(পর্ব ৩৮): এজিদ ইসলামের আলো নিভিয়ে ফেলার পরিকল্পনা করেমে ১৮, ২০১৯ ১৬:৪৭ Asia/Dhakaগত আসরে আমরা বলেছি, ইমাম হোসেইন (আ.) বনি উমাইয়ার জালিম শাসক এজিদের দুঃশাসনের স্বরূপ জনগণের সামনে তুলে ধরার জন্য ব্যাপক চেষ্টা চালান।তিনি বিভিন্ন এলাকা সফর করে জনগণের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার পাশাপাশি নানা স্থানে চিঠি পাঠিয়ে মানুষকে সচেতন করে তোলার চেষ্টা করেন। একইসঙ্গে সম্ভাব্য রক্তপাত এড়ানোর জন্যও সর্বান্তকরণে প্রচেষ্টা চালান ইমাম হোসেইন (আ.)। কিন্তু পাপিষ্ঠ এজিদ ও তার অনুচর বাহিনী ইমামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তাকেসহ ইসলামের আলো চিরতরে নিভিয়ে ফেলার ষড়যন্ত্র করে। আজকের আসরে আমরা এরপরের কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা নিয়ে আলোচনা করব।এজিদ ইসলামের আলো নিভিয়ে ফেলার পরিকল্পনা করলেও সে জানত না এই আলো নিভিয়ে ফেলা যায় না বরং আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছায় এর জ্যোতি দিন দিন তীব্রতর হয়। এ সম্পর্কে সূরা তওবার ৩২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে: “তারা তাদের মুখের ফুৎকারে আল্লাহর নূরকে নির্বাপিত করতে চায়। কিন্তু আল্লাহ অবশ্যই তাঁর নূরের পূর্ণতা বিধান করবেন,যদিও কাফেররা তা অপ্রীতিকর মনে করে।”এজিদের অনুচর বাহিনীর পাশাপাশি কিছু ধোকা খাওয়া মুসলমান ৬১ হিজরির ১০ মহররম আশুরার দিন দুপুর বেলা কারবালার ময়দানে এমন এক বিপর্যয় সৃষ্টি করে যা ন্যুনতম মানবতাবোধ সম্পন্ন কোনো মানুষের পক্ষে কল্পনা করা সম্ভব নয়।কারবালার ময়দানের অসম যুদ্ধের একদিকে ছিল এজিদের হাজার হাজার সৈন্য অন্যদিকে শহীদদের সর্দার ইমাম হোসেইন (আ.)’র সঙ্গে ছিলেন ৭২ জন শ্রেষ্ঠ মানুষ। এজিদ বাহিনীর সেনারা ইমাম ও তার সব সঙ্গীকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি বরং তারা ইমাম হোসেইন’সহ প্রত্যেকের মস্তক দেহ থেকে আলাদা করে ফেলেছে।এরপর তারা ইমাম শিবিরের তাবুগুলোতে আগুন লাগিয়ে দিয়ে তাতে অবস্থানরত নারী ও শিশুদের মধ্যে ভয়াবহ আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এসব সম্মানিত নারী ও শিশু যখন তাদের প্রিয়তম ব্যক্তিদের হারিয়ে শোকে কাতর তখন এজিদ বাহিনী তাদেরকে বন্দি করে চরম অমানবিক কায়দায় প্রথমে কুফায় ওবায়দুল্লাহ ও পরে শামে এজিদের দরবারে নিয়ে যায়।এজিদ ও তার সহচররা ভেবেছিল, মানুষকে শারীরিকভাবে বন্দি করলে তাদের স্বাধীনচেতা মনোবলকেও হয়ত বন্দি করে ফেলা সম্ভব। কিন্তু ইমাম শিবিরের সম্মানিত নারী ও শিশুদের ক্ষেত্রে তারা এর উল্টোচিত্র দেখতে পায়। ইমাম হোসেইন (আ.)’র বোন হযরত জয়নাব সালামুল্লাহি আলাইহা এবং ইমামের যোগ্য উত্তরসূরি ও সন্তান ইমাম সাজ্জাদ (আ.) এজিদের দরবারে সাড়া জাগানো ভাষণ দেন। তাঁদের সচেতনতামূলক ভাষণে দরবারে উপস্থিত লোকদের টনক নড়ে। হযরত জয়নাব ও ইমাম সাজ্জাদ নিজেদেরকে কারবালার ময়দানের বিজয়ী হিসেবে তুলে ধরেন এবং এমন সাহসিকতার সঙ্গে কথা বলেন যাতে এজিদের শাসনক্ষমতার ভিতে কম্পন সৃষ্টি হয়।আসলে এজিদ শুরু থেকেই তার প্রচারযন্ত্রকে কাজে লাগিয়ে মুসলিম বিশ্বে ইমাম হোসেইন (আ.)সম্পর্কে ব্যাপক নেতিবাচক প্রচার চালায়। এজিদের হাজারো দোষ ও নৈতিক স্খলনের কথা সে যুগের কারো অজানা ছিল না। তারপরও সে ইমামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে জনগণের সামনে একথা প্রমাণ করার চেষ্টা করে যে, মুসলিম জাহানের খলিফা ও আমিরুল মুমিনিন হওয়ার ক্ষেত্রে তার যোগ্যতা ইমাম হোসেইন (আ.)’র চেয়ে বেশি। সে জনগণকে আরো বোঝানোর চেষ্টা করে, ইমাম হোসেইন শুধুমাত্র ক্ষমতার লোভে মুসলিম জাহানের খলিফার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছেন; কাজেই তাকে হত্যা করা জায়েয।কিন্তু এই চরম মিথ্যাচারের স্বরূপ জনতার সামনে তুলে ধরার জন্য ইমাম এক ভাষণে বলেন: আমি ব্যক্তিগত স্বার্থে, ক্ষমতার লোভে, ফুর্তি, দুর্নীতি কিংবা জনগণের ওপর নির্যাতন করার লক্ষ্যে বিদ্রোহ করিনি; বরং আমরু বিল মা’রুফ ওয়া নাহি আনিল মুনকার বা সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করার খোদায়ী বিধান পালন করাই আমার উদ্দেশ্য। শাসকগোষ্ঠী ধর্মীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক ও চারিত্রিক দিক দিয়ে সমাজে যে চরম অনাচার ছড়িয়ে দিয়েছে তার মূলোৎপাটন করে আমি একটি সংস্কার আন্দোলন গড়ে তুলতে চাই। এই কাজে আমি আমার নানাজান রাসূলুল্লাহ (সা.) এবং আমার পিতা আলী ইবনে আবি তালেবের নির্দেশিত পথ অনুসরণ করব। কাজেই যে ব্যক্তি আমার এই বার্তা গ্রহণ করবে এবং তা মেনে চলবে সে যেন আল্লাহরই পথ অনুসরণ করল। কেউ যদি তা গ্রহণ না করে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে তাহলেও আমি আমার পথ চলা অব্যাহত রাখব। আল্লাহ তাদের ও আমার মধ্যে মীমাংসা করে দেবেন এবং তিনিই সর্বোত্তম মীমাংসাকারী।ইমাম হোসেইন (আ.) এই ভাষণের মাধ্যমে সুস্পষ্টভাবে একথা ঘোষণা করেন যে, ইসলামের শিক্ষাকে অগ্রাহ্যকারী কোনো ব্যক্তির মুসলিম জাহানের শাসনকর্তা হওয়ার অধিকার নেই।তাকে বরং আল্লাহর বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনার যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। ঐতিহাসিকদের একাংশ বনি উমাইয়া শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে শহীদদের সর্দার ইমাম হোসেইন (আ.)’র যুদ্ধকে নিছক একটি ঐতিহাসিক ঘটনা বলে মনে করে এবং তাদের ধারণা, এর বাইরে কারবালার ঘটনার আর কোনো বিশেষত্ব নেই। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, আশুরা বিপ্লব এমন একটি কালজয়ী ঘটনা যা থেকে যুগে যুগে স্বাধীনচেতা মানুষ ও জাতিগুলো জালেম শাসকদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর অনুপ্রেরণা পেয়েছে। ইরানের ইসলামি বিপ্লব নিঃসন্দেহে এর একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। কাজেই দেখা যাচ্ছে, নিছক একটি সাধারণ ঘটনা হলে কারবালা বিপ্লব বহু আগে মানুষের মন থেকে মুছে যেত। কিন্তু বাস্তবে চৌদ্দশ’ বছর পরও কারবালার কালজয়ী বিপ্লবের ঔজ্জ্বল্য যেন দিন দিন বাড়ছে।ইমাম হোসেইন (আ.) যখন হক ও বাতিলের মধ্যে যেকোনো একটি বেছে নেয়ার অবস্থায় পৌঁছে যান তখন এজিদের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো ছাড়া তার আর কোনো উপায় থাকে না। তার সামনে দু’টি পথ খোলা থাকে। হয় অপমানজনক জীবন বেছে নিয়ে প্রাণে রক্ষা পাবেন অথবা লড়াই করতে করতে সম্মানজনক মৃত্যু বা শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করবেন। এ অবস্থায় তিনি ঘোষণা করেন: “আমি মৃত্যু ও শাহাদাতকে চরম সৌভাগ্য এবং অত্যাচারী শাসকের সঙ্গে আপোশ করাকে দুর্ভাগ্য ও অপমানজনক মনে করি।” তিনি আরো বলেন, একটি অপবিত্র লোক আমাকে তার হাতে বায়াত গ্রহণ করে জিল্লতির জীবন গ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছে। তা না হলে আমি যেন মৃত্যুর জন্য তৈরি থাকি।কাজেই দেখা যাচ্ছে, ইমাম হোসেইন (আ.) জেনেবুঝে শাহাদাতের পথ বেছে নিয়েছিলেন। তিনি আশুরার পূর্ব রাতে নিজ সঙ্গীদের উদ্দেশে বলেন, আমি তোমাদেরকে বায়াতের বন্ধন থেকে মুক্ত করে দিলাম। তোমরা চলে যেতে পারো। কিন্তু জেনে রেখো, যদি আমার সঙ্গে থাকো তাহলে তোমাদেরকে নিশ্চিতভাবে শহীদ করা হবে। ইমামের জন্য জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত সঙ্গীরা এ সময় বলে ওঠেন, আপনার জন্য যদি ৭০ বারও শহীদ করা হয় তাহলেও আমরা আপনাকে ছেড়ে যাব না।আগামী আসরে আমরা ইমাম হোসেইনের জীবনী নিয়ে আলোচনার অংশ হিসেবে কালজয়ী আশুরা বিপ্লবের আরো কিছু দিক নিয়ে কলা বলার চেষ্টা।#পার্সটুডে/মুজাহিদুল ইসলাম/ মো: আবু সাঈদ/ ১৮
(পর্ব ৩৮): এজিদ ইসলামের আলো নিভিয়ে ফেলার পরিকল্পনা করে
মে ১৮, ২০১৯ ১৬:৪৭ Asia/Dhaka
গত আসরে আমরা বলেছি, ইমাম হোসেইন (আ.) বনি উমাইয়ার জালিম শাসক এজিদের দুঃশাসনের স্বরূপ জনগণের সামনে তুলে ধরার জন্য ব্যাপক চেষ্টা চালান।
তিনি বিভিন্ন এলাকা সফর করে জনগণের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার পাশাপাশি নানা স্থানে চিঠি পাঠিয়ে মানুষকে সচেতন করে তোলার চেষ্টা করেন। একইসঙ্গে সম্ভাব্য রক্তপাত এড়ানোর জন্যও সর্বান্তকরণে প্রচেষ্টা চালান ইমাম হোসেইন (আ.)। কিন্তু পাপিষ্ঠ এজিদ ও তার অনুচর বাহিনী ইমামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তাকেসহ ইসলামের আলো চিরতরে নিভিয়ে ফেলার ষড়যন্ত্র করে। আজকের আসরে আমরা এরপরের কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা নিয়ে আলোচনা করব।
এজিদ ইসলামের আলো নিভিয়ে ফেলার পরিকল্পনা করলেও সে জানত না এই আলো নিভিয়ে ফেলা যায় না বরং আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছায় এর জ্যোতি দিন দিন তীব্রতর হয়। এ সম্পর্কে সূরা তওবার ৩২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে: “তারা তাদের মুখের ফুৎকারে আল্লাহর নূরকে নির্বাপিত করতে চায়। কিন্তু আল্লাহ অবশ্যই তাঁর নূরের পূর্ণতা বিধান করবেন,যদিও কাফেররা তা অপ্রীতিকর মনে করে।”
এজিদের অনুচর বাহিনীর পাশাপাশি কিছু ধোকা খাওয়া মুসলমান ৬১ হিজরির ১০ মহররম আশুরার দিন দুপুর বেলা কারবালার ময়দানে এমন এক বিপর্যয় সৃষ্টি করে যা ন্যুনতম মানবতাবোধ সম্পন্ন কোনো মানুষের পক্ষে কল্পনা করা সম্ভব নয়।
কারবালার ময়দানের অসম যুদ্ধের একদিকে ছিল এজিদের হাজার হাজার সৈন্য অন্যদিকে শহীদদের সর্দার ইমাম হোসেইন (আ.)’র সঙ্গে ছিলেন ৭২ জন শ্রেষ্ঠ মানুষ। এজিদ বাহিনীর সেনারা ইমাম ও তার সব সঙ্গীকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি বরং তারা ইমাম হোসেইন’সহ প্রত্যেকের মস্তক দেহ থেকে আলাদা করে ফেলেছে।
এরপর তারা ইমাম শিবিরের তাবুগুলোতে আগুন লাগিয়ে দিয়ে তাতে অবস্থানরত নারী ও শিশুদের মধ্যে ভয়াবহ আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এসব সম্মানিত নারী ও শিশু যখন তাদের প্রিয়তম ব্যক্তিদের হারিয়ে শোকে কাতর তখন এজিদ বাহিনী তাদেরকে বন্দি করে চরম অমানবিক কায়দায় প্রথমে কুফায় ওবায়দুল্লাহ ও পরে শামে এজিদের দরবারে নিয়ে যায়।
এজিদ ও তার সহচররা ভেবেছিল, মানুষকে শারীরিকভাবে বন্দি করলে তাদের স্বাধীনচেতা মনোবলকেও হয়ত বন্দি করে ফেলা সম্ভব। কিন্তু ইমাম শিবিরের সম্মানিত নারী ও শিশুদের ক্ষেত্রে তারা এর উল্টোচিত্র দেখতে পায়। ইমাম হোসেইন (আ.)’র বোন হযরত জয়নাব সালামুল্লাহি আলাইহা এবং ইমামের যোগ্য উত্তরসূরি ও সন্তান ইমাম সাজ্জাদ (আ.) এজিদের দরবারে সাড়া জাগানো ভাষণ দেন। তাঁদের সচেতনতামূলক ভাষণে দরবারে উপস্থিত লোকদের টনক নড়ে। হযরত জয়নাব ও ইমাম সাজ্জাদ নিজেদেরকে কারবালার ময়দানের বিজয়ী হিসেবে তুলে ধরেন এবং এমন সাহসিকতার সঙ্গে কথা বলেন যাতে এজিদের শাসনক্ষমতার ভিতে কম্পন সৃষ্টি হয়।
আসলে এজিদ শুরু থেকেই তার প্রচারযন্ত্রকে কাজে লাগিয়ে মুসলিম বিশ্বে ইমাম হোসেইন (আ.)সম্পর্কে ব্যাপক নেতিবাচক প্রচার চালায়। এজিদের হাজারো দোষ ও নৈতিক স্খলনের কথা সে যুগের কারো অজানা ছিল না। তারপরও সে ইমামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে জনগণের সামনে একথা প্রমাণ করার চেষ্টা করে যে, মুসলিম জাহানের খলিফা ও আমিরুল মুমিনিন হওয়ার ক্ষেত্রে তার যোগ্যতা ইমাম হোসেইন (আ.)’র চেয়ে বেশি। সে জনগণকে আরো বোঝানোর চেষ্টা করে, ইমাম হোসেইন শুধুমাত্র ক্ষমতার লোভে মুসলিম জাহানের খলিফার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছেন; কাজেই তাকে হত্যা করা জায়েয।
কিন্তু এই চরম মিথ্যাচারের স্বরূপ জনতার সামনে তুলে ধরার জন্য ইমাম এক ভাষণে বলেন: আমি ব্যক্তিগত স্বার্থে, ক্ষমতার লোভে, ফুর্তি, দুর্নীতি কিংবা জনগণের ওপর নির্যাতন করার লক্ষ্যে বিদ্রোহ করিনি; বরং আমরু বিল মা’রুফ ওয়া নাহি আনিল মুনকার বা সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করার খোদায়ী বিধান পালন করাই আমার উদ্দেশ্য। শাসকগোষ্ঠী ধর্মীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক ও চারিত্রিক দিক দিয়ে সমাজে যে চরম অনাচার ছড়িয়ে দিয়েছে তার মূলোৎপাটন করে আমি একটি সংস্কার আন্দোলন গড়ে তুলতে চাই। এই কাজে আমি আমার নানাজান রাসূলুল্লাহ (সা.) এবং আমার পিতা আলী ইবনে আবি তালেবের নির্দেশিত পথ অনুসরণ করব। কাজেই যে ব্যক্তি আমার এই বার্তা গ্রহণ করবে এবং তা মেনে চলবে সে যেন আল্লাহরই পথ অনুসরণ করল। কেউ যদি তা গ্রহণ না করে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে তাহলেও আমি আমার পথ চলা অব্যাহত রাখব। আল্লাহ তাদের ও আমার মধ্যে মীমাংসা করে দেবেন এবং তিনিই সর্বোত্তম মীমাংসাকারী।
ইমাম হোসেইন (আ.) এই ভাষণের মাধ্যমে সুস্পষ্টভাবে একথা ঘোষণা করেন যে, ইসলামের শিক্ষাকে অগ্রাহ্যকারী কোনো ব্যক্তির মুসলিম জাহানের শাসনকর্তা হওয়ার অধিকার নেই।তাকে বরং আল্লাহর বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনার যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। ঐতিহাসিকদের একাংশ বনি উমাইয়া শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে শহীদদের সর্দার ইমাম হোসেইন (আ.)’র যুদ্ধকে নিছক একটি ঐতিহাসিক ঘটনা বলে মনে করে এবং তাদের ধারণা, এর বাইরে কারবালার ঘটনার আর কোনো বিশেষত্ব নেই। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, আশুরা বিপ্লব এমন একটি কালজয়ী ঘটনা যা থেকে যুগে যুগে স্বাধীনচেতা মানুষ ও জাতিগুলো জালেম শাসকদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর অনুপ্রেরণা পেয়েছে। ইরানের ইসলামি বিপ্লব নিঃসন্দেহে এর একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। কাজেই দেখা যাচ্ছে, নিছক একটি সাধারণ ঘটনা হলে কারবালা বিপ্লব বহু আগে মানুষের মন থেকে মুছে যেত। কিন্তু বাস্তবে চৌদ্দশ’ বছর পরও কারবালার কালজয়ী বিপ্লবের ঔজ্জ্বল্য যেন দিন দিন বাড়ছে।
ইমাম হোসেইন (আ.) যখন হক ও বাতিলের মধ্যে যেকোনো একটি বেছে নেয়ার অবস্থায় পৌঁছে যান তখন এজিদের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো ছাড়া তার আর কোনো উপায় থাকে না। তার সামনে দু’টি পথ খোলা থাকে। হয় অপমানজনক জীবন বেছে নিয়ে প্রাণে রক্ষা পাবেন অথবা লড়াই করতে করতে সম্মানজনক মৃত্যু বা শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করবেন। এ অবস্থায় তিনি ঘোষণা করেন: “আমি মৃত্যু ও শাহাদাতকে চরম সৌভাগ্য এবং অত্যাচারী শাসকের সঙ্গে আপোশ করাকে দুর্ভাগ্য ও অপমানজনক মনে করি।” তিনি আরো বলেন, একটি অপবিত্র লোক আমাকে তার হাতে বায়াত গ্রহণ করে জিল্লতির জীবন গ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছে। তা না হলে আমি যেন মৃত্যুর জন্য তৈরি থাকি।
কাজেই দেখা যাচ্ছে, ইমাম হোসেইন (আ.) জেনেবুঝে শাহাদাতের পথ বেছে নিয়েছিলেন। তিনি আশুরার পূর্ব রাতে নিজ সঙ্গীদের উদ্দেশে বলেন, আমি তোমাদেরকে বায়াতের বন্ধন থেকে মুক্ত করে দিলাম। তোমরা চলে যেতে পারো। কিন্তু জেনে রেখো, যদি আমার সঙ্গে থাকো তাহলে তোমাদেরকে নিশ্চিতভাবে শহীদ করা হবে। ইমামের জন্য জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত সঙ্গীরা এ সময় বলে ওঠেন, আপনার জন্য যদি ৭০ বারও শহীদ করা হয় তাহলেও আমরা আপনাকে ছেড়ে যাব না।
আগামী আসরে আমরা ইমাম হোসেইনের জীবনী নিয়ে আলোচনার অংশ হিসেবে কালজয়ী আশুরা বিপ্লবের আরো কিছু দিক নিয়ে কলা বলার চেষ্টা।#
পার্সটুডে/মুজাহিদুল ইসলাম/ মো: আবু সাঈদ/ ১৮
মন্তব্যসমূহ