আল্লাহ পাক স্বয়ং মোয়াবিয়াকে জাহান্নামী বলছে। আমার কিছু করার নাই। ধারাবাহিক পোস্ট নং ০১+২ পর্ব । ‎♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦কারবালা প্রান্তরের ঐতিহাসিক পটভূমি। সূরা আন নিসা ‎(النّساء), ‏আয়াত: ‏৪ঃ ৯৩وَمَن يَقْتُلْ مُؤْمِنًا مُّتَعَمِّدًا فَجَزَآؤُهُۥ جَهَنَّمُ خَٰلِدًا فِيهَا وَغَضِبَ ٱللَّهُ عَلَيْهِ وَلَعَنَهُۥ وَأَعَدَّ لَهُۥ عَذَابًا عَظِيمًاউচ্চারণঃ ওয়া মাইঁ ইয়াকতুলমু’মিনাম মুতা‘আম্মিদান ফাজাঝাউহূজাহান্নামুখা-লিদান ফীহা-ওয়া গাদিবাল্লা-হু ‎‘আললইহি ওয়া লা‘আনাহু ওয়া আ‘আদ্দাল্লাহু ‎‘আযা-বান ‎‘আজীমা-। অর্থ: "যে ব্যাক্তি জ্ঞাতসারে মোমিন কে হত্যা করে তাহার পুরষ্কার জাহান্নাম, ‏ঊহাতে সে স্থায়ী হইয়া থাকিবে এবং তাহার উপরে আল্লাহর গজব ও লানত, ‏এবং তাহার জন্য মহা শাস্তি প্রস্তুত করিয়াছেন৷"এবার আপনি ই সিদ্ধান্ত নেন কোরআন মানবেন নাকি মুয়াবিয়াকে ভালবেসে যাবেন।কারণ মোয়াবিয়া সিফফিনের যুদ্ধে মাওলা আলীর পক্ষের হাজার হাজার বিখ্যাত সাহাবীদেরকে হত্যা করেছে। তাছাড়া সে এই যুদ্ধে বিখ্যাত আশেকে রাসূল ওয়াইজ করণী রাঃ কে হত্যা করে। আর তারা সবাই ছিলেন প্রথম শ্রেণীর মুমিন। এবার আপনার বিচার বুদ্ধি দিয়ে বুঝে নিন। মোয়াবিয়া কতোবড় নিকৃষ্ট মোনাফেক ছিলো। এরপরও যদি কেউ মোয়াবিয়াকে সাহাবী বলে, ‏আপনি ধরে নিবে সে পবিত্র কুরআন শরীফ অস্বীকারকারী এবং পাক পান্জাতনের চিরশত্রু। এদের সাথে আপনি কোন সম্পর্ক রাখবেন না। তাহলে আপনি কখনো ঈমান নিয়ে কবরে যেতে পারবেন না। যেকোনো আহলে বায়াত প্রেমিক এই পোস্ট কপি করার পূর্ণ অধিকার রাখেন ।♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦স্বয়ং রাসূল পাক সঃ মোয়াবিয়াকে মোনাফেক বলেছে। বিস্তারিত পড়ুন। ‎( ‏ধারাবাহিক পর্ব নং২ । ‎♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦কারবালা প্রান্তরের ঐতিহাসিক পটভূমি। ইতিহাসের সর্বকালের সর্বনিকৃষ্ট মোনাফেক মাবিয়ার বংশ পরিচয় এবং মাবিয়ার ইসলাম বিদ্বেষী কার্যকলাপ। এই মাবিয়া হলো নরপিশাচ কাফের এজিদের পিতা। এই মাবিয়া এজিদকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসিয়েছিল। কে এই মাবিয়ামাবিয়ার পরিচয় দিতে গিয়ে ‎" ‏খিলাফতের ইতিহাস ‎" ‏নামক গ্রন্হের লেখক মুহাম্মদ আহসান উল্লাহ বলেন, ‏আমির মাবিয়া হযরত রাসূল পাক ‎(সঃ) ‏এর মুখোশধারী সাহাবী ছিলেন। তার পুরো বংশ রাসূল পাক সঃ এর সবচেয়ে বড় দুশমন ছিলেন এবং অবশেষে নিরুপায় হয়ে মক্কা বিজয়ের পর মুসলমানদের চরম ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে মাবিয়া এবং তার বংশধরেরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। রাসূল পাক সঃ এর প্রবলতম ঘোর শক্রু কুরাইশ দলপতি নরপিশাচ আবু সুফিয়ান তার পিতা ছিলেন। যিনি রাসূল পাক সঃ এর বিরুদ্ধে ২৭টি যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিল। রাসূল পাক সঃ কে হত্যা করতে সর্ব ক্ষণ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকত। এমন কোন অপরাধ নাই যে, ‏সে রাসূল পাক সঃ এর সাথে করার চেষ্টা করে নাই। যখন দেখল রাসূল পাক সঃ এর কোন ক্ষতি করতে সক্ষম নয়, ‏তখন দুরভিসন্ধি নিয়ে মক্কা বিজয়ের পর তার সন্তান মাবিয়াকে নিয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। যাতে মুসলমানদের ভিতরে ঢুকে চরম ক্ষতি করা যায়। এই ধরণের চরম মোনাফেকি উদ্দেশ্য নিয়ে মুসলমানদের ভিতরে ঢুকে পড়ে। মাবিয়ার মাতার নাম ছিল হেন্দা। যিনি ইতিহাসের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নিকৃষ্ট নারী হিসাবে পরিচিত। এই নরপিশাচ নারী রাসূল পাক সঃ এর আপন চাচা হামজা রাঃ এর কলিজা চিবিয়ে খেয়েছিল এবং হামজা রাঃ এর শরীর মোবারক টুকরো টুকরো করে কেটে গলায় মালা পরেছিল। এই সেই নারী যিনি প্রতিটি যুদ্ধে কাফেরদেরকে উৎসাহ প্রদান করত। তার ভাই, ‏পিতা ‎-মাতা এবং বংশধরেরা রাসূল পাক সঃ এর ঘোরতর শক্রু ছিল। এই নরপিশাচ হেন্দার ভাই এবং পিতা বদরের যুদ্ধে মারা যায়। আর হেন্দার এই ভাই ও পিতাকে বদর যুদ্ধে হামজা রাঃ হত্যা করে। তাই হেন্দা প্রতিশোধ গ্রহণ করার জন্য ওহুদের যুদ্ধে হামজা রাঃ এর কলিজা চিবিয়ে খায় এবং তার শরীর মোবারক টুকরো টুকরো করে কেটে গলায় মালা পরে। মাবিয়ার দাদা ছিলেন উমাইয়া। এই উমাইয়া নরপিশাচ হযরত বিল্লাহ রাঃ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার জন্য নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে অত্যাচার করেন। আর এই উমাইয়া নামানুসারে মাবিয়া রাসূল পাক সঃ এর নাম বাদ দিয়ে দাদার নামে উমাইয়া মুসলিম খিলাফত চালু করেন। আর এই উমাইয়া খিলাফত শাসনামল ছিল দীর্ঘ ৮৯ বছর। আচ্ছা বলুন তো একজন বিধর্মী কাফেরের নামে কি মুসলিম খিলাফত হতে পারে। আমার রাসূল পাক সঃ কে চরমভাবে হেয়পতিপন্ন এবং অপমান করার জন্য মাবিয়া ও তার নরপিশাচ ছেলে এজিদ এই কাজটি করেছিল। রাসূল পাক সঃ এর নাম বাদ দিয়ে স্হাপন করল নরপিশাচ উমাইয়ার নাম। যা আজও ইতিহাসের পাতায় রয়ে গেছে।প্রথম দিকে মাবিয়া একজন সামান্য সৈনিক, ‏পরে একজন ক্ষুদ্র সেনাপতি ছিলেন। তারপর ক্ষমতার লোভে হযরত আলী রাঃ এর সাথে বিদ্রোহী হয়ে শিফফিনের যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। এই যুদ্ধের মাধ্যমে মাবিয়া কৌশল ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে অনেক ক্ষমতাবান হন। পরবর্তীতে মাবিয়া খারেজিদের দ্বারা মাওলা আলীকে গুপ্ত হত্যা করে মুসলিম খিলাফতের খলিফা নিযুক্ত হন। আবু সুফিয়ান জীবিত থাকলে দেখতে পারতেন, ‏রাসূল পাক সঃ এর যে সকল কাজের বিরোধিতা তিনি সর্বদা করতেন, ‏সেই সকল কাজের বিরোধিতা করে মাবিয়া মুসলিম খিলাফতের বাদশাহ হন। মাবিয়া রাসূল পাক সঃ এর একজন নামধারী সাহবী হলেও, ‏রাসূল পাক সঃ এর সঙ্গ তিনি পাননি। কারণ রাসূল পাক সঃ মক্কা বিজয় করে আবার মদিনায় চলে যায়। আর মাবিয়া মক্কায় থেকে যায়। হযরত রাসূল পাক সঃ হযরত আলী রাঃ সমন্ধে যা বলেন, " ‏যে ব্যক্তি আমার আলীকে গালি দিল, ‏সে যেন আমাকে গালি দিল ‎"। ‎( ‏মেশকাত শরিফ, ‏পৃষ্ঠা নং ৫৬৫)। ‎" ‏হে আল্লাহ ‎! ‏আমি যার বন্ধু, ‏আলীও তার বন্ধু। হে আল্লাহ ‎! ‏যে আলীকে ভালবাসবে তুমি তাকে ভালবাসিও, ‏যে আলীর শক্রু হবে তুমি তার শক্রু হইও ‎"। ‎( ‏মেশকাত শরীফ, ‏পৃষ্ঠা নং ৫৬৫ ‎)। ‎" ‏মোনাফেক ব্যক্তিই আলীকে ভালবাসবে না এবং মু'মেন ব্যক্তি আলীর প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবে না ‎"। ‎( ‏মেশকাত শরীফ, ‏পৃষ্ঠা নং ৫৬৪ ‎)। ‎" ‏আমি জ্ঞানের শহর এবং আলী তার দরজা ‎"। ‎( ‏শরহে ফিকহে আকবার, ‏পৃষ্ঠা নং ১১২ ‎)। ‎" ‏দুনিয়ার ধন-সম্পদের মধ্যে আমার জন্য দুইটি ‎( ‏ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইন ‎) ‏স্বর্গীয় ফুলস্বরুপ ‎"। ‎( ‏মেশকাত শরীফ, ‏পৃষ্ঠা নং ৫৬৯ ‎)। ‎" ‏আমি যার মাওলা, ‏হযরত আলী তার মাওলা ‎"। ‎( ‏বুখারী শরীফ ৫ম খন্ড, ‏পৃষ্ঠা নং ২৮০। রাহমানিয়া লাইব্রেরি, ‏ঢাকা। ‎)। হযরত আলী রাঃ বলেন, " ‏কোন মুমেন ব্যক্তির হৃদয়ে আমার এবং মাবিয়ার ভালবাসা একসাথে থাকতে পারে না ‎"। ‎( ‏মাওলার অভিষেক, ‏সদর উদ্দিন চিশতি ‎)। সুতরাং হযরত আলী রাঃ এর সাথে বিরোধিতা করা মানে রাসূল পাক সঃ এর সাথে বিরোধিতা করা। আর রাসূল পাক সঃ এর সাথে বিরোধিতা করা মানে স্বয়ং আল্লাহর সাথে বিরোধিতা করা। অথচ দেখা যায় যে, ‏মাবিয়া হযরত আলী রাঃ এর সাথে চরম বিরোধিতা করেছেন। শিফফিন নামক যুদ্ধ তার জলন্ত প্রমাণ। আসলে মাবিয়া রাসূল পাক সঃ এর রেখে যাওয়া ধর্মকে ধবংস করতে এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার জন্যই এই বিরোধিতা করছেন।মাবিয়া সমন্ধে ঐতিহাসিক কর্ণেল অসবর্ন বলেন, " ‏বিচক্ষণহীন, ‏অবিবেকী ও নির্মম উমাইয়া বংশের প্রথম খলিফা তার নিজ স্বার্থ বজায় রাখার জন্য যেকোন অপরাধমূলক কার্য করতে সংকোচ বোধ করত না। প্রবল প্রতিদ্বন্দীকে অপসারণের জন্য হত্যাই ছিল তার চিরাচরিত রীতি। সে ইমাম হাসানকে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বিষ প্রয়োগে হত্যা করেছিল। হযরত আলীর সহকারী মালিক আল আসতারকে অনুরূপ ভাবে হত্যা করেছিল। তার পুত্র এজিদের উত্তরাধিকারী নিরাপদ করবার জন্য মাবিয়া হযরত আলীর একমাত্র জীবিত পুত্র হোসাইনের সাথে প্রদত্ত ওয়াদা ভঙ্গ করতে দ্বিধা করেন নাই ‎"।মাবিয়া সমন্ধে ঐতিহাসিক মুর বলেন, " ‏কোরআন ও হাদিসের আদর্শে অনুপ্রাণিত প্রথম ইসলামী প্রজাতন্ত্রের সমাধি রচনা করেন মাবিয়া। ধূর্ততা, ‏কপটতা ও অসাধুতার আশ্রয় গ্রহণ করে তিনি ইমাম হাসানের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির অবমাননা করে মৃত্যুর পূর্বে শুধুমাত্র নিজ অযোগ্য পুত্রকেই মনোনীত করেন নাই, ‏বরং ছলে-বলে ও কৌশলে আরব জাহানের জনসাধারণের আনুগত্য অর্জন করেন ‎"।মাবিয়া সমন্ধে ঐতিহাসিক আমীর আলী বলেন, ‏মাবিয়া ছিলেন ধূর্ত, ‏ধর্ম ভয়হীন, ‏তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন, ‏কৃপণ অথচ নিজ স্বার্থে অস্বাভাবিক উদার এবং যাবতীয় ধর্মীয় কাজে লোক দেখানো নিষ্ঠাবান। কিন্তু তার কোন পরিকল্পনা বা আকাঙ্ক্ষা পরিপূর্ণতা সাধনে কোন মানবীয় বা ধর্মীয় রীতিনীতিই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারত না ‎"।মাবিয়া বিভিন্ন সময়ে হজরত আলী রাঃ এর প্রতি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তে লিপ্ত ছিল। উহুদের যুদ্ধে মাবিয়া হযরত আলী রাঃ কে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করেছিল। শিফফিনের যুদ্ধে মাবিয়া প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে হযরত আলী রাঃ এর কাছ থেকে নিশ্চিত মৃত্যু থেকে রক্ষা পায়। শিফফিনের যুদ্ধ ক্ষেত্রে হঠাৎ মাবিয়াকে দেখে হযরত আলী রাঃ বলে উঠলেন, " ‏মাবিয়া তুমি নিজে যুদ্ধের ময়দানে আসছ না কেন ‎? ‏তাহলে ব্যাপারটা সহজেই মিমাংসিত হতে পারে ‎"।মাবিয়ার সেনাপতি আমর সম্মান রক্ষার জন্য মাবিয়াকে যুদ্ধে হযরত আলী রাঃ এর মোকাবিলা করবার জন্য উৎসাহিত করলেন। কিন্তু মাবিয়া বললেন, " ‏হযরত আলীর সাথে যুদ্ধ করতে গিয়ে কেউ কোনদিন জীবিত থাকে না ‎"।মাবিয়া প্রায়ই গর্ব করে বলতেন, " ‏আরবীয় রাজাদের মধ্যে আমিই প্রথম রাজা ‎"।মুসলিম জাহানের ৪র্থ খলিফা হযরত আলী রাঃ এর শাহাদাৎ বরণের পর তার জ্যেষ্ঠ পুত্র হযরত ইমাম হাসান রাঃ খলিফা নির্বাচিত হলেন। রাজনীতি এবং কূটনীতি সম্পর্কে ইমাম হাসান রাঃ এর তেমন কোন অভিজ্ঞতা ছিল না। তাছাড়া ইমাম হাসান রাঃ ছিলেন খুবই শান্তশিষ্ট এবং কোমল হৃদয়ের অধিকারী। সিরিয়া ও মিশরের উচ্চবিলাষী শাসক মাবিয়া খিলাফতের এই দুর্বলতার সুযোগ গ্রহণ করলেন। হযরত ইমাম হাসান রাঃ সেনাপতি কায়েসের নেতৃত্বে মাবিয়ার বিরুদ্ধে ১২হাজার সৈন্যের একটি বাহিনী প্রেরণ করেন। কায়েস যখন শক্রু পক্ষের বিরুদ্ধে বীর বিক্রমে যুদ্ধরত, ‏তখন মাবিয়া ধূর্ততার আশ্রয় নিলেন। মাবিয়া বীর যোদ্ধা কায়েসের মৃত্যুর মিথ্যা সংবাদ চারিদিকে ছড়িয়ে দিলেন। ফলে ইমাম হাসান রাঃ এর সৈন্যদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা দেখা দিল। তখন মাবিয়া এবং ইমাম হাসান রাঃ এর সাথে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। মাবিয়ার পরে হযরত ইমাম হোসাইন রাঃ মুসলিম খলিফা হবেন। কিন্তু প্রতারক মাবিয়া ইমাম হাসান রাঃ এর সাথে সম্পাদিত চুক্তি ভঙ্গ করে নরপিশাচ এজিদকে খলিফা নিযুক্ত করে এবং তার নামে খেলাফতের স্বীকৃতি আদায়ের জন্য সকল প্রাদেশিক গভর্নরের নিকট ফরমান জারি করে। কিন্তু মাবিয়ার এই ফরমান মক্কা ও মদিনা লোক ব্যতীত, ‏সকল প্রদেশের গভর্নররা এজিদকে খলিফা হিসাবে মেনে নিল। রাসূল পাক সঃ বলেন, ‏মোনাফেকের চিহ্ন ৩টি। ১/ ‏কথায় কথায় মিথ্যা বলে। ২/ ‏ওয়াদা ভঙ্গ করে। ৩/ ‏আমানতের খিয়ানত করে। আর এই মোনাফেক কাফেরদের চেয়ে ভয়ংকর। আর মাবিয়া ইমাম হাসান রাঃ এর সাথে চুক্তি ভঙ্গ করে, ‏ইতিহাসে সর্বকালের সর্বনিকৃষ্ট মোনাফেক হিসাবে পরিচিত। উল্লেখ্য যে, ‏মাবিয়া হযরত আলী রাঃ এর সময়ও খিলাফত নিয়ে ষড়যন্ত্র করেছিলেন। কিন্তু পেরে উঠতে না পারলেও একেবারে পিছবা হননি। তিনি মোক্ষম সুযোগ মনে করে অতি শীঘ্রই ইরাক আক্রমন করলেন। মাবিয়া দীর্ঘ ২০বছর শাসন ক্ষমতায় ছিলেন এবং তার বংশধরেরা দীর্ঘ ৮৯ বছর মুসলিম খলিফা হিসাবে ক্ষমতায় ছিলেন। ‎( ‏৬৬১ ‎- ‏৭৫০) ‏সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিল। মাবিয়ার দাদার নাম ছিল উমাইয়া। আর এই উমাইয়ের নামে মুসলিম খিলাফত রাষ্ট্রের নামকরণ করা হয়। হযরত রাসূল পাক সঃ এর নাম চিরতরে মুছে ফেলা হয়। এই উমাইয়া ছিল একজন বিধর্মী কাফের এবং রাসূল পাক সঃ ও ইসলামের একজন বড় দুশমন ছিল। সে বিখ্যাত আশেকে রাসূল হযরত বেলাল রাঃ কে নির্মমভাবে নির্যাতন করেছে। উমাইয়া ও তার পুত্র আবু সুফিয়ান রাসূল পাক সঃ এবং ইসলামের বিরোধিতা করে যে ক্ষতি সাধন করেছে, ‏মাবিয়া ও তার পুত্র এজিদের দ্বারা রাসূল পাক সঃ এবং ইসলাম ধর্মের তার চেয়েও অনেক বেশী ক্ষতি সাধিত হয়েছে, ‏যা কোনদিন পূরণ হবার নয়। কারণ উমাইয়া ও তার পুত্র আবু সুফিয়ান রাসূল পাক সঃ বংশের কাউকে হত্যা করতে পারে নাই। কিন্তু মাবিয়া এবং তার পুত্র এজিদ রাসূল পাক সঃ এর পরিবারের সকল সদস্য নির্মমভাবে হত্যার শিকার হয়। তারা হযরত আলী রাঃ, ‏ইমাম হাসান ও হোসাইন রাঃ এবং সন্তানদের সহ সবাইকে কারবালার প্রান্তরে নির্মমভাবে হত্যা করে। মাবিয়া তার পূর্ব পুরুষদের প্রতিশোধ নিতেই বিধর্মী কাফের উমাইয়ার নামে মুসলিম খিলাফত চালু করে এবং এক নতুন ধর্মের প্রবর্তন ঘটান। যা এজিদি ইসলাম নামে পরিচিত এবং এখনো সারা বিশ্বে বিরাজমান।নরপিশাচ এজিদ কারবালার প্রান্তরে ইমাম হোসাইনকে নির্মমভাবে হত্যা করার পর মদিনা ও মক্কায় আক্রমন করে। এজিদের সৈন্য বাহিনী মদীনার মসজিদসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে এবং মদীনাবাসীর উপর চরম নির্যাতন করে এবং শিশুসহ বহু লোককে হত্যা করে। এরপর এজিদের সৈন্য বাহিনী মক্কায় আক্রমন করে ২মাস শহর অবরোধ করে রাখে। এ সময় তারা পবিত্র কাবাগৃহের গিলাফ অগ্নিসংযোগ করে। এই অবরোধ চলাকালে এজিদের মৃত্যু হলে, ‏এজিদের সৈন্য বাহিনীরা মক্কা ছেড়ে দামেস্ক নগরে চলে যায়। যারা মাবিয়াকে সাহাবী মনে করেন, ‏তাদের কাছে আমার কয়েকটি প্রশ্ন। ১/ ‏মাবিয়া কেন শেরে খোদা হযরত আলী রাঃ এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল ‎? ‏২/ ‏মাবিয়া কেন ইতিহাসের উজ্জ্বল নক্ষত্র ইমাম হাসান রাঃ এর সাথে যুদ্ধ করেছিল ‎? ‏৩/ ‏মাবিয়া কেন নরপিশাচ কাফের এজিদকে সমগ্র মুসলিম বিশ্বের খলিফা নিযুক্ত করলো ‎? ‏৪/ ‏মাবিয়া কেন খারেজিদের দলভুক্ত করল। আর এই খারেজিদের নিয়ে মাবিয়া শেরে খোদা হযরত আলী ‎(রাঃ) ‏এবং ইমাম হাসান ‎(রাঃ) ‏এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল। ৫/ ‏মাবিয়া কেন শিফফিনের যুদ্ধে শেরে খোদা হযরত আলী রাঃ এর পক্ষের শত শত নিরীহ নিষ্পাপ বিখ্যাত সাহাবীদের হত্যা করল। আর এই হত্যার দায়ভার কে নিবে। ৬/ ‏মাবিয়া কেন শেরে খোদা হযরত আলী রাঃ এর ওফাতের পর ইমাম হাসান রাঃ কে হটিয়ে নিজে কেন মুসলিম জাহানের খলিফা হলো। মাবিয়া কি ইমাম হাসান রাঃ এর চেয়ে বেশি যোগ্য ছিল ‎? ‏৭/ ‏মাবিয়া কেন ইমাম হাসান রাঃ এর সাথে চুক্তি ভঙ্গ করে ইমাম হোসাইন রাঃ এর পরিবর্তে নিজ পুত্র কাফের এজিদকে মুসলিম জাহানের খলিফা নিযুক্ত করল। তাহলে এজিদ কি ইমাম হোসাইন রাঃ এর চেয়ে বেশি যোগ্য ছিল ‎? ‏৮/ ‏মাবিয়া কেন শিফফিন যুদ্ধের মাধ্যমে বিখ্যাত আশেকে রাসূল ওয়াইজ করণী ‎(রাঃ) ‏কে হত্যা করলো। ৯/ ‏মাবিয়া কেনো রাসূল পাক সঃ এর নাম বাদ দিয়ে, ‏তার দাদা মূর্তি পূজারী উমাইয়ার নামে উমাইয়া মুসলিম খিলাফত চালু করলো। অথচ রাসূল পাক সঃ বলেছেন, ‏মোনাফেক ব্যক্তি হযরত আলীকে ভালবাসবে না। তাহলে আপনারা বলুন ‎, ‏মাবিয়া কি হযরত আলী রাঃ এর সাথে যুদ্ধ করে শক্রুতা পোষণ করল না ‎? ‏নিশ্চয়ই মাবিয়া হযরত আলী রাঃ এর সাথে যুদ্ধ করে শক্রুতা পোষণ করেছেন। একমাত্র বদ্ধ উন্মাদ পাগল এবং মাবিয়ার অনুসারী ছাড়া সবাই বলবে মাবিয়া হযরত আলী রাঃ এর সাথে শক্রুতা করেছেন। মাবিয়া যদি হযরত আলী রাঃ কে ভালবাসত, ‏তাহলে কখনোই হযরত আলী রাঃ এর সাথে যুদ্ধ করতে পারত না। আর এই জন্যই রাসূল পাক সঃ বলেছেন, ‏যে হযরত আলীকে ভালবাসবে না, ‏সে মোনাফেক। মূলত মাবিয়া হযরত আলী রাঃ এর সাথে যুদ্ধ করেননি বরং স্বয়ং রাসূল পাক সঃ এর সাথে যুদ্ধ করেছেন। মূলত রাসূল পাক সঃ মাবিয়াকে মোনাফেক বলেছেন, ‏আমি কিন্তু বলিনি। আমি শুধুমাত্র তুলে ধরেছি। উপরের হাদিসগুলো সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করে মাবিয়া সর্বনিকৃষ্ট মোনাফেক ছিল। কারা এই খারেজি ‎? ‏খারিজ আরবি শব্দ। আর বাংলা অর্থ বাতিল। রাসূল পাক সঃ এর এক ধরনের মোনাফেক সাহাবী ছিল। যারা মক্কা বিজয়ের পর নিরুপায় হয়ে মাবিয়া এবং তার পিতা- ‏মাতার সাথে ইসলাম গ্রহণ করে। এই খারেজি সম্প্রদায় রাসূল পাক সঃ এর বিরুদ্ধে মাবিয়ার পিতা আবু সুফিয়ান এবং আবু জেহেলের নেতৃত্বে ২৭টি যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিল। কিন্তু তারা প্রতিবারই পরাজয় বরণ করে। অবশেষে মক্কা বিজয়ের পর তারা চিন্তা করল, ‏আমরা তো সারাজীবন ইসলাম ধর্মের বাহিরে থেকে রাসূল পাক সঃ এবং তার পরিবার-পরিজন ও ইসলাম ধর্মের কোন ক্ষতি করতে পারলাম না। এখন দেখি ইসলাম ধর্মের ভিতরে ঢুকে নবী পরিবার ধব্বংস করতে পারি কিনা এবং মুহাম্মদের নাম চিরতরে মুছে ফেলতে পারি কিনা। এই উদ্দেশ্যে নিয়েই তারা সবাই মুসলমান হয়ে গেল। রাসূল পাক সঃ ওফাতের পর তারা প্রচন্ডভাবে মাথা চাড়া দিয়ে উঠল। তারা সর্ব ক্ষণ হযরত আলী রাঃ এর বিরোধিতা করতে লাগল এবং ইসলাম বিদ্বেষী কার্যকলাপ শুরু করল। তারা এমন কোন জগন্য কাজ নাই, ‏যা তারা করল না। আর এদেরকে পিছন থেকে কলকাঠি নাড়ত মাবিয়া। কারণ এরা একসময় মাবিয়ার পিতা আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে রাসূল পাক সঃ এর বিরুদ্ধে ২৭টি যুদ্ধ করেছিল। অবশেষে হযরত আলী রাঃ এদেরকে ইসলাম ধর্ম থেকে বাতিল এবং বের করে দেন। এই খারজিরা শুধু মাত্র হযরত আবু বকর রাঃ এবং ওমর ফারুক রাঃ মানে। তারা কখনো শেরে খোদা হযরত আলী রাঃ কে মানে না। বরং তারা বলে হযরত আলী রাঃ খলিফার অযোগ্য। তাই হযরত আলী রাঃ এর বিরুদ্ধে তাদের প্রচন্ড ক্ষোভ ছিল। অবশেষে মাবিয়া এদেরকে দলভুক্ত করেন। পরবর্তীতে মাবিয়ার নির্দেশে এই খারেজিরা শেরে খোদা হযরত আলী রাঃ কে নামাজরত অবস্থায় নৃশংস ভাবে হত্যা করে এবং মাবিয়া সমগ্র মুসলিম জাহানের অবৈধভাবে খলিফা হয়ে যায়। যারা বলে শিফফিনের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল হযরত আলী রাঃ এবং মাবিয়ার ভুল বুঝাবুঝির কারণে। হযরত আলী রাঃ ছিলেন সমস্ত ভুলের উর্ধে। জীবনে বিন্দুমাত্র ভুল করেন নাই। এমন দলিল কেউ দিতে পারবেন না। কারণ রাসূল পাক সঃ ছিলেন জ্ঞানের শহর এবং হযরত আলী রাঃ ছিলেন দরজা। এরা মূলত হযরত আলী রাঃ কে কলংকিত করার জন্য বলে দুজনের ভুল বুঝাবুঝির কারনে শিফফিনের যুদ্ধ হয়েছিল। তাই দুজনই সঠিক। এরা মূলত মাবিয়ার অপরাধ ঢাকার জন্য হযরত আলীকে দোষী বানায়। শিফফিনের যুদ্ধে শত শত বিখ্যাত সাহাবীদেরকে হত্যা করা হয়। তাহলে এই হত্যার দায়ভার কে নিবে। যদি দুজনই সঠিক হয়, ‏তাহলে দুজনকেই হত্যাকারী বলা হবে। দেখেন এরা কত কৌশলে হযরত আলী রাঃ কে হত্যাকারী সাব্যস্ত করল। মাবিয়া হযরত আলী রাঃ এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তার মনে প্রচন্ড কষ্ট দিয়েছিল।রাসূল পাক সঃ বলেন, ‏যে হযরত আলীকে কষ্ট দেয়, ‏সে স্বয়ং আমাকে কষ্ট দেয়। তাহলে মাবিয়া হযরত আলী রাঃ এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, ‏হযরত আলী রাঃ এবং রাসূল পাক সঃ এর মনে কষ্ট দিয়েছিল। আর রাসূল পাক সঃ এর মনে কষ্ট দিয়ে কেউ কখনো সাহাবী হতে পারে না। যে হযরত আলী রাঃ কে অমান্য করে, ‏সে স্বয়ং রাসূল পাক সঃ কে অমান্য করার শামিল। কেউ এই কথা বলতে পারবেন না, ‏মাবিয়া হযরত আলী রাঃ এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তার মনে কষ্টের বদলে আনন্দ দিয়েছে। এটা শুধু পাগল ছাড়া আর কেউ বলবে না। সেদিন শিফফিনের যুদ্ধে যদি হযরত আলী রাঃ মাবিয়ার নিকট পরাজয় বরণ করত। তাহলে নিশ্চয়ই মাবিয়া হযরত আলী রাঃ কে হত্যা অথবা বন্দী করত। তখনকার আরব জাহানের এটাই ছিল প্রচলন। কেউ এই কথা বলতে পারবেন না, ‏হজরত আলী পরাজিত হলে মাবিয়া তাকে সম্মান করে জামাই আদর করে সিংহাসনে বসাত। যদি তাই হতো তাহলে আর যুদ্ধ সংঘটিত হতো না। তাই হযরত আলী রাঃ আক্ষেপ করে তার অনুসারীদের বলেছিলেন, " ‏কোন মুমেন ব্যক্তির হৃদয়ে আমার আর মাবিয়ার ভালবাসা একসাথে থাকতে পারে না ‎"।কতটা অবিশ্বাস, ‏কতটা আস্হাহীন,কতটা সন্দেহ এবং কতটা শক্রুতা পোষণ করলে একজনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা যায়। মাবিয়া ঠিক সেইরুপ শেরে খোদা হযরত আলী রাঃ এর সাথে করেছিল। আর হযরত আলী রাঃ এর সাথে শক্রুতা পোষণ করা মানে স্বয়ং রাসূল পাক সঃ এর সাথে শক্রুতা করা। মাবিয়া কোন সাহসে হযরত আলী রাঃ কে অবিশ্বাস ও সন্দেহ করেছিল। যে হযরত আলী রাঃ এর বিরুদ্ধে বিন্দুমাত্র সন্দেহ ও অবিশ্বাস করবে, ‏সে কখনো ঈমানদার হতে পারে না। তাইতো রাসূল পাক সঃ যথার্থ বলেছেন, ‏মুমেন ব্যক্তি হযরত আলীকে ভালবাসবে এবং মোনাফেক ব্যক্তিই হযরত আলীর শক্রুতা পোষণ করবে। রাসূল পাক সঃ এর এই কথার দ্বারা সুস্পষ্ট প্রমাণ হয় মাবিয়া কতটা নিকৃষ্ট মোনাফেক ছিল। এই শিফফিন যুদ্ধের মাধ্যমেই মুসলিম ঐক্য নষ্ট হয়। এক পক্ষ চলে যায় হযরত আলী রাঃ এর সাথে এবং অপর পক্ষ চলে যায় মাবিয়ার সাথে। সেই অনৈক্য ধারা এখনো বিরাজমান রয়ে গেছে। এক পক্ষ হযরত আলী রাঃ এর সাথে রয়ে গেছে এবং অপর পক্ষ মাবিয়ার সাথে রয়ে গেছে। মাবিয়া এবং তার বংশধরতা যেহেতু দীর্ঘদিন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিল, ‏তাই মাবিয়ার অনুসারীর সংখ্যা বেশী। আর হযরত আলী রাঃ এর অনুসারীরা নির্মম অত্যাচার ও নির্যাতনের শিকার। তাই মুসলিম বিশ্বে হযরত আলী রাঃ এর সংখ্যা খুবই সীমিত। এখন আপনি বলুন, ‏আপনি কার পক্ষ অবলম্বন করবেন। হযরত আলী রাঃ এর অনুসারীরা হলো আহলে বায়াত অর্থাৎ অলী আল্লাহর দলে। আর মাবিয়ার অনুসারীরা হলো আহলে বায়াতের বিপক্ষে। যারা বায়াত প্রথা মানে না এবং বিশ্বাস করে না। এদের সাথে আমাদের দ্বন্দ্বটা সেই শিফফিনের যুদ্ধ থেকে শুরু হয়েছে এবং চলমান রয়ে গেছে। কোন কুতর্ক চাই না, ‏শুধু মাত্র সুতর্ক এবং দলিল সহকারে যুক্তি ও প্রমাণ চাই। এই ৯টি প্রশ্নের সঠিক ও সুন্দর উত্তর চাই। যার ইতিহাস জানা আছে সেই শুধু উত্তর দিবেন। ‎( ‏সূত্রঃ মোয়াবিয়া ও কারবালা, ‏সৈয়দ গোলামুর রহমান। খিলাফতের ইতিহাস, ‏মুহম্মদ আহসান উল্লাহ। এজিদি ধর্ম, ‏এ,কে, ‏মনজুরুল হক। মাওলার অভিষেক, ‏সদর উদ্দিন চিশতি, ‏সুফি দর্শন, ‏ফকির আব্দুর রশিদ,এজিদের চক্রান্তে মোহাম্মদী ইসলাম, ‏দেওয়ানবাগ দরবার শরিফ, ‏ইসলামের ইতিহাস, ‏ডঃ সৈয়দ মাহমুদুল হাসান, ‏ইসলামের ইতিহাস, ‏কে আলী, ‏ইমাম হাসান ও হোসাইন ‎(রাঃ), ‏মাওলানা মোঃ মনিরুজ্জামান এবং HSC এর পাঠ্য বই ইসলামের ইতিহাস বই পড়লে মাবিয়া ও তার পুত্র এজিদ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে পারবেন। তাছাড়া বরিয়াবরী দরবার শরীফ এবং বাবা জাহাঙ্গীর এর সুরেশ্বরী দরবার শরীফের কিতাবগুলো পড়তে পারেন। আমি সামান্য কিছু অংশ মাত্র তুলে ধরেছি ‎)। বিঃদ্রঃ ও ভাই আপনার একটি শেয়ার করা মানে শত শত মানুষ দেখার সুযোগ পাওয়া। আমার দয়াল রাসূল পাক সঃ কে ভালবেসে একটিবার শেয়ার করুন। হয়ত বা এই একটি শেয়ার আপনার মুক্তির কারণ হতে পারে। মহান দয়ালু আল্লাহ তায়ালা এই একটি শেয়ারের উছিলায় আপনার জীবনের সমস্ত গোনাহ মাফ করে দিয়ে, ‏মুক্তির ব্যবস্হা করতে পারে। আসুন ভাই, ‏রাসূল পাক সঃ কে ভালবেসে ইসলামের মহা শক্রুদের মুখোশ উন্মোচন করি। ‎" ‏রাসূল পাক সঃ এর প্রতি নাই যার প্রেম, ‏কে বলে মানুষ তারে পশু সেই জন ‎"।যেকোনো আহলে বায়াত প্রেমিক এই পোস্ট কপি করার পূর্ণ অধিকার রাখে।

আল্লাহ পাক স্বয়ং মোয়াবিয়াকে জাহান্নামী বলছে। আমার কিছু করার নাই। ধারাবাহিক পোস্ট নং ০১+২ পর্ব । 
♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦
কারবালা প্রান্তরের ঐতিহাসিক পটভূমি। 
সূরা আন নিসা (النّساء), আয়াত: ৪ঃ ৯৩

وَمَن يَقْتُلْ مُؤْمِنًا مُّتَعَمِّدًا فَجَزَآؤُهُۥ جَهَنَّمُ خَٰلِدًا فِيهَا وَغَضِبَ ٱللَّهُ عَلَيْهِ وَلَعَنَهُۥ وَأَعَدَّ لَهُۥ عَذَابًا عَظِيمًا

উচ্চারণঃ ওয়া মাইঁ ইয়াকতুলমু’মিনাম মুতা‘আম্মিদান ফাজাঝাউহূজাহান্নামুখা-লিদান ফীহা-ওয়া গাদিবাল্লা-হু ‘আললইহি ওয়া লা‘আনাহু ওয়া আ‘আদ্দাল্লাহু ‘আযা-বান ‘আজীমা-।

  অর্থ:  "যে ব্যাক্তি জ্ঞাতসারে মোমিন কে হত্যা করে তাহার পুরষ্কার জাহান্নাম, ঊহাতে সে স্থায়ী হইয়া থাকিবে এবং তাহার 
উপরে আল্লাহর গজব ও লানত, এবং তাহার জন্য মহা শাস্তি প্রস্তুত করিয়াছেন৷"

এবার আপনি ই সিদ্ধান্ত নেন কোরআন মানবেন নাকি মুয়াবিয়াকে ভালবেসে যাবেন।কারণ মোয়াবিয়া সিফফিনের যুদ্ধে মাওলা আলীর পক্ষের হাজার হাজার বিখ্যাত সাহাবীদেরকে হত্যা করেছে। তাছাড়া সে এই যুদ্ধে বিখ্যাত আশেকে রাসূল ওয়াইজ করণী রাঃ কে হত্যা করে। আর তারা সবাই ছিলেন প্রথম শ্রেণীর মুমিন। 

এবার আপনার বিচার বুদ্ধি দিয়ে বুঝে নিন। মোয়াবিয়া কতোবড় নিকৃষ্ট মোনাফেক ছিলো। এরপরও যদি কেউ মোয়াবিয়াকে সাহাবী বলে, আপনি ধরে নিবে সে পবিত্র কুরআন শরীফ অস্বীকারকারী এবং পাক পান্জাতনের চিরশত্রু। এদের সাথে আপনি কোন সম্পর্ক রাখবেন না। তাহলে আপনি কখনো ঈমান নিয়ে কবরে যেতে পারবেন না। 

যেকোনো আহলে বায়াত প্রেমিক এই পোস্ট কপি করার পূর্ণ অধিকার রাখেন ।
♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦
স্বয়ং রাসূল পাক সঃ মোয়াবিয়াকে মোনাফেক বলেছে। বিস্তারিত পড়ুন। ( ধারাবাহিক পর্ব নং২ । 
♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦
কারবালা প্রান্তরের ঐতিহাসিক পটভূমি। 

ইতিহাসের সর্বকালের সর্বনিকৃষ্ট মোনাফেক মাবিয়ার বংশ পরিচয় এবং মাবিয়ার ইসলাম বিদ্বেষী কার্যকলাপ। এই মাবিয়া হলো নরপিশাচ কাফের এজিদের পিতা। এই মাবিয়া এজিদকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসিয়েছিল। 

           কে এই মাবিয়া

মাবিয়ার পরিচয় দিতে গিয়ে " খিলাফতের ইতিহাস " নামক গ্রন্হের লেখক মুহাম্মদ আহসান উল্লাহ বলেন, আমির মাবিয়া হযরত রাসূল পাক (সঃ) এর মুখোশধারী সাহাবী ছিলেন। তার পুরো বংশ রাসূল পাক সঃ এর সবচেয়ে বড় দুশমন ছিলেন এবং অবশেষে নিরুপায় হয়ে মক্কা বিজয়ের পর মুসলমানদের চরম ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে মাবিয়া এবং তার বংশধরেরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। 

রাসূল পাক সঃ এর প্রবলতম ঘোর শক্রু কুরাইশ দলপতি নরপিশাচ আবু সুফিয়ান তার পিতা ছিলেন। যিনি রাসূল পাক সঃ এর বিরুদ্ধে ২৭টি যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিল। রাসূল পাক সঃ কে হত্যা করতে সর্ব ক্ষণ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকত। এমন কোন অপরাধ নাই যে, সে রাসূল পাক সঃ এর সাথে করার চেষ্টা করে নাই। যখন দেখল রাসূল পাক সঃ এর কোন ক্ষতি করতে সক্ষম নয়, তখন দুরভিসন্ধি নিয়ে মক্কা বিজয়ের পর তার সন্তান মাবিয়াকে নিয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। যাতে মুসলমানদের ভিতরে ঢুকে চরম ক্ষতি করা যায়। এই ধরণের চরম মোনাফেকি উদ্দেশ্য নিয়ে মুসলমানদের ভিতরে ঢুকে পড়ে। 

মাবিয়ার মাতার নাম ছিল হেন্দা। যিনি ইতিহাসের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নিকৃষ্ট নারী হিসাবে পরিচিত। এই নরপিশাচ নারী রাসূল পাক সঃ এর আপন চাচা হামজা রাঃ এর কলিজা চিবিয়ে খেয়েছিল এবং হামজা রাঃ এর শরীর মোবারক টুকরো টুকরো করে কেটে গলায় মালা পরেছিল। এই সেই নারী যিনি প্রতিটি যুদ্ধে কাফেরদেরকে উৎসাহ প্রদান করত। তার ভাই, পিতা -মাতা এবং বংশধরেরা রাসূল পাক সঃ এর ঘোরতর শক্রু ছিল। এই নরপিশাচ হেন্দার ভাই এবং পিতা বদরের যুদ্ধে মারা যায়। আর হেন্দার এই ভাই ও পিতাকে বদর যুদ্ধে হামজা রাঃ হত্যা করে। তাই হেন্দা প্রতিশোধ গ্রহণ করার জন্য ওহুদের যুদ্ধে হামজা রাঃ এর কলিজা চিবিয়ে খায় এবং তার শরীর মোবারক টুকরো টুকরো করে কেটে গলায় মালা পরে। 

মাবিয়ার দাদা ছিলেন উমাইয়া। এই উমাইয়া নরপিশাচ হযরত বিল্লাহ রাঃ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার জন্য নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে অত্যাচার করেন। আর এই উমাইয়া নামানুসারে মাবিয়া রাসূল পাক সঃ এর নাম বাদ দিয়ে দাদার নামে উমাইয়া মুসলিম খিলাফত চালু করেন। আর এই উমাইয়া খিলাফত শাসনামল ছিল দীর্ঘ ৮৯ বছর। আচ্ছা বলুন তো একজন বিধর্মী কাফেরের নামে কি মুসলিম খিলাফত হতে পারে। আমার রাসূল পাক সঃ কে চরমভাবে হেয়পতিপন্ন এবং অপমান করার জন্য মাবিয়া ও তার নরপিশাচ ছেলে এজিদ এই কাজটি করেছিল। রাসূল পাক সঃ এর নাম বাদ দিয়ে স্হাপন করল নরপিশাচ উমাইয়ার নাম। যা আজও ইতিহাসের পাতায় রয়ে গেছে।

প্রথম দিকে মাবিয়া একজন সামান্য সৈনিক, পরে একজন ক্ষুদ্র সেনাপতি ছিলেন। তারপর ক্ষমতার লোভে  হযরত আলী রাঃ এর সাথে বিদ্রোহী হয়ে শিফফিনের যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। এই যুদ্ধের মাধ্যমে মাবিয়া কৌশল ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে অনেক ক্ষমতাবান হন। পরবর্তীতে মাবিয়া খারেজিদের দ্বারা মাওলা আলীকে  গুপ্ত হত্যা করে মুসলিম খিলাফতের খলিফা নিযুক্ত হন। আবু সুফিয়ান জীবিত থাকলে দেখতে পারতেন, রাসূল পাক সঃ এর যে সকল কাজের বিরোধিতা তিনি সর্বদা করতেন, সেই সকল কাজের বিরোধিতা করে মাবিয়া মুসলিম খিলাফতের বাদশাহ হন। 

মাবিয়া রাসূল পাক সঃ এর একজন নামধারী সাহবী হলেও, রাসূল পাক সঃ এর সঙ্গ তিনি পাননি। কারণ রাসূল পাক সঃ মক্কা বিজয় করে আবার মদিনায় চলে যায়। আর মাবিয়া মক্কায় থেকে যায়। 

হযরত রাসূল পাক সঃ হযরত আলী রাঃ সমন্ধে যা বলেন, 

" যে ব্যক্তি আমার আলীকে গালি দিল, সে যেন আমাকে গালি দিল "। ( মেশকাত শরিফ, পৃষ্ঠা নং ৫৬৫)। 

" হে আল্লাহ ! আমি যার বন্ধু, আলীও তার বন্ধু। হে আল্লাহ ! যে আলীকে ভালবাসবে তুমি তাকে ভালবাসিও, যে আলীর শক্রু হবে তুমি তার শক্রু হইও "।  ( মেশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা নং ৫৬৫ )। 

" মোনাফেক ব্যক্তিই আলীকে ভালবাসবে না এবং মু'মেন ব্যক্তি আলীর প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবে না "। ( মেশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা নং ৫৬৪ )। 

" আমি জ্ঞানের শহর এবং আলী তার দরজা "। ( শরহে ফিকহে আকবার, পৃষ্ঠা নং ১১২ )। 

" দুনিয়ার ধন-সম্পদের মধ্যে আমার জন্য দুইটি ( ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইন ) স্বর্গীয় ফুলস্বরুপ "। ( মেশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা নং ৫৬৯ )। 

" আমি যার মাওলা, হযরত আলী তার মাওলা "। ( বুখারী শরীফ ৫ম খন্ড, পৃষ্ঠা নং ২৮০। রাহমানিয়া লাইব্রেরি, ঢাকা। )। 
 
   হযরত আলী রাঃ বলেন, 

" কোন মুমেন ব্যক্তির হৃদয়ে আমার এবং মাবিয়ার ভালবাসা একসাথে থাকতে পারে না "। ( মাওলার অভিষেক, সদর উদ্দিন চিশতি )। 

সুতরাং হযরত আলী রাঃ এর সাথে বিরোধিতা করা মানে রাসূল পাক সঃ এর সাথে বিরোধিতা করা। আর রাসূল পাক সঃ এর সাথে বিরোধিতা করা মানে স্বয়ং আল্লাহর সাথে বিরোধিতা করা। অথচ দেখা যায় যে, মাবিয়া হযরত আলী রাঃ এর সাথে চরম বিরোধিতা করেছেন। শিফফিন নামক যুদ্ধ তার জলন্ত প্রমাণ। আসলে মাবিয়া রাসূল পাক সঃ এর রেখে যাওয়া ধর্মকে ধবংস করতে এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার জন্যই এই বিরোধিতা করছেন।

মাবিয়া সমন্ধে ঐতিহাসিক কর্ণেল অসবর্ন বলেন, 

" বিচক্ষণহীন, অবিবেকী ও নির্মম উমাইয়া বংশের প্রথম খলিফা তার নিজ স্বার্থ বজায় রাখার জন্য যেকোন অপরাধমূলক কার্য করতে সংকোচ বোধ করত না। প্রবল প্রতিদ্বন্দীকে অপসারণের জন্য হত্যাই ছিল তার চিরাচরিত রীতি। সে ইমাম হাসানকে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বিষ প্রয়োগে হত্যা করেছিল। হযরত আলীর সহকারী মালিক আল আসতারকে অনুরূপ ভাবে হত্যা করেছিল। তার পুত্র এজিদের উত্তরাধিকারী নিরাপদ করবার জন্য মাবিয়া হযরত আলীর একমাত্র জীবিত পুত্র হোসাইনের সাথে প্রদত্ত ওয়াদা ভঙ্গ করতে দ্বিধা করেন নাই "।

মাবিয়া সমন্ধে ঐতিহাসিক মুর বলেন, 

" কোরআন ও হাদিসের আদর্শে অনুপ্রাণিত প্রথম ইসলামী প্রজাতন্ত্রের সমাধি রচনা করেন মাবিয়া। ধূর্ততা, কপটতা ও অসাধুতার আশ্রয় গ্রহণ করে তিনি ইমাম হাসানের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির অবমাননা করে মৃত্যুর পূর্বে শুধুমাত্র নিজ অযোগ্য পুত্রকেই মনোনীত করেন নাই, বরং ছলে-বলে ও কৌশলে আরব জাহানের জনসাধারণের আনুগত্য অর্জন করেন "।

মাবিয়া সমন্ধে ঐতিহাসিক আমীর আলী বলেন, 

মাবিয়া ছিলেন ধূর্ত, ধর্ম ভয়হীন, তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন, কৃপণ অথচ নিজ স্বার্থে অস্বাভাবিক উদার এবং যাবতীয় ধর্মীয় কাজে লোক দেখানো নিষ্ঠাবান। কিন্তু তার কোন পরিকল্পনা বা আকাঙ্ক্ষা পরিপূর্ণতা সাধনে কোন মানবীয় বা ধর্মীয় রীতিনীতিই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারত না "।

মাবিয়া বিভিন্ন সময়ে হজরত আলী রাঃ এর প্রতি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তে লিপ্ত ছিল। উহুদের যুদ্ধে মাবিয়া হযরত আলী রাঃ কে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করেছিল। শিফফিনের যুদ্ধে মাবিয়া প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে হযরত আলী রাঃ এর কাছ থেকে নিশ্চিত মৃত্যু থেকে রক্ষা পায়। শিফফিনের যুদ্ধ ক্ষেত্রে হঠাৎ মাবিয়াকে দেখে হযরত আলী রাঃ বলে উঠলেন, 

" মাবিয়া তুমি নিজে যুদ্ধের ময়দানে আসছ না কেন ? তাহলে ব্যাপারটা সহজেই মিমাংসিত হতে পারে "।

মাবিয়ার সেনাপতি আমর সম্মান রক্ষার জন্য মাবিয়াকে যুদ্ধে হযরত আলী রাঃ এর মোকাবিলা করবার জন্য উৎসাহিত করলেন। কিন্তু মাবিয়া বললেন, 

" হযরত আলীর সাথে যুদ্ধ করতে গিয়ে কেউ কোনদিন জীবিত থাকে না "।

মাবিয়া প্রায়ই গর্ব করে বলতেন, 

" আরবীয় রাজাদের মধ্যে আমিই প্রথম রাজা "।

মুসলিম জাহানের ৪র্থ খলিফা হযরত আলী রাঃ এর শাহাদাৎ বরণের পর তার জ্যেষ্ঠ পুত্র হযরত ইমাম হাসান রাঃ খলিফা নির্বাচিত হলেন। রাজনীতি এবং কূটনীতি সম্পর্কে ইমাম হাসান রাঃ এর তেমন কোন অভিজ্ঞতা ছিল না। তাছাড়া ইমাম হাসান রাঃ ছিলেন খুবই শান্তশিষ্ট এবং কোমল হৃদয়ের অধিকারী। সিরিয়া ও মিশরের উচ্চবিলাষী শাসক মাবিয়া খিলাফতের এই দুর্বলতার সুযোগ গ্রহণ করলেন। 

হযরত ইমাম হাসান রাঃ সেনাপতি কায়েসের নেতৃত্বে মাবিয়ার বিরুদ্ধে ১২হাজার সৈন্যের একটি বাহিনী প্রেরণ করেন। কায়েস যখন শক্রু পক্ষের বিরুদ্ধে বীর বিক্রমে যুদ্ধরত, তখন মাবিয়া ধূর্ততার আশ্রয় নিলেন। মাবিয়া বীর যোদ্ধা কায়েসের মৃত্যুর মিথ্যা সংবাদ চারিদিকে ছড়িয়ে দিলেন। ফলে ইমাম হাসান রাঃ এর সৈন্যদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা দেখা দিল। তখন মাবিয়া এবং ইমাম হাসান রাঃ এর সাথে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। 

মাবিয়ার পরে হযরত ইমাম হোসাইন রাঃ মুসলিম খলিফা হবেন। কিন্তু প্রতারক মাবিয়া ইমাম হাসান রাঃ এর সাথে সম্পাদিত চুক্তি ভঙ্গ করে নরপিশাচ এজিদকে খলিফা নিযুক্ত করে এবং তার নামে খেলাফতের স্বীকৃতি আদায়ের জন্য সকল প্রাদেশিক গভর্নরের নিকট ফরমান জারি করে। কিন্তু মাবিয়ার এই ফরমান মক্কা ও মদিনা লোক ব্যতীত, সকল প্রদেশের গভর্নররা এজিদকে খলিফা হিসাবে মেনে নিল। 

       রাসূল পাক সঃ বলেন, মোনাফেকের চিহ্ন ৩টি। 

১/ কথায় কথায় মিথ্যা বলে। 
২/ ওয়াদা ভঙ্গ করে। 
৩/ আমানতের খিয়ানত করে। 

আর এই মোনাফেক কাফেরদের চেয়ে ভয়ংকর। আর মাবিয়া ইমাম হাসান রাঃ এর সাথে চুক্তি ভঙ্গ করে, ইতিহাসে সর্বকালের সর্বনিকৃষ্ট মোনাফেক হিসাবে পরিচিত। 

উল্লেখ্য যে, মাবিয়া হযরত আলী রাঃ এর সময়ও খিলাফত নিয়ে ষড়যন্ত্র করেছিলেন। কিন্তু পেরে উঠতে না পারলেও একেবারে পিছবা হননি। তিনি মোক্ষম সুযোগ মনে করে অতি শীঘ্রই ইরাক আক্রমন করলেন। 
মাবিয়া দীর্ঘ ২০বছর শাসন ক্ষমতায় ছিলেন এবং তার বংশধরেরা দীর্ঘ ৮৯ বছর মুসলিম খলিফা হিসাবে ক্ষমতায় ছিলেন। ( ৬৬১ - ৭৫০) সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিল। মাবিয়ার দাদার নাম ছিল উমাইয়া। আর এই উমাইয়ের নামে মুসলিম খিলাফত রাষ্ট্রের নামকরণ করা হয়। হযরত রাসূল পাক সঃ এর নাম চিরতরে মুছে ফেলা হয়। 

এই উমাইয়া ছিল একজন বিধর্মী কাফের এবং রাসূল পাক সঃ ও ইসলামের একজন বড় দুশমন ছিল। সে বিখ্যাত আশেকে রাসূল হযরত বেলাল রাঃ কে নির্মমভাবে নির্যাতন করেছে। উমাইয়া ও তার পুত্র আবু সুফিয়ান রাসূল পাক সঃ এবং ইসলামের বিরোধিতা করে যে ক্ষতি সাধন করেছে, মাবিয়া ও তার পুত্র এজিদের দ্বারা রাসূল পাক সঃ এবং ইসলাম ধর্মের তার চেয়েও অনেক বেশী ক্ষতি সাধিত হয়েছে, যা কোনদিন পূরণ হবার নয়। কারণ উমাইয়া ও তার পুত্র আবু সুফিয়ান রাসূল পাক সঃ বংশের কাউকে হত্যা করতে পারে নাই। কিন্তু মাবিয়া এবং তার পুত্র এজিদ রাসূল পাক সঃ এর পরিবারের সকল সদস্য নির্মমভাবে হত্যার শিকার হয়। তারা হযরত আলী রাঃ, ইমাম হাসান ও হোসাইন রাঃ এবং সন্তানদের সহ সবাইকে কারবালার প্রান্তরে নির্মমভাবে হত্যা করে। 

মাবিয়া তার পূর্ব পুরুষদের প্রতিশোধ নিতেই বিধর্মী কাফের উমাইয়ার নামে মুসলিম খিলাফত চালু করে এবং এক নতুন ধর্মের প্রবর্তন ঘটান। যা এজিদি ইসলাম নামে পরিচিত এবং এখনো সারা বিশ্বে বিরাজমান।

নরপিশাচ এজিদ কারবালার প্রান্তরে ইমাম হোসাইনকে নির্মমভাবে হত্যা করার পর মদিনা ও মক্কায় আক্রমন করে। এজিদের সৈন্য বাহিনী মদীনার মসজিদসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে এবং মদীনাবাসীর উপর চরম নির্যাতন করে এবং শিশুসহ বহু লোককে হত্যা করে। 

এরপর এজিদের সৈন্য বাহিনী মক্কায় আক্রমন করে ২মাস শহর অবরোধ করে রাখে। এ সময় তারা পবিত্র কাবাগৃহের গিলাফ অগ্নিসংযোগ করে। এই অবরোধ চলাকালে এজিদের মৃত্যু হলে, এজিদের সৈন্য বাহিনীরা মক্কা ছেড়ে দামেস্ক নগরে চলে যায়। 

যারা মাবিয়াকে সাহাবী মনে করেন, তাদের কাছে আমার কয়েকটি প্রশ্ন। 

১/ মাবিয়া কেন শেরে খোদা হযরত আলী রাঃ এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল ? 

২/ মাবিয়া কেন ইতিহাসের উজ্জ্বল নক্ষত্র ইমাম হাসান রাঃ এর সাথে যুদ্ধ করেছিল ? 

৩/ মাবিয়া কেন নরপিশাচ কাফের এজিদকে সমগ্র মুসলিম বিশ্বের খলিফা নিযুক্ত করলো ? 

৪/ মাবিয়া কেন খারেজিদের দলভুক্ত করল। আর এই খারেজিদের নিয়ে মাবিয়া শেরে খোদা হযরত আলী (রাঃ) এবং ইমাম হাসান (রাঃ) এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল। 

৫/ মাবিয়া কেন শিফফিনের যুদ্ধে শেরে খোদা হযরত আলী রাঃ এর পক্ষের শত শত নিরীহ নিষ্পাপ বিখ্যাত সাহাবীদের হত্যা করল। আর এই হত্যার দায়ভার কে নিবে। 
  

৬/ মাবিয়া কেন শেরে খোদা হযরত আলী রাঃ এর  ওফাতের পর ইমাম হাসান রাঃ কে হটিয়ে নিজে কেন মুসলিম জাহানের খলিফা হলো। মাবিয়া কি ইমাম হাসান রাঃ এর চেয়ে বেশি যোগ্য ছিল ? 

৭/ মাবিয়া কেন ইমাম হাসান রাঃ এর সাথে চুক্তি ভঙ্গ করে ইমাম হোসাইন রাঃ এর পরিবর্তে নিজ পুত্র কাফের এজিদকে মুসলিম জাহানের খলিফা নিযুক্ত করল। তাহলে এজিদ কি ইমাম হোসাইন রাঃ এর চেয়ে বেশি যোগ্য ছিল ? 

৮/ মাবিয়া কেন শিফফিন যুদ্ধের মাধ্যমে বিখ্যাত আশেকে রাসূল ওয়াইজ করণী (রাঃ) কে হত্যা করলো। 

৯/ মাবিয়া কেনো রাসূল পাক সঃ এর নাম বাদ দিয়ে, তার দাদা মূর্তি পূজারী উমাইয়ার নামে উমাইয়া মুসলিম খিলাফত চালু করলো। 

অথচ রাসূল পাক সঃ বলেছেন, মোনাফেক ব্যক্তি হযরত আলীকে ভালবাসবে না। তাহলে আপনারা বলুন , মাবিয়া কি হযরত আলী রাঃ এর সাথে যুদ্ধ করে শক্রুতা পোষণ করল না ? নিশ্চয়ই মাবিয়া হযরত আলী রাঃ এর সাথে যুদ্ধ করে শক্রুতা পোষণ করেছেন। একমাত্র বদ্ধ উন্মাদ পাগল এবং মাবিয়ার অনুসারী ছাড়া সবাই বলবে মাবিয়া হযরত আলী রাঃ এর সাথে শক্রুতা করেছেন। মাবিয়া যদি হযরত আলী রাঃ কে ভালবাসত, তাহলে কখনোই হযরত আলী রাঃ এর সাথে যুদ্ধ করতে পারত না। আর এই জন্যই রাসূল পাক সঃ বলেছেন, যে হযরত আলীকে ভালবাসবে না, সে মোনাফেক। মূলত মাবিয়া হযরত আলী রাঃ এর সাথে যুদ্ধ করেননি বরং স্বয়ং রাসূল পাক সঃ এর সাথে যুদ্ধ করেছেন। মূলত রাসূল পাক সঃ মাবিয়াকে মোনাফেক বলেছেন, আমি কিন্তু বলিনি। আমি শুধুমাত্র তুলে ধরেছি। উপরের হাদিসগুলো সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করে মাবিয়া সর্বনিকৃষ্ট মোনাফেক ছিল। 

          কারা এই খারেজি ? 

খারিজ আরবি শব্দ। আর বাংলা অর্থ বাতিল। রাসূল পাক সঃ এর এক ধরনের মোনাফেক সাহাবী ছিল। যারা মক্কা বিজয়ের পর নিরুপায় হয়ে মাবিয়া এবং তার পিতা- মাতার সাথে ইসলাম গ্রহণ করে। এই খারেজি সম্প্রদায় রাসূল পাক সঃ এর বিরুদ্ধে মাবিয়ার পিতা আবু সুফিয়ান এবং আবু জেহেলের নেতৃত্বে ২৭টি যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিল। কিন্তু তারা প্রতিবারই পরাজয় বরণ করে। অবশেষে মক্কা বিজয়ের পর তারা চিন্তা করল, আমরা তো সারাজীবন ইসলাম ধর্মের বাহিরে থেকে রাসূল পাক সঃ এবং তার পরিবার-পরিজন ও ইসলাম ধর্মের কোন ক্ষতি করতে পারলাম না। এখন দেখি ইসলাম ধর্মের ভিতরে ঢুকে নবী পরিবার ধব্বংস করতে পারি কিনা এবং মুহাম্মদের নাম চিরতরে মুছে ফেলতে পারি কিনা। 

এই উদ্দেশ্যে নিয়েই তারা সবাই মুসলমান হয়ে গেল। রাসূল পাক সঃ ওফাতের পর তারা প্রচন্ডভাবে মাথা চাড়া দিয়ে উঠল। তারা সর্ব ক্ষণ হযরত আলী রাঃ এর বিরোধিতা করতে লাগল এবং ইসলাম বিদ্বেষী কার্যকলাপ শুরু করল। তারা এমন কোন জগন্য কাজ নাই, যা তারা করল না। আর এদেরকে পিছন থেকে কলকাঠি নাড়ত মাবিয়া। কারণ এরা একসময় মাবিয়ার পিতা আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে রাসূল পাক সঃ এর বিরুদ্ধে ২৭টি যুদ্ধ করেছিল। অবশেষে হযরত আলী রাঃ এদেরকে ইসলাম ধর্ম থেকে বাতিল  এবং বের করে দেন। এই খারজিরা শুধু মাত্র হযরত আবু বকর রাঃ এবং ওমর ফারুক রাঃ মানে। তারা কখনো শেরে খোদা হযরত আলী রাঃ কে মানে না। বরং তারা বলে হযরত আলী রাঃ খলিফার অযোগ্য। 

তাই হযরত আলী রাঃ এর বিরুদ্ধে তাদের প্রচন্ড ক্ষোভ ছিল। অবশেষে মাবিয়া এদেরকে দলভুক্ত করেন। পরবর্তীতে মাবিয়ার নির্দেশে এই খারেজিরা শেরে খোদা হযরত আলী রাঃ কে নামাজরত অবস্থায় নৃশংস ভাবে হত্যা করে এবং মাবিয়া সমগ্র মুসলিম জাহানের অবৈধভাবে খলিফা হয়ে যায়। 

যারা বলে শিফফিনের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল হযরত আলী রাঃ এবং মাবিয়ার ভুল বুঝাবুঝির কারণে। হযরত আলী রাঃ ছিলেন সমস্ত ভুলের উর্ধে। জীবনে বিন্দুমাত্র ভুল করেন নাই। এমন দলিল কেউ দিতে পারবেন না। কারণ রাসূল পাক সঃ ছিলেন  জ্ঞানের শহর এবং হযরত আলী রাঃ ছিলেন দরজা। এরা মূলত হযরত আলী রাঃ কে কলংকিত করার জন্য বলে দুজনের ভুল বুঝাবুঝির কারনে শিফফিনের যুদ্ধ হয়েছিল। তাই দুজনই সঠিক। এরা মূলত মাবিয়ার অপরাধ ঢাকার জন্য হযরত আলীকে দোষী বানায়। 

শিফফিনের যুদ্ধে শত শত বিখ্যাত সাহাবীদেরকে  হত্যা করা হয়। তাহলে এই হত্যার দায়ভার কে নিবে। যদি দুজনই সঠিক হয়, তাহলে দুজনকেই হত্যাকারী বলা হবে। দেখেন এরা কত কৌশলে হযরত আলী রাঃ কে হত্যাকারী সাব্যস্ত করল। 

মাবিয়া হযরত আলী রাঃ এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তার মনে প্রচন্ড কষ্ট দিয়েছিল।রাসূল পাক সঃ বলেন, যে হযরত আলীকে কষ্ট দেয়, সে স্বয়ং আমাকে কষ্ট দেয়। তাহলে মাবিয়া হযরত আলী রাঃ এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, হযরত আলী রাঃ এবং রাসূল পাক সঃ এর মনে কষ্ট দিয়েছিল। আর রাসূল পাক সঃ এর মনে কষ্ট দিয়ে কেউ কখনো সাহাবী হতে পারে না। যে হযরত আলী রাঃ কে অমান্য করে, সে স্বয়ং রাসূল পাক সঃ কে অমান্য করার শামিল। কেউ এই কথা বলতে পারবেন না, মাবিয়া হযরত আলী রাঃ এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তার মনে কষ্টের বদলে আনন্দ দিয়েছে। এটা শুধু পাগল ছাড়া আর কেউ বলবে না। 

সেদিন শিফফিনের যুদ্ধে যদি হযরত আলী রাঃ মাবিয়ার নিকট পরাজয় বরণ করত। তাহলে নিশ্চয়ই মাবিয়া হযরত আলী রাঃ কে হত্যা অথবা বন্দী করত। তখনকার আরব জাহানের এটাই ছিল প্রচলন। কেউ এই কথা বলতে পারবেন না, হজরত আলী পরাজিত হলে মাবিয়া তাকে সম্মান করে জামাই আদর করে সিংহাসনে বসাত। যদি তাই হতো তাহলে আর যুদ্ধ সংঘটিত হতো না। তাই হযরত আলী রাঃ আক্ষেপ করে তার অনুসারীদের বলেছিলেন, " কোন মুমেন ব্যক্তির হৃদয়ে আমার আর মাবিয়ার ভালবাসা একসাথে থাকতে পারে না "।

কতটা অবিশ্বাস, কতটা আস্হাহীন,কতটা সন্দেহ এবং কতটা শক্রুতা পোষণ করলে একজনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা যায়। মাবিয়া ঠিক সেইরুপ শেরে খোদা হযরত আলী রাঃ এর সাথে করেছিল। আর হযরত আলী রাঃ এর সাথে শক্রুতা পোষণ করা মানে স্বয়ং রাসূল পাক সঃ এর সাথে শক্রুতা করা। মাবিয়া কোন সাহসে হযরত আলী রাঃ কে অবিশ্বাস ও সন্দেহ করেছিল। যে হযরত আলী রাঃ এর বিরুদ্ধে বিন্দুমাত্র সন্দেহ ও অবিশ্বাস করবে, সে কখনো ঈমানদার হতে পারে না। তাইতো রাসূল পাক সঃ যথার্থ বলেছেন, মুমেন ব্যক্তি হযরত আলীকে ভালবাসবে এবং মোনাফেক ব্যক্তিই হযরত আলীর শক্রুতা পোষণ করবে। রাসূল পাক সঃ এর এই কথার দ্বারা সুস্পষ্ট প্রমাণ হয় মাবিয়া কতটা নিকৃষ্ট মোনাফেক ছিল। 

এই শিফফিন যুদ্ধের মাধ্যমেই মুসলিম ঐক্য নষ্ট হয়। এক পক্ষ চলে যায় হযরত আলী রাঃ এর সাথে এবং অপর পক্ষ চলে যায় মাবিয়ার সাথে। সেই অনৈক্য ধারা এখনো বিরাজমান রয়ে গেছে। এক পক্ষ হযরত আলী রাঃ এর সাথে রয়ে গেছে এবং অপর পক্ষ মাবিয়ার সাথে রয়ে গেছে। মাবিয়া এবং তার বংশধরতা যেহেতু দীর্ঘদিন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিল, তাই মাবিয়ার অনুসারীর সংখ্যা বেশী। আর হযরত আলী রাঃ এর অনুসারীরা নির্মম অত্যাচার ও নির্যাতনের শিকার। তাই মুসলিম বিশ্বে হযরত আলী রাঃ এর সংখ্যা খুবই সীমিত। এখন আপনি বলুন, আপনি কার পক্ষ অবলম্বন করবেন। হযরত আলী রাঃ এর অনুসারীরা হলো আহলে বায়াত অর্থাৎ অলী আল্লাহর দলে। আর মাবিয়ার অনুসারীরা হলো আহলে বায়াতের বিপক্ষে। যারা বায়াত প্রথা মানে না এবং বিশ্বাস করে না। এদের সাথে আমাদের দ্বন্দ্বটা সেই শিফফিনের যুদ্ধ থেকে শুরু হয়েছে এবং চলমান রয়ে গেছে। 

কোন কুতর্ক চাই না, শুধু মাত্র সুতর্ক এবং দলিল সহকারে যুক্তি ও প্রমাণ চাই। এই  ৯টি প্রশ্নের সঠিক ও সুন্দর উত্তর চাই। যার ইতিহাস জানা আছে সেই শুধু উত্তর দিবেন। 

( সূত্রঃ মোয়াবিয়া ও কারবালা, সৈয়দ গোলামুর রহমান। খিলাফতের ইতিহাস, মুহম্মদ আহসান উল্লাহ। এজিদি ধর্ম, এ,কে, মনজুরুল হক।  মাওলার অভিষেক, সদর উদ্দিন চিশতি, সুফি দর্শন, ফকির আব্দুর রশিদ,এজিদের চক্রান্তে মোহাম্মদী ইসলাম, দেওয়ানবাগ দরবার শরিফ, ইসলামের ইতিহাস, ডঃ সৈয়দ মাহমুদুল হাসান, ইসলামের ইতিহাস, কে আলী, ইমাম হাসান ও হোসাইন (রাঃ), মাওলানা মোঃ মনিরুজ্জামান  এবং  HSC এর পাঠ্য বই ইসলামের ইতিহাস বই পড়লে মাবিয়া ও তার পুত্র এজিদ সম্পর্কে আরও  বিস্তারিত জানতে পারবেন। তাছাড়া বরিয়াবরী দরবার শরীফ এবং বাবা জাহাঙ্গীর এর সুরেশ্বরী দরবার শরীফের কিতাবগুলো পড়তে পারেন। আমি সামান্য কিছু অংশ মাত্র তুলে ধরেছি )। 

বিঃদ্রঃ ও ভাই আপনার একটি শেয়ার করা মানে শত শত মানুষ দেখার সুযোগ পাওয়া। আমার দয়াল রাসূল পাক সঃ কে ভালবেসে একটিবার শেয়ার করুন। হয়ত বা এই একটি শেয়ার আপনার মুক্তির কারণ হতে পারে। মহান দয়ালু আল্লাহ তায়ালা এই একটি শেয়ারের উছিলায় আপনার জীবনের সমস্ত গোনাহ মাফ করে দিয়ে, মুক্তির ব্যবস্হা করতে পারে। আসুন ভাই, রাসূল পাক সঃ কে ভালবেসে ইসলামের মহা শক্রুদের মুখোশ উন্মোচন করি। 

" রাসূল পাক সঃ এর প্রতি নাই যার প্রেম, কে বলে মানুষ তারে পশু সেই জন "।

যেকোনো আহলে বায়াত প্রেমিক এই পোস্ট কপি করার পূর্ণ অধিকার রাখে।

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিমআল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদপবিত্র কুরআন ও রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম এর হাদিস থেকে আমিরুল মোমেনীন আলী ইবনে আবি তালিব আঃ এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ হাদিসমহানবী হযরত মুহাম্মদ ‎(সা.)-এর উত্তরাধিকারী,তাঁর নবুওয়াতের মিশনের প্রধান সাহায্যকারী এবং দুনিয়া ও আখেরাতে রাসূলের ভ্রাতা আলী ‎(আ.) ‏আবরাহার পবিত্র মক্কা আক্রমণের ৩৩ বছর পর ১৩ রজব পবিত্র কা’বা শরীফে জন্মগ্রহণ করেন। মহান আল্লাহর আদেশে তাঁর নাম রাখা হয় আলী।শিশুকাল থেকেই মহানবী ‎(সা.)-এর সাথে হযরত আলীর বিশেষ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ সম্পর্কে আলী ‎(আ.) ‏নিজেই বলেছেন ‎: ‘...তিনি আমাকে তাঁর কোলে রাখতেন যখন আমি শিশু ছিলাম। তিনি আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরতেন এবং তাঁর বিছানায় শুইয়ে রাখতেন। তাঁর পবিত্র দেহ আমার দেহকে স্পর্শ করত এবং তিনি আমাকে তাঁর শরীরের সুগন্ধির ঘ্রাণ নেওয়াতেন। তিনি খাদ্য-দ্রব্য চিবিয়ে আমার মুখে পুরে দিতেন।...’১হযরত আবু তালিবের সংসারের ব্যয়ভার কমানোর জন্য হযরত আলীর বালক বয়সেই মহানবী ‎(সা.) ‏তাঁকে নিজের কাছে নিয়ে আসেন। তখন থেকে তিনি রাসূলের সার্বক্ষণিক সঙ্গী হয়ে যান। রাসূল হেরা পর্বতের গুহায় আল্লাহর ইবাদাত করতে গেলেও তাঁকে সাথে নিয়ে যেতেন। হযরত আলী বলেন ‎: ‘তিনি ‎(মহানবী) ‏প্রতি বছর হেরাগুহায় একান্ত নির্জনে বাস করতেন। আমি তাঁকে দেখতাম। আমি ব্যতীত আর কোন লোকই তাঁকে দেখতে পেত না। ঐ সময় রাসূলুল্লাহ্ ও খাদীজাহ্ ব্যতীত কোন মুসলিম পরিবারই পৃথিবীর বুকে ছিল না। আমি ছিলাম তাঁদের পরিবারের তৃতীয় সদস্য। আমি ওহী ও রেসালতের আলো প্রত্যক্ষ করেছি এবং নবুওয়াতের সুবাস ও সুঘ্রাণ অনুভব করেছি।’২তিনি মহানবীর প্রতি নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁকে অনুসরণ করতেন। তিনি বলেন ‎: ‘উষ্ট্র শাবক যেমনভাবে উষ্ট্রীকে অনুসরণ করে ঠিক সেভাবে আমি তাঁকে অনুসরণ করতাম। তিনি প্রতিদিন তাঁর উন্নত চরিত্র থেকে একটি নিদর্শন আমাকে শিক্ষা দিতেন এবং আমাকে তা পালন করার নির্দেশ দিতেন।... ‏তাঁর ওপর যখন ওহী অবতীর্ণ হয়েছিল তখন আমি শয়তানের ক্রন্দন ধ্বনি শুনেছিলাম। তাই আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম ‎: ‏হে রাসূলুল্লাহ্! ‏এ ক্রন্দন ধ্বনি কার? ‏তখন তিনি আমাকে বলেছিলেন ‎: ‏এই শয়তান এখন থেকে তার পূজা ‎(ইবাদাত) ‏করা হবে না বলে হতাশ হয়ে গেছে। নিশ্চয় আমি যা শুনি তুমি তা শোন এবং আমি যা দেখি তা দেখ। তবে তুমি নবী নও,কিন্তু ‎[নবীর] ‏সহকারী এবং নিঃসন্দেহে তুমি মঙ্গল ও কল্যাণের ওপরই আছ।’৩আর তাই মহানবী ‎(সা.)-এর নবুওয়াতের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসার পর তিনিই সর্বপ্রথম তাঁর ওপর ঈমান আনেন এবং তিনিই তাঁর সাথে নামায আদায় করা প্রথম ব্যক্তি। ইমাম মালেক বর্ণনা করেছেন ‎: ‘মহানবী ‎(সা.) ‏সোমবারে নবুওয়াত প্রাপ্ত হন এবং আলী মঙ্গলবারে তাঁর ওপর ঈমান আনেন।’৪হযরত আলী নিজেই বলেন ‎: ‘আমি আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসূলের ভ্রাতা এবং তাঁর নবুওয়াতের সবচেয়ে বড় বিশ্বাসস্থাপনকারী। একমাত্র মিথ্যাবাদী ছাড়া আমার পর কেউ এ দাবি করবে না। অন্য লোকদের নামায পড়ারও ৭ বছর আগে থেকে আমি নামায পড়েছি।’৫হযরত আলী ‎(আ.)-এর প্রসিদ্ধ উপাধিরাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏হযরত আলীকে বিভিন্ন উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন। এর মধ্যে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ হচ্ছে সিদ্দিকে আকবার,ফারুকে আযম,আসাদুল্লাহ ও মুরতাজা।পবিত্র কুরআনে হযরত আলী ‎(আ.)-এর মর্যাদাহযরত আলীর শানে পবিত্র কুরআনের অনেক আয়াত নাযিল হয়েছে। ইবনে আসাকির হযরত ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা করেছেন যে,কোন ব্যক্তির গুণ বর্ণনায় এত অধিক কুরআনের বাণী অবতীর্ণ হয়নি যা হযরত আলী সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস আরও বলেছেন যে,হযরত আলীর শানে তিনশ’ ‏আয়াত নাযিল হয়েছে এবং তাঁর গুণাবলি অত্যধিক ও প্রসিদ্ধ।৬ পবিত্র কুরআনের নাযিলকৃত আয়াতগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নিম্নে উল্লেখ করা হল ‎:১. ‏সূরা বাকারার ২০৭ নং আয়াতوَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَشْرِي نَفْسَهُ ابْتِغَاءَ مَرْضَاتِ اللَّهِ وَاللَّهُ رَءُوفٌ بِالْعِبَادِ‘এবং মানুষের মধ্যে এমনও আছে,যে আল্লাহর সন্তোষ লাভের জন্য নিজের জীবন পর্যন্ত বিক্রয় করে দেয় এবং আল্লাহ ‎(এরূপ) ‏বান্দাদের প্রতি অতিশয় অনুগ্রহশীল।’সালাবী তাঁর তাফসীর গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন যে,রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏যখন মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করার প্রস্তুতি নিলেন সেই সময় হযরত আলীকে তাঁর বিছানায় শুয়ে থাকার নির্দেশ দেন যাতে কাফির-মুশরিকরা মনে করে যে,রাসূল তাঁর নিজ ঘরেই রয়েছেন। আলী ‎(আ.) ‏নির্দ্বিধায় এ নির্দেশ পালন করলে মহান আল্লাহ এ আয়াত নাযিল করেন।৭ ২. ‏সূরা আলে ইমরানের ৬১ নং আয়াতفَمَنْ حَاجَّكَ فِيهِ مِنْ بَعْدِ مَا جَاءَكَ مِنَ الْعِلْمِ فَقُلْ تَعَالَوْا نَدْعُ أَبْنَاءَنَا وَأَبْنَاءَكُمْ وَنِسَاءَنَا وَنِسَاءَكُمْ وَأَنْفُسَنَا وَأَنْفُسَكُمْ ثُمَّ نَبْتَهِلْ فَنَجْعَلْ لَعْنَتَ اللَّهِ عَلَى الْكَاذِبِينَ‘অতঃপর তোমার নিকট যখন জ্ঞান ‎(কুরআন) ‏এসে গেছে,এরপরও যদি কেউ ‎(খ্রিস্টান) ‏তোমার সাথে তার ‎(ঈসার) ‏সম্বন্ধে তর্ক-বিতর্ক করে,তবে বল,‘(ময়দানে) ‏এস,আমরা আহ্বান করি আমাদের পুত্রদের ও তোমাদের পুত্রদের,আমাদের নারীদের ও তোমাদের নারীদের এবং আমাদের সত্তাদের ও তোমাদের সত্তাদের;’ ‏অতঃপর সকলে মিলে ‎(আল্লাহর দরবারে) ‏নিবেদন করি এবং মিথ্যাবাদীদের ওপর আল্লাহর অভিসম্পাত বর্ষণ করি।’ঘটনাটি এরূপ ‎: ‏রাসূলুল্লাহ্ ‎(সা.)-এর নবুওয়াতের সত্যতা যাচাই করার জন্য নাজরানের একটি খ্রিস্টান প্রতিনিধিদল মদীনায় আসল। তাদের সাথে আলোচনা ফলপ্রসূ হলো না। রাসূল ‎(সা.) ‏হযরত ঈসা ‎(আ.) ‏সম্বন্ধে প্রতিনিধিদের বললেন যে,তিনি আল্লাহর পুত্র নন,বরং আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। রাসূলুল্লাহ্ হযরত ঈসার জন্মের ব্যাপারে হযরত আদমের উদাহরণও দিলেন। কিন্তু তারা কোন কথাই শুনল না। অবশেষে তিনি আল্লাহর আদেশে পরস্পরের বিরুদ্ধে দোয়া ও মিথ্যাবাদীদের ওপর অভিশাপ বর্ষণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন,যাকে ‎‘মুবাহিলা’ ‏বলে। স্থির করা হল যে,নির্দিষ্ট স্থানে নির্দিষ্ট সময়ে উভয়ে নিজ নিজ পুত্রদের,নারীদের ‎(কন্যা সন্তানদের) ‏এবং তাদের নিজেদের ‎‘সত্তা’ ‏বলে গণ্য হওয়ার যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে একত্র হবে এবং প্রত্যেকে অপরের প্রতি অভিসম্পাত ও আল্লাহর শাস্তি কামনা করবে। রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏ইমাম হুসাইনকে কোলে নিয়ে ইমাম হাসানের হাত ধরলেন এবং হযরত ফাতিমাকে নিজের পেছনে,আর হযরত আলীকে তাঁর পেছনে রাখলেন। অর্থাৎ ছেলেদের স্থানে তিনি নাতিদের,নারীদের স্থানে নিজ কন্যাকে এবং ‎‘সত্তা’ ‏বলে গণ্যদের স্থানে আলীকে নিলেন এবং দোয়া করলেন,‘হে আল্লাহ! ‏প্রত্যেক নবীর আহলে বাইত থাকে,এরা আমার আহলে বাইত। এদের সকল দোষ-ত্রুটি হতে মুক্ত ও পাক-পবিত্র রেখ।’ ‏তিনি এভাবে ময়দানে পৌঁছলে খ্রিস্টানদের নেতা আকব তা দেখে বলল,‘আল্লাহর কসম,আমি এমন নূরানী চেহারা দেখছি যে,যদি এ পাহাড়কে নিজ স্থান হতে সরে যেতে বলেন,তবে অবশ্যই সরে যাবে। সুতরাং মুবাহিলা হতে হাত গুটিয়ে নেওয়াই কল্যাণকর,অন্যথায় কিয়ামত অবধি খ্রিস্টানদের কেউ অবশিষ্ট থাকবে না।’ ‏পরিশেষে তারা জিযিরা কর দিতে সম্মত হল। এটা হযরত আলীর একটি উঁচু স্তরের ফযিলত যে,তিনি আল্লাহর আদেশে রাসূলের ‎‘নাফ্স’ (অনুরূপ সত্তা) ‏সাব্যস্ত হলেন এবং সমুদয় নবীর থেকে শ্রেষ্ঠ হলেন।৮৩. ‏সূরা নিসার ৫৯ নং আয়াত ‎يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ‘হে বিশ্বাসিগণ! ‏তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূল ও তোমাদের মধ্যে যারা নির্দেশের অধিকর্তা,তাদের আনুগত্য কর...।’ইমাম জাফর সাদিক ‎(আ.)- ‏কে জিজ্ঞেস করা হলো যে,উত্তরাধিকারীর আদেশ মান্য করা কি অবশ্যই কর্তব্য? ‏তিনি বললেন ‎: ‏হ্যাঁ,তাঁরা ঐসব ব্যক্তি যাঁদের আদেশ পালন করা এ আয়াতে ওয়াজিব করা হয়েছে...। এ আয়াত হযরত আলী বিন আবি তালিব,হযরত হাসান ও হযরত হুসাইন ‎(আ.)-এর শানে অবতীর্ণ হয়েছে।৯ ৪. ‏সূরা মায়েদার ৫৫ নং আয়াতإِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَالَّذِينَ آمَنُوا الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُمْ رَاكِعُونَ‘(হে বিশ্বাসিগণ!) ‏তোমাদের অভিভাবক তো কেবল আল্লাহ,তাঁর রাসূল এবং সেই বিশ্বাসীরা যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে এবং রুকু অবস্থায় যাকাত প্রদান করে।’শীয়া-সুন্নি উভয় মাযহাবের তফসীরকাররা একমত যে,আয়াতটি হযরত আলী ‎(আ.)-এর শানে নাযিল হয়েছে। যেমন ইবনে মারদুইয়া এবং খাতীব বাগদাদী ইবনে আব্বাস সূত্রে এবং তাবরানী ও ইবনে মারদুইয়া আম্মার ইবনে ইয়াসির ও আলী ইবনে আবি তালিব সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে,আয়াতটি আলী ইবনে আবি তালিব ‎(আ.) ‏সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে যখন তিনি রুকু অবস্থায় যাকাত দেন।ঘটনাটি এরূপ ‎: ‏একদিন হযরত আলী ‎(আ.) ‏মদীনার মসজিদে নামায পড়ছিলেন। এমন সময় একজন ভিক্ষুক এসে ভিক্ষা চাইল। কিন্তু কোন ভিক্ষা না পাওয়ায় সে ফরিয়াদ করল যে,রাসূলের মসজিদ থেকে সে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছে। এ সময় হযরত আলী রুকু অবস্থায় ছিলেন। তিনি সেই অবস্থায় তাঁর ডান হাতের আঙ্গুল থেকে আংটি খুলে নেওয়ার জন্য ভিক্ষুকের প্রতি ইশারা করেন। ভিক্ষুক তাঁর হাত থেকে আংটি খুলে নেয়। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে উপরিউক্ত আয়াত নাযিল হয়।১০৫. ‏সূরা মায়েদার ৬৭ নং আয়াতيَا أَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ مِنْ رَبِّكَ وَإِنْ لَمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ وَاللَّهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْكَافِرِينَ‘হে রাসূল! ‏যা ‎(যে আদেশ) ‏তোমার প্রতিপালকের পক্ষ হতে তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে তা পৌঁছে দাও,আর যদি তুমি তা না কর,তবে তুমি ‎(যেন) ‏তার কোন বার্তাই পৌঁছাওনি,এবং ‎(তুমি ভয় কর না) ‏আল্লাহ তোমাকে মানুষের অনিষ্ট হতে রক্ষা করবেন;এবং নিশ্চয় আল্লাহ অবিশ্বাসী সম্প্রদায়কে সঠিক পথে পরিচালিত করেন না।’যখন রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏দশম হিজরিতে বিদায় হজ্ব থেকে মদীনায় প্রত্যাবর্তন করছিলেন সে সময় আল্লাহ্ তা‘আলা এ আয়াত নাযিল করেন। ইবনে আবী হাতিম ও ইবনে আসাকির আবু সাঈদ খুদরী হতে বর্ণনা করেছেন যে,এ আয়াত গাদীরে খুম প্রান্তরে হযরত আলী ‎(আ.)-এর শানে নাযিল হয়েছে।বিদায় হজ্ব থেকে প্রত্যাবর্তন করার সময় গাদীরে খুম নামক স্থানে মহানবী ‎(সা.) ‏হযরত আলীকে তাঁর পরে সকল মুমিনের অভিভাবক বলে ঘোষণা দেন।১১এ ঘোষণা দেয়ার পর হযরত ওমর হযরত আলীর সাথে সাক্ষাৎ করে অভিনন্দন জানান এবং বলেন ‎: ‘হে আলী ইবনে আবি তালিব! ‏আপনি আজ হতে প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর মাওলা হয়ে গেলেন।’১২৬. ‏সূরা রাদের ৭ নং আয়াতإِنَّمَا أَنْتَ مُنْذِرٌ وَلِكُلِّ قَوْمٍ هَادٍ‘(হে রাসূল!) ‏তুমি তো কেবল সতর্ককারী এবং প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে এক পথ প্রদর্শক।’ইবনে মারদুইয়্যা,ইবনে জারীর,আবু নাঈম তাঁর ‎‘মারেফাত’ ‏গ্রন্থে,ইবনে আসাকির,দাইলামী ও ইবনে নাজ্জার তাঁদের স্ব স্ব গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন যে,আয়াতটি নাযিল হলে মহানবী ‎(সা.) ‏তাঁর হাত নিজের বুকে রেখে বললেন,‘আমিই সতর্ককারী।’ ‏অতঃপর আলীর কাঁধের প্রতি তাঁর হাত দ্বারা ইশারা করে বললেন,‘হে আলী! ‏তুমিই পথপ্রদর্শক এবং মানুষ আমার পর তোমার মাধ্যমে হেদায়াতপ্রাপ্ত হবে।’ ‏উক্ত রেওয়ায়েতটি শব্দের তারতম্যে ইবনে মারদুইয়্যা সাহাবী আবু বারযাহ আসলামী হতে,জীয়াফীল হযরত ইবনে আব্বাস হতে,ইবনে আহমাদ তাঁর মুসনাদে এবং ইবনে মারদুইয়্যা ও ইবনে আসাকির স্বয়ং হযরত আলী ‎(আ.) ‏হতে বর্ণনা করেছেন।১৩৭. ‏সূরা রাদের ৪৩ নং আয়াতوَيَقُولُ الَّذِينَ كَفَرُوا لَسْتَ مُرْسَلًا قُلْ كَفَى بِاللَّهِ شَهِيدًا بَيْنِي وَبَيْنَكُمْ وَمَنْ عِنْدَهُ عِلْمُ الْكِتَابِযারা অবিশ্বাস করেছে তারা বলে,‘তুমি আল্লাহর রাসূল নও।’ ‏তুমি বল,‘আমার ও তোমাদের মধ্যে ‎(রেসালাতের) ‏সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট এবং সেই ব্যক্তি যার কাছে গ্রন্থের পূর্ণ জ্ঞান রয়েছে।’অধিকাংশ তাফসীরকার স্বীকার করেছেন যে,আয়াতে বর্ণিত সেই ব্যক্তি হলেন হযরত আলী ‎(আ.)। যেমন আসমী ‎‘যায়নুল ফাতা’ ‏নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন এবং সা’লাবী আবদুল্লাহ ইবনে আতা থেকে বর্ণনা করেছেন যে,আবদুল্লাহ বিন সালাম বলতেন,‘যার কাছে গ্রন্থের পূর্ণ জ্ঞান আছে’-এর উদ্দিষ্ট হযরত আলী ‎(আ.)। এজন্যই হযরত আলী ‎(আ.) ‏বারবার বলতেন,‘আমার কাছে আমার মৃত্যুর পূর্বে যা চাও জিজ্ঞেস কর।’১৪৮. ‏সূরা নাহলের ৪৩ নং আয়াতوَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ إِلَّا رِجَالًا نُوحِي إِلَيْهِمْ فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَতোমার পূর্বেও আমরা কেবল পুরুষদেরই ‎(রাসূল করে) ‏প্রেরণ করেছি যাদের প্রতি আমরা প্রত্যাদেশ প্রেরণ করতাম;যদি তোমরা না জেনে থাক তবে যারা জানে তাদের জিজ্ঞেস কর।আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেন ‎: ‏জ্ঞানী ব্যক্তিরা অর্থাৎ আহলুয যিকর হলেন হযরত মুহাম্মাদ ‎(সা.),হযরত আলী ‎(আ.),হযরত ফাতেমা ‎(আ.),হযরত হাসান ও হুসাইন ‎(আ.)। যাবের ইবনে আবদুল্লাহ বলেছেন ‎: ‏যখন এই আয়াত নাযিল হল তখন হযরত আলী বললেন ‎: ‏আমরাই হলাম জ্ঞানের ভাণ্ডার।১৫৯. ‏সূরা আহযাবের ৩৩ নং আয়াতوَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى وَأَقِمْنَ الصَّلَاةَ وَآتِينَ الزَّكَاةَ وَأَطِعْنَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا‘হে নবী পরিবার! ‏আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদের সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে।’উম্মুল মুমিনীন হযরত উম্মে সালামার ঘরে এ আয়াত নাযিল হলে রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏হযরত ফাতিমা,ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন ‎(আ.)-কে ডাকেন এবং তাঁদেরকে একটি চাদরে ঢেকে নেন। হযরত আলী তাঁর পেছনে ছিলেন। তিনি তাঁকেও চাদরে ঢেকে নেন। অতঃপর বলেন ‎: ‘হে আল্লাহ্! ‏এরা আমার আহলে বাইত। অতএব,তুমি তাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করে দাও এবং তাদেরকে উত্তমরূপে পবিত্র কর।’ ‏তখন উম্মে সালামা বলেন ‎: ‘হে আল্লাহর রাসূল! ‏আমিও কি তাদের অন্তর্ভুক্ত?’ ‏তিনি বলেন ‎: ‘তুমি স্ব স্থানে আছ এবং তুমি কল্যাণের মধ্যেই আছ।’১৬হযরত উম্মে সালামা ছাড়াও হযরত আবু সাঈদ খুদরী ও আনাস ইবনে মালিক কর্তৃক এ হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে।১৭১০. ‏সূরা শূরার ২৩ নং আয়াতقُلْ لَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا إِلَّا الْمَوَدَّةَ فِي الْقُرْبَى‘বল,আমি এর বিনিময়ে তোমাদের নিকট থেকে আমার নিকটাত্মীয়দের প্রতি ভালবাসা ছাড়া আর কোন প্রতিদান চাই না।’রাসূলুল্লাহ ‎(সা.)-এর নিকটাত্মীয় আহলে বাইতের সদস্যদের প্রতি ভালবাসা পোষণকে এ আয়াত দ্বারা মহান আল্লাহ মুসলমানদের জন্য ফরয বলে ঘোষণা করেন।হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেছেন ‎: ‏যখন এ আয়াত নাযিল হল তখন সাহাবিগণ জিজ্ঞেস করলেন,হে রাসূলুল্লাহ! ‏আপনার নিকটাত্মীয়,যাদেরকে ভালবাসা আমাদের ওপর ওয়াজিব করা হয়েছে তারা কারা? ‏রাসূল ‎(সা.) ‏বললেন ‎: ‏আলী,ফাতেমা,হাসান ও হুসাইন।১৮রাসূলুল্লাহ ‎(সা.)-এর হাদীসে আলী ‎(আ.)হযরত আলীর মর্যাদা সম্পর্কে মহানবী ‎(সা.)-এর নিকট থেকে অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এখানে কয়েকটি উল্লেখ করা হল ‎:১. ‏সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস বলেন,নবী ‎(সা.) ‏তাবুক যুদ্ধের সময় আলীকে লক্ষ্য করে বলেছেন ‎: ‘তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে,মর্যাদার দিক থেকে মূসার নিকট হারুন যে পর্যায়ে ছিলেন,তুমিও আমার নিকট ঐ পর্যায়ে রয়েছ?’১৯২. ‏অন্য একটি হাদীসে এসেছে ‎: ‏রাসূল বলেন ‎: ‘তুমি তো আমার নিকট তদ্রূপ যেরূপ হারুনের স্থান মূসার নিকট। পার্থক্য এতটুকু যে,আমার পরে কোন নবী নেই।’২০৩. ‏রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏ইমাম হাসান ও হুসাইনের হাত ধরে বলেন ‎: ‘যে ব্যক্তি আমাকে ভালবাসে এবং এ দু’জন ও তাদের পিতা-মাতাকে ভালবাসে,সে কিয়ামতের দিন আমার সাথে একই মর্যাদায় অবস্থান করবে।’২১৪. ‏আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণিত। রাসূল বলেছেন ‎: ‘আলীর চেহারার দিকে তাকানোও ইবাদত।’২২৫. ‏রাসূলুল্লাহ্ ‎(সা.) ‏আলী ‎(আ.)-কে সম্বোধন করে বলেছিলেন ‎: ‘মুমিনরাই তোমাকে মহব্বত করবে এবং মুনাফিকরাই তোমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবে।’২৩৬. ‏তিরমিযী,নাসাঈ ও ইবনে মাযাহ হুবশী ইবনে জুনাদাহ্ ‎(রা.) ‏থেকে বর্ণনা করেছেন। রাসূল ‎(সা.) ‏বলেছেন ‎: ‘আলী আমা থেকে এবং আমি আলী থেকে। যে ব্যক্তি আলীকে ভালবেসেছে,সে আমাকে ভালোবেসেছে। আর যে ব্যক্তি আলীকে ভালবেসেছে,সে আল্লাহকে ভালবেসেছে। যে ব্যক্তি আলীর সাথে শত্রুতা পোষণ করেছে সে আমার সাথে শত্রুতা পোষণ করেছে। আর যে আমার শত্রু সে আল্লাহর শত্রু। যে ব্যক্তি আলীকে কষ্ট দিয়েছে,সে আমাকে কষ্ট দিয়েছে।’২৪৭. ‏রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏বলেন ‎: ‘(হে আলী!) ‏দুনিয়া ও আখেরাতে তুমি আমারই ভাই।’২৫৮. ‏আবদুল্লাহ ইবনে বুরাইদা ‎(র.) ‏থেকে তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন ‎: ‏রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏বলেছেন ‎: ‘চার ব্যক্তিকে ভালবাসতে আল্লাহ আমাকে আদেশ করেছেন এবং তিনি আমাকে এও অবহিত করেছেন যে,তিনিও তাদের ভালবাসেন। বলা হল ‎: ‏হে আল্লাহর রাসূল! ‏আমাদের তাদের নামগুলো বলুন। তিনি বলেন ‎: ‏আলীও তাদের অন্তর্ভুক্ত। এ কথা তিনি তিনবার বলেন। ‎(অবশিষ্ট তিনজন হলেন) ‏আবু যার,মিকদাদ ও সালমান।...’২৬৯. ‏জাবির ‎(রা.) ‏থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন ‎: ‏তায়েফ অভিযানের দিন রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏আলীকে কাছে ডেকে তার সাথে চুপিসারে আলাপ করেন। লোকেরা বলল ‎: ‏তিনি তাঁর চাচাত ভাইয়ের সাথে দীর্ঘক্ষণ চুপিসারে কথা বললেন। রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏বলেন ‎: ‏আমি তার সাথে চুপিসারে কথা বলিনি;বরং আল্লাহই তার সাথে চুপিসারে কথা বলেছেন। ‎(অর্থাৎ তার সাথে চুপিসারে কথা বলার জন্য আল্লাহ্ই আমাকে আদেশ করেছেন।)২৭হযরত আলী সম্পর্কে অন্যান্য সাহাবীহযরত আবু বকর প্রায়ই হয়রত আলীর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতেন। হযরত আয়েশা এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন ‎: ‘আমি রাসূলে করীমকে বলতে শুনেছি,আলীর মুখ দেখা ইবাদাতের শামিল।’২৮হযরত উমর বিন খাত্তাব বলতেন,হযরত আলী বিন আবি তালিবের তিনটি বৈশিষ্ট্য ছিল। যদি তার একটি আমার থাকত তাহলে আমি বলতাম যে,আমাকে লাল রঙের একটি উট দেয়া হলে তা অপেক্ষাও আমি তা পছন্দ করতাম। তাঁকে এ তিনটি বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন ‎: ‏১.তাঁর বিয়ে হয় রাসূল ‎(সা.)-এর কন্যার সাথে,২. ‏তাঁর সঙ্গে রাসূলে করীমের মসজিদে অবস্থান এবং যা রাসূলে করিমের জন্য বৈধ ছিল তার জন্যও তা বৈধ ছিল এবং ৩. ‏খায়বার যুদ্ধের পতাকা বহনের দায়িত্ব তাঁর ওপর ন্যস্ত ছিল।২৯হযরত উমর বলেছেন,হে আল্লাহ! ‏আমার ওপর এমন কোন বিপদ দিও না যখন আবুল হাসান ‎(আলী) ‏আমার নিকট উপস্থিত না থাকে। কারণ,তিনি আমার নিকট উপস্থিত থাকলে আমাকে সে বিপদ থেকে নিষ্কৃতি দেবেন।’৩০তাবরানী হযরত ইবনে আব্বাস থেকে রেওয়ায়াত করেছেন যে,হযরত আলীর আঠারটি বৈশিষ্ট্য এমন ছিল যা সমগ্র উম্মতের কারও ছিল না।’৩১তথ্যসূত্র১. ‏মমতাজ বেগম কর্তৃক প্রকাশিত নাহজ আল বালাঘা,২য় মুদ্রণ,আল খুতবাতুল কাসেয়াহ্,খুতবা নং ১৯১২. ‏প্রাগুক্ত৩. ‏প্রাগুক্ত৪. ‏মুসতাদরাকে হাকেম,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏১১২;এটি ইমাম মালেক কর্তৃক বর্ণিত। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে হেরা গুহায় জিবরাঈল ‎(আ.) ‏কর্তৃক রাসূলুল্লাহ ‎(সা.)-এর নবুওয়াত ঘোষণার পর পরই হযরত আলী ‎(আ.) ‏তাঁর ঈমান আনার বিষয়টি প্রকাশ করেন।৫. ‏সুনানে ইবনে মাজাহ্,১ম খণ্ড,পৃ. ‏৪৪৬. ‏নূর-এ-সাকালাইন কর্তৃক প্রকাশিত,সাইয়্যেদ আলী জাফরী প্রণীত আল মুরতাজা,পৃ. ‏৩০।৭. ‏এহইয়াউ উলুমিদ্দীন,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏২৩৮;নুরুল আবসার,পৃ. ‏৮৬,মুসতাদরাকে হাকেম,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏৪;তাফসীরে কুমী,১ম খণ্ড,পৃ. ‏৭১;তাযকিরাতু সিবতে ইবনে যাওযী,পৃ. ‏২১;ইয়ানাবিউল মাওয়াদ্দাহ,পৃ. ‏৯২।৮. ‏তাফসীরে জালালাইন,১ম খণ্ড,পৃ.৬০;বায়দ্বাভী,১ম খণ্ড,পৃ. ‏১১৮,তাফসীরে দুররুল মানসুর,২য় খণ্ড,পৃ. ‏৩৯,মিশর মুদ্রণ;মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বাল,১ম খণ্ড,পৃ. ‏১৮৫;৯. ‏মাজমাউল বায়ান,২য় খণ্ড,পৃ. ‏১৪১;তাফসীরে কুমী,১ম খণ্ড,পৃ. ‏১৪১;ইয়ানাবিউল মাওয়াদ্দাহ,পৃ. ‏২১;শাওয়াহেদুত তানযিল,১ম খণ্ড,পৃ. ‏১৪৮;তাফসীরে ফুরাত,পৃ.২৮১০. ‏তাফসীরে তাবারী,৬ষ্ঠ খণ্ড,পৃ. ‏১৬৫;তাফসীরে রাযী,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏৪৩১;মানাকেবে খাওয়ারেযমী,পৃ. ‏১৭৮;যাখায়েরুল উকবা,পৃ. ‏১০২;তাফসীরে ইবনে কাসীর,২য় খণ্ড,পৃ. ‏৭১;আল- ‏বেদায়া ওয়ান নেহায়া,৭ম খণ্ড,পৃ. ‏৩৫৭;সাওয়ায়েকে মুহরিকাহ,পৃ. ‏২৫;১১. ‏মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বাল,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ‏৩৭২;ইমাম নাসাঈ প্রণীত খাসায়েসে আমীরুল মুমিনীন,পৃ. ‏২১;মুসতাদরাকে হাকেম,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏১০৯;আল গাদীর,১ম খণ্ড,পৃ. ‏২১৪ ও ২২৯;শাওয়াহেদুত তানযিল,১ম খণ্ড,পৃ. ‏১৮৭ ।১২. ‏তাফসীরে তাবারী,৩য় খণ্ড,মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বল,৩য় খণ্ড,দারে কুতনী।১৩. ‏তাফসীরে দুররে মানসুর,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ‏৪৫ দ্রষ্টব্য।১৪. ‏তাফসীরে দুররে মানসুর,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ‏৬৯ ।১৫. ‏কেফাইয়াতুল মুওয়াহহিদীন,২য় খণ্ড,পৃ. ‏৬৫০;মাজমাউল বায়ান,২য় খণ্ড,পৃ. ‏৪১৩;কানযুল উম্মাল,৬ষ্ঠ খণ্ড,পৃ. ‏১৫৬;তাফসীরে তাবারী,১৪তম খণ্ড,পৃ. ‏১০৮ ।১৬. ‏বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত জামে আত-তিরমিযী,৬ষ্ঠ খণ্ড,হাদীস নং ৩৭২৫,পৃ. ‏৩৫৯ ।১৭. ‏মুসনাদে আহমাদ,১ম খণ্ড,পৃ. ‏৩৩১;যাখায়েরুল উকবা,পৃ. ‏২১,তাফসীরে তাবারী,২২তম খণ্ড,পৃ. ‏৮;মুসতাদরাকে হাকেম,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏২০৮;ফাজায়েলে খামসাহ,১ম খণ্ড,পৃ. ‏২২৪;শাওয়াহেদুত তানযিল,২য় খণ্ড,পৃ. ‏১০ ।১৮. ‏যাখায়েরুল উকবা,পৃ. ‏৯ ও ১২;তাফসীরে যামাখশারী,২য় খণ্ড,পৃ. ‏৩৩৯;সাওয়ায়েকে মুহরিকাহ,পৃ. ‏১০১,তাফসীরে দুররুল মানসূর,৬ষ্ঠ খণ্ড,পৃ. ‏৭;মুসনাদে আহমাদ,১ম খণ্ড,পৃ. ‏২২৯;আল গাদীর,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏১৭২;শাওয়াহেদুত তানযিল,২য় খণ্ড,পৃ. ‏৩০ ।১৯. ‏আধুনিক প্রকাশনী কর্তৃক প্রকাশিত সহীহ আল বুখারী,৩য় খণ্ড,হাদীস নং ৩৪৩১;বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত সহীহ মুসলিম,৭ম খণ্ড,হাদীস নং ৬০৪২ ।২০. ‏বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত সহীহ মুসলিম,৭ম খণ্ড,হাদীস নং ৬০৪০ ও জামে আত-তিরমিযী,৬ষ্ঠ খণ্ড,হাদীস নং ৩৬৬৮ ।২১. ‏বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত জামে আত-তিরমিযী,৬ষ্ঠ খণ্ড,হাদীস নং ৩৬৭০২২. ‏এমদাদীয়া লাইব্রেরী কর্তৃক প্রকাশিত হযরত আলী ইবনে আবি তালিব ‎(রা.),পৃ. ‏১৫ ।২৩. ‏বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত জামে আত-তিরমিযী,৬ষ্ঠ খণ্ড,হাদীস নং ৩৬৭৩ ।২৪. ‏এমদাদিয়া লাইব্রেরী কর্তৃক প্রকাশিত হযরত আলী ‎(রা.),পৃ. ‏১৫-১৬ ।২৫. ‏বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত জামে আত-তিরমিযী,৬ষ্ঠ খণ্ড,হাদীস নং ৩৬৫৮;২৬. ‏প্রাগুক্ত,হাদীস নং ৩৬৫৬;২৭. ‏প্রাগুক্ত,হাদীস নং ৩৬৬৪২৮. ‏সাওয়ায়েকে মুহরিকাহ,পৃ. ‏১৭৫ ।২৯. ‏সাওয়ায়েকে মুহরিকাহ,৩য় খণ্ড,এবং মুসতাদরাকে হাকেম,৩য় খণ্ড ।৩০. ‏মুনতাখাবে কানজুল উম্মাল,৩য় খণ্ড ।৩১. ‏সাওয়ায়েকে মুহরিকাহ ১১৩ ।(প্রত্যাশা,৩য় বর্ষ, ‏১ম সংখ্যাপ্রচারে মোঃ জাহিদ হুসাইন

শিশু ইমাম হযরত জাওয়াদ (আ.)'র জন্মবার্ষিকীসকল মোমিন মোমিনা কে জানাই ঈদ মোবারক🎂🎂🎂🎂🎂(((পর্ব ১)))🎂🎂🎂🎂🎂দশই রজব ইসলামের মহাখুশির দিন। এই দিনে পৃথিবীতে এসেছিলেন মাওলা মোহাম্মদ (সা) পবিত্র আহলে বাইতের সদস্য নবম ইমাম হযরত জাওয়াদ বা তাকি(আ)। নবীজীর আহলে বাইতের সদস্যরা কেবল মুসলমানদেরই ধর্মীয় নেতা নন বরং যারাই সত্য পথের সন্ধানী কিংবা কল্যাণকামী-তাদের সবারই নেতা।আহলে বাইতের এই মহান ইমাম হযরত জাওয়াদ (আ) এর জন্ম-বার্ষিকীতে আপনাদের সবার প্রতি রইলো অশেষ অভিনন্দন ও প্রাণঢালা মোবারকবাদ এবং মাওলা মোহাম্মদ (সা.) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের শানে পেশ করছি অসংখ্য দরুদ ও সালাম ।ইমাম জাওয়াদের জন্ম হয়েছিল ১৯৫ হিজরিতে তথা ৮১১ খ্রিস্টাব্দের ১২ এপ্রিল পবিত্র মদীনায়। মজলুম ও দরিদ্রদের প্রতি ব্যাপক দানশীলতা ও দয়ার জন্য তিনি 'জাওয়াদ' উপাধি পেয়েছিলেন। তাকি বা খোদাভীরু ছিল তাঁর আরেকটি উপাধি। জগত-বিখ্যাত মহাপুরুষ ইমাম রেজা (আ) ছিলেন তাঁর বাবা। আর তাঁর মায়ের নাম ‘সাবিকাহ’ বলে জানা যায়। ইমাম রেজা (আ) তাঁর এই স্ত্রীর নাম রেখেছিলেন খিইজরান। তিনি ছিলেন মহানবীর স্ত্রী উম্মুল মু’মিনিন হযরত মারিয়া কিবতির (আ) বংশধর। ইমাম জাওয়াদ (আ) ১৭ বছর ইমামতের দায়িত্ব পালনের পর মাত্র ২৫ বছর বয়সে শাহাদত বরণ করেন। তিনিই হলেন ইসলামের ইতিহাসের সবচেয়ে কম বয়স্ক ইমাম। আহলে বাইতের অন্য ইমামগণের মত ইমাম জাওয়াদ (আ.)ও ছিলেন উচ্চতর নৈতিক গুণ, জ্ঞান ও পরিপূর্ণতার অধিকারী। ইসলামের মূল শিক্ষা ও সংস্কৃতির পুনরুজ্জীবন এবং বিকাশ ছিল তাঁর তৎপরতার মূল লক্ষ্য বা কেন্দ্রবিন্দু। সেযুগের সব মাজহাবের জ্ঞানী-গুণীরা ইমাম জাওয়াদ (আ.)'র উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন।সমসাময়িক যুগের প্রখ্যাত সুন্নি চিন্তাবিদ কামালউদ্দিন শাফেয়ি ইমাম জাওয়াদ (আ.) সম্পর্কে বলেছেন, "মুহাম্মাদ বিন আলী তথা ইমাম জাওয়াদ (আ.) ছিলেন অত্যন্ত উঁচু মর্যাদা ও গুণের অধিকারী। মানুষের মুখে মুখে ফিরতো তাঁর প্রশংসা। তাঁর উদারতা, প্রশস্ত দৃষ্টি ও সুমিষ্ট কথা সবাইকে আকৃষ্ট করত। যে-ই তাঁর কাছে আসতো নিজের অজান্তেই এই মহামানবের অনুরাগী হয়ে পড়ত এবং তাঁর কাছ থেকে জ্ঞান অর্জন করত।" ইমাম জাওয়াদ (আ) মাত্র সাত বা আট বছর বয়সে ইমামতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এতো অল্প বয়সে তাঁর ইমামতিত্বের বিষয়টি ছিল যথেষ্ট বিস্ময়কর। ফলে অনেকেই এ বিষয়ে সন্দেহ করতেন। অথচ আল্লাহর তো এই শক্তি আছে যে তিনি মানুষকে তার বয়সের স্বল্পতা সত্ত্বেও পরিপূর্ণ বিবেক-বুদ্ধির পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেন। কোরানের আয়াতের ভিত্তিতে পূর্ববর্তী উম্মতের মধ্যেও এরকম উদাহরণ বহু আছে। যেমন শিশুকালে হযরত ইয়াহিয়া (আ) এর নবুয়্যত প্রাপ্তি, মায়ের কোলে নবজাতক ঈসা (আ) এর কথা বলা ইত্যাদি সর্বশক্তিমান আল্লাহর অশেষ ক্ষমতারই নিদর্শন। ইমাম জাওয়াদ (আ) শৈশব-কৈশোরেই ছিলেন জ্ঞানে-গুণে, ধৈর্য ও সহনশীলতায়, ইবাদত-বন্দেগিতে, সচেতনতায়, কথাবার্তায় শীর্ষস্থানীয় মহামানব। একবার হজ্জ্বের সময় বাগদাদ এবং অন্যান্য শহরের বিখ্যাত ফকীহদের মধ্য থেকে আশি জন মদীনায় ইমাম জাওয়াদ (আ) এর কাছে গিয়েছিলেন। তাঁরা ইমামকে বহু বিষয়ে জিজ্ঞেস করে অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত ও সন্তোষজনক জবাব পেলেন। ফলে জাওয়াদ (আ)’র ইমামতিত্বের ব্যাপারে তাদের মনে যেসব সন্দেহ ছিল-তা দূর হয়ে যায়।প্রচারে মোঃ জাহিদ হুসাইন আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম‌লা'নাতুল্লাহি আলাল কাজেবিন🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂