পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহর দৃষ্টিতে হযরত ইমাম হোসাইন ‎(আ.) -এর ব্যক্তিত্বড.মাওলানা এ.কে. ‏এম মাহবুবুর রহমান*ইমাম হোসাইন ‎(আ.) ‏শুধু একটি নাম নয় ‎,একটি ইতিহাস ‎,একটি চেতনা ‎,হক ও বাতিলের নির্ণয়কারী। দুনিয়ার ইতিহাসে ন্যায়-ইসাফকে প্রতিষ্ঠিত করা ‎,অন্যায় ‎,জুলুম ‎,নির্যাতন ‎,স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে রুখে দড়ানোর জন্য যারাই নিজের জান ও মাল দিয়ে সত্যের সাক্ষ্য হিসাবে কালোত্তীর্ণ অমর ব্যক্তিত্ব হিসাবে সত্যাণ্বেষীদের মন-মগজে স্থান জুড়ে আছেন ‎,যদের আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে যুগে যুগে কুফর ‎,শিরক তথা তাগুতের মসনদ জ্বলে পুড়ে ভস্মীভূত হচ্ছে এবং হবে ইমাম হোসাইন ‎(আ.) -এর স্থান তাদের শীর্ষে রয়েছে এবং থাকবে। ইমাম হোসাইন ‎(আ.) ‏কিয়ামত পর্যন্ত বাতিলের বিরুদ্ধে সত্যের সকল যুদ্ধের সেরা ইমাম বা অপ্রতিদ্বন্দী নেতা ।হোসাইন ‎(ﺣﺴﻴﻦ ) ‏নামটির মাঝেই রয়েছে গভীর তাৎপর্য ।ﺣﺴﻴﻦ ‏শব্দেরح ‏হরফ দিয়েﺣﺴﻦ (হুসন) ‏বা সুন্দেই ‎,আকর্ষণীয় ‎,দৃষ্টিনন্দন ‎,শ্রুতিমধুর ‎,বাহ্যিক ও আত্মিক অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব বুঝায়।س (সীন) ‏দ্বারা সাআদাতﺳﻌﺎدت ‏বা দৃঢ় প্রত্যয় ‎,ي (ইয়া) ‏দ্বারাﻳﻘﻴﻦ (ইয়াকীন) ‏বা প্রত্যয় ‎,ن (নূন) ‏হরফ ‎;দ্বারাﻧﻮر ‏বা আলো ও জ্যোতি বুঝায়। অর্থাৎﺣﺴﻴﻦ (হোসাইন ‎) ‏এমন সত্তা ‎,এমন ব্যক্তিত্ব যিনি জাগতিক ‎,মানসিক ‎,আত্মিক সকল প্রকারের সৌন্দর্যের প্রতীক ‎,সৌভাগ্য-সমৃদ্ধিরি পথ নির্দেশক ‎,দৃঢ় প্রত্যয়ীর সর্বশ্রেষ্ঠ নমুনা ‎,আপসহীনতার মূর্ত প্রতীক ‎,আর সকল যুগের সকল মানুষের জন্য নূর বা আলোকবর্তিকা। হাদীসের ভাষায়-ان ا ﻟﺤﺴﻴﻦ ﻣﺼﺒﺎ ح ا ﻟﻬﺪ ى و ﺳﻔﻴﻨﺔ ا ﻟﻨﺠﺎ ة‘ ‏হোসাইন হেদায়েতের আলোকবর্তিকা ও নাজাতের তরী’’‘ ‏হোসাইন’ ‏নামটিও অতি পবিত্র। এ নাম মানুষের দেয়া নয়। এ নামও মহান আল্লাহ তা’ ‏আলা দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লামা নাসাফী ‎(রহ.) ‏বলেন ‎:وﻟﻤﺎ وﻟﺪ اﻟﺤﺴﻴﻦ ﻗﺎل ﻳﺎ ﻣﺤﻤﺪ ان ﷲ ﻳﻬﻨﻴﻚ ﺑﻬﺬا اﻟﻤﻮﻟﻮد و ﻳﻘﻮل ﻟﻚ اﺳﻤﻪ ﺑﺎﺳﻢ اﺑﻦ هارون ﺷﺒﻴﺮ و ﻣﻌﻨﺎﻩ ﺣﺴﻴﻦ -( ﻧﺰهة اﻟﻤﺠﺎﻟﺲ،ص229)‘ ‏হোসাইন জন্ম গ্রহণ করার পর হযরত জিবরাইল ‎(আ.) ‏এসে বললেন ‎:‘‘ ‏হে মুহাম্মদ ‎(সা.) ‏আল্লাহ তা’ ‏আলা এ নবজাত শিশুর জন্মে আপনাকে অভিবাদন ও মুবারকবাদ জানিয়েছেন এবং বলেছেন ‎,হযরত হারুন ‎(আ.)– ‏এর ছলের নামে তার নাম রাখতে। তার ছলের নাম শাব্বির ‎,যার আর বি অর্থ হয় হোসাইন’’ ‏।’ (নুযহাতুল মাজালেস ‎:. 229)ইমাম হোসাইন ‎(আ.) ‏ছিলেন রাসূলে আকরাম নূরে মোজাসসাম ‎(সা.)– ‏এর আহলে বাইতের অন্যতম স্তম্ভ । আহলে বাইত সম্পর্কে আল কুরআনের আয়াত উদ্ধৃত করে রাসূলে পাক ‎(সা.) ‏তাদের পূত-পবিত্রতার কথা ঘোষণা করে ছেন। বিশ্ব বিখ্যাত হাদীস মুসলিম শরীফে বর্ণিত হয়েছে ‎:ﻋﻦ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﺧﺮج اﻟﻨﺒﻰصلى‌الله‌عليه‌وآله‌وسلم ﻏﺪاة و ﻋﻠﻴﻪ ﻣﺮط ﻣﺮﺣﻞ ﻣﻦ ﺷﻌﺮ اﺳﻮد ﻓﺠﺎء اﻟﺤﺴﻦ ﺑﻦ ﻋﻠﻰ ﻓﺎدﺧﻠﻪ ﺛﻢ ﺟﺎء اﻟﺤﺴﻴﻦ ﻓﺪﺧﻞ ﻣﻌﻪ ﺛﻢ ﺟﺎﺋﺖ ﻓﺎﻃﻤﺔ ﻓﺎدﺧﻠﻬﺎ ﺛﻢ ﺟﺎء ﻋﻠﻰ ﻓﺎدﺧﻠﻪ ﺛﻢ ﻗﺎل :( إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّـهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرً ا)‘ ‏উম্মুল মু’ ‏মিনীন হযরত আয়েশা বলেন ‎: ‏মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভোরবেলায় ঘর থেকে বের হন। তার গায়ে ছিল পশমের মোটা ইয়েমেনী চাদেই । তখন হাসান ইবনে আলী আসলেন। মহানবী তাকে এই বড় চাদরের ভেতর ঢুকিয়ে নিলেন ‎,এরপর হোসাইন আসলেন তিনি তাকেও চাদরের ভেতর ঢুকিয়ে নিলেন ‎,এরপর ফাতেমা আসলেন ‎,পয়গম্বর ‎(সা.) ‏তাকেও চাদরের ভেতর ঢুকালেন। সবশেষে আলী আসলে মহানবী আলীকেও চাদরের মধ্যে ঢুকিয়ে নিলেন। তারপর মহাগ্রন্থ আল কুরআনের এ আয়াত পাঠ করলেন ‎:( إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّـهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا)‘ ‏আল্লাহর ইচ্ছায় হলো তিনি আহলে বাইত থেকে সকল প্রকার অপবিত্রতা দূর করবেন এবং তোমাদের সম্পূর্ণ রূপে পবিত্র করবেন’ ‏।’’ (সূরা আহযাব ‎: 33)(মুসলিম শরীফ ‎,5ম খণ্ড ‎,. ‏পৃ. 1883 ;ফতহুল কাদীর শওকানী ‎,4র্থ খণ্ড ‎,. ‏পৃ. 279)এ হাদীসের বক্তব্য অনুযায়ী উক্ত পাঁচজনকে চাদরের ভেতর ঢুকিয়ে কুরআনের আয়াত উদ্ধৃত করে আল্লাহর নবী আহলে বাইতের মর্যাদা যেভাবে তুলে ধরেছেন একজন ঈমানদারের জন্য এটাই যথেষ্ট । মহান আল্লাহ তা’ ‏আলা অন্যত্র এরশাদ করে ন ‎:( قُل لَّا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا إِلَّا الْمَوَدَّةَ فِي الْقُرْبَىٰ ۗ وَمَن يَقْتَرِفْ حَسَنَةً نَّزِدْ لَهُ فِيهَا حُسْنًا ۚ إِنَّ اللَّـهَ غَفُورٌ شَكُورٌ)‘ ‏হে রাসূল আপনি বলুন ‎: ‏আমি আমার দাওয়াতের জন্য তোমাদের কাছে আমার আহলে বাইতের প্রতি ভালোবাসা ছাড়া অন্য কিছু চাইনা । যে কেউ উত্তম কাজ করে আমি তার জন্য তাতে পূণ্য বাড়িয়ে দেই । নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাকারী ‎,গুণগ্রাহী।’ (সূরা আশ শুরা ‎: 23)আহলে বাইতের প্রতি ভালোবাসা এবং তাদের পদাংক অনুসরণই সত্য পথে টিকে থাকা এবং গোমরাহী থেকে নিজেকে রক্ষা করার অন্যতম উপায় হিসাবে আল্লাহর নবী বিদায় হজ্জের ভাষণে ঘোষণা দিয়েছেন।ﻋﻦ ﺟﺎﺑﺮرضي‌الله‌عنه ﻗﺎل رأﻳﺖ رﺳﻮل ﷲصلى‌الله‌عليه‌وآله‌وسلم ﻓـﻰ ﺣﺠﺘﻪ ﻳﻮم ﻋﺮﻓﺔ و هو ﻋﻠﻰ ﻧﺎﻗﺘﻪ اﻟﻘﺼﻮاى ﻳﺨﻄﺐ ﻓﺴﻤﻌﺘﻪ ﻳﻘﻮل ﻳﺎ اﻳﻬﺎ اﻟﻨﺎس اﻧـﻰ ﺗﺮکت ﻓﻴﻜﻢ ﻣﺎ ان اﺧﺬﺗﻢ ﺑﻪ ﻟﻦ ﺗﻀﻠﻮا کتاب ﷲ و ﻋﺘﺮﺗﻰ اهل ﺑﻴﺘﻲ‘ ‏হযরত জাবের ‎(রা.) ‏বলেন ‎,‘ ‏আমি আরাফার দিনে হজ্ব অনুষ্ঠানে রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) -কে তার কাসওয়া নামক উটনীর পিঠে বসা অবস্থায় সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে প্রদত্ত ভাষণে বলতে শুনেছি-হে মানবমণ্ডলী! ‏আমি তোমাদের কাছে এমন বস্তু রেখে যাচ্ছি তোমরা তা ধারণ করলে কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। তা হলো আল্লাহর কিতাব ও আমার আহলে বাইত ।’ (জামে তিরমিজি)হযরত ইমাম হাসান ‎(আ.) ‏ও ইমাম হোসাইন ‎(আ.) ‏কত বড় ব্যক্তিত্ব ছিলেন ‎,রাসূলে আকরাম ‎(সা.)– ‏এর ঘোষণা থেকে তা সহজেই অনুমেয়।ﻋﻦ اﺑﻲ ﺳﻌﻴﺪ ﻗﺎل ﻗﺎل رﺳﻮل اﷲ ﺻﻠﻲ اﷲ ﻋﻠﻴﻪ و ﺳﻠﻢ اﻟﺤﺴﻦ و اﻟﺤﺴﻴﻦ ﺳﻴﺪا ﺷﺒﺎب اهل اﻟﺠﻨﺔ (رواﻩ اﻟﺘﺮﻣﺬى ، ج 2، ص 218)হযরত আবু সাঈদ খুদরী ‎(রা.) ‏হতে বর্ণিত ‎,রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏এরশাদ করে ছেন ‎:‘ ‏হাসান ও হোসাইন দু’ ‏জন বেহেশতবাসী যুবকদের নেতা।’ (জামে তিরমিযি ‎,2য় খণ্ড ‎,. 217)পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহর ঘোষণার প্রেক্ষিতিই মুফতী শফী ‎(রহ.) ‏লিখেছেন ‎:‘ ‏পবিত্র আহলে বাইতের মুহাববাত ঈমানের অংশ বিশেষ। আর তাদের প্রতি কৃত পাশবিক অত্যাচারের কাহিনী ভুলে যাওয়ার মতো নয়। হযরত হোসাইন ‎(রা.) ‏এবং তার সাথী দের ওপর নিপীড়নমূলক ঘটনা এবং হৃদয়বিদারক শাহাদাত যার অন্তরে শোক এবং বেদনা সৃষ্টি করে না ‎,সে মুসলমান তো নয়ই ‎,মানুষ নামের অযোগ্য।’ইমাম হোসাইন ‎(আ.) ‏ছিলেন মহানবী ‎(সা.) ,শেরে খোদা হযরত আলী ‎(আ.) ‏এবং খাতুনে জান্নাত হযরত ফাতেমা যাহরা ‎(আ.)– ‏এর হাতে গড়া এক মহান ব্যক্তিত্ব । আল্লাহর দীনের জন্য নিবেদিত প্রাণ। আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় না করে আপসহীনভাবে সত্যের সাক্ষি হিসাবে নিজেকে অটল ‎,অবিচল রেখে প্রয়োজনে জীবন দিয়ে দীনকে ঠিক রাখার বাস্তব উদাহরণ ছিলেন হযরত ইমাম হোসাইন ‎(আ.) ‏। সত্যের প্রতি অবিচল থাকার অনন্য দৃষ্টান্ত ফুটে উঠেছিল হোর ইবনে ইয়াযীদ তামিমীর সেনাবাহিনীর সামনে ইমাম হোসাইনের প্রদত্ত ভাষণে। তিনি বলেন ‎:اﻳﻬﺎ اﻟﻨﺎس ان رﺳﻮل الله علیه صلی الله و سلم قال من رای سلطانا جائزا مستحلا لحرام الله ناکثا لعهد الله مخالفا لسنة رسول الله یعمل فی عباد الله بالاثم و العدوان فلم یغیر علیه بفعل و لا قول کان حقا علی الله ان یدخله مدخلة، الا و ان هولاء قد لزموا طاعة الشیطان و ترکو طاعة الرحمن اظهر الفساد و عطلوا الحدود و استأثروا بالفئ و احلو حرام الله و حرموا حلاله و انا احق من غیر‘ ‏হে লোকসকল! ‏রাসূলুল্লাহা সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেছেন ‎,যে ব্যক্তি এমন অত্যাচারী শাসককে দখবে যে আল্লাহর হারামকে হালাল করছে ‎,আল্লাহর সাথে কৃত প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করছে ‎,রাসূলের সুন্নাতের খেলাফ করছে ‎,আল্লাহর বান্দাদের সাথে গুনাহ ও শত্রুতাপূর্ণ কাজ করছে ‎,কাজ ও কথার দ্বারা কেউ যদি তা প্রতিহত করার না থাকে তখনই আল্লাহ তা’ ‏আলা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে ন।’ ‏তিনি বলেন ‎:‘ ‏সাবধান! ‏ওরা ‎(ইয়াযীদ গোষ্ঠি) ‏রহমানের ‎(আল্লাহর) ‏আনুগত্য ছেড়ে দিয়েছে ‎,বিপর্যয় সৃষ্টি করে ছে ‎,আল্লাহর হদ বা সীমা বন্ধ করে দিয়েছে ‎,বিনা পরিশ্রমে সম্পদ ভোগে মতে উঠেছে ‎,আল্লাহ যা হারাম করে ছেন তা হালাল করছে ‎,আর যা হালাল করে ছেন তা হারাম করছে ‎,এ ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ উল্টিয়ে দিতে আমিই সবচেয়ে বেশি অধিকার রাখি।’ (তারিখে তাবারী ‎,2য় খণ্ড ‎,. 307)কারবালায় যাওয়ার পথে অনেকেই ইমাম হোসাইন ‎(আ.) -কে বলেছেন এ পথ বিপজ্জনক। আপনি বরং ফিরে যান। ইমাম হোসাইন ‎(আ.) ‏তাদের জবাবে বলেছিলেন ‎:ﺳﺎﻣﻀﻰ و ﻣﺎ ﺑﺎﻟﻤﻮ ت ﻋﺎ ر ﻋﻠﻰ ا ﻟﻔﺘﻰاذا ﻣﺎ ﻧﻮ ى ﺣﻘﺎ و ﺟﺎ هد ﻣﺴﻠﻤﺎ‘ ‏আমাকে যেতে নিষেধ করছো ‎? ‏কিন্তু আমি অবশ্যই যাবো ‎,আমাকে মৃত্যুর ভয় দেখাও ‎? ‏একজন বীরের কাছে কি মৃত্যু অপমানজনক ‎?’পবিত্র হজ্ব অনুষ্ঠানের মাত্র দু’ ‏দিন বাকি ‎,এ সময় হজ্ব আদায় না করে কিয়ামের ‎(আন্দোলনের ‎) ‏পথ বছে নিয়ে মক্কা থেকে কুফার পথে পাড়ি জমানো কত বলিষ্ঠ ঈমান ও খেলাফতে ইলাহিয়া রক্ষার বাস্তব প্রমাণ তা ইতিহাস ‎,দর্শন ও শিক্ষা গ্রহণ কারীদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস।ইমাম হোসাইন ‎(আ.) ‏ছিলেন রাসূলে খোদা ‎(সা.) -কে ভালোবাসার মাধ্যম ।ﻋﻦ اﺑﻰ هریرة ﻗﺎل ﻗﺎل رﺳﻮل اﷲ ﺻﻠﻲ اﷲ ﻋﻠﻴﻪ وﺳﻠﻢ ﻣﻦ اﺣﺐ اﻟﺤﺴﻦ و اﻟﺤﺴﻴﻦ ﻓﻘﺪ اﺣﺒﻨﻰ و ﻣﻦ اﺑﻐﻀﻬﻤﺎ ﻓﻘﺪ اﺑﻐﻀﻨﻰহযরত আবু হুরায়রা বর্ণনা করে ন ‎:‘ ‏রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏বলেছেন ‎,যে ব্যক্তি হাসান ও হোসাইন কে ভালোবাসবে সে অবশ্যই আমাকে ভালোবাসবে ‎,আর যে তাদের প্রতি দুশমনী রাখবে ‎,সে অবশ্যই আমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবে।’ (ইবনে মাজা)আল কুরআনের আয়াত ও রাসূলে খোদা ‎(সা.)– ‏এর ঘোষণা মোতাবেক উম্মতের নাজাতের তরী হযরত হোসাইন ‎(আ.) ‏। তার শাহাদাতের ঘটনা শুনে শুধু ক্রন্দন বা আফসোস করাই তার প্রতি ভালোবাসার প্রকৃত প্রমাণ নয় বরং ইয়াযীদ ও তার উত্তরসূরি নব্য ইয়াযীদ যারা আল্লাহর এ যমিনে হারামকে হালাল করছে ‎,আবার হালাল কে হারাম করছে ‎,যারা আল্লাহ ও তার রাসূলের বিধানকে বাদ দিয়ে তাগুতী শাসন চালাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে জান ‎,মাল তথা সব কিছু দিয়ে‘ ‏বাঁচলে গাজী আর মরলে শহীদ’ ‏এ প্রত্যয় নিয়ে প্রত্যক্ষ জিহাদে অবতীর্ণ হওয়াই হযরত হোসাইন ‎(আ.)– ‏এর প্রতি ভালোবাসার সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা। ইয়াযিদী শাসন চলবে ‎,সব বাতিলকে মেনে নেবো আর ইমাম হোসাইন ‎(আ.) -এর জন্য কাদবো এটা হবে মুনাফিকের ঘৃণ্যপথ। তাই আজকে আসুন ইমাম হোসাইন ‎(আ.)– ‏এর মতো দীপ্ত শপথ গ্রহণ করি। হয় আমরা হকপন্থীরা হকের ঝাণ্ডা উচু করে ই ছাড়বো ‎,না হয় শাহাদাতের পেয়ালা পান করে শহীদানে কারবালার সাথী হবো। আর কবি নজরুলের কন্ঠে বলে উঠবো ‎:উষ্ণীষ কোরানের ‎,হাতে তেগ আরবির ‎,দুনিয়াতে নত নয় মুসলিম কারো শির ‎,তবে শোন ঐ বাজে কোথা ফের দামামাশমশের হাতে নাও ‎,বাধো শিরে আমামাবেজেছে নাকাড়া ‎,হাঁকে নকীবের তূর্যহুশিয়ার ইসলাম ‎,ডুবে তব সূর্য।জাগো ‎,ওঠো মুসলিম ‎,হাঁকো হায়দারি হাঁকশহীদের খুনে সব লালে-লাল হয়ে যাক। ‎(অগ্নিবীণা)পরিশেষে সুলতানুল হিন্দ খাজা গরীবে নওয়াজ মঈনুদ্দীন চিশতী আজমেরী ‎(রহ.)– ‏এর কণ্ঠ মিলিয়ে বলতে চাই ‎:ﺟﺎ ن ﻣﻦ ﻧﺜﺎ رم ﺑﻨﺎ م ﺣﺴﻴﻦﻣﻦ ﻏﻼ م ﻏﻼﻣﺎ ن ﺣﺴﻴﻦ‘ ‏হোসাইনের নামে আমার জীবন উৎসর্গকৃতআমি কেবল তারই গোলাম যিনি হোসাইনের গোলাম’গ্রন্থপঞ্জি ‎:1. ‏কুরআন মজীদ ‎;2. ‏সহীহ মুসলিম শরীফ ‎;3. ‏তিরমিযি শরীফ ‎;4. ‏ইবনে মাজা ‎;5. ‏নুযহাতুল মাজালেস ‎;6. ‏ফতহুল কাদীর শওকানী ‎;7. ‏মিরকাত ফি শারহিল মিশকাত ‎;8. ‏শহীদে কারবালা-মুফতী শফী ‎(রহ.) ;9.তারিখে তাবারী ‎;10. ‏অগ্নিবীণা-কাজী নজরুল ইসলাম ‎;12. ‏দিওয়ানে খাজায়ে হিন্দ ‎;13. ‏মাকতালুল হোসাইন ‎;14. ‏নেহায়াতুল আরব ‎;15. ‏আল বিদায়া ওয়ান নেহায়া।*অধ্যক্ষ ‎,ফরিদগঞ্জ মজিদিয়া কামিল মাদ্রাসা ওচেয়াম্যান ‎,ফার্সী ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশপবিত্র কুরআনের আয়াতের আলোকে সাইয়্যেদুশ শুহাদা হযরত ইমাম হোসাইন ‎(আ.)আল্লাহ তা’ ‏আলা এরশাদ করেন ‎:( فَتَلَقَّىٰ آدَمُ مِن رَّبِّهِ كَلِمَاتٍ فَتَابَ عَلَيْهِ ۚ إِنَّهُ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ)‘ ‏অতঃপর আদমের নিকট রবের পক্ষ থেকে কয়েকটি শব্দ ওহী করা হলো ‎,অতঃপর তিনি ‎(আল্লাহ) ‏তার প্রতি প্রত্যাবর্তন করলেন ‎(তাকে ক্ষমা করলেন) ‏। নিঃসন্দেহে তিনি পুনঃপুনঃপ্রত্যাবর্তনকারী ‎(তওবা কবুলকারী) ‏পরম দয়ালু।’ (সূরা বাকারা: 37)উপরিউক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বর্ণিত হয়েছে যে ‎,হযরত আদম ‎(আ.) ‏আল্লাহ তা’ ‏আলা র মহান আরশের প্রতি দৃষ্টিপাত করলেন এবং সেখানে রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏ও মা’ ‏সুম ইমামগণের নাম দেখতে পলেন। হযরত জিবরাইল ‎(আ.) ‏তাকে নামগুলো কাদের তা বুঝিয়ে দিলেন। অতঃপর আদম ‎(আ.) ‏বললেন ‎:‘ ‏হে পরম সাত্তা! ‏আলীর উসিলায় ‎,হে স্রষ্টা! ‏ফাতেমার উসিলায় আমাদের ক্ষমা কর।’এর পর হযরত ইমাম হোসাইন ‎(আ.) -এর নাম উচ্চারণ করতে গিয়ে তার চোখে অশ্রু এসে গেল । তখন তিনি বললেন ‎:‘ ‏হে আমার ভাই জিবরাইল! ‏এর কী কারণ যে ‎,হোসাইনের নাম উচ্চারণে আমার চোখে অশ্রু এসে যাচ্ছে ‎?’ ‏জিবরাইল বললেন ‎:‘ ‏আপনার বংশধরদের মধ্য থেকে আপনার এ সন্তান এমন মুসিবতের মুখোমুখি হবে যে ‎,দুনিয়ার বুকে আসন্ন অন্য সমস্ত মুসিবত এর সামনো স্লান হয়ে যাবে।’ ‏আদম ‎(আ.) ‏জিজ্ঞাসা করলেন ‎:‘ ‏তার ওপরে কী ধরনের মুসিবত আপতিত হবে ‎?’জিবরাইল বললেন ‎:‘ ‏তিনি পিপাসার্ত অবস্থায় তার পূর্বে নিহত সঙ্গীদের লাশ সামনে নিয়ে নিহত হবেন। শত্রুরা তার মৃত্যু দেখার জন্য অপেক্ষা করবে।’ ‏তখন আদম ‎(আ.) ‏ও জিবরাইল খুব ক্রন্দন করলেন।’ (আল আওয়ালিম ‎:.পৃ.104-117)‘ ‏হায়! ‏আমি যদি তাদের সাথে থাকতাম’ !আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন ‎,যারা আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের সাথে জিহাদে শরীক হতে পারেনি এক পর্যাযে তারা বলবে ‎:( يَا لَيْتَنِي كُنتُ مَعَهُمْ فَأَفُوزَ فَوْزًا عَظِيمًا)‘ ‏হায়! ‏আমিও যদি তাদের সাথে থাকতাম তাহলে বিরাট সাফল্যের অধিকারী হতাম!’ (সূরা নিসা ‎: 73)হযরত ইমাম রেযা ‎(আ.) ‏উপরিউক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা করার পর বলেন ‎:‘ ‏হে শহীদের! ‏পুত্র তুমি যদি হযরত রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏ও তার আহলে বাইতের সাথে বেহেশতে স্থান লাভ করতে চাও ‎,তাহলে তোমাকে হযরত ইমাম হোসাইন ‎(আ.) -এর হত্যাকারীদের প্রতি অভিসম্পাত করতে হবে । যারা তার সাথে শহীদ হয়েছিলেন তুমি যদি তাদের মতো পুরস্কৃত হতে চাও ‎,তাহলে যখনই তুমি তার কথা স্মরণ করবে তখনই বলবে ‎: ‏হায়! ‏আমি যদি তাদের সাথে থাকতাম ‎,তাহলে এক মহাবিজয় লাভ করতে পারতাম!’ (বিহারুল আনওয়ার ‎: 44তম খণ্ডণ্ড ‎,299 )‘ ‏অঙ্গীকার পূরণ কর’আল্লাহ তা’ ‏আলা কুরআন মজীদে এরশাদ করেন ‎:( وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَىٰ ۖ وَأَقِمْنَ الصَّلَاةَ وَآتِينَ الزَّكَاةَ وَأَطِعْنَ اللَّـهَ وَرَسُولَهُ ۚ إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّـهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا)‘ ‏ঈমানদারদের মধ্যে এমন অনেক লোক রয়েছে যারা আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার পূরণ করেছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ রণাঙ্গনে শহীদ হয়েছে ও কেউ কেউ ‎(শাহাদাতের জন্য) ‏প্রতীক্ষা করছে এবং তারা তাদের অঙ্গীকারে পরিবর্তন সাধন করে নি।’ (সূরা আহযাব ‎: 23)আশুরার দিনে ইমাম হোসাইন ‎(আ.)-এর সঙ্গী-সাথিগণ একজন একজন করে তার নিকট আসেন এবং তাকে অভিনন্দন জানান। তারা তাকে সম্বোধন করে বলেন ‎:‘ ‏হে আল্লাহর রাসূল ‎(সা.)-এর বংশধর!’ ‏তখন তিনি তাদের অভিনন্দনের জবাবে বলেন ‎:‘ ‏তোমাদের পরে শাহাদাতের জন্য আমরা অপেক্ষা করব।’ ‏এর পর তিনি উপরিউক্ত আয়াত পাঠ করলেন। এর পর ইমাম হোসাইন ‎(আ.) -এর সঙ্গী-সাথিগণ ‎(আল্লাহ তাদের সকলের প্রতি সন্তুষ্ট হন) ‏সকলেই শহীদ হলেন এবং তার সাথে কেবল তার পরিবারের সদস্যরা রইলেন। ‎(আল-আওয়ালিম ‎: 17তম খণ্ডণ্ড ‎,পৃ. 275) ‏এর পর তারা ‎(শত্রুরা) ‏তার ওপর ভয়ঙ্কর ভাবে ঝপিয়ে পড়ল।ওপরে উদ্ধৃত আয়াতের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইমাম রেযা ‎(আ.) ‏বলেন ‎:‘ ‏আল্লাহ তা’ ‏আলা যখন হযরত ইবরাহীম ‎(আ.) -এর নিকট হযরত ইসমাইল ‎(আ.) -এর পরিবর্তে একটি দুম্বা পাঠালেন ও তা-ই কুরবানি করার নির্দেশ দিলেন ‎,তখন ইবরাহীম ‎(আ.) ‏আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন যাতে তার মধ্যে সেই পিতার বিয়োগ-ব্যথা অনুভূত হয় যিনি তার সন্তানকে কুরবানি করছেন এবং এভাবে যাতে তিনি সর্বোত্তম পুরস্কারের উপযুক্ত হতে পারেন। তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে তার নিকট ওহী হয় ‎:‘ ‏হে ইবরাহীম! ‏আমার সৃষ্ট সকল মানুষের মধ্যে তোমার নিকট সর্বাধিক প্রিয় কে ‎?’ ‏ইবরাহীম ‎(আ.) ‏জবাব দিলেন ‎:‘ ‏আমি মুহাম্মাদকে সকলের চেয়ে বেশি ভালোবাসি।’ ‏আল্লাহ পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন ‎:‘ ‏তুমি কাকে বেশি ভালোবাস ‎,মুহাম্মাদকে ‎,নাকি তোমার আত্মাকে ‎?’ ‏তিনি বললেন ‎:‘ ‏মুহাম্মাদকে।’ ‏আল্লাহ পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন ‎:‘ ‏তার সন্তান কি তোমার নিকট তোমার নিজের সন্তানের চেয়ে প্রিয়তর ‎?’ ‏তিনি জবাব দিলেন ‎:‘ ‏অবশ্যই ।’ ‏আল্লাহ বললেন ‎:‘ ‏কঠিন মুসিবতে নিপতি হয়ে মুহাম্মাদের সন্তানের মৃত্যুকেই কি তুমি বেশি কষ্ট পাবে ‎,নাকি আমার প্রতি তোমার আনুগত্য প্রকাশের জন্য নিজের হাতে তোমার পুত্রের কুরবানিতে বেশি কষ্ট পাবে ‎?’ ‏তিনি বললেন ‎:‘ ‏মুহাম্মাদের সন্তানের মৃত্যুতে।’ ‏তখন আল্লাহ বললেন ‎:‘ ‏ইবরাহীম! ‏একদল লোক যারা নিজেদেরকে মুহাম্মাদের অনুসারী বলে মনে করবে-তার সন্তানের রক্তে নিজেদের হাত রঞ্জিত করবে এবং এভাবে তারা আমার ক্রোধের শিকার হবে ।’ ‏একথা শুনে ইবরাহীম ‎(আ.) ‏ক্রন্দন করতে লাগলেন। তখন সর্বশক্তিমান আল্লাহ তা’ ‏আলা তার নিকট ওহী প্রেরণ করলেন ‎:‘ ‏হে ইবরাহীম! ‏হোসাইনের মৃত্যু তোমার জন্য এক বিরাট মুসিবত স্বরূপ হতো। এ কারণে মহামুসিবতে নিপতিত হওয়ায় আমি যাদেরকে পুরস্কৃত করব তোমাকেও তদ্রূপ পুরস্কৃত করব।’ (বিহারুল আনওয়ার ‎: 44তম খণ্ডণ্ড ‎,.পৃ. 225-266) ‏আল্লাহ তা’ ‏আলা সূরা আল-ফাজরে এরশাদ করেন ‎:( يَا أَيَّتُهَا النَّفْسُ الْمُطْمَئِنَّةُ ارْجِعِي إِلَىٰ رَبِّكِ رَاضِيَةً مَّرْضِيَّةً)‘ ‏হে নিশ্চিন্ত নাফস! ‏তুমি তোমার রবের দিকে প্রত্যাবর্তন কর এমন অবস্থায় যে ‎,তুমি ‎(তার প্রতি) ‏সন্তুষ্ট ও ‎(তার পক্ষ থেকে) ‏সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত।’ (সূরা আল-ফাজরে-27-28)হযরত ইমাম জাফর সাদেক ‎(আ.) ‏বলেন ‎:‘ ‏তোমরা তোমাদের নামাযে সূরা আল-ফাজর পড়বে। হোসাইন বিন আলী ‎(আ.) ‏প্রসঙ্গে এটি নাযিল হয়েছে।’ ‏তখন সেখানে উপস্থিত আবু আসসামা তাকে এ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলেন। জবাবে ইমাম বললেন ‎:‘ ‏এখানে‘ ‏হে নিশ্চিন্ত নাফস’ ‏বলতে ইমাম হোসাইন ‎(আ.) -এর নামকে বোঝানো হয়েছে। তিনি আল্লাহর ওপর সন্তুষ্ট ‎,এ কারনে আল্লাহও তার ওপর সন্তুষ্ট। আর হযরত মুহাম্মাদ ‎(সা.) -এর আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত তার সঙ্গী-সাথিগণ শেষ বিচাই দিনের ব্যাপারে আল্লাহর ওপর সনন্তুষ্ট। যারা সব সময় এ আয়াত পড়বে তারা বেহেশতে ইমাম হোসাইন ‎(আ.) -এর সাথে থাকবে।’ (বিহারুল আনওয়ার ‎: 44তম খণ্ড ‎,পৃ.218-219)মাহবুবা ‎,জুন-1996অনুবাদ ‎:মুহাম্মাদ আবু যীনাত‘ ‏আমি কোনো ধন-সম্পদ বা ক্ষমতার লোভে কিংবা গালযোগ সৃষ্টির জন্য বিদ্রোহ করছিনা ‎,আমি আমার নানাজানের উম্মতের মধ্যে সংস্কার করতে চাই ‎,আমি‘ ‏সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ’ ‏করতে চাই এবং আমার নানাজান যে পথে চলেছেন আমি ও সে পথে চলতে চাই।’ইমাম হোসাইন ‎(আ.) [মাকতালু খারাযমী ‎: 1/188]


পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহর দৃষ্টিতে হযরত ইমাম হোসাইন (আ.) -এর ব্যক্তিত্ব

ইমাম হোসাইন (আ.) শুধু একটি নাম নয় ,একটি ইতিহাস ,একটি চেতনা ,হক ও বাতিলের নির্ণয়কারী। দুনিয়ার ইতিহাসে ন্যায়-ইসাফকে প্রতিষ্ঠিত করা ,অন্যায় ,জুলুম ,নির্যাতন ,স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে রুখে দড়ানোর জন্য যারাই নিজের জান ও মাল দিয়ে সত্যের সাক্ষ্য হিসাবে কালোত্তীর্ণ অমর ব্যক্তিত্ব হিসাবে সত্যাণ্বেষীদের মন-মগজে স্থান জুড়ে আছেন ,যদের আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে যুগে যুগে কুফর ,শিরক তথা তাগুতের মসনদ জ্বলে পুড়ে ভস্মীভূত হচ্ছে এবং হবে ইমাম হোসাইন (আ.) -এর স্থান তাদের শীর্ষে রয়েছে এবং থাকবে। ইমাম হোসাইন (আ.) কিয়ামত পর্যন্ত বাতিলের বিরুদ্ধে সত্যের সকল যুদ্ধের সেরা ইমাম বা অপ্রতিদ্বন্দী নেতা ।

হোসাইন (ﺣﺴﻴﻦ ) নামটির মাঝেই রয়েছে গভীর তাৎপর্য ।ﺣﺴﻴﻦ শব্দেরح হরফ দিয়েﺣﺴﻦ (হুসন) বা সুন্দেই ,আকর্ষণীয় ,দৃষ্টিনন্দন ,শ্রুতিমধুর ,বাহ্যিক ও আত্মিক অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব বুঝায়।س (সীন) দ্বারা সাআদাতﺳﻌﺎدت বা দৃঢ় প্রত্যয় ,ي (ইয়া) দ্বারাﻳﻘﻴﻦ (ইয়াকীন) বা প্রত্যয় ,ن (নূন) হরফ ;দ্বারাﻧﻮر বা আলো ও জ্যোতি বুঝায়। অর্থাৎﺣﺴﻴﻦ (হোসাইন ) এমন সত্তা ,এমন ব্যক্তিত্ব যিনি জাগতিক ,মানসিক ,আত্মিক সকল প্রকারের সৌন্দর্যের প্রতীক ,সৌভাগ্য-সমৃদ্ধিরি পথ নির্দেশক ,দৃঢ় প্রত্যয়ীর সর্বশ্রেষ্ঠ নমুনা ,আপসহীনতার মূর্ত প্রতীক ,আর সকল যুগের সকল মানুষের জন্য নূর বা আলোকবর্তিকা। হাদীসের ভাষায়-

ان ا ﻟﺤﺴﻴﻦ ﻣﺼﺒﺎ ح ا ﻟﻬﺪ ى و ﺳﻔﻴﻨﺔ ا ﻟﻨﺠﺎ ة

‘ হোসাইন হেদায়েতের আলোকবর্তিকা ও নাজাতের তরী’’

‘ হোসাইন’ নামটিও অতি পবিত্র। এ নাম মানুষের দেয়া নয়। এ নামও মহান আল্লাহ তা’ আলা দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লামা নাসাফী (রহ.) বলেন :

وﻟﻤﺎ وﻟﺪ اﻟﺤﺴﻴﻦ ﻗﺎل ﻳﺎ ﻣﺤﻤﺪ ان ﷲ ﻳﻬﻨﻴﻚ ﺑﻬﺬا اﻟﻤﻮﻟﻮد و ﻳﻘﻮل ﻟﻚ اﺳﻤﻪ ﺑﺎﺳﻢ اﺑﻦ هارون ﺷﺒﻴﺮ و ﻣﻌﻨﺎﻩ ﺣﺴﻴﻦ -( ﻧﺰهة اﻟﻤﺠﺎﻟﺲ،ص229)

‘ হোসাইন জন্ম গ্রহণ করার পর হযরত জিবরাইল (আ.) এসে বললেন :‘‘ হে মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহ তা’ আলা এ নবজাত শিশুর জন্মে আপনাকে অভিবাদন ও মুবারকবাদ জানিয়েছেন এবং বলেছেন ,হযরত হারুন (আ.)– এর ছলের নামে তার নাম রাখতে। তার ছলের নাম শাব্বির ,যার আর বি অর্থ হয় হোসাইন’’ ।’ (নুযহাতুল মাজালেস :. 229)

ইমাম হোসাইন (আ.) ছিলেন রাসূলে আকরাম নূরে মোজাসসাম (সা.)– এর আহলে বাইতের অন্যতম স্তম্ভ । আহলে বাইত সম্পর্কে আল কুরআনের আয়াত উদ্ধৃত করে রাসূলে পাক (সা.) তাদের পূত-পবিত্রতার কথা ঘোষণা করে ছেন। বিশ্ব বিখ্যাত হাদীস মুসলিম শরীফে বর্ণিত হয়েছে :

ﻋﻦ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﺧﺮج اﻟﻨﺒﻰصلى‌الله‌عليه‌وآله‌وسلم ﻏﺪاة و ﻋﻠﻴﻪ ﻣﺮط ﻣﺮﺣﻞ ﻣﻦ ﺷﻌﺮ اﺳﻮد ﻓﺠﺎء اﻟﺤﺴﻦ ﺑﻦ ﻋﻠﻰ ﻓﺎدﺧﻠﻪ ﺛﻢ ﺟﺎء اﻟﺤﺴﻴﻦ ﻓﺪﺧﻞ ﻣﻌﻪ ﺛﻢ ﺟﺎﺋﺖ ﻓﺎﻃﻤﺔ ﻓﺎدﺧﻠﻬﺎ ﺛﻢ ﺟﺎء ﻋﻠﻰ ﻓﺎدﺧﻠﻪ ﺛﻢ ﻗﺎل :( إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّـهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرً ا)

‘ উম্মুল মু’ মিনীন হযরত আয়েশা বলেন : মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভোরবেলায় ঘর থেকে বের হন। তার গায়ে ছিল পশমের মোটা ইয়েমেনী চাদেই । তখন হাসান ইবনে আলী আসলেন। মহানবী তাকে এই বড় চাদরের ভেতর ঢুকিয়ে নিলেন ,এরপর হোসাইন আসলেন তিনি তাকেও চাদরের ভেতর ঢুকিয়ে নিলেন ,এরপর ফাতেমা আসলেন ,পয়গম্বর (সা.) তাকেও চাদরের ভেতর ঢুকালেন। সবশেষে আলী আসলে মহানবী আলীকেও চাদরের মধ্যে ঢুকিয়ে নিলেন। তারপর মহাগ্রন্থ আল কুরআনের এ আয়াত পাঠ করলেন :

( إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّـهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا)

‘ আল্লাহর ইচ্ছায় হলো তিনি আহলে বাইত থেকে সকল প্রকার অপবিত্রতা দূর করবেন এবং তোমাদের সম্পূর্ণ রূপে পবিত্র করবেন’ ।’’ (সূরা আহযাব : 33)

(মুসলিম শরীফ ,5ম খণ্ড ,. পৃ. 1883 ;ফতহুল কাদীর শওকানী ,4র্থ খণ্ড ,. পৃ. 279)

এ হাদীসের বক্তব্য অনুযায়ী উক্ত পাঁচজনকে চাদরের ভেতর ঢুকিয়ে কুরআনের আয়াত উদ্ধৃত করে আল্লাহর নবী আহলে বাইতের মর্যাদা যেভাবে তুলে ধরেছেন একজন ঈমানদারের জন্য এটাই যথেষ্ট । মহান আল্লাহ তা’ আলা অন্যত্র এরশাদ করে ন :

( قُل لَّا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا إِلَّا الْمَوَدَّةَ فِي الْقُرْبَىٰ ۗ وَمَن يَقْتَرِفْ حَسَنَةً نَّزِدْ لَهُ فِيهَا حُسْنًا ۚ إِنَّ اللَّـهَ غَفُورٌ شَكُورٌ)

‘ হে রাসূল আপনি বলুন : আমি আমার দাওয়াতের জন্য তোমাদের কাছে আমার আহলে বাইতের প্রতি ভালোবাসা ছাড়া অন্য কিছু চাইনা । যে কেউ উত্তম কাজ করে আমি তার জন্য তাতে পূণ্য বাড়িয়ে দেই । নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাকারী ,গুণগ্রাহী।’ (সূরা আশ শুরা : 23)

আহলে বাইতের প্রতি ভালোবাসা এবং তাদের পদাংক অনুসরণই সত্য পথে টিকে থাকা এবং গোমরাহী থেকে নিজেকে রক্ষা করার অন্যতম উপায় হিসাবে আল্লাহর নবী বিদায় হজ্জের ভাষণে ঘোষণা দিয়েছেন।

ﻋﻦ ﺟﺎﺑﺮرضي‌الله‌عنه ﻗﺎل رأﻳﺖ رﺳﻮل ﷲصلى‌الله‌عليه‌وآله‌وسلم ﻓـﻰ ﺣﺠﺘﻪ ﻳﻮم ﻋﺮﻓﺔ و هو ﻋﻠﻰ ﻧﺎﻗﺘﻪ اﻟﻘﺼﻮاى ﻳﺨﻄﺐ ﻓﺴﻤﻌﺘﻪ ﻳﻘﻮل ﻳﺎ اﻳﻬﺎ اﻟﻨﺎس اﻧـﻰ ﺗﺮکت ﻓﻴﻜﻢ ﻣﺎ ان اﺧﺬﺗﻢ ﺑﻪ ﻟﻦ ﺗﻀﻠﻮا کتاب ﷲ و ﻋﺘﺮﺗﻰ اهل ﺑﻴﺘﻲ

‘ হযরত জাবের (রা.) বলেন ,‘ আমি আরাফার দিনে হজ্ব অনুষ্ঠানে রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে তার কাসওয়া নামক উটনীর পিঠে বসা অবস্থায় সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে প্রদত্ত ভাষণে বলতে শুনেছি-হে মানবমণ্ডলী! আমি তোমাদের কাছে এমন বস্তু রেখে যাচ্ছি তোমরা তা ধারণ করলে কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। তা হলো আল্লাহর কিতাব ও আমার আহলে বাইত ।’ (জামে তিরমিজি)

হযরত ইমাম হাসান (আ.) ও ইমাম হোসাইন (আ.) কত বড় ব্যক্তিত্ব ছিলেন ,রাসূলে আকরাম (সা.)– এর ঘোষণা থেকে তা সহজেই অনুমেয়।

ﻋﻦ اﺑﻲ ﺳﻌﻴﺪ ﻗﺎل ﻗﺎل رﺳﻮل اﷲ ﺻﻠﻲ اﷲ ﻋﻠﻴﻪ و ﺳﻠﻢ اﻟﺤﺴﻦ و اﻟﺤﺴﻴﻦ ﺳﻴﺪا ﺷﺒﺎب اهل اﻟﺠﻨﺔ (رواﻩ اﻟﺘﺮﻣﺬى ، ج 2، ص 218)

হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) হতে বর্ণিত ,রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করে ছেন :‘ হাসান ও হোসাইন দু’ জন বেহেশতবাসী যুবকদের নেতা।’ (জামে তিরমিযি ,2য় খণ্ড ,. 217)

পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহর ঘোষণার প্রেক্ষিতিই মুফতী শফী (রহ.) লিখেছেন :

‘ পবিত্র আহলে বাইতের মুহাববাত ঈমানের অংশ বিশেষ। আর তাদের প্রতি কৃত পাশবিক অত্যাচারের কাহিনী ভুলে যাওয়ার মতো নয়। হযরত হোসাইন (রা.) এবং তার সাথী দের ওপর নিপীড়নমূলক ঘটনা এবং হৃদয়বিদারক শাহাদাত যার অন্তরে শোক এবং বেদনা সৃষ্টি করে না ,সে মুসলমান তো নয়ই ,মানুষ নামের অযোগ্য।’

ইমাম হোসাইন (আ.) ছিলেন মহানবী (সা.) ,শেরে খোদা হযরত আলী (আ.) এবং খাতুনে জান্নাত হযরত ফাতেমা যাহরা (আ.)– এর হাতে গড়া এক মহান ব্যক্তিত্ব । আল্লাহর দীনের জন্য নিবেদিত প্রাণ। আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় না করে আপসহীনভাবে সত্যের সাক্ষি হিসাবে নিজেকে অটল ,অবিচল রেখে প্রয়োজনে জীবন দিয়ে দীনকে ঠিক রাখার বাস্তব উদাহরণ ছিলেন হযরত ইমাম হোসাইন (আ.) । সত্যের প্রতি অবিচল থাকার অনন্য দৃষ্টান্ত ফুটে উঠেছিল হোর ইবনে ইয়াযীদ তামিমীর সেনাবাহিনীর সামনে ইমাম হোসাইনের প্রদত্ত ভাষণে। তিনি বলেন :

اﻳﻬﺎ اﻟﻨﺎس ان رﺳﻮل الله علیه صلی الله و سلم قال من رای سلطانا جائزا مستحلا لحرام الله ناکثا لعهد الله مخالفا لسنة رسول الله یعمل فی عباد الله بالاثم و العدوان فلم یغیر علیه بفعل و لا قول کان حقا علی الله ان یدخله مدخلة، الا و ان هولاء قد لزموا طاعة الشیطان و ترکو طاعة الرحمن اظهر الفساد و عطلوا الحدود و استأثروا بالفئ و احلو حرام الله و حرموا حلاله و انا احق من غیر

‘ হে লোকসকল! রাসূলুল্লাহা সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেছেন ,যে ব্যক্তি এমন অত্যাচারী শাসককে দখবে যে আল্লাহর হারামকে হালাল করছে ,আল্লাহর সাথে কৃত প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করছে ,রাসূলের সুন্নাতের খেলাফ করছে ,আল্লাহর বান্দাদের সাথে গুনাহ ও শত্রুতাপূর্ণ কাজ করছে ,কাজ ও কথার দ্বারা কেউ যদি তা প্রতিহত করার না থাকে তখনই আল্লাহ তা’ আলা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে ন।’ তিনি বলেন :‘ সাবধান! ওরা (ইয়াযীদ গোষ্ঠি) রহমানের (আল্লাহর) আনুগত্য ছেড়ে দিয়েছে ,বিপর্যয় সৃষ্টি করে ছে ,আল্লাহর হদ বা সীমা বন্ধ করে দিয়েছে ,বিনা পরিশ্রমে সম্পদ ভোগে মতে উঠেছে ,আল্লাহ যা হারাম করে ছেন তা হালাল করছে ,আর যা হালাল করে ছেন তা হারাম করছে ,এ ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ উল্টিয়ে দিতে আমিই সবচেয়ে বেশি অধিকার রাখি।’ (তারিখে তাবারী ,2য় খণ্ড ,. 307)

কারবালায় যাওয়ার পথে অনেকেই ইমাম হোসাইন (আ.) -কে বলেছেন এ পথ বিপজ্জনক। আপনি বরং ফিরে যান। ইমাম হোসাইন (আ.) তাদের জবাবে বলেছিলেন :

ﺳﺎﻣﻀﻰ و ﻣﺎ ﺑﺎﻟﻤﻮ ت ﻋﺎ ر ﻋﻠﻰ ا ﻟﻔﺘﻰ

اذا ﻣﺎ ﻧﻮ ى ﺣﻘﺎ و ﺟﺎ هد ﻣﺴﻠﻤﺎ

‘ আমাকে যেতে নিষেধ করছো ? কিন্তু আমি অবশ্যই যাবো ,আমাকে মৃত্যুর ভয় দেখাও ? একজন বীরের কাছে কি মৃত্যু অপমানজনক ?’

পবিত্র হজ্ব অনুষ্ঠানের মাত্র দু’ দিন বাকি ,এ সময় হজ্ব আদায় না করে কিয়ামের (আন্দোলনের ) পথ বছে নিয়ে মক্কা থেকে কুফার পথে পাড়ি জমানো কত বলিষ্ঠ ঈমান ও খেলাফতে ইলাহিয়া রক্ষার বাস্তব প্রমাণ তা ইতিহাস ,দর্শন ও শিক্ষা গ্রহণ কারীদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস।

ইমাম হোসাইন (আ.) ছিলেন রাসূলে খোদা (সা.) -কে ভালোবাসার মাধ্যম ।

ﻋﻦ اﺑﻰ هریرة ﻗﺎل ﻗﺎل رﺳﻮل اﷲ ﺻﻠﻲ اﷲ ﻋﻠﻴﻪ وﺳﻠﻢ ﻣﻦ اﺣﺐ اﻟﺤﺴﻦ و اﻟﺤﺴﻴﻦ ﻓﻘﺪ اﺣﺒﻨﻰ و ﻣﻦ اﺑﻐﻀﻬﻤﺎ ﻓﻘﺪ اﺑﻐﻀﻨﻰ

হযরত আবু হুরায়রা বর্ণনা করে ন :‘ রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন ,যে ব্যক্তি হাসান ও হোসাইন কে ভালোবাসবে সে অবশ্যই আমাকে ভালোবাসবে ,আর যে তাদের প্রতি দুশমনী রাখবে ,সে অবশ্যই আমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবে।’ (ইবনে মাজা)

আল কুরআনের আয়াত ও রাসূলে খোদা (সা.)– এর ঘোষণা মোতাবেক উম্মতের নাজাতের তরী হযরত হোসাইন (আ.) । তার শাহাদাতের ঘটনা শুনে শুধু ক্রন্দন বা আফসোস করাই তার প্রতি ভালোবাসার প্রকৃত প্রমাণ নয় বরং ইয়াযীদ ও তার উত্তরসূরি নব্য ইয়াযীদ যারা আল্লাহর এ যমিনে হারামকে হালাল করছে ,আবার হালাল কে হারাম করছে ,যারা আল্লাহ ও তার রাসূলের বিধানকে বাদ দিয়ে তাগুতী শাসন চালাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে জান ,মাল তথা সব কিছু দিয়ে‘ বাঁচলে গাজী আর মরলে শহীদ’ এ প্রত্যয় নিয়ে প্রত্যক্ষ জিহাদে অবতীর্ণ হওয়াই হযরত হোসাইন (আ.)– এর প্রতি ভালোবাসার সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা। ইয়াযিদী শাসন চলবে ,সব বাতিলকে মেনে নেবো আর ইমাম হোসাইন (আ.) -এর জন্য কাদবো এটা হবে মুনাফিকের ঘৃণ্যপথ। তাই আজকে আসুন ইমাম হোসাইন (আ.)– এর মতো দীপ্ত শপথ গ্রহণ করি। হয় আমরা হকপন্থীরা হকের ঝাণ্ডা উচু করে ই ছাড়বো ,না হয় শাহাদাতের পেয়ালা পান করে শহীদানে কারবালার সাথী হবো। আর কবি নজরুলের কন্ঠে বলে উঠবো :

উষ্ণীষ কোরানের ,হাতে তেগ আরবির ,

দুনিয়াতে নত নয় মুসলিম কারো শির ,

তবে শোন ঐ বাজে কোথা ফের দামামা

শমশের হাতে নাও ,বাধো শিরে আমামা

বেজেছে নাকাড়া ,হাঁকে নকীবের তূর্য

হুশিয়ার ইসলাম ,ডুবে তব সূর্য।

জাগো ,ওঠো মুসলিম ,হাঁকো হায়দারি হাঁক

শহীদের খুনে সব লালে-লাল হয়ে যাক। (অগ্নিবীণা)

পরিশেষে সুলতানুল হিন্দ খাজা গরীবে নওয়াজ মঈনুদ্দীন চিশতী আজমেরী (রহ.)– এর কণ্ঠ মিলিয়ে বলতে চাই :

ﺟﺎ ن ﻣﻦ ﻧﺜﺎ رم ﺑﻨﺎ م ﺣﺴﻴﻦ

ﻣﻦ ﻏﻼ م ﻏﻼﻣﺎ ن ﺣﺴﻴﻦ

‘ হোসাইনের নামে আমার জীবন উৎসর্গকৃত

আমি কেবল তারই গোলাম যিনি হোসাইনের গোলাম’

গ্রন্থপঞ্জি :

1. কুরআন মজীদ ;2. সহীহ মুসলিম শরীফ ;3. তিরমিযি শরীফ ;4. ইবনে মাজা ;5. নুযহাতুল মাজালেস ;6. ফতহুল কাদীর শওকানী ;7. মিরকাত ফি শারহিল মিশকাত ;8. শহীদে কারবালা-মুফতী শফী (রহ.) ;9.তারিখে তাবারী ;10. অগ্নিবীণা-কাজী নজরুল ইসলাম ;12. দিওয়ানে খাজায়ে হিন্দ ;13. মাকতালুল হোসাইন ;14. নেহায়াতুল আরব ;15. আল বিদায়া ওয়ান নেহায়া।

*অধ্যক্ষ ,ফরিদগঞ্জ মজিদিয়া কামিল মাদ্রাসা ও

চেয়াম্যান ,ফার্সী ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ

পবিত্র কুরআনের আয়াতের আলোকে সাইয়্যেদুশ শুহাদা হযরত ইমাম হোসাইন (আ.)

আল্লাহ তা’ আলা এরশাদ করেন :

( فَتَلَقَّىٰ آدَمُ مِن رَّبِّهِ كَلِمَاتٍ فَتَابَ عَلَيْهِ ۚ إِنَّهُ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ)

‘ অতঃপর আদমের নিকট রবের পক্ষ থেকে কয়েকটি শব্দ ওহী করা হলো ,অতঃপর তিনি (আল্লাহ) তার প্রতি প্রত্যাবর্তন করলেন (তাকে ক্ষমা করলেন) । নিঃসন্দেহে তিনি পুনঃপুনঃপ্রত্যাবর্তনকারী (তওবা কবুলকারী) পরম দয়ালু।’ (সূরা বাকারা: 37)

উপরিউক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বর্ণিত হয়েছে যে ,হযরত আদম (আ.) আল্লাহ তা’ আলা র মহান আরশের প্রতি দৃষ্টিপাত করলেন এবং সেখানে রাসূলুল্লাহ (সা.) ও মা’ সুম ইমামগণের নাম দেখতে পলেন। হযরত জিবরাইল (আ.) তাকে নামগুলো কাদের তা বুঝিয়ে দিলেন। অতঃপর আদম (আ.) বললেন :‘ হে পরম সাত্তা! আলীর উসিলায় ,হে স্রষ্টা! ফাতেমার উসিলায় আমাদের ক্ষমা কর।’

এর পর হযরত ইমাম হোসাইন (আ.) -এর নাম উচ্চারণ করতে গিয়ে তার চোখে অশ্রু এসে গেল । তখন তিনি বললেন :‘ হে আমার ভাই জিবরাইল! এর কী কারণ যে ,হোসাইনের নাম উচ্চারণে আমার চোখে অশ্রু এসে যাচ্ছে ?

’ জিবরাইল বললেন :‘ আপনার বংশধরদের মধ্য থেকে আপনার এ সন্তান এমন মুসিবতের মুখোমুখি হবে যে ,দুনিয়ার বুকে আসন্ন অন্য সমস্ত মুসিবত এর সামনো স্লান হয়ে যাবে।’ আদম (আ.) জিজ্ঞাসা করলেন :‘ তার ওপরে কী ধরনের মুসিবত আপতিত হবে ?’

জিবরাইল বললেন :‘ তিনি পিপাসার্ত অবস্থায় তার পূর্বে নিহত সঙ্গীদের লাশ সামনে নিয়ে নিহত হবেন। শত্রুরা তার মৃত্যু দেখার জন্য অপেক্ষা করবে।’ তখন আদম (আ.) ও জিবরাইল খুব ক্রন্দন করলেন।’ (আল আওয়ালিম :.পৃ.104-117)

‘ হায়! আমি যদি তাদের সাথে থাকতাম’ !

আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন ,যারা আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের সাথে জিহাদে শরীক হতে পারেনি এক পর্যাযে তারা বলবে :

( يَا لَيْتَنِي كُنتُ مَعَهُمْ فَأَفُوزَ فَوْزًا عَظِيمًا)

‘ হায়! আমিও যদি তাদের সাথে থাকতাম তাহলে বিরাট সাফল্যের অধিকারী হতাম!’ (সূরা নিসা : 73)

হযরত ইমাম রেযা (আ.) উপরিউক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা করার পর বলেন :‘ হে শহীদের! পুত্র তুমি যদি হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ও তার আহলে বাইতের সাথে বেহেশতে স্থান লাভ করতে চাও ,তাহলে তোমাকে হযরত ইমাম হোসাইন (আ.) -এর হত্যাকারীদের প্রতি অভিসম্পাত করতে হবে । যারা তার সাথে শহীদ হয়েছিলেন তুমি যদি তাদের মতো পুরস্কৃত হতে চাও ,তাহলে যখনই তুমি তার কথা স্মরণ করবে তখনই বলবে : হায়! আমি যদি তাদের সাথে থাকতাম ,তাহলে এক মহাবিজয় লাভ করতে পারতাম!’ (বিহারুল আনওয়ার : 44তম খণ্ডণ্ড ,299 )

‘ অঙ্গীকার পূরণ কর’

আল্লাহ তা’ আলা কুরআন মজীদে এরশাদ করেন :

( وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَىٰ ۖ وَأَقِمْنَ الصَّلَاةَ وَآتِينَ الزَّكَاةَ وَأَطِعْنَ اللَّـهَ وَرَسُولَهُ ۚ إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّـهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا)

‘ ঈমানদারদের মধ্যে এমন অনেক লোক রয়েছে যারা আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার পূরণ করেছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ রণাঙ্গনে শহীদ হয়েছে ও কেউ কেউ (শাহাদাতের জন্য) প্রতীক্ষা করছে এবং তারা তাদের অঙ্গীকারে পরিবর্তন সাধন করে নি।’ (সূরা আহযাব : 23)

আশুরার দিনে ইমাম হোসাইন (আ.)-এর সঙ্গী-সাথিগণ একজন একজন করে তার নিকট আসেন এবং তাকে অভিনন্দন জানান। তারা তাকে সম্বোধন করে বলেন :‘ হে আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর বংশধর!’ তখন তিনি তাদের অভিনন্দনের জবাবে বলেন :‘ তোমাদের পরে শাহাদাতের জন্য আমরা অপেক্ষা করব।’ এর পর তিনি উপরিউক্ত আয়াত পাঠ করলেন। এর পর ইমাম হোসাইন (আ.) -এর সঙ্গী-সাথিগণ (আল্লাহ তাদের সকলের প্রতি সন্তুষ্ট হন) সকলেই শহীদ হলেন এবং তার সাথে কেবল তার পরিবারের সদস্যরা রইলেন। (আল-আওয়ালিম : 17তম খণ্ডণ্ড ,পৃ. 275) এর পর তারা (শত্রুরা) তার ওপর ভয়ঙ্কর ভাবে ঝপিয়ে পড়ল।

ওপরে উদ্ধৃত আয়াতের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইমাম রেযা (আ.) বলেন :‘ আল্লাহ তা’ আলা যখন হযরত ইবরাহীম (আ.) -এর নিকট হযরত ইসমাইল (আ.) -এর পরিবর্তে একটি দুম্বা পাঠালেন ও তা-ই কুরবানি করার নির্দেশ দিলেন ,তখন ইবরাহীম (আ.) আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন যাতে তার মধ্যে সেই পিতার বিয়োগ-ব্যথা অনুভূত হয় যিনি তার সন্তানকে কুরবানি করছেন এবং এভাবে যাতে তিনি সর্বোত্তম পুরস্কারের উপযুক্ত হতে পারেন। তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে তার নিকট ওহী হয় :‘ হে ইবরাহীম! আমার সৃষ্ট সকল মানুষের মধ্যে তোমার নিকট সর্বাধিক প্রিয় কে ?’ ইবরাহীম (আ.) জবাব দিলেন :‘ আমি মুহাম্মাদকে সকলের চেয়ে বেশি ভালোবাসি।’ আল্লাহ পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন :‘ তুমি কাকে বেশি ভালোবাস ,মুহাম্মাদকে ,নাকি তোমার আত্মাকে ?’ তিনি বললেন :‘ মুহাম্মাদকে।’ আল্লাহ পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন :‘ তার সন্তান কি তোমার নিকট তোমার নিজের সন্তানের চেয়ে প্রিয়তর ?’ তিনি জবাব দিলেন :‘ অবশ্যই ।’ আল্লাহ বললেন :‘ কঠিন মুসিবতে নিপতি হয়ে মুহাম্মাদের সন্তানের মৃত্যুকেই কি তুমি বেশি কষ্ট পাবে ,নাকি আমার প্রতি তোমার আনুগত্য প্রকাশের জন্য নিজের হাতে তোমার পুত্রের কুরবানিতে বেশি কষ্ট পাবে ?’ তিনি বললেন :‘ মুহাম্মাদের সন্তানের মৃত্যুতে।’ তখন আল্লাহ বললেন :‘ ইবরাহীম! একদল লোক যারা নিজেদেরকে মুহাম্মাদের অনুসারী বলে মনে করবে-তার সন্তানের রক্তে নিজেদের হাত রঞ্জিত করবে এবং এভাবে তারা আমার ক্রোধের শিকার হবে ।’ একথা শুনে ইবরাহীম (আ.) ক্রন্দন করতে লাগলেন। তখন সর্বশক্তিমান আল্লাহ তা’ আলা তার নিকট ওহী প্রেরণ করলেন :‘ হে ইবরাহীম! হোসাইনের মৃত্যু তোমার জন্য এক বিরাট মুসিবত স্বরূপ হতো। এ কারণে মহামুসিবতে নিপতিত হওয়ায় আমি যাদেরকে পুরস্কৃত করব তোমাকেও তদ্রূপ পুরস্কৃত করব।’ (বিহারুল আনওয়ার : 44তম খণ্ডণ্ড ,.পৃ. 225-266) আল্লাহ তা’ আলা সূরা আল-ফাজরে এরশাদ করেন :

( يَا أَيَّتُهَا النَّفْسُ الْمُطْمَئِنَّةُ ارْجِعِي إِلَىٰ رَبِّكِ رَاضِيَةً مَّرْضِيَّةً)

‘ হে নিশ্চিন্ত নাফস! তুমি তোমার রবের দিকে প্রত্যাবর্তন কর এমন অবস্থায় যে ,তুমি (তার প্রতি) সন্তুষ্ট ও (তার পক্ষ থেকে) সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত।’ (সূরা আল-ফাজরে-27-28)

হযরত ইমাম জাফর সাদেক (আ.) বলেন :‘ তোমরা তোমাদের নামাযে সূরা আল-ফাজর পড়বে। হোসাইন বিন আলী (আ.) প্রসঙ্গে এটি নাযিল হয়েছে।’ তখন সেখানে উপস্থিত আবু আসসামা তাকে এ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলেন। জবাবে ইমাম বললেন :‘ এখানে‘ হে নিশ্চিন্ত নাফস’ বলতে ইমাম হোসাইন (আ.) -এর নামকে বোঝানো হয়েছে। তিনি আল্লাহর ওপর সন্তুষ্ট ,এ কারনে আল্লাহও তার ওপর সন্তুষ্ট। আর হযরত মুহাম্মাদ (সা.) -এর আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত তার সঙ্গী-সাথিগণ শেষ বিচাই দিনের ব্যাপারে আল্লাহর ওপর সনন্তুষ্ট। যারা সব সময় এ আয়াত পড়বে তারা বেহেশতে ইমাম হোসাইন (আ.) -এর সাথে থাকবে।’ (বিহারুল আনওয়ার : 44তম খণ্ড ,পৃ.218-219)

মাহবুবা ,জুন-1996

অনুবাদ :মুহাম্মাদ আবু যীনাত

‘ আমি কোনো ধন-সম্পদ বা ক্ষমতার লোভে কিংবা গালযোগ সৃষ্টির জন্য বিদ্রোহ করছিনা ,আমি আমার নানাজানের উম্মতের মধ্যে সংস্কার করতে চাই ,আমি‘ সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ’ করতে চাই এবং আমার নানাজান যে পথে চলেছেন আমি ও সে পথে চলতে চাই।’

ইমাম হোসাইন (আ.) [মাকতালু খারাযমী : 1/188]

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিমআল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদপবিত্র কুরআন ও রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম এর হাদিস থেকে আমিরুল মোমেনীন আলী ইবনে আবি তালিব আঃ এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ হাদিসমহানবী হযরত মুহাম্মদ ‎(সা.)-এর উত্তরাধিকারী,তাঁর নবুওয়াতের মিশনের প্রধান সাহায্যকারী এবং দুনিয়া ও আখেরাতে রাসূলের ভ্রাতা আলী ‎(আ.) ‏আবরাহার পবিত্র মক্কা আক্রমণের ৩৩ বছর পর ১৩ রজব পবিত্র কা’বা শরীফে জন্মগ্রহণ করেন। মহান আল্লাহর আদেশে তাঁর নাম রাখা হয় আলী।শিশুকাল থেকেই মহানবী ‎(সা.)-এর সাথে হযরত আলীর বিশেষ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ সম্পর্কে আলী ‎(আ.) ‏নিজেই বলেছেন ‎: ‘...তিনি আমাকে তাঁর কোলে রাখতেন যখন আমি শিশু ছিলাম। তিনি আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরতেন এবং তাঁর বিছানায় শুইয়ে রাখতেন। তাঁর পবিত্র দেহ আমার দেহকে স্পর্শ করত এবং তিনি আমাকে তাঁর শরীরের সুগন্ধির ঘ্রাণ নেওয়াতেন। তিনি খাদ্য-দ্রব্য চিবিয়ে আমার মুখে পুরে দিতেন।...’১হযরত আবু তালিবের সংসারের ব্যয়ভার কমানোর জন্য হযরত আলীর বালক বয়সেই মহানবী ‎(সা.) ‏তাঁকে নিজের কাছে নিয়ে আসেন। তখন থেকে তিনি রাসূলের সার্বক্ষণিক সঙ্গী হয়ে যান। রাসূল হেরা পর্বতের গুহায় আল্লাহর ইবাদাত করতে গেলেও তাঁকে সাথে নিয়ে যেতেন। হযরত আলী বলেন ‎: ‘তিনি ‎(মহানবী) ‏প্রতি বছর হেরাগুহায় একান্ত নির্জনে বাস করতেন। আমি তাঁকে দেখতাম। আমি ব্যতীত আর কোন লোকই তাঁকে দেখতে পেত না। ঐ সময় রাসূলুল্লাহ্ ও খাদীজাহ্ ব্যতীত কোন মুসলিম পরিবারই পৃথিবীর বুকে ছিল না। আমি ছিলাম তাঁদের পরিবারের তৃতীয় সদস্য। আমি ওহী ও রেসালতের আলো প্রত্যক্ষ করেছি এবং নবুওয়াতের সুবাস ও সুঘ্রাণ অনুভব করেছি।’২তিনি মহানবীর প্রতি নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁকে অনুসরণ করতেন। তিনি বলেন ‎: ‘উষ্ট্র শাবক যেমনভাবে উষ্ট্রীকে অনুসরণ করে ঠিক সেভাবে আমি তাঁকে অনুসরণ করতাম। তিনি প্রতিদিন তাঁর উন্নত চরিত্র থেকে একটি নিদর্শন আমাকে শিক্ষা দিতেন এবং আমাকে তা পালন করার নির্দেশ দিতেন।... ‏তাঁর ওপর যখন ওহী অবতীর্ণ হয়েছিল তখন আমি শয়তানের ক্রন্দন ধ্বনি শুনেছিলাম। তাই আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম ‎: ‏হে রাসূলুল্লাহ্! ‏এ ক্রন্দন ধ্বনি কার? ‏তখন তিনি আমাকে বলেছিলেন ‎: ‏এই শয়তান এখন থেকে তার পূজা ‎(ইবাদাত) ‏করা হবে না বলে হতাশ হয়ে গেছে। নিশ্চয় আমি যা শুনি তুমি তা শোন এবং আমি যা দেখি তা দেখ। তবে তুমি নবী নও,কিন্তু ‎[নবীর] ‏সহকারী এবং নিঃসন্দেহে তুমি মঙ্গল ও কল্যাণের ওপরই আছ।’৩আর তাই মহানবী ‎(সা.)-এর নবুওয়াতের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসার পর তিনিই সর্বপ্রথম তাঁর ওপর ঈমান আনেন এবং তিনিই তাঁর সাথে নামায আদায় করা প্রথম ব্যক্তি। ইমাম মালেক বর্ণনা করেছেন ‎: ‘মহানবী ‎(সা.) ‏সোমবারে নবুওয়াত প্রাপ্ত হন এবং আলী মঙ্গলবারে তাঁর ওপর ঈমান আনেন।’৪হযরত আলী নিজেই বলেন ‎: ‘আমি আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসূলের ভ্রাতা এবং তাঁর নবুওয়াতের সবচেয়ে বড় বিশ্বাসস্থাপনকারী। একমাত্র মিথ্যাবাদী ছাড়া আমার পর কেউ এ দাবি করবে না। অন্য লোকদের নামায পড়ারও ৭ বছর আগে থেকে আমি নামায পড়েছি।’৫হযরত আলী ‎(আ.)-এর প্রসিদ্ধ উপাধিরাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏হযরত আলীকে বিভিন্ন উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন। এর মধ্যে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ হচ্ছে সিদ্দিকে আকবার,ফারুকে আযম,আসাদুল্লাহ ও মুরতাজা।পবিত্র কুরআনে হযরত আলী ‎(আ.)-এর মর্যাদাহযরত আলীর শানে পবিত্র কুরআনের অনেক আয়াত নাযিল হয়েছে। ইবনে আসাকির হযরত ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা করেছেন যে,কোন ব্যক্তির গুণ বর্ণনায় এত অধিক কুরআনের বাণী অবতীর্ণ হয়নি যা হযরত আলী সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস আরও বলেছেন যে,হযরত আলীর শানে তিনশ’ ‏আয়াত নাযিল হয়েছে এবং তাঁর গুণাবলি অত্যধিক ও প্রসিদ্ধ।৬ পবিত্র কুরআনের নাযিলকৃত আয়াতগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নিম্নে উল্লেখ করা হল ‎:১. ‏সূরা বাকারার ২০৭ নং আয়াতوَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَشْرِي نَفْسَهُ ابْتِغَاءَ مَرْضَاتِ اللَّهِ وَاللَّهُ رَءُوفٌ بِالْعِبَادِ‘এবং মানুষের মধ্যে এমনও আছে,যে আল্লাহর সন্তোষ লাভের জন্য নিজের জীবন পর্যন্ত বিক্রয় করে দেয় এবং আল্লাহ ‎(এরূপ) ‏বান্দাদের প্রতি অতিশয় অনুগ্রহশীল।’সালাবী তাঁর তাফসীর গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন যে,রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏যখন মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করার প্রস্তুতি নিলেন সেই সময় হযরত আলীকে তাঁর বিছানায় শুয়ে থাকার নির্দেশ দেন যাতে কাফির-মুশরিকরা মনে করে যে,রাসূল তাঁর নিজ ঘরেই রয়েছেন। আলী ‎(আ.) ‏নির্দ্বিধায় এ নির্দেশ পালন করলে মহান আল্লাহ এ আয়াত নাযিল করেন।৭ ২. ‏সূরা আলে ইমরানের ৬১ নং আয়াতفَمَنْ حَاجَّكَ فِيهِ مِنْ بَعْدِ مَا جَاءَكَ مِنَ الْعِلْمِ فَقُلْ تَعَالَوْا نَدْعُ أَبْنَاءَنَا وَأَبْنَاءَكُمْ وَنِسَاءَنَا وَنِسَاءَكُمْ وَأَنْفُسَنَا وَأَنْفُسَكُمْ ثُمَّ نَبْتَهِلْ فَنَجْعَلْ لَعْنَتَ اللَّهِ عَلَى الْكَاذِبِينَ‘অতঃপর তোমার নিকট যখন জ্ঞান ‎(কুরআন) ‏এসে গেছে,এরপরও যদি কেউ ‎(খ্রিস্টান) ‏তোমার সাথে তার ‎(ঈসার) ‏সম্বন্ধে তর্ক-বিতর্ক করে,তবে বল,‘(ময়দানে) ‏এস,আমরা আহ্বান করি আমাদের পুত্রদের ও তোমাদের পুত্রদের,আমাদের নারীদের ও তোমাদের নারীদের এবং আমাদের সত্তাদের ও তোমাদের সত্তাদের;’ ‏অতঃপর সকলে মিলে ‎(আল্লাহর দরবারে) ‏নিবেদন করি এবং মিথ্যাবাদীদের ওপর আল্লাহর অভিসম্পাত বর্ষণ করি।’ঘটনাটি এরূপ ‎: ‏রাসূলুল্লাহ্ ‎(সা.)-এর নবুওয়াতের সত্যতা যাচাই করার জন্য নাজরানের একটি খ্রিস্টান প্রতিনিধিদল মদীনায় আসল। তাদের সাথে আলোচনা ফলপ্রসূ হলো না। রাসূল ‎(সা.) ‏হযরত ঈসা ‎(আ.) ‏সম্বন্ধে প্রতিনিধিদের বললেন যে,তিনি আল্লাহর পুত্র নন,বরং আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। রাসূলুল্লাহ্ হযরত ঈসার জন্মের ব্যাপারে হযরত আদমের উদাহরণও দিলেন। কিন্তু তারা কোন কথাই শুনল না। অবশেষে তিনি আল্লাহর আদেশে পরস্পরের বিরুদ্ধে দোয়া ও মিথ্যাবাদীদের ওপর অভিশাপ বর্ষণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন,যাকে ‎‘মুবাহিলা’ ‏বলে। স্থির করা হল যে,নির্দিষ্ট স্থানে নির্দিষ্ট সময়ে উভয়ে নিজ নিজ পুত্রদের,নারীদের ‎(কন্যা সন্তানদের) ‏এবং তাদের নিজেদের ‎‘সত্তা’ ‏বলে গণ্য হওয়ার যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে একত্র হবে এবং প্রত্যেকে অপরের প্রতি অভিসম্পাত ও আল্লাহর শাস্তি কামনা করবে। রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏ইমাম হুসাইনকে কোলে নিয়ে ইমাম হাসানের হাত ধরলেন এবং হযরত ফাতিমাকে নিজের পেছনে,আর হযরত আলীকে তাঁর পেছনে রাখলেন। অর্থাৎ ছেলেদের স্থানে তিনি নাতিদের,নারীদের স্থানে নিজ কন্যাকে এবং ‎‘সত্তা’ ‏বলে গণ্যদের স্থানে আলীকে নিলেন এবং দোয়া করলেন,‘হে আল্লাহ! ‏প্রত্যেক নবীর আহলে বাইত থাকে,এরা আমার আহলে বাইত। এদের সকল দোষ-ত্রুটি হতে মুক্ত ও পাক-পবিত্র রেখ।’ ‏তিনি এভাবে ময়দানে পৌঁছলে খ্রিস্টানদের নেতা আকব তা দেখে বলল,‘আল্লাহর কসম,আমি এমন নূরানী চেহারা দেখছি যে,যদি এ পাহাড়কে নিজ স্থান হতে সরে যেতে বলেন,তবে অবশ্যই সরে যাবে। সুতরাং মুবাহিলা হতে হাত গুটিয়ে নেওয়াই কল্যাণকর,অন্যথায় কিয়ামত অবধি খ্রিস্টানদের কেউ অবশিষ্ট থাকবে না।’ ‏পরিশেষে তারা জিযিরা কর দিতে সম্মত হল। এটা হযরত আলীর একটি উঁচু স্তরের ফযিলত যে,তিনি আল্লাহর আদেশে রাসূলের ‎‘নাফ্স’ (অনুরূপ সত্তা) ‏সাব্যস্ত হলেন এবং সমুদয় নবীর থেকে শ্রেষ্ঠ হলেন।৮৩. ‏সূরা নিসার ৫৯ নং আয়াত ‎يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ‘হে বিশ্বাসিগণ! ‏তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূল ও তোমাদের মধ্যে যারা নির্দেশের অধিকর্তা,তাদের আনুগত্য কর...।’ইমাম জাফর সাদিক ‎(আ.)- ‏কে জিজ্ঞেস করা হলো যে,উত্তরাধিকারীর আদেশ মান্য করা কি অবশ্যই কর্তব্য? ‏তিনি বললেন ‎: ‏হ্যাঁ,তাঁরা ঐসব ব্যক্তি যাঁদের আদেশ পালন করা এ আয়াতে ওয়াজিব করা হয়েছে...। এ আয়াত হযরত আলী বিন আবি তালিব,হযরত হাসান ও হযরত হুসাইন ‎(আ.)-এর শানে অবতীর্ণ হয়েছে।৯ ৪. ‏সূরা মায়েদার ৫৫ নং আয়াতإِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَالَّذِينَ آمَنُوا الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُمْ رَاكِعُونَ‘(হে বিশ্বাসিগণ!) ‏তোমাদের অভিভাবক তো কেবল আল্লাহ,তাঁর রাসূল এবং সেই বিশ্বাসীরা যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে এবং রুকু অবস্থায় যাকাত প্রদান করে।’শীয়া-সুন্নি উভয় মাযহাবের তফসীরকাররা একমত যে,আয়াতটি হযরত আলী ‎(আ.)-এর শানে নাযিল হয়েছে। যেমন ইবনে মারদুইয়া এবং খাতীব বাগদাদী ইবনে আব্বাস সূত্রে এবং তাবরানী ও ইবনে মারদুইয়া আম্মার ইবনে ইয়াসির ও আলী ইবনে আবি তালিব সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে,আয়াতটি আলী ইবনে আবি তালিব ‎(আ.) ‏সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে যখন তিনি রুকু অবস্থায় যাকাত দেন।ঘটনাটি এরূপ ‎: ‏একদিন হযরত আলী ‎(আ.) ‏মদীনার মসজিদে নামায পড়ছিলেন। এমন সময় একজন ভিক্ষুক এসে ভিক্ষা চাইল। কিন্তু কোন ভিক্ষা না পাওয়ায় সে ফরিয়াদ করল যে,রাসূলের মসজিদ থেকে সে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছে। এ সময় হযরত আলী রুকু অবস্থায় ছিলেন। তিনি সেই অবস্থায় তাঁর ডান হাতের আঙ্গুল থেকে আংটি খুলে নেওয়ার জন্য ভিক্ষুকের প্রতি ইশারা করেন। ভিক্ষুক তাঁর হাত থেকে আংটি খুলে নেয়। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে উপরিউক্ত আয়াত নাযিল হয়।১০৫. ‏সূরা মায়েদার ৬৭ নং আয়াতيَا أَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ مِنْ رَبِّكَ وَإِنْ لَمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ وَاللَّهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْكَافِرِينَ‘হে রাসূল! ‏যা ‎(যে আদেশ) ‏তোমার প্রতিপালকের পক্ষ হতে তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে তা পৌঁছে দাও,আর যদি তুমি তা না কর,তবে তুমি ‎(যেন) ‏তার কোন বার্তাই পৌঁছাওনি,এবং ‎(তুমি ভয় কর না) ‏আল্লাহ তোমাকে মানুষের অনিষ্ট হতে রক্ষা করবেন;এবং নিশ্চয় আল্লাহ অবিশ্বাসী সম্প্রদায়কে সঠিক পথে পরিচালিত করেন না।’যখন রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏দশম হিজরিতে বিদায় হজ্ব থেকে মদীনায় প্রত্যাবর্তন করছিলেন সে সময় আল্লাহ্ তা‘আলা এ আয়াত নাযিল করেন। ইবনে আবী হাতিম ও ইবনে আসাকির আবু সাঈদ খুদরী হতে বর্ণনা করেছেন যে,এ আয়াত গাদীরে খুম প্রান্তরে হযরত আলী ‎(আ.)-এর শানে নাযিল হয়েছে।বিদায় হজ্ব থেকে প্রত্যাবর্তন করার সময় গাদীরে খুম নামক স্থানে মহানবী ‎(সা.) ‏হযরত আলীকে তাঁর পরে সকল মুমিনের অভিভাবক বলে ঘোষণা দেন।১১এ ঘোষণা দেয়ার পর হযরত ওমর হযরত আলীর সাথে সাক্ষাৎ করে অভিনন্দন জানান এবং বলেন ‎: ‘হে আলী ইবনে আবি তালিব! ‏আপনি আজ হতে প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর মাওলা হয়ে গেলেন।’১২৬. ‏সূরা রাদের ৭ নং আয়াতإِنَّمَا أَنْتَ مُنْذِرٌ وَلِكُلِّ قَوْمٍ هَادٍ‘(হে রাসূল!) ‏তুমি তো কেবল সতর্ককারী এবং প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে এক পথ প্রদর্শক।’ইবনে মারদুইয়্যা,ইবনে জারীর,আবু নাঈম তাঁর ‎‘মারেফাত’ ‏গ্রন্থে,ইবনে আসাকির,দাইলামী ও ইবনে নাজ্জার তাঁদের স্ব স্ব গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন যে,আয়াতটি নাযিল হলে মহানবী ‎(সা.) ‏তাঁর হাত নিজের বুকে রেখে বললেন,‘আমিই সতর্ককারী।’ ‏অতঃপর আলীর কাঁধের প্রতি তাঁর হাত দ্বারা ইশারা করে বললেন,‘হে আলী! ‏তুমিই পথপ্রদর্শক এবং মানুষ আমার পর তোমার মাধ্যমে হেদায়াতপ্রাপ্ত হবে।’ ‏উক্ত রেওয়ায়েতটি শব্দের তারতম্যে ইবনে মারদুইয়্যা সাহাবী আবু বারযাহ আসলামী হতে,জীয়াফীল হযরত ইবনে আব্বাস হতে,ইবনে আহমাদ তাঁর মুসনাদে এবং ইবনে মারদুইয়্যা ও ইবনে আসাকির স্বয়ং হযরত আলী ‎(আ.) ‏হতে বর্ণনা করেছেন।১৩৭. ‏সূরা রাদের ৪৩ নং আয়াতوَيَقُولُ الَّذِينَ كَفَرُوا لَسْتَ مُرْسَلًا قُلْ كَفَى بِاللَّهِ شَهِيدًا بَيْنِي وَبَيْنَكُمْ وَمَنْ عِنْدَهُ عِلْمُ الْكِتَابِযারা অবিশ্বাস করেছে তারা বলে,‘তুমি আল্লাহর রাসূল নও।’ ‏তুমি বল,‘আমার ও তোমাদের মধ্যে ‎(রেসালাতের) ‏সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট এবং সেই ব্যক্তি যার কাছে গ্রন্থের পূর্ণ জ্ঞান রয়েছে।’অধিকাংশ তাফসীরকার স্বীকার করেছেন যে,আয়াতে বর্ণিত সেই ব্যক্তি হলেন হযরত আলী ‎(আ.)। যেমন আসমী ‎‘যায়নুল ফাতা’ ‏নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন এবং সা’লাবী আবদুল্লাহ ইবনে আতা থেকে বর্ণনা করেছেন যে,আবদুল্লাহ বিন সালাম বলতেন,‘যার কাছে গ্রন্থের পূর্ণ জ্ঞান আছে’-এর উদ্দিষ্ট হযরত আলী ‎(আ.)। এজন্যই হযরত আলী ‎(আ.) ‏বারবার বলতেন,‘আমার কাছে আমার মৃত্যুর পূর্বে যা চাও জিজ্ঞেস কর।’১৪৮. ‏সূরা নাহলের ৪৩ নং আয়াতوَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ إِلَّا رِجَالًا نُوحِي إِلَيْهِمْ فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَতোমার পূর্বেও আমরা কেবল পুরুষদেরই ‎(রাসূল করে) ‏প্রেরণ করেছি যাদের প্রতি আমরা প্রত্যাদেশ প্রেরণ করতাম;যদি তোমরা না জেনে থাক তবে যারা জানে তাদের জিজ্ঞেস কর।আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেন ‎: ‏জ্ঞানী ব্যক্তিরা অর্থাৎ আহলুয যিকর হলেন হযরত মুহাম্মাদ ‎(সা.),হযরত আলী ‎(আ.),হযরত ফাতেমা ‎(আ.),হযরত হাসান ও হুসাইন ‎(আ.)। যাবের ইবনে আবদুল্লাহ বলেছেন ‎: ‏যখন এই আয়াত নাযিল হল তখন হযরত আলী বললেন ‎: ‏আমরাই হলাম জ্ঞানের ভাণ্ডার।১৫৯. ‏সূরা আহযাবের ৩৩ নং আয়াতوَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى وَأَقِمْنَ الصَّلَاةَ وَآتِينَ الزَّكَاةَ وَأَطِعْنَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا‘হে নবী পরিবার! ‏আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদের সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে।’উম্মুল মুমিনীন হযরত উম্মে সালামার ঘরে এ আয়াত নাযিল হলে রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏হযরত ফাতিমা,ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন ‎(আ.)-কে ডাকেন এবং তাঁদেরকে একটি চাদরে ঢেকে নেন। হযরত আলী তাঁর পেছনে ছিলেন। তিনি তাঁকেও চাদরে ঢেকে নেন। অতঃপর বলেন ‎: ‘হে আল্লাহ্! ‏এরা আমার আহলে বাইত। অতএব,তুমি তাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করে দাও এবং তাদেরকে উত্তমরূপে পবিত্র কর।’ ‏তখন উম্মে সালামা বলেন ‎: ‘হে আল্লাহর রাসূল! ‏আমিও কি তাদের অন্তর্ভুক্ত?’ ‏তিনি বলেন ‎: ‘তুমি স্ব স্থানে আছ এবং তুমি কল্যাণের মধ্যেই আছ।’১৬হযরত উম্মে সালামা ছাড়াও হযরত আবু সাঈদ খুদরী ও আনাস ইবনে মালিক কর্তৃক এ হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে।১৭১০. ‏সূরা শূরার ২৩ নং আয়াতقُلْ لَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا إِلَّا الْمَوَدَّةَ فِي الْقُرْبَى‘বল,আমি এর বিনিময়ে তোমাদের নিকট থেকে আমার নিকটাত্মীয়দের প্রতি ভালবাসা ছাড়া আর কোন প্রতিদান চাই না।’রাসূলুল্লাহ ‎(সা.)-এর নিকটাত্মীয় আহলে বাইতের সদস্যদের প্রতি ভালবাসা পোষণকে এ আয়াত দ্বারা মহান আল্লাহ মুসলমানদের জন্য ফরয বলে ঘোষণা করেন।হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেছেন ‎: ‏যখন এ আয়াত নাযিল হল তখন সাহাবিগণ জিজ্ঞেস করলেন,হে রাসূলুল্লাহ! ‏আপনার নিকটাত্মীয়,যাদেরকে ভালবাসা আমাদের ওপর ওয়াজিব করা হয়েছে তারা কারা? ‏রাসূল ‎(সা.) ‏বললেন ‎: ‏আলী,ফাতেমা,হাসান ও হুসাইন।১৮রাসূলুল্লাহ ‎(সা.)-এর হাদীসে আলী ‎(আ.)হযরত আলীর মর্যাদা সম্পর্কে মহানবী ‎(সা.)-এর নিকট থেকে অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এখানে কয়েকটি উল্লেখ করা হল ‎:১. ‏সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস বলেন,নবী ‎(সা.) ‏তাবুক যুদ্ধের সময় আলীকে লক্ষ্য করে বলেছেন ‎: ‘তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে,মর্যাদার দিক থেকে মূসার নিকট হারুন যে পর্যায়ে ছিলেন,তুমিও আমার নিকট ঐ পর্যায়ে রয়েছ?’১৯২. ‏অন্য একটি হাদীসে এসেছে ‎: ‏রাসূল বলেন ‎: ‘তুমি তো আমার নিকট তদ্রূপ যেরূপ হারুনের স্থান মূসার নিকট। পার্থক্য এতটুকু যে,আমার পরে কোন নবী নেই।’২০৩. ‏রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏ইমাম হাসান ও হুসাইনের হাত ধরে বলেন ‎: ‘যে ব্যক্তি আমাকে ভালবাসে এবং এ দু’জন ও তাদের পিতা-মাতাকে ভালবাসে,সে কিয়ামতের দিন আমার সাথে একই মর্যাদায় অবস্থান করবে।’২১৪. ‏আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণিত। রাসূল বলেছেন ‎: ‘আলীর চেহারার দিকে তাকানোও ইবাদত।’২২৫. ‏রাসূলুল্লাহ্ ‎(সা.) ‏আলী ‎(আ.)-কে সম্বোধন করে বলেছিলেন ‎: ‘মুমিনরাই তোমাকে মহব্বত করবে এবং মুনাফিকরাই তোমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবে।’২৩৬. ‏তিরমিযী,নাসাঈ ও ইবনে মাযাহ হুবশী ইবনে জুনাদাহ্ ‎(রা.) ‏থেকে বর্ণনা করেছেন। রাসূল ‎(সা.) ‏বলেছেন ‎: ‘আলী আমা থেকে এবং আমি আলী থেকে। যে ব্যক্তি আলীকে ভালবেসেছে,সে আমাকে ভালোবেসেছে। আর যে ব্যক্তি আলীকে ভালবেসেছে,সে আল্লাহকে ভালবেসেছে। যে ব্যক্তি আলীর সাথে শত্রুতা পোষণ করেছে সে আমার সাথে শত্রুতা পোষণ করেছে। আর যে আমার শত্রু সে আল্লাহর শত্রু। যে ব্যক্তি আলীকে কষ্ট দিয়েছে,সে আমাকে কষ্ট দিয়েছে।’২৪৭. ‏রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏বলেন ‎: ‘(হে আলী!) ‏দুনিয়া ও আখেরাতে তুমি আমারই ভাই।’২৫৮. ‏আবদুল্লাহ ইবনে বুরাইদা ‎(র.) ‏থেকে তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন ‎: ‏রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏বলেছেন ‎: ‘চার ব্যক্তিকে ভালবাসতে আল্লাহ আমাকে আদেশ করেছেন এবং তিনি আমাকে এও অবহিত করেছেন যে,তিনিও তাদের ভালবাসেন। বলা হল ‎: ‏হে আল্লাহর রাসূল! ‏আমাদের তাদের নামগুলো বলুন। তিনি বলেন ‎: ‏আলীও তাদের অন্তর্ভুক্ত। এ কথা তিনি তিনবার বলেন। ‎(অবশিষ্ট তিনজন হলেন) ‏আবু যার,মিকদাদ ও সালমান।...’২৬৯. ‏জাবির ‎(রা.) ‏থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন ‎: ‏তায়েফ অভিযানের দিন রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏আলীকে কাছে ডেকে তার সাথে চুপিসারে আলাপ করেন। লোকেরা বলল ‎: ‏তিনি তাঁর চাচাত ভাইয়ের সাথে দীর্ঘক্ষণ চুপিসারে কথা বললেন। রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏বলেন ‎: ‏আমি তার সাথে চুপিসারে কথা বলিনি;বরং আল্লাহই তার সাথে চুপিসারে কথা বলেছেন। ‎(অর্থাৎ তার সাথে চুপিসারে কথা বলার জন্য আল্লাহ্ই আমাকে আদেশ করেছেন।)২৭হযরত আলী সম্পর্কে অন্যান্য সাহাবীহযরত আবু বকর প্রায়ই হয়রত আলীর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতেন। হযরত আয়েশা এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন ‎: ‘আমি রাসূলে করীমকে বলতে শুনেছি,আলীর মুখ দেখা ইবাদাতের শামিল।’২৮হযরত উমর বিন খাত্তাব বলতেন,হযরত আলী বিন আবি তালিবের তিনটি বৈশিষ্ট্য ছিল। যদি তার একটি আমার থাকত তাহলে আমি বলতাম যে,আমাকে লাল রঙের একটি উট দেয়া হলে তা অপেক্ষাও আমি তা পছন্দ করতাম। তাঁকে এ তিনটি বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন ‎: ‏১.তাঁর বিয়ে হয় রাসূল ‎(সা.)-এর কন্যার সাথে,২. ‏তাঁর সঙ্গে রাসূলে করীমের মসজিদে অবস্থান এবং যা রাসূলে করিমের জন্য বৈধ ছিল তার জন্যও তা বৈধ ছিল এবং ৩. ‏খায়বার যুদ্ধের পতাকা বহনের দায়িত্ব তাঁর ওপর ন্যস্ত ছিল।২৯হযরত উমর বলেছেন,হে আল্লাহ! ‏আমার ওপর এমন কোন বিপদ দিও না যখন আবুল হাসান ‎(আলী) ‏আমার নিকট উপস্থিত না থাকে। কারণ,তিনি আমার নিকট উপস্থিত থাকলে আমাকে সে বিপদ থেকে নিষ্কৃতি দেবেন।’৩০তাবরানী হযরত ইবনে আব্বাস থেকে রেওয়ায়াত করেছেন যে,হযরত আলীর আঠারটি বৈশিষ্ট্য এমন ছিল যা সমগ্র উম্মতের কারও ছিল না।’৩১তথ্যসূত্র১. ‏মমতাজ বেগম কর্তৃক প্রকাশিত নাহজ আল বালাঘা,২য় মুদ্রণ,আল খুতবাতুল কাসেয়াহ্,খুতবা নং ১৯১২. ‏প্রাগুক্ত৩. ‏প্রাগুক্ত৪. ‏মুসতাদরাকে হাকেম,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏১১২;এটি ইমাম মালেক কর্তৃক বর্ণিত। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে হেরা গুহায় জিবরাঈল ‎(আ.) ‏কর্তৃক রাসূলুল্লাহ ‎(সা.)-এর নবুওয়াত ঘোষণার পর পরই হযরত আলী ‎(আ.) ‏তাঁর ঈমান আনার বিষয়টি প্রকাশ করেন।৫. ‏সুনানে ইবনে মাজাহ্,১ম খণ্ড,পৃ. ‏৪৪৬. ‏নূর-এ-সাকালাইন কর্তৃক প্রকাশিত,সাইয়্যেদ আলী জাফরী প্রণীত আল মুরতাজা,পৃ. ‏৩০।৭. ‏এহইয়াউ উলুমিদ্দীন,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏২৩৮;নুরুল আবসার,পৃ. ‏৮৬,মুসতাদরাকে হাকেম,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏৪;তাফসীরে কুমী,১ম খণ্ড,পৃ. ‏৭১;তাযকিরাতু সিবতে ইবনে যাওযী,পৃ. ‏২১;ইয়ানাবিউল মাওয়াদ্দাহ,পৃ. ‏৯২।৮. ‏তাফসীরে জালালাইন,১ম খণ্ড,পৃ.৬০;বায়দ্বাভী,১ম খণ্ড,পৃ. ‏১১৮,তাফসীরে দুররুল মানসুর,২য় খণ্ড,পৃ. ‏৩৯,মিশর মুদ্রণ;মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বাল,১ম খণ্ড,পৃ. ‏১৮৫;৯. ‏মাজমাউল বায়ান,২য় খণ্ড,পৃ. ‏১৪১;তাফসীরে কুমী,১ম খণ্ড,পৃ. ‏১৪১;ইয়ানাবিউল মাওয়াদ্দাহ,পৃ. ‏২১;শাওয়াহেদুত তানযিল,১ম খণ্ড,পৃ. ‏১৪৮;তাফসীরে ফুরাত,পৃ.২৮১০. ‏তাফসীরে তাবারী,৬ষ্ঠ খণ্ড,পৃ. ‏১৬৫;তাফসীরে রাযী,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏৪৩১;মানাকেবে খাওয়ারেযমী,পৃ. ‏১৭৮;যাখায়েরুল উকবা,পৃ. ‏১০২;তাফসীরে ইবনে কাসীর,২য় খণ্ড,পৃ. ‏৭১;আল- ‏বেদায়া ওয়ান নেহায়া,৭ম খণ্ড,পৃ. ‏৩৫৭;সাওয়ায়েকে মুহরিকাহ,পৃ. ‏২৫;১১. ‏মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বাল,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ‏৩৭২;ইমাম নাসাঈ প্রণীত খাসায়েসে আমীরুল মুমিনীন,পৃ. ‏২১;মুসতাদরাকে হাকেম,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏১০৯;আল গাদীর,১ম খণ্ড,পৃ. ‏২১৪ ও ২২৯;শাওয়াহেদুত তানযিল,১ম খণ্ড,পৃ. ‏১৮৭ ।১২. ‏তাফসীরে তাবারী,৩য় খণ্ড,মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বল,৩য় খণ্ড,দারে কুতনী।১৩. ‏তাফসীরে দুররে মানসুর,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ‏৪৫ দ্রষ্টব্য।১৪. ‏তাফসীরে দুররে মানসুর,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ‏৬৯ ।১৫. ‏কেফাইয়াতুল মুওয়াহহিদীন,২য় খণ্ড,পৃ. ‏৬৫০;মাজমাউল বায়ান,২য় খণ্ড,পৃ. ‏৪১৩;কানযুল উম্মাল,৬ষ্ঠ খণ্ড,পৃ. ‏১৫৬;তাফসীরে তাবারী,১৪তম খণ্ড,পৃ. ‏১০৮ ।১৬. ‏বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত জামে আত-তিরমিযী,৬ষ্ঠ খণ্ড,হাদীস নং ৩৭২৫,পৃ. ‏৩৫৯ ।১৭. ‏মুসনাদে আহমাদ,১ম খণ্ড,পৃ. ‏৩৩১;যাখায়েরুল উকবা,পৃ. ‏২১,তাফসীরে তাবারী,২২তম খণ্ড,পৃ. ‏৮;মুসতাদরাকে হাকেম,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏২০৮;ফাজায়েলে খামসাহ,১ম খণ্ড,পৃ. ‏২২৪;শাওয়াহেদুত তানযিল,২য় খণ্ড,পৃ. ‏১০ ।১৮. ‏যাখায়েরুল উকবা,পৃ. ‏৯ ও ১২;তাফসীরে যামাখশারী,২য় খণ্ড,পৃ. ‏৩৩৯;সাওয়ায়েকে মুহরিকাহ,পৃ. ‏১০১,তাফসীরে দুররুল মানসূর,৬ষ্ঠ খণ্ড,পৃ. ‏৭;মুসনাদে আহমাদ,১ম খণ্ড,পৃ. ‏২২৯;আল গাদীর,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏১৭২;শাওয়াহেদুত তানযিল,২য় খণ্ড,পৃ. ‏৩০ ।১৯. ‏আধুনিক প্রকাশনী কর্তৃক প্রকাশিত সহীহ আল বুখারী,৩য় খণ্ড,হাদীস নং ৩৪৩১;বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত সহীহ মুসলিম,৭ম খণ্ড,হাদীস নং ৬০৪২ ।২০. ‏বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত সহীহ মুসলিম,৭ম খণ্ড,হাদীস নং ৬০৪০ ও জামে আত-তিরমিযী,৬ষ্ঠ খণ্ড,হাদীস নং ৩৬৬৮ ।২১. ‏বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত জামে আত-তিরমিযী,৬ষ্ঠ খণ্ড,হাদীস নং ৩৬৭০২২. ‏এমদাদীয়া লাইব্রেরী কর্তৃক প্রকাশিত হযরত আলী ইবনে আবি তালিব ‎(রা.),পৃ. ‏১৫ ।২৩. ‏বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত জামে আত-তিরমিযী,৬ষ্ঠ খণ্ড,হাদীস নং ৩৬৭৩ ।২৪. ‏এমদাদিয়া লাইব্রেরী কর্তৃক প্রকাশিত হযরত আলী ‎(রা.),পৃ. ‏১৫-১৬ ।২৫. ‏বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত জামে আত-তিরমিযী,৬ষ্ঠ খণ্ড,হাদীস নং ৩৬৫৮;২৬. ‏প্রাগুক্ত,হাদীস নং ৩৬৫৬;২৭. ‏প্রাগুক্ত,হাদীস নং ৩৬৬৪২৮. ‏সাওয়ায়েকে মুহরিকাহ,পৃ. ‏১৭৫ ।২৯. ‏সাওয়ায়েকে মুহরিকাহ,৩য় খণ্ড,এবং মুসতাদরাকে হাকেম,৩য় খণ্ড ।৩০. ‏মুনতাখাবে কানজুল উম্মাল,৩য় খণ্ড ।৩১. ‏সাওয়ায়েকে মুহরিকাহ ১১৩ ।(প্রত্যাশা,৩য় বর্ষ, ‏১ম সংখ্যাপ্রচারে মোঃ জাহিদ হুসাইন

শিশু ইমাম হযরত জাওয়াদ (আ.)'র জন্মবার্ষিকীসকল মোমিন মোমিনা কে জানাই ঈদ মোবারক🎂🎂🎂🎂🎂(((পর্ব ১)))🎂🎂🎂🎂🎂দশই রজব ইসলামের মহাখুশির দিন। এই দিনে পৃথিবীতে এসেছিলেন মাওলা মোহাম্মদ (সা) পবিত্র আহলে বাইতের সদস্য নবম ইমাম হযরত জাওয়াদ বা তাকি(আ)। নবীজীর আহলে বাইতের সদস্যরা কেবল মুসলমানদেরই ধর্মীয় নেতা নন বরং যারাই সত্য পথের সন্ধানী কিংবা কল্যাণকামী-তাদের সবারই নেতা।আহলে বাইতের এই মহান ইমাম হযরত জাওয়াদ (আ) এর জন্ম-বার্ষিকীতে আপনাদের সবার প্রতি রইলো অশেষ অভিনন্দন ও প্রাণঢালা মোবারকবাদ এবং মাওলা মোহাম্মদ (সা.) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের শানে পেশ করছি অসংখ্য দরুদ ও সালাম ।ইমাম জাওয়াদের জন্ম হয়েছিল ১৯৫ হিজরিতে তথা ৮১১ খ্রিস্টাব্দের ১২ এপ্রিল পবিত্র মদীনায়। মজলুম ও দরিদ্রদের প্রতি ব্যাপক দানশীলতা ও দয়ার জন্য তিনি 'জাওয়াদ' উপাধি পেয়েছিলেন। তাকি বা খোদাভীরু ছিল তাঁর আরেকটি উপাধি। জগত-বিখ্যাত মহাপুরুষ ইমাম রেজা (আ) ছিলেন তাঁর বাবা। আর তাঁর মায়ের নাম ‘সাবিকাহ’ বলে জানা যায়। ইমাম রেজা (আ) তাঁর এই স্ত্রীর নাম রেখেছিলেন খিইজরান। তিনি ছিলেন মহানবীর স্ত্রী উম্মুল মু’মিনিন হযরত মারিয়া কিবতির (আ) বংশধর। ইমাম জাওয়াদ (আ) ১৭ বছর ইমামতের দায়িত্ব পালনের পর মাত্র ২৫ বছর বয়সে শাহাদত বরণ করেন। তিনিই হলেন ইসলামের ইতিহাসের সবচেয়ে কম বয়স্ক ইমাম। আহলে বাইতের অন্য ইমামগণের মত ইমাম জাওয়াদ (আ.)ও ছিলেন উচ্চতর নৈতিক গুণ, জ্ঞান ও পরিপূর্ণতার অধিকারী। ইসলামের মূল শিক্ষা ও সংস্কৃতির পুনরুজ্জীবন এবং বিকাশ ছিল তাঁর তৎপরতার মূল লক্ষ্য বা কেন্দ্রবিন্দু। সেযুগের সব মাজহাবের জ্ঞানী-গুণীরা ইমাম জাওয়াদ (আ.)'র উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন।সমসাময়িক যুগের প্রখ্যাত সুন্নি চিন্তাবিদ কামালউদ্দিন শাফেয়ি ইমাম জাওয়াদ (আ.) সম্পর্কে বলেছেন, "মুহাম্মাদ বিন আলী তথা ইমাম জাওয়াদ (আ.) ছিলেন অত্যন্ত উঁচু মর্যাদা ও গুণের অধিকারী। মানুষের মুখে মুখে ফিরতো তাঁর প্রশংসা। তাঁর উদারতা, প্রশস্ত দৃষ্টি ও সুমিষ্ট কথা সবাইকে আকৃষ্ট করত। যে-ই তাঁর কাছে আসতো নিজের অজান্তেই এই মহামানবের অনুরাগী হয়ে পড়ত এবং তাঁর কাছ থেকে জ্ঞান অর্জন করত।" ইমাম জাওয়াদ (আ) মাত্র সাত বা আট বছর বয়সে ইমামতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এতো অল্প বয়সে তাঁর ইমামতিত্বের বিষয়টি ছিল যথেষ্ট বিস্ময়কর। ফলে অনেকেই এ বিষয়ে সন্দেহ করতেন। অথচ আল্লাহর তো এই শক্তি আছে যে তিনি মানুষকে তার বয়সের স্বল্পতা সত্ত্বেও পরিপূর্ণ বিবেক-বুদ্ধির পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেন। কোরানের আয়াতের ভিত্তিতে পূর্ববর্তী উম্মতের মধ্যেও এরকম উদাহরণ বহু আছে। যেমন শিশুকালে হযরত ইয়াহিয়া (আ) এর নবুয়্যত প্রাপ্তি, মায়ের কোলে নবজাতক ঈসা (আ) এর কথা বলা ইত্যাদি সর্বশক্তিমান আল্লাহর অশেষ ক্ষমতারই নিদর্শন। ইমাম জাওয়াদ (আ) শৈশব-কৈশোরেই ছিলেন জ্ঞানে-গুণে, ধৈর্য ও সহনশীলতায়, ইবাদত-বন্দেগিতে, সচেতনতায়, কথাবার্তায় শীর্ষস্থানীয় মহামানব। একবার হজ্জ্বের সময় বাগদাদ এবং অন্যান্য শহরের বিখ্যাত ফকীহদের মধ্য থেকে আশি জন মদীনায় ইমাম জাওয়াদ (আ) এর কাছে গিয়েছিলেন। তাঁরা ইমামকে বহু বিষয়ে জিজ্ঞেস করে অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত ও সন্তোষজনক জবাব পেলেন। ফলে জাওয়াদ (আ)’র ইমামতিত্বের ব্যাপারে তাদের মনে যেসব সন্দেহ ছিল-তা দূর হয়ে যায়।প্রচারে মোঃ জাহিদ হুসাইন আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম‌লা'নাতুল্লাহি আলাল কাজেবিন🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂