথ্যা ধর্ম নিয়ে আসেন নি।’’
ارادو قتل أحمد ظالموه و ليس بقتلهم فيهم زعيم
‘‘যারা আহমদের ওপর জুলুম করেছে তারা চেয়েছিল তাঁকে হত্যা করতে, কিন্তু এ কাজে তাদের নেতৃত্ব দেয়ার মতো কেউ ছিল না।’’
ইতিহাস ও হাদীসশাস্ত্রের গবেষক, পণ্ডিত ও আলেমগণ যে সব কবিতা আবু তালিবের সাথে সম্পর্কিত বলে উল্লেখ করেছেন সেগুলোতে তিনি তাঁর ভাতিজা মহানবী (সা.)-কে ‘আহমদ’ নামে অভিহিত করেছেন। যা কিছু এখন আমরা বর্ণনা করেছি তার সব কিছুই আমরা তাঁর দিওয়ান (কাব্যসমগ্র)-এর ১৯, ২৫ ও ২৯ পৃষ্ঠা হতে নিয়েছি। এ ব্যাপারে আগ্রহী পাঠকবর্গকে আমরা নিম্নোক্ত দু’টি গ্রন্থ অধ্যয়ন করার অনুরোধ করছি। গ্রন্থদ্বয় হলো :
১. আহমাদ, মওউদুল ইঞ্জিল (ইঞ্জিলের প্রতিশ্রুত নবী আহমদ), পৃ. ১০১-১০৭;
২. মাফাহীমুল কোরআন
প্রচারে মুন্নি আক্তার
মন্তব্যসমূহ