পোস্টগুলি

অক্টোবর, ২০২০ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মুহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুমগভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়ে শুরু করছি 'ইমাম হাসান (আ)’র বেদনাবিধুর শাহাদাত'২৮ সফর ইসলামের ইতিহাসের সবচেয়ে শোকাবহ দিন। কারণ দশম হিজরির এই দিনে দুনিয়া থেকে বিদায় নেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা) এবং চল্লিশ বছর পর ৫০ হিজরির একই দিনে শাহাদত বরণ করেন তাঁরই প্রথম নাতি হযরত ইমাম হাসান (আ) মহানবী (সা.)-এর প্রিয় প্রথম নাতি তথা আমিরুল মুমিনীন হযরত আলী (আ.) ও হযরত ফাতেমা (সালামুল্লাহি আলাইহার.)-এর প্রথম সন্তান জন্ম নিয়েছিলেন তৃতীয় হিজরির পবিত্র রমজান মাসের ১৫ তারিখে। নবী করীম (সা.) অভিনন্দন জানাতে হযরত আলী (আঃ) এর ঘরে এসেছিলেন। তিনি এ নবজাত শিশুর নাম আল্লাহর পক্ষ থেকে রাখেন হাসান যার আভিধানিক অর্থ সুন্দর বা উত্তম।মহানবী (সা.)-এর সাথে তাঁর নাতীর জীবনকাল কেটেছে প্রায় সাত বছর।দয়াল নানা তাঁকে অত্যন্ত ভালবাসতেন। বহু বার তিনি নাতিকে কাঁধে নিয়ে বলেছেন : “হে প্রভু,আমি তাকে ভালবাসি। তুমিও তাকে ভালবাস।” তিনি আরো বলতেন : “যারা হাসান ও হুসাইনকে ভালবাসবে তারা আমাকেই ভালবাসলো। আর যারা এ দুজনের সাথে শত্রুতা করবে তারা আমাকেই তাদের শত্রু হিসাবে গণ্য করলো।” “হাসান ও হুসাইন বেহেশতের যুবকদের নেতা।” তিনি আরো বলেছেন,“আমার এই দু’নাতি উভয়ই মুসলমানদের ইমাম বা নেতা চাই তারা তাগুতি শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াক বা না দাঁড়াক।”হযরত ইমাম হাসান (আ) এতটা মহান ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন এবং তাঁর রুহ এতটা নিষ্কলুষ ছিল যে রাসূল (সা.) তাঁকে শৈশবেই অনেক চুক্তি-পত্রের মধ্যে সাক্ষী হিসেবে মনোনীত করতেন। ঐতিহাসিক ওয়াকেদী তার কিতাবে লিখেছেন : “রাসূল (সা.) ছাকিফ গোত্রের সাথে ‘জিম্মি চুক্তি’ স্বাক্ষর করেন। এ চুক্তিপত্র খালিদ বিন সাঈদ লিখেন আর ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন (আ.) সে পত্রে স্বাক্ষর করেন।” যখন আল্লাহর নির্দেশে মহানবী (সা.) নাজরানের খৃস্টানদের সাথে মুবাহিলা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন তখনও তিনি ইমাম হাসান,ইমাম হুসাইন,হযরত আলী ও হযরত ফাতেমাকে আল্লাহর নির্দেশক্রমে সঙ্গে নেন এবং সুরা আহজাবের ৩৩ নম্বর আয়াত তথা তাতহীরের আয়াত তাদের পবিত্রতা ও নিষ্পাপতার ব্যাপারেই অবতীর্ণ হয়।ইমাম হাসান (আ.) তাঁর পিতার পথে চলতেন এবং তাঁর সাথে ঐক্যমত্য পোষণ করতেন। পিতার সাথে তিনিও অত্যাচারীদের সমালোচনা এবং মজলুমদের সমর্থন করতেন।হিজরি ছত্রিশ সনে উষ্ট্রের যুদ্ধের আগুন নেভাতে পিতার সাথে মদীনা হতে বসরায় আসেন ইমাম হাসান। বসরাতে প্রবেশের আগে তিনি হযরত আলীর নির্দেশে সম্মানিত সাহাবী হযরত আম্মার বিন ইয়াসিরকে সাথে নিয়ে জনগণকে সংঘবদ্ধ করতে কুফায় যান। এরপর জনগণকে সাথে নিয়ে ইমাম আলীকে সাহায্যের জন্যে বসরায় ফিরে আসেন। ইমাম হাসান তাঁর সুদৃঢ় ও প্রাঞ্জল বক্তৃতার মাধ্যমে 'ওসমান হত্যার সাথে হযরত আলী জড়িত'- এ অপবাদের দাঁতভাঙ্গা জবাব দেন। ওই অপবাদ প্রচার করা হয়েছিল আবদুল্লাহ বিন যুবাইরের পক্ষ থেকে। তিনি এ যুদ্ধের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত নানা বিষয়ে ব্যাপক সহযোগিতা করেন ও পরিশেষে বিজয়ী হয়ে কুফায় ফিরে যান।ইমাম হাসান (আ) সিফফিনের যুদ্ধেও তাঁর পিতার সাথে অসামান্য ভূমিকা পালন করেছেন। এ যুদ্ধে মুয়াবিয়া তাঁর কাছে আবদুল্লাহ বিন ওমরকে এ কথা বলে পাঠায় যে,“যদি আপনার পিতার অনুসরণ থেকে বিরত থাকেন তাহলে আমরা আপনার পক্ষে খেলাফত ছেড়ে দেবো। কারণ,কোরাইশ গোত্রের লোকজন আপনার পিতার প্রতি তাদের পিতৃপুরুষদের হত্যার কারণে অসন্তুষ্ট। তবে তারা আপনাকে গ্রহণ করতে কোন আপত্তি করবেন না...।”ইমাম হাসান (আ.) উত্তরে বলেন : “কোরাইশরা ইসলামের পতাকা ভূলুণ্ঠিত করতে দৃঢ়চিত্ত ছিল। তবে আমার বাবা আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ইসলামের জন্যে তাদের মধ্যেকার অবাধ্য ও বিদ্রোহী ব্যক্তিদের হত্যা করে তাদের চক্রান্তকে নস্যাৎ করে দিয়েছিল। তাই তারা আমার পিতার বিরুদ্ধে শত্রুতার ঝাণ্ডা উত্তোলন করেছে।”নবী করীম (সা.)-এর জীবিত অবস্থায় তাঁরই নির্দেশ অনুযায়ী হযরত আলী (আ.) নিজের ইন্তেকালের সময় ইমাম হাসানকে তাঁর খেলাফতের উত্তরাধিকারী হিসেবে মনোনীত করেন। তিনি ইমাম হুসাইন (আ.) ও তাঁর অন্যান্য সন্তানদের এবং তাঁর উচ্চপদস্থ অনুসারীদের এ বিষয়ে সাক্ষী রাখেন।মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেছেন:'তিনিই তাঁর রাসূলকে পথনির্দেশ ও সত্যধর্মসহ প্রেরণ করেছেন যাতে একে সমুদয় ধর্মের ওপর বিজয়ী করেন, যদিও অংশীবাদীরা তা অপছন্দ করে। সূরা সাফ:৯আল্লাহর রাসূল(সা.)এর তিরোধানের পর মহান ইমামগণ এ লক্ষ্যকে সামনে রেখেই তাঁদের কর্ম নির্ধারণ করেছেন। তাই যদিও ইমামদের কর্মপদ্ধতির মধ্যে পার্থক্য ছিল কিন্তু সেটি তার পরিবেশ ও পরিস্থিতির দাবিতেই ছিল, কখনও তা তাদের বৈশিষ্ট্যগত তফাত থেকে উদ্ভূত ছিল না। তাই এ ধারণা ঠিক নয় যদি ইয়াজিদের সময় ইমাম হাসান জীবিত থাকতেন তবে তিনি সন্ধির নীতি গ্রহণ করতেন কিংবা এমনও নয় যে, তিনি যুদ্ধ পছন্দ করতেন না বলে শান্তিপূর্ণ পথকে প্রাধান্য দিতেন।আসলে মৌলিক বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইন উভয়েই একরূপ ছিলেন এবং নীতির ক্ষেত্রেও তাঁদের মধ্যে অভিন্নতা ছিল। তাঁরা উভয়েই একদিকে অত্যন্ত সাহসী ও অন্যদিকে বীর যোদ্ধা ছিলেন। নাহজুল বালাগার ২০৭ নং খুতবায় হজরত আলীর বক্তব্য থেকে বোঝা যায় যে, তিনি সিফফিনের যুদ্ধে ইমাম হাসানের দুঃসাহসিকতায় এতটা শঙ্কিত হন যে স্বীয় সঙ্গীদের বলেন : ‘হাসানকে এভাবে মরিয়া হয়ে যুদ্ধ করা থেকে নিবৃত কর আমি তাকে হারানোর আশঙ্কা করছি।’ তাই নিঃসন্দেহে বলা যায় মুয়াবিয়ার সাথে তিনি সঙ্গীদের অসহযোগিতার কারণে সন্ধি করতে বাধ্য হন, ভীরুতার কারণে নয়। ঐতিহাসিক মাসউদী তার ‘ইসবাতুল ওয়াসিয়া’ গ্রন্থে ইমাম হাসানের যে বক্তব্যটি উল্লেখ করেছেন তাতে তিনি বলেছেন : ‘আমি যদি উপযুক্ত সঙ্গী পেতাম তবে খেলাফত লাভের জন্য এমন বিপ্লব ও আন্দোলন করতাম যে কেউ তার নজির দেখেনি।’দ্বিতীয়ত মুয়াবিয়ার বাহ্যিক ধার্মিকতার বিষয়টি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার বৈধতাকে জনগণের সামনে স্পষ্ট করা বেশ কঠিন ছিল। একারণে আমরা দেখি ইমাম হাসানের শাহাদাতের পর মুয়াবিয়া দশ বছর জীবিত থাকলেও ইমাম হোসাইন তার বিরুদ্ধে আন্দোলনের আহ্বান জানাননি। এর বিপরীতে ইয়াজিদের সময় যেভাবে অধার্মিকতা প্রকাশ্য রূপ লাভ করেছিল ইমাম হাসানের জীবদ্দশায় এরূপ অবস্থার সৃষ্টি হলে সেক্ষেত্রে তিনিও বিন্দুমাত্র দ্বিধা না করে ইমাম হোসাইনের মতই বিপ্লব করতেন।আল্লাহ রাব্বুল আ’লামিনের প্রতি ইমাম হাসানের এক বিশেষ অনুরাগ ছিল। এই আসক্তির বহিঃপ্রকাশ ওযুর সময় অনেকে তাঁর চেহারায় দেখেছেন। যখন তিনি ওযুতে মগ্ন হতেন তখন তাঁর চেহারা বিবর্ণ হয়ে যেতো, তিনি ভয়ে কাঁপতে থাকতেন। যখনি তিনি মৃত্যু ও কিয়ামতের কথা স্মরণ করতেন,তখনি ক্রন্দন করতেন এবং বেহুশ হয়ে পড়তেন। তিনি পদব্রজে আবার কখনো নগ্নপদে পঁচিশ বার আল্লাহর ঘর যিয়ারত তথা হজ করেন।ইমাম হাসান (আ) ছিলেন খুবই দানশীল। তিনি জীবনে তিনবার তাঁর যা কিছু ছিল,এমন কি জুতো পর্যন্ত দু’অংশে ভাগ করে আল্লাহর পথে দান করে দেন।ইমাম হাসান (আ) ছিলেন ধৈর্য ও সহনশীলতার প্রতীক। মারওয়ান বিন হাকাম,যে ব্যক্তি ইমামকে বিরক্ত ও কষ্ট দেয়ার ব্যাপারে কোন কিছুই বাকী রাখেনি ইমাম হাসান (আ.)-এর ইন্তেকালের সময় তাঁর জানাযায় অংশ গ্রহণ করে। হযরত ইমাম হুসাইন (আ.) বলেন : আমার ভাইয়ের জীবদ্দশায় তাঁর সাথে আপনি যা মন চেয়েছে তাই করেছেন আর এখন তাঁর জানাযায় অংশ গ্রহণ করেছেন এবং কাঁদছেন?মারওয়ান উত্তর দেয় : “যা কিছু করেছি তা এমন এক মহান ব্যক্তির সঙ্গে করেছি যার সহনশীলতা মদীনার এই পাহাড়ের চেয়েও অনেক বেশি ছিল।”মুয়াবিয়া ইমামের বয়সের স্বল্পতার অজুহাত দেখিয়ে খেলাফত ইমামের হাতে সোপর্দ করতে প্রস্তুত ছিল না, সে তার নাপাক ও নোংরা পুত্র ইয়াজিদের জন্যে পরবর্তী শাসন কর্তৃত্ব পাকা-পোক্ত করতে কোমর বেঁধে লেগে যায় যেন তার খেলাফতের ক্ষেত্রে কোন অসুবিধা দেখা না দেয়। কিন্তু সে তার এই অভিসন্ধি চরিতার্থ করার পথে ইমামকে এক মস্ত বড় বাধা হিসেবে মনে করে। কারণ সে ধারণা করেছিল যদি তার মৃত্যুর পর ইমাম হাসান জীবিত থাকেন তাহলে সম্ভবত জনগণ যেহেতু মুয়াবিয়ার পরিবারের ব্যাপারে অসন্তুষ্ট তাই তারা ইমামের দিকে ঝুঁকে যেতে পারে। তাই সে কয়েক বার ইমামকে হত্যার চেষ্টা করে। অবশেষে চক্রান্ত করে পবিত্র ইমামকে বিষ প্রয়োগে শহীদ করে। তিনি পঞ্চদশ হিজরির সফর মাসের আটাশ তারিখে শাহাদাতের সুধা পান করে চিরনিদ্রায় শায়িত হন। তাঁকে জান্নাতুল বাকীর কবরস্থানে দাফন করা হয়। আল্লাহর অফুরন্ত দরুদ তাঁর উপর বর্ষিত হোক।লা'নাতুল্লাহি আলা কাওমে জালেমিননিবেদক মোঃ জাহিদ হুসাইন

মোহাম্মদ (সা.)'এর দেখানো পথ ও সৌভাগ্যের সিঁড়ি (পর্ব-১০)আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম মোহাম্মদ (সা.)'র আরো কিছু অমূল্য বাণী ও সংক্ষিপ্ত উপদেশ: মহানবী (সা.) বলেছেন : উপদেশ গ্রহণের জন্য মৃত্যুই যথেষ্ট আর অমুখাপেক্ষিতার জন্য খোদাভীতি বা পরহেজগারিতাই যথেষ্ট। আর কর্মব্যস্ততার জন্য ইবাদতই যথেষ্ট। আর কিয়ামতই একমাত্র ভবিষ্যৎ আর আল্লাহ্ই একমাত্র প্রতিদান দাতা। তিনি আরো বলেছেন, দু’টি কাজের চেয়ে উত্তম কোনো পুণ্যের কাজ নেই : আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস এবং আল্লাহর বান্দাদের উপকার করা। আর দু’টি কাজের চেয়ে জঘন্য কোনো কাজ নেই : আল্লাহর সঙ্গে শির্ক করা আর আল্লাহর বান্দাদের ক্ষতি করা। এক ব্যক্তি মোহাম্মদ (সা.)-কে বলল : আমাকে কিছু উপদেশ দিন যার মাধ্যমে আল্লাহ্ আমার মঙ্গল করবেন। তখন হুজুর (সা.) বললেন : বেশি বেশি মৃত্যুকে স্মরণ করো, তা তোমাকে দুনিয়া (প্রেম) থেকে মুক্ত করবে। (আল্লাহর প্রতি) কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করো, কারণ, তা নেয়ামতকে বাড়িয়ে দেয়। বেশি বেশি দোয়া করো, কেননা তুমি জান না কখন তোমার দোয়া গ্রহণ করা হবে। সীমালঙ্ঘন করো না। কারণ, আল্লাহ্ এরূপ নির্ধারণ করেছেন যে, যার সীমা লঙ্ঘিত হয় আল্লাহ্ অবশ্যই তার সহায় হন। (মহান আল্লাহ) ইরশাদ করেন,হে লোকেরা! তোমাদের সীমা লঙ্ঘনের ক্ষতি তোমাদের ওপরই বর্তাবে। (ইউনুস:২৩)📚📚📚📚📚📚📚 আর যেন প্রতারণা করো না। কারণ, আল্লাহ্ এরূপ নির্ধারণ করেছেন যে, ‘মন্দ প্রতারণা কেবল তার কর্তাকেই পরিবেষ্টন করে থাকে।’ (ফাতির:৪৩) 📚📚মহানবী (সা.) আরো বলেছেন : শিগগিরই তোমরা শাসন ক্ষমতার প্রতি লালায়িত হবে। তখন তোমাদের পরিণাম হবে আফসোস আর অনুতাপ। তিনি আরো বলেন : সেই জাতি কখনো সফল হবে না যারা তাদের সামাজিক নেতৃত্বভার নারীর হাতে ন্যস্ত করে।হুজুর (সা.)-এর কাছে আরজ করা হলো : কোন্ সঙ্গীরা উত্তম? তিনি বললেন : যখন তুমি তাকে স্মরণ করবে, সে তখন তোমাকে সাহায্য করবে; আর যখন ভুলে যাবে সে তখন তোমাকে স্মরণ করিয়ে দেবে। আরো বলা হলো : নিকৃষ্টতম লোক কারা? বললেন : জ্ঞানী লোকেরা যখন নষ্ট হয়ে যায়।মহানবী আরো বলেন, আমার প্রতিপালক আমাকে নয়টি বিষয়ের উপদেশ দিয়েছেন : প্রকাশ্য ও গোপনে নিষ্ঠা অবলম্বন করা, সন্তুষ্টি আর ক্রোধের অবস্থায় ন্যায়পরায়ণ থাকা, অভাব ও প্রাচুর্যের সময় মধ্যপন্থা অবলম্বন করা, আর যে আমার প্রতি অত্যাচার করে তাকে যেন ক্ষমা করি, আর আমার প্রতি যে কৃপণতা করে তাকে প্রদান করা, আর যে আমার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করে তার সাথে যেন সম্পর্ক গড়ি, আর আমার নীরবতা যেন হয় চিন্তা-গবেষণা, আর আমার কথা যেন হয় যিকির আর আমার তাকানো যেন হয় শিক্ষা গ্রহণ। মোহাম্মদ (সা.) বলেন : জ্ঞানকে লিপিবদ্ধ করার মাধ্যমে বেঁধে ফেল।তিনি আরো বলেন : যখন কোনো জাতির দুর্বৃত্তরা তাদের নেতা হয়, তাদের নিকৃষ্টরা হয় কর্ণধার আর দুষ্কৃতকারীদেরকে সম্মান করা হয়, তা হলে যেন তারা বিপদের অপেক্ষায় থাকে। মহানবী (সা.) বলেন, অন্যদিকে যখন তোমাদের নেতারা হয় তোমাদের উত্তম লোকেরা, আর তোমাদের সামর্থ্যবানরা হয় তোমাদের দানশীল লোকেরা, আর তোমাদের কাজকর্ম হয় তোমাদের সবার পরামর্শ অনুযায়ী তা হলে তোমাদের জন্য মাটির উপরিভাগই মাটির ভেতরের চেয়ে উত্তম হবে। আর যখন তোমাদের নেতারা হয় তোমাদের নিকৃষ্টরা, আর তোমাদের সামর্থ্যবানরা হয় তোমাদের কৃপণরা, আর তোমাদের কাজকর্ম ন্যস্ত হয় তোমাদের নারীদের ওপর তখন তোমাদের জন্য মাটির ওপরের চেয়ে নিচে থাকাই শ্রেয়।তিনি আরো বলেন : দ্রুত বেগে হাঁটা মুমিনের মূল্য কমিয়ে দেয়।মহানবী (সা.) বলেন : যার (মাল) চুরি হয় সে সবসময় নিরপরাধ লোকদেরকে দোষারোপ করতে থাকে। ফলে তার অপরাধ চোরের চেয়েও বড় হয়ে যায়।তিনি আরো বলেন : আল্লাহ্ তাকে ভালোবাসেন যে, তাঁর অধিকার আদায় করার ক্ষেত্রে উদারতা প্রদর্শন করে। মহানবী (সা.) বলেন : যে ব্যক্তির সকাল ও সন্ধ্যা অতিবাহিত হয় এ অবস্থায় যে, তার তিনটি জিনিস থাকে, তবে তার ওপর দুনিয়ার নেয়ামত পরিপূর্ণ হয়ে যায়। যার সকাল ও সন্ধ্যা অতিবাহিত হয় সুস্থ অবস্থায়, তার মনে প্রশান্তি থাকে আর তার কাছে একদিনের জীবিকা থাকে। আর যদি চতুর্থ বস্তুটিও যদি তার থাকে তা হলে তার দুনিয়া ও আখিরাতের সকল নেয়ামত পূর্ণ হয়। আর সেটা হলো ঈমান। তিনি আরো বলেন : দয়া করো সেই সম্মানিতের ওপর যে লাঞ্ছিত হয়েছে, আর সেই ধনীর ওপর যে নিঃস্ব হয়েছে আর ঐ জ্ঞানীর ওপর যে মূর্খদের কবলে পড়েছে।আল্লাহর নবী মুহাম্মদ (সাঃ) আরো বলেন : দুটি ব্যাপারে অসংখ্য মানুষ ধোঁকা খেয়ে থাকে, সুস্থতা আর অবসর। (অর্থাৎ এগুলোর সদ্ব্যবহার করে না।)তিনি আরো বলেন : অন্তরগুলো ঐসব লোকের বন্ধুত্বে বাধা পড়ে যারা তাদের প্রতি সদাচার করেছে আর ঐসব লোকের শত্রু হয় যারা তাদের প্রতি অনিষ্ট করেছে। হুজুর (সা.) বলেন : নবীদেরকে মানুষের সাথে তাদের বিবেক-বুদ্ধি অনুপাতে কথা বলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।তিনি আরো বলেন : সেই ব্যক্তি অভিশপ্ত যে নিজের রুজির ভার অন্যের ওপর ন্যস্ত করেছে।তিনি বলেন : ইবাদতের সাতটি অঙ্গ। তন্মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হলো হালাল রুজি অর্জন করা। মহানবী (সা.) আরো বলেন : নিশ্চয় আল্লাহ্ জোরজবরদস্তি করে আনুগত্য গ্রহণ করেন না আবার কারো অবাধ্যতার মাধ্যমে তিনি পরাস্তও হন না। বান্দাদের পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করা থেকে তিনি হাত গুটিয়ে নেন নি। অথচ তিনি যেসব জিনিসের ওপরে তাদেরকে ক্ষমতাশীল করেছেন সেসবের ওপর পূর্ণ ক্ষমতার অধিকারী। আর তিনিই হলেন সব রাজত্বের মালিক যা তাদেরকে দান করেছেন। সত্যিই যদি সব বান্দা খোদার আনুগত্যে অবিরত লিপ্ত থাকে, তা হলেও কোনো অন্তরায় ও প্রতিবন্ধক নেই। আবার যদি তারা আল্লাহর অবাধ্যতার কাজ করে তবে তিনি চাইলে তাদের এবং তারা যা করে তার মাঝে প্রতিবন্ধক হতে পারেন।মহানবীর পুত্র ইবরাহীম যখন মৃত্যুবরণ করছিল (তখন তিনি বলেন) : যা অতীত হয়েছে তা যদি (আল্লাহর কাছে) প্রেরিত সঞ্চিত বস্তু না হতো আর শেষও প্রথমের সাথেই সংযুক্ত (সকলকেই মৃত্যুর পরিণতি বরণ করতে) না হতো, তা হলে আমরা তোমার ওপর তীব্রভাবে শোকাহত হতাম হে ইবরাহীম। এরপর তাঁর চক্ষু অশ্রুসিক্ত হলো এবং তিনি বললেন, চক্ষু অশ্রু ঝরায়, আর অন্তর শোকার্ত হয়। আর আমরা শুধু সেটাই বলি যা আল্লাহর পছন্দনীয়। আর সত্যই হে ইবরাহীম! আমরা তোমার জন্য শোকাহতনিবেদক মোঃ জাহিদ হুসাইন

শেষ নবীকে কি বিষ প্রয়োগ হত্যা করা হয়েছিল ?? - পর্ব ১আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (স) বারবার বলে গেছেন -ইসলামের প্রকাশ্য দুশমনি করবে প্রধানত ইহুদিরা। তারা জানত যে, তিনি শেষ নবী। এই প্রসঙ্গে আল্লাহ্‌ বলেন “ইহুদিরা মোহাম্মেদ কে (সত্য নবী হিসাবে) এমনভাবে চিনে, যেভাবে তাদের সন্তানকে চেনে ” (সুরা আন-আম ২০)আল্লাহ্‌ আরও বলেন” আপনি (রাসুল) সব মানুষের চাইতে মুসলমানদের অধিক শত্রু হিসাবেপাবেন ইহুদী ও মুশরেকদেরকে । (সুরা মায়িদা ৮২) আল্লাহ্‌ই সবচেয়ে বেশী জ্ঞানী এবং একমাত্র তিনিই ভবিষ্যতের জ্ঞান রাখেন এই ব্যাপারে কারো দ্বিমত থাকার সম্ভাবনা নেই।অনেকেই বলতে পারে যে এইভাবে মানুষে মানুষে কোন্দল সৃষ্টির মানে কি ?? মানবতা বলে কিছুই কি নেই ?? তারা জেনে রাখুন,নিঃসন্দেহে আমরা আল্লাহ্‌র চেয়ে বেশীজ্ঞান রাখি না । যেখানে আল্লাহ্‌ নিজেই ঘোষণা করছেন যে ইহুদিরাই ইসলামের সবচেয়ে বড় শত্রু সেক্ষেত্রে আমার আপনার আপত্তি থাকার কথা না । আর এই জাতির ষড়যন্ত্রের কথা যদি জানতে চান তবে আমি তাদের ব্যাপারে ধারাবাহিক সিরিজ তৈরি করছি, একে একে পোস্ট হতে থাকবে ইনশাআল্লাহ। আশা করি পড়বেন আর প্রতিবার আকাশ থেকে পরবেন এই জাতির পৃথিবী নিয়ন্ত্রনের গুপ্ত রহস্য শুনলে।যেটা নিয়ে কথা হচ্ছিল, মুসা(আ) এর তাওরাতে শেষ নবীর ভবিষ্যৎবাণী আছে। ঈসা(আ) এর ইঞ্জিলে আছে। বলা হয় আল্লাহ্‌ এক লক্ষ চব্বিশ হাজার মতান্তরেদুই লক্ষ চব্বিশ হাজার নবী-রাসুল প্রেরন করেছেন দুনিয়াতে শুধু মানব জাতিকে এইসংবাদ পোঁছানোর জন্য যে – কে তাদের রব !! কার উপাসনা করতে হবে !! কার কাছে সাহায্য চাইতে হবে !! যুগে যুগে মানুষ তাদের রব কে ভুলে গেছে, ভুলে গেছে তাদের সাহায্য কারীকে। যখনই মানুষ ভুলে যায় তাদের রবের কথা তখন মনে করিয়ে দেয়ার জন্য আল্লাহ্‌ যুগে যুগে প্রতিটি জাতির কাছে শিক্ষক(নবী-রাসুল) পাঠিয়েছেন যার শুরু হয়েছিল আদাম(আ) এবং শেষ হয় মোহাম্মদ(সঃ) এর মাধ্যমে, তার পর আর কোন নবী আসবে না। প্রশ্ন হতে পারে –এখন যদি মানুষ তাদের রবকে ভুলে যায় তাহলে কি হবে ?? প্রশ্ন হতে পারে-আল্লাহ্‌ তো আর কোন সতর্ককারী পাঠাবেন না কিয়ামত পর্যন্ত, যদি তারা পথভ্রষ্ট হয় কে তাদের সত্য পথে আনবে ?? তার উত্তর এই পোস্ট এ লিখলে অনেক বিস্তারিত হয়ে যাবে তাই লিখলাম না, যদি জানার আগ্রহ থাকে বলবেন আমি দিয়ে দিব ইনশাআল্লাহ।অনেকের হয়ত মনে মনে একটা প্রশ্ন আসতে পারে, যদি ইহুদিরা জেনেই থাকে যে মোহাম্মেদ শেষ নবী তাহলে কেন তারামেনে নিতে পারছিল না ?? এর মূল কারন হল- তারা জাতিগত অহংকারেরকারনে মেনে নিতে চাচ্ছিল না । তাদের ধারনাছিল শেষ নবী আসবেন তাদের মত সম্ভ্রান্ত বনী-ইসরাইল বংশে (ইহুদি), কিন্তু তা না করে আল্লাহ্‌ শেষ নবীকে পাঠালেন পোত্তলিক আরব বংশে যারা কিনা মূর্তিপুজা করে, এইটাই ছিল ইহুদিদের শেষ নবীকে না মানার মুল কারন। তাই তারা উঠে পড়ে লাগে শেষ নবীকে হত্যা করতে। তারা অনেকভাবে চেষ্টা করেছিল। কালো জাদুতে তারা বেশ পারদর্শী ছিল , কিন্তু তাদের এই “ঐতিহ্যবাহী” কালো জাদু দিয়ে হত্যার চেষ্টাকরেও সফল হতে পারেনি।নিচের যে ছবি দেখতে পাচ্ছেন এটা আফ্রিকার কোন জঙ্গলিদেরনয়, জায়গাটি আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়াই নাম রেড ফরেস্ট (redforest) ছবিতে যাদের দেখছেন তারা কোন মূর্খঅশিক্ষিত জংলী নয় , তারা সবাই সেই সব ব্যক্তিত্ব যারা নিয়ন্ত্রণ করছে পৃথিবীরস্বর্গ আমেরিকা তথা গোটা বিশ্ব। আমেরিকারপ্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বুশ তাদের একজন। red forest এর জায়গাটিকে বহিমিয়ান গ্রুভ(Bohemian Grove) বলে.বিস্তারিত জানতে উইকি দেখতে পারেন কিন্তু একবার খুব কাছাকাছি চলে গিয়েছিল। সেটাই আজকের টপিক।বিষয়টা খুব সেনসিটিভ। তাই, কেউ যদি বিশ্বাস করতে না চায়, কোন সমস্যা নেই, কারণ এটার উপর আমাদের ঈমান নির্ভর করবে না। কেবল সত্য জানানোর জন্য বলা ।তবে, এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই নবী (স) সেই কষ্ট সহ্য করেই মারা গেছেন। তিনি মৃত্যুশয্যায় অনেক কষ্ট সহ্য করেছেন এরকারনে। আসুন সেই ঘটনাটা আগে দেখিঃ৬২৮ সালের জুন মাস। (হিজরি সালের সাথে আমরা কম পরিচিত বলে আমি খ্রিস্টীয় সাল ব্যবহার করলাম) মুহাম্মাদ (স) খায়বার জয় করেন। সেখানকার এক ইহুদী নারী জায়নাব বিনতে আল হারিস নবী এবং তার সাহাবীদের দাওয়াত করে। কিন্তু তার মনে ছিল নবী (স) কে হত্যা করার মতলব। সে বিশেষ উপায়ে খোজ নিয়ে জানতে পারল, নবী (স) এর প্রিয় খাবার মেষশাবকের কাঁধের গোশত। তাই সে মেষশাবক মেরে রান্না করল। কিন্তু, তার সাথে মিশিয়ে দিল খুবই শক্তিশালী প্রাণঘাতী বিষ। দাওয়াতের দিন, সে নবী (স) এবং সাহাবাদের সামনে পরিবেশন করল। মুহাম্মাদ (স) এক টুকরো গোশত মুখে দিলেন। অন্যদিকে, বিসর ইবনে আল বারা নামের এক সাহাবীও মুখে দিলেন। মুহাম্মাদ (স) সাথে সাথে বললেন, “খেও না!! এটা বিষাক্ত।” কিন্তু ততক্ষণে তিনি খেয়ে ফেলছেন, পরে বিসর(র) মারা যান ।রাসুল (স) জায়নাব কে আড়ালে ডেকে নিয়ে কৈফিয়ত চাইলেন। কিন্তু সে কেবল বলল, “আমি আপনাকে খুন করতে চেয়েছিলাম।” নবী (স) ব্যক্তিগতভাবে তাঁকে মাফ করে দেন। কিন্তু ঐ সাহাবির পরিবার কিসাস দাবি করলে জায়নাবকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় খুনের অভিযোগে। (সাহিহ আল বুখারি, হাদিস ৩৭৮৬, ৪৩৯৪)এই ছিল নবী (স) কে হত্যা চেষ্টার সবচেয়ে সফল ঘটনা। তিনি আল্লাহ্‌র নবী হওয়ায় আল্লাহ্‌ তাঁকে সেই বিষ এর প্রভাব থেকে রক্ষা করেছেন । ৪ বছর পর তার নবুওয়াতের কর্মের সমাপ্তি ঘোষিত হয়, “আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।” (মায়িদা, ৫:৩)এরপর রাসুল (স) অসুস্থ হয়ে পড়েন, খুবই অসুস্থ। তিনি মৃত্যুশয্যায় শায়িত হন। খেয়াল করে দেখুনঃতিনি কিসের ব্যথায় ভুগছিলেন ??? আল-বুখারির একটা হাদিস দিলাম আপনাদের জন্য-“হযরত আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স) তার মৃত্যুশয্যায় প্রায়ই বলতেন, ‘হে আয়িশা!! খায়বার এ যে খাবার আমি খেয়েছিলাম সেই (ইহুদীর বিষের) বেদনা আমি এখনো অনুভব করছি। আমার মনে হচ্ছে, আমার রক্তনালী যেন ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে সেই বিষের কারণে...’{সাহিহ বুখারি, ৫ম খণ্ড, বই ৫৯, হাদিস ৭১৩} এই কষ্ট নিয়েই আমাদের প্রিয় নবী (স) ইন্তেকাল করেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। সেটা ছিল ৬৩২ সাল।রাসুলের যে কয়জন ঘনিষ্ঠসাহাবা ছিলেন আব্দুল্লাহ ইবনে মাসাউদ (রা) তাদের মধ্যে অন্যতম আপনারা যারা তার বর্ণিত হাদিস পড়েছেন তারা জানেন। তিনি বলেছিলেন,“আমি দরকার হলে ৯ বার কসম খেয়ে বলতে পারব, রাসুল (স) কে হত্যা করা হয়েছে, কারণ আল্লাহ্‌ তায়ালা তাঁকে নবী করেছেন, আর করেছেন শহীদ।”মুহাম্মাদ (স) নবী ছিলেন দেখে তাঁকে কেউ হত্যা করতে পারবে না, এমন কোন কথা হতে পারে না। এক যুদ্ধের সময়ই রাসুলের মৃত্যুর গুজব রটে গেলে সাহাবিরা মানসিক ভাবেদুর্বল হয়ে পরে, তার প্রেক্ষিতে আল্লাহ্‌ পবিত্র কুরআনে কী বলেছেন এ নিয়ে দেখুনঃ“আর মুহাম্মদ তো একজন রাসুল ব্যতীত কিছু নন! তাঁর আগেও বহু রাসূল অতিবাহিত হয়ে গেছেন। তাহলে তিনি যদি মৃত্যুবরণ করেন অথবা তাঁকে ‘হত্যা’ করা হয়, তবে কি তোমরা পশ্চাদপসরণ করবে ?”(আলে ইমরান, ৩:১৪৪)আল্লাহ্‌ এখানে ২টি ক্ষেত্রের কথাই বলেছেন!! তিনি স্বাভাবিক মারাও যেতে পারেন, তাঁকে হত্যাও করা হতে পারে। তবে, কেউ নিশ্চিতভাবে বলতে পারবে না, যে তিনি কেবল বিষের কারণে মারা গেছেন, অথবা, কেবল বার্ধক্য এর কারণে মারা গেছেন। বরং, এটা বলা যায়, তিনি বার্ধক্যের কারণে মারা গিয়েছেন, কিন্তু তিনি মৃত্যুশয্যায় বিষের যন্ত্রণা ভোগ করেছেন। কারণ তিনি নবী, কিন্তু মানুষ বলে বিষের যন্ত্রণা হওয়াটাই স্বাভাবিক।। একমাত্র আল্লাহ্‌ই সব জানেন। তাঁর আগেও কি অনেক নাবীকে হত্যা করা হইনি ?? প্রমান দেখুন- মুহাম্মাদ (স) এর ঠিক আগের নবী ঈসা (আ) কে হত্যা চেষ্টা করেছে ইহুদীরা, যদিও অলৌকিকভাবে আল্লাহ্‌ তাঁকে বাঁচিয়ে তুলে নেন। তাঁর অপমৃত্যু হয়নি।তাঁর আগের জন, ইয়াহিয়া (আ) এর শিরশ্ছেদ করে মাথা আলাদা প্লেটে করে পরিবেশন করা হয়েছিল। তাঁর আগের ইয়াহিয়া (আ) পিতা জাকারিয়া (আ) কে ইহুদীরা বাইতুল মুকাদ্দাস এর কাছেই করাত দিয়ে দু টুকরা করে হত্যা করে।এর আগের অনেক নবীকেই হত্যা করা হয়। ইসরায়েল এর বাদশাহ আহাব এর স্ত্রী ইসাবেল এর আদেশে অসংখ্য নবীকে হত্যা করা হয়।ইসরায়েল এর নবী আরিয়াহ (আ) কে শিরশ্ছেদ করা হয়।এরকম উদাহরন দিয়ে হয়ত শেষ করা যাবে না। ইহুদীরা সর্বদাই চেষ্টা করে এসেছে মুহাম্মাদ(স) কে দুনিয়া থেকে সরাতে, তাঁর বংশধরদের হত্যা করতে। কারণ, মুহাম্মাদ (স) এর Direct Bloodline হবেন মুহাম্মাদ আল মাহদি যাকে আমরা ইমাম মাহদি বলে চিনি, যিনি ইহুদিদের ত্রাণকর্তা দাজ্জাল এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে মুসলিমদের নেতৃত্ব দেবেন। এইকথা রাসুল বলে গেছেন,তারাও জানে এটা সত্যি।নিবেদন মোঃ শামসীর হায়দার

ফাতেমার আ. ‏মৃত্যু ও নানাবিধ গোপণ রহস্যপ্রশ্ন: ‏উৎসুক হৃদয়ে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এমন হতে পারে যে, ‏কী কারণে হযরত ফাতেমা সালামুল্লাহি আলাইহা নবী স. ‏এর ওফাতের মাত্র তিন মাসের মধ্যে মারা যান? ‏তবে কি তিনি কোন রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন, ‏নাকি তাঁর সাভাবিক মৃত্যু হয়েছিল। যদি সাভাবিক মৃত্যু না হয়ে থাকে, ‏তবে কেন আমরা সুন্নি আলেম ওলামাদের মুখ থেকে তার কারণ সম্পর্কে কিছু শুনতে পাই না?উত্তর: ‏এ প্রশ্নের উত্তর দেয়ার আগে একটি ভূমিকা দেয়া প্রয়োজন মনে করছি। আর ভূমিকাটি হল আমার জীবনের বাস্তক একটি ঘটনা। ঘটনাটি এরূপ:ভূমিকানবীর স. ‏আহলে বাইতকে ভালবাসার কারণে অনেক বাধার সম্মুখিন হতে হয়েছে। একদিন আমার বড় ভাই আমাকে জিজ্ঞেস করে বলল যে, ‏তুই যে মাযহাবের অনুসরণ করিস, ‏আলেম ওলামারা কেন তার বিরোধিতা করে? ‏আমি বললাম ‎: ‏ভাই জান! ‏যে আলেম ওলামারা আমার মাযহাবের বিরেধিতা করে, ‏তাদেরকে প্রশ্ন করো যে, ‏হযরত ফাতেমা জাহরা কত বছর বয়সে মারা গিয়েছেন? ‏তাঁর মৃত্যুর কোন কারণ ছিল কি? ‏নাকি তিনি সাভাবিক মৃত্যু বরণ করেছিলেন। যদি তুমি আমার এসব প্রশ্নের উত্তর এনে দিতে পার, ‏তবে আমি তোমাকে বলব যে, ‏এসব আলেমরা কেন আমাদের বিরোধিতা করে।আমার সেই ভাই ১৮ মাস হল মারা গেছেন, ‏কিন্তু তিনি আমাকে সেই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যেতে পারেন নি; ‏হয়তো আলেমদের কাছ থেকে গ্রহণযোগ্য কোন উত্তর পান নি। তবে এ কথা সত্য যে, ‏তারপর থেকে আমার ভাই কখনো আমার সাথে বিরোধিতা করেন নি। আমি নিজেও যখন উপরোক্ত প্রশ্নাদির উত্তর জানতে পেরেছি, ‏তখন থেকেই আমি আহলে বাইতকে ভালবাসতে উদ্বুদ্ধ হয়েছি এবং আমি মনে করি: ‏যেকোন বিবেকবান মুসলমানই এসব প্রশ্নের উত্তর জানলে নবীর আহলে বাইতকে আগের চেয়ে আরো বেশি ভাল বাসবে।যেহেতু প্রশ্নের উত্তর দেয়ার আগে ভূমিকা টেনে পাঠকবর্গকে বিরক্ত করেছি, ‏তাই এ পর্যায়ে উপরোক্ত প্রশ্নাদির জবাব সংক্ষেপে উল্লেখ করব তার পর সম্ভব হলে প্রতিটি প্রশ্নে জবাব বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করব ইনশা আল্লাহ।সংক্ষিপ্ত উত্তরঠিক যেভাবে প্রশ্নে উল্লেখ করেছি যে, ‏নবী স. ‏এর ওফাতের তিনমাসের মধ্যেই ফাতেমা জাহরা মুত্যু বরণ করেছিলেন, ‏তার এ মৃত্যু স্বাভাবিক মৃত্যু ছিল না। রাসূল স. ‏এর ওফাতের পর হযরত আলীকে জোর করে বাইয়াত করানোর জন্য তাকে যখন বাড়ি থেকে নিয়ে যেতে আসা হয়, ‏তখন হযরত ফাতেমা সা. ‏বাধা দেন এবং আগন্তক লোকদের সামনে তিনি যান। যাতে তারা আলীকে নিতে না পারে। কিন্তু এই বাধাই অবশেষে ফাতেমার মৃত্যুর কারণ হয়ে যায়। এ জন্য বলা যায় যে, ‏নবী স. ‏এর মৃত্যুর পর তাঁর রেখে যাওয়া বেলায়াতের রক্ষক হিসেবে প্রথম শহীদ হল হযরত ফাতেমা সালামুল্লাহি আলাইহা।অথচ সুন্নি আলেম ওলামারা এ বিষয়ে কোন কথা বলেন না। হয়তো কেউ কেউ তার কারণ জানেন না, ‏অথবা জেনে বুঝেও তা বলেন না। কারণ তখন হয়তো সুন্নি মতাদর্শ প্রশ্নের সম্মুখিন হবে!ফাতেমার আ. ‏মৃত্যুর মূল রহস্যপ্রশ্ন ৩ ‎: ‏ফাতেমা আ. ‏এর মৃত্যুর মূল রহস্য কী?উত্তর ‎: ‏এ পশ্নের উত্তর দেয়ার পূর্বে তার দৈহিক আঘাতের কারনাদি সম্পর্কে অবগত হওয়া প্রয়োজন।ফাতেমা আ. ‏এর দৈহিক আঘাত প্রাপ্তির মূল কারণ সমূহফাতেমা আ. ‏এর দৈহিক আঘাত প্রাপ্তির মূল কারণ সমূহ নিম্নরূপ:১- ‏নবীর মৃত্যুতে গভীর শোক, ‏সবেদনা ও কান্না।২- ‏নবীর ওসি অর্থাৎ হযরত আলীর মজদুরিয়াত ও নিঃসঙ্গতার কারণে আত্মিক শোক ও প্রতিরক্ষা ছিল দৈহিক আঘাতের দ্বিতীয় কারণ।ইবনে শাহর অশুব ‎(মৃ: ‏৫৯৯ হি.) ‏বর্ণনা করেছেন ‎:“উম্মে সালমা ফাতেমার ঘরে প্রবেশ করে বলল ‎: ‏ওহে নবী কন্যা! ‏কিভাবে রাত কাটালেন।ফাতেমা বললেন ‎: ‏শোক ও দুঃখ-ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে রাত কাটিয়েছি। শোক এই কারণে যে, ‏প্রিয় নবীকে হারিয়েছি ও দুঃখ এই জন্য যে, ‏তাঁর স্থলাভিষিক্তের উপর আরোপিত জুলুম। আল্লাহর কসম করে বলছি: ‏এতে নবীর উত্তরসূরীর প্রতি অবমাননা হয়েছে ‎(মানাকিবু অলে আবি তালিব, ‏২/২০৫।)।[1]৩- ‏ফাতেমা সা. ‏এর পবিত্র পদ ও মর্যাদার অবমাননা ছিল তৃতীয় কারণ ‎(নাহজুল বালাগার শারহ, ‏ইবনে আবিল হাদিদ, ‏১৬/২১৪) ‏।আল্লামা তাবারসি ‎(মৃ: ‏ষষ্ট হিজরি) ‏বর্ণনা করেছিন:[ফাদাকের খোৎবা সমাপ্তির পর ফাতেমা বলেছিলেন ‎:لَیتَنِی مِتُّ قَبلَ هینَـتِی وَ دُونَ ذِلَّتِی...হায়, ‏যদি এমন জুলুমের স্বীকার হবার পূর্বে মারা যেতাম! (এহতিজাজ, ‏খন্ড ১, ‏পৃ ১০৭)।অতএব, ‏বলা যায় যে, ‏ফাতেমার শোকের কারণ শুধু পিতার মৃত্যুর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। বরং তার সাথে আরে দু’টি ব্যাথা যোগ হয়েছিল।৪- ‏ফাতেমার বাড়িতে হামলার সময় তাঁর দেহে মারাত্মক আঘাত হানা হয়েছিল। অন্য ভাষায় বলতে গেলে বলতে হয় ‎: ‏তার পিতার বিরহ বিচ্ছেদের সাথে সাথে তাকে এমন আঘাত করা হয়েছিল, ‏যার ফলে তিনি ধরাশায়ি হয়ে গিয়েছিল। এ বিষয়টি ভুলে গেলে চলবে না।কাজি নোমানি মাগরিবি বর্ণনা করেছেন ‎:[عَن أبِی عَبدِاللهِ جَعفَرِبنِ مُحَمَّدٍ الصادِقِ‌علیه‌السّلام عَن ‌أبِیهِ‌علیه‌السّلام: قالَ:]إنَّ رَسُولَ اللهِ‌صلّی‌الله‌علیه‌وآله أسَرَّ إلی فاطِمَة‌َعلیهاالسّلام أنَّها أولی(أوَّلُ) مَن یَلحَقُ بِهِ مِن أهلِ بَـیتِهِ فَلَمّا قُبِضَ وَ نالَها مِن القَومِ ما نالَها لَزِمَت الفِراشَ وَ نَحَلَ جِسمُها وَ ذابَ لَحمُها وَ صارَت کَالخَیالِ. *ইমাম জাফর সাদিক আ. ‏তাঁর পিতার কাছ থেকে বর্ণনা করেছেন ‎: ‏রাসূল স. ‏ফাতেমাকে চুপিসারে বললেন ‎: ‏তাঁর ওফাতের পর তার আহলে বাইতের মধ্য থেকে সর্ব প্রথম যে তাঁর সাথে গিয়ে মিলিত হবে, ‏সে হল ফাতেমা আ.। অতঃপর যখন নবী স. ‏মৃত্যু বরণ করলেন এবং তার ঘরে হামলা করে তাকে আহত করা হল, ‏তখন তিনি শয্যাশায়ী হয়ে গেলেন, ‏ক্রমশ দূর্বল হয়ে পড়লেন ও এমন ভাবে শুকিয়ে গেলেন যেন মনে হয়েছিল শুকনো কাঠি হয়ে গেছেন ‎(দায়ায়িমুল ইসলাম, ‏১/২৩২)।শেখ তুসি বর্ণনা করেন ‎:وَ المَشهُورُ الَّذِی لاخِلافَ فِیهِ بَـینَ الشِیعَةِ أنَّ عُمَرَ ضَرَبَ عَلی بَطنِها حَتّی أسـقَطَت...শিয়াদের মধ্যে এ বিষয়ে প্রসিদ্ধি রয়েছে ও কোনরূপ মতপার্থক্য নেই যে, ‏ফাতেমার পেটে ওমর এমন আঘাত হেনেছিল যে কারণে গর্ভের সন্তান পড়ে যায় ‎(তালখিছুশ শাফি, ‏৩/১৫৬)।মুহাম্মদ ইবনে জারির ইবনে রুস্তম তাবারি ‎(মৃ: ‏চতূর্থ হিজরি) ‏বর্ণনা করেন:فَلَمّا قُبِضَ رَسُولُ اللهِ‌صلّی‌الله‌علیه‌وآله وَ جَری ما جَری فِی یَومِ دُخُولِ القَومِ عَلَیها دارَها وَ إخراجِ ابنِ عَمِّها اَمِیرِالمُؤمِنِینَ ‌علیه‌السّلام وَ ما لَحِقَها مِن الرَجُلِ أسـقَطَت بِهِ وَلَداً تَماماً وَ کانَ ذلِکَ أصلَ مَرَضِها وَ وَفاتِها. ‏নবী স. ‏যখন মারা গেলেন, ‏তারপর যেদিন ফাতেমার ঘরে হামলার ঘটনা ঘটল, ‏আমিরুল মুমিনিনকে জোরপূর্বক বের করে আনা হল এবং ঐ পুরুষের দ্বারা যে বালা ফাতেমার উপর আসল, ‏যে কারণে তাঁর গর্ভের পূর্ণ ছেলে-সন্তানের গর্ভপাত ঘটল। আর এটাই ছিল তাঁর অসুস্থতা ও মৃত্যুর মূল কারণ ‎(দালায়েল উল ইমামাহ/২৭)।আল্লামা হিল্লি ‎(মৃ: ‏৭২৬ হি.) ‏বর্ণনা করেন,وَ ضُرِبَت فاطِمَةُ‌علیهاالسّلام فَألقَت جَنِیناً اسمُهُ مُحسِنٌ... ‏ফাতেমাকে আ. ‏এমন আঘাত হানা হল, ‏যে কারণে তার গর্ভের সন্তান ‎‘মোহসেন’ ‏পড়ে গেল ‎... (শারহুত তাজরিদ/৩৭৬)।অতএব, ‏উপরোক্ত কারণাদি পর্যালোচনা করার পর প্রমাণিত হয় যে, ‏ফাতেমা জাহরা সা. ‏আমিরুল মুমিনিন হযরত আলীর পৃষ্ঠপোষকতা করার কারণে আত্মিক ও দৈহিক ভাবে মারাত্মক আঘাত প্রাপ্ত হন। আর তাই ছিল তাঁর মৃত্যু ও অসুস্থতার মূল কারণ। যে আঘাত খলিফার দরবারি লোকদের পক্ষ থেকে ফাতেমার ঘরে হানা হয়েছিল।মুহাম্মদ ইবনে জারির ইবনে রুস্তম তাবারি ‎(মৃ: ‏চতূর্থ হিজরি) ‏বর্ণনা করেন:[عَن أبِی‌بَصِیرٍ عَن أبِی عَبدِاللهِ‌علیه‌السّلام: قالَ:]وَ کانَ سَبَبُ وَفاتِها أنَّ قُنفُذاً مَولی عُمَرَ لَکَزَها بِنَعلِ السَیفِ بِأمرِهِ، فَأسـقَطَت مُحسِناً وَ مَرِضَت مِن ذلِکَ مَرَضاً شَدِیداً...ইমাম আবু আব্দিল্লাহের কাছ থেকে আবু বাছির বর্ণনা করেছেন ‎: ‏ওমরের নির্দেশে তার ভৃত্য ‎‘কুনফুয’ ‏তরবারির গিলাফ দিয়ে ফাতেমাকে আঘাত হেনেছিল, ‏যে কারণে মুহসিনের গর্ভপাত ঘটে এবং সে কারণেই ফাতেমা আ. ‏মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন… (দালায়েল উল ইমামাহ/৪৫)।কাফয়ামি ‎(মৃ: ‏৯০৫ হি.) ‏বর্ণনা করেছেন ‎:إنَّ سَبَبَ وَفاتِهاعلیهاالسّلام هُوَ أنَّها ضُرِبَت وَ أسـقَطَت.নিশ্চয় ফাতেমার মৃত্যুর কারণ হল: ‏তিনি আঘাত প্রাপ্ত হলেন ও তাতে গর্ভপাত হল ‎(মেসবাহ/৫২২)।প্রিয় পাঠকবর্গ! ‏উপরোক্ত বিষয়াদি থেকে সত্যই কি বলা যায় না যে, ‏ফাতেমা জাহরার মৃত্যু ছিল শাহাদাতের মৃত্যু?তাবারসি বর্ণনা করেন ‎:وَ حالَت فاطِمَةُ‌علیهاالسّلام بَـینَ زَوجِها وَ بَـینَهُم عِندَ بابِ البَیتِ فَضَرَبَها قُنفُذٌ بِالسَوطِ عَلی عَضُدِها، فَبَـقِیَ أثَرُهُ فِی عَضُدِها مِن ذلِکَ مِثلَ الدُملُوجِ مِن ضَربِ قُنفُذٍ إیّاها فَأرسَلَ أبوبَکرٍ إلی قُنفُذٍ إضرِبها، فَألجَـأها إلی عِضادَةِ بَـیتـِها، فَدَفَعَها فَکَسَرَ ضِلعاً مِن جَنبِها وَ ألقَت جَنِیناً مِن بَطنِها، فَلَم ‌تَزَل صاحِبَةَ فِراشٍ حَتّی ماتَت مِن ذلِکَ شَهِیدَه ...হযরত ফাতেমা তাঁর স্বামি ও আক্রমনকারী ব্যক্তিদের মাঝে দাড়িয়ে প্রতিরোধ করেছিলেন, ‏তখন ‎‘কুনফুয’ ‏ফাতেমার উরুতে এমন আঘাত হানল যে, ‏তার দাগ বেন্ডেজের আকার ধারণ করল। আবুবকর কুনফুযকে ফাতেমাকে মারার জন্য পাঠিয়েছিল! ‏তাই কুনফুয ফাতেমাকে ঘর থেকে আছার দিয়ে ফেলে দিল, ‏তখন তাঁর উরুর হাড় ভেঙ্গে গেল ও পেটের সন্তানের গর্ভপাত ঘটল। অতঃপর দীর্ঘ শহ্যাশায়ী হল এবং সে অবস্থাতেই শহীদি মৃত্যু বরণ করলেন ‎…(এহতেজাজ, ‏১/৮৩)।নিবেদক মোঃ জাহিদ হুসাইন

আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুমইমাম আলী ইবনে মুসা আর রেজা (আ.)১৪৮ হিজরির জ্বিলক্বাদ মাসের এগারো তারিখে এই ভূপৃষ্ঠে আগমণ করেন বিশ্বমানবতার মুক্তিকামী মহান পুরুষ,ইসলামের প্রকৃত স্বরূপ উন্মোচনকামী কায়েমী স্বার্থবাদী মহলের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদী নেতা নবীবংশের দীপ্তিমান অষ্টম নক্ষত্র ইমাম রেযা (আ.) তার জন্ম নাম ও বংশ পরিচয় :নাম : আলী।পিতা : নবীবংশের সপ্তম ইমাম মূসা ইবনে জাফর (আ.)।মাতার নাম :উম্মুল বানিন নাজমা।উপাধি : তার অনেক উপাধি রয়েছে। এসব উপাধির মধ্যে বহুল পরিচিত কয়েকটি হলো আবুল হাসান,রেযা,সাবির,রাযি এবং ফাযিল। তবে তিনি রেযা নামেই অধিক প্রসিদ্ধ ছিলেন। নবীবংশের প্রত্যেক ইমামের জীবনই নিষ্পাপ ঐশ্বর্যে পরিপূর্ণ এবং শাহাদাতের মহিমায় উজ্জ্বল। ইরানের সর্বোচ্চ নেতার ভাষ্য অনুযায়ী ইমামদের জীবনের সবচে গুরুত্বপূর্ণ বষয়টি হলো রাজনৈতিক সংগ্রাম। হিজরী প্রথম শতাব্দির দ্বিতীয়ার্ধ থেকে ইসলামি খেলাফত যখন সুস্পষ্টভাবেই রাজতন্ত্রের রূপ পরিগ্রহ করে এবং ইসলামি নেতৃত্ব জোর- জুলুমপূর্ণ বাদশাহিতে রূপান্তরিত হয়,তখন থেকেই আহলে বাইতের সম্মানিত ইমামগণ সময়োপযোগী পদ্ধতিতে বিদ্যমান সকল অব্যবস্থা বা অসঙ্গতির বিরুদ্ধে তাদের রাজনৈতিক সংগ্রাম চালাতে থাকেন। তাদের এইসব রাজনীতির বৃহত্তর লক্ষ্য ছিল প্রকৃত ইসলামি সরকার ব্যবস্থা প্রণয়ন এবং ইমামতের ভিত্তিতে হুকুমাত প্রতিষ্ঠা করা। বলাবাহুল্য কায়েমি স্বার্থবাদি মহলের সমূহ অত্যাচার-নিপীড়নের মুখেও তারা তাদের এই ইমামতের গুরুদায়িত্ব পালন করে গেছেন। যার ফলে যেন শাহাদাতের পবিত্র রক্ত থেকে জন্মলাভকারী লালফুলে বাগানের পর বাগান ছেয়ে যাবার পরও ইমামতের সেই ধারা আজো অব্যাহত রয়েছে এবং তাদের সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে তাদেরযোগ্য উত্তরসূরিগণ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে আজো তৎপর রয়েছে। ইমামতের প্রদীপ্ত আলোয় উদ্ভাসিত পৃথিবী তাই তাদের যথার্থ দিক-নির্দেশনায় খুঁজে পাচ্ছে প্রকৃত ইসলামের সঠিক দিশা। ইমামের শুভজন্ম তাই সমগ্র মুসলিম জাতির মুক্তির স্মারক।ইমামত লাভআবুল হাসানের বয়স যখন পঁয়ত্রিশ,তখন তার পিতা ইমাম মূসা কাযেম (আ) শাহাদাতবরণ করেন। শাহাদাতের পর তারি যোগ্য উত্তরসূরি ইমাম রেযা (আ) মুসলিম উম্মাহর নেতৃত্ব প্রদানের গুরুভার গ্রহণ করেন। তার ইমামতির সময়কাল ছিল বিশ বছর। এই বিশ বছরে আব্বাসীয় তিনজন শাসক যথাক্রমে বাদশাহ হারুন এবং তার দুই পুত্র আমিন এবং মামুনের শাসনকাল অতিক্রান্ত হয়েছিল। ইমাম রেযা তার পিতা ইমাম মূসা (আ)এর নীতি-আদর্শকে অব্যাহত গতি দান করেন। ফলে ইমাম মূসার (আ) শাহাদাতের পেছনে যেই কারণগুলো দেখা দিয়েছিল,স্বাভাবিকভাবেই ইমাম রেযাও সেই কারণগুলোর মুখোমুখি হন। অর্থাৎ কায়েমি স্বার্থবাদি মহলের নেপথ্য রোষের মুখে পড়েন তিনি। আব্বাসীয় রাজবংশে বাদশা হারূন এবং মামুনই ছিল সবচে পরাক্রমশালী এবং দোর্দণ্ড প্রতাপশালী। তারা প্রকাশ্যে ইমামদের প্রতি শ্রদ্ধাভক্তির কথা বলে বেড়াতেন কিন্তু ভেতরে ভেতরে ইমামদের রক্তের তৃষ্ণায় তৃষিত ছিলেন। ইমামদের প্রতি তাদের এধরনের আচরণের উদ্দেশ্য ছিল দুটো। এক,আলাভিদের আন্দোলনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া,এবং দুই শিয়া মুসলমানদের মন জয় করা। ইমামদের সাথে সম্পর্ক থাকার প্রমাণ থাকলে তাদের শাসনও বৈধ বলে গৃহীত হবে-এ ধরনের চিন্তাও ছিল তাদের মনে। কেননা ; মুসলমানরা যদি দেখে যে,হযরত আলীর (আ) পরিবারবর্গের প্রতি বাদশাহর সম্পর্ক বা যোগাযোগ রয়েছে,তাহলে তারা আব্বাসীয়দের শাসনকে বৈধ মনে করে খুশি হবে,ফলে তারা আর বিরোধিতা করবে না । এরফলে তাদের শাসনকার্য পরিচালনা নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ হবে। ইমাম রেযা (আ) শাসকদের এই অভিসন্ধিমূলক রাজনীতি বুঝতে পেরে তাদের বিরুদ্ধে অভূতপূর্ব একটি কৌশল অবলম্বন করেন। তার কৌশলটি ছিল এমন,যারফলে একদিকে বাদশা মামুনের উদ্দেশ্যও ব্যর্থ হয়,অপরদিকে মুসলিম বিশ্বের জনগণও প্রকৃত সত্য উপলব্ধি করতে পারে। আর সেই সত্য হলো এই যে,আল্লাহর বিধান অনুযায়ি ইসলামী খেলাফতের প্রকৃত উত্তরাধিকার কেবলমাত্র নবী পরিবারের পবিত্র ইমামগণের ওপর ন্যস্ত থাকবে এবং তারা ব্যতীত কেউ ঐ পদের যোগ্য নয়। জনগণের মাঝে এই সত্য প্রচারিত হলে স্বাভাবিকভাবেই তারা বাদশার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠবে-এই আশঙ্কায় মামুন ইমাম রেযাকে (আ) সবসময়ই জনগণের কাছ থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করে। শুধু ইমাম রেযা কেন প্রায় সকল ইমামকেই এভাবে গণবিচ্ছিন্ন করে রাখার জন্যে উমাইয়া ও আব্বাসীয় শাসকরা তাদেরকে কঠোর প্রহরার মধ্যে রাখার ষড়যন্ত্র করে। তারপরও ইমামদের সুকৌশলের কারণে তাদের বার্তা জনগণের কাছে ঠিকই পৌঁছে যায়।শাহাদাতের সিঁড়ি বেয়ে যে ইসলাম জমিয়েছে পাড়িকালের যাত্রায় আজো তা বিশ্বময় দীপ্তিমাননবীবংশীয় ইমামতের সুদীপ্ত ধারায়আর জনগণের কাছে ইমামগণের বার্তা পৌঁছে যাবার ফলে জনগণ প্রকৃত সত্য বুঝতে পারে,এবং নবীবংশের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে থাকে। বিশেষ করে বাদশা মামুনের অপতৎপরতার বিরুদ্ধে ইমাম রেযা যখন দাঁড়িয়ে গেলেন,তখন ইরাকের অধিকাংশ লোক মামুনের বিরুদ্ধে চলে গিয়েছিল। হযরত আলীর (আ) খান্দানের কেউ বাদশাহর বিরুদ্ধে গেলে বাদশাহী যে হারাতে হবে-এই আশঙ্কা মামুনের মধ্যে ছিল। যার ফলে মামুন একটা আপোষনীতির কৌশল গ্রহণ করে। বাদশাহ মামুন ইমামকে খোরাসানে আসার আমন্ত্রণ জানায়। ইমাম প্রথমত রাজি হন নি,কিন্তু পরবর্তিকালে তাকে আমন্ত্রণ গ্রহণ করতে বাধ্য করা হয়েছে । বাধ্য হয়ে শেষ পর্যন্ত তিনি বসরা অভিমুখে যাত্রা করেন। কিন্তু পথিমধ্যে তিনি তার গতিপথ পরিবর্তন করে ইরানের দিকে পাড়ি দেন। উল্লেখ্য যে,নবীবংশের মধ্যে ইমাম রেযাই প্রথম ইরান সফর করেন। যাই হোক,যাত্রাপথে তিনি যেখানেই গেছেন জনগণ তাকে সাদরে ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে গ্রহণ করে। ইমামও নবী করিম (সা),তার আহলে বাইত ও নিষ্পাপ ইমামদের চরিত্র-বৈশিষ্ট্য এবং ইসলামের সঠিক বিধি-বিধান সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করেন। সেইসাথে তার সফরের উদ্দেশ্য অর্থাৎ বাদশাহর আমন্ত্রণের কথাও তাদেরকে জানান। চতুর বাদশাহ মামুন ইমামের আগমনে তার সকল সভাসদ এবং অন্যান্য লোকজনকে সমবেত করে বলেন,হে লোকেরা ! আমি আব্বাস এবং আলীর বংশধরদের মধ্যে অনুসন্ধান করে দেখেছি,আলী বিন মূসা বিন রেযার মতো উত্তম লোক দ্বিতীয় কেউ নেই। তাই আমি চাচ্ছি যে,খেলাফতের দায়িত্ব থেকে ইস্তফা দেব এবং এই দায়িত্ব তার ওপর ন্যস্ত করবো। ইমাম,মামুনের রাজনৈতিক এই দুরভিসন্ধি সম্পর্কে জানতেন। তাই তিনি জবাবে বললেন,মহান আল্লাহ যদি খিলাফত তোমার জন্যে নির্ধারিত করে থাকেন,তাহলে তা অন্যকে দান করা উচিত হবে না। আর যদি তুমি আল্লাহর পক্ষ থেকে খেলাফতের অধিকারি না হয়ে থাক,তাহলে আল্লাহর খেলাফতের দায়িত্ব কারো উপর ন্যস্ত করার কোনো অধিকার তোমার নেই। ইমাম শেষ পর্যন্ত মামুনের কথায় খেলাফতের দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করায় মামুন ইমামকে তার ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকার হতে বাধ্য করে। ইমাম রেযা (আ) শেষ পর্যন্ত নিরুপায় হয়ে কিছু শর্তসাপেক্ষে তা গ্রহণ করেন। শর্তগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ দুটি ছিল এরকম-এক,তিনি প্রশাসনিক কোনো দায়িত্ব পালন করবেন না।দুই,দূরে থেকে তিনি খেলাফতের সম্পর্ক রক্ষা করবেন। তিনি কেন এ ধরনের শর্তারোপ করেছিলেন,তার কারণ দায়িত্ব গ্রহণকালে প্রদত্ত তার মোনাজাত থেকেই সুস্পষ্ট হয়ে যায়। তিনি মুনাজাতে বলেছিলেন - হে খোদা ! তুমি ভালো করেই জানো,আমি বাধ্য হয়ে এই দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। সুতরাং আমাকে এজন্যে পাকড়াও করো না। যেমনিভাবে তুমি ইউসূফ ও দানিয়েল (আ)কে পাকড়াও করো নি। হে আল্লাহ ! তোমার পক্ষ থেকে কোনো দায়িত্ব ও কর্তব্য ব্যতিত আর কোনো কর্তৃত্ব হতে পারে না। আমি যেন তোমার দ্বীনকে সমুন্নত রাখতে পারি,তোমার নবীর সুন্নতকে যথার্থভাবে বাস্তবায়ন করতে পারি । ইমাম রেযার এই দায়িত্ব গ্রহণের খবর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে আব্বাসীয়রা ভীষণ দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়। তারা ভেবেছিল,খেলাফত বুঝি চিরদিনের জন্যে আব্বাসীয়দের হাত থেকে আলীর (আ) বংশধরদের হাতে চলে গেল। তাদের দুশ্চিন্তার জবাবে বাদশা মামুন তার মূল অভিপ্রায়ের কথা তাদেরকে খুলে বলেন। তা থেকেই বোঝা যায়,যেমনটি আয়াতুল্লাহ উজমা খামেনেই বলেছেন,ইমামকে খোরাসানে আমন্ত্রণ জানানো এবং তার পরবর্তী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের পেছনে মামুনের মূল উদ্দেশ্য ছিল,শিয়াদের বৈপ্লবিক সংগ্রামকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা। যাতে তাদের উত্তাল রাজনীতিতে ভাটা পড়ে যায়। দ্বিতীয় উদ্দেশ্যটি ছিল আব্বাসীয় খেলাফতকে বৈধ বলে প্রমাণ করা। তৃতীয়ত,ইমামকে উত্তরাধিকার বানানোর মাধ্যমে নিজেকে একজন আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব ও মহান উদার হিসেবে প্রমাণ করা। তো মামুনের এই অভিসন্ধির কথা জানার পর আব্বাসীয়রা ইমামকে বিভিন্নভাবে হেয় ও মর্যাদাহীন করে তোলার চেষ্টা চালায়। কিন্তু জ্ঞান ও প্রজ্ঞায় সমৃদ্ধ ইমামকে তারা কিছুতেই অপদস্থ করতে পারে নি। বাদশা মামুন একবার তার সাপ্তাহিক প্রশ্নোত্তরের আসরে ইমামকে আমন্ত্রণ জানালেন। সেখানে ইমাম কোনো এক প্রেক্ষাপটে মামুনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অভিমত দেন। এতে বাদশা ভীষণ ক্ষেপে যান এবং ইমামের বিরুদ্ধে অন্তরে ভীষণ বিদ্বেষ পোষণ করতে থাকেন। এইভাবে ইমামত,জনপ্রিয়তা,খেলাফত,আলীর বংশধর প্রভৃতি বিচিত্র কারণে বাদশাহ ইমামের বিরুদ্ধে শত্রুতা করতে থাকে। পক্ষান্তরে জনগণ উপলব্ধি করতে পারে যে,খেলাফতের জন্যে মামুনের চেয়ে ইমামই বেশি উপযুক্ত।শাহাদত :ইমামের বিরুদ্ধে মামুনের ক্রোধ এবং হিংসা যতো বাড়তে থাকে,ইমামও মামুনের বিরুদ্ধে অকপট সত্য বলার ক্ষেত্রে নির্ভিক হয়ে ওঠেন। কোনোভাবেই যখন ইমামকে পরাস্ত করা গেল না,তখন মার্ভ থেকে বাগদাদে ফেরার পথে ইরানের বর্তমান মাশহাদ প্রদেশের তূস নামক অঞ্চলে মামুন ইমামকে আঙ্গুরের সাথে বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করে হৃদয়জ্বালা মেটাবার চেষ্টা করে। তখন ইমামের বয়স ছিল পঞ্চান্ন বছর। আসলে বিষ প্রয়োগে ইমামের সাময়িক মৃত্যু ঘটলেও আসল মৃত্যু ঘটেছিল মামুনেরই। পক্ষান্তরে ইমাম শাহাদাতের পেয়ালা পান করে যেন অমর হয়ে গেলেন চিরকালের জন্যে। তার প্রমাণ মেলে মাশহাদে তার পবিত্র সমাধিস্থলে গেলে। প্রতিদিন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কাতারে কাতারে মানুষ আসে মাযার যিয়ারত করতে। কেনো তারা ইমামের মাযারে এসে ভিড় জমান ! এ সম্পর্কে যিয়ারতকারীগণ বিভিন্নভাবে তাদের আবেগ-অনুভূতি জানিয়েছেন। একজন বলেছেন,আমি যখনই বা যেখানেই কোনো সমস্যার সম্মুখীন হই,তখনই ইমাম রেযার (আ) মাযারে চলে আসি। এখানে এসে আল্লাহর দরবারে সমস্যার সমাধান চেয়ে দোয়া করি। আমি বহুবার লক্ষ্য করেছি,ধর্মীয় এবং পবিত্র স্থানসমূহ বিশেষ করে ইমাম রেযার পবিত্র মাযারে এলে মনোবেদনা ও সকল দুঃখ-কষ্ট দূর হয়ে যায় এবং একধরনের মানসিক প্রশান্তিতে অন্তর ভরে যায়। মনের ভেতর নবীন আশার আলো জেগে ওঠে । এভাবে বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে তাদের অভিজ্ঞতা ও আন্তরিক প্রশান্তির কথা বলেছেন। জীবিতাবস্থায় যিনি মানুষের কল্যাণে ছিলেন আত্মনিবেদিত,শহীদ হয়েও তিনি যে অমরত্মের আধ্যাত্মিক শক্তিবলে একইভাবে মানবকল্যাণ করে যাবেন-তাতে আর আশ্চর্য হবার কী আছে !এই মহান ইমামের কিছু মূল্যবাণ বাণী দিয়ে আজকের অলোচনার ইতি টানছি। তিনি বলেছেন:-১। মুমিন ক্রোধান্বিত হলেও, ক্রোধ তাকে অপরের অধিকার সংরক্ষণ থেকে বিরত করে না।২। যে ব্যক্তি তার ক্ষমতা ও মর্যাদা সম্পর্কে অবগত, সে কখনোই ধ্বংস হবে না।৩। কিয়ামতে সেই ব্যক্তি আমাদের সর্বাধিক নিকটবর্তী হবে, যে সদাচরণ করে এবং তার পরিবারের সাথে সদ্ব্যবহার করে।৪। যদি কেউ কোন মুসলমানকে প্রতারণা করে, তবে সে আমাদের কেউ নয়।৫। তিনটি কর্ম সর্বাপেক্ষা কঠিন :এক. ন্যায় পরায়ণতা ও সত্যবাদিতা যদিও এর ফল নিজের বিরুদ্ধে যেয়ে থাকে। দুই. সর্বাবস্থায় আল্লাহর স্মরণে থাকা।তিন. ঈমানদার ভাইকে নিজ সম্পদের অংশীদার করানিবেদক মোঃ জাহিদ হুসাইন

আশারায়-এ-মুবাশশারা ” – একটি ভিত্তিহীন হাদিস –” আশারায়-এ-মুবাশশারা ” ———–প্রচারে আলি উন ওয়ালি উল্লাহআহমাদ , খন্ড – ১ , পৃ – ১৯৩ ,তিরমিজি , খন্ড – ৩ , পৃ – ১৮৩ ,এবং আবু দাউদ – খন্ড – ২ , পৃ – ২৬৪) —বর্ননা করেছেন যে ,নিঃসন্দেহে নবী (সাঃ) বলেছেন যে ,আবু বকর , ওমর , উসমান , আলী , তালহা , যুবায়ের , আব্দুর রহমান ইবনে আউফ , সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস , সাঈদ ইবনে যায়েদ এবং আবু ওবায়দাহ ইবনে জেরাহগন হলেন বেহেশতী ।আর নবীজী (সঃ) এর এ কথাও সত্য যে , ইয়াসসারের বংশধরদের সংবাদ দিয়ে দাও যে , তোমাদের সাথে জান্নাতের ওয়াদা করা হয়েছে ।রাসুল (সাঃ) একথাও বলেছেন যে , বেহেশত চারজনের জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে , তারা হলেন , আলী , আম্মার, সালমান এবং মেকদাদ ।মুসলিম তার সহীহতে আরও রেওয়ায়েত করেছেন যে , রাসুল (সাঃ) বলেছেন , আবদুল্লাহ ইবনে সালামকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও এবং হাসান ও হোসেন জান্নাতে যুবকদের সরদার , জাফর ইবনে আবি তালিব জান্নাতে ফেরেশতাদের সাথে উড়ে বেড়ানোর কথাও সত্য ।মা ফাতেমা ( সাঃআঃ) জান্নাতে নারীদের সম্রাজ্ঞী এবং এও সত্যি যে , ওনার শ্রদ্ধেয় মাতা হযরত খাদিজাকে জীব্রাইল (আঃ ) জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন ।অনুরুপভাবে সোহেব রুমি, বেলাল হাবশী, সালমান ফারসীকে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন ।যখন এতগুলো লোককে জান্নাতের সুসংবাদ দেয়া হল তখন কেন —শুধুমাএ ঐ দশজন ব্যক্তির (আশারা মোবাশশারা ) কথা ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয় ?আপনারা লক্ষ করবেন ,কোন মাহফীল বা জলসায় বেহেশতের আলোচনা উঠলেই এই “আশার মোবাশশারা” প্রসংগ উঠবেই ।আমারা উক্ত কথার সাথে কোনভাবেই দ্বিমত পোষন না করেই বলছি , আল্লাহর অসীম দয়া সকল বস্তুর ক্ষেএে প্রযোজ্য ।সুপ্রিয় পাঠক ,দয়া করে মনোযোগ দিন —কিন্ত এটুকু বলতে চাই যে , এ হাদিস উক্ত হাদিসের বিপরীতে অবস্থান নেয় ,যেখানে রাসুল (সাঃ ) বলেছেন যে ,” দুজন মুসলমান যদি পরস্পরের বিরুদ্বে তলোয়ার দিয়ে যুদ্ধ করে তাহলে হত্যাকারী এবং নিহত উভয়কেই জাহান্নামি হতে হবে ।”আমরা যদি এই হাদিসকে সত্য বলে ধরে নেই তাহলে এই ” আশার মোবশশারা ” এই হাদিস ধুয়া হয়ে বাতাসে পুরোপুরি মিলিয়ে যাবে ।কেননা ওনাদের মধ্যে কেউ কেউ একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ , হত্যা এবং নিহতও হয়েছেন !যেমন ,জংগ-এ- জামাল যুদ্ধে হযরত আয়েশা (রাঃ) এর নেতৃত্বে হযরত আলী (আঃ) এর বিরুদ্ধে তালহা ও জোবায়ের নিহত হয়েছে ।মুয়াবিয়া কতৃক সৃষ্ট জংগে – এ – সিফফিন যুদ্ধে আলী (আঃ ) এর বিজয়ের পক্ষে যুদ্ধরত অবস্থায় আম্মার ইয়াসসার (রাঃ) শহীদ হয়েছেন ।এ বিষয় রাসুল (সাঃ) এর হাদিসও আছে ।আর কারবালাতে ইয়াজীদ ইবনে মুয়াবিয়া কতৃক জান্নাতের সরদার ইমাম হোসেন (আঃ) ৭২ জন সংগী সাথিসহ নিদারুনভাবে শহীদ হয়েছেন ।পুরুষদের মধ্যে শুধু ইমাম আলী ইবনুল হুসাইন জয়নুল আবেদিন (আঃ) বেচে ছিলেন ।অতএব ঐ মিথ্যাবাদিদের দৃষ্টিকোন থেকে হত্যাকারী এবং নিহত সবাই জাহান্নামি হলেন (মায়াজাল্লাহ) , কেননা তারা একে অপরের বিরুদ্ধে তরবারি দিয়ে যুদ্ধ করেছিলেন !!মনে রাখা উচিত , ওহী ব্যতিত রাসুল (সাঃ) নিজে থেকে কিছুই বলতেন না ।যেমন আমরা আগেও বলেছি , উক্ত হাদিস বিবেক বুদ্ধির বিরুদ্ধে অবস্থান রাখে এবং আল্লাহর কিতাব ও রাসুল (সঃ) এর সুন্নাতের বিপরীত ।এই ধরনের অযৌক্তিক , মিথ্যা , মনগড়া বনু উমাইয়াদের সৃষ্ট হাদিসগুলি বুখারী , মুসলিম কেন যাচাই বাছাই করেন নি ?যেখানে বুখারিতেই আছে , জান্নাতের নারীদের সম্রাজ্ঞী মা জননী ফাতেমা ( সাঃআঃ) মৃত্যুর আগ পর্যন্ত রাগে হযরত আবু বকরের সাথে কথাই বলেন নি ।এই বুখারিতেই আছে ,জান্নাতের সরদার ইমাম হোসেন (আঃ) এবং হাসান (আঃ) এর পবিত্র গৃহে হযরত ওমর আগুন দিয়ে ঐ ঘরের দরজায় লাথি দিয়ে মা ফাতেমা (সাঃআঃ) কে মারাত্মকভাবে আহত করেছিলেন ।তাহলে এনারা কিভাবে জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত হন ?আবার এমনও হতে পারে যে , এধরনের উদ্ভট হাদিসই হচ্ছে তাদের মাযহাব বা আকিদাগত বিশ্বাস ।সুপ্রিয় পাঠক ,দয়া করে নিরপেক্ষ মন নিয়ে ইতিহাস জানুন ।এখানে শীয়া সুন্নি বিষয় মূখ্য নয় ।ইতিহাস পড়ুন , বিবেক বুদ্ধি কাজে লাগান আর সিদ্ধান্ত নিন ,বনু সকিফার অনুসারী মুসলমান হয়ে মৃত্যুবরন করবেন নাকি গাদীর এ খুম এর অনুসারী মুমিন হয়ে মৃত্যুবরন করবেন ?বিবেক আপনার ,সিদ্ধান্তও আপনারই ,মহান আল্লাহপাক সকলের জন্যই অপেক্ষামান ।আহলে যিকর – কে জিজ্ঞাসা করুন ,মূল – ডঃ মুহাম্মাদ তিজানী সামাভী ,বাংলা অনুবাদে – ইরশাদ আহমেদ ,পৃষ্ঠা – ২৯৪ , ২৯৫ থেকে ।

বেশ কিছু সংখ্যক জাহান্নামী সাহাবারাপ্রচারে আলি উন ওয়ালি উল্লাহ” — সেদিন কিছু চেহারা শুভ্র হবে এবং কিছু চেহারা কাল হয়ে যাবে । আর যাদের চেহারা কাল হয়ে যাবে [তাদের বলা হবে] ” ঈমান আনার পর তোমরা কি সত্য প্রত্যাখান করেছিলে ?” সুতরাং তোমরা শাস্তি ভোগ কর যেহেতু তোমরা কুফরী করতে — ” ।সুরা – আলে ইমরান / ১০৬ ।প্রিয় পাঠক ,খেয়াল করুন – ” ঈমান আনার পর তোমরা কি সত্য প্রত্যাখান করেছিলে ?” সুতরাং তোমরা শাস্তি ভোগ কর যেহেতু তোমরা কুফরী করতে — ” ।পবিত্র কোরআনের এই আয়াতে পরিস্কার করে বলা হচ্ছে যে , ঐ সকল ব্যক্তিবর্গ প্রথমে মুসলমান হয়েছিল এবং পরে তারা পুনরায় তাদের অতীত জীবন অর্থাৎ কুফরীর জীবনে চলে যায় ।এবারে পবিত্র কোরআনের এই আয়াতের সমর্থিত রাসুল (সাঃ) এর দুটি হাদিসের প্রতি মনযোগ চাচ্ছি , প্লীজ —রাসুল (সাঃ) বলেন যে , আমি দন্ডায়মান অবস্থায় ছিলাম । দেখলাম আমার সামনে একদল লোক যাদের সবাইকে আমি চিনলাম ।তখন মধ্যখানে একজন লোক এসে বলল , ” চল আমরা যাই ” ।আমি জিজ্ঞাসা করলাম , ” এদের কোথায় যেতে হবে ?”সে বলল , ” আল্লাহর কসম , জাহান্নামে ” ।আমি জিজ্ঞেস করলাম , ” এদের অপরাধ কি ? “সে বলল , ” আপনার ইন্তেকালের পর এরা সবাই মুরতাদ হয়ে গিয়েছিল এবং আমি আশা করি অতি অল্প সংখ্যক মুক্তি পাবে ” ।আবদুল্লাহ ইবনে মাসুদ (রা) থেকে বর্ণিত –মহানবী (সাঃ) বলেন , আমি সবার পূর্বে হাউজে কাউসারে তোমাদের সম্মুখে থাকব । যে আমার নিকট দিয়ে যাবে সে হাউজে কাউসার থেকে তৃপ্তি সহকারে পানি পান করে যাবে । যে একবার পানি পান করবে তার কখনই পিপাসা লাগবে না ।হাউজের নিকটে কিছু লোক আসবে । আমি তাদেরকে চিনি , তারাও আমাকে ভালভাবে চেনে । অতঃপর আমার ও তাদের মাঝে একটি দেওয়াল সৃষ্টি করে দেওয়া হবে ।আমি বলব , ” এরা তো সকলেই আমার সাহাবী ” !জবাবে তখন বলা হবে , ” আপনি জানেন না , আপনার ইন্তেকালের পর তারা কি কি বেদআত করেছে ” ।তখন আমি তাদের বলব , ” আফসোস ! তাদের উপর , যারা আমার ইন্তেকালের পরে দ্বীনের ভিতর পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করেছে ” ।সূত্র – বুখারী শরীফ , (আধুনিক প্রকাশনী) ষষ্ঠ খন্ড , হাদিস নাঃ – ৬১১৯ / সহীহ আল বুখারী , চতুর্থ খন্ড , পৃ- ৯৪ , ২য় খন্ড , পৃ- ৩২ / সহীহ মুসলিম শরীফ , ৭ম খন্ড , পৃ- ৬৬ (হাদিস আল হাউজ) / অবশেষে আমি সত্য পেলাম , পৃ- ১০৩ (নিউ দিল্লী , ভারত) ।পাঠক ,উপরে উল্লেখিত হাদিসগুলো আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সহীহ সিত্তাহ হাদিসগ্রন্থে বিদ্যমান আছে ।অতএব , সন্দেহের কোন অবকাশ নাই যে , রাসুল (সাঃ) এর ইন্তেকালের পর অধিকাংশ সাহাবাগন নবীজী (সাঃ) এর রেখে যাওয়া দ্বীনের মধ্যে প্রচুর পরিবর্তন করেছিলেন । মুষ্টিমেয় কিছু সংখ্যক সাহাবী ব্যতীত অধিকাংশ সাহাবা মুরতাদ হয়ে গিয়েছিল মহানবী (সাঃ) এর ইন্তেকালের পরে ।উপরোক্ত হাদিস অবশ্যই মুনাফেকগনের জন্য প্রযোজ্য হবে না । কেননা হদিসে এসেছে , মহানবী (সাঃ) বলবেন , ” এরা তো সকলেই আমার সাহাবী ” ।পবিত্র কোরআন এবং সহীহ সিত্তাহর হাদিস মোতাবেক অপ্রিয় বাস্তব সত্য এটাই যে , রাসুল (সাঃ) এর ইন্তেকালের পর অধিকাংশ সাহাবী তাদের পূর্বের জীবন অর্থাৎ কুফরী জীবনে পদার্পন করেছিলেন ।নিরপেক্ষ মন নিয়ে ঠান্ডা মাথায় বিষয়টি ভাবুন , প্লীজ ।

মুয়াবিয়া-পরিবার vs নবি-পরিবার"রসুলের সাহাবা বলে কথিত কুখ্যাত মুয়াবিয়া আজকের এই দিনে খাতুনে জান্নাত মা ফাতেমার স্বামী, ইমাম হাসান-হোসাইনের পিতা, রসুলের স্থলাভিষিক্ত মওলা- হযরত আলী (আ.)-কে গুপ্তঘাতক দ্বারা হত্যা করেন (উল্লেখ্য যে, আঘাতের পর মাওলা প্রাণ ত্যাগ করেন ২১ রমজান) । আমরা থুতু মারি সেইসব দরবার ও পিরের মুখে- পাকপাঞ্জাতনের অন্যতম সদস্য মওলা আলীকে হত্যা করার পরেও যারা গুন্ডা মুয়াবিয়াকে সাহাবা মনে করে এবং নবি-বংশের জাত-শত্রু এই কুচক্রী পরিবারের পূজা অর্চনা করে ।কোরান মতে: একজন মোমিনের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ করে সে কাফের; আর আলী (আ.) শুধু মোমিন নন বরং মোমিনগণের মওলা (সূত্র: হাদিস); কিন্তু এই মুয়াবিয়া সেই মওলা আলীর বিরুদ্ধেই তার বিশাল গুন্ডাবাহিনী নিয়ে যুদ্ধে লিপ্ত হন, যা সিফফিনের যুদ্ধ বলে পরিচিত । উল্লেখ থাকে যে, মহানবি বলেগিয়েছিলেন: এই আম্মার (বেহেশত যার প্রত্যাশী) একটা বিদ্রোহী দলের হাতে শহীদ হবেন । রসুলের প্রিয় সাহাবী হযরত আম্মার মুয়াবিয়ার বিরুদ্ধে সিফফিনের যুদ্ধে শহীদ হন । মৃত্যুর সময় আম্মারকে এক ফোটা পানিও দেয়া হয় নাই । কোরান ঘোষণা করছে: শুধুমাত্র একজন মোমিনকে হত্যা করলেই অনন্তকাল তাকে জাহান্নামে থাকতে হবে এবং আল্লাহর লানত থাকবে তার উপর (৪:৯৩)। মুয়াবিয়া যে একজন নির্ভেজাল কাফের-মোনাফেক ও জাহান্নামী তা কোরান স্বাক্ষী দেবার পরেও যে সব হারামজাদারা মুয়াবিয়ার প্রশংসায় মুখে ফেনা তুলে- আমরা লাথি মারি তাদের মুখে ।একমাত্র মুয়াবিয়ার পরিবারই নবি বংশের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি শয়তানী করে; নিম্নে তাদের কু কর্মের ছোট একটি তালিকা দেয়া হলো:১. মুয়াবিয়ার পিতা আবু সুফিয়ান মহানবির বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন ।২. মুয়াবিয়ার মা হিন্দা যুদ্ধের মাঠে রসুলের চাচা হযরত আমীর হামজার কাচা কলিজা চিবিয়ে খান ।৩. তাদেরই সুযোগ্য পুত্র কুখ্যাত মুয়াবিয়া ফাঁদ পেতে হযরত আয়েশাকে হত্যা করে মাটিতে পূতে সেখানে বৃক্ষ রোপণ করে নৃশংস হত্যার ঘটনাকে আড়াল করেছিল; তাই ইতিহাসে হযরত আয়েশার কবরের কোন অস্তিত্ব নেই ।৪. হযরত উসমান হত্যার পিছনেও বর্ণচোরা মুয়াবিয়ার হাত ছিল, তাই সে ইসলামী সাম্রাজ্যের সম্রাট হবার পরেও উসমান হত্যার বিচার করে নি ।৫. নবির আশেক হযরত উয়ায়েস করণীকেও বৃদ্ধ বয়সে প্রাণ দিতে হয় মুয়াবিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেই ।৬. ছেলে ইয়াজীদের সাথে বিবাহ দেবার চুক্তির ভিত্তিতে মুয়াবিয়া জায়েদাকে দিয়ে ইমাম হাসানকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করে পুত্র ইয়াজীদকে গদিতে বসানোর রাস্তাকে পরিষ্কার করেন ।৭. দুর্বৃত্ত মুয়াবিয়া ইমাম হোসাইনকে হত্যার সকল ষড়যন্ত্র ও নীল নক্সা অঙ্কন করে যান, যা ইয়াজিদের প্রতি তার একটি চিঠিতে পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠে ।৮. বদরী সাহাবী হযরত ইবনে আদীকে তাঁর ১২ জন সঙ্গী সহ জীবন্ত কবরস্থ করেন এই মুয়াবিয়া । এ জঘন্য কু কর্মের প্রসঙ্গে ইমামুল আউলিয়া হযরত হাসান বসরী (রা:) বলেন: মুয়াবিয়ার পরকাল ধ্বংসের জন্য ইহাই যথেষ্ট যে, সে রাছুল (সা:)-এর বিশিষ্ট সাহাবী হাজর বিন আদী (রা:) ও তাঁর সঙ্গীদেরকে বিনা দোষে হত্যা করেছিল ।৯. মুহাম্মদ বিন আবুবকর, মালিক আশতার মুয়াবিয়ার হত্যার শিকার । দুর্বৃত্ত এই মুয়াবিয়া কত জনকে যে গুপ্ত হত্যা করিয়েছে তার কোন ইয়ত্তা নেই ।১০. নবি বিদ্বেষী পরিবারের অন্যতম সদস্য খুনি মুয়াবিয়া প্রতি জুমার দিন খুৎবায় নবি-পরিবারকে গালাগালী প্রথা চালু করেছিল; আগে খুৎবা পাঠ করা হতো নামাজের পর, সে কারণে অনেক মুসল্লীরাই গালাগালী শ্রবণ না করে চলে যেতো, তাই মুয়াবিয়া নির্দেশ দেন যেন খুৎবা নামাজের আগেই আরম্ভ করা হয় যাতে করে খুৎবায় নবি-বংশের বিরুদ্ধে গালাগালী শুনতে মুসল্লিগণ একপ্রকার বাধ্য থাকেন ।।মুয়াবিয়ার কোন পিতৃপরিচয় নেই, কারণ তার মা তাকে পেটে ধরা অবস্থায় আবু সুফিয়ানের সাথে ঘর-সংসার শুরু করে, আর বিবাহের পূর্বে হিন্দা যখন পতিতালয় পরিচালনা করতো তখনই মুয়াবিয়া তার পেটে এসেছিল । এ জন্যই বোধহয় এই কুলাঙ্গার নানা ষড়যন্ত্র করে ইসলামের বারোটা বাজিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে এবং জন্ম দিয়ে গেছে আরেক কুলাঙ্গারের ।নবি-পরিবারের প্রতি মুয়াবিয়া-পরিবারের এত শত ষড়যন্ত্রের ডকুমেন্ট থাকার পরেও যারা সেই অভিশপ্ত পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে, সেই সব কুলাঙ্গারদের গোলামী করে আমরা জুতা মারি তাদের মুখে; কেননা তারা আল্লাহ ও নবির শত্রু, পাকপাঞ্জাতনের শত্রু ।মোনাফেকদের সর্দার মুয়াবিয়া সম্পর্কে মুসলিম সমাজের ভুল ধারণা সমূহ অবসান হবার স্বার্থে এবং বর্ণচোরা মুয়াবিয়ার মুখোশ উন্মোচনের প্রয়াসে এই পোস্টটি সবাই শেয়ার করার মাধ্যমে সত্য প্রচারে এগিয়ে আসার জন্য সকলের প্রতি আমার বিশেষ অনুরোধ রইল ।।

মাওলা মোহাম্মদ (সা.)এর দেখানো পথ ও সৌভাগ্যের সিঁড়ি (পর্ব-৯)আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুমবিদায় হজে মোহাম্মদ (সা.)'র এর দেয়া ভাষণ: মোহাম্মদ(সাঃ.) বিদায় হজের ভাষণে বলেছেন: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর। তাঁর প্রশংসা করি এবং তাঁর সাহায্য চাই, তাঁরই কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং তাঁরই কাছে তওবা করি। আমাদের নাফসের (বা কুপ্রবৃত্তির) অনিষ্টতা থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাই এবং আমাদের কৃতকর্মের প্রতিফল (থেকে তাঁর আশ্রয় চাই)।আল্লাহ্ যাকে পথ দেখান তাকে পথভ্রষ্ট করার কেউ নেই আর যাকে পথভ্রষ্ট করেন তাকে পথ দেখানোর কেউ নেই। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনি এক-অদ্বিতীয়, তাঁর কোনো অংশীদার নেই। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই মুহাম্মদ তাঁর বান্দা ও প্রেরিত পুরুষ। এবং এটাও সাক্ষী দিচ্ছি যে আলী ইবনে আবি তালিব মোহাম্মদ সাঃ এর উয়াসিহে আল্লাহর বান্দাগণ! আমি তোমাদেরকে অসিয়ত করছি আল্লাহকে ভয় করার তথা তাকওয়ার প্রতি। তোমাদেরকে তাঁর নির্দেশ মেনে চলার জন্য উৎসাহিত করছি। আর যা কিছু কল্যাণকর প্রথমেই আল্লাহর কাছে তা প্রার্থনা করছি। পরসমাচার, হে লোকেরা! আমি তোমাদের জন্য যা বর্ণনা করছি তা মনোযোগ দিয়ে শোনো। সত্যি কথা হলো আমি জানি না, হয়তো বা আগামী বছর এ স্থানে তোমাদের সাথে আমার আর সাক্ষাত হবে না।মোহাম্মদ (সা.) বিদায় হজের ভাষণে আরো বলেছেন: হে লোকেরা! তোমাদের রক্ত আর সম্ভ্রম তোমাদের ওপর হারাম যতক্ষণ না তোমাদের প্রতিপালকের সাথে মিলিত হও। (অর্থাত মুসলমানের রক্তপাত ও সম্মান হানি করা নিষিদ্ধ) যেমনভাবে আজকের এ দিনে এ ভূখণ্ডে তথা পবিত্র মক্কায় তোমাদের ওপর তা হারাম। ওহে, আমি কি পৌঁছে দিয়েছি? হে আল্লাহ্! তুমি সাক্ষী থেকো।যার কাছে কোনো কিছু আমানত রাখা হয় সে যেন ঐ আমানতকে আমানতদাতার কাছে ফিরিয়ে দেয়। নিশ্চয় জাহেলি যুগ থেকে কোনো টাকার সুদ কারো ওপর আরোপ হয়ে থাকলে (এখন) তা অকার্যকর হয়ে যাবে। আর সর্বপ্রথম যে সুদ বাতিল ( বা সুদ অকার্যকর করার কাজ) শুরু করছি সেটা হলো আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিবের টাকার সুদ। জাহেলিয়াতের যুগ থেকে যদি কারো ওপর কোনো রক্তের দায় থেকে থাকে, তা হলে (এখন) তা বহাল থাকবে না। আর সর্বপ্রথম যার রক্তের দায় মাফ করলাম সে হলো আমের ইবনে রাবিয়্যাহ্, হারিস ইবনে আবদুল মুত্তালিবের পুত্র। মোহাম্মদ (সা.) বিদায় হজের ভাষণে আরো বলেছেন:"নিশ্চয়ই জাহেলি যুগের সব প্রথা ও আইন অকার্যকর, কেবল কাবাঘরের তত্ত্বাবধান আর হাজীদের আপ্যায়ন ছাড়া। ইচ্ছাকৃত হত্যাকাণ্ডের জন্য রয়েছে কিসাস বা বদলা।" "হে লোকেরা! শয়তান তোমাদের এ ভূমিতে পূজিত হওয়া থেকে নিরাশ হয়ে গেছে। কিন্তু সন্তুষ্ট হয়েছে যে, উপাসনা ব্যতীত অন্যান্য ছোট কাজে তার নির্দেশের আনুগত্য করা হবে। হে লোকেরা! ( যেসব মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধ সেইসব মাসকে) তথা পবিত্র বা হারাম মাসগুলোকে অগ্র-পশ্চাত করা ( তথা অন্যান্য মাসের সাথে পরিবর্তন করা) কুফরেরই বিস্তার মাত্র। যারা কাফের তারা এর মাধ্যমে মানুষকে পথভ্রষ্ট বা গোমরাহ্ করে। এক বছরে সেটাকে হালাল করে, আরেক বছরে সেটাকে করে হারাম। যাতে আল্লাহ্ যে মাসগুলোকে হারাম করেছেন সেগুলোর সমান হয়ে যায়।" নিশ্চয়ই সময় ঘুরে সেদিনের অবস্থায় পৌঁছেছে যেদিন আল্লাহ্ আকাশগুলো এবং জমিনকে সৃষ্টি করেন। ‘নিশ্চয় মাসগুলোর সংখ্যা আল্লাহর কাছে বারোটি, আল্লাহর কিতাবে, যেদিন আসমানগুলো ও জমিনকে সৃষ্টি করেন, তন্মধ্যে চারটি মাস হারাম। তিনটি একাদিক্রমে। আর সেগুলো হল- জিলক্বদ, জিলহজ্ব এবং মুহররম। আর একাকী হল রজব -যা জমাদি ও শাবানের মাঝে। আমি কি প্রচার করিনি? হে আল্লাহ্! তুমি সাক্ষী থাকো।" মোহাম্মদ (সা.) বিদায় হজের ভাষণে আরো বলেছেন: "হে লোকেরা! নিশ্চয়ই তোমাদের স্ত্রীরা তোমাদের ওপর অধিকার রাখে। আর তাদের ওপরও তোমাদের অধিকার রয়েছে। তাদের ওপর তোমাদের অধিকার হলো তোমাদের বিছানায় (অর্থাৎ বিবাহ বন্ধনে থাকা অবস্থায় তারা) অন্য কারো সাথে সহবাস করবে না। আর যাকে তোমরা অপছন্দ করো তাকে তোমাদের অনুমতি ছাড়া ঘরে প্রবেশ করতে দেবে না। আর ব্যভিচার করবে না। আর যদি তা করে তা হলে আল্লাহ্ অনুমতি দিয়েছেন যে, তোমরা তাদের ওপর কঠোর হবে, তাদের বিছানাকে বর্জন করবে এবং তাদেরকে প্রহার করবে। তবে এমনরূপে নয় যে যখমি হবে কিংবা কালচে দাগ পড়ে যাবে। অতঃপর যখন তোমাদের কাছে ফিরে আসে এবং তোমাদের আনুগত্য করে তখন তোমাদের ওপর কর্তব্য হলো তাদেরকে ন্যায়সঙ্গতভাবে খোরাক ও পোশাক দেবে। তোমরা তাদেরকে আল্লাহর আমানত হিসেবে গ্রহণ করেছ আর আল্লাহর কিতাবের নির্দেশ মতো তাদেরকে নিজের জন্য হালাল করেছ। স্ত্রীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো এবং তাদের সাথে সদাচরণ করো।" মোহাম্মদ (সা.) বিদায় হজের ভাষণে আরো বলেছেন: "হে লোকেরা! মুমিনরা পরস্পর ভাই। মুমিন ভাইয়ের সম্পদ তার জন্য বৈধ নয় যদি না সে সম্মত থাকে। আমি কি (আল্লাহর নির্দেশ) উম্মতের কাছে পৌঁছাইনি? হে আল্লাহ্! তুমি সাক্ষী। তোমরা কুফরে প্রত্যাবর্তনের পথ ধরো না যে, একে অপরকে হত্যা করবে। কারণ, আমি তোমাদের মধ্যে এমন জিনিস রেখে গেলাম যা তোমরা যদি ধারণ করো, তা হলে কখনোই পথভ্রষ্ট হবে না : আল্লাহর কিতাব এবং আমার মনোনীত বংশধর -আহলে বাইত। আমি কি পৌঁছাই নি? হে আল্লাহ্! তুমি সাক্ষী।" "হে লোকেরা! নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালক এক এবং তোমাদের পিতা এক। তোমরা সবাই আদম থেকে আর আদম হলো মাটি থেকে। তোমাদের মধ্যে সে-ই আল্লাহর কাছে বেশি সম্মানিত যে বেশি খোদাভীরু। আর আরবের ওপর অনারবের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই তাকওয়া ব্যতীত। কি, আমি কি পৌঁছাই নি?" সবাই বলল : অবশ্যই। তিনি বললেন : সুতরাং উপস্থিতরা যেন অনুপস্থিতদেরকে সংবাদ দেয়।মোহাম্মদ (সা.) বিদায় হজের ভাষণে আরো বলেছেন: "হে লোকেরা! নিশ্চয়ই আল্লাহ্ প্রত্যেক উত্তরাধিকারীকে উত্তরাধিকারের অংশ দান করেছেন। আর পরিত্যক্ত সম্পদের এক-তৃতীয়াংশের বেশি অসিয়ত করলে তা কার্যকর নয়। সন্তান হবে স্বামীর আর ব্যভিচারীর কপালে জুটবে পাথর। যে কেউ নিজ পিতা ছাড়া অন্যের প্রতি নিজের পিতৃত্ব আরোপ করে এবং যে নিজ মনিব ভিন্ন অন্যকে মনিব বলে পরিচয় দেয় তার ওপর আল্লাহর অভিশাপ, অভিশাপ বর্ষিত হোক ফেরেশতাকুল এবং সব মানুষের। আর আল্লাহ্ তার কাছ থেকে কোনো তওবা এবং বদলা গ্রহণ করেন না। আল্লাহর দরুদ ও করুণা বর্ষিত হোক তোমাদের ওপরগাদিরে খুম থেকে সংকলিতনিবেদক মোঃ শামসীর হায়দার

আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলী মোহাম্মদ ওয়া সাল্লিমমাওলা মোহাম্মদ(সা.)'এর দেখানো পথ ও সৌভাগ্যের সিঁড়ি (পর্ব-৮) জ্ঞান বা আকল ও বুদ্ধিমত্তা এবং মূর্খতা সম্পর্কে রাসূল (সা.)'র একটি আলোচনা:মাওলা মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন : জ্ঞান অর্জন করো। কারণ, তা শেখা ভালো। আর তা নিয়ে পরস্পর আলোচনা করা আল্লাহর তাসবিহ পাঠের সমতুল্য। আর জ্ঞান অনুসন্ধান করা হচ্ছে জিহাদের সমতুল্য। যে সে সম্পর্কে অবহিত নয় তাকে তা জানানো সদকাস্বরূপ। উপযুক্ত পাত্রে সেটা দান করা আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম। কারণ, তা হারাম ও হালাল অবগত হওয়ার মাধ্যম হয়। আর যে ব্যক্তি জ্ঞান অনুসন্ধানে থাকে তা তাকে বেহেশতের দিকে পরিচালিত করে; তাকে একাকীত্বের ভয় থেকে রক্ষা করে ও নিঃসঙ্গতায় সঙ্গী হয়। আর জ্ঞান-অনুসন্ধান অজানা বা গোপন বিষয়ের নির্দেশক, শত্রুর বিরুদ্ধে হাতিয়ার এবং বন্ধুদের জন্য অলঙ্কার। আল্লাহ এর মাধ্যমে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর উত্থান ঘটান ও তাদেরকে সত কাজের নেতা বানিয়ে দেন যাতে অন্যরা তাদের অনুসরণ করে এবং তাদের কাজ-কর্মের প্রতি অন্যরা মনোযোগী হয় ও তাদের নিদর্শনগুলো অন্যদের জন্য শিক্ষণীয় হয়। ফেরেশতারা তাদের সাথে বন্ধুত্বের জন্য প্রেমাকুল হয়ে পড়ে। কারণ, জ্ঞান হলো অন্তরগুলোর প্রাণ, দৃষ্টিগুলোর অন্ধত্ব দূরকারী আলো, শরীরগুলোর দুর্বলতা দূরকারী শক্তির মাধ্যম, আল্লাহ্ জ্ঞানের অধিকারীদেরকে বন্ধুর স্থানে আসীন করেন। আর দুনিয়া ও আখিরাতে তাদেরকে পুণ্যবানদের সাহচর্য দান করেন।জ্ঞান সম্পর্কে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) আরো বলেছেন,জ্ঞানের মাধ্যমেই আল্লাহর আনুগত্য হয় এবং তিনি উপাসিত হন। জ্ঞানের মাধ্যমেই আল্লাহ্ পরিচিত হন এবং একত্ববাদ প্রতিষ্ঠা পায়। জ্ঞানই আত্মীয়তার বন্ধন জোড়া লাগায়, হালাল ও হারামকে চিনিয়ে দেয়। আর জ্ঞান হলো বুদ্ধিমত্তা বা আকলের ইমাম বা নেতা। আল্লাহ্ সৌভাগ্যবানদেরকেই আকল তথা বুদ্ধি দান করেন। আর দুর্ভাগাদের তা থেকে বঞ্চিত করেন। বুদ্ধিমানদের বৈশিষ্ট্য হলো যে ব্যক্তি তার সঙ্গে মূর্খতা করে, তিনি তার প্রতি ধৈর্যশীল হন। আর যে ব্যক্তি তার ওপর জুলুম করে, তিনি তাকে ক্ষমা করেন। বুদ্ধিমান তার অধীনদের প্রতি বিনয়ী হন। আর পুণ্য অর্জনের জন্য ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেন। যখন তিনি কথা বলতে চান, আগে ভেবে নেন। যদি পরিকল্পিত কথাটি ভালো মনে হয় তাহলেই বলেন এবং লাভবান হন। আর যদি পরিকল্পিত কথাটিকে মন্দ বলে মনে হয় তাহলে নীরব থাকেন এবং লাভবান হন। আর কোনো বিপদ নেমে আসলে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করেন এবং নিজ হাত ও জিহ্বাকে সংবরণ করেন। আর যদি কোনো গুণ-মর্যাদা দেখতে পান সেটাকে লুফে নেন। লজ্জা তার থেকে বিচ্ছিন্ন হয় না। তার থেকে কোনো লালসা প্রকাশ পায় না। এ হলো দশটি বৈশিষ্ট্য যা দিয়ে বুদ্ধিমানকে চেনা যায়।হযরত মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন,আর মূর্খের বৈশিষ্ট্য হলো: সে যার সাথেই চলাফেরা করে, তার ওপর অবিচার করে। তার অধীনদের ওপর জুলুম করে। তার ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে বেয়াদবি করে। তার কথা-বার্তা হয় চিন্তা ছাড়াই। যখন কথা বলে পাপ করে। আর যখন নিশ্চুপ থাকে, তখন উদাস হয়। যদি কোনো ফিতনার মুখোমুখি হয়, তা হলে সেদিকে ছুটে যায়। ফলে ফিতনা তাকে ধ্বংস করে দেয়। আর যদি কোনো গুণ-মর্যাদা প্রত্যক্ষ করে, মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং ধীর গতি-সম্পন্ন হয়ে যায়। তার পুরাতন পাপগুলোকে ভয় পায় না। আর তার অবশিষ্ট ভালো কাজে আলস্য করে এবং শ্লথ হয়। আর যা কিছু সে নষ্ট করেছে অথবা তার হাতছাড়া হয়ে গেছে সেদিকে সে ভ্রুক্ষেপ করে না। এ হলো মূর্খের বা আকল থেকে বঞ্চিত ব্যক্তির দশটি বৈশিষ্ট্য।এবারে মাওলা মোহাম্মদ (সা.)'র একটি উপদেশ তুলে ধরছি: হযরত মুহাম্মাদ (সা.) আরো বলেছেন, আমার কি হলো যে দেখছি দুনিয়া-প্রীতি অনেকের ওপর ভর করেছে? যেন মনে হয়, এ দুনিয়ায় মৃত্যু তাদের জন্য নয়, বরং অন্য কারো জন্য লেখা হয়েছে। যেন এ দুনিয়ার জবাবদিহি আল্লাহর কাছে অন্য কেউ করবে! আর তাদের মৃতদের সংবাদকে এমন মুসাফির দলের সংবাদ বলে মনে করছে যারা শিগগিরই তাদের কাছে ফিরে আসবে! তাদের কবরে দাফন করে আর তাদের পরিত্যক্ত মাল-সম্পদকে ভক্ষণ করে। যেন তাদের জায়গায় সে নিজে চিরস্থায়ী থাকবে? হায় আফসোস, হায়! অনুজরা কি অগ্রজদের থেকে উপদেশ গ্রহণ করবে না? তারা আল্লাহর কিতাবে যে উপদেশই রয়েছে সেগুলোকে উপেক্ষা করে এবং ভুলে যায়। আর তারা প্রত্যেক মন্দ কাজের খারাপ পরিণতি থেকে নিজেকে নিরাপদ মনে করে। আর কোনো ক্ষয়-ক্ষতি নেমে আসার এবং কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটারও ভয় করে না।ধন্য সেই ব্যক্তি যার খোদা-ভীতি তাকে মানুষের ভয় থেকে বিরত রাখে, যার রোজগার পবিত্র, অন্তর পরিশুদ্ধ, বাহ্যিক দিকও সুন্দর এবং চরিত্র সঠিক।ধন্য সেই ব্যক্তি যে তার সম্পদের অতিরিক্ত অংশ দান করে। আর বেশি কথা বলে না। হযরত মুহাম্মাদ (সা.) আরো বলেছেন, ধন্য সেই ব্যক্তি যে পবিত্র মহীয়ান আল্লাহর জন্য বিনত হয়। আর তার জন্য যা হালাল করা হয়েছে সেগুলোকেও ত্যাগ করে, অবশ্য আমার সুন্নাতকে বর্জন করার ইচ্ছা ছাড়া। আর দুনিয়ার ভালো ও আকর্ষণীয় জিনিসগুলোকেও পরিহার করে। অবশ্য আমার সুন্নাতকে ছেড়ে অন্য কোনো পন্থা গ্রহণ ছাড়া। আর আমার পরে আমার মনোনীত বংশধরদের সাথে থাকে এবং দীনের সমঝদার ও প্রজ্ঞাবানদের সাথে ওঠা-বসা করে। আর অভাবীদের দয়া করে। ধন্য সেই মুমিন ব্যক্তি যে আল্লাহর অবাধ্যতার পথ ছাড়া অন্য পথে তা ব্যয় করে। আর গরীব অসহায় লোকদের মাঝে তা বণ্টন করে দেয়। আর যারা গর্বিত ও অহংকারী হয়, দুনিয়ার প্রতি আসক্ত থাকে, বিদআত চালু করে এবং আমার সুন্নাতের বিরুদ্ধে চলে আর আমার পন্থার বিরুদ্ধে কাজ করে তাদের থেকে দূরে থাকে। ধন্য সেই ব্যক্তি যে মানুষের সাথে সৎ আচরণ করে এবং তাদের উপকার করে, আর নিজ অনিষ্টতাকে তাদের থেকে ফিরিয়ে রাখে। #নিবেদক,,,,,,, মোঃ শামসীর হায়দার