আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদনবী করিম মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শুভ জন্ম পর্ব ৬মহানবীর স্তন্যপানের সময়কালনবজাতক শিশু মুহাম্মাদ (সা.) কেবল তিনদিন মাতৃস্তন্য পান করেছিলেন। এরপর দু’জন মহিলা মহানবীর স্তন্যদানকারিণী দাই মা হওয়ার গৌরব লাভ করেছিলেন। তাঁরা হলেন :১. আবু লাহাবের দাসী সাভীবাহ্ : তিনি তাঁকে চার মাস স্তন্যদান করেছিলেন। তাঁর এ কাজের জন্য জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত মহানবী (সা.) ও তাঁর স্ত্রী হযরত খাদীজাহ্ তাঁর প্রশংসা ও তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।তিনি পূর্বে মহানবীর চাচা হযরত হামযাকেও স্তন্যদান করেছিলেন। নবুওয়াতের দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়ার পর মহানবী (সা.) আবু লাহাবের কাছ থেকে তাঁকে ক্রয় করার জন্য এক ব্যক্তিকে পাঠিয়েছিলেন, কিন্তু আবু লাহাব তাঁকে বিক্রয় করতে সম্মত হয় নি। কিন্তু মহানবী তাঁকে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত সাহায্য করেছেন। মহানবী যখন খাইবার যুদ্ধ থেকে মদীনায় প্রত্যাবর্তন করছিলেন তখন তিনি সাভীবার মৃত্যু সংবাদ পান এবং তাঁর পবিত্র মুখমণ্ডলে গভীর শোক ও বেদনার চিহ্ন ফুটে ওঠে। তিনি সওবিয়ার সন্তান সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেয়ার চেষ্টা করলেন যাতে করে তাঁর ব্যাপারে তিনি ইহ্সান করতে পারেন। কিন্তু তিনি জানতে পারলেন যে, সেও তার মায়ের আগে মৃত্যুবরণ করেছে।[13]২. হালীমাহ্ বিনতে আবি যূইযাব : তিনি ছিলেন সা’দ বিন বকর বিন হাওয়াযিন গোত্রীয়। তাঁর সন্তানদের নাম ছিল আবদুল্লাহ্, আনীসাহ্ ও শাইমা; তাঁর সর্বকনিষ্ঠ সন্তান মহানবীর সেবা-যত্ন করেছে। আরবের সম্ভ্রান্ত পরিবারবর্গের প্রথা ছিল তারা তাদের নবজাতক সন্তানদের ধাত্রী মায়েদের কাছে অর্পণ করত। এ সব দাই সাধারণত শহরের বাইরে বসবাস করত। যাতে করে মরুর নির্মল মুক্ত হাওয়া ও পরিবেশে কুরাইশদের নবজাতক শিশুরা সুষ্ঠুভাবে প্রতিপালিত হয় ও সুস্থ-সবলভাবে বেড়ে ওঠে এবং তাদের অস্থি দৃঢ় ও শক্তিশালী হয়, শহরের বিভিন্ন সংক্রামক ব্যাধি ও কলেরা যা নবজাতক শিশুদের জন্য ছিল সবচেয়ে বিপজ্জনক তা থেকে নিরাপদ থাকে সেজন্য কুরাইশরা তাদের নবজাতক সন্তানদের ঐ সব দাইয়ের হাতে তুলে দিত। কুরাইশ নবজাতকগণ দাই মায়েদের কাছে (আরব গোত্রসমূহের মাঝে প্রতিপালিত হওয়ার কারণে) বিশুদ্ধ আরবী ভাষা রপ্ত করে ফেলত। বনি সা’দ গোত্রের দাইগণ এ ক্ষেত্রে খুবই খ্যাতি লাভ করেছিল। তারা নির্দিষ্ট সময় অন্তর পবিত্র মক্কায় আসত এবং কোন নবজাতককে পেলেই নিজেদের সাথে নিয়ে যেত।হযরত মুহাম্মাদ (সা.) জন্মগ্রহণ করার ৪ মাস পরে বনি সা’দের দাইগণ মক্কায় আসে এবং ঐ সময় ভয়ঙ্কর দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল বলেই তারা সম্ভ্রান্ত বংশীয়দের সাহায্যের প্রতি আগের চেয়ে বেশি মুখাপেক্ষী হয়ে পড়েছিল।কিছুসংখ্যক ঐতিহাসিক বলেন : কোন দাই হযরত মুহাম্মাদকে দুধ দিতে রাজী হয় নি। তারা ইয়াতিম নয় এমন শিশুদের অগ্রাধিকার দিচ্ছিল। কারণ ঐ সব শিশুর পিতারা দাইদের বেশি সাহায্য করতে পারবে। তাই তারা অনাথ শিশুদের নিতে চাইত না, এমনকি হালীমাও নবজাতক হযরত মুহাম্মাদকে নিয়ে যেতে অস্বীকার করেছিলেন। তবে তিনি শারীরিকভাবে দুর্বল ছিলেন বলে কোন ব্যক্তিই তাঁর কাছে নিজ সন্তান অর্পণ করে নি। তিনি আবদুল মুত্তালিবের নাতিকেই অবশেষে গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। হালীমাহ্ তাঁর স্বামীকে বলেছিলেন, ‘‘চল, খালি হাতে বাসায় না ফিরে এ অনাথ শিশুকেই গ্রহণ করি। আশা করা যায় যে, মহান আল্লাহ্র দয়া আমাদেরকেও শামিল করবে।’’ ঘটনাচক্রে তাঁর অনুমানই সত্য হলো। যে সময় থেকে তিনি অনাথ শিশু মহানবীর লালন-পালনের দায়িত্ব নিলেন সেদিন থেকেই মহান আল্লাহ্র কৃপা ও অনুগ্রহ তাঁর জীবনকে ঘিরে রেখেছিল।[14]এ ঐতিহাসিক বর্ণনাটির প্রথম অংশ কাল্পনিক উপাখ্যান ব্যতীত আর কিছুই নয়। কারণ বনি হাশিম বংশের সুমহান মর্যাদা এবং আবদুল মুত্তালিব- যাঁর দানশীলতা, পরোপকার এবং অভাবী-বিপদগ্রস্তদের সাহায্য প্রদানের বিষয়টি আপামর জনতার মুখে মুখে ফিরত তাঁর মতো ব্যক্তিত্বের কারণে দাইগণ তো নবজাতক শিশু মুহাম্মাদকে লালন-পালনের জন্য গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকবেই না, বরং তাঁকে নেয়ার জন্য তাদের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যাওয়ার কথা। এ কারণেই উপরিউক্ত ঐতিহাসিক বর্ণনার এ অংশ উপাখ্যান ব্যতীত আর কিছুই নয়।অন্য দাইয়ের কাছে হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-কে না দেয়ার কারণ ছিল তিনি স্তন্যদানকারী কোন মহিলার স্তন মুখেই দিচ্ছিলেন না। অবশেষে হালীমাহ্ সাদীয়াহ্ এলে তিনি তাঁর স্তন মুখে দিয়েছিলেন। তাই তখন আবদুল মুত্তালিবের পরিবারে আনন্দের বন্যা বয়ে গিয়েছিল।[15]আবদুল মুত্তালিব হালীমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘‘তুমি কোন্ গোত্রের?’’ তিনি বললেন, ‘‘আমি বনি সা’দ গোত্রের।’’ আবদুল মুত্তালিব বললেন, ‘‘তোমার নাম কি?’’ তিনি উত্তরে বললেন, ‘‘হালীমাহ্।’’ আবদুল মুত্তালিব হালীমার নাম ও গোত্রের নাম শুনে অত্যন্ত খুশী হলেন এবং বললেন, بخّ بخّ سعد و حلم. خصلتان فيهما خير الدهر و عز الأبد يا حليمة ‘‘বাহ্বা, বাহ্বা! হে হালীমাহ্ ! দু’টি যথাযথ ও সুন্দর গুণ; একটি সৌভাগ্য [সাআদাত (سعادت)- যা থেকে হালীমার গোত্রের নাম বনি সা’দ-এর উৎপত্তি)] এবং অপরটি ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা [হিলমুন (حلم)- যা থেকে হালীমাহ্ নামের উৎপত্তি)] যেগুলোর মধ্যে রয়েছে যুগের কল্যাণ এবং চিরস্থায়ী সম্মান ও মর্যাদা।’’প্রচারে মুন্নি আক্তার
আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদ
নবী করিম মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শুভ জন্ম
পর্ব ৬
মহানবীর স্তন্যপানের সময়কাল
নবজাতক শিশু মুহাম্মাদ (সা.) কেবল তিনদিন মাতৃস্তন্য পান করেছিলেন। এরপর দু’জন মহিলা মহানবীর স্তন্যদানকারিণী দাই মা হওয়ার গৌরব লাভ করেছিলেন। তাঁরা হলেন :
১. আবু লাহাবের দাসী সাভীবাহ্ : তিনি তাঁকে চার মাস স্তন্যদান করেছিলেন। তাঁর এ কাজের জন্য জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত মহানবী (সা.) ও তাঁর স্ত্রী হযরত খাদীজাহ্ তাঁর প্রশংসা ও তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
তিনি পূর্বে মহানবীর চাচা হযরত হামযাকেও স্তন্যদান করেছিলেন। নবুওয়াতের দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়ার পর মহানবী (সা.) আবু লাহাবের কাছ থেকে তাঁকে ক্রয় করার জন্য এক ব্যক্তিকে পাঠিয়েছিলেন, কিন্তু আবু লাহাব তাঁকে বিক্রয় করতে সম্মত হয় নি। কিন্তু মহানবী তাঁকে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত সাহায্য করেছেন। মহানবী যখন খাইবার যুদ্ধ থেকে মদীনায় প্রত্যাবর্তন করছিলেন তখন তিনি সাভীবার মৃত্যু সংবাদ পান এবং তাঁর পবিত্র মুখমণ্ডলে গভীর শোক ও বেদনার চিহ্ন ফুটে ওঠে। তিনি সওবিয়ার সন্তান সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেয়ার চেষ্টা করলেন যাতে করে তাঁর ব্যাপারে তিনি ইহ্সান করতে পারেন। কিন্তু তিনি জানতে পারলেন যে, সেও তার মায়ের আগে মৃত্যুবরণ করেছে।[13]
২. হালীমাহ্ বিনতে আবি যূইযাব : তিনি ছিলেন সা’দ বিন বকর বিন হাওয়াযিন গোত্রীয়। তাঁর সন্তানদের নাম ছিল আবদুল্লাহ্, আনীসাহ্ ও শাইমা; তাঁর সর্বকনিষ্ঠ সন্তান মহানবীর সেবা-যত্ন করেছে। আরবের সম্ভ্রান্ত পরিবারবর্গের প্রথা ছিল তারা তাদের নবজাতক সন্তানদের ধাত্রী মায়েদের কাছে অর্পণ করত। এ সব দাই সাধারণত শহরের বাইরে বসবাস করত। যাতে করে মরুর নির্মল মুক্ত হাওয়া ও পরিবেশে কুরাইশদের নবজাতক শিশুরা সুষ্ঠুভাবে প্রতিপালিত হয় ও সুস্থ-সবলভাবে বেড়ে ওঠে এবং তাদের অস্থি দৃঢ় ও শক্তিশালী হয়, শহরের বিভিন্ন সংক্রামক ব্যাধি ও কলেরা যা নবজাতক শিশুদের জন্য ছিল সবচেয়ে বিপজ্জনক তা থেকে নিরাপদ থাকে সেজন্য কুরাইশরা তাদের নবজাতক সন্তানদের ঐ সব দাইয়ের হাতে তুলে দিত। কুরাইশ নবজাতকগণ দাই মায়েদের কাছে (আরব গোত্রসমূহের মাঝে প্রতিপালিত হওয়ার কারণে) বিশুদ্ধ আরবী ভাষা রপ্ত করে ফেলত। বনি সা’দ গোত্রের দাইগণ এ ক্ষেত্রে খুবই খ্যাতি লাভ করেছিল। তারা নির্দিষ্ট সময় অন্তর পবিত্র মক্কায় আসত এবং কোন নবজাতককে পেলেই নিজেদের সাথে নিয়ে যেত।
হযরত মুহাম্মাদ (সা.) জন্মগ্রহণ করার ৪ মাস পরে বনি সা’দের দাইগণ মক্কায় আসে এবং ঐ সময় ভয়ঙ্কর দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল বলেই তারা সম্ভ্রান্ত বংশীয়দের সাহায্যের প্রতি আগের চেয়ে বেশি মুখাপেক্ষী হয়ে পড়েছিল।
কিছুসংখ্যক ঐতিহাসিক বলেন : কোন দাই হযরত মুহাম্মাদকে দুধ দিতে রাজী হয় নি। তারা ইয়াতিম নয় এমন শিশুদের অগ্রাধিকার দিচ্ছিল। কারণ ঐ সব শিশুর পিতারা দাইদের বেশি সাহায্য করতে পারবে। তাই তারা অনাথ শিশুদের নিতে চাইত না, এমনকি হালীমাও নবজাতক হযরত মুহাম্মাদকে নিয়ে যেতে অস্বীকার করেছিলেন। তবে তিনি শারীরিকভাবে দুর্বল ছিলেন বলে কোন ব্যক্তিই তাঁর কাছে নিজ সন্তান অর্পণ করে নি। তিনি আবদুল মুত্তালিবের নাতিকেই অবশেষে গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। হালীমাহ্ তাঁর স্বামীকে বলেছিলেন, ‘‘চল, খালি হাতে বাসায় না ফিরে এ অনাথ শিশুকেই গ্রহণ করি। আশা করা যায় যে, মহান আল্লাহ্র দয়া আমাদেরকেও শামিল করবে।’’ ঘটনাচক্রে তাঁর অনুমানই সত্য হলো। যে সময় থেকে তিনি অনাথ শিশু মহানবীর লালন-পালনের দায়িত্ব নিলেন সেদিন থেকেই মহান আল্লাহ্র কৃপা ও অনুগ্রহ তাঁর জীবনকে ঘিরে রেখেছিল।[14]
এ ঐতিহাসিক বর্ণনাটির প্রথম অংশ কাল্পনিক উপাখ্যান ব্যতীত আর কিছুই নয়। কারণ বনি হাশিম বংশের সুমহান মর্যাদা এবং আবদুল মুত্তালিব- যাঁর দানশীলতা, পরোপকার এবং অভাবী-বিপদগ্রস্তদের সাহায্য প্রদানের বিষয়টি আপামর জনতার মুখে মুখে ফিরত তাঁর মতো ব্যক্তিত্বের কারণে দাইগণ তো নবজাতক শিশু মুহাম্মাদকে লালন-পালনের জন্য গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকবেই না, বরং তাঁকে নেয়ার জন্য তাদের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যাওয়ার কথা। এ কারণেই উপরিউক্ত ঐতিহাসিক বর্ণনার এ অংশ উপাখ্যান ব্যতীত আর কিছুই নয়।
অন্য দাইয়ের কাছে হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-কে না দেয়ার কারণ ছিল তিনি স্তন্যদানকারী কোন মহিলার স্তন মুখেই দিচ্ছিলেন না। অবশেষে হালীমাহ্ সাদীয়াহ্ এলে তিনি তাঁর স্তন মুখে দিয়েছিলেন। তাই তখন আবদুল মুত্তালিবের পরিবারে আনন্দের বন্যা বয়ে গিয়েছিল।[15]
আবদুল মুত্তালিব হালীমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘‘তুমি কোন্ গোত্রের?’’ তিনি বললেন, ‘‘আমি বনি সা’দ গোত্রের।’’ আবদুল মুত্তালিব বললেন, ‘‘তোমার নাম কি?’’ তিনি উত্তরে বললেন, ‘‘হালীমাহ্।’’ আবদুল মুত্তালিব হালীমার নাম ও গোত্রের নাম শুনে অত্যন্ত খুশী হলেন এবং বললেন, بخّ بخّ سعد و حلم. خصلتان فيهما خير الدهر و عز الأبد يا حليمة ‘‘বাহ্বা, বাহ্বা! হে হালীমাহ্ ! দু’টি যথাযথ ও সুন্দর গুণ; একটি সৌভাগ্য [সাআদাত (سعادت)- যা থেকে হালীমার গোত্রের নাম বনি সা’দ-এর উৎপত্তি)] এবং অপরটি ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা [হিলমুন (حلم)- যা থেকে হালীমাহ্ নামের উৎপত্তি)] যেগুলোর মধ্যে রয়েছে যুগের কল্যাণ এবং চিরস্থায়ী সম্মান ও মর্যাদা।’’
প্রচারে মুন্নি আক্তার
মন্তব্যসমূহ