আজ হতে ১৪৪৪ চন্দ্র-বছর আগে এই দিনে (১০ই রমজান, হিজরতের তিন বছর আগে) ইন্তিকাল করেছিলেন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)'র প্রথম স্ত্রী উম্মুল মু'মিনিন হযরত খাদীজাতুল কুবরা (সালামুল্লাহি আলাইহা)। জীবন পরিচিতিনাম: খাদিজা।উপাধি: মুবারাকাহ, তাহেরাহ, কুবরা।উপনাম: উম্মে হিন্দ, উম্মুল মু'মিনীন, উম্মে জাহরা।পিতা: খুয়াইলিদ বিন আসাদ।মাতা: ফাতিমা বিনতে যাসেম।জন্ম তারিখ ও স্থান: নবুয়্যত ঘোষণার ৫৫ বছর পূর্বে মক্কায়।রাসূলের (সা.) সাথে বিবাহের তারিখ: ১০ই রবিউল আউয়াল, নবুয়্যত ঘোষণার ১১ বছর পূর্বে।মৃত্যু তারিখ ও স্থান: নবুয়্যত ঘোষণার দশম বছরে ১০ই রমজান মক্কাতে মৃত্যুবরণ করেন। প্রকৃতার্থে তিনি শেবে আবু তালিবে (আবু তালিব উপত্যকাতে) ৩ বছর বন্দী অবস্থায় তার উপর যে অত্যাচার ও নির্যাতন করা হয়েছিল সে কারণে বলা যেতে পারে তিনি শাহাদতবরণ করেছেন।মৃত্যুকালীন বয়স: ৬৫ বছর।পবিত্র মাজার শরীফ: মোয়াল্লা নামক কবরস্থানে যার অপর নাম আবু তালিবের কবরস্থান।রাসূলের (সা.) সাথে জীবন যাপন কাল: প্রায় ২৫ বছর।_____________________________________________________________রাসূলুল্লাহ্র (সা:) জীবনে হযরত খাদীজাতুল কুবরা (সালামুল্লাহি আলাইহা)ছিলেন আল্লাহ তা’আলার এক বিশেষ নেয়ামত স্বরূপ। দীর্ঘ পঁচিশ বছর যাবত আল্লাহ্র নবীকে (সা:) সাহচর্য দিয়ে, সেবা-যত্ন দিয়ে, বিপদাপদে সাহস ও শক্তি যুগিয়ে, অভাব-অনটনে সম্পদ দিয়ে, প্রয়োজন মত প্রেরণা ও পরামর্শ দিয়ে শিশু ইসলামের লালন-পালনের ক্ষেত্রে তিনি যে অসামান্য অবদান রেখেছেন ইসলামের ইতিহাসে তা তুলনাহীন। হযরত খাদীজাতুল কুবরা (সালামুল্লাহি আলাইহা)'র পবিত্র স্মৃতি যখনই স্মরণে আসত বিশ্বনবী (সা.)'র পবিত্র দু চোখ বেয়ে ঝরে পড়ত অশ্রুধারা। অন্য কোনো স্ত্রীই হযরত খাদিজা (সা. আ.)'র সমকক্ষ নন বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন। বিশ্বনবী (সা.) খাদিজা (সা. আ.)বান্ধবীদেরকেও শ্রদ্ধা করতেন।একবার বিশ্বনবী (সা.)’র কোনো এক স্ত্রী নিজেকে হযরত খাদিজা (সা. আ.)’র চেয়ে উত্তম বলে দাবি করলে আল্লাহর রাসূল (সা:) তাকে তিরস্কার করে বলেন:- “আল্লাহর কসম, মহান আল্লাহ আমাকে তাঁর চেয়ে কোনো উত্তম স্ত্রী দান করেননি।যে সময় লোকেরা আমাকে মিথ্যাবাদী বলেছিল তখন তিনিই আমাকে সত্য বলে মেনে নিয়েছিলেন, যখন অপরেরা আমাকে প্রত্যাখ্যান করেছিল, তখন তিনিই আমার উপর আস্থা স্থাপন করেছিলেন, যখন অন্যেরা আমাকে বঞ্চিত করেছিল, তখন তিনি আমাকে তাঁর সম্পদে অংশীদার করেছিলেন এবং আল্লাহ আমার অন্য সব স্ত্রীর মাধ্যমে আমাকে কোন সন্তান দেননি। কিন্তু তাঁরই মাধ্যমে আমাকে সন্তান দ্বারা অনুগৃহীত করেছিলেন”। প্রাগুক্ত পৃঃ ২২৬; মুসনাদে আহমদ ৬ষ্ঠ খণ্ড পৃঃ ১১৮, বুখারি শরিফ।উম্মুল মু'মিনিন হযরত খাদীজাতুল কুবরা (সালামুল্লাহি আলাইহা) ছিলেন সর্বপ্রথম মুসলমান। ইসলামের শুরুতে যখন হযরত মুহাম্মাদ (সা.)এর কোন সাথী ছিল না এবং সকলে তাঁকে শত্রুর চোখে দেখত, ঠিক তখনই তিনি তাঁর পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন এবং তার জীবনে অর্জিত অঢেল অর্থ ও সম্পদ ইসলামের জন্য বিলিয়ে দেন।দরিদ্র আর নির্যাতিত নও-মুসলিমদের খাবার দেয়া, কাপড় ও পোশাক দেয়া ও তাদের আশ্রয় দেয়ার কাছে নিজের সব সম্পদ বিলিয়ে দেন হযরত খাদিজা।বলা হয়ে থাকে বিশ্বনবী (সা.)'র চারিত্রিক সুষমা ও মহানুভবতা, আলী (আ.)'র তরবারি এবং খাদিজা (সা. আ.)'র অঢেল সম্পদ ছাড়া ইসলাম কখনও এতটা বিকশিত হতে পারত না।বরোধের বছরগুলোতে হজরত খাদিজা (রা.) ঈমানদারদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংগ্রহ করতে গিয়ে সব সম্পদ ব্যয় করেছিলেন। ফলে মৃত্যুর সময় তার কাছে ছিল না কোনো বস্তুগত সম্পদ। একমাত্র সন্তান ফাতিমার জন্যও তাই রেখে যাননি একটি মুদ্রাও।এমনকি তার মৃত্যুর পর কাফনের কাপড় কেনার অর্থও তার ঘরে ছিল না।প্রিয় স্বামীর চাদর তার দাফন হিসেবে ব্যবহৃত হয়।তার একটি উদাহরণ এখানে আমার প্রিয় শ্রদ্ধেয় জনাব জাহিদ আহমেদ ভাইয়ের টাইমলাইন থেকে তুলে ধরলাম:-জনাবে তাহেরা (সা. আ.) ছিলেন সেই স্বত্তা যার সম্পদের বিনিময়ে শুরু হয়েছে ইসলামের সুত্রপাত! ইসলাম প্রচারের সূচনালগ্নে মাওলা মুহাম্মদ যখন দ্বীনের দাওয়াত দিতেন তখন সবাই মুখ ফিরিয়ে চলে যাচ্ছিলেন, কেউ মাওলার কথা বিশ্বাস করতে পারছিলেন না বা কেউই তার বাপ দাদার ধর্ম থেকে সরে আসতে আগ্রহ পাচ্ছিলেন না। সেই সময়ে এগিয়ে আসেন জনাবে তাহেরা মা খাদিজা, বাসার সামনে চাদর বিছিয়ে তাতে মুদ্রা আর স্বর্নালংকারের স্তুপ করে সবাইকে ডাকতে থাকেন “এসো মুহাম্মদের কলেমা পড়ো, আর যার যা লাগে নিয়ে যাও, দুনিয়াতেও খুশি থাকো আর আখেরাতেও খুশী থাকো।“ অনেকেই দান গ্রহন করে কলেমা পড়ে মুসলিম হয়, আবার কেউ কেউ ভাব দেখায় আমার সম্পত্তি লাগবেনা বলে! তাদেরকে বিবি বলেন “তাহলে আমার কর্জ ফেরত দাও, আর না হয় মুহাম্মদের কলেমা পড়, কর্জ মাফ!” এত লোভনীয় সুযোগ হাতছাড়া করেনি তারা, তাদেরই কেউ কেউ আজ গনী নামে পরিচিত। দিন শেষে যখন মা খাদিজা খালি চাদর থেকে ধুলি ঝাড়তেন তখন আমার মাওলা হেসে বলতেন “বিবি তোমার সব সম্পদ তো শেষ হয়ে যাচ্ছে!” আমার মা ও হেসে বলতেন “ইয়া মাওলা! এগুলি আপনার হাসির সদকা! এ তো কিছুই নয়, আপনার হাসির জন্য এই কানিজের জানও কোরবান!”ইমাম বাকির (আ.) হতে বর্ণিত হয়েছে: "হযরত মুহাম্মাদ (সা.) মিরাজ থেকে ফিরে আসার পথে হযরত জিবরাইলকে (আ.) বললেন, আপনার কোন ইচ্ছা আছে? হযরত জিবরাইল (আ.) উত্তরে বললেন: আমার ইচ্ছা আপনি আমার এবং মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে হযরত খাদিজা (সা. আ.)কে সালাম পৌঁছে দেবেন।"হযরত খাদিজা (সা. আ.) জন্মের পূর্বে, ঐশী গ্রন্থ ইঞ্জিল যা হযরত ঈসার (সা.) উপর অবতীর্ণ হয়েছিল তাতে "বরকতময় নারী ও বেহেশতে হযরত মরিয়মের (আ.) সাথী" হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন: যেখানে হযরত ঈসাকে (আ.) উদ্দেশ্য করে শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে বলা হয়েছে: তার বংশধর বরকতময় থেকে যিনি বেহেশতে তোমার মাতা হযরত মরিয়মের (আ.) সাথী।যার সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন "আল্লাহ মুমিনদের জন্য যেমন ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া ও ইমরান তনয়া মারিয়ামকে উদাহরণ স্বরূপ করেছে, যেভাবে তাঁরা তাদের পবিত্রতাকে বজায় রেখেছিলেন।"যেভাবে আসিয়া ও মারিয়াম তাঁরা তাঁদের পবিত্রতাকে বজায় রেখেছিলেন এবং মহত্বতা অর্জন করেছিলেন। ঠিক সেভাবে হযরত খাদিজা তাঁর পবিত্রতাকে বজায় রেখেছিলেন। তাই হযরত খাদিজা (সা. আ.) কে হযরত আসিয়া ও মারিয়ামের সাথে তুলনা করা হয়েছে। যেহেতু তিনিও আসিয়া ও মারিয়ামের মত নমুনা স্বরূপ ছিলেন।হযরত খাদিজার পদমর্যাদা এত বেশি মূল্যবান ছিল যে, আল্লাহ তাঁর আসমানী কিতাব তাওরাত যা হযরত মুসা (আ.) এর উপর নাজিল হয়েছিল, তাতে উল্লেখ করেছেন যে,"হযরত খাদিজার (সা. আ.) উপমা ঐ নদীর পানির সাথে যে পানি আবে হায়াত নামে প্রসিদ্ধ এবং যে নদীর দুই ধারে জীবন বৃক্ষ আছে, যে বৃক্ষের বারোটি ফল আছে আর ঐ বৃক্ষের পাতাগুলো হচ্ছে উম্মতের জন্য নিরাময় স্বরূপ।"যদিও অন্ধকার যুগে সচ্চরিত্র নারী খুবই কম ছিল ও অনেক নারীই সে যুগে অসৎ কর্মে লিপ্ত ছিল কিন্তু হযরত খাদিজা (সা. আ.) সে যুগেও তার সর্বদিক থেকে পবিত্রতার জন্য "তাহেরাহ" অর্থাৎ পবিত্রা উপাধি অর্জন করেছিলেন।তার ব্যক্তিত্ব সে যুগেও এত বেশী উচ্চ পর্যায়ে ও সম্মানের পাত্র ছিল যে, তাকে সবাই "সায়্যেদাতুন নেসাওয়ান" বা নারীদের সর্দারিনী বলে ডাকতেন।সংক্ষিপ্তাকারে বলতে হয় যে, অন্ধকার যুগের নরীদেও মধ্যে হযরত খাদিজার (সা. আ.) অবস্থান এতটাই প্রিয়ভাজন ও সম্মানিত ছিল যে, পূর্ণতা ও উচ্চ মর্যাদার ক্ষেত্রে ছিলেন অনুপম। সে কারণেই বিবাহের পর রাসূল (সা.) তাকে "কুবরা" বা পরিপূর্ণ ও উচ্চাসন উপাধি দিয়েছিলেন।ইমাম হাসান (আ.) যার সৌন্দর্য্য বনী হাসিমের সবার নিকট উপমা হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে আছে। তিনি স্বয়ং এক বক্তব্যে বলেছেন:"যখন আল্লাহ তায়ালা সবার চিত্রাঙ্কন করছিলেন আমিই সবচেয়ে বেশী তার সাথে অর্থাৎ হযরত খাদিজার (সা. আ.) সাথে সদৃশ্য ছিলাম"।খাদিজা (সা. আ.) কে দাফন করার পর শিশু কন্যা ফাতিমা (সা. আ.)’কে (বড় জোর সাত বছর বয়স) সান্ত্বনা দিতে গিয়ে নির্বাক হয়ে পড়েন মহানবী (সা) যখন ফাতিমা (সা. আ.) প্রশ্ন করেন: বাবা! আমার মা কোথায় গেছেন? এ সময় ওহির ফেরেশতা জিব্রাইল (আ) নেমে এসে মহানবীকে বলেন, আপনার প্রভু আপনাকে নির্দেশ দিয়েছেন ফাতিমাকে এটা বলতে যে তিনি (মহান আল্লাহ) ফাতিমার কাছে সালাম বা দরুদ পাঠিয়েছেন এবং বলেছেন, তোমার মা রয়েছেন (খাদিজা) রয়েছে কিংখাব বা বুটিদার রেশমি কাপড়ের এমন একটি ঘরে যার প্রান্ত বা দেয়ালগুলো সোনার নির্মিত ও খুঁটিগুলো চুনি বা রুবি পাথরের তৈরি। ঘরটি রয়েছে আসিয়া বিনতে মুজাহিম (জালিম ফেরাউনের মুমিন স্ত্রী) এবং মারিয়াম বিনতে ইমরানের তথা হযরত ইসার মায়ের ঘরের মাঝখানে।যে বছর হযরত খাদিজা (সা. আ.) ইন্তিকাল করেন সেই বছর ইন্তিকাল করেন রাসূল (সা.)'র প্রিয় চাচা ও অভিভাবক হযরত আবু তালিব(রা.)। তাই এ বছরটিকে ইসলামের ইতিহাসে 'আমুল হোজন' বা 'দুঃখের বছর' হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।আজ ১০ রমজান উম্মুল মুমিনীন হযরত খাদিজা সালামুল্লাহি অালাইহার ইন্তেকাল দিবস।আজকের এই দিনে মানবজাতির শেষ ত্রাণকর্তার উদ্দেশে জানাচ্ছি গভীর শোক ও সমবেদনা। উম্মুল মুমিনীন হযরত খাদিজা সালামুল্লাহি অালাইহার ইন্তেকাল দিবস সবাইকে জানাচ্ছি গভীর শোক ও সমবেদনা।—সৈয়দ হোসাইন উল হক
আজ হতে ১৪৪৪ চন্দ্র-বছর আগে এই দিনে (১০ই রমজান, হিজরতের তিন বছর আগে) ইন্তিকাল করেছিলেন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)'র প্রথম স্ত্রী উম্মুল মু'মিনিন হযরত খাদীজাতুল কুবরা (সালামুল্লাহি আলাইহা)।
জীবন পরিচিতি
নাম: খাদিজা।
উপাধি: মুবারাকাহ, তাহেরাহ, কুবরা।
উপনাম: উম্মে হিন্দ, উম্মুল মু'মিনীন, উম্মে জাহরা।
পিতা: খুয়াইলিদ বিন আসাদ।
মাতা: ফাতিমা বিনতে যাসেম।
জন্ম তারিখ ও স্থান: নবুয়্যত ঘোষণার ৫৫ বছর পূর্বে মক্কায়।
রাসূলের (সা.) সাথে বিবাহের তারিখ: ১০ই রবিউল আউয়াল, নবুয়্যত ঘোষণার ১১ বছর পূর্বে।
মৃত্যু তারিখ ও স্থান: নবুয়্যত ঘোষণার দশম বছরে ১০ই রমজান মক্কাতে মৃত্যুবরণ করেন। প্রকৃতার্থে তিনি শেবে আবু তালিবে (আবু তালিব উপত্যকাতে) ৩ বছর বন্দী অবস্থায় তার উপর যে অত্যাচার ও নির্যাতন করা হয়েছিল সে কারণে বলা যেতে পারে তিনি শাহাদতবরণ করেছেন।
মৃত্যুকালীন বয়স: ৬৫ বছর।
পবিত্র মাজার শরীফ: মোয়াল্লা নামক কবরস্থানে যার অপর নাম আবু তালিবের কবরস্থান।
রাসূলের (সা.) সাথে জীবন যাপন কাল: প্রায় ২৫ বছর।
_____________________________________________________________
রাসূলুল্লাহ্র (সা:) জীবনে হযরত খাদীজাতুল কুবরা (সালামুল্লাহি আলাইহা)ছিলেন আল্লাহ তা’আলার এক বিশেষ নেয়ামত স্বরূপ। দীর্ঘ পঁচিশ বছর যাবত আল্লাহ্র নবীকে (সা:) সাহচর্য দিয়ে, সেবা-যত্ন দিয়ে, বিপদাপদে সাহস ও শক্তি যুগিয়ে, অভাব-অনটনে সম্পদ দিয়ে, প্রয়োজন মত প্রেরণা ও পরামর্শ দিয়ে শিশু ইসলামের লালন-পালনের ক্ষেত্রে তিনি যে অসামান্য অবদান রেখেছেন ইসলামের ইতিহাসে তা তুলনাহীন। হযরত খাদীজাতুল কুবরা (সালামুল্লাহি আলাইহা)'র পবিত্র স্মৃতি যখনই স্মরণে আসত বিশ্বনবী (সা.)'র পবিত্র দু চোখ বেয়ে ঝরে পড়ত অশ্রুধারা। অন্য কোনো স্ত্রীই হযরত খাদিজা (সা. আ.)'র সমকক্ষ নন বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন। বিশ্বনবী (সা.) খাদিজা (সা. আ.)বান্ধবীদেরকেও শ্রদ্ধা করতেন।
একবার বিশ্বনবী (সা.)’র কোনো এক স্ত্রী নিজেকে হযরত খাদিজা (সা. আ.)’র চেয়ে উত্তম বলে দাবি করলে আল্লাহর রাসূল (সা:) তাকে তিরস্কার করে বলেন:- “আল্লাহর কসম, মহান আল্লাহ আমাকে তাঁর চেয়ে কোনো উত্তম স্ত্রী দান করেননি।যে সময় লোকেরা আমাকে মিথ্যাবাদী বলেছিল তখন তিনিই আমাকে সত্য বলে মেনে নিয়েছিলেন, যখন অপরেরা আমাকে প্রত্যাখ্যান করেছিল, তখন তিনিই আমার উপর আস্থা স্থাপন করেছিলেন, যখন অন্যেরা আমাকে বঞ্চিত করেছিল, তখন তিনি আমাকে তাঁর সম্পদে অংশীদার করেছিলেন এবং আল্লাহ আমার অন্য সব স্ত্রীর মাধ্যমে আমাকে কোন সন্তান দেননি। কিন্তু তাঁরই মাধ্যমে আমাকে সন্তান দ্বারা অনুগৃহীত করেছিলেন”।
প্রাগুক্ত পৃঃ ২২৬; মুসনাদে আহমদ ৬ষ্ঠ খণ্ড পৃঃ ১১৮, বুখারি শরিফ।
উম্মুল মু'মিনিন হযরত খাদীজাতুল কুবরা (সালামুল্লাহি আলাইহা) ছিলেন সর্বপ্রথম মুসলমান। ইসলামের শুরুতে যখন হযরত মুহাম্মাদ (সা.)এর কোন সাথী ছিল না এবং সকলে তাঁকে শত্রুর চোখে দেখত, ঠিক তখনই তিনি তাঁর পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন এবং তার জীবনে অর্জিত অঢেল অর্থ ও সম্পদ ইসলামের জন্য বিলিয়ে দেন।দরিদ্র আর নির্যাতিত নও-মুসলিমদের খাবার দেয়া, কাপড় ও পোশাক দেয়া ও তাদের আশ্রয় দেয়ার কাছে নিজের সব সম্পদ বিলিয়ে দেন হযরত খাদিজা।বলা হয়ে থাকে বিশ্বনবী (সা.)'র চারিত্রিক সুষমা ও মহানুভবতা, আলী (আ.)'র তরবারি এবং খাদিজা (সা. আ.)'র অঢেল সম্পদ ছাড়া ইসলাম কখনও এতটা বিকশিত হতে পারত না।বরোধের বছরগুলোতে হজরত খাদিজা (রা.) ঈমানদারদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংগ্রহ করতে গিয়ে সব সম্পদ ব্যয় করেছিলেন। ফলে মৃত্যুর সময় তার কাছে ছিল না কোনো বস্তুগত সম্পদ। একমাত্র সন্তান ফাতিমার জন্যও তাই রেখে যাননি একটি মুদ্রাও।এমনকি তার মৃত্যুর পর কাফনের কাপড় কেনার অর্থও তার ঘরে ছিল না।প্রিয় স্বামীর চাদর তার দাফন হিসেবে ব্যবহৃত হয়।তার একটি উদাহরণ এখানে আমার প্রিয় শ্রদ্ধেয় জনাব জাহিদ আহমেদ ভাইয়ের টাইমলাইন থেকে তুলে ধরলাম:-
জনাবে তাহেরা (সা. আ.) ছিলেন সেই স্বত্তা যার সম্পদের বিনিময়ে শুরু হয়েছে ইসলামের সুত্রপাত! ইসলাম প্রচারের সূচনালগ্নে মাওলা মুহাম্মদ যখন দ্বীনের দাওয়াত দিতেন তখন সবাই মুখ ফিরিয়ে চলে যাচ্ছিলেন, কেউ মাওলার কথা বিশ্বাস করতে পারছিলেন না বা কেউই তার বাপ দাদার ধর্ম থেকে সরে আসতে আগ্রহ পাচ্ছিলেন না। সেই সময়ে এগিয়ে আসেন জনাবে তাহেরা মা খাদিজা, বাসার সামনে চাদর বিছিয়ে তাতে মুদ্রা আর স্বর্নালংকারের স্তুপ করে সবাইকে ডাকতে থাকেন “এসো মুহাম্মদের কলেমা পড়ো, আর যার যা লাগে নিয়ে যাও, দুনিয়াতেও খুশি থাকো আর আখেরাতেও খুশী থাকো।“ অনেকেই দান গ্রহন করে কলেমা পড়ে মুসলিম হয়, আবার কেউ কেউ ভাব দেখায় আমার সম্পত্তি লাগবেনা বলে! তাদেরকে বিবি বলেন “তাহলে আমার কর্জ ফেরত দাও, আর না হয় মুহাম্মদের কলেমা পড়, কর্জ মাফ!” এত লোভনীয় সুযোগ হাতছাড়া করেনি তারা, তাদেরই কেউ কেউ আজ গনী নামে পরিচিত। দিন শেষে যখন মা খাদিজা খালি চাদর থেকে ধুলি ঝাড়তেন তখন আমার মাওলা হেসে বলতেন “বিবি তোমার সব সম্পদ তো শেষ হয়ে যাচ্ছে!” আমার মা ও হেসে বলতেন “ইয়া মাওলা! এগুলি আপনার হাসির সদকা! এ তো কিছুই নয়, আপনার হাসির জন্য এই কানিজের জানও কোরবান!”
ইমাম বাকির (আ.) হতে বর্ণিত হয়েছে: "হযরত মুহাম্মাদ (সা.) মিরাজ থেকে ফিরে আসার পথে হযরত জিবরাইলকে (আ.) বললেন, আপনার কোন ইচ্ছা আছে? হযরত জিবরাইল (আ.) উত্তরে বললেন: আমার ইচ্ছা আপনি আমার এবং মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে হযরত খাদিজা (সা. আ.)কে সালাম পৌঁছে দেবেন।"
হযরত খাদিজা (সা. আ.) জন্মের পূর্বে, ঐশী গ্রন্থ ইঞ্জিল যা হযরত ঈসার (সা.) উপর অবতীর্ণ হয়েছিল তাতে "বরকতময় নারী ও বেহেশতে হযরত মরিয়মের (আ.) সাথী" হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন: যেখানে হযরত ঈসাকে (আ.) উদ্দেশ্য করে শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে বলা হয়েছে: তার বংশধর বরকতময় থেকে যিনি বেহেশতে তোমার মাতা হযরত মরিয়মের (আ.) সাথী।
যার সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন "আল্লাহ মুমিনদের জন্য যেমন ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া ও ইমরান তনয়া মারিয়ামকে উদাহরণ স্বরূপ করেছে, যেভাবে তাঁরা তাদের পবিত্রতাকে বজায় রেখেছিলেন।"
যেভাবে আসিয়া ও মারিয়াম তাঁরা তাঁদের পবিত্রতাকে বজায় রেখেছিলেন এবং মহত্বতা অর্জন করেছিলেন। ঠিক সেভাবে হযরত খাদিজা তাঁর পবিত্রতাকে বজায় রেখেছিলেন। তাই হযরত খাদিজা (সা. আ.) কে হযরত আসিয়া ও মারিয়ামের সাথে তুলনা করা হয়েছে। যেহেতু তিনিও আসিয়া ও মারিয়ামের মত নমুনা স্বরূপ ছিলেন।
হযরত খাদিজার পদমর্যাদা এত বেশি মূল্যবান ছিল যে, আল্লাহ তাঁর আসমানী কিতাব তাওরাত যা হযরত মুসা (আ.) এর উপর নাজিল হয়েছিল, তাতে উল্লেখ করেছেন যে,"হযরত খাদিজার (সা. আ.) উপমা ঐ নদীর পানির সাথে যে পানি আবে হায়াত নামে প্রসিদ্ধ এবং যে নদীর দুই ধারে জীবন বৃক্ষ আছে, যে বৃক্ষের বারোটি ফল আছে আর ঐ বৃক্ষের পাতাগুলো হচ্ছে উম্মতের জন্য নিরাময় স্বরূপ।"
যদিও অন্ধকার যুগে সচ্চরিত্র নারী খুবই কম ছিল ও অনেক নারীই সে যুগে অসৎ কর্মে লিপ্ত ছিল কিন্তু হযরত খাদিজা (সা. আ.) সে যুগেও তার সর্বদিক থেকে পবিত্রতার জন্য "তাহেরাহ" অর্থাৎ পবিত্রা উপাধি অর্জন করেছিলেন।তার ব্যক্তিত্ব সে যুগেও এত বেশী উচ্চ পর্যায়ে ও সম্মানের পাত্র ছিল যে, তাকে সবাই "সায়্যেদাতুন নেসাওয়ান" বা নারীদের সর্দারিনী বলে ডাকতেন।সংক্ষিপ্তাকারে বলতে হয় যে, অন্ধকার যুগের নরীদেও মধ্যে হযরত খাদিজার (সা. আ.) অবস্থান এতটাই প্রিয়ভাজন ও সম্মানিত ছিল যে, পূর্ণতা ও উচ্চ মর্যাদার ক্ষেত্রে ছিলেন অনুপম। সে কারণেই বিবাহের পর রাসূল (সা.) তাকে "কুবরা" বা পরিপূর্ণ ও উচ্চাসন উপাধি দিয়েছিলেন।
ইমাম হাসান (আ.) যার সৌন্দর্য্য বনী হাসিমের সবার নিকট উপমা হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে আছে। তিনি স্বয়ং এক বক্তব্যে বলেছেন:"যখন আল্লাহ তায়ালা সবার চিত্রাঙ্কন করছিলেন আমিই সবচেয়ে বেশী তার সাথে অর্থাৎ হযরত খাদিজার (সা. আ.) সাথে সদৃশ্য ছিলাম"।
খাদিজা (সা. আ.) কে দাফন করার পর শিশু কন্যা ফাতিমা (সা. আ.)’কে (বড় জোর সাত বছর বয়স) সান্ত্বনা দিতে গিয়ে নির্বাক হয়ে পড়েন মহানবী (সা) যখন ফাতিমা (সা. আ.) প্রশ্ন করেন: বাবা! আমার মা কোথায় গেছেন? এ সময় ওহির ফেরেশতা জিব্রাইল (আ) নেমে এসে মহানবীকে বলেন, আপনার প্রভু আপনাকে নির্দেশ দিয়েছেন ফাতিমাকে এটা বলতে যে তিনি (মহান আল্লাহ) ফাতিমার কাছে সালাম বা দরুদ পাঠিয়েছেন এবং বলেছেন, তোমার মা রয়েছেন (খাদিজা) রয়েছে কিংখাব বা বুটিদার রেশমি কাপড়ের এমন একটি ঘরে যার প্রান্ত বা দেয়ালগুলো সোনার নির্মিত ও খুঁটিগুলো চুনি বা রুবি পাথরের তৈরি। ঘরটি রয়েছে আসিয়া বিনতে মুজাহিম (জালিম ফেরাউনের মুমিন স্ত্রী) এবং মারিয়াম বিনতে ইমরানের তথা হযরত ইসার মায়ের ঘরের মাঝখানে।
যে বছর হযরত খাদিজা (সা. আ.) ইন্তিকাল করেন সেই বছর ইন্তিকাল করেন রাসূল (সা.)'র প্রিয় চাচা ও অভিভাবক হযরত আবু তালিব(রা.)। তাই এ বছরটিকে ইসলামের ইতিহাসে 'আমুল হোজন' বা 'দুঃখের বছর' হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।
আজ ১০ রমজান উম্মুল মুমিনীন হযরত খাদিজা সালামুল্লাহি অালাইহার ইন্তেকাল দিবস।আজকের এই দিনে মানবজাতির শেষ ত্রাণকর্তার উদ্দেশে জানাচ্ছি গভীর শোক ও সমবেদনা। উম্মুল মুমিনীন হযরত খাদিজা সালামুল্লাহি অালাইহার ইন্তেকাল দিবস সবাইকে জানাচ্ছি গভীর শোক ও সমবেদনা।
—সৈয়দ হোসাইন উল হক
মন্তব্যসমূহ