(পর্ব ৩২) : বাধ্য হয়ে ইমাম হাসান (আ.) মুয়াবিয়ার সঙ্গে সন্ধি করেনএপ্রিল ২৩, ২০১৯ ১৮:২৩ Asia/Dhakaগত আসরে আমরা বলেছিলাম, ইমাম হাসান (আ.) যখন মুয়াবিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার আগে নিজ বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন তখন খারেজিরা ইমাম শিবিরে শুধু দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছড়িয়ে দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি একইসঙ্গে তারা ইমাম হাসানকে ‘কাফির’ ফতোয়া দিতেও দ্বিধা করেনি। এই ফতোয়া দেয়ার পর তারা ইমামের শিবিরে হামলা চালিয়ে সবকিছু লুট করে নিয়ে যায়।ইমাম হাসান (আ.) খারেজিদের হাতে এর চেয়ে বেশি অপদস্থ হওয়ার আশঙ্কায় নিজের একান্ত ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের সঙ্গে নিয়ে ঘোড়ায় চড়ে বসলেন। কিন্তু ঘোড়া ছোটা শুরু করতেই একজন খারেজি ইমামের শরীরে বর্শা নিক্ষেপ করে। বর্শার আঘাত ইমাম হাসান (আ.)’র পায়ের হাড় পর্যন্ত পৌঁছে যায়। সঙ্গীরা আহত ইমামকে সঙ্গে করে মাদায়েন অঞ্চলে ইমাম আলী (আ.)’র ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত সাঈদ বিন মাসুদ সাকাফির বাড়িতে নিয়ে যান। এদিকে ইমাম পক্ষের কিছু গোত্র প্রধান এই সুযোগে মুয়াবিয়ার কাছে গোপনে চিঠি পাঠিয়ে দেয়। ওই চিঠিতে তারা মুয়াবিয়াকে ইরাকের দিকে আরো অগ্রসর হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলে, তারা কাছাকাছি এলে ইমাম হাসানকে আটক করে মুয়াবিয়ার কাছে হস্তান্তর করা হবে। এই চিঠি পাওয়ার পর মুয়াবিয়া নিজের দূত পাঠিয়ে ইমাম হাসান (আ.)’র কাছে ওই চিঠি পৌঁছে দিয়ে তাকে বলেন: নিজের চারপাশে এই ধরনের বিশ্বাসঘাতক নিয়ে আপনি কীভাবে আমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে চান?মুয়াবিয়া জনগণের কাছে সমাদৃত কিছু ব্যক্তিকে ইমাম হাসান (আ.)’র কাছে পাঠায়। এসব লোক মাদায়েনে স্থাপিত তাবুতে ইমামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। এ অবস্থায় ইমাম হাসান (আ.) মুয়াবিয়ার সঙ্গে সন্ধি করতে বাধ্য হন। কারণ, তাঁর তিন প্রধান সেনাপতি হুমকি ও লোভের কাছে আত্মসমর্পন করে মুয়াবিয়ার বাহিনীতে যোগ দিয়েছিল, খারেজিরা তাঁকে কাফের ফতোয়া দেয়ায় ইমাম বাহিনীর মনোবল দুর্বল হয়ে পড়েছিল এবং গোত্র প্রধানরা গোপনে মুয়াবিয়ার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে মনোস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছিল। এদিকে ইমাম সন্ধি করতে সম্মত হওয়ার পর মুয়াবিয়ার প্রয়োজন ছিল শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করা। এ কারণে সে ইমাম হাসান (আ.)’র কাছে সাদা কাগজ পাঠিয়ে দিয়ে ঘোষণা করে, তাতে ইমাম যেসব শর্ত লিখবেন তার প্রত্যেকটি সে মেনে চলবে। ইমাম হাসান এই সুযোগের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করেন এবং অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সন্ধির শর্ত হিসেবে লিখে দিয়ে সেগুলো মেনে চলার ব্যাপারে মুয়াবিয়ার কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি নেন।সন্ধির প্রধান ধারা ছিল পাঁচটি। ১- মুয়াবিয়া পবিত্র কুরআন ও রাসূলের সুন্নত অনুযায়ী শাসনকাজ পরিচালনা করবে- এই শর্তে হাসান বিন আলী (আ.) শাসনক্ষমতার দাবি থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেবেন। ২- মুয়াবিয়ার মৃত্যুর পর হাসান বিন আলী (আ.) খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। তবে তার আগে ইমাম হাসানের কোনো ক্ষতি হলে হোসেইন বিন আলী (আ.) মুসলিম জাহানের শাসনক্ষমতা গ্রহণ করবেন এবং মুয়াবিয়া কাউকে নিজের স্থলাভিষিক্ত ঘোষণা করতে পারবে না। ৩- মসজিদে আমিরুল মু’মিনিন আলী (আ.)’র বিরুদ্ধে গালিগালাজ বন্ধ করতে হবে এবং তাঁর প্রশংসা করতে হবে। ৪- কুফার বাইতুল মালে যেসব সম্পদ রয়েছে সেগুলোর ওপর মুয়াবিয়া কোনো দাবি করতে পারবে না বরং এই সম্পদ ইমাম হাসান (আ.) মুসলমানদের স্বার্থে খরচ করবেন। এবং ৫- ‘দারাবগার্দ’ শহর থেকে অর্জিত খাজনার অর্থের একাংশ জামাল ও সিফফিনের যুদ্ধে ইমাম আলী (আ.)’র পক্ষে যুদ্ধ করে শহীদ হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারবর্গকে দিতে হবে। মুয়াবিয়া মহান আল্লাহকে হাজির নাজির জেনে এই সন্ধির প্রতিটি শর্ত মেনে চলতে সম্মত হয় এবং শাম বা সিরিয়ার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা সাক্ষী হিসেবে সন্ধিপত্রে স্বাক্ষর করেন।এই সন্ধি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় ইমাম হাসান (আ.) শক্তিশালী অবস্থানে থেকে সন্ধির শর্ত নির্ধারণ করেন। তিনি মুয়াবিয়াকে কোনো ছাড় দেননি এবং তাকে লিখে দিয়েছেন যে, ইমাম কোনোদিন তাকে আমিরুল মুমিনিন বলে সম্বোধন করবেন না। এ কারণে পরবর্তীতে মুয়াবিয়া উপলব্ধি করে এই সন্ধি মেনে চললে তার পক্ষে স্বাধীনভাবে শাসনকাজ পরিচালনা করা সম্ভব হবে না। তাই সে সন্ধি লঙ্ঘনের সিদ্ধান্ত নেয়। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য মুয়াবিয়া ‘নাখলিয়া’ নামক সেনাঘাঁটিতে যায় এবং সেখানে জুমার নামাজের খুতবায় ঘোষণা করে: আল্লাহর কসম আমি আপনাদের সঙ্গে এজন্য যুদ্ধ করিনি যে, আপনারা নামাজ পড়বেন, রোজা রাখবেন, যাকাত দেবেন ও হজ্ব পালন করবেন। কারণ, এসব কাজ আপনারা আগে থেকেই করতেন। আমি যুদ্ধ করেছি ক্ষমতা গ্রহণের জন্য এবং আল্লাহ আমার সে আকাঙ্ক্ষা পূরণ করেছেন। আপনারা জেনে রাখুন, আমি হাসান বিন আলীর সঙ্গে সন্ধি করেছি। কিন্তু এই মুহূর্তে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি ওই সন্ধি মানব না এবং এর কোনো শর্ত পূরণ করব না।নিঃসন্দেহে মুয়াবিয়া সন্ধির শর্তগুলো বাস্তবায়ন করলে ইমাম হাসান (আ.)’র কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যগুলো একে একে পূরণ হতো। মুয়াবিয়ার একমাত্র লক্ষ্য ক্ষমতা হলেও ইমাম শুধু চেয়েছিলেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলে দিক নির্দেশনা অনুযায়ী শাসনকাজ পরিচালিত হোক এবং শাসনকাজে উমাইয়ারা যেসব বেদআত ও কুসংষ্কার চালু করেছিল সেগুলোর অবসান ঘটুক।এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, ইসলামে শান্তি প্রতিষ্ঠা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং মানবতাবাদী এ ধর্মে যতটা সম্ভব যুদ্ধ এড়ানোর দিকনির্দেশনা রয়েছে। ইমাম হাসান যখন উপলব্ধি করেন যুদ্ধের মাধ্যমে কিছু অর্জন করা সম্ভব নয় তখন সন্ধি ও শান্তির পথ বেছে নেন। এ ছাড়া তিনি দেখতে পান, যুদ্ধ লেগে গেলে কোনো কিছু অর্জন করা ছাড়াই দু’পক্ষের হাজার হাজার মানুষ নিহত হবে। সেইসঙ্গে মুসলমানদের মধ্যকার গৃহযুদ্ধের সুযোগে ইসলামের শত্রুরা মুসলিম বিশ্বে আঘাত হানত। ইমাম হাসান (আ.) সন্ধি করে ইসলামের শত্রুদের সে মনোবাসনা ব্যর্থ করে দেন। সে সময় রোম সাম্রাজ্য মুসলিম বাহিনীর হাতে একাধিকবার শক্ত মার খেয়েছিল এবং তারা সে পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়ার জন্য সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। ইমাম হাসান (আ.) ও মুয়াবিয়ার বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ লেগে গেলে রোমের খ্রিস্টান বাহিনী অবশ্যই প্রতিশোধমূলক হামলা চালাত। সেই পরিস্থিতিতে অত্যন্ত দূরদর্শী সিদ্ধান্ত নিয়ে ইমাম হাসান (আ.) মুয়াবিয়ার সঙ্গে সন্ধি করেন।ওদিকে সন্ধির শর্ত লঙ্ঘন করে মুয়াবিয়া নিজের অযোগ্য পুত্র ইয়াজিদকে নিজের স্থলাভিষিক্ত ঘোষণা করে। কিন্তু ইমাম হাসান (আ.) বেঁচে থাকতে এই দুরভিসন্ধি বাস্তবায়ন সম্ভব ছিল না। এ কারণে মুয়াবিয়া ইমাম হাসানের অন্যতম স্ত্রী জা’দা’কে এক লাখ দিরহাম ঘুষ প্রদানের মাধ্যমে তাকে দিয়ে ইমামকে শহীদ করায়। ইমাম হাসান (আ.)’র শাহাদাতের পর ইমামতের গুরুদায়িত্ব ইমাম হোসেইন (আ.)-এর ওপর অর্পিত হয়।#পার্সটুডে/মুজাহিদুল ইসলাম/ মো: আবু সাঈদ/ ২৩
(পর্ব ৩২) : বাধ্য হয়ে ইমাম হাসান (আ.) মুয়াবিয়ার সঙ্গে সন্ধি করেন
এপ্রিল ২৩, ২০১৯ ১৮:২৩ Asia/Dhaka
গত আসরে আমরা বলেছিলাম, ইমাম হাসান (আ.) যখন মুয়াবিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার আগে নিজ বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন তখন খারেজিরা ইমাম শিবিরে শুধু দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছড়িয়ে দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি একইসঙ্গে তারা ইমাম হাসানকে ‘কাফির’ ফতোয়া দিতেও দ্বিধা করেনি। এই ফতোয়া দেয়ার পর তারা ইমামের শিবিরে হামলা চালিয়ে সবকিছু লুট করে নিয়ে যায়।
ইমাম হাসান (আ.) খারেজিদের হাতে এর চেয়ে বেশি অপদস্থ হওয়ার আশঙ্কায় নিজের একান্ত ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের সঙ্গে নিয়ে ঘোড়ায় চড়ে বসলেন। কিন্তু ঘোড়া ছোটা শুরু করতেই একজন খারেজি ইমামের শরীরে বর্শা নিক্ষেপ করে। বর্শার আঘাত ইমাম হাসান (আ.)’র পায়ের হাড় পর্যন্ত পৌঁছে যায়। সঙ্গীরা আহত ইমামকে সঙ্গে করে মাদায়েন অঞ্চলে ইমাম আলী (আ.)’র ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত সাঈদ বিন মাসুদ সাকাফির বাড়িতে নিয়ে যান। এদিকে ইমাম পক্ষের কিছু গোত্র প্রধান এই সুযোগে মুয়াবিয়ার কাছে গোপনে চিঠি পাঠিয়ে দেয়। ওই চিঠিতে তারা মুয়াবিয়াকে ইরাকের দিকে আরো অগ্রসর হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলে, তারা কাছাকাছি এলে ইমাম হাসানকে আটক করে মুয়াবিয়ার কাছে হস্তান্তর করা হবে। এই চিঠি পাওয়ার পর মুয়াবিয়া নিজের দূত পাঠিয়ে ইমাম হাসান (আ.)’র কাছে ওই চিঠি পৌঁছে দিয়ে তাকে বলেন: নিজের চারপাশে এই ধরনের বিশ্বাসঘাতক নিয়ে আপনি কীভাবে আমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে চান?
মুয়াবিয়া জনগণের কাছে সমাদৃত কিছু ব্যক্তিকে ইমাম হাসান (আ.)’র কাছে পাঠায়। এসব লোক মাদায়েনে স্থাপিত তাবুতে ইমামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। এ অবস্থায় ইমাম হাসান (আ.) মুয়াবিয়ার সঙ্গে সন্ধি করতে বাধ্য হন। কারণ, তাঁর তিন প্রধান সেনাপতি হুমকি ও লোভের কাছে আত্মসমর্পন করে মুয়াবিয়ার বাহিনীতে যোগ দিয়েছিল, খারেজিরা তাঁকে কাফের ফতোয়া দেয়ায় ইমাম বাহিনীর মনোবল দুর্বল হয়ে পড়েছিল এবং গোত্র প্রধানরা গোপনে মুয়াবিয়ার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে মনোস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছিল। এদিকে ইমাম সন্ধি করতে সম্মত হওয়ার পর মুয়াবিয়ার প্রয়োজন ছিল শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করা। এ কারণে সে ইমাম হাসান (আ.)’র কাছে সাদা কাগজ পাঠিয়ে দিয়ে ঘোষণা করে, তাতে ইমাম যেসব শর্ত লিখবেন তার প্রত্যেকটি সে মেনে চলবে। ইমাম হাসান এই সুযোগের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করেন এবং অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সন্ধির শর্ত হিসেবে লিখে দিয়ে সেগুলো মেনে চলার ব্যাপারে মুয়াবিয়ার কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি নেন।
সন্ধির প্রধান ধারা ছিল পাঁচটি। ১- মুয়াবিয়া পবিত্র কুরআন ও রাসূলের সুন্নত অনুযায়ী শাসনকাজ পরিচালনা করবে- এই শর্তে হাসান বিন আলী (আ.) শাসনক্ষমতার দাবি থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেবেন। ২- মুয়াবিয়ার মৃত্যুর পর হাসান বিন আলী (আ.) খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। তবে তার আগে ইমাম হাসানের কোনো ক্ষতি হলে হোসেইন বিন আলী (আ.) মুসলিম জাহানের শাসনক্ষমতা গ্রহণ করবেন এবং মুয়াবিয়া কাউকে নিজের স্থলাভিষিক্ত ঘোষণা করতে পারবে না। ৩- মসজিদে আমিরুল মু’মিনিন আলী (আ.)’র বিরুদ্ধে গালিগালাজ বন্ধ করতে হবে এবং তাঁর প্রশংসা করতে হবে। ৪- কুফার বাইতুল মালে যেসব সম্পদ রয়েছে সেগুলোর ওপর মুয়াবিয়া কোনো দাবি করতে পারবে না বরং এই সম্পদ ইমাম হাসান (আ.) মুসলমানদের স্বার্থে খরচ করবেন। এবং ৫- ‘দারাবগার্দ’ শহর থেকে অর্জিত খাজনার অর্থের একাংশ জামাল ও সিফফিনের যুদ্ধে ইমাম আলী (আ.)’র পক্ষে যুদ্ধ করে শহীদ হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারবর্গকে দিতে হবে। মুয়াবিয়া মহান আল্লাহকে হাজির নাজির জেনে এই সন্ধির প্রতিটি শর্ত মেনে চলতে সম্মত হয় এবং শাম বা সিরিয়ার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা সাক্ষী হিসেবে সন্ধিপত্রে স্বাক্ষর করেন।
এই সন্ধি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় ইমাম হাসান (আ.) শক্তিশালী অবস্থানে থেকে সন্ধির শর্ত নির্ধারণ করেন। তিনি মুয়াবিয়াকে কোনো ছাড় দেননি এবং তাকে লিখে দিয়েছেন যে, ইমাম কোনোদিন তাকে আমিরুল মুমিনিন বলে সম্বোধন করবেন না। এ কারণে পরবর্তীতে মুয়াবিয়া উপলব্ধি করে এই সন্ধি মেনে চললে তার পক্ষে স্বাধীনভাবে শাসনকাজ পরিচালনা করা সম্ভব হবে না। তাই সে সন্ধি লঙ্ঘনের সিদ্ধান্ত নেয়। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য মুয়াবিয়া ‘নাখলিয়া’ নামক সেনাঘাঁটিতে যায় এবং সেখানে জুমার নামাজের খুতবায় ঘোষণা করে: আল্লাহর কসম আমি আপনাদের সঙ্গে এজন্য যুদ্ধ করিনি যে, আপনারা নামাজ পড়বেন, রোজা রাখবেন, যাকাত দেবেন ও হজ্ব পালন করবেন। কারণ, এসব কাজ আপনারা আগে থেকেই করতেন। আমি যুদ্ধ করেছি ক্ষমতা গ্রহণের জন্য এবং আল্লাহ আমার সে আকাঙ্ক্ষা পূরণ করেছেন। আপনারা জেনে রাখুন, আমি হাসান বিন আলীর সঙ্গে সন্ধি করেছি। কিন্তু এই মুহূর্তে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি ওই সন্ধি মানব না এবং এর কোনো শর্ত পূরণ করব না।
নিঃসন্দেহে মুয়াবিয়া সন্ধির শর্তগুলো বাস্তবায়ন করলে ইমাম হাসান (আ.)’র কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যগুলো একে একে পূরণ হতো। মুয়াবিয়ার একমাত্র লক্ষ্য ক্ষমতা হলেও ইমাম শুধু চেয়েছিলেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলে দিক নির্দেশনা অনুযায়ী শাসনকাজ পরিচালিত হোক এবং শাসনকাজে উমাইয়ারা যেসব বেদআত ও কুসংষ্কার চালু করেছিল সেগুলোর অবসান ঘটুক।
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, ইসলামে শান্তি প্রতিষ্ঠা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং মানবতাবাদী এ ধর্মে যতটা সম্ভব যুদ্ধ এড়ানোর দিকনির্দেশনা রয়েছে। ইমাম হাসান যখন উপলব্ধি করেন যুদ্ধের মাধ্যমে কিছু অর্জন করা সম্ভব নয় তখন সন্ধি ও শান্তির পথ বেছে নেন। এ ছাড়া তিনি দেখতে পান, যুদ্ধ লেগে গেলে কোনো কিছু অর্জন করা ছাড়াই দু’পক্ষের হাজার হাজার মানুষ নিহত হবে। সেইসঙ্গে মুসলমানদের মধ্যকার গৃহযুদ্ধের সুযোগে ইসলামের শত্রুরা মুসলিম বিশ্বে আঘাত হানত। ইমাম হাসান (আ.) সন্ধি করে ইসলামের শত্রুদের সে মনোবাসনা ব্যর্থ করে দেন। সে সময় রোম সাম্রাজ্য মুসলিম বাহিনীর হাতে একাধিকবার শক্ত মার খেয়েছিল এবং তারা সে পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়ার জন্য সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। ইমাম হাসান (আ.) ও মুয়াবিয়ার বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ লেগে গেলে রোমের খ্রিস্টান বাহিনী অবশ্যই প্রতিশোধমূলক হামলা চালাত। সেই পরিস্থিতিতে অত্যন্ত দূরদর্শী সিদ্ধান্ত নিয়ে ইমাম হাসান (আ.) মুয়াবিয়ার সঙ্গে সন্ধি করেন।
ওদিকে সন্ধির শর্ত লঙ্ঘন করে মুয়াবিয়া নিজের অযোগ্য পুত্র ইয়াজিদকে নিজের স্থলাভিষিক্ত ঘোষণা করে। কিন্তু ইমাম হাসান (আ.) বেঁচে থাকতে এই দুরভিসন্ধি বাস্তবায়ন সম্ভব ছিল না। এ কারণে মুয়াবিয়া ইমাম হাসানের অন্যতম স্ত্রী জা’দা’কে এক লাখ দিরহাম ঘুষ প্রদানের মাধ্যমে তাকে দিয়ে ইমামকে শহীদ করায়। ইমাম হাসান (আ.)’র শাহাদাতের পর ইমামতের গুরুদায়িত্ব ইমাম হোসেইন (আ.)-এর ওপর অর্পিত হয়।#
পার্সটুডে/মুজাহিদুল ইসলাম/ মো: আবু সাঈদ/ ২৩
মন্তব্যসমূহ