রাসুলের (সাঃ) ইন্তেকাল পরবর্তী ইমামত এবং খেলাফত ।আল হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন ।সেই মহান সৃষ্টিকর্তার শুকরিয়া করছি যিনি তাঁর অগনিত নেয়ামত সমূহের মধ্যে থেকে অন্যতম নেয়ামত হিসেবে “ইমামত” পদ্বতির মত পবিত্র একটি নেয়ামত আমাদের দান করেছেন যার মাধ্যমে পথহারা পথিক সঠিক পথের দিশা পায় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে ইহকাল এবং পরকালে চিরমুক্তি পায় ।প্রিয় পাঠক ,এখানে ছোট একটি প্রশ্নের অবসান করা দরকার ।অনেকেই মনে করেন যে , খলীফা ও ইমাম ভিন্ন জিনিষ । অনেকে এটাও মনে করেন যে , ইহজগতে মানুষকে শাসন করার জন্য খেলাফাত পদ্বতির প্রয়োজন এবং ধর্মীয় নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য ইমামত পদ্বতির প্রয়োজন আছে ।কিন্তু প্রকৃত বিষয় হচ্ছে উভয়ই এক ও অভিন্ন । আল্লাহর নির্দেশে রাসূলের (সাঃ) ঘোষিত প্রতিনিধিগণই হলেন খলীফা এবং একইসাথে সমগ্র মানবজাতির ইমাম বা নেতা ।অর্থাৎ আমাদের নেতা বা ইমামগণ হলেন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সাঃ) প্রতিনিধি বা খলীফা । কাজেই দেখা যাচ্ছে যে , রাসূলের (সাঃ) রেখে যাওয়া খেলাফত অতি অবশ্যই ইমামতের মধ্যেই অন্তরর্নিহিত !এর জন্য ভিন্ন কোন চিন্তা বা ধারনা তৈরী করা হলে সেটা হবে ব্যক্তি , গোষ্ঠী বা মানুষের দ্বারা সৃষ্টিকৃত যা পবিত্র কোরআন ও হাদিস পরীপন্থী এবং মোটেও আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাঃ) কতৃক অনুমোদিত ও স্বীকৃত নয় ।নিম্নে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনাতে মনযোগ দেওয়ার জন্য বনীত আবেদন করছি ।সর্বশক্তিমান আল্লাহর চিরন্তন বিধান হচ্ছে , মানবজাতিকে সঠিক পথে পরিচালনার জন্য যুগে যুগে তাঁর প্রতিনিধি বা খলীফা প্রেরণ করা । এই ধারা নবী রাসূল আগমনের মাধ্যমে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) পর্যন্ত জারী ছিল ।“ – এটাই আল্লাহর বিধান যা পূর্ব থেকে চলে আসছে এবং তোমরা কখনই পাইবে না আল্লাহর বিধানে কোন পরিবর্তন — “ ।সুরা – ফাতহ / ২৩ ।পবিত্র কোরআনের আলোকে যদি আমরা এ বিষয়ে চিন্তা করি তাহলে দেখতে পাব যে , মুসলমানদের জাতির পিতা হযরত ইব্রাহীম (আঃ) ।মহান আল্লাহ হযরত ইব্রাহীমকে (আঃ) সমগ্র মানবজাতির ইমাম বা নেতা নিযুক্ত করেছিলেন ।“ – এবং যখন ইবরাহীমের প্রভু তাকে পরীক্ষা করলেন সুনিদিষ্ট কিছু কথা দিয়ে এবং সেগুলো সে সম্পাদন করল , তিনি বললেন , “আমি তোমাকে মানবজাতির ইমাম বানিয়ে দিচ্ছি ।” সে বলল , “আর আমার বংশধর থেকেও?” তিনি বললেন , আমার অঙ্গীকার জালিমদের নিকট পৌঁছায় না —– “ ।সুরা – বাকারা / ১২৪ ।হযরত ইব্রাহিম (আঃ) একজন রেসালাত প্রাপ্ত নবী ও রাসুল হওয়া সত্ত্বেও আরও কয়েকটি বিষয়ে পরীক্ষার মাধ্যমে কৃতকার্য হয়ে ইমামতের স্তরে পৌঁছেছেন ! এবং এ ইমামতের ধারা কেয়ামত পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে মহান আল্লাহ নিজে ঘোষনা বা ওয়াদা) করেছেন ।তবে হ্যা ! হযরত ইব্রাহিমের (আঃ) বংশের জালিমদের বেলায় ইমামতের ধারা প্রযোজ্য নহে ।একদিকে আল্লাহ ওয়াদা দিচ্ছেন অপরদিকে তাঁর ওয়াদার নিশ্চয়তা ও দৃঢ়তা গ্রহণকল্পে ঘোষণা করে জানিয়ে দিচ্ছেন ,” — সুতরাং তুমি আল্লাহ সম্পর্কে কখনই এইরুপ ধারনা কর না যে , তিনি তাঁর রাসুলদের সাথে সম্পাদিত প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করবেন । নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী , প্রতিশোধ গ্রহণকারী —- ” ।সুরা – ইবরাহীম / ৪৭ ।এখানে উল্লেখ্য যে , নবী-রাসুলগনের মনোনয়ন এবং নির্বাচনের ক্ষেত্রে মানুষের সামান্যতম এখতিয়ার নেই । ঠিক একইভাবে ইমামগনের মনোনয়ন এবং নির্বাচনের ক্ষেত্রেও মানুষের সামান্যতম এখতিয়ার নেই । ইমামত মনোনয়ন এবং নির্বাচনের বিষয়টি সম্পূর্ণই আল্লাহর একক ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল ।তাই এ প্রসঙ্গে আল্লাহ অত্যন্ত পরিস্কার করে বলেন —” —- তোমার প্রতিপালক যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন ও যাকে ইচ্ছা তাকেই মনোনীত করেন । এতে তাদের কোন ক্ষমতা নেই —– ” ।সুরা – কাসাস / ৬৮ ।“ – আমরা তাদেরকে ইমাম নির্বাচিত করেছিলাম আমাদের আদেশ অনুসারে হেদায়েত করতেন — “ ।সুরা – আম্বিয়া / ৭৩ ।“ – এবং তাদের মধ্যে আমরা নিয়োগ দিয়েছিলাম ইমামদের যারা আমাদের আদেশে পথ দেখায় — “ ।সুরা – সাজদাহ / ২৪ ।তারপর আল্লাহ এরশাদ করেন ,” —- এটাই আল্লাহর পথ ! স্বীয় বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তাকেই তিনি এর দ্বারা সৎ পথে পরিচালিত করেন…..। “সুরা – আনআম / ৮৮ ।মহান আল্লাহ সমগ্র মানবজাতিকে সঠিক দিক নির্দেশনা দেয়ার জন্য যুগে যুগে নবী-রাসুল প্রেরন করেছেন । যেহেতু তাঁদের প্রত্যাগমণের ধারার সমাপ্তি ঘটেছে সেহেতু মানবজাতি কি অন্ধকার পথে থাকবে ?সহজ জবাবটি হচ্ছে — কখনই নহে ।আল্লাহ বলেন ,” — এরা সেসব লোক যাদের আমরা গ্রন্থ , নির্দেশ ও নবুয়ত দান করেছিলাম । এখন যদি এসব লোক (কাফেরগন) নবুয়ত অস্বীকার করে তবে আমরা এই বিষয়ের দায়িত্ব এমন এক সম্প্রদায়ের উপর ন্যস্ত করেছি যারা সেটাকে অবিশ্বাস করে না —– ” ।সুরা – আনআম / ৮৯ ।পবিত্র কোরআনে বর্নিত এই আয়াতে এই বিশেষ বিষয়টি অত্যন্ত সুস্পষ্ট তা হল , নবুয়তের ধারা শেষ হওয়ার পরে পরবর্তী কোন এক জাতির প্রতি ইঙ্গিত করা হচ্ছে যারা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারণ করা । এই বিষয়টি আমলে নিয়ে সার্বিক দিক বিবেচনা করলে ইমামতের আনুগত্য ছাড়া অন্য কিছুই দৃশ্যমান হয় না ।যা নিম্নে খুবই সংক্ষেপে আলোচনা করা হচ্ছে ।নবুয়ত ধারার সমাপ্তির পরে সমগ্র মানবজাতির হেদায়েত ও পরিচালনার জন্য আল্লাহ্ কাদেরকে নির্বাচন করেছেন এ ব্যাপারে আল্লাহ বলছেন ।“ — নিশ্চয়ই আল্লাহ মনোনীত করেছেন আদম ও নূহকে এবং ইবরাহীমের বংশকে এবং ইমরানের বংশকে সমস্ত জাতির উপর —” ।সুরা – আলে ইমরান / ৩৩ ।পবিত্র কোরআন ও ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে যে , হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) পর্যন্ত যত নবী-রাসূল এসেছেন , সবাই ইব্রাহীমের (আঃ) পবিত্র বংশ থেকেই এবং কেয়ামত পর্যন্ত যত হাদী আসবেন তাঁরাও ইব্রাহীম (আঃ) তথা মুহাম্মদের (সাঃ) পবিত্র বংশ হতে , এটা পবিত্র কোরআনেরই চুড়ান্ত সিদ্বান্ত ।সুতরাং নবুয়ত ধারা সমাপ্তির পরে ইমামত একমাত্র রাসুলের (সাঃ) পুতঃপবিত্র বংশধরদের জন্য জন্যই মনোনীত ।পূর্বোক্ত আলোচনা সমূহের ভিত্তিতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে , বিশ্বনবীর (সাঃ) ইন্তেকালের পর ইসলামী উম্মতের মাঝে আল্লাহর পক্ষ থেকে মনোনীত ইমাম বা নেতার অস্তিত্ব ছিল এবং থাকবে ।এ ব্যাপারে বিশ্বনবী (সাঃ) থেকে অসংখ্য হাদিস রয়েছে যার কতিপয় হাদিস নিম্নে তুলে ধরা হল ।যাবের বিন সামরাতেন বলেন , রাসুলকে (সাঃ) বলতে শুনেছি যে , “বারজন” প্রতিনিধি আর্বিভাবের পূর্ব পর্যন্ত এই অতীব সম্মানীত ধর্মের সমাপণ ঘটবে না । যাবের বললেন , জনগণ তাকবির ধ্বনিতে গগন মুখরিত করে তুলল । অতঃপর রাসুল (সাঃ) আস্তে কিছু কথা বললেন ।আমি আমার পিতাকে বললাম , কি বললেন ?পিতা বললেন , রাসুল (সাঃ) বললেন , তারা সবাই “কুরাইশ বংশের” হবেন ।সূত্র — সহীহ আল বুখারী , খন্ড -৬, হাদিস -৬৭১৬- (আধুনিক) / সহীহ আল বুখারী, খন্ড-৬, হাদিস -৩২৪২-(ইসলামিক ফাউন্ডেশন) / সহীহ আল বুখারী, খন্ড-৬, হাদিস-৭২২২-আহলে হাদিস লাইব্রেরী থেকে প্রকাশিত / সহীহ আল মুসলিম, খন্ড-৫, হাঃ-৪৫৫৪, ৪৫৫৫, ৪৫৫৭, ৪৫৫৮, ৪৫৫৯- (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) / আবু দাউদ, খঃ-৫, হাঃ-৪২৩০, ৪২৩১-ইঃ ফাঃ; তিরমিজি, খঃ-২, পৃঃ-৪৫, মুসনাদে আহম্মদ খঃ-১, পৃঃ-৩৯৮, খঃ-৫, পৃঃ-৮৬, ১০৫-আরবী; মুয়াদ্দাতুল কুরবা, পৃঃ-৯৭, আরজাহুল মাতালেব, পৃঃ-৫৮৮-উর্দু; মুস্তাদারাক হাকেম, খন্ড-৩, পৃঃ-৬১৭-১৮-ভারত / তারিখে বাগদাদ, খন্ড-১৪, পৃঃ-৩৫৩, হাদিস-৭৬৭৩-আরবি / মুনতাখারা কানজুল উম্মাল, খন্ড-৫, পৃঃ-৩১২-হায়দারাবাদ / তারিখ আল খোলাফা, পৃঃ-১০-আরবি / আস সাওয়ায়েকে আল মুহরেকা, ১৮৯-আরবি / ইয়া নাবিয়ুল মুয়াদ্দাত, পৃঃ-৬৯৭-উর্দু / কানজুল উম্মাল, খন্ড-১২, পৃঃ-১৬৫, হাদিস-৩৪৫০১ ।রাসুল (সাঃ) বলেন , ‘আমার পরে “১২জন” ইমাম পর্যন্ত ইসলাম সমুন্নত থাকবে এবং তারা “কুরাইশ” বংশ থেকে’ ।সূত্র – সহীহ আল বুখারী, হাদিস-৬৭১৬; ৬৭৯৬ ।হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) নবী (সাঃ) এর বিশিষ্ট সাহাবী বর্ণনা করেন যে , আমি মহানবীকে (সাঃ) জিজ্ঞাসা করলাম যে , আপনার ইন্তেকাল পরবর্তীকালে কতজন নেতা (ইমাম) হবেন ?নবী (সাঃ) বললেন যে, “বনী ইসরাইলের খতিবদের ন্যায় বারোজন হবে”। সুত্র – ইয়া নাবিয়ুল মুয়াদ্দাত, পৃঃ-৪১৫ / সাওয়ায়েকে মুহরেকা, পৃঃ-১৩, (মিশর) / মুয়াদ্দাতুল কুরবা, পৃঃ-৯৬ ।“আমার পর বারোজন নেতা হবেন । তাঁরা সবাই বনি হাশেমগণের মধ্যে হতে হবেন” ।নবী (সাঃ) আবার অন্য এক হাদিসে বলেছেন যে, আমার পর “বারজন নেতা হবেন” তাঁরা সবাই “বনি হাশিমের” মধ্য হতে হবেন ।সুত্র – ইয়া নাবিয়ুল মুয়াদ্দাত, পৃঃ-৪১৬ ( উর্দু) ।অন্য একটি হাদিস – সালমান ফারসী (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে , তিনি বলেন , এমতাবস্থায় রাসুলের (সাঃ) নিকট উপস্থিত হলাম যে যখন হোসাইন (আঃ) তাঁর ঊরুর উপর ছিল এবং তিনি তাঁর চোখ ও ওষ্ঠতে চুম্বন দিচ্ছেন আর বলছেন যে , তুমি সাইয়্যেদের সন্তান সাইয়্যেদ এবং তুমি ইমামের সন্তান ইমাম , তুমি ঐশী প্রতিনিধির সন্তান ঐশী প্রতিনিধি । আর তুমি নয়জন ঐশী প্রতিনিধিরও বাবা , যাদের নবম ব্যক্তি হলেন কায়েম (ইমাম মাহদী) ।”সূত্র – ইয়ানাবী-উল্-মুয়াদ্দাহ্, (সুলাইমান বিন ইব্রাহীম কান্দুযি) ৭ম মুদ্রণ, ৩০৮ নং পৃষ্ঠা ।হাদিসে এসেছে নবী (সাঃ) বলেছেন যে , “দ্বীন ইসলাম ধ্বংস হবেনা কিয়ামত পর্যন্ত অথবা বারজন খলীফার আগমন পর্যন্ত , তাদের মধ্যে সর্বপ্রথম হচ্ছেন আলী ইবনে আবু তালিব অতঃপর হাসান তারপর হোসাইন (আঃ) তারপর মুহাম্মদ ইবনে আলী , আলী ইবনে মুহাম্মদ , হাসান ইবনে আলী এবং তাদের সর্ব শেষ হচ্ছেন আল মাহদী (আঃ) ”।সূত্র — সহীহ আল মুসলিম , ৬ষ্ঠ খণ্ড , পৃ- ৩-৪ / সহীহ আল বুখারী , ৪র্থ খণ্ড , পৃ- ১৫৬ / ইয়ানাবিউল মুয়াদ্দাহ , ১ম খণ্ড , পৃ- ৩৪৯ / সহীহ আত তিরমিযি ৩য় খণ্ড , পৃ- ৩৪২ / সুনানে আবু দাউদ , ৩য় খণ্ড , পৃ- ৩০২ / কানযূল উম্মাল , ১২তম খণ্ড ,পৃ- ১৬৫ ।এই প্রসঙ্গে রাসুল (সাঃ) আরও বলেছেন —প্রসিদ্ব আহলে সুন্নাত এর পন্ডিত শায়খ সুলাইমান কান্দুজী হানাফী তুর্কি কতৃক রচিত তার প্রসিদ্ব গ্রন্থ ইয়ানাবিউল মুয়াদ্দাত নামক গ্রন্থে বর্ননা করেছেন যে ,নাছাল নামক একজন হিহুদী মহানবীর (সাঃ) নিকট আরজ করলেন যে ,ইয়া রাসুল (সাঃ) ! আপনাকে কয়েকটি প্রশ্ন করতে চাই যা কিছুদিন ধরে আমার মনকে অশান্ত রাখছে । কথা দিচ্ছি , আপনার জবাব যদি সঠিক হয় তাহলে আমি ইসলাম ধর্ম গ্রহন করব ।নবী (সাঃ) বললেন , হে আবু আম্মারা , তুমি প্রশ্ন করে যাও , কোন সমস্যা নাই ।অনুমতি পেয়ে ঐ ব্যক্তি প্রশ্ন শুরু করল ।প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরে সে খুবই সন্তষ্ট হল এবং বলল যে , আপনি খুবই সঠিক জবাব দিয়েছেন ।প্রশ্নের এক পর্যায় সে জিজ্ঞাসা করল যে , আমাকে বলে দিন , আপনার ইন্তেকালের পরে কে আপনার উত্তরাধিকারী হবে ?কেননা আজ পর্যন্ত কোন নবী বা রাসুল তাঁর পরবর্তী উত্তরসূরীর নাম পরিচয় না বলে এই পৃথিবী ত্যাগ করেন নাই । যেমন আমাদের নবী হযরত মুসা (আঃ) বলে গেছেন যে , তাঁর অবর্তমানে হযরত ইউসা বিন নুন হলেন তাঁর উত্তরসূর বা স্থলাভিষিক্ত ।মহানবী (সাঃ) বললেন যে , “আমার পরে আমার উত্তরসূরী বা স্থলাভিষিক্ত হচ্ছে আমার ভাই হযরত আলী ইবনে আবু তালিব এবং তাঁর পর আমার দুই সন্তান হাসান ও হোসাইন , অতঃপর কেয়ামত পর্যন্ত অবশিষ্ট নয়জন ইমাম হোসাইন এর বংশ থেকে আগমন করবেন ।লোকটি বলল , “ইয়া মুহাম্মাদ (সাঃ) , দয়া করে অবশিষ্ট নয়জনের নাম বলে দিন” ।নবীজী (সাঃ) বললেন যে ,“হোসাইনের ইন্তেকালের পর তাঁর পুত্র জয়নুল আবেদীন হবে ,জয়নুল আবেদীনের অন্তধানের পর তাঁর স্বীয় পুত্র মোহাম্মাদ বাকের হবে ,মোহাম্মাদ বাকেরের ইন্তেকালের পর তাঁর পুত্র জাফর সাদিক হবে ,জাফর সাদিকের তিরোধানের পর তাঁর পুত্র মুসা কাজেম হবে ,মুসা কাজেমের ইহলোক ত্যাগের পর তাঁর পুত্র আলী রেজা হবে ,আলী রেজার ইন্তেকালের পর তাঁর পূত্র মুহাম্মাদ তাক্বী হবে ,মুহাম্মাদ তাক্বীর তিরোধানের পর তাঁর পূত্র আল নাক্বী হবে ,আল নাক্বীর ইহলোক ত্যাগের পরে তাঁর পূত্র হাসান আসকারী হবে ,হাসান আসকারীর ইন্তেকালের পর তাঁর পূত্র ইমাম মাহদী হবে সর্বশেষ বারতম ইমাম ।তাঁরা আল্লাহর হুজ্জাত বা জমিনের বুকে অকাট্য দলিল ।”এই জবাব পেয়ে পরক্ষনেই ঐ হিহুদী লোকটি মহানবীর (সাঃ) নিকট ইসলাম ধর্ম গ্রহন করলেন ।সূত্র – ইয়া নাবিউল মুয়াদ্দাত ,পৃ-৪৪১ (বৌরুত) / ইয়া নাবিউল মুয়াদ্দাত , পৃ- ৬৯১-৬৯৪ ( লাহোর,উর্দু) / ফারায়েদ নি , খন্ড-২ , পৃ- ১৩৩ , ৩১২ / সিয়ারানীও আল ইয়াওয়াক্বিত ওয়াল জওয়াহীর , খন্ড- ৩ পৃ- ৩২৭ / ইয়ানাবিউল মুয়াদ্দাত – পৃঃ-৪২৭ (বৈরুত) / ইবনে আরাবী – ইবক্বাউল ক্বাইয়্যিম-২৬৬ / অধ্যায়ে , মানাকেবে ইবনে শাহার আশুব,খঃ-১, পৃঃ-২৮২ / রাওয়ানে যাভেদ, খঃ-২, পৃঃ-৭২ / কিফায়া আল আসার, খঃ-৭, পৃঃ-৭; (পুরোনো প্রিন্ট) / কিফায়া আল আসার, পৃঃ-৫৩, ৬৯; (কোম প্রিন্ট) / গায়াতুল মারাম, খঃ-১০, পৃঃ-২৬৭; ইসবাতুল হুদা, খঃ-৩, পৃঃ-১২৩ / নাযালুল আবরার , পৃঃ ১৭৪-১৭৫ / ইরাক থেকে মুদ্রিত , নুরুল আবছার / ফুসুলুল মুহিম্মা / মাতালিবুস সুউল ফী মানাকিবে আলে রাসূল, পৃঃ ৮৯; মিশর থেকে প্রকাশিত / ফারায়িদুস সিমতাইন ।সুপ্রিয় পাঠক ,“– স্মরন কর , সেদিনের ( কিয়ামত) কথা , যখন আমি সকল মানুষকে তাদের ইমামসহ আহবান করিব –” ।সুরা – বনী ঈসরাইল / ৭১ ।মহান আল্লাহ কতৃক নির্বাচিত ইমামত পদ্বতির প্রসংঙ্গে মহানবী (সাঃ) বলেন যে , “যে ব্যক্তি তার নিজের যুগের ইমামের মারফত বা না চিনে মৃত্যুবরন করল , সে জাহেলিয়াতেের মৃত্যুবরন করল” ।সূত্র – সহীহ মুসলিম , খন্ড-২ ,পৃ- ১২৮ / মুসনাদে হাম্বল , খন্ড-৪ , পৃ-৯৬ / সহীহ আল মুসলিম , হাদিস আরবী-১৮৫১ , বাংলা-৪৬৪১ / সহীহ ইবনে হাব্বান , জামেয়া বাইনা সহীহ / সহীহ মুসলিম , খন্ড – ৩ , হাদিস – ১৮৫১ (লেবানন) / কানজুল উম্মাাল , খন্ড – ১ , পৃ- ১০৩ / ইয়ানাবিউল মুয়াদ্দাত , পৃ- ১৮৯ (উর্দ্দু) / মাজমা আজ জাওয়াইদ , খন্ড – ৫ , পৃ- ২১৮ / তাফসীরে ইবনে কাসির , খন্ড – ১ , পৃ- ৫১৭ (মিশর) / আস সুনান আল কুবরা , খন্ড – ৮ , পৃ- ১৫৬ / আল মুসনাদ , খন্ড – ৪ , পৃ- ৯৬ (মিশর) / জাওয়াহির আল মুদিয়া , খন্ড – ২ , পৃ- ৪৫৭ / শারাহ আল মাকাসিদ , খন্ড – ২ , পৃ- ২৭৫ / হিলিয়াতুল আউলিয়া , খন্ড – ৩ , পৃ- ২২৪ / মারেফাতে ইমামত ও বেলায়েত , পৃ- ১৫৬ ।১২ ইমাম সম্পর্কে রাসুলের (সাঃ) যে হাদিসটি বিস্তারিতভাবে পাওয়া যায় , ষষ্ঠ ইমাম সাদেক (আঃ) থেকে স্পষ্ট বর্ণিত হয়েছে ।তিনি সালমান ফার্সি (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে , রাসূল (সঃ) বলেছেন ,“আমি রাসুলের (সাঃ) কাছে উপস্থিত হলাম , তিনি আমার দিকে তাকালেন এবং বললেন , ‘হে সালমান , আল্লাহ কোন নবী বা রাসুলকে পাঠান না যদি তার সাথে থাকে ১২ জন’।‘ইয়া রাসুলুল্লাহ , আমি তা দুই কিতাবের লোকদের কাছ থেকে জেনেছি’।‘হে সালমান , তুমি কি আমার ১২ জন সর্দারকে চেনো , যাদেরকে আল্লাহ আমার পরে ইমাম হিসেবে নির্বাচন করেছেন ?’‘আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাঃ) ভাল জানেন ।’‘হে সালমান , আল্লাহ আমাকে সৃষ্টি করেছেন পবিত্রতম আদি নুর থেকে এবং আমাকে ডাকলেন এবং আমি তার আদেশ মানলাম ।এরপর তিনি আলীকে (আঃ) আমার নুর থেকে সৃষ্টি করলেন এবং তিনি তাকে ডাকলেন এবং সে আদেশ মানলো ।আমার নুর ও আলীর নুর থেকে তিনি সৃষ্টি করলেন ফাতিমাকে (সাঃআঃ) । তিনি তাকে ডাকলেন এবং সে আদেশ মানলো ।আমার , আলীর (আঃ) ও ফাতিমার (সাঃআঃ) নূর থেকে সৃষ্টি করলেন আল হাসান (আঃ) ও আল হোসাইনকে (আঃ) ।তিনি তাদের ডাকলেন এবং তাঁরা তাঁর আদেশ মানলো ।আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর ৫টি নাম থেকে নাম দিয়েছেন ।আল্লাহ হলেন আল মাহমুদ (প্রশংসিত) এবং আমি মুহাম্মাদ (প্রশংসার যোগ্য) ।আল্লাহ হলেন আল আলী (উচ্চ) এবং এ হলো (আঃ) যে উচ্চ প্রশংসনীয় ,আল্লাহ হলেন ‘আল ফাতির যিনি শুন্য থেকে সৃষ্টি করেন এবং এ হল ফাতিমা (সাঃআঃ) ।আল্লাহ হলেন তিনি যার কাছে আছে হাসান অন্যের জন্য কল্যান এবং এ হল হাসান (আঃ) ।আল্লাহ হলেন মুহাসসিন পরম সুন্দর এবং এ হল হুসাইন (আঃ) ।তিনি ৯ জন ইমামকে সৃষ্টি করলেন আল হুসাইনের (আঃ) নুর থেকে এবং তাদেরকে ডাকলেন এবং তারা তাঁর আদেশ মানলো ।আল্লাহ উঁচু আকাশ , বিস্তৃত পৃথিবী , বাতাস , ফেরেশতা ও মানুষসহ সমগ্র সৃষ্টিজগত সৃষ্টি করার পূর্ব থেকেই আমরা ছিলাম নূর । যারা তাঁর প্রশংসা করত , তাঁর কথা শুনতো এবং তাঁকে মেনে চলতো ।’‘ইয়া রাসুলুল্লাহ (সঃ), আমার বাবা ও মা আপনার জন্য উৎসর্গ হোক , ঐ ব্যক্তির জন্য কি আছে যে এ ব্যক্তিদের, সেভাবে স্বীকৃতি দেয় যেভাবে তাঁদের স্বীকৃতি দেয়া উচিত ?’‘হে সালমান , যেই তাদের স্বীকৃতি দেয় যেভাবে দেওয়া উচিত এবং তাঁদের উদাহরন অনুসরন করে , তাঁদের সাথে বন্ধুত্ব রাখে এবং তাঁদের শত্রুদের কাছ থেকে মুক্ত থাকে , মহান আল্লাহর শপথ , সে আমাদের একজন । সে সেখানে ফেরত আসবে যেখানে আমরা ফেরত আসবো এবং সে সেখানে থাকবে যেখানে আমরা আছি ।’‘ইয়া রাসুল (সাঃ) ! তাঁদের নাম ও বংশধারা জানা না থাকলে কি বিশ্বাস আছে ?’‘না , সালমান ।’‘হে আল্লাহর রাসুল, আমি তাঁদের কোথায় পাব ?’‘তুমি ইতিমধ্যেই আল হুসাইনকে (আঃ) জেনেছো , এরপর আসবে ইবাদাতকারীদের সদার আলী ইবনুল হুসাইন (যায়নুল আবেদীন) (আঃ), এরপর তার পুত্র মুহাম্মাদ ইবনে আলী (আঃ)-পূর্বের ও পরের , নবী ও রাসুলদের জ্ঞান বিদীনকারী (আল-বাক্কির) ।এরপর জাফর ইবনে মুহাম্মাদ, আল্লাহর সত্যবাদী জিহবা (আল সাদিক) ।এরপর মুসা ইবনে জাফর (আঃ) , যে আল্লাহর ধৈযের মাধ্যমে তার রাগকে নিশ্চুপ রেখেছে (আল কাযিম) ।এরপর আলী ইবনে মুসা (আঃ) , যে আল্লাহর গোপন বিষয়ে সন্তুষ্ট আছে (আল রিদা) ।এরপর মুহাম্মাদ ইবনে আলী (আঃ) , আল্লাহর সৃষ্টির মাঝ থেকে নির্বাচিত জন (আল মুখতার) ।এরপর আলী ইবনে মুহাম্মাদ (আঃ) , যে আল্লাহর দিকে পথ প্রদর্শক (আল হাদী) ।এরপর আল হাসান ইবনে আলী (আঃ) , যে নিশ্চুপ-আল্লাহর গোপন বিষয়ের বিশ্বস্ত পাহারাদার (আল আসকারী) ।এরপর মিম হা দাল (মুহাম্মাদ) , যাকে ডাকা হয় ইবনে আল হাসান (আঃ) যে ঘোষক আল্লাহর অধিকার প্রতিষ্ঠিত করে ।’সালমান (রাঃ) বলেন , ‘আমি কাঁদলাম , এরপরে বললাম , ইয়া রাসুলাল্লাহ, আমার জীবন তাদের সময় পযন্ত দীঘায়িত হোক ।’রাসুল (সাঃ) বললেন , হে সালমান , এটি তেলাওয়াত করে নাও —” — অতঃপর যখন প্রতিশ্রুত দ্বয়ের প্রথমটির সময় আসন্ন হবে তখন আমরা তোমাদের বিরুদ্বে আমাদের কতক কঠোর শক্তিশালী বান্দাদের প্রেরন করব এবং তারা তোমাদের গৃহসমূহে তোমাদের তন্ন তন্ন করে খুজবে এবং এ প্রতিশ্রুতি পূর্ন হওয়া অবশ্যস্ভাবী । অতঃপর তোমাদের জন্য পুনরায় তাদের উপর আক্রমন করার ক্ষমতা ফিরিয়ে দেব এবং ধন সম্পদ ও পুত্র সন্তান দ্বারা তোমাদের সহায়তা করব এবং জনসংখ্যায় তোমাদের অধিক করব —- ” ।সুরা – বনী ইসরাঈল / ৫ , ৬ ।সালমান (রাঃ) বললেন , ‘আমি অনেক কাঁদলাম, এবং আমার আকাঙ্ক্ষা প্রচন্ড হয়ে দাঁড়ালো । আমি বললাম , ইয়া রাসুলাল্লাহ , এটি কি আপনার কাছ থেকে একটি প্রতিশ্রুতি ?’‘হ্যাঁ , তাঁর শপথ যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন এবং সংবাদ দিয়েছেন , এটি একটি প্রতিশ্রুতি আমার , আলীর , ফাতিমার , আল-হাসান , আল-হুসেইন এবং আল-হুসেইনের বংশ থেকে ৯ জন ইমামদের কাছ থেকে তোমার জন্য এবং তাদের জন্য যারা আমাদের সাথে আছে এবং যাদের প্রতি যুলুম করা হয়েছে ।যে তার বিশ্বাসে সত্যিকারভাবে আন্তরিক , তাহলে আল্লাহর শপথ সালমান , ইবলিস ও তার বাহিনীগুলো আসুক । যার আছে সত্যিকার আবিশ্বাস সে শাস্তি পাবে প্রত্যাঘাত ও নির্যাতন এবং উত্তরাধীকারের (অন্যদের দ্বারা) মাধ্যমে। তোমার রব কারও উপরে যুলুম করবেন না ।এই আয়াতে বলা হয়েছে —” —- আর আমরা চাই যাদেরকে দেশে হীনবল (অসহায়) করে রাখা হয়েছিল তাদের প্রতি অনুগ্রহ করি ও তাদেরকে নেতা নিযুক্ত করি এবং তাদেরকে (সেই দেশের) উত্তরাধিকারী করি এবং তাদের পৃথিবীতে ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত করি এবং ফিরআউন , হামান ও তাদের বাহিনীকে যা তারা আশংকা করত তা দেখিয়ে দেই —– ।”.সুরা – কাসাস / ৫ , ৬ ।সালমান (রাঃ) বলেন , আমি আল্লাহর রাসুলের (সাঃ) কাছ থেকে বিদায় নিলাম সম্পুন ভ্রুক্ষেপহীন হয়ে ।কিভাবে সালমান মৃত্যুর সাথে দেখা করবে অথবা কীভাবে মৃত্যু তার সাথে দেখা করবে”।সূত্র – মিসবাহুস শারিয়াহ, লেখক — ইমাম জাফর সাদেক (আঃ) ।আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত এই ইমামতের ধারা আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচয় প্রদান করা হয়েছিল যা ইতঃপূর্বে কোন নবী রাসূলের ক্ষেত্রেও হয়নি । সাধারণত সকল নবী রাসূলগণই তাদের পরিচয় সম্পর্কে তাঁরা নিজেরাই নিজেদের পরিচয় ব্যক্ত করেছেন ।কিন্তু ইমামতের বেলায় ভিন্ন ।হজ্ব ফেরৎ লক্ষাধিক হাজী সাহাবাগনকে সাথে নিয়ে গাদীরে খুম নামক স্থানে পৌঁছালে আল্লাহ রাসূলের (সাঃ) প্রতি কঠোর হুশিয়ারীমূলক নির্দেশ নাযিল করে সূরা মায়েদার ৬৭ নং আয়াতে বলেন —“ – হে রাসুল , পৌঁছে দাও যা তোমার কাছে অবতীর্ন হয়েছে তোমার প্রভুর কাছ থেকে এবং যদি তুমি তা না কর , তুমি তাঁর রেসালতই পৌঁছে দাও নি এবং আল্লাহ তোমাকে জনতার হাত থেকে রক্ষা করবেন । নিশ্চয়ই আল্লাহ কাফের দলকে পথ দেখান না —- “ ।সুরা – মাইদাহ / ৬৭ ।উক্ত আয়াতে এমন একটি নির্দেশ পৌছাঁনোর কথা বলা হচ্ছে যা না পৌছাঁলে রাসূলের (সাঃ) রিসালাত-ই বৃথা !কারন , ঐ নির্দেশটি রেসালাতের বিনিময়যোগ্য !আর তখনই কোন কিছু বিনিময় হয় যখন একটা আরেকটার পরিপূরক গুন সম্পন্ন হয় ।কি ছিল সেই নির্দেশ ?রাসূল (সাঃ) বিদায় হজ্জ শেষে ১ লক্ষ ২০ হাজার (কমবেশি) সাহাবাসহ মদীনার দিকে রওয়ানা হন । গাদীরে খুম নামক জায়গায় পৌছাঁলে উক্ত আয়াত নাযিল হয় ।এতক্ষণে সাহাবীগণ (রাঃ) বিভিন্ন দিকে যাত্রা শুরু করেন । রাসূল (সাঃ) দূত পাঠিয়ে সকলকে একত্রিত করেন । অতঃপর রাসূল (সাঃ) আল্লাহর নির্দেশ পৌছানোর লক্ষে একত্রিত লোক সম্মুখে ভাষণ দেন ।আল্লাহর গুণকীর্তন করে রাসূল (সাঃ) মূল বক্তব্যটি পেশ করেন । তিনি সকলকে জিজ্ঞেস করেন , আমি কি মুমিনদের মাওলা নই ?সকলে বলিল , হ্যা অবশ্যই ।রাসুল (সাঃ) জিজ্ঞেস করেন , আমি কি মুমিনদের জান-মালের চেয়ে অধিক প্রিয় নই ?সকলে বলিল , হ্যা অবশ্যই ।তারপর তিনি বলেন, “মান কুন্তো মওলাহু ফাহাজা আলীয়্যুন মওলা” অর্থাৎ আমি যার মাওলা এই আলী ও তার মাওলা ।নবীজী (সাঃ) আরও বলেন , আমার পরে সে (আলী) সকল মুমিনদের অভিবাবক ও স্থলাভিষিক্ত ।অতঃপর উপস্থিত সকলে মাওলা আলীর (আঃ) বেলায়াতের সাক্ষী প্রদান করেন । হযরত আবু বকর , হযরত ওমর এসে মাওলা আলীকে (আঃ) অভিন্দন জানিয়ে বলেন , হ্যা “আলী ইবনে আবু তালিব” ! আজ থেকে তুমি সকল মুমিনের মাওলা হয়ে গেলে ।তারপর সকলে গন্তব্যের দিকে রওয়ানা হওয়ার মনস্থির করেন ।ইতিমধ্যে আল্লাহ সূরা মায়েদার ৫নং আয়াত নাজিল করে দিলেন —-” —- আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ন করলাম এবং তোমাদের প্রতি আমার নেয়ামত সম্পূর্ন করলাম এবং তোমাদের জন্য ধর্ম হিসাবে ইসলামের প্রতি সন্তষ্ট হলাম —– ” ।সুরা – মায়েদা / ৩ ।নবুয়তের ধারা শেষ হওয়ার পূর্বেই এর (রিসালাতের) বাহক (সাঃ) কর্তৃক ইমামতকে স্বীকৃতি দিয়ে রিসালাতের উদ্দেশ্য ইমামতের উপর ন্যাস্ত হয় । রিসালাত ইমামতকে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রতিষ্ঠা করে । ইমামত রিসালাতকে আঁকড়ে ধরে পরবর্তী কাজ আঞ্জাম দিয়ে দ্বীনের প্রতিষ্ঠিত পথকে সুসংহত রাখে ।সমসাময়িক অনেক লোকজন রিসালাতকে যেমন অস্বীকার করেছে তেমনি ইমামতকেও ।তাই আল্লাহ্ বলেন ,” —- নিঃসন্দেহে তারা সত্যকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল যখন তা তাদের নিকট এসেছিল । সুতরাং অচিরেই তাদের কাছে যেসব ব্যাপারে তারা ঠাট্টা বিদ্রুপ করত তার খবর এসে যাবে —– ” ।সুরা – আনআম / ৫ ।প্রিয় পাঠক ,পরিশেষে মহান আল্লাহর নিকট একটিই প্রার্থনা যে , আল্লাহ কতৃক প্রদত্ত অশেষ করুনা , দয়া ও নেয়ামতের মিষ্টি সুপেয় পবিত্র বার ইমামত ধারার প্রতি সর্বক্ষন যেন প্রতিষ্ঠিত থাকতে পারি ।রাসুলের (সাঃ) পবিত্র আহলে বাইত তথা বার ইমামীয়ার (আঃ) আর্দশ বুকে ধারন করে যেন মৃত্যুবরন করতে পারি ।ইমামে যামানা (আঃফাঃ) এর যহুরকে ত্বরান্বিত করুন ।ঈলাহী আমীন

রাসুলের (সাঃ) ইন্তেকাল পরবর্তী ইমামত এবং খেলাফত ।
আল হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন ।
সেই মহান সৃষ্টিকর্তার শুকরিয়া করছি যিনি তাঁর অগনিত নেয়ামত সমূহের মধ্যে থেকে অন্যতম নেয়ামত হিসেবে “ইমামত” পদ্বতির মত পবিত্র একটি নেয়ামত আমাদের দান করেছেন যার মাধ্যমে পথহারা পথিক সঠিক পথের দিশা পায় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে ইহকাল এবং পরকালে চিরমুক্তি পায় ।
প্রিয় পাঠক ,
এখানে ছোট একটি প্রশ্নের অবসান করা দরকার ।
অনেকেই মনে করেন যে , খলীফা ও ইমাম ভিন্ন জিনিষ । অনেকে এটাও মনে করেন যে , ইহজগতে মানুষকে শাসন করার জন্য খেলাফাত পদ্বতির প্রয়োজন এবং ধর্মীয় নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য ইমামত পদ্বতির প্রয়োজন আছে ।
কিন্তু প্রকৃত বিষয় হচ্ছে উভয়ই এক ও অভিন্ন । আল্লাহর নির্দেশে রাসূলের (সাঃ) ঘোষিত প্রতিনিধিগণই হলেন খলীফা এবং একইসাথে সমগ্র মানবজাতির ইমাম বা নেতা ।
অর্থাৎ আমাদের নেতা বা ইমামগণ হলেন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সাঃ) প্রতিনিধি বা খলীফা । কাজেই দেখা যাচ্ছে যে , রাসূলের (সাঃ) রেখে যাওয়া খেলাফত অতি অবশ্যই ইমামতের মধ্যেই অন্তরর্নিহিত !
এর জন্য ভিন্ন কোন চিন্তা বা ধারনা তৈরী করা হলে সেটা হবে ব্যক্তি , গোষ্ঠী বা মানুষের দ্বারা সৃষ্টিকৃত যা পবিত্র কোরআন ও হাদিস পরীপন্থী এবং মোটেও আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাঃ) কতৃক অনুমোদিত ও স্বীকৃত নয় ।
নিম্নে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনাতে মনযোগ দেওয়ার জন্য বনীত আবেদন করছি ।
সর্বশক্তিমান আল্লাহর চিরন্তন বিধান হচ্ছে , মানবজাতিকে সঠিক পথে পরিচালনার জন্য যুগে যুগে তাঁর প্রতিনিধি বা খলীফা প্রেরণ করা । এই ধারা নবী রাসূল আগমনের মাধ্যমে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) পর্যন্ত জারী ছিল ।
“ – এটাই আল্লাহর বিধান যা পূর্ব থেকে চলে আসছে এবং তোমরা কখনই পাইবে না আল্লাহর বিধানে কোন পরিবর্তন — “ ।
সুরা – ফাতহ / ২৩ ।
পবিত্র কোরআনের আলোকে যদি আমরা এ বিষয়ে চিন্তা করি তাহলে দেখতে পাব যে , মুসলমানদের জাতির পিতা হযরত ইব্রাহীম (আঃ) ।
মহান আল্লাহ হযরত ইব্রাহীমকে (আঃ) সমগ্র মানবজাতির ইমাম বা নেতা নিযুক্ত করেছিলেন ।
“ – এবং যখন ইবরাহীমের প্রভু তাকে পরীক্ষা করলেন সুনিদিষ্ট কিছু কথা দিয়ে এবং সেগুলো সে সম্পাদন করল , তিনি বললেন , “আমি তোমাকে মানবজাতির ইমাম বানিয়ে দিচ্ছি ।” সে বলল , “আর আমার বংশধর থেকেও?” তিনি বললেন , আমার অঙ্গীকার জালিমদের নিকট পৌঁছায় না —– “ ।
সুরা – বাকারা / ১২৪ ।
হযরত ইব্রাহিম (আঃ) একজন রেসালাত প্রাপ্ত নবী ও রাসুল হওয়া সত্ত্বেও আরও কয়েকটি বিষয়ে পরীক্ষার মাধ্যমে কৃতকার্য হয়ে ইমামতের স্তরে পৌঁছেছেন ! এবং এ ইমামতের ধারা কেয়ামত পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে মহান আল্লাহ নিজে ঘোষনা বা ওয়াদা) করেছেন ।
তবে হ্যা ! হযরত ইব্রাহিমের (আঃ) বংশের জালিমদের বেলায় ইমামতের ধারা প্রযোজ্য নহে ।
একদিকে আল্লাহ ওয়াদা দিচ্ছেন অপরদিকে তাঁর ওয়াদার নিশ্চয়তা ও দৃঢ়তা গ্রহণকল্পে ঘোষণা করে জানিয়ে দিচ্ছেন ,
” — সুতরাং তুমি আল্লাহ সম্পর্কে কখনই এইরুপ ধারনা কর না যে , তিনি তাঁর রাসুলদের সাথে সম্পাদিত প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করবেন । নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী , প্রতিশোধ গ্রহণকারী —- ” ।
সুরা – ইবরাহীম / ৪৭ ।
এখানে উল্লেখ্য যে , নবী-রাসুলগনের মনোনয়ন এবং নির্বাচনের ক্ষেত্রে মানুষের সামান্যতম এখতিয়ার নেই । ঠিক একইভাবে ইমামগনের মনোনয়ন এবং নির্বাচনের ক্ষেত্রেও মানুষের সামান্যতম এখতিয়ার নেই । ইমামত মনোনয়ন এবং নির্বাচনের বিষয়টি সম্পূর্ণই আল্লাহর একক ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল ।
তাই এ প্রসঙ্গে আল্লাহ অত্যন্ত পরিস্কার করে বলেন —
” —- তোমার প্রতিপালক যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন ও যাকে ইচ্ছা তাকেই মনোনীত করেন । এতে তাদের কোন ক্ষমতা নেই —– ” ।
সুরা – কাসাস / ৬৮ ।
“ – আমরা তাদেরকে ইমাম নির্বাচিত করেছিলাম আমাদের আদেশ অনুসারে হেদায়েত করতেন — “ ।
সুরা – আম্বিয়া / ৭৩ ।
“ – এবং তাদের মধ্যে আমরা নিয়োগ দিয়েছিলাম ইমামদের যারা আমাদের আদেশে পথ দেখায় — “ ।
সুরা – সাজদাহ / ২৪ ।
তারপর আল্লাহ এরশাদ করেন ,
” —- এটাই আল্লাহর পথ ! স্বীয় বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তাকেই তিনি এর দ্বারা সৎ পথে পরিচালিত করেন…..। “
সুরা – আনআম / ৮৮ ।
মহান আল্লাহ সমগ্র মানবজাতিকে সঠিক দিক নির্দেশনা দেয়ার জন্য যুগে যুগে নবী-রাসুল প্রেরন করেছেন । যেহেতু তাঁদের প্রত্যাগমণের ধারার সমাপ্তি ঘটেছে সেহেতু মানবজাতি কি অন্ধকার পথে থাকবে ?
সহজ জবাবটি হচ্ছে — কখনই নহে ।
আল্লাহ বলেন ,
” — এরা সেসব লোক যাদের আমরা গ্রন্থ , নির্দেশ ও নবুয়ত দান করেছিলাম । এখন যদি এসব লোক (কাফেরগন) নবুয়ত অস্বীকার করে তবে আমরা এই বিষয়ের দায়িত্ব এমন এক সম্প্রদায়ের উপর ন্যস্ত করেছি যারা সেটাকে অবিশ্বাস করে না —– ” ।
সুরা – আনআম / ৮৯ ।
পবিত্র কোরআনে বর্নিত এই আয়াতে এই বিশেষ বিষয়টি অত্যন্ত সুস্পষ্ট তা হল , নবুয়তের ধারা শেষ হওয়ার পরে পরবর্তী কোন এক জাতির প্রতি ইঙ্গিত করা হচ্ছে যারা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারণ করা । এই বিষয়টি আমলে নিয়ে সার্বিক দিক বিবেচনা করলে ইমামতের আনুগত্য ছাড়া অন্য কিছুই দৃশ্যমান হয় না ।
যা নিম্নে খুবই সংক্ষেপে আলোচনা করা হচ্ছে ।
নবুয়ত ধারার সমাপ্তির পরে সমগ্র মানবজাতির হেদায়েত ও পরিচালনার জন্য আল্লাহ্ কাদেরকে নির্বাচন করেছেন এ ব্যাপারে আল্লাহ বলছেন ।
“ — নিশ্চয়ই আল্লাহ মনোনীত করেছেন আদম ও নূহকে এবং ইবরাহীমের বংশকে এবং ইমরানের বংশকে সমস্ত জাতির উপর —” ।
সুরা – আলে ইমরান / ৩৩ ।
পবিত্র কোরআন ও ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে যে , হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) পর্যন্ত যত নবী-রাসূল এসেছেন , সবাই ইব্রাহীমের (আঃ) পবিত্র বংশ থেকেই এবং কেয়ামত পর্যন্ত যত হাদী আসবেন তাঁরাও ইব্রাহীম (আঃ) তথা মুহাম্মদের (সাঃ) পবিত্র বংশ হতে , এটা পবিত্র কোরআনেরই চুড়ান্ত সিদ্বান্ত ।
সুতরাং নবুয়ত ধারা সমাপ্তির পরে ইমামত একমাত্র রাসুলের (সাঃ) পুতঃপবিত্র বংশধরদের জন্য জন্যই মনোনীত ।
পূর্বোক্ত আলোচনা সমূহের ভিত্তিতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে , বিশ্বনবীর (সাঃ) ইন্তেকালের পর ইসলামী উম্মতের মাঝে আল্লাহর পক্ষ থেকে মনোনীত ইমাম বা নেতার অস্তিত্ব ছিল এবং থাকবে ।
এ ব্যাপারে বিশ্বনবী (সাঃ) থেকে অসংখ্য হাদিস রয়েছে যার কতিপয় হাদিস নিম্নে তুলে ধরা হল ।
যাবের বিন সামরাতেন বলেন , রাসুলকে (সাঃ) বলতে শুনেছি যে , “বারজন” প্রতিনিধি আর্বিভাবের পূর্ব পর্যন্ত এই অতীব সম্মানীত ধর্মের সমাপণ ঘটবে না । যাবের বললেন , জনগণ তাকবির ধ্বনিতে গগন মুখরিত করে তুলল । অতঃপর রাসুল (সাঃ) আস্তে কিছু কথা বললেন ।
আমি আমার পিতাকে বললাম , কি বললেন ?
পিতা বললেন , রাসুল (সাঃ) বললেন , তারা সবাই “কুরাইশ বংশের” হবেন ।
সূত্র — সহীহ আল বুখারী , খন্ড -৬, হাদিস -৬৭১৬- (আধুনিক) / সহীহ আল বুখারী, খন্ড-৬, হাদিস -৩২৪২-(ইসলামিক ফাউন্ডেশন) / সহীহ আল বুখারী, খন্ড-৬, হাদিস-৭২২২-আহলে হাদিস লাইব্রেরী থেকে প্রকাশিত / সহীহ আল মুসলিম, খন্ড-৫, হাঃ-৪৫৫৪, ৪৫৫৫, ৪৫৫৭, ৪৫৫৮, ৪৫৫৯- (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) / আবু দাউদ, খঃ-৫, হাঃ-৪২৩০, ৪২৩১-ইঃ ফাঃ; তিরমিজি, খঃ-২, পৃঃ-৪৫, মুসনাদে আহম্মদ খঃ-১, পৃঃ-৩৯৮, খঃ-৫, পৃঃ-৮৬, ১০৫-আরবী; মুয়াদ্দাতুল কুরবা, পৃঃ-৯৭, আরজাহুল মাতালেব, পৃঃ-৫৮৮-উর্দু; মুস্তাদারাক হাকেম, খন্ড-৩, পৃঃ-৬১৭-১৮-ভারত / তারিখে বাগদাদ, খন্ড-১৪, পৃঃ-৩৫৩, হাদিস-৭৬৭৩-আরবি / মুনতাখারা কানজুল উম্মাল, খন্ড-৫, পৃঃ-৩১২-হায়দারাবাদ / তারিখ আল খোলাফা, পৃঃ-১০-আরবি / আস সাওয়ায়েকে আল মুহরেকা, ১৮৯-আরবি / ইয়া নাবিয়ুল মুয়াদ্দাত, পৃঃ-৬৯৭-উর্দু / কানজুল উম্মাল, খন্ড-১২, পৃঃ-১৬৫, হাদিস-৩৪৫০১ ।
রাসুল (সাঃ) বলেন , ‘আমার পরে “১২জন” ইমাম পর্যন্ত ইসলাম সমুন্নত থাকবে এবং তারা “কুরাইশ” বংশ থেকে’ ।
সূত্র – সহীহ আল বুখারী, হাদিস-৬৭১৬; ৬৭৯৬ ।
হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) নবী (সাঃ) এর বিশিষ্ট সাহাবী বর্ণনা করেন যে , আমি মহানবীকে (সাঃ) জিজ্ঞাসা করলাম যে , আপনার ইন্তেকাল পরবর্তীকালে কতজন নেতা (ইমাম) হবেন ?
নবী (সাঃ) বললেন যে, “বনী ইসরাইলের খতিবদের ন্যায় বারোজন হবে”। সুত্র – ইয়া নাবিয়ুল মুয়াদ্দাত, পৃঃ-৪১৫ / সাওয়ায়েকে মুহরেকা, পৃঃ-১৩, (মিশর) / মুয়াদ্দাতুল কুরবা, পৃঃ-৯৬ ।
“আমার পর বারোজন নেতা হবেন । তাঁরা সবাই বনি হাশেমগণের মধ্যে হতে হবেন” ।
নবী (সাঃ) আবার অন্য এক হাদিসে বলেছেন যে, আমার পর “বারজন নেতা হবেন” তাঁরা সবাই “বনি হাশিমের” মধ্য হতে হবেন ।
সুত্র – ইয়া নাবিয়ুল মুয়াদ্দাত, পৃঃ-৪১৬ ( উর্দু) ।
অন্য একটি হাদিস – সালমান ফারসী (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে , তিনি বলেন , এমতাবস্থায় রাসুলের (সাঃ) নিকট উপস্থিত হলাম যে যখন হোসাইন (আঃ) তাঁর ঊরুর উপর ছিল এবং তিনি তাঁর চোখ ও ওষ্ঠতে চুম্বন দিচ্ছেন আর বলছেন যে , তুমি সাইয়্যেদের সন্তান সাইয়্যেদ এবং তুমি ইমামের সন্তান ইমাম , তুমি ঐশী প্রতিনিধির সন্তান ঐশী প্রতিনিধি । আর তুমি নয়জন ঐশী প্রতিনিধিরও বাবা , যাদের নবম ব্যক্তি হলেন কায়েম (ইমাম মাহদী) ।”
সূত্র – ইয়ানাবী-উল্-মুয়াদ্দাহ্, (সুলাইমান বিন ইব্রাহীম কান্দুযি) ৭ম মুদ্রণ, ৩০৮ নং পৃষ্ঠা ।
হাদিসে এসেছে নবী (সাঃ) বলেছেন যে , “দ্বীন ইসলাম ধ্বংস হবেনা কিয়ামত পর্যন্ত অথবা বারজন খলীফার আগমন পর্যন্ত , তাদের মধ্যে সর্বপ্রথম হচ্ছেন আলী ইবনে আবু তালিব অতঃপর হাসান তারপর হোসাইন (আঃ) তারপর মুহাম্মদ ইবনে আলী , আলী ইবনে মুহাম্মদ , হাসান ইবনে আলী এবং তাদের সর্ব শেষ হচ্ছেন আল মাহদী (আঃ) ”।
সূত্র — সহীহ আল মুসলিম , ৬ষ্ঠ খণ্ড , পৃ- ৩-৪ / সহীহ আল বুখারী , ৪র্থ খণ্ড , পৃ- ১৫৬ / ইয়ানাবিউল মুয়াদ্দাহ , ১ম খণ্ড , পৃ- ৩৪৯ / সহীহ আত তিরমিযি ৩য় খণ্ড , পৃ- ৩৪২ / সুনানে আবু দাউদ , ৩য় খণ্ড , পৃ- ৩০২ / কানযূল উম্মাল , ১২তম খণ্ড ,পৃ- ১৬৫ ।
এই প্রসঙ্গে রাসুল (সাঃ) আরও বলেছেন —
প্রসিদ্ব আহলে সুন্নাত এর পন্ডিত শায়খ সুলাইমান কান্দুজী হানাফী তুর্কি কতৃক রচিত তার প্রসিদ্ব গ্রন্থ ইয়ানাবিউল মুয়াদ্দাত নামক গ্রন্থে বর্ননা করেছেন যে ,
নাছাল নামক একজন হিহুদী মহানবীর (সাঃ) নিকট আরজ করলেন যে ,
ইয়া রাসুল (সাঃ) ! আপনাকে কয়েকটি প্রশ্ন করতে চাই যা কিছুদিন ধরে আমার মনকে অশান্ত রাখছে । কথা দিচ্ছি , আপনার জবাব যদি সঠিক হয় তাহলে আমি ইসলাম ধর্ম গ্রহন করব ।
নবী (সাঃ) বললেন , হে আবু আম্মারা , তুমি প্রশ্ন করে যাও , কোন সমস্যা নাই ।
অনুমতি পেয়ে ঐ ব্যক্তি প্রশ্ন শুরু করল ।
প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরে সে খুবই সন্তষ্ট হল এবং বলল যে , আপনি খুবই সঠিক জবাব দিয়েছেন ।
প্রশ্নের এক পর্যায় সে জিজ্ঞাসা করল যে , আমাকে বলে দিন , আপনার ইন্তেকালের পরে কে আপনার উত্তরাধিকারী হবে ?
কেননা আজ পর্যন্ত কোন নবী বা রাসুল তাঁর পরবর্তী উত্তরসূরীর নাম পরিচয় না বলে এই পৃথিবী ত্যাগ করেন নাই । যেমন আমাদের নবী হযরত মুসা (আঃ) বলে গেছেন যে , তাঁর অবর্তমানে হযরত ইউসা বিন নুন হলেন তাঁর উত্তরসূর বা স্থলাভিষিক্ত ।
মহানবী (সাঃ) বললেন যে , “আমার পরে আমার উত্তরসূরী বা স্থলাভিষিক্ত হচ্ছে আমার ভাই হযরত আলী ইবনে আবু তালিব এবং তাঁর পর আমার দুই সন্তান হাসান ও হোসাইন , অতঃপর কেয়ামত পর্যন্ত অবশিষ্ট নয়জন ইমাম হোসাইন এর বংশ থেকে আগমন করবেন ।
লোকটি বলল , “ইয়া মুহাম্মাদ (সাঃ) , দয়া করে অবশিষ্ট নয়জনের নাম বলে দিন” ।
নবীজী (সাঃ) বললেন যে ,
“হোসাইনের ইন্তেকালের পর তাঁর পুত্র জয়নুল আবেদীন হবে ,
জয়নুল আবেদীনের অন্তধানের পর তাঁর স্বীয় পুত্র মোহাম্মাদ বাকের হবে ,
মোহাম্মাদ বাকেরের ইন্তেকালের পর তাঁর পুত্র জাফর সাদিক হবে ,
জাফর সাদিকের তিরোধানের পর তাঁর পুত্র মুসা কাজেম হবে ,
মুসা কাজেমের ইহলোক ত্যাগের পর তাঁর পুত্র আলী রেজা হবে ,
আলী রেজার ইন্তেকালের পর তাঁর পূত্র মুহাম্মাদ তাক্বী হবে ,
মুহাম্মাদ তাক্বীর তিরোধানের পর তাঁর পূত্র আল নাক্বী হবে ,
আল নাক্বীর ইহলোক ত্যাগের পরে তাঁর পূত্র হাসান আসকারী হবে ,
হাসান আসকারীর ইন্তেকালের পর তাঁর পূত্র ইমাম মাহদী হবে সর্বশেষ বারতম ইমাম ।
তাঁরা আল্লাহর হুজ্জাত বা জমিনের বুকে অকাট্য দলিল ।”
এই জবাব পেয়ে পরক্ষনেই ঐ হিহুদী লোকটি মহানবীর (সাঃ) নিকট ইসলাম ধর্ম গ্রহন করলেন ।
সূত্র – ইয়া নাবিউল মুয়াদ্দাত ,পৃ-৪৪১ (বৌরুত) / ইয়া নাবিউল মুয়াদ্দাত , পৃ- ৬৯১-৬৯৪ ( লাহোর,উর্দু) / ফারায়েদ নি , খন্ড-২ , পৃ- ১৩৩ , ৩১২ / সিয়ারানীও আল ইয়াওয়াক্বিত ওয়াল জওয়াহীর , খন্ড- ৩ পৃ- ৩২৭ / ইয়ানাবিউল মুয়াদ্দাত – পৃঃ-৪২৭ (বৈরুত) / ইবনে আরাবী – ইবক্বাউল ক্বাইয়্যিম-২৬৬ / অধ্যায়ে , মানাকেবে ইবনে শাহার আশুব,খঃ-১, পৃঃ-২৮২ / রাওয়ানে যাভেদ, খঃ-২, পৃঃ-৭২ / কিফায়া আল আসার, খঃ-৭, পৃঃ-৭; (পুরোনো প্রিন্ট) / কিফায়া আল আসার, পৃঃ-৫৩, ৬৯; (কোম প্রিন্ট) / গায়াতুল মারাম, খঃ-১০, পৃঃ-২৬৭; ইসবাতুল হুদা, খঃ-৩, পৃঃ-১২৩ / নাযালুল আবরার , পৃঃ ১৭৪-১৭৫ / ইরাক থেকে মুদ্রিত , নুরুল আবছার / ফুসুলুল মুহিম্মা / মাতালিবুস সুউল ফী মানাকিবে আলে রাসূল, পৃঃ ৮৯; মিশর থেকে প্রকাশিত / ফারায়িদুস সিমতাইন ।
সুপ্রিয় পাঠক ,
“– স্মরন কর , সেদিনের ( কিয়ামত) কথা , যখন আমি সকল মানুষকে তাদের ইমামসহ আহবান করিব –” ।
সুরা – বনী ঈসরাইল / ৭১ ।
মহান আল্লাহ কতৃক নির্বাচিত ইমামত পদ্বতির প্রসংঙ্গে মহানবী (সাঃ) বলেন যে , “যে ব্যক্তি তার নিজের যুগের ইমামের মারফত বা না চিনে মৃত্যুবরন করল , সে জাহেলিয়াতেের মৃত্যুবরন করল” ।
সূত্র – সহীহ মুসলিম , খন্ড-২ ,পৃ- ১২৮ / মুসনাদে হাম্বল , খন্ড-৪ , পৃ-৯৬ / সহীহ আল মুসলিম , হাদিস আরবী-১৮৫১ , বাংলা-৪৬৪১ / সহীহ ইবনে হাব্বান , জামেয়া বাইনা সহীহ / সহীহ মুসলিম , খন্ড – ৩ , হাদিস – ১৮৫১ (লেবানন) / কানজুল উম্মাাল , খন্ড – ১ , পৃ- ১০৩ / ইয়ানাবিউল মুয়াদ্দাত , পৃ- ১৮৯ (উর্দ্দু) / মাজমা আজ জাওয়াইদ , খন্ড – ৫ , পৃ- ২১৮ / তাফসীরে ইবনে কাসির , খন্ড – ১ , পৃ- ৫১৭ (মিশর) / আস সুনান আল কুবরা , খন্ড – ৮ , পৃ- ১৫৬ / আল মুসনাদ , খন্ড – ৪ , পৃ- ৯৬ (মিশর) / জাওয়াহির আল মুদিয়া , খন্ড – ২ , পৃ- ৪৫৭ / শারাহ আল মাকাসিদ , খন্ড – ২ , পৃ- ২৭৫ / হিলিয়াতুল আউলিয়া , খন্ড – ৩ , পৃ- ২২৪ / মারেফাতে ইমামত ও বেলায়েত , পৃ- ১৫৬ ।
১২ ইমাম সম্পর্কে রাসুলের (সাঃ) যে হাদিসটি বিস্তারিতভাবে পাওয়া যায় , ষষ্ঠ ইমাম সাদেক (আঃ) থেকে স্পষ্ট বর্ণিত হয়েছে ।
তিনি সালমান ফার্সি (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে , রাসূল (সঃ) বলেছেন ,
“আমি রাসুলের (সাঃ) কাছে উপস্থিত হলাম , তিনি আমার দিকে তাকালেন এবং বললেন , ‘হে সালমান , আল্লাহ কোন নবী বা রাসুলকে পাঠান না যদি তার সাথে থাকে ১২ জন’।
‘ইয়া রাসুলুল্লাহ , আমি তা দুই কিতাবের লোকদের কাছ থেকে জেনেছি’।
‘হে সালমান , তুমি কি আমার ১২ জন সর্দারকে চেনো , যাদেরকে আল্লাহ আমার পরে ইমাম হিসেবে নির্বাচন করেছেন ?’
‘আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাঃ) ভাল জানেন ।’
‘হে সালমান , আল্লাহ আমাকে সৃষ্টি করেছেন পবিত্রতম আদি নুর থেকে এবং আমাকে ডাকলেন এবং আমি তার আদেশ মানলাম ।
এরপর তিনি আলীকে (আঃ) আমার নুর থেকে সৃষ্টি করলেন এবং তিনি তাকে ডাকলেন এবং সে আদেশ মানলো ।
আমার নুর ও আলীর নুর থেকে তিনি সৃষ্টি করলেন ফাতিমাকে (সাঃআঃ) । তিনি তাকে ডাকলেন এবং সে আদেশ মানলো ।
আমার , আলীর (আঃ) ও ফাতিমার (সাঃআঃ) নূর থেকে সৃষ্টি করলেন আল হাসান (আঃ) ও আল হোসাইনকে (আঃ) ।
তিনি তাদের ডাকলেন এবং তাঁরা তাঁর আদেশ মানলো ।
আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর ৫টি নাম থেকে নাম দিয়েছেন ।
আল্লাহ হলেন আল মাহমুদ (প্রশংসিত) এবং আমি মুহাম্মাদ (প্রশংসার যোগ্য) ।
আল্লাহ হলেন আল আলী (উচ্চ) এবং এ হলো (আঃ) যে উচ্চ প্রশংসনীয় ,
আল্লাহ হলেন ‘আল ফাতির যিনি শুন্য থেকে সৃষ্টি করেন এবং এ হল ফাতিমা (সাঃআঃ) ।
আল্লাহ হলেন তিনি যার কাছে আছে হাসান অন্যের জন্য কল্যান এবং এ হল হাসান (আঃ) ।
আল্লাহ হলেন মুহাসসিন পরম সুন্দর এবং এ হল হুসাইন (আঃ) ।
তিনি ৯ জন ইমামকে সৃষ্টি করলেন আল হুসাইনের (আঃ) নুর থেকে এবং তাদেরকে ডাকলেন এবং তারা তাঁর আদেশ মানলো ।
আল্লাহ উঁচু আকাশ , বিস্তৃত পৃথিবী , বাতাস , ফেরেশতা ও মানুষসহ সমগ্র সৃষ্টিজগত সৃষ্টি করার পূর্ব থেকেই আমরা ছিলাম নূর । যারা তাঁর প্রশংসা করত , তাঁর কথা শুনতো এবং তাঁকে মেনে চলতো ।’
‘ইয়া রাসুলুল্লাহ (সঃ), আমার বাবা ও মা আপনার জন্য উৎসর্গ হোক , ঐ ব্যক্তির জন্য কি আছে যে এ ব্যক্তিদের, সেভাবে স্বীকৃতি দেয় যেভাবে তাঁদের স্বীকৃতি দেয়া উচিত ?’
‘হে সালমান , যেই তাদের স্বীকৃতি দেয় যেভাবে দেওয়া উচিত এবং তাঁদের উদাহরন অনুসরন করে , তাঁদের সাথে বন্ধুত্ব রাখে এবং তাঁদের শত্রুদের কাছ থেকে মুক্ত থাকে , মহান আল্লাহর শপথ , সে আমাদের একজন । সে সেখানে ফেরত আসবে যেখানে আমরা ফেরত আসবো এবং সে সেখানে থাকবে যেখানে আমরা আছি ।’
‘ইয়া রাসুল (সাঃ) ! তাঁদের নাম ও বংশধারা জানা না থাকলে কি বিশ্বাস আছে ?’
‘না , সালমান ।’
‘হে আল্লাহর রাসুল, আমি তাঁদের কোথায় পাব ?’
‘তুমি ইতিমধ্যেই আল হুসাইনকে (আঃ) জেনেছো , এরপর আসবে ইবাদাতকারীদের সদার আলী ইবনুল হুসাইন (যায়নুল আবেদীন) (আঃ), এরপর তার পুত্র মুহাম্মাদ ইবনে আলী (আঃ)-পূর্বের ও পরের , নবী ও রাসুলদের জ্ঞান বিদীনকারী (আল-বাক্কির) ।
এরপর জাফর ইবনে মুহাম্মাদ, আল্লাহর সত্যবাদী জিহবা (আল সাদিক) ।
এরপর মুসা ইবনে জাফর (আঃ) , যে আল্লাহর ধৈযের মাধ্যমে তার রাগকে নিশ্চুপ রেখেছে (আল কাযিম) ।
এরপর আলী ইবনে মুসা (আঃ) , যে আল্লাহর গোপন বিষয়ে সন্তুষ্ট আছে (আল রিদা) ।
এরপর মুহাম্মাদ ইবনে আলী (আঃ) , আল্লাহর সৃষ্টির মাঝ থেকে নির্বাচিত জন (আল মুখতার) ।
এরপর আলী ইবনে মুহাম্মাদ (আঃ) , যে আল্লাহর দিকে পথ প্রদর্শক (আল হাদী) ।
এরপর আল হাসান ইবনে আলী (আঃ) , যে নিশ্চুপ-আল্লাহর গোপন বিষয়ের বিশ্বস্ত পাহারাদার (আল আসকারী) ।
এরপর মিম হা দাল (মুহাম্মাদ) , যাকে ডাকা হয় ইবনে আল হাসান (আঃ) যে ঘোষক আল্লাহর অধিকার প্রতিষ্ঠিত করে ।’
সালমান (রাঃ) বলেন , ‘আমি কাঁদলাম , এরপরে বললাম , ইয়া রাসুলাল্লাহ, আমার জীবন তাদের সময় পযন্ত দীঘায়িত হোক ।’
রাসুল (সাঃ) বললেন , হে সালমান , এটি তেলাওয়াত করে নাও —
” — অতঃপর যখন প্রতিশ্রুত দ্বয়ের প্রথমটির সময় আসন্ন হবে তখন আমরা তোমাদের বিরুদ্বে আমাদের কতক কঠোর শক্তিশালী বান্দাদের প্রেরন করব এবং তারা তোমাদের গৃহসমূহে তোমাদের তন্ন তন্ন করে খুজবে এবং এ প্রতিশ্রুতি পূর্ন হওয়া অবশ্যস্ভাবী । অতঃপর তোমাদের জন্য পুনরায় তাদের উপর আক্রমন করার ক্ষমতা ফিরিয়ে দেব এবং ধন সম্পদ ও পুত্র সন্তান দ্বারা তোমাদের সহায়তা করব এবং জনসংখ্যায় তোমাদের অধিক করব —- ” ।
সুরা – বনী ইসরাঈল / ৫ , ৬ ।
সালমান (রাঃ) বললেন , ‘আমি অনেক কাঁদলাম, এবং আমার আকাঙ্ক্ষা প্রচন্ড হয়ে দাঁড়ালো । আমি বললাম , ইয়া রাসুলাল্লাহ , এটি কি আপনার কাছ থেকে একটি প্রতিশ্রুতি ?’
‘হ্যাঁ , তাঁর শপথ যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন এবং সংবাদ দিয়েছেন , এটি একটি প্রতিশ্রুতি আমার , আলীর , ফাতিমার , আল-হাসান , আল-হুসেইন এবং আল-হুসেইনের বংশ থেকে ৯ জন ইমামদের কাছ থেকে তোমার জন্য এবং তাদের জন্য যারা আমাদের সাথে আছে এবং যাদের প্রতি যুলুম করা হয়েছে ।
যে তার বিশ্বাসে সত্যিকারভাবে আন্তরিক , তাহলে আল্লাহর শপথ সালমান , ইবলিস ও তার বাহিনীগুলো আসুক । যার আছে সত্যিকার আবিশ্বাস সে শাস্তি পাবে প্রত্যাঘাত ও নির্যাতন এবং উত্তরাধীকারের (অন্যদের দ্বারা) মাধ্যমে। তোমার রব কারও উপরে যুলুম করবেন না ।
এই আয়াতে বলা হয়েছে —
” —- আর আমরা চাই যাদেরকে দেশে হীনবল (অসহায়) করে রাখা হয়েছিল তাদের প্রতি অনুগ্রহ করি ও তাদেরকে নেতা নিযুক্ত করি এবং তাদেরকে (সেই দেশের) উত্তরাধিকারী করি এবং তাদের পৃথিবীতে ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত করি এবং ফিরআউন , হামান ও তাদের বাহিনীকে যা তারা আশংকা করত তা দেখিয়ে দেই —– ।”.
সুরা – কাসাস / ৫ , ৬ ।


সালমান (রাঃ) বলেন , আমি আল্লাহর রাসুলের (সাঃ) কাছ থেকে বিদায় নিলাম সম্পুন ভ্রুক্ষেপহীন হয়ে ।
কিভাবে সালমান মৃত্যুর সাথে দেখা করবে অথবা কীভাবে মৃত্যু তার সাথে দেখা করবে”।
সূত্র – মিসবাহুস শারিয়াহ, লেখক — ইমাম জাফর সাদেক (আঃ) ।
আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত এই ইমামতের ধারা আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচয় প্রদান করা হয়েছিল যা ইতঃপূর্বে কোন নবী রাসূলের ক্ষেত্রেও হয়নি । সাধারণত সকল নবী রাসূলগণই তাদের পরিচয় সম্পর্কে তাঁরা নিজেরাই নিজেদের পরিচয় ব্যক্ত করেছেন ।
কিন্তু ইমামতের বেলায় ভিন্ন ।
হজ্ব ফেরৎ লক্ষাধিক হাজী সাহাবাগনকে সাথে নিয়ে গাদীরে খুম নামক স্থানে পৌঁছালে আল্লাহ রাসূলের (সাঃ) প্রতি কঠোর হুশিয়ারীমূলক নির্দেশ নাযিল করে সূরা মায়েদার ৬৭ নং আয়াতে বলেন —
“ – হে রাসুল , পৌঁছে দাও যা তোমার কাছে অবতীর্ন হয়েছে তোমার প্রভুর কাছ থেকে এবং যদি তুমি তা না কর , তুমি তাঁর রেসালতই পৌঁছে দাও নি এবং আল্লাহ তোমাকে জনতার হাত থেকে রক্ষা করবেন । নিশ্চয়ই আল্লাহ কাফের দলকে পথ দেখান না —- “ ।
সুরা – মাইদাহ / ৬৭ ।
উক্ত আয়াতে এমন একটি নির্দেশ পৌছাঁনোর কথা বলা হচ্ছে যা না পৌছাঁলে রাসূলের (সাঃ) রিসালাত-ই বৃথা !
কারন , ঐ নির্দেশটি রেসালাতের বিনিময়যোগ্য !
আর তখনই কোন কিছু বিনিময় হয় যখন একটা আরেকটার পরিপূরক গুন সম্পন্ন হয় ।
কি ছিল সেই নির্দেশ ?
রাসূল (সাঃ) বিদায় হজ্জ শেষে ১ লক্ষ ২০ হাজার (কমবেশি) সাহাবাসহ মদীনার দিকে রওয়ানা হন । গাদীরে খুম নামক জায়গায় পৌছাঁলে উক্ত আয়াত নাযিল হয় ।
এতক্ষণে সাহাবীগণ (রাঃ) বিভিন্ন দিকে যাত্রা শুরু করেন । রাসূল (সাঃ) দূত পাঠিয়ে সকলকে একত্রিত করেন । অতঃপর রাসূল (সাঃ) আল্লাহর নির্দেশ পৌছানোর লক্ষে একত্রিত লোক সম্মুখে ভাষণ দেন ।
আল্লাহর গুণকীর্তন করে রাসূল (সাঃ) মূল বক্তব্যটি পেশ করেন । তিনি সকলকে জিজ্ঞেস করেন , আমি কি মুমিনদের মাওলা নই ?
সকলে বলিল , হ্যা অবশ্যই ।
রাসুল (সাঃ) জিজ্ঞেস করেন , আমি কি মুমিনদের জান-মালের চেয়ে অধিক প্রিয় নই ?
সকলে বলিল , হ্যা অবশ্যই ।
তারপর তিনি বলেন, “মান কুন্তো মওলাহু ফাহাজা আলীয়্যুন মওলা” অর্থাৎ আমি যার মাওলা এই আলী ও তার মাওলা ।
নবীজী (সাঃ) আরও বলেন , আমার পরে সে (আলী) সকল মুমিনদের অভিবাবক ও স্থলাভিষিক্ত ।
অতঃপর উপস্থিত সকলে মাওলা আলীর (আঃ) বেলায়াতের সাক্ষী প্রদান করেন । হযরত আবু বকর , হযরত ওমর এসে মাওলা আলীকে (আঃ) অভিন্দন জানিয়ে বলেন , হ্যা “আলী ইবনে আবু তালিব” ! আজ থেকে তুমি সকল মুমিনের মাওলা হয়ে গেলে ।
তারপর সকলে গন্তব্যের দিকে রওয়ানা হওয়ার মনস্থির করেন ।
ইতিমধ্যে আল্লাহ সূরা মায়েদার ৫নং আয়াত নাজিল করে দিলেন —-
” —- আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ন করলাম এবং তোমাদের প্রতি আমার নেয়ামত সম্পূর্ন করলাম এবং তোমাদের জন্য ধর্ম হিসাবে ইসলামের প্রতি সন্তষ্ট হলাম —– ” ।
সুরা – মায়েদা / ৩ ।
নবুয়তের ধারা শেষ হওয়ার পূর্বেই এর (রিসালাতের) বাহক (সাঃ) কর্তৃক ইমামতকে স্বীকৃতি দিয়ে রিসালাতের উদ্দেশ্য ইমামতের উপর ন্যাস্ত হয় । রিসালাত ইমামতকে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রতিষ্ঠা করে । ইমামত রিসালাতকে আঁকড়ে ধরে পরবর্তী কাজ আঞ্জাম দিয়ে দ্বীনের প্রতিষ্ঠিত পথকে সুসংহত রাখে ।
সমসাময়িক অনেক লোকজন রিসালাতকে যেমন অস্বীকার করেছে তেমনি ইমামতকেও ।
তাই আল্লাহ্ বলেন ,
” —- নিঃসন্দেহে তারা সত্যকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল যখন তা তাদের নিকট এসেছিল । সুতরাং অচিরেই তাদের কাছে যেসব ব্যাপারে তারা ঠাট্টা বিদ্রুপ করত তার খবর এসে যাবে —– ” ।
সুরা – আনআম / ৫ ।
প্রিয় পাঠক ,
পরিশেষে মহান আল্লাহর নিকট একটিই প্রার্থনা যে , আল্লাহ কতৃক প্রদত্ত অশেষ করুনা , দয়া ও নেয়ামতের মিষ্টি সুপেয় পবিত্র বার ইমামত ধারার প্রতি সর্বক্ষন যেন প্রতিষ্ঠিত থাকতে পারি ।
রাসুলের (সাঃ) পবিত্র আহলে বাইত তথা বার ইমামীয়ার (আঃ) আর্দশ বুকে ধারন করে যেন মৃত্যুবরন করতে পারি ।
ইমামে যামানা (আঃফাঃ) এর যহুরকে ত্বরান্বিত করুন ।
ঈলাহী আমীন

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিমআল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদপবিত্র কুরআন ও রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম এর হাদিস থেকে আমিরুল মোমেনীন আলী ইবনে আবি তালিব আঃ এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ হাদিসমহানবী হযরত মুহাম্মদ ‎(সা.)-এর উত্তরাধিকারী,তাঁর নবুওয়াতের মিশনের প্রধান সাহায্যকারী এবং দুনিয়া ও আখেরাতে রাসূলের ভ্রাতা আলী ‎(আ.) ‏আবরাহার পবিত্র মক্কা আক্রমণের ৩৩ বছর পর ১৩ রজব পবিত্র কা’বা শরীফে জন্মগ্রহণ করেন। মহান আল্লাহর আদেশে তাঁর নাম রাখা হয় আলী।শিশুকাল থেকেই মহানবী ‎(সা.)-এর সাথে হযরত আলীর বিশেষ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ সম্পর্কে আলী ‎(আ.) ‏নিজেই বলেছেন ‎: ‘...তিনি আমাকে তাঁর কোলে রাখতেন যখন আমি শিশু ছিলাম। তিনি আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরতেন এবং তাঁর বিছানায় শুইয়ে রাখতেন। তাঁর পবিত্র দেহ আমার দেহকে স্পর্শ করত এবং তিনি আমাকে তাঁর শরীরের সুগন্ধির ঘ্রাণ নেওয়াতেন। তিনি খাদ্য-দ্রব্য চিবিয়ে আমার মুখে পুরে দিতেন।...’১হযরত আবু তালিবের সংসারের ব্যয়ভার কমানোর জন্য হযরত আলীর বালক বয়সেই মহানবী ‎(সা.) ‏তাঁকে নিজের কাছে নিয়ে আসেন। তখন থেকে তিনি রাসূলের সার্বক্ষণিক সঙ্গী হয়ে যান। রাসূল হেরা পর্বতের গুহায় আল্লাহর ইবাদাত করতে গেলেও তাঁকে সাথে নিয়ে যেতেন। হযরত আলী বলেন ‎: ‘তিনি ‎(মহানবী) ‏প্রতি বছর হেরাগুহায় একান্ত নির্জনে বাস করতেন। আমি তাঁকে দেখতাম। আমি ব্যতীত আর কোন লোকই তাঁকে দেখতে পেত না। ঐ সময় রাসূলুল্লাহ্ ও খাদীজাহ্ ব্যতীত কোন মুসলিম পরিবারই পৃথিবীর বুকে ছিল না। আমি ছিলাম তাঁদের পরিবারের তৃতীয় সদস্য। আমি ওহী ও রেসালতের আলো প্রত্যক্ষ করেছি এবং নবুওয়াতের সুবাস ও সুঘ্রাণ অনুভব করেছি।’২তিনি মহানবীর প্রতি নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁকে অনুসরণ করতেন। তিনি বলেন ‎: ‘উষ্ট্র শাবক যেমনভাবে উষ্ট্রীকে অনুসরণ করে ঠিক সেভাবে আমি তাঁকে অনুসরণ করতাম। তিনি প্রতিদিন তাঁর উন্নত চরিত্র থেকে একটি নিদর্শন আমাকে শিক্ষা দিতেন এবং আমাকে তা পালন করার নির্দেশ দিতেন।... ‏তাঁর ওপর যখন ওহী অবতীর্ণ হয়েছিল তখন আমি শয়তানের ক্রন্দন ধ্বনি শুনেছিলাম। তাই আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম ‎: ‏হে রাসূলুল্লাহ্! ‏এ ক্রন্দন ধ্বনি কার? ‏তখন তিনি আমাকে বলেছিলেন ‎: ‏এই শয়তান এখন থেকে তার পূজা ‎(ইবাদাত) ‏করা হবে না বলে হতাশ হয়ে গেছে। নিশ্চয় আমি যা শুনি তুমি তা শোন এবং আমি যা দেখি তা দেখ। তবে তুমি নবী নও,কিন্তু ‎[নবীর] ‏সহকারী এবং নিঃসন্দেহে তুমি মঙ্গল ও কল্যাণের ওপরই আছ।’৩আর তাই মহানবী ‎(সা.)-এর নবুওয়াতের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসার পর তিনিই সর্বপ্রথম তাঁর ওপর ঈমান আনেন এবং তিনিই তাঁর সাথে নামায আদায় করা প্রথম ব্যক্তি। ইমাম মালেক বর্ণনা করেছেন ‎: ‘মহানবী ‎(সা.) ‏সোমবারে নবুওয়াত প্রাপ্ত হন এবং আলী মঙ্গলবারে তাঁর ওপর ঈমান আনেন।’৪হযরত আলী নিজেই বলেন ‎: ‘আমি আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসূলের ভ্রাতা এবং তাঁর নবুওয়াতের সবচেয়ে বড় বিশ্বাসস্থাপনকারী। একমাত্র মিথ্যাবাদী ছাড়া আমার পর কেউ এ দাবি করবে না। অন্য লোকদের নামায পড়ারও ৭ বছর আগে থেকে আমি নামায পড়েছি।’৫হযরত আলী ‎(আ.)-এর প্রসিদ্ধ উপাধিরাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏হযরত আলীকে বিভিন্ন উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন। এর মধ্যে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ হচ্ছে সিদ্দিকে আকবার,ফারুকে আযম,আসাদুল্লাহ ও মুরতাজা।পবিত্র কুরআনে হযরত আলী ‎(আ.)-এর মর্যাদাহযরত আলীর শানে পবিত্র কুরআনের অনেক আয়াত নাযিল হয়েছে। ইবনে আসাকির হযরত ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা করেছেন যে,কোন ব্যক্তির গুণ বর্ণনায় এত অধিক কুরআনের বাণী অবতীর্ণ হয়নি যা হযরত আলী সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস আরও বলেছেন যে,হযরত আলীর শানে তিনশ’ ‏আয়াত নাযিল হয়েছে এবং তাঁর গুণাবলি অত্যধিক ও প্রসিদ্ধ।৬ পবিত্র কুরআনের নাযিলকৃত আয়াতগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নিম্নে উল্লেখ করা হল ‎:১. ‏সূরা বাকারার ২০৭ নং আয়াতوَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَشْرِي نَفْسَهُ ابْتِغَاءَ مَرْضَاتِ اللَّهِ وَاللَّهُ رَءُوفٌ بِالْعِبَادِ‘এবং মানুষের মধ্যে এমনও আছে,যে আল্লাহর সন্তোষ লাভের জন্য নিজের জীবন পর্যন্ত বিক্রয় করে দেয় এবং আল্লাহ ‎(এরূপ) ‏বান্দাদের প্রতি অতিশয় অনুগ্রহশীল।’সালাবী তাঁর তাফসীর গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন যে,রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏যখন মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করার প্রস্তুতি নিলেন সেই সময় হযরত আলীকে তাঁর বিছানায় শুয়ে থাকার নির্দেশ দেন যাতে কাফির-মুশরিকরা মনে করে যে,রাসূল তাঁর নিজ ঘরেই রয়েছেন। আলী ‎(আ.) ‏নির্দ্বিধায় এ নির্দেশ পালন করলে মহান আল্লাহ এ আয়াত নাযিল করেন।৭ ২. ‏সূরা আলে ইমরানের ৬১ নং আয়াতفَمَنْ حَاجَّكَ فِيهِ مِنْ بَعْدِ مَا جَاءَكَ مِنَ الْعِلْمِ فَقُلْ تَعَالَوْا نَدْعُ أَبْنَاءَنَا وَأَبْنَاءَكُمْ وَنِسَاءَنَا وَنِسَاءَكُمْ وَأَنْفُسَنَا وَأَنْفُسَكُمْ ثُمَّ نَبْتَهِلْ فَنَجْعَلْ لَعْنَتَ اللَّهِ عَلَى الْكَاذِبِينَ‘অতঃপর তোমার নিকট যখন জ্ঞান ‎(কুরআন) ‏এসে গেছে,এরপরও যদি কেউ ‎(খ্রিস্টান) ‏তোমার সাথে তার ‎(ঈসার) ‏সম্বন্ধে তর্ক-বিতর্ক করে,তবে বল,‘(ময়দানে) ‏এস,আমরা আহ্বান করি আমাদের পুত্রদের ও তোমাদের পুত্রদের,আমাদের নারীদের ও তোমাদের নারীদের এবং আমাদের সত্তাদের ও তোমাদের সত্তাদের;’ ‏অতঃপর সকলে মিলে ‎(আল্লাহর দরবারে) ‏নিবেদন করি এবং মিথ্যাবাদীদের ওপর আল্লাহর অভিসম্পাত বর্ষণ করি।’ঘটনাটি এরূপ ‎: ‏রাসূলুল্লাহ্ ‎(সা.)-এর নবুওয়াতের সত্যতা যাচাই করার জন্য নাজরানের একটি খ্রিস্টান প্রতিনিধিদল মদীনায় আসল। তাদের সাথে আলোচনা ফলপ্রসূ হলো না। রাসূল ‎(সা.) ‏হযরত ঈসা ‎(আ.) ‏সম্বন্ধে প্রতিনিধিদের বললেন যে,তিনি আল্লাহর পুত্র নন,বরং আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। রাসূলুল্লাহ্ হযরত ঈসার জন্মের ব্যাপারে হযরত আদমের উদাহরণও দিলেন। কিন্তু তারা কোন কথাই শুনল না। অবশেষে তিনি আল্লাহর আদেশে পরস্পরের বিরুদ্ধে দোয়া ও মিথ্যাবাদীদের ওপর অভিশাপ বর্ষণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন,যাকে ‎‘মুবাহিলা’ ‏বলে। স্থির করা হল যে,নির্দিষ্ট স্থানে নির্দিষ্ট সময়ে উভয়ে নিজ নিজ পুত্রদের,নারীদের ‎(কন্যা সন্তানদের) ‏এবং তাদের নিজেদের ‎‘সত্তা’ ‏বলে গণ্য হওয়ার যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে একত্র হবে এবং প্রত্যেকে অপরের প্রতি অভিসম্পাত ও আল্লাহর শাস্তি কামনা করবে। রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏ইমাম হুসাইনকে কোলে নিয়ে ইমাম হাসানের হাত ধরলেন এবং হযরত ফাতিমাকে নিজের পেছনে,আর হযরত আলীকে তাঁর পেছনে রাখলেন। অর্থাৎ ছেলেদের স্থানে তিনি নাতিদের,নারীদের স্থানে নিজ কন্যাকে এবং ‎‘সত্তা’ ‏বলে গণ্যদের স্থানে আলীকে নিলেন এবং দোয়া করলেন,‘হে আল্লাহ! ‏প্রত্যেক নবীর আহলে বাইত থাকে,এরা আমার আহলে বাইত। এদের সকল দোষ-ত্রুটি হতে মুক্ত ও পাক-পবিত্র রেখ।’ ‏তিনি এভাবে ময়দানে পৌঁছলে খ্রিস্টানদের নেতা আকব তা দেখে বলল,‘আল্লাহর কসম,আমি এমন নূরানী চেহারা দেখছি যে,যদি এ পাহাড়কে নিজ স্থান হতে সরে যেতে বলেন,তবে অবশ্যই সরে যাবে। সুতরাং মুবাহিলা হতে হাত গুটিয়ে নেওয়াই কল্যাণকর,অন্যথায় কিয়ামত অবধি খ্রিস্টানদের কেউ অবশিষ্ট থাকবে না।’ ‏পরিশেষে তারা জিযিরা কর দিতে সম্মত হল। এটা হযরত আলীর একটি উঁচু স্তরের ফযিলত যে,তিনি আল্লাহর আদেশে রাসূলের ‎‘নাফ্স’ (অনুরূপ সত্তা) ‏সাব্যস্ত হলেন এবং সমুদয় নবীর থেকে শ্রেষ্ঠ হলেন।৮৩. ‏সূরা নিসার ৫৯ নং আয়াত ‎يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ‘হে বিশ্বাসিগণ! ‏তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূল ও তোমাদের মধ্যে যারা নির্দেশের অধিকর্তা,তাদের আনুগত্য কর...।’ইমাম জাফর সাদিক ‎(আ.)- ‏কে জিজ্ঞেস করা হলো যে,উত্তরাধিকারীর আদেশ মান্য করা কি অবশ্যই কর্তব্য? ‏তিনি বললেন ‎: ‏হ্যাঁ,তাঁরা ঐসব ব্যক্তি যাঁদের আদেশ পালন করা এ আয়াতে ওয়াজিব করা হয়েছে...। এ আয়াত হযরত আলী বিন আবি তালিব,হযরত হাসান ও হযরত হুসাইন ‎(আ.)-এর শানে অবতীর্ণ হয়েছে।৯ ৪. ‏সূরা মায়েদার ৫৫ নং আয়াতإِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَالَّذِينَ آمَنُوا الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُمْ رَاكِعُونَ‘(হে বিশ্বাসিগণ!) ‏তোমাদের অভিভাবক তো কেবল আল্লাহ,তাঁর রাসূল এবং সেই বিশ্বাসীরা যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে এবং রুকু অবস্থায় যাকাত প্রদান করে।’শীয়া-সুন্নি উভয় মাযহাবের তফসীরকাররা একমত যে,আয়াতটি হযরত আলী ‎(আ.)-এর শানে নাযিল হয়েছে। যেমন ইবনে মারদুইয়া এবং খাতীব বাগদাদী ইবনে আব্বাস সূত্রে এবং তাবরানী ও ইবনে মারদুইয়া আম্মার ইবনে ইয়াসির ও আলী ইবনে আবি তালিব সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে,আয়াতটি আলী ইবনে আবি তালিব ‎(আ.) ‏সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে যখন তিনি রুকু অবস্থায় যাকাত দেন।ঘটনাটি এরূপ ‎: ‏একদিন হযরত আলী ‎(আ.) ‏মদীনার মসজিদে নামায পড়ছিলেন। এমন সময় একজন ভিক্ষুক এসে ভিক্ষা চাইল। কিন্তু কোন ভিক্ষা না পাওয়ায় সে ফরিয়াদ করল যে,রাসূলের মসজিদ থেকে সে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছে। এ সময় হযরত আলী রুকু অবস্থায় ছিলেন। তিনি সেই অবস্থায় তাঁর ডান হাতের আঙ্গুল থেকে আংটি খুলে নেওয়ার জন্য ভিক্ষুকের প্রতি ইশারা করেন। ভিক্ষুক তাঁর হাত থেকে আংটি খুলে নেয়। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে উপরিউক্ত আয়াত নাযিল হয়।১০৫. ‏সূরা মায়েদার ৬৭ নং আয়াতيَا أَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ مِنْ رَبِّكَ وَإِنْ لَمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ وَاللَّهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْكَافِرِينَ‘হে রাসূল! ‏যা ‎(যে আদেশ) ‏তোমার প্রতিপালকের পক্ষ হতে তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে তা পৌঁছে দাও,আর যদি তুমি তা না কর,তবে তুমি ‎(যেন) ‏তার কোন বার্তাই পৌঁছাওনি,এবং ‎(তুমি ভয় কর না) ‏আল্লাহ তোমাকে মানুষের অনিষ্ট হতে রক্ষা করবেন;এবং নিশ্চয় আল্লাহ অবিশ্বাসী সম্প্রদায়কে সঠিক পথে পরিচালিত করেন না।’যখন রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏দশম হিজরিতে বিদায় হজ্ব থেকে মদীনায় প্রত্যাবর্তন করছিলেন সে সময় আল্লাহ্ তা‘আলা এ আয়াত নাযিল করেন। ইবনে আবী হাতিম ও ইবনে আসাকির আবু সাঈদ খুদরী হতে বর্ণনা করেছেন যে,এ আয়াত গাদীরে খুম প্রান্তরে হযরত আলী ‎(আ.)-এর শানে নাযিল হয়েছে।বিদায় হজ্ব থেকে প্রত্যাবর্তন করার সময় গাদীরে খুম নামক স্থানে মহানবী ‎(সা.) ‏হযরত আলীকে তাঁর পরে সকল মুমিনের অভিভাবক বলে ঘোষণা দেন।১১এ ঘোষণা দেয়ার পর হযরত ওমর হযরত আলীর সাথে সাক্ষাৎ করে অভিনন্দন জানান এবং বলেন ‎: ‘হে আলী ইবনে আবি তালিব! ‏আপনি আজ হতে প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর মাওলা হয়ে গেলেন।’১২৬. ‏সূরা রাদের ৭ নং আয়াতإِنَّمَا أَنْتَ مُنْذِرٌ وَلِكُلِّ قَوْمٍ هَادٍ‘(হে রাসূল!) ‏তুমি তো কেবল সতর্ককারী এবং প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে এক পথ প্রদর্শক।’ইবনে মারদুইয়্যা,ইবনে জারীর,আবু নাঈম তাঁর ‎‘মারেফাত’ ‏গ্রন্থে,ইবনে আসাকির,দাইলামী ও ইবনে নাজ্জার তাঁদের স্ব স্ব গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন যে,আয়াতটি নাযিল হলে মহানবী ‎(সা.) ‏তাঁর হাত নিজের বুকে রেখে বললেন,‘আমিই সতর্ককারী।’ ‏অতঃপর আলীর কাঁধের প্রতি তাঁর হাত দ্বারা ইশারা করে বললেন,‘হে আলী! ‏তুমিই পথপ্রদর্শক এবং মানুষ আমার পর তোমার মাধ্যমে হেদায়াতপ্রাপ্ত হবে।’ ‏উক্ত রেওয়ায়েতটি শব্দের তারতম্যে ইবনে মারদুইয়্যা সাহাবী আবু বারযাহ আসলামী হতে,জীয়াফীল হযরত ইবনে আব্বাস হতে,ইবনে আহমাদ তাঁর মুসনাদে এবং ইবনে মারদুইয়্যা ও ইবনে আসাকির স্বয়ং হযরত আলী ‎(আ.) ‏হতে বর্ণনা করেছেন।১৩৭. ‏সূরা রাদের ৪৩ নং আয়াতوَيَقُولُ الَّذِينَ كَفَرُوا لَسْتَ مُرْسَلًا قُلْ كَفَى بِاللَّهِ شَهِيدًا بَيْنِي وَبَيْنَكُمْ وَمَنْ عِنْدَهُ عِلْمُ الْكِتَابِযারা অবিশ্বাস করেছে তারা বলে,‘তুমি আল্লাহর রাসূল নও।’ ‏তুমি বল,‘আমার ও তোমাদের মধ্যে ‎(রেসালাতের) ‏সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট এবং সেই ব্যক্তি যার কাছে গ্রন্থের পূর্ণ জ্ঞান রয়েছে।’অধিকাংশ তাফসীরকার স্বীকার করেছেন যে,আয়াতে বর্ণিত সেই ব্যক্তি হলেন হযরত আলী ‎(আ.)। যেমন আসমী ‎‘যায়নুল ফাতা’ ‏নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন এবং সা’লাবী আবদুল্লাহ ইবনে আতা থেকে বর্ণনা করেছেন যে,আবদুল্লাহ বিন সালাম বলতেন,‘যার কাছে গ্রন্থের পূর্ণ জ্ঞান আছে’-এর উদ্দিষ্ট হযরত আলী ‎(আ.)। এজন্যই হযরত আলী ‎(আ.) ‏বারবার বলতেন,‘আমার কাছে আমার মৃত্যুর পূর্বে যা চাও জিজ্ঞেস কর।’১৪৮. ‏সূরা নাহলের ৪৩ নং আয়াতوَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ إِلَّا رِجَالًا نُوحِي إِلَيْهِمْ فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَতোমার পূর্বেও আমরা কেবল পুরুষদেরই ‎(রাসূল করে) ‏প্রেরণ করেছি যাদের প্রতি আমরা প্রত্যাদেশ প্রেরণ করতাম;যদি তোমরা না জেনে থাক তবে যারা জানে তাদের জিজ্ঞেস কর।আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেন ‎: ‏জ্ঞানী ব্যক্তিরা অর্থাৎ আহলুয যিকর হলেন হযরত মুহাম্মাদ ‎(সা.),হযরত আলী ‎(আ.),হযরত ফাতেমা ‎(আ.),হযরত হাসান ও হুসাইন ‎(আ.)। যাবের ইবনে আবদুল্লাহ বলেছেন ‎: ‏যখন এই আয়াত নাযিল হল তখন হযরত আলী বললেন ‎: ‏আমরাই হলাম জ্ঞানের ভাণ্ডার।১৫৯. ‏সূরা আহযাবের ৩৩ নং আয়াতوَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى وَأَقِمْنَ الصَّلَاةَ وَآتِينَ الزَّكَاةَ وَأَطِعْنَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا‘হে নবী পরিবার! ‏আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদের সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে।’উম্মুল মুমিনীন হযরত উম্মে সালামার ঘরে এ আয়াত নাযিল হলে রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏হযরত ফাতিমা,ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন ‎(আ.)-কে ডাকেন এবং তাঁদেরকে একটি চাদরে ঢেকে নেন। হযরত আলী তাঁর পেছনে ছিলেন। তিনি তাঁকেও চাদরে ঢেকে নেন। অতঃপর বলেন ‎: ‘হে আল্লাহ্! ‏এরা আমার আহলে বাইত। অতএব,তুমি তাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করে দাও এবং তাদেরকে উত্তমরূপে পবিত্র কর।’ ‏তখন উম্মে সালামা বলেন ‎: ‘হে আল্লাহর রাসূল! ‏আমিও কি তাদের অন্তর্ভুক্ত?’ ‏তিনি বলেন ‎: ‘তুমি স্ব স্থানে আছ এবং তুমি কল্যাণের মধ্যেই আছ।’১৬হযরত উম্মে সালামা ছাড়াও হযরত আবু সাঈদ খুদরী ও আনাস ইবনে মালিক কর্তৃক এ হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে।১৭১০. ‏সূরা শূরার ২৩ নং আয়াতقُلْ لَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا إِلَّا الْمَوَدَّةَ فِي الْقُرْبَى‘বল,আমি এর বিনিময়ে তোমাদের নিকট থেকে আমার নিকটাত্মীয়দের প্রতি ভালবাসা ছাড়া আর কোন প্রতিদান চাই না।’রাসূলুল্লাহ ‎(সা.)-এর নিকটাত্মীয় আহলে বাইতের সদস্যদের প্রতি ভালবাসা পোষণকে এ আয়াত দ্বারা মহান আল্লাহ মুসলমানদের জন্য ফরয বলে ঘোষণা করেন।হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেছেন ‎: ‏যখন এ আয়াত নাযিল হল তখন সাহাবিগণ জিজ্ঞেস করলেন,হে রাসূলুল্লাহ! ‏আপনার নিকটাত্মীয়,যাদেরকে ভালবাসা আমাদের ওপর ওয়াজিব করা হয়েছে তারা কারা? ‏রাসূল ‎(সা.) ‏বললেন ‎: ‏আলী,ফাতেমা,হাসান ও হুসাইন।১৮রাসূলুল্লাহ ‎(সা.)-এর হাদীসে আলী ‎(আ.)হযরত আলীর মর্যাদা সম্পর্কে মহানবী ‎(সা.)-এর নিকট থেকে অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এখানে কয়েকটি উল্লেখ করা হল ‎:১. ‏সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস বলেন,নবী ‎(সা.) ‏তাবুক যুদ্ধের সময় আলীকে লক্ষ্য করে বলেছেন ‎: ‘তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে,মর্যাদার দিক থেকে মূসার নিকট হারুন যে পর্যায়ে ছিলেন,তুমিও আমার নিকট ঐ পর্যায়ে রয়েছ?’১৯২. ‏অন্য একটি হাদীসে এসেছে ‎: ‏রাসূল বলেন ‎: ‘তুমি তো আমার নিকট তদ্রূপ যেরূপ হারুনের স্থান মূসার নিকট। পার্থক্য এতটুকু যে,আমার পরে কোন নবী নেই।’২০৩. ‏রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏ইমাম হাসান ও হুসাইনের হাত ধরে বলেন ‎: ‘যে ব্যক্তি আমাকে ভালবাসে এবং এ দু’জন ও তাদের পিতা-মাতাকে ভালবাসে,সে কিয়ামতের দিন আমার সাথে একই মর্যাদায় অবস্থান করবে।’২১৪. ‏আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণিত। রাসূল বলেছেন ‎: ‘আলীর চেহারার দিকে তাকানোও ইবাদত।’২২৫. ‏রাসূলুল্লাহ্ ‎(সা.) ‏আলী ‎(আ.)-কে সম্বোধন করে বলেছিলেন ‎: ‘মুমিনরাই তোমাকে মহব্বত করবে এবং মুনাফিকরাই তোমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবে।’২৩৬. ‏তিরমিযী,নাসাঈ ও ইবনে মাযাহ হুবশী ইবনে জুনাদাহ্ ‎(রা.) ‏থেকে বর্ণনা করেছেন। রাসূল ‎(সা.) ‏বলেছেন ‎: ‘আলী আমা থেকে এবং আমি আলী থেকে। যে ব্যক্তি আলীকে ভালবেসেছে,সে আমাকে ভালোবেসেছে। আর যে ব্যক্তি আলীকে ভালবেসেছে,সে আল্লাহকে ভালবেসেছে। যে ব্যক্তি আলীর সাথে শত্রুতা পোষণ করেছে সে আমার সাথে শত্রুতা পোষণ করেছে। আর যে আমার শত্রু সে আল্লাহর শত্রু। যে ব্যক্তি আলীকে কষ্ট দিয়েছে,সে আমাকে কষ্ট দিয়েছে।’২৪৭. ‏রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏বলেন ‎: ‘(হে আলী!) ‏দুনিয়া ও আখেরাতে তুমি আমারই ভাই।’২৫৮. ‏আবদুল্লাহ ইবনে বুরাইদা ‎(র.) ‏থেকে তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন ‎: ‏রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏বলেছেন ‎: ‘চার ব্যক্তিকে ভালবাসতে আল্লাহ আমাকে আদেশ করেছেন এবং তিনি আমাকে এও অবহিত করেছেন যে,তিনিও তাদের ভালবাসেন। বলা হল ‎: ‏হে আল্লাহর রাসূল! ‏আমাদের তাদের নামগুলো বলুন। তিনি বলেন ‎: ‏আলীও তাদের অন্তর্ভুক্ত। এ কথা তিনি তিনবার বলেন। ‎(অবশিষ্ট তিনজন হলেন) ‏আবু যার,মিকদাদ ও সালমান।...’২৬৯. ‏জাবির ‎(রা.) ‏থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন ‎: ‏তায়েফ অভিযানের দিন রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏আলীকে কাছে ডেকে তার সাথে চুপিসারে আলাপ করেন। লোকেরা বলল ‎: ‏তিনি তাঁর চাচাত ভাইয়ের সাথে দীর্ঘক্ষণ চুপিসারে কথা বললেন। রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏বলেন ‎: ‏আমি তার সাথে চুপিসারে কথা বলিনি;বরং আল্লাহই তার সাথে চুপিসারে কথা বলেছেন। ‎(অর্থাৎ তার সাথে চুপিসারে কথা বলার জন্য আল্লাহ্ই আমাকে আদেশ করেছেন।)২৭হযরত আলী সম্পর্কে অন্যান্য সাহাবীহযরত আবু বকর প্রায়ই হয়রত আলীর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতেন। হযরত আয়েশা এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন ‎: ‘আমি রাসূলে করীমকে বলতে শুনেছি,আলীর মুখ দেখা ইবাদাতের শামিল।’২৮হযরত উমর বিন খাত্তাব বলতেন,হযরত আলী বিন আবি তালিবের তিনটি বৈশিষ্ট্য ছিল। যদি তার একটি আমার থাকত তাহলে আমি বলতাম যে,আমাকে লাল রঙের একটি উট দেয়া হলে তা অপেক্ষাও আমি তা পছন্দ করতাম। তাঁকে এ তিনটি বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন ‎: ‏১.তাঁর বিয়ে হয় রাসূল ‎(সা.)-এর কন্যার সাথে,২. ‏তাঁর সঙ্গে রাসূলে করীমের মসজিদে অবস্থান এবং যা রাসূলে করিমের জন্য বৈধ ছিল তার জন্যও তা বৈধ ছিল এবং ৩. ‏খায়বার যুদ্ধের পতাকা বহনের দায়িত্ব তাঁর ওপর ন্যস্ত ছিল।২৯হযরত উমর বলেছেন,হে আল্লাহ! ‏আমার ওপর এমন কোন বিপদ দিও না যখন আবুল হাসান ‎(আলী) ‏আমার নিকট উপস্থিত না থাকে। কারণ,তিনি আমার নিকট উপস্থিত থাকলে আমাকে সে বিপদ থেকে নিষ্কৃতি দেবেন।’৩০তাবরানী হযরত ইবনে আব্বাস থেকে রেওয়ায়াত করেছেন যে,হযরত আলীর আঠারটি বৈশিষ্ট্য এমন ছিল যা সমগ্র উম্মতের কারও ছিল না।’৩১তথ্যসূত্র১. ‏মমতাজ বেগম কর্তৃক প্রকাশিত নাহজ আল বালাঘা,২য় মুদ্রণ,আল খুতবাতুল কাসেয়াহ্,খুতবা নং ১৯১২. ‏প্রাগুক্ত৩. ‏প্রাগুক্ত৪. ‏মুসতাদরাকে হাকেম,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏১১২;এটি ইমাম মালেক কর্তৃক বর্ণিত। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে হেরা গুহায় জিবরাঈল ‎(আ.) ‏কর্তৃক রাসূলুল্লাহ ‎(সা.)-এর নবুওয়াত ঘোষণার পর পরই হযরত আলী ‎(আ.) ‏তাঁর ঈমান আনার বিষয়টি প্রকাশ করেন।৫. ‏সুনানে ইবনে মাজাহ্,১ম খণ্ড,পৃ. ‏৪৪৬. ‏নূর-এ-সাকালাইন কর্তৃক প্রকাশিত,সাইয়্যেদ আলী জাফরী প্রণীত আল মুরতাজা,পৃ. ‏৩০।৭. ‏এহইয়াউ উলুমিদ্দীন,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏২৩৮;নুরুল আবসার,পৃ. ‏৮৬,মুসতাদরাকে হাকেম,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏৪;তাফসীরে কুমী,১ম খণ্ড,পৃ. ‏৭১;তাযকিরাতু সিবতে ইবনে যাওযী,পৃ. ‏২১;ইয়ানাবিউল মাওয়াদ্দাহ,পৃ. ‏৯২।৮. ‏তাফসীরে জালালাইন,১ম খণ্ড,পৃ.৬০;বায়দ্বাভী,১ম খণ্ড,পৃ. ‏১১৮,তাফসীরে দুররুল মানসুর,২য় খণ্ড,পৃ. ‏৩৯,মিশর মুদ্রণ;মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বাল,১ম খণ্ড,পৃ. ‏১৮৫;৯. ‏মাজমাউল বায়ান,২য় খণ্ড,পৃ. ‏১৪১;তাফসীরে কুমী,১ম খণ্ড,পৃ. ‏১৪১;ইয়ানাবিউল মাওয়াদ্দাহ,পৃ. ‏২১;শাওয়াহেদুত তানযিল,১ম খণ্ড,পৃ. ‏১৪৮;তাফসীরে ফুরাত,পৃ.২৮১০. ‏তাফসীরে তাবারী,৬ষ্ঠ খণ্ড,পৃ. ‏১৬৫;তাফসীরে রাযী,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏৪৩১;মানাকেবে খাওয়ারেযমী,পৃ. ‏১৭৮;যাখায়েরুল উকবা,পৃ. ‏১০২;তাফসীরে ইবনে কাসীর,২য় খণ্ড,পৃ. ‏৭১;আল- ‏বেদায়া ওয়ান নেহায়া,৭ম খণ্ড,পৃ. ‏৩৫৭;সাওয়ায়েকে মুহরিকাহ,পৃ. ‏২৫;১১. ‏মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বাল,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ‏৩৭২;ইমাম নাসাঈ প্রণীত খাসায়েসে আমীরুল মুমিনীন,পৃ. ‏২১;মুসতাদরাকে হাকেম,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏১০৯;আল গাদীর,১ম খণ্ড,পৃ. ‏২১৪ ও ২২৯;শাওয়াহেদুত তানযিল,১ম খণ্ড,পৃ. ‏১৮৭ ।১২. ‏তাফসীরে তাবারী,৩য় খণ্ড,মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বল,৩য় খণ্ড,দারে কুতনী।১৩. ‏তাফসীরে দুররে মানসুর,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ‏৪৫ দ্রষ্টব্য।১৪. ‏তাফসীরে দুররে মানসুর,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ‏৬৯ ।১৫. ‏কেফাইয়াতুল মুওয়াহহিদীন,২য় খণ্ড,পৃ. ‏৬৫০;মাজমাউল বায়ান,২য় খণ্ড,পৃ. ‏৪১৩;কানযুল উম্মাল,৬ষ্ঠ খণ্ড,পৃ. ‏১৫৬;তাফসীরে তাবারী,১৪তম খণ্ড,পৃ. ‏১০৮ ।১৬. ‏বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত জামে আত-তিরমিযী,৬ষ্ঠ খণ্ড,হাদীস নং ৩৭২৫,পৃ. ‏৩৫৯ ।১৭. ‏মুসনাদে আহমাদ,১ম খণ্ড,পৃ. ‏৩৩১;যাখায়েরুল উকবা,পৃ. ‏২১,তাফসীরে তাবারী,২২তম খণ্ড,পৃ. ‏৮;মুসতাদরাকে হাকেম,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏২০৮;ফাজায়েলে খামসাহ,১ম খণ্ড,পৃ. ‏২২৪;শাওয়াহেদুত তানযিল,২য় খণ্ড,পৃ. ‏১০ ।১৮. ‏যাখায়েরুল উকবা,পৃ. ‏৯ ও ১২;তাফসীরে যামাখশারী,২য় খণ্ড,পৃ. ‏৩৩৯;সাওয়ায়েকে মুহরিকাহ,পৃ. ‏১০১,তাফসীরে দুররুল মানসূর,৬ষ্ঠ খণ্ড,পৃ. ‏৭;মুসনাদে আহমাদ,১ম খণ্ড,পৃ. ‏২২৯;আল গাদীর,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏১৭২;শাওয়াহেদুত তানযিল,২য় খণ্ড,পৃ. ‏৩০ ।১৯. ‏আধুনিক প্রকাশনী কর্তৃক প্রকাশিত সহীহ আল বুখারী,৩য় খণ্ড,হাদীস নং ৩৪৩১;বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত সহীহ মুসলিম,৭ম খণ্ড,হাদীস নং ৬০৪২ ।২০. ‏বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত সহীহ মুসলিম,৭ম খণ্ড,হাদীস নং ৬০৪০ ও জামে আত-তিরমিযী,৬ষ্ঠ খণ্ড,হাদীস নং ৩৬৬৮ ।২১. ‏বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত জামে আত-তিরমিযী,৬ষ্ঠ খণ্ড,হাদীস নং ৩৬৭০২২. ‏এমদাদীয়া লাইব্রেরী কর্তৃক প্রকাশিত হযরত আলী ইবনে আবি তালিব ‎(রা.),পৃ. ‏১৫ ।২৩. ‏বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত জামে আত-তিরমিযী,৬ষ্ঠ খণ্ড,হাদীস নং ৩৬৭৩ ।২৪. ‏এমদাদিয়া লাইব্রেরী কর্তৃক প্রকাশিত হযরত আলী ‎(রা.),পৃ. ‏১৫-১৬ ।২৫. ‏বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত জামে আত-তিরমিযী,৬ষ্ঠ খণ্ড,হাদীস নং ৩৬৫৮;২৬. ‏প্রাগুক্ত,হাদীস নং ৩৬৫৬;২৭. ‏প্রাগুক্ত,হাদীস নং ৩৬৬৪২৮. ‏সাওয়ায়েকে মুহরিকাহ,পৃ. ‏১৭৫ ।২৯. ‏সাওয়ায়েকে মুহরিকাহ,৩য় খণ্ড,এবং মুসতাদরাকে হাকেম,৩য় খণ্ড ।৩০. ‏মুনতাখাবে কানজুল উম্মাল,৩য় খণ্ড ।৩১. ‏সাওয়ায়েকে মুহরিকাহ ১১৩ ।(প্রত্যাশা,৩য় বর্ষ, ‏১ম সংখ্যাপ্রচারে মোঃ জাহিদ হুসাইন

শিশু ইমাম হযরত জাওয়াদ (আ.)'র জন্মবার্ষিকীসকল মোমিন মোমিনা কে জানাই ঈদ মোবারক🎂🎂🎂🎂🎂(((পর্ব ১)))🎂🎂🎂🎂🎂দশই রজব ইসলামের মহাখুশির দিন। এই দিনে পৃথিবীতে এসেছিলেন মাওলা মোহাম্মদ (সা) পবিত্র আহলে বাইতের সদস্য নবম ইমাম হযরত জাওয়াদ বা তাকি(আ)। নবীজীর আহলে বাইতের সদস্যরা কেবল মুসলমানদেরই ধর্মীয় নেতা নন বরং যারাই সত্য পথের সন্ধানী কিংবা কল্যাণকামী-তাদের সবারই নেতা।আহলে বাইতের এই মহান ইমাম হযরত জাওয়াদ (আ) এর জন্ম-বার্ষিকীতে আপনাদের সবার প্রতি রইলো অশেষ অভিনন্দন ও প্রাণঢালা মোবারকবাদ এবং মাওলা মোহাম্মদ (সা.) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের শানে পেশ করছি অসংখ্য দরুদ ও সালাম ।ইমাম জাওয়াদের জন্ম হয়েছিল ১৯৫ হিজরিতে তথা ৮১১ খ্রিস্টাব্দের ১২ এপ্রিল পবিত্র মদীনায়। মজলুম ও দরিদ্রদের প্রতি ব্যাপক দানশীলতা ও দয়ার জন্য তিনি 'জাওয়াদ' উপাধি পেয়েছিলেন। তাকি বা খোদাভীরু ছিল তাঁর আরেকটি উপাধি। জগত-বিখ্যাত মহাপুরুষ ইমাম রেজা (আ) ছিলেন তাঁর বাবা। আর তাঁর মায়ের নাম ‘সাবিকাহ’ বলে জানা যায়। ইমাম রেজা (আ) তাঁর এই স্ত্রীর নাম রেখেছিলেন খিইজরান। তিনি ছিলেন মহানবীর স্ত্রী উম্মুল মু’মিনিন হযরত মারিয়া কিবতির (আ) বংশধর। ইমাম জাওয়াদ (আ) ১৭ বছর ইমামতের দায়িত্ব পালনের পর মাত্র ২৫ বছর বয়সে শাহাদত বরণ করেন। তিনিই হলেন ইসলামের ইতিহাসের সবচেয়ে কম বয়স্ক ইমাম। আহলে বাইতের অন্য ইমামগণের মত ইমাম জাওয়াদ (আ.)ও ছিলেন উচ্চতর নৈতিক গুণ, জ্ঞান ও পরিপূর্ণতার অধিকারী। ইসলামের মূল শিক্ষা ও সংস্কৃতির পুনরুজ্জীবন এবং বিকাশ ছিল তাঁর তৎপরতার মূল লক্ষ্য বা কেন্দ্রবিন্দু। সেযুগের সব মাজহাবের জ্ঞানী-গুণীরা ইমাম জাওয়াদ (আ.)'র উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন।সমসাময়িক যুগের প্রখ্যাত সুন্নি চিন্তাবিদ কামালউদ্দিন শাফেয়ি ইমাম জাওয়াদ (আ.) সম্পর্কে বলেছেন, "মুহাম্মাদ বিন আলী তথা ইমাম জাওয়াদ (আ.) ছিলেন অত্যন্ত উঁচু মর্যাদা ও গুণের অধিকারী। মানুষের মুখে মুখে ফিরতো তাঁর প্রশংসা। তাঁর উদারতা, প্রশস্ত দৃষ্টি ও সুমিষ্ট কথা সবাইকে আকৃষ্ট করত। যে-ই তাঁর কাছে আসতো নিজের অজান্তেই এই মহামানবের অনুরাগী হয়ে পড়ত এবং তাঁর কাছ থেকে জ্ঞান অর্জন করত।" ইমাম জাওয়াদ (আ) মাত্র সাত বা আট বছর বয়সে ইমামতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এতো অল্প বয়সে তাঁর ইমামতিত্বের বিষয়টি ছিল যথেষ্ট বিস্ময়কর। ফলে অনেকেই এ বিষয়ে সন্দেহ করতেন। অথচ আল্লাহর তো এই শক্তি আছে যে তিনি মানুষকে তার বয়সের স্বল্পতা সত্ত্বেও পরিপূর্ণ বিবেক-বুদ্ধির পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেন। কোরানের আয়াতের ভিত্তিতে পূর্ববর্তী উম্মতের মধ্যেও এরকম উদাহরণ বহু আছে। যেমন শিশুকালে হযরত ইয়াহিয়া (আ) এর নবুয়্যত প্রাপ্তি, মায়ের কোলে নবজাতক ঈসা (আ) এর কথা বলা ইত্যাদি সর্বশক্তিমান আল্লাহর অশেষ ক্ষমতারই নিদর্শন। ইমাম জাওয়াদ (আ) শৈশব-কৈশোরেই ছিলেন জ্ঞানে-গুণে, ধৈর্য ও সহনশীলতায়, ইবাদত-বন্দেগিতে, সচেতনতায়, কথাবার্তায় শীর্ষস্থানীয় মহামানব। একবার হজ্জ্বের সময় বাগদাদ এবং অন্যান্য শহরের বিখ্যাত ফকীহদের মধ্য থেকে আশি জন মদীনায় ইমাম জাওয়াদ (আ) এর কাছে গিয়েছিলেন। তাঁরা ইমামকে বহু বিষয়ে জিজ্ঞেস করে অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত ও সন্তোষজনক জবাব পেলেন। ফলে জাওয়াদ (আ)’র ইমামতিত্বের ব্যাপারে তাদের মনে যেসব সন্দেহ ছিল-তা দূর হয়ে যায়।প্রচারে মোঃ জাহিদ হুসাইন আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম‌লা'নাতুল্লাহি আলাল কাজেবিন🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂