আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদ সবার উদ্দেশে মিনতি করে বলছি আপনারা এই পোস্ট পড়বেন কেউ এড়িয়ে যাবেন নাআল কোরআন-এর ভাষায় জবেহ আজিম মহান কোরবাণী- কী ❓জবেহ আজিম বা মহান কোরবানী শুরু হল কা’বা বানানে ওয়ালা, হযরত ইসমাঈল (আ:) মাধ্যমে আর শেষ হল কা’বা বাঁচানে ওয়ালা, মাওলা হুসাইন আলাই‌হিস সালাম মাধ্যমে।আজ থেকে সাড়ে চার হাজার বছসর পূর্বে সংঘটিত পিতা পুত্রের আত্মত্যাগের এই অপূর্ব ঘটনা যুগ যুগ ধরে আল্লাহ্ তালার অবতীর্ণ দ্বীনে হক-ইছলামের হেফাজত ও মর্যাদা রক্ষায় ও মুসলিম জাতির ন্যায্য স্বর্থরক্ষার উৎসরূপে কাজ করে আসছে। আনুষ্ঠানিক কোরবানী বিগত সাড়ে হাজার বছর ধরে সমগ্ৰ মুছলিম বিশ্বে চালু রয়েছে। এটা হজরত ইবরাহিম (আঃ) ও কিশোর পুত্র হজরত ইছমাইল (আঃ)-এর ঐশী প্রেমের চরম নিদর্শন। ইহা পিতা পুত্র উভয়েরই খােদার রাহে উৎসর্গ হওয়ার চির অস্নান স্মরণিকা মাত্র।কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয়, বর্তমান যুগের অধিকাংশ মুছলমানই কোরবানীর শিক্ষা সম্বন্ধে অবগত নয়। আল্লাহ্ তালার আদেশে আত্মোৎসর্গের এমন মহান ঘটনা হতে যে তাদের জন্য অনেক কিছু শিক্ষণীয় রয়েছে যে সম্বন্ধে মুছলমানই অজ্ঞতার তিমিরে ডুবে আছে।পিতা পুত্রের আত্মোৎসর্গের মহান ঘটনা থেকে আমরা কি শিক্ষা পাই? ইহা কি খোদা প্রেমের চরম ও পরম নিদর্শন নয়?আল কোরআন-এর ভাষায় জবেহ আজিম মহান কোরবাণী- কী ❓“যবেহ ’ অর্থাৎ ‘যাবিহুন বা মাযবুহুনে বোজর্গ ও আজীমবোজর্গঅর’ যার বাংলা শাব্দিক অর্থঃ মহান ও বৃহৎ যবাইকৃত। এধরণের গুণবাচক শব্দ কোরআনে একটি বার ব্যবহৃত হয়েছে।সূরা আস সাফ্‌ফাত এর ১০৭ নং আয়াতে, এই আয়তে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ ‘অফাদাইনাহু বিযিবহিন আজীম’ অর্থাৎ আমি তার পরিবর্তে মহান যবেহ কবুল করলাম।’(ছুরে ছাফফাত-এর ১০২ আয়াত থেকে ১০৯ আয়াত পর্যন্ত দেখার অনুরোধ করছি)।অধিকাংশ শিয়া ও সুন্নি তাফসীরকারী এখানে বলেন যে ‘জবেহ আজিম’ এর উদ্দেশ্য ভেড়া নামক পশু যবেহকে বুঝানো হয়নি।আল্লামা তাবাতাবায়ীর মতে যেহেতু এই যবেহ আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ মোতাবেক ‘আজীম’ বলে নামকরণ করা হয়েছে; সেহেতু সয়ং যবেহ নিজস’লে কখনো আজিম হতে পারে না,এর উদ্দেশ্য ভিন্ন।হজরত ইবরাহিম (আঃ) যখন পুত্র হজরত ইছমাইল (আঃ)-কে কোরবানী করতে নিয়েছিলেন। যখন হজরত ইবরাহিম (আঃ) হজরত ইছমাইল (আঃ) কে হাত ও চোখ বাঁধা অবস্থায় কোরবানী করতে তৈরী হলেন তখন তার হাত থেমে গেল, পুত্র গর্দান ঝুকিয়ে দিলেন এবং সানন্দে ভাবতে লাগলেন। কখন কোরবানী হবেন। হজরত ইবরাহিম (আঃ)-এর হাতের শক্তি লোপ পেয়ে গেল। ভাবতে লাগলেন, কোরবানী করতে পারছি না কেন? আমার সবচেয়ে বেশী মহব্বতের বস্তুই ত কোরবান করা আল্লাহর আদেশ। এ দুনিয়ায় পুত্র ইছমাইলের চেয়ে বেশী মহব্বতের তা আমার আর কিছু নেই। আমার হাত কেন উঠছে না? ছুরিকে কি কেউ ধরে রাখল? না আমার মধ্যে কি মহব্বত এসে গেল? নিশ্চয়ই মহব্বত আসে নাই। তা আসলে অবশ্যই আমার হৃদয় কাঁপত, চক্ষুতে জল আসত। তার কোনটাই আমার মধ্যে আসে নাই। আচ্ছা আবার চেষ্টা করব, আবার ছুরি চালাব এবং দেখব কে আমার হাতের শক্তি কেড়ে নেয়। হজরত ইবাহিমের যে হাতে ছুরি ছিল, হঠাৎ সে হাতে টের পেলেন যে, তা পাথরের মত ভারী হয়ে গেছে। হাতের শক্তি কে যেন কেড়ে নিয়েছে। ছুরি বলল, হে ইবরাহিম (আঃ) আমার কোন দোষ নাই, আমি কি করব। এ তোমার আল্লাহর হুকুম। হজরত ইবরাহিম রাগ করে ছুরি ফেলে দিলেন। ছুরি বলতে লাগল, ইয়া খলিলুল্লাহ আমার উপর কেন রাগ করছেন? আপনার আরজু, যে ইছমাইলকে কোরবানী করবেন এবং এটা আল্লাহর হুকুম। কিন্তু এও আল্লাহর হুকুম যে আমি আপনার হুকুম এনকার করা(হুকুম রদ করা)। আমি বলি আল্লাহ্ পাকের যা হুকুম তাই হয়েছে, এতে আমার .কি দোষ। হজরত ইবরাহিম হয়রান পেরেশান হয়ে গেলেন। হঠাৎ টের পেলেন পানির মত কি যেন উনার কদম মোবারকে লাগছে। চক্ষু খুলে আশ্চর্য হয়ে গেলেন। সত্যই কি দেখছেন, না স্বপু? হজরত ইছমাইল দাঁড়িয়ে আছেন, এদিকে একটি দুম্বা কোরবানী হয়ে গেছে। বেহুস বেকারার হয়ে হজরত ইবরাহিম কাঁদতে লাগলেন ও ফরিয়াদ করতে লাগলেন, আয় পাক পরওয়ারদেগার, কেন আমার কোরবানী কবুল করলেন না? কাঁদতে কাঁদতে বেহুস হেয়ে পড়লেন। তখনই আল্লাহপাকের আদেশ আসল,হে ইব্রাহিম তুমি কেদনা,তোমার ছেলেকে কোরবানী করতে পার নাই, কিন্তু আমি তোমাকে এর চেয়ে বড় ও মহান এক কোরবানী দান করলাম। হজরত ইবরাহিমের বেকারারী দূর হয়ে হুস আসল ও শুনতে পেলেন,আয় খলিল তুমি বল যে, মোহাম্মদ (দঃ) কি সবচেয়ে বেশী আজিজ নয়❓হজরত ইবরাহিম চতুর্দিকে দেখতে লাগলেন, হঠাৎ আছমানের দিকে চাইলেন ও দেখতে পেলেন “জবেহ আজিম”। (মিনাতে হজরত ইব্রাহিম (আঃ) কুরাবানী করতে গিয়েছিলেন। আল্লাহ তায়ালা তার কুরাবনীর পরিবর্তে মিশাল কুরবানী “জবেহ আজিম” হচ্ছে কারবালায় ইমাম হোসাইন (আঃ) এর কুরবানী তারই বংশে দান করলেন) ।হজরত ইবরাহিম আবার কাঁদতে কাঁদতে বেহুশ হয়ে গেলেন ছবতে রছুল, নোয়াছায়ে রছুল জামে শাহাদত পান করলেন। রোজ কিয়ামতে আল্লাহ পাক তার বদলা দেবেন।অতঃপর মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁকে ওহীর মাধ্যমে জিজ্ঞাসা করলেনঃ হে ইব্রাহীম, তোমার নিকট আমার সৃষ্টির সবচেয়ে প্রিয় জিনিস কি?তিনি বললেনঃ হে আমার পরোয়ারদেগার তোমার সৃষ্টির মধ্যে তোমার দোস্ত- মুহাম্মাদ হলো আমার নিকট সবচেয়ে প্রিয়।আল্লাহ তায়ালা পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেনঃ হে ইব্রাহীম, সে সবচেয়ে প্রিয় নাকি তুমি নিজে?তিনি বললেনঃ তিনিই সবচেয়ে প্রিয়।আল্লাহ তায়ালা আবার জিজ্ঞাসা করলেনঃ তার সন্তান তোমার জন্য সবচেয়ে প্রিয় নাকি তোমার সন্তান?তিনি উত্তর বললেনঃ তাঁর সন্তান।আবার জিজ্ঞাসা করলেনঃ তাঁর সন্তান দুশমনের হাতে অন্যায় ও নির্যাতনের মাধ্যমে কুরবানী হলে তুমি বেশী ব্যথিত হবে নাকি তোমার সন্তান তোমার হাতে আমার আনুগত্য প্রকাশ করতে গিয়ে নিহত হলে বেশি ব্যথিত হবে?তিনি উত্তরে বললেনঃ দুশমনের হাতে তাঁর কুরবানী হওয়াটা আমাকে বেশী ব্যথিত করবে।আল্লাহ তায়ালা বললেনঃ হে ইব্রাহীম, উম্মতে মুহাম্মাদের কিছু লোক মুহাম্মাদের সন্তান হোসাইনকে তাঁর ইনে-কালের পর জুলুম ও নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করবে যেমনিভাবে ভেড়া হত্যা করা হয়, এর জন্য তারা আমার ক্রোধের শিকার হবে।হযরত ইব্রাহীম (আঃ) একথাগুলো শুনে তাঁর অন-র অশান- হয়ে গেলে, মনঃকষ্টে তাঁর চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।আল্লাহ তায়ালা আবারো তাঁর কাছে অহীর মাধ্যমে বললেনঃ হে ইব্রাহীম, তোমার সন্তানকে নিজ হাতে যবেহ করতে না পারার সেই শোকটা হোসেইনের হত্যার শোকের সাথে পবির্তন করে দেব এবং মুসিবাতের ক্ষেত্রে সবরের দরুন সর্বোচ্চ সওয়াব তোমাকে প্রদান করবো। আর একারণেই আল্লাহ তায়ালা বলেছেন ‘অফাদানাহু বিযিবহে আজীম’ অথাৎ আমি তার পরিবর্তে মহান যবেহ কবুল করলাম।আল্লাহ্ পাকের দরবারে যে সর্বোচ্চ সম্মান শাহাদতে জাহেরী ও শাহাদতে ছিররী রক্ষিত আছে তা আল্লাহ্ পাক হজরত ইছমাইল (আঃ)-কে দেন নাই। তা শুধু হাসনাইন (আ.) পাক দ্বয়ের জন্য রক্ষিত আছে। মওলা হাছানকে দান করবেন শাহাদতে ছিররী ও মওলা হােছাইনকে দান করবেন শাহাদতে জাহেরী। বিনা দোষে গুপ্তভাবে যে কোন উপায়ে নিহত হওয়াকে শাহাদতে ছিররী ও ধর্ম রক্ষার জন্য সম্মুখ যুদ্ধে জেনে শুনে আত্ম বিসর্জন করাকে বলা হয় শাহাদতে জাহেরী।ইমাম বংশ হলেন করুনার কাওছার। গলায় ছুরি হাসি মুখে বরণ করে নিয়েছেন তবু আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করেন নি। ফরিয়াদ করলে বিরোধী দল সঙ্গে সঙ্গে ধ্বংস হয়ে যেত। আঘাতের বিনিময়ে প্রেম বিতরণ করাই ইমাম বংশের আদর্শ। নবী করিম (দঃ) ও ইমাম বংশ কাউকে ধ্বংস করতে এ দুনিয়াতে আসেননি। তারা এসেছেন গড়তে। হাসি মুখে প্রাণ বলি দিয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গণ করে প্রেমের মূল্যবােধকে দাঁড় করাতে। একবার ভেবে দেখুন ত?অবশ্য বেআদবী না করে নিরপেক্ষ মন নিয়ে হজরত ইবরাহিম (আঃ) তার আপনি পুত্রকে কোরবানী করতে যেয়ে হাত থর থর করে কাঁপছে। মমতার কাছে উৎসর্গ হার মানতে চাইছে। তাই কাপড়ে চােখ দুটাে বেঁধে নিতে হল, অথচ আড়াই দিনের উপবাসী তৃষ্ণিত অবস্থায় থেকে পরিবার পরিজনের মায়া ত্যাগ করে আল্লাহ্র রাহে হজরত ইমাম হােছাইন নামক হজরত মোহাম্মদ (দঃ) কারবালার মাঠে একটি একটি করে সন্তানদের কোরবানী দিয়ে চলেছেন। পা হতে মাথা পর্যন্ত হুবহু হজরত মোহাম্মদ (দঃ)-এর সঙ্গে মিল হজরত আলী আকবর যার কণ্ঠস্বর শুনতে নবী করীম (দঃ)-এর কণ্ঠস্বর বলে ভুলু হয়। সেই সদ্য যৌবন প্রাপ্ত হজরত আলী আকবর শাহাদত বরণ করলেন। শহীদ হলেন দুধের শিশু আলী আছগর। তবুও আল্লাহ পাকের কাছে করেন নি কোন ফরিয়াদ, কোন কাতর যাচঞা।কেউ কি ভেবে দেখেছে সবাই জাহেরী ভাবে হজ্ব করে পশু কোরবানী দিচ্ছেন আর তাদের কে বাচানোর জন্য কারবালায় কোরবানী হয়ে গেলেন আল্লাহ পাক ও রাসুলে পাক (দ:) প্রিয়জন। ভেবে দেখুনত, একটু চােখ বন্ধ করে, চিন্তা করুন ত সেই কারবালার দৃশ্য। সেই পানির পিপাসায় ছান্তিফাটা আলী আছগরের শহীদ হবার দৃশ্য। তুলনা করতে গেলে কি হজরত ইবরাহিমের (আঃ) কোরবানী প্ৰদীপ হতে সূর্য খোঁজার মত তুলনা হয় না!হযরত ইসমাইল (আ:) এর প্রাণ দিতে হয় নি, তাঁর পরিবার পরিজনদেরকেও আল্লাহর পথে বিসর্জন দিতে হয় নি, তারপরেও হযরত ইসমাইল (আ:)”র স্মরণে পৃথিবী আজও কম্পমান।আর মওলা হোসাইন (আ:) তাঁর ৬ মাসের শিশুটি সহ মোট ৭২ জনকে কোরবানী দেবার পরেও মুসলিম জাতির সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারেন নি।আফসোস, কতটা দূর্ভাগ্য! কারবালায় নবী পরিবারের আত্মোৎসর্গের কথা, মহা আত্মত্যাগের কথা মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ ছাড়া মুসলিম বিশ্বের তেমন কেউ জানে না বললেই চলে ।আমার প্রশ্ন হল আলাহর হুকুমের কারনে সুন্নাতে ইব্রাহিমী (আ:) খাতিরে মুসলমান হিসাবে সুন্নি- শিয়া,কাদিয়ানী, সালাফি, ওহাবী -মওদুদী,খারেজী-আহলে হাদীস সব ফেরকা মিলে শত লক্ষ কোটি পশু কোরবানী আল্লাহ কে খুশি করলাম।কিন্তু পৃথিবীর ইতিহাসে কুলকায়েনাতের সেরা কোরবানী কোরবানী হোসাইনী (আ:) (সপরিবার সবাই শহীদ) জন্য আমরা মুসলমান নামধারীরা কি করছি।ইসলাম কে বাচনোর জন্য হোসাইনী কোরবানী(আ:)এত তুচ্ছ হয়ে গেল । সুন্নাতে ইব্রাহিমী কোরবানীর জন্য যেখানে লক্ষ কোটিরপশু জবেহ করলাম সেখানে হোসাইনী কোরবানী (আ:) জন্য আমরা মুসলমানরা একদম নীরব।গ্রন্থসূত্রঃ- জবেহ আজিম এবং জিকিরে শাহাদাত— সৈয়দ হোসাইন উল হক।প্রচারে মোঃ শামসীর হায়দার

আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদ 
সবার উদ্দেশে মিনতি করে বলছি আপনারা এই পোস্ট পড়বেন কেউ এড়িয়ে যাবেন না

আল কোরআন-এর ভাষায় জবেহ আজিম মহান কোরবাণী- কী ❓

জবেহ আজিম বা মহান কোরবানী শুরু হল কা’বা বানানে ওয়ালা, হযরত ইসমাঈল (আ:) মাধ্যমে আর শেষ হল কা’বা বাঁচানে ওয়ালা, মাওলা হুসাইন আলাই‌হিস সালাম মাধ্যমে।আজ থেকে সাড়ে চার হাজার বছসর পূর্বে সংঘটিত পিতা পুত্রের আত্মত্যাগের এই অপূর্ব ঘটনা যুগ যুগ ধরে আল্লাহ্ তালার অবতীর্ণ দ্বীনে হক-ইছলামের হেফাজত ও মর্যাদা রক্ষায় ও মুসলিম জাতির ন্যায্য স্বর্থরক্ষার উৎসরূপে কাজ করে আসছে। আনুষ্ঠানিক কোরবানী বিগত সাড়ে হাজার বছর ধরে সমগ্ৰ মুছলিম বিশ্বে চালু রয়েছে। এটা হজরত ইবরাহিম (আঃ) ও কিশোর পুত্র হজরত ইছমাইল (আঃ)-এর ঐশী প্রেমের চরম নিদর্শন। ইহা পিতা পুত্র উভয়েরই খােদার রাহে উৎসর্গ হওয়ার চির অস্নান স্মরণিকা মাত্র।কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয়, বর্তমান যুগের অধিকাংশ মুছলমানই কোরবানীর শিক্ষা সম্বন্ধে অবগত নয়। আল্লাহ্ তালার আদেশে আত্মোৎসর্গের এমন মহান ঘটনা হতে যে তাদের জন্য অনেক কিছু শিক্ষণীয় রয়েছে যে সম্বন্ধে মুছলমানই অজ্ঞতার তিমিরে ডুবে আছে।পিতা পুত্রের আত্মোৎসর্গের মহান ঘটনা থেকে আমরা কি শিক্ষা পাই? ইহা কি খোদা প্রেমের চরম ও পরম নিদর্শন নয়?

আল কোরআন-এর ভাষায় জবেহ আজিম মহান কোরবাণী- কী ❓

“যবেহ ’ অর্থাৎ ‘যাবিহুন বা মাযবুহুনে বোজর্গ ও আজীমবোজর্গঅর’ যার বাংলা শাব্দিক অর্থঃ মহান ও বৃহৎ যবাইকৃত। এধরণের গুণবাচক শব্দ কোরআনে একটি বার ব্যবহৃত হয়েছে।সূরা আস সাফ্‌ফাত এর ১০৭ নং আয়াতে, এই আয়তে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ ‘অফাদাইনাহু বিযিবহিন আজীম’ অর্থাৎ আমি তার পরিবর্তে মহান যবেহ কবুল করলাম।’(ছুরে ছাফফাত-এর ১০২ আয়াত থেকে ১০৯ আয়াত পর্যন্ত দেখার অনুরোধ করছি)।

অধিকাংশ শিয়া ও সুন্নি তাফসীরকারী এখানে বলেন যে ‘জবেহ আজিম’ এর উদ্দেশ্য ভেড়া নামক পশু যবেহকে বুঝানো হয়নি।আল্লামা তাবাতাবায়ীর মতে যেহেতু এই যবেহ আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ মোতাবেক ‘আজীম’ বলে নামকরণ করা হয়েছে; সেহেতু সয়ং যবেহ নিজস’লে কখনো আজিম হতে পারে না,এর উদ্দেশ্য ভিন্ন।

হজরত ইবরাহিম (আঃ) যখন পুত্র হজরত ইছমাইল (আঃ)-কে কোরবানী করতে নিয়েছিলেন। যখন হজরত ইবরাহিম (আঃ) হজরত ইছমাইল (আঃ) কে হাত ও চোখ বাঁধা অবস্থায় কোরবানী করতে তৈরী হলেন তখন তার হাত থেমে গেল, পুত্র গর্দান ঝুকিয়ে দিলেন এবং সানন্দে ভাবতে লাগলেন। কখন কোরবানী হবেন। হজরত ইবরাহিম (আঃ)-এর হাতের শক্তি লোপ পেয়ে গেল। ভাবতে লাগলেন, কোরবানী করতে পারছি না কেন? আমার সবচেয়ে বেশী মহব্বতের বস্তুই ত কোরবান করা আল্লাহর আদেশ। এ দুনিয়ায় পুত্র ইছমাইলের চেয়ে বেশী মহব্বতের তা আমার আর কিছু নেই। আমার হাত কেন উঠছে না? ছুরিকে কি কেউ ধরে রাখল? না আমার মধ্যে কি মহব্বত এসে গেল? নিশ্চয়ই মহব্বত আসে নাই। তা আসলে অবশ্যই আমার হৃদয় কাঁপত, চক্ষুতে জল আসত। তার কোনটাই আমার মধ্যে আসে নাই। আচ্ছা আবার চেষ্টা করব, আবার ছুরি চালাব এবং দেখব কে আমার হাতের শক্তি কেড়ে নেয়। হজরত ইবাহিমের যে হাতে ছুরি ছিল, হঠাৎ সে হাতে টের পেলেন যে, তা পাথরের মত ভারী হয়ে গেছে। হাতের শক্তি কে যেন কেড়ে নিয়েছে। ছুরি বলল, হে ইবরাহিম (আঃ) আমার কোন দোষ নাই, আমি কি করব। এ তোমার আল্লাহর হুকুম। হজরত ইবরাহিম রাগ করে ছুরি ফেলে দিলেন। ছুরি বলতে লাগল, ইয়া খলিলুল্লাহ আমার উপর কেন রাগ করছেন? আপনার আরজু, যে ইছমাইলকে কোরবানী করবেন এবং এটা আল্লাহর হুকুম। কিন্তু এও আল্লাহর হুকুম যে আমি আপনার হুকুম এনকার করা(হুকুম রদ করা)। আমি বলি আল্লাহ্ পাকের যা হুকুম তাই হয়েছে, এতে আমার .কি দোষ। হজরত ইবরাহিম হয়রান পেরেশান হয়ে গেলেন। হঠাৎ টের পেলেন পানির মত কি যেন উনার কদম মোবারকে লাগছে। চক্ষু খুলে আশ্চর্য হয়ে গেলেন। সত্যই কি দেখছেন, না স্বপু? হজরত ইছমাইল দাঁড়িয়ে আছেন, এদিকে একটি দুম্বা কোরবানী হয়ে গেছে। বেহুস বেকারার হয়ে হজরত ইবরাহিম কাঁদতে লাগলেন ও ফরিয়াদ করতে লাগলেন, আয় পাক পরওয়ারদেগার, কেন আমার কোরবানী কবুল করলেন না? কাঁদতে কাঁদতে বেহুস হেয়ে পড়লেন। তখনই আল্লাহপাকের আদেশ আসল,হে ইব্রাহিম তুমি কেদনা,তোমার ছেলেকে কোরবানী করতে পার নাই, কিন্তু আমি তোমাকে এর চেয়ে বড় ও মহান এক কোরবানী দান করলাম। হজরত ইবরাহিমের বেকারারী দূর হয়ে হুস আসল ও শুনতে পেলেন,আয় খলিল তুমি বল যে, মোহাম্মদ (দঃ) কি সবচেয়ে বেশী আজিজ নয়❓

হজরত ইবরাহিম চতুর্দিকে দেখতে লাগলেন, হঠাৎ আছমানের দিকে চাইলেন ও দেখতে পেলেন “জবেহ আজিম”। (মিনাতে হজরত ইব্রাহিম (আঃ) কুরাবানী করতে গিয়েছিলেন। আল্লাহ তায়ালা তার কুরাবনীর পরিবর্তে মিশাল কুরবানী “জবেহ আজিম” হচ্ছে কারবালায় ইমাম হোসাইন (আঃ) এর কুরবানী তারই বংশে দান করলেন) ।হজরত ইবরাহিম আবার কাঁদতে কাঁদতে বেহুশ হয়ে গেলেন ছবতে রছুল, নোয়াছায়ে রছুল জামে শাহাদত পান করলেন। রোজ কিয়ামতে আল্লাহ পাক তার বদলা দেবেন।

অতঃপর মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁকে ওহীর মাধ্যমে জিজ্ঞাসা করলেনঃ হে ইব্রাহীম, তোমার নিকট আমার সৃষ্টির সবচেয়ে প্রিয় জিনিস কি?
তিনি বললেনঃ হে আমার পরোয়ারদেগার তোমার সৃষ্টির মধ্যে তোমার দোস্ত- মুহাম্মাদ হলো আমার নিকট সবচেয়ে প্রিয়।

আল্লাহ তায়ালা পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেনঃ হে ইব্রাহীম, সে সবচেয়ে প্রিয় নাকি তুমি নিজে?
তিনি বললেনঃ তিনিই সবচেয়ে প্রিয়।

আল্লাহ তায়ালা আবার জিজ্ঞাসা করলেনঃ তার সন্তান তোমার জন্য সবচেয়ে প্রিয় নাকি তোমার সন্তান?
তিনি উত্তর বললেনঃ তাঁর সন্তান।

আবার জিজ্ঞাসা করলেনঃ তাঁর সন্তান দুশমনের হাতে অন্যায় ও নির্যাতনের মাধ্যমে কুরবানী হলে তুমি বেশী ব্যথিত হবে নাকি তোমার সন্তান তোমার হাতে আমার আনুগত্য প্রকাশ করতে গিয়ে নিহত হলে বেশি ব্যথিত হবে?
তিনি উত্তরে বললেনঃ দুশমনের হাতে তাঁর কুরবানী হওয়াটা আমাকে বেশী ব্যথিত করবে।

আল্লাহ তায়ালা বললেনঃ হে ইব্রাহীম, উম্মতে মুহাম্মাদের কিছু লোক মুহাম্মাদের সন্তান হোসাইনকে তাঁর ইনে-কালের পর জুলুম ও নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করবে যেমনিভাবে ভেড়া হত্যা করা হয়, এর জন্য তারা আমার ক্রোধের শিকার হবে।

হযরত ইব্রাহীম (আঃ) একথাগুলো শুনে তাঁর অন-র অশান- হয়ে গেলে, মনঃকষ্টে তাঁর চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।আল্লাহ তায়ালা আবারো তাঁর কাছে অহীর মাধ্যমে বললেনঃ হে ইব্রাহীম, তোমার সন্তানকে নিজ হাতে যবেহ করতে না পারার সেই শোকটা হোসেইনের হত্যার শোকের সাথে পবির্তন করে দেব এবং মুসিবাতের ক্ষেত্রে সবরের দরুন সর্বোচ্চ সওয়াব তোমাকে প্রদান করবো। আর একারণেই আল্লাহ তায়ালা বলেছেন ‘অফাদানাহু বিযিবহে আজীম’ অথাৎ আমি তার পরিবর্তে মহান যবেহ কবুল করলাম।
আল্লাহ্ পাকের দরবারে যে সর্বোচ্চ সম্মান শাহাদতে জাহেরী ও শাহাদতে ছিররী রক্ষিত আছে তা আল্লাহ্ পাক হজরত ইছমাইল (আঃ)-কে দেন নাই। তা শুধু হাসনাইন (আ.) পাক দ্বয়ের জন্য রক্ষিত আছে। মওলা হাছানকে দান করবেন শাহাদতে ছিররী ও মওলা হােছাইনকে দান করবেন শাহাদতে জাহেরী। বিনা দোষে গুপ্তভাবে যে কোন উপায়ে নিহত হওয়াকে শাহাদতে ছিররী ও ধর্ম রক্ষার জন্য সম্মুখ যুদ্ধে জেনে শুনে আত্ম বিসর্জন করাকে বলা হয় শাহাদতে জাহেরী।

ইমাম বংশ হলেন করুনার কাওছার। গলায় ছুরি হাসি মুখে বরণ করে নিয়েছেন তবু আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করেন নি। ফরিয়াদ করলে বিরোধী দল সঙ্গে সঙ্গে ধ্বংস হয়ে যেত। আঘাতের বিনিময়ে প্রেম বিতরণ করাই ইমাম বংশের আদর্শ। নবী করিম (দঃ) ও ইমাম বংশ কাউকে ধ্বংস করতে এ দুনিয়াতে আসেননি। তারা এসেছেন গড়তে। হাসি মুখে প্রাণ বলি দিয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গণ করে প্রেমের মূল্যবােধকে দাঁড় করাতে। একবার ভেবে দেখুন ত?
অবশ্য বেআদবী না করে নিরপেক্ষ মন নিয়ে হজরত ইবরাহিম (আঃ) তার আপনি পুত্রকে কোরবানী করতে যেয়ে হাত থর থর করে কাঁপছে। মমতার কাছে উৎসর্গ হার মানতে চাইছে। তাই কাপড়ে চােখ দুটাে বেঁধে নিতে হল, অথচ আড়াই দিনের উপবাসী তৃষ্ণিত অবস্থায় থেকে পরিবার পরিজনের মায়া ত্যাগ করে আল্লাহ্র রাহে হজরত ইমাম হােছাইন নামক হজরত মোহাম্মদ (দঃ) কারবালার মাঠে একটি একটি করে সন্তানদের কোরবানী দিয়ে চলেছেন। পা হতে মাথা পর্যন্ত হুবহু হজরত মোহাম্মদ (দঃ)-এর সঙ্গে মিল হজরত আলী আকবর যার কণ্ঠস্বর শুনতে নবী করীম (দঃ)-এর কণ্ঠস্বর বলে ভুলু হয়। সেই সদ্য যৌবন প্রাপ্ত হজরত আলী আকবর শাহাদত বরণ করলেন। শহীদ হলেন দুধের শিশু আলী আছগর। তবুও আল্লাহ পাকের কাছে করেন নি কোন ফরিয়াদ, কোন কাতর যাচঞা।কেউ কি ভেবে দেখেছে সবাই জাহেরী ভাবে হজ্ব করে পশু কোরবানী দিচ্ছেন আর তাদের কে বাচানোর জন্য কারবালায় কোরবানী হয়ে গেলেন আল্লাহ পাক ও রাসুলে পাক (দ:) প্রিয়জন। ভেবে দেখুনত, একটু চােখ বন্ধ করে, চিন্তা করুন ত সেই কারবালার দৃশ্য। সেই পানির পিপাসায় ছান্তিফাটা আলী আছগরের শহীদ হবার দৃশ্য। তুলনা করতে গেলে কি হজরত ইবরাহিমের (আঃ) কোরবানী প্ৰদীপ হতে সূর্য খোঁজার মত তুলনা হয় না!হযরত ইসমাইল (আ:) এর প্রাণ দিতে হয় নি, তাঁর পরিবার পরিজনদেরকেও আল্লাহর পথে বিসর্জন দিতে হয় নি, তারপরেও হযরত ইসমাইল (আ:)”র স্মরণে পৃথিবী আজও কম্পমান।আর মওলা হোসাইন (আ:) তাঁর ৬ মাসের শিশুটি সহ মোট ৭২ জনকে কোরবানী দেবার পরেও মুসলিম জাতির সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারেন নি।আফসোস, কতটা দূর্ভাগ্য! কারবালায় নবী পরিবারের আত্মোৎসর্গের কথা, মহা আত্মত্যাগের কথা মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ ছাড়া মুসলিম বিশ্বের তেমন কেউ জানে না বললেই চলে ।

আমার প্রশ্ন হল আলাহর হুকুমের কারনে সুন্নাতে ইব্রাহিমী (আ:) খাতিরে মুসলমান হিসাবে সুন্নি- শিয়া,কাদিয়ানী, সালাফি, ওহাবী -মওদুদী,খারেজী-আহলে হাদীস সব ফেরকা মিলে শত লক্ষ কোটি পশু কোরবানী আল্লাহ কে খুশি করলাম।কিন্তু পৃথিবীর ইতিহাসে কুলকায়েনাতের সেরা কোরবানী কোরবানী হোসাইনী (আ:) (সপরিবার সবাই শহীদ) জন্য আমরা মুসলমান নামধারীরা কি করছি।ইসলাম কে বাচনোর জন্য হোসাইনী কোরবানী(আ:)এত তুচ্ছ হয়ে গেল । সুন্নাতে ইব্রাহিমী কোরবানীর জন্য যেখানে লক্ষ কোটিরপশু জবেহ করলাম সেখানে হোসাইনী কোরবানী (আ:) জন্য আমরা মুসলমানরা একদম নীরব।

গ্রন্থসূত্রঃ- জবেহ আজিম এবং জিকিরে শাহাদাত— সৈয়দ হোসাইন উল হক।

প্রচারে মোঃ শামসীর হায়দার

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

ইসলামে হযরত আবু তালিব আঃ এর অবদান:::::::::::::_________পর্ব (((((৩)))))_____________:::::::::::::::মহানবী (সা.) জন্মের পূর্বেই পিতাকে হারিয়েছেন। মায়ের কাছে তিনি পিতা আব্দুল্লার ইন্তেকালের কথা জানতে পেরেছেন। ছয় বছর বয়সে তিনি মাতা আমেনার স্নেহ থেকেও বঞ্চিত হন।ফলে তাঁর লালন-পালনের ভার পিতামহ জনাব আব্দুল মোতালিব গ্রহণ করেন। মাত্র দুই ছর পর তিনিও এ পৃথীবি ছেড়ে চলে গেলেন। শিশু মোহাম্মদ (সাঃ) অসহায় হয়ে পড়লেন। মহিমান্বিত আল্লাহ তাঁর হাবিবের জন্য নিজ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছেন। আট বছর বয়সে শুরু হলো নবী (সা.)-এর জীবনের এক নতুন অধ্যায় , তাঁর দায়িত্ব গ্রহণ করলেন পিতৃব্য হযরত আবু তালিব। মোহাম্মদ (সা.)-কে চাচা আবু তালিব ও চাচি ফাতেমা বিনতে আসাদ প্রাণাধিক ভালবাসতেন। মোহাম্মদ (সা.)-কে তিনি কখনো মায়ের শূন্যতা বুঝতে দেননি। নিজেদের সীমাবদ্ধতা থাকলেও মোহাম্মদ (সা.)-কে তা অনুধাবন করতে দেননি। এই মহিমান্বিত পরিবারের অকৃত্রিম ভালবাসা , আদর-যন্ন আর লালন-পালন ও ছত্রছায়ায় প্রিয় নবী (সা.)-এর শিশু , কিশোর ও যৌবনকাল অতিবাহিত হয়েছিল। জীবনের সেই সময়গুলো কত সুখময় ছিল নবী (সা.) তা বুঝতে পেরেছিলেন , যখন মাতৃসুলভ চাচি ইন্তেকাল করলেন।নবী (সা.) সেই মহিয়সী চাচিকে‘ মা’ বলেই ডাকতেন। তাঁর ইন্তেকালে নবী (সা.) দীর্ঘদিন অশ্রুসজল ছিলেন। হযরত আবু তালিব যেমনি পিতার ন্যায় স্নেহ ভালবাসা দিয়ে নবীকে আগলে রেখেছেন , তেমনি তাঁর ভরণ-পোষণ , পোশাক-পরিচ্ছেদ ও অন্যন্য প্রয়োজন মিটিয়েছেন অকৃপণ ভাবে। এমনকি নিজের সন্তানের চেয়েও নবীকে দিয়েছেন অগ্রাধিকার। নিজেরা কষ্টে থাকলেও নবী (সা.)-এর কষ্টে থাকা তিনি সহ্য করতে পারতেন না।এখানে আমি একটি হাদীস উপস্থাপন করছি: রাসূল (সা.) বলেছেন ,“ যে ব্যক্তি তার জান-মাল , ইজ্জত-সম্মান ও সন্তানসন্ততি এবং সকল মানুষের চাইতে আমাকে অধিক ভালবাসে না তার ঈমান পরিপূর্ণ নয়” । উল্লিখিত হাদীসের আলোকে প্রমাণ হয় হযরত আবু তালিব ছিলেন একজন পরিপূর্ণ ঈমানদার। একজন স্নেহবৎসল পিতা , দয়ালু চাচা ও একজন দরদি অভিভাবক। তাঁরা উভয়ই চাচা এবং ভ্রাতুষ্পুত্র একে অন্যের প্রতি এতটাই অনুরোক্ত ছিলেন যেন মনে হতো তাঁদের জীবন পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। দেশে বিদেশে হযরত আবু তালিব আঃ যেখানেই সফর করতেন নবীকে সাথে রাখতেন। যে কারণে আরবের লোকেরা মোহাম্মদ (সা.)-কে‘ আবু তালিবের ইয়াতিম’ নামেও ডাকত। ভাতিজাকে কখনও তিনি একা ছাড়তেন না , এমনকি ঘুমানো কালেও পাশে নিয়ে ঘুমাতেন এরূপে নবী (সা.)-এর 8 বছর বয়স থেকে 25 বছর বয়স পর্যন্ত সুদীর্ঘ 17 টি বছর তিনি হযরত আবু তালিবের গৃহে অবস্থান করেন।আর যেখানে এত বছর নবী (সা.) অবস্থান করলেন , সেখানে যে খাওয়া দাওয়া করেছেন তা নিশ্চই হালাল ছিল। কারণ নবী-রাসূলগণ হারাম খাদ্য গ্রহণ করেন না। তাহলে যারা বলেন ,“ আবু তালিব ঈমান আনেননি” । তারা নবী (সা.)-কে কোথায় পৌঁছালেন ? কারণ পবিত্র কোরআনে সূরা তওবার 28 নং আয়াতে আল্লাহ পাক উল্লেখ করছেন :) يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْمُشْرِ‌كُونَ نَجَسٌ(“ হে ইমানদারগন! নিশ্চই মুশরিকরা হচ্ছে অপবিত্র” ।📚📚📚📚তাই ঐ সকল ওলামাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই আপনাদের উক্তি সত্য হলে , নবী (সা.) কি 17 বছর হালাল খাদ্য গ্রহণ থেকে বঞ্চিত ছিলেন ? যা আদৌ বিশ্বাস যোগ্য নয়। পবিত্র কোরআনে আমরা জানতে পেরেছি নবী মূসা (আ.)-কে ফেরাউনের স্ত্রী আছিয়া (আ.) যখন লালন-পালনের সিদ্ধান্ত নিলেন এবং এই শিশুকে দুধ পান করানোর জন্য ধাত্রীর আহবান করলেন অতঃপর অসংখ্য ধাত্রীর আগমণ ঘটল কিন্তু কেউ শিশু মূসাকে দুগ্ধ পান করাতে সক্ষম হল না। তখন সেখানে উপস্থিত নবী মূসা (আ.)-এর আপন ভগ্নী বললেন ,“ আমি আপনাদের এমন এক ধাত্রীর সন্ধান দিতে পারি , হয়তো এই শিশু তাঁর দুগ্ধ পান করবে” । আর বাস্তবেও তাই ঘটল , অর্থাৎ আল্লাহ তাঁকে মায়ের কাছে ফিরিয়ে নিলেন এবং মায়ের দুগ্ধই পান করালেন। উক্ত ঘটনায় ইহাই প্রমানিত হয় যে , আল্লাহর মনোনীত নবী-রাসূলগণ আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত যখন যা ইচ্ছা খাদ্য কিংবা পানীয় গ্রহণ করেন না।দুঃখজনক হলেও সত্য যে , আমাদের প্রিয় নবী (সা.) সম্পর্কে কিছু সংখ্যক মুসলমান নামধারী উম্মত এমন সব প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন , যা শুনে অন্য ধর্মের অনুসারীরাও লজ্জাবোধ করেন। যেমন রাসূল (সা.)-কে সদা সর্বদা অভাবী , ক্ষুধার্ত ও অসহায় হিসেবে উপস্থাপন , তালিওয়ালা জামা পরিধারণ , রাসূল (সা.)-এর সিনাছাক করে ময়লা দূরিকরণ , রাসূল (সা.)-কে নিরক্ষর নির্ধারণ ও চল্লিশ বছর পর নবী নির্ধারণ সহ বেশ কিছু অসঙ্গতিপূর্ণ কিচ্ছা-কাহিনী আমাদের সমজে প্রচলিত আছে। অথচ পবিত্র কোরআনে বেশকিছু সংখ্যক নবীর নাম ও বর্ণনা রয়েছে , যাঁদের কারো কখনো সিনাছাক করতে হয়নি এবং কেহ নিরক্ষর ছিলেন এমন প্রমাণও নেই। তাই প্রিয় নবী (সা.)-এর উম্মত হিসাবে প্রত্যেক মুসলমানের অন্তত নূন্যতম আকিদা এই হওয়া উচিৎ ছিল যে , আমাদের সমাজে যে সকল বক্তব্য রাসূল (সা.)-এর মান-মর্যাদাকে হেয় প্রতিপন্ন করে এবং ভিন্ন ধর্মের লোকেদের কাছে রাসূল (সা.)-এর শাণ ও মানকে প্রশ্নের সন্মূখিন করে তোলে , অন্তত সে সকল প্রচার-প্রচারণা থেকে বিরত থাকা।উদহরণ স্বরুপ বলা যেতে পারে যে , ইসলামের ইতিহাসের প্রথম তিন খলিফার সন্মানিত পিতাগণ , কে কোন অবস্থানে ছিলেন বা তাঁরা প্রকাশ্যে কলেমা পড়ে ইসলামের ছায়াতলে এসেছিলেন কি না এবিষয়ে ইতিহাসে তেমন কোন আলোচনা পরিলক্ষিত হয় না। অথচ চতুর্থ খলিফার সম্মানিত পিতা সম্পর্কে যারা মর্যাদাহানীকর বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন তারা কি নিশ্চিত বলতে পারেন যে , দ্বীন ইসলাম এতে কত টুকু উপকৃত হয়েছে ?আমাদের প্রিয়নবী হযরত মোহাম্মাদ (সা.)-এর 8 বছর বয়স থেকে শুরু করে তাঁর 50 বছর বয়স পর্যন্ত সুদীর্ঘ 42 বছরের এক অকৃত্রিম অভিভাবক ছিলেন হযরত আবু তালিব। তিনি যে কেবলমাত্র নবী (সা.)-এর অভিভাবক ছিলেন এমন নয় , তিনি ছিলেন সত্য ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠাতা , কল্যানের অগ্রদূত , মজলুমের বন্ধু ও জালেমের শত্রু। নবী (সা.)-এর বিভিন্ন বক্তব্যের মাধ্যমেও তা প্রকাশ পেয়েছে।হযরত আবু তালিব সম্পর্কে কিছু লিখতে গিয়ে ক্ষুদ্র একজন লেখক হিসেবে যে বিষয়টি বারবার আমার অনুভূতিতে নাড়া দিয়েছে তা সমীপে প্রকাশ করছি।আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম খালিফা তুল বিলা ফাসাললা'নাতুল্লাহি আল্লাল কাজেবিননিবেদক______ কবির উদ্দিন

আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদদিন ওয়া আলে মোহাম্মদনবী-নন্দিনী হযরত ফাতিমা যাহরার মাহাত্ম্য যতই বর্ণনা করা হোক না তা অপূর্ণই থেকে যাবে ঠিক যেমনি জানা যায়নি তাঁর পবিত্র কবর কোথায় রয়েছে এবং তা গোপন বা অজ্ঞাত থাকার রহস্যই বা কী।তিনি কেবল সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নারী ছিলেন না। বলা হয় মহান আল্লাহর পর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হলেন মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা) এবং তাঁর পর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হলেন আমিরুল মু'মিনিন হযরত আলী (আ)। আর তাঁর পরই সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হলেন হযরত ফাতিমা। তাই এমন ব্যক্তিদের মহিমা ও মহত্ত্ব পুরোপুরি তুলে ধরা মহান আল্লাহর পর কেবল এই তিন শীর্ষ সৃষ্টির পক্ষেই সম্ভব। বলা হয় ইমাম হাসান ও হুসাইনসহ মাওলা মোহাম্মদ রাসুলুল্লাহর আহলে বাইতের ১১ জন সদস্য মা ফাতিমাকে তাঁদের জন্য আদর্শ বা হুজ্জাত বলে মনে করতেন।এমন কোনো নারীর কথা কি কল্পনা করা যায় যিনি তার দুই শিশু-সন্তানসহ তিন দিন ধরে ক্ষুধার্ত হওয়া সত্ত্বেও স্বামীকে খাবার সংগ্রহের কথা বলছেন না ইসলামের জন্য তাঁর গুরুত্বপূর্ণ কাজে মনোযোগ বিঘ্নিত হবে বলে? অথবা এমন নারীর কথা কি চিন্তা করা যায় যিনি পর পর তিন দিন শুধু পানি পান করে রোজা রাখা সত্ত্বেও ইফতারের সময় ক্ষুধার্ত সাহায্যপ্রার্থীকে খাদ্য দেয়ার জন্য সেই তিন দিন কেবল পানি দিয়েই ইফতার করেন? আসলে হযরত ফাতিমা যাহরা ছিলেন মানবজাতির চিরন্তন গৌরব ও আদর্শ মানুষের প্রতীক তথা মানবতা ও মনুষ্যত্বের পূর্ণতারঅন্যতম মডেল। এ ধরনের মানুষ পৃথিবীতে জন্ম না নিলে আদর্শের দিক থেকে মানবজাতির মধ্যে বিরাজ করতো ব্যাপক অপূর্ণতা এবং আদর্শিক শূন্যতা। মাওলা মোহাম্মদ সাঃ এর পুত্র সন্তানরা শৈশবেই ইন্তিকাল করায় মক্কার কাফিররা যখন মহানবীকে আবতার বা নির্বংশ বলে বিদ্রূপ করতো তখন মহান আল্লাহ তাঁকে দান করেন হযরত ফাতিমা যাহরা। পবিত্র কুরআনে তাঁকে উল্লেখ করা হয়েছে 'কাওসার' হিসেবে যার অর্থ মহত্ত্ব আর নেয়ামতের চির-প্রবহমান ঝর্ণা। আল্লামা ফখরুদ্দীন রাযী বলেছেন, হযরত ফাতিমার শানেই সুরা কাওসার নাযিল হয়েছে। তিনি বলেন, অনেক অত্যাচার সত্ত্বেও হযরত ফাতিমার বংশধারা পৃথিবীতে টিকে আছে, অন্যদিকে বনু উমাইয়্যা ধ্বংস হয়ে গেছে।অবশ্য পরবর্তী যুগে বনু আব্বাসও রাসূলের পরিবারের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন চালিয়েছিল। অবশেষে তারাও ধ্বংস হয়ে গেছে। যারা রাসূলের বিরুদ্ধে কথা বলত তাদের বংশধরদের কোন খবর পৃথিবীর মানুষ জানে না, নেয় না। রাসূলের বংশধরদের নিশ্চিহ্ন করার জন্য সব ধরনের চেষ্টা করেও তারা সফল হয়নি। একের পর এক রাসূলের বংশধরদের শহীদ করা সত্ত্বেও যারা পুত্রসন্তান নিয়ে গর্ব বোধ করত তাদের কোন খবর আজ বিশ্ববাসী জানে না, অথচ রাসূলের বংশধারা হযরত ফাতিমার মাধ্যমে কিয়ামত পর্যন্ত বজায় থাকবে। এ বংশেই ইমাম মাহদী (আ.) আবির্ভূত হবেন এবং তিনি সারা বিশ্বে আল্লাহর ধর্মকে প্রতিষ্ঠিত করবেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সকল নারীর সন্তানকে যুক্ত করা হয় বাবার সাথে শুধু ফাতিমা ছাড়া। ফাতিমার সন্তানদের আমার সাথে সম্পর্কিত করা হয়েছে।’আর সেজন্যই আমরা ইতিহাসে দেখতে পাই যে, হযরত ফাতিমার সন্তানদের মানুষ ‘ইয়াবনা রাসূলিল্লাহ’ অর্থাৎ ‘হে রাসূলের সন্তান’ বলে সম্বোধন করত।মহান আল্লাহর নির্দেশে মহানবী (সা.) তাঁর কন্যা সন্তানের নাম রাখেন ফাতিমা। ‘ফাত্‌ম্‌’ শব্দের অর্থ রক্ষা করা। এ সম্পর্কে মহানবী বলেন : ‘তাঁর নামকরণ করা হয়েছে ফাতিমা। কারণ, আল্লাহ তাঁকে ও তাঁর অনুসারীদের জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত রেখেছেন।’ হজরত ফাতিমা(সা) আদর্শ মানবাত্মার প্রতীকহযরত ফাতিমা ছিলেন নারী ও পুরুষ তথা গোটা মানব জাতির জন্য অসাধারণ ত্যাগ, বিশ্বস্ততা, অন্যায়ের ব্যাপারে আপোসহীনতা, সততা, দানশীলতা, ধৈর্য, চারিত্রিক পবিত্রতা, আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্টিসহ বহু মহান স্বর্গীয় গুণের আদর্শ। স্নেহময়ী জননীর মত বিশ্বনবীর সেবা-যত্ন করা এবং বিপদের সময় তাঁর সহায়তায় এগিয়ে আসার জন্য মহীয়সী নারী ফাতিমা'র অন্য একটি উপাধি উম্মে আবিহা বা পিতার জননী। বিশ্বনবী (সা:) তাঁকে সর্বযুগের শ্রেষ্ঠ নারী বলে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহর দরবারে তাঁর বিশেষ মর্যাদার কারণেই ফাতিমাকে দেখলে দাঁড়িয়ে তাকে সালাম দিতেন মহানবী (সা)। রাসুলে খোদা বলেছেন, 'ফাতিমা আমার দেহের অংশ, যা কিছু তাঁকে সন্তুষ্ট করে তা আমাকে সন্তুষ্ট করে এবং যা কিছু আমাকে সন্তুষ্ট করে তা আল্লাহকেও সন্তুষ্ট করে, আর যা কিছু ফাতিমা কে কষ্ট দেয়, তা আমাকে কষ্ট দেয়, আর যা আমাকে কষ্ট দেয়, তা আল্লাহকেও কষ্ট দেয়।' হযরত ফাতিমা বেহেশতে সর্ব প্রথম প্রবেশ করবেন বলে বিশ্বনবী উল্লেখ করেছেন। অনেকেই মনে করেন প্রিয় কন্যা ফাতিমাকে নিজের দেহের অংশ বলে মহানবী (সা) এটাও বুঝিয়েছেন যে পিতার রিসালাতের অন্যতম কাণ্ডারি ছিলেন ফাতিমা। এই মহীয়সী নারীর অনন্য ত্যাগ-তিতিক্ষা ও সেবা না থাকলে ইসলাম বিলুপ্ত হয়ে যেত।হযরত ফাতিমাকে কেউ কেউ কষ্ট দেবেন- এটা জানতেন বলেই বিশ্বনবী (সা) তাঁকে রাগানোর পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘ফাতিমা আমার অস্তিত্বের অংশ। যে তাঁকে রাগান্বিত করে সে আমাকে রাগান্বিত করে এবং ফাতিমা কোন ব্যাপারে ক্রুদ্ধ হলে আল্লাহও ক্রুদ্ধ হন এবং ফাতিমার আনন্দে আল্লাহও আনন্দিত হন।’অনেক মহৎ গুণের আদর্শ হযরত ফাতিমার রয়েছে অনেক উপাধি। যেমন, তাঁর উপাধি ছিল আস-সিদ্দিক্বা বা সত্য-নিষ্ঠ,আল-মুবারাকাহ বা বরকতপ্রাপ্ত,আত-ত্বাহিরা বা পবিত্র,আল-মারজিয়া বা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট, আজ জাকিয়া বা সতী, মুহাদ্দিসাহ বা হাদিসের বর্ণনাকারী, সাইয়্যিদাতুন নিসায়িল আলামিন বা নারীকুলের মধ্যে শ্রেষ্ঠ, খাতুনে জান্নাত বা বেহেশতি নারীদের নেত্রী, আয যাহরা বা দ্যুতিময় ইত্যাদি। আর পিতা মহানবীর প্রতি অশেষ ভালোবাসা ও সেবার কারণে তাঁকে বলা হত উম্মে আবিহা বা পিতার মাতা।হযরত ফাতিমা যখন নামাজের জন্য দাঁড়াতেন তখন তাঁর জ্যোতি আকাশের ফেরেশতা ও অন্যান্যদের দিকে ছড়িয়ে পড়ত। আর এ কারণে তাঁকে যাহরা উপাধি দেয়া হয়।রাসুল (সা)’র ওফাতের পর তাঁকে সান্ত্বনা দিতে আসতেন ওহির ফেরেশতা। ওহির ফেরেশতা তাঁকে ভবিষ্যৎ বিষয়ে অনেক কিছু জানান। আর তার থেকে সেসব বিষয় লিখে রাখেন হযরত আলী (আ)। আর এ জন্যই ফাতিমাকে বলা হয় মুহাদ্দিসা।হযরত ফাতিমা খুবই সাধারণ জীবন যাপন করতেন। সংসারের যাবতীয় কাজ তিনি নিজের হাতে করতেন। মশক দিয়ে পানি তুলতে তুলতে তাঁর শরীরে দাগ পড়ে গিয়েছিল। তিনি যাঁতার মাধ্যমে এত পরিমাণ আটা তৈরি করতেন যে, তাঁর হাতে ফোস্কা পড়ে যেত। আর সেই আটা দিয়ে রুটি তৈরি করে সেগুলো মদীনার দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করতেন। হযরত ফাতিমার কাপড়ের পোশাকে থাকতো তালি। পার্থিব কোন বস্তুই তাঁকে আকৃষ্ট করতে পারত না। আর এজন্যই রাসূল (সা.) তাঁকে ‘বাতুল’ উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন।হযরত ফাতিমা সারারাত জেগে নামায পড়তেন, মহান আল্লাহর যিকির করতেন এবং রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উম্মতের জন্য দো‘আ করতেন। তিনি এত বেশি নামায পড়তেন যে, তাঁর পা ফুলে যেত। সংসারের কাজ করার সময়ও তাঁর মুখে আল্লাহর যিকির থাকত।রাসূলের স্ত্রী হযরত উম্মে সালামাহ্ বলেন : রাসূলের ওফাতের পর ফাতিমাকে দেখতে যাই এবং তাঁর অবস্থা জানতে চাই। তিনি জবাব দিলেন : অত্যন্ত দুঃখ-কষ্টে দিন অতিবাহিত হচ্ছে।এ রকম কষ্টের মধ্য দিয়েই রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর ওফাতের অল্প কিছুদিন পরই হযরত ফাতিমা এ পৃথিবী থেকে বিদায় নেন। রাসূলে খোদা ওফাতের আগে হযরত ফাতিমার কানে কানে বলে গিয়েছিলেন যে, তিনিই তাঁর সাথে প্রথম মিলিত হবেন। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় রাসূলকে এও জানিয়েছিলেন যে, কীভাবে হযরত ফাতিমা তাঁর সাথে এত তাড়াতাড়ি মিলিত হবেন। আর সেজন্যই রাসূল (সা.) বারবার তাঁর উম্মতকে সতর্ক করছেন যে,তারা যেন হযরত ফাতিমাকে কষ্ট না দেয়,তাঁকে অসন্তুষ্ট না করে। হযরত ফাতিমা যাহরা পিতার শারীরিক বিদায়ের কারণে যতটা না দুঃখ পেয়েছিলেন তার চেয়েও বেশি ব্যথা পেয়েছিলেন পিতার আদর্শ তথা ইসলামের শিক্ষা ম্লান ও বিকৃত হয়ে পড়ার কারণে। রাসুলে খোদার কাছেই তিনি শুনেছিলেন তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের ওপর অনেক বিপদ ও মুসিবত তথা ইসলামের ওপরই অনেক দুর্যোগ নেমে আসবে। আর সেইসব বিপদ মুকাবিলার মত কঠিন ধৈর্যের খোদায়ী পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হয়েছিলেন সর্বকালের সেরা মহামানবী হযরত ফাতিমা ঠিক যেভাবে সিফফিন ও কারবালা প্রান্তরসহ যুগে যুগে নানা বিপদ, সংকট ও শত্রুতার মোকাবেলায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন বিশ্বনবী (সা)’র পবিত্র আহলে বাইতের অন্যান্য সদস্য।কোনো কোনো ঐতিহাসিক বর্ণনা অনুযায়ী রাজনৈতিক কারণে হযরত ফাতিমাকে আহত করা হয়েছিল প্রভাবশালী মহলের পক্ষ হতে এবং পরবর্তীকালে এ আঘাতজনিত কারণেই তিনি শাহাদাত বরণ করেন। ফাতিমা আমার দেহের অঙ্গ, চোখের জ্যোতি, অন্তরের ফল এবং আমার রূহস্বরূপ: মহানবী (সা)অনেকেই মনে করেন শত্রুতার প্রেক্ষাপটে হযরত ফাতিমাকে দাফন করা হয়েছিল মধ্যরাতে গোপনীয়ভাবে অতি গোপন স্থানে যা আজো গোপন রয়েছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত গোপন থাকবে। হযরত ফাতিমা জানতেন কখন তাঁর মৃত্যু হবে। আর এ জন্য তিনি নিজে গোসল করে নতুন ও পরিষ্কার পোশাক পরে কিবলামুখী হয়েছিলেন।তিনি নিজের মৃত্যু কবে হবে এবং তাঁর দুই প্রিয় সন্তান হযরত হাসান ও হুসাইন কিভাবে মারা যাবেন সেইসব তথ্যসহ ভবিষ্যৎ ইতিহাসের অনেক খবর রাখতেন। হুসাইন (আ.)'র হত্যাকারীদের অভিশাপ দিয়ে গেছেন তিনি। মদিনার নারী সমাজ ধর্মীয় বিষয়সহ নানা বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করত হযরত ফাতিমার কাছ থেকে। ফাদাক সম্পর্কিত তাঁর ভাষণ এই মহামানবীর অতুল জ্ঞান, খোদাভীরুতা এবং দূরদর্শিতাকেই তুলে ধরে।মাওলা মোহাম্মদ (সা.) বলেছেন, মহান আল্লাহ আলী, তাঁর স্ত্রী ও তাঁদের সন্তানদেরকে মানুষের জন্য হুজ্জাত বা দলিল করেছেন এবং তাঁরা হল জ্ঞানের দরজা।মহান আল্লাহর ইচ্ছায় হিজরতের দ্বিতীয় বর্ষে বা দ্বিতীয় হিজরিতে হযরত ফাতিমা যাহ্‌রা (সা.আ.) বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হন আমিরুল মু'মিনিন হযরত আলী (আ.)'র সঙ্গে। আলী (আ.) ছিলেন সত্য, ন্যায়বিচার ও খোদাভীরুতার প্রতীক। আলী (আ.)'র ঘরে তিনি হন আদর্শ স্ত্রী ও মাতা। গড়ে তোলেন বেহেশতি যুবকদের সর্দার হযরত ইমাম হাসান, ইমাম হুসাইন (আ.) এবং জাইনাব (সা.)'র মত ইসলামের ইতিহাসের প্রবাদতুল্য গৌরব সৃষ্টিকারী অনন্য সন্তান। বিয়ের দিন এক দরিদ্র নারী নবী-নন্দিনীর কাছে পোশাক সাহায্য হিসেবে চাইলে তিনি নিজের বিয়ের জন্য তৈরি নতুন পোশাকটি তাকে দান করে দেন। এর মাধ্যমে তিনি কুরআনের এই আয়াতটি বাস্তবায়ন করেছিলেন যেখানে সর্বোত্তম ও প্রিয় বস্তু থেকে দান করতে বলা হয়েছে। ফাতিমা যাহ্‌রা (সা.আ.) মুসলিম সমাজের বিচ্যুতি ঠেকানোর জন্য ও সত্যের জন্য সংগ্রামের সামাজিক দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রেও নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হন। নারীমুক্তির আদর্শ হিসেবে এই মহামানবীর জন্মদিন ইরানসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে পালিত হয় নারী ও মা দিবস হিসেবে। মাওলা হযরত মুহাম্মাদ (সা:) হযরত ফাতিমা (সা:) সম্পর্কে বলেছেন, ফাতিমা আমার দেহের অঙ্গ, চোখের জ্যোতি, অন্তরের ফল এবং আমার রূহস্বরূপ। সে হচ্ছে মানুষরূপী স্বর্গীয় হুর। প্রসিদ্ধ হাদীস গ্রন্থ বুখারীতে এসেছে, মহানবী (সা:) বলেছেন, ফাতিমা আমার অংশ। যে কেউ তাকে অসন্তুষ্ট ও ক্রোধান্বিত করলো সে আমাকেই অসন্তুষ্ট ও ক্রোধান্বিত করলো। একই ধরনের হাদীস বর্ণিত হয়েছে মুসলিম শরীফ ও আহমদ ইবনে শুয়াইব নাসায়ীর ফাজায়েল গ্রন্থসহ আরো অনেক হাদীস গ্রন্থে। হাদীসে এটাও এসেছে যে যা আল্লাহর রসূল (সা:)কে অসন্তুষ্ট করে তা আল্লাহকেও অসন্তুষ্ট বা ক্রুদ্ধ করে। হযরত ফাতিমা (সা:)'র উচ্চতর মর্যাদা উপলব্ধি করার জন্য কেবল এ হাদীসই যথেষ্ট। বিশ্বনবী (সা:)'র আহলে বাইত (আঃ)'র সদস্য হযরত ফাতিমা যে নিষ্পাপ ছিলেন তাও এসব বর্ণনা থেকে স্পষ্ট। হযরত ফাতিমা (সা:)'র সান্নিধ্য ও সেবা না পেলে আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী (আঃ)'র জীবনও পুরোপুরি বিকশিত ও পরিপূর্ণতা লাভ করতো না। তাঁরা ছিলেন একে-অপরের প্রতি পুরোপুরি সন্তুষ্ট। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা:) হযরত ফাতিমা (সা:)-কে মানুষের আকৃতিতে ফেরেশতা বলেও প্রশংসা করেছেন। তিনি বলতেন, আমি যখনই বেহেশতের সুবাস পেতে চাইতাম তখনই কন্যা ফাতিমার ঘ্রাণ নেই।আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগী করা ছাড়াও প্রায়ই রোজা রাখা ও গরীব-দুঃখীকে অসাধারণ মাত্রায় দান-খয়রাত করা ছিল হযরত ফাতিমা (সা:)'র একটি বড় বৈশিষ্ট্য। জনসাধারণ বা কারো উদ্দেশ্যে যে কোনো বক্তব্য রাখার আগে দীর্ঘক্ষণ ধরে মহান আল্লাহর বিভিন্ন নেয়ামতের কথা খুব সুন্দর ও হৃদয়স্পর্শী ভাষায় তুলে ধরে আল্লাহর প্রশংসা করা ছিল তাঁর অন্য একটি বড় বৈশিষ্ট্য। বিশ্বনবী (সা:)'র আহলে বাইতের অন্য সদস্যদের মত তিনিও কখনও অন্যায়ের সাথে আপোষ করেন নি। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করা বা সক্রিয় থাকার মধ্যে তিনি খুঁজে পেতেন আনন্দ। হযরত ফাতিমা (সা:) বলেছেন, আল্লাহর সেবায় মশগুল হয়ে যে সন্তুষ্টি পাই তা আমাকে অন্য সব সন্তুষ্টি বা আনন্দ থেকে বিরত রাখে এবং সব সময় মহান আল্লাহর সুন্দর দৃষ্টি আমার দিকে নিবদ্ধ রাখার প্রার্থনা ছাড়া আমার অন্য কোনো প্রত্যাশা নেই। ফাতিমা সিদ্দিকা (সা. আ.) ঐশী পন্থায় অনেক জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। 'মাসহাফই ফাতিমা' নামে খ্যাত গ্রন্থটির সমস্ত তথ্য সন্নিবেশিত হয়েছে জিবরাইল ফেরেশতার সঙ্গে ফাতিমা (সা. আ.)'র কথোপকথনের মাধ্যমে যা লিখে গেছেন হযরত আলী (আ.)। রাসূল (সা.)'র মৃত্যুর পর পিতার বিয়োগ-ব্যথায় কাতর ফাতিমাকে সান্ত্বনা দিতে আসতেন স্বয়ং জিবরাইল (আ.)। হযরত ফাতিমা ইমাম হুসাইন (আ.)'র হত্যাকারীদের অভিশাপ দিয়ে গেছেন। মদিনার নারী সমাজ ধর্মীয় বিষয়সহ নানা বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করত ফাতিমা (সা.আ.)'র কাছ থেকে। ফাদাক ও মানজিল শীর্ষক তাঁর ভাষণ এই মহামানবীর অতুল জ্ঞান, খোদাভীরুতা এবং দূরদর্শিতাকেই তুলে ধরে।নবী-নন্দিনী (সা:) বলেছেন, পৃথিবীতে তিনটি জিনিস আমার খুবই প্রিয়। আল্লাহর পথে ব্যয়, রাসূলে খোদা (সা:)র চেহারার দিকে তাকানো এবং কুরআন তিলাওয়াত। পবিত্র কুরআনের আয়াত শ্রবণ মুসলমানদেরকে মুক্তির তীরে পৌঁছে দেয়। ফাতিমা (সা. আ.) রাসূল (সা.)'র উম্মতের উদ্দেশে বলেছেন: আল্লাহ ঈমানকে তোমাদের জন্য শির্ক হতে পবিত্র হওয়ার ও নামাজকে অহংকার থেকে পবিত্র হওয়ার এবং আমাদের আনুগত্য করাকে ধর্মের ব্যবস্থায় বা ধর্মকে প্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যম করেছেন, আমাদের নেতৃত্বকে অনৈক্যের পথে বাধা ও আমাদের সঙ্গে বন্ধুত্বকে ইসলামের জন্য সম্মানের মাধ্যম করেছেন। ফাতিমা বা তাঁর বংশধরদের কেউই ঐশী সম্মানকে পার্থিব ভোগের কাজে লাগান নি। আত্মত্যাগের বিশালত্বে ফাতিমা এবং তাঁর বংশধররা ইতিহাসে অনন্য। ফাতিমার ত্যাগের শিক্ষাই হল কারবালার শিক্ষা। এ শিক্ষা আজও জুলুম-নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের আদর্শ। সত্যকে জানতে হলে, স্রষ্টার পথ চিনতে হলে এবং স্বাধীন ভাবে বেঁচে থাকতে হলে ধরতে হবে হযরত ফাতিমার পথ। তাই হজরত ফাতিমা(সা) আদর্শ মানবাত্মার প্রতীকবেশুমার লানত বর্ষিত হোক দুশমনে আহলে বায়েত পারআল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদদিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম31=12=202