(পর্ব ৩১) : মুয়াবিয়ার সঙ্গে ইমাম হাসানের (আ.) চিঠি বিনিময় ও সংঘাতএপ্রিল ১৬, ২০১৯ ১৯:৪৬ Asia/Dhakaমুয়াবিয়াকে উপদেশ দিয়ে ইমাম হাসান (আ.)’র লেখা এক চিঠিতে বলা হয়েছে:বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম। আল্লাহর বান্দা হাসান বিন আলী আমিরুল মুমিনিনের পক্ষ থেকে মুয়াবিয়া বিন আবু সুফিয়ানের উদ্দেশ্যে এই চিঠি লেখা হচ্ছে। তোমাকে সালাম। যে আল্লাহ ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই চিঠির শুরুতেই তাঁর প্রশংসা করছি। মহান আল্লাহ তাঁর রাসূল হিসেবে মুহাম্মাদ (সা.)কে নির্বাচিত করেছেন। নবীজী ছিলেন সমগ্র বিশ্ববাসীর প্রতি রহমতস্বরূপ। তিনি মানুষের কাছে আল্লাহর বার্তা পূর্ণরূপে পৌঁছে দিয়ে আমাদের কাছ থেকে চিরবিদায় নিয়েছেন। কিন্তু তাঁর ওফাতের পর আরবরা ক্ষমতার দ্বন্দ্বে পরস্পরেরর বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে তুলে নেয়। আমরা রাসূলের আহলে বাইতের পক্ষ থেকে যখন আমাদের অধিকার চাই তখন সবাই আমাদের চারপাশ থেকে দূরে সরে যায় এবং আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়। অবশ্য আমরা দ্বীন ইসলাম রক্ষার স্বার্থে তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করা থেকে বিরত থেকেছি। আমরা মনে করেছি, মুনাফিকদের পাশাপাশি কাফের ও মুশরিকরা মুসলমানদের মধ্যকার বিভেদ থেকে সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারে। তারা ইসলামকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠতে পারে।মুয়াবিকে উদ্দেশ করে ইমাম হাসান (আ.)’র লেখা চিঠিতে আরো বলা হয়: কিন্তু আজ তুমি যে হুকুমাতের দাবি করছ তাতে তোমার বিন্দুমাত্র অধিকার নেই এবং এখানেই আমি চরমভাবে বিস্মিত। দ্বীনদারির দিক দিয়ে যেমন তুমি অগ্রগামী নও তেমনি ইসলামের প্রচার ও প্রসারেও তোমার উল্লেখযোগ্য কোনো ভূমিকা নেই। নবীজী (সা.)-এর প্রতি চরম বিদ্বেষ পোষণকারী একজন কুরাইশ অধিপতির সন্তান তুমি। আমি তোমাকে সতর্ক করার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এই পত্র লিখছি যাতে কিয়ামতের দিন তুমি আল্লাহর আদালতে বলতে না পারো যে, আমি তোমাকে সতর্ক করিনি। এখনই জুলুম থেকে বিরত থাকো এবং মুসলমানদের রক্ত ঝরানো বন্ধ করো। কিন্তু যদি তুমি নিজের অবস্থানে অটল থাকার জন্য জেদ ধরে থাকো তাহলে আমি মুসলিম বাহিনী নিয়ে তোমাকে প্রতিহত করতে অগ্রসর হবো যাতে আল্লাহ তায়ালা তোমার আর আমার মাঝে উপযুক্ত ফয়সালার ব্যবস্থা করেন।এই পত্র পাওয়ার পর মুয়াবিয়া ইমাম হাসান (আ.)কে জবাবি পত্র লেখেন যাতে তিনি নিজের ও পরিবারের নেতিবাচক অতীত অস্বীকার করার চেষ্টা করেন। তিনি লেখেন, “তোমার চিঠি পেয়েছি এবং সেখানে বিশ্বনবী (সা.)’র প্রশংসা করে যেসব বক্তব্য দিয়েছো তা বুঝতে পেরেছি এবং আমি জানি যে, তিনি ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ মানব। এই উম্মত যখন থেকে নবীজীর উত্তরাধিকার নির্বাচন করা নিয়ে মতবিরোধে লিপ্ত হয়েছে তখন থেকেই নবী পরিবারের সদস্য হিসেবে তোমাদের মর্যাদার কথাও তারা স্মরণে রেখেছে। তারা কখনেই নবী পরিবারের বিশেষ অবস্থানের কথা অস্বীকার করেনি।”চিঠিতে একথা স্বীকার করার পরও ইমাম হাসানের দুই প্রতিনিধিকে উদ্দেশ করে মুয়াবিয়া বলেন: “তোমরা ফিরে যাও। একমাত্র তরবারিই পারবে তোমাদের ও আমার মধ্যকার মতবিরোধ নিরসন করতে।”এভাবে ইমাম হাসান (আ.) ও মুয়াবিয়ার মধ্যে বেশ কিছু চিঠি বিনিময় হয়। এসব চিঠির ভাষা থেকে একথা সহজেই উপলব্ধি করা যায় যে, ইমাম হাসান মুসলমানদের মধ্যে ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধ এড়িয়ে যাওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালান। কিন্তু এরপরও তিনি যখন খবর পান, মুয়াবিয়া বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে ইরাকের দিকে রওনা দিয়েছে তখন তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.)’র অন্যতম সাহাবী হুজর ইবনে উদাইকে মুয়াবিয়াকে প্রতিহত করার লক্ষ্যে সৈন্যবাহিনী প্রস্তুতের দায়িত্ব দেন। অন্যদিকে ইমামের নির্দেশে নগরীর সব মানুষকে মসজিদে আসার আহ্বান জানানো হয়। ইমাম হাসান কুফার মসজিদের মিম্বরে উঠে সমবেত জনতার উদ্দেশে বলেন: মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য জিহাদ ফরজ করেছেন। হে জনতা! আমি খবর পেয়েছি, মুয়াবিয়া তার বাহিনী নিয়ে ইরাকের উদ্দেশে রওনা হয়েছে। তাকে প্রতিহত করার জন্য আমি আপনাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। সবাই মুসলিম বাহিনীতে নিজেদের নাম লেখান।কিন্তু দুঃখজনকভাবে দেখা যায়, ইমামের বাহিনীতে যোগ দিতে খুব অল্পসংখ্যক মানুষই নাম লেখিয়েছে। এ অবস্থায় ইমাম হাসান আরো তিনদিন অপেক্ষা করেন এবং এরপর আরেকবার কুফার লোকজনকে সমবেত করে উপদেশমূলক ভাষণ দেন। কিন্তু এবারও মুয়াবিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য তেমন কেউ সাড়া দেয়নি। এই জনগণ বিশ্বনবী (সা.)’র ওফাতের পর চার খলিফার শাসন দেখেছিল এবং পঞ্চম খলিফার শাসনামলে বসবাস করছিল। এরা ছিল সেই জনগোষ্ঠী যারা চার খলিফার মধ্যে তিনজনকে হত্যা করার ধৃষ্ঠতা দেখিয়েছিল। তারা যদিও বাহ্যিকভাবে ইমাম হাসান (আ.)’র হাতে বায়াত গ্রহণ করেছিল কিন্তু স্পর্শকাতর সময়গুলিতে ইমামের নির্দেশ পালন না করে নিজেদের খেয়ালখুশি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।জনগণের ভ্রুক্ষেপহীনতা সত্ত্বেও ইমাম হাসান (আ.) ওবায়দুল্লাহ বিন আব্বাসকে একদল সেনাসহ মুয়াবিয়াকে প্রতিহত করতে পাঠান এবং তাকে নির্দেশ দেন, মুয়াবিয়ার বাহিনী হামলা করার আগে তোমরা আক্রমণ চালাবে না। আমি পরবর্তীতে আরো কিছু সৈন্য সংগ্রহ করে তোমার সঙ্গে মিলিত হব। কিন্তু কয়েকদিন পর ইমামের কাছে খবর আসে, ওবায়দুল্লাহ ১০ লাখ দিরহাম ঘুষ গ্রহণ করে যুদ্ধ করার পরিবর্তে উল্টো মুয়াবিয়ার সেনাদলে যোগ দিয়েছে।এ খবর শোনার পরও ইমাম হাসান (আ.) তার বাহিনী নিয়ে রওনা দেন এবং মাদায়েনের কাছে ‘বিসাবাত’ এলাকায় তাবু গাড়েন। তিনি তাঁর বাহিনীতে থাকা অবশিষ্ট চার হাজার সৈন্যকে এই পরীক্ষা করে নিতে চান যে, যুদ্ধক্ষেত্রে এরা তাঁকে সহযোগিতা করবে নাকি পালিয়ে মুয়াবিয়ার দলে যোগ দেবে। তিনি জামায়াতে নামাজ আদায় করার পর তার সহগামী যোদ্ধাদের উদ্দেশে শেষবারে তো ভাষণ দেন।ইমাম বলেন, আমি কখনো আমার মনে কোনো মুসলমানের ব্যাপারে বিদ্বেষ পোষণ করিনি এবং কারো ক্ষতি চাইনি। তোমরা জেনে রাখো, মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য জরুরি এবং বিভেদ ভালো নয়। তোমরা নিজেদের জন্য যতটুকু ভালো চাও তার চেয়ে অনেক বেশি শুভ কামনা আমি করি। কাজেই চুক্তি ভঙ্গকারীদের মতো আমার নির্দেশ অমান্য করো না। ইমামের এই বিজ্ঞচিত বক্তব্য শেষ হওয়ার পর উপস্থিত জনতা কানাঘুষা শুরু করে এবং একজন আরেকজনকে প্রশ্ন করে, “সে কি বলতে চাইল?” তাদের কেউ কেউ বলে, “খোদার কসম, আমার মনে হয় সে মুয়াবিয়ার সঙ্গে সন্ধি করে তার হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে চায়।”এরপর তারা চিৎকার করে বলতে থাকে, “ইমাম হাসান কাফের হয়ে গেছে।” আসলে এরা ছিল সেই দলের লোক যারা সিফফিনের যুদ্ধের পর তাদের সংকীর্ণ চিন্তার জন্য খারেজি হয়ে গিয়েছিল।#পার্সটুডে/মুজাহিদুল ইসলাম/ মো: আবু সাঈদ/ ১৬
(পর্ব ৩১) : মুয়াবিয়ার সঙ্গে ইমাম হাসানের (আ.) চিঠি বিনিময় ও সংঘাত
এপ্রিল ১৬, ২০১৯ ১৯:৪৬ Asia/Dhaka
মুয়াবিয়াকে উপদেশ দিয়ে ইমাম হাসান (আ.)’র লেখা এক চিঠিতে বলা হয়েছে:
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম। আল্লাহর বান্দা হাসান বিন আলী আমিরুল মুমিনিনের পক্ষ থেকে মুয়াবিয়া বিন আবু সুফিয়ানের উদ্দেশ্যে এই চিঠি লেখা হচ্ছে। তোমাকে সালাম। যে আল্লাহ ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই চিঠির শুরুতেই তাঁর প্রশংসা করছি। মহান আল্লাহ তাঁর রাসূল হিসেবে মুহাম্মাদ (সা.)কে নির্বাচিত করেছেন। নবীজী ছিলেন সমগ্র বিশ্ববাসীর প্রতি রহমতস্বরূপ। তিনি মানুষের কাছে আল্লাহর বার্তা পূর্ণরূপে পৌঁছে দিয়ে আমাদের কাছ থেকে চিরবিদায় নিয়েছেন। কিন্তু তাঁর ওফাতের পর আরবরা ক্ষমতার দ্বন্দ্বে পরস্পরেরর বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে তুলে নেয়। আমরা রাসূলের আহলে বাইতের পক্ষ থেকে যখন আমাদের অধিকার চাই তখন সবাই আমাদের চারপাশ থেকে দূরে সরে যায় এবং আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়। অবশ্য আমরা দ্বীন ইসলাম রক্ষার স্বার্থে তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করা থেকে বিরত থেকেছি। আমরা মনে করেছি, মুনাফিকদের পাশাপাশি কাফের ও মুশরিকরা মুসলমানদের মধ্যকার বিভেদ থেকে সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারে। তারা ইসলামকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠতে পারে।
মুয়াবিকে উদ্দেশ করে ইমাম হাসান (আ.)’র লেখা চিঠিতে আরো বলা হয়: কিন্তু আজ তুমি যে হুকুমাতের দাবি করছ তাতে তোমার বিন্দুমাত্র অধিকার নেই এবং এখানেই আমি চরমভাবে বিস্মিত। দ্বীনদারির দিক দিয়ে যেমন তুমি অগ্রগামী নও তেমনি ইসলামের প্রচার ও প্রসারেও তোমার উল্লেখযোগ্য কোনো ভূমিকা নেই। নবীজী (সা.)-এর প্রতি চরম বিদ্বেষ পোষণকারী একজন কুরাইশ অধিপতির সন্তান তুমি। আমি তোমাকে সতর্ক করার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এই পত্র লিখছি যাতে কিয়ামতের দিন তুমি আল্লাহর আদালতে বলতে না পারো যে, আমি তোমাকে সতর্ক করিনি। এখনই জুলুম থেকে বিরত থাকো এবং মুসলমানদের রক্ত ঝরানো বন্ধ করো। কিন্তু যদি তুমি নিজের অবস্থানে অটল থাকার জন্য জেদ ধরে থাকো তাহলে আমি মুসলিম বাহিনী নিয়ে তোমাকে প্রতিহত করতে অগ্রসর হবো যাতে আল্লাহ তায়ালা তোমার আর আমার মাঝে উপযুক্ত ফয়সালার ব্যবস্থা করেন।
এই পত্র পাওয়ার পর মুয়াবিয়া ইমাম হাসান (আ.)কে জবাবি পত্র লেখেন যাতে তিনি নিজের ও পরিবারের নেতিবাচক অতীত অস্বীকার করার চেষ্টা করেন। তিনি লেখেন, “তোমার চিঠি পেয়েছি এবং সেখানে বিশ্বনবী (সা.)’র প্রশংসা করে যেসব বক্তব্য দিয়েছো তা বুঝতে পেরেছি এবং আমি জানি যে, তিনি ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ মানব। এই উম্মত যখন থেকে নবীজীর উত্তরাধিকার নির্বাচন করা নিয়ে মতবিরোধে লিপ্ত হয়েছে তখন থেকেই নবী পরিবারের সদস্য হিসেবে তোমাদের মর্যাদার কথাও তারা স্মরণে রেখেছে। তারা কখনেই নবী পরিবারের বিশেষ অবস্থানের কথা অস্বীকার করেনি।”
চিঠিতে একথা স্বীকার করার পরও ইমাম হাসানের দুই প্রতিনিধিকে উদ্দেশ করে মুয়াবিয়া বলেন: “তোমরা ফিরে যাও। একমাত্র তরবারিই পারবে তোমাদের ও আমার মধ্যকার মতবিরোধ নিরসন করতে।”
এভাবে ইমাম হাসান (আ.) ও মুয়াবিয়ার মধ্যে বেশ কিছু চিঠি বিনিময় হয়। এসব চিঠির ভাষা থেকে একথা সহজেই উপলব্ধি করা যায় যে, ইমাম হাসান মুসলমানদের মধ্যে ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধ এড়িয়ে যাওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালান। কিন্তু এরপরও তিনি যখন খবর পান, মুয়াবিয়া বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে ইরাকের দিকে রওনা দিয়েছে তখন তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.)’র অন্যতম সাহাবী হুজর ইবনে উদাইকে মুয়াবিয়াকে প্রতিহত করার লক্ষ্যে সৈন্যবাহিনী প্রস্তুতের দায়িত্ব দেন। অন্যদিকে ইমামের নির্দেশে নগরীর সব মানুষকে মসজিদে আসার আহ্বান জানানো হয়। ইমাম হাসান কুফার মসজিদের মিম্বরে উঠে সমবেত জনতার উদ্দেশে বলেন: মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য জিহাদ ফরজ করেছেন। হে জনতা! আমি খবর পেয়েছি, মুয়াবিয়া তার বাহিনী নিয়ে ইরাকের উদ্দেশে রওনা হয়েছে। তাকে প্রতিহত করার জন্য আমি আপনাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। সবাই মুসলিম বাহিনীতে নিজেদের নাম লেখান।
কিন্তু দুঃখজনকভাবে দেখা যায়, ইমামের বাহিনীতে যোগ দিতে খুব অল্পসংখ্যক মানুষই নাম লেখিয়েছে। এ অবস্থায় ইমাম হাসান আরো তিনদিন অপেক্ষা করেন এবং এরপর আরেকবার কুফার লোকজনকে সমবেত করে উপদেশমূলক ভাষণ দেন। কিন্তু এবারও মুয়াবিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য তেমন কেউ সাড়া দেয়নি। এই জনগণ বিশ্বনবী (সা.)’র ওফাতের পর চার খলিফার শাসন দেখেছিল এবং পঞ্চম খলিফার শাসনামলে বসবাস করছিল। এরা ছিল সেই জনগোষ্ঠী যারা চার খলিফার মধ্যে তিনজনকে হত্যা করার ধৃষ্ঠতা দেখিয়েছিল। তারা যদিও বাহ্যিকভাবে ইমাম হাসান (আ.)’র হাতে বায়াত গ্রহণ করেছিল কিন্তু স্পর্শকাতর সময়গুলিতে ইমামের নির্দেশ পালন না করে নিজেদের খেয়ালখুশি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
জনগণের ভ্রুক্ষেপহীনতা সত্ত্বেও ইমাম হাসান (আ.) ওবায়দুল্লাহ বিন আব্বাসকে একদল সেনাসহ মুয়াবিয়াকে প্রতিহত করতে পাঠান এবং তাকে নির্দেশ দেন, মুয়াবিয়ার বাহিনী হামলা করার আগে তোমরা আক্রমণ চালাবে না। আমি পরবর্তীতে আরো কিছু সৈন্য সংগ্রহ করে তোমার সঙ্গে মিলিত হব। কিন্তু কয়েকদিন পর ইমামের কাছে খবর আসে, ওবায়দুল্লাহ ১০ লাখ দিরহাম ঘুষ গ্রহণ করে যুদ্ধ করার পরিবর্তে উল্টো মুয়াবিয়ার সেনাদলে যোগ দিয়েছে।
এ খবর শোনার পরও ইমাম হাসান (আ.) তার বাহিনী নিয়ে রওনা দেন এবং মাদায়েনের কাছে ‘বিসাবাত’ এলাকায় তাবু গাড়েন। তিনি তাঁর বাহিনীতে থাকা অবশিষ্ট চার হাজার সৈন্যকে এই পরীক্ষা করে নিতে চান যে, যুদ্ধক্ষেত্রে এরা তাঁকে সহযোগিতা করবে নাকি পালিয়ে মুয়াবিয়ার দলে যোগ দেবে। তিনি জামায়াতে নামাজ আদায় করার পর তার সহগামী যোদ্ধাদের উদ্দেশে শেষবারে তো ভাষণ দেন।
ইমাম বলেন, আমি কখনো আমার মনে কোনো মুসলমানের ব্যাপারে বিদ্বেষ পোষণ করিনি এবং কারো ক্ষতি চাইনি। তোমরা জেনে রাখো, মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য জরুরি এবং বিভেদ ভালো নয়। তোমরা নিজেদের জন্য যতটুকু ভালো চাও তার চেয়ে অনেক বেশি শুভ কামনা আমি করি। কাজেই চুক্তি ভঙ্গকারীদের মতো আমার নির্দেশ অমান্য করো না। ইমামের এই বিজ্ঞচিত বক্তব্য শেষ হওয়ার পর উপস্থিত জনতা কানাঘুষা শুরু করে এবং একজন আরেকজনকে প্রশ্ন করে, “সে কি বলতে চাইল?” তাদের কেউ কেউ বলে, “খোদার কসম, আমার মনে হয় সে মুয়াবিয়ার সঙ্গে সন্ধি করে তার হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে চায়।”এরপর তারা চিৎকার করে বলতে থাকে, “ইমাম হাসান কাফের হয়ে গেছে।” আসলে এরা ছিল সেই দলের লোক যারা সিফফিনের যুদ্ধের পর তাদের সংকীর্ণ চিন্তার জন্য খারেজি হয়ে গিয়েছিল।#
পার্সটুডে/মুজাহিদুল ইসলাম/ মো: আবু সাঈদ/ ১৬
মন্তব্যসমূহ