আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদরবিউল আওয়াল মাসের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলিপহেলা রবিউল আওয়াল১- রাসুল (সা.)এর দাফন: পহেলা রবিউল আওয়ালের মধ্যে রাতে রাসুল (সা.)এর পবিত্র দেহকে হজরত আলি (আ.) দাফন করেন। কেননা অন্যান্য ব্যাক্তিরা রাসুল (সা.)এর পবিত্র দেহকে ফেলে রেখে খেলাফত নির্বাচনের জন্য বণি সাকিফায় একত্রিত হয়েছিল। (তাবাকাত ইবনে সাআদ, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৭৮)শেইখ মুফিদ (রহ.) বলেন: অনেকেই রাসুল (সা.) এর জানাযায় অংশগ্রহণ করেননি কারণ তখন তারা খলিফা নির্বাচনের জন্য বণি সাকিফাতে উপস্থিত ছিল। (তাকরিবুল মাআরেফ, পৃষ্ঠা ২৫৬)২- লাইলাতুল মাবিত: পহেলা রবিউল আউয়ালের রাতটি ইসলামের ইতিহাসে ‚লাইলাতুল মাবিত“ নামে পরিচিত। রাসুল (সা.)এর বেসাতের ১৩ তম বর্ষে হিজরতের ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি সংঘটিত হয়। রাসুল (সা.) উক্ত রাতে মদিনা থেকে মক্কার উদ্দেশ্যে রওনা হন এবং পথিমধ্যে ‚সউর“ নামক গুহায় আশ্রয় গ্রহণ করেন। অপর দিকে হজরত আলি (আ.) শত্রুদের ষড়যন্ত্রকে নস্যাত করার লক্ষ্যে রাসুল (সা.)এর বিছানায় নিদ্রা যান। তখন তাঁর সম্পর্কে সুরা বাকারা’এর ২০৭ নং আয়াত নাযিল হয়। (বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ১৯, পৃষ্ঠা ৩৯)৩- রাসুল (সা.) এর হিজরত: বেসাতের ১৩ তম বর্ষে উক্ত তারিখের রাতে রাসুল (সা.) মক্কা থেকে মদিনার উদ্দেশ্যে হিজরত করেন। (শাওয়াহেদুত তানযিল, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ১২৩)৪- হিজরি বর্ষের সূচনা: হিজরত ইসলামের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা। বিশ্বের ইতিহাসেও সবচেয়ে তাৎপর্যবহ, সুদূরপ্রসারী ঘটনা এটি। এটি দ্বীন ও মানবতার বৃহত্তর স্বার্থে ত্যাগ, বিসর্জনের এক সাহসী পদক্ষেপ। মুসলমানরা মক্কার কাফেরদের পাশবিক নির্যাতন-নিপীড়ন, অব্যাহত অমানবিক আচরণ, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবরোধ নীরবে সহ্য করার পর তাদের স্পর্ধা আরো বেড়ে যায়। তারা মহানবী (সা.)-কেও হত্যার ষড়যন্ত্র করে। আল্লাহ তায়ালা তাদের সব ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেন। মহানবী (সা.) ও মক্কার নির্যাতিত মুসলমানদের মদিনায় হিজরত করার নির্দেশ দেন। হিজরতের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের দ্বার উন্মোচিত হয়। সশস্ত্র যুদ্ধে তাগুতি শক্তির মোকাবিলার শুভ সূচনা হয়। উদিত হয় মক্কা বিজয়সহ ইসলামের বিশ্বজয়ের রঙিন সূর্য। হিজরতের ঐতিহাসিক ঘটনাকে স্মারক বানিয়ে হজরত উমরের যুগে ইমাম আলি (আ.) হিজরি নববর্ষের গোড়াপত্তন করেন। মুসলমানদের জন্য পৃথক ও স্বতন্ত্র চান্দ্রমাসের পঞ্জিকা প্রণয়ন করেন। (আস সহিহ মিন সিরাহ, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ১৭৪- ২০৬)৫- হজরত আলি (আ.) এর ঘরে আক্রমণ: সন ১১ হিজরির উক্ত তারিখের রাতে রাসুল (সা.) দাফন কার্য সম্পাদন হওয়ার পরে যারা বণি সাকিফাতে অংশগ্রহণ করেছিল। তারা দিনে হজরত আলি (আ.)এর কাছে জোরপূর্বক বাইয়াত নেয়ার জন্য তাঁর ঘরে হামলা করে। কিন্তু হজরত আলি (আ.) রাসুল (সা.) এর ওসিয়ত অনুযায়ি কোরআন সংঙ্কলনের কাজে নিমগ্ন ছিলেন। তিনি হামলাকারিদের বলেন: মহান আল্লাহর শপথ আমি সম্পূর্ণ কোরআন একত্রিত করার পূর্বে ঘর থেকে বাহির হব না। (এহতেজাজ, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৯৮, ২৮১)৬- ইমাম হাসান আসকারি (আ.)কে বিষ প্রদান: রেওয়ায়েতের বর্ণনা অনুযায়ি ইমাম হাসান আসকারি (আ.) সন ২৬০ হিজরির উক্ত তারিখে বিষাক্ত খাবারের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এছাড়াও ইতিহাসে অন্যান্য তারিখের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে যেমন: ৪ঠা রবিউল আওয়াল, ৮ই রবিউল আওয়াল। (মেসবাহে কাফআমি, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৫৩৩)৩য় রবিউল আওয়াল:১- হজরত সালমান (রা.) এর কূটতর্ক: রাসুল (সা.)কে দাফনের তৃতিয় দিন হজরত সালমান (রা.) জনসম্মুখে এস বলেন: হে লোকেরা! তোমরা আমার কথা মনযোগ সহকারে শোন অতৎপর চিন্তা করো। এটা তোমরা এ বিষয় সম্পর্কে ভালভাবে অবগত আছ যে, আমাকে রাসুল (সা.) কর্তৃক বিশেষ জ্ঞান দান করা হয়েছে। আমি যদি আলি (আ.) এর ফযিলত বর্ণনা শুরু করি তাহলে হয়তো তোমাদের অনেকেই আমাকে পাগল বলে অভিহিত করবে অথবা বলবে যে, হে আল্লাহ! তুমি সালমানের উক্ত কথার জন্য তাঁকে ক্ষমা করে দাও। অতঃপর তিনি হজরত আলি (আ.) এর ফযিলত বর্ণনা করা শুরু করেন এবং তাদেরকে উদ্দেশ্যে করে বলেন: যারা তাঁর প্রাপ্য খেলাফতকে কেড়ে নেয়ার ষড়যন্ত্র করেছিল। বক্তব্যর পরিসমাপ্তিতে বলেন: তোমরা জেনে রাখ আমি আমার বিশ্বাসের কথাকে তোমার সামনে উপস্থাপন করলাম। আমি আমার জন্য রাসুল (সা.) এর পরে হজরত আলি (আ.) কে ইমাম স্বরূপ মেনে নিয়েছি। (গায়াতুল মারাম, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ১২০)২- এজিদের নির্দেশে কাবা গৃহকে ভাঙ্গার চেষ্টা: সন ৬৪ হিজরির উক্ত দিনে এজিদের নির্দেশে কাবা গৃহকে মিনজানিক (দালান ভাঙ্গার গুলতি বিশেষ) দ্বারা ভাঙ্গা হয়। উক্ত ঘটনার ১১ দিন পরে এজিদ মারা যায়। (তাতেম্মাতুল মুনতাহি, পৃষ্ঠা ৬৩)৫ই রবিউল আওয়াল১- হজরত সকিনা (সা.)এর মৃত্যুদিবস: ইমাম হুসাইন (আ.)এর কন্যা হজরত সকিনা (সা.আ.) কারবালার ঘটনার ৫৬ বছর পরে সন ১১৭ হিজরির উক্ত তারিখে মদিনায় মৃত্যুবরণ করেন। তার মাতার নাম ছিল রোবাব তিনি তাঁর মায়ের সাথেই বন্দি অবস্থায় কুফা ও শামে যান। তাঁর স্বামির নাম ছিল হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে হাসান (আ.)যিনি কারবালাতে শাহাদত বরণ করেন। যেহেতু ইমাম হাসান (আ.)এর আব্দুল্লাহ নামে কয়েকজন সন্তান ছিল। যখন তিনি মৃত্যুবরণ করেন তখন মদিনার শাষক আব্দুল মালেক বলে: তোমরা অপেক্ষা কর তাঁর জানাযার নামাজ আমি পড়াব। কিন্তু সে ওয়াদা করে আর জানাযার নামাজ পড়াতে আসেনি। অবশেষে মোহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ ওরফে নাফসে যাকিয়া রাতে তাঁর জানাযার নামাজ পড়ান এবং তাঁকে মদিনায় দাফন করে দেন। (দালায়েলুল ইমামা, পৃষ্ঠা ৪২৪)৮ই রবিউল আওয়ালইমাম হাসান আসকারি (আ.)এর শাহাদত:রেওয়ায়েতের বর্ণনা অনুযায়ি ২৬০ হিজরিতে ইমাম হাসান আসকারি (আ.)২৮ বছর বয়সে শাহাদত বরণ করেন। মৃত্যুর পূর্ব রাতে তিনি মদনিাবাসিদের নামে একাধিক পত্র লিখেন। যখন শামেরাবাসিরা তাঁর শাহাদতের খবর সম্পর্কে অবগত হয় তখন তারা বাজারের সকল দোকান বন্ধ করে ইমাম (আ.)এর ঘরের সম্মুখে একত্রিত হয় এবং শামে তাদের ক্রন্দন এবং আহাজারির কারণে পরিবেশ শোকাবহ হয়ে উঠে। ইমাম মাহদি (আ.) তাঁকে গোসল, কাফন দেন, জানাযার নামাজ পড়ান এবং তাঁকে ইমাম হাদি (আ.) এর পাশে দাফন করে দেন। (কামাল উদ্দিন, পৃষ্ঠা ৪৭৫)৯ই রবিউল আওয়াল১- ইমাম মাহদি (আ.)এর ইমামতের প্রথম দিন: সন ২৬০ হিজরি ইমাম হাসান আসকারি (আ.)এর শাহাদতের পরে উক্ত দিনটি ছিল ইমাম মাহদি (আ.) এর ইমামতের প্রথম দিন এবং সেদিন থেকেই ইমাম মাহদি (আ.) এর ইমামতের স্বল্পকালিন অন্তর্ধান শুরু হয়। (মুতাদরাকে সাফিনাতুল বিহার, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ৬৭)২- হজরত উমর ইবনে খাত্তাবের মৃত্যুদিবস: ২৩ অথবা ২৪ হিজরির উক্ত তারিখে রাতের শেষ অংশে হজরত উমর ইবনে খাত্তাব মৃত্যু বরণ করেন। কিন্তু আহলে সুন্নাতের মত অনুযায়ি তিনি রোজ বুধবার ২৬শে জিলহজ তারিখে মৃত্যুবরণ করেন। ইতিহাসে তার মৃত্যুর ঘটনা এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যে, মুগাইরা বিন শোয়বার দাশ যার নাম ছিল ‘আবু লুলু’ সে হজরত উমরকে কয়েকবার চাকু দ্বারা মারাত্মকভাবে আঘাত করে এবং উক্ত কারণে তিনি মৃত্যু বরণ করেন। (তাবাকাতে কুবরা, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ৩৬৫)৩- উমর ইবনে সাআদের মৃত্যুদিবস: মোখতারে সাকাফির নেতৃত্বে উমরে সাআদকে হত্যা করা হয়। (আল ইরশাদ, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৩৩৬)১০ই রবিউল আওয়াল:১- রাসুল (সা.) এর সাথে হজরত খাদিজা (সা.আ.)এর বিবাহ: হজরত মোহাম্মাদ (সা.) নবুওয়াত প্রাপ্তির ১৫ বছর পূর্বে উক্ত তারিখে উম্মুল মুমিনিন হজরত খাদিজা (সা.আ.) এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। হজরত খাদিজা (সা.আ.) এর সম্পদ এতই বেশি ছিল যে ৮০ হাজার উট শুধুমাত্র তাঁর ব্যাবসার মালামাল বহণ করতো। আরবের বিভিন্ন ব্যাক্তিত্বগণ তাঁকে বিবাহের প্রস্তাব দেন কিন্তু তিনি তাদের বিবাহের প্রস্তাবে রাজি হন নি। কিন্তু তিনি রাসুল (সা.) এর সততা এবং সত্যবাদিতা দেখ মুগ্ধ হন এবং তাঁকে বিবাহের প্রস্তাব দেন। অতঃপর তাঁদের বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়। (ইকবালুল আমাল, পৃষ্ঠা ৫৯৯)২- মদিনার অত্যাচারি শাষক দাউদ বিন আলির মৃত্যু: সাফফাহ-এর চাচা দাউদ বিন আলি সন ১৩৩ হিজরি ১০ই রবিউল আওয়াল তারিখে ইমাম জাফর সাদিক (আ.) এর দোয়ার কারণে মৃত্যু বরণ করে। (কালায়েদুন নুহুর, খন্ড রবিউল আওয়াল, পৃষ্ঠা ৬৭)৩- মালেক বিন আনাসের মৃত্যুদিবস: সন ১৭৯ হিজরিতে মালেক বিন আনাস আসবাহা যিনি ছিলেন মালেকি মাযহাবের কর্ণধারক। তিনি উক্ত তারিখে মৃত্যুবরণ করেন এবং তাকে জান্নাতুল বাকিতে দাফন করা হয়। (রওযাতুল জান্নাত, খন্ড ৭, পৃষ্ঠা ২২৪)৪- মুয়াবিয়ার খেলাফত অর্জন: ৪১ হিজরির রবিউল আউয়ালের ১০ তারিখে মুয়াবিয়া কপটতার মাধ্যমে খেলাফত অর্জন করেছিল। হজরত উসমানের পরে সে ছিল বণি উমাইয়ার খেলাফতের আরেকজন খলিফা। যার জন্য মুসলমানদের কাছ থেকে বাইয়াত গ্রহণ করা হয়। তবে ইতিহাসে মাবিয়ার খেলাফত অর্জনের বিষয় সম্পর্কে বিভিন্ন তারিখ বর্ণিত হয়েছে যেমন: ৫ই রবিউল আওয়াল, প্রথম অথবা ১৫ই জামাদিউল আওয়াল বর্ণিত হয়েছে। তবে প্রসিদ্ধ হচ্ছে ২৫শে রবিউল আওয়াল। (মুনতাখাবুত তাওয়ারিখ, পৃষ্ঠা ৬, বেদায়া ওয়ান নেহায়া, খন্ড ৮, পৃষ্ঠা ২০)১২ই রবিউল আওয়াল১- রাসুল (সা.) মদিনায় প্রবেশ করেন:উক্ত তারিখের অস্তবেলায় রাসুল (সা.) মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় পৌছায় এবং কুবা নাক স্থানে হজরত আলি (আ.)এর জন্য অপেক্ষা করেন। যখন হজরত আলি (আ.) সেখানে এসে পৌছান তখন রাসুল (সা.) তাঁদেরকে নিয়ে মদিনায় প্রবেশ করেন। (মাশারুশ শিয়া, পৃষ্ঠা ২৮)তবে আহলে সুন্নতের দৃষ্টিতে এই তারিখেই নবী (স.) জন্ম গ্রহণ করেন এবং এই একই তারিখে মৃত্যু বরণ করেন।২- মোতাসিম আব্বাসির মৃত্যু: সন ২২৭ হিজরির উক্ত তারিখে রোজ বৃহঃস্পতিবারে রাতের প্রথমভাগে মোতাসেম আব্বাসি সামেরায় মারা যায়। তার মৃত্যুর কারণ হচ্ছে সে “হেজামত” (এক বিশেষ প্রক্রিয়ায় শরিরে বদ রক্ত বাহির করা হয়) করার পরে তার জ্বর আসে এবং উক্ত জ্বরের কারণে সে ৪৯ বছর বয়সে মারা যায়। (তাতেম্মাতুল মুনতাহি, পৃষ্ঠা ২৯৭- ৩১০)৩- আহমাদ বিন হাম্বালের মৃত্যুদিবস: সন ২৪১ হিজরির ‍উক্ত তারিখে হাম্বালি মাযহাবের কর্ণধারক আহমাদ বিন হাম্বাল বাগদাদে মৃত্যুবরণ করে এবং সেখানেই তাকে দাফন করা হয়। ইতিহাসের অন্য এক বর্ণনা অনুযায়ি তিনি রবিউস সানি মাসে মৃত্যুবরণ করেন। (মারাকেদুল মাআরেফ, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ১২৩)১৪ই রবিউল আওয়াল১- এজিদ বিন মাবিয়ার মৃত্যু: সন ৬৪ হিজরির উক্ত তারিখে এজিদ ইবনে মাবিয়া বিন আবু সুফিয়ান ৩৫ অথবা ৩৭ বছর বয়সে অতিরিক্ত মদ পানের কারণে দামেস্কে মারা যায় এবং সেখানেই তাকে দাফন করা হয়। এজিদের রাজত্বকাল ছিল তিন বছর আট মাস। এছাড়াও ইতিহাসে এজিদের মৃত্যু তরিখ সম্পর্কে অন্য মতামতও বর্ণিত হয়েছে যমন: ১৫ই রবিউল আওয়াল। (ফেইযুল আলাম, পৃষ্ঠা ২১৬, তারিখে তাবারি, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ৩৮৯)২- আব্বাসিয় খলিফা মুসা হাদির মৃত্যু: ইতিহাসের বর্ণনা অনুযায়ি সন ১৭০ হিজরির উক্ত তারিখে আব্বাসিয় খলিফা মাহদি আব্বাসির পুত্র মুসা হাদি ২৫ অথবা ২৬ বছর বয়সে মৃত্যু বরণ করে। ইতিহাসের অন্য বর্ণনা অনুযায়ি ১৫, ১৮ তারিখটিও তার মৃত্যুর দিন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ইতিহাসে তার পাষন্ডতা, ক্রোধ এবং বিদ্বেষ ছিল প্রসিদ্ধ। (কালায়েদুন নুহুর, খন্ড রবিউল আওয়াল, পৃষ্ঠা ৮৯, তাতেম্মাতুল মুনতাহা, পৃষ্ঠা ২২৪, ২২২)১৭ই রবিউল আওয়াল১- হজরত মোহাম্মাদ (সা.)এর জন্মদিবস: হজরত মোহাম্মাদ (সা.) বর্তমান সৌদি আরবে অবস্থিত মক্কা নগরীর কুরাইশ বংশের বনু হাশিম গোত্রে জন্ম গ্রহণ করেন। প্রচলিত ধারনা মতে, তিনি ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের ২৯ আগষ্ট বা আরবি রবিউল আওয়াল মাসের ১৭ তারিখ জন্মগ্রহণ কনে। সকল আলেমদের মতে রাসুল (সা.) শুক্রবার প্রভাতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জন্মের সময় বিশ্বে অবিস্মরণিয় কিছু ঘটনা ঘটে যা ইতিহাসে লিপিবদ্ধ রয়েছে। তাঁর পিতার নাম আব্দুল্লাহ মাতার নাম ছিল আমিনা। (এলামুল ওয়ারা, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৩)২- ইমাম জাফর সাদিক (আ.)এর জন্মদিবস: সন ৮৩ হিজরির উক্ত তারিখে ইমাম জাফর সাদিক (আ.) মদিনায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর নাম জাফর, উপনাম আবু আব্দুল্লাহ, উপাধি সাদিক। তাঁর পিতার নাম ইমাম বাকের (আ.) এবং মাতার নাম ছিল উম্মে ফারওয়া। (আল ইরশাদ, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ১৭৯)২২শে রবিউল আওয়ালবণি নাযিরের যুদ্ধ: ৪র্থ হিজরি বণি নাযির নামক যুদ্ধটি সংঘটিত হয় এবং ইয়াহুদিদেরকে মদিনা থেকে বহিস্কার করা হয়। (আস সাহিহ মিনাস সিরাহ, খন্ড ৮, পৃষ্ঠা ৩৬)২৩শে রবিউল আওয়াল:কুম নগরিতে হজরত মাসুমা (সা.আ.) এর আগমণ: ফাতেমা-এ সানী, হজরত ইমাম মুসা ইবনে জাফার (আ.) এর কন্যা। তিনি শিয়াদের মাঝে কারিমায়ে আহলে বাইত (আ.) নামে সুপ্রসিদ্ধ। এছাড়া তিনি তাহেরাহ, হামিদাহ, বিররাহ, রাশিদাহ, তাকিয়াহ, নাকিয়াহ, সাইয়্যিদাহ, রাদ্বিয়াহ, উখতুর রেদ্বা, সিদ্দিকাহ, শাফিয়াহ ইত্যাদি উপাধীর অধিকারী। তার মায়ের নাম ‘নাজমা’। তিনি ১৭৩ হিজরী’র ১লা যিলক্বদ মদিনায় জন্মগ্রহণ করেন। হজরত ফাতেমা (সা. আ.) যখন ১০ বছরের ছিলেন, তখন তাঁর সম্মানিত পিতা ইমাম মুসা ইবনে জাফার (আ.) শহীদ হন। এর পর হতে পিতার ওসিয়ত অনুযায়ী এ মহিয়সী এবং ইমামের অপর সন্তানাদির অবিভাবকত্ব ইমাম রেজা (আ.) এর উপর অর্পিত হয়। হজরত ফাতেমা মাসুমা (সা. আ.) ছাড়াও ইমাম মুসা ইবনে জাফার (আ.) এর আরো কন্যা ছিলেন। তাদের মধ্যে শুধুমাত্র তিনিই ছিলেন বিশেষ মর্যাদার অধিকারী।সন ২০১ হিজরির উক্ত তারিখে ইমাম রেযা (আ.)এর বোন হজরত ফাতেমা মাসুমা (সা.আ.) পবিত্র কুম নগরিতে আগমণ করেন এবং দিন পরে তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন। (বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৫৭, পৃষ্ঠা ২১৯)২৫শে রবিউল আওয়াল:১- দুমাতুল জুন্দাল-এর যুদ্ধ: সন ৫ হিজরিরে উক্ত তারিখে যুদ্ধটি সংঘটিত হয়। উক্ত এলাকায় কিছু লোকজন একত্রিত হয়ে বিভিন্ন কাফেলাদেরকে লুট করতো। রাসুল (সা.) উক্ত ঘটনাটি সম্পর্কে অবগত হলে তিনি মদিনাতে নিজের স্থলে সাবা বিন আরফাতা গাফফারিকে রেখে নিজেই ২৫শে রবিউল আওয়াল এক হাজার সৈন্য নিয়ে মদিনা থেকে বাহিরে আসেন। যখন রাহজানরা রাসুল (সা.) এর আগমণ সম্পর্কে অবগত হয় তখন তারা পালিয়ে যায়। তখন মুসলমানরা তাদের সকল মালামালকে নিয়ে ২০শে রবিউস সানি মদিনায় ফিরে আসে। (কালায়েদুন নুহুর, খন্ড রবিউল আওয়াল, পৃষ্ঠা ১৫০)২- ইমাম হাসান (আ.) ও মাবিয়ার মাঝে সন্ধি: ইমাম হাসান (আ.)এর সাথে মাবিয়ার সন্ধি সংঘটিত হয়। মুয়াবিয়ার সঙ্গে ইমাম হাসান (আ.)’র সন্ধির কিছু শর্ত:-আহলে বাইতের অনুসারীদের রক্ত সম্মানিত ও হেফাজত থাকবে এবং তাদের অধিকার পদদলিত করা যাবে না।-মুয়াবিয়াকে হজরত আলী (আ.)’র বিরুদ্ধে মিথ্যাচার, গালি-গালাজ, অপবাদ ও প্রচারণা বন্ধ করতে হবে।-জামাল ও সিফফিনের যুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন ইরানি প্রদেশগুলোর সরকারি আয় থেকে তাদের পরিবারগুলোকে এক মিলিয়ন দেরহাম অর্থ সাহায্য দিতে হবে।- ইমাম হাসান (আ.) মুয়াবিয়াকে আমিরুল মু’মিনিন বলে উল্লেখ করবেন না।-মুয়াবিয়াকে অনৈসলামী আচার-আচরণ পরিহার করতে হবে এবং আল্লাহর কিতাব ও সুন্নাত অনুযায়ী আমল করতে হবে।-মুয়াবিয়া কোনো ব্যক্তিকেই (খেলাফতের জন্য) নিজের উত্তরসূরি মনোনীত করতে পারবে না। মুয়াবিয়া মারা গেলে খেলাফত ফেরত দিতে হবে ইমাম হাসান (আ.)’র কাছে।-ইমাম হাসান (আ.) যদি মারা যান, তাহলে মুসলিম জাহানের খেলাফত হস্তান্তর করতে হবে রাসুল(সা.)এর ছোট নাতি হজরত ইমাম হুসাইন(আ.)’র কাছে।কিন্তু মুয়াবিয়া প্রকাশ্যেই নির্লজ্জভাবে সন্ধির শর্তগুলো লঙ্ঘন করেছিল। মুয়াবিয়া ৫০ হিজরিতে গোপনে বিষ প্রয়োগ করে ইমাম হাসান(আ.)-কে শহীদ করে। ৬০ হিজরিতে মৃত্যুর কিছু দিন আগে মুয়াবিয়া তার মদ্যপ ও লম্পট ছেলে ইয়াজিদকে মুসলমানদের খলিফা বলে ঘোষণা করে।মুয়াবিয়া বলত যেখানে টাকা দিয়ে কাজ হয় সেখানে আমি টাকা বা ঘুষ ব্যবহার করি, যেখানে চাবুক দিয়ে কাজ হয় সেখানে আমি তরবারি ব্যবহার করি না, আর যেখানে তরবারি দরকার হয় সেখানে তরবারি ব্যবহার করি। (বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৪৪, পৃষ্ঠা ৬৫)প্রচারে বিধি তুমার ধর্ম কি

আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদ

রবিউল আওয়াল মাসের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি

পহেলা রবিউল আওয়াল

১- রাসুল (সা.)এর দাফন: পহেলা রবিউল আওয়ালের মধ্যে রাতে রাসুল (সা.)এর পবিত্র দেহকে হজরত আলি (আ.) দাফন করেন। কেননা অন্যান্য ব্যাক্তিরা রাসুল (সা.)এর পবিত্র দেহকে ফেলে রেখে খেলাফত নির্বাচনের জন্য বণি সাকিফায় একত্রিত হয়েছিল। (তাবাকাত ইবনে সাআদ, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৭৮)

শেইখ মুফিদ (রহ.) বলেন: অনেকেই রাসুল (সা.) এর জানাযায় অংশগ্রহণ করেননি কারণ তখন তারা খলিফা নির্বাচনের জন্য বণি সাকিফাতে উপস্থিত ছিল। (তাকরিবুল মাআরেফ, পৃষ্ঠা ২৫৬)

২- লাইলাতুল মাবিত: পহেলা রবিউল আউয়ালের রাতটি ইসলামের ইতিহাসে ‚লাইলাতুল মাবিত“ নামে পরিচিত। রাসুল (সা.)এর বেসাতের ১৩ তম বর্ষে হিজরতের ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি সংঘটিত হয়। রাসুল (সা.) উক্ত রাতে মদিনা থেকে মক্কার উদ্দেশ্যে রওনা হন এবং পথিমধ্যে ‚সউর“ নামক গুহায় আশ্রয় গ্রহণ করেন। অপর দিকে হজরত আলি (আ.) শত্রুদের ষড়যন্ত্রকে নস্যাত করার লক্ষ্যে রাসুল (সা.)এর বিছানায় নিদ্রা যান। তখন তাঁর সম্পর্কে সুরা বাকারা’এর ২০৭ নং আয়াত নাযিল হয়। (বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ১৯, পৃষ্ঠা ৩৯)

৩- রাসুল (সা.) এর হিজরত: বেসাতের ১৩ তম বর্ষে উক্ত তারিখের রাতে রাসুল (সা.) মক্কা থেকে মদিনার উদ্দেশ্যে হিজরত করেন। (শাওয়াহেদুত তানযিল, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ১২৩)

৪- হিজরি বর্ষের সূচনা: হিজরত ইসলামের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা। বিশ্বের ইতিহাসেও সবচেয়ে তাৎপর্যবহ, সুদূরপ্রসারী ঘটনা এটি। এটি দ্বীন ও মানবতার বৃহত্তর স্বার্থে ত্যাগ, বিসর্জনের এক সাহসী পদক্ষেপ। মুসলমানরা মক্কার কাফেরদের পাশবিক নির্যাতন-নিপীড়ন, অব্যাহত অমানবিক আচরণ, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবরোধ নীরবে সহ্য করার পর তাদের স্পর্ধা আরো বেড়ে যায়। তারা মহানবী (সা.)-কেও হত্যার ষড়যন্ত্র করে। আল্লাহ তায়ালা তাদের সব ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেন। মহানবী (সা.) ও মক্কার নির্যাতিত মুসলমানদের মদিনায় হিজরত করার নির্দেশ দেন। হিজরতের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের দ্বার উন্মোচিত হয়। সশস্ত্র যুদ্ধে তাগুতি শক্তির মোকাবিলার শুভ সূচনা হয়। উদিত হয় মক্কা বিজয়সহ ইসলামের বিশ্বজয়ের রঙিন সূর্য। হিজরতের ঐতিহাসিক ঘটনাকে স্মারক বানিয়ে হজরত উমরের যুগে ইমাম আলি (আ.) হিজরি নববর্ষের গোড়াপত্তন করেন। মুসলমানদের জন্য পৃথক ও স্বতন্ত্র চান্দ্রমাসের পঞ্জিকা প্রণয়ন করেন। (আস সহিহ মিন সিরাহ, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ১৭৪- ২০৬)

৫- হজরত আলি (আ.) এর ঘরে আক্রমণ: সন ১১ হিজরির উক্ত তারিখের রাতে রাসুল (সা.) দাফন কার্য সম্পাদন হওয়ার পরে যারা বণি সাকিফাতে অংশগ্রহণ করেছিল। তারা দিনে হজরত আলি (আ.)এর কাছে জোরপূর্বক বাইয়াত নেয়ার জন্য তাঁর ঘরে হামলা করে। কিন্তু হজরত আলি (আ.) রাসুল (সা.) এর ওসিয়ত অনুযায়ি কোরআন সংঙ্কলনের কাজে নিমগ্ন ছিলেন। তিনি হামলাকারিদের বলেন: মহান আল্লাহর শপথ আমি সম্পূর্ণ কোরআন একত্রিত করার পূর্বে ঘর থেকে বাহির হব না। (এহতেজাজ, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৯৮, ২৮১)

৬- ইমাম হাসান আসকারি (আ.)কে বিষ প্রদান: রেওয়ায়েতের বর্ণনা অনুযায়ি ইমাম হাসান আসকারি (আ.) সন ২৬০ হিজরির উক্ত তারিখে বিষাক্ত খাবারের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এছাড়াও ইতিহাসে অন্যান্য তারিখের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে যেমন: ৪ঠা রবিউল আওয়াল, ৮ই রবিউল আওয়াল। (মেসবাহে কাফআমি, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৫৩৩)

৩য় রবিউল আওয়াল:

১- হজরত সালমান (রা.) এর কূটতর্ক: রাসুল (সা.)কে দাফনের তৃতিয় দিন হজরত সালমান (রা.) জনসম্মুখে এস বলেন: হে লোকেরা! তোমরা আমার কথা মনযোগ সহকারে শোন অতৎপর চিন্তা করো। এটা তোমরা এ বিষয় সম্পর্কে ভালভাবে অবগত আছ যে, আমাকে রাসুল (সা.) কর্তৃক বিশেষ জ্ঞান দান করা হয়েছে। আমি যদি আলি (আ.) এর ফযিলত বর্ণনা শুরু করি তাহলে হয়তো তোমাদের অনেকেই আমাকে পাগল বলে অভিহিত করবে অথবা বলবে যে, হে আল্লাহ! তুমি সালমানের উক্ত কথার জন্য তাঁকে ক্ষমা করে দাও। অতঃপর তিনি হজরত আলি (আ.) এর ফযিলত বর্ণনা করা শুরু করেন এবং তাদেরকে উদ্দেশ্যে করে বলেন: যারা তাঁর প্রাপ্য খেলাফতকে কেড়ে নেয়ার ষড়যন্ত্র করেছিল। বক্তব্যর পরিসমাপ্তিতে বলেন: তোমরা জেনে রাখ আমি আমার বিশ্বাসের কথাকে তোমার সামনে উপস্থাপন করলাম। আমি আমার জন্য রাসুল (সা.) এর পরে হজরত আলি (আ.) কে ইমাম স্বরূপ মেনে নিয়েছি। (গায়াতুল মারাম, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ১২০)

২- এজিদের নির্দেশে কাবা গৃহকে ভাঙ্গার চেষ্টা: সন ৬৪ হিজরির উক্ত দিনে এজিদের নির্দেশে কাবা গৃহকে মিনজানিক (দালান ভাঙ্গার গুলতি বিশেষ) দ্বারা ভাঙ্গা হয়। উক্ত ঘটনার ১১ দিন পরে এজিদ মারা যায়। (তাতেম্মাতুল মুনতাহি, পৃষ্ঠা ৬৩)

৫ই রবিউল আওয়াল

১- হজরত সকিনা (সা.)এর মৃত্যুদিবস: ইমাম হুসাইন (আ.)এর কন্যা হজরত সকিনা (সা.আ.) কারবালার ঘটনার ৫৬ বছর পরে সন ১১৭ হিজরির উক্ত তারিখে মদিনায় মৃত্যুবরণ করেন। তার মাতার নাম ছিল রোবাব তিনি তাঁর মায়ের সাথেই বন্দি অবস্থায় কুফা ও শামে যান। তাঁর স্বামির নাম ছিল হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে হাসান (আ.)যিনি কারবালাতে শাহাদত বরণ করেন। যেহেতু ইমাম হাসান (আ.)এর আব্দুল্লাহ নামে কয়েকজন সন্তান ছিল। যখন তিনি মৃত্যুবরণ করেন তখন মদিনার শাষক আব্দুল মালেক বলে: তোমরা অপেক্ষা কর তাঁর জানাযার নামাজ আমি পড়াব। কিন্তু সে ওয়াদা করে আর জানাযার নামাজ পড়াতে আসেনি। অবশেষে মোহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ ওরফে নাফসে যাকিয়া রাতে তাঁর জানাযার নামাজ পড়ান এবং তাঁকে মদিনায় দাফন করে দেন। (দালায়েলুল ইমামা, পৃষ্ঠা ৪২৪)

৮ই রবিউল আওয়াল

ইমাম হাসান আসকারি (আ.)এর শাহাদত:

রেওয়ায়েতের বর্ণনা অনুযায়ি ২৬০ হিজরিতে ইমাম হাসান আসকারি (আ.)২৮ বছর বয়সে শাহাদত বরণ করেন। মৃত্যুর পূর্ব রাতে তিনি মদনিাবাসিদের নামে একাধিক পত্র লিখেন। যখন শামেরাবাসিরা তাঁর শাহাদতের খবর সম্পর্কে অবগত হয় তখন তারা বাজারের সকল দোকান বন্ধ করে ইমাম (আ.)এর ঘরের সম্মুখে একত্রিত হয় এবং শামে তাদের ক্রন্দন এবং আহাজারির কারণে পরিবেশ শোকাবহ হয়ে উঠে। ইমাম মাহদি (আ.) তাঁকে গোসল, কাফন দেন, জানাযার নামাজ পড়ান এবং তাঁকে ইমাম হাদি (আ.) এর পাশে দাফন করে দেন। (কামাল উদ্দিন, পৃষ্ঠা ৪৭৫)

৯ই রবিউল আওয়াল

১- ইমাম মাহদি (আ.)এর ইমামতের প্রথম দিন: সন ২৬০ হিজরি ইমাম হাসান আসকারি (আ.)এর শাহাদতের পরে উক্ত দিনটি ছিল ইমাম মাহদি (আ.) এর ইমামতের প্রথম দিন এবং সেদিন থেকেই ইমাম মাহদি (আ.) এর ইমামতের স্বল্পকালিন অন্তর্ধান শুরু হয়। (মুতাদরাকে সাফিনাতুল বিহার, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ৬৭)

২- হজরত উমর ইবনে খাত্তাবের মৃত্যুদিবস: ২৩ অথবা ২৪ হিজরির উক্ত তারিখে রাতের শেষ অংশে হজরত উমর ইবনে খাত্তাব মৃত্যু বরণ করেন। কিন্তু আহলে সুন্নাতের মত অনুযায়ি তিনি রোজ বুধবার ২৬শে জিলহজ তারিখে মৃত্যুবরণ করেন। ইতিহাসে তার মৃত্যুর ঘটনা এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যে, মুগাইরা বিন শোয়বার দাশ যার নাম ছিল ‘আবু লুলু’ সে হজরত উমরকে কয়েকবার চাকু দ্বারা মারাত্মকভাবে আঘাত করে এবং উক্ত কারণে তিনি মৃত্যু বরণ করেন। (তাবাকাতে কুবরা, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ৩৬৫)

৩- উমর ইবনে সাআদের মৃত্যুদিবস: মোখতারে সাকাফির নেতৃত্বে উমরে সাআদকে হত্যা করা হয়। (আল ইরশাদ, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৩৩৬)

১০ই রবিউল আওয়াল:

১- রাসুল (সা.) এর সাথে হজরত খাদিজা (সা.আ.)এর বিবাহ: হজরত মোহাম্মাদ (সা.) নবুওয়াত প্রাপ্তির ১৫ বছর পূর্বে উক্ত তারিখে উম্মুল মুমিনিন হজরত খাদিজা (সা.আ.) এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। হজরত খাদিজা (সা.আ.) এর সম্পদ এতই বেশি ছিল যে ৮০ হাজার উট শুধুমাত্র তাঁর ব্যাবসার মালামাল বহণ করতো। আরবের বিভিন্ন ব্যাক্তিত্বগণ তাঁকে বিবাহের প্রস্তাব দেন কিন্তু তিনি তাদের বিবাহের প্রস্তাবে রাজি হন নি। কিন্তু তিনি রাসুল (সা.) এর সততা এবং সত্যবাদিতা দেখ মুগ্ধ হন এবং তাঁকে বিবাহের প্রস্তাব দেন। অতঃপর তাঁদের বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়। (ইকবালুল আমাল, পৃষ্ঠা ৫৯৯)

২- মদিনার অত্যাচারি শাষক দাউদ বিন আলির মৃত্যু: সাফফাহ-এর চাচা দাউদ বিন আলি সন ১৩৩ হিজরি ১০ই রবিউল আওয়াল তারিখে ইমাম জাফর সাদিক (আ.) এর দোয়ার কারণে মৃত্যু বরণ করে। (কালায়েদুন নুহুর, খন্ড রবিউল আওয়াল, পৃষ্ঠা ৬৭)

৩- মালেক বিন আনাসের মৃত্যুদিবস: সন ১৭৯ হিজরিতে মালেক বিন আনাস আসবাহা যিনি ছিলেন মালেকি মাযহাবের কর্ণধারক। তিনি উক্ত তারিখে মৃত্যুবরণ করেন এবং তাকে জান্নাতুল বাকিতে দাফন করা হয়।  (রওযাতুল জান্নাত, খন্ড ৭, পৃষ্ঠা ২২৪)

৪- মুয়াবিয়ার খেলাফত অর্জন: ৪১ হিজরির রবিউল আউয়ালের ১০ তারিখে মুয়াবিয়া কপটতার মাধ্যমে খেলাফত অর্জন করেছিল। হজরত উসমানের পরে সে ছিল বণি উমাইয়ার খেলাফতের আরেকজন খলিফা। যার জন্য মুসলমানদের কাছ থেকে বাইয়াত গ্রহণ করা হয়। তবে ইতিহাসে মাবিয়ার খেলাফত অর্জনের বিষয় সম্পর্কে বিভিন্ন তারিখ বর্ণিত হয়েছে যেমন: ৫ই রবিউল আওয়াল, প্রথম অথবা ১৫ই  জামাদিউল আওয়াল বর্ণিত হয়েছে। তবে প্রসিদ্ধ হচ্ছে ২৫শে রবিউল আওয়াল। (মুনতাখাবুত তাওয়ারিখ, পৃষ্ঠা ৬, বেদায়া ওয়ান নেহায়া, খন্ড ৮, পৃষ্ঠা ২০)

১২ই রবিউল আওয়াল

১- রাসুল (সা.) মদিনায় প্রবেশ করেন:

উক্ত তারিখের অস্তবেলায় রাসুল (সা.) মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় পৌছায় এবং কুবা নাক স্থানে হজরত আলি (আ.)এর জন্য অপেক্ষা করেন। যখন হজরত আলি (আ.) সেখানে এসে  পৌছান তখন রাসুল (সা.) তাঁদেরকে নিয়ে মদিনায় প্রবেশ করেন। (মাশারুশ শিয়া, পৃষ্ঠা ২৮)

তবে আহলে সুন্নতের দৃষ্টিতে এই তারিখেই নবী (স.) জন্ম গ্রহণ করেন এবং এই একই তারিখে মৃত্যু বরণ করেন।

২- মোতাসিম আব্বাসির মৃত্যু: সন ২২৭ হিজরির উক্ত তারিখে রোজ বৃহঃস্পতিবারে রাতের প্রথমভাগে মোতাসেম আব্বাসি সামেরায় মারা যায়। তার মৃত্যুর কারণ হচ্ছে সে “হেজামত”  (এক বিশেষ প্রক্রিয়ায় শরিরে বদ রক্ত বাহির করা হয়) করার পরে তার জ্বর আসে এবং উক্ত জ্বরের কারণে  সে ৪৯ বছর বয়সে মারা যায়। (তাতেম্মাতুল মুনতাহি, পৃষ্ঠা ২৯৭- ৩১০)

৩- আহমাদ বিন হাম্বালের মৃত্যুদিবস: সন ২৪১ হিজরির ‍উক্ত তারিখে হাম্বালি মাযহাবের কর্ণধারক আহমাদ বিন হাম্বাল বাগদাদে মৃত্যুবরণ করে এবং সেখানেই তাকে দাফন করা হয়। ইতিহাসের অন্য এক বর্ণনা অনুযায়ি তিনি রবিউস সানি মাসে মৃত্যুবরণ করেন। (মারাকেদুল মাআরেফ, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ১২৩)

১৪ই রবিউল আওয়াল

১- এজিদ বিন মাবিয়ার মৃত্যু: সন ৬৪ হিজরির উক্ত তারিখে এজিদ ইবনে মাবিয়া বিন আবু সুফিয়ান ৩৫ অথবা ৩৭ বছর বয়সে অতিরিক্ত মদ পানের কারণে দামেস্কে মারা যায় এবং সেখানেই তাকে দাফন করা হয়। এজিদের রাজত্বকাল ছিল তিন বছর আট মাস। এছাড়াও ইতিহাসে এজিদের মৃত্যু তরিখ সম্পর্কে অন্য মতামতও বর্ণিত হয়েছে যমন: ১৫ই রবিউল আওয়াল। (ফেইযুল আলাম, পৃষ্ঠা ২১৬, তারিখে তাবারি, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ৩৮৯)

২- আব্বাসিয় খলিফা মুসা হাদির মৃত্যু: ইতিহাসের বর্ণনা অনুযায়ি সন ১৭০ হিজরির উক্ত তারিখে আব্বাসিয় খলিফা মাহদি আব্বাসির পুত্র মুসা হাদি ২৫ অথবা ২৬ বছর বয়সে মৃত্যু বরণ করে। ইতিহাসের অন্য বর্ণনা অনুযায়ি ১৫, ১৮ তারিখটিও তার মৃত্যুর দিন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ইতিহাসে তার পাষন্ডতা, ক্রোধ এবং বিদ্বেষ ছিল প্রসিদ্ধ। (কালায়েদুন নুহুর, খন্ড রবিউল আওয়াল, পৃষ্ঠা ৮৯, তাতেম্মাতুল মুনতাহা, পৃষ্ঠা ২২৪, ২২২)

১৭ই রবিউল আওয়াল

১- হজরত মোহাম্মাদ (সা.)এর জন্মদিবস: হজরত মোহাম্মাদ (সা.) বর্তমান সৌদি আরবে অবস্থিত মক্কা নগরীর কুরাইশ বংশের বনু হাশিম গোত্রে জন্ম গ্রহণ করেন। প্রচলিত ধারনা মতে, তিনি ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের ২৯ আগষ্ট বা আরবি রবিউল আওয়াল মাসের ১৭ তারিখ জন্মগ্রহণ কনে। সকল আলেমদের মতে রাসুল (সা.) শুক্রবার প্রভাতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জন্মের সময় বিশ্বে অবিস্মরণিয় কিছু ঘটনা ঘটে যা ইতিহাসে লিপিবদ্ধ রয়েছে। তাঁর পিতার নাম আব্দুল্লাহ মাতার নাম ছিল আমিনা। (এলামুল ওয়ারা, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৩)

২- ইমাম জাফর সাদিক (আ.)এর জন্মদিবস: সন ৮৩ হিজরির উক্ত তারিখে ইমাম জাফর সাদিক (আ.) মদিনায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর নাম জাফর, উপনাম আবু আব্দুল্লাহ, উপাধি সাদিক। তাঁর পিতার নাম ইমাম বাকের (আ.) এবং মাতার নাম ছিল উম্মে ফারওয়া। (আল ইরশাদ, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ১৭৯)

২২শে রবিউল আওয়াল

বণি নাযিরের যুদ্ধ: ৪র্থ হিজরি বণি নাযির নামক যুদ্ধটি সংঘটিত হয় এবং ইয়াহুদিদেরকে মদিনা থেকে বহিস্কার করা হয়। (আস সাহিহ মিনাস সিরাহ, খন্ড ৮, পৃষ্ঠা ৩৬)

২৩শে রবিউল আওয়াল:

কুম নগরিতে হজরত মাসুমা (সা.আ.) এর আগমণ: ফাতেমা-এ সানী, হজরত ইমাম মুসা ইবনে জাফার (আ.) এর কন্যা। তিনি শিয়াদের মাঝে কারিমায়ে আহলে বাইত (আ.) নামে সুপ্রসিদ্ধ। এছাড়া তিনি তাহেরাহ, হামিদাহ, বিররাহ, রাশিদাহ, তাকিয়াহ, নাকিয়াহ, সাইয়্যিদাহ, রাদ্বিয়াহ, উখতুর রেদ্বা, সিদ্দিকাহ, শাফিয়াহ ইত্যাদি উপাধীর অধিকারী। তার মায়ের নাম ‘নাজমা’। তিনি ১৭৩ হিজরী’র ১লা যিলক্বদ মদিনায় জন্মগ্রহণ করেন। হজরত ফাতেমা (সা. আ.) যখন ১০ বছরের ছিলেন, তখন তাঁর সম্মানিত পিতা ইমাম মুসা ইবনে জাফার (আ.) শহীদ হন। এর পর হতে পিতার ওসিয়ত অনুযায়ী এ মহিয়সী এবং ইমামের অপর সন্তানাদির অবিভাবকত্ব ইমাম রেজা (আ.) এর উপর অর্পিত হয়। হজরত ফাতেমা মাসুমা (সা. আ.) ছাড়াও ইমাম মুসা ইবনে জাফার (আ.) এর আরো কন্যা ছিলেন। তাদের মধ্যে শুধুমাত্র তিনিই ছিলেন বিশেষ মর্যাদার অধিকারী।

সন ২০১ হিজরির উক্ত তারিখে ইমাম রেযা (আ.)এর বোন হজরত ফাতেমা মাসুমা (সা.আ.) পবিত্র কুম নগরিতে আগমণ করেন এবং দিন পরে তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন। (বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৫৭, পৃষ্ঠা ২১৯)

২৫শে রবিউল আওয়াল:

১- দুমাতুল জুন্দাল-এর যুদ্ধ: সন ৫ হিজরিরে উক্ত তারিখে যুদ্ধটি সংঘটিত হয়। উক্ত এলাকায় কিছু লোকজন একত্রিত হয়ে বিভিন্ন কাফেলাদেরকে লুট করতো। রাসুল (সা.) উক্ত ঘটনাটি সম্পর্কে অবগত হলে তিনি মদিনাতে নিজের স্থলে সাবা বিন আরফাতা গাফফারিকে রেখে নিজেই ২৫শে রবিউল আওয়াল এক হাজার সৈন্য নিয়ে মদিনা থেকে বাহিরে আসেন। যখন রাহজানরা রাসুল (সা.) এর আগমণ সম্পর্কে অবগত হয় তখন তারা পালিয়ে যায়। তখন মুসলমানরা তাদের সকল মালামালকে নিয়ে ২০শে রবিউস সানি মদিনায় ফিরে আসে। (কালায়েদুন নুহুর, খন্ড রবিউল আওয়াল, পৃষ্ঠা ১৫০)

২- ইমাম হাসান (আ.) ও মাবিয়ার মাঝে সন্ধি: ইমাম হাসান (আ.)এর সাথে মাবিয়ার সন্ধি সংঘটিত হয়। মুয়াবিয়ার সঙ্গে ইমাম হাসান (আ.)’র সন্ধির কিছু শর্ত:

-আহলে বাইতের অনুসারীদের রক্ত সম্মানিত ও হেফাজত থাকবে এবং তাদের অধিকার পদদলিত করা যাবে না।

-মুয়াবিয়াকে হজরত আলী (আ.)’র বিরুদ্ধে মিথ্যাচার, গালি-গালাজ, অপবাদ ও প্রচারণা বন্ধ করতে হবে।

-জামাল ও সিফফিনের যুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন ইরানি প্রদেশগুলোর সরকারি আয় থেকে তাদের পরিবারগুলোকে এক মিলিয়ন দেরহাম অর্থ সাহায্য দিতে হবে।

- ইমাম হাসান (আ.) মুয়াবিয়াকে আমিরুল মু’মিনিন বলে উল্লেখ করবেন না।

-মুয়াবিয়াকে অনৈসলামী আচার-আচরণ পরিহার করতে হবে এবং আল্লাহর কিতাব ও সুন্নাত অনুযায়ী আমল করতে হবে।

-মুয়াবিয়া কোনো ব্যক্তিকেই (খেলাফতের জন্য) নিজের উত্তরসূরি মনোনীত করতে পারবে না। মুয়াবিয়া মারা গেলে খেলাফত ফেরত দিতে হবে ইমাম হাসান (আ.)’র কাছে।

-ইমাম হাসান (আ.) যদি মারা যান, তাহলে মুসলিম জাহানের খেলাফত হস্তান্তর করতে হবে রাসুল(সা.)এর ছোট নাতি হজরত ইমাম হুসাইন(আ.)’র কাছে।

কিন্তু মুয়াবিয়া প্রকাশ্যেই নির্লজ্জভাবে সন্ধির শর্তগুলো লঙ্ঘন করেছিল। মুয়াবিয়া ৫০ হিজরিতে গোপনে বিষ প্রয়োগ করে ইমাম হাসান(আ.)-কে শহীদ করে। ৬০ হিজরিতে মৃত্যুর কিছু দিন আগে মুয়াবিয়া তার মদ্যপ ও লম্পট ছেলে ইয়াজিদকে মুসলমানদের খলিফা বলে ঘোষণা করে।

মুয়াবিয়া বলত যেখানে টাকা দিয়ে কাজ হয় সেখানে আমি টাকা বা ঘুষ ব্যবহার করি, যেখানে চাবুক দিয়ে কাজ হয় সেখানে আমি তরবারি ব্যবহার করি না, আর যেখানে তরবারি দরকার হয় সেখানে তরবারি ব্যবহার করি। (বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৪৪, পৃষ্ঠা ৬৫)

প্রচারে বিধি তুমার ধর্ম কি

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিমআল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদপবিত্র কুরআন ও রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম এর হাদিস থেকে আমিরুল মোমেনীন আলী ইবনে আবি তালিব আঃ এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ হাদিসমহানবী হযরত মুহাম্মদ ‎(সা.)-এর উত্তরাধিকারী,তাঁর নবুওয়াতের মিশনের প্রধান সাহায্যকারী এবং দুনিয়া ও আখেরাতে রাসূলের ভ্রাতা আলী ‎(আ.) ‏আবরাহার পবিত্র মক্কা আক্রমণের ৩৩ বছর পর ১৩ রজব পবিত্র কা’বা শরীফে জন্মগ্রহণ করেন। মহান আল্লাহর আদেশে তাঁর নাম রাখা হয় আলী।শিশুকাল থেকেই মহানবী ‎(সা.)-এর সাথে হযরত আলীর বিশেষ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ সম্পর্কে আলী ‎(আ.) ‏নিজেই বলেছেন ‎: ‘...তিনি আমাকে তাঁর কোলে রাখতেন যখন আমি শিশু ছিলাম। তিনি আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরতেন এবং তাঁর বিছানায় শুইয়ে রাখতেন। তাঁর পবিত্র দেহ আমার দেহকে স্পর্শ করত এবং তিনি আমাকে তাঁর শরীরের সুগন্ধির ঘ্রাণ নেওয়াতেন। তিনি খাদ্য-দ্রব্য চিবিয়ে আমার মুখে পুরে দিতেন।...’১হযরত আবু তালিবের সংসারের ব্যয়ভার কমানোর জন্য হযরত আলীর বালক বয়সেই মহানবী ‎(সা.) ‏তাঁকে নিজের কাছে নিয়ে আসেন। তখন থেকে তিনি রাসূলের সার্বক্ষণিক সঙ্গী হয়ে যান। রাসূল হেরা পর্বতের গুহায় আল্লাহর ইবাদাত করতে গেলেও তাঁকে সাথে নিয়ে যেতেন। হযরত আলী বলেন ‎: ‘তিনি ‎(মহানবী) ‏প্রতি বছর হেরাগুহায় একান্ত নির্জনে বাস করতেন। আমি তাঁকে দেখতাম। আমি ব্যতীত আর কোন লোকই তাঁকে দেখতে পেত না। ঐ সময় রাসূলুল্লাহ্ ও খাদীজাহ্ ব্যতীত কোন মুসলিম পরিবারই পৃথিবীর বুকে ছিল না। আমি ছিলাম তাঁদের পরিবারের তৃতীয় সদস্য। আমি ওহী ও রেসালতের আলো প্রত্যক্ষ করেছি এবং নবুওয়াতের সুবাস ও সুঘ্রাণ অনুভব করেছি।’২তিনি মহানবীর প্রতি নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁকে অনুসরণ করতেন। তিনি বলেন ‎: ‘উষ্ট্র শাবক যেমনভাবে উষ্ট্রীকে অনুসরণ করে ঠিক সেভাবে আমি তাঁকে অনুসরণ করতাম। তিনি প্রতিদিন তাঁর উন্নত চরিত্র থেকে একটি নিদর্শন আমাকে শিক্ষা দিতেন এবং আমাকে তা পালন করার নির্দেশ দিতেন।... ‏তাঁর ওপর যখন ওহী অবতীর্ণ হয়েছিল তখন আমি শয়তানের ক্রন্দন ধ্বনি শুনেছিলাম। তাই আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম ‎: ‏হে রাসূলুল্লাহ্! ‏এ ক্রন্দন ধ্বনি কার? ‏তখন তিনি আমাকে বলেছিলেন ‎: ‏এই শয়তান এখন থেকে তার পূজা ‎(ইবাদাত) ‏করা হবে না বলে হতাশ হয়ে গেছে। নিশ্চয় আমি যা শুনি তুমি তা শোন এবং আমি যা দেখি তা দেখ। তবে তুমি নবী নও,কিন্তু ‎[নবীর] ‏সহকারী এবং নিঃসন্দেহে তুমি মঙ্গল ও কল্যাণের ওপরই আছ।’৩আর তাই মহানবী ‎(সা.)-এর নবুওয়াতের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসার পর তিনিই সর্বপ্রথম তাঁর ওপর ঈমান আনেন এবং তিনিই তাঁর সাথে নামায আদায় করা প্রথম ব্যক্তি। ইমাম মালেক বর্ণনা করেছেন ‎: ‘মহানবী ‎(সা.) ‏সোমবারে নবুওয়াত প্রাপ্ত হন এবং আলী মঙ্গলবারে তাঁর ওপর ঈমান আনেন।’৪হযরত আলী নিজেই বলেন ‎: ‘আমি আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসূলের ভ্রাতা এবং তাঁর নবুওয়াতের সবচেয়ে বড় বিশ্বাসস্থাপনকারী। একমাত্র মিথ্যাবাদী ছাড়া আমার পর কেউ এ দাবি করবে না। অন্য লোকদের নামায পড়ারও ৭ বছর আগে থেকে আমি নামায পড়েছি।’৫হযরত আলী ‎(আ.)-এর প্রসিদ্ধ উপাধিরাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏হযরত আলীকে বিভিন্ন উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন। এর মধ্যে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ হচ্ছে সিদ্দিকে আকবার,ফারুকে আযম,আসাদুল্লাহ ও মুরতাজা।পবিত্র কুরআনে হযরত আলী ‎(আ.)-এর মর্যাদাহযরত আলীর শানে পবিত্র কুরআনের অনেক আয়াত নাযিল হয়েছে। ইবনে আসাকির হযরত ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা করেছেন যে,কোন ব্যক্তির গুণ বর্ণনায় এত অধিক কুরআনের বাণী অবতীর্ণ হয়নি যা হযরত আলী সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস আরও বলেছেন যে,হযরত আলীর শানে তিনশ’ ‏আয়াত নাযিল হয়েছে এবং তাঁর গুণাবলি অত্যধিক ও প্রসিদ্ধ।৬ পবিত্র কুরআনের নাযিলকৃত আয়াতগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নিম্নে উল্লেখ করা হল ‎:১. ‏সূরা বাকারার ২০৭ নং আয়াতوَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَشْرِي نَفْسَهُ ابْتِغَاءَ مَرْضَاتِ اللَّهِ وَاللَّهُ رَءُوفٌ بِالْعِبَادِ‘এবং মানুষের মধ্যে এমনও আছে,যে আল্লাহর সন্তোষ লাভের জন্য নিজের জীবন পর্যন্ত বিক্রয় করে দেয় এবং আল্লাহ ‎(এরূপ) ‏বান্দাদের প্রতি অতিশয় অনুগ্রহশীল।’সালাবী তাঁর তাফসীর গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন যে,রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏যখন মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করার প্রস্তুতি নিলেন সেই সময় হযরত আলীকে তাঁর বিছানায় শুয়ে থাকার নির্দেশ দেন যাতে কাফির-মুশরিকরা মনে করে যে,রাসূল তাঁর নিজ ঘরেই রয়েছেন। আলী ‎(আ.) ‏নির্দ্বিধায় এ নির্দেশ পালন করলে মহান আল্লাহ এ আয়াত নাযিল করেন।৭ ২. ‏সূরা আলে ইমরানের ৬১ নং আয়াতفَمَنْ حَاجَّكَ فِيهِ مِنْ بَعْدِ مَا جَاءَكَ مِنَ الْعِلْمِ فَقُلْ تَعَالَوْا نَدْعُ أَبْنَاءَنَا وَأَبْنَاءَكُمْ وَنِسَاءَنَا وَنِسَاءَكُمْ وَأَنْفُسَنَا وَأَنْفُسَكُمْ ثُمَّ نَبْتَهِلْ فَنَجْعَلْ لَعْنَتَ اللَّهِ عَلَى الْكَاذِبِينَ‘অতঃপর তোমার নিকট যখন জ্ঞান ‎(কুরআন) ‏এসে গেছে,এরপরও যদি কেউ ‎(খ্রিস্টান) ‏তোমার সাথে তার ‎(ঈসার) ‏সম্বন্ধে তর্ক-বিতর্ক করে,তবে বল,‘(ময়দানে) ‏এস,আমরা আহ্বান করি আমাদের পুত্রদের ও তোমাদের পুত্রদের,আমাদের নারীদের ও তোমাদের নারীদের এবং আমাদের সত্তাদের ও তোমাদের সত্তাদের;’ ‏অতঃপর সকলে মিলে ‎(আল্লাহর দরবারে) ‏নিবেদন করি এবং মিথ্যাবাদীদের ওপর আল্লাহর অভিসম্পাত বর্ষণ করি।’ঘটনাটি এরূপ ‎: ‏রাসূলুল্লাহ্ ‎(সা.)-এর নবুওয়াতের সত্যতা যাচাই করার জন্য নাজরানের একটি খ্রিস্টান প্রতিনিধিদল মদীনায় আসল। তাদের সাথে আলোচনা ফলপ্রসূ হলো না। রাসূল ‎(সা.) ‏হযরত ঈসা ‎(আ.) ‏সম্বন্ধে প্রতিনিধিদের বললেন যে,তিনি আল্লাহর পুত্র নন,বরং আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। রাসূলুল্লাহ্ হযরত ঈসার জন্মের ব্যাপারে হযরত আদমের উদাহরণও দিলেন। কিন্তু তারা কোন কথাই শুনল না। অবশেষে তিনি আল্লাহর আদেশে পরস্পরের বিরুদ্ধে দোয়া ও মিথ্যাবাদীদের ওপর অভিশাপ বর্ষণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন,যাকে ‎‘মুবাহিলা’ ‏বলে। স্থির করা হল যে,নির্দিষ্ট স্থানে নির্দিষ্ট সময়ে উভয়ে নিজ নিজ পুত্রদের,নারীদের ‎(কন্যা সন্তানদের) ‏এবং তাদের নিজেদের ‎‘সত্তা’ ‏বলে গণ্য হওয়ার যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে একত্র হবে এবং প্রত্যেকে অপরের প্রতি অভিসম্পাত ও আল্লাহর শাস্তি কামনা করবে। রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏ইমাম হুসাইনকে কোলে নিয়ে ইমাম হাসানের হাত ধরলেন এবং হযরত ফাতিমাকে নিজের পেছনে,আর হযরত আলীকে তাঁর পেছনে রাখলেন। অর্থাৎ ছেলেদের স্থানে তিনি নাতিদের,নারীদের স্থানে নিজ কন্যাকে এবং ‎‘সত্তা’ ‏বলে গণ্যদের স্থানে আলীকে নিলেন এবং দোয়া করলেন,‘হে আল্লাহ! ‏প্রত্যেক নবীর আহলে বাইত থাকে,এরা আমার আহলে বাইত। এদের সকল দোষ-ত্রুটি হতে মুক্ত ও পাক-পবিত্র রেখ।’ ‏তিনি এভাবে ময়দানে পৌঁছলে খ্রিস্টানদের নেতা আকব তা দেখে বলল,‘আল্লাহর কসম,আমি এমন নূরানী চেহারা দেখছি যে,যদি এ পাহাড়কে নিজ স্থান হতে সরে যেতে বলেন,তবে অবশ্যই সরে যাবে। সুতরাং মুবাহিলা হতে হাত গুটিয়ে নেওয়াই কল্যাণকর,অন্যথায় কিয়ামত অবধি খ্রিস্টানদের কেউ অবশিষ্ট থাকবে না।’ ‏পরিশেষে তারা জিযিরা কর দিতে সম্মত হল। এটা হযরত আলীর একটি উঁচু স্তরের ফযিলত যে,তিনি আল্লাহর আদেশে রাসূলের ‎‘নাফ্স’ (অনুরূপ সত্তা) ‏সাব্যস্ত হলেন এবং সমুদয় নবীর থেকে শ্রেষ্ঠ হলেন।৮৩. ‏সূরা নিসার ৫৯ নং আয়াত ‎يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ‘হে বিশ্বাসিগণ! ‏তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূল ও তোমাদের মধ্যে যারা নির্দেশের অধিকর্তা,তাদের আনুগত্য কর...।’ইমাম জাফর সাদিক ‎(আ.)- ‏কে জিজ্ঞেস করা হলো যে,উত্তরাধিকারীর আদেশ মান্য করা কি অবশ্যই কর্তব্য? ‏তিনি বললেন ‎: ‏হ্যাঁ,তাঁরা ঐসব ব্যক্তি যাঁদের আদেশ পালন করা এ আয়াতে ওয়াজিব করা হয়েছে...। এ আয়াত হযরত আলী বিন আবি তালিব,হযরত হাসান ও হযরত হুসাইন ‎(আ.)-এর শানে অবতীর্ণ হয়েছে।৯ ৪. ‏সূরা মায়েদার ৫৫ নং আয়াতإِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَالَّذِينَ آمَنُوا الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُمْ رَاكِعُونَ‘(হে বিশ্বাসিগণ!) ‏তোমাদের অভিভাবক তো কেবল আল্লাহ,তাঁর রাসূল এবং সেই বিশ্বাসীরা যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে এবং রুকু অবস্থায় যাকাত প্রদান করে।’শীয়া-সুন্নি উভয় মাযহাবের তফসীরকাররা একমত যে,আয়াতটি হযরত আলী ‎(আ.)-এর শানে নাযিল হয়েছে। যেমন ইবনে মারদুইয়া এবং খাতীব বাগদাদী ইবনে আব্বাস সূত্রে এবং তাবরানী ও ইবনে মারদুইয়া আম্মার ইবনে ইয়াসির ও আলী ইবনে আবি তালিব সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে,আয়াতটি আলী ইবনে আবি তালিব ‎(আ.) ‏সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে যখন তিনি রুকু অবস্থায় যাকাত দেন।ঘটনাটি এরূপ ‎: ‏একদিন হযরত আলী ‎(আ.) ‏মদীনার মসজিদে নামায পড়ছিলেন। এমন সময় একজন ভিক্ষুক এসে ভিক্ষা চাইল। কিন্তু কোন ভিক্ষা না পাওয়ায় সে ফরিয়াদ করল যে,রাসূলের মসজিদ থেকে সে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছে। এ সময় হযরত আলী রুকু অবস্থায় ছিলেন। তিনি সেই অবস্থায় তাঁর ডান হাতের আঙ্গুল থেকে আংটি খুলে নেওয়ার জন্য ভিক্ষুকের প্রতি ইশারা করেন। ভিক্ষুক তাঁর হাত থেকে আংটি খুলে নেয়। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে উপরিউক্ত আয়াত নাযিল হয়।১০৫. ‏সূরা মায়েদার ৬৭ নং আয়াতيَا أَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ مِنْ رَبِّكَ وَإِنْ لَمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ وَاللَّهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْكَافِرِينَ‘হে রাসূল! ‏যা ‎(যে আদেশ) ‏তোমার প্রতিপালকের পক্ষ হতে তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে তা পৌঁছে দাও,আর যদি তুমি তা না কর,তবে তুমি ‎(যেন) ‏তার কোন বার্তাই পৌঁছাওনি,এবং ‎(তুমি ভয় কর না) ‏আল্লাহ তোমাকে মানুষের অনিষ্ট হতে রক্ষা করবেন;এবং নিশ্চয় আল্লাহ অবিশ্বাসী সম্প্রদায়কে সঠিক পথে পরিচালিত করেন না।’যখন রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏দশম হিজরিতে বিদায় হজ্ব থেকে মদীনায় প্রত্যাবর্তন করছিলেন সে সময় আল্লাহ্ তা‘আলা এ আয়াত নাযিল করেন। ইবনে আবী হাতিম ও ইবনে আসাকির আবু সাঈদ খুদরী হতে বর্ণনা করেছেন যে,এ আয়াত গাদীরে খুম প্রান্তরে হযরত আলী ‎(আ.)-এর শানে নাযিল হয়েছে।বিদায় হজ্ব থেকে প্রত্যাবর্তন করার সময় গাদীরে খুম নামক স্থানে মহানবী ‎(সা.) ‏হযরত আলীকে তাঁর পরে সকল মুমিনের অভিভাবক বলে ঘোষণা দেন।১১এ ঘোষণা দেয়ার পর হযরত ওমর হযরত আলীর সাথে সাক্ষাৎ করে অভিনন্দন জানান এবং বলেন ‎: ‘হে আলী ইবনে আবি তালিব! ‏আপনি আজ হতে প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর মাওলা হয়ে গেলেন।’১২৬. ‏সূরা রাদের ৭ নং আয়াতإِنَّمَا أَنْتَ مُنْذِرٌ وَلِكُلِّ قَوْمٍ هَادٍ‘(হে রাসূল!) ‏তুমি তো কেবল সতর্ককারী এবং প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে এক পথ প্রদর্শক।’ইবনে মারদুইয়্যা,ইবনে জারীর,আবু নাঈম তাঁর ‎‘মারেফাত’ ‏গ্রন্থে,ইবনে আসাকির,দাইলামী ও ইবনে নাজ্জার তাঁদের স্ব স্ব গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন যে,আয়াতটি নাযিল হলে মহানবী ‎(সা.) ‏তাঁর হাত নিজের বুকে রেখে বললেন,‘আমিই সতর্ককারী।’ ‏অতঃপর আলীর কাঁধের প্রতি তাঁর হাত দ্বারা ইশারা করে বললেন,‘হে আলী! ‏তুমিই পথপ্রদর্শক এবং মানুষ আমার পর তোমার মাধ্যমে হেদায়াতপ্রাপ্ত হবে।’ ‏উক্ত রেওয়ায়েতটি শব্দের তারতম্যে ইবনে মারদুইয়্যা সাহাবী আবু বারযাহ আসলামী হতে,জীয়াফীল হযরত ইবনে আব্বাস হতে,ইবনে আহমাদ তাঁর মুসনাদে এবং ইবনে মারদুইয়্যা ও ইবনে আসাকির স্বয়ং হযরত আলী ‎(আ.) ‏হতে বর্ণনা করেছেন।১৩৭. ‏সূরা রাদের ৪৩ নং আয়াতوَيَقُولُ الَّذِينَ كَفَرُوا لَسْتَ مُرْسَلًا قُلْ كَفَى بِاللَّهِ شَهِيدًا بَيْنِي وَبَيْنَكُمْ وَمَنْ عِنْدَهُ عِلْمُ الْكِتَابِযারা অবিশ্বাস করেছে তারা বলে,‘তুমি আল্লাহর রাসূল নও।’ ‏তুমি বল,‘আমার ও তোমাদের মধ্যে ‎(রেসালাতের) ‏সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট এবং সেই ব্যক্তি যার কাছে গ্রন্থের পূর্ণ জ্ঞান রয়েছে।’অধিকাংশ তাফসীরকার স্বীকার করেছেন যে,আয়াতে বর্ণিত সেই ব্যক্তি হলেন হযরত আলী ‎(আ.)। যেমন আসমী ‎‘যায়নুল ফাতা’ ‏নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন এবং সা’লাবী আবদুল্লাহ ইবনে আতা থেকে বর্ণনা করেছেন যে,আবদুল্লাহ বিন সালাম বলতেন,‘যার কাছে গ্রন্থের পূর্ণ জ্ঞান আছে’-এর উদ্দিষ্ট হযরত আলী ‎(আ.)। এজন্যই হযরত আলী ‎(আ.) ‏বারবার বলতেন,‘আমার কাছে আমার মৃত্যুর পূর্বে যা চাও জিজ্ঞেস কর।’১৪৮. ‏সূরা নাহলের ৪৩ নং আয়াতوَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ إِلَّا رِجَالًا نُوحِي إِلَيْهِمْ فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَতোমার পূর্বেও আমরা কেবল পুরুষদেরই ‎(রাসূল করে) ‏প্রেরণ করেছি যাদের প্রতি আমরা প্রত্যাদেশ প্রেরণ করতাম;যদি তোমরা না জেনে থাক তবে যারা জানে তাদের জিজ্ঞেস কর।আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেন ‎: ‏জ্ঞানী ব্যক্তিরা অর্থাৎ আহলুয যিকর হলেন হযরত মুহাম্মাদ ‎(সা.),হযরত আলী ‎(আ.),হযরত ফাতেমা ‎(আ.),হযরত হাসান ও হুসাইন ‎(আ.)। যাবের ইবনে আবদুল্লাহ বলেছেন ‎: ‏যখন এই আয়াত নাযিল হল তখন হযরত আলী বললেন ‎: ‏আমরাই হলাম জ্ঞানের ভাণ্ডার।১৫৯. ‏সূরা আহযাবের ৩৩ নং আয়াতوَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى وَأَقِمْنَ الصَّلَاةَ وَآتِينَ الزَّكَاةَ وَأَطِعْنَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا‘হে নবী পরিবার! ‏আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদের সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে।’উম্মুল মুমিনীন হযরত উম্মে সালামার ঘরে এ আয়াত নাযিল হলে রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏হযরত ফাতিমা,ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন ‎(আ.)-কে ডাকেন এবং তাঁদেরকে একটি চাদরে ঢেকে নেন। হযরত আলী তাঁর পেছনে ছিলেন। তিনি তাঁকেও চাদরে ঢেকে নেন। অতঃপর বলেন ‎: ‘হে আল্লাহ্! ‏এরা আমার আহলে বাইত। অতএব,তুমি তাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করে দাও এবং তাদেরকে উত্তমরূপে পবিত্র কর।’ ‏তখন উম্মে সালামা বলেন ‎: ‘হে আল্লাহর রাসূল! ‏আমিও কি তাদের অন্তর্ভুক্ত?’ ‏তিনি বলেন ‎: ‘তুমি স্ব স্থানে আছ এবং তুমি কল্যাণের মধ্যেই আছ।’১৬হযরত উম্মে সালামা ছাড়াও হযরত আবু সাঈদ খুদরী ও আনাস ইবনে মালিক কর্তৃক এ হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে।১৭১০. ‏সূরা শূরার ২৩ নং আয়াতقُلْ لَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا إِلَّا الْمَوَدَّةَ فِي الْقُرْبَى‘বল,আমি এর বিনিময়ে তোমাদের নিকট থেকে আমার নিকটাত্মীয়দের প্রতি ভালবাসা ছাড়া আর কোন প্রতিদান চাই না।’রাসূলুল্লাহ ‎(সা.)-এর নিকটাত্মীয় আহলে বাইতের সদস্যদের প্রতি ভালবাসা পোষণকে এ আয়াত দ্বারা মহান আল্লাহ মুসলমানদের জন্য ফরয বলে ঘোষণা করেন।হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেছেন ‎: ‏যখন এ আয়াত নাযিল হল তখন সাহাবিগণ জিজ্ঞেস করলেন,হে রাসূলুল্লাহ! ‏আপনার নিকটাত্মীয়,যাদেরকে ভালবাসা আমাদের ওপর ওয়াজিব করা হয়েছে তারা কারা? ‏রাসূল ‎(সা.) ‏বললেন ‎: ‏আলী,ফাতেমা,হাসান ও হুসাইন।১৮রাসূলুল্লাহ ‎(সা.)-এর হাদীসে আলী ‎(আ.)হযরত আলীর মর্যাদা সম্পর্কে মহানবী ‎(সা.)-এর নিকট থেকে অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এখানে কয়েকটি উল্লেখ করা হল ‎:১. ‏সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস বলেন,নবী ‎(সা.) ‏তাবুক যুদ্ধের সময় আলীকে লক্ষ্য করে বলেছেন ‎: ‘তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে,মর্যাদার দিক থেকে মূসার নিকট হারুন যে পর্যায়ে ছিলেন,তুমিও আমার নিকট ঐ পর্যায়ে রয়েছ?’১৯২. ‏অন্য একটি হাদীসে এসেছে ‎: ‏রাসূল বলেন ‎: ‘তুমি তো আমার নিকট তদ্রূপ যেরূপ হারুনের স্থান মূসার নিকট। পার্থক্য এতটুকু যে,আমার পরে কোন নবী নেই।’২০৩. ‏রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏ইমাম হাসান ও হুসাইনের হাত ধরে বলেন ‎: ‘যে ব্যক্তি আমাকে ভালবাসে এবং এ দু’জন ও তাদের পিতা-মাতাকে ভালবাসে,সে কিয়ামতের দিন আমার সাথে একই মর্যাদায় অবস্থান করবে।’২১৪. ‏আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণিত। রাসূল বলেছেন ‎: ‘আলীর চেহারার দিকে তাকানোও ইবাদত।’২২৫. ‏রাসূলুল্লাহ্ ‎(সা.) ‏আলী ‎(আ.)-কে সম্বোধন করে বলেছিলেন ‎: ‘মুমিনরাই তোমাকে মহব্বত করবে এবং মুনাফিকরাই তোমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবে।’২৩৬. ‏তিরমিযী,নাসাঈ ও ইবনে মাযাহ হুবশী ইবনে জুনাদাহ্ ‎(রা.) ‏থেকে বর্ণনা করেছেন। রাসূল ‎(সা.) ‏বলেছেন ‎: ‘আলী আমা থেকে এবং আমি আলী থেকে। যে ব্যক্তি আলীকে ভালবেসেছে,সে আমাকে ভালোবেসেছে। আর যে ব্যক্তি আলীকে ভালবেসেছে,সে আল্লাহকে ভালবেসেছে। যে ব্যক্তি আলীর সাথে শত্রুতা পোষণ করেছে সে আমার সাথে শত্রুতা পোষণ করেছে। আর যে আমার শত্রু সে আল্লাহর শত্রু। যে ব্যক্তি আলীকে কষ্ট দিয়েছে,সে আমাকে কষ্ট দিয়েছে।’২৪৭. ‏রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏বলেন ‎: ‘(হে আলী!) ‏দুনিয়া ও আখেরাতে তুমি আমারই ভাই।’২৫৮. ‏আবদুল্লাহ ইবনে বুরাইদা ‎(র.) ‏থেকে তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন ‎: ‏রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏বলেছেন ‎: ‘চার ব্যক্তিকে ভালবাসতে আল্লাহ আমাকে আদেশ করেছেন এবং তিনি আমাকে এও অবহিত করেছেন যে,তিনিও তাদের ভালবাসেন। বলা হল ‎: ‏হে আল্লাহর রাসূল! ‏আমাদের তাদের নামগুলো বলুন। তিনি বলেন ‎: ‏আলীও তাদের অন্তর্ভুক্ত। এ কথা তিনি তিনবার বলেন। ‎(অবশিষ্ট তিনজন হলেন) ‏আবু যার,মিকদাদ ও সালমান।...’২৬৯. ‏জাবির ‎(রা.) ‏থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন ‎: ‏তায়েফ অভিযানের দিন রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏আলীকে কাছে ডেকে তার সাথে চুপিসারে আলাপ করেন। লোকেরা বলল ‎: ‏তিনি তাঁর চাচাত ভাইয়ের সাথে দীর্ঘক্ষণ চুপিসারে কথা বললেন। রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏বলেন ‎: ‏আমি তার সাথে চুপিসারে কথা বলিনি;বরং আল্লাহই তার সাথে চুপিসারে কথা বলেছেন। ‎(অর্থাৎ তার সাথে চুপিসারে কথা বলার জন্য আল্লাহ্ই আমাকে আদেশ করেছেন।)২৭হযরত আলী সম্পর্কে অন্যান্য সাহাবীহযরত আবু বকর প্রায়ই হয়রত আলীর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতেন। হযরত আয়েশা এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন ‎: ‘আমি রাসূলে করীমকে বলতে শুনেছি,আলীর মুখ দেখা ইবাদাতের শামিল।’২৮হযরত উমর বিন খাত্তাব বলতেন,হযরত আলী বিন আবি তালিবের তিনটি বৈশিষ্ট্য ছিল। যদি তার একটি আমার থাকত তাহলে আমি বলতাম যে,আমাকে লাল রঙের একটি উট দেয়া হলে তা অপেক্ষাও আমি তা পছন্দ করতাম। তাঁকে এ তিনটি বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন ‎: ‏১.তাঁর বিয়ে হয় রাসূল ‎(সা.)-এর কন্যার সাথে,২. ‏তাঁর সঙ্গে রাসূলে করীমের মসজিদে অবস্থান এবং যা রাসূলে করিমের জন্য বৈধ ছিল তার জন্যও তা বৈধ ছিল এবং ৩. ‏খায়বার যুদ্ধের পতাকা বহনের দায়িত্ব তাঁর ওপর ন্যস্ত ছিল।২৯হযরত উমর বলেছেন,হে আল্লাহ! ‏আমার ওপর এমন কোন বিপদ দিও না যখন আবুল হাসান ‎(আলী) ‏আমার নিকট উপস্থিত না থাকে। কারণ,তিনি আমার নিকট উপস্থিত থাকলে আমাকে সে বিপদ থেকে নিষ্কৃতি দেবেন।’৩০তাবরানী হযরত ইবনে আব্বাস থেকে রেওয়ায়াত করেছেন যে,হযরত আলীর আঠারটি বৈশিষ্ট্য এমন ছিল যা সমগ্র উম্মতের কারও ছিল না।’৩১তথ্যসূত্র১. ‏মমতাজ বেগম কর্তৃক প্রকাশিত নাহজ আল বালাঘা,২য় মুদ্রণ,আল খুতবাতুল কাসেয়াহ্,খুতবা নং ১৯১২. ‏প্রাগুক্ত৩. ‏প্রাগুক্ত৪. ‏মুসতাদরাকে হাকেম,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏১১২;এটি ইমাম মালেক কর্তৃক বর্ণিত। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে হেরা গুহায় জিবরাঈল ‎(আ.) ‏কর্তৃক রাসূলুল্লাহ ‎(সা.)-এর নবুওয়াত ঘোষণার পর পরই হযরত আলী ‎(আ.) ‏তাঁর ঈমান আনার বিষয়টি প্রকাশ করেন।৫. ‏সুনানে ইবনে মাজাহ্,১ম খণ্ড,পৃ. ‏৪৪৬. ‏নূর-এ-সাকালাইন কর্তৃক প্রকাশিত,সাইয়্যেদ আলী জাফরী প্রণীত আল মুরতাজা,পৃ. ‏৩০।৭. ‏এহইয়াউ উলুমিদ্দীন,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏২৩৮;নুরুল আবসার,পৃ. ‏৮৬,মুসতাদরাকে হাকেম,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏৪;তাফসীরে কুমী,১ম খণ্ড,পৃ. ‏৭১;তাযকিরাতু সিবতে ইবনে যাওযী,পৃ. ‏২১;ইয়ানাবিউল মাওয়াদ্দাহ,পৃ. ‏৯২।৮. ‏তাফসীরে জালালাইন,১ম খণ্ড,পৃ.৬০;বায়দ্বাভী,১ম খণ্ড,পৃ. ‏১১৮,তাফসীরে দুররুল মানসুর,২য় খণ্ড,পৃ. ‏৩৯,মিশর মুদ্রণ;মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বাল,১ম খণ্ড,পৃ. ‏১৮৫;৯. ‏মাজমাউল বায়ান,২য় খণ্ড,পৃ. ‏১৪১;তাফসীরে কুমী,১ম খণ্ড,পৃ. ‏১৪১;ইয়ানাবিউল মাওয়াদ্দাহ,পৃ. ‏২১;শাওয়াহেদুত তানযিল,১ম খণ্ড,পৃ. ‏১৪৮;তাফসীরে ফুরাত,পৃ.২৮১০. ‏তাফসীরে তাবারী,৬ষ্ঠ খণ্ড,পৃ. ‏১৬৫;তাফসীরে রাযী,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏৪৩১;মানাকেবে খাওয়ারেযমী,পৃ. ‏১৭৮;যাখায়েরুল উকবা,পৃ. ‏১০২;তাফসীরে ইবনে কাসীর,২য় খণ্ড,পৃ. ‏৭১;আল- ‏বেদায়া ওয়ান নেহায়া,৭ম খণ্ড,পৃ. ‏৩৫৭;সাওয়ায়েকে মুহরিকাহ,পৃ. ‏২৫;১১. ‏মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বাল,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ‏৩৭২;ইমাম নাসাঈ প্রণীত খাসায়েসে আমীরুল মুমিনীন,পৃ. ‏২১;মুসতাদরাকে হাকেম,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏১০৯;আল গাদীর,১ম খণ্ড,পৃ. ‏২১৪ ও ২২৯;শাওয়াহেদুত তানযিল,১ম খণ্ড,পৃ. ‏১৮৭ ।১২. ‏তাফসীরে তাবারী,৩য় খণ্ড,মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বল,৩য় খণ্ড,দারে কুতনী।১৩. ‏তাফসীরে দুররে মানসুর,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ‏৪৫ দ্রষ্টব্য।১৪. ‏তাফসীরে দুররে মানসুর,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ‏৬৯ ।১৫. ‏কেফাইয়াতুল মুওয়াহহিদীন,২য় খণ্ড,পৃ. ‏৬৫০;মাজমাউল বায়ান,২য় খণ্ড,পৃ. ‏৪১৩;কানযুল উম্মাল,৬ষ্ঠ খণ্ড,পৃ. ‏১৫৬;তাফসীরে তাবারী,১৪তম খণ্ড,পৃ. ‏১০৮ ।১৬. ‏বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত জামে আত-তিরমিযী,৬ষ্ঠ খণ্ড,হাদীস নং ৩৭২৫,পৃ. ‏৩৫৯ ।১৭. ‏মুসনাদে আহমাদ,১ম খণ্ড,পৃ. ‏৩৩১;যাখায়েরুল উকবা,পৃ. ‏২১,তাফসীরে তাবারী,২২তম খণ্ড,পৃ. ‏৮;মুসতাদরাকে হাকেম,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏২০৮;ফাজায়েলে খামসাহ,১ম খণ্ড,পৃ. ‏২২৪;শাওয়াহেদুত তানযিল,২য় খণ্ড,পৃ. ‏১০ ।১৮. ‏যাখায়েরুল উকবা,পৃ. ‏৯ ও ১২;তাফসীরে যামাখশারী,২য় খণ্ড,পৃ. ‏৩৩৯;সাওয়ায়েকে মুহরিকাহ,পৃ. ‏১০১,তাফসীরে দুররুল মানসূর,৬ষ্ঠ খণ্ড,পৃ. ‏৭;মুসনাদে আহমাদ,১ম খণ্ড,পৃ. ‏২২৯;আল গাদীর,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏১৭২;শাওয়াহেদুত তানযিল,২য় খণ্ড,পৃ. ‏৩০ ।১৯. ‏আধুনিক প্রকাশনী কর্তৃক প্রকাশিত সহীহ আল বুখারী,৩য় খণ্ড,হাদীস নং ৩৪৩১;বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত সহীহ মুসলিম,৭ম খণ্ড,হাদীস নং ৬০৪২ ।২০. ‏বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত সহীহ মুসলিম,৭ম খণ্ড,হাদীস নং ৬০৪০ ও জামে আত-তিরমিযী,৬ষ্ঠ খণ্ড,হাদীস নং ৩৬৬৮ ।২১. ‏বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত জামে আত-তিরমিযী,৬ষ্ঠ খণ্ড,হাদীস নং ৩৬৭০২২. ‏এমদাদীয়া লাইব্রেরী কর্তৃক প্রকাশিত হযরত আলী ইবনে আবি তালিব ‎(রা.),পৃ. ‏১৫ ।২৩. ‏বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত জামে আত-তিরমিযী,৬ষ্ঠ খণ্ড,হাদীস নং ৩৬৭৩ ।২৪. ‏এমদাদিয়া লাইব্রেরী কর্তৃক প্রকাশিত হযরত আলী ‎(রা.),পৃ. ‏১৫-১৬ ।২৫. ‏বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত জামে আত-তিরমিযী,৬ষ্ঠ খণ্ড,হাদীস নং ৩৬৫৮;২৬. ‏প্রাগুক্ত,হাদীস নং ৩৬৫৬;২৭. ‏প্রাগুক্ত,হাদীস নং ৩৬৬৪২৮. ‏সাওয়ায়েকে মুহরিকাহ,পৃ. ‏১৭৫ ।২৯. ‏সাওয়ায়েকে মুহরিকাহ,৩য় খণ্ড,এবং মুসতাদরাকে হাকেম,৩য় খণ্ড ।৩০. ‏মুনতাখাবে কানজুল উম্মাল,৩য় খণ্ড ।৩১. ‏সাওয়ায়েকে মুহরিকাহ ১১৩ ।(প্রত্যাশা,৩য় বর্ষ, ‏১ম সংখ্যাপ্রচারে মোঃ জাহিদ হুসাইন

শিশু ইমাম হযরত জাওয়াদ (আ.)'র জন্মবার্ষিকীসকল মোমিন মোমিনা কে জানাই ঈদ মোবারক🎂🎂🎂🎂🎂(((পর্ব ১)))🎂🎂🎂🎂🎂দশই রজব ইসলামের মহাখুশির দিন। এই দিনে পৃথিবীতে এসেছিলেন মাওলা মোহাম্মদ (সা) পবিত্র আহলে বাইতের সদস্য নবম ইমাম হযরত জাওয়াদ বা তাকি(আ)। নবীজীর আহলে বাইতের সদস্যরা কেবল মুসলমানদেরই ধর্মীয় নেতা নন বরং যারাই সত্য পথের সন্ধানী কিংবা কল্যাণকামী-তাদের সবারই নেতা।আহলে বাইতের এই মহান ইমাম হযরত জাওয়াদ (আ) এর জন্ম-বার্ষিকীতে আপনাদের সবার প্রতি রইলো অশেষ অভিনন্দন ও প্রাণঢালা মোবারকবাদ এবং মাওলা মোহাম্মদ (সা.) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের শানে পেশ করছি অসংখ্য দরুদ ও সালাম ।ইমাম জাওয়াদের জন্ম হয়েছিল ১৯৫ হিজরিতে তথা ৮১১ খ্রিস্টাব্দের ১২ এপ্রিল পবিত্র মদীনায়। মজলুম ও দরিদ্রদের প্রতি ব্যাপক দানশীলতা ও দয়ার জন্য তিনি 'জাওয়াদ' উপাধি পেয়েছিলেন। তাকি বা খোদাভীরু ছিল তাঁর আরেকটি উপাধি। জগত-বিখ্যাত মহাপুরুষ ইমাম রেজা (আ) ছিলেন তাঁর বাবা। আর তাঁর মায়ের নাম ‘সাবিকাহ’ বলে জানা যায়। ইমাম রেজা (আ) তাঁর এই স্ত্রীর নাম রেখেছিলেন খিইজরান। তিনি ছিলেন মহানবীর স্ত্রী উম্মুল মু’মিনিন হযরত মারিয়া কিবতির (আ) বংশধর। ইমাম জাওয়াদ (আ) ১৭ বছর ইমামতের দায়িত্ব পালনের পর মাত্র ২৫ বছর বয়সে শাহাদত বরণ করেন। তিনিই হলেন ইসলামের ইতিহাসের সবচেয়ে কম বয়স্ক ইমাম। আহলে বাইতের অন্য ইমামগণের মত ইমাম জাওয়াদ (আ.)ও ছিলেন উচ্চতর নৈতিক গুণ, জ্ঞান ও পরিপূর্ণতার অধিকারী। ইসলামের মূল শিক্ষা ও সংস্কৃতির পুনরুজ্জীবন এবং বিকাশ ছিল তাঁর তৎপরতার মূল লক্ষ্য বা কেন্দ্রবিন্দু। সেযুগের সব মাজহাবের জ্ঞানী-গুণীরা ইমাম জাওয়াদ (আ.)'র উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন।সমসাময়িক যুগের প্রখ্যাত সুন্নি চিন্তাবিদ কামালউদ্দিন শাফেয়ি ইমাম জাওয়াদ (আ.) সম্পর্কে বলেছেন, "মুহাম্মাদ বিন আলী তথা ইমাম জাওয়াদ (আ.) ছিলেন অত্যন্ত উঁচু মর্যাদা ও গুণের অধিকারী। মানুষের মুখে মুখে ফিরতো তাঁর প্রশংসা। তাঁর উদারতা, প্রশস্ত দৃষ্টি ও সুমিষ্ট কথা সবাইকে আকৃষ্ট করত। যে-ই তাঁর কাছে আসতো নিজের অজান্তেই এই মহামানবের অনুরাগী হয়ে পড়ত এবং তাঁর কাছ থেকে জ্ঞান অর্জন করত।" ইমাম জাওয়াদ (আ) মাত্র সাত বা আট বছর বয়সে ইমামতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এতো অল্প বয়সে তাঁর ইমামতিত্বের বিষয়টি ছিল যথেষ্ট বিস্ময়কর। ফলে অনেকেই এ বিষয়ে সন্দেহ করতেন। অথচ আল্লাহর তো এই শক্তি আছে যে তিনি মানুষকে তার বয়সের স্বল্পতা সত্ত্বেও পরিপূর্ণ বিবেক-বুদ্ধির পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেন। কোরানের আয়াতের ভিত্তিতে পূর্ববর্তী উম্মতের মধ্যেও এরকম উদাহরণ বহু আছে। যেমন শিশুকালে হযরত ইয়াহিয়া (আ) এর নবুয়্যত প্রাপ্তি, মায়ের কোলে নবজাতক ঈসা (আ) এর কথা বলা ইত্যাদি সর্বশক্তিমান আল্লাহর অশেষ ক্ষমতারই নিদর্শন। ইমাম জাওয়াদ (আ) শৈশব-কৈশোরেই ছিলেন জ্ঞানে-গুণে, ধৈর্য ও সহনশীলতায়, ইবাদত-বন্দেগিতে, সচেতনতায়, কথাবার্তায় শীর্ষস্থানীয় মহামানব। একবার হজ্জ্বের সময় বাগদাদ এবং অন্যান্য শহরের বিখ্যাত ফকীহদের মধ্য থেকে আশি জন মদীনায় ইমাম জাওয়াদ (আ) এর কাছে গিয়েছিলেন। তাঁরা ইমামকে বহু বিষয়ে জিজ্ঞেস করে অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত ও সন্তোষজনক জবাব পেলেন। ফলে জাওয়াদ (আ)’র ইমামতিত্বের ব্যাপারে তাদের মনে যেসব সন্দেহ ছিল-তা দূর হয়ে যায়।প্রচারে মোঃ জাহিদ হুসাইন আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম‌লা'নাতুল্লাহি আলাল কাজেবিন🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂