(পর্ব ৩০): হজরত ইমাম হাসান (আ.) সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনাএপ্রিল ০৭, ২০১৯ ১৫:৩৪ Asia/Dhakaঐশী দিশারী (পর্ব ৩০): হজরত ইমাম হাসান (আ.) সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা হযরত আলী (আ.)-এর খেলাফতের যুগে ইমাম হাসান (আ.) ছিলেন পরিপূর্ণ যুবক। তিনি আলী (আ.)কে শুধু পিতা হিসেবে নয় সেইসঙ্গে একজন ইমাম ও নেতা হিসেবে সম্মান দেখাতেন এবং তাঁর আনুগত্য করতেন।অন্যদিকে সন্তান হাসানের যোগ্যতা ও প্রতিভা সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল ছিলেন আলী (আ.)। তিনি জঙ্গে জামাল বা উষ্ট্রের যুদ্ধের সময় কুফাবাসীর সমর্থন লাভের জন্য আম্মার ইবনে ইয়াসিরের সঙ্গে পুত্র হাসানকে কুফায় পাঠিয়েছিলেন। তাঁরা কুফায় পৌঁছালে সেখানকার মানুষ ইমাম হাসান (আ.)কে দেখার জন্য ছুটে আসে। এ সময় হাসান (আ.) মহান আল্লাহর প্রশংসা এবং বিশ্বনবী (সা.)-এর শানে দরুদ পেশ করে কুফাবাসীকে যুদ্ধের ময়দানে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন:হে লোকসকল! আপনাদেরকে আল্লাহ তায়ালা, তাঁর কিতাব ও রাসূলের সুন্নতের দিকে আহ্বান এবং বর্তমানে সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তি হযরত আলী (আ.)-এর হাতে বায়াত গ্রহণ করার আমন্ত্রণ জানাতে আমরা এখানে ছুটে এসেছি। পবিত্র কুরআনে হযরত আলী’র প্রশংসা করা হয়েছে এবং রাসূলের সুন্নত নিজের জীবনে বাস্তবায়নে তাঁর চেয়ে অগ্রগামী কেউ নেই। তিনি এমন এক ব্যক্তি যার সঙ্গে রয়েছে রাসূলের ভ্রাতৃত্বের পাশাপাশি আত্মীয়তার সম্পর্ক।ইমাম হাসান (আ.) আরো বলেন: আপনাদেরকে তাঁর বাহিনীতে যোগদান করে জঙ্গে জামালের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারীদেরকে উপযুক্ত শাস্তি দিয়ে বিজয় নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছি। হে লোকসকল! আপনারা সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করার ফরজ দায়িত্ব পালনের জন্য ঈমানদার ব্যক্তিদের দলে শামিল হয়ে যান। তাহলে আল্লাহ তায়ালা আপনাদের সাহায্য করবেন।ইমাম হাসান (আ.) শুধু সত্যের পথে জনগণকে সচেতন করে তোলার কাজই করেননি সেইসঙ্গে ইসলামের স্পর্শকাতর সময়গুলোতে কাফেরদের বিরুদ্ধে তরবারি ধরতেও সিদ্ধহস্ত ছিলেন। জঙ্গে জামাল বা উষ্ট্রের যুদ্ধে শত্রু বাহিনীকে ঘায়েল করার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান ছিল অসামান্য। মুয়াবিয়ার বাহিনীর বিরুদ্ধে সিফফিনের যুদ্ধেও হযরত আলী (আ.)’র অন্যতম কমান্ডার ছিলেন ইমাম হাসান (আ.)। কুফায় হৃদয়স্পর্শী ভাষণ দিয়ে সিফফিনের যুদ্ধের জন্য অনেক সৈন্য সংগ্রহ করেছিলেন তিনি। জঙ্গে জামাল ও সিফফিনের যুদ্ধের পাশাপাশি নাহরাওয়ানে খারেজিদের বিরুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধেও ইমাম হাসান (আ.) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।খারেজিরা ছিল ঈমানের দাবিদার এমন একদল লোক যারা ইমাম আলী (আ.)’র শত্রুদের দ্বারা বিভ্রান্ত হয়ে ইসলামের মূল শিক্ষা থেকে দূরে সরে গিয়েছিল। খারেজিদেরকে বর্তমান যুগের উগ্র তাকফিরি জঙ্গি গোষ্ঠী দায়েশ বা আইএসের সঙ্গে তুলনা করা যায়। বর্তমানে যেমন এই জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামের লেবাস পরিধান করে ইসলামের ক্ষতি করার জন্য মুসলমানদের শত্রুদের ক্রীড়নক হিসেবে কাজ করছে খারেজিরাও ছিল ঠিক সেরকম। মূর্খ এই দলটি ইমাম হাসান (আ.)’র যুগে ইমামকে সহযোগিতা করার পরিবর্তে ইমামের শত্রুদের সঙ্গে হাত মেলায়। মুয়াবিয়ার বিরুদ্ধে ইমাম হাসান (আ.)’র পরিকল্পনাগুলো ব্যর্থ করে দেয়ার ক্ষেত্রে খারেজিদের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল।ইমাম আলী (আ.) মুসলিমদের নেতা হিসেবে শাসনক্ষমতা হাতে নেয়ার পর এ ধরনের নির্বোধ লোকদের কারণে তিনি গোটা শাসনকাল অসমাপ্ত যুদ্ধ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে বাধ্য হন। এক পর্যায়ে ইবনে মুলজাম নামক এক খারেজির বিষমাখা তরবারির আঘাতে আহত হন এবং তিনদিন পর শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করেন। ইবনে মুলজামকে আটক করে আলী (আ.)’র কাছে আনা হলে ইমাম হাসান (আ.) তাকে উদ্দেশ করে বলেন: “তোমার প্রতি অভিশাপ হে আল্লাহর শত্রু, হে রহমত বঞ্চিত খোদাদ্রোহী, তুমি কিভাবে আমিরুল মুমিনিনকে আঘাত করলে? যে আমিরুল মুমেনিন তোমাকে আশ্রয় দিয়ে নিজের কাছে টেনে নিলেন তাকে হত্যা করে এর প্রতিদান দিলে? তিনি তোমার কি ক্ষতি করেছিলেন যে, তুমি তাকে শহীদ করলে?” এ প্রশ্নের উত্তরে ঘাতক ইবনে মুলজাম নিজের অপরাধ স্বীকার করে বলে ওঠে: “হে রাসূলের সন্তান, “যে ব্যক্তি জাহান্নামের মধ্যে নিক্ষিপ্ত হয়েছে তাকে আপনি কীভাবে আগুনের লেলিহান শিখা থেকে রক্ষা করবেন?”এ সময় দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে ইমাম হাসান ডুকরে কেঁদে ওঠেন এবং মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতর পিতার কপালে চুমু খেয়ে ইবনে মুলজামকে দেখিয়ে বলেন: এই হচ্ছে আল্লাহ এবং আপনার শত্রু। সে এখন আমাদের হাত বন্দি। একথা শোনার কিছুক্ষণ পর মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতর আলী (আ.) চোখ খোলেন। তিনি ইবনে মুলজামকে উদ্দেশ করে বলেন: তুমি অনেক বড় পাপ ও অপরাধ করে ফেলেছ। আমি কি তোমার জন্য খারাপ নেতা ছিলাম যে, তুমি আমার রক্তে নিজের হাত রঞ্জিত করেছ? আমি কি তোমার প্রতি দয়া দেখাইনি? আমি কি তোমার কোনো উপকার করিনি? তোমার বিরুদ্ধে অনেকে আমার কাছে নালিশ জানিয়েছিল। কিন্তু তাদের কথা উপেক্ষা করে তোমাকে মুক্ত রেখেছিলাম। যদিও আমি জানতাম নির্বুদ্ধিতার কারণে তুমি আমাকে হত্যা করতে পারো। কিন্তু তারপরও আমি চেষ্টা করেছিলাম তোমাকে বিভ্রান্তির হাত থেকে রক্ষা করতে।এরপর হযরত আলী (আ.) নিজের বড় সন্তান ইমাম হাসানের দিকে তাকিয়ে বলেন: এই বন্দির সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে। তাকে দয়া দেখাবে। এ সময় ইমাম হাসান বলেন:এত বড় অপরাধ করার পরও সে কি ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য? জবাবে আলী (আ.) বলেন: হ্যা বাবা, আমরা এমন এক বংশের উত্তরসূরি ক্ষমা যাদের রক্ত ও অস্থিমজ্জার সঙ্গে মিশে রয়েছে।হযরত আলী (আ.)’র বেদনাবিধুর শাহাদাতের পর ইমাম হাসান (আ.) মুসলিম সমাজের নেতৃত্বদানের গুরুত্বদায়িত্ব গ্রহণ করেন। এ সময় উমাই শাসকরা রাসূলের যুগের সাধাসিধে জীবনযাপন ছেড়ে প্রাসাদে চাকচিক্যময় জীবনযাপন শুরু করে। নবীজী সাম্যের যে বাণী নিয়ে এসেছিলেন তা ক্রমশ মিইয়ে যেতে থাকে এবং সমাজে বর্ণ ও শ্রেণিবৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করে।আবু যর গিফারির মতো রাসূলের প্রিয় সাহাবীকে মরুভূমিতে নির্বাসনে পাঠানো হয় এবং মেইসাম তাম্মারকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়। মুয়াবিয়ার নির্দেশে হযরত আলী (আ.)’র অনুসারীদের লোভ অথবা হুমকির মাধ্যমে বশীভূত করা হয় এবং সরকারি পদে থাকা এ ধরনের ব্যক্তিদের বহিস্কার করা হয়।এ অবস্থায় মুসলিম সমাজে ইসলামী রীতি পরিপন্থি এসব কাজ সহ্য করা ইমাম হাসান (আ.)’র পক্ষে সম্ভব ছিল না। তিনি মুয়াবিয়ার শাসনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানান। কুফার মসজিদে জনগণকে সমবেত হওয়ার নির্দেশ দেন। তবে তার আগে মুয়াবিয়ার সঙ্গে ইমাম হাসান (আ.)’র কয়েকবার চিঠি বিনিময় হয়।#পার্সটুডে/মুজাহিদুল ইসলাম/ মো: আবু সাঈদ/ ১১
(পর্ব ৩০): হজরত ইমাম হাসান (আ.) সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা
হযরত আলী (আ.)-এর খেলাফতের যুগে ইমাম হাসান (আ.) ছিলেন পরিপূর্ণ যুবক। তিনি আলী (আ.)কে শুধু পিতা হিসেবে নয় সেইসঙ্গে একজন ইমাম ও নেতা হিসেবে সম্মান দেখাতেন এবং তাঁর আনুগত্য করতেন।
অন্যদিকে সন্তান হাসানের যোগ্যতা ও প্রতিভা সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল ছিলেন আলী (আ.)। তিনি জঙ্গে জামাল বা উষ্ট্রের যুদ্ধের সময় কুফাবাসীর সমর্থন লাভের জন্য আম্মার ইবনে ইয়াসিরের সঙ্গে পুত্র হাসানকে কুফায় পাঠিয়েছিলেন। তাঁরা কুফায় পৌঁছালে সেখানকার মানুষ ইমাম হাসান (আ.)কে দেখার জন্য ছুটে আসে। এ সময় হাসান (আ.) মহান আল্লাহর প্রশংসা এবং বিশ্বনবী (সা.)-এর শানে দরুদ পেশ করে কুফাবাসীকে যুদ্ধের ময়দানে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন:
হে লোকসকল! আপনাদেরকে আল্লাহ তায়ালা, তাঁর কিতাব ও রাসূলের সুন্নতের দিকে আহ্বান এবং বর্তমানে সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তি হযরত আলী (আ.)-এর হাতে বায়াত গ্রহণ করার আমন্ত্রণ জানাতে আমরা এখানে ছুটে এসেছি। পবিত্র কুরআনে হযরত আলী’র প্রশংসা করা হয়েছে এবং রাসূলের সুন্নত নিজের জীবনে বাস্তবায়নে তাঁর চেয়ে অগ্রগামী কেউ নেই। তিনি এমন এক ব্যক্তি যার সঙ্গে রয়েছে রাসূলের ভ্রাতৃত্বের পাশাপাশি আত্মীয়তার সম্পর্ক।
ইমাম হাসান (আ.) আরো বলেন: আপনাদেরকে তাঁর বাহিনীতে যোগদান করে জঙ্গে জামালের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারীদেরকে উপযুক্ত শাস্তি দিয়ে বিজয় নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছি। হে লোকসকল! আপনারা সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করার ফরজ দায়িত্ব পালনের জন্য ঈমানদার ব্যক্তিদের দলে শামিল হয়ে যান। তাহলে আল্লাহ তায়ালা আপনাদের সাহায্য করবেন।
ইমাম হাসান (আ.) শুধু সত্যের পথে জনগণকে সচেতন করে তোলার কাজই করেননি সেইসঙ্গে ইসলামের স্পর্শকাতর সময়গুলোতে কাফেরদের বিরুদ্ধে তরবারি ধরতেও সিদ্ধহস্ত ছিলেন। জঙ্গে জামাল বা উষ্ট্রের যুদ্ধে শত্রু বাহিনীকে ঘায়েল করার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান ছিল অসামান্য। মুয়াবিয়ার বাহিনীর বিরুদ্ধে সিফফিনের যুদ্ধেও হযরত আলী (আ.)’র অন্যতম কমান্ডার ছিলেন ইমাম হাসান (আ.)। কুফায় হৃদয়স্পর্শী ভাষণ দিয়ে সিফফিনের যুদ্ধের জন্য অনেক সৈন্য সংগ্রহ করেছিলেন তিনি। জঙ্গে জামাল ও সিফফিনের যুদ্ধের পাশাপাশি নাহরাওয়ানে খারেজিদের বিরুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধেও ইমাম হাসান (আ.) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
খারেজিরা ছিল ঈমানের দাবিদার এমন একদল লোক যারা ইমাম আলী (আ.)’র শত্রুদের দ্বারা বিভ্রান্ত হয়ে ইসলামের মূল শিক্ষা থেকে দূরে সরে গিয়েছিল। খারেজিদেরকে বর্তমান যুগের উগ্র তাকফিরি জঙ্গি গোষ্ঠী দায়েশ বা আইএসের সঙ্গে তুলনা করা যায়। বর্তমানে যেমন এই জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামের লেবাস পরিধান করে ইসলামের ক্ষতি করার জন্য মুসলমানদের শত্রুদের ক্রীড়নক হিসেবে কাজ করছে খারেজিরাও ছিল ঠিক সেরকম। মূর্খ এই দলটি ইমাম হাসান (আ.)’র যুগে ইমামকে সহযোগিতা করার পরিবর্তে ইমামের শত্রুদের সঙ্গে হাত মেলায়। মুয়াবিয়ার বিরুদ্ধে ইমাম হাসান (আ.)’র পরিকল্পনাগুলো ব্যর্থ করে দেয়ার ক্ষেত্রে খারেজিদের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল।
ইমাম আলী (আ.) মুসলিমদের নেতা হিসেবে শাসনক্ষমতা হাতে নেয়ার পর এ ধরনের নির্বোধ লোকদের কারণে তিনি গোটা শাসনকাল অসমাপ্ত যুদ্ধ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে বাধ্য হন। এক পর্যায়ে ইবনে মুলজাম নামক এক খারেজির বিষমাখা তরবারির আঘাতে আহত হন এবং তিনদিন পর শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করেন। ইবনে মুলজামকে আটক করে আলী (আ.)’র কাছে আনা হলে ইমাম হাসান (আ.) তাকে উদ্দেশ করে বলেন: “তোমার প্রতি অভিশাপ হে আল্লাহর শত্রু, হে রহমত বঞ্চিত খোদাদ্রোহী, তুমি কিভাবে আমিরুল মুমিনিনকে আঘাত করলে? যে আমিরুল মুমেনিন তোমাকে আশ্রয় দিয়ে নিজের কাছে টেনে নিলেন তাকে হত্যা করে এর প্রতিদান দিলে? তিনি তোমার কি ক্ষতি করেছিলেন যে, তুমি তাকে শহীদ করলে?” এ প্রশ্নের উত্তরে ঘাতক ইবনে মুলজাম নিজের অপরাধ স্বীকার করে বলে ওঠে: “হে রাসূলের সন্তান, “যে ব্যক্তি জাহান্নামের মধ্যে নিক্ষিপ্ত হয়েছে তাকে আপনি কীভাবে আগুনের লেলিহান শিখা থেকে রক্ষা করবেন?”
এ সময় দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে ইমাম হাসান ডুকরে কেঁদে ওঠেন এবং মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতর পিতার কপালে চুমু খেয়ে ইবনে মুলজামকে দেখিয়ে বলেন: এই হচ্ছে আল্লাহ এবং আপনার শত্রু। সে এখন আমাদের হাত বন্দি। একথা শোনার কিছুক্ষণ পর মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতর আলী (আ.) চোখ খোলেন। তিনি ইবনে মুলজামকে উদ্দেশ করে বলেন: তুমি অনেক বড় পাপ ও অপরাধ করে ফেলেছ। আমি কি তোমার জন্য খারাপ নেতা ছিলাম যে, তুমি আমার রক্তে নিজের হাত রঞ্জিত করেছ? আমি কি তোমার প্রতি দয়া দেখাইনি? আমি কি তোমার কোনো উপকার করিনি? তোমার বিরুদ্ধে অনেকে আমার কাছে নালিশ জানিয়েছিল। কিন্তু তাদের কথা উপেক্ষা করে তোমাকে মুক্ত রেখেছিলাম। যদিও আমি জানতাম নির্বুদ্ধিতার কারণে তুমি আমাকে হত্যা করতে পারো। কিন্তু তারপরও আমি চেষ্টা করেছিলাম তোমাকে বিভ্রান্তির হাত থেকে রক্ষা করতে।
এরপর হযরত আলী (আ.) নিজের বড় সন্তান ইমাম হাসানের দিকে তাকিয়ে বলেন: এই বন্দির সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে। তাকে দয়া দেখাবে। এ সময় ইমাম হাসান বলেন:এত বড় অপরাধ করার পরও সে কি ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য? জবাবে আলী (আ.) বলেন: হ্যা বাবা, আমরা এমন এক বংশের উত্তরসূরি ক্ষমা যাদের রক্ত ও অস্থিমজ্জার সঙ্গে মিশে রয়েছে।
হযরত আলী (আ.)’র বেদনাবিধুর শাহাদাতের পর ইমাম হাসান (আ.) মুসলিম সমাজের নেতৃত্বদানের গুরুত্বদায়িত্ব গ্রহণ করেন। এ সময় উমাই শাসকরা রাসূলের যুগের সাধাসিধে জীবনযাপন ছেড়ে প্রাসাদে চাকচিক্যময় জীবনযাপন শুরু করে। নবীজী সাম্যের যে বাণী নিয়ে এসেছিলেন তা ক্রমশ মিইয়ে যেতে থাকে এবং সমাজে বর্ণ ও শ্রেণিবৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করে।
আবু যর গিফারির মতো রাসূলের প্রিয় সাহাবীকে মরুভূমিতে নির্বাসনে পাঠানো হয় এবং মেইসাম তাম্মারকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়। মুয়াবিয়ার নির্দেশে হযরত আলী (আ.)’র অনুসারীদের লোভ অথবা হুমকির মাধ্যমে বশীভূত করা হয় এবং সরকারি পদে থাকা এ ধরনের ব্যক্তিদের বহিস্কার করা হয়।
এ অবস্থায় মুসলিম সমাজে ইসলামী রীতি পরিপন্থি এসব কাজ সহ্য করা ইমাম হাসান (আ.)’র পক্ষে সম্ভব ছিল না। তিনি মুয়াবিয়ার শাসনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানান। কুফার মসজিদে জনগণকে সমবেত হওয়ার নির্দেশ দেন। তবে তার আগে মুয়াবিয়ার সঙ্গে ইমাম হাসান (আ.)’র কয়েকবার চিঠি বিনিময় হয়।#
পার্সটুডে/মুজাহিদুল ইসলাম/ মো: আবু সাঈদ/ ১১
মন্তব্যসমূহ