সুফিবাদ বা সুফী দর্শন একটি ইসলামি আধ্যাত্মিক দর্শন (৩য় পর্ব)সুফিজমে বহুল প্রচলিত চর্চা হোল মিস্টিসিজম। এর বাংলা অর্থ মরমি সাধক বা মরমিয়া, সুফি, মুর্শিদ, দরবেশ, সাধু, সন্ন্যাসী, গুরু ইত্যাদি। ইংরেজি Mysticism এসেছে গ্রিক শব্দ mystes থেকে যার অর্থ চোখ বন্ধ করা। মরমি সাধকেরা চোখ বন্ধ করে অন্তর্দৃষ্টি ও গভীর চিন্তা-তন্ময়তার মাধ্যমে সত্য ও সুন্দরকে উপলব্ধি করার প্রয়াস পান। এই প্রয়াসে মনীষা ও ভাবাবেগের এক প্রকার সংমিশ্রণ ঘটে। এই মিশ্রণের বিচিত্র অনুভূতির প্রকাশ রূপক ও উপমা ছাড়া সম্ভব নয়। সুফিবাদেরও মর্মকথা: ‘হৃদয়ে তোমার চলে যেন আলিফের (আল্লাহ) খেলা। পবিত্র দৃষ্টি দিয়ে যদি তুমি জীবনকে দেখতে শেখো, তুমি জানবে আল্লাহর নামই যথেষ্ট। আল্লাহ প্রেমময় ও সৌন্দর্যময়। তিনি অনন্ত, অবিনশ্বর ও সর্বত্র বিরাজমান। প্রেম ও ভক্তির পথে আধ্যাত্মিক সাধনার মাধ্যমেই তাঁকে পাওয়া যায়। আল্লাহতে অনুগত বা লীন হওয়া সুফি সাধকের চরম লক্ষ্য।উয়ায়েস কারনী (রাঃ --- হযরত মোহাম্মদ (সেঃ) বলেন বিশ্বাসী আল্লাহর নুরকে খোজ করবে, এবং কেউ তা অন্তরচক্ষুদ্বারা দেখবে , যা চর্ম চক্ষু দ্বারা পাওয়া যাবে না। এবং জ্ঞ্যান হলো আলো বা নূর যা আল্লাহ যাকে খুশি দান করেন। শারীরিকভাবে কাছাকাছি না থাকলেও সিদ্ধি লাভ হয়। হযরত উয়ায়েস কারনী তারই উদাহরণ। যেহেতু তিনি কখনোই নবিজী (সাঃ) কে চর্মচক্ষু দ্বারা দেখেন নাই কিন্তু তার পরেও তাঁর সকল শিক্ষাই তিনি পেয়েছিলেন। উয়ায়েস কারনী (রাঃ)ছিলেন ইয়েমেনের কারান নামক স্থানের একজন সুফি, ও দার্শনিক যা এখন সৌদি আরবের অন্তর্ভুক্ত। তিনি হযরত মোহাম্মাদ (সাঃ) এর সমসাময়িক কালের ব্যাক্তি ছিলেন।তাই নবীজি (সাঃ) তাঁকে সাহাবী হিসাবে উল্লেখ করেছেন, যদিও রাসুল (সাঃ) এর জীবদ্দশায় নবিজী (সাঃ) এর সাথে তাঁর ব্যক্তিগত সাক্ষাৎ হয় নাই। আল্লাহর প্রেরিত রাসুলকে দেখার আন্তরিক আকুলতার কারণে তাঁর নাম সাহাবী (রাঃ) দের তালিকায় স্থান পায়।ইবনে বতুতার বর্ণনা অনুযায়ী, উয়াইস করনি সিফফিনের যুদ্ধে আলি ইবনে আবি তালিবের পক্ষে লড়াই করে মারা যান । অন্তর দিয়ে তিনি হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর খুবই কাছাকাছি ছিলেন যার কারণে তিনি হযরতের ব্যাথা নিজেও অনুধাবন করতে চেয়েছেন। জাহেরী এবং বাতেনী জ্ঞ্যানের দ্বারাই তিনি হযরতের দাঁত হারানোর বিষয়টি জানতে পেরেছিলেন। এটা সরাসরি হযরত মোহাম্দ (সাঃ) এর থেকে প্রাপ্ত শিক্ষার সাথে সম্পৃক্ত। বিশ্বাসীগন আল্লাহর নূরকে খুজতে থাকে। এটা ততক্ষন অবধারণ করা যায় না যতক্ষন অন্তরদ্বারা তা অনুধাবন করা না যায়।তিনি খুবই সাধারণ এবং একাকী জীবন যাপন করতেন। স্বল্প আহার, রোজা ও অন্ধ 'মা'-এর সর্বপ্রকার সেবা-সুস্রশাই ছিল তাঁর জীবনের ব্রত। তিনি ছিলেন মাতৃ ভক্ত । মায়ের আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করতেন।শুধু তাই নয় তিনি যেখানেই যেতেন মাকে ঘাড়ে উঠিয়ে নিয়ে যেতেন।এক মুহূর্তের জন্য তাহার মাকে মাটিতে পা ফেলতে দিতেন না। আলি ইবনে আবি তালিব এবং উমর ইবনে আল-খাত্তাবের সাথে সাক্ষাতের পর তাঁর কথা দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং উৎসুক জনতা তাঁকে এক নজর দেখার জন্য তাঁর আবাসস্থলে গমন করতে থাকে। এতে উয়াইস করনির ধর্ম সাধনায় ব্যঘাত সৃষ্টি হয় এবং নির্বিঘ্ন সাধনার জন্য উয়াইস করনের উদ্দেশ্যে কুফা ত্যাগ করেন। তাঁর সময়ে তাঁকে আলির একজন অনুসারী বলে ধরা হত। তিনি উট পালন করে অর্থ উপার্জন করতেন।উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, অবশ্যই তাবিঈনগণের মধ্যে সেই ব্যক্তি শ্রেষ্ঠ যে ওয়ায়েস নামে পরিচিত। তাঁর একমাত্র মা আছেন এবং তাঁর শ্বেত রোগ হয়েছিল। তোমরা তাঁর কাছে অনুরোধ করবে যেন সে তোমাদের মাগফিরাতের জন্য দু‘আ করে।(তথা আল্লাহর নিকট ক্ষমার জন্য সুপারিশ করে)।(মুসলিম শরীফ, হাদিস নং- ৬২৬০ ইফা)।ওয়াস করনির সংক্ষিপ্ত জীবনিঃ- ওয়াস করনির পিতা আব্দুল্লাহ ছিলেন একজন মস্ত বড় ইহুদি ধর্মের আলেম।এলাকায় তার খুব নাম যশ ছিল। ওয়াস করনির বয়স যখন মাত্র ১০ বছর তখন তাহার পিতা হঠাৎ মারা যাওয়ায় সংসারের সকল দায়িত্ব তার ওপর আরোপিত হয়। পিতার মৃত্যুতে তাদের আর্থিক অভাব অনটনে দিন অতিবাহিত হতে থাকে।কখনও এমনও দিন গেছে যে শুধু পানি খেয়ে দিন অতিবাহিত হয়েছে। তিনি বছরের অধিকাংশ দিনই রোযা রাখতেন।দিনের শেষে শুধু একটি খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন।যেদিন বেশি খেজুর ক্রয় করতেন সেদিন দুইটা একটা খেজুর রেখে বাকি সবই ফকির মিসকিনদের বিলিয়ে দিতেন। শত অভাবে তিনি কারো কাছে হাত পাততে না।ওয়াস করনির বহু আমির ভক্ত ছিল যারা দামি দামি কাপড়, টাকা পয়সা দিয়ে ওয়াস করনিকে সাহায্য করতে চাইত,কিন্তু ওয়াস করনি তা ফিরিয়ে দিয়ে শুধু বলতেন "আমার দয়াল নবী (স) ই যখন উম্মতের জন্য সকল আরাম আয়েশ ছেড়ে দিলেন, তখন আমি তার গোলাম হয়ে কিভাবে আরাম আয়েশ করতে পারি ???"। ক্রমেই যখন ওয়াস করনি খ্যাতি বাড়তে থাকে তখন তিনি তার মাকে নিয়ে জঙ্গলে আত্ম গোপন করেন,যাতে মানুষের কারনে তার ইবাদত করতে কোন প্রকার অসুবিধা না হয়। মুহাম্মদ (সা) এর জীবদ্দশায় তিনি জীবিত ছিলেন তবে তাদের কখনো দেখা হয়নি। কারণ উয়াইস ধর্ম সাধনায় নিয়ত রত থাকতেন এবং তাঁর অন্ধ মায়ের দেখাশোনা করতেন। লোকে হযরত ওয়াইজ কারনী (রঃ)কে পাগল বলিত এবং পাথর ছুড়িয়া মারিত। তখন তিনি তাহাদেরকে ছোট ছোট পাথর মারতে বলতেন যাতে ইবাদাতের অসুবিধা না হয়। অন্ধ 'মা'-এর সুস্রশার ব্যাঘাত হবার ভয়ে সর্বকালের সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ আশেক হযরত ওয়াইজ কারনী (রঃ), হযরত রসুলপাকের (দঃ) সাথে সাক্ষাত লাভ সম্ভব হয় নাই। "মা'-এর অনুমতির বাহিরে তিনি কোনও কাজ কোনও দিন করেন নাই। উল্লেখ্য যে হযরত উয়ায়েস এঁর মাতা মারা যাওয়ার পরে তিনি হযরত আলী (রাঃ) এর সাথে মিলিত হওয়ার জন্য বের হন এবং সিফ্ফিনের যুদ্ধে শাহদাৎ বরন করেন।ঐতিহাসিক বর্ণনা মতে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন " আমার লোকেদের মাঝে এমন একজন আছে যে শেষ বিচারের দিনে সকল বিশ্বাসীদেরকে হেফাজতের ক্ষমতা রাখে"।সাহাবা (রা) গণ জিজ্ঞাসা করলেন " কে সেই ব্যক্তি?" তিনি বল্লেন "সে আল্লাহর বান্দা।" তাঁরা প্রত্যুত্তরে বল্লেন "আমরা সবাই আল্লার বান্দা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে পয়দা করেছেন।" তাঁরা প্রশ্ন করলেন " তাঁর নাম কি?" রাসুলে পাক (সাঃ) বল্লেন "উয়ায়েস!" সাহাবা (রা) গণ জিজ্ঞাসা করলেন,"তিনি কোথায়?" তিনি বলেন "ইয়েমেন"। সাহাবা (রা) গণ জিজ্ঞাসা করলেন, "সে যদি আপনাকে ভালোবাসে, তাহলে কেন আপনার খেদমতে হাজির হয় না?" রাসুলে পাক (সাঃ) জবাবে বল্লেন, "সে আমার পথ গ্রহণ করেছে এবং সে একজন বিশ্বাসীর অন্তর্ভুক্ত; শারিরীক ভাবে তাঁর এখানে উপস্থিত হওয়ার কোন প্রয়োজন নাই। অধিকন্তু তাঁর পরিস্থিতি তাঁকে এখানে আসতে সহায়তা করে না এবং সে তার অচল-অন্ধ মায়ের সেবা করে।সে দিনের বেলা উট চরায়। সেই আয় থেকে নিজে ও তাঁর মায়ের ভরণ পোষন করে। সাহাবা (রাঃ) গন প্রশ্ন করলেন আমরা কি তাঁকে দেখতে পাব?" রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন," আবু বকর নয়, তবে ওমর এবং আলী পারবে। তোমরা তাঁকে পাবে ইয়ামেনের একটি গ্রাম শারানীতে এবং তাঁর হাতের তালুতে এবং বুকের পাজরের কাছে সাদা দাগ দেখে তোমরা তাঁকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হবে।। যখন তোমাদের সাথে তাঁর দেখা হবে, তাঁকে আমার শুভেচ্ছা দেবে আর আর আমার উম্মতদের জন্য দোআ করতে বলবে। ওয়াস করনি প্রাথমিক জীবনে হযরত মুসা (আঃ)এর অনুসারি অর্থাৎ ইহুদি ছিলেন।পরবর্তীতে আসমানি কিতাবে শেষ পয়গম্বর মুহাম্মাদ (স) এর আগমনের খবর পেয়ে এক মুসলমান আউলিয়ার কাছে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন এবং সেই সাথে তাহার মাতাকে ও ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করেন।এভাবে সারা জীবন আল্লাহ্ ও রাসুলের প্রেমে নিজেকে উজার করে দিয়ে অবশেষে দুনিয়া থেকে বিদায় নেন
সুফিবাদ বা সুফী দর্শন একটি ইসলামি আধ্যাত্মিক দর্শন (৩য় পর্ব)
সুফিজমে বহুল প্রচলিত চর্চা হোল মিস্টিসিজম। এর বাংলা অর্থ মরমি সাধক বা মরমিয়া, সুফি, মুর্শিদ, দরবেশ, সাধু, সন্ন্যাসী, গুরু ইত্যাদি। ইংরেজি Mysticism এসেছে গ্রিক শব্দ mystes থেকে যার অর্থ চোখ বন্ধ করা। মরমি সাধকেরা চোখ বন্ধ করে অন্তর্দৃষ্টি ও গভীর চিন্তা-তন্ময়তার মাধ্যমে সত্য ও সুন্দরকে উপলব্ধি করার প্রয়াস পান। এই প্রয়াসে মনীষা ও ভাবাবেগের এক প্রকার সংমিশ্রণ ঘটে। এই মিশ্রণের বিচিত্র অনুভূতির প্রকাশ রূপক ও উপমা ছাড়া সম্ভব নয়। সুফিবাদেরও মর্মকথা: ‘হৃদয়ে তোমার চলে যেন আলিফের (আল্লাহ) খেলা। পবিত্র দৃষ্টি দিয়ে যদি তুমি জীবনকে দেখতে শেখো, তুমি জানবে আল্লাহর নামই যথেষ্ট। আল্লাহ প্রেমময় ও সৌন্দর্যময়। তিনি অনন্ত, অবিনশ্বর ও সর্বত্র বিরাজমান। প্রেম ও ভক্তির পথে আধ্যাত্মিক সাধনার মাধ্যমেই তাঁকে পাওয়া যায়। আল্লাহতে অনুগত বা লীন হওয়া সুফি সাধকের চরম লক্ষ্য।
উয়ায়েস কারনী (রাঃ ---
হযরত মোহাম্মদ (সেঃ) বলেন বিশ্বাসী আল্লাহর নুরকে খোজ করবে, এবং কেউ তা অন্তরচক্ষুদ্বারা দেখবে , যা চর্ম চক্ষু দ্বারা পাওয়া যাবে না। এবং জ্ঞ্যান হলো আলো বা নূর যা আল্লাহ যাকে খুশি দান করেন। শারীরিকভাবে কাছাকাছি না থাকলেও সিদ্ধি লাভ হয়। হযরত উয়ায়েস কারনী তারই উদাহরণ। যেহেতু তিনি কখনোই নবিজী (সাঃ) কে চর্মচক্ষু দ্বারা দেখেন নাই কিন্তু তার পরেও তাঁর সকল শিক্ষাই তিনি পেয়েছিলেন।
উয়ায়েস কারনী (রাঃ)ছিলেন ইয়েমেনের কারান নামক স্থানের একজন সুফি, ও দার্শনিক যা এখন সৌদি আরবের অন্তর্ভুক্ত। তিনি হযরত মোহাম্মাদ (সাঃ) এর সমসাময়িক কালের ব্যাক্তি ছিলেন।তাই নবীজি (সাঃ) তাঁকে সাহাবী হিসাবে উল্লেখ করেছেন, যদিও রাসুল (সাঃ) এর জীবদ্দশায় নবিজী (সাঃ) এর সাথে তাঁর ব্যক্তিগত সাক্ষাৎ হয় নাই। আল্লাহর প্রেরিত রাসুলকে দেখার আন্তরিক আকুলতার কারণে তাঁর নাম সাহাবী (রাঃ) দের তালিকায় স্থান পায়।ইবনে বতুতার বর্ণনা অনুযায়ী, উয়াইস করনি সিফফিনের যুদ্ধে আলি ইবনে আবি তালিবের পক্ষে লড়াই করে মারা যান ।
অন্তর দিয়ে তিনি হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর খুবই কাছাকাছি ছিলেন যার কারণে তিনি হযরতের ব্যাথা নিজেও অনুধাবন করতে চেয়েছেন। জাহেরী এবং বাতেনী জ্ঞ্যানের দ্বারাই তিনি হযরতের দাঁত হারানোর বিষয়টি জানতে পেরেছিলেন। এটা সরাসরি হযরত মোহাম্দ (সাঃ) এর থেকে প্রাপ্ত শিক্ষার সাথে সম্পৃক্ত। বিশ্বাসীগন আল্লাহর নূরকে খুজতে থাকে। এটা ততক্ষন অবধারণ করা যায় না যতক্ষন অন্তরদ্বারা তা অনুধাবন করা না যায়।
তিনি খুবই সাধারণ এবং একাকী জীবন যাপন করতেন। স্বল্প আহার, রোজা ও অন্ধ 'মা'-এর সর্বপ্রকার সেবা-সুস্রশাই ছিল তাঁর জীবনের ব্রত। তিনি ছিলেন মাতৃ ভক্ত । মায়ের আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করতেন।শুধু তাই নয় তিনি যেখানেই যেতেন মাকে ঘাড়ে উঠিয়ে নিয়ে যেতেন।এক মুহূর্তের জন্য তাহার মাকে মাটিতে পা ফেলতে দিতেন না। আলি ইবনে আবি তালিব এবং উমর ইবনে আল-খাত্তাবের সাথে সাক্ষাতের পর তাঁর কথা দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং উৎসুক জনতা তাঁকে এক নজর দেখার জন্য তাঁর আবাসস্থলে গমন করতে থাকে। এতে উয়াইস করনির ধর্ম সাধনায় ব্যঘাত সৃষ্টি হয় এবং নির্বিঘ্ন সাধনার জন্য উয়াইস করনের উদ্দেশ্যে কুফা ত্যাগ করেন। তাঁর সময়ে তাঁকে আলির একজন অনুসারী বলে ধরা হত। তিনি উট পালন করে অর্থ উপার্জন করতেন।
উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, অবশ্যই তাবিঈনগণের মধ্যে সেই ব্যক্তি শ্রেষ্ঠ যে ওয়ায়েস নামে পরিচিত। তাঁর একমাত্র মা আছেন এবং তাঁর শ্বেত রোগ হয়েছিল। তোমরা তাঁর কাছে অনুরোধ করবে যেন সে তোমাদের মাগফিরাতের জন্য দু‘আ করে।(তথা আল্লাহর নিকট ক্ষমার জন্য সুপারিশ করে)।(মুসলিম শরীফ, হাদিস নং- ৬২৬০ ইফা)।
ওয়াস করনির সংক্ষিপ্ত জীবনিঃ- ওয়াস করনির পিতা আব্দুল্লাহ ছিলেন একজন মস্ত বড় ইহুদি ধর্মের আলেম।এলাকায় তার খুব নাম যশ ছিল। ওয়াস করনির বয়স যখন মাত্র ১০ বছর তখন তাহার পিতা হঠাৎ মারা যাওয়ায় সংসারের সকল দায়িত্ব তার ওপর আরোপিত হয়। পিতার মৃত্যুতে তাদের আর্থিক অভাব অনটনে দিন অতিবাহিত হতে থাকে।কখনও এমনও দিন গেছে যে শুধু পানি খেয়ে দিন অতিবাহিত হয়েছে। তিনি বছরের অধিকাংশ দিনই রোযা রাখতেন।দিনের শেষে শুধু একটি খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন।যেদিন বেশি খেজুর ক্রয় করতেন সেদিন দুইটা একটা খেজুর রেখে বাকি সবই ফকির মিসকিনদের বিলিয়ে দিতেন। শত অভাবে তিনি কারো কাছে হাত পাততে না।ওয়াস করনির বহু আমির ভক্ত ছিল যারা দামি দামি কাপড়, টাকা পয়সা দিয়ে ওয়াস করনিকে সাহায্য করতে চাইত,কিন্তু ওয়াস করনি তা ফিরিয়ে দিয়ে শুধু বলতেন "আমার দয়াল নবী (স) ই যখন উম্মতের জন্য সকল আরাম আয়েশ ছেড়ে দিলেন, তখন আমি তার গোলাম হয়ে কিভাবে আরাম আয়েশ করতে পারি ???"। ক্রমেই যখন ওয়াস করনি খ্যাতি বাড়তে থাকে তখন তিনি তার মাকে নিয়ে জঙ্গলে আত্ম গোপন করেন,যাতে মানুষের কারনে তার ইবাদত করতে কোন প্রকার অসুবিধা না হয়।
মুহাম্মদ (সা) এর জীবদ্দশায় তিনি জীবিত ছিলেন তবে তাদের কখনো দেখা হয়নি। কারণ উয়াইস ধর্ম সাধনায় নিয়ত রত থাকতেন এবং তাঁর অন্ধ মায়ের দেখাশোনা করতেন। লোকে হযরত ওয়াইজ কারনী (রঃ)কে পাগল বলিত এবং পাথর ছুড়িয়া মারিত। তখন তিনি তাহাদেরকে ছোট ছোট পাথর মারতে বলতেন যাতে ইবাদাতের অসুবিধা না হয়।
অন্ধ 'মা'-এর সুস্রশার ব্যাঘাত হবার ভয়ে সর্বকালের সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ আশেক হযরত ওয়াইজ কারনী (রঃ), হযরত রসুলপাকের (দঃ) সাথে সাক্ষাত লাভ সম্ভব হয় নাই। "মা'-এর অনুমতির বাহিরে তিনি কোনও কাজ কোনও দিন করেন নাই। উল্লেখ্য যে হযরত উয়ায়েস এঁর মাতা মারা যাওয়ার পরে তিনি হযরত আলী (রাঃ) এর সাথে মিলিত হওয়ার জন্য বের হন এবং সিফ্ফিনের যুদ্ধে শাহদাৎ বরন করেন।
ঐতিহাসিক বর্ণনা মতে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন " আমার লোকেদের মাঝে এমন একজন আছে যে শেষ বিচারের দিনে সকল বিশ্বাসীদেরকে হেফাজতের ক্ষমতা রাখে"।সাহাবা (রা) গণ জিজ্ঞাসা করলেন " কে সেই ব্যক্তি?" তিনি বল্লেন "সে আল্লাহর বান্দা।" তাঁরা প্রত্যুত্তরে বল্লেন "আমরা সবাই আল্লার বান্দা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে পয়দা করেছেন।" তাঁরা প্রশ্ন করলেন " তাঁর নাম কি?" রাসুলে পাক (সাঃ) বল্লেন "উয়ায়েস!" সাহাবা (রা) গণ জিজ্ঞাসা করলেন,"তিনি কোথায়?" তিনি বলেন "ইয়েমেন"। সাহাবা (রা) গণ জিজ্ঞাসা করলেন, "সে যদি আপনাকে ভালোবাসে, তাহলে কেন আপনার খেদমতে হাজির হয় না?" রাসুলে পাক (সাঃ) জবাবে বল্লেন, "সে আমার পথ গ্রহণ করেছে এবং সে একজন বিশ্বাসীর অন্তর্ভুক্ত; শারিরীক ভাবে তাঁর এখানে উপস্থিত হওয়ার কোন প্রয়োজন নাই। অধিকন্তু তাঁর পরিস্থিতি তাঁকে এখানে আসতে সহায়তা করে না এবং সে তার অচল-অন্ধ মায়ের সেবা করে।সে দিনের বেলা উট চরায়। সেই আয় থেকে নিজে ও তাঁর মায়ের ভরণ পোষন করে। সাহাবা (রাঃ) গন প্রশ্ন করলেন আমরা কি তাঁকে দেখতে পাব?" রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন," আবু বকর নয়, তবে ওমর এবং আলী পারবে। তোমরা তাঁকে পাবে ইয়ামেনের একটি গ্রাম শারানীতে এবং তাঁর হাতের তালুতে এবং বুকের পাজরের কাছে সাদা দাগ দেখে তোমরা তাঁকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হবে।। যখন তোমাদের সাথে তাঁর দেখা হবে, তাঁকে আমার শুভেচ্ছা দেবে আর আর আমার উম্মতদের জন্য দোআ করতে বলবে।
ওয়াস করনি প্রাথমিক জীবনে হযরত মুসা (আঃ)এর অনুসারি অর্থাৎ ইহুদি ছিলেন।পরবর্তীতে আসমানি কিতাবে শেষ পয়গম্বর মুহাম্মাদ (স) এর আগমনের খবর পেয়ে এক মুসলমান আউলিয়ার কাছে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন এবং সেই সাথে তাহার মাতাকে ও ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করেন।এভাবে সারা জীবন আল্লাহ্ ও রাসুলের প্রেমে নিজেকে উজার করে দিয়ে অবশেষে দুনিয়া থেকে বিদায় নেন
মন্তব্যসমূহ