মাওলা আলী(আঃ)এর কন্যা উম্মে কুলসুম বিনতে আলী’র বিবাহ সম্পর্কিত রহস্যের বেড়াজালে উমাইয়্যা মিথ্যাচারের সত্য উন্মোচন। [একটি গবেষণামূলক যৌথ প্রবন্ধ]_________________________________________________________একদল নামধারী আলেম, ধর্মব্যবসায়ীরা খুব আগ্রহের সাথে বয়ান করে “হযরত উমর যদি ফাতেমার উপর অত্যাচারই করে থাকবেন,তাহলে কে আলী তার কন্যা উম্মে কুলসুম কে উমর (রাঃ) সাথে বিয়ে দিলেন?” বলতে বলতে তাদের চোখে যেন সেই বিয়ের দৃশ্য ভাসে, তারা ছয়ের মাইর মেরেছেন ভেবে আত্মতৃপ্তি লাভ করেন।এরা আসলে আদুভাই, এক পড়া বারবার পড়তে পড়তে দাড়ি গজায় গেছে, আর দাড়ি তাদের মুলধন,এটা এসেছে মানেই কামাই চালু।এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে নাসিবিরা খেলাফতের মূল ইতিহাসের তিক্ততাকে দূরে ঠেলে দিয়ে সত্যকে আড়াল করতে চায়।যা জালিমের পক্ষে কৌশলী অবস্থান তথা একধরনের সূক্ষ নেফাকী। আর এরকম সুক্ষ নেফাকীগত কৌশলি ফাঁদ থেকে সরল মুসলিমের বড় একটা অংশ এখনো মুক্ত হতে পারেনি।যার দরুন আজ মিথ্যা সত্যের পোশাক পরে সমাজে বিচরণ করছে। সত্য পোশাক হারিয়ে লুকিয়ে আছে। সত্যের অনুসরণ ও আনুগত্য করবে বলে ধিরে ধিরে সত্যের বিলুপ্ত ঘটানো হচ্ছে। আর মিথ্যাকে নতুন করে সত্যের রুপে সাজানো হচ্ছে। এই আশায় যে, একদিন মানুষ মিথ্যাটাকেই সত্য হিসাবে বরণ করবে, এবং তারই অনুসরণ ও আনুগত্য করবে।মিথ্যার স্থায়িত্ব যতবেশি হবে তার গ্রহণ যোগ্যতা ততবেশি বৃদ্ধি পেতে থাকবে। আর বিলুপ্ত ঘটানো সত্যটা যাদের সংগ্রহে থাকবে, যখন নতুন প্রজন্মের কাছে তারা তা দলিল হিসেবে উপস্থাপন করবে, নতুনরা তখন বলবেঃ “এগুলো আমাদের কিতাবে নেই। এসব আমাদের কিতাব নয়।” যুগে যুগে এমনটাই হয়ে আসছে।অনেক হয়েছে, আর নয়।এবারে আমরা প্রমাণ করব যে,উম্মে কুলসুম বিনতে আলী (সাঃ আঃ) এর সাথে ওমর ইবনে খাত্তাবের বিয়ে হয়নি।যা ছিল বরাবরের মতই উমাইয়া মিথ্যাচারের বেড়াজাল।ইতিহাসে হযরত জয়নব আল-সুগরা (সাঃ আঃ) এর উপনাম ছিল উম্মে কুলসুম।দেখে নিতে পারেন ঐতিহাসিক সূত্রঃ আল ইরশাদ, খন্ড ১,পৃষ্ঠা ৩৫৪/ বিহারুল আনওয়ার,খন্ড ৪২,পৃষ্ঠা ৭৪/ ইনাবিউল মোয়াদ্দাত, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ১৪৭/এহকাকুল হাক, খন্ড ১০,পৃষ্ঠা ৪২৬।তোমরা এমনকি তোমাদের হতে পারতো নবীর বেলায়ও হোম ওয়ার্কে ফাকি দিয়েছো।এসো তোমাদের আমরাই শিখাই।আরে গর্ধভের দল, উম্মে কুলসুম কি কোন নাম? উম্মে কুলসুম হলো কুলসুমের মা। যেমন আবুল হাসান মানে হাসানের বাবা।যদিও হযরত জয়নব আল-সুগরা (সাঃ আঃ) বেলায় একটু ব্যতিক্রম পরিলক্ষিত হয়।আল্লামা আব্বাস বিন মোহাম্মদ রেজা আল-কুমি,”আল কুনা ওয়াল আলকাব” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেনঃ হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) তাকে ‘উম্মে কুলসুম’ উপনাম দিয়েছিলেন,কারণ তিনি তার খালা মুহাম্মাদ (সঃ)-এর পালিত কন্যা উম্মে কুলসুমের-এর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ছিলেন।সুত্রঃ আল কুনা ওয়াল আলকাব,-মুহাদ্দিসে কুমী ,খণ্ডঃ ০১ (৫তম সংস্করণ),পৃষ্ঠাঃ ২২৮।মাওলা আলী (আঃ) এবং জনাবে ফাতিমা জাহরা (সাঃ আঃ) যাহরার কন্যা হযরত জয়নব আল-সুগরা (সাঃ আঃ) তার উপনাম ছিলো উম্মে কুলসুম।দুই বছর বয়সে হযরত উম্মে কুলসুম বিনতে আলী (সাঃ আঃ) দেখেছেন তাদের ঘরে অগ্নিসংযোগ করে তার মা ফাতিমা (সাঃআঃ) কে মারাত্মক ভাবে আহত করা হলো (যে আঘাতে মা কিছুদিন পরেই শাহাদাত বরন করেন),তার বাবা আলী (আঃ) কে তারই সামনে দিয়ে গলায় রশি বেধে নিয়ে যাওয়া হলো,তার ভাই মহসিন (আঃ) শহিদ হলো, মায়ের উপর চাবুক ও চড় মারা হলো, সমস্ত ঘর আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়া হলো। মা ফাতিমার ভেঙে যাওয়া দেহের অংশ দেখেছেন উম্মে কুলসুম বিনতে আলী (সাঃ আঃ)।তিনি কান্না ও অত্যাচার কে দেখেছেন।কে করেছে এগুলি? এটা সবাই জানে। মানে না, যাই হোক আজকের বিষয়বস্তুতে আলোকপাত করতে চাই।আহলে সুন্নাতের বিখ্যাত স্কলার জনাব আল্লামা শিবলী নোমানী কর্তৃক প্রণীত “আল-ফারুক” কিতাবের ২য় খন্ডের ৫৩৯ নম্বর পৃষ্ঠা এবং তারীখে আবুল ফিদা গ্রন্থের ১ম খন্ডের ১৭১ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে যেঃ হিজরী ১৭ সনে ওমর বিন খাত্তাব ও উম্মে কুলসুমের এর বিবাহ হয় যখন উম্মে কুলসুমের এর বয়স ৫ কিংবা ৪ বছর। কারণ ঐ একই পৃষ্ঠা তাঁর জন্ম সাল ১২ বা ১৩ হিজরী উল্লেখ করা হয়েছে।অন্যদিকে, হিজরী ১১ সনে রাসূলে খোদা (দুরুদ) এর ওফাতের মাত্র ৬ মাস পরে মা ফাতিমা (সাঃ আঃ)-এ পরলোক গমণ গমণ করেন ।এবং হিজরী ৯ সনে উম্মে কুলসুম বিনতে আলী (সাঃ আঃ) জন্মগ্রহণ করেন।সুন্নী সূত্রঃ বোখারী,আরবী ইংলিশ ভার্সন,খন্ড-৫,হাদিস- ৫৪৬/শীয়া সূত্রঃ আনওয়ারুল হোসাইনিয়া , খন্ড-৩, পৃঃ ৩৯।মাওলা আলী (আঃ) এর কন্যা হযরত উম্মে কুলসুম বিনতে আলী (সাঃ আঃ) ৯ম হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন এবং মা ফাতিমা (সাঃ আঃ) ১১ হিজরীতে পরলোক গমণ করেন ।এদিকে হযরত ওমরের স্ত্রী উম্মে কুলসুম ১২-১৩ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন ।তাই স্পষ্ট করে বুঝা যাচ্ছে যে, ১২-১৩ হিজরীতে জন্ম নেয়া উম্মে কুলসুম – আলী (আঃ) ও ফাতেমা (সাঃ আঃ) এর সন্তান নন।কারণ মা ফাতেমা (সাঃ আঃ) ১১ সালেই পরলোক গমণ করেছেন।সুহৃদ! এটা কি সম্ভব যে,মা ইন্তেকালের ২ বছর পর সন্তানের জন্ম হয়েছে ?একটু মাথা খাটালেই বোঝা যায় ১২-১৩ হিজরীতে জন্ম নেয়া উম্মে কুলসুম নামে যে কন্যার কথা বলা হয় সে কন্যা আলী (আঃ)-এর কন্যা নয় বরং ওমরের স্ত্রী উম্মে কুলসুম অন্য কোন গোত্রের অন্য কারও সন্তান। তাই শেইখ মুফিদ (রহ.) সহ আরো কয়েকজন আলেম যেমনঃ সৈয়দ মির নাসের হুসাইন লাখনাভি এবং শেইখ মোহাম্মাদ জাওয়াদ বালাগি তাদের স্বীয় গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, হজরত উমরের সাথে হজরত উম্মে কুলসুমের বিবাহ সংঘটিত হয়নি।সাথে থাকুন, সেটাই প্রমাণ করব ইনশাআল্লাহ্।পাঠক,সুন্নী রেফারেন্স অনুযায়ী উম্মে কুলসুম (হযরত ওমরের স্ত্রী) হিজরী ৫০ সালের আগে ইন্তেকাল করেছেন।ইমাম হাসান (আঃ) কে আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর,সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস তার (ওমরের স্ত্রী উম্মে কুলসুম) মৃত্যুতে শোক প্রার্থণা করার জন্য বলেন।এবং এটা আরেকটা বেদনাদায়ক ঘটনা যে, হিজরী ৫০ সালে ইমাম হাসান (আঃ) ও শাহাদাত বরন করেন।আর উনাকে নিশ্চয়ই জীবিত থাকতেই শোক প্রার্থনা করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল তাই না? সুন্নী সূত্রঃ আল ইসতিয়াব , খন্ড-২, পৃঃ ৭৯৫ / তারিখে খামিস , খন্ড-২, পৃঃ ৩১৮ / তারিখে তাবারি, খন্ডঃ১২, পৃঃ ১৫।এবার অবাক হবেন এ জন্য যে,ওমরের স্ত্রী উম্মে কুলসুম যিনি হিজরী ৫০ সালের আগে ইন্তেকাল করেছেন এবং ইমাম আলী (আঃ) এর কন্যা উম্মে কুলসুম বিনতে আলী (সাঃ আঃ) ৬১ হিজরী সনে কারবালায় ইমাম হুসাইনের (আঃ)-সহ যাত্রী ছিলেন !তিনি কারবালার যুদ্ধে উপস্থিত ছিলেন এবং এই সময় তার ভাই মওলা হুসাইন (আঃ)-কে ত্যাগ করার জন্য কুফার লোকদের সমালোচনা করেন।সূত্রঃ Al-Qurashi, Baqir Shareef,The Life of Imam Husain (as)- পৃষ্ঠাঃ ১৫০২/মোজাফফারি তারিখ,পৃষ্ঠাঃ ২০৮ /আল্লামা মাজলিসি তার মারআতুল উকুল,খন্ড ২০, ও বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৪৫ উল্লেখ করেছেন।এবং উম্মে কুলসুম বিনতে আলীর (সাঃ আঃ) বিয়ে হয়েছিল তাঁর চাচাতো ভাই আওন ইবনে জাফর (রাঃ)-এর সাথে।এবং হযরত ওমরের স্ত্রী উম্মে কুলসুম ও ইমাম আলী (আঃ) -এর কন্যা উম্মে কুলসুম (সাঃ আঃ) এক নয় দুটি ভিন্ন মানুষ।সুন্নী সূত্রঃ- রজাতুল ইহবাব, খন্ড-৩, পৃঃ ৫৮৫ / তারিখে খামিস, খন্ড-৩, পৃঃ ৩১৮।হযরত আওন ইবনে জাফর (রাঃ) তিনি জাফর ইবনে আবু তালিব এবং আসমা বিনতে উমাইসের তৃতীয় পুত্র ছিলেন। তিনি তার চাচাত বোন উম্মে কুলসুম বিনতে আলী (সাঃ আঃ)-কে বিয়ে করেন,যিনি মুহাম্মদ (সা) এর নাতনি ছিলেন।তাদের কোনও সন্তান ছিল না।সূত্রঃ-মুহাম্মদ ইবনে সাদ কর্তৃক প্রণীত, আল তাবাকাত আল-কবির, খণ্ড ০৮,Translated by Bewley(1995) দ্য উইমেন অফ মদীনা, পৃঃ ১৯৬/২৯৯ লন্ডন: টা-হা পাবলিশার্স।এখানে উল্লেখ্য যে উমরের সাথে যে উম্মে কুলসুমের বিবাহ হয় এবং তার থেকে নাকি সন্তানও জন্ম হয় যাদের নাম নাকি যায়েদ ও ফাতেমা !কাজেই আবার প্রমাণিত হলো হযরত ওমরের স্ত্রী উম্মে কুলসুম ও ইমাম আলী (আঃ) -এর কন্যা উম্মে কুলসুম (সাঃ আঃ) এক নয় দুটি ভিন্ন মানুষ।আহলে সুন্নার বিখ্যাত আলেম জনাব ইবনে কুতাইবাহ কর্তৃক প্রণীত তার “আল-মাআরিফ” গ্রন্থে লিখেছেনঃ- ইমাম আলী (আঃ)-এর সকল কন্যার বিয়ে হয়েছে হযরত আকিল (রাঃ) ও হযরত আব্বাস (রাঃ)-এর সন্তানদের সাথে ।ব্যতিক্রম শুধু উম্মুল হাসান বিনতে সায়্যীদ ও ফাতেমার ক্ষেত্রে।কিন্তু কোথাও তিনি উল্লেখ করেন নি যে, হযরত ওমরের সাথে ইমাম আলী (আঃ) এর কন্যার বিবাহ বন্ধন হয়েছে।সুন্নী সূত্রঃ আল-মাআরিফ,পৃঃ ৮০।এখানে হযরত ওমরের পৌত্তলিক দিনগুলোসহ ইসলাম গ্রহণ করার পর পর্যন্ত অন্যান্য সকল স্ত্রীদের নাম উল্লেখ করা উপযুক্ত হবে বলে মনে করি।হযরত ওমর ছিলেন খুবই রগচটা, নারীদের প্রহার করতেও কুন্ঠাবোধ করতেন না। ( হুজুর পিলিজ চেইতেন না, ইতিহাসে উনাকে রাগি যুবক নামেই বেশি চিনে) যে কারনে তার স্ত্রীরা তাকে তালাক দিয়ে যেতো। যাই হোক তার প্রথম স্ত্রী ছিলেন ওসমান বিন মাযুন এর বোন জয়নব বিনতে মাজুন (জাহিলিয়ার যুগে)। তার দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন “কারিবা” যিনি ইবনে উমাইত উল মাকযামির কন্যা এবং রাসুল (সঃ) এর স্ত্রী ঊম্মে সালমা (রাঃ) এর বোন । উল্লেখ্য হিজরী ৬ খ্রীষ্টাব্দে হুদাইবিয়ার সন্ধির পর কারিবা’র সাথে হযরত ওমরের তালাক হয় ।তার তৃতীয় স্ত্রী ছিলেন জারুল আল খুজাই’র কন্যা মালাইকা,তাকেও উম্মে কুলসুম বিনতে জারউয়িলা খুজিমা নামে ডাকা হত,এছাড়াও তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন নি।দুই পুত্র সন্তান ছিল এবং হিজরী ৬ খ্রীষ্টাব্দের আগে তালাকপ্রাপ্ত হন।মদিনা হিজরতের পর তিনি (ওমর) বিয়ে করেন আসিম বিন থাবিত যিনি ছিলেন উচ্চ স্থানীয় আনসার এবং বদরের যুদ্ধা তার কন্যা “জামিলা বিনতে আসিম ইবনে সাবিত ইবনে আবিল আকলাহ”কে।জমিলা’র প্রথম নাম ছিল আসিয়া যা রাসুল (সঃ) পরিবর্তন করেছিলেন তার ইসলাম গ্রহণের পরে। হযরত ওমর তাকেও তালাক দেন কিছু অজানা কারণে ।জামিলা বিনতে আসিম ইবনে সাবিত ইবনে আবিল আকলাহ (আউস গোত্রের সদস্য)।তার আরও স্ত্রীদের মধ্যে ছিলেন,আল হারিত বিন হিশাম আল মাখযুমি’র কন্যা উম্মে হাকিম, ফুখিয়া ইয়ামেনিয়া এবং আতিকা বিনতে জায়েদ ইবনে আমর ইবনে নুফায়েল। সুন্নি সূত্রঃ- শিবলী নোমানি’র প্রণীত,আল-ফারুক – ইংলিশ অনুবাদের পাতা নং ৩৪০-৩৪৩,খন্ড-২,অধ্যায়-১৯ ।History of the Prophets and Kings 4/ 199 by Muhammad ibn Jarir al-Tabari(তারিখ আল-তাবারী)/আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৬খন্ড পৃঃ৩৫২ /ইবনে হাজর আস্কালানি কর্তৃক প্রণীত, আল-ইসাবা, আরবী ৮/১৯৩।এটা উল্লেখ করা জরুরী যে লেখক,শিবলী নোমানি খুব সহজেই প্রথম খলিফা হযরত আবু বকরের কন্যার কথা উপেক্ষা করেছেন।সঠিক ঐতিহাসিক দলিল প্রমাণ করে যে,হযরত ওমরের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া উম্মে কুলসুম ইমাম আলী (আঃ) এর কন্যা নয় তিনি ছিলেন হযরত আবু বকরের কন্যা ।আমরা এটা জানি যে,শিবলী নোমানী উপরে দুই জন উম্মে কুলসুমের কথা উল্লেখ করেছেন,ঠিক ?অথবা সে কি একই উম্মে কুলসুম যিনি ছিলেন আবু বকরের মেয়ে?যদি হ্যা হয় তবে কেন লেখক সেটা উল্লেখ করলেন না ?আপনাদের কাছে তা স্পষ্ট না হলেও আমাদের কাছে স্পষ্ট। সবাই হালকা করে প্রলেপ দিয়ে দিয়ে আজকের এই মিথ্যাকে পোক্ত করার চেষ্টা চালিয়ে গেছে।পাঠক,এখানে ঐতিহাসিক দলিল ও তথ্যের মাধ্যমে তারই উত্তর দিচ্ছি – হযরত আবু বকরের মৃত্যুর পর তার একটি কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করে যার নাম রাখা হয় উম্মে কুলসুম।নিশ্চিত হওয়ার জন্য দয়া করে আহলে সুন্নার দলিলগুলি দেখুনঃ তারিখে তাবারিঃ খন্ড-৩, পাতা-৫০, মিশরে মুদ্রিত;/তারিখে কামিলঃ খন্ড-৩, পাতা-১২১, মিশরে মুদ্রিত;/ তারিখে খামিসঃ খন্ড-২, পাতা-২৬৭, মিশরে মুদ্রিত;/ ইবনে হাজর আস্কালানি কর্তৃক প্রণীত, আল-ইসাবা, খন্ড-৩, পাতা-২৭।এছাড়াও মনে রাখবেন যে,আবু বকর হিজরী ১৩ সনে মারা যান।সুন্নি সুত্রঃ জালাল উদ্দিন সূয়ুতি কর্তৃক প্রণীত,তারিখে খলিফা,পাতা-৫৫১, মেজর এইচ এস ব্যারেট এর ইংরেজি অনুবাদ।পরোক্ষভাবে এটা মনে দরকার যে,আসল অভিযোগ ছিল প্রথম দলিল যা উম্মে কুলসুমের বিয়েকালীন বয়স ৪-৫ বুঝানোর জন্য দেয়া হয়েছে।শিবলী নোমানী’র আল-ফারুক গ্রন্থের তথ্য অনুযায়ী ১৩ হিজরীতে জন্ম নেয়া উম্মে কুলসুমের বিয়ে হয় ১৭ হিজরীতে ।এদিকে একাধিক সুন্নি সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে,হিজরী ১৩ সনে আবু বকরের একটি মেয়ে জন্মগ্রহণ করে এবং তার নাম রাখা হয় উম্মে কুলসুম।অন্যদিকে ইমাম আলী (আঃ) এর মেয়ে হযরত জয়নব আল-সুগরা উম্মে কুলসুম বিনতে আলী (সাঃ আঃ) জন্মগ্রহণ করেন ৯ম হিজরীতে।উম্মুল মুমেনীন আয়েশা (রাঃ)ছিলেন উম্মে কুলসুম বিনতে আবু বকরের বড় বোন,এই কারণে হযরত ওমর উম্মে কুলসুম বিনতে আবু বকরের জন্য উম্মুল মুমেনীন আয়েশা’র নিকট প্রস্থাব পাঠান,এবং উম্মুল মুমেনীন আয়েশা তা গ্রহণ করেন।নিশ্চিত হওয়ার জন্য দয়া করে আহলে সুন্নার দলিলগুলি দেখুনঃ তারিখে খামিস, খন্ডঃ ২, পাতা-২৬৭, মিশরে মুদ্রিত;/তারিখে কামিল, খন্ডঃ ৩, পাতা-২১, মিশরে মুদ্রিত;/ইবনে আব্দুল বার’র প্রণীত, আল-ইসতিয়াব, খন্ডঃ ২, পাতা-৭৯৫, হায়দ্রাবাদ ডেকান মুদ্রিত।অনেক হয়েছে দলিলের প্যাচাল, একটু নিজের মতো বলি, মাওলা আলীর ভাই জাফর ইবনে আবি তালিদ বিয়ে করেন আসমা বিনতে ইমায়েস ইবনে মা’আদ কে। উনার দুই ছেলে জাফর এবং আওন কে রেখে ,জাফর ইবনে আবি তালিব শাহাদাত লাভ করেন। পরে আসমা বিনতে উমায়েস কে বিয়ে করেন আবু বকর ইবনে কুহাফা। এই আসমার বিনতে উমায়েস এবং আবু বকরের সন্তান হলো মুহাম্মদ বিন আবু বকর আর উম্মে কুলসুম বিনতে আবু বকর। আবু বকরের মৃত্যুর পরে মাওলা আলী আসমা বিনতে উমায়েস কে বিয়ে করেন। এই উম্মে কুলসুমের সাথেই বিয়ে হয়ে ছিলো ওমরের। শুধু তাই নয় এই উম্মে কুলসুমের স্বামী হওয়ার ভাগ্য হযরত তালহাও লাভ করেছিলেন।কাজেই উম্মে কুলসুম ইমাম আলি (আ.)’এর ঔরসজাত সন্তান ছিল না।কেননা জাফর বিন আবু তালিব আসমা বিনতে উমাইসকে বিবাহ করেন। জাফরের পক্ষ থেকে দুটি সন্তান জন্মলাভ করে ‘অউন ও জাফর’। পরে জাফরের শাহাদতের পরে হজরত আবু বকর তাকে বিবাহ করেন। হজরত আবু বকরের পক্ষ থেকে উম্মে কুলসুম জন্মগ্রহণ করে। আর উক্ত উম্মে কুলসুমকে হজরত উমর বিবাহ করেন। সুন্নি সুত্রঃ এহকাকুল হাক, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৩৭৬, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ৩১৫।সুতরাং হে সত্যান্বেষী ! আশা করি এটা এখন ক্লিয়ার যে সে ছিল হযরত আবু বকরের মেয়ে উম্মে কুলসুম,ইমাম আলী (আঃ) এর কন্যা হযরত উম্মে কুলসুম বিনতে আলী (সাঃ আঃ) নয় যার সাথে হযরত ওমরের বিয়ে হয়।আর যে বা যারা মিথ্যাশ্রয়ী তাদের উপর আল্লাহর লানত।নিবেদনে –সৈয়দ হোসাইন উল হকইসলামিক লেখক ও গবেষক,সাহেবজাদা,সুরাবই সাহেব বাড়ি দরবার শরীফ হবিগঞ্জ।এম-ফিল,ইসলামিক স্টাডিজ এন্ড হিস্টোরি,অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি,যুক্তরাজ্য।জনাব ভাব পাগলা আব্দুল্লাহইসলামিক লেখক ও গবেষক,জামালপুর বাংলাদেশ।

মাওলা আলী(আঃ)এর কন্যা উম্মে কুলসুম বিনতে আলী’র বিবাহ সম্পর্কিত রহস্যের বেড়াজালে উমাইয়্যা মিথ্যাচারের সত্য উন্মোচন।
                      [একটি গবেষণামূলক যৌথ প্রবন্ধ]
_________________________________________________________
একদল নামধারী আলেম, ধর্মব্যবসায়ীরা খুব আগ্রহের সাথে বয়ান করে “হযরত উমর যদি ফাতেমার উপর অত্যাচারই করে থাকবেন,তাহলে কে আলী তার কন্যা উম্মে কুলসুম কে উমর (রাঃ) সাথে বিয়ে দিলেন?” বলতে বলতে তাদের চোখে যেন সেই বিয়ের দৃশ্য ভাসে, তারা ছয়ের মাইর মেরেছেন ভেবে আত্মতৃপ্তি লাভ করেন।এরা আসলে আদুভাই, এক পড়া বারবার পড়তে পড়তে দাড়ি গজায় গেছে, আর দাড়ি তাদের মুলধন,এটা এসেছে মানেই কামাই চালু।

এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে নাসিবিরা খেলাফতের মূল ইতিহাসের তিক্ততাকে দূরে ঠেলে দিয়ে সত্যকে আড়াল করতে চায়।যা জালিমের পক্ষে কৌশলী অবস্থান তথা একধরনের সূক্ষ নেফাকী। আর এরকম সুক্ষ নেফাকীগত কৌশলি ফাঁদ থেকে সরল মুসলিমের বড় একটা অংশ এখনো মুক্ত হতে পারেনি।যার দরুন আজ মিথ্যা সত্যের পোশাক পরে সমাজে বিচরণ করছে। সত্য পোশাক হারিয়ে লুকিয়ে আছে। সত্যের অনুসরণ ও আনুগত্য করবে বলে ধিরে ধিরে সত্যের বিলুপ্ত ঘটানো হচ্ছে। আর মিথ্যাকে নতুন করে সত্যের রুপে সাজানো হচ্ছে। এই আশায় যে, একদিন মানুষ মিথ্যাটাকেই সত্য হিসাবে বরণ করবে, এবং তারই অনুসরণ ও আনুগত্য করবে।মিথ্যার স্থায়িত্ব যতবেশি হবে তার গ্রহণ যোগ্যতা ততবেশি বৃদ্ধি পেতে থাকবে। আর বিলুপ্ত ঘটানো সত্যটা যাদের সংগ্রহে থাকবে, যখন নতুন প্রজন্মের কাছে তারা তা দলিল হিসেবে উপস্থাপন করবে, নতুনরা তখন বলবেঃ “এগুলো আমাদের কিতাবে নেই। এসব আমাদের কিতাব নয়।” যুগে যুগে এমনটাই হয়ে আসছে।অনেক হয়েছে, আর নয়।এবারে আমরা প্রমাণ করব যে,উম্মে কুলসুম বিনতে আলী (সাঃ আঃ) এর সাথে ওমর ইবনে খাত্তাবের বিয়ে হয়নি।যা ছিল বরাবরের মতই উমাইয়া মিথ্যাচারের বেড়াজাল।

ইতিহাসে হযরত জয়নব আল-সুগরা (সাঃ আঃ) এর উপনাম ছিল উম্মে কুলসুম।দেখে নিতে পারেন ঐতিহাসিক সূত্রঃ আল ইরশাদ, খন্ড ১,পৃষ্ঠা ৩৫৪/ বিহারুল আনওয়ার,খন্ড ৪২,পৃষ্ঠা ৭৪/ ইনাবিউল মোয়াদ্দাত, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ১৪৭/এহকাকুল হাক, খন্ড ১০,পৃষ্ঠা ৪২৬।তোমরা এমনকি তোমাদের হতে পারতো নবীর বেলায়ও হোম ওয়ার্কে ফাকি দিয়েছো।এসো তোমাদের আমরাই শিখাই।আরে গর্ধভের দল, উম্মে কুলসুম কি কোন নাম? উম্মে কুলসুম হলো কুলসুমের মা। যেমন আবুল হাসান মানে হাসানের বাবা।যদিও হযরত জয়নব আল-সুগরা (সাঃ আঃ) বেলায় একটু ব্যতিক্রম পরিলক্ষিত হয়।আল্লামা আব্বাস বিন মোহাম্মদ রেজা আল-কুমি,”আল কুনা ওয়াল আলকাব” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেনঃ হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) তাকে ‘উম্মে কুলসুম’ উপনাম দিয়েছিলেন,কারণ তিনি তার খালা মুহাম্মাদ (সঃ)-এর পালিত কন্যা উম্মে কুলসুমের-এর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ছিলেন।সুত্রঃ আল কুনা ওয়াল আলকাব,-মুহাদ্দিসে কুমী ,খণ্ডঃ ০১ (৫তম সংস্করণ),পৃষ্ঠাঃ ২২৮।

মাওলা আলী (আঃ) এবং জনাবে ফাতিমা জাহরা (সাঃ আঃ) যাহরার কন্যা হযরত জয়নব আল-সুগরা (সাঃ আঃ) তার উপনাম ছিলো উম্মে কুলসুম।দুই বছর বয়সে হযরত উম্মে কুলসুম বিনতে আলী (সাঃ আঃ) দেখেছেন তাদের ঘরে অগ্নিসংযোগ করে তার মা ফাতিমা (সাঃআঃ) কে মারাত্মক ভাবে আহত করা হলো (যে আঘাতে মা কিছুদিন পরেই শাহাদাত বরন করেন),তার বাবা আলী (আঃ) কে তারই সামনে দিয়ে গলায় রশি বেধে নিয়ে যাওয়া হলো,তার ভাই মহসিন (আঃ) শহিদ হলো, মায়ের উপর চাবুক ও চড় মারা হলো, সমস্ত ঘর আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়া হলো। মা ফাতিমার ভেঙে যাওয়া দেহের অংশ দেখেছেন উম্মে কুলসুম বিনতে আলী (সাঃ আঃ)।তিনি কান্না ও অত্যাচার কে দেখেছেন।কে করেছে এগুলি? এটা সবাই জানে। মানে না, যাই হোক আজকের বিষয়বস্তুতে আলোকপাত করতে চাই।
আহলে সুন্নাতের বিখ্যাত স্কলার জনাব আল্লামা শিবলী নোমানী কর্তৃক প্রণীত “আল-ফারুক” কিতাবের ২য় খন্ডের ৫৩৯ নম্বর পৃষ্ঠা এবং তারীখে আবুল ফিদা গ্রন্থের ১ম খন্ডের ১৭১ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে যেঃ হিজরী ১৭ সনে ওমর বিন খাত্তাব ও উম্মে কুলসুমের এর বিবাহ হয় যখন উম্মে কুলসুমের এর বয়স ৫ কিংবা ৪ বছর। কারণ ঐ একই পৃষ্ঠা তাঁর জন্ম সাল ১২ বা ১৩ হিজরী উল্লেখ করা হয়েছে।
অন্যদিকে, হিজরী ১১ সনে রাসূলে খোদা (দুরুদ) এর ওফাতের মাত্র ৬ মাস পরে মা ফাতিমা (সাঃ আঃ)-এ পরলোক গমণ গমণ করেন ।এবং হিজরী ৯ সনে উম্মে কুলসুম বিনতে আলী (সাঃ আঃ) জন্মগ্রহণ করেন।সুন্নী সূত্রঃ বোখারী,আরবী ইংলিশ ভার্সন,খন্ড-৫,হাদিস- ৫৪৬/শীয়া সূত্রঃ আনওয়ারুল হোসাইনিয়া , খন্ড-৩, পৃঃ ৩৯।

মাওলা আলী (আঃ) এর কন্যা হযরত উম্মে কুলসুম বিনতে আলী (সাঃ আঃ) ৯ম হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন এবং মা ফাতিমা (সাঃ আঃ) ১১ হিজরীতে পরলোক গমণ করেন ।এদিকে হযরত ওমরের স্ত্রী উম্মে কুলসুম ১২-১৩ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন ।তাই স্পষ্ট করে বুঝা যাচ্ছে যে, ১২-১৩ হিজরীতে জন্ম নেয়া উম্মে কুলসুম – আলী (আঃ) ও ফাতেমা (সাঃ আঃ) এর সন্তান নন।কারণ মা ফাতেমা (সাঃ আঃ) ১১ সালেই পরলোক গমণ করেছেন।সুহৃদ! এটা কি সম্ভব যে,মা ইন্তেকালের ২ বছর পর সন্তানের জন্ম হয়েছে ?একটু মাথা খাটালেই বোঝা যায় ১২-১৩ হিজরীতে জন্ম নেয়া উম্মে কুলসুম নামে যে কন্যার কথা বলা হয় সে কন্যা আলী (আঃ)-এর কন্যা নয় বরং ওমরের স্ত্রী উম্মে কুলসুম অন্য কোন গোত্রের অন্য কারও সন্তান। তাই শেইখ মুফিদ (রহ.) সহ আরো কয়েকজন আলেম যেমনঃ সৈয়দ মির নাসের হুসাইন লাখনাভি এবং শেইখ মোহাম্মাদ জাওয়াদ বালাগি তাদের স্বীয় গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, হজরত উমরের সাথে হজরত উম্মে কুলসুমের বিবাহ সংঘটিত হয়নি।সাথে থাকুন, সেটাই প্রমাণ করব ইনশাআল্লাহ্।

পাঠক,সুন্নী রেফারেন্স অনুযায়ী উম্মে কুলসুম (হযরত ওমরের স্ত্রী) হিজরী ৫০ সালের আগে ইন্তেকাল করেছেন।ইমাম হাসান (আঃ) কে আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর,সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস তার (ওমরের স্ত্রী উম্মে কুলসুম) মৃত্যুতে শোক প্রার্থণা করার জন্য বলেন।এবং এটা আরেকটা বেদনাদায়ক ঘটনা যে, হিজরী ৫০ সালে ইমাম হাসান (আঃ) ও শাহাদাত বরন করেন।আর উনাকে নিশ্চয়ই জীবিত থাকতেই শোক প্রার্থনা করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল তাই না? 
সুন্নী সূত্রঃ আল ইসতিয়াব , খন্ড-২, পৃঃ ৭৯৫ / তারিখে খামিস , খন্ড-২, পৃঃ ৩১৮ / তারিখে তাবারি, খন্ডঃ১২, পৃঃ ১৫।
এবার অবাক হবেন এ জন্য যে,ওমরের স্ত্রী উম্মে কুলসুম যিনি হিজরী ৫০ সালের আগে ইন্তেকাল করেছেন এবং ইমাম আলী (আঃ) এর কন্যা উম্মে কুলসুম বিনতে আলী (সাঃ আঃ) ৬১ হিজরী সনে কারবালায় ইমাম হুসাইনের (আঃ)-সহ যাত্রী ছিলেন !তিনি কারবালার যুদ্ধে উপস্থিত ছিলেন এবং এই সময় তার ভাই মওলা হুসাইন (আঃ)-কে ত্যাগ করার জন্য কুফার লোকদের সমালোচনা করেন।
সূত্রঃ Al-Qurashi, Baqir Shareef,The Life of Imam Husain (as)- পৃষ্ঠাঃ ১৫০২/মোজাফফারি তারিখ,পৃষ্ঠাঃ ২০৮ /আল্লামা মাজলিসি তার মারআতুল উকুল,খন্ড ২০, ও বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৪৫ উল্লেখ করেছেন।
এবং উম্মে কুলসুম বিনতে আলীর (সাঃ আঃ) বিয়ে হয়েছিল তাঁর চাচাতো ভাই আওন ইবনে জাফর (রাঃ)-এর সাথে।এবং হযরত ওমরের স্ত্রী উম্মে কুলসুম ও ইমাম আলী (আঃ) -এর কন্যা উম্মে কুলসুম (সাঃ আঃ) এক নয় দুটি ভিন্ন মানুষ।
সুন্নী সূত্রঃ- রজাতুল ইহবাব, খন্ড-৩, পৃঃ ৫৮৫ / তারিখে খামিস, খন্ড-৩, পৃঃ ৩১৮।
হযরত আওন ইবনে জাফর (রাঃ) তিনি জাফর ইবনে আবু তালিব এবং আসমা বিনতে উমাইসের তৃতীয় পুত্র ছিলেন। তিনি তার চাচাত বোন উম্মে কুলসুম বিনতে আলী (সাঃ আঃ)-কে বিয়ে করেন,যিনি মুহাম্মদ (সা) এর নাতনি ছিলেন।তাদের কোনও সন্তান ছিল না।
সূত্রঃ-মুহাম্মদ ইবনে সাদ কর্তৃক প্রণীত, আল তাবাকাত আল-কবির, খণ্ড ০৮,Translated by Bewley(1995) দ্য উইমেন অফ মদীনা, পৃঃ ১৯৬/২৯৯ লন্ডন: টা-হা পাবলিশার্স।
এখানে উল্লেখ্য যে উমরের সাথে যে উম্মে কুলসুমের বিবাহ হয় এবং তার থেকে নাকি সন্তানও জন্ম হয় যাদের নাম নাকি যায়েদ ও ফাতেমা !কাজেই আবার প্রমাণিত হলো হযরত ওমরের স্ত্রী উম্মে কুলসুম ও ইমাম আলী (আঃ) -এর কন্যা উম্মে কুলসুম (সাঃ আঃ) এক নয় দুটি ভিন্ন মানুষ।

আহলে সুন্নার বিখ্যাত আলেম জনাব ইবনে কুতাইবাহ কর্তৃক প্রণীত তার “আল-মাআরিফ” গ্রন্থে লিখেছেনঃ- ইমাম আলী (আঃ)-এর সকল কন্যার বিয়ে হয়েছে হযরত আকিল (রাঃ) ও হযরত আব্বাস (রাঃ)-এর সন্তানদের সাথে ।ব্যতিক্রম শুধু উম্মুল হাসান বিনতে সায়্যীদ ও ফাতেমার ক্ষেত্রে।কিন্তু কোথাও তিনি উল্লেখ করেন নি যে, হযরত ওমরের সাথে ইমাম আলী (আঃ) এর কন্যার বিবাহ বন্ধন হয়েছে।
সুন্নী সূত্রঃ আল-মাআরিফ,পৃঃ ৮০।

এখানে হযরত ওমরের পৌত্তলিক দিনগুলোসহ ইসলাম গ্রহণ করার পর পর্যন্ত অন্যান্য সকল স্ত্রীদের নাম উল্লেখ করা উপযুক্ত হবে বলে মনে করি।হযরত ওমর ছিলেন খুবই রগচটা, নারীদের প্রহার করতেও কুন্ঠাবোধ করতেন না। ( হুজুর পিলিজ চেইতেন না, ইতিহাসে উনাকে রাগি যুবক নামেই বেশি চিনে) যে কারনে তার স্ত্রীরা তাকে তালাক দিয়ে যেতো। যাই হোক তার প্রথম স্ত্রী ছিলেন ওসমান বিন মাযুন এর বোন জয়নব বিনতে মাজুন (জাহিলিয়ার যুগে)। তার দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন “কারিবা” যিনি ইবনে উমাইত উল মাকযামির কন্যা এবং রাসুল (সঃ) এর স্ত্রী ঊম্মে সালমা (রাঃ) এর বোন । উল্লেখ্য হিজরী ৬ খ্রীষ্টাব্দে হুদাইবিয়ার সন্ধির পর কারিবা’র সাথে হযরত ওমরের তালাক হয় ।তার তৃতীয় স্ত্রী ছিলেন জারুল আল খুজাই’র কন্যা মালাইকা,তাকেও উম্মে কুলসুম বিনতে জারউয়িলা খুজিমা নামে ডাকা হত,এছাড়াও তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন নি।দুই পুত্র সন্তান ছিল এবং হিজরী ৬ খ্রীষ্টাব্দের আগে তালাকপ্রাপ্ত হন।মদিনা হিজরতের পর তিনি (ওমর) বিয়ে করেন আসিম বিন থাবিত যিনি ছিলেন উচ্চ স্থানীয় আনসার এবং বদরের যুদ্ধা তার কন্যা “জামিলা বিনতে আসিম ইবনে সাবিত ইবনে আবিল আকলাহ”কে।জমিলা’র প্রথম নাম ছিল আসিয়া যা রাসুল (সঃ) পরিবর্তন করেছিলেন তার ইসলাম গ্রহণের পরে। হযরত ওমর তাকেও তালাক দেন কিছু অজানা কারণে ।জামিলা বিনতে আসিম ইবনে সাবিত ইবনে আবিল আকলাহ (আউস গোত্রের সদস্য)।তার আরও স্ত্রীদের মধ্যে ছিলেন,আল হারিত বিন হিশাম আল মাখযুমি’র কন্যা উম্মে হাকিম, ফুখিয়া ইয়ামেনিয়া এবং আতিকা বিনতে জায়েদ ইবনে আমর ইবনে নুফায়েল। 
সুন্নি সূত্রঃ- শিবলী নোমানি’র প্রণীত,আল-ফারুক – ইংলিশ অনুবাদের পাতা নং ৩৪০-৩৪৩,খন্ড-২,অধ্যায়-১৯ ।History of the Prophets and Kings 4/ 199 by Muhammad ibn Jarir al-Tabari(তারিখ আল-তাবারী)/আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৬খন্ড পৃঃ৩৫২ /ইবনে হাজর আস্কালানি কর্তৃক প্রণীত, আল-ইসাবা, আরবী ৮/১৯৩।

এটা উল্লেখ করা জরুরী যে লেখক,শিবলী নোমানি খুব সহজেই প্রথম খলিফা হযরত আবু বকরের কন্যার কথা উপেক্ষা করেছেন।সঠিক ঐতিহাসিক দলিল প্রমাণ করে যে,হযরত ওমরের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া উম্মে কুলসুম ইমাম আলী (আঃ) এর কন্যা নয় তিনি ছিলেন হযরত আবু বকরের কন্যা ।আমরা এটা জানি যে,শিবলী নোমানী উপরে দুই জন উম্মে কুলসুমের কথা উল্লেখ করেছেন,ঠিক ?অথবা সে কি একই উম্মে কুলসুম যিনি ছিলেন আবু বকরের মেয়ে?যদি হ্যা হয় তবে কেন লেখক সেটা উল্লেখ করলেন না ?আপনাদের কাছে তা স্পষ্ট না হলেও আমাদের কাছে স্পষ্ট। সবাই হালকা করে প্রলেপ দিয়ে দিয়ে আজকের এই মিথ্যাকে পোক্ত করার চেষ্টা চালিয়ে গেছে।
পাঠক,এখানে ঐতিহাসিক দলিল ও তথ্যের মাধ্যমে তারই উত্তর দিচ্ছি – হযরত আবু বকরের মৃত্যুর পর তার একটি কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করে যার নাম রাখা হয় উম্মে কুলসুম।নিশ্চিত হওয়ার জন্য দয়া করে আহলে সুন্নার দলিলগুলি দেখুনঃ তারিখে তাবারিঃ খন্ড-৩, পাতা-৫০, মিশরে মুদ্রিত;/তারিখে কামিলঃ খন্ড-৩, পাতা-১২১, মিশরে মুদ্রিত;/ তারিখে খামিসঃ খন্ড-২, পাতা-২৬৭, মিশরে মুদ্রিত;/ ইবনে হাজর আস্কালানি কর্তৃক প্রণীত, আল-ইসাবা, খন্ড-৩, পাতা-২৭।

এছাড়াও মনে রাখবেন যে,আবু বকর হিজরী ১৩ সনে মারা যান।
সুন্নি সুত্রঃ জালাল উদ্দিন সূয়ুতি কর্তৃক প্রণীত,তারিখে খলিফা,পাতা-৫৫১, মেজর এইচ এস ব্যারেট এর ইংরেজি অনুবাদ।

পরোক্ষভাবে এটা মনে দরকার যে,আসল অভিযোগ ছিল প্রথম দলিল যা উম্মে কুলসুমের বিয়েকালীন বয়স ৪-৫ বুঝানোর জন্য দেয়া হয়েছে।শিবলী নোমানী’র আল-ফারুক গ্রন্থের তথ্য অনুযায়ী ১৩ হিজরীতে জন্ম নেয়া উম্মে কুলসুমের বিয়ে হয় ১৭ হিজরীতে ।এদিকে একাধিক সুন্নি সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে,হিজরী ১৩ সনে আবু বকরের একটি মেয়ে জন্মগ্রহণ করে এবং তার নাম রাখা হয় উম্মে কুলসুম।অন্যদিকে ইমাম আলী (আঃ) এর মেয়ে হযরত জয়নব আল-সুগরা উম্মে কুলসুম বিনতে আলী (সাঃ আঃ) জন্মগ্রহণ করেন ৯ম হিজরীতে।

উম্মুল মুমেনীন আয়েশা (রাঃ)ছিলেন উম্মে কুলসুম বিনতে আবু বকরের বড় বোন,এই কারণে হযরত ওমর উম্মে কুলসুম বিনতে আবু বকরের জন্য উম্মুল মুমেনীন আয়েশা’র নিকট প্রস্থাব পাঠান,এবং উম্মুল মুমেনীন আয়েশা তা গ্রহণ করেন।নিশ্চিত হওয়ার জন্য দয়া করে আহলে সুন্নার দলিলগুলি দেখুনঃ তারিখে খামিস, খন্ডঃ ২, পাতা-২৬৭, মিশরে মুদ্রিত;/তারিখে কামিল, খন্ডঃ ৩, পাতা-২১, মিশরে মুদ্রিত;/ইবনে আব্দুল বার’র প্রণীত, আল-ইসতিয়াব, খন্ডঃ ২, পাতা-৭৯৫, হায়দ্রাবাদ ডেকান মুদ্রিত।

অনেক হয়েছে দলিলের প্যাচাল, একটু নিজের মতো বলি, মাওলা আলীর ভাই জাফর ইবনে আবি তালিদ বিয়ে করেন আসমা বিনতে ইমায়েস ইবনে মা’আদ কে। উনার দুই ছেলে জাফর এবং আওন কে রেখে ,জাফর ইবনে আবি তালিব শাহাদাত লাভ করেন। পরে আসমা বিনতে উমায়েস কে বিয়ে করেন আবু বকর ইবনে কুহাফা। এই আসমার বিনতে উমায়েস এবং আবু বকরের সন্তান হলো মুহাম্মদ বিন আবু বকর আর উম্মে কুলসুম বিনতে আবু বকর। আবু বকরের মৃত্যুর পরে মাওলা আলী আসমা বিনতে উমায়েস কে বিয়ে করেন। এই উম্মে কুলসুমের সাথেই বিয়ে হয়ে ছিলো ওমরের। শুধু তাই নয় এই উম্মে কুলসুমের স্বামী হওয়ার ভাগ্য হযরত তালহাও লাভ করেছিলেন।
কাজেই উম্মে কুলসুম ইমাম আলি (আ.)’এর ঔরসজাত সন্তান ছিল না।কেননা জাফর বিন আবু তালিব আসমা বিনতে উমাইসকে বিবাহ করেন। জাফরের পক্ষ থেকে দুটি সন্তান জন্মলাভ করে ‘অউন ও জাফর’। পরে জাফরের শাহাদতের পরে হজরত আবু বকর তাকে বিবাহ করেন। হজরত আবু বকরের পক্ষ থেকে উম্মে কুলসুম জন্মগ্রহণ করে। আর উক্ত উম্মে কুলসুমকে হজরত উমর বিবাহ করেন। 
সুন্নি সুত্রঃ এহকাকুল হাক, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৩৭৬, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ৩১৫।

সুতরাং হে সত্যান্বেষী ! আশা করি এটা এখন ক্লিয়ার যে সে ছিল হযরত আবু বকরের মেয়ে উম্মে কুলসুম,ইমাম আলী (আঃ) এর কন্যা হযরত উম্মে কুলসুম বিনতে আলী (সাঃ আঃ) নয় যার সাথে হযরত ওমরের বিয়ে হয়।আর যে বা যারা মিথ্যাশ্রয়ী তাদের উপর আল্লাহর লানত।

নিবেদনে –
সৈয়দ হোসাইন উল হক
ইসলামিক লেখক ও গবেষক,সাহেবজাদা,সুরাবই সাহেব বাড়ি দরবার শরীফ হবিগঞ্জ।
এম-ফিল,ইসলামিক স্টাডিজ এন্ড হিস্টোরি,অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি,যুক্তরাজ্য।

জনাব ভাব পাগলা আব্দুল্লাহ
ইসলামিক লেখক ও গবেষক,জামালপুর বাংলাদেশ।

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

ইসলামে হযরত আবু তালিব আঃ এর অবদান:::::::::::::_________পর্ব (((((৩)))))_____________:::::::::::::::মহানবী (সা.) জন্মের পূর্বেই পিতাকে হারিয়েছেন। মায়ের কাছে তিনি পিতা আব্দুল্লার ইন্তেকালের কথা জানতে পেরেছেন। ছয় বছর বয়সে তিনি মাতা আমেনার স্নেহ থেকেও বঞ্চিত হন।ফলে তাঁর লালন-পালনের ভার পিতামহ জনাব আব্দুল মোতালিব গ্রহণ করেন। মাত্র দুই ছর পর তিনিও এ পৃথীবি ছেড়ে চলে গেলেন। শিশু মোহাম্মদ (সাঃ) অসহায় হয়ে পড়লেন। মহিমান্বিত আল্লাহ তাঁর হাবিবের জন্য নিজ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছেন। আট বছর বয়সে শুরু হলো নবী (সা.)-এর জীবনের এক নতুন অধ্যায় , তাঁর দায়িত্ব গ্রহণ করলেন পিতৃব্য হযরত আবু তালিব। মোহাম্মদ (সা.)-কে চাচা আবু তালিব ও চাচি ফাতেমা বিনতে আসাদ প্রাণাধিক ভালবাসতেন। মোহাম্মদ (সা.)-কে তিনি কখনো মায়ের শূন্যতা বুঝতে দেননি। নিজেদের সীমাবদ্ধতা থাকলেও মোহাম্মদ (সা.)-কে তা অনুধাবন করতে দেননি। এই মহিমান্বিত পরিবারের অকৃত্রিম ভালবাসা , আদর-যন্ন আর লালন-পালন ও ছত্রছায়ায় প্রিয় নবী (সা.)-এর শিশু , কিশোর ও যৌবনকাল অতিবাহিত হয়েছিল। জীবনের সেই সময়গুলো কত সুখময় ছিল নবী (সা.) তা বুঝতে পেরেছিলেন , যখন মাতৃসুলভ চাচি ইন্তেকাল করলেন।নবী (সা.) সেই মহিয়সী চাচিকে‘ মা’ বলেই ডাকতেন। তাঁর ইন্তেকালে নবী (সা.) দীর্ঘদিন অশ্রুসজল ছিলেন। হযরত আবু তালিব যেমনি পিতার ন্যায় স্নেহ ভালবাসা দিয়ে নবীকে আগলে রেখেছেন , তেমনি তাঁর ভরণ-পোষণ , পোশাক-পরিচ্ছেদ ও অন্যন্য প্রয়োজন মিটিয়েছেন অকৃপণ ভাবে। এমনকি নিজের সন্তানের চেয়েও নবীকে দিয়েছেন অগ্রাধিকার। নিজেরা কষ্টে থাকলেও নবী (সা.)-এর কষ্টে থাকা তিনি সহ্য করতে পারতেন না।এখানে আমি একটি হাদীস উপস্থাপন করছি: রাসূল (সা.) বলেছেন ,“ যে ব্যক্তি তার জান-মাল , ইজ্জত-সম্মান ও সন্তানসন্ততি এবং সকল মানুষের চাইতে আমাকে অধিক ভালবাসে না তার ঈমান পরিপূর্ণ নয়” । উল্লিখিত হাদীসের আলোকে প্রমাণ হয় হযরত আবু তালিব ছিলেন একজন পরিপূর্ণ ঈমানদার। একজন স্নেহবৎসল পিতা , দয়ালু চাচা ও একজন দরদি অভিভাবক। তাঁরা উভয়ই চাচা এবং ভ্রাতুষ্পুত্র একে অন্যের প্রতি এতটাই অনুরোক্ত ছিলেন যেন মনে হতো তাঁদের জীবন পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। দেশে বিদেশে হযরত আবু তালিব আঃ যেখানেই সফর করতেন নবীকে সাথে রাখতেন। যে কারণে আরবের লোকেরা মোহাম্মদ (সা.)-কে‘ আবু তালিবের ইয়াতিম’ নামেও ডাকত। ভাতিজাকে কখনও তিনি একা ছাড়তেন না , এমনকি ঘুমানো কালেও পাশে নিয়ে ঘুমাতেন এরূপে নবী (সা.)-এর 8 বছর বয়স থেকে 25 বছর বয়স পর্যন্ত সুদীর্ঘ 17 টি বছর তিনি হযরত আবু তালিবের গৃহে অবস্থান করেন।আর যেখানে এত বছর নবী (সা.) অবস্থান করলেন , সেখানে যে খাওয়া দাওয়া করেছেন তা নিশ্চই হালাল ছিল। কারণ নবী-রাসূলগণ হারাম খাদ্য গ্রহণ করেন না। তাহলে যারা বলেন ,“ আবু তালিব ঈমান আনেননি” । তারা নবী (সা.)-কে কোথায় পৌঁছালেন ? কারণ পবিত্র কোরআনে সূরা তওবার 28 নং আয়াতে আল্লাহ পাক উল্লেখ করছেন :) يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْمُشْرِ‌كُونَ نَجَسٌ(“ হে ইমানদারগন! নিশ্চই মুশরিকরা হচ্ছে অপবিত্র” ।📚📚📚📚তাই ঐ সকল ওলামাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই আপনাদের উক্তি সত্য হলে , নবী (সা.) কি 17 বছর হালাল খাদ্য গ্রহণ থেকে বঞ্চিত ছিলেন ? যা আদৌ বিশ্বাস যোগ্য নয়। পবিত্র কোরআনে আমরা জানতে পেরেছি নবী মূসা (আ.)-কে ফেরাউনের স্ত্রী আছিয়া (আ.) যখন লালন-পালনের সিদ্ধান্ত নিলেন এবং এই শিশুকে দুধ পান করানোর জন্য ধাত্রীর আহবান করলেন অতঃপর অসংখ্য ধাত্রীর আগমণ ঘটল কিন্তু কেউ শিশু মূসাকে দুগ্ধ পান করাতে সক্ষম হল না। তখন সেখানে উপস্থিত নবী মূসা (আ.)-এর আপন ভগ্নী বললেন ,“ আমি আপনাদের এমন এক ধাত্রীর সন্ধান দিতে পারি , হয়তো এই শিশু তাঁর দুগ্ধ পান করবে” । আর বাস্তবেও তাই ঘটল , অর্থাৎ আল্লাহ তাঁকে মায়ের কাছে ফিরিয়ে নিলেন এবং মায়ের দুগ্ধই পান করালেন। উক্ত ঘটনায় ইহাই প্রমানিত হয় যে , আল্লাহর মনোনীত নবী-রাসূলগণ আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত যখন যা ইচ্ছা খাদ্য কিংবা পানীয় গ্রহণ করেন না।দুঃখজনক হলেও সত্য যে , আমাদের প্রিয় নবী (সা.) সম্পর্কে কিছু সংখ্যক মুসলমান নামধারী উম্মত এমন সব প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন , যা শুনে অন্য ধর্মের অনুসারীরাও লজ্জাবোধ করেন। যেমন রাসূল (সা.)-কে সদা সর্বদা অভাবী , ক্ষুধার্ত ও অসহায় হিসেবে উপস্থাপন , তালিওয়ালা জামা পরিধারণ , রাসূল (সা.)-এর সিনাছাক করে ময়লা দূরিকরণ , রাসূল (সা.)-কে নিরক্ষর নির্ধারণ ও চল্লিশ বছর পর নবী নির্ধারণ সহ বেশ কিছু অসঙ্গতিপূর্ণ কিচ্ছা-কাহিনী আমাদের সমজে প্রচলিত আছে। অথচ পবিত্র কোরআনে বেশকিছু সংখ্যক নবীর নাম ও বর্ণনা রয়েছে , যাঁদের কারো কখনো সিনাছাক করতে হয়নি এবং কেহ নিরক্ষর ছিলেন এমন প্রমাণও নেই। তাই প্রিয় নবী (সা.)-এর উম্মত হিসাবে প্রত্যেক মুসলমানের অন্তত নূন্যতম আকিদা এই হওয়া উচিৎ ছিল যে , আমাদের সমাজে যে সকল বক্তব্য রাসূল (সা.)-এর মান-মর্যাদাকে হেয় প্রতিপন্ন করে এবং ভিন্ন ধর্মের লোকেদের কাছে রাসূল (সা.)-এর শাণ ও মানকে প্রশ্নের সন্মূখিন করে তোলে , অন্তত সে সকল প্রচার-প্রচারণা থেকে বিরত থাকা।উদহরণ স্বরুপ বলা যেতে পারে যে , ইসলামের ইতিহাসের প্রথম তিন খলিফার সন্মানিত পিতাগণ , কে কোন অবস্থানে ছিলেন বা তাঁরা প্রকাশ্যে কলেমা পড়ে ইসলামের ছায়াতলে এসেছিলেন কি না এবিষয়ে ইতিহাসে তেমন কোন আলোচনা পরিলক্ষিত হয় না। অথচ চতুর্থ খলিফার সম্মানিত পিতা সম্পর্কে যারা মর্যাদাহানীকর বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন তারা কি নিশ্চিত বলতে পারেন যে , দ্বীন ইসলাম এতে কত টুকু উপকৃত হয়েছে ?আমাদের প্রিয়নবী হযরত মোহাম্মাদ (সা.)-এর 8 বছর বয়স থেকে শুরু করে তাঁর 50 বছর বয়স পর্যন্ত সুদীর্ঘ 42 বছরের এক অকৃত্রিম অভিভাবক ছিলেন হযরত আবু তালিব। তিনি যে কেবলমাত্র নবী (সা.)-এর অভিভাবক ছিলেন এমন নয় , তিনি ছিলেন সত্য ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠাতা , কল্যানের অগ্রদূত , মজলুমের বন্ধু ও জালেমের শত্রু। নবী (সা.)-এর বিভিন্ন বক্তব্যের মাধ্যমেও তা প্রকাশ পেয়েছে।হযরত আবু তালিব সম্পর্কে কিছু লিখতে গিয়ে ক্ষুদ্র একজন লেখক হিসেবে যে বিষয়টি বারবার আমার অনুভূতিতে নাড়া দিয়েছে তা সমীপে প্রকাশ করছি।আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম খালিফা তুল বিলা ফাসাললা'নাতুল্লাহি আল্লাল কাজেবিননিবেদক______ কবির উদ্দিন

আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদদিন ওয়া আলে মোহাম্মদনবী-নন্দিনী হযরত ফাতিমা যাহরার মাহাত্ম্য যতই বর্ণনা করা হোক না তা অপূর্ণই থেকে যাবে ঠিক যেমনি জানা যায়নি তাঁর পবিত্র কবর কোথায় রয়েছে এবং তা গোপন বা অজ্ঞাত থাকার রহস্যই বা কী।তিনি কেবল সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নারী ছিলেন না। বলা হয় মহান আল্লাহর পর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হলেন মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা) এবং তাঁর পর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হলেন আমিরুল মু'মিনিন হযরত আলী (আ)। আর তাঁর পরই সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হলেন হযরত ফাতিমা। তাই এমন ব্যক্তিদের মহিমা ও মহত্ত্ব পুরোপুরি তুলে ধরা মহান আল্লাহর পর কেবল এই তিন শীর্ষ সৃষ্টির পক্ষেই সম্ভব। বলা হয় ইমাম হাসান ও হুসাইনসহ মাওলা মোহাম্মদ রাসুলুল্লাহর আহলে বাইতের ১১ জন সদস্য মা ফাতিমাকে তাঁদের জন্য আদর্শ বা হুজ্জাত বলে মনে করতেন।এমন কোনো নারীর কথা কি কল্পনা করা যায় যিনি তার দুই শিশু-সন্তানসহ তিন দিন ধরে ক্ষুধার্ত হওয়া সত্ত্বেও স্বামীকে খাবার সংগ্রহের কথা বলছেন না ইসলামের জন্য তাঁর গুরুত্বপূর্ণ কাজে মনোযোগ বিঘ্নিত হবে বলে? অথবা এমন নারীর কথা কি চিন্তা করা যায় যিনি পর পর তিন দিন শুধু পানি পান করে রোজা রাখা সত্ত্বেও ইফতারের সময় ক্ষুধার্ত সাহায্যপ্রার্থীকে খাদ্য দেয়ার জন্য সেই তিন দিন কেবল পানি দিয়েই ইফতার করেন? আসলে হযরত ফাতিমা যাহরা ছিলেন মানবজাতির চিরন্তন গৌরব ও আদর্শ মানুষের প্রতীক তথা মানবতা ও মনুষ্যত্বের পূর্ণতারঅন্যতম মডেল। এ ধরনের মানুষ পৃথিবীতে জন্ম না নিলে আদর্শের দিক থেকে মানবজাতির মধ্যে বিরাজ করতো ব্যাপক অপূর্ণতা এবং আদর্শিক শূন্যতা। মাওলা মোহাম্মদ সাঃ এর পুত্র সন্তানরা শৈশবেই ইন্তিকাল করায় মক্কার কাফিররা যখন মহানবীকে আবতার বা নির্বংশ বলে বিদ্রূপ করতো তখন মহান আল্লাহ তাঁকে দান করেন হযরত ফাতিমা যাহরা। পবিত্র কুরআনে তাঁকে উল্লেখ করা হয়েছে 'কাওসার' হিসেবে যার অর্থ মহত্ত্ব আর নেয়ামতের চির-প্রবহমান ঝর্ণা। আল্লামা ফখরুদ্দীন রাযী বলেছেন, হযরত ফাতিমার শানেই সুরা কাওসার নাযিল হয়েছে। তিনি বলেন, অনেক অত্যাচার সত্ত্বেও হযরত ফাতিমার বংশধারা পৃথিবীতে টিকে আছে, অন্যদিকে বনু উমাইয়্যা ধ্বংস হয়ে গেছে।অবশ্য পরবর্তী যুগে বনু আব্বাসও রাসূলের পরিবারের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন চালিয়েছিল। অবশেষে তারাও ধ্বংস হয়ে গেছে। যারা রাসূলের বিরুদ্ধে কথা বলত তাদের বংশধরদের কোন খবর পৃথিবীর মানুষ জানে না, নেয় না। রাসূলের বংশধরদের নিশ্চিহ্ন করার জন্য সব ধরনের চেষ্টা করেও তারা সফল হয়নি। একের পর এক রাসূলের বংশধরদের শহীদ করা সত্ত্বেও যারা পুত্রসন্তান নিয়ে গর্ব বোধ করত তাদের কোন খবর আজ বিশ্ববাসী জানে না, অথচ রাসূলের বংশধারা হযরত ফাতিমার মাধ্যমে কিয়ামত পর্যন্ত বজায় থাকবে। এ বংশেই ইমাম মাহদী (আ.) আবির্ভূত হবেন এবং তিনি সারা বিশ্বে আল্লাহর ধর্মকে প্রতিষ্ঠিত করবেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সকল নারীর সন্তানকে যুক্ত করা হয় বাবার সাথে শুধু ফাতিমা ছাড়া। ফাতিমার সন্তানদের আমার সাথে সম্পর্কিত করা হয়েছে।’আর সেজন্যই আমরা ইতিহাসে দেখতে পাই যে, হযরত ফাতিমার সন্তানদের মানুষ ‘ইয়াবনা রাসূলিল্লাহ’ অর্থাৎ ‘হে রাসূলের সন্তান’ বলে সম্বোধন করত।মহান আল্লাহর নির্দেশে মহানবী (সা.) তাঁর কন্যা সন্তানের নাম রাখেন ফাতিমা। ‘ফাত্‌ম্‌’ শব্দের অর্থ রক্ষা করা। এ সম্পর্কে মহানবী বলেন : ‘তাঁর নামকরণ করা হয়েছে ফাতিমা। কারণ, আল্লাহ তাঁকে ও তাঁর অনুসারীদের জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত রেখেছেন।’ হজরত ফাতিমা(সা) আদর্শ মানবাত্মার প্রতীকহযরত ফাতিমা ছিলেন নারী ও পুরুষ তথা গোটা মানব জাতির জন্য অসাধারণ ত্যাগ, বিশ্বস্ততা, অন্যায়ের ব্যাপারে আপোসহীনতা, সততা, দানশীলতা, ধৈর্য, চারিত্রিক পবিত্রতা, আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্টিসহ বহু মহান স্বর্গীয় গুণের আদর্শ। স্নেহময়ী জননীর মত বিশ্বনবীর সেবা-যত্ন করা এবং বিপদের সময় তাঁর সহায়তায় এগিয়ে আসার জন্য মহীয়সী নারী ফাতিমা'র অন্য একটি উপাধি উম্মে আবিহা বা পিতার জননী। বিশ্বনবী (সা:) তাঁকে সর্বযুগের শ্রেষ্ঠ নারী বলে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহর দরবারে তাঁর বিশেষ মর্যাদার কারণেই ফাতিমাকে দেখলে দাঁড়িয়ে তাকে সালাম দিতেন মহানবী (সা)। রাসুলে খোদা বলেছেন, 'ফাতিমা আমার দেহের অংশ, যা কিছু তাঁকে সন্তুষ্ট করে তা আমাকে সন্তুষ্ট করে এবং যা কিছু আমাকে সন্তুষ্ট করে তা আল্লাহকেও সন্তুষ্ট করে, আর যা কিছু ফাতিমা কে কষ্ট দেয়, তা আমাকে কষ্ট দেয়, আর যা আমাকে কষ্ট দেয়, তা আল্লাহকেও কষ্ট দেয়।' হযরত ফাতিমা বেহেশতে সর্ব প্রথম প্রবেশ করবেন বলে বিশ্বনবী উল্লেখ করেছেন। অনেকেই মনে করেন প্রিয় কন্যা ফাতিমাকে নিজের দেহের অংশ বলে মহানবী (সা) এটাও বুঝিয়েছেন যে পিতার রিসালাতের অন্যতম কাণ্ডারি ছিলেন ফাতিমা। এই মহীয়সী নারীর অনন্য ত্যাগ-তিতিক্ষা ও সেবা না থাকলে ইসলাম বিলুপ্ত হয়ে যেত।হযরত ফাতিমাকে কেউ কেউ কষ্ট দেবেন- এটা জানতেন বলেই বিশ্বনবী (সা) তাঁকে রাগানোর পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘ফাতিমা আমার অস্তিত্বের অংশ। যে তাঁকে রাগান্বিত করে সে আমাকে রাগান্বিত করে এবং ফাতিমা কোন ব্যাপারে ক্রুদ্ধ হলে আল্লাহও ক্রুদ্ধ হন এবং ফাতিমার আনন্দে আল্লাহও আনন্দিত হন।’অনেক মহৎ গুণের আদর্শ হযরত ফাতিমার রয়েছে অনেক উপাধি। যেমন, তাঁর উপাধি ছিল আস-সিদ্দিক্বা বা সত্য-নিষ্ঠ,আল-মুবারাকাহ বা বরকতপ্রাপ্ত,আত-ত্বাহিরা বা পবিত্র,আল-মারজিয়া বা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট, আজ জাকিয়া বা সতী, মুহাদ্দিসাহ বা হাদিসের বর্ণনাকারী, সাইয়্যিদাতুন নিসায়িল আলামিন বা নারীকুলের মধ্যে শ্রেষ্ঠ, খাতুনে জান্নাত বা বেহেশতি নারীদের নেত্রী, আয যাহরা বা দ্যুতিময় ইত্যাদি। আর পিতা মহানবীর প্রতি অশেষ ভালোবাসা ও সেবার কারণে তাঁকে বলা হত উম্মে আবিহা বা পিতার মাতা।হযরত ফাতিমা যখন নামাজের জন্য দাঁড়াতেন তখন তাঁর জ্যোতি আকাশের ফেরেশতা ও অন্যান্যদের দিকে ছড়িয়ে পড়ত। আর এ কারণে তাঁকে যাহরা উপাধি দেয়া হয়।রাসুল (সা)’র ওফাতের পর তাঁকে সান্ত্বনা দিতে আসতেন ওহির ফেরেশতা। ওহির ফেরেশতা তাঁকে ভবিষ্যৎ বিষয়ে অনেক কিছু জানান। আর তার থেকে সেসব বিষয় লিখে রাখেন হযরত আলী (আ)। আর এ জন্যই ফাতিমাকে বলা হয় মুহাদ্দিসা।হযরত ফাতিমা খুবই সাধারণ জীবন যাপন করতেন। সংসারের যাবতীয় কাজ তিনি নিজের হাতে করতেন। মশক দিয়ে পানি তুলতে তুলতে তাঁর শরীরে দাগ পড়ে গিয়েছিল। তিনি যাঁতার মাধ্যমে এত পরিমাণ আটা তৈরি করতেন যে, তাঁর হাতে ফোস্কা পড়ে যেত। আর সেই আটা দিয়ে রুটি তৈরি করে সেগুলো মদীনার দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করতেন। হযরত ফাতিমার কাপড়ের পোশাকে থাকতো তালি। পার্থিব কোন বস্তুই তাঁকে আকৃষ্ট করতে পারত না। আর এজন্যই রাসূল (সা.) তাঁকে ‘বাতুল’ উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন।হযরত ফাতিমা সারারাত জেগে নামায পড়তেন, মহান আল্লাহর যিকির করতেন এবং রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উম্মতের জন্য দো‘আ করতেন। তিনি এত বেশি নামায পড়তেন যে, তাঁর পা ফুলে যেত। সংসারের কাজ করার সময়ও তাঁর মুখে আল্লাহর যিকির থাকত।রাসূলের স্ত্রী হযরত উম্মে সালামাহ্ বলেন : রাসূলের ওফাতের পর ফাতিমাকে দেখতে যাই এবং তাঁর অবস্থা জানতে চাই। তিনি জবাব দিলেন : অত্যন্ত দুঃখ-কষ্টে দিন অতিবাহিত হচ্ছে।এ রকম কষ্টের মধ্য দিয়েই রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর ওফাতের অল্প কিছুদিন পরই হযরত ফাতিমা এ পৃথিবী থেকে বিদায় নেন। রাসূলে খোদা ওফাতের আগে হযরত ফাতিমার কানে কানে বলে গিয়েছিলেন যে, তিনিই তাঁর সাথে প্রথম মিলিত হবেন। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় রাসূলকে এও জানিয়েছিলেন যে, কীভাবে হযরত ফাতিমা তাঁর সাথে এত তাড়াতাড়ি মিলিত হবেন। আর সেজন্যই রাসূল (সা.) বারবার তাঁর উম্মতকে সতর্ক করছেন যে,তারা যেন হযরত ফাতিমাকে কষ্ট না দেয়,তাঁকে অসন্তুষ্ট না করে। হযরত ফাতিমা যাহরা পিতার শারীরিক বিদায়ের কারণে যতটা না দুঃখ পেয়েছিলেন তার চেয়েও বেশি ব্যথা পেয়েছিলেন পিতার আদর্শ তথা ইসলামের শিক্ষা ম্লান ও বিকৃত হয়ে পড়ার কারণে। রাসুলে খোদার কাছেই তিনি শুনেছিলেন তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের ওপর অনেক বিপদ ও মুসিবত তথা ইসলামের ওপরই অনেক দুর্যোগ নেমে আসবে। আর সেইসব বিপদ মুকাবিলার মত কঠিন ধৈর্যের খোদায়ী পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হয়েছিলেন সর্বকালের সেরা মহামানবী হযরত ফাতিমা ঠিক যেভাবে সিফফিন ও কারবালা প্রান্তরসহ যুগে যুগে নানা বিপদ, সংকট ও শত্রুতার মোকাবেলায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন বিশ্বনবী (সা)’র পবিত্র আহলে বাইতের অন্যান্য সদস্য।কোনো কোনো ঐতিহাসিক বর্ণনা অনুযায়ী রাজনৈতিক কারণে হযরত ফাতিমাকে আহত করা হয়েছিল প্রভাবশালী মহলের পক্ষ হতে এবং পরবর্তীকালে এ আঘাতজনিত কারণেই তিনি শাহাদাত বরণ করেন। ফাতিমা আমার দেহের অঙ্গ, চোখের জ্যোতি, অন্তরের ফল এবং আমার রূহস্বরূপ: মহানবী (সা)অনেকেই মনে করেন শত্রুতার প্রেক্ষাপটে হযরত ফাতিমাকে দাফন করা হয়েছিল মধ্যরাতে গোপনীয়ভাবে অতি গোপন স্থানে যা আজো গোপন রয়েছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত গোপন থাকবে। হযরত ফাতিমা জানতেন কখন তাঁর মৃত্যু হবে। আর এ জন্য তিনি নিজে গোসল করে নতুন ও পরিষ্কার পোশাক পরে কিবলামুখী হয়েছিলেন।তিনি নিজের মৃত্যু কবে হবে এবং তাঁর দুই প্রিয় সন্তান হযরত হাসান ও হুসাইন কিভাবে মারা যাবেন সেইসব তথ্যসহ ভবিষ্যৎ ইতিহাসের অনেক খবর রাখতেন। হুসাইন (আ.)'র হত্যাকারীদের অভিশাপ দিয়ে গেছেন তিনি। মদিনার নারী সমাজ ধর্মীয় বিষয়সহ নানা বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করত হযরত ফাতিমার কাছ থেকে। ফাদাক সম্পর্কিত তাঁর ভাষণ এই মহামানবীর অতুল জ্ঞান, খোদাভীরুতা এবং দূরদর্শিতাকেই তুলে ধরে।মাওলা মোহাম্মদ (সা.) বলেছেন, মহান আল্লাহ আলী, তাঁর স্ত্রী ও তাঁদের সন্তানদেরকে মানুষের জন্য হুজ্জাত বা দলিল করেছেন এবং তাঁরা হল জ্ঞানের দরজা।মহান আল্লাহর ইচ্ছায় হিজরতের দ্বিতীয় বর্ষে বা দ্বিতীয় হিজরিতে হযরত ফাতিমা যাহ্‌রা (সা.আ.) বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হন আমিরুল মু'মিনিন হযরত আলী (আ.)'র সঙ্গে। আলী (আ.) ছিলেন সত্য, ন্যায়বিচার ও খোদাভীরুতার প্রতীক। আলী (আ.)'র ঘরে তিনি হন আদর্শ স্ত্রী ও মাতা। গড়ে তোলেন বেহেশতি যুবকদের সর্দার হযরত ইমাম হাসান, ইমাম হুসাইন (আ.) এবং জাইনাব (সা.)'র মত ইসলামের ইতিহাসের প্রবাদতুল্য গৌরব সৃষ্টিকারী অনন্য সন্তান। বিয়ের দিন এক দরিদ্র নারী নবী-নন্দিনীর কাছে পোশাক সাহায্য হিসেবে চাইলে তিনি নিজের বিয়ের জন্য তৈরি নতুন পোশাকটি তাকে দান করে দেন। এর মাধ্যমে তিনি কুরআনের এই আয়াতটি বাস্তবায়ন করেছিলেন যেখানে সর্বোত্তম ও প্রিয় বস্তু থেকে দান করতে বলা হয়েছে। ফাতিমা যাহ্‌রা (সা.আ.) মুসলিম সমাজের বিচ্যুতি ঠেকানোর জন্য ও সত্যের জন্য সংগ্রামের সামাজিক দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রেও নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হন। নারীমুক্তির আদর্শ হিসেবে এই মহামানবীর জন্মদিন ইরানসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে পালিত হয় নারী ও মা দিবস হিসেবে। মাওলা হযরত মুহাম্মাদ (সা:) হযরত ফাতিমা (সা:) সম্পর্কে বলেছেন, ফাতিমা আমার দেহের অঙ্গ, চোখের জ্যোতি, অন্তরের ফল এবং আমার রূহস্বরূপ। সে হচ্ছে মানুষরূপী স্বর্গীয় হুর। প্রসিদ্ধ হাদীস গ্রন্থ বুখারীতে এসেছে, মহানবী (সা:) বলেছেন, ফাতিমা আমার অংশ। যে কেউ তাকে অসন্তুষ্ট ও ক্রোধান্বিত করলো সে আমাকেই অসন্তুষ্ট ও ক্রোধান্বিত করলো। একই ধরনের হাদীস বর্ণিত হয়েছে মুসলিম শরীফ ও আহমদ ইবনে শুয়াইব নাসায়ীর ফাজায়েল গ্রন্থসহ আরো অনেক হাদীস গ্রন্থে। হাদীসে এটাও এসেছে যে যা আল্লাহর রসূল (সা:)কে অসন্তুষ্ট করে তা আল্লাহকেও অসন্তুষ্ট বা ক্রুদ্ধ করে। হযরত ফাতিমা (সা:)'র উচ্চতর মর্যাদা উপলব্ধি করার জন্য কেবল এ হাদীসই যথেষ্ট। বিশ্বনবী (সা:)'র আহলে বাইত (আঃ)'র সদস্য হযরত ফাতিমা যে নিষ্পাপ ছিলেন তাও এসব বর্ণনা থেকে স্পষ্ট। হযরত ফাতিমা (সা:)'র সান্নিধ্য ও সেবা না পেলে আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী (আঃ)'র জীবনও পুরোপুরি বিকশিত ও পরিপূর্ণতা লাভ করতো না। তাঁরা ছিলেন একে-অপরের প্রতি পুরোপুরি সন্তুষ্ট। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা:) হযরত ফাতিমা (সা:)-কে মানুষের আকৃতিতে ফেরেশতা বলেও প্রশংসা করেছেন। তিনি বলতেন, আমি যখনই বেহেশতের সুবাস পেতে চাইতাম তখনই কন্যা ফাতিমার ঘ্রাণ নেই।আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগী করা ছাড়াও প্রায়ই রোজা রাখা ও গরীব-দুঃখীকে অসাধারণ মাত্রায় দান-খয়রাত করা ছিল হযরত ফাতিমা (সা:)'র একটি বড় বৈশিষ্ট্য। জনসাধারণ বা কারো উদ্দেশ্যে যে কোনো বক্তব্য রাখার আগে দীর্ঘক্ষণ ধরে মহান আল্লাহর বিভিন্ন নেয়ামতের কথা খুব সুন্দর ও হৃদয়স্পর্শী ভাষায় তুলে ধরে আল্লাহর প্রশংসা করা ছিল তাঁর অন্য একটি বড় বৈশিষ্ট্য। বিশ্বনবী (সা:)'র আহলে বাইতের অন্য সদস্যদের মত তিনিও কখনও অন্যায়ের সাথে আপোষ করেন নি। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করা বা সক্রিয় থাকার মধ্যে তিনি খুঁজে পেতেন আনন্দ। হযরত ফাতিমা (সা:) বলেছেন, আল্লাহর সেবায় মশগুল হয়ে যে সন্তুষ্টি পাই তা আমাকে অন্য সব সন্তুষ্টি বা আনন্দ থেকে বিরত রাখে এবং সব সময় মহান আল্লাহর সুন্দর দৃষ্টি আমার দিকে নিবদ্ধ রাখার প্রার্থনা ছাড়া আমার অন্য কোনো প্রত্যাশা নেই। ফাতিমা সিদ্দিকা (সা. আ.) ঐশী পন্থায় অনেক জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। 'মাসহাফই ফাতিমা' নামে খ্যাত গ্রন্থটির সমস্ত তথ্য সন্নিবেশিত হয়েছে জিবরাইল ফেরেশতার সঙ্গে ফাতিমা (সা. আ.)'র কথোপকথনের মাধ্যমে যা লিখে গেছেন হযরত আলী (আ.)। রাসূল (সা.)'র মৃত্যুর পর পিতার বিয়োগ-ব্যথায় কাতর ফাতিমাকে সান্ত্বনা দিতে আসতেন স্বয়ং জিবরাইল (আ.)। হযরত ফাতিমা ইমাম হুসাইন (আ.)'র হত্যাকারীদের অভিশাপ দিয়ে গেছেন। মদিনার নারী সমাজ ধর্মীয় বিষয়সহ নানা বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করত ফাতিমা (সা.আ.)'র কাছ থেকে। ফাদাক ও মানজিল শীর্ষক তাঁর ভাষণ এই মহামানবীর অতুল জ্ঞান, খোদাভীরুতা এবং দূরদর্শিতাকেই তুলে ধরে।নবী-নন্দিনী (সা:) বলেছেন, পৃথিবীতে তিনটি জিনিস আমার খুবই প্রিয়। আল্লাহর পথে ব্যয়, রাসূলে খোদা (সা:)র চেহারার দিকে তাকানো এবং কুরআন তিলাওয়াত। পবিত্র কুরআনের আয়াত শ্রবণ মুসলমানদেরকে মুক্তির তীরে পৌঁছে দেয়। ফাতিমা (সা. আ.) রাসূল (সা.)'র উম্মতের উদ্দেশে বলেছেন: আল্লাহ ঈমানকে তোমাদের জন্য শির্ক হতে পবিত্র হওয়ার ও নামাজকে অহংকার থেকে পবিত্র হওয়ার এবং আমাদের আনুগত্য করাকে ধর্মের ব্যবস্থায় বা ধর্মকে প্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যম করেছেন, আমাদের নেতৃত্বকে অনৈক্যের পথে বাধা ও আমাদের সঙ্গে বন্ধুত্বকে ইসলামের জন্য সম্মানের মাধ্যম করেছেন। ফাতিমা বা তাঁর বংশধরদের কেউই ঐশী সম্মানকে পার্থিব ভোগের কাজে লাগান নি। আত্মত্যাগের বিশালত্বে ফাতিমা এবং তাঁর বংশধররা ইতিহাসে অনন্য। ফাতিমার ত্যাগের শিক্ষাই হল কারবালার শিক্ষা। এ শিক্ষা আজও জুলুম-নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের আদর্শ। সত্যকে জানতে হলে, স্রষ্টার পথ চিনতে হলে এবং স্বাধীন ভাবে বেঁচে থাকতে হলে ধরতে হবে হযরত ফাতিমার পথ। তাই হজরত ফাতিমা(সা) আদর্শ মানবাত্মার প্রতীকবেশুমার লানত বর্ষিত হোক দুশমনে আহলে বায়েত পারআল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদদিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম31=12=202