মাওলা আলী(আঃ)এর কন্যা উম্মে কুলসুম বিনতে আলী’র বিবাহ সম্পর্কিত রহস্যের বেড়াজালে উমাইয়্যা মিথ্যাচারের সত্য উন্মোচন। [একটি গবেষণামূলক যৌথ প্রবন্ধ]_________________________________________________________একদল নামধারী আলেম, ধর্মব্যবসায়ীরা খুব আগ্রহের সাথে বয়ান করে “হযরত উমর যদি ফাতেমার উপর অত্যাচারই করে থাকবেন,তাহলে কে আলী তার কন্যা উম্মে কুলসুম কে উমর (রাঃ) সাথে বিয়ে দিলেন?” বলতে বলতে তাদের চোখে যেন সেই বিয়ের দৃশ্য ভাসে, তারা ছয়ের মাইর মেরেছেন ভেবে আত্মতৃপ্তি লাভ করেন।এরা আসলে আদুভাই, এক পড়া বারবার পড়তে পড়তে দাড়ি গজায় গেছে, আর দাড়ি তাদের মুলধন,এটা এসেছে মানেই কামাই চালু।এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে নাসিবিরা খেলাফতের মূল ইতিহাসের তিক্ততাকে দূরে ঠেলে দিয়ে সত্যকে আড়াল করতে চায়।যা জালিমের পক্ষে কৌশলী অবস্থান তথা একধরনের সূক্ষ নেফাকী। আর এরকম সুক্ষ নেফাকীগত কৌশলি ফাঁদ থেকে সরল মুসলিমের বড় একটা অংশ এখনো মুক্ত হতে পারেনি।যার দরুন আজ মিথ্যা সত্যের পোশাক পরে সমাজে বিচরণ করছে। সত্য পোশাক হারিয়ে লুকিয়ে আছে। সত্যের অনুসরণ ও আনুগত্য করবে বলে ধিরে ধিরে সত্যের বিলুপ্ত ঘটানো হচ্ছে। আর মিথ্যাকে নতুন করে সত্যের রুপে সাজানো হচ্ছে। এই আশায় যে, একদিন মানুষ মিথ্যাটাকেই সত্য হিসাবে বরণ করবে, এবং তারই অনুসরণ ও আনুগত্য করবে।মিথ্যার স্থায়িত্ব যতবেশি হবে তার গ্রহণ যোগ্যতা ততবেশি বৃদ্ধি পেতে থাকবে। আর বিলুপ্ত ঘটানো সত্যটা যাদের সংগ্রহে থাকবে, যখন নতুন প্রজন্মের কাছে তারা তা দলিল হিসেবে উপস্থাপন করবে, নতুনরা তখন বলবেঃ “এগুলো আমাদের কিতাবে নেই। এসব আমাদের কিতাব নয়।” যুগে যুগে এমনটাই হয়ে আসছে।অনেক হয়েছে, আর নয়।এবারে আমরা প্রমাণ করব যে,উম্মে কুলসুম বিনতে আলী (সাঃ আঃ) এর সাথে ওমর ইবনে খাত্তাবের বিয়ে হয়নি।যা ছিল বরাবরের মতই উমাইয়া মিথ্যাচারের বেড়াজাল।ইতিহাসে হযরত জয়নব আল-সুগরা (সাঃ আঃ) এর উপনাম ছিল উম্মে কুলসুম।দেখে নিতে পারেন ঐতিহাসিক সূত্রঃ আল ইরশাদ, খন্ড ১,পৃষ্ঠা ৩৫৪/ বিহারুল আনওয়ার,খন্ড ৪২,পৃষ্ঠা ৭৪/ ইনাবিউল মোয়াদ্দাত, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ১৪৭/এহকাকুল হাক, খন্ড ১০,পৃষ্ঠা ৪২৬।তোমরা এমনকি তোমাদের হতে পারতো নবীর বেলায়ও হোম ওয়ার্কে ফাকি দিয়েছো।এসো তোমাদের আমরাই শিখাই।আরে গর্ধভের দল, উম্মে কুলসুম কি কোন নাম? উম্মে কুলসুম হলো কুলসুমের মা। যেমন আবুল হাসান মানে হাসানের বাবা।যদিও হযরত জয়নব আল-সুগরা (সাঃ আঃ) বেলায় একটু ব্যতিক্রম পরিলক্ষিত হয়।আল্লামা আব্বাস বিন মোহাম্মদ রেজা আল-কুমি,”আল কুনা ওয়াল আলকাব” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেনঃ হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) তাকে ‘উম্মে কুলসুম’ উপনাম দিয়েছিলেন,কারণ তিনি তার খালা মুহাম্মাদ (সঃ)-এর পালিত কন্যা উম্মে কুলসুমের-এর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ছিলেন।সুত্রঃ আল কুনা ওয়াল আলকাব,-মুহাদ্দিসে কুমী ,খণ্ডঃ ০১ (৫তম সংস্করণ),পৃষ্ঠাঃ ২২৮।মাওলা আলী (আঃ) এবং জনাবে ফাতিমা জাহরা (সাঃ আঃ) যাহরার কন্যা হযরত জয়নব আল-সুগরা (সাঃ আঃ) তার উপনাম ছিলো উম্মে কুলসুম।দুই বছর বয়সে হযরত উম্মে কুলসুম বিনতে আলী (সাঃ আঃ) দেখেছেন তাদের ঘরে অগ্নিসংযোগ করে তার মা ফাতিমা (সাঃআঃ) কে মারাত্মক ভাবে আহত করা হলো (যে আঘাতে মা কিছুদিন পরেই শাহাদাত বরন করেন),তার বাবা আলী (আঃ) কে তারই সামনে দিয়ে গলায় রশি বেধে নিয়ে যাওয়া হলো,তার ভাই মহসিন (আঃ) শহিদ হলো, মায়ের উপর চাবুক ও চড় মারা হলো, সমস্ত ঘর আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়া হলো। মা ফাতিমার ভেঙে যাওয়া দেহের অংশ দেখেছেন উম্মে কুলসুম বিনতে আলী (সাঃ আঃ)।তিনি কান্না ও অত্যাচার কে দেখেছেন।কে করেছে এগুলি? এটা সবাই জানে। মানে না, যাই হোক আজকের বিষয়বস্তুতে আলোকপাত করতে চাই।আহলে সুন্নাতের বিখ্যাত স্কলার জনাব আল্লামা শিবলী নোমানী কর্তৃক প্রণীত “আল-ফারুক” কিতাবের ২য় খন্ডের ৫৩৯ নম্বর পৃষ্ঠা এবং তারীখে আবুল ফিদা গ্রন্থের ১ম খন্ডের ১৭১ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে যেঃ হিজরী ১৭ সনে ওমর বিন খাত্তাব ও উম্মে কুলসুমের এর বিবাহ হয় যখন উম্মে কুলসুমের এর বয়স ৫ কিংবা ৪ বছর। কারণ ঐ একই পৃষ্ঠা তাঁর জন্ম সাল ১২ বা ১৩ হিজরী উল্লেখ করা হয়েছে।অন্যদিকে, হিজরী ১১ সনে রাসূলে খোদা (দুরুদ) এর ওফাতের মাত্র ৬ মাস পরে মা ফাতিমা (সাঃ আঃ)-এ পরলোক গমণ গমণ করেন ।এবং হিজরী ৯ সনে উম্মে কুলসুম বিনতে আলী (সাঃ আঃ) জন্মগ্রহণ করেন।সুন্নী সূত্রঃ বোখারী,আরবী ইংলিশ ভার্সন,খন্ড-৫,হাদিস- ৫৪৬/শীয়া সূত্রঃ আনওয়ারুল হোসাইনিয়া , খন্ড-৩, পৃঃ ৩৯।মাওলা আলী (আঃ) এর কন্যা হযরত উম্মে কুলসুম বিনতে আলী (সাঃ আঃ) ৯ম হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন এবং মা ফাতিমা (সাঃ আঃ) ১১ হিজরীতে পরলোক গমণ করেন ।এদিকে হযরত ওমরের স্ত্রী উম্মে কুলসুম ১২-১৩ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন ।তাই স্পষ্ট করে বুঝা যাচ্ছে যে, ১২-১৩ হিজরীতে জন্ম নেয়া উম্মে কুলসুম – আলী (আঃ) ও ফাতেমা (সাঃ আঃ) এর সন্তান নন।কারণ মা ফাতেমা (সাঃ আঃ) ১১ সালেই পরলোক গমণ করেছেন।সুহৃদ! এটা কি সম্ভব যে,মা ইন্তেকালের ২ বছর পর সন্তানের জন্ম হয়েছে ?একটু মাথা খাটালেই বোঝা যায় ১২-১৩ হিজরীতে জন্ম নেয়া উম্মে কুলসুম নামে যে কন্যার কথা বলা হয় সে কন্যা আলী (আঃ)-এর কন্যা নয় বরং ওমরের স্ত্রী উম্মে কুলসুম অন্য কোন গোত্রের অন্য কারও সন্তান। তাই শেইখ মুফিদ (রহ.) সহ আরো কয়েকজন আলেম যেমনঃ সৈয়দ মির নাসের হুসাইন লাখনাভি এবং শেইখ মোহাম্মাদ জাওয়াদ বালাগি তাদের স্বীয় গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, হজরত উমরের সাথে হজরত উম্মে কুলসুমের বিবাহ সংঘটিত হয়নি।সাথে থাকুন, সেটাই প্রমাণ করব ইনশাআল্লাহ্।পাঠক,সুন্নী রেফারেন্স অনুযায়ী উম্মে কুলসুম (হযরত ওমরের স্ত্রী) হিজরী ৫০ সালের আগে ইন্তেকাল করেছেন।ইমাম হাসান (আঃ) কে আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর,সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস তার (ওমরের স্ত্রী উম্মে কুলসুম) মৃত্যুতে শোক প্রার্থণা করার জন্য বলেন।এবং এটা আরেকটা বেদনাদায়ক ঘটনা যে, হিজরী ৫০ সালে ইমাম হাসান (আঃ) ও শাহাদাত বরন করেন।আর উনাকে নিশ্চয়ই জীবিত থাকতেই শোক প্রার্থনা করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল তাই না? সুন্নী সূত্রঃ আল ইসতিয়াব , খন্ড-২, পৃঃ ৭৯৫ / তারিখে খামিস , খন্ড-২, পৃঃ ৩১৮ / তারিখে তাবারি, খন্ডঃ১২, পৃঃ ১৫।এবার অবাক হবেন এ জন্য যে,ওমরের স্ত্রী উম্মে কুলসুম যিনি হিজরী ৫০ সালের আগে ইন্তেকাল করেছেন এবং ইমাম আলী (আঃ) এর কন্যা উম্মে কুলসুম বিনতে আলী (সাঃ আঃ) ৬১ হিজরী সনে কারবালায় ইমাম হুসাইনের (আঃ)-সহ যাত্রী ছিলেন !তিনি কারবালার যুদ্ধে উপস্থিত ছিলেন এবং এই সময় তার ভাই মওলা হুসাইন (আঃ)-কে ত্যাগ করার জন্য কুফার লোকদের সমালোচনা করেন।সূত্রঃ Al-Qurashi, Baqir Shareef,The Life of Imam Husain (as)- পৃষ্ঠাঃ ১৫০২/মোজাফফারি তারিখ,পৃষ্ঠাঃ ২০৮ /আল্লামা মাজলিসি তার মারআতুল উকুল,খন্ড ২০, ও বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৪৫ উল্লেখ করেছেন।এবং উম্মে কুলসুম বিনতে আলীর (সাঃ আঃ) বিয়ে হয়েছিল তাঁর চাচাতো ভাই আওন ইবনে জাফর (রাঃ)-এর সাথে।এবং হযরত ওমরের স্ত্রী উম্মে কুলসুম ও ইমাম আলী (আঃ) -এর কন্যা উম্মে কুলসুম (সাঃ আঃ) এক নয় দুটি ভিন্ন মানুষ।সুন্নী সূত্রঃ- রজাতুল ইহবাব, খন্ড-৩, পৃঃ ৫৮৫ / তারিখে খামিস, খন্ড-৩, পৃঃ ৩১৮।হযরত আওন ইবনে জাফর (রাঃ) তিনি জাফর ইবনে আবু তালিব এবং আসমা বিনতে উমাইসের তৃতীয় পুত্র ছিলেন। তিনি তার চাচাত বোন উম্মে কুলসুম বিনতে আলী (সাঃ আঃ)-কে বিয়ে করেন,যিনি মুহাম্মদ (সা) এর নাতনি ছিলেন।তাদের কোনও সন্তান ছিল না।সূত্রঃ-মুহাম্মদ ইবনে সাদ কর্তৃক প্রণীত, আল তাবাকাত আল-কবির, খণ্ড ০৮,Translated by Bewley(1995) দ্য উইমেন অফ মদীনা, পৃঃ ১৯৬/২৯৯ লন্ডন: টা-হা পাবলিশার্স।এখানে উল্লেখ্য যে উমরের সাথে যে উম্মে কুলসুমের বিবাহ হয় এবং তার থেকে নাকি সন্তানও জন্ম হয় যাদের নাম নাকি যায়েদ ও ফাতেমা !কাজেই আবার প্রমাণিত হলো হযরত ওমরের স্ত্রী উম্মে কুলসুম ও ইমাম আলী (আঃ) -এর কন্যা উম্মে কুলসুম (সাঃ আঃ) এক নয় দুটি ভিন্ন মানুষ।আহলে সুন্নার বিখ্যাত আলেম জনাব ইবনে কুতাইবাহ কর্তৃক প্রণীত তার “আল-মাআরিফ” গ্রন্থে লিখেছেনঃ- ইমাম আলী (আঃ)-এর সকল কন্যার বিয়ে হয়েছে হযরত আকিল (রাঃ) ও হযরত আব্বাস (রাঃ)-এর সন্তানদের সাথে ।ব্যতিক্রম শুধু উম্মুল হাসান বিনতে সায়্যীদ ও ফাতেমার ক্ষেত্রে।কিন্তু কোথাও তিনি উল্লেখ করেন নি যে, হযরত ওমরের সাথে ইমাম আলী (আঃ) এর কন্যার বিবাহ বন্ধন হয়েছে।সুন্নী সূত্রঃ আল-মাআরিফ,পৃঃ ৮০।এখানে হযরত ওমরের পৌত্তলিক দিনগুলোসহ ইসলাম গ্রহণ করার পর পর্যন্ত অন্যান্য সকল স্ত্রীদের নাম উল্লেখ করা উপযুক্ত হবে বলে মনে করি।হযরত ওমর ছিলেন খুবই রগচটা, নারীদের প্রহার করতেও কুন্ঠাবোধ করতেন না। ( হুজুর পিলিজ চেইতেন না, ইতিহাসে উনাকে রাগি যুবক নামেই বেশি চিনে) যে কারনে তার স্ত্রীরা তাকে তালাক দিয়ে যেতো। যাই হোক তার প্রথম স্ত্রী ছিলেন ওসমান বিন মাযুন এর বোন জয়নব বিনতে মাজুন (জাহিলিয়ার যুগে)। তার দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন “কারিবা” যিনি ইবনে উমাইত উল মাকযামির কন্যা এবং রাসুল (সঃ) এর স্ত্রী ঊম্মে সালমা (রাঃ) এর বোন । উল্লেখ্য হিজরী ৬ খ্রীষ্টাব্দে হুদাইবিয়ার সন্ধির পর কারিবা’র সাথে হযরত ওমরের তালাক হয় ।তার তৃতীয় স্ত্রী ছিলেন জারুল আল খুজাই’র কন্যা মালাইকা,তাকেও উম্মে কুলসুম বিনতে জারউয়িলা খুজিমা নামে ডাকা হত,এছাড়াও তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন নি।দুই পুত্র সন্তান ছিল এবং হিজরী ৬ খ্রীষ্টাব্দের আগে তালাকপ্রাপ্ত হন।মদিনা হিজরতের পর তিনি (ওমর) বিয়ে করেন আসিম বিন থাবিত যিনি ছিলেন উচ্চ স্থানীয় আনসার এবং বদরের যুদ্ধা তার কন্যা “জামিলা বিনতে আসিম ইবনে সাবিত ইবনে আবিল আকলাহ”কে।জমিলা’র প্রথম নাম ছিল আসিয়া যা রাসুল (সঃ) পরিবর্তন করেছিলেন তার ইসলাম গ্রহণের পরে। হযরত ওমর তাকেও তালাক দেন কিছু অজানা কারণে ।জামিলা বিনতে আসিম ইবনে সাবিত ইবনে আবিল আকলাহ (আউস গোত্রের সদস্য)।তার আরও স্ত্রীদের মধ্যে ছিলেন,আল হারিত বিন হিশাম আল মাখযুমি’র কন্যা উম্মে হাকিম, ফুখিয়া ইয়ামেনিয়া এবং আতিকা বিনতে জায়েদ ইবনে আমর ইবনে নুফায়েল। সুন্নি সূত্রঃ- শিবলী নোমানি’র প্রণীত,আল-ফারুক – ইংলিশ অনুবাদের পাতা নং ৩৪০-৩৪৩,খন্ড-২,অধ্যায়-১৯ ।History of the Prophets and Kings 4/ 199 by Muhammad ibn Jarir al-Tabari(তারিখ আল-তাবারী)/আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৬খন্ড পৃঃ৩৫২ /ইবনে হাজর আস্কালানি কর্তৃক প্রণীত, আল-ইসাবা, আরবী ৮/১৯৩।এটা উল্লেখ করা জরুরী যে লেখক,শিবলী নোমানি খুব সহজেই প্রথম খলিফা হযরত আবু বকরের কন্যার কথা উপেক্ষা করেছেন।সঠিক ঐতিহাসিক দলিল প্রমাণ করে যে,হযরত ওমরের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া উম্মে কুলসুম ইমাম আলী (আঃ) এর কন্যা নয় তিনি ছিলেন হযরত আবু বকরের কন্যা ।আমরা এটা জানি যে,শিবলী নোমানী উপরে দুই জন উম্মে কুলসুমের কথা উল্লেখ করেছেন,ঠিক ?অথবা সে কি একই উম্মে কুলসুম যিনি ছিলেন আবু বকরের মেয়ে?যদি হ্যা হয় তবে কেন লেখক সেটা উল্লেখ করলেন না ?আপনাদের কাছে তা স্পষ্ট না হলেও আমাদের কাছে স্পষ্ট। সবাই হালকা করে প্রলেপ দিয়ে দিয়ে আজকের এই মিথ্যাকে পোক্ত করার চেষ্টা চালিয়ে গেছে।পাঠক,এখানে ঐতিহাসিক দলিল ও তথ্যের মাধ্যমে তারই উত্তর দিচ্ছি – হযরত আবু বকরের মৃত্যুর পর তার একটি কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করে যার নাম রাখা হয় উম্মে কুলসুম।নিশ্চিত হওয়ার জন্য দয়া করে আহলে সুন্নার দলিলগুলি দেখুনঃ তারিখে তাবারিঃ খন্ড-৩, পাতা-৫০, মিশরে মুদ্রিত;/তারিখে কামিলঃ খন্ড-৩, পাতা-১২১, মিশরে মুদ্রিত;/ তারিখে খামিসঃ খন্ড-২, পাতা-২৬৭, মিশরে মুদ্রিত;/ ইবনে হাজর আস্কালানি কর্তৃক প্রণীত, আল-ইসাবা, খন্ড-৩, পাতা-২৭।এছাড়াও মনে রাখবেন যে,আবু বকর হিজরী ১৩ সনে মারা যান।সুন্নি সুত্রঃ জালাল উদ্দিন সূয়ুতি কর্তৃক প্রণীত,তারিখে খলিফা,পাতা-৫৫১, মেজর এইচ এস ব্যারেট এর ইংরেজি অনুবাদ।পরোক্ষভাবে এটা মনে দরকার যে,আসল অভিযোগ ছিল প্রথম দলিল যা উম্মে কুলসুমের বিয়েকালীন বয়স ৪-৫ বুঝানোর জন্য দেয়া হয়েছে।শিবলী নোমানী’র আল-ফারুক গ্রন্থের তথ্য অনুযায়ী ১৩ হিজরীতে জন্ম নেয়া উম্মে কুলসুমের বিয়ে হয় ১৭ হিজরীতে ।এদিকে একাধিক সুন্নি সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে,হিজরী ১৩ সনে আবু বকরের একটি মেয়ে জন্মগ্রহণ করে এবং তার নাম রাখা হয় উম্মে কুলসুম।অন্যদিকে ইমাম আলী (আঃ) এর মেয়ে হযরত জয়নব আল-সুগরা উম্মে কুলসুম বিনতে আলী (সাঃ আঃ) জন্মগ্রহণ করেন ৯ম হিজরীতে।উম্মুল মুমেনীন আয়েশা (রাঃ)ছিলেন উম্মে কুলসুম বিনতে আবু বকরের বড় বোন,এই কারণে হযরত ওমর উম্মে কুলসুম বিনতে আবু বকরের জন্য উম্মুল মুমেনীন আয়েশা’র নিকট প্রস্থাব পাঠান,এবং উম্মুল মুমেনীন আয়েশা তা গ্রহণ করেন।নিশ্চিত হওয়ার জন্য দয়া করে আহলে সুন্নার দলিলগুলি দেখুনঃ তারিখে খামিস, খন্ডঃ ২, পাতা-২৬৭, মিশরে মুদ্রিত;/তারিখে কামিল, খন্ডঃ ৩, পাতা-২১, মিশরে মুদ্রিত;/ইবনে আব্দুল বার’র প্রণীত, আল-ইসতিয়াব, খন্ডঃ ২, পাতা-৭৯৫, হায়দ্রাবাদ ডেকান মুদ্রিত।অনেক হয়েছে দলিলের প্যাচাল, একটু নিজের মতো বলি, মাওলা আলীর ভাই জাফর ইবনে আবি তালিদ বিয়ে করেন আসমা বিনতে ইমায়েস ইবনে মা’আদ কে। উনার দুই ছেলে জাফর এবং আওন কে রেখে ,জাফর ইবনে আবি তালিব শাহাদাত লাভ করেন। পরে আসমা বিনতে উমায়েস কে বিয়ে করেন আবু বকর ইবনে কুহাফা। এই আসমার বিনতে উমায়েস এবং আবু বকরের সন্তান হলো মুহাম্মদ বিন আবু বকর আর উম্মে কুলসুম বিনতে আবু বকর। আবু বকরের মৃত্যুর পরে মাওলা আলী আসমা বিনতে উমায়েস কে বিয়ে করেন। এই উম্মে কুলসুমের সাথেই বিয়ে হয়ে ছিলো ওমরের। শুধু তাই নয় এই উম্মে কুলসুমের স্বামী হওয়ার ভাগ্য হযরত তালহাও লাভ করেছিলেন।কাজেই উম্মে কুলসুম ইমাম আলি (আ.)’এর ঔরসজাত সন্তান ছিল না।কেননা জাফর বিন আবু তালিব আসমা বিনতে উমাইসকে বিবাহ করেন। জাফরের পক্ষ থেকে দুটি সন্তান জন্মলাভ করে ‘অউন ও জাফর’। পরে জাফরের শাহাদতের পরে হজরত আবু বকর তাকে বিবাহ করেন। হজরত আবু বকরের পক্ষ থেকে উম্মে কুলসুম জন্মগ্রহণ করে। আর উক্ত উম্মে কুলসুমকে হজরত উমর বিবাহ করেন। সুন্নি সুত্রঃ এহকাকুল হাক, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৩৭৬, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ৩১৫।সুতরাং হে সত্যান্বেষী ! আশা করি এটা এখন ক্লিয়ার যে সে ছিল হযরত আবু বকরের মেয়ে উম্মে কুলসুম,ইমাম আলী (আঃ) এর কন্যা হযরত উম্মে কুলসুম বিনতে আলী (সাঃ আঃ) নয় যার সাথে হযরত ওমরের বিয়ে হয়।আর যে বা যারা মিথ্যাশ্রয়ী তাদের উপর আল্লাহর লানত।নিবেদনে –সৈয়দ হোসাইন উল হকইসলামিক লেখক ও গবেষক,সাহেবজাদা,সুরাবই সাহেব বাড়ি দরবার শরীফ হবিগঞ্জ।এম-ফিল,ইসলামিক স্টাডিজ এন্ড হিস্টোরি,অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি,যুক্তরাজ্য।জনাব ভাব পাগলা আব্দুল্লাহইসলামিক লেখক ও গবেষক,জামালপুর বাংলাদেশ।
মাওলা আলী(আঃ)এর কন্যা উম্মে কুলসুম বিনতে আলী’র বিবাহ সম্পর্কিত রহস্যের বেড়াজালে উমাইয়্যা মিথ্যাচারের সত্য উন্মোচন।
_________________________________________________________
একদল নামধারী আলেম, ধর্মব্যবসায়ীরা খুব আগ্রহের সাথে বয়ান করে “হযরত উমর যদি ফাতেমার উপর অত্যাচারই করে থাকবেন,তাহলে কে আলী তার কন্যা উম্মে কুলসুম কে উমর (রাঃ) সাথে বিয়ে দিলেন?” বলতে বলতে তাদের চোখে যেন সেই বিয়ের দৃশ্য ভাসে, তারা ছয়ের মাইর মেরেছেন ভেবে আত্মতৃপ্তি লাভ করেন।এরা আসলে আদুভাই, এক পড়া বারবার পড়তে পড়তে দাড়ি গজায় গেছে, আর দাড়ি তাদের মুলধন,এটা এসেছে মানেই কামাই চালু।
এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে নাসিবিরা খেলাফতের মূল ইতিহাসের তিক্ততাকে দূরে ঠেলে দিয়ে সত্যকে আড়াল করতে চায়।যা জালিমের পক্ষে কৌশলী অবস্থান তথা একধরনের সূক্ষ নেফাকী। আর এরকম সুক্ষ নেফাকীগত কৌশলি ফাঁদ থেকে সরল মুসলিমের বড় একটা অংশ এখনো মুক্ত হতে পারেনি।যার দরুন আজ মিথ্যা সত্যের পোশাক পরে সমাজে বিচরণ করছে। সত্য পোশাক হারিয়ে লুকিয়ে আছে। সত্যের অনুসরণ ও আনুগত্য করবে বলে ধিরে ধিরে সত্যের বিলুপ্ত ঘটানো হচ্ছে। আর মিথ্যাকে নতুন করে সত্যের রুপে সাজানো হচ্ছে। এই আশায় যে, একদিন মানুষ মিথ্যাটাকেই সত্য হিসাবে বরণ করবে, এবং তারই অনুসরণ ও আনুগত্য করবে।মিথ্যার স্থায়িত্ব যতবেশি হবে তার গ্রহণ যোগ্যতা ততবেশি বৃদ্ধি পেতে থাকবে। আর বিলুপ্ত ঘটানো সত্যটা যাদের সংগ্রহে থাকবে, যখন নতুন প্রজন্মের কাছে তারা তা দলিল হিসেবে উপস্থাপন করবে, নতুনরা তখন বলবেঃ “এগুলো আমাদের কিতাবে নেই। এসব আমাদের কিতাব নয়।” যুগে যুগে এমনটাই হয়ে আসছে।অনেক হয়েছে, আর নয়।এবারে আমরা প্রমাণ করব যে,উম্মে কুলসুম বিনতে আলী (সাঃ আঃ) এর সাথে ওমর ইবনে খাত্তাবের বিয়ে হয়নি।যা ছিল বরাবরের মতই উমাইয়া মিথ্যাচারের বেড়াজাল।
ইতিহাসে হযরত জয়নব আল-সুগরা (সাঃ আঃ) এর উপনাম ছিল উম্মে কুলসুম।দেখে নিতে পারেন ঐতিহাসিক সূত্রঃ আল ইরশাদ, খন্ড ১,পৃষ্ঠা ৩৫৪/ বিহারুল আনওয়ার,খন্ড ৪২,পৃষ্ঠা ৭৪/ ইনাবিউল মোয়াদ্দাত, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ১৪৭/এহকাকুল হাক, খন্ড ১০,পৃষ্ঠা ৪২৬।তোমরা এমনকি তোমাদের হতে পারতো নবীর বেলায়ও হোম ওয়ার্কে ফাকি দিয়েছো।এসো তোমাদের আমরাই শিখাই।আরে গর্ধভের দল, উম্মে কুলসুম কি কোন নাম? উম্মে কুলসুম হলো কুলসুমের মা। যেমন আবুল হাসান মানে হাসানের বাবা।যদিও হযরত জয়নব আল-সুগরা (সাঃ আঃ) বেলায় একটু ব্যতিক্রম পরিলক্ষিত হয়।আল্লামা আব্বাস বিন মোহাম্মদ রেজা আল-কুমি,”আল কুনা ওয়াল আলকাব” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেনঃ হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) তাকে ‘উম্মে কুলসুম’ উপনাম দিয়েছিলেন,কারণ তিনি তার খালা মুহাম্মাদ (সঃ)-এর পালিত কন্যা উম্মে কুলসুমের-এর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ছিলেন।সুত্রঃ আল কুনা ওয়াল আলকাব,-মুহাদ্দিসে কুমী ,খণ্ডঃ ০১ (৫তম সংস্করণ),পৃষ্ঠাঃ ২২৮।
মাওলা আলী (আঃ) এবং জনাবে ফাতিমা জাহরা (সাঃ আঃ) যাহরার কন্যা হযরত জয়নব আল-সুগরা (সাঃ আঃ) তার উপনাম ছিলো উম্মে কুলসুম।দুই বছর বয়সে হযরত উম্মে কুলসুম বিনতে আলী (সাঃ আঃ) দেখেছেন তাদের ঘরে অগ্নিসংযোগ করে তার মা ফাতিমা (সাঃআঃ) কে মারাত্মক ভাবে আহত করা হলো (যে আঘাতে মা কিছুদিন পরেই শাহাদাত বরন করেন),তার বাবা আলী (আঃ) কে তারই সামনে দিয়ে গলায় রশি বেধে নিয়ে যাওয়া হলো,তার ভাই মহসিন (আঃ) শহিদ হলো, মায়ের উপর চাবুক ও চড় মারা হলো, সমস্ত ঘর আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়া হলো। মা ফাতিমার ভেঙে যাওয়া দেহের অংশ দেখেছেন উম্মে কুলসুম বিনতে আলী (সাঃ আঃ)।তিনি কান্না ও অত্যাচার কে দেখেছেন।কে করেছে এগুলি? এটা সবাই জানে। মানে না, যাই হোক আজকের বিষয়বস্তুতে আলোকপাত করতে চাই।
আহলে সুন্নাতের বিখ্যাত স্কলার জনাব আল্লামা শিবলী নোমানী কর্তৃক প্রণীত “আল-ফারুক” কিতাবের ২য় খন্ডের ৫৩৯ নম্বর পৃষ্ঠা এবং তারীখে আবুল ফিদা গ্রন্থের ১ম খন্ডের ১৭১ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে যেঃ হিজরী ১৭ সনে ওমর বিন খাত্তাব ও উম্মে কুলসুমের এর বিবাহ হয় যখন উম্মে কুলসুমের এর বয়স ৫ কিংবা ৪ বছর। কারণ ঐ একই পৃষ্ঠা তাঁর জন্ম সাল ১২ বা ১৩ হিজরী উল্লেখ করা হয়েছে।
অন্যদিকে, হিজরী ১১ সনে রাসূলে খোদা (দুরুদ) এর ওফাতের মাত্র ৬ মাস পরে মা ফাতিমা (সাঃ আঃ)-এ পরলোক গমণ গমণ করেন ।এবং হিজরী ৯ সনে উম্মে কুলসুম বিনতে আলী (সাঃ আঃ) জন্মগ্রহণ করেন।সুন্নী সূত্রঃ বোখারী,আরবী ইংলিশ ভার্সন,খন্ড-৫,হাদিস- ৫৪৬/শীয়া সূত্রঃ আনওয়ারুল হোসাইনিয়া , খন্ড-৩, পৃঃ ৩৯।
মাওলা আলী (আঃ) এর কন্যা হযরত উম্মে কুলসুম বিনতে আলী (সাঃ আঃ) ৯ম হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন এবং মা ফাতিমা (সাঃ আঃ) ১১ হিজরীতে পরলোক গমণ করেন ।এদিকে হযরত ওমরের স্ত্রী উম্মে কুলসুম ১২-১৩ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন ।তাই স্পষ্ট করে বুঝা যাচ্ছে যে, ১২-১৩ হিজরীতে জন্ম নেয়া উম্মে কুলসুম – আলী (আঃ) ও ফাতেমা (সাঃ আঃ) এর সন্তান নন।কারণ মা ফাতেমা (সাঃ আঃ) ১১ সালেই পরলোক গমণ করেছেন।সুহৃদ! এটা কি সম্ভব যে,মা ইন্তেকালের ২ বছর পর সন্তানের জন্ম হয়েছে ?একটু মাথা খাটালেই বোঝা যায় ১২-১৩ হিজরীতে জন্ম নেয়া উম্মে কুলসুম নামে যে কন্যার কথা বলা হয় সে কন্যা আলী (আঃ)-এর কন্যা নয় বরং ওমরের স্ত্রী উম্মে কুলসুম অন্য কোন গোত্রের অন্য কারও সন্তান। তাই শেইখ মুফিদ (রহ.) সহ আরো কয়েকজন আলেম যেমনঃ সৈয়দ মির নাসের হুসাইন লাখনাভি এবং শেইখ মোহাম্মাদ জাওয়াদ বালাগি তাদের স্বীয় গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, হজরত উমরের সাথে হজরত উম্মে কুলসুমের বিবাহ সংঘটিত হয়নি।সাথে থাকুন, সেটাই প্রমাণ করব ইনশাআল্লাহ্।
পাঠক,সুন্নী রেফারেন্স অনুযায়ী উম্মে কুলসুম (হযরত ওমরের স্ত্রী) হিজরী ৫০ সালের আগে ইন্তেকাল করেছেন।ইমাম হাসান (আঃ) কে আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর,সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস তার (ওমরের স্ত্রী উম্মে কুলসুম) মৃত্যুতে শোক প্রার্থণা করার জন্য বলেন।এবং এটা আরেকটা বেদনাদায়ক ঘটনা যে, হিজরী ৫০ সালে ইমাম হাসান (আঃ) ও শাহাদাত বরন করেন।আর উনাকে নিশ্চয়ই জীবিত থাকতেই শোক প্রার্থনা করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল তাই না?
সুন্নী সূত্রঃ আল ইসতিয়াব , খন্ড-২, পৃঃ ৭৯৫ / তারিখে খামিস , খন্ড-২, পৃঃ ৩১৮ / তারিখে তাবারি, খন্ডঃ১২, পৃঃ ১৫।
এবার অবাক হবেন এ জন্য যে,ওমরের স্ত্রী উম্মে কুলসুম যিনি হিজরী ৫০ সালের আগে ইন্তেকাল করেছেন এবং ইমাম আলী (আঃ) এর কন্যা উম্মে কুলসুম বিনতে আলী (সাঃ আঃ) ৬১ হিজরী সনে কারবালায় ইমাম হুসাইনের (আঃ)-সহ যাত্রী ছিলেন !তিনি কারবালার যুদ্ধে উপস্থিত ছিলেন এবং এই সময় তার ভাই মওলা হুসাইন (আঃ)-কে ত্যাগ করার জন্য কুফার লোকদের সমালোচনা করেন।
সূত্রঃ Al-Qurashi, Baqir Shareef,The Life of Imam Husain (as)- পৃষ্ঠাঃ ১৫০২/মোজাফফারি তারিখ,পৃষ্ঠাঃ ২০৮ /আল্লামা মাজলিসি তার মারআতুল উকুল,খন্ড ২০, ও বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৪৫ উল্লেখ করেছেন।
এবং উম্মে কুলসুম বিনতে আলীর (সাঃ আঃ) বিয়ে হয়েছিল তাঁর চাচাতো ভাই আওন ইবনে জাফর (রাঃ)-এর সাথে।এবং হযরত ওমরের স্ত্রী উম্মে কুলসুম ও ইমাম আলী (আঃ) -এর কন্যা উম্মে কুলসুম (সাঃ আঃ) এক নয় দুটি ভিন্ন মানুষ।
সুন্নী সূত্রঃ- রজাতুল ইহবাব, খন্ড-৩, পৃঃ ৫৮৫ / তারিখে খামিস, খন্ড-৩, পৃঃ ৩১৮।
হযরত আওন ইবনে জাফর (রাঃ) তিনি জাফর ইবনে আবু তালিব এবং আসমা বিনতে উমাইসের তৃতীয় পুত্র ছিলেন। তিনি তার চাচাত বোন উম্মে কুলসুম বিনতে আলী (সাঃ আঃ)-কে বিয়ে করেন,যিনি মুহাম্মদ (সা) এর নাতনি ছিলেন।তাদের কোনও সন্তান ছিল না।
সূত্রঃ-মুহাম্মদ ইবনে সাদ কর্তৃক প্রণীত, আল তাবাকাত আল-কবির, খণ্ড ০৮,Translated by Bewley(1995) দ্য উইমেন অফ মদীনা, পৃঃ ১৯৬/২৯৯ লন্ডন: টা-হা পাবলিশার্স।
এখানে উল্লেখ্য যে উমরের সাথে যে উম্মে কুলসুমের বিবাহ হয় এবং তার থেকে নাকি সন্তানও জন্ম হয় যাদের নাম নাকি যায়েদ ও ফাতেমা !কাজেই আবার প্রমাণিত হলো হযরত ওমরের স্ত্রী উম্মে কুলসুম ও ইমাম আলী (আঃ) -এর কন্যা উম্মে কুলসুম (সাঃ আঃ) এক নয় দুটি ভিন্ন মানুষ।
আহলে সুন্নার বিখ্যাত আলেম জনাব ইবনে কুতাইবাহ কর্তৃক প্রণীত তার “আল-মাআরিফ” গ্রন্থে লিখেছেনঃ- ইমাম আলী (আঃ)-এর সকল কন্যার বিয়ে হয়েছে হযরত আকিল (রাঃ) ও হযরত আব্বাস (রাঃ)-এর সন্তানদের সাথে ।ব্যতিক্রম শুধু উম্মুল হাসান বিনতে সায়্যীদ ও ফাতেমার ক্ষেত্রে।কিন্তু কোথাও তিনি উল্লেখ করেন নি যে, হযরত ওমরের সাথে ইমাম আলী (আঃ) এর কন্যার বিবাহ বন্ধন হয়েছে।
সুন্নী সূত্রঃ আল-মাআরিফ,পৃঃ ৮০।
এখানে হযরত ওমরের পৌত্তলিক দিনগুলোসহ ইসলাম গ্রহণ করার পর পর্যন্ত অন্যান্য সকল স্ত্রীদের নাম উল্লেখ করা উপযুক্ত হবে বলে মনে করি।হযরত ওমর ছিলেন খুবই রগচটা, নারীদের প্রহার করতেও কুন্ঠাবোধ করতেন না। ( হুজুর পিলিজ চেইতেন না, ইতিহাসে উনাকে রাগি যুবক নামেই বেশি চিনে) যে কারনে তার স্ত্রীরা তাকে তালাক দিয়ে যেতো। যাই হোক তার প্রথম স্ত্রী ছিলেন ওসমান বিন মাযুন এর বোন জয়নব বিনতে মাজুন (জাহিলিয়ার যুগে)। তার দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন “কারিবা” যিনি ইবনে উমাইত উল মাকযামির কন্যা এবং রাসুল (সঃ) এর স্ত্রী ঊম্মে সালমা (রাঃ) এর বোন । উল্লেখ্য হিজরী ৬ খ্রীষ্টাব্দে হুদাইবিয়ার সন্ধির পর কারিবা’র সাথে হযরত ওমরের তালাক হয় ।তার তৃতীয় স্ত্রী ছিলেন জারুল আল খুজাই’র কন্যা মালাইকা,তাকেও উম্মে কুলসুম বিনতে জারউয়িলা খুজিমা নামে ডাকা হত,এছাড়াও তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন নি।দুই পুত্র সন্তান ছিল এবং হিজরী ৬ খ্রীষ্টাব্দের আগে তালাকপ্রাপ্ত হন।মদিনা হিজরতের পর তিনি (ওমর) বিয়ে করেন আসিম বিন থাবিত যিনি ছিলেন উচ্চ স্থানীয় আনসার এবং বদরের যুদ্ধা তার কন্যা “জামিলা বিনতে আসিম ইবনে সাবিত ইবনে আবিল আকলাহ”কে।জমিলা’র প্রথম নাম ছিল আসিয়া যা রাসুল (সঃ) পরিবর্তন করেছিলেন তার ইসলাম গ্রহণের পরে। হযরত ওমর তাকেও তালাক দেন কিছু অজানা কারণে ।জামিলা বিনতে আসিম ইবনে সাবিত ইবনে আবিল আকলাহ (আউস গোত্রের সদস্য)।তার আরও স্ত্রীদের মধ্যে ছিলেন,আল হারিত বিন হিশাম আল মাখযুমি’র কন্যা উম্মে হাকিম, ফুখিয়া ইয়ামেনিয়া এবং আতিকা বিনতে জায়েদ ইবনে আমর ইবনে নুফায়েল।
সুন্নি সূত্রঃ- শিবলী নোমানি’র প্রণীত,আল-ফারুক – ইংলিশ অনুবাদের পাতা নং ৩৪০-৩৪৩,খন্ড-২,অধ্যায়-১৯ ।History of the Prophets and Kings 4/ 199 by Muhammad ibn Jarir al-Tabari(তারিখ আল-তাবারী)/আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৬খন্ড পৃঃ৩৫২ /ইবনে হাজর আস্কালানি কর্তৃক প্রণীত, আল-ইসাবা, আরবী ৮/১৯৩।
এটা উল্লেখ করা জরুরী যে লেখক,শিবলী নোমানি খুব সহজেই প্রথম খলিফা হযরত আবু বকরের কন্যার কথা উপেক্ষা করেছেন।সঠিক ঐতিহাসিক দলিল প্রমাণ করে যে,হযরত ওমরের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া উম্মে কুলসুম ইমাম আলী (আঃ) এর কন্যা নয় তিনি ছিলেন হযরত আবু বকরের কন্যা ।আমরা এটা জানি যে,শিবলী নোমানী উপরে দুই জন উম্মে কুলসুমের কথা উল্লেখ করেছেন,ঠিক ?অথবা সে কি একই উম্মে কুলসুম যিনি ছিলেন আবু বকরের মেয়ে?যদি হ্যা হয় তবে কেন লেখক সেটা উল্লেখ করলেন না ?আপনাদের কাছে তা স্পষ্ট না হলেও আমাদের কাছে স্পষ্ট। সবাই হালকা করে প্রলেপ দিয়ে দিয়ে আজকের এই মিথ্যাকে পোক্ত করার চেষ্টা চালিয়ে গেছে।
পাঠক,এখানে ঐতিহাসিক দলিল ও তথ্যের মাধ্যমে তারই উত্তর দিচ্ছি – হযরত আবু বকরের মৃত্যুর পর তার একটি কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করে যার নাম রাখা হয় উম্মে কুলসুম।নিশ্চিত হওয়ার জন্য দয়া করে আহলে সুন্নার দলিলগুলি দেখুনঃ তারিখে তাবারিঃ খন্ড-৩, পাতা-৫০, মিশরে মুদ্রিত;/তারিখে কামিলঃ খন্ড-৩, পাতা-১২১, মিশরে মুদ্রিত;/ তারিখে খামিসঃ খন্ড-২, পাতা-২৬৭, মিশরে মুদ্রিত;/ ইবনে হাজর আস্কালানি কর্তৃক প্রণীত, আল-ইসাবা, খন্ড-৩, পাতা-২৭।
এছাড়াও মনে রাখবেন যে,আবু বকর হিজরী ১৩ সনে মারা যান।
সুন্নি সুত্রঃ জালাল উদ্দিন সূয়ুতি কর্তৃক প্রণীত,তারিখে খলিফা,পাতা-৫৫১, মেজর এইচ এস ব্যারেট এর ইংরেজি অনুবাদ।
পরোক্ষভাবে এটা মনে দরকার যে,আসল অভিযোগ ছিল প্রথম দলিল যা উম্মে কুলসুমের বিয়েকালীন বয়স ৪-৫ বুঝানোর জন্য দেয়া হয়েছে।শিবলী নোমানী’র আল-ফারুক গ্রন্থের তথ্য অনুযায়ী ১৩ হিজরীতে জন্ম নেয়া উম্মে কুলসুমের বিয়ে হয় ১৭ হিজরীতে ।এদিকে একাধিক সুন্নি সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে,হিজরী ১৩ সনে আবু বকরের একটি মেয়ে জন্মগ্রহণ করে এবং তার নাম রাখা হয় উম্মে কুলসুম।অন্যদিকে ইমাম আলী (আঃ) এর মেয়ে হযরত জয়নব আল-সুগরা উম্মে কুলসুম বিনতে আলী (সাঃ আঃ) জন্মগ্রহণ করেন ৯ম হিজরীতে।
উম্মুল মুমেনীন আয়েশা (রাঃ)ছিলেন উম্মে কুলসুম বিনতে আবু বকরের বড় বোন,এই কারণে হযরত ওমর উম্মে কুলসুম বিনতে আবু বকরের জন্য উম্মুল মুমেনীন আয়েশা’র নিকট প্রস্থাব পাঠান,এবং উম্মুল মুমেনীন আয়েশা তা গ্রহণ করেন।নিশ্চিত হওয়ার জন্য দয়া করে আহলে সুন্নার দলিলগুলি দেখুনঃ তারিখে খামিস, খন্ডঃ ২, পাতা-২৬৭, মিশরে মুদ্রিত;/তারিখে কামিল, খন্ডঃ ৩, পাতা-২১, মিশরে মুদ্রিত;/ইবনে আব্দুল বার’র প্রণীত, আল-ইসতিয়াব, খন্ডঃ ২, পাতা-৭৯৫, হায়দ্রাবাদ ডেকান মুদ্রিত।
অনেক হয়েছে দলিলের প্যাচাল, একটু নিজের মতো বলি, মাওলা আলীর ভাই জাফর ইবনে আবি তালিদ বিয়ে করেন আসমা বিনতে ইমায়েস ইবনে মা’আদ কে। উনার দুই ছেলে জাফর এবং আওন কে রেখে ,জাফর ইবনে আবি তালিব শাহাদাত লাভ করেন। পরে আসমা বিনতে উমায়েস কে বিয়ে করেন আবু বকর ইবনে কুহাফা। এই আসমার বিনতে উমায়েস এবং আবু বকরের সন্তান হলো মুহাম্মদ বিন আবু বকর আর উম্মে কুলসুম বিনতে আবু বকর। আবু বকরের মৃত্যুর পরে মাওলা আলী আসমা বিনতে উমায়েস কে বিয়ে করেন। এই উম্মে কুলসুমের সাথেই বিয়ে হয়ে ছিলো ওমরের। শুধু তাই নয় এই উম্মে কুলসুমের স্বামী হওয়ার ভাগ্য হযরত তালহাও লাভ করেছিলেন।
কাজেই উম্মে কুলসুম ইমাম আলি (আ.)’এর ঔরসজাত সন্তান ছিল না।কেননা জাফর বিন আবু তালিব আসমা বিনতে উমাইসকে বিবাহ করেন। জাফরের পক্ষ থেকে দুটি সন্তান জন্মলাভ করে ‘অউন ও জাফর’। পরে জাফরের শাহাদতের পরে হজরত আবু বকর তাকে বিবাহ করেন। হজরত আবু বকরের পক্ষ থেকে উম্মে কুলসুম জন্মগ্রহণ করে। আর উক্ত উম্মে কুলসুমকে হজরত উমর বিবাহ করেন।
সুন্নি সুত্রঃ এহকাকুল হাক, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৩৭৬, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ৩১৫।
সুতরাং হে সত্যান্বেষী ! আশা করি এটা এখন ক্লিয়ার যে সে ছিল হযরত আবু বকরের মেয়ে উম্মে কুলসুম,ইমাম আলী (আঃ) এর কন্যা হযরত উম্মে কুলসুম বিনতে আলী (সাঃ আঃ) নয় যার সাথে হযরত ওমরের বিয়ে হয়।আর যে বা যারা মিথ্যাশ্রয়ী তাদের উপর আল্লাহর লানত।
নিবেদনে –
সৈয়দ হোসাইন উল হক
ইসলামিক লেখক ও গবেষক,সাহেবজাদা,সুরাবই সাহেব বাড়ি দরবার শরীফ হবিগঞ্জ।
এম-ফিল,ইসলামিক স্টাডিজ এন্ড হিস্টোরি,অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি,যুক্তরাজ্য।
জনাব ভাব পাগলা আব্দুল্লাহ
ইসলামিক লেখক ও গবেষক,জামালপুর বাংলাদেশ।
মন্তব্যসমূহ