(পর্ব ৩৯): কারবালা বিপ্লবের সুমহান শিক্ষামে ২২, ২০১৯ ১৮:৩১ Asia/Dhakaগত আসরে আমরা বলেছি, কোনো কোনো ইতিহাসবিদ কারবালা বিপ্লবকে দৈবক্রমে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা বলে উল্লেখ করলেও বাস্তবে এটি যেরকম কোনো ঘটনা ছিল না। এই কালজয়ী বিপ্লব যেমন অনেক প্রস্তুতির পর সম্পন্ন হয়েছিল তেমনি এর প্রভাব যুগ যুগ ধরে অব্যাহত ছিল এবং ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। আজকের আসরে আমরা কারবালা বিপ্লবের সুমহান শিক্ষাগুলো নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করব।আল্লাহর রাসূলের আদর্শ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইমাম হোসেইন (আ.) ও তাঁর নিবেদিতপ্রাণ সঙ্গীরা নিজেদের মধ্যে যেমন সুসম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন তেমনি কাফির ও মুনাফিকদের তারা প্রতি ছিলেন অত্যন্ত কঠোর। শত্রুকে চেনা এবং তার ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করা আশুরা বিপ্লবের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। বেদআত ও কুসংস্কারের ব্যাপারে জনগণকে সচেতন করা, ইসলামের লেবাসধারী শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে উৎসাহ যোগানো, অত্যাচার ও নিপীড়নের সামনে উদাসীনতা ও নীরবতা পরিহার করা, আলেম ও চিন্তাবিদদেরকে বিপ্লবের ময়দানে সক্রিয় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানানো, অত্যাচারী শাসকের সঙ্গে আপোষ না করা, শিরক ও নিফাকের মূর্ত প্রতীকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার আহ্বান, শয়তানি শক্তিকে ভয় না পাওয়া, সবার মাঝে মুক্তির বার্তা ছড়িয়ে দেয়া, অপমানজনকভাবে বেঁচে থাকার চেয়ে সম্মানজনক মৃত্যুকে অগ্রাধিকার দেয়া এবং চূড়ান্তভাবে রাজনীতি থেকে ধর্মকে আলাদা করার প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো হচ্ছে আশুরা বিপ্লবের উল্লেখযোগ্য কিছু শিক্ষা।এ ছাড়া,এই বিপ্লবের সাংস্কৃতিক অর্জনগুলোর মধ্যে রয়েছে,জনগণের মধ্যে পার্থিব জীবনের চাকচিক্যকে প্রত্যাখ্যান করে ধর্মীয় চেতনার পুনর্জাগরণ,ধর্মীয় দূরদর্শিতা ও প্রজ্ঞাকে শক্তিশালী করা, অজ্ঞতার বিরুদ্ধে জিহাদ এবং সর্বোপরি ধর্মীয় নেতার আনুগত্যকে জীবনের অঙ্গে পরিণত করা। আশুরার পূর্বরাতে ইমাম হোসেইন (আ.) ও তাঁর ঈমানদার সঙ্গীরা খোদাপ্রেমের এক অপূর্ব নিদর্শন স্থাপন করেন। হযরত হোসেইন (আ.) আশুরার আগের রাতে যখন জানতে পারেন এজিদ বাহিনী তাঁর তাবুর কাছাকাছি চলে এসেছে তখন তিনি নিজের ভাই আবুল ফজলকে কয়েকজন সঙ্গীসহ শত্রুবাহিনীর কাছে একটি বার্তা দিয়ে পাঠান। তিনি বলেন, যুদ্ধ শুরু করার আগে তিনি একান্ত মনে আল্লাহর ইবাদত করার জন্য একটি রাত সময় চান। তিনি আবুল ফজলকে বলেন, আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই জানেন যে, আমি নামাজ আদায়, কুরআন তেলাওয়াত, বেশি বেশি দোয়া করা এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার কাজে সময় ব্যয় করতে পছন্দ করি।ইমাম হোসেইন (আ.) এমন এক রাতে এই আবেদন জানিয়েছিলেন যে রাতে তিনি এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলেন যে, আগামীকাল এই কারবালার ময়দানে তাকে সকল পুরুষ সঙ্গীসহ শহীদ হয়ে যেতে হবে। এ অবস্থায় অস্থিরতা ও চিৎকারের পরিবর্তে ইমাম শিবিরের তাবুগুলো থেকে ভেসে আসতে থাকে নফল ইবাদত, কুরআন তেলাওয়াত, দোয়া-মুনাজাত ও তসবিহ তাহলিলের সুমধুর ধ্বনি। ইমাম শিবিরে তৈরি হয় চমৎকার এক আধ্যাত্মিক পরিবেশ। আশুরার দিন জোহরের নামাজের সময় এই পরিবেশ চূড়ান্ত রূপলাভ করে। পাপিষ্ঠ এজিদের দুর্বৃত্ত সেনাদলের মুহুর্মুহু আক্রমণের মুখেও ইমাম হোসেইন তাঁর একদল সঙ্গীসহ জোহরের নামাজ আদায় করতে দাঁড়িয়ে যান।মৃত্যুর আগ মুহূর্তে তিনি বিশ্ব মানবতাকে দেখিয়ে দিয়ে যান, চরম দুঃসময়েও আল্লাহর ইবাদত থেকে দূর সরে যাওয়া যাবে না বরং এক সৃষ্টিকর্তার কাছে আশ্রয় প্রার্থনার মধ্যেই শান্তি ও নিরাপত্তা খুঁজতে হবে। নিঃসন্দেহে সেদিন ইমাম হোসেইন (আ.)ও তাঁর নিবেদিতপ্রাণ সঙ্গীরা পবিত্র কুরআনের এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করেছিলেন যেখানে বলা হচ্ছে: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য্য ও নামাযের মাধ্যমে (আল্লাহর) সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্য্যশীলদের সঙ্গে রয়েছেন।”আল্লাহ তায়ালার আদেশ-নিষেধ অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করতে গিয়ে ইমাম হোসেইন (আ.) আল্লাহর বান্দাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন। অনুষ্ঠানের সময়ের স্বল্পতার কারণে তার জীবনের সব ঘটনা বর্ণনা করা সম্ভব নয়। তারপরও আমরা মানুষের সঙ্গে ইমামের ঘনিষ্ঠ ও দয়ার্দ্র আচরণ সম্পর্কিত দু’একটি ঘটনা উল্লেখ করছি।হোসেইন বিন আলী (আ.) একদিন একটি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। পথে দেখতে পান, একদল দরিদ্র ও নিঃস্ব লোক গোল হয়ে বসে শুকনা রুটি খাচ্ছে। ইমামকে দেখে তারা তাঁকেও তাদের সঙ্গে বসে রুটি খাওয়ার আমন্ত্রণ জানায়। জান্নাতের যুবকদের অন্যতম সর্দার বিন্দুমাত্র অহংকার প্রদর্শন না করে দরিদ্র লোকগুলোর সঙ্গে রুটি খেতে মাটিতে বসে যান। এরপর তিনি অসহায় মানুষগুলোকে নিজের বাসভবনে দাওয়াত করে নিয়ে যান এবং ভালো খাবার পরিবেশন করে তাদেরকে পরিতৃপ্ত করেন।বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, কারবালার ময়দানে ইমাম হোসেইন (আ.) শহীদ হওয়ার পর তার পিঠে কালো দাগ দেখা যায়। এর কারণ জানতে চাইলে ইমাম সাজ্জাদ (আ.) বলেন: আমার পিতা রাতের বেলায় লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের ঘরে ঘরে খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দিতেন। নিজ হাতে নিজের পিঠে করে সেই বোঝা বহন করতে করতে তার পিঠে এই কালো দাগ সৃষ্টি হয়েছে।ইমাম হোসেইন (আ.) অসহায় মানুষের সাহায্যে এগিয়ে যাওয়ার গুরুত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন: “যে ব্যক্তি তার একজন মুসলমান ভাইয়ের কষ্ট দূর করে দেয় আল্লাহ তায়ালা দুনিয়া ও আখেরাতে তাকে সব ধরনের কষ্ট থেকে নিরাপদে রাখবেন।” তিনি আরো বলেন, “যে ব্যক্তি অন্যের উপকার করে আল্লাহ তায়ালা তার উপকার করেন এবং তিনি উপকারীকে ভালোবাসেন।”ইমাম হোসেইন (আ.)আরেক বাণীতে আরো বলেন, “যখন তোমাদের কাছে কেউ হাত পাতে তখন বিষয়টিকে আল্লাহ প্রদত্ত একটি নেয়ামত হিসেবে গ্রহণ করবে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে ক্ষুব্ধ হবে না বরং সাধ্যমতো অভাবী লোকটিকে সাহায্য করার চেষ্টা করবে। তা না হলে আল্লাহ তায়ালা যদি ক্ষুব্ধ হন তাহলে তিনি তোমাকে দেয়া রিজিক কেড়ে নিতে পারেন। তখন অনুশোচনা করে কোনো লাভ হবে না।”প্রখ্যাত মিশরীয় লেখক আল্লামা আব্দুল্লাহ আলায়েলি তার এক বইয়ে লিখেছেন, “ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে আমরা এমন কিছু মহান ব্যক্তিত্বের সন্ধান পাই যারা উন্নত কর্মের মাধ্যমে নিজেদের মহত্বের পরিচয় রেখে গেছেন। সাহসিকতা, দয়া-দাক্ষিণ্য, আত্মত্যাগ, দানশীলতা, মহানুভবতা ইত্যাদি গুণে গুণান্বিত মহান ব্যক্তিত্বদেরকে মানুষ প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে মনে রাখে। তবে ইমাম হোসেইন (আ.)’র ব্যক্তিত্বের বিশালতা এত গভীর যে, নির্দিষ্ট কোনো মহৎ গুণের মধ্যে তাকে সীমাবদ্ধ রাখার সুযোগ নেই। তাঁর চরিত্রে যেন সকল মহৎ গুণের সমাহার ঘটেছে।”তো বন্ধুরা, দেখতে দেখতে আজকের আসরের সময়ও ফুরিয়ে এসেছে। গত কয়েকটি আসরে আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.)’র প্রিয় দৌহিত্র, হযরত আলী (আ.)’র সন্তান এবং বেহেশতের যুবকদের সর্দার ইমাম হোসেইন (আ.)’র সংক্ষিপ্ত জীবনী নিয়ে আলোচনা করলাম। আগামী আসরে আমরা ইমাম হোসেইন (আ.)’র সন্তান ইমাম জয়নুল আবেদিন বা ইমাম সাজ্জাদ (আ.)র জীবনী নিয়ে আলোচনা শুরু করব।#পার্সটুডে/মুজাহিদুল ইসলাম/ মো: আবু সাঈদ /২২
(পর্ব ৩৯): কারবালা বিপ্লবের সুমহান শিক্ষা
মে ২২, ২০১৯ ১৮:৩১ Asia/Dhaka
গত আসরে আমরা বলেছি, কোনো কোনো ইতিহাসবিদ কারবালা বিপ্লবকে দৈবক্রমে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা বলে উল্লেখ করলেও বাস্তবে এটি যেরকম কোনো ঘটনা ছিল না। এই কালজয়ী বিপ্লব যেমন অনেক প্রস্তুতির পর সম্পন্ন হয়েছিল তেমনি এর প্রভাব যুগ যুগ ধরে অব্যাহত ছিল এবং ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। আজকের আসরে আমরা কারবালা বিপ্লবের সুমহান শিক্ষাগুলো নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করব।
আল্লাহর রাসূলের আদর্শ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইমাম হোসেইন (আ.) ও তাঁর নিবেদিতপ্রাণ সঙ্গীরা নিজেদের মধ্যে যেমন সুসম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন তেমনি কাফির ও মুনাফিকদের তারা প্রতি ছিলেন অত্যন্ত কঠোর। শত্রুকে চেনা এবং তার ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করা আশুরা বিপ্লবের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। বেদআত ও কুসংস্কারের ব্যাপারে জনগণকে সচেতন করা, ইসলামের লেবাসধারী শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে উৎসাহ যোগানো, অত্যাচার ও নিপীড়নের সামনে উদাসীনতা ও নীরবতা পরিহার করা, আলেম ও চিন্তাবিদদেরকে বিপ্লবের ময়দানে সক্রিয় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানানো, অত্যাচারী শাসকের সঙ্গে আপোষ না করা, শিরক ও নিফাকের মূর্ত প্রতীকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার আহ্বান, শয়তানি শক্তিকে ভয় না পাওয়া, সবার মাঝে মুক্তির বার্তা ছড়িয়ে দেয়া, অপমানজনকভাবে বেঁচে থাকার চেয়ে সম্মানজনক মৃত্যুকে অগ্রাধিকার দেয়া এবং চূড়ান্তভাবে রাজনীতি থেকে ধর্মকে আলাদা করার প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো হচ্ছে আশুরা বিপ্লবের উল্লেখযোগ্য কিছু শিক্ষা।
এ ছাড়া,এই বিপ্লবের সাংস্কৃতিক অর্জনগুলোর মধ্যে রয়েছে,জনগণের মধ্যে পার্থিব জীবনের চাকচিক্যকে প্রত্যাখ্যান করে ধর্মীয় চেতনার পুনর্জাগরণ,ধর্মীয় দূরদর্শিতা ও প্রজ্ঞাকে শক্তিশালী করা, অজ্ঞতার বিরুদ্ধে জিহাদ এবং সর্বোপরি ধর্মীয় নেতার আনুগত্যকে জীবনের অঙ্গে পরিণত করা। আশুরার পূর্বরাতে ইমাম হোসেইন (আ.) ও তাঁর ঈমানদার সঙ্গীরা খোদাপ্রেমের এক অপূর্ব নিদর্শন স্থাপন করেন। হযরত হোসেইন (আ.) আশুরার আগের রাতে যখন জানতে পারেন এজিদ বাহিনী তাঁর তাবুর কাছাকাছি চলে এসেছে তখন তিনি নিজের ভাই আবুল ফজলকে কয়েকজন সঙ্গীসহ শত্রুবাহিনীর কাছে একটি বার্তা দিয়ে পাঠান। তিনি বলেন, যুদ্ধ শুরু করার আগে তিনি একান্ত মনে আল্লাহর ইবাদত করার জন্য একটি রাত সময় চান। তিনি আবুল ফজলকে বলেন, আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই জানেন যে, আমি নামাজ আদায়, কুরআন তেলাওয়াত, বেশি বেশি দোয়া করা এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার কাজে সময় ব্যয় করতে পছন্দ করি।
ইমাম হোসেইন (আ.) এমন এক রাতে এই আবেদন জানিয়েছিলেন যে রাতে তিনি এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলেন যে, আগামীকাল এই কারবালার ময়দানে তাকে সকল পুরুষ সঙ্গীসহ শহীদ হয়ে যেতে হবে। এ অবস্থায় অস্থিরতা ও চিৎকারের পরিবর্তে ইমাম শিবিরের তাবুগুলো থেকে ভেসে আসতে থাকে নফল ইবাদত, কুরআন তেলাওয়াত, দোয়া-মুনাজাত ও তসবিহ তাহলিলের সুমধুর ধ্বনি। ইমাম শিবিরে তৈরি হয় চমৎকার এক আধ্যাত্মিক পরিবেশ। আশুরার দিন জোহরের নামাজের সময় এই পরিবেশ চূড়ান্ত রূপলাভ করে। পাপিষ্ঠ এজিদের দুর্বৃত্ত সেনাদলের মুহুর্মুহু আক্রমণের মুখেও ইমাম হোসেইন তাঁর একদল সঙ্গীসহ জোহরের নামাজ আদায় করতে দাঁড়িয়ে যান।
মৃত্যুর আগ মুহূর্তে তিনি বিশ্ব মানবতাকে দেখিয়ে দিয়ে যান, চরম দুঃসময়েও আল্লাহর ইবাদত থেকে দূর সরে যাওয়া যাবে না বরং এক সৃষ্টিকর্তার কাছে আশ্রয় প্রার্থনার মধ্যেই শান্তি ও নিরাপত্তা খুঁজতে হবে। নিঃসন্দেহে সেদিন ইমাম হোসেইন (আ.)ও তাঁর নিবেদিতপ্রাণ সঙ্গীরা পবিত্র কুরআনের এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করেছিলেন যেখানে বলা হচ্ছে: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য্য ও নামাযের মাধ্যমে (আল্লাহর) সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্য্যশীলদের সঙ্গে রয়েছেন।”
আল্লাহ তায়ালার আদেশ-নিষেধ অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করতে গিয়ে ইমাম হোসেইন (আ.) আল্লাহর বান্দাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন। অনুষ্ঠানের সময়ের স্বল্পতার কারণে তার জীবনের সব ঘটনা বর্ণনা করা সম্ভব নয়। তারপরও আমরা মানুষের সঙ্গে ইমামের ঘনিষ্ঠ ও দয়ার্দ্র আচরণ সম্পর্কিত দু’একটি ঘটনা উল্লেখ করছি।
হোসেইন বিন আলী (আ.) একদিন একটি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। পথে দেখতে পান, একদল দরিদ্র ও নিঃস্ব লোক গোল হয়ে বসে শুকনা রুটি খাচ্ছে। ইমামকে দেখে তারা তাঁকেও তাদের সঙ্গে বসে রুটি খাওয়ার আমন্ত্রণ জানায়। জান্নাতের যুবকদের অন্যতম সর্দার বিন্দুমাত্র অহংকার প্রদর্শন না করে দরিদ্র লোকগুলোর সঙ্গে রুটি খেতে মাটিতে বসে যান। এরপর তিনি অসহায় মানুষগুলোকে নিজের বাসভবনে দাওয়াত করে নিয়ে যান এবং ভালো খাবার পরিবেশন করে তাদেরকে পরিতৃপ্ত করেন।
বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, কারবালার ময়দানে ইমাম হোসেইন (আ.) শহীদ হওয়ার পর তার পিঠে কালো দাগ দেখা যায়। এর কারণ জানতে চাইলে ইমাম সাজ্জাদ (আ.) বলেন: আমার পিতা রাতের বেলায় লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের ঘরে ঘরে খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দিতেন। নিজ হাতে নিজের পিঠে করে সেই বোঝা বহন করতে করতে তার পিঠে এই কালো দাগ সৃষ্টি হয়েছে।
ইমাম হোসেইন (আ.) অসহায় মানুষের সাহায্যে এগিয়ে যাওয়ার গুরুত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন: “যে ব্যক্তি তার একজন মুসলমান ভাইয়ের কষ্ট দূর করে দেয় আল্লাহ তায়ালা দুনিয়া ও আখেরাতে তাকে সব ধরনের কষ্ট থেকে নিরাপদে রাখবেন।” তিনি আরো বলেন, “যে ব্যক্তি অন্যের উপকার করে আল্লাহ তায়ালা তার উপকার করেন এবং তিনি উপকারীকে ভালোবাসেন।”
ইমাম হোসেইন (আ.)আরেক বাণীতে আরো বলেন, “যখন তোমাদের কাছে কেউ হাত পাতে তখন বিষয়টিকে আল্লাহ প্রদত্ত একটি নেয়ামত হিসেবে গ্রহণ করবে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে ক্ষুব্ধ হবে না বরং সাধ্যমতো অভাবী লোকটিকে সাহায্য করার চেষ্টা করবে। তা না হলে আল্লাহ তায়ালা যদি ক্ষুব্ধ হন তাহলে তিনি তোমাকে দেয়া রিজিক কেড়ে নিতে পারেন। তখন অনুশোচনা করে কোনো লাভ হবে না।”
প্রখ্যাত মিশরীয় লেখক আল্লামা আব্দুল্লাহ আলায়েলি তার এক বইয়ে লিখেছেন, “ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে আমরা এমন কিছু মহান ব্যক্তিত্বের সন্ধান পাই যারা উন্নত কর্মের মাধ্যমে নিজেদের মহত্বের পরিচয় রেখে গেছেন। সাহসিকতা, দয়া-দাক্ষিণ্য, আত্মত্যাগ, দানশীলতা, মহানুভবতা ইত্যাদি গুণে গুণান্বিত মহান ব্যক্তিত্বদেরকে মানুষ প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে মনে রাখে। তবে ইমাম হোসেইন (আ.)’র ব্যক্তিত্বের বিশালতা এত গভীর যে, নির্দিষ্ট কোনো মহৎ গুণের মধ্যে তাকে সীমাবদ্ধ রাখার সুযোগ নেই। তাঁর চরিত্রে যেন সকল মহৎ গুণের সমাহার ঘটেছে।”
তো বন্ধুরা, দেখতে দেখতে আজকের আসরের সময়ও ফুরিয়ে এসেছে। গত কয়েকটি আসরে আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.)’র প্রিয় দৌহিত্র, হযরত আলী (আ.)’র সন্তান এবং বেহেশতের যুবকদের সর্দার ইমাম হোসেইন (আ.)’র সংক্ষিপ্ত জীবনী নিয়ে আলোচনা করলাম। আগামী আসরে আমরা ইমাম হোসেইন (আ.)’র সন্তান ইমাম জয়নুল আবেদিন বা ইমাম সাজ্জাদ (আ.)র জীবনী নিয়ে আলোচনা শুরু করব।#
পার্সটুডে/মুজাহিদুল ইসলাম/ মো: আবু সাঈদ /২২
মন্তব্যসমূহ