(পর্ব ৩৬): ইমাম হাসান (আ.)’র সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তি লঙ্ঘন করে মুয়াবিয়ামে ১১, ২০১৯ ১৬:২৪ Asia/Dhakaপ্রতিবাদী জনগণের কণ্ঠস্বর নিস্তব্ধ করে দেয়ার যে নীতি মুয়াবিয়া নিয়েছিল ইমাম হোসেইন তার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন এবং তিনি কখনোই মুয়াবিয়ার ইসলাম ও মানবতা বিরোধী কোনো আচরণ মুখ বুজে সহ্য করেননি। আজকের আসরে আমরা মুয়াবিয়ার মৃত্যু পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে খানিকটা আলোচনা করার চেষ্টা করব।ইমাম হাসান (আ.)’র সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তি লঙ্ঘন করে মুয়াবিয়া নিজের শেষ জীবনে নিজের ছেলে এজিদকে ক্ষমতার উত্তরাধিকারী ঘোষণা করে। অথচ এজিদের জীবনে ইসলামি শিক্ষার লেশমাত্র ছিল না। তার পিতা লোক দেখানোর জন্য হলেও ইসলামের যে পোশাক পরেছিল তারও কোনো ধার ধারত না এজিদ।এ কারণে নবী পরিবারের সদস্য এবং রাসূলের নবুওয়্যাতের সাক্ষী ইমাম হোসেইন (আ.) এজিদের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট ও কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেন। এজিদের পক্ষে বায়াত নেয়ার জন্য মদীনার গভর্নর ইমাম হোসেইনের কাছে আসলে ইমাম বলেন, হে গভর্নর! আপনি ভালো করে জানেন যে, আমি নবী পরিবারের সদস্য এবং ফেরেশতা জিব্রাইল যে ঘরে যাতায়াত করতেন আমি সেই ঘরের সন্তান। ইসলাম আমাদের পরিবার থেকে যাত্রা শুরু করেছে এবং শেষ পর্যন্ত আমাদের পরিবারকে সঙ্গে নিয়েই এগিয়ে যাবে। এরপর তিনি এজিদের দুর্বলতাগুলো তুলে ধরে বলেন: কিন্তু আপনি যে ব্যক্তির হাতে বায়াত হওয়ার বার্তা নিয়ে এসেছেন সেই এজিদ প্রকাশ্যে মদ্যপানকারী ব্যক্তি যার হাত নিরপরাধ মানুষের রক্তে রঞ্জিত। সে আল্লাহর নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন করে প্রকাশ্যে সব ধরনের পাপকাজে লিপ্ত হয়েছে। ইমাম প্রশ্ন করেন, গভর্নর! এখন আপনিই বলুন আমার মতো একজন মানুষ কি এজিদের হাতে আনুগত্যের শপথ নিতে পারে? একটু চিন্তা করলেই আপনি বুঝতে পারবেন মুসলিম উম্মাহর স্বার্থে এজিদের হাতে আমার আনুগত্যের শপথ করা উচিত নাকি উল্টো এজিদের উচিত আমার কাছে বায়াত গ্রহণ করা।ইমাম হোসেইন (আ.)’র এই নীতি অবস্থান থেকে সকল যুগের সকল মুসলমানের যে শিক্ষাটি গ্রহণ করা উচিত তা হলো- একজন ধর্মপ্রাণ, ঈমানদার ও উন্নত মানবীয় চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তি কখনো কোনো পাপী, অত্যাচারী ও মানবতার শত্রুর আনুগত্য মেনে নিয়ে তার বাধ্য হয়ে থাকতে পারে না। উন্নত চারিত্রিক গুণাবলীসম্পন্ন একজন মানুষ কখনো অত্যাচারী শাসকের হুমকিকে ভয় পায় না বা তার লোভনীয় প্রস্তাবের কাছে আত্মসমর্পন করে না বরং অত্যন্ত দৃঢ়চিত্তে শাসকের স্বরূপ জনগণের সামনে প্রকাশ করে দেয়।ইতিহাস সাক্ষী দেয় যে, বিশ্বব্যাপী যুগে যুগে যত সংঘর্ষ ও রক্তপাত হয়েছে তার মূলে ছিল ব্যক্তিগত ও সামাজিক স্বার্থ উদ্ধার এবং ক্ষমতার দ্বন্দ্ব। ক্ষমতায় যেতে বা ক্ষমতা ধরে রাখতে মানবতা বিরোধী কাজ করতেও কেউ দ্বিধা করেনি। কিন্তু ইমাম হোসেইন (আ.) এই ঐতিহাসিক ধারার বিপরীতে শুধুমাত্র দ্বীন ইসলামকে রক্ষা করার লক্ষ্যে এজিদের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। তিনি এক ভাষণে বলেন, আমি আমার নানাজান রাসূলুল্লাহ (সা.)কে বলতে শুনেছি, আবু সুফিয়ানের বংশধরদের জন্য খেলাফত হারাম ঘোষণা করা হলো।ইমাম নবীজীর এই কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে একথাই বোঝাতে চেয়েছেন যে, শুধু এজিদ নয় তার বংশের কারো মুসলিম জাহানের খলিফা হওয়ার যোগ্যতা নেই। আবু সুফিয়ান ও তার পরিবারের সদস্যরা মক্কা বিজয়ের আগ পর্যন্ত ছিল ইসলামের চরম শত্রু এবং তারা সবরকম উপায়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) এবং তার সাহাবীদের কষ্ট দিয়েছে। এ সম্পর্কে ইমাম হাসান (আ.) বলেন: এজিদের মতো লোক যদি ক্ষমতার মসনদে বসে তাহলে ইসলামের আর কিছু অবশিষ্ট থাকবে না। কারণ, সে ক্ষমতায় গিয়ে ইসলামকে ধ্বংস করা ছাড়া আর কোনো লক্ষ্য বাস্তবায়ন করবে না।দুঃখজনকভাবে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)’র রেহলাতের পর গাদিরে খোমের নির্দেশনা উপেক্ষা করে খেলাফত চালু হওয়ার কারণে মুসলিম সমাজে নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে যে কুসংস্কার চালু হয় তার ফলে মুসলমানদের নেতা নির্বাচনের ক্ষমতা লোপ পেতে থাকে। এ কারণে এক সময় এজিদের মতো পাপাচারী ব্যক্তি মুসলিম জাহানের খলিফা নির্বাচিত হওয়ার পরও কেউ কোনো প্রতিবাদ করেনি। সবাই এজিদের হাতে বায়াত গ্রহণ বা আনুগত্যের শপথ করে। অবশ্য কখনো কখনো উমাইয়া শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে মানুষ রাসূলুল্লাহ (সা.)’র আহলে বাইতের কাছে আশ্রয় নিত। কিন্তু এ অবস্থা বেশিদিন স্থায়ী হতো না। শাসকরা হুমকি-ধমকি ও লোভ দেখিয়ে তাদেরকে আবার নিজেদের শাসনের ছায়াতলে নিয়ে নিত। এজিদের শাসন শুরু হওয়ার পর বর্তমান ইরাকের কুফা অঞ্চলের জনগণ এমনই এক পদক্ষেপ নিয়েছিল।এজিদের অত্যাচারে যখন তাদের প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে পড়ে তখন তারা হাজার হাজার চিঠি পাঠিয়ে ইমাম হোসেইন (আ.)কে কুফায় যাওয়ার আমন্ত্রণ জানায়। তারা এসব চিঠিতে জানায়, ইমাম কুফায় গেলেই তারা সদলবলে তাঁর হাতে বায়াত গ্রহণ করে এজিদের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করবে। ইমাম হোসেইন কুফাবাসীকে নিরাশ করেননি। তবে তিনি জানতেন, সত্যিকারের ঐশী নেতার গুণাবলী সম্পর্কে কুফার জনগণের কোনো ধারণা নেই এবং এ কারণেই তারা এর আগে মুয়াবিয়া ও এজিদের মতো লোকদের শাসন মেনে নিয়েছে। তাই তিনি কুফাবাসীর চিঠির জবাবে লিখে পাঠান: সত্যিকারের ঐশী নেতা ও ইমাম হবেন সেই ব্যক্তি যিনি নিজের জীবনে পবিত্র কুরআনের আদেশ-নিষেধ বাস্তবায়ন করেন, ন্যায়পূর্ণ জীবন যাপন করেন এবং নিজের সমস্ত অস্তিত্ব দিয়ে দ্বীন রক্ষা করার চেষ্টা করেন।অন্য সব ঐশী নেতার মতো ইমাম হোসেইন (আ.)ও শাসকগোষ্ঠীর ইসলাম বিরোধী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। একইসঙ্গে ইসলাম রক্ষা ও মুসলমানদের মধ্যকার ঐক্য ধরে রাখার জন্য যুদ্ধের মতো রক্তাক্ত পথও তিনি বেছে নিতে চাননি। ইমাম বসরার জনগণের উদ্দেশে লেখা এক চিঠিতে এই বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করে লেখেন: আল্লাহ তায়ালা নবুওয়াত দান করার জন্য বিশ্বনবী মুহাম্মাদ (সা.)কে মনোনিত করেছিলেন। নবীজী তাঁর দায়িত্ব সূচারুরূপে পালন করার পর দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন। এখন আল্লাহর রাসূলের আহলে বাইতের সদস্য হিসেবে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হওয়ার জন্য আমাদের চেয়ে যোগ্য আর কেউ নেই। কিন্তু কিছু দখলদার শক্তি আমাদের কাছ থেকে সে অধিকার কেড়ে নিয়েছে। তবে তারপরও মুসলিম সমাজের নিরাপত্তা ও ঐক্যের কথা বিবেচনা করে আমরা সংঘাতের পথ বেছে নেইনি।এরপর মুসলিম সমাজে চালু হওয়া কুসংষ্কারসমূহের স্বরূপ উন্মোচন করে ইমাম তাঁর চিঠিতে লেখেন: আমি আপনাদেরকে আল্লাহর কিতাব কুরআন ও রাসূলুল্লাহ (সা.)’র সুন্নত পালনের দিকে আহ্বান জানাচ্ছি। আমি এই আহ্বান এজন্য জানাচ্ছি যে, আমরা এমন এক পরিস্থিতির মধ্যে বাস করছি যেখানে রাসূলের সুন্নত বলতে আর কিছু অবশিষ্ট নেই। তার জায়গায় বেদআত ও কুসংস্কার ব্যাপকভাবে চালু হয়ে গেছে। যদি আপনারা আমার আহ্বানে সাড়া দেন তাহলে আপনাদের জন্য আমি দুনিয়া ও আখেরাতের জীবনে কল্যাণের পথ দেখানোর প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। আমার কথা শুনলে আপনারা আল্লাহ তায়ালার রহমত ও বরকত লাভ করবেন।#পার্সটুডে/মুজাহিদুল ইসলাম/ মো: আবু সাঈদ/ ১১
(পর্ব ৩৬): ইমাম হাসান (আ.)’র সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তি লঙ্ঘন করে মুয়াবিয়া
মে ১১, ২০১৯ ১৬:২৪ Asia/Dhaka
প্রতিবাদী জনগণের কণ্ঠস্বর নিস্তব্ধ করে দেয়ার যে নীতি মুয়াবিয়া নিয়েছিল ইমাম হোসেইন তার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন এবং তিনি কখনোই মুয়াবিয়ার ইসলাম ও মানবতা বিরোধী কোনো আচরণ মুখ বুজে সহ্য করেননি। আজকের আসরে আমরা মুয়াবিয়ার মৃত্যু পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে খানিকটা আলোচনা করার চেষ্টা করব।
ইমাম হাসান (আ.)’র সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তি লঙ্ঘন করে মুয়াবিয়া নিজের শেষ জীবনে নিজের ছেলে এজিদকে ক্ষমতার উত্তরাধিকারী ঘোষণা করে। অথচ এজিদের জীবনে ইসলামি শিক্ষার লেশমাত্র ছিল না। তার পিতা লোক দেখানোর জন্য হলেও ইসলামের যে পোশাক পরেছিল তারও কোনো ধার ধারত না এজিদ।
এ কারণে নবী পরিবারের সদস্য এবং রাসূলের নবুওয়্যাতের সাক্ষী ইমাম হোসেইন (আ.) এজিদের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট ও কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেন। এজিদের পক্ষে বায়াত নেয়ার জন্য মদীনার গভর্নর ইমাম হোসেইনের কাছে আসলে ইমাম বলেন, হে গভর্নর! আপনি ভালো করে জানেন যে, আমি নবী পরিবারের সদস্য এবং ফেরেশতা জিব্রাইল যে ঘরে যাতায়াত করতেন আমি সেই ঘরের সন্তান। ইসলাম আমাদের পরিবার থেকে যাত্রা শুরু করেছে এবং শেষ পর্যন্ত আমাদের পরিবারকে সঙ্গে নিয়েই এগিয়ে যাবে।
এরপর তিনি এজিদের দুর্বলতাগুলো তুলে ধরে বলেন: কিন্তু আপনি যে ব্যক্তির হাতে বায়াত হওয়ার বার্তা নিয়ে এসেছেন সেই এজিদ প্রকাশ্যে মদ্যপানকারী ব্যক্তি যার হাত নিরপরাধ মানুষের রক্তে রঞ্জিত। সে আল্লাহর নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন করে প্রকাশ্যে সব ধরনের পাপকাজে লিপ্ত হয়েছে। ইমাম প্রশ্ন করেন, গভর্নর! এখন আপনিই বলুন আমার মতো একজন মানুষ কি এজিদের হাতে আনুগত্যের শপথ নিতে পারে? একটু চিন্তা করলেই আপনি বুঝতে পারবেন মুসলিম উম্মাহর স্বার্থে এজিদের হাতে আমার আনুগত্যের শপথ করা উচিত নাকি উল্টো এজিদের উচিত আমার কাছে বায়াত গ্রহণ করা।
ইমাম হোসেইন (আ.)’র এই নীতি অবস্থান থেকে সকল যুগের সকল মুসলমানের যে শিক্ষাটি গ্রহণ করা উচিত তা হলো- একজন ধর্মপ্রাণ, ঈমানদার ও উন্নত মানবীয় চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তি কখনো কোনো পাপী, অত্যাচারী ও মানবতার শত্রুর আনুগত্য মেনে নিয়ে তার বাধ্য হয়ে থাকতে পারে না। উন্নত চারিত্রিক গুণাবলীসম্পন্ন একজন মানুষ কখনো অত্যাচারী শাসকের হুমকিকে ভয় পায় না বা তার লোভনীয় প্রস্তাবের কাছে আত্মসমর্পন করে না বরং অত্যন্ত দৃঢ়চিত্তে শাসকের স্বরূপ জনগণের সামনে প্রকাশ করে দেয়।
ইতিহাস সাক্ষী দেয় যে, বিশ্বব্যাপী যুগে যুগে যত সংঘর্ষ ও রক্তপাত হয়েছে তার মূলে ছিল ব্যক্তিগত ও সামাজিক স্বার্থ উদ্ধার এবং ক্ষমতার দ্বন্দ্ব। ক্ষমতায় যেতে বা ক্ষমতা ধরে রাখতে মানবতা বিরোধী কাজ করতেও কেউ দ্বিধা করেনি। কিন্তু ইমাম হোসেইন (আ.) এই ঐতিহাসিক ধারার বিপরীতে শুধুমাত্র দ্বীন ইসলামকে রক্ষা করার লক্ষ্যে এজিদের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। তিনি এক ভাষণে বলেন, আমি আমার নানাজান রাসূলুল্লাহ (সা.)কে বলতে শুনেছি, আবু সুফিয়ানের বংশধরদের জন্য খেলাফত হারাম ঘোষণা করা হলো।
ইমাম নবীজীর এই কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে একথাই বোঝাতে চেয়েছেন যে, শুধু এজিদ নয় তার বংশের কারো মুসলিম জাহানের খলিফা হওয়ার যোগ্যতা নেই। আবু সুফিয়ান ও তার পরিবারের সদস্যরা মক্কা বিজয়ের আগ পর্যন্ত ছিল ইসলামের চরম শত্রু এবং তারা সবরকম উপায়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) এবং তার সাহাবীদের কষ্ট দিয়েছে। এ সম্পর্কে ইমাম হাসান (আ.) বলেন: এজিদের মতো লোক যদি ক্ষমতার মসনদে বসে তাহলে ইসলামের আর কিছু অবশিষ্ট থাকবে না। কারণ, সে ক্ষমতায় গিয়ে ইসলামকে ধ্বংস করা ছাড়া আর কোনো লক্ষ্য বাস্তবায়ন করবে না।
দুঃখজনকভাবে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)’র রেহলাতের পর গাদিরে খোমের নির্দেশনা উপেক্ষা করে খেলাফত চালু হওয়ার কারণে মুসলিম সমাজে নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে যে কুসংস্কার চালু হয় তার ফলে মুসলমানদের নেতা নির্বাচনের ক্ষমতা লোপ পেতে থাকে। এ কারণে এক সময় এজিদের মতো পাপাচারী ব্যক্তি মুসলিম জাহানের খলিফা নির্বাচিত হওয়ার পরও কেউ কোনো প্রতিবাদ করেনি। সবাই এজিদের হাতে বায়াত গ্রহণ বা আনুগত্যের শপথ করে। অবশ্য কখনো কখনো উমাইয়া শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে মানুষ রাসূলুল্লাহ (সা.)’র আহলে বাইতের কাছে আশ্রয় নিত। কিন্তু এ অবস্থা বেশিদিন স্থায়ী হতো না। শাসকরা হুমকি-ধমকি ও লোভ দেখিয়ে তাদেরকে আবার নিজেদের শাসনের ছায়াতলে নিয়ে নিত। এজিদের শাসন শুরু হওয়ার পর বর্তমান ইরাকের কুফা অঞ্চলের জনগণ এমনই এক পদক্ষেপ নিয়েছিল।
এজিদের অত্যাচারে যখন তাদের প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে পড়ে তখন তারা হাজার হাজার চিঠি পাঠিয়ে ইমাম হোসেইন (আ.)কে কুফায় যাওয়ার আমন্ত্রণ জানায়। তারা এসব চিঠিতে জানায়, ইমাম কুফায় গেলেই তারা সদলবলে তাঁর হাতে বায়াত গ্রহণ করে এজিদের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করবে। ইমাম হোসেইন কুফাবাসীকে নিরাশ করেননি। তবে তিনি জানতেন, সত্যিকারের ঐশী নেতার গুণাবলী সম্পর্কে কুফার জনগণের কোনো ধারণা নেই এবং এ কারণেই তারা এর আগে মুয়াবিয়া ও এজিদের মতো লোকদের শাসন মেনে নিয়েছে। তাই তিনি কুফাবাসীর চিঠির জবাবে লিখে পাঠান: সত্যিকারের ঐশী নেতা ও ইমাম হবেন সেই ব্যক্তি যিনি নিজের জীবনে পবিত্র কুরআনের আদেশ-নিষেধ বাস্তবায়ন করেন, ন্যায়পূর্ণ জীবন যাপন করেন এবং নিজের সমস্ত অস্তিত্ব দিয়ে দ্বীন রক্ষা করার চেষ্টা করেন।
অন্য সব ঐশী নেতার মতো ইমাম হোসেইন (আ.)ও শাসকগোষ্ঠীর ইসলাম বিরোধী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। একইসঙ্গে ইসলাম রক্ষা ও মুসলমানদের মধ্যকার ঐক্য ধরে রাখার জন্য যুদ্ধের মতো রক্তাক্ত পথও তিনি বেছে নিতে চাননি। ইমাম বসরার জনগণের উদ্দেশে লেখা এক চিঠিতে এই বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করে লেখেন: আল্লাহ তায়ালা নবুওয়াত দান করার জন্য বিশ্বনবী মুহাম্মাদ (সা.)কে মনোনিত করেছিলেন। নবীজী তাঁর দায়িত্ব সূচারুরূপে পালন করার পর দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন। এখন আল্লাহর রাসূলের আহলে বাইতের সদস্য হিসেবে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হওয়ার জন্য আমাদের চেয়ে যোগ্য আর কেউ নেই। কিন্তু কিছু দখলদার শক্তি আমাদের কাছ থেকে সে অধিকার কেড়ে নিয়েছে। তবে তারপরও মুসলিম সমাজের নিরাপত্তা ও ঐক্যের কথা বিবেচনা করে আমরা সংঘাতের পথ বেছে নেইনি।
এরপর মুসলিম সমাজে চালু হওয়া কুসংষ্কারসমূহের স্বরূপ উন্মোচন করে ইমাম তাঁর চিঠিতে লেখেন: আমি আপনাদেরকে আল্লাহর কিতাব কুরআন ও রাসূলুল্লাহ (সা.)’র সুন্নত পালনের দিকে আহ্বান জানাচ্ছি। আমি এই আহ্বান এজন্য জানাচ্ছি যে, আমরা এমন এক পরিস্থিতির মধ্যে বাস করছি যেখানে রাসূলের সুন্নত বলতে আর কিছু অবশিষ্ট নেই। তার জায়গায় বেদআত ও কুসংস্কার ব্যাপকভাবে চালু হয়ে গেছে। যদি আপনারা আমার আহ্বানে সাড়া দেন তাহলে আপনাদের জন্য আমি দুনিয়া ও আখেরাতের জীবনে কল্যাণের পথ দেখানোর প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। আমার কথা শুনলে আপনারা আল্লাহ তায়ালার রহমত ও বরকত লাভ করবেন।#
পার্সটুডে/মুজাহিদুল ইসলাম/ মো: আবু সাঈদ/ ১১
মন্তব্যসমূহ