(পর্ব ৩৫): মিনা ময়দানে দেয়া ইমাম হোসেইন (আ.)’র গুরুত্ব খুতবামে ০৮, ২০১৯ ২১:০২ Asia/Dhakaগত আসরে আমরা বলেছি, ইমাম হাসান (আ.)’র শাহাদাতের পর ইমাম হোসেইন (আ.) মুয়াবিয়ার জীবদ্দশায় তার সঙ্গে সন্ধি অব্যাহত রাখলেও তার জুলুম ও দুঃশাসনের ব্যাপারে কখনোই নীরব থাকেননি।তিনি মুয়াবিয়ার মৃত্যুর দুই বছর আগে ৫৮ হিজরির জিলহজ্ব মাসে হজের সময় মিনা ময়দানে সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে উমাইয়া শাসকের বিরুদ্ধে এক জ্বালাময়ী ভাষণ দেন। আজকের আসরে আমরা এই ভাষণের কিছু উল্লেখযোগ্য দিক আপনাদের সামনে তুলে ধরব।মিনা ময়দানে দেয়া ইমাম হোসেইন (আ.)’র এই খুতবার গুরুত্ব তখনই উপলব্ধি করা যাবে যখন আমরা জানব যে, ওই সমাবেশে ৭০০ জন আনসার, ২০০ জন তাবেয়ী এবং বানি হাশেম গোত্রের ৩০০ ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। এই বারোশ’ ব্যক্তি এক তাবুর নীচে সমবেত হলে ইমাম হোসেইন (আ.) হামদ ও সানা পেশ করার পর মুয়াবিয়ার দুঃশাসনের কথা উল্লেখ করে বলেন, এই অত্যাচারী ব্যক্তি আমাদের সঙ্গে এবং আমাদের অনুসারীদের সঙ্গে কি আচরণ করেছে তা আপনারা দেখেছেন ও শুনেছেন। আমার অনুরোধ থাকবে আমার আজকের বক্তব্য এখানে যারা নেই তাদের কাছে পৌঁছে দেবেন।এরপর ইমাম হোসেইন (আ.) রাসূলুল্লাহ (সা.)’র আহলে বাইতের মর্যাদা বর্ণনা করে বলেন: আপনাদের কি জানা আছে, মদীনায় মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক স্থাপনের সময় আলী ইবনে আবি তালিবের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন ঘোষণা করেছিলেন নবীজী (সা.)? উপস্থিত সবাই বলে ওঠেন: জি একথা আমাদের সবার জানা। এরপর ইমাম হোসেইন (আ.) বলেন: মসজিদে নববীর সঙ্গে যেসব ঘরের দরজা খোলা ছিল তার সবগুলো বন্ধ করে দিয়ে নবীজী শুধু নিজের ও আমার পিতা আলী (আ.)’র ঘরের দরজা খোলা রেখেছিলেন। এ সময় সবাই প্রতিবাদ জানালে নানাজী রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছিলেন, আমি আল্লাহ আদেশে এ কাজ করেছি। একথা কি আপনাদের জানা আছে? সমবেত সবাই আল্লাহর শপথ করে একথার সত্যতা নিশ্চিত করেন।ইমাম হোসেইন (আ.) তার ভাষণের অন্য অংশে বলেন: আপনারা বলুন, গাদিরে খোমে নবীজী কি হযরত আলীকে ইমামত ও খেলাফতের দায়িত্ব দেননি? তিনি কি উচ্চস্বরে সেখানে উপস্থিত লোকদেরকে একথা অনুপস্থিতদের কাছে পৌঁছে দিতে বলেননি? উপস্থিত জনতা সমস্বরে বলে ওঠে: জি খোদার কসম, আমরা এর সত্যতার সাক্ষ্য দিচ্ছি। এরপর ইমাম হোসেইন (আ.) সমবেত জনতাকে উদ্দেশ করে প্রশ্ন করেন: খায়বার যুদ্ধের আগের দিন নবীজী কি একথা ঘোষণা করেননি যে, আগামীকাল আমি এমন একজনের হাতে জিহাদের ঝাণ্ডা তুলে দেব যাকে আল্লাহ ও তার রাসূল ভালেবাসেন এবং সেও আল্লাহ ও তার রাসূলকে ভালোবাসে? এর পরদিন দেখা গেল তিনি সেই ঝাণ্ডা হযরত আলীর হাতে তুলে দিয়েছেন? উপস্থিত জনতা এ প্রশ্নের উত্তরেও ইমাম হোসেইন (আ.)’র বক্তব্যের সত্যতা স্বীকার করে নেয়।এরপর হযরত আলী (আ.)’র আরো কিছু ফজিলত বর্ণনা করে ইমাম হোসেইন বলেন, বিশ্বনবী (সা.) তাঁর জীবনের সর্বশেষ ভাষণে বলেছিলেন, আমি তোমাদের কাছে দু’টি মূল্যবান বস্তু রেখে যাচ্ছি। এর একটি আল্লাহর কিতাব এবং অপরটি আমার আহলে বাইত। যতদিন তোমরা এই দু’টি আকড়ে থাকবে ততদিন পথভ্রষ্ট হবে না। তিনি প্রশ্ন করেন, আপনারা কি এই বক্তব্যের সত্যতা নিশ্চিত করবেন? উপস্থিত জনতা সমস্বরে বলে ওঠে: হ্যা ইমাম আপনি সত্য বলেছেন।এরপর ইমাম হোসেইন (আ.) আরো বলেন: রাসূলুল্লাহ (সা.)কে কি আপনারা একথা বলতে শুনেছেন যে, যে ব্যক্তি আমাকে ভালোবাসার দাবি করা সত্ত্বেও আলীর সঙ্গে শত্রুতা করবে সে মিথ্যা বলছে? আলীর সঙ্গে শত্রুতা পোষণকারী ব্যক্তি আমাকে ভালোবাসতে পারে না? এ সময় একজন রাসূলকে প্রশ্ন করেছিল- ইয়া রাসূলুল্লাহ কেন সেটা সম্ভব নয়? নবীজী উত্তরে বলেছিলেন, কারণ, আলী আমা হতে এবং আমি আলী হতে। যে কেউ আলীকে ভালোবাসল সে যেন আমাকেই ভালোবাসল এবং যে আমাকে ভালোবাসল সে যেন আল্লাহকেই ভালোবাসল। পক্ষান্তরে যে আলীর সঙ্গে শত্রুতা করল সে যেন আমার সঙ্গে শত্রুতা করল এবং যে আমার সঙ্গে শত্রুতা করল সে আল্লাহর শত্রু হয়ে গেল? উপস্থিত জনতা একসঙ্গে বলে ওঠে যে, হ্যাঁ তারা নবীজীর মুখে একথা বলতে শুনেছেন।মিনা ময়দানে বহু সংখ্যক সাহাবী, তাবেয়ী ও বানি হাশেম গোত্রের লোকের উপস্থিতিতে ইমাম হোসেইন (আ.)’র এই ভাষণ থেকে যে প্রশ্নটি সামনে আসে তা হলো- তিনি কেন হযরত আলী (আ.)’র মর্যাদা সম্পর্কে এত কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন এবং কেনই বা এ ব্যাপারে উপস্থিত জনতার সাক্ষ্য গ্রহণ করলেন? এ প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে- মুয়াবিয়া হযরত আলী (আ.) সম্পর্কে বহু জাল হাদিস তৈরি করে তার ভাবমর্যাদা বিনষ্ট করার চেষ্টা করেছিল। এমনকি মক্কা ও মদীনাসহ মুসলিম জাহানের সর্বত্র মসজিদ ও জুমার নামাজ থেকে আলী (আ.)র বিরুদ্ধে অভিসম্পাত বর্ষণেরও নির্দেশ জারি করেছিল। সাধারণ সহজ সরল মুসলমান সেই নির্দেশ পালন করা শুরু করে দিয়েছিল। সাধারণ মানুষের মন থেকে সেসব ভুল ধারণা দূর করার জন্য হযরত হোসেইন (আ.) সাহাবী ও তাবেয়ীদের সামনে হযরত আলীর মর্যাদা সম্পর্কে এ ভাষণ দিয়েছিলেন।সেইসঙ্গে ইমাম হোসেইনের আরো একটি উদ্দেশ্য ছিল। আর তা হলো সাহাবী ও তাবেয়ীরা যাতে আহলে বাইতের সদস্যদের রক্ষা করার ক্ষেত্রে এমন কোনো অজুহাত দাঁড় করাতে না পারে যে, বিষয়টি আমাদের জানা না থাকার কারণে আমরা সময়মতো পদক্ষেপ নিতে পারিনি। আমরা যদি জানতাম তাহলে শাসকচক্রের বিরুদ্ধে সংগ্রামে আপনাদের পাশে থাকতাম।কিন্তু ইমামের এই সচেতনতামূলক বক্তব্যের পরও কারবালার হৃদয়বিদারক ঘটনার অবতারণা হয়। কারবালার ঘটনা সংঘটিত হওয়ার সময় বহু সাহাবী ও তাবেয়ীর উপস্থিতির পাশাপাশি ইরাক থেকে ইমাম হোসেইনের কাছে প্রায় ৩০ হাজার চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে কুফাবাসী জানায়, ইমাম যদি শামের উদ্দেশ্যে তাঁর বাহিনী নিয়ে রওনা দেন তাহলে তারা তাতে যোগ দেবে এবং উমাইয়াদের শাসনব্যবস্থাকে উৎখাত করবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ইরাকের জনগণ তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। তারা রাসূলের আহলে বাইতের প্রতি পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে বনি উমাইয়া শাসকগোষ্ঠীর ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছিল। এই দুনিয়া পূজারি মানুষগুলোই আবার কারবালার হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর হযরত জয়নাব সালামুল্লাহি আলাইহা ও ইমাম সাজ্জাদ (আ.)’র জ্বালাময়ী ভাষণ শুনে উদাসিনতার ঘুম থেকে জেগে উঠেছিল। তারাই নিজেদের ভুলের ক্ষতিপূরণ করার জন্য তাওয়াবিন ও মুখতারের বিদ্রোহের মতো বীরত্বগাঁথা সৃষ্টি করেছিল।#পার্সটুডে/মুজাহিদুল ইসলাম/ মো: আবু সাঈদ/ ৮
(পর্ব ৩৫): মিনা ময়দানে দেয়া ইমাম হোসেইন (আ.)’র গুরুত্ব খুতবা
মে ০৮, ২০১৯ ২১:০২ Asia/Dhaka
গত আসরে আমরা বলেছি, ইমাম হাসান (আ.)’র শাহাদাতের পর ইমাম হোসেইন (আ.) মুয়াবিয়ার জীবদ্দশায় তার সঙ্গে সন্ধি অব্যাহত রাখলেও তার জুলুম ও দুঃশাসনের ব্যাপারে কখনোই নীরব থাকেননি।
তিনি মুয়াবিয়ার মৃত্যুর দুই বছর আগে ৫৮ হিজরির জিলহজ্ব মাসে হজের সময় মিনা ময়দানে সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে উমাইয়া শাসকের বিরুদ্ধে এক জ্বালাময়ী ভাষণ দেন। আজকের আসরে আমরা এই ভাষণের কিছু উল্লেখযোগ্য দিক আপনাদের সামনে তুলে ধরব।
মিনা ময়দানে দেয়া ইমাম হোসেইন (আ.)’র এই খুতবার গুরুত্ব তখনই উপলব্ধি করা যাবে যখন আমরা জানব যে, ওই সমাবেশে ৭০০ জন আনসার, ২০০ জন তাবেয়ী এবং বানি হাশেম গোত্রের ৩০০ ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। এই বারোশ’ ব্যক্তি এক তাবুর নীচে সমবেত হলে ইমাম হোসেইন (আ.) হামদ ও সানা পেশ করার পর মুয়াবিয়ার দুঃশাসনের কথা উল্লেখ করে বলেন, এই অত্যাচারী ব্যক্তি আমাদের সঙ্গে এবং আমাদের অনুসারীদের সঙ্গে কি আচরণ করেছে তা আপনারা দেখেছেন ও শুনেছেন। আমার অনুরোধ থাকবে আমার আজকের বক্তব্য এখানে যারা নেই তাদের কাছে পৌঁছে দেবেন।
এরপর ইমাম হোসেইন (আ.) রাসূলুল্লাহ (সা.)’র আহলে বাইতের মর্যাদা বর্ণনা করে বলেন: আপনাদের কি জানা আছে, মদীনায় মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক স্থাপনের সময় আলী ইবনে আবি তালিবের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন ঘোষণা করেছিলেন নবীজী (সা.)? উপস্থিত সবাই বলে ওঠেন: জি একথা আমাদের সবার জানা। এরপর ইমাম হোসেইন (আ.) বলেন: মসজিদে নববীর সঙ্গে যেসব ঘরের দরজা খোলা ছিল তার সবগুলো বন্ধ করে দিয়ে নবীজী শুধু নিজের ও আমার পিতা আলী (আ.)’র ঘরের দরজা খোলা রেখেছিলেন। এ সময় সবাই প্রতিবাদ জানালে নানাজী রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছিলেন, আমি আল্লাহ আদেশে এ কাজ করেছি। একথা কি আপনাদের জানা আছে? সমবেত সবাই আল্লাহর শপথ করে একথার সত্যতা নিশ্চিত করেন।
ইমাম হোসেইন (আ.) তার ভাষণের অন্য অংশে বলেন: আপনারা বলুন, গাদিরে খোমে নবীজী কি হযরত আলীকে ইমামত ও খেলাফতের দায়িত্ব দেননি? তিনি কি উচ্চস্বরে সেখানে উপস্থিত লোকদেরকে একথা অনুপস্থিতদের কাছে পৌঁছে দিতে বলেননি? উপস্থিত জনতা সমস্বরে বলে ওঠে: জি খোদার কসম, আমরা এর সত্যতার সাক্ষ্য দিচ্ছি। এরপর ইমাম হোসেইন (আ.) সমবেত জনতাকে উদ্দেশ করে প্রশ্ন করেন: খায়বার যুদ্ধের আগের দিন নবীজী কি একথা ঘোষণা করেননি যে, আগামীকাল আমি এমন একজনের হাতে জিহাদের ঝাণ্ডা তুলে দেব যাকে আল্লাহ ও তার রাসূল ভালেবাসেন এবং সেও আল্লাহ ও তার রাসূলকে ভালোবাসে? এর পরদিন দেখা গেল তিনি সেই ঝাণ্ডা হযরত আলীর হাতে তুলে দিয়েছেন? উপস্থিত জনতা এ প্রশ্নের উত্তরেও ইমাম হোসেইন (আ.)’র বক্তব্যের সত্যতা স্বীকার করে নেয়।
এরপর হযরত আলী (আ.)’র আরো কিছু ফজিলত বর্ণনা করে ইমাম হোসেইন বলেন, বিশ্বনবী (সা.) তাঁর জীবনের সর্বশেষ ভাষণে বলেছিলেন, আমি তোমাদের কাছে দু’টি মূল্যবান বস্তু রেখে যাচ্ছি। এর একটি আল্লাহর কিতাব এবং অপরটি আমার আহলে বাইত। যতদিন তোমরা এই দু’টি আকড়ে থাকবে ততদিন পথভ্রষ্ট হবে না। তিনি প্রশ্ন করেন, আপনারা কি এই বক্তব্যের সত্যতা নিশ্চিত করবেন? উপস্থিত জনতা সমস্বরে বলে ওঠে: হ্যা ইমাম আপনি সত্য বলেছেন।
এরপর ইমাম হোসেইন (আ.) আরো বলেন: রাসূলুল্লাহ (সা.)কে কি আপনারা একথা বলতে শুনেছেন যে, যে ব্যক্তি আমাকে ভালোবাসার দাবি করা সত্ত্বেও আলীর সঙ্গে শত্রুতা করবে সে মিথ্যা বলছে? আলীর সঙ্গে শত্রুতা পোষণকারী ব্যক্তি আমাকে ভালোবাসতে পারে না? এ সময় একজন রাসূলকে প্রশ্ন করেছিল- ইয়া রাসূলুল্লাহ কেন সেটা সম্ভব নয়? নবীজী উত্তরে বলেছিলেন, কারণ, আলী আমা হতে এবং আমি আলী হতে। যে কেউ আলীকে ভালোবাসল সে যেন আমাকেই ভালোবাসল এবং যে আমাকে ভালোবাসল সে যেন আল্লাহকেই ভালোবাসল। পক্ষান্তরে যে আলীর সঙ্গে শত্রুতা করল সে যেন আমার সঙ্গে শত্রুতা করল এবং যে আমার সঙ্গে শত্রুতা করল সে আল্লাহর শত্রু হয়ে গেল? উপস্থিত জনতা একসঙ্গে বলে ওঠে যে, হ্যাঁ তারা নবীজীর মুখে একথা বলতে শুনেছেন।
মিনা ময়দানে বহু সংখ্যক সাহাবী, তাবেয়ী ও বানি হাশেম গোত্রের লোকের উপস্থিতিতে ইমাম হোসেইন (আ.)’র এই ভাষণ থেকে যে প্রশ্নটি সামনে আসে তা হলো- তিনি কেন হযরত আলী (আ.)’র মর্যাদা সম্পর্কে এত কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন এবং কেনই বা এ ব্যাপারে উপস্থিত জনতার সাক্ষ্য গ্রহণ করলেন? এ প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে- মুয়াবিয়া হযরত আলী (আ.) সম্পর্কে বহু জাল হাদিস তৈরি করে তার ভাবমর্যাদা বিনষ্ট করার চেষ্টা করেছিল। এমনকি মক্কা ও মদীনাসহ মুসলিম জাহানের সর্বত্র মসজিদ ও জুমার নামাজ থেকে আলী (আ.)র বিরুদ্ধে অভিসম্পাত বর্ষণেরও নির্দেশ জারি করেছিল। সাধারণ সহজ সরল মুসলমান সেই নির্দেশ পালন করা শুরু করে দিয়েছিল। সাধারণ মানুষের মন থেকে সেসব ভুল ধারণা দূর করার জন্য হযরত হোসেইন (আ.) সাহাবী ও তাবেয়ীদের সামনে হযরত আলীর মর্যাদা সম্পর্কে এ ভাষণ দিয়েছিলেন।
সেইসঙ্গে ইমাম হোসেইনের আরো একটি উদ্দেশ্য ছিল। আর তা হলো সাহাবী ও তাবেয়ীরা যাতে আহলে বাইতের সদস্যদের রক্ষা করার ক্ষেত্রে এমন কোনো অজুহাত দাঁড় করাতে না পারে যে, বিষয়টি আমাদের জানা না থাকার কারণে আমরা সময়মতো পদক্ষেপ নিতে পারিনি। আমরা যদি জানতাম তাহলে শাসকচক্রের বিরুদ্ধে সংগ্রামে আপনাদের পাশে থাকতাম।
কিন্তু ইমামের এই সচেতনতামূলক বক্তব্যের পরও কারবালার হৃদয়বিদারক ঘটনার অবতারণা হয়। কারবালার ঘটনা সংঘটিত হওয়ার সময় বহু সাহাবী ও তাবেয়ীর উপস্থিতির পাশাপাশি ইরাক থেকে ইমাম হোসেইনের কাছে প্রায় ৩০ হাজার চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে কুফাবাসী জানায়, ইমাম যদি শামের উদ্দেশ্যে তাঁর বাহিনী নিয়ে রওনা দেন তাহলে তারা তাতে যোগ দেবে এবং উমাইয়াদের শাসনব্যবস্থাকে উৎখাত করবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ইরাকের জনগণ তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। তারা রাসূলের আহলে বাইতের প্রতি পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে বনি উমাইয়া শাসকগোষ্ঠীর ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছিল। এই দুনিয়া পূজারি মানুষগুলোই আবার কারবালার হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর হযরত জয়নাব সালামুল্লাহি আলাইহা ও ইমাম সাজ্জাদ (আ.)’র জ্বালাময়ী ভাষণ শুনে উদাসিনতার ঘুম থেকে জেগে উঠেছিল। তারাই নিজেদের ভুলের ক্ষতিপূরণ করার জন্য তাওয়াবিন ও মুখতারের বিদ্রোহের মতো বীরত্বগাঁথা সৃষ্টি করেছিল।#
পার্সটুডে/মুজাহিদুল ইসলাম/ মো: আবু সাঈদ/ ৮
মন্তব্যসমূহ