(পর্ব ৪৬): হিশামের ক্রোধের শিকারে ইমাম বাকের(আ.) শাহাদাৎবরণ করেনজুন ২৭, ২০১৯ ১৮:১৬ Asia/Dhakaগত আসরে আমরা বলেছি, নবী পরিবারের পঞ্চম ইমাম- ইমাম মোহাম্মাদ বাকের (আ.) যেসব উল্লেখযোগ্য কাজ করেন তার অন্যতম হচ্ছে, প্রকৃত শিয়া মুসলমানের গুণাবলী উপস্থাপন করেন। আজকের আসরে আমরা উমাইয়া শাসক হিশামের ক্রোধের শিকার হয়ে ইমামের শাহাদাৎবরণের ঘটনা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করব।ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে এই ঐশী ধর্মের দিকনির্দেশনা ব্যক্তিজীবনে সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা। শুধুমাত্র ধর্মের কথা মুখে বললেই হবে কাজেও বাস্তবায়ন করে দেখাতে হবে। এ সম্পর্কে ইমাম বাকের (আ.) তার অনুসারী জাবেরকে বলেন: তুমি কি মনে করো আমাদের অনুসারী হওয়া এবং আমাদেরকে ভালোবাসার দাবি করাই যথেষ্ট? যে ব্যক্তি আল্লাহর অবাধ্য হওয়াকে ভয় পায় না এবং তাঁর নির্দেশ মেনে চলে না আল্লাহর কসম সে আমাদের অনুসারী বা শিয়া নয়। হে জাবের! জেনে রেখো, যেসব বৈশিষ্ট্য দেখে প্রকৃত শিয়াকে চেনা যাবে তার কয়েকটি হচ্ছে বিনয়, আমানতদারি, বেশি বেশি আল্লাহর জিকির, রোজা রাখা, নামাজ কায়েম করা, পিতাপাতার সেবা করা, প্রতিবেশীর অধিকার রক্ষা করা, এতিম ও ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করা, সত্যবাদী হওয়া, কুরআন তেলাওয়াত করা, পরোপকার করা এবং মানুষের কাছে আমিন বা উত্তম মানুষ হিসেবে পরিচিতি লাভ করা।এরপর ইমাম আরো বলেন: যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার গোলামি বা আনুগত্য করে সে আমাদের বন্ধু এবং যে ব্যক্তি আনুগত্য করে না সে আমাদের শত্রু। যে ব্যক্তি আমাদের অনুসারী বা শিয়া সে ক্ষুব্ধ হলে মানুষের ক্ষতি করে না এবং খুশির সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে না। সব প্রতিবেশী তার দ্বারা উপকৃত হয় এবং শত্রুর সঙ্গে সে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করে।ইমাম বাকের (আ.) যখন আদর্শ মানুষ গড়ে তোলার জন্য এভাবে সাধারণ মানুষের মধ্যে ইসলামের বিধিবিধান প্রচারে মগ্ন তখন বর্তমান সময়ের আধিপত্যকামী শক্তিগুলোর মতো উমাইয়া শাসকরা ইমাম ও তাঁর শিয়াদের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন করার কাজে উঠেপড়ে লেগে যায় তারা খাঁটি মোহাম্মাদি ইসলামকে প্রতিহত করার লক্ষ্যে ইসলামের বিভিন্ন ফেরকা বা দল তৈরি করে সেগুলোকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দেয়।বর্ণনায় এসেছে, একবার ইমাম বাকের (আ.) নিজ সন্তান ইমাম জাফর সাদিক (আ.)কে সঙ্গে নিয়ে পবিত্র হজ্ব পালনের উদ্দেশ্যে মসজিদুল হারামের দিকে রওনা হন। সে বছর হজ্বে প্রচুর লোকসমাগম হয়। উমাইয়া শাসন হিশাম বিন আব্দুল মালিকও লোকদেখানোর জন্য আল্লাহর ঘর জিয়ারত করতে যায়। এ সময় ইমাম সাদেক (আ.) বুঝতে পারেন, সমবেত হাজিদের সামনে শিয়াদের গুণাবলী উপস্থাপনের মাধ্যমে উমাইয়া শাসকদের বিদ্বেষী ও কুচক্রী নীতির স্বরূপ উন্মোচন করে দেয়ার এটাই প্রকৃত সুযোগ। তিনি পিতার উপস্থিতিতে জনগণের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে শুরু করেন। ইমাম সাদেক (আ.) প্রকৃত শিয়া মুসলমানের কিছু গুণাবলী বর্ণনা করার পর বলেন, এরাই প্রকৃত মোমেন এবং আহলে বাইতের প্রকৃত অনুসারী। ইমাম এই বক্তব্য প্রদানের মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে উমাইয়াদের শাসনক্ষমতার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি সাধারণ মানুষকে বোঝাতে চান ইসলামি সমাজের শাসক হওয়ার যোগ্যতা এদের নেই। এরা বরং অবৈধভাবে ক্ষমতার মসনদে চেপে বসেছে। আদর্শ ও উত্তম চরিত্র উপস্থাপনের মাধ্যমে জনগণের মাঝে প্রবল জনপ্রিয়তা অর্জনকারী ইমাম বাকের (আ.)কে সহ্য করা উমাইয়া শাসকদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। তারা ইমামের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন করার জন্য নানা পদ্ধতি অবলম্বন করে। হিশাম বিন আব্দুল মালেক হজ্বের সময় জনগণের সামনে ইমামদের কিছু না বললেও হজ্ব শেষ করে শামে ফিরে গিয়ে ইমাম বাকের (আ.) ও ইমাম সাদেক (আ.)কে মদীনা থেকে দামেস্কে ডেকে পাঠায়। এ সম্পর্কে ইমাম সাদেক (আ.) বলেন: আমরা দামেস্ক যাওয়ার পর তিনদিন পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে দেখা করেনি হিশাম। চতুর্থ দিন আমাদেরকে রাজপ্রাসাদে নিয়ে যাওয়া হয়। হিশাম সিংহাসনে বসে ছিলেন এবং তার পারিষদবর্গ তার সামনে তীরধনুক নিয়ে লক্ষ্যভেদের কাজে মশগুল ছিল।হিশাম আমার পিতাকে নাম ধরে ডেকে বলেন: আপনার নিজ গোত্রের লোকজনের সঙ্গে তীরচালনা করুন। আমার পিতা বলেন: আমার এখন বয়স হয়েছে। এসব আমার কাজ নয়। আমাকে মাফ করবেন।কিন্তু হিশামের লক্ষ্য ছিল আমার পিতা ইমাম বাকেরকে অক্ষম ও অকর্মণ্য হিসেবে তুলে ধরা। তাই তিনি ইমামকে এ কাজে বাধ্য করার চেষ্টা করেন। তিনি উপস্থিত এক ব্যক্তিকে তার ধনুকটি ইমামের হাতে দিতে বলেন। পিতা উপায়ন্তরহীন হয়ে তীর ধনুক হাতে নিয়ে একটি তীর নিক্ষেপ করেন। ইমামের প্রথম তীরটি লক্ষ্যভেদ করে। দ্বিতীয় তীরটি নিক্ষেপ করলে সেটি প্রথম তীরে আঘাত কোরে সেটিকে দুভাগ করে ফেলে। ইমাম বাকের (আ.) এভাবে একে একে আটটি তীর নিক্ষেপ করেন এবং আটবারই একই পরিণতি হয়। এ অবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই উপস্থিত পারিষদবর্গ ইমামের প্রশংসায় উচ্চস্বরে স্লোগান দিতে থাকে।হিশামের পক্ষে এই দৃশ্য মেনে নেয়া ছিল কঠিন। তিনি উচ্চস্বরে বলে ওঠেন: সাবাশ আবু জাফর! তীরচালনার দিক দিয়ে আপনি তো আরব ও আজমের মধ্যে শীর্ষস্থান অধিকার করে নিয়েছেন। কিন্তু আপনি শুরুতে কেন বলেছিলেন এখন আর তীরধনুক চালাতে পারেন না? কুরাইশ বংশে যতক্ষণ আপনার মতো বীর আছে ততক্ষণ এই বংশের লোকেরা আরব ও আজমদের মধ্যে গর্ব করতে পারে। আপনি এত নিখুঁত তীরচালনা কবে কার কাছ থেকে শিখেছেন? ইমাম বাকের (আ.) জবাব দেন: আপনি একথা জানেন যে, মদীনার লোকজন তীরচালনায় পারদর্শী। আমি যৌবনে বেশ কিছুদিন তীরচালনা করেছি। তার জবাব শুনে হিশাম বলেন, যখন থেকে আমার বুদ্ধি হয়েছে তখন থেকে আমি এতটা দক্ষ হাতে কাউকে তীর চালনা করতে দেখিনি। আপনার তীরচালনা প্রথমে আমি বিশ্বাসই করতে পারিনি। আপনার ছেলেও কি আপনার মতো তীর চালাতে ওস্তাদ? আমার পিতা জবাবে বলেন: আমরা ইমামগণ পিতার কাছ থেকে সবকিছু হুবহু আয়ত্ব করি।ইমাম জাফর সাদেক (আ.) বলেন: আমার পিতার এই জবাব শুনে হিশাম ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে যায় এবং আমি পরবর্তীতে উপলব্ধি করি এই ক্রোধের বশবর্তী হয়েই সে আমার পিতাকে শহীদ করার সিদ্ধান্ত নেয়।সত্যি সত্যিই হিশামউদ্দিন ইমামকে জনগণের সামনে অপমান ও তাঁর ব্যক্তিত্ব ক্ষুণ্ন করার প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে তাঁকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়। এই উমাইয়া শাসক ১১৪ হিজরির ৭ জিলহাজ্ব তারিখে নিজের অনুচরকে দিয়ে ইমাম বাকের (আ.)কে বিষপ্রয়োগে শহীদ করে। #পার্সটুডে/মুজাহিদুল ইসলাম/ মো: আবু সাঈদ / ২৭
(পর্ব ৪৬): হিশামের ক্রোধের শিকারে ইমাম বাকের(আ.) শাহাদাৎবরণ করেন
জুন ২৭, ২০১৯ ১৮:১৬ Asia/Dhaka
গত আসরে আমরা বলেছি, নবী পরিবারের পঞ্চম ইমাম- ইমাম মোহাম্মাদ বাকের (আ.) যেসব উল্লেখযোগ্য কাজ করেন তার অন্যতম হচ্ছে, প্রকৃত শিয়া মুসলমানের গুণাবলী উপস্থাপন করেন। আজকের আসরে আমরা উমাইয়া শাসক হিশামের ক্রোধের শিকার হয়ে ইমামের শাহাদাৎবরণের ঘটনা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করব।
ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে এই ঐশী ধর্মের দিকনির্দেশনা ব্যক্তিজীবনে সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা। শুধুমাত্র ধর্মের কথা মুখে বললেই হবে কাজেও বাস্তবায়ন করে দেখাতে হবে। এ সম্পর্কে ইমাম বাকের (আ.) তার অনুসারী জাবেরকে বলেন: তুমি কি মনে করো আমাদের অনুসারী হওয়া এবং আমাদেরকে ভালোবাসার দাবি করাই যথেষ্ট? যে ব্যক্তি আল্লাহর অবাধ্য হওয়াকে ভয় পায় না এবং তাঁর নির্দেশ মেনে চলে না আল্লাহর কসম সে আমাদের অনুসারী বা শিয়া নয়। হে জাবের! জেনে রেখো, যেসব বৈশিষ্ট্য দেখে প্রকৃত শিয়াকে চেনা যাবে তার কয়েকটি হচ্ছে বিনয়, আমানতদারি, বেশি বেশি আল্লাহর জিকির, রোজা রাখা, নামাজ কায়েম করা, পিতাপাতার সেবা করা, প্রতিবেশীর অধিকার রক্ষা করা, এতিম ও ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করা, সত্যবাদী হওয়া, কুরআন তেলাওয়াত করা, পরোপকার করা এবং মানুষের কাছে আমিন বা উত্তম মানুষ হিসেবে পরিচিতি লাভ করা।
এরপর ইমাম আরো বলেন: যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার গোলামি বা আনুগত্য করে সে আমাদের বন্ধু এবং যে ব্যক্তি আনুগত্য করে না সে আমাদের শত্রু। যে ব্যক্তি আমাদের অনুসারী বা শিয়া সে ক্ষুব্ধ হলে মানুষের ক্ষতি করে না এবং খুশির সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে না। সব প্রতিবেশী তার দ্বারা উপকৃত হয় এবং শত্রুর সঙ্গে সে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করে।
ইমাম বাকের (আ.) যখন আদর্শ মানুষ গড়ে তোলার জন্য এভাবে সাধারণ মানুষের মধ্যে ইসলামের বিধিবিধান প্রচারে মগ্ন তখন বর্তমান সময়ের আধিপত্যকামী শক্তিগুলোর মতো উমাইয়া শাসকরা ইমাম ও তাঁর শিয়াদের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন করার কাজে উঠেপড়ে লেগে যায় তারা খাঁটি মোহাম্মাদি ইসলামকে প্রতিহত করার লক্ষ্যে ইসলামের বিভিন্ন ফেরকা বা দল তৈরি করে সেগুলোকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দেয়।
বর্ণনায় এসেছে, একবার ইমাম বাকের (আ.) নিজ সন্তান ইমাম জাফর সাদিক (আ.)কে সঙ্গে নিয়ে পবিত্র হজ্ব পালনের উদ্দেশ্যে মসজিদুল হারামের দিকে রওনা হন। সে বছর হজ্বে প্রচুর লোকসমাগম হয়। উমাইয়া শাসন হিশাম বিন আব্দুল মালিকও লোকদেখানোর জন্য আল্লাহর ঘর জিয়ারত করতে যায়। এ সময় ইমাম সাদেক (আ.) বুঝতে পারেন, সমবেত হাজিদের সামনে শিয়াদের গুণাবলী উপস্থাপনের মাধ্যমে উমাইয়া শাসকদের বিদ্বেষী ও কুচক্রী নীতির স্বরূপ উন্মোচন করে দেয়ার এটাই প্রকৃত সুযোগ। তিনি পিতার উপস্থিতিতে জনগণের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে শুরু করেন। ইমাম সাদেক (আ.) প্রকৃত শিয়া মুসলমানের কিছু গুণাবলী বর্ণনা করার পর বলেন, এরাই প্রকৃত মোমেন এবং আহলে বাইতের প্রকৃত অনুসারী। ইমাম এই বক্তব্য প্রদানের মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে উমাইয়াদের শাসনক্ষমতার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি সাধারণ মানুষকে বোঝাতে চান ইসলামি সমাজের শাসক হওয়ার যোগ্যতা এদের নেই। এরা বরং অবৈধভাবে ক্ষমতার মসনদে চেপে বসেছে।
আদর্শ ও উত্তম চরিত্র উপস্থাপনের মাধ্যমে জনগণের মাঝে প্রবল জনপ্রিয়তা অর্জনকারী ইমাম বাকের (আ.)কে সহ্য করা উমাইয়া শাসকদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। তারা ইমামের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন করার জন্য নানা পদ্ধতি অবলম্বন করে। হিশাম বিন আব্দুল মালেক হজ্বের সময় জনগণের সামনে ইমামদের কিছু না বললেও হজ্ব শেষ করে শামে ফিরে গিয়ে ইমাম বাকের (আ.) ও ইমাম সাদেক (আ.)কে মদীনা থেকে দামেস্কে ডেকে পাঠায়। এ সম্পর্কে ইমাম সাদেক (আ.) বলেন: আমরা দামেস্ক যাওয়ার পর তিনদিন পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে দেখা করেনি হিশাম। চতুর্থ দিন আমাদেরকে রাজপ্রাসাদে নিয়ে যাওয়া হয়। হিশাম সিংহাসনে বসে ছিলেন এবং তার পারিষদবর্গ তার সামনে তীরধনুক নিয়ে লক্ষ্যভেদের কাজে মশগুল ছিল।
হিশাম আমার পিতাকে নাম ধরে ডেকে বলেন: আপনার নিজ গোত্রের লোকজনের সঙ্গে তীরচালনা করুন। আমার পিতা বলেন: আমার এখন বয়স হয়েছে। এসব আমার কাজ নয়। আমাকে মাফ করবেন।
কিন্তু হিশামের লক্ষ্য ছিল আমার পিতা ইমাম বাকেরকে অক্ষম ও অকর্মণ্য হিসেবে তুলে ধরা। তাই তিনি ইমামকে এ কাজে বাধ্য করার চেষ্টা করেন। তিনি উপস্থিত এক ব্যক্তিকে তার ধনুকটি ইমামের হাতে দিতে বলেন। পিতা উপায়ন্তরহীন হয়ে তীর ধনুক হাতে নিয়ে একটি তীর নিক্ষেপ করেন। ইমামের প্রথম তীরটি লক্ষ্যভেদ করে। দ্বিতীয় তীরটি নিক্ষেপ করলে সেটি প্রথম তীরে আঘাত কোরে সেটিকে দুভাগ করে ফেলে। ইমাম বাকের (আ.) এভাবে একে একে আটটি তীর নিক্ষেপ করেন এবং আটবারই একই পরিণতি হয়। এ অবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই উপস্থিত পারিষদবর্গ ইমামের প্রশংসায় উচ্চস্বরে স্লোগান দিতে থাকে।
হিশামের পক্ষে এই দৃশ্য মেনে নেয়া ছিল কঠিন। তিনি উচ্চস্বরে বলে ওঠেন: সাবাশ আবু জাফর! তীরচালনার দিক দিয়ে আপনি তো আরব ও আজমের মধ্যে শীর্ষস্থান অধিকার করে নিয়েছেন। কিন্তু আপনি শুরুতে কেন বলেছিলেন এখন আর তীরধনুক চালাতে পারেন না? কুরাইশ বংশে যতক্ষণ আপনার মতো বীর আছে ততক্ষণ এই বংশের লোকেরা আরব ও আজমদের মধ্যে গর্ব করতে পারে। আপনি এত নিখুঁত তীরচালনা কবে কার কাছ থেকে শিখেছেন? ইমাম বাকের (আ.) জবাব দেন: আপনি একথা জানেন যে, মদীনার লোকজন তীরচালনায় পারদর্শী। আমি যৌবনে বেশ কিছুদিন তীরচালনা করেছি। তার জবাব শুনে হিশাম বলেন, যখন থেকে আমার বুদ্ধি হয়েছে তখন থেকে আমি এতটা দক্ষ হাতে কাউকে তীর চালনা করতে দেখিনি। আপনার তীরচালনা প্রথমে আমি বিশ্বাসই করতে পারিনি। আপনার ছেলেও কি আপনার মতো তীর চালাতে ওস্তাদ? আমার পিতা জবাবে বলেন: আমরা ইমামগণ পিতার কাছ থেকে সবকিছু হুবহু আয়ত্ব করি।
ইমাম জাফর সাদেক (আ.) বলেন: আমার পিতার এই জবাব শুনে হিশাম ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে যায় এবং আমি পরবর্তীতে উপলব্ধি করি এই ক্রোধের বশবর্তী হয়েই সে আমার পিতাকে শহীদ করার সিদ্ধান্ত নেয়।
সত্যি সত্যিই হিশামউদ্দিন ইমামকে জনগণের সামনে অপমান ও তাঁর ব্যক্তিত্ব ক্ষুণ্ন করার প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে তাঁকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়। এই উমাইয়া শাসক ১১৪ হিজরির ৭ জিলহাজ্ব তারিখে নিজের অনুচরকে দিয়ে ইমাম বাকের (আ.)কে বিষপ্রয়োগে শহীদ করে। #
পার্সটুডে/মুজাহিদুল ইসলাম/ মো: আবু সাঈদ / ২৭
মন্তব্যসমূহ