আখলাক ( সদাচরণ এবং চরিত্র )সদাচরণ এবং নৈতিক চরিত্র ও আদর্শ ( আখলাক ) সংক্রান্ত ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) - এর কিছু অমিয় বাণীঃ ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) বলনঃ নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তাঁর রাহে যুদ্ধে গমনকারী মুজাহিদকে যে সওয়াব ও পূ্ণ্য দেন ঠিক সেটার ন্যায় তিনি বান্দাকে সদাচরণ অবলম্বন করার জন্য সওয়াব ও পূণ্য দেবেন । ( দ্রঃ আল-কাফী , খঃ ২ , পৃঃ ১০১ , হাদীস নং ১২ )قال الصّادق ( ع ) : إِنَّ اللهَ تَبَارَکَ وَ تَعَالَی لَيُعطِيَ العَبدَ مِنَ الثَّوَابِ عَلَی حُسنِ الخُلقِ کَمَا يُعطِي المُجَاهِدَ فِي سَبِيلِ اللهِ يَغدُو وَ يَرُوحُ . ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) বলেনঃ মহান আল্লাহর উদ্দেশ্যে ফরযসমুহ আঞ্জাম দেয়ার পর বান্দার যে আমলটি মহান আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় তা হচ্ছে মানুষের সাথে তার ( ঐ বান্দার ) সদাচরণ ও সদ্ব্যবহার । ( দ্রঃ প্রাগুক্ত , পৃঃ ১০০ , হাদীস নং ৬ )قال الصّادق ( ع ) : مَا يَقدِمُ المُؤمِنُ عَلَی الله بِعَمَلٍ بَعدَ الفَرَائِضِ أَحَبَّ إِلَی اللهِ تَعَالَی مِن أَن يَسَعَ النَّاسَ بِخُلقِهِ . ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) বলেনঃ মহান আল্লাহ যে সব বিষয় সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ ( সাঃ )কে সম্বোধন করেছিলেন সেগুলোর মধ্যে ছিল তাঁর এ বাণী বা আয়াতঃ হে মুহাম্মাদ , নিশ্চয়ই আপনি এক অতিমহান ( উত্তম ) চারিত্রিক নীতি ও আদর্শের উপর আছেন । তিনি ( ইমাম সাদিক আঃ ) বলেনঃ এই অতিমহান ( উত্তম ) চারিত্রিক নীতি ও আদর্শ হচ্ছে দানশীলতা ( বদান্যতা / মহত্ত্বالسَّخَاءُ ) এবং সদাচারণ ও সদ্ব্যবহার ( حُسنُ الخُلقِ)) ( দ্রঃ তাফসীর নূরুস সাকালাইন , খঃ ৫ , পৃঃ ৩৯১ , হাদীস নং ২৩ ) قَالَ الإِمَامُ الصَّادِقُ ( ع ) : کَانَ فِيمَا خَاطَبَ اللهُ تَعَالَی نَبِيَّهُ ( ص ) أَن قَالَ لَهُ : يَا مُحَمَّدُ (( إِنّکَ لَعَلَی خُلقٍ عَطِيمٍ )) قَالَ : السَّخَاءُ وَ حُسنُ الخُلقِ . সদাচরণ ও সদ্ব্যবহারের ( ভালো স্বভাব ও চরিত্র ) সীমা পরিসীমা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) বলেনঃ (সদাচরণ ও সদ্ব্যবহারের সীমা পরিসীমা হচ্ছে এই যে ) স্বীয় পার্শ্বদেশ অর্থাৎ হস্তদ্বয় বিনয়াবনত ও নমনীয় করবে ( তুমি নম্র ও ভদ্র হবে ) , মুখের ভাষাকে মিষ্টি মধুর ও মার্জিত ( পবিত্র ) করবে ( ভালো ও সুন্দর কথা বলবে ) এবং স্বীয় দ্বীনী ভাইয়ের সাথে সহাস্য বদনে ও প্রফুল্ল চিত্তে সাক্ষাৎ করবে । ( দ্রঃ মাআনিল আখবার , পৃঃ ২৫৩ , হাদীস নং ১ )قَالَ الإِمَامُ الصَّادِقُ ( ع ) : - لَمَّا سُئِلَ عَن حَدِّ حُسنِ الخُلقِ - : تُلِينُ جَانِبَکَ ، وَ تُطَيِّبُ کَلَامَکَ ، وَ تَلقَی أَخَاکَ بِبِشرٍ حَسَنٍ .উত্তম নৈতিক চরিত্রের ( مَکَارِمُ الأَخلَاقِ ) ব্যখ্যা প্রসঙ্গেঃ ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) বলেনঃ মহান আল্লাহ মহানবী ( সাঃ )কে উত্তম নৈতিক চরিত্রের অধিকারী করেছিলেন । অতঃপর তোমরা নিজেদেরকে পরীক্ষা কর , যদি তোমাদের মাঝে উত্তম নৈতিক চরিত্র ( মাকারিমুল আখলাক ) বিদ্যমান থাকে তাহলে এরজন্য মহান আল্লাহর প্রশংসা কর এবং তাঁর কাছে তা আরও বৃদ্ধি করে দেয়ার আকাঙ্খা ব্যক্ত কর । অতঃপর তিনি ( ইমাম সাদিক ) ১০ টি উত্তম ( সুন্দর ) নৈতিক চরিত্র উল্লেখ করেনঃ ১. দৃঢ় বিশ্বাস ( ইয়াকীন ) , ২. পরিতোষ ও সন্তুষ্টি ( কানাআত ) , ৩. ধৈর্য্য ( সবর ) , ৪. কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ( শুকুর ) , ৫. সহিষ্ণুতা ( হিলম ) , ৬. সদাচরণ ( সদ্ব্যবহারঃ হুসনুল খুলক ) , ৭. দানশীলতা ( বদান্যতাঃ সাখা ) , ৮. আত্মসম্মানবোধ ( গাইরাত ) , ৯. সাহস ( শাজাআত ) এবং ১০. পৌরুষ ও মনুষ্যত্ব ( মুরূআত ) । ( দ্রঃ আমালীস সাদূক , হাদীস নং ৮ , পৃঃ ১৮৪ ) قَالَ الإِمَامُ الصَّادِقُ ( ع ) : إِنّ اللهَ تَبَارَکَ وَ تَعَالَی خَصَّ رَسُولَ اللهِ ( ص ) بِمَکَارِمِ الأَخلَاقِ ، فَامتَحِنُوا أَنفُسَکُم ، فَإِن کَانَت فِيکُم فَاحمَدُوا اللهَ عَزَّ وَ جَلَّ وَ ارغَبُوا إِلَيهِ فِي الزِّيَادَةِ مِنهَا ، فَذَکَرَهَا عَشَرَةً : اليَقِينُ ، وَ القَنَاعَةُ ، وَ الصَّبرُ ، وَ الشُّکرُ ، وَ الحِلمٌ ، وَ حُسنُ الخُلقِ ، وَ السَّخَاءُ ، وَ الغَيرَةُ ، وَ الشَّجَاعَةُ ، وَ المُرُوءَةُ. ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) বলেনঃ (- আর তাঁকে উত্তম নৈতিক চরিত্র সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল -) যে তোমার সাথে অন্যায় ( জুলুম ) করেছে তাকে তোমার ক্ষমা করা , যে তোমার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করেছে তার সাথে তোমার সম্পর্ক স্থাপন , যে তোমাকে বঞ্চিত করেছে তাকে দেয়া ( দান করা ) এবং তোমার নিজের বিরুদ্ধে হলেও সত্য বলা ।(দ্রঃ মাআনিল আখবার , পৃঃ ১৯১ , হাদীস নং ১ ) قَالَ الإِمَامُ الصَّادِقُ ( ع ) : - وَ قَد سُئِلَ عَن مَکَارِمِ الأَخلَاقِ : العَفوُ عَمَّن ظَلَمَکَ ، وَ صِلَةُ مَن قَطَعَکَ ، وَ إِعطَاءُ مَن حَرَمَکَ ، وَ قَولُ الحَقِّ وَ لَو عَلَی نَفسِکَ . ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) জার্রাহ আল-মাদায়েনীকে বলেনঃ " আমি তোমাকে উত্তম নৈতিক চরিত্র ( মাকারিমুল আখলাক مَکَارِمُ الأَخلَاقِ ) সম্পর্কে বলব কি ?" তা ( উত্তম নৈতিক চরিত্র ) হচ্ছে মানুষকে ক্ষমা করা , অর্থ সম্পদ দিয়ে (অভাবগ্রস্ত দ্বীনী) ভাইকে সাহায্য করা এবং মহান আল্লাহকে অনেক স্মরণ করা ।( দ্রঃ প্রাগুক্তঃ হাদীস নং ২ )عَنهُ ( ع ) - لِجَرَّاح المَدَائِنِيِّ - أَلَا أُحَدِّثُکَ بِمَکَارِمِ الأَخلَاقِ ؟ الصَّفحُ عَنِ النَّاسِ ، وَ مُؤَامسَاةُ الرَّجُلِ أَخَاهُ فِي مَالِهِ ، وَ ذِکرُ اللهِ کَثِيرَاً . ইমাম সাদিক ( আঃ ) বলেনঃ সদাচরণ ও সদ্ব্যবহার ( হুসনুল খুলক ) রিযক ও রুজি বৃদ্ধি করে ।( দ্রঃ বিহারুল আনওয়ার , খঃ ৭১ , পৃঃ ৩৯৬ , হাদীস নং ৭৭ )قَالَ الإِمَامُ الصَّادِقُ ( ع ) : حُسنُ الخُلقِ يَزِيدُ فِي الرِّزقِ . ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) বলেনঃ নিশ্চয়ই দয়া ও অনুগ্রহ ( البِرّ ) , শিষ্ঠাচার ও সদাচরণ ( সদ্ব্যবহার ও উত্তম নৈতিক চরিত্র ) দেশকে আবাদ ও উন্নত এবং মানুষের আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি করে ।( দ্রঃ বিহারুল আনওয়ার , খঃ ৭১ , পৃঃ ৩৯৫ , হাদীস নং ৭৩ )قَالَ الإِمَامُ الصَّادِقُ ( ع ) : إِنَّ البِرَّ وَ حُسنَ الخُلقَ يَعمُرانِ الدِّيَارَ وَ يَزِيدَانِ فِي الأَعمَارِ. ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) বলেনঃ রোদ যেমন শক্তিশালী ( পরাক্রমশালী ) ব্যক্তিকে ধরাশায়ী ( ক্লান্ত শ্রান্ত ) করে ঠিক তেমনি সদাচরণ ও উত্তম চরিত্র পাপকে গলিয়ে দ্রবীভুত ( অর্থাৎ নিশ্চিহ্ন ) করে দেয় । ( আল-কাফী , খঃ ২ , পৃঃ ১০০ , হাদীস নং ৭ ও ৯ )قَالَ الإِمَامُ الصَّادِقُ ( ع ) : الخُلقُ الحَسَنُ يَمِيثُ الخَطِيئَةَ کَمَا تَمِيثُ الشَّمسُ الجَلِيدُ . ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) বলেনঃ সদাচরণ ও উত্তম চরিত্রের ( হুসনুল খুলক ) চেয়ে আর অধিক উপভোগ্য ও মিষ্টি মধুরকোন জীবন নেই । ( দ্রঃ ইলালুশ শারায়ে , পৃঃ ৫৬০ , হাদীস নং ১ )قَالَ الإِمَامُ الصَّادِقُ ( ع ) : لَا عَيشَ أَهنَأُ مِن حُسنِ الخُلقِ . ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) বলেনঃ যেমন সিরকা মধুকে নষ্ট করে ঠিক তেমনি অসদাচরণ ও অসদ্ব্যবহারও( সূউল খুলক سُوءُ الخُلقِ ) কর্মকে বিনষ্ট করে দেয় । ( দ্রঃ আল-কাফী , খঃ ২ , পৃঃ ৩২১ , হাদীস নং ১ )قَالَ الإِمَامُ الصَّادِقُ ( ع ) : إِنّ سُوءَ الخُلقِ لَيُفسِدُ العَمَلَ کَمَا يُفسِدُ الخَلُّ العَسَلَ . ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) বলেনঃ হযরত লুকমান ( আঃ) নিজ পুত্রকে বলেনঃ হে বৎস্য , তোমাকে অস্থিরতা ও ব্যাকুলতা , অসদাচরণ ( অসংযত আচরণ ও ব্যবহার ) এবং অধৈর্য হওয়া থেকে সাবধান করছি । কারণ এ ধরণের স্বভাব ও চরিত্রের অধিকারী কখনও দৃঢ়পদ ও অবিচল থাকতে পারে না । তুমি তোমার নিজ কর্ম ও বিষয়াদির ক্ষেত্রে অবশ্যই নিজেকে ধীরস্থির রাখবে ( অর্থাৎ অযথা ত্বরা করবে না ) ।স্বীয় ( দ্বীনী ) ভাইদের সাহায্য করার ক্ষেত্রে নিজেকে ধৈর্য্যশীল ও অভ্যস্ত করবে ( ধৈর্য্যের সাথে তাদেরকে সাহায্য ও সহযোগিতা করবে তাদের খরচ যোগাবে আর এ ক্ষেত্র ধৈর্য্যাবলম্বন করা প্রয়োজন ) । আর সকল মানুষের সাথে স্বীয় ব্যবহার ও আচরণকে সুন্দর করবে । ( দ্রঃ কাসাসুল আম্বিয়া , পৃঃ ২৯০ , হাদীস নং ৭৮৮ )قَالَ الإِمَامُ الصَّادِقُ ( ع ) : قَالَ لُقمَانُ ( ع ) لِابنِهِ : يَا بُنَيَّ ، إِيَّاکَ وَ الضَّجَرَ وَ سُوءَ الخُلقِ وَ قِلَّةِ الصَّبرِ ، فَلَا يَستقِيمُ عَلَی هذِهِ الخِصَالِ صَاحِبٌ، وَ أَلزِم نَفسَکَ التُّؤَدَةَ فِي أُمُورِکَ ، وَ صّبِّر عَلَی مَؤُونَةِ الإِخوَانِ نَفسَکَ ، وَ حَسِّن مَعَ جَمِيعِ النَّاسِ خُلقَکَ . ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) বলেনঃ যে ব্যক্তির স্বভাব ও মেজাজ রুক্ষ ও অসংযত ( যে বদমেজাজী ) সে নিজের আত্মাকেই শাস্তি (যন্ত্রণা ও কষ্ট) দেয় । ( দ্রঃ বিহারুল আনওয়ার , খঃ ৭১ , পৃঃ ৩৯৪ , হাদীস নং ৬৩ )قَالَ الإِمامُ الصَّادِقُ ( ع ) : مَن سَاءَ خُلقُهُ عَذَّبَ نَفسَهُ . ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) বলেনঃ মাংস মাংসবৃদ্ধি করে ( অর্থাৎ মাংস খেলে দেহের মাংস ও পেশী বৃদ্ধি লাভ করে ) । তাই যে ব্যক্তি ( লাগাতার ) ৪০ দিন মাংস ( red meat বা লাল মাংস ) খাওয়া ত্যাগ করবে তার স্বভাব ( মেজাজ ) ও আচরণ রুক্ষ ও অসংযত হবে ( অর্থাৎ সে বদমেজাজী হয়ে যাবে )। ( দ্রঃ আল-কাফী , খঃ ৬ , পৃঃ ৩০৯ , হাদীস নং ১ )قَالَ الإِمَامُ الصَّادِقُ ( ع ) : اَللَّحمُ يُنبِتُ اللَّحمَ ، وَ مَن تَرَکَ اللَّحمَ أَربَعِينَ يَومَاً سَاءَ خُلقُهُ . ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ) বলেনঃ তোমাকে দুটো স্বভাব বা খাসলত সম্পর্কে সাবধান করে দিচ্ছি । আর ঐ দুটো খাসলত বা বৈশিষ্ট্য হচ্ছেঃ ১. অস্থিরতা ( ব্যাকুলতা ) এবং আলস্য । তাই যদি তুমি অস্থির ও ব্যাকুলচিত্ত ( অধৈর্য্যশীল ) হও তাহলে তুমি কোনো সত্য বিষয় বা হকের ( অধিকার ) ক্ষেত্রে ধৈর্য্যধারণ করতে পারবে না । আর যদি তুমি অলস হও তাহলে কোনো অধিকার ( হক )ই আদায় করতে পারবে না । ( দ্রঃ বিহারুল আনওয়ার , খঃ ৭২ , পৃঃ ১৯২ , হাদীস নং ৮ )قَالَ الإمَامُ الصَّادقُ ( ع ) : إِيَّاکَ وَ خَصلَتَينِ : الضَّجَرَ وَ الکَسَلَ ، فَإِنَّکَ إِن ضَجَرتَ لَم تَصبِر عَلَی حَقٍّ ، وَ إِن کَسَلتَ لَم تُؤَدِّ حَقَّاً . যখন ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ )কে ইয়াহইয়া ইবনে ইমরান আল-হালাবী জিজ্ঞেস করলেনঃ " সবচেয়ে সুন্দর স্বভাব ও চারিত্রক বৈশিষ্ট্য কোনটি ? " তখন তিনি ( আঃ ) বললেনঃ ভীতিপ্রদান ও ভয়ের উদ্রেক করে না এমন গাম্ভীর্য্যমণ্ডিত ব্যক্তিত্ব , শাস্তি ও প্রতিশোধগ্রহণের স্পৃহা ও মনোবৃত্তি পরিহার করে ক্ষমা করা এবং দুনিয়াবী ( পার্থিব ) পণ্য - সামগ্রী এবং বিষয় থেেক মুখ ফিরিয়ে পারলৌকিক বিষয়ে লিপ্ত ও মগ্ন হওয়া ( হচ্ছে সবচেয়ে সুন্দর ও উত্তম চারিত্রিক স্বভাব ও বৈশিষ্ট্য ) । ( দ্রঃ আল-কাফী , খঃ ২ , পৃঃ ২৪০ , হাদীস নং ৩৩ )قَالَ الإِمَامُ الصَّادِقُ ( ع ) - لَمَّا سَأَلَهُ يَحيَی بنُ عِزرَانَ الحَلَبِيُّ عَن أَجمَلِ الخِصَالِ : وَقَارٌ بِلَا مَهَابَةٍ ، وَ سَمَاحٌ بِلَا طَلَبِ مّکَافَاةٍ و تَشَاغُلٍ بِغَيرِ مَتَاعِ الدُّنيَا . ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) বলেনঃ ধর্ম ( দ্বীন ) ও ধর্মীয় ( দ্বীনী ) ভাইদেরকে রক্ষা করার জন্যই হচ্ছে তাকীয়াহ নীতি অবলম্বন । আর তাকীয়াহ নীতি মেনে চলার কারণে ভীত ( সন্ত্রস্ত ) ব্যক্তি যদি রক্ষা পায় এবং বেঁচে যায় তাহলে তা ( তাকীয়াহ ) হবে সবচেয়ে মহৎ ও ভদ্রজনোচিত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও গুণ । ( বিহারুল আনওয়ার , খঃ ৭৫ , পৃঃ ৪১৫ , হাদীস নং ৬৮ ) তাকীয়াহ ( التَّقِيَّةُ ) শত্রু বা শত্রুমনোভাবাপন্ন ব্যক্তিদের কাছে সত্য ধর্ম ও সঠিক আকীদা-বিশ্বাস প্রকাশ করলে যদি তাদের পক্ষ থেকে জান-মালের ক্ষতি এবং মান-সম্ভ্রম হানির আশঙ্কা থাকে তাহলে এমতাবস্থায় তা প্রকাশ না করে বরং শত্রুর ধর্মমত ও আকীদা-বিশ্বাস বাহ্যতঃ ব্যক্ত (প্রকাশ) এবং তাদের মত শরয়ী বিধি-বিধান পালন করে এবং অন্তরে সত্য ধর্মের প্রতি প্রকৃত বিশ্বাস ও আস্থা গোপণ রেখে ক্ষতির হাত থেকে মুমিনদের জান-মাল ও মান-সম্ভ্রম রক্ষা করাই হচ্ছে তাকীয়াহ । আর তাকীয়াহ শব্দের আভিধানিক অর্থও হচ্ছে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করা বা সংরক্ষণ ( التَّحَفُّظُ عَنِ الضَّرَرِ) এবং এ অর্থে ই হচ্ছে তাকওয়া ( تَقوَی ) , তুকাত ( تُقَاة ) এবং ইত্তিকা ( اِتِّقَاء ) । ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) বলেনঃ নিঃসন্দেহে উত্তম নৈতিক গুণাবলী পরষ্পর শর্তাধীন । ( অর্থাৎ প্রতিটি উন্নত নৈতিক চারিত্রিক গুণ ও বৈশিষ্ট্যের শর্ত হচ্ছে অপর কোনো উন্নত নৈতিক চারিত্রিক গুণ ও বৈশিষ্ট্য ; তাই সকল নৈতিক চারিত্রিক গুণ ও বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রে এগুলোর যাবতীয় শর্ত , অবস্থা এবং প্রয়োগ ক্ষেত্র বিবেচনা করতে হবে । ) ( দ্রঃ শেখ তূসী প্রণীত আল- আমালী , পৃঃ ৩০১ , হাদীস নং ৫৯৭ )قَالَ الإِمَامُ الصَّادِقُ ( ع ) : إِنَّ خِصَالَ المَکَارِمِ بَعضُهَا مُقَيَّدٌ بِبَعضٍ . প্রচারে বিধি তুমার ধর্ম কি
আখলাক ( সদাচরণ এবং চরিত্র )
সদাচরণ এবং নৈতিক চরিত্র ও আদর্শ ( আখলাক ) সংক্রান্ত ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) - এর কিছু অমিয় বাণীঃ
ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) বলনঃ নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তাঁর রাহে যুদ্ধে গমনকারী মুজাহিদকে যে সওয়াব ও পূ্ণ্য দেন ঠিক সেটার ন্যায় তিনি বান্দাকে সদাচরণ অবলম্বন করার জন্য সওয়াব ও পূণ্য দেবেন । ( দ্রঃ আল-কাফী , খঃ ২ , পৃঃ ১০১ , হাদীস নং ১২ )
قال الصّادق ( ع ) : إِنَّ اللهَ تَبَارَکَ وَ تَعَالَی لَيُعطِيَ العَبدَ مِنَ الثَّوَابِ عَلَی حُسنِ الخُلقِ کَمَا يُعطِي المُجَاهِدَ فِي سَبِيلِ اللهِ يَغدُو وَ يَرُوحُ .
ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) বলেনঃ মহান আল্লাহর উদ্দেশ্যে ফরযসমুহ আঞ্জাম দেয়ার পর বান্দার যে আমলটি মহান আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় তা হচ্ছে মানুষের সাথে তার ( ঐ বান্দার ) সদাচরণ ও সদ্ব্যবহার । ( দ্রঃ প্রাগুক্ত , পৃঃ ১০০ , হাদীস নং ৬ )
قال الصّادق ( ع ) : مَا يَقدِمُ المُؤمِنُ عَلَی الله بِعَمَلٍ بَعدَ الفَرَائِضِ أَحَبَّ إِلَی اللهِ تَعَالَی مِن أَن يَسَعَ النَّاسَ بِخُلقِهِ .
ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) বলেনঃ মহান আল্লাহ যে সব বিষয় সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ ( সাঃ )কে সম্বোধন করেছিলেন সেগুলোর মধ্যে ছিল তাঁর এ বাণী বা আয়াতঃ হে মুহাম্মাদ , নিশ্চয়ই আপনি এক অতিমহান ( উত্তম ) চারিত্রিক নীতি ও আদর্শের উপর আছেন । তিনি ( ইমাম সাদিক আঃ ) বলেনঃ এই অতিমহান ( উত্তম ) চারিত্রিক নীতি ও আদর্শ হচ্ছে দানশীলতা ( বদান্যতা / মহত্ত্বالسَّخَاءُ ) এবং সদাচারণ ও সদ্ব্যবহার ( حُسنُ الخُلقِ)) ( দ্রঃ তাফসীর নূরুস সাকালাইন , খঃ ৫ , পৃঃ ৩৯১ , হাদীস নং ২৩ )
قَالَ الإِمَامُ الصَّادِقُ ( ع ) : کَانَ فِيمَا خَاطَبَ اللهُ تَعَالَی نَبِيَّهُ ( ص ) أَن قَالَ لَهُ : يَا مُحَمَّدُ (( إِنّکَ لَعَلَی خُلقٍ عَطِيمٍ )) قَالَ : السَّخَاءُ وَ حُسنُ الخُلقِ .
সদাচরণ ও সদ্ব্যবহারের ( ভালো স্বভাব ও চরিত্র ) সীমা পরিসীমা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) বলেনঃ (সদাচরণ ও সদ্ব্যবহারের সীমা পরিসীমা হচ্ছে এই যে ) স্বীয় পার্শ্বদেশ অর্থাৎ হস্তদ্বয় বিনয়াবনত ও নমনীয় করবে ( তুমি নম্র ও ভদ্র হবে ) , মুখের ভাষাকে মিষ্টি মধুর ও মার্জিত ( পবিত্র ) করবে ( ভালো ও সুন্দর কথা বলবে ) এবং স্বীয় দ্বীনী ভাইয়ের সাথে সহাস্য বদনে ও প্রফুল্ল চিত্তে সাক্ষাৎ করবে । ( দ্রঃ মাআনিল আখবার , পৃঃ ২৫৩ , হাদীস নং ১ )
قَالَ الإِمَامُ الصَّادِقُ ( ع ) : - لَمَّا سُئِلَ عَن حَدِّ حُسنِ الخُلقِ - : تُلِينُ جَانِبَکَ ، وَ تُطَيِّبُ کَلَامَکَ ، وَ تَلقَی أَخَاکَ بِبِشرٍ حَسَنٍ .
উত্তম নৈতিক চরিত্রের ( مَکَارِمُ الأَخلَاقِ ) ব্যখ্যা প্রসঙ্গেঃ
ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) বলেনঃ মহান আল্লাহ মহানবী ( সাঃ )কে উত্তম নৈতিক চরিত্রের অধিকারী করেছিলেন । অতঃপর তোমরা নিজেদেরকে পরীক্ষা কর , যদি তোমাদের মাঝে উত্তম নৈতিক চরিত্র ( মাকারিমুল আখলাক ) বিদ্যমান থাকে তাহলে এরজন্য মহান আল্লাহর প্রশংসা কর এবং তাঁর কাছে তা আরও বৃদ্ধি করে দেয়ার আকাঙ্খা ব্যক্ত কর । অতঃপর তিনি ( ইমাম সাদিক ) ১০ টি উত্তম ( সুন্দর ) নৈতিক চরিত্র উল্লেখ করেনঃ ১. দৃঢ় বিশ্বাস ( ইয়াকীন ) , ২. পরিতোষ ও সন্তুষ্টি ( কানাআত ) , ৩. ধৈর্য্য ( সবর ) , ৪. কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ( শুকুর ) , ৫. সহিষ্ণুতা ( হিলম ) , ৬. সদাচরণ ( সদ্ব্যবহারঃ হুসনুল খুলক ) , ৭. দানশীলতা ( বদান্যতাঃ সাখা ) , ৮. আত্মসম্মানবোধ ( গাইরাত ) , ৯. সাহস ( শাজাআত ) এবং ১০. পৌরুষ ও মনুষ্যত্ব ( মুরূআত ) । ( দ্রঃ আমালীস সাদূক , হাদীস নং ৮ , পৃঃ ১৮৪ )
قَالَ الإِمَامُ الصَّادِقُ ( ع ) : إِنّ اللهَ تَبَارَکَ وَ تَعَالَی خَصَّ رَسُولَ اللهِ ( ص ) بِمَکَارِمِ الأَخلَاقِ ، فَامتَحِنُوا أَنفُسَکُم ، فَإِن کَانَت فِيکُم فَاحمَدُوا اللهَ عَزَّ وَ جَلَّ وَ ارغَبُوا إِلَيهِ فِي الزِّيَادَةِ مِنهَا ، فَذَکَرَهَا عَشَرَةً : اليَقِينُ ، وَ القَنَاعَةُ ، وَ الصَّبرُ ، وَ الشُّکرُ ، وَ الحِلمٌ ، وَ حُسنُ الخُلقِ ، وَ السَّخَاءُ ، وَ الغَيرَةُ ، وَ الشَّجَاعَةُ ، وَ المُرُوءَةُ.
ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) বলেনঃ (- আর তাঁকে উত্তম নৈতিক চরিত্র সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল -) যে তোমার সাথে অন্যায় ( জুলুম ) করেছে তাকে তোমার ক্ষমা করা , যে তোমার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করেছে তার সাথে তোমার সম্পর্ক স্থাপন , যে তোমাকে বঞ্চিত করেছে তাকে দেয়া ( দান করা ) এবং তোমার নিজের বিরুদ্ধে হলেও সত্য বলা ।(দ্রঃ মাআনিল আখবার , পৃঃ ১৯১ , হাদীস নং ১ )
قَالَ الإِمَامُ الصَّادِقُ ( ع ) : - وَ قَد سُئِلَ عَن مَکَارِمِ الأَخلَاقِ : العَفوُ عَمَّن ظَلَمَکَ ، وَ صِلَةُ مَن قَطَعَکَ ، وَ إِعطَاءُ مَن حَرَمَکَ ، وَ قَولُ الحَقِّ وَ لَو عَلَی نَفسِکَ .
ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) জার্রাহ আল-মাদায়েনীকে বলেনঃ " আমি তোমাকে উত্তম নৈতিক চরিত্র ( মাকারিমুল আখলাক مَکَارِمُ الأَخلَاقِ ) সম্পর্কে বলব কি ?" তা ( উত্তম নৈতিক চরিত্র ) হচ্ছে মানুষকে ক্ষমা করা , অর্থ সম্পদ দিয়ে (অভাবগ্রস্ত দ্বীনী) ভাইকে সাহায্য করা এবং মহান আল্লাহকে অনেক স্মরণ করা ।( দ্রঃ প্রাগুক্তঃ হাদীস নং ২ )
عَنهُ ( ع ) - لِجَرَّاح المَدَائِنِيِّ - أَلَا أُحَدِّثُکَ بِمَکَارِمِ الأَخلَاقِ ؟ الصَّفحُ عَنِ النَّاسِ ، وَ مُؤَامسَاةُ الرَّجُلِ أَخَاهُ فِي مَالِهِ ، وَ ذِکرُ اللهِ کَثِيرَاً .
ইমাম সাদিক ( আঃ ) বলেনঃ সদাচরণ ও সদ্ব্যবহার ( হুসনুল খুলক ) রিযক ও রুজি বৃদ্ধি করে ।( দ্রঃ বিহারুল আনওয়ার , খঃ ৭১ , পৃঃ ৩৯৬ , হাদীস নং ৭৭ )
قَالَ الإِمَامُ الصَّادِقُ ( ع ) : حُسنُ الخُلقِ يَزِيدُ فِي الرِّزقِ .
ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) বলেনঃ নিশ্চয়ই দয়া ও অনুগ্রহ ( البِرّ ) , শিষ্ঠাচার ও সদাচরণ ( সদ্ব্যবহার ও উত্তম নৈতিক চরিত্র ) দেশকে আবাদ ও উন্নত এবং মানুষের আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি করে ।
( দ্রঃ বিহারুল আনওয়ার , খঃ ৭১ , পৃঃ ৩৯৫ , হাদীস নং ৭৩ )
قَالَ الإِمَامُ الصَّادِقُ ( ع ) : إِنَّ البِرَّ وَ حُسنَ الخُلقَ يَعمُرانِ الدِّيَارَ وَ يَزِيدَانِ فِي الأَعمَارِ.
ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) বলেনঃ রোদ যেমন শক্তিশালী ( পরাক্রমশালী ) ব্যক্তিকে ধরাশায়ী ( ক্লান্ত শ্রান্ত ) করে ঠিক তেমনি সদাচরণ ও উত্তম চরিত্র পাপকে গলিয়ে দ্রবীভুত ( অর্থাৎ নিশ্চিহ্ন ) করে দেয় । ( আল-কাফী , খঃ ২ , পৃঃ ১০০ , হাদীস নং ৭ ও ৯ )
قَالَ الإِمَامُ الصَّادِقُ ( ع ) : الخُلقُ الحَسَنُ يَمِيثُ الخَطِيئَةَ کَمَا تَمِيثُ الشَّمسُ الجَلِيدُ .
ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) বলেনঃ সদাচরণ ও উত্তম চরিত্রের ( হুসনুল খুলক ) চেয়ে আর অধিক উপভোগ্য ও মিষ্টি মধুরকোন জীবন নেই । ( দ্রঃ ইলালুশ শারায়ে , পৃঃ ৫৬০ , হাদীস নং ১ )
قَالَ الإِمَامُ الصَّادِقُ ( ع ) : لَا عَيشَ أَهنَأُ مِن حُسنِ الخُلقِ .
ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) বলেনঃ যেমন সিরকা মধুকে নষ্ট করে ঠিক তেমনি অসদাচরণ ও অসদ্ব্যবহারও( সূউল খুলক سُوءُ الخُلقِ ) কর্মকে বিনষ্ট করে দেয় । ( দ্রঃ আল-কাফী , খঃ ২ , পৃঃ ৩২১ , হাদীস নং ১ )
قَالَ الإِمَامُ الصَّادِقُ ( ع ) : إِنّ سُوءَ الخُلقِ لَيُفسِدُ العَمَلَ کَمَا يُفسِدُ الخَلُّ العَسَلَ .
ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) বলেনঃ হযরত লুকমান ( আঃ) নিজ পুত্রকে বলেনঃ হে বৎস্য , তোমাকে অস্থিরতা ও ব্যাকুলতা , অসদাচরণ ( অসংযত আচরণ ও ব্যবহার ) এবং অধৈর্য হওয়া থেকে সাবধান করছি । কারণ এ ধরণের স্বভাব ও চরিত্রের অধিকারী কখনও দৃঢ়পদ ও অবিচল থাকতে পারে না । তুমি তোমার নিজ কর্ম ও বিষয়াদির ক্ষেত্রে অবশ্যই নিজেকে ধীরস্থির রাখবে ( অর্থাৎ অযথা ত্বরা করবে না ) ।স্বীয় ( দ্বীনী ) ভাইদের সাহায্য করার ক্ষেত্রে নিজেকে ধৈর্য্যশীল ও অভ্যস্ত করবে ( ধৈর্য্যের সাথে তাদেরকে সাহায্য ও সহযোগিতা করবে তাদের খরচ যোগাবে আর এ ক্ষেত্র ধৈর্য্যাবলম্বন করা প্রয়োজন ) । আর সকল মানুষের সাথে স্বীয় ব্যবহার ও আচরণকে সুন্দর করবে । ( দ্রঃ কাসাসুল আম্বিয়া , পৃঃ ২৯০ , হাদীস নং ৭৮৮ )
قَالَ الإِمَامُ الصَّادِقُ ( ع ) : قَالَ لُقمَانُ ( ع ) لِابنِهِ : يَا بُنَيَّ ، إِيَّاکَ وَ الضَّجَرَ وَ سُوءَ الخُلقِ وَ قِلَّةِ الصَّبرِ ، فَلَا يَستقِيمُ عَلَی هذِهِ الخِصَالِ صَاحِبٌ، وَ أَلزِم نَفسَکَ التُّؤَدَةَ فِي أُمُورِکَ ، وَ صّبِّر عَلَی مَؤُونَةِ الإِخوَانِ نَفسَکَ ، وَ حَسِّن مَعَ جَمِيعِ النَّاسِ خُلقَکَ .
ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) বলেনঃ যে ব্যক্তির স্বভাব ও মেজাজ রুক্ষ ও অসংযত ( যে বদমেজাজী ) সে নিজের আত্মাকেই শাস্তি (যন্ত্রণা ও কষ্ট) দেয় । ( দ্রঃ বিহারুল আনওয়ার , খঃ ৭১ , পৃঃ ৩৯৪ , হাদীস নং ৬৩ )
قَالَ الإِمامُ الصَّادِقُ ( ع ) : مَن سَاءَ خُلقُهُ عَذَّبَ نَفسَهُ .
ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) বলেনঃ মাংস মাংসবৃদ্ধি করে ( অর্থাৎ মাংস খেলে দেহের মাংস ও পেশী বৃদ্ধি লাভ করে ) । তাই যে ব্যক্তি ( লাগাতার ) ৪০ দিন মাংস ( red meat বা লাল মাংস ) খাওয়া ত্যাগ করবে তার স্বভাব ( মেজাজ ) ও আচরণ রুক্ষ ও অসংযত হবে ( অর্থাৎ সে বদমেজাজী হয়ে যাবে )। ( দ্রঃ আল-কাফী , খঃ ৬ , পৃঃ ৩০৯ , হাদীস নং ১ )
قَالَ الإِمَامُ الصَّادِقُ ( ع ) : اَللَّحمُ يُنبِتُ اللَّحمَ ، وَ مَن تَرَکَ اللَّحمَ أَربَعِينَ يَومَاً سَاءَ خُلقُهُ .
ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ) বলেনঃ তোমাকে দুটো স্বভাব বা খাসলত সম্পর্কে সাবধান করে দিচ্ছি । আর ঐ দুটো খাসলত বা বৈশিষ্ট্য হচ্ছেঃ ১. অস্থিরতা ( ব্যাকুলতা ) এবং আলস্য । তাই যদি তুমি অস্থির ও ব্যাকুলচিত্ত ( অধৈর্য্যশীল ) হও তাহলে তুমি কোনো সত্য বিষয় বা হকের ( অধিকার ) ক্ষেত্রে ধৈর্য্যধারণ করতে পারবে না । আর যদি তুমি অলস হও তাহলে কোনো অধিকার ( হক )ই আদায় করতে পারবে না । ( দ্রঃ বিহারুল আনওয়ার , খঃ ৭২ , পৃঃ ১৯২ , হাদীস নং ৮ )
قَالَ الإمَامُ الصَّادقُ ( ع ) : إِيَّاکَ وَ خَصلَتَينِ : الضَّجَرَ وَ الکَسَلَ ، فَإِنَّکَ إِن ضَجَرتَ لَم تَصبِر عَلَی حَقٍّ ، وَ إِن کَسَلتَ لَم تُؤَدِّ حَقَّاً .
যখন ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ )কে ইয়াহইয়া ইবনে ইমরান আল-হালাবী জিজ্ঞেস করলেনঃ " সবচেয়ে সুন্দর স্বভাব ও চারিত্রক বৈশিষ্ট্য কোনটি ? " তখন তিনি ( আঃ ) বললেনঃ ভীতিপ্রদান ও ভয়ের উদ্রেক করে না এমন গাম্ভীর্য্যমণ্ডিত ব্যক্তিত্ব , শাস্তি ও প্রতিশোধগ্রহণের স্পৃহা ও মনোবৃত্তি পরিহার করে ক্ষমা করা এবং দুনিয়াবী ( পার্থিব ) পণ্য - সামগ্রী এবং বিষয় থেেক মুখ ফিরিয়ে পারলৌকিক বিষয়ে লিপ্ত ও মগ্ন হওয়া ( হচ্ছে সবচেয়ে সুন্দর ও উত্তম চারিত্রিক স্বভাব ও বৈশিষ্ট্য ) । ( দ্রঃ আল-কাফী , খঃ ২ , পৃঃ ২৪০ , হাদীস নং ৩৩ )
قَالَ الإِمَامُ الصَّادِقُ ( ع ) - لَمَّا سَأَلَهُ يَحيَی بنُ عِزرَانَ الحَلَبِيُّ عَن أَجمَلِ الخِصَالِ : وَقَارٌ بِلَا مَهَابَةٍ ، وَ سَمَاحٌ بِلَا طَلَبِ مّکَافَاةٍ و تَشَاغُلٍ بِغَيرِ مَتَاعِ الدُّنيَا .
ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) বলেনঃ ধর্ম ( দ্বীন ) ও ধর্মীয় ( দ্বীনী ) ভাইদেরকে রক্ষা করার জন্যই হচ্ছে তাকীয়াহ নীতি অবলম্বন । আর তাকীয়াহ নীতি মেনে চলার কারণে ভীত ( সন্ত্রস্ত ) ব্যক্তি যদি রক্ষা পায় এবং বেঁচে যায় তাহলে তা ( তাকীয়াহ ) হবে সবচেয়ে মহৎ ও ভদ্রজনোচিত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও গুণ । ( বিহারুল আনওয়ার , খঃ ৭৫ , পৃঃ ৪১৫ , হাদীস নং ৬৮ )
তাকীয়াহ ( التَّقِيَّةُ ) শত্রু বা শত্রুমনোভাবাপন্ন ব্যক্তিদের কাছে সত্য ধর্ম ও সঠিক আকীদা-বিশ্বাস প্রকাশ করলে যদি তাদের পক্ষ থেকে জান-মালের ক্ষতি এবং মান-সম্ভ্রম হানির আশঙ্কা থাকে তাহলে এমতাবস্থায় তা প্রকাশ না করে বরং শত্রুর ধর্মমত ও আকীদা-বিশ্বাস বাহ্যতঃ ব্যক্ত (প্রকাশ) এবং তাদের মত শরয়ী বিধি-বিধান পালন করে এবং অন্তরে সত্য ধর্মের প্রতি প্রকৃত বিশ্বাস ও আস্থা গোপণ রেখে ক্ষতির হাত থেকে মুমিনদের জান-মাল ও মান-সম্ভ্রম রক্ষা করাই হচ্ছে তাকীয়াহ । আর তাকীয়াহ শব্দের আভিধানিক অর্থও হচ্ছে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করা বা সংরক্ষণ ( التَّحَفُّظُ عَنِ الضَّرَرِ) এবং এ অর্থে ই হচ্ছে তাকওয়া ( تَقوَی ) , তুকাত ( تُقَاة ) এবং ইত্তিকা ( اِتِّقَاء ) ।
ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) বলেনঃ নিঃসন্দেহে উত্তম নৈতিক গুণাবলী পরষ্পর শর্তাধীন । ( অর্থাৎ প্রতিটি উন্নত নৈতিক চারিত্রিক গুণ ও বৈশিষ্ট্যের শর্ত হচ্ছে অপর কোনো উন্নত নৈতিক চারিত্রিক গুণ ও বৈশিষ্ট্য ; তাই সকল নৈতিক চারিত্রিক গুণ ও বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রে এগুলোর যাবতীয় শর্ত , অবস্থা এবং প্রয়োগ ক্ষেত্র বিবেচনা করতে হবে । ) ( দ্রঃ শেখ তূসী প্রণীত আল- আমালী , পৃঃ ৩০১ , হাদীস নং ৫৯৭ )
قَالَ الإِمَامُ الصَّادِقُ ( ع ) : إِنَّ خِصَالَ المَکَارِمِ بَعضُهَا مُقَيَّدٌ بِبَعضٍ .
প্রচারে বিধি তুমার ধর্ম কি
মন্তব্যসমূহ