(পর্ব ৩৭): এজিদের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জনমত গঠনমে ১৪, ২০১৯ ১৮:১১ Asia/Dhakaগত আসরে আমরা এজিদ বিন মুয়াবিয়া ক্ষমতায় আসার পর ইমাম হোসেইন (আ.) তার শাসনের মোকাবিলায় কি কর্মপন্থা গ্রহণ করেছিলেন সে সম্পর্কে আলোচনা করেছি।আমরা বলেছি, ইমাম সরাসরি জনগণের মধ্যে উপস্থিত হয়ে তাদের সামনে সত্য তুলে ধরার পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় দূত মারফত বাণী পাঠিয়ে এজিদের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জনমত গঠনের কাজ শুরু করেন। আজকের আসরে আমরা ইমামের এ সংক্রান্ত কিছু ভাষণ নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করব।ইমাম হোসেইন (আ.) তার ভাষণে একদিকে নবীজী (সা.)’র আহলে বাইতের সদস্য হিসেবে নিজের মর্যাদা তুলে ধরেন এবং অন্যদিকে উমাইয়া গোত্র বিশেষ করে মুয়াবিয়া ও এজিদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে জনগণকে একথা বোঝানোর চেষ্টা করেন, কেন তিনি এজিদের মতো শাসকের হাতে বায়াত গ্রহণ করছেন না। ইমাম বলেন, তিনি সত্য প্রতিষ্ঠা করতে চান কিন্তু এজিদের লক্ষ্য বাতিল বা মিথ্যাকে শক্তিশালী করা; তিনি ইসলাম রক্ষায় সচেষ্ট কিন্তু এজিদ ইসলাম ধ্বংসের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে; তিনি নির্যাতিত মানুষের মুক্তি ও ন্যায়বিচার চান অন্যদিকে এজিদের শাসনব্যবস্থাই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে জুলুম ও অত্যাচারকে ভিত্তি করে। ইমাম হোসেইন মানুষকে দুনিয়ায় মুক্তি দিতে ও আখেরাতে জান্নাতে নিয়ে যেতে চান কিন্তু এজিদ দুনিয়াতে মানুষকে গোলাম করে রাখার পাশাপাশি পরকালে তাদেরকে নিয়ে জাহান্নামের আগুনে ঝাঁপ দিতে চায়। কাজেই এ অবস্থায় দু’জনের মধ্যে আপোসরফার কোনো সুযোগ নেই।প্রখ্যাত শিয়া মোহাদ্দেস শেখ সাদুক (রহ.) বর্ণনা করেন: একদিন এক ব্যক্তি ইমাম হোসেইন (আ.)’র কাছে সূরা বনি-ইসরাইলের ৭১ নম্বর আয়াতের তফসির জানতে চায়। ওই আয়াতের একাংশে বলা হয়েছে: “স্মরণ কর,যেদিন আমি প্রত্যেক দলকে তাদের ইমাম বা নেতাসহ আহবান করব...”। ইমাম জবাবে বলেন: এখানে ইমাম বলতে দুই ধরনের নেতার কথা বলা হয়েছে। তাদের একজন নেতা হচ্ছেন এমন যিনি মানুষকে সিরাতুল মুস্তাকিম ও আল্লাহ তায়ালার ইবাদতের দিকে আহ্বান জানান। এমন নেতার আহ্বানে সাড়া দিয়ে একদল মানুষ তাকে অনুসরণ করে। আরেক ধরনের নেতা আছে যারা সমাজকে বাতিল, বিভ্রান্তি ও বেলেল্লাপনার দিকে নিয়ে যায়। এমন নেতাদেরও অনেক অনুসারী থাকে। এরপর ইমাম সূরা আশ-শুরার ৭ নম্বর আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, উল্লেখিত প্রথম নেতা তার দল নিয়ে জান্নাতে এবং দ্বিতীয় নেতা তার দলবলসহ জাহান্নামে প্রবেশ করবে।কাজেই আমরা বুঝতে পারি, ইসলামি সংস্কৃতিতে নেতা নির্বাচন করা নিছক কোনো ধর্মীয়, সামাজিক বা রাজনৈতিক বিষয় নয় বরং এর সঙ্গে একজন মানুষের পরকালীন জীবনের ভাগ্য নির্ভর করছে। যারা আল্লাহর পথে আহ্বানকারী ঐশী নেতৃত্ব বেছে নেবে তারা চিরকালীন সুখের আবাস জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং যারা খোদাদ্রোহী জালেম নেতৃত্বের অনুসরণ করবে তারা জাহান্নামের আগুনে নিক্ষিপ্ত হবে। ইমাম হোসেইন (আ.) মানুষকে জালেম শাসকের হাত থেকে রক্ষা করে মূলত তাদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে নিষ্কৃতি দিতে চেয়েছেন। জনগণের উদ্দেশে দেয়া এক সচেতনতামূলক ভাষণে ইমাম বলেন: হে জনগণ! জেনে রেখো রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: যখন তোমরা এমন শাসকের মুখোমুখি হবে, যে শাসক হালালকে হারাম ও হারামকে হালাল করে, আল্লাহর রাসূলের সুন্নত পরিপন্থি কাজ করে এবং সমাজে গোনাহ বা পাপকাজ ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ করে দেয় তখন তার বিরুদ্ধে জিহাদ করো। এমন শাসকের বিরুদ্ধে জিহাদ না করে নির্বিকার থাকলে আল্লাহ তায়ালা ওই শাসকের সঙ্গে তার অনুগত সব লোককে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।বিশ্বনবী (সা.)’র এই হাদিস স্মরণ করিয়ে দিয়ে ইমাম তার যুগের মানুষকে জাহান্নামের কঠিন আজাব থেকে বাঁচার জন্য এজিদের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। কিন্তু দুনিয়ার আরাম-আয়েশ ও ভোগ-বিলাসে মত্ত হয়ে পড়া মানুষ তাঁর এ কথায় কান দেয়নি যার পরিণতিতে কারবালার হৃদয়বিদারক ঘটনা সংঘটিত হয়। ইমাম হোসেইন (আ.) বনি উমাইয়া গোষ্ঠীর পরিচিতি তুলে ধরতে গিয়ে আরেক ভাষণে বলেন: হে জনগণ! তোমরা জেনে রেখো, উমাইয়ারা আল্লাহর আনুগত্য বাদ দিয়ে এখন শয়তানের আনুগত্য করছে। তারা হালালকে হারাম ও হারামকে হালাল করছে, সমাজে অশ্লীলতা ছড়িয়ে দিয়েছে এবং রাসূলের সুন্নতকে পুরোপুরি বিসর্জন দিয়েছে। তারা আল্লাহর দ্বীনকে পরিবর্তন করতে উদ্যত হয়েছে। এ অবস্থায় তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা ফরজ হয়ে পড়েছে।ইমাম এ বক্তব্য দেয়ার মাধ্যমে উমাইয়াদের শাসন ক্ষমতাকে সম্পূর্ণ অবৈধ ঘোষণা করেন। আর ঠিক এ কারণেই মদিনার গভর্নর এজিদের পক্ষে বায়াত নিতে আসলে ইমাম হোসেইন (আ.) তাকে স্পষ্ট বলে দেন, “আমি যদি এজিদের মতো পাপিষ্ঠের হাতে বায়াত গ্রহণ করি তাহলে ইসলামের অপমৃত্যু ঘটবে।” প্রশ্ন হচ্ছে, শুধুমাত্র ইমাম হোসেইন ও তাঁর ঘনিষ্ঠ সঙ্গীদেরই কি শুধু দায়িত্ব ছিল এজিদের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো? এ প্রশ্নের উত্তরে ইমাম অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে আলেম সমাজের গুরুদায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেন এবং তাদের কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের আগে আলেম সমাজ ও চিন্তাবিদদেরকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।ইমাম হোসেইন (আ.) তাঁর ভাষণের শুরুতে ‘ইয়া আইয়ু হান্নাস’ বা ‘হে লোকসকল’ বলে সম্মোধন করেন একথা বোঝানোর জন্য যে, তার এ আহ্বান কেবল তার যুগের মানুষের জন্য নয় বরং সকল যুগের সকল মানুষকে উদ্দেশ করে তিনি এ ভাষণ দিচ্ছেন। অবশ্য তাঁর ভাষণের মূল উদ্দেশ্য সকল যুগের আলেম সমাজ। ইমাম হোসেইন (আ.) প্রশ্ন করেন: আপনারা কি জানেন পবিত্র কুরআনে ইহুদি ও খ্রিষ্টান ধর্মগুরুদেরকে কেন ভর্ৎসনা করা হয়েছে? সূরা মায়েদার ৬৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, “ইহুদি ও খ্রিষ্টান আলেমরা কেন জনগণকে পাপ কথা বলতে এবং হারাম ভক্ষণ করতে নিষেধ করে না? তারা খুবই মন্দ কাজ করছে।” ইহুদি আলেমদের দায়িত্ব পালনে এই অবহেলার কারণে বনি-ইসরাইল জাতি এতটা বিপথে চলে গিয়েছিল যে, তারা আল্লাহ তায়ালার আজাবের যোগ্য হয়ে যায়। এ সম্পর্কে সূরা মায়েদার ৭৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তারা পরস্পরকে মন্দ কাজে নিষেধ করত না। ’ অর্থাৎ বনি-ইসরাইলের লোকজন সমাজে অত্যাচার, জুলুম ও অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়তে এবং আল্লাহর নির্দেশের পরিপন্থি কাজ হতে দেখেও পার্থিব স্বার্থ হাসিল কিংবা শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচারের ভয়ে নীরব থেকেছে। অথচ সূরা মায়েদার ৪৪ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন: ‘মানুষকে (এবং অত্যাচারী শাসকদেরকে) ভয় করো না বরং শুধু আমাকে ভয় করো।’এরপর ইমাম হোসেইন (আ.) সেইসব মানুষের প্রশংসা করেন যারা সমাজের অন্যায়-অত্যাচার ও অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। সূরা তওবার ৭১ নম্বর আয়াতে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে: “আর ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী একে অপরের সহায়ক। তারা ভাল কথার শিক্ষা দেয় এবং মন্দ (ও পাপাচার) থেকে বিরত রাখে।”ইমাম হোসেইন (আ.) এজিদের বিরুদ্ধে তাঁর বিদ্রোহের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করার খোদায়ী নির্দেশ বাস্তবায়ন করার কথা উল্লেখ করেন।#পার্সটুডে/মুজাহিদুল ইসলাম/ মো: আবু সাঈদ/ ১৪
(পর্ব ৩৭): এজিদের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জনমত গঠন
মে ১৪, ২০১৯ ১৮:১১ Asia/Dhaka
গত আসরে আমরা এজিদ বিন মুয়াবিয়া ক্ষমতায় আসার পর ইমাম হোসেইন (আ.) তার শাসনের মোকাবিলায় কি কর্মপন্থা গ্রহণ করেছিলেন সে সম্পর্কে আলোচনা করেছি।
আমরা বলেছি, ইমাম সরাসরি জনগণের মধ্যে উপস্থিত হয়ে তাদের সামনে সত্য তুলে ধরার পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় দূত মারফত বাণী পাঠিয়ে এজিদের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জনমত গঠনের কাজ শুরু করেন। আজকের আসরে আমরা ইমামের এ সংক্রান্ত কিছু ভাষণ নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করব।
ইমাম হোসেইন (আ.) তার ভাষণে একদিকে নবীজী (সা.)’র আহলে বাইতের সদস্য হিসেবে নিজের মর্যাদা তুলে ধরেন এবং অন্যদিকে উমাইয়া গোত্র বিশেষ করে মুয়াবিয়া ও এজিদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে জনগণকে একথা বোঝানোর চেষ্টা করেন, কেন তিনি এজিদের মতো শাসকের হাতে বায়াত গ্রহণ করছেন না। ইমাম বলেন, তিনি সত্য প্রতিষ্ঠা করতে চান কিন্তু এজিদের লক্ষ্য বাতিল বা মিথ্যাকে শক্তিশালী করা; তিনি ইসলাম রক্ষায় সচেষ্ট কিন্তু এজিদ ইসলাম ধ্বংসের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে; তিনি নির্যাতিত মানুষের মুক্তি ও ন্যায়বিচার চান অন্যদিকে এজিদের শাসনব্যবস্থাই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে জুলুম ও অত্যাচারকে ভিত্তি করে। ইমাম হোসেইন মানুষকে দুনিয়ায় মুক্তি দিতে ও আখেরাতে জান্নাতে নিয়ে যেতে চান কিন্তু এজিদ দুনিয়াতে মানুষকে গোলাম করে রাখার পাশাপাশি পরকালে তাদেরকে নিয়ে জাহান্নামের আগুনে ঝাঁপ দিতে চায়। কাজেই এ অবস্থায় দু’জনের মধ্যে আপোসরফার কোনো সুযোগ নেই।
প্রখ্যাত শিয়া মোহাদ্দেস শেখ সাদুক (রহ.) বর্ণনা করেন: একদিন এক ব্যক্তি ইমাম হোসেইন (আ.)’র কাছে সূরা বনি-ইসরাইলের ৭১ নম্বর আয়াতের তফসির জানতে চায়। ওই আয়াতের একাংশে বলা হয়েছে: “স্মরণ কর,যেদিন আমি প্রত্যেক দলকে তাদের ইমাম বা নেতাসহ আহবান করব...”। ইমাম জবাবে বলেন: এখানে ইমাম বলতে দুই ধরনের নেতার কথা বলা হয়েছে। তাদের একজন নেতা হচ্ছেন এমন যিনি মানুষকে সিরাতুল মুস্তাকিম ও আল্লাহ তায়ালার ইবাদতের দিকে আহ্বান জানান। এমন নেতার আহ্বানে সাড়া দিয়ে একদল মানুষ তাকে অনুসরণ করে। আরেক ধরনের নেতা আছে যারা সমাজকে বাতিল, বিভ্রান্তি ও বেলেল্লাপনার দিকে নিয়ে যায়। এমন নেতাদেরও অনেক অনুসারী থাকে। এরপর ইমাম সূরা আশ-শুরার ৭ নম্বর আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, উল্লেখিত প্রথম নেতা তার দল নিয়ে জান্নাতে এবং দ্বিতীয় নেতা তার দলবলসহ জাহান্নামে প্রবেশ করবে।
কাজেই আমরা বুঝতে পারি, ইসলামি সংস্কৃতিতে নেতা নির্বাচন করা নিছক কোনো ধর্মীয়, সামাজিক বা রাজনৈতিক বিষয় নয় বরং এর সঙ্গে একজন মানুষের পরকালীন জীবনের ভাগ্য নির্ভর করছে। যারা আল্লাহর পথে আহ্বানকারী ঐশী নেতৃত্ব বেছে নেবে তারা চিরকালীন সুখের আবাস জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং যারা খোদাদ্রোহী জালেম নেতৃত্বের অনুসরণ করবে তারা জাহান্নামের আগুনে নিক্ষিপ্ত হবে। ইমাম হোসেইন (আ.) মানুষকে জালেম শাসকের হাত থেকে রক্ষা করে মূলত তাদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে নিষ্কৃতি দিতে চেয়েছেন। জনগণের উদ্দেশে দেয়া এক সচেতনতামূলক ভাষণে ইমাম বলেন: হে জনগণ! জেনে রেখো রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: যখন তোমরা এমন শাসকের মুখোমুখি হবে, যে শাসক হালালকে হারাম ও হারামকে হালাল করে, আল্লাহর রাসূলের সুন্নত পরিপন্থি কাজ করে এবং সমাজে গোনাহ বা পাপকাজ ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ করে দেয় তখন তার বিরুদ্ধে জিহাদ করো। এমন শাসকের বিরুদ্ধে জিহাদ না করে নির্বিকার থাকলে আল্লাহ তায়ালা ওই শাসকের সঙ্গে তার অনুগত সব লোককে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।
বিশ্বনবী (সা.)’র এই হাদিস স্মরণ করিয়ে দিয়ে ইমাম তার যুগের মানুষকে জাহান্নামের কঠিন আজাব থেকে বাঁচার জন্য এজিদের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। কিন্তু দুনিয়ার আরাম-আয়েশ ও ভোগ-বিলাসে মত্ত হয়ে পড়া মানুষ তাঁর এ কথায় কান দেয়নি যার পরিণতিতে কারবালার হৃদয়বিদারক ঘটনা সংঘটিত হয়। ইমাম হোসেইন (আ.) বনি উমাইয়া গোষ্ঠীর পরিচিতি তুলে ধরতে গিয়ে আরেক ভাষণে বলেন: হে জনগণ! তোমরা জেনে রেখো, উমাইয়ারা আল্লাহর আনুগত্য বাদ দিয়ে এখন শয়তানের আনুগত্য করছে। তারা হালালকে হারাম ও হারামকে হালাল করছে, সমাজে অশ্লীলতা ছড়িয়ে দিয়েছে এবং রাসূলের সুন্নতকে পুরোপুরি বিসর্জন দিয়েছে। তারা আল্লাহর দ্বীনকে পরিবর্তন করতে উদ্যত হয়েছে। এ অবস্থায় তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা ফরজ হয়ে পড়েছে।
ইমাম এ বক্তব্য দেয়ার মাধ্যমে উমাইয়াদের শাসন ক্ষমতাকে সম্পূর্ণ অবৈধ ঘোষণা করেন। আর ঠিক এ কারণেই মদিনার গভর্নর এজিদের পক্ষে বায়াত নিতে আসলে ইমাম হোসেইন (আ.) তাকে স্পষ্ট বলে দেন, “আমি যদি এজিদের মতো পাপিষ্ঠের হাতে বায়াত গ্রহণ করি তাহলে ইসলামের অপমৃত্যু ঘটবে।” প্রশ্ন হচ্ছে, শুধুমাত্র ইমাম হোসেইন ও তাঁর ঘনিষ্ঠ সঙ্গীদেরই কি শুধু দায়িত্ব ছিল এজিদের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো? এ প্রশ্নের উত্তরে ইমাম অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে আলেম সমাজের গুরুদায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেন এবং তাদের কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের আগে আলেম সমাজ ও চিন্তাবিদদেরকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
ইমাম হোসেইন (আ.) তাঁর ভাষণের শুরুতে ‘ইয়া আইয়ু হান্নাস’ বা ‘হে লোকসকল’ বলে সম্মোধন করেন একথা বোঝানোর জন্য যে, তার এ আহ্বান কেবল তার যুগের মানুষের জন্য নয় বরং সকল যুগের সকল মানুষকে উদ্দেশ করে তিনি এ ভাষণ দিচ্ছেন। অবশ্য তাঁর ভাষণের মূল উদ্দেশ্য সকল যুগের আলেম সমাজ। ইমাম হোসেইন (আ.) প্রশ্ন করেন: আপনারা কি জানেন পবিত্র কুরআনে ইহুদি ও খ্রিষ্টান ধর্মগুরুদেরকে কেন ভর্ৎসনা করা হয়েছে? সূরা মায়েদার ৬৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, “ইহুদি ও খ্রিষ্টান আলেমরা কেন জনগণকে পাপ কথা বলতে এবং হারাম ভক্ষণ করতে নিষেধ করে না? তারা খুবই মন্দ কাজ করছে।” ইহুদি আলেমদের দায়িত্ব পালনে এই অবহেলার কারণে বনি-ইসরাইল জাতি এতটা বিপথে চলে গিয়েছিল যে, তারা আল্লাহ তায়ালার আজাবের যোগ্য হয়ে যায়। এ সম্পর্কে সূরা মায়েদার ৭৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তারা পরস্পরকে মন্দ কাজে নিষেধ করত না। ’ অর্থাৎ বনি-ইসরাইলের লোকজন সমাজে অত্যাচার, জুলুম ও অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়তে এবং আল্লাহর নির্দেশের পরিপন্থি কাজ হতে দেখেও পার্থিব স্বার্থ হাসিল কিংবা শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচারের ভয়ে নীরব থেকেছে। অথচ সূরা মায়েদার ৪৪ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন: ‘মানুষকে (এবং অত্যাচারী শাসকদেরকে) ভয় করো না বরং শুধু আমাকে ভয় করো।’
এরপর ইমাম হোসেইন (আ.) সেইসব মানুষের প্রশংসা করেন যারা সমাজের অন্যায়-অত্যাচার ও অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। সূরা তওবার ৭১ নম্বর আয়াতে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে: “আর ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী একে অপরের সহায়ক। তারা ভাল কথার শিক্ষা দেয় এবং মন্দ (ও পাপাচার) থেকে বিরত রাখে।”
ইমাম হোসেইন (আ.) এজিদের বিরুদ্ধে তাঁর বিদ্রোহের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করার খোদায়ী নির্দেশ বাস্তবায়ন করার কথা উল্লেখ করেন।#
পার্সটুডে/মুজাহিদুল ইসলাম/ মো: আবু সাঈদ/ ১৪
মন্তব্যসমূহ