(পর্ব ৪৭): ইমাম জাফর সাদেক (আ.)’র মূল্যবান জীবনী ও কর্মজুলাই ২৩, ২০১৯ ১৫:৪২ Asia/Dhakaনবী পরিবারের ইমামগণের মধ্যে ইমাম জাফর সাদেক (আ.)’র সময়কাল ছিল সব দিক দিয়ে অন্য ইমামদের সময়কাল থেকে আলাদা। কারণ, রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় দিক দিয়ে তিনি কঠিন সংকটের সম্মুখীন হয়েছিলেন।রাজনৈতিক দিক দিয়ে ইমাম যে সংকটের মুখে পড়েছিলেন তার অন্যতম ছিল নিজ গোত্র বনি হাশিমের পক্ষ থেকে হুমকি। বিষয়টি উপলব্ধি করার জন্য একটু পেছনে ফিরে যেতে হবে। কারবালার হৃদয়বিদারক ঘটনার পর বনি হাশিম গোত্রের নেতৃস্থানীয় লোকজন শাসকগোষ্ঠীর রোষানল থেকে বাঁচার জন্য মক্কা ও মদীনার মধ্যবর্তী আবুয়া নামক স্থানে এসে গোপনে বসবাস করতে শুরু করেন। পরবর্তীতে ইমাম জাফর সাদেক (আ.)’র সমসাময়িক যুগে এখানে বসবাস করছিলেন ইমাম হাসান (আ.)’র অন্যতম দৌহিত্র আব্দুল্লাহ বিন হাসান মুসান্না। তার সঙ্গে ছিলেন তার দুই ছেলে মুহাম্মাদ ও ইব্রাহিম। পাশাপাশি সেখানে ছিলেন রাসূলুল্লাহ (সা.)’র চাচা আব্বাসের বংশধর ইব্রাহিমসহ আরো অনেকে।বনি হাশিম গোত্রের এই মানুষগুলো নিজেদেরকে নবী পরিবারের সদস্য হিসেবে পরিচয় দিতেন। কিন্তু এই দাবির পেছনে তাদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল ক্ষমতায় যাওয়া। তারা জনগণকে ধোঁকা দেয়ার জন্য এই দাবি করতে থাকেন যে, নবী পরিবারের সদস্যরাই ক্ষমতার একমাত্র উত্তরাধিকারী। কাজেই তাদের কাউকে নির্বাচিত করে ক্ষমতার অধিকারী করা হোক। কিন্তু তারা যে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছিলেন তা হলো তারা ইমাম সাদেক (আ.)’র নাম উচ্চারণ না করে সার্বিকভাবে নবী পরিবারের কথা তুলে ধরেন যাতে বনি হাশিম গোত্র থেকে তাদের পছন্দসই ব্যক্তির হাতে শাসনক্ষমতা তুলে দেয়া হয়।এক গোপন বৈঠকে আব্দুল্লাহ তার ছেলে মোহাম্মাদের হাতে বায়াত গ্রহণ করে তার নেতৃত্বে উমাইয়া শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার জন্য উপস্থিত সবার প্রতি আহ্বান জানান। তিনি নিজ সন্তান মোহাম্মাদকে ‘উম্মতের মাহদি’ হিসেবে দাবি করেন। তার এ বক্তব্যের পর উপস্থিত সবাই মোহাম্মাদের হাতে বায়াত গ্রহণ করেন। মোহাম্মাদ সবার মধ্যে মুত্তাকি ও পরহেজগার হিসেবে পরিচিত ছিলেন বলে এই সিদ্ধান্তে কেউ দ্বিমত করেনি।আব্দুল্লাহ এরপর মোহাম্মাদের পক্ষে ইমাম জাফর সাদেক (আ.)’র সমর্থন লাভের চেষ্টা শুরু করেন। তিনি ইমামের কাছে একটি প্রতিনিধিদল পাঠান। তার পাঠানো প্রতিনিধিদলের সঙ্গে ইমাম সাদেক (আ.) বনি হাশিম গোত্র পরিদর্শনে আসেন। আব্দুল্লাহ সবার সামনে ইমামকে উদ্দেশ করে বলেন, মুসলিম উম্মাহর পরিস্থিতি বেশি ভালো নয়। এই উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে সবাই একথা একবাক্যে মেনে নিয়েছেন যে, আমার ছেলে মোহাম্মাদই হচ্ছে উম্মতের মাহদি এবং তারা তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। আপনিও তার হাতে বায়াত গ্রহণ করুন।একথা শোনার পর ইমাম সাদেক (আ.) সুস্পষ্ট ভাষায় বলেন: রাসূলুল্লাহ (সা.) যে মাহদির প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছেন তোমার ছেলে সে নয়। তুমি যদি সেরকমটি মনে করো তাহলে মারাত্মক ভুলের মধ্যে রয়েছ। এরপর তিনি সমবেত জনতার উদ্দেশে বলেন: আপনারা যদি ‘উম্মতের মাহদি’ হিসেবে তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেন তাহলে আমি তা করব না। প্রতিশ্রুত ইমাম মাহদির আবির্ভাবের সময় এখনো আসেনি এবং এই দাবিটি মিথ্যা। তবে আপনাদের আন্দোলনের উদ্দেশ্য যদি শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচার থেকে মুসলিম উম্মাহকে মুক্তি দেয়া হয়ে থাকে তাহলে আমি তার হাতে বায়াত গ্রহণ করব।ইমাম সাদেক (আ.) এই বক্তব্যের মাধ্যমে তার অবস্থান স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিলেও আব্দুল্লাহ তার বক্তব্যে অটল থাকেন এবং দাবি করেন, তার সন্তানই উম্মতের মাহদি। এ সময় ইমাম আবার বলেন, তোমার ছেলে উম্মতের মাহদি নয় এবং সে নিহত হবে। এ সত্ত্বেও আব্দুল্লাহর পুত্র মোহাম্মাদের তাকওয়া ও পরহেজগারির জন্য তাকে ভালোবাসতেন ইমাম জাফর সাদেক (আ.)। এ সময় আব্বাসের বংশধররা বা বনি আব্বাস ছিল ক্ষমতার অন্ধ পাগল। তারা বাইরে বাইরে মোহাম্মাদের হাতে বায়াত নিলেও কুফার অধিবাসী আবু সালামাকে নেতা নির্বাচিত করে। এ ছাড়া, তৎকালীন বৃহত্তর খোরাসান অঞ্চলের জন্য আবু মোসলেম নামের এক ব্যক্তিকে আমীর উপাধিতে ভূষিত করে। আবু মোসলেম ক্ষমতায় যাওয়ার পথে আবু সালামাকে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে ধরে নেয় এবং তাকে হত্যা করে। আবু সালামা নিহত হওয়ার আগে এ বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে, তিনি ক্ষমতা পিপাসুদের ক্রীড়নকে পরিণত হয়েছেন। তাই তিনি অনুতপ্ত হন এবং খেলাফতকে বনি আব্বাসের হাত থেকে আবু তালেবের বংশধরদের হাতে ফিরিয়ে দেয়ার সংকল্প করেন। এজন্য তিনি মদীনায় অবস্থানরত ইমাম জাফর সাদেক, আব্দুল্লাহ বিন হাসান এবং ওমর বিন আলী বিন হোসেইনের কাছে একটি চিঠি পাঠান। তিনি তার দূতকে সবার আগে ইমাম সাদেক (আ.)’র কাছে যেতে বলেন।আবু সালামা তাকে বলে দেন, যদি ইমাম সাদেক চিঠির বিষয়বস্তু মেনে নেন তাহলে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ব্যক্তির কাছে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। কিন্তু যদি ইমাম মেনে না নেন তাহলে দূত যেন আব্দুল্লাহ বিন হাসানের কাছে যান। কথা অনুযায়ী আবু সালামার দূত ইমাম জাফর সাদেক (আ.)’র কাছে চিঠি হস্তান্তরের সঙ্গে সঙ্গে তিনি চিঠিটি ছিঁড়ে ফেলেন।এবার আবু সালামা’র দূত দ্বিতীয় চিঠি নিয়ে আব্দুল্লাহর কাছে যান। আব্দুল্লাহ চিঠি পেয়ে ভীষণ খুশি হন। তিনি চিঠিটি নিয়ে ইমাম সাদেক (আ.)’র কাছে যান এবং বলেন: এই চিঠিটি আবু সালামা আমাকে পাঠিয়েছে। এতে লেখা আছে, খোরাসানে আমাদের সব শিয়া আমাদের কাছে খেলাফত ফিরিয়ে দেয়ার জন্য মাঠে নামতে প্রস্তুত। আমাকে এ কাজের দায়িত্ব গ্রহণ করার অনুরোধ জানিয়েছেন আবু সালামা।ইমাম সাদেক (আ.) একথা শোনার পর আব্দুল্লাহকে বলেন: আবু সালামা তোমার আগে ঠিক এই চিঠিটাই আমাকে পাঠিয়েছিল। কিন্তু আমি সেটা ছিঁড়ে ফেলেছি। একথা শুনে আব্দুল্লাহ ক্ষুব্ধ হয়ে ইমামের কাছ থেকে চলে যান।যাই হোক, আব্দুল্লাহ ও তার সন্তানরা ক্ষমতার মোহে বনি আব্বাসের ওপর ভরসা করেন। কিন্তু ইমাম সাদেক (আ.) ভালোভাবে জানতেন, বনি আব্বাস মুখে আহলে বাইতের কথা বললেও প্রতারণার মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উদ্দেশ্য নেই। বাস্তবে হয়েছিলও তাই। তারা ক্ষমতায় যাওয়ার পর আবু মোসলেমের মতো সহচরদের পাশাপাশি সব বিরুদ্ধবাদীর ওপর গণহত্যা চালিয়েছিল।ইমাম জাফর সাদেক (আ.) না পারছিলেন বনি আব্বাসদের সমর্থন জানাতে এবং না পারছিলেন তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে। আগামী আসরে আমরা এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। সে আসরেও আপনাদের সঙ্গ পাওয়ার আশা রাখছি।#পার্সটুডে/মুজাহিদুল ইসলাম/ মো: আবু সাঈদ / ২৩
(পর্ব ৪৭): ইমাম জাফর সাদেক (আ.)’র মূল্যবান জীবনী ও কর্ম
জুলাই ২৩, ২০১৯ ১৫:৪২ Asia/Dhaka
নবী পরিবারের ইমামগণের মধ্যে ইমাম জাফর সাদেক (আ.)’র সময়কাল ছিল সব দিক দিয়ে অন্য ইমামদের সময়কাল থেকে আলাদা। কারণ, রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় দিক দিয়ে তিনি কঠিন সংকটের সম্মুখীন হয়েছিলেন।
রাজনৈতিক দিক দিয়ে ইমাম যে সংকটের মুখে পড়েছিলেন তার অন্যতম ছিল নিজ গোত্র বনি হাশিমের পক্ষ থেকে হুমকি। বিষয়টি উপলব্ধি করার জন্য একটু পেছনে ফিরে যেতে হবে। কারবালার হৃদয়বিদারক ঘটনার পর বনি হাশিম গোত্রের নেতৃস্থানীয় লোকজন শাসকগোষ্ঠীর রোষানল থেকে বাঁচার জন্য মক্কা ও মদীনার মধ্যবর্তী আবুয়া নামক স্থানে এসে গোপনে বসবাস করতে শুরু করেন। পরবর্তীতে ইমাম জাফর সাদেক (আ.)’র সমসাময়িক যুগে এখানে বসবাস করছিলেন ইমাম হাসান (আ.)’র অন্যতম দৌহিত্র আব্দুল্লাহ বিন হাসান মুসান্না। তার সঙ্গে ছিলেন তার দুই ছেলে মুহাম্মাদ ও ইব্রাহিম। পাশাপাশি সেখানে ছিলেন রাসূলুল্লাহ (সা.)’র চাচা আব্বাসের বংশধর ইব্রাহিমসহ আরো অনেকে।
বনি হাশিম গোত্রের এই মানুষগুলো নিজেদেরকে নবী পরিবারের সদস্য হিসেবে পরিচয় দিতেন। কিন্তু এই দাবির পেছনে তাদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল ক্ষমতায় যাওয়া। তারা জনগণকে ধোঁকা দেয়ার জন্য এই দাবি করতে থাকেন যে, নবী পরিবারের সদস্যরাই ক্ষমতার একমাত্র উত্তরাধিকারী। কাজেই তাদের কাউকে নির্বাচিত করে ক্ষমতার অধিকারী করা হোক। কিন্তু তারা যে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছিলেন তা হলো তারা ইমাম সাদেক (আ.)’র নাম উচ্চারণ না করে সার্বিকভাবে নবী পরিবারের কথা তুলে ধরেন যাতে বনি হাশিম গোত্র থেকে তাদের পছন্দসই ব্যক্তির হাতে শাসনক্ষমতা তুলে দেয়া হয়।
এক গোপন বৈঠকে আব্দুল্লাহ তার ছেলে মোহাম্মাদের হাতে বায়াত গ্রহণ করে তার নেতৃত্বে উমাইয়া শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার জন্য উপস্থিত সবার প্রতি আহ্বান জানান। তিনি নিজ সন্তান মোহাম্মাদকে ‘উম্মতের মাহদি’ হিসেবে দাবি করেন। তার এ বক্তব্যের পর উপস্থিত সবাই মোহাম্মাদের হাতে বায়াত গ্রহণ করেন। মোহাম্মাদ সবার মধ্যে মুত্তাকি ও পরহেজগার হিসেবে পরিচিত ছিলেন বলে এই সিদ্ধান্তে কেউ দ্বিমত করেনি।
আব্দুল্লাহ এরপর মোহাম্মাদের পক্ষে ইমাম জাফর সাদেক (আ.)’র সমর্থন লাভের চেষ্টা শুরু করেন। তিনি ইমামের কাছে একটি প্রতিনিধিদল পাঠান। তার পাঠানো প্রতিনিধিদলের সঙ্গে ইমাম সাদেক (আ.) বনি হাশিম গোত্র পরিদর্শনে আসেন। আব্দুল্লাহ সবার সামনে ইমামকে উদ্দেশ করে বলেন, মুসলিম উম্মাহর পরিস্থিতি বেশি ভালো নয়। এই উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে সবাই একথা একবাক্যে মেনে নিয়েছেন যে, আমার ছেলে মোহাম্মাদই হচ্ছে উম্মতের মাহদি এবং তারা তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। আপনিও তার হাতে বায়াত গ্রহণ করুন।
একথা শোনার পর ইমাম সাদেক (আ.) সুস্পষ্ট ভাষায় বলেন: রাসূলুল্লাহ (সা.) যে মাহদির প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছেন তোমার ছেলে সে নয়। তুমি যদি সেরকমটি মনে করো তাহলে মারাত্মক ভুলের মধ্যে রয়েছ। এরপর তিনি সমবেত জনতার উদ্দেশে বলেন: আপনারা যদি ‘উম্মতের মাহদি’ হিসেবে তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেন তাহলে আমি তা করব না। প্রতিশ্রুত ইমাম মাহদির আবির্ভাবের সময় এখনো আসেনি এবং এই দাবিটি মিথ্যা। তবে আপনাদের আন্দোলনের উদ্দেশ্য যদি শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচার থেকে মুসলিম উম্মাহকে মুক্তি দেয়া হয়ে থাকে তাহলে আমি তার হাতে বায়াত গ্রহণ করব।
ইমাম সাদেক (আ.) এই বক্তব্যের মাধ্যমে তার অবস্থান স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিলেও আব্দুল্লাহ তার বক্তব্যে অটল থাকেন এবং দাবি করেন, তার সন্তানই উম্মতের মাহদি। এ সময় ইমাম আবার বলেন, তোমার ছেলে উম্মতের মাহদি নয় এবং সে নিহত হবে। এ সত্ত্বেও আব্দুল্লাহর পুত্র মোহাম্মাদের তাকওয়া ও পরহেজগারির জন্য তাকে ভালোবাসতেন ইমাম জাফর সাদেক (আ.)।
এ সময় আব্বাসের বংশধররা বা বনি আব্বাস ছিল ক্ষমতার অন্ধ পাগল। তারা বাইরে বাইরে মোহাম্মাদের হাতে বায়াত নিলেও কুফার অধিবাসী আবু সালামাকে নেতা নির্বাচিত করে। এ ছাড়া, তৎকালীন বৃহত্তর খোরাসান অঞ্চলের জন্য আবু মোসলেম নামের এক ব্যক্তিকে আমীর উপাধিতে ভূষিত করে। আবু মোসলেম ক্ষমতায় যাওয়ার পথে আবু সালামাকে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে ধরে নেয় এবং তাকে হত্যা করে। আবু সালামা নিহত হওয়ার আগে এ বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে, তিনি ক্ষমতা পিপাসুদের ক্রীড়নকে পরিণত হয়েছেন। তাই তিনি অনুতপ্ত হন এবং খেলাফতকে বনি আব্বাসের হাত থেকে আবু তালেবের বংশধরদের হাতে ফিরিয়ে দেয়ার সংকল্প করেন। এজন্য তিনি মদীনায় অবস্থানরত ইমাম জাফর সাদেক, আব্দুল্লাহ বিন হাসান এবং ওমর বিন আলী বিন হোসেইনের কাছে একটি চিঠি পাঠান। তিনি তার দূতকে সবার আগে ইমাম সাদেক (আ.)’র কাছে যেতে বলেন।
আবু সালামা তাকে বলে দেন, যদি ইমাম সাদেক চিঠির বিষয়বস্তু মেনে নেন তাহলে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ব্যক্তির কাছে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। কিন্তু যদি ইমাম মেনে না নেন তাহলে দূত যেন আব্দুল্লাহ বিন হাসানের কাছে যান। কথা অনুযায়ী আবু সালামার দূত ইমাম জাফর সাদেক (আ.)’র কাছে চিঠি হস্তান্তরের সঙ্গে সঙ্গে তিনি চিঠিটি ছিঁড়ে ফেলেন।
এবার আবু সালামা’র দূত দ্বিতীয় চিঠি নিয়ে আব্দুল্লাহর কাছে যান। আব্দুল্লাহ চিঠি পেয়ে ভীষণ খুশি হন। তিনি চিঠিটি নিয়ে ইমাম সাদেক (আ.)’র কাছে যান এবং বলেন: এই চিঠিটি আবু সালামা আমাকে পাঠিয়েছে। এতে লেখা আছে, খোরাসানে আমাদের সব শিয়া আমাদের কাছে খেলাফত ফিরিয়ে দেয়ার জন্য মাঠে নামতে প্রস্তুত। আমাকে এ কাজের দায়িত্ব গ্রহণ করার অনুরোধ জানিয়েছেন আবু সালামা।
ইমাম সাদেক (আ.) একথা শোনার পর আব্দুল্লাহকে বলেন: আবু সালামা তোমার আগে ঠিক এই চিঠিটাই আমাকে পাঠিয়েছিল। কিন্তু আমি সেটা ছিঁড়ে ফেলেছি। একথা শুনে আব্দুল্লাহ ক্ষুব্ধ হয়ে ইমামের কাছ থেকে চলে যান।
যাই হোক, আব্দুল্লাহ ও তার সন্তানরা ক্ষমতার মোহে বনি আব্বাসের ওপর ভরসা করেন। কিন্তু ইমাম সাদেক (আ.) ভালোভাবে জানতেন, বনি আব্বাস মুখে আহলে বাইতের কথা বললেও প্রতারণার মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উদ্দেশ্য নেই। বাস্তবে হয়েছিলও তাই। তারা ক্ষমতায় যাওয়ার পর আবু মোসলেমের মতো সহচরদের পাশাপাশি সব বিরুদ্ধবাদীর ওপর গণহত্যা চালিয়েছিল।
ইমাম জাফর সাদেক (আ.) না পারছিলেন বনি আব্বাসদের সমর্থন জানাতে এবং না পারছিলেন তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে। আগামী আসরে আমরা এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। সে আসরেও আপনাদের সঙ্গ পাওয়ার আশা রাখছি।#
পার্সটুডে/মুজাহিদুল ইসলাম/ মো: আবু সাঈদ / ২৩
মন্তব্যসমূহ