আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদরবিউল আওয়াল মাসের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলিপহেলা রবিউল আওয়াল১- রাসুল (সা.)এর দাফন: পহেলা রবিউল আওয়ালের মধ্যে রাতে রাসুল (সা.)এর পবিত্র দেহকে হজরত আলি (আ.) দাফন করেন। কেননা অন্যান্য ব্যাক্তিরা রাসুল (সা.)এর পবিত্র দেহকে ফেলে রেখে খেলাফত নির্বাচনের জন্য বণি সাকিফায় একত্রিত হয়েছিল। (তাবাকাত ইবনে সাআদ, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৭৮)শেইখ মুফিদ (রহ.) বলেন: অনেকেই রাসুল (সা.) এর জানাযায় অংশগ্রহণ করেননি কারণ তখন তারা খলিফা নির্বাচনের জন্য বণি সাকিফাতে উপস্থিত ছিল। (তাকরিবুল মাআরেফ, পৃষ্ঠা ২৫৬)২- লাইলাতুল মাবিত: পহেলা রবিউল আউয়ালের রাতটি ইসলামের ইতিহাসে ‚লাইলাতুল মাবিত“ নামে পরিচিত। রাসুল (সা.)এর বেসাতের ১৩ তম বর্ষে হিজরতের ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি সংঘটিত হয়। রাসুল (সা.) উক্ত রাতে মদিনা থেকে মক্কার উদ্দেশ্যে রওনা হন এবং পথিমধ্যে ‚সউর“ নামক গুহায় আশ্রয় গ্রহণ করেন। অপর দিকে হজরত আলি (আ.) শত্রুদের ষড়যন্ত্রকে নস্যাত করার লক্ষ্যে রাসুল (সা.)এর বিছানায় নিদ্রা যান। তখন তাঁর সম্পর্কে সুরা বাকারা’এর ২০৭ নং আয়াত নাযিল হয়। (বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ১৯, পৃষ্ঠা ৩৯)৩- রাসুল (সা.) এর হিজরত: বেসাতের ১৩ তম বর্ষে উক্ত তারিখের রাতে রাসুল (সা.) মক্কা থেকে মদিনার উদ্দেশ্যে হিজরত করেন। (শাওয়াহেদুত তানযিল, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ১২৩)৪- হিজরি বর্ষের সূচনা: হিজরত ইসলামের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা। বিশ্বের ইতিহাসেও সবচেয়ে তাৎপর্যবহ, সুদূরপ্রসারী ঘটনা এটি। এটি দ্বীন ও মানবতার বৃহত্তর স্বার্থে ত্যাগ, বিসর্জনের এক সাহসী পদক্ষেপ। মুসলমানরা মক্কার কাফেরদের পাশবিক নির্যাতন-নিপীড়ন, অব্যাহত অমানবিক আচরণ, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবরোধ নীরবে সহ্য করার পর তাদের স্পর্ধা আরো বেড়ে যায়। তারা মহানবী (সা.)-কেও হত্যার ষড়যন্ত্র করে। আল্লাহ তায়ালা তাদের সব ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেন। মহানবী (সা.) ও মক্কার নির্যাতিত মুসলমানদের মদিনায় হিজরত করার নির্দেশ দেন। হিজরতের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের দ্বার উন্মোচিত হয়। সশস্ত্র যুদ্ধে তাগুতি শক্তির মোকাবিলার শুভ সূচনা হয়। উদিত হয় মক্কা বিজয়সহ ইসলামের বিশ্বজয়ের রঙিন সূর্য। হিজরতের ঐতিহাসিক ঘটনাকে স্মারক বানিয়ে হজরত উমরের যুগে ইমাম আলি (আ.) হিজরি নববর্ষের গোড়াপত্তন করেন। মুসলমানদের জন্য পৃথক ও স্বতন্ত্র চান্দ্রমাসের পঞ্জিকা প্রণয়ন করেন। (আস সহিহ মিন সিরাহ, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ১৭৪- ২০৬)৫- হজরত আলি (আ.) এর ঘরে আক্রমণ: সন ১১ হিজরির উক্ত তারিখের রাতে রাসুল (সা.) দাফন কার্য সম্পাদন হওয়ার পরে যারা বণি সাকিফাতে অংশগ্রহণ করেছিল। তারা দিনে হজরত আলি (আ.)এর কাছে জোরপূর্বক বাইয়াত নেয়ার জন্য তাঁর ঘরে হামলা করে। কিন্তু হজরত আলি (আ.) রাসুল (সা.) এর ওসিয়ত অনুযায়ি কোরআন সংঙ্কলনের কাজে নিমগ্ন ছিলেন। তিনি হামলাকারিদের বলেন: মহান আল্লাহর শপথ আমি সম্পূর্ণ কোরআন একত্রিত করার পূর্বে ঘর থেকে বাহির হব না। (এহতেজাজ, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৯৮, ২৮১)৬- ইমাম হাসান আসকারি (আ.)কে বিষ প্রদান: রেওয়ায়েতের বর্ণনা অনুযায়ি ইমাম হাসান আসকারি (আ.) সন ২৬০ হিজরির উক্ত তারিখে বিষাক্ত খাবারের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এছাড়াও ইতিহাসে অন্যান্য তারিখের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে যেমন: ৪ঠা রবিউল আওয়াল, ৮ই রবিউল আওয়াল। (মেসবাহে কাফআমি, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৫৩৩)৩য় রবিউল আওয়াল:১- হজরত সালমান (রা.) এর কূটতর্ক: রাসুল (সা.)কে দাফনের তৃতিয় দিন হজরত সালমান (রা.) জনসম্মুখে এস বলেন: হে লোকেরা! তোমরা আমার কথা মনযোগ সহকারে শোন অতৎপর চিন্তা করো। এটা তোমরা এ বিষয় সম্পর্কে ভালভাবে অবগত আছ যে, আমাকে রাসুল (সা.) কর্তৃক বিশেষ জ্ঞান দান করা হয়েছে। আমি যদি আলি (আ.) এর ফযিলত বর্ণনা শুরু করি তাহলে হয়তো তোমাদের অনেকেই আমাকে পাগল বলে অভিহিত করবে অথবা বলবে যে, হে আল্লাহ! তুমি সালমানের উক্ত কথার জন্য তাঁকে ক্ষমা করে দাও। অতঃপর তিনি হজরত আলি (আ.) এর ফযিলত বর্ণনা করা শুরু করেন এবং তাদেরকে উদ্দেশ্যে করে বলেন: যারা তাঁর প্রাপ্য খেলাফতকে কেড়ে নেয়ার ষড়যন্ত্র করেছিল। বক্তব্যর পরিসমাপ্তিতে বলেন: তোমরা জেনে রাখ আমি আমার বিশ্বাসের কথাকে তোমার সামনে উপস্থাপন করলাম। আমি আমার জন্য রাসুল (সা.) এর পরে হজরত আলি (আ.) কে ইমাম স্বরূপ মেনে নিয়েছি। (গায়াতুল মারাম, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ১২০)২- এজিদের নির্দেশে কাবা গৃহকে ভাঙ্গার চেষ্টা: সন ৬৪ হিজরির উক্ত দিনে এজিদের নির্দেশে কাবা গৃহকে মিনজানিক (দালান ভাঙ্গার গুলতি বিশেষ) দ্বারা ভাঙ্গা হয়। উক্ত ঘটনার ১১ দিন পরে এজিদ মারা যায়। (তাতেম্মাতুল মুনতাহি, পৃষ্ঠা ৬৩)৫ই রবিউল আওয়াল১- হজরত সকিনা (সা.)এর মৃত্যুদিবস: ইমাম হুসাইন (আ.)এর কন্যা হজরত সকিনা (সা.আ.) কারবালার ঘটনার ৫৬ বছর পরে সন ১১৭ হিজরির উক্ত তারিখে মদিনায় মৃত্যুবরণ করেন। তার মাতার নাম ছিল রোবাব তিনি তাঁর মায়ের সাথেই বন্দি অবস্থায় কুফা ও শামে যান। তাঁর স্বামির নাম ছিল হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে হাসান (আ.)যিনি কারবালাতে শাহাদত বরণ করেন। যেহেতু ইমাম হাসান (আ.)এর আব্দুল্লাহ নামে কয়েকজন সন্তান ছিল। যখন তিনি মৃত্যুবরণ করেন তখন মদিনার শাষক আব্দুল মালেক বলে: তোমরা অপেক্ষা কর তাঁর জানাযার নামাজ আমি পড়াব। কিন্তু সে ওয়াদা করে আর জানাযার নামাজ পড়াতে আসেনি। অবশেষে মোহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ ওরফে নাফসে যাকিয়া রাতে তাঁর জানাযার নামাজ পড়ান এবং তাঁকে মদিনায় দাফন করে দেন। (দালায়েলুল ইমামা, পৃষ্ঠা ৪২৪)৮ই রবিউল আওয়ালইমাম হাসান আসকারি (আ.)এর শাহাদত:রেওয়ায়েতের বর্ণনা অনুযায়ি ২৬০ হিজরিতে ইমাম হাসান আসকারি (আ.)২৮ বছর বয়সে শাহাদত বরণ করেন। মৃত্যুর পূর্ব রাতে তিনি মদনিাবাসিদের নামে একাধিক পত্র লিখেন। যখন শামেরাবাসিরা তাঁর শাহাদতের খবর সম্পর্কে অবগত হয় তখন তারা বাজারের সকল দোকান বন্ধ করে ইমাম (আ.)এর ঘরের সম্মুখে একত্রিত হয় এবং শামে তাদের ক্রন্দন এবং আহাজারির কারণে পরিবেশ শোকাবহ হয়ে উঠে। ইমাম মাহদি (আ.) তাঁকে গোসল, কাফন দেন, জানাযার নামাজ পড়ান এবং তাঁকে ইমাম হাদি (আ.) এর পাশে দাফন করে দেন। (কামাল উদ্দিন, পৃষ্ঠা ৪৭৫)৯ই রবিউল আওয়াল১- ইমাম মাহদি (আ.)এর ইমামতের প্রথম দিন: সন ২৬০ হিজরি ইমাম হাসান আসকারি (আ.)এর শাহাদতের পরে উক্ত দিনটি ছিল ইমাম মাহদি (আ.) এর ইমামতের প্রথম দিন এবং সেদিন থেকেই ইমাম মাহদি (আ.) এর ইমামতের স্বল্পকালিন অন্তর্ধান শুরু হয়। (মুতাদরাকে সাফিনাতুল বিহার, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ৬৭)২- হজরত উমর ইবনে খাত্তাবের মৃত্যুদিবস: ২৩ অথবা ২৪ হিজরির উক্ত তারিখে রাতের শেষ অংশে হজরত উমর ইবনে খাত্তাব মৃত্যু বরণ করেন। কিন্তু আহলে সুন্নাতের মত অনুযায়ি তিনি রোজ বুধবার ২৬শে জিলহজ তারিখে মৃত্যুবরণ করেন। ইতিহাসে তার মৃত্যুর ঘটনা এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যে, মুগাইরা বিন শোয়বার দাশ যার নাম ছিল ‘আবু লুলু’ সে হজরত উমরকে কয়েকবার চাকু দ্বারা মারাত্মকভাবে আঘাত করে এবং উক্ত কারণে তিনি মৃত্যু বরণ করেন। (তাবাকাতে কুবরা, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ৩৬৫)৩- উমর ইবনে সাআদের মৃত্যুদিবস: মোখতারে সাকাফির নেতৃত্বে উমরে সাআদকে হত্যা করা হয়। (আল ইরশাদ, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৩৩৬)১০ই রবিউল আওয়াল:১- রাসুল (সা.) এর সাথে হজরত খাদিজা (সা.আ.)এর বিবাহ: হজরত মোহাম্মাদ (সা.) নবুওয়াত প্রাপ্তির ১৫ বছর পূর্বে উক্ত তারিখে উম্মুল মুমিনিন হজরত খাদিজা (সা.আ.) এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। হজরত খাদিজা (সা.আ.) এর সম্পদ এতই বেশি ছিল যে ৮০ হাজার উট শুধুমাত্র তাঁর ব্যাবসার মালামাল বহণ করতো। আরবের বিভিন্ন ব্যাক্তিত্বগণ তাঁকে বিবাহের প্রস্তাব দেন কিন্তু তিনি তাদের বিবাহের প্রস্তাবে রাজি হন নি। কিন্তু তিনি রাসুল (সা.) এর সততা এবং সত্যবাদিতা দেখ মুগ্ধ হন এবং তাঁকে বিবাহের প্রস্তাব দেন। অতঃপর তাঁদের বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়। (ইকবালুল আমাল, পৃষ্ঠা ৫৯৯)২- মদিনার অত্যাচারি শাষক দাউদ বিন আলির মৃত্যু: সাফফাহ-এর চাচা দাউদ বিন আলি সন ১৩৩ হিজরি ১০ই রবিউল আওয়াল তারিখে ইমাম জাফর সাদিক (আ.) এর দোয়ার কারণে মৃত্যু বরণ করে। (কালায়েদুন নুহুর, খন্ড রবিউল আওয়াল, পৃষ্ঠা ৬৭)৩- মালেক বিন আনাসের মৃত্যুদিবস: সন ১৭৯ হিজরিতে মালেক বিন আনাস আসবাহা যিনি ছিলেন মালেকি মাযহাবের কর্ণধারক। তিনি উক্ত তারিখে মৃত্যুবরণ করেন এবং তাকে জান্নাতুল বাকিতে দাফন করা হয়। (রওযাতুল জান্নাত, খন্ড ৭, পৃষ্ঠা ২২৪)৪- মুয়াবিয়ার খেলাফত অর্জন: ৪১ হিজরির রবিউল আউয়ালের ১০ তারিখে মুয়াবিয়া কপটতার মাধ্যমে খেলাফত অর্জন করেছিল। হজরত উসমানের পরে সে ছিল বণি উমাইয়ার খেলাফতের আরেকজন খলিফা। যার জন্য মুসলমানদের কাছ থেকে বাইয়াত গ্রহণ করা হয়। তবে ইতিহাসে মাবিয়ার খেলাফত অর্জনের বিষয় সম্পর্কে বিভিন্ন তারিখ বর্ণিত হয়েছে যেমন: ৫ই রবিউল আওয়াল, প্রথম অথবা ১৫ই জামাদিউল আওয়াল বর্ণিত হয়েছে। তবে প্রসিদ্ধ হচ্ছে ২৫শে রবিউল আওয়াল। (মুনতাখাবুত তাওয়ারিখ, পৃষ্ঠা ৬, বেদায়া ওয়ান নেহায়া, খন্ড ৮, পৃষ্ঠা ২০)১২ই রবিউল আওয়াল১- রাসুল (সা.) মদিনায় প্রবেশ করেন:উক্ত তারিখের অস্তবেলায় রাসুল (সা.) মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় পৌছায় এবং কুবা নাক স্থানে হজরত আলি (আ.)এর জন্য অপেক্ষা করেন। যখন হজরত আলি (আ.) সেখানে এসে পৌছান তখন রাসুল (সা.) তাঁদেরকে নিয়ে মদিনায় প্রবেশ করেন। (মাশারুশ শিয়া, পৃষ্ঠা ২৮)তবে আহলে সুন্নতের দৃষ্টিতে এই তারিখেই নবী (স.) জন্ম গ্রহণ করেন এবং এই একই তারিখে মৃত্যু বরণ করেন।২- মোতাসিম আব্বাসির মৃত্যু: সন ২২৭ হিজরির উক্ত তারিখে রোজ বৃহঃস্পতিবারে রাতের প্রথমভাগে মোতাসেম আব্বাসি সামেরায় মারা যায়। তার মৃত্যুর কারণ হচ্ছে সে “হেজামত” (এক বিশেষ প্রক্রিয়ায় শরিরে বদ রক্ত বাহির করা হয়) করার পরে তার জ্বর আসে এবং উক্ত জ্বরের কারণে সে ৪৯ বছর বয়সে মারা যায়। (তাতেম্মাতুল মুনতাহি, পৃষ্ঠা ২৯৭- ৩১০)৩- আহমাদ বিন হাম্বালের মৃত্যুদিবস: সন ২৪১ হিজরির ‍উক্ত তারিখে হাম্বালি মাযহাবের কর্ণধারক আহমাদ বিন হাম্বাল বাগদাদে মৃত্যুবরণ করে এবং সেখানেই তাকে দাফন করা হয়। ইতিহাসের অন্য এক বর্ণনা অনুযায়ি তিনি রবিউস সানি মাসে মৃত্যুবরণ করেন। (মারাকেদুল মাআরেফ, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ১২৩)১৪ই রবিউল আওয়াল১- এজিদ বিন মাবিয়ার মৃত্যু: সন ৬৪ হিজরির উক্ত তারিখে এজিদ ইবনে মাবিয়া বিন আবু সুফিয়ান ৩৫ অথবা ৩৭ বছর বয়সে অতিরিক্ত মদ পানের কারণে দামেস্কে মারা যায় এবং সেখানেই তাকে দাফন করা হয়। এজিদের রাজত্বকাল ছিল তিন বছর আট মাস। এছাড়াও ইতিহাসে এজিদের মৃত্যু তরিখ সম্পর্কে অন্য মতামতও বর্ণিত হয়েছে যমন: ১৫ই রবিউল আওয়াল। (ফেইযুল আলাম, পৃষ্ঠা ২১৬, তারিখে তাবারি, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ৩৮৯)২- আব্বাসিয় খলিফা মুসা হাদির মৃত্যু: ইতিহাসের বর্ণনা অনুযায়ি সন ১৭০ হিজরির উক্ত তারিখে আব্বাসিয় খলিফা মাহদি আব্বাসির পুত্র মুসা হাদি ২৫ অথবা ২৬ বছর বয়সে মৃত্যু বরণ করে। ইতিহাসের অন্য বর্ণনা অনুযায়ি ১৫, ১৮ তারিখটিও তার মৃত্যুর দিন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ইতিহাসে তার পাষন্ডতা, ক্রোধ এবং বিদ্বেষ ছিল প্রসিদ্ধ। (কালায়েদুন নুহুর, খন্ড রবিউল আওয়াল, পৃষ্ঠা ৮৯, তাতেম্মাতুল মুনতাহা, পৃষ্ঠা ২২৪, ২২২)১৭ই রবিউল আওয়াল১- হজরত মোহাম্মাদ (সা.)এর জন্মদিবস: হজরত মোহাম্মাদ (সা.) বর্তমান সৌদি আরবে অবস্থিত মক্কা নগরীর কুরাইশ বংশের বনু হাশিম গোত্রে জন্ম গ্রহণ করেন। প্রচলিত ধারনা মতে, তিনি ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের ২৯ আগষ্ট বা আরবি রবিউল আওয়াল মাসের ১৭ তারিখ জন্মগ্রহণ কনে। সকল আলেমদের মতে রাসুল (সা.) শুক্রবার প্রভাতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জন্মের সময় বিশ্বে অবিস্মরণিয় কিছু ঘটনা ঘটে যা ইতিহাসে লিপিবদ্ধ রয়েছে। তাঁর পিতার নাম আব্দুল্লাহ মাতার নাম ছিল আমিনা। (এলামুল ওয়ারা, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৩)২- ইমাম জাফর সাদিক (আ.)এর জন্মদিবস: সন ৮৩ হিজরির উক্ত তারিখে ইমাম জাফর সাদিক (আ.) মদিনায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর নাম জাফর, উপনাম আবু আব্দুল্লাহ, উপাধি সাদিক। তাঁর পিতার নাম ইমাম বাকের (আ.) এবং মাতার নাম ছিল উম্মে ফারওয়া। (আল ইরশাদ, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ১৭৯)২২শে রবিউল আওয়ালবণি নাযিরের যুদ্ধ: ৪র্থ হিজরি বণি নাযির নামক যুদ্ধটি সংঘটিত হয় এবং ইয়াহুদিদেরকে মদিনা থেকে বহিস্কার করা হয়। (আস সাহিহ মিনাস সিরাহ, খন্ড ৮, পৃষ্ঠা ৩৬)২৩শে রবিউল আওয়াল:কুম নগরিতে হজরত মাসুমা (সা.আ.) এর আগমণ: ফাতেমা-এ সানী, হজরত ইমাম মুসা ইবনে জাফার (আ.) এর কন্যা। তিনি শিয়াদের মাঝে কারিমায়ে আহলে বাইত (আ.) নামে সুপ্রসিদ্ধ। এছাড়া তিনি তাহেরাহ, হামিদাহ, বিররাহ, রাশিদাহ, তাকিয়াহ, নাকিয়াহ, সাইয়্যিদাহ, রাদ্বিয়াহ, উখতুর রেদ্বা, সিদ্দিকাহ, শাফিয়াহ ইত্যাদি উপাধীর অধিকারী। তার মায়ের নাম ‘নাজমা’। তিনি ১৭৩ হিজরী’র ১লা যিলক্বদ মদিনায় জন্মগ্রহণ করেন। হজরত ফাতেমা (সা. আ.) যখন ১০ বছরের ছিলেন, তখন তাঁর সম্মানিত পিতা ইমাম মুসা ইবনে জাফার (আ.) শহীদ হন। এর পর হতে পিতার ওসিয়ত অনুযায়ী এ মহিয়সী এবং ইমামের অপর সন্তানাদির অবিভাবকত্ব ইমাম রেজা (আ.) এর উপর অর্পিত হয়। হজরত ফাতেমা মাসুমা (সা. আ.) ছাড়াও ইমাম মুসা ইবনে জাফার (আ.) এর আরো কন্যা ছিলেন। তাদের মধ্যে শুধুমাত্র তিনিই ছিলেন বিশেষ মর্যাদার অধিকারী।সন ২০১ হিজরির উক্ত তারিখে ইমাম রেযা (আ.)এর বোন হজরত ফাতেমা মাসুমা (সা.আ.) পবিত্র কুম নগরিতে আগমণ করেন এবং দিন পরে তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন। (বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৫৭, পৃষ্ঠা ২১৯)২৫শে রবিউল আওয়াল:১- দুমাতুল জুন্দাল-এর যুদ্ধ: সন ৫ হিজরিরে উক্ত তারিখে যুদ্ধটি সংঘটিত হয়। উক্ত এলাকায় কিছু লোকজন একত্রিত হয়ে বিভিন্ন কাফেলাদেরকে লুট করতো। রাসুল (সা.) উক্ত ঘটনাটি সম্পর্কে অবগত হলে তিনি মদিনাতে নিজের স্থলে সাবা বিন আরফাতা গাফফারিকে রেখে নিজেই ২৫শে রবিউল আওয়াল এক হাজার সৈন্য নিয়ে মদিনা থেকে বাহিরে আসেন। যখন রাহজানরা রাসুল (সা.) এর আগমণ সম্পর্কে অবগত হয় তখন তারা পালিয়ে যায়। তখন মুসলমানরা তাদের সকল মালামালকে নিয়ে ২০শে রবিউস সানি মদিনায় ফিরে আসে। (কালায়েদুন নুহুর, খন্ড রবিউল আওয়াল, পৃষ্ঠা ১৫০)২- ইমাম হাসান (আ.) ও মাবিয়ার মাঝে সন্ধি: ইমাম হাসান (আ.)এর সাথে মাবিয়ার সন্ধি সংঘটিত হয়। মুয়াবিয়ার সঙ্গে ইমাম হাসান (আ.)’র সন্ধির কিছু শর্ত:-আহলে বাইতের অনুসারীদের রক্ত সম্মানিত ও হেফাজত থাকবে এবং তাদের অধিকার পদদলিত করা যাবে না।-মুয়াবিয়াকে হজরত আলী (আ.)’র বিরুদ্ধে মিথ্যাচার, গালি-গালাজ, অপবাদ ও প্রচারণা বন্ধ করতে হবে।-জামাল ও সিফফিনের যুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন ইরানি প্রদেশগুলোর সরকারি আয় থেকে তাদের পরিবারগুলোকে এক মিলিয়ন দেরহাম অর্থ সাহায্য দিতে হবে।- ইমাম হাসান (আ.) মুয়াবিয়াকে আমিরুল মু’মিনিন বলে উল্লেখ করবেন না।-মুয়াবিয়াকে অনৈসলামী আচার-আচরণ পরিহার করতে হবে এবং আল্লাহর কিতাব ও সুন্নাত অনুযায়ী আমল করতে হবে।-মুয়াবিয়া কোনো ব্যক্তিকেই (খেলাফতের জন্য) নিজের উত্তরসূরি মনোনীত করতে পারবে না। মুয়াবিয়া মারা গেলে খেলাফত ফেরত দিতে হবে ইমাম হাসান (আ.)’র কাছে।-ইমাম হাসান (আ.) যদি মারা যান, তাহলে মুসলিম জাহানের খেলাফত হস্তান্তর করতে হবে রাসুল(সা.)এর ছোট নাতি হজরত ইমাম হুসাইন(আ.)’র কাছে।কিন্তু মুয়াবিয়া প্রকাশ্যেই নির্লজ্জভাবে সন্ধির শর্তগুলো লঙ্ঘন করেছিল। মুয়াবিয়া ৫০ হিজরিতে গোপনে বিষ প্রয়োগ করে ইমাম হাসান(আ.)-কে শহীদ করে। ৬০ হিজরিতে মৃত্যুর কিছু দিন আগে মুয়াবিয়া তার মদ্যপ ও লম্পট ছেলে ইয়াজিদকে মুসলমানদের খলিফা বলে ঘোষণা করে।মুয়াবিয়া বলত যেখানে টাকা দিয়ে কাজ হয় সেখানে আমি টাকা বা ঘুষ ব্যবহার করি, যেখানে চাবুক দিয়ে কাজ হয় সেখানে আমি তরবারি ব্যবহার করি না, আর যেখানে তরবারি দরকার হয় সেখানে তরবারি ব্যবহার করি। (বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৪৪, পৃষ্ঠা ৬৫)প্রচারে বিধি তুমার ধর্ম কি

আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদ

রবিউল আওয়াল মাসের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি

পহেলা রবিউল আওয়াল

১- রাসুল (সা.)এর দাফন: পহেলা রবিউল আওয়ালের মধ্যে রাতে রাসুল (সা.)এর পবিত্র দেহকে হজরত আলি (আ.) দাফন করেন। কেননা অন্যান্য ব্যাক্তিরা রাসুল (সা.)এর পবিত্র দেহকে ফেলে রেখে খেলাফত নির্বাচনের জন্য বণি সাকিফায় একত্রিত হয়েছিল। (তাবাকাত ইবনে সাআদ, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৭৮)

শেইখ মুফিদ (রহ.) বলেন: অনেকেই রাসুল (সা.) এর জানাযায় অংশগ্রহণ করেননি কারণ তখন তারা খলিফা নির্বাচনের জন্য বণি সাকিফাতে উপস্থিত ছিল। (তাকরিবুল মাআরেফ, পৃষ্ঠা ২৫৬)

২- লাইলাতুল মাবিত: পহেলা রবিউল আউয়ালের রাতটি ইসলামের ইতিহাসে ‚লাইলাতুল মাবিত“ নামে পরিচিত। রাসুল (সা.)এর বেসাতের ১৩ তম বর্ষে হিজরতের ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি সংঘটিত হয়। রাসুল (সা.) উক্ত রাতে মদিনা থেকে মক্কার উদ্দেশ্যে রওনা হন এবং পথিমধ্যে ‚সউর“ নামক গুহায় আশ্রয় গ্রহণ করেন। অপর দিকে হজরত আলি (আ.) শত্রুদের ষড়যন্ত্রকে নস্যাত করার লক্ষ্যে রাসুল (সা.)এর বিছানায় নিদ্রা যান। তখন তাঁর সম্পর্কে সুরা বাকারা’এর ২০৭ নং আয়াত নাযিল হয়। (বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ১৯, পৃষ্ঠা ৩৯)

৩- রাসুল (সা.) এর হিজরত: বেসাতের ১৩ তম বর্ষে উক্ত তারিখের রাতে রাসুল (সা.) মক্কা থেকে মদিনার উদ্দেশ্যে হিজরত করেন। (শাওয়াহেদুত তানযিল, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ১২৩)

৪- হিজরি বর্ষের সূচনা: হিজরত ইসলামের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা। বিশ্বের ইতিহাসেও সবচেয়ে তাৎপর্যবহ, সুদূরপ্রসারী ঘটনা এটি। এটি দ্বীন ও মানবতার বৃহত্তর স্বার্থে ত্যাগ, বিসর্জনের এক সাহসী পদক্ষেপ। মুসলমানরা মক্কার কাফেরদের পাশবিক নির্যাতন-নিপীড়ন, অব্যাহত অমানবিক আচরণ, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবরোধ নীরবে সহ্য করার পর তাদের স্পর্ধা আরো বেড়ে যায়। তারা মহানবী (সা.)-কেও হত্যার ষড়যন্ত্র করে। আল্লাহ তায়ালা তাদের সব ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেন। মহানবী (সা.) ও মক্কার নির্যাতিত মুসলমানদের মদিনায় হিজরত করার নির্দেশ দেন। হিজরতের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের দ্বার উন্মোচিত হয়। সশস্ত্র যুদ্ধে তাগুতি শক্তির মোকাবিলার শুভ সূচনা হয়। উদিত হয় মক্কা বিজয়সহ ইসলামের বিশ্বজয়ের রঙিন সূর্য। হিজরতের ঐতিহাসিক ঘটনাকে স্মারক বানিয়ে হজরত উমরের যুগে ইমাম আলি (আ.) হিজরি নববর্ষের গোড়াপত্তন করেন। মুসলমানদের জন্য পৃথক ও স্বতন্ত্র চান্দ্রমাসের পঞ্জিকা প্রণয়ন করেন। (আস সহিহ মিন সিরাহ, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ১৭৪- ২০৬)

৫- হজরত আলি (আ.) এর ঘরে আক্রমণ: সন ১১ হিজরির উক্ত তারিখের রাতে রাসুল (সা.) দাফন কার্য সম্পাদন হওয়ার পরে যারা বণি সাকিফাতে অংশগ্রহণ করেছিল। তারা দিনে হজরত আলি (আ.)এর কাছে জোরপূর্বক বাইয়াত নেয়ার জন্য তাঁর ঘরে হামলা করে। কিন্তু হজরত আলি (আ.) রাসুল (সা.) এর ওসিয়ত অনুযায়ি কোরআন সংঙ্কলনের কাজে নিমগ্ন ছিলেন। তিনি হামলাকারিদের বলেন: মহান আল্লাহর শপথ আমি সম্পূর্ণ কোরআন একত্রিত করার পূর্বে ঘর থেকে বাহির হব না। (এহতেজাজ, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৯৮, ২৮১)

৬- ইমাম হাসান আসকারি (আ.)কে বিষ প্রদান: রেওয়ায়েতের বর্ণনা অনুযায়ি ইমাম হাসান আসকারি (আ.) সন ২৬০ হিজরির উক্ত তারিখে বিষাক্ত খাবারের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এছাড়াও ইতিহাসে অন্যান্য তারিখের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে যেমন: ৪ঠা রবিউল আওয়াল, ৮ই রবিউল আওয়াল। (মেসবাহে কাফআমি, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৫৩৩)

৩য় রবিউল আওয়াল:

১- হজরত সালমান (রা.) এর কূটতর্ক: রাসুল (সা.)কে দাফনের তৃতিয় দিন হজরত সালমান (রা.) জনসম্মুখে এস বলেন: হে লোকেরা! তোমরা আমার কথা মনযোগ সহকারে শোন অতৎপর চিন্তা করো। এটা তোমরা এ বিষয় সম্পর্কে ভালভাবে অবগত আছ যে, আমাকে রাসুল (সা.) কর্তৃক বিশেষ জ্ঞান দান করা হয়েছে। আমি যদি আলি (আ.) এর ফযিলত বর্ণনা শুরু করি তাহলে হয়তো তোমাদের অনেকেই আমাকে পাগল বলে অভিহিত করবে অথবা বলবে যে, হে আল্লাহ! তুমি সালমানের উক্ত কথার জন্য তাঁকে ক্ষমা করে দাও। অতঃপর তিনি হজরত আলি (আ.) এর ফযিলত বর্ণনা করা শুরু করেন এবং তাদেরকে উদ্দেশ্যে করে বলেন: যারা তাঁর প্রাপ্য খেলাফতকে কেড়ে নেয়ার ষড়যন্ত্র করেছিল। বক্তব্যর পরিসমাপ্তিতে বলেন: তোমরা জেনে রাখ আমি আমার বিশ্বাসের কথাকে তোমার সামনে উপস্থাপন করলাম। আমি আমার জন্য রাসুল (সা.) এর পরে হজরত আলি (আ.) কে ইমাম স্বরূপ মেনে নিয়েছি। (গায়াতুল মারাম, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ১২০)

২- এজিদের নির্দেশে কাবা গৃহকে ভাঙ্গার চেষ্টা: সন ৬৪ হিজরির উক্ত দিনে এজিদের নির্দেশে কাবা গৃহকে মিনজানিক (দালান ভাঙ্গার গুলতি বিশেষ) দ্বারা ভাঙ্গা হয়। উক্ত ঘটনার ১১ দিন পরে এজিদ মারা যায়। (তাতেম্মাতুল মুনতাহি, পৃষ্ঠা ৬৩)

৫ই রবিউল আওয়াল

১- হজরত সকিনা (সা.)এর মৃত্যুদিবস: ইমাম হুসাইন (আ.)এর কন্যা হজরত সকিনা (সা.আ.) কারবালার ঘটনার ৫৬ বছর পরে সন ১১৭ হিজরির উক্ত তারিখে মদিনায় মৃত্যুবরণ করেন। তার মাতার নাম ছিল রোবাব তিনি তাঁর মায়ের সাথেই বন্দি অবস্থায় কুফা ও শামে যান। তাঁর স্বামির নাম ছিল হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে হাসান (আ.)যিনি কারবালাতে শাহাদত বরণ করেন। যেহেতু ইমাম হাসান (আ.)এর আব্দুল্লাহ নামে কয়েকজন সন্তান ছিল। যখন তিনি মৃত্যুবরণ করেন তখন মদিনার শাষক আব্দুল মালেক বলে: তোমরা অপেক্ষা কর তাঁর জানাযার নামাজ আমি পড়াব। কিন্তু সে ওয়াদা করে আর জানাযার নামাজ পড়াতে আসেনি। অবশেষে মোহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ ওরফে নাফসে যাকিয়া রাতে তাঁর জানাযার নামাজ পড়ান এবং তাঁকে মদিনায় দাফন করে দেন। (দালায়েলুল ইমামা, পৃষ্ঠা ৪২৪)

৮ই রবিউল আওয়াল

ইমাম হাসান আসকারি (আ.)এর শাহাদত:

রেওয়ায়েতের বর্ণনা অনুযায়ি ২৬০ হিজরিতে ইমাম হাসান আসকারি (আ.)২৮ বছর বয়সে শাহাদত বরণ করেন। মৃত্যুর পূর্ব রাতে তিনি মদনিাবাসিদের নামে একাধিক পত্র লিখেন। যখন শামেরাবাসিরা তাঁর শাহাদতের খবর সম্পর্কে অবগত হয় তখন তারা বাজারের সকল দোকান বন্ধ করে ইমাম (আ.)এর ঘরের সম্মুখে একত্রিত হয় এবং শামে তাদের ক্রন্দন এবং আহাজারির কারণে পরিবেশ শোকাবহ হয়ে উঠে। ইমাম মাহদি (আ.) তাঁকে গোসল, কাফন দেন, জানাযার নামাজ পড়ান এবং তাঁকে ইমাম হাদি (আ.) এর পাশে দাফন করে দেন। (কামাল উদ্দিন, পৃষ্ঠা ৪৭৫)

৯ই রবিউল আওয়াল

১- ইমাম মাহদি (আ.)এর ইমামতের প্রথম দিন: সন ২৬০ হিজরি ইমাম হাসান আসকারি (আ.)এর শাহাদতের পরে উক্ত দিনটি ছিল ইমাম মাহদি (আ.) এর ইমামতের প্রথম দিন এবং সেদিন থেকেই ইমাম মাহদি (আ.) এর ইমামতের স্বল্পকালিন অন্তর্ধান শুরু হয়। (মুতাদরাকে সাফিনাতুল বিহার, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ৬৭)

২- হজরত উমর ইবনে খাত্তাবের মৃত্যুদিবস: ২৩ অথবা ২৪ হিজরির উক্ত তারিখে রাতের শেষ অংশে হজরত উমর ইবনে খাত্তাব মৃত্যু বরণ করেন। কিন্তু আহলে সুন্নাতের মত অনুযায়ি তিনি রোজ বুধবার ২৬শে জিলহজ তারিখে মৃত্যুবরণ করেন। ইতিহাসে তার মৃত্যুর ঘটনা এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যে, মুগাইরা বিন শোয়বার দাশ যার নাম ছিল ‘আবু লুলু’ সে হজরত উমরকে কয়েকবার চাকু দ্বারা মারাত্মকভাবে আঘাত করে এবং উক্ত কারণে তিনি মৃত্যু বরণ করেন। (তাবাকাতে কুবরা, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ৩৬৫)

৩- উমর ইবনে সাআদের মৃত্যুদিবস: মোখতারে সাকাফির নেতৃত্বে উমরে সাআদকে হত্যা করা হয়। (আল ইরশাদ, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৩৩৬)

১০ই রবিউল আওয়াল:

১- রাসুল (সা.) এর সাথে হজরত খাদিজা (সা.আ.)এর বিবাহ: হজরত মোহাম্মাদ (সা.) নবুওয়াত প্রাপ্তির ১৫ বছর পূর্বে উক্ত তারিখে উম্মুল মুমিনিন হজরত খাদিজা (সা.আ.) এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। হজরত খাদিজা (সা.আ.) এর সম্পদ এতই বেশি ছিল যে ৮০ হাজার উট শুধুমাত্র তাঁর ব্যাবসার মালামাল বহণ করতো। আরবের বিভিন্ন ব্যাক্তিত্বগণ তাঁকে বিবাহের প্রস্তাব দেন কিন্তু তিনি তাদের বিবাহের প্রস্তাবে রাজি হন নি। কিন্তু তিনি রাসুল (সা.) এর সততা এবং সত্যবাদিতা দেখ মুগ্ধ হন এবং তাঁকে বিবাহের প্রস্তাব দেন। অতঃপর তাঁদের বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়। (ইকবালুল আমাল, পৃষ্ঠা ৫৯৯)

২- মদিনার অত্যাচারি শাষক দাউদ বিন আলির মৃত্যু: সাফফাহ-এর চাচা দাউদ বিন আলি সন ১৩৩ হিজরি ১০ই রবিউল আওয়াল তারিখে ইমাম জাফর সাদিক (আ.) এর দোয়ার কারণে মৃত্যু বরণ করে। (কালায়েদুন নুহুর, খন্ড রবিউল আওয়াল, পৃষ্ঠা ৬৭)

৩- মালেক বিন আনাসের মৃত্যুদিবস: সন ১৭৯ হিজরিতে মালেক বিন আনাস আসবাহা যিনি ছিলেন মালেকি মাযহাবের কর্ণধারক। তিনি উক্ত তারিখে মৃত্যুবরণ করেন এবং তাকে জান্নাতুল বাকিতে দাফন করা হয়।  (রওযাতুল জান্নাত, খন্ড ৭, পৃষ্ঠা ২২৪)

৪- মুয়াবিয়ার খেলাফত অর্জন: ৪১ হিজরির রবিউল আউয়ালের ১০ তারিখে মুয়াবিয়া কপটতার মাধ্যমে খেলাফত অর্জন করেছিল। হজরত উসমানের পরে সে ছিল বণি উমাইয়ার খেলাফতের আরেকজন খলিফা। যার জন্য মুসলমানদের কাছ থেকে বাইয়াত গ্রহণ করা হয়। তবে ইতিহাসে মাবিয়ার খেলাফত অর্জনের বিষয় সম্পর্কে বিভিন্ন তারিখ বর্ণিত হয়েছে যেমন: ৫ই রবিউল আওয়াল, প্রথম অথবা ১৫ই  জামাদিউল আওয়াল বর্ণিত হয়েছে। তবে প্রসিদ্ধ হচ্ছে ২৫শে রবিউল আওয়াল। (মুনতাখাবুত তাওয়ারিখ, পৃষ্ঠা ৬, বেদায়া ওয়ান নেহায়া, খন্ড ৮, পৃষ্ঠা ২০)

১২ই রবিউল আওয়াল

১- রাসুল (সা.) মদিনায় প্রবেশ করেন:

উক্ত তারিখের অস্তবেলায় রাসুল (সা.) মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় পৌছায় এবং কুবা নাক স্থানে হজরত আলি (আ.)এর জন্য অপেক্ষা করেন। যখন হজরত আলি (আ.) সেখানে এসে  পৌছান তখন রাসুল (সা.) তাঁদেরকে নিয়ে মদিনায় প্রবেশ করেন। (মাশারুশ শিয়া, পৃষ্ঠা ২৮)

তবে আহলে সুন্নতের দৃষ্টিতে এই তারিখেই নবী (স.) জন্ম গ্রহণ করেন এবং এই একই তারিখে মৃত্যু বরণ করেন।

২- মোতাসিম আব্বাসির মৃত্যু: সন ২২৭ হিজরির উক্ত তারিখে রোজ বৃহঃস্পতিবারে রাতের প্রথমভাগে মোতাসেম আব্বাসি সামেরায় মারা যায়। তার মৃত্যুর কারণ হচ্ছে সে “হেজামত”  (এক বিশেষ প্রক্রিয়ায় শরিরে বদ রক্ত বাহির করা হয়) করার পরে তার জ্বর আসে এবং উক্ত জ্বরের কারণে  সে ৪৯ বছর বয়সে মারা যায়। (তাতেম্মাতুল মুনতাহি, পৃষ্ঠা ২৯৭- ৩১০)

৩- আহমাদ বিন হাম্বালের মৃত্যুদিবস: সন ২৪১ হিজরির ‍উক্ত তারিখে হাম্বালি মাযহাবের কর্ণধারক আহমাদ বিন হাম্বাল বাগদাদে মৃত্যুবরণ করে এবং সেখানেই তাকে দাফন করা হয়। ইতিহাসের অন্য এক বর্ণনা অনুযায়ি তিনি রবিউস সানি মাসে মৃত্যুবরণ করেন। (মারাকেদুল মাআরেফ, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ১২৩)

১৪ই রবিউল আওয়াল

১- এজিদ বিন মাবিয়ার মৃত্যু: সন ৬৪ হিজরির উক্ত তারিখে এজিদ ইবনে মাবিয়া বিন আবু সুফিয়ান ৩৫ অথবা ৩৭ বছর বয়সে অতিরিক্ত মদ পানের কারণে দামেস্কে মারা যায় এবং সেখানেই তাকে দাফন করা হয়। এজিদের রাজত্বকাল ছিল তিন বছর আট মাস। এছাড়াও ইতিহাসে এজিদের মৃত্যু তরিখ সম্পর্কে অন্য মতামতও বর্ণিত হয়েছে যমন: ১৫ই রবিউল আওয়াল। (ফেইযুল আলাম, পৃষ্ঠা ২১৬, তারিখে তাবারি, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ৩৮৯)

২- আব্বাসিয় খলিফা মুসা হাদির মৃত্যু: ইতিহাসের বর্ণনা অনুযায়ি সন ১৭০ হিজরির উক্ত তারিখে আব্বাসিয় খলিফা মাহদি আব্বাসির পুত্র মুসা হাদি ২৫ অথবা ২৬ বছর বয়সে মৃত্যু বরণ করে। ইতিহাসের অন্য বর্ণনা অনুযায়ি ১৫, ১৮ তারিখটিও তার মৃত্যুর দিন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ইতিহাসে তার পাষন্ডতা, ক্রোধ এবং বিদ্বেষ ছিল প্রসিদ্ধ। (কালায়েদুন নুহুর, খন্ড রবিউল আওয়াল, পৃষ্ঠা ৮৯, তাতেম্মাতুল মুনতাহা, পৃষ্ঠা ২২৪, ২২২)

১৭ই রবিউল আওয়াল

১- হজরত মোহাম্মাদ (সা.)এর জন্মদিবস: হজরত মোহাম্মাদ (সা.) বর্তমান সৌদি আরবে অবস্থিত মক্কা নগরীর কুরাইশ বংশের বনু হাশিম গোত্রে জন্ম গ্রহণ করেন। প্রচলিত ধারনা মতে, তিনি ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের ২৯ আগষ্ট বা আরবি রবিউল আওয়াল মাসের ১৭ তারিখ জন্মগ্রহণ কনে। সকল আলেমদের মতে রাসুল (সা.) শুক্রবার প্রভাতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জন্মের সময় বিশ্বে অবিস্মরণিয় কিছু ঘটনা ঘটে যা ইতিহাসে লিপিবদ্ধ রয়েছে। তাঁর পিতার নাম আব্দুল্লাহ মাতার নাম ছিল আমিনা। (এলামুল ওয়ারা, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৩)

২- ইমাম জাফর সাদিক (আ.)এর জন্মদিবস: সন ৮৩ হিজরির উক্ত তারিখে ইমাম জাফর সাদিক (আ.) মদিনায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর নাম জাফর, উপনাম আবু আব্দুল্লাহ, উপাধি সাদিক। তাঁর পিতার নাম ইমাম বাকের (আ.) এবং মাতার নাম ছিল উম্মে ফারওয়া। (আল ইরশাদ, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ১৭৯)

২২শে রবিউল আওয়াল

বণি নাযিরের যুদ্ধ: ৪র্থ হিজরি বণি নাযির নামক যুদ্ধটি সংঘটিত হয় এবং ইয়াহুদিদেরকে মদিনা থেকে বহিস্কার করা হয়। (আস সাহিহ মিনাস সিরাহ, খন্ড ৮, পৃষ্ঠা ৩৬)

২৩শে রবিউল আওয়াল:

কুম নগরিতে হজরত মাসুমা (সা.আ.) এর আগমণ: ফাতেমা-এ সানী, হজরত ইমাম মুসা ইবনে জাফার (আ.) এর কন্যা। তিনি শিয়াদের মাঝে কারিমায়ে আহলে বাইত (আ.) নামে সুপ্রসিদ্ধ। এছাড়া তিনি তাহেরাহ, হামিদাহ, বিররাহ, রাশিদাহ, তাকিয়াহ, নাকিয়াহ, সাইয়্যিদাহ, রাদ্বিয়াহ, উখতুর রেদ্বা, সিদ্দিকাহ, শাফিয়াহ ইত্যাদি উপাধীর অধিকারী। তার মায়ের নাম ‘নাজমা’। তিনি ১৭৩ হিজরী’র ১লা যিলক্বদ মদিনায় জন্মগ্রহণ করেন। হজরত ফাতেমা (সা. আ.) যখন ১০ বছরের ছিলেন, তখন তাঁর সম্মানিত পিতা ইমাম মুসা ইবনে জাফার (আ.) শহীদ হন। এর পর হতে পিতার ওসিয়ত অনুযায়ী এ মহিয়সী এবং ইমামের অপর সন্তানাদির অবিভাবকত্ব ইমাম রেজা (আ.) এর উপর অর্পিত হয়। হজরত ফাতেমা মাসুমা (সা. আ.) ছাড়াও ইমাম মুসা ইবনে জাফার (আ.) এর আরো কন্যা ছিলেন। তাদের মধ্যে শুধুমাত্র তিনিই ছিলেন বিশেষ মর্যাদার অধিকারী।

সন ২০১ হিজরির উক্ত তারিখে ইমাম রেযা (আ.)এর বোন হজরত ফাতেমা মাসুমা (সা.আ.) পবিত্র কুম নগরিতে আগমণ করেন এবং দিন পরে তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন। (বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৫৭, পৃষ্ঠা ২১৯)

২৫শে রবিউল আওয়াল:

১- দুমাতুল জুন্দাল-এর যুদ্ধ: সন ৫ হিজরিরে উক্ত তারিখে যুদ্ধটি সংঘটিত হয়। উক্ত এলাকায় কিছু লোকজন একত্রিত হয়ে বিভিন্ন কাফেলাদেরকে লুট করতো। রাসুল (সা.) উক্ত ঘটনাটি সম্পর্কে অবগত হলে তিনি মদিনাতে নিজের স্থলে সাবা বিন আরফাতা গাফফারিকে রেখে নিজেই ২৫শে রবিউল আওয়াল এক হাজার সৈন্য নিয়ে মদিনা থেকে বাহিরে আসেন। যখন রাহজানরা রাসুল (সা.) এর আগমণ সম্পর্কে অবগত হয় তখন তারা পালিয়ে যায়। তখন মুসলমানরা তাদের সকল মালামালকে নিয়ে ২০শে রবিউস সানি মদিনায় ফিরে আসে। (কালায়েদুন নুহুর, খন্ড রবিউল আওয়াল, পৃষ্ঠা ১৫০)

২- ইমাম হাসান (আ.) ও মাবিয়ার মাঝে সন্ধি: ইমাম হাসান (আ.)এর সাথে মাবিয়ার সন্ধি সংঘটিত হয়। মুয়াবিয়ার সঙ্গে ইমাম হাসান (আ.)’র সন্ধির কিছু শর্ত:

-আহলে বাইতের অনুসারীদের রক্ত সম্মানিত ও হেফাজত থাকবে এবং তাদের অধিকার পদদলিত করা যাবে না।

-মুয়াবিয়াকে হজরত আলী (আ.)’র বিরুদ্ধে মিথ্যাচার, গালি-গালাজ, অপবাদ ও প্রচারণা বন্ধ করতে হবে।

-জামাল ও সিফফিনের যুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন ইরানি প্রদেশগুলোর সরকারি আয় থেকে তাদের পরিবারগুলোকে এক মিলিয়ন দেরহাম অর্থ সাহায্য দিতে হবে।

- ইমাম হাসান (আ.) মুয়াবিয়াকে আমিরুল মু’মিনিন বলে উল্লেখ করবেন না।

-মুয়াবিয়াকে অনৈসলামী আচার-আচরণ পরিহার করতে হবে এবং আল্লাহর কিতাব ও সুন্নাত অনুযায়ী আমল করতে হবে।

-মুয়াবিয়া কোনো ব্যক্তিকেই (খেলাফতের জন্য) নিজের উত্তরসূরি মনোনীত করতে পারবে না। মুয়াবিয়া মারা গেলে খেলাফত ফেরত দিতে হবে ইমাম হাসান (আ.)’র কাছে।

-ইমাম হাসান (আ.) যদি মারা যান, তাহলে মুসলিম জাহানের খেলাফত হস্তান্তর করতে হবে রাসুল(সা.)এর ছোট নাতি হজরত ইমাম হুসাইন(আ.)’র কাছে।

কিন্তু মুয়াবিয়া প্রকাশ্যেই নির্লজ্জভাবে সন্ধির শর্তগুলো লঙ্ঘন করেছিল। মুয়াবিয়া ৫০ হিজরিতে গোপনে বিষ প্রয়োগ করে ইমাম হাসান(আ.)-কে শহীদ করে। ৬০ হিজরিতে মৃত্যুর কিছু দিন আগে মুয়াবিয়া তার মদ্যপ ও লম্পট ছেলে ইয়াজিদকে মুসলমানদের খলিফা বলে ঘোষণা করে।

মুয়াবিয়া বলত যেখানে টাকা দিয়ে কাজ হয় সেখানে আমি টাকা বা ঘুষ ব্যবহার করি, যেখানে চাবুক দিয়ে কাজ হয় সেখানে আমি তরবারি ব্যবহার করি না, আর যেখানে তরবারি দরকার হয় সেখানে তরবারি ব্যবহার করি। (বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৪৪, পৃষ্ঠা ৬৫)

প্রচারে বিধি তুমার ধর্ম কি

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

ইসলামে হযরত আবু তালিব আঃ এর অবদান:::::::::::::_________পর্ব (((((৩)))))_____________:::::::::::::::মহানবী (সা.) জন্মের পূর্বেই পিতাকে হারিয়েছেন। মায়ের কাছে তিনি পিতা আব্দুল্লার ইন্তেকালের কথা জানতে পেরেছেন। ছয় বছর বয়সে তিনি মাতা আমেনার স্নেহ থেকেও বঞ্চিত হন।ফলে তাঁর লালন-পালনের ভার পিতামহ জনাব আব্দুল মোতালিব গ্রহণ করেন। মাত্র দুই ছর পর তিনিও এ পৃথীবি ছেড়ে চলে গেলেন। শিশু মোহাম্মদ (সাঃ) অসহায় হয়ে পড়লেন। মহিমান্বিত আল্লাহ তাঁর হাবিবের জন্য নিজ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছেন। আট বছর বয়সে শুরু হলো নবী (সা.)-এর জীবনের এক নতুন অধ্যায় , তাঁর দায়িত্ব গ্রহণ করলেন পিতৃব্য হযরত আবু তালিব। মোহাম্মদ (সা.)-কে চাচা আবু তালিব ও চাচি ফাতেমা বিনতে আসাদ প্রাণাধিক ভালবাসতেন। মোহাম্মদ (সা.)-কে তিনি কখনো মায়ের শূন্যতা বুঝতে দেননি। নিজেদের সীমাবদ্ধতা থাকলেও মোহাম্মদ (সা.)-কে তা অনুধাবন করতে দেননি। এই মহিমান্বিত পরিবারের অকৃত্রিম ভালবাসা , আদর-যন্ন আর লালন-পালন ও ছত্রছায়ায় প্রিয় নবী (সা.)-এর শিশু , কিশোর ও যৌবনকাল অতিবাহিত হয়েছিল। জীবনের সেই সময়গুলো কত সুখময় ছিল নবী (সা.) তা বুঝতে পেরেছিলেন , যখন মাতৃসুলভ চাচি ইন্তেকাল করলেন।নবী (সা.) সেই মহিয়সী চাচিকে‘ মা’ বলেই ডাকতেন। তাঁর ইন্তেকালে নবী (সা.) দীর্ঘদিন অশ্রুসজল ছিলেন। হযরত আবু তালিব যেমনি পিতার ন্যায় স্নেহ ভালবাসা দিয়ে নবীকে আগলে রেখেছেন , তেমনি তাঁর ভরণ-পোষণ , পোশাক-পরিচ্ছেদ ও অন্যন্য প্রয়োজন মিটিয়েছেন অকৃপণ ভাবে। এমনকি নিজের সন্তানের চেয়েও নবীকে দিয়েছেন অগ্রাধিকার। নিজেরা কষ্টে থাকলেও নবী (সা.)-এর কষ্টে থাকা তিনি সহ্য করতে পারতেন না।এখানে আমি একটি হাদীস উপস্থাপন করছি: রাসূল (সা.) বলেছেন ,“ যে ব্যক্তি তার জান-মাল , ইজ্জত-সম্মান ও সন্তানসন্ততি এবং সকল মানুষের চাইতে আমাকে অধিক ভালবাসে না তার ঈমান পরিপূর্ণ নয়” । উল্লিখিত হাদীসের আলোকে প্রমাণ হয় হযরত আবু তালিব ছিলেন একজন পরিপূর্ণ ঈমানদার। একজন স্নেহবৎসল পিতা , দয়ালু চাচা ও একজন দরদি অভিভাবক। তাঁরা উভয়ই চাচা এবং ভ্রাতুষ্পুত্র একে অন্যের প্রতি এতটাই অনুরোক্ত ছিলেন যেন মনে হতো তাঁদের জীবন পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। দেশে বিদেশে হযরত আবু তালিব আঃ যেখানেই সফর করতেন নবীকে সাথে রাখতেন। যে কারণে আরবের লোকেরা মোহাম্মদ (সা.)-কে‘ আবু তালিবের ইয়াতিম’ নামেও ডাকত। ভাতিজাকে কখনও তিনি একা ছাড়তেন না , এমনকি ঘুমানো কালেও পাশে নিয়ে ঘুমাতেন এরূপে নবী (সা.)-এর 8 বছর বয়স থেকে 25 বছর বয়স পর্যন্ত সুদীর্ঘ 17 টি বছর তিনি হযরত আবু তালিবের গৃহে অবস্থান করেন।আর যেখানে এত বছর নবী (সা.) অবস্থান করলেন , সেখানে যে খাওয়া দাওয়া করেছেন তা নিশ্চই হালাল ছিল। কারণ নবী-রাসূলগণ হারাম খাদ্য গ্রহণ করেন না। তাহলে যারা বলেন ,“ আবু তালিব ঈমান আনেননি” । তারা নবী (সা.)-কে কোথায় পৌঁছালেন ? কারণ পবিত্র কোরআনে সূরা তওবার 28 নং আয়াতে আল্লাহ পাক উল্লেখ করছেন :) يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْمُشْرِ‌كُونَ نَجَسٌ(“ হে ইমানদারগন! নিশ্চই মুশরিকরা হচ্ছে অপবিত্র” ।📚📚📚📚তাই ঐ সকল ওলামাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই আপনাদের উক্তি সত্য হলে , নবী (সা.) কি 17 বছর হালাল খাদ্য গ্রহণ থেকে বঞ্চিত ছিলেন ? যা আদৌ বিশ্বাস যোগ্য নয়। পবিত্র কোরআনে আমরা জানতে পেরেছি নবী মূসা (আ.)-কে ফেরাউনের স্ত্রী আছিয়া (আ.) যখন লালন-পালনের সিদ্ধান্ত নিলেন এবং এই শিশুকে দুধ পান করানোর জন্য ধাত্রীর আহবান করলেন অতঃপর অসংখ্য ধাত্রীর আগমণ ঘটল কিন্তু কেউ শিশু মূসাকে দুগ্ধ পান করাতে সক্ষম হল না। তখন সেখানে উপস্থিত নবী মূসা (আ.)-এর আপন ভগ্নী বললেন ,“ আমি আপনাদের এমন এক ধাত্রীর সন্ধান দিতে পারি , হয়তো এই শিশু তাঁর দুগ্ধ পান করবে” । আর বাস্তবেও তাই ঘটল , অর্থাৎ আল্লাহ তাঁকে মায়ের কাছে ফিরিয়ে নিলেন এবং মায়ের দুগ্ধই পান করালেন। উক্ত ঘটনায় ইহাই প্রমানিত হয় যে , আল্লাহর মনোনীত নবী-রাসূলগণ আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত যখন যা ইচ্ছা খাদ্য কিংবা পানীয় গ্রহণ করেন না।দুঃখজনক হলেও সত্য যে , আমাদের প্রিয় নবী (সা.) সম্পর্কে কিছু সংখ্যক মুসলমান নামধারী উম্মত এমন সব প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন , যা শুনে অন্য ধর্মের অনুসারীরাও লজ্জাবোধ করেন। যেমন রাসূল (সা.)-কে সদা সর্বদা অভাবী , ক্ষুধার্ত ও অসহায় হিসেবে উপস্থাপন , তালিওয়ালা জামা পরিধারণ , রাসূল (সা.)-এর সিনাছাক করে ময়লা দূরিকরণ , রাসূল (সা.)-কে নিরক্ষর নির্ধারণ ও চল্লিশ বছর পর নবী নির্ধারণ সহ বেশ কিছু অসঙ্গতিপূর্ণ কিচ্ছা-কাহিনী আমাদের সমজে প্রচলিত আছে। অথচ পবিত্র কোরআনে বেশকিছু সংখ্যক নবীর নাম ও বর্ণনা রয়েছে , যাঁদের কারো কখনো সিনাছাক করতে হয়নি এবং কেহ নিরক্ষর ছিলেন এমন প্রমাণও নেই। তাই প্রিয় নবী (সা.)-এর উম্মত হিসাবে প্রত্যেক মুসলমানের অন্তত নূন্যতম আকিদা এই হওয়া উচিৎ ছিল যে , আমাদের সমাজে যে সকল বক্তব্য রাসূল (সা.)-এর মান-মর্যাদাকে হেয় প্রতিপন্ন করে এবং ভিন্ন ধর্মের লোকেদের কাছে রাসূল (সা.)-এর শাণ ও মানকে প্রশ্নের সন্মূখিন করে তোলে , অন্তত সে সকল প্রচার-প্রচারণা থেকে বিরত থাকা।উদহরণ স্বরুপ বলা যেতে পারে যে , ইসলামের ইতিহাসের প্রথম তিন খলিফার সন্মানিত পিতাগণ , কে কোন অবস্থানে ছিলেন বা তাঁরা প্রকাশ্যে কলেমা পড়ে ইসলামের ছায়াতলে এসেছিলেন কি না এবিষয়ে ইতিহাসে তেমন কোন আলোচনা পরিলক্ষিত হয় না। অথচ চতুর্থ খলিফার সম্মানিত পিতা সম্পর্কে যারা মর্যাদাহানীকর বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন তারা কি নিশ্চিত বলতে পারেন যে , দ্বীন ইসলাম এতে কত টুকু উপকৃত হয়েছে ?আমাদের প্রিয়নবী হযরত মোহাম্মাদ (সা.)-এর 8 বছর বয়স থেকে শুরু করে তাঁর 50 বছর বয়স পর্যন্ত সুদীর্ঘ 42 বছরের এক অকৃত্রিম অভিভাবক ছিলেন হযরত আবু তালিব। তিনি যে কেবলমাত্র নবী (সা.)-এর অভিভাবক ছিলেন এমন নয় , তিনি ছিলেন সত্য ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠাতা , কল্যানের অগ্রদূত , মজলুমের বন্ধু ও জালেমের শত্রু। নবী (সা.)-এর বিভিন্ন বক্তব্যের মাধ্যমেও তা প্রকাশ পেয়েছে।হযরত আবু তালিব সম্পর্কে কিছু লিখতে গিয়ে ক্ষুদ্র একজন লেখক হিসেবে যে বিষয়টি বারবার আমার অনুভূতিতে নাড়া দিয়েছে তা সমীপে প্রকাশ করছি।আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম খালিফা তুল বিলা ফাসাললা'নাতুল্লাহি আল্লাল কাজেবিননিবেদক______ কবির উদ্দিন

আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদদিন ওয়া আলে মোহাম্মদনবী-নন্দিনী হযরত ফাতিমা যাহরার মাহাত্ম্য যতই বর্ণনা করা হোক না তা অপূর্ণই থেকে যাবে ঠিক যেমনি জানা যায়নি তাঁর পবিত্র কবর কোথায় রয়েছে এবং তা গোপন বা অজ্ঞাত থাকার রহস্যই বা কী।তিনি কেবল সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নারী ছিলেন না। বলা হয় মহান আল্লাহর পর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হলেন মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা) এবং তাঁর পর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হলেন আমিরুল মু'মিনিন হযরত আলী (আ)। আর তাঁর পরই সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হলেন হযরত ফাতিমা। তাই এমন ব্যক্তিদের মহিমা ও মহত্ত্ব পুরোপুরি তুলে ধরা মহান আল্লাহর পর কেবল এই তিন শীর্ষ সৃষ্টির পক্ষেই সম্ভব। বলা হয় ইমাম হাসান ও হুসাইনসহ মাওলা মোহাম্মদ রাসুলুল্লাহর আহলে বাইতের ১১ জন সদস্য মা ফাতিমাকে তাঁদের জন্য আদর্শ বা হুজ্জাত বলে মনে করতেন।এমন কোনো নারীর কথা কি কল্পনা করা যায় যিনি তার দুই শিশু-সন্তানসহ তিন দিন ধরে ক্ষুধার্ত হওয়া সত্ত্বেও স্বামীকে খাবার সংগ্রহের কথা বলছেন না ইসলামের জন্য তাঁর গুরুত্বপূর্ণ কাজে মনোযোগ বিঘ্নিত হবে বলে? অথবা এমন নারীর কথা কি চিন্তা করা যায় যিনি পর পর তিন দিন শুধু পানি পান করে রোজা রাখা সত্ত্বেও ইফতারের সময় ক্ষুধার্ত সাহায্যপ্রার্থীকে খাদ্য দেয়ার জন্য সেই তিন দিন কেবল পানি দিয়েই ইফতার করেন? আসলে হযরত ফাতিমা যাহরা ছিলেন মানবজাতির চিরন্তন গৌরব ও আদর্শ মানুষের প্রতীক তথা মানবতা ও মনুষ্যত্বের পূর্ণতারঅন্যতম মডেল। এ ধরনের মানুষ পৃথিবীতে জন্ম না নিলে আদর্শের দিক থেকে মানবজাতির মধ্যে বিরাজ করতো ব্যাপক অপূর্ণতা এবং আদর্শিক শূন্যতা। মাওলা মোহাম্মদ সাঃ এর পুত্র সন্তানরা শৈশবেই ইন্তিকাল করায় মক্কার কাফিররা যখন মহানবীকে আবতার বা নির্বংশ বলে বিদ্রূপ করতো তখন মহান আল্লাহ তাঁকে দান করেন হযরত ফাতিমা যাহরা। পবিত্র কুরআনে তাঁকে উল্লেখ করা হয়েছে 'কাওসার' হিসেবে যার অর্থ মহত্ত্ব আর নেয়ামতের চির-প্রবহমান ঝর্ণা। আল্লামা ফখরুদ্দীন রাযী বলেছেন, হযরত ফাতিমার শানেই সুরা কাওসার নাযিল হয়েছে। তিনি বলেন, অনেক অত্যাচার সত্ত্বেও হযরত ফাতিমার বংশধারা পৃথিবীতে টিকে আছে, অন্যদিকে বনু উমাইয়্যা ধ্বংস হয়ে গেছে।অবশ্য পরবর্তী যুগে বনু আব্বাসও রাসূলের পরিবারের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন চালিয়েছিল। অবশেষে তারাও ধ্বংস হয়ে গেছে। যারা রাসূলের বিরুদ্ধে কথা বলত তাদের বংশধরদের কোন খবর পৃথিবীর মানুষ জানে না, নেয় না। রাসূলের বংশধরদের নিশ্চিহ্ন করার জন্য সব ধরনের চেষ্টা করেও তারা সফল হয়নি। একের পর এক রাসূলের বংশধরদের শহীদ করা সত্ত্বেও যারা পুত্রসন্তান নিয়ে গর্ব বোধ করত তাদের কোন খবর আজ বিশ্ববাসী জানে না, অথচ রাসূলের বংশধারা হযরত ফাতিমার মাধ্যমে কিয়ামত পর্যন্ত বজায় থাকবে। এ বংশেই ইমাম মাহদী (আ.) আবির্ভূত হবেন এবং তিনি সারা বিশ্বে আল্লাহর ধর্মকে প্রতিষ্ঠিত করবেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সকল নারীর সন্তানকে যুক্ত করা হয় বাবার সাথে শুধু ফাতিমা ছাড়া। ফাতিমার সন্তানদের আমার সাথে সম্পর্কিত করা হয়েছে।’আর সেজন্যই আমরা ইতিহাসে দেখতে পাই যে, হযরত ফাতিমার সন্তানদের মানুষ ‘ইয়াবনা রাসূলিল্লাহ’ অর্থাৎ ‘হে রাসূলের সন্তান’ বলে সম্বোধন করত।মহান আল্লাহর নির্দেশে মহানবী (সা.) তাঁর কন্যা সন্তানের নাম রাখেন ফাতিমা। ‘ফাত্‌ম্‌’ শব্দের অর্থ রক্ষা করা। এ সম্পর্কে মহানবী বলেন : ‘তাঁর নামকরণ করা হয়েছে ফাতিমা। কারণ, আল্লাহ তাঁকে ও তাঁর অনুসারীদের জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত রেখেছেন।’ হজরত ফাতিমা(সা) আদর্শ মানবাত্মার প্রতীকহযরত ফাতিমা ছিলেন নারী ও পুরুষ তথা গোটা মানব জাতির জন্য অসাধারণ ত্যাগ, বিশ্বস্ততা, অন্যায়ের ব্যাপারে আপোসহীনতা, সততা, দানশীলতা, ধৈর্য, চারিত্রিক পবিত্রতা, আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্টিসহ বহু মহান স্বর্গীয় গুণের আদর্শ। স্নেহময়ী জননীর মত বিশ্বনবীর সেবা-যত্ন করা এবং বিপদের সময় তাঁর সহায়তায় এগিয়ে আসার জন্য মহীয়সী নারী ফাতিমা'র অন্য একটি উপাধি উম্মে আবিহা বা পিতার জননী। বিশ্বনবী (সা:) তাঁকে সর্বযুগের শ্রেষ্ঠ নারী বলে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহর দরবারে তাঁর বিশেষ মর্যাদার কারণেই ফাতিমাকে দেখলে দাঁড়িয়ে তাকে সালাম দিতেন মহানবী (সা)। রাসুলে খোদা বলেছেন, 'ফাতিমা আমার দেহের অংশ, যা কিছু তাঁকে সন্তুষ্ট করে তা আমাকে সন্তুষ্ট করে এবং যা কিছু আমাকে সন্তুষ্ট করে তা আল্লাহকেও সন্তুষ্ট করে, আর যা কিছু ফাতিমা কে কষ্ট দেয়, তা আমাকে কষ্ট দেয়, আর যা আমাকে কষ্ট দেয়, তা আল্লাহকেও কষ্ট দেয়।' হযরত ফাতিমা বেহেশতে সর্ব প্রথম প্রবেশ করবেন বলে বিশ্বনবী উল্লেখ করেছেন। অনেকেই মনে করেন প্রিয় কন্যা ফাতিমাকে নিজের দেহের অংশ বলে মহানবী (সা) এটাও বুঝিয়েছেন যে পিতার রিসালাতের অন্যতম কাণ্ডারি ছিলেন ফাতিমা। এই মহীয়সী নারীর অনন্য ত্যাগ-তিতিক্ষা ও সেবা না থাকলে ইসলাম বিলুপ্ত হয়ে যেত।হযরত ফাতিমাকে কেউ কেউ কষ্ট দেবেন- এটা জানতেন বলেই বিশ্বনবী (সা) তাঁকে রাগানোর পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘ফাতিমা আমার অস্তিত্বের অংশ। যে তাঁকে রাগান্বিত করে সে আমাকে রাগান্বিত করে এবং ফাতিমা কোন ব্যাপারে ক্রুদ্ধ হলে আল্লাহও ক্রুদ্ধ হন এবং ফাতিমার আনন্দে আল্লাহও আনন্দিত হন।’অনেক মহৎ গুণের আদর্শ হযরত ফাতিমার রয়েছে অনেক উপাধি। যেমন, তাঁর উপাধি ছিল আস-সিদ্দিক্বা বা সত্য-নিষ্ঠ,আল-মুবারাকাহ বা বরকতপ্রাপ্ত,আত-ত্বাহিরা বা পবিত্র,আল-মারজিয়া বা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট, আজ জাকিয়া বা সতী, মুহাদ্দিসাহ বা হাদিসের বর্ণনাকারী, সাইয়্যিদাতুন নিসায়িল আলামিন বা নারীকুলের মধ্যে শ্রেষ্ঠ, খাতুনে জান্নাত বা বেহেশতি নারীদের নেত্রী, আয যাহরা বা দ্যুতিময় ইত্যাদি। আর পিতা মহানবীর প্রতি অশেষ ভালোবাসা ও সেবার কারণে তাঁকে বলা হত উম্মে আবিহা বা পিতার মাতা।হযরত ফাতিমা যখন নামাজের জন্য দাঁড়াতেন তখন তাঁর জ্যোতি আকাশের ফেরেশতা ও অন্যান্যদের দিকে ছড়িয়ে পড়ত। আর এ কারণে তাঁকে যাহরা উপাধি দেয়া হয়।রাসুল (সা)’র ওফাতের পর তাঁকে সান্ত্বনা দিতে আসতেন ওহির ফেরেশতা। ওহির ফেরেশতা তাঁকে ভবিষ্যৎ বিষয়ে অনেক কিছু জানান। আর তার থেকে সেসব বিষয় লিখে রাখেন হযরত আলী (আ)। আর এ জন্যই ফাতিমাকে বলা হয় মুহাদ্দিসা।হযরত ফাতিমা খুবই সাধারণ জীবন যাপন করতেন। সংসারের যাবতীয় কাজ তিনি নিজের হাতে করতেন। মশক দিয়ে পানি তুলতে তুলতে তাঁর শরীরে দাগ পড়ে গিয়েছিল। তিনি যাঁতার মাধ্যমে এত পরিমাণ আটা তৈরি করতেন যে, তাঁর হাতে ফোস্কা পড়ে যেত। আর সেই আটা দিয়ে রুটি তৈরি করে সেগুলো মদীনার দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করতেন। হযরত ফাতিমার কাপড়ের পোশাকে থাকতো তালি। পার্থিব কোন বস্তুই তাঁকে আকৃষ্ট করতে পারত না। আর এজন্যই রাসূল (সা.) তাঁকে ‘বাতুল’ উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন।হযরত ফাতিমা সারারাত জেগে নামায পড়তেন, মহান আল্লাহর যিকির করতেন এবং রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উম্মতের জন্য দো‘আ করতেন। তিনি এত বেশি নামায পড়তেন যে, তাঁর পা ফুলে যেত। সংসারের কাজ করার সময়ও তাঁর মুখে আল্লাহর যিকির থাকত।রাসূলের স্ত্রী হযরত উম্মে সালামাহ্ বলেন : রাসূলের ওফাতের পর ফাতিমাকে দেখতে যাই এবং তাঁর অবস্থা জানতে চাই। তিনি জবাব দিলেন : অত্যন্ত দুঃখ-কষ্টে দিন অতিবাহিত হচ্ছে।এ রকম কষ্টের মধ্য দিয়েই রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর ওফাতের অল্প কিছুদিন পরই হযরত ফাতিমা এ পৃথিবী থেকে বিদায় নেন। রাসূলে খোদা ওফাতের আগে হযরত ফাতিমার কানে কানে বলে গিয়েছিলেন যে, তিনিই তাঁর সাথে প্রথম মিলিত হবেন। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় রাসূলকে এও জানিয়েছিলেন যে, কীভাবে হযরত ফাতিমা তাঁর সাথে এত তাড়াতাড়ি মিলিত হবেন। আর সেজন্যই রাসূল (সা.) বারবার তাঁর উম্মতকে সতর্ক করছেন যে,তারা যেন হযরত ফাতিমাকে কষ্ট না দেয়,তাঁকে অসন্তুষ্ট না করে। হযরত ফাতিমা যাহরা পিতার শারীরিক বিদায়ের কারণে যতটা না দুঃখ পেয়েছিলেন তার চেয়েও বেশি ব্যথা পেয়েছিলেন পিতার আদর্শ তথা ইসলামের শিক্ষা ম্লান ও বিকৃত হয়ে পড়ার কারণে। রাসুলে খোদার কাছেই তিনি শুনেছিলেন তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের ওপর অনেক বিপদ ও মুসিবত তথা ইসলামের ওপরই অনেক দুর্যোগ নেমে আসবে। আর সেইসব বিপদ মুকাবিলার মত কঠিন ধৈর্যের খোদায়ী পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হয়েছিলেন সর্বকালের সেরা মহামানবী হযরত ফাতিমা ঠিক যেভাবে সিফফিন ও কারবালা প্রান্তরসহ যুগে যুগে নানা বিপদ, সংকট ও শত্রুতার মোকাবেলায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন বিশ্বনবী (সা)’র পবিত্র আহলে বাইতের অন্যান্য সদস্য।কোনো কোনো ঐতিহাসিক বর্ণনা অনুযায়ী রাজনৈতিক কারণে হযরত ফাতিমাকে আহত করা হয়েছিল প্রভাবশালী মহলের পক্ষ হতে এবং পরবর্তীকালে এ আঘাতজনিত কারণেই তিনি শাহাদাত বরণ করেন। ফাতিমা আমার দেহের অঙ্গ, চোখের জ্যোতি, অন্তরের ফল এবং আমার রূহস্বরূপ: মহানবী (সা)অনেকেই মনে করেন শত্রুতার প্রেক্ষাপটে হযরত ফাতিমাকে দাফন করা হয়েছিল মধ্যরাতে গোপনীয়ভাবে অতি গোপন স্থানে যা আজো গোপন রয়েছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত গোপন থাকবে। হযরত ফাতিমা জানতেন কখন তাঁর মৃত্যু হবে। আর এ জন্য তিনি নিজে গোসল করে নতুন ও পরিষ্কার পোশাক পরে কিবলামুখী হয়েছিলেন।তিনি নিজের মৃত্যু কবে হবে এবং তাঁর দুই প্রিয় সন্তান হযরত হাসান ও হুসাইন কিভাবে মারা যাবেন সেইসব তথ্যসহ ভবিষ্যৎ ইতিহাসের অনেক খবর রাখতেন। হুসাইন (আ.)'র হত্যাকারীদের অভিশাপ দিয়ে গেছেন তিনি। মদিনার নারী সমাজ ধর্মীয় বিষয়সহ নানা বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করত হযরত ফাতিমার কাছ থেকে। ফাদাক সম্পর্কিত তাঁর ভাষণ এই মহামানবীর অতুল জ্ঞান, খোদাভীরুতা এবং দূরদর্শিতাকেই তুলে ধরে।মাওলা মোহাম্মদ (সা.) বলেছেন, মহান আল্লাহ আলী, তাঁর স্ত্রী ও তাঁদের সন্তানদেরকে মানুষের জন্য হুজ্জাত বা দলিল করেছেন এবং তাঁরা হল জ্ঞানের দরজা।মহান আল্লাহর ইচ্ছায় হিজরতের দ্বিতীয় বর্ষে বা দ্বিতীয় হিজরিতে হযরত ফাতিমা যাহ্‌রা (সা.আ.) বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হন আমিরুল মু'মিনিন হযরত আলী (আ.)'র সঙ্গে। আলী (আ.) ছিলেন সত্য, ন্যায়বিচার ও খোদাভীরুতার প্রতীক। আলী (আ.)'র ঘরে তিনি হন আদর্শ স্ত্রী ও মাতা। গড়ে তোলেন বেহেশতি যুবকদের সর্দার হযরত ইমাম হাসান, ইমাম হুসাইন (আ.) এবং জাইনাব (সা.)'র মত ইসলামের ইতিহাসের প্রবাদতুল্য গৌরব সৃষ্টিকারী অনন্য সন্তান। বিয়ের দিন এক দরিদ্র নারী নবী-নন্দিনীর কাছে পোশাক সাহায্য হিসেবে চাইলে তিনি নিজের বিয়ের জন্য তৈরি নতুন পোশাকটি তাকে দান করে দেন। এর মাধ্যমে তিনি কুরআনের এই আয়াতটি বাস্তবায়ন করেছিলেন যেখানে সর্বোত্তম ও প্রিয় বস্তু থেকে দান করতে বলা হয়েছে। ফাতিমা যাহ্‌রা (সা.আ.) মুসলিম সমাজের বিচ্যুতি ঠেকানোর জন্য ও সত্যের জন্য সংগ্রামের সামাজিক দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রেও নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হন। নারীমুক্তির আদর্শ হিসেবে এই মহামানবীর জন্মদিন ইরানসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে পালিত হয় নারী ও মা দিবস হিসেবে। মাওলা হযরত মুহাম্মাদ (সা:) হযরত ফাতিমা (সা:) সম্পর্কে বলেছেন, ফাতিমা আমার দেহের অঙ্গ, চোখের জ্যোতি, অন্তরের ফল এবং আমার রূহস্বরূপ। সে হচ্ছে মানুষরূপী স্বর্গীয় হুর। প্রসিদ্ধ হাদীস গ্রন্থ বুখারীতে এসেছে, মহানবী (সা:) বলেছেন, ফাতিমা আমার অংশ। যে কেউ তাকে অসন্তুষ্ট ও ক্রোধান্বিত করলো সে আমাকেই অসন্তুষ্ট ও ক্রোধান্বিত করলো। একই ধরনের হাদীস বর্ণিত হয়েছে মুসলিম শরীফ ও আহমদ ইবনে শুয়াইব নাসায়ীর ফাজায়েল গ্রন্থসহ আরো অনেক হাদীস গ্রন্থে। হাদীসে এটাও এসেছে যে যা আল্লাহর রসূল (সা:)কে অসন্তুষ্ট করে তা আল্লাহকেও অসন্তুষ্ট বা ক্রুদ্ধ করে। হযরত ফাতিমা (সা:)'র উচ্চতর মর্যাদা উপলব্ধি করার জন্য কেবল এ হাদীসই যথেষ্ট। বিশ্বনবী (সা:)'র আহলে বাইত (আঃ)'র সদস্য হযরত ফাতিমা যে নিষ্পাপ ছিলেন তাও এসব বর্ণনা থেকে স্পষ্ট। হযরত ফাতিমা (সা:)'র সান্নিধ্য ও সেবা না পেলে আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী (আঃ)'র জীবনও পুরোপুরি বিকশিত ও পরিপূর্ণতা লাভ করতো না। তাঁরা ছিলেন একে-অপরের প্রতি পুরোপুরি সন্তুষ্ট। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা:) হযরত ফাতিমা (সা:)-কে মানুষের আকৃতিতে ফেরেশতা বলেও প্রশংসা করেছেন। তিনি বলতেন, আমি যখনই বেহেশতের সুবাস পেতে চাইতাম তখনই কন্যা ফাতিমার ঘ্রাণ নেই।আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগী করা ছাড়াও প্রায়ই রোজা রাখা ও গরীব-দুঃখীকে অসাধারণ মাত্রায় দান-খয়রাত করা ছিল হযরত ফাতিমা (সা:)'র একটি বড় বৈশিষ্ট্য। জনসাধারণ বা কারো উদ্দেশ্যে যে কোনো বক্তব্য রাখার আগে দীর্ঘক্ষণ ধরে মহান আল্লাহর বিভিন্ন নেয়ামতের কথা খুব সুন্দর ও হৃদয়স্পর্শী ভাষায় তুলে ধরে আল্লাহর প্রশংসা করা ছিল তাঁর অন্য একটি বড় বৈশিষ্ট্য। বিশ্বনবী (সা:)'র আহলে বাইতের অন্য সদস্যদের মত তিনিও কখনও অন্যায়ের সাথে আপোষ করেন নি। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করা বা সক্রিয় থাকার মধ্যে তিনি খুঁজে পেতেন আনন্দ। হযরত ফাতিমা (সা:) বলেছেন, আল্লাহর সেবায় মশগুল হয়ে যে সন্তুষ্টি পাই তা আমাকে অন্য সব সন্তুষ্টি বা আনন্দ থেকে বিরত রাখে এবং সব সময় মহান আল্লাহর সুন্দর দৃষ্টি আমার দিকে নিবদ্ধ রাখার প্রার্থনা ছাড়া আমার অন্য কোনো প্রত্যাশা নেই। ফাতিমা সিদ্দিকা (সা. আ.) ঐশী পন্থায় অনেক জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। 'মাসহাফই ফাতিমা' নামে খ্যাত গ্রন্থটির সমস্ত তথ্য সন্নিবেশিত হয়েছে জিবরাইল ফেরেশতার সঙ্গে ফাতিমা (সা. আ.)'র কথোপকথনের মাধ্যমে যা লিখে গেছেন হযরত আলী (আ.)। রাসূল (সা.)'র মৃত্যুর পর পিতার বিয়োগ-ব্যথায় কাতর ফাতিমাকে সান্ত্বনা দিতে আসতেন স্বয়ং জিবরাইল (আ.)। হযরত ফাতিমা ইমাম হুসাইন (আ.)'র হত্যাকারীদের অভিশাপ দিয়ে গেছেন। মদিনার নারী সমাজ ধর্মীয় বিষয়সহ নানা বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করত ফাতিমা (সা.আ.)'র কাছ থেকে। ফাদাক ও মানজিল শীর্ষক তাঁর ভাষণ এই মহামানবীর অতুল জ্ঞান, খোদাভীরুতা এবং দূরদর্শিতাকেই তুলে ধরে।নবী-নন্দিনী (সা:) বলেছেন, পৃথিবীতে তিনটি জিনিস আমার খুবই প্রিয়। আল্লাহর পথে ব্যয়, রাসূলে খোদা (সা:)র চেহারার দিকে তাকানো এবং কুরআন তিলাওয়াত। পবিত্র কুরআনের আয়াত শ্রবণ মুসলমানদেরকে মুক্তির তীরে পৌঁছে দেয়। ফাতিমা (সা. আ.) রাসূল (সা.)'র উম্মতের উদ্দেশে বলেছেন: আল্লাহ ঈমানকে তোমাদের জন্য শির্ক হতে পবিত্র হওয়ার ও নামাজকে অহংকার থেকে পবিত্র হওয়ার এবং আমাদের আনুগত্য করাকে ধর্মের ব্যবস্থায় বা ধর্মকে প্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যম করেছেন, আমাদের নেতৃত্বকে অনৈক্যের পথে বাধা ও আমাদের সঙ্গে বন্ধুত্বকে ইসলামের জন্য সম্মানের মাধ্যম করেছেন। ফাতিমা বা তাঁর বংশধরদের কেউই ঐশী সম্মানকে পার্থিব ভোগের কাজে লাগান নি। আত্মত্যাগের বিশালত্বে ফাতিমা এবং তাঁর বংশধররা ইতিহাসে অনন্য। ফাতিমার ত্যাগের শিক্ষাই হল কারবালার শিক্ষা। এ শিক্ষা আজও জুলুম-নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের আদর্শ। সত্যকে জানতে হলে, স্রষ্টার পথ চিনতে হলে এবং স্বাধীন ভাবে বেঁচে থাকতে হলে ধরতে হবে হযরত ফাতিমার পথ। তাই হজরত ফাতিমা(সা) আদর্শ মানবাত্মার প্রতীকবেশুমার লানত বর্ষিত হোক দুশমনে আহলে বায়েত পারআল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদদিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম31=12=202