(পর্ব ৪০): ইমাম জয়নুল আবেদিন (আ.)’র জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলীমে ২৮, ২০১৯ ১৮:১০ Asia/Dhakaগত আসরে আমরা বিশ্বনবী (সা.)-এর দৌহিত্র এবং জান্নাতে যুবকদের অন্যতম সর্দার ইমাম হোসেইন (আ.)’র মূল্যবান জীবনী নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা শেষ করেছি। কাজেই আজ শুরু হবে চতুর্থ ইমাম- ইমাম সাজ্জাদ বা জয়নুল আবেদিন (আ.)’র জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলী নিয়ে আলোচনা।প্রখ্যাত বর্ণনা মতে, হযরত আলী (আ.)’র ইমামতের শেষভাগে ৩৮হিজরির জমাদিউল আউয়াল মাসের মাঝামাঝি সময়ে ইমাম সাজ্জাদ (আ.) জন্মগ্রহণ করেন। হযরত আলী (আ.)’র শাহাদাতের পর ইমাম হাসান (আ.)’র ১০ বছরের ইমামতের যুগ শুরু হয়। তাঁর শাহাদাতের পর ইমাম সাজ্জাদের বয়স যখন প্রায় ১৩ বছর তখন তাঁর পিতা ইমাম হোসেইন (আ.)’র ইমামতের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এ সময় শামের বিদ্রোহী শাসক মুয়াবিয়া ছলে-বলে-কৌশলে নিজের অপকর্মগুলো ঢাকা দিয়ে রাখতে সক্ষম হয়। সে নিজের পুত্র এজিদকে মুসলিম বিশ্বের খলিফা হিসেবে নিজের স্থলাভিষিক্ত করে। মুয়াবিয়া এমন এক ব্যক্তিকে খলিফা হিসেবে মনোনয়ন দেয় যে স্বেচ্ছাচারী জীবনে অভ্যস্ত ছিল এবং বেশিরভাগ সময়ই মদ খেয়ে মাতাল হয়ে পড়ে থাকত। ইমাম জয়নুল আবেদিন এই ঘটনাবলী দেখে বড় হন এবং কারবালার ময়দানের শোকাবহ ঘটনার সময় তিনি সেখানে উপস্থিত থাকলেও অসুস্থতার কারণে যুদ্ধে অংশ নিতে পারেননি। ইমাম হোসইন (আ)’র শাহাদাতের মাধ্যমে তাঁর ইমামতের যুগ শেষ হয়ে যায়। ফলে ইমাম সাজ্জাদ (আ.) এই গুরুদায়িত্ব পালন শুরু করেন। কারবালা ময়দানের হৃদয়বিদারক ঘটনার রক্তের হোলিখেলা শেষ হতে না হতেই ইমাম ও তাঁর একনিষ্ঠ সহযোগীদের পরিবারগুলোর নারী, শিশু ও অসুস্থ সদস্যদের গ্রেফতার করে কুফায় ওবায়দুল্লাহ বিন জিয়াদের দরবারে হাজির করা হয়। ইবনে জিয়াদ ভেবেছিল সে কারবালার যুদ্ধে জয়লাভ করেছে। তাই অহংকার ও স্পর্ধার চরম প্রকাশ ঘটিয়ে সে ইমাম সাজ্জাদ (আ.)কে জিজ্ঞাসা করে: ‘তোর নাম কি?’ ইমাম ধীরস্থিরভাবে জবাব দেন- ‘আলী’।ক্ষমতার নেশায় মত্ত ইবনে জিয়াদ এ সময় আরো বেশি ধৃষ্ঠতার সুরে বলে ওঠে: “তাহলে কি আল্লাহ কারবালার ময়দানে আলী ইবনুল হোসেইনকে হত্যা করেননি?” তার এ বক্তব্যে ইমাম উপলব্ধি করেন, বনি উমাইয়ার শাসকরা জনগণকে ধোঁকা দেয়ার মাধ্যমে কারবালার পাশবিক গণহত্যাকে আল্লাহর নামে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। এ কারণে তিনি অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে বলে ওঠেন: আলী ছিল আমার ভাই এবং সে তোর শয়তানি বাহিনীর হাতে শাহাদাতবরণ করেছে। তাকে আল্লাহ হত্যা করেনি বরং এজিদের ইসলাম বিদ্বেষী বাহিনীর হাতে তার রক্ত ঝরেছে। ইমাম সাজ্জাদের ধীরস্থীর ও শান্ত কণ্ঠে ইবনে জিয়াদের ক্রোধের আগুন দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে। সে চিৎকার দিয়ে বলে ওঠে: ‘তুমি আমার কথা আমাকেই ফিরিয়ে দিচ্ছো?’ এরপর সে জল্লাদকে তলব করে ইমাম সাজ্জাদ (আ.)কে হত্যা করার নির্দেশ দেয়। ইমাম বিন্দুমাত্র শঙ্কিতবোধ না করে বলে ওঠেন: “তুমি আমাকে হত্যা করার হুমকি দিচ্ছো? আমাদের কাছে শাহাদাত কোনো দুঃখজনক ও বেদনাদায়ক ঘটনা নয়। শাহাদাত আমাদের মর্যাদা বাড়ায় এবং এটি ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে আমাদের সবচেয়ে কার্যকর অস্ত্র।” ইবনে জিয়াদ যখন বুঝতে পারে, ইমামের সঙ্গে যুক্তিতর্কে পেরে ওঠা তার পক্ষে সম্ভব নয় বরং এভাবে কথা বাড়তে থাকলে তাকে আরো বেশি অপমানিত হতে হবে তখন সে বন্দিদেরকে শাম বা সিরিয়ায় এজিদের দরবারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।ইমাম পরিবারের বন্দিরা শামে পৌঁছালে এজিদ ইবনে মুয়াবিয়া দামেস্কের জামে মসজিদে বিশাল জনসমাবেশ ডাকে। ভর সমাবেশে ইমাম পরিবারের সদস্যদের অপমান করা ছিল তার এই আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য। এজিদ পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী মসজিদের মিম্বরে এমন এক খতিবকে পাঠায় যে ব্যক্তি ইমাম পরিবারের কুৎসা গাইতে থাকে। ইমাম সাজ্জাদ (আ.)’র পক্ষে এই অপমান মেনে নেয়া সম্ভব ছিল না। তাঁর কণ্ঠে উপস্থিত জনতা যেন বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পায়। ইমাম ওই পদলেহী বক্তাকে উদ্দেশ করে বলে ওঠেন: তোমার প্রতি ঘৃণা হে খতিব! তুমি আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির পরিবর্তে তার বান্দার সন্তুষ্টি অর্জনকে প্রাধান্য দিয়েছ। তুমি জেনে রাখো তোমার স্থান হবে জাহান্নামে। এরপর উপস্থিত জনতাকে হতবিহ্বল করে দিয়ে ইমাম সাজ্জাদ (আ.) এজিদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বলেন: তুমি আমাকে এই মিম্বরে ওঠতে দাও। আমি এমন কিছু কথা বলব যা শুনলে এখানে উপস্থিত ব্যক্তিরা খুশি হবেন। এজিদ সহজে এই অনুমতি দিতে চাইছিল না কিন্তু উপস্থিত জনতার তীব্র দাবির মুখে সে ইমামকে কথা বলার অনুমতি দিতে বাধ্য হয়। ইমাম সাজ্জাদ মিম্বরে উঠে অত্যন্ত সুরেলা কণ্ঠে আল্লাহ তায়ালার হামদ ও প্রশংসা করেন এবং রাসূলুল্লাহ (সা.)’র শানে দরুদ পেশ করেন। এরপর বলেন: হে জনগণ! আমি এমন এক মহামানবের সন্তান যাকে আল্লাহ সর্বশেষ নবী ও রাসূল হিসেবে মনোনিত করেছেন এবং তাঁর প্রতি ওহী নাজিল করেছেন। আমার পিতার নানাজী ছিলেন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)। আমি সেই আলী ইবনে আবি তালিবের সন্তান যিনি প্রথম প্রহরে ইসলাম গ্রহণ করে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত রাসূলুল্লাহর ঘনিষ্ঠ সঙ্গী ছিলেন। নারীকূল শিরমনী বিবি খাদিজা ও বিবি ফাতিমার রক্ত আমার ধমনীতে প্রবাহিত হচ্ছে। আমি এমন এক পিতার সন্তান যাকে কারবালার ময়দানে নির্মমভাবে শহীদ করা হয়েছে।এরপর তিনি কারবালার ময়দানে ইমাম হোসেইন (আ.) ও তাঁর সঙ্গীদেরকে কি নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছে তার বিবরণ তুলে ধরেন। দামেস্ক জামে মসজিদে উপস্থিত জনতা এতদিন বনি উমাইয়া শাসকগোষ্ঠীর অপপ্রচারই শুনতে পেত। সত্য তাদের সামনে ছিল অস্পষ্ট। ইমামের মুখে সত্য ভাষণ শুনে তারা হতচকিত হয়ে যায়। তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে অঝোরে কাঁদতে থাকে। ইমাম পরিবারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের জন্য যে সমাবেশ ডাকা হয়েছিল সেই সমাবেশের আবেগানুভূতি পুরোপুরি এজিদের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে চলে যায়। দুরাচার এজিদ পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য মুয়াজ্জিনকে ডেকে বলে: নামাজের সময় হয়েছে আজান দাও। মুয়াজ্জিন আল্লাহু আকবার ধ্বনি দেয়। এ সময় ইমাম সাজ্জাদ (আ.) আজানের জবাব দিতে থাকেন। তিনি বলেন: আল্লাহর চেয়ে বড় আর কেউ নেই। মুয়াজ্জিন যখন বলে ওঠে আশহাদু আল্লাহ ইলাহা ইল্লাল্লাহ, তখন ইমাম বলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো মাবুদ নেই। মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে যখন ধ্বনিত হয় আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ তখন ইমাম সাজ্জাদ (আ.) এজিদকে উদ্দেশ করে বলেন: হে এজিদ, মুয়াজ্জিন যে রাসূলুল্লাহর কথা বলছে সে কি তোমার পূর্বপুরুষ নাকি আমার পূর্বপুরুষ? যদি বলো তোমার পূর্বপুরুষ তাহলে উপস্থিত জনতার সামনে প্রমাণ হবে তুমি মিথ্যা বলছ। আর যদি বলো আমার পূর্বপুরুষ তাহলে আমার প্রশ্ন, কেন সেই রাসূলের প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র এবং জান্নাতে যুবকদের সর্দার ইমাম হোসেইনকে হত্যা করেছো? তোমার প্রতি অভিশাপ! কিয়ামতের দিন তোমাকে ভয়াবহ জবাবদিহীতার সম্মুখীন হতে হবে।এজিদ পরিকল্পনা করেছিল, দামেস্কের প্রতারিত জনগণকে ইমাম পরিবারের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়ে তাদের সামনেই ইমাম সাজ্জাদকে হত্যা করবে। কিন্তু পরিস্থিতি সম্পূর্ণ উল্টে যায়। সে এবার ইমামকে সমবেদনা দিতে অগ্রসর হয় এবং নিজেকে নিরপরাধ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করে। সে কারবালার ময়দানের সব ঘটনার দোষ কুফার গভর্নর ওবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে বলে: তার জায়গায় আমি থাকলে তোমার পিতা হোসেইনের সব দাবি মেনে নিতাম এবং তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতাম না। #পার্সটুডে/মুজাহিদুল ইসলাম/ মো: আবু সাঈদ /২৮
(পর্ব ৪০): ইমাম জয়নুল আবেদিন (আ.)’র জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলী
মে ২৮, ২০১৯ ১৮:১০ Asia/Dhaka
গত আসরে আমরা বিশ্বনবী (সা.)-এর দৌহিত্র এবং জান্নাতে যুবকদের অন্যতম সর্দার ইমাম হোসেইন (আ.)’র মূল্যবান জীবনী নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা শেষ করেছি। কাজেই আজ শুরু হবে চতুর্থ ইমাম- ইমাম সাজ্জাদ বা জয়নুল আবেদিন (আ.)’র জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলী নিয়ে আলোচনা।
প্রখ্যাত বর্ণনা মতে, হযরত আলী (আ.)’র ইমামতের শেষভাগে ৩৮হিজরির জমাদিউল আউয়াল মাসের মাঝামাঝি সময়ে ইমাম সাজ্জাদ (আ.) জন্মগ্রহণ করেন। হযরত আলী (আ.)’র শাহাদাতের পর ইমাম হাসান (আ.)’র ১০ বছরের ইমামতের যুগ শুরু হয়। তাঁর শাহাদাতের পর ইমাম সাজ্জাদের বয়স যখন প্রায় ১৩ বছর তখন তাঁর পিতা ইমাম হোসেইন (আ.)’র ইমামতের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এ সময় শামের বিদ্রোহী শাসক মুয়াবিয়া ছলে-বলে-কৌশলে নিজের অপকর্মগুলো ঢাকা দিয়ে রাখতে সক্ষম হয়। সে নিজের পুত্র এজিদকে মুসলিম বিশ্বের খলিফা হিসেবে নিজের স্থলাভিষিক্ত করে। মুয়াবিয়া এমন এক ব্যক্তিকে খলিফা হিসেবে মনোনয়ন দেয় যে স্বেচ্ছাচারী জীবনে অভ্যস্ত ছিল এবং বেশিরভাগ সময়ই মদ খেয়ে মাতাল হয়ে পড়ে থাকত।
ইমাম জয়নুল আবেদিন এই ঘটনাবলী দেখে বড় হন এবং কারবালার ময়দানের শোকাবহ ঘটনার সময় তিনি সেখানে উপস্থিত থাকলেও অসুস্থতার কারণে যুদ্ধে অংশ নিতে পারেননি। ইমাম হোসইন (আ)’র শাহাদাতের মাধ্যমে তাঁর ইমামতের যুগ শেষ হয়ে যায়। ফলে ইমাম সাজ্জাদ (আ.) এই গুরুদায়িত্ব পালন শুরু করেন। কারবালা ময়দানের হৃদয়বিদারক ঘটনার রক্তের হোলিখেলা শেষ হতে না হতেই ইমাম ও তাঁর একনিষ্ঠ সহযোগীদের পরিবারগুলোর নারী, শিশু ও অসুস্থ সদস্যদের গ্রেফতার করে কুফায় ওবায়দুল্লাহ বিন জিয়াদের দরবারে হাজির করা হয়। ইবনে জিয়াদ ভেবেছিল সে কারবালার যুদ্ধে জয়লাভ করেছে। তাই অহংকার ও স্পর্ধার চরম প্রকাশ ঘটিয়ে সে ইমাম সাজ্জাদ (আ.)কে জিজ্ঞাসা করে: ‘তোর নাম কি?’ ইমাম ধীরস্থিরভাবে জবাব দেন- ‘আলী’।
ক্ষমতার নেশায় মত্ত ইবনে জিয়াদ এ সময় আরো বেশি ধৃষ্ঠতার সুরে বলে ওঠে: “তাহলে কি আল্লাহ কারবালার ময়দানে আলী ইবনুল হোসেইনকে হত্যা করেননি?” তার এ বক্তব্যে ইমাম উপলব্ধি করেন, বনি উমাইয়ার শাসকরা জনগণকে ধোঁকা দেয়ার মাধ্যমে কারবালার পাশবিক গণহত্যাকে আল্লাহর নামে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। এ কারণে তিনি অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে বলে ওঠেন: আলী ছিল আমার ভাই এবং সে তোর শয়তানি বাহিনীর হাতে শাহাদাতবরণ করেছে। তাকে আল্লাহ হত্যা করেনি বরং এজিদের ইসলাম বিদ্বেষী বাহিনীর হাতে তার রক্ত ঝরেছে।
ইমাম সাজ্জাদের ধীরস্থীর ও শান্ত কণ্ঠে ইবনে জিয়াদের ক্রোধের আগুন দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে। সে চিৎকার দিয়ে বলে ওঠে: ‘তুমি আমার কথা আমাকেই ফিরিয়ে দিচ্ছো?’ এরপর সে জল্লাদকে তলব করে ইমাম সাজ্জাদ (আ.)কে হত্যা করার নির্দেশ দেয়। ইমাম বিন্দুমাত্র শঙ্কিতবোধ না করে বলে ওঠেন: “তুমি আমাকে হত্যা করার হুমকি দিচ্ছো? আমাদের কাছে শাহাদাত কোনো দুঃখজনক ও বেদনাদায়ক ঘটনা নয়। শাহাদাত আমাদের মর্যাদা বাড়ায় এবং এটি ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে আমাদের সবচেয়ে কার্যকর অস্ত্র।” ইবনে জিয়াদ যখন বুঝতে পারে, ইমামের সঙ্গে যুক্তিতর্কে পেরে ওঠা তার পক্ষে সম্ভব নয় বরং এভাবে কথা বাড়তে থাকলে তাকে আরো বেশি অপমানিত হতে হবে তখন সে বন্দিদেরকে শাম বা সিরিয়ায় এজিদের দরবারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।
ইমাম পরিবারের বন্দিরা শামে পৌঁছালে এজিদ ইবনে মুয়াবিয়া দামেস্কের জামে মসজিদে বিশাল জনসমাবেশ ডাকে। ভর সমাবেশে ইমাম পরিবারের সদস্যদের অপমান করা ছিল তার এই আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য। এজিদ পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী মসজিদের মিম্বরে এমন এক খতিবকে পাঠায় যে ব্যক্তি ইমাম পরিবারের কুৎসা গাইতে থাকে। ইমাম সাজ্জাদ (আ.)’র পক্ষে এই অপমান মেনে নেয়া সম্ভব ছিল না। তাঁর কণ্ঠে উপস্থিত জনতা যেন বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পায়। ইমাম ওই পদলেহী বক্তাকে উদ্দেশ করে বলে ওঠেন: তোমার প্রতি ঘৃণা হে খতিব! তুমি আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির পরিবর্তে তার বান্দার সন্তুষ্টি অর্জনকে প্রাধান্য দিয়েছ। তুমি জেনে রাখো তোমার স্থান হবে জাহান্নামে। এরপর উপস্থিত জনতাকে হতবিহ্বল করে দিয়ে ইমাম সাজ্জাদ (আ.) এজিদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বলেন: তুমি আমাকে এই মিম্বরে ওঠতে দাও। আমি এমন কিছু কথা বলব যা শুনলে এখানে উপস্থিত ব্যক্তিরা খুশি হবেন।
এজিদ সহজে এই অনুমতি দিতে চাইছিল না কিন্তু উপস্থিত জনতার তীব্র দাবির মুখে সে ইমামকে কথা বলার অনুমতি দিতে বাধ্য হয়। ইমাম সাজ্জাদ মিম্বরে উঠে অত্যন্ত সুরেলা কণ্ঠে আল্লাহ তায়ালার হামদ ও প্রশংসা করেন এবং রাসূলুল্লাহ (সা.)’র শানে দরুদ পেশ করেন। এরপর বলেন: হে জনগণ! আমি এমন এক মহামানবের সন্তান যাকে আল্লাহ সর্বশেষ নবী ও রাসূল হিসেবে মনোনিত করেছেন এবং তাঁর প্রতি ওহী নাজিল করেছেন। আমার পিতার নানাজী ছিলেন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)। আমি সেই আলী ইবনে আবি তালিবের সন্তান যিনি প্রথম প্রহরে ইসলাম গ্রহণ করে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত রাসূলুল্লাহর ঘনিষ্ঠ সঙ্গী ছিলেন। নারীকূল শিরমনী বিবি খাদিজা ও বিবি ফাতিমার রক্ত আমার ধমনীতে প্রবাহিত হচ্ছে। আমি এমন এক পিতার সন্তান যাকে কারবালার ময়দানে নির্মমভাবে শহীদ করা হয়েছে।
এরপর তিনি কারবালার ময়দানে ইমাম হোসেইন (আ.) ও তাঁর সঙ্গীদেরকে কি নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছে তার বিবরণ তুলে ধরেন। দামেস্ক জামে মসজিদে উপস্থিত জনতা এতদিন বনি উমাইয়া শাসকগোষ্ঠীর অপপ্রচারই শুনতে পেত। সত্য তাদের সামনে ছিল অস্পষ্ট। ইমামের মুখে সত্য ভাষণ শুনে তারা হতচকিত হয়ে যায়। তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে অঝোরে কাঁদতে থাকে। ইমাম পরিবারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের জন্য যে সমাবেশ ডাকা হয়েছিল সেই সমাবেশের আবেগানুভূতি পুরোপুরি এজিদের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে চলে যায়। দুরাচার এজিদ পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য মুয়াজ্জিনকে ডেকে বলে: নামাজের সময় হয়েছে আজান দাও। মুয়াজ্জিন আল্লাহু আকবার ধ্বনি দেয়। এ সময় ইমাম সাজ্জাদ (আ.) আজানের জবাব দিতে থাকেন। তিনি বলেন: আল্লাহর চেয়ে বড় আর কেউ নেই। মুয়াজ্জিন যখন বলে ওঠে আশহাদু আল্লাহ ইলাহা ইল্লাল্লাহ, তখন ইমাম বলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো মাবুদ নেই।
মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে যখন ধ্বনিত হয় আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ তখন ইমাম সাজ্জাদ (আ.) এজিদকে উদ্দেশ করে বলেন: হে এজিদ, মুয়াজ্জিন যে রাসূলুল্লাহর কথা বলছে সে কি তোমার পূর্বপুরুষ নাকি আমার পূর্বপুরুষ? যদি বলো তোমার পূর্বপুরুষ তাহলে উপস্থিত জনতার সামনে প্রমাণ হবে তুমি মিথ্যা বলছ। আর যদি বলো আমার পূর্বপুরুষ তাহলে আমার প্রশ্ন, কেন সেই রাসূলের প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র এবং জান্নাতে যুবকদের সর্দার ইমাম হোসেইনকে হত্যা করেছো? তোমার প্রতি অভিশাপ! কিয়ামতের দিন তোমাকে ভয়াবহ জবাবদিহীতার সম্মুখীন হতে হবে।
এজিদ পরিকল্পনা করেছিল, দামেস্কের প্রতারিত জনগণকে ইমাম পরিবারের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়ে তাদের সামনেই ইমাম সাজ্জাদকে হত্যা করবে। কিন্তু পরিস্থিতি সম্পূর্ণ উল্টে যায়। সে এবার ইমামকে সমবেদনা দিতে অগ্রসর হয় এবং নিজেকে নিরপরাধ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করে। সে কারবালার ময়দানের সব ঘটনার দোষ কুফার গভর্নর ওবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে বলে: তার জায়গায় আমি থাকলে তোমার পিতা হোসেইনের সব দাবি মেনে নিতাম এবং তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতাম না। #
পার্সটুডে/মুজাহিদুল ইসলাম/ মো: আবু সাঈদ /২৮
মন্তব্যসমূহ