(পর্ব ৪২): ইমাম সাজ্জাদ (আ.)’র সংক্ষিপ্ত জীবনীজুন ০৭, ২০১৯ ২০:৩৪ Asia/Dhakaগত আসরে আমরা কারবালা বিপ্লব পরবর্তী কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলী নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা বলেছি, ইমাম হোসেইন (আ.)কে নির্মমভাবে শহীদ করার পর এজিদের বাহিনী মদীনা ও মক্কা নগরীতে হানা দিয়ে ব্যাপক গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়।বনি উমাইয়া গোষ্ঠীর এই দুঃশাসনের সামনে প্রতিরোধ গড়ে না তুলে ইমাম সাজ্জাদ (আ.) জনগণের মধ্যে ইসলামি শিক্ষা প্রসারের কাজে হাত দেন। আজকের আসরে আমরা এ সম্পর্কে আরো কিছু আলোচনা করার আশা রাখছি। প্রকৃতপক্ষে, মুসলিম সমাজের নেতৃত্ব যখন থেকে স্বৈরশাসক ও স্বেচ্ছাচারী ব্যক্তিদের হাতে ন্যস্ত হয়েছে তখন থেকে এই সমাজে ইসলাম বিরোধী তৎপরতা শুরু হয়েছে। দুঃখজনকভাবে সে সময় মুসলিম সমাজের যে পদস্খলন ঘটে তার রেশ আজও অব্যাহত রয়েছে। সৌদি আরবে ওহাবি মতাবলম্বী আলে সৌদ রাজবংশের ক্ষমতায় আরোহনকে সেই ঘটনার ধারাবাহিকতা হিসেবে মূল্যায়ন করা যেতে পারে। এই ওহাবি মতবাদের ধ্বজাধারীরা ১২১৬ হিজরিতে ইরাকে আগ্রাসন চালায়। তারা প্রথমে কারবালায় ইমাম হোসেইন (আ.)’র মাজারে এবং পরে নাজাফে হযরত আলী (আ.)’র মাজারে হামলা চালিয়ে চার থেকে পাঁচ হাজার জিয়ারতকারীকে হত্যা করে। ওহাবিরা দু’টি মাজারেই ব্যাপক লুটপাট চালায় ও ভাঙচুর করে এবং শেষে আগুন ধরিয়ে দেয়। সবশেষে এই আগ্রাসী বাহিনী মাজার প্রাঙ্গনে আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠে।সাম্প্রতিক সময়ে এই ওহাবি মতবাদ অনুসরণ করে আলে সৌদ সরকারের ছত্রছায়ায় উগ্র জঙ্গি গোষ্ঠী দায়েশের জন্ম হয়। এই গোষ্ঠীও মধ্যপ্রাচ্যের প্রচুর ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় স্থাপনা ধ্বংসের পাশাপাশি হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করে। তবে ইমাম সাজ্জাদ (আ.)’র সঙ্গে বর্তমান সময়ের মূল পার্থক্য হচ্ছে এই যে, বর্তমানে মুসলিম বিশ্বের বিশাল অংশ আমেরিকা ও সৌদি আরবের সমর্থিত ওহাবি মতবাদ ও উগ্র জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু ইমাম সাজ্জাদ (আ.)’র সময়ে পরিস্থিতি এরকম ছিল না। ইমাম নিজে এ সম্পর্কে একবার দুঃখ করে বলেছিলেন: “মক্কা ও মদীনা মিলে আমার ২০ জন প্রকৃত সহযোগী বা বন্ধুও নেই।”সে যুগে ইমাম সাজ্জাদ (আ.)’র সামনে সবচেয়ে বড় দায়িত্ব ছিল মানুষের সামনে প্রকৃত ইসলামি শিক্ষা তুলে ধরা; যে শিক্ষা রাসূলুল্লাহ (সা.)’র রেহলাতের পর বিশেষ করে উমাইয়াদের শাসনামলে হারিয়ে যেতে বসেছিল। প্রখ্যাত শিয়া আলেম ‘শেখ তুসি’ ইমাম সাজ্জাদের এমন ১৭০ জন ছাত্রের নাম উল্লেখ করেছেন যারা ইসলামি শিক্ষার প্রচার ও প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন। আমরা তাদের মধ্য থেকে তিনজনের নাম উল্লেখ করছি।ইমাম সাজ্জাদ (আ.)’র অন্যতম মেধাবী ছাত্র ছিলেন সাঈদ বিন মুসাইয়্যেব। তার প্রশংসায় ইমাম নিজে বলেছেন: ইসলামের প্রাথমিক যুগের দ্বীনি শিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে সাঈদ সবার চেয়ে এগিয়ে আছে।ইমাম সাজ্জাদ (আ.)’র আরেক ছাত্রের নাম আবু হামজা সুমালি। ইমাম রেজা (আ.) তাঁর সম্পর্কে বলেন: নিজ যুগে আবু হামজা ছিলেন রাসূলুল্লাহ (সা.)’র যুগের সালমান ফারসির মতো সাহাবী। আবু হামজা ইমাম সাজ্জাদের পর ইমাম মোহাম্মাদ বাকের (আ.) এবং ইমাম জাফর সাদেক (আ.)’রও সাহচার্য লাভ করে ধন্য হয়েছিলেন।ইমাম সাজ্জাদ (আ.)’র আরেকজন বিখ্যাত ছাত্রের নাম সাঈদ বিন জুবায়ের। তিনি ইসলামের বিভিন্ন শাখায় গভীর বুৎপত্তি অর্জন করেছিলেন। তাঁর এই বিশাল জ্ঞানভাণ্ডারের সংস্পর্শে এসে বহু মানুষ উপকৃত হচ্ছে দেখে উমাইয়া নরঘাতক হাজ্জাজ বিন ইউসুফ সাঈদ বিন জুবায়েরকে হত্যা করে।ইমাম সাজ্জাদ (আ.) উমাইয়া শাসকদের বিরুদ্ধে জিহাদের অংশ হিসেবে দোয়া ও মুনাজাতে মগ্ন হওয়াকে অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে সরাসরি মুমিনের সম্পর্ক স্থাপিত হয় বলে দ্বীন-ইসলামে দোয়াকে ইবাদতের মগজ বা আধার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। জীবনের কঠিন সময়ে দোয়া মানুষকে চরম প্রশান্তি দেয় এবং তার মধ্যে মানবিক ও নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত করতে সহায়তা করে। আল্লাহ তায়ালার দরবারে ইমাম সাজ্জাদ (আ.) যেসব দোয়া করেছেন তার সংকলিত গ্রন্থ ‘সহিফায়ে সাজ্জাদিয়ে’ মুসলিম উম্মাহর জন্য ইমামের রেখে যাওয়া মূল্যবান অবদান হিসেবে মনে করা হয়। প্রখ্যাত সুন্নি আলেম তানতাভি ‘সহিফায়ে সাজ্জাদিয়ে’ অধ্যয়ন করার পর একে একটি অনন্য গ্রন্থ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।সহিফায়ে সাজ্জাদিয়ে গ্রন্থের ২০তম দোয়ায় বলা হয়েছে: “হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ ও তাঁর বংশধরদের প্রতি দুরুদ বর্ষণ করো। আমার ঈমানকে পূর্ণাঙ্গ ঈমানে পৌঁছে দাও, আমার বিশ্বাসকে পরিপূর্ণ বিশ্বাসে পরিণত করো, আমার নিয়্যতকে শ্রেষ্ঠ নিয়্যত এবং আমার আমলকে শ্রেষ্ঠ আমল হিসেবে কবুল করে নাও।” এই দোয়ার উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে, এখানে ইমাম সাজ্জাদ (আ.) মহান আল্লাহর কাছে সেরা ঈমান, শ্রেষ্ঠ বিশ্বাস, সেরা নিয়্যত ও শ্রেষ্ঠ আমল করার তৌফিক কামনা করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি আল্লাহর কাছে কি চাইতে হবে এবং কতটুকু চাইতে হবে তা মুসলিম উম্মাহকে শিখিয়ে গেছেন। তিনি একজন অভিজ্ঞ পর্বতারোহীর মতো মানুষকে পর্বতের শীর্ষ চূড়ায় আরোহণের শিক্ষা দিয়েছেন।সহিফায়ে সাজ্জাদিয়ে দোয়াগ্রন্থের গুরুত্ব কিছুটা হলেও উপলব্ধি করা যায় এই গ্রন্থের প্রতি মুসলিম আলেম, পণ্ডিত ও চিন্তাবিদদের আগ্রহ থেকে। প্রখ্যাত আলেমগণ এই গ্রন্থের ওপর ৭০টি গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ রচনা করেছেন এবং বিশ্বের বহু ভাষায় এই বই অনুদিত হয়েছে। আরবি থেকে অন্য যেসব ভাষায় এই গ্রন্থ অনুদিত হয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ফারসি, ইংরেজি, ফরাসি, রুশ, উর্দু, তুর্কি ইত্যাদি।ইমাম সাজ্জাদের রেখে যাওয়া আরেকটি গ্রন্থের নাম ‘রেসালে-ই-হুকুক’। মানুষকে তার সারাজীবনে দু’টি হক্ব বা অধিকার আদায় করতে হয়। এর একটি হাক্কুল্লাহ বা আল্লাহর হক্ব এবং অপরটি হাক্কুল এবাদ বা বান্দার হক। ইমামের এই গ্রন্থে এই দু’টি হক্ব আদায়ের সর্বোত্তম উপায়েগুলো বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালার অধিকার বা নানারকম ইবাদতের পাশাপাশি সমাজ, পরিবার, দ্বীনি ভাই, বন্ধু এমনকি শত্রুর প্রতি মানুষকে কি কি কর্তব্য পালন করতে হবে তা এই গ্রন্থে সুন্দরভাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে।এসব মৌলিক বিষয়ের পাশাপাশি মানুষের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কি কি অধিকার রয়েছে তাও এই গ্রন্থে সুস্পষ্টভাবে বাতলে দিয়েছেন ইমাম সাজ্জাদ (আ.)। তিনি মানুষের জিহ্বা, কান, চোখ, হাত ও পায়ের জন্য আলাদা আলাদা অধিকারের কথা বলে দিয়েছেন। ইমাম সাজ্জাদের অন্যতম উপাধি হচ্ছে সাইয়েদুস সাজেদিন বা সিজদাকারীদের নেতা এবং জয়নুল আবেদিন বা ইবাদতকারীদের অলংকার। আল্লাহ তায়ালার ইবাদতের উদ্দেশ্যে রাত্রিজাগরণ ও একনিষ্ঠ কাকুতি মিনতিতে এই মহান ইমামের কোনো তুলনা ছিল না বলে তিনি এসব উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন।#পার্সটুডে/মুজাহিদুল ইসলাম/ মো: আবু সাঈদ /০৭
(পর্ব ৪২): ইমাম সাজ্জাদ (আ.)’র সংক্ষিপ্ত জীবনী
জুন ০৭, ২০১৯ ২০:৩৪ Asia/Dhaka
গত আসরে আমরা কারবালা বিপ্লব পরবর্তী কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলী নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা বলেছি, ইমাম হোসেইন (আ.)কে নির্মমভাবে শহীদ করার পর এজিদের বাহিনী মদীনা ও মক্কা নগরীতে হানা দিয়ে ব্যাপক গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়।
বনি উমাইয়া গোষ্ঠীর এই দুঃশাসনের সামনে প্রতিরোধ গড়ে না তুলে ইমাম সাজ্জাদ (আ.) জনগণের মধ্যে ইসলামি শিক্ষা প্রসারের কাজে হাত দেন। আজকের আসরে আমরা এ সম্পর্কে আরো কিছু আলোচনা করার আশা রাখছি।
প্রকৃতপক্ষে, মুসলিম সমাজের নেতৃত্ব যখন থেকে স্বৈরশাসক ও স্বেচ্ছাচারী ব্যক্তিদের হাতে ন্যস্ত হয়েছে তখন থেকে এই সমাজে ইসলাম বিরোধী তৎপরতা শুরু হয়েছে। দুঃখজনকভাবে সে সময় মুসলিম সমাজের যে পদস্খলন ঘটে তার রেশ আজও অব্যাহত রয়েছে। সৌদি আরবে ওহাবি মতাবলম্বী আলে সৌদ রাজবংশের ক্ষমতায় আরোহনকে সেই ঘটনার ধারাবাহিকতা হিসেবে মূল্যায়ন করা যেতে পারে। এই ওহাবি মতবাদের ধ্বজাধারীরা ১২১৬ হিজরিতে ইরাকে আগ্রাসন চালায়। তারা প্রথমে কারবালায় ইমাম হোসেইন (আ.)’র মাজারে এবং পরে নাজাফে হযরত আলী (আ.)’র মাজারে হামলা চালিয়ে চার থেকে পাঁচ হাজার জিয়ারতকারীকে হত্যা করে। ওহাবিরা দু’টি মাজারেই ব্যাপক লুটপাট চালায় ও ভাঙচুর করে এবং শেষে আগুন ধরিয়ে দেয়। সবশেষে এই আগ্রাসী বাহিনী মাজার প্রাঙ্গনে আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠে।
সাম্প্রতিক সময়ে এই ওহাবি মতবাদ অনুসরণ করে আলে সৌদ সরকারের ছত্রছায়ায় উগ্র জঙ্গি গোষ্ঠী দায়েশের জন্ম হয়। এই গোষ্ঠীও মধ্যপ্রাচ্যের প্রচুর ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় স্থাপনা ধ্বংসের পাশাপাশি হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করে। তবে ইমাম সাজ্জাদ (আ.)’র সঙ্গে বর্তমান সময়ের মূল পার্থক্য হচ্ছে এই যে, বর্তমানে মুসলিম বিশ্বের বিশাল অংশ আমেরিকা ও সৌদি আরবের সমর্থিত ওহাবি মতবাদ ও উগ্র জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু ইমাম সাজ্জাদ (আ.)’র সময়ে পরিস্থিতি এরকম ছিল না। ইমাম নিজে এ সম্পর্কে একবার দুঃখ করে বলেছিলেন: “মক্কা ও মদীনা মিলে আমার ২০ জন প্রকৃত সহযোগী বা বন্ধুও নেই।”
সে যুগে ইমাম সাজ্জাদ (আ.)’র সামনে সবচেয়ে বড় দায়িত্ব ছিল মানুষের সামনে প্রকৃত ইসলামি শিক্ষা তুলে ধরা; যে শিক্ষা রাসূলুল্লাহ (সা.)’র রেহলাতের পর বিশেষ করে উমাইয়াদের শাসনামলে হারিয়ে যেতে বসেছিল। প্রখ্যাত শিয়া আলেম ‘শেখ তুসি’ ইমাম সাজ্জাদের এমন ১৭০ জন ছাত্রের নাম উল্লেখ করেছেন যারা ইসলামি শিক্ষার প্রচার ও প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন। আমরা তাদের মধ্য থেকে তিনজনের নাম উল্লেখ করছি।
ইমাম সাজ্জাদ (আ.)’র অন্যতম মেধাবী ছাত্র ছিলেন সাঈদ বিন মুসাইয়্যেব। তার প্রশংসায় ইমাম নিজে বলেছেন: ইসলামের প্রাথমিক যুগের দ্বীনি শিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে সাঈদ সবার চেয়ে এগিয়ে আছে।
ইমাম সাজ্জাদ (আ.)’র আরেক ছাত্রের নাম আবু হামজা সুমালি। ইমাম রেজা (আ.) তাঁর সম্পর্কে বলেন: নিজ যুগে আবু হামজা ছিলেন রাসূলুল্লাহ (সা.)’র যুগের সালমান ফারসির মতো সাহাবী। আবু হামজা ইমাম সাজ্জাদের পর ইমাম মোহাম্মাদ বাকের (আ.) এবং ইমাম জাফর সাদেক (আ.)’রও সাহচার্য লাভ করে ধন্য হয়েছিলেন।
ইমাম সাজ্জাদ (আ.)’র আরেকজন বিখ্যাত ছাত্রের নাম সাঈদ বিন জুবায়ের। তিনি ইসলামের বিভিন্ন শাখায় গভীর বুৎপত্তি অর্জন করেছিলেন। তাঁর এই বিশাল জ্ঞানভাণ্ডারের সংস্পর্শে এসে বহু মানুষ উপকৃত হচ্ছে দেখে উমাইয়া নরঘাতক হাজ্জাজ বিন ইউসুফ সাঈদ বিন জুবায়েরকে হত্যা করে।
ইমাম সাজ্জাদ (আ.) উমাইয়া শাসকদের বিরুদ্ধে জিহাদের অংশ হিসেবে দোয়া ও মুনাজাতে মগ্ন হওয়াকে অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে সরাসরি মুমিনের সম্পর্ক স্থাপিত হয় বলে দ্বীন-ইসলামে দোয়াকে ইবাদতের মগজ বা আধার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। জীবনের কঠিন সময়ে দোয়া মানুষকে চরম প্রশান্তি দেয় এবং তার মধ্যে মানবিক ও নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত করতে সহায়তা করে। আল্লাহ তায়ালার দরবারে ইমাম সাজ্জাদ (আ.) যেসব দোয়া করেছেন তার সংকলিত গ্রন্থ ‘সহিফায়ে সাজ্জাদিয়ে’ মুসলিম উম্মাহর জন্য ইমামের রেখে যাওয়া মূল্যবান অবদান হিসেবে মনে করা হয়। প্রখ্যাত সুন্নি আলেম তানতাভি ‘সহিফায়ে সাজ্জাদিয়ে’ অধ্যয়ন করার পর একে একটি অনন্য গ্রন্থ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
সহিফায়ে সাজ্জাদিয়ে গ্রন্থের ২০তম দোয়ায় বলা হয়েছে: “হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ ও তাঁর বংশধরদের প্রতি দুরুদ বর্ষণ করো। আমার ঈমানকে পূর্ণাঙ্গ ঈমানে পৌঁছে দাও, আমার বিশ্বাসকে পরিপূর্ণ বিশ্বাসে পরিণত করো, আমার নিয়্যতকে শ্রেষ্ঠ নিয়্যত এবং আমার আমলকে শ্রেষ্ঠ আমল হিসেবে কবুল করে নাও।” এই দোয়ার উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে, এখানে ইমাম সাজ্জাদ (আ.) মহান আল্লাহর কাছে সেরা ঈমান, শ্রেষ্ঠ বিশ্বাস, সেরা নিয়্যত ও শ্রেষ্ঠ আমল করার তৌফিক কামনা করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি আল্লাহর কাছে কি চাইতে হবে এবং কতটুকু চাইতে হবে তা মুসলিম উম্মাহকে শিখিয়ে গেছেন। তিনি একজন অভিজ্ঞ পর্বতারোহীর মতো মানুষকে পর্বতের শীর্ষ চূড়ায় আরোহণের শিক্ষা দিয়েছেন।
সহিফায়ে সাজ্জাদিয়ে দোয়াগ্রন্থের গুরুত্ব কিছুটা হলেও উপলব্ধি করা যায় এই গ্রন্থের প্রতি মুসলিম আলেম, পণ্ডিত ও চিন্তাবিদদের আগ্রহ থেকে। প্রখ্যাত আলেমগণ এই গ্রন্থের ওপর ৭০টি গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ রচনা করেছেন এবং বিশ্বের বহু ভাষায় এই বই অনুদিত হয়েছে। আরবি থেকে অন্য যেসব ভাষায় এই গ্রন্থ অনুদিত হয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ফারসি, ইংরেজি, ফরাসি, রুশ, উর্দু, তুর্কি ইত্যাদি।
ইমাম সাজ্জাদের রেখে যাওয়া আরেকটি গ্রন্থের নাম ‘রেসালে-ই-হুকুক’। মানুষকে তার সারাজীবনে দু’টি হক্ব বা অধিকার আদায় করতে হয়। এর একটি হাক্কুল্লাহ বা আল্লাহর হক্ব এবং অপরটি হাক্কুল এবাদ বা বান্দার হক। ইমামের এই গ্রন্থে এই দু’টি হক্ব আদায়ের সর্বোত্তম উপায়েগুলো বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালার অধিকার বা নানারকম ইবাদতের পাশাপাশি সমাজ, পরিবার, দ্বীনি ভাই, বন্ধু এমনকি শত্রুর প্রতি মানুষকে কি কি কর্তব্য পালন করতে হবে তা এই গ্রন্থে সুন্দরভাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে।
এসব মৌলিক বিষয়ের পাশাপাশি মানুষের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কি কি অধিকার রয়েছে তাও এই গ্রন্থে সুস্পষ্টভাবে বাতলে দিয়েছেন ইমাম সাজ্জাদ (আ.)। তিনি মানুষের জিহ্বা, কান, চোখ, হাত ও পায়ের জন্য আলাদা আলাদা অধিকারের কথা বলে দিয়েছেন। ইমাম সাজ্জাদের অন্যতম উপাধি হচ্ছে সাইয়েদুস সাজেদিন বা সিজদাকারীদের নেতা এবং জয়নুল আবেদিন বা ইবাদতকারীদের অলংকার। আল্লাহ তায়ালার ইবাদতের উদ্দেশ্যে রাত্রিজাগরণ ও একনিষ্ঠ কাকুতি মিনতিতে এই মহান ইমামের কোনো তুলনা ছিল না বলে তিনি এসব উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন।#
পার্সটুডে/মুজাহিদুল ইসলাম/ মো: আবু সাঈদ /০৭
মন্তব্যসমূহ