নাহজুল বালাগা
ইমাম আলী ইবনে আবি তালিব আ.
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লা হুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়ালা আলে মোহাম্মদ
পত্রঃ ২৮
মুয়াবিয়ার পত্রের প্রত্যুত্তর আমিরুল মুমিনিন আলী ইবনে আবি তালিব আ. যা বলেছিলেন তার সংক্ষিপ্ত কিছু ব্যাখ্যা এরূপ :
তোমার পত্র : আবু উমামাহ আল বাহিলী ও আবু মুসলিম আল খাওলানীর মাধ্যমে মুয়াবিয়া কুফায় দুখানা পত্র প্রেরণ করেছিল। সে পত্র দুটির প্রত্যুত্তরে আমিরুল মোমেনিন উক্ত পত্র লিখেছিলেন। আবু উমামার মাধ্যমে প্রেরিত পত্রে মুয়াবিয়া রাসূলের প্রেরণ ও ধর্ম প্রচার সন্বন্ধে এমনভাবে লিখেছিল যেন আমিরুল মোমেনিন তা জানতেন না বা বুঝতে পারেন নি। সে জন্য তিনি মুয়াবিয়ার কথাকে হাযারে খেজুর আনার সঙ্গে তুলনা করেছেন। এটা একটা আরবী প্রবাদ। হাযার বাহরাইনের নিকটবর্তী একটা শহর।এখানে প্রচুর খেজুর ফলে। সুতরাং এ স্থলে খেজুর নিয়ে আসা বোকামি ছাড়া আর কিছু নয়। রাসূল সন্বদ্ধে লেখার পর মুয়াবিয়া তিনজন খলিফার গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্য সর্ম্পকে লিখেছিলোঃ
সাহাবাগণের মধ্যে সব চাইতে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত ও উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন ছিলেন প্রথম খলিফা যিনি মুসলিমগণকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন এবং যারা ইসলাম পরিত্যাগ করে যাচ্ছিল তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলেন। তার পরে দ্বিতীয় খলিফা বিজয়ী হয়ে শহরসমুহের গোড়া পত্তন করেছিলেন এবং কাফেরদের অবমানিত করেছিলেন। তারপর তৃতীয় খলিফা এলেন যিনি অত্যাচারের শিকার হলেন।তিনি ধর্মের প্রসাদ ঘটিয়েছিলেন এবং দূর-দূরান্তের আল্লাহর বাণী বিস্তার করেছিলেন (মিনকারী) পৃঃ৮৬-৮৭; রাব্বিহ, ৪র্থ খণ্ড, পৃঃ৩৩৪-৩৩৫: হাদীদ, ১৫শ খণ্ড, পৃঃ১৮৬)। আমিরুল মোমিনিনকে এসব লেখার পিছনে মুয়াবিয়ার একটা সুদূর প্রসারী ষড়যন্ত্র ছিল।সে ভেবেছিল তার কথায় আমিরুল মোমেনিন মানসিক আঘাত প্রাপ্ত হয়ে পূর্বের খলিফা সমন্ধে কটুক্তি ও অবজ্ঞাকর উক্তি করলে তা সিরিয়া ও ইরাকের জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে তাদের ক্ষেপিয়ে তুলবে। বস্তুত সে অনেক আগ থেকেই সিরিয়ার মানুষের কাছে প্রচার করে বেড়াচ্ছিল যে, আমিরুল মোমেনিন মানুষকে উসমানের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছিল, তালহা ও জুবায়রকে হত্যা করিয়েছিল, আয়শাকে তার ঘর থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিল এবং হাজার হাজার মুসলিমের রক্তপাত ঘটিয়েছিল। আমিরুল মোমেনিন তার উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে এমন জবাব দিয়েছিলেন যাতে তার হীনতা, ইসলামের প্রতি শত্রুতা, পরাজিত হয়ে সাধারণ ক্ষমায় ইসলাম গ্রহণ করা, মুহাজিরগণ সর্বতোভাবে তার চেয়ে উন্নত ইত্যাদি ব্যক্তকরেছিলেন। তাই সে আমিরুলি মোমেনিনের লেখা কাউকে দেখাতেও সাহস করে নি।
এরপর আমিরুল মোমেনিন হাশিমি বংশের বিশেষ মর্যদার কথা উল্লেখ করে লিখেছিলেন যে, অনেক লোক রাসূলের সঙ্গে জিহাদে অংশ গ্রহণ করে শাহাদাত বরণ করেছিল। কিন্তু হামজার শাহাদাত বিশেষ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত ছিল। রাসূল নিজেই হামজার জন্য্ শোক প্রকাশ করেছিলেন। এ বিষয়ে অনেক হাদিস বর্ণিত আছে। রাসূল (সাঃ) চৌদ্দবার হামজার জানাযা করেছিলেন। তাতে সত্তরবার তকবির (আল্লাহু আকবার) দিয়েছিলেন। রাসূল তাঁকে শহিদগণেন প্রধান বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। একইভাবে বিভিন্ন জিহাদে অনেকেরই হাত কাটা গিয়েছিল।উদাহরণ স্বরূপ বদর যুদ্ধে কুবায়ের উবনে উসাফ আল আনসারী ও মু’আজ ইবনে জাবাল এবং অহুদ যুদ্ধে আমর ইবনে আল জামুহ আস-সালামী ও উবায়েদ (আতিক) ইবনে তাঈহান তাদের হাত হারিয়েছিল। কিন্তু মোতাহ যুদ্ধে জাফর ইবনে আবি তালিব যখন তার হাত হারালো রাসূল তাকে “বেহেশতের উড়ন্ত মানুষ” ও “দুপাখা বিশিষ্ট” বলে নামকরণ করলেন।এ বিষয়ে অসংখ্য হাদিস রয়েছে। হাদিসবেত্তা আহমদ ইবনে হাম্বল (হি:১৬৪-২৪১), আহম্মদ ইবনে আলী নাসাঈ (হি:২১৫-৩০৩) এবং অন্যান্যরা বলেনঃ
আলী ইবনে আবি তালিবের বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে বিশ্বস্ত সূত্র থেকে যত হাদিস বর্ণিত আছে তার সংখ্যা সকল সাহাবা অপেক্ষা অধিক (নায়সাবুরী, ৩য় খণ্ড, পৃঃ ১০৭, বার, ৩য় খণ্ড, পৃঃ ১১১৫; হাম্বলী, ১ম খণ্ড, পৃঃ ৩১৯, আছীর২ ৩য় খণ্ড, পৃঃ ৩৯৯; আসকালানী, ৭ম খণ্ড, পৃঃ ৫৭, আসকালানী, ৭ম খণ্ড, পৃঃ ৩৩৯)।
আহলুল বাইতের একটা গুরুত্বর্পর্ণ বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আমিরুল মোমেনিন বলেন, “আমরা সরাসরি আল্লাহর আনুকুল্যের গ্রহীতা আর অন্যেরা আমাদের কাছ থেকে আনুকুল্য পেয়ে থাকে।” এর চেয়ে বেশি মর্যদাপূর্ণ অবস্থা আর কিছু হতে পারে না। হাদীসে বরণিত আছে :
আমিরুল মোমেনিন মূলত যা বুঝতে চেয়েছেন তা হলো-তাঁরা কোন মানুষের দায়িত্বাধীন নন, কারণ আল্লাহ সরাসরি তাঁদের ওপর তাঁর রহমত প্রদান করে থাকেন। অর্থাৎ আল্লাহ ও তাঁদের মধ্যে কোন মধ্যস্থতাকারী নেই। অপরপক্ষে অন্য সকল লোক তাঁদের দায়িত্বাধীন এবং তাঁরা হলেন মহিমান্বিত আল্লাহ ও মানুষের মধ্যস্থতাকারী। আমিরুল মোমেনিনের উক্তি বাহিক্যভাবে শাব্দিক অর্থে যা আছে তাই। কিন্তু নিগুঢ় তত্ত্বপূর্ণ অর্থহলো-আহলুল বাইত আল্লাহর অনুগত বান্দা এবং অন্য সকলকে অবশ্যই তাঁদের অনুগত অনুসারী হতে হবে। (হাদীদ১৫২, ১৫শ খণ্ড, পৃঃ ২৯৪।)
কাজেই যারা আল্লাহর নেয়ামতের প্রথম গ্রহীতা এবং অন্যদের জন্য সে নেয়ামতের উৎস তাদের সঙ্গে অন্য কারো তুলনা হতে পারে না। সামাজিক সংশ্রবের কারণে অন্য কেউ তাদের সমকক্ষ হতে পারে না। সে ক্ষেত্রে যারা সত্য ও ন্যায়ের বিরোধিতা করে তাদের সঙ্গে সমকক্ষতার কোন প্রশ্ন উঠে না। সে কারণে আমিরুল মোমেনিন উভয় দিকের চিত্র মুয়াবিয়ার সামনে তুলে ধরেছেনঃ
রাসূল আমাদের মধ্য থেকে এসেছিলেন আর তোমার পিতা আবু সুফিয়ান ছিল তাঁর বিরুদ্ধবাদীদের নেতা। হামজা ছিলেন আমাদের মধ্য থেকে এবং রাসূল তাকে ‘আল্লাহর সিংহ’ উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন; আর তোমার নানা উৎবা ইবনে রাবিয়াহ ‘আসাদুল আহলাফ’ (রাসূলের বিরুদ্ধে মিত্র শক্তির সিংহ) বলে গর্ব করতো।
বদর যুদ্ধে উৎবা যখন হামজার মুখোমুখি হলো তখন হামজা বললেন, “আমি আবদাল মুত্তালিবের পুত্র হামজা। আমি আল্লাহ ও তার রাসূলের সিংহ।”এতে উৎবা বললো, “আমি আসাদুল আহালাফ (তোমাদের বিরুদ্ধে মিত্র শক্তির সিংহ)”। কোন কোন টীকাকার লিখেছেন “আসাদুল আহলাফ”-এ কুখ্যাত উপাধি খন্দকের যুদ্ধে আবু সুফিয়ানের ছিল।
[1]।তারপর আমিরুল মোমেনিন তাঁদের বৈশিষ্ট্য হিসাবে বলেন যে, বেহেশতের যুবকদের সরদার তাদের মধ্যেই রয়েছে। অপরপক্ষে দোযখের যুবকরা মুয়াবিয়াদের বংশোদ্ভুত। এ বিষয়ে রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “হাসান ও হুসাইন বেহেশতের যুবকদের নেতা।” অপরপক্ষে উকবাহ ইবনে আবি মুইয়াত সম্পর্কে রাসূল (সাঃ) বলেছিলেন, “তুমি ও তোমার সন্তানগণের জন্য দোযখ নির্ধারিত।”
[1]।এরপর আমিরুল মোমেনিন তাদের বৈশিষ্ট্য হিসাবে বললেন যে জগতের সকল নারীর নেত্রী (ফাতিমাতুজ জোহরা) তাঁদের মধ্যেই রয়েছে। অপরপক্ষে মুয়াবিয়াদের মাঝে রয়েছে জ্বালানী কণ্ঠ কুড়ানি মহিলা। আমিরুল মোমেনিন, উমর ইবনে খাত্তাব, আবু হুজায়ফা ইবনে ইয়েমেন, সা’দ, খুদরী, আবু হুরায়রাহ্ প্রমুখ থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূল (সাঃ) বলেছিলেনঃ
নিশ্চয়ই, ফাতিমা বেহেশতের সকল নারীর নেত্রী এবং হাসান ও হুসাইন বেহেশতের যুবকদের নেতা।কিন্তু তাদের পিতা (আলী) তাদেরও নেতা।(তিরমিযী, ৫ম খণ্ড,পৃঃ ৬৫৬ও ৬৬১; হামবল, ৩য় খণ্ড, পৃঃ ৩, ৬২, ৬৪, ও৮২; ৫ম খণ্ড, পৃঃ ৩৯১-৩৯২; মাজাহ, ১ম খণ্ড, পৃঃ৫৬; নায়সাবুরী, ৩য় খণ্ড, পৃঃ ১৬৭; শাফী, ৯ম খণ্ড, পৃঃ ১৮৩, ১৮৪, ২০১; হিন্দি, ১৩শ খন্ড, পৃঃ ১২৭, ১২৮; বার, ৪র্থ খণ্ড, পৃঃ ১৮৯৫; আছীর, ৫ম খণ্ড পৃঃ ৫৭৪; বাগদাদী, ১ম খণ্ড পৃঃ ১৪০; ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃঃ ৩৭২; ১০ খণ্ড পৃঃ ২৩০; আসাকীর, ৭ম খণ্ড, পৃঃ ৩৬৫)
ইমরান ইবনে হুসাইন ও আবু ছালাবাহ আল-খুশনী থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূল (সাঃ) ফাতিমাকে বলেছিলেনঃ
হে আমার প্রাণপ্রিয় কন্যা, তুমি কি এ সংবাদ শুনে খুশি হবে না যে, তুমি রমণীকুলের সম্রাজ্ঞী? ফাতিমা বললেন, পিতা, তাহলে ইমরানের কন্যা মরিয়মের কী হবে? রাসূল (সাঃ) বললেন, সে তার যুগে শ্রেষ্ঠ রমণী আর তুমি তোমার যুগ থেকে অনাদিকাল পর্ন্ত শ্রেষ্ঠ। নিশ্চয়ই, আল্লাহর কসম, আমি ইহজগত ও পরজগতের নেতার সাথে তোমার বিয়ে দিয়েছি। মোনাফিক ছাড়া আর কেউ তার প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষ পোষণ করবে না। (ইসপাহানী৩১, ২য় খণ্ড, পৃঃ ৩২; বার৯৭, ৪র্ খণ্ড, পৃঃ ১৮৯৫)।
আয়শা থেকে বরণিত আছে যে, রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ হে ফাতিমা, তুমি কি শুনে খুশি হবে না যে, তুমি আমার উম্মতের সকল নারীর শ্রেষ্ঠ, মুমিন নারীগণের নেত্রী এবং জগতের সকল নারীর শ্রেষ্ঠ (বুখারী, ৮ম ণ্ড, পৃঃ ৭৯; নায়সাবুরী, ৭ম খণ্ড, পৃঃ ১৪২-১৪৪; মাজাগ, ১ম খণ্ড, পৃঃ ৫১৮; হাম্বল, ৬ষ্ট খণ্ড, পৃঃ ২৮২; নায়সাবুরী, ৩য় খণ্ড, পৃঃ ১৫৬)।
অপরপক্ষে মুয়াবিয়ার বংশে ছিল হীনা ও দুশ্চরিত্রা রমণী। এমনকি জ্বালানী কাঠ কুড়ানি রমণীও ছিল যেমন, উম্মে জামিলা যার কথা কোরআনেও অভিসম্পাত হিসাবে এসেছে (কোরআন-১১১:৪; নায়সাবুরী, ৩য় খণ্ড, পৃঃ ১০৭; বার, ৩য় খণড, পৃঃ ১১১৫; হাম্বলী, ১ম খণ্ড, পৃঃ ৩১৯; আছীর, ৩য় খণ্ড, ৩৯৯; আসকালানী, ৭ম খণ্ড, পৃঃ ৩৩৯; আসকালানী, ৭ম খণ্ড, পৃঃ ৫৭।)
যাদের তীর লক্ষ্যভ্রষ্ট তাদের সঙ্গে কথা না বলাই ভালো। আমরা হলাম সরাসরি আল্লাহর নেয়ামত ও রহমতের গ্রহীতা। অপরপক্ষে অন্যরা আমাদের কাছ থেকে তা পেয়ে থাকে। তোমাদের চেয়ে আমাদের দীর্ঘদিনের সুপ্রতিষ্ঠি সম্মান ও সুপরিজ্ঞাত প্রাধান্য সত্ত্বেও আমরা তোমাদের সাথে মেলামেশা ও বিবাহ বন্ধন করা থেকে বিরত থাকি নি। আমরা তোমাদেরকে সমান মনে করতাম যদিও বাস্তবে তোমরা তা ছিলে না। আর কী করেই বা তোমরা আমাদের সমান হবে যেখানে আমাদের মাঝে রয়েছে আল্লাহর রাসূল আর তোমাদের মাঝে তাঁর বিরোধীরা; আমাদের মাঝে আল্লাহর সিংহ আর তোমাদের মাঝে আল্লাহ-বিরোধী দলের সিংহ, আমাদের মাঝে বেহেশতের যুবকদের দুজন মনিব সারবিক ব্যাখ্যা এরূপ : আমিরুল মোমেনিন তাঁদের বৈশিষ্ট্য হিসাবে বলেন যে, বেহেশতের যুবকদের সরদার তাদের মধ্যেই রয়েছে। অপরপক্ষে দোযখের যুবকরা মুয়াবিয়াদের বংশোদ্ভুত। এ বিষয়ে রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “হাসান ও হুসাইন বেহেশতের যুবকদের নেতা।” অপরপক্ষে উকবাহ ইবনে আবি মুইয়াত সম্পর্কে রাসূল (সাঃ) বলেছিলেন, “তুমি ও তোমার সন্তানগণের জন্য দোযখ নির্ধারিত।”
এরপর আমিরুল মোমেনিন তাদের বৈশিষ্ট্য হিসাবে বললেন যে জগতের সকল নারীর নেত্রী (ফাতিমাতুজ জোহরা) তাঁদের মধ্যেই রয়েছে। অপরপক্ষে মুয়াবিয়াদের মাঝে রয়েছে জ্বালানী কণ্ঠ কুড়ানি মহিলা। আমিরুল মোমেনিন, উমর ইবনে খাত্তাব, আবু হুজায়ফা ইবনে ইয়েমেন, সা’দ, খুদরী, আবু হুরায়রাহ্ প্রমুখ থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূল (সাঃ) বলেছিলেনঃ
নিশ্চয়ই, ফাতিমা বেহেশতের সকল নারীর নেত্রী এবং হাসান ও হুসাইন বেহেশতের যুবকদের নেতা।কিন্তু তাদের পিতা (আলী) তাদেরও নেতা।(তিরমিযী, ৫ম খণ্ড,পৃঃ ৬৫৬ও ৬৬১; হামবল, ৩য় খণ্ড, পৃঃ ৩, ৬২, ৬৪, ও৮২; ৫ম খণ্ড, পৃঃ ৩৯১-৩৯২; মাজাহ, ১ম খণ্ড, পৃঃ৫৬; নায়সাবুরী, ৩য় খণ্ড, পৃঃ ১৬৭; শাফী, ৯ম খণ্ড, পৃঃ ১৮৩, ১৮৪, ২০১; হিন্দি, ১৩শ খন্ড, পৃঃ ১২৭, ১২৮; বার, ৪র্থ খণ্ড, পৃঃ ১৮৯৫; আছীর, ৫ম খণ্ড পৃঃ ৫৭৪; বাগদাদী, ১ম খণ্ড পৃঃ ১৪০; ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃঃ ৩৭২; ১০ খণ্ড পৃঃ ২৩০; আসাকীর, ৭ম খণ্ড, পৃঃ ৩৬৫)
ইমরান ইবনে হুসাইন ও আবু ছালাবাহ আল-খুশনী থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূল (সাঃ) ফাতিমাকে বলেছিলেনঃ
হে আমার প্রাণপ্রিয় কন্যা, তুমি কি এ সংবাদ শুনে খুশি হবে না যে, তুমি রমণীকুলের সম্রাজ্ঞী? ফাতিমা বললেন, পিতা, তাহলে ইমরানের কন্যা মরিয়মের কী হবে? রাসূল (সাঃ) বললেন, সে তার যুগে শ্রেষ্ঠ রমণী আর তুমি তোমার যুগ থেকে অনাদিকাল পর্ন্ত শ্রেষ্ঠ। নিশ্চয়ই, আল্লাহর কসম, আমি ইহজগত ও পরজগতের নেতার সাথে তোমার বিয়ে দিয়েছি। মোনাফিক ছাড়া আর কেউ তার প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষ পোষণ করবে না। (ইসপাহানী৩১, ২য় খণ্ড, পৃঃ ৩২; বার৯৭, ৪র্ খণ্ড, পৃঃ ১৮৯৫)।
আয়শা থেকে বরণিত আছে যে, রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ হে ফাতিমা, তুমি কি শুনে খুশি হবে না যে, তুমি আমার উম্মতের সকল নারীর শ্রেষ্ঠ, মুমিন নারীগণের নেত্রী এবং জগতের সকল নারীর শ্রেষ্ঠ (বুখারী, ৮ম ণ্ড, পৃঃ ৭৯; নায়সাবুরী, ৭ম খণ্ড, পৃঃ ১৪২-১৪৪; মাজাগ, ১ম খণ্ড, পৃঃ ৫১৮; হাম্বল, ৬ষ্ট খণ্ড, পৃঃ ২৮২; নায়সাবুরী, ৩য় খণ্ড, পৃঃ ১৫৬)।
অপরপক্ষে মুয়াবিয়ার বংশে ছিল হীনা ও দুশ্চরিত্রা রমণী। এমনকি জ্বালানী কাঠ কুড়ানি রমণীও ছিল যেমন, উম্মে জামিলা যার কথা কোরআনেও অভিসম্পাত হিসাবে এসেছে (কোরআন-১১১:৪; নায়সাবুরী, ৩য় খণ্ড, পৃঃ ১০৭; বার, ৩য় খণড, পৃঃ ১১১৫; হাম্বলী, ১ম খণ্ড, পৃঃ ৩১৯; আছীর, ৩য় খণ্ড, ৩৯৯; আসকালানী, ৭ম খণ্ড, পৃঃ ৩৩৯; আসকালানী, ৭ম খণ্ড, পৃঃ ৫৭।)
প্রচারে ইয়া আলী আঃ
ইমাম আলী ইবনে আবি তালিব আ.
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লা হুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়ালা আলে মোহাম্মদ
পত্রঃ ২৮
মুয়াবিয়ার পত্রের প্রত্যুত্তর আমিরুল মুমিনিন আলী ইবনে আবি তালিব আ. যা বলেছিলেন তার সংক্ষিপ্ত কিছু ব্যাখ্যা এরূপ :
তোমার পত্র : আবু উমামাহ আল বাহিলী ও আবু মুসলিম আল খাওলানীর মাধ্যমে মুয়াবিয়া কুফায় দুখানা পত্র প্রেরণ করেছিল। সে পত্র দুটির প্রত্যুত্তরে আমিরুল মোমেনিন উক্ত পত্র লিখেছিলেন। আবু উমামার মাধ্যমে প্রেরিত পত্রে মুয়াবিয়া রাসূলের প্রেরণ ও ধর্ম প্রচার সন্বন্ধে এমনভাবে লিখেছিল যেন আমিরুল মোমেনিন তা জানতেন না বা বুঝতে পারেন নি। সে জন্য তিনি মুয়াবিয়ার কথাকে হাযারে খেজুর আনার সঙ্গে তুলনা করেছেন। এটা একটা আরবী প্রবাদ। হাযার বাহরাইনের নিকটবর্তী একটা শহর।এখানে প্রচুর খেজুর ফলে। সুতরাং এ স্থলে খেজুর নিয়ে আসা বোকামি ছাড়া আর কিছু নয়। রাসূল সন্বদ্ধে লেখার পর মুয়াবিয়া তিনজন খলিফার গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্য সর্ম্পকে লিখেছিলোঃ
সাহাবাগণের মধ্যে সব চাইতে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত ও উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন ছিলেন প্রথম খলিফা যিনি মুসলিমগণকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন এবং যারা ইসলাম পরিত্যাগ করে যাচ্ছিল তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলেন। তার পরে দ্বিতীয় খলিফা বিজয়ী হয়ে শহরসমুহের গোড়া পত্তন করেছিলেন এবং কাফেরদের অবমানিত করেছিলেন। তারপর তৃতীয় খলিফা এলেন যিনি অত্যাচারের শিকার হলেন।তিনি ধর্মের প্রসাদ ঘটিয়েছিলেন এবং দূর-দূরান্তের আল্লাহর বাণী বিস্তার করেছিলেন (মিনকারী) পৃঃ৮৬-৮৭; রাব্বিহ, ৪র্থ খণ্ড, পৃঃ৩৩৪-৩৩৫: হাদীদ, ১৫শ খণ্ড, পৃঃ১৮৬)। আমিরুল মোমিনিনকে এসব লেখার পিছনে মুয়াবিয়ার একটা সুদূর প্রসারী ষড়যন্ত্র ছিল।সে ভেবেছিল তার কথায় আমিরুল মোমেনিন মানসিক আঘাত প্রাপ্ত হয়ে পূর্বের খলিফা সমন্ধে কটুক্তি ও অবজ্ঞাকর উক্তি করলে তা সিরিয়া ও ইরাকের জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে তাদের ক্ষেপিয়ে তুলবে। বস্তুত সে অনেক আগ থেকেই সিরিয়ার মানুষের কাছে প্রচার করে বেড়াচ্ছিল যে, আমিরুল মোমেনিন মানুষকে উসমানের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছিল, তালহা ও জুবায়রকে হত্যা করিয়েছিল, আয়শাকে তার ঘর থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিল এবং হাজার হাজার মুসলিমের রক্তপাত ঘটিয়েছিল। আমিরুল মোমেনিন তার উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে এমন জবাব দিয়েছিলেন যাতে তার হীনতা, ইসলামের প্রতি শত্রুতা, পরাজিত হয়ে সাধারণ ক্ষমায় ইসলাম গ্রহণ করা, মুহাজিরগণ সর্বতোভাবে তার চেয়ে উন্নত ইত্যাদি ব্যক্তকরেছিলেন। তাই সে আমিরুলি মোমেনিনের লেখা কাউকে দেখাতেও সাহস করে নি।
এরপর আমিরুল মোমেনিন হাশিমি বংশের বিশেষ মর্যদার কথা উল্লেখ করে লিখেছিলেন যে, অনেক লোক রাসূলের সঙ্গে জিহাদে অংশ গ্রহণ করে শাহাদাত বরণ করেছিল। কিন্তু হামজার শাহাদাত বিশেষ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত ছিল। রাসূল নিজেই হামজার জন্য্ শোক প্রকাশ করেছিলেন। এ বিষয়ে অনেক হাদিস বর্ণিত আছে। রাসূল (সাঃ) চৌদ্দবার হামজার জানাযা করেছিলেন। তাতে সত্তরবার তকবির (আল্লাহু আকবার) দিয়েছিলেন। রাসূল তাঁকে শহিদগণেন প্রধান বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। একইভাবে বিভিন্ন জিহাদে অনেকেরই হাত কাটা গিয়েছিল।উদাহরণ স্বরূপ বদর যুদ্ধে কুবায়ের উবনে উসাফ আল আনসারী ও মু’আজ ইবনে জাবাল এবং অহুদ যুদ্ধে আমর ইবনে আল জামুহ আস-সালামী ও উবায়েদ (আতিক) ইবনে তাঈহান তাদের হাত হারিয়েছিল। কিন্তু মোতাহ যুদ্ধে জাফর ইবনে আবি তালিব যখন তার হাত হারালো রাসূল তাকে “বেহেশতের উড়ন্ত মানুষ” ও “দুপাখা বিশিষ্ট” বলে নামকরণ করলেন।এ বিষয়ে অসংখ্য হাদিস রয়েছে। হাদিসবেত্তা আহমদ ইবনে হাম্বল (হি:১৬৪-২৪১), আহম্মদ ইবনে আলী নাসাঈ (হি:২১৫-৩০৩) এবং অন্যান্যরা বলেনঃ
আলী ইবনে আবি তালিবের বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে বিশ্বস্ত সূত্র থেকে যত হাদিস বর্ণিত আছে তার সংখ্যা সকল সাহাবা অপেক্ষা অধিক (নায়সাবুরী, ৩য় খণ্ড, পৃঃ ১০৭, বার, ৩য় খণ্ড, পৃঃ ১১১৫; হাম্বলী, ১ম খণ্ড, পৃঃ ৩১৯, আছীর২ ৩য় খণ্ড, পৃঃ ৩৯৯; আসকালানী, ৭ম খণ্ড, পৃঃ ৫৭, আসকালানী, ৭ম খণ্ড, পৃঃ ৩৩৯)।
আহলুল বাইতের একটা গুরুত্বর্পর্ণ বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আমিরুল মোমেনিন বলেন, “আমরা সরাসরি আল্লাহর আনুকুল্যের গ্রহীতা আর অন্যেরা আমাদের কাছ থেকে আনুকুল্য পেয়ে থাকে।” এর চেয়ে বেশি মর্যদাপূর্ণ অবস্থা আর কিছু হতে পারে না। হাদীসে বরণিত আছে :
আমিরুল মোমেনিন মূলত যা বুঝতে চেয়েছেন তা হলো-তাঁরা কোন মানুষের দায়িত্বাধীন নন, কারণ আল্লাহ সরাসরি তাঁদের ওপর তাঁর রহমত প্রদান করে থাকেন। অর্থাৎ আল্লাহ ও তাঁদের মধ্যে কোন মধ্যস্থতাকারী নেই। অপরপক্ষে অন্য সকল লোক তাঁদের দায়িত্বাধীন এবং তাঁরা হলেন মহিমান্বিত আল্লাহ ও মানুষের মধ্যস্থতাকারী। আমিরুল মোমেনিনের উক্তি বাহিক্যভাবে শাব্দিক অর্থে যা আছে তাই। কিন্তু নিগুঢ় তত্ত্বপূর্ণ অর্থহলো-আহলুল বাইত আল্লাহর অনুগত বান্দা এবং অন্য সকলকে অবশ্যই তাঁদের অনুগত অনুসারী হতে হবে। (হাদীদ১৫২, ১৫শ খণ্ড, পৃঃ ২৯৪।)
কাজেই যারা আল্লাহর নেয়ামতের প্রথম গ্রহীতা এবং অন্যদের জন্য সে নেয়ামতের উৎস তাদের সঙ্গে অন্য কারো তুলনা হতে পারে না। সামাজিক সংশ্রবের কারণে অন্য কেউ তাদের সমকক্ষ হতে পারে না। সে ক্ষেত্রে যারা সত্য ও ন্যায়ের বিরোধিতা করে তাদের সঙ্গে সমকক্ষতার কোন প্রশ্ন উঠে না। সে কারণে আমিরুল মোমেনিন উভয় দিকের চিত্র মুয়াবিয়ার সামনে তুলে ধরেছেনঃ
রাসূল আমাদের মধ্য থেকে এসেছিলেন আর তোমার পিতা আবু সুফিয়ান ছিল তাঁর বিরুদ্ধবাদীদের নেতা। হামজা ছিলেন আমাদের মধ্য থেকে এবং রাসূল তাকে ‘আল্লাহর সিংহ’ উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন; আর তোমার নানা উৎবা ইবনে রাবিয়াহ ‘আসাদুল আহলাফ’ (রাসূলের বিরুদ্ধে মিত্র শক্তির সিংহ) বলে গর্ব করতো।
বদর যুদ্ধে উৎবা যখন হামজার মুখোমুখি হলো তখন হামজা বললেন, “আমি আবদাল মুত্তালিবের পুত্র হামজা। আমি আল্লাহ ও তার রাসূলের সিংহ।”এতে উৎবা বললো, “আমি আসাদুল আহালাফ (তোমাদের বিরুদ্ধে মিত্র শক্তির সিংহ)”। কোন কোন টীকাকার লিখেছেন “আসাদুল আহলাফ”-এ কুখ্যাত উপাধি খন্দকের যুদ্ধে আবু সুফিয়ানের ছিল।
[1]।তারপর আমিরুল মোমেনিন তাঁদের বৈশিষ্ট্য হিসাবে বলেন যে, বেহেশতের যুবকদের সরদার তাদের মধ্যেই রয়েছে। অপরপক্ষে দোযখের যুবকরা মুয়াবিয়াদের বংশোদ্ভুত। এ বিষয়ে রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “হাসান ও হুসাইন বেহেশতের যুবকদের নেতা।” অপরপক্ষে উকবাহ ইবনে আবি মুইয়াত সম্পর্কে রাসূল (সাঃ) বলেছিলেন, “তুমি ও তোমার সন্তানগণের জন্য দোযখ নির্ধারিত।”
[1]।এরপর আমিরুল মোমেনিন তাদের বৈশিষ্ট্য হিসাবে বললেন যে জগতের সকল নারীর নেত্রী (ফাতিমাতুজ জোহরা) তাঁদের মধ্যেই রয়েছে। অপরপক্ষে মুয়াবিয়াদের মাঝে রয়েছে জ্বালানী কণ্ঠ কুড়ানি মহিলা। আমিরুল মোমেনিন, উমর ইবনে খাত্তাব, আবু হুজায়ফা ইবনে ইয়েমেন, সা’দ, খুদরী, আবু হুরায়রাহ্ প্রমুখ থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূল (সাঃ) বলেছিলেনঃ
নিশ্চয়ই, ফাতিমা বেহেশতের সকল নারীর নেত্রী এবং হাসান ও হুসাইন বেহেশতের যুবকদের নেতা।কিন্তু তাদের পিতা (আলী) তাদেরও নেতা।(তিরমিযী, ৫ম খণ্ড,পৃঃ ৬৫৬ও ৬৬১; হামবল, ৩য় খণ্ড, পৃঃ ৩, ৬২, ৬৪, ও৮২; ৫ম খণ্ড, পৃঃ ৩৯১-৩৯২; মাজাহ, ১ম খণ্ড, পৃঃ৫৬; নায়সাবুরী, ৩য় খণ্ড, পৃঃ ১৬৭; শাফী, ৯ম খণ্ড, পৃঃ ১৮৩, ১৮৪, ২০১; হিন্দি, ১৩শ খন্ড, পৃঃ ১২৭, ১২৮; বার, ৪র্থ খণ্ড, পৃঃ ১৮৯৫; আছীর, ৫ম খণ্ড পৃঃ ৫৭৪; বাগদাদী, ১ম খণ্ড পৃঃ ১৪০; ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃঃ ৩৭২; ১০ খণ্ড পৃঃ ২৩০; আসাকীর, ৭ম খণ্ড, পৃঃ ৩৬৫)
ইমরান ইবনে হুসাইন ও আবু ছালাবাহ আল-খুশনী থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূল (সাঃ) ফাতিমাকে বলেছিলেনঃ
হে আমার প্রাণপ্রিয় কন্যা, তুমি কি এ সংবাদ শুনে খুশি হবে না যে, তুমি রমণীকুলের সম্রাজ্ঞী? ফাতিমা বললেন, পিতা, তাহলে ইমরানের কন্যা মরিয়মের কী হবে? রাসূল (সাঃ) বললেন, সে তার যুগে শ্রেষ্ঠ রমণী আর তুমি তোমার যুগ থেকে অনাদিকাল পর্ন্ত শ্রেষ্ঠ। নিশ্চয়ই, আল্লাহর কসম, আমি ইহজগত ও পরজগতের নেতার সাথে তোমার বিয়ে দিয়েছি। মোনাফিক ছাড়া আর কেউ তার প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষ পোষণ করবে না। (ইসপাহানী৩১, ২য় খণ্ড, পৃঃ ৩২; বার৯৭, ৪র্ খণ্ড, পৃঃ ১৮৯৫)।
আয়শা থেকে বরণিত আছে যে, রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ হে ফাতিমা, তুমি কি শুনে খুশি হবে না যে, তুমি আমার উম্মতের সকল নারীর শ্রেষ্ঠ, মুমিন নারীগণের নেত্রী এবং জগতের সকল নারীর শ্রেষ্ঠ (বুখারী, ৮ম ণ্ড, পৃঃ ৭৯; নায়সাবুরী, ৭ম খণ্ড, পৃঃ ১৪২-১৪৪; মাজাগ, ১ম খণ্ড, পৃঃ ৫১৮; হাম্বল, ৬ষ্ট খণ্ড, পৃঃ ২৮২; নায়সাবুরী, ৩য় খণ্ড, পৃঃ ১৫৬)।
অপরপক্ষে মুয়াবিয়ার বংশে ছিল হীনা ও দুশ্চরিত্রা রমণী। এমনকি জ্বালানী কাঠ কুড়ানি রমণীও ছিল যেমন, উম্মে জামিলা যার কথা কোরআনেও অভিসম্পাত হিসাবে এসেছে (কোরআন-১১১:৪; নায়সাবুরী, ৩য় খণ্ড, পৃঃ ১০৭; বার, ৩য় খণড, পৃঃ ১১১৫; হাম্বলী, ১ম খণ্ড, পৃঃ ৩১৯; আছীর, ৩য় খণ্ড, ৩৯৯; আসকালানী, ৭ম খণ্ড, পৃঃ ৩৩৯; আসকালানী, ৭ম খণ্ড, পৃঃ ৫৭।)
যাদের তীর লক্ষ্যভ্রষ্ট তাদের সঙ্গে কথা না বলাই ভালো। আমরা হলাম সরাসরি আল্লাহর নেয়ামত ও রহমতের গ্রহীতা। অপরপক্ষে অন্যরা আমাদের কাছ থেকে তা পেয়ে থাকে। তোমাদের চেয়ে আমাদের দীর্ঘদিনের সুপ্রতিষ্ঠি সম্মান ও সুপরিজ্ঞাত প্রাধান্য সত্ত্বেও আমরা তোমাদের সাথে মেলামেশা ও বিবাহ বন্ধন করা থেকে বিরত থাকি নি। আমরা তোমাদেরকে সমান মনে করতাম যদিও বাস্তবে তোমরা তা ছিলে না। আর কী করেই বা তোমরা আমাদের সমান হবে যেখানে আমাদের মাঝে রয়েছে আল্লাহর রাসূল আর তোমাদের মাঝে তাঁর বিরোধীরা; আমাদের মাঝে আল্লাহর সিংহ আর তোমাদের মাঝে আল্লাহ-বিরোধী দলের সিংহ, আমাদের মাঝে বেহেশতের যুবকদের দুজন মনিব সারবিক ব্যাখ্যা এরূপ : আমিরুল মোমেনিন তাঁদের বৈশিষ্ট্য হিসাবে বলেন যে, বেহেশতের যুবকদের সরদার তাদের মধ্যেই রয়েছে। অপরপক্ষে দোযখের যুবকরা মুয়াবিয়াদের বংশোদ্ভুত। এ বিষয়ে রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “হাসান ও হুসাইন বেহেশতের যুবকদের নেতা।” অপরপক্ষে উকবাহ ইবনে আবি মুইয়াত সম্পর্কে রাসূল (সাঃ) বলেছিলেন, “তুমি ও তোমার সন্তানগণের জন্য দোযখ নির্ধারিত।”
এরপর আমিরুল মোমেনিন তাদের বৈশিষ্ট্য হিসাবে বললেন যে জগতের সকল নারীর নেত্রী (ফাতিমাতুজ জোহরা) তাঁদের মধ্যেই রয়েছে। অপরপক্ষে মুয়াবিয়াদের মাঝে রয়েছে জ্বালানী কণ্ঠ কুড়ানি মহিলা। আমিরুল মোমেনিন, উমর ইবনে খাত্তাব, আবু হুজায়ফা ইবনে ইয়েমেন, সা’দ, খুদরী, আবু হুরায়রাহ্ প্রমুখ থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূল (সাঃ) বলেছিলেনঃ
নিশ্চয়ই, ফাতিমা বেহেশতের সকল নারীর নেত্রী এবং হাসান ও হুসাইন বেহেশতের যুবকদের নেতা।কিন্তু তাদের পিতা (আলী) তাদেরও নেতা।(তিরমিযী, ৫ম খণ্ড,পৃঃ ৬৫৬ও ৬৬১; হামবল, ৩য় খণ্ড, পৃঃ ৩, ৬২, ৬৪, ও৮২; ৫ম খণ্ড, পৃঃ ৩৯১-৩৯২; মাজাহ, ১ম খণ্ড, পৃঃ৫৬; নায়সাবুরী, ৩য় খণ্ড, পৃঃ ১৬৭; শাফী, ৯ম খণ্ড, পৃঃ ১৮৩, ১৮৪, ২০১; হিন্দি, ১৩শ খন্ড, পৃঃ ১২৭, ১২৮; বার, ৪র্থ খণ্ড, পৃঃ ১৮৯৫; আছীর, ৫ম খণ্ড পৃঃ ৫৭৪; বাগদাদী, ১ম খণ্ড পৃঃ ১৪০; ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃঃ ৩৭২; ১০ খণ্ড পৃঃ ২৩০; আসাকীর, ৭ম খণ্ড, পৃঃ ৩৬৫)
ইমরান ইবনে হুসাইন ও আবু ছালাবাহ আল-খুশনী থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূল (সাঃ) ফাতিমাকে বলেছিলেনঃ
হে আমার প্রাণপ্রিয় কন্যা, তুমি কি এ সংবাদ শুনে খুশি হবে না যে, তুমি রমণীকুলের সম্রাজ্ঞী? ফাতিমা বললেন, পিতা, তাহলে ইমরানের কন্যা মরিয়মের কী হবে? রাসূল (সাঃ) বললেন, সে তার যুগে শ্রেষ্ঠ রমণী আর তুমি তোমার যুগ থেকে অনাদিকাল পর্ন্ত শ্রেষ্ঠ। নিশ্চয়ই, আল্লাহর কসম, আমি ইহজগত ও পরজগতের নেতার সাথে তোমার বিয়ে দিয়েছি। মোনাফিক ছাড়া আর কেউ তার প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষ পোষণ করবে না। (ইসপাহানী৩১, ২য় খণ্ড, পৃঃ ৩২; বার৯৭, ৪র্ খণ্ড, পৃঃ ১৮৯৫)।
আয়শা থেকে বরণিত আছে যে, রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ হে ফাতিমা, তুমি কি শুনে খুশি হবে না যে, তুমি আমার উম্মতের সকল নারীর শ্রেষ্ঠ, মুমিন নারীগণের নেত্রী এবং জগতের সকল নারীর শ্রেষ্ঠ (বুখারী, ৮ম ণ্ড, পৃঃ ৭৯; নায়সাবুরী, ৭ম খণ্ড, পৃঃ ১৪২-১৪৪; মাজাগ, ১ম খণ্ড, পৃঃ ৫১৮; হাম্বল, ৬ষ্ট খণ্ড, পৃঃ ২৮২; নায়সাবুরী, ৩য় খণ্ড, পৃঃ ১৫৬)।
অপরপক্ষে মুয়াবিয়ার বংশে ছিল হীনা ও দুশ্চরিত্রা রমণী। এমনকি জ্বালানী কাঠ কুড়ানি রমণীও ছিল যেমন, উম্মে জামিলা যার কথা কোরআনেও অভিসম্পাত হিসাবে এসেছে (কোরআন-১১১:৪; নায়সাবুরী, ৩য় খণ্ড, পৃঃ ১০৭; বার, ৩য় খণড, পৃঃ ১১১৫; হাম্বলী, ১ম খণ্ড, পৃঃ ৩১৯; আছীর, ৩য় খণ্ড, ৩৯৯; আসকালানী, ৭ম খণ্ড, পৃঃ ৩৩৯; আসকালানী, ৭ম খণ্ড, পৃঃ ৫৭।)
প্রচারে ইয়া আলী আঃ
মন্তব্যসমূহ