(পর্ব ৩৩): ইমাম হোসেইন (আ.)’র জীবনী নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনামে ০২, ২০১৯ ১৭:৩৯ Asia/Dhakaচতুর্থ হিজরির ৩ শাবান হযরত আলী (আ.) ও ফাতিমা জাহরা সালামুল্লাহি আলাইহার ঘর আলোকিত করে তাঁদের দ্বিতীয় সন্তান ইমাম হোসেইন (আ.) জন্মগ্রহণ করেন।মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এ খুশির খবর শুনে প্রিয় দৌহিত্রকে দেখতে যান। নবজাতককে এক টুকরো কাপড়ে পেঁচিয়ে নবীজীর কোলে দিলে তিনি ইমাম হোসেইনের ডান কানে আজান এবং বাম কানে ইকামত দেন। রাসূলের এই সুন্নত পালন করে আজও মুসলমানদের ঘরে সন্তান জন্ম নিলে নবজাতকের ডান কানে আজান এবং বাম কানে ইকামত শোনানো হয়। নবীজী (সা.) তার প্রিয় দৌহিত্রের নাম রাখে হোসেইন।সালমান ফারসি বর্ণনা করেন: একবার রাসূলুল্লাহ (সা.)’র খেদমতে হাজির হয়ে দেখি তিনি হাসান ও হোসেইন আলাইহিমুস সালামকে খাবার খাওয়াচ্ছিলেন। দুই দৌহিত্রকে খাবার খাওয়ানো শেষ হওয়ার পর নবীজী হাসানকে কাঁধে এবং হোসেইনকে নিজের কোলের উপর বসান। এরপর প্রশ্ন করেন: হে সালমান! তুমি কি এঁদেরকে ভালোবাসো? আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসূল! আপনার কাছে যারা এত প্রিয় আমি কীভাবে তাদেরকে ভালো না বেসে থাকতে পারি? নবীজী বলেন: “হে সালমান! যে কেউ এঁদেরকে ভালোবাসবে সে যেন আমাকে ভালোবাসল এবং যে আমাকে ভালোবাসল সে আল্লাহকে ভালোবাসল। রাসূলুল্লাহ (সা.) এরপর হোসেইন (আ.)’র কাঁধে হাত রেখে বলেন: সে হচ্ছে ইমামের সন্তান ইমাম। তার বংশে নয়জন নিষ্পাপ ইমাম আসবে এবং তাদের নবমজন হবে কায়েম বা অভ্যুত্থানকারী।এ সম্পর্কে প্রখ্যাত মুফাসসিরে কুরআন ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন: আলী আমার স্থলাভিষিক্ত, তার স্ত্রী ও আমার কন্যা ফাতিমা দোজাহানের নারীদের নেত্রী এবং আমার দৌহিত্র হাসান ও হোসেইন জান্নাতে যুবকদের সর্দার। যারা তাদেরকে ভালোবাসবে তারা যেন আমাকেই ভালোবাসল এবং যারা তাদের সঙ্গে শত্রুতা করে তারা যেন আমার সঙ্গে শত্রুতা করল। যারা তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরবে তারা যেন আমার বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরল, যারা তাদের প্রতি অবিচার করবে তারা যেন আমার প্রতি অবিচার করল এবং যারা তাদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে তারা যেন আমার সঙ্গে সদাচারণ করল। যে ব্যক্তি তাদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে মহান আল্লাহ তার সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করবেন এবং যে ব্যক্তি তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে আল্লাহ তায়ালা তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবেন। তাদেরকে যে ব্যক্তি সাহায্য করবে মহান আল্লাহ তাকে সাহায্য করবেন এবং যে ব্যক্তি তাদের প্রতি ভ্রূক্ষেপহীন আল্লাহ তায়ালাও তার প্রতি দৃষ্টিপাত করবেন না। এ ছাড়া রাসূলুল্লাহ (সা.) অন্য এক হাদিসে বলেছেন: “হোসেইন আমা হতে এবং আমি হোসেইন হতে।” নবীজীর এ বক্তব্য শুধু রক্তের বন্ধনের প্রতি ইশারা নয় বরং বিশ্বাস, আধ্যাত্মিকতা, চিন্তাদর্শন ও নেক আমলের দিক দিয়ে সত্যিই ইমাম হোসেইন (আ.) ছিলেন বিশ্বনবী (সা.)’র একনিষ্ঠ অনুসারী। কারবালার ময়দানে এজিদের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার সময় এ বিষয়টির প্রতি ইঙ্গিত করে ইমাম হোসেইন (আ.) বলেন: “...আমি এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে আমার নানা রাসূলে খোদা (সা.) ও পিতা আলী ইবনে আবিতালেবকে অনুসরণ করেছি।” এ ছাড়া যখন ইমাম হোসেইনকে এজিদের হাতে বায়াত গ্রহণ অথবা শাহাদাতের যেকোনো একটি পথ বেছে নিতে বলা হয় তখন তিনি বলেন: “আমি যদি এজিদের হাতে বায়াত নিয়ে অমর্যাদাকর কাজ করে বসি তাহলে আল্লাহ, তাঁর রাসূল, খাঁটি মুমিনগণ ও যে ইসলামের ছায়াতলে বড় হয়েছি তাদের সবাই অসন্তুষ্ট হবে।” কাজেই দেখা যাচ্ছে, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইমাম হোসেইন (আ.)’র অনুকরণীয় আদর্শ ছিলেন বিশ্বনবী (সা.)। হয়ত এ কারণেই বলা হয়, ইসলামের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নবীজীর হাতে এবং ইমাম হোসেইনের শাহাদাত সে ভিত্তিকে চিরস্থায়ী রূপ দান করেছে।ইমাম হোসেইন (আ.) মাত্র ছয় বছর বিশ্বনবী (সা.)’র সান্নিধ্য লাভ করেছিলেন এবং নানাজীর ওফাতের অল্প কিছুদিন পর তিনি মা ফাতিমা সালামুল্লাহি আলাইহাকেও হারিয়েছিলেন। কিন্তু ইমামের উন্নত চারিত্রিক গুণাবলীর ভিত্তি ওই ছয় বছরেই রচিত হয়েছিল। ইমাম হোসেইন (আ.)’র বেড়ে ওঠার দিনগুলোর কথা স্মরণ করে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম খোমেনী (রহ.) বলেন: একজন নারী ছোট একটি ঘরে দীনহীন অবস্থায় এমন কিছু মানুষকে প্রশিক্ষিত করে তুলেছিলেন যাদের নূরের আলো জমিন থেকে আসমান পর্যন্ত আলোকিত করে তুলেছিল।মা’কে হারানোর পর ইমাম হোসেইন (আ.) শৈশবের বাকি দিনগুলোর পাশাপাশি কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে পা রেখেছেন পিতা আমিরুল মুমেনিন হযরত আলী (আ.)’র সান্নিধ্যে। হযরত আলী (আ.) ছিলেন এমন এক ব্যক্তিত্ব যিনি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সিরাতুল মুস্তাকিমে অটল থেকেছেন এবং ন্যায়বিচার ও ইনসাফের পথ থেকে কখনো বিচ্যুত হননি।অবশ্য ইমাম হোসেইন (আ.) শিশুকাল থেকে বেশ কিছু তিক্ত ও দুঃখজনক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিলেন। মাত্র ছয় বছর বয়সে নানাজীকে হারানোর কিছুদিনের মধ্যে মা’কেও চিরদিনের জন্য হারাতে হয়। এরপর চোখের সামনে পিতা ইমাম আলী (আ.)কে তাঁর অকাট্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে দেখেন ইমাম হোসেইন। ২৫ বছর এভাবে কেটে যাওয়ার পর হযরত আলী (আ.) মুসলিম বিশ্বের শাসনক্ষমতা গ্রহণ করেন। এ পর্যায়ে পিতার সঙ্গে জঙ্গে জামাল, জঙ্গে সিফফিন ও জঙ্গে নাহরাওয়ানে অকুতোভয় যুদ্ধ করেন ইমাম হোসেইন (আ.)।#পার্সটুডে/মুজাহিদুল ইসলাম/ মো: আবু সাঈদ/ ২
(পর্ব ৩৩): ইমাম হোসেইন (আ.)’র জীবনী নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা
মে ০২, ২০১৯ ১৭:৩৯ Asia/Dhaka
চতুর্থ হিজরির ৩ শাবান হযরত আলী (আ.) ও ফাতিমা জাহরা সালামুল্লাহি আলাইহার ঘর আলোকিত করে তাঁদের দ্বিতীয় সন্তান ইমাম হোসেইন (আ.) জন্মগ্রহণ করেন।
মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এ খুশির খবর শুনে প্রিয় দৌহিত্রকে দেখতে যান। নবজাতককে এক টুকরো কাপড়ে পেঁচিয়ে নবীজীর কোলে দিলে তিনি ইমাম হোসেইনের ডান কানে আজান এবং বাম কানে ইকামত দেন। রাসূলের এই সুন্নত পালন করে আজও মুসলমানদের ঘরে সন্তান জন্ম নিলে নবজাতকের ডান কানে আজান এবং বাম কানে ইকামত শোনানো হয়। নবীজী (সা.) তার প্রিয় দৌহিত্রের নাম রাখে হোসেইন।
সালমান ফারসি বর্ণনা করেন: একবার রাসূলুল্লাহ (সা.)’র খেদমতে হাজির হয়ে দেখি তিনি হাসান ও হোসেইন আলাইহিমুস সালামকে খাবার খাওয়াচ্ছিলেন। দুই দৌহিত্রকে খাবার খাওয়ানো শেষ হওয়ার পর নবীজী হাসানকে কাঁধে এবং হোসেইনকে নিজের কোলের উপর বসান। এরপর প্রশ্ন করেন: হে সালমান! তুমি কি এঁদেরকে ভালোবাসো? আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসূল! আপনার কাছে যারা এত প্রিয় আমি কীভাবে তাদেরকে ভালো না বেসে থাকতে পারি? নবীজী বলেন: “হে সালমান! যে কেউ এঁদেরকে ভালোবাসবে সে যেন আমাকে ভালোবাসল এবং যে আমাকে ভালোবাসল সে আল্লাহকে ভালোবাসল। রাসূলুল্লাহ (সা.) এরপর হোসেইন (আ.)’র কাঁধে হাত রেখে বলেন: সে হচ্ছে ইমামের সন্তান ইমাম। তার বংশে নয়জন নিষ্পাপ ইমাম আসবে এবং তাদের নবমজন হবে কায়েম বা অভ্যুত্থানকারী।
এ সম্পর্কে প্রখ্যাত মুফাসসিরে কুরআন ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন: আলী আমার স্থলাভিষিক্ত, তার স্ত্রী ও আমার কন্যা ফাতিমা দোজাহানের নারীদের নেত্রী এবং আমার দৌহিত্র হাসান ও হোসেইন জান্নাতে যুবকদের সর্দার। যারা তাদেরকে ভালোবাসবে তারা যেন আমাকেই ভালোবাসল এবং যারা তাদের সঙ্গে শত্রুতা করে তারা যেন আমার সঙ্গে শত্রুতা করল। যারা তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরবে তারা যেন আমার বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরল, যারা তাদের প্রতি অবিচার করবে তারা যেন আমার প্রতি অবিচার করল এবং যারা তাদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে তারা যেন আমার সঙ্গে সদাচারণ করল। যে ব্যক্তি তাদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে মহান আল্লাহ তার সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করবেন এবং যে ব্যক্তি তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে আল্লাহ তায়ালা তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবেন। তাদেরকে যে ব্যক্তি সাহায্য করবে মহান আল্লাহ তাকে সাহায্য করবেন এবং যে ব্যক্তি তাদের প্রতি ভ্রূক্ষেপহীন আল্লাহ তায়ালাও তার প্রতি দৃষ্টিপাত করবেন না।
এ ছাড়া রাসূলুল্লাহ (সা.) অন্য এক হাদিসে বলেছেন: “হোসেইন আমা হতে এবং আমি হোসেইন হতে।” নবীজীর এ বক্তব্য শুধু রক্তের বন্ধনের প্রতি ইশারা নয় বরং বিশ্বাস, আধ্যাত্মিকতা, চিন্তাদর্শন ও নেক আমলের দিক দিয়ে সত্যিই ইমাম হোসেইন (আ.) ছিলেন বিশ্বনবী (সা.)’র একনিষ্ঠ অনুসারী। কারবালার ময়দানে এজিদের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার সময় এ বিষয়টির প্রতি ইঙ্গিত করে ইমাম হোসেইন (আ.) বলেন: “...আমি এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে আমার নানা রাসূলে খোদা (সা.) ও পিতা আলী ইবনে আবিতালেবকে অনুসরণ করেছি।” এ ছাড়া যখন ইমাম হোসেইনকে এজিদের হাতে বায়াত গ্রহণ অথবা শাহাদাতের যেকোনো একটি পথ বেছে নিতে বলা হয় তখন তিনি বলেন: “আমি যদি এজিদের হাতে বায়াত নিয়ে অমর্যাদাকর কাজ করে বসি তাহলে আল্লাহ, তাঁর রাসূল, খাঁটি মুমিনগণ ও যে ইসলামের ছায়াতলে বড় হয়েছি তাদের সবাই অসন্তুষ্ট হবে।” কাজেই দেখা যাচ্ছে, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইমাম হোসেইন (আ.)’র অনুকরণীয় আদর্শ ছিলেন বিশ্বনবী (সা.)। হয়ত এ কারণেই বলা হয়, ইসলামের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নবীজীর হাতে এবং ইমাম হোসেইনের শাহাদাত সে ভিত্তিকে চিরস্থায়ী রূপ দান করেছে।
ইমাম হোসেইন (আ.) মাত্র ছয় বছর বিশ্বনবী (সা.)’র সান্নিধ্য লাভ করেছিলেন এবং নানাজীর ওফাতের অল্প কিছুদিন পর তিনি মা ফাতিমা সালামুল্লাহি আলাইহাকেও হারিয়েছিলেন। কিন্তু ইমামের উন্নত চারিত্রিক গুণাবলীর ভিত্তি ওই ছয় বছরেই রচিত হয়েছিল। ইমাম হোসেইন (আ.)’র বেড়ে ওঠার দিনগুলোর কথা স্মরণ করে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম খোমেনী (রহ.) বলেন: একজন নারী ছোট একটি ঘরে দীনহীন অবস্থায় এমন কিছু মানুষকে প্রশিক্ষিত করে তুলেছিলেন যাদের নূরের আলো জমিন থেকে আসমান পর্যন্ত আলোকিত করে তুলেছিল।
মা’কে হারানোর পর ইমাম হোসেইন (আ.) শৈশবের বাকি দিনগুলোর পাশাপাশি কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে পা রেখেছেন পিতা আমিরুল মুমেনিন হযরত আলী (আ.)’র সান্নিধ্যে। হযরত আলী (আ.) ছিলেন এমন এক ব্যক্তিত্ব যিনি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সিরাতুল মুস্তাকিমে অটল থেকেছেন এবং ন্যায়বিচার ও ইনসাফের পথ থেকে কখনো বিচ্যুত হননি।
অবশ্য ইমাম হোসেইন (আ.) শিশুকাল থেকে বেশ কিছু তিক্ত ও দুঃখজনক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিলেন। মাত্র ছয় বছর বয়সে নানাজীকে হারানোর কিছুদিনের মধ্যে মা’কেও চিরদিনের জন্য হারাতে হয়। এরপর চোখের সামনে পিতা ইমাম আলী (আ.)কে তাঁর অকাট্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে দেখেন ইমাম হোসেইন। ২৫ বছর এভাবে কেটে যাওয়ার পর হযরত আলী (আ.) মুসলিম বিশ্বের শাসনক্ষমতা গ্রহণ করেন। এ পর্যায়ে পিতার সঙ্গে জঙ্গে জামাল, জঙ্গে সিফফিন ও জঙ্গে নাহরাওয়ানে অকুতোভয় যুদ্ধ করেন ইমাম হোসেইন (আ.)।#
পার্সটুডে/মুজাহিদুল ইসলাম/ মো: আবু সাঈদ/ ২
মন্তব্যসমূহ