বেলায়েতের আয়াতের ব্যাকরণগত দিক সম্পর্কে একটি গবেষণামূলক পোস্টপর্ব (((((১)))))কালামশাস্ত্রে আয়াত এবং রেওয়ায়েতসমূহের ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে ব্যাকরণগত দিক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনুরূপ ভাবে বেলায়েত ও নেতৃত্বের বিষয়টিও কালামশাস্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে পরিগণিত হয়। এই লেখনীতে বেলায়েতের আয়াত (সূরা মায়েদার ৫৫ নং আয়াত) সম্পর্কে দু’দল কালাম শাস্ত্রবিদ তাদের মতের সপক্ষে যে সকল ব্যাকরণগত যুক্তি উপস্থাপন করেছেন তার মধ্যে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এই বিষয়টি উপস্থাপন করতে গিয়ে ইসলামী বিশ্বের দু’জন প্রসিদ্ধ কালামশাস্ত্রবিদ ‘তাজরিদুল ইতিকাদ’ গ্রন্থের রচয়িতা গবেষক তুসী এবং এ গ্রন্থের ব্যাখ্যাকারক ফাজেল কুশচীর মতকে মূল ধরা হয়েছে। প্রথমেই এই আয়াত দ্বারা হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর পর পরই হযরত আলী (আ.) এর বেলায়েত ও খেলাফতকে প্রমাণ করার ক্ষেত্রে গবেষক তুসীর ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রমাণ এবং ব্যাকরণগত যুক্তি বর্ণনা করা হয়েছে। অতপর তার মত খণ্ডন করে গবেষক ফাজেল কুশচী যে যুক্তি-প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন তা উল্লেখ করে তাদের দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচনা ও পর্যালোচনা করা হয়েছে।ভূমিকা : বেলায়েত ও নেতৃত্ব সম্পর্কিত আলোচনা কালাম শাস্ত্রের উৎপত্তির শুরু থেকেই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। শাহরেস্তানীর মতে রাসূল (সা.) এর ওফাতের পর মুসলমানদের মধ্যে সর্ব প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল তা তার স্থলাভিষিক্তি এবং পরবর্তী নেতৃত্ব নিয়েই। (শাহরেস্তানী, আল-মেলাল ওয়ান নেহাল, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-২৪।) মুসলমানরা এ বিষয়টি নিয়ে দুদলে বিভক্ত হয়। তাদের একদল বিশ্বাস করে যে, হযরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর পর হযরত আলী (আ.) কে খলিফা হিসাবে মনোনীত করেছেন। অপরদল বিশ্বাস করে তিনি কাউকেই নেতা নিযুক্ত করে যাননি।তাদের প্রথম দল হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর পর পরই হযরত আলী (আ.) এর খেলাফতকে প্রমাণ করার জন্য বিভিন্ন আকলী (বুদ্ধিবৃত্তিক) এবং নাকলী (কোরআন ও হাদীসের) দলীল উপস্থাপন করে থাকেন। নাকলী দলীল হিসাবে তারা কোরআনের বিভিন্ন আয়াত এবং রাসূল (সা.) এর হাদীস ব্যবহার করে থাকেন।তন্মধ্যে একটি হচ্ছে, সূরা আল-মায়েদার ৫৫ নং আয়াত যা আহলে বাইতের অনুসারীদের মধ্যে বেলায়েতের আয়াত নামে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। এই আয়াতটি হচ্ছে-إِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَالَّذِينَ آمَنُوا الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُمْ رَاكِعُونَতোমাদের অভিভাবক হচ্ছেন কেবল আল্লাহ ও তার রাসূল এবং যারা ঈমান এনেছে, নামাজ কায়েম করেছে আর রুকুরত অবস্থায় যাকাত প্রদান করেছে।আহলে বাইতের অনুসারীদের বিশ্বাস এই আয়াত অকাট্যভাবে হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর পরপরই হযরত আমিরুল মু’মেনীন (আ.) এর খেলাফতকে প্রমাণ করে।গবেষক তুসী তার “তাজরিদুল ই’তিকাদ” গ্রন্থে নবী (সা.) এর উত্তরাধিকারী যে ঐশীভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত, তা দুই দলীল যথা নিষ্পাপতা (ইসমাত) এবং রাসূল (সা.) এর সীরাত বা কর্মনীতি দ্বারা প্রমাণ করে বলেছেন: যে সব দলীল প্রমাণ হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর পরপরই হযরত আমিরুল মু’মেনিন আলী (আ.) এর ইমামত ও খেলাফতের দিকে ইঙ্গিত করে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বেলায়েতের আয়াত। কেননা এই আয়াতে যে সব গুণাবলীর কথা উল্লেখ করা হয়েছে একমাত্র আলী (আ.) এর মধ্যেই তার সমাবেশ ঘটেছে। (তুসী, তাজরিদুল এ’তেকাদ, পৃষ্ঠা নং-২২৫)তাজরিদুল ই’তিকাদ এর ব্যাখ্যাকারক আল্লামা কুশচী, গবেষক তুসীর বক্তব্যকে এভাবে বর্ণনা করেছেন :১. সকল মুফাসসির এব্যাপারে একমত যে, এ আয়াতটি হযরত আলী (আ.) এর শানে অবতীর্ণ হয়েছে। এ আয়াত এমন সময় অবতীর্ণ হয়েছিল যখন হযরত আলী (আ.) রুকুরত অবস্থায় একজন অসহায় নিঃস্ব ব্যক্তিকে নিজের আংটি দান করেছিলেন।২. «انّما» (ইন্নামা) শব্দটি মূলত আরবি ব্যাকরণশাস্ত্রে হাসর (حصر) বা সীমাবদ্ধতা নির্দেশ করতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে এবং কোরআন ও হাদীসের বর্ণনাতেও এর সপক্ষে দলীল রয়েছে।৩. «ولي» শব্দটি কখনো সাহায্যকারী অর্থে আবার কখনো কোন বিষয়ে কর্তৃত্বকারী এবং কর্তৃত্বের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন যখন বলা হয়: স্ত্রীর বড়ভাই তার অভিভাবক, অথবা শাসক হলেন অভিভাবকহীনের অভিভাবক এবং অনুরূপভাবে রক্তের দাবিদার ও উত্তরাধিকারীরা নিহত ব্যক্তির রক্তের প্রতিশোধ গ্রহণের অধিকারপ্রাপ্ত। উল্লিখিত সকল ক্ষেত্রেই «ولي» শব্দটি (কোন কিছুর ওপর) কর্তৃত্বের অধিকারী বা অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।এই আয়াতেও ওয়ালি শব্দটি দ্বিতীয় অর্থে অর্থাৎ কর্তৃত্বের অধিকারী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এই আয়াতে হাসর (সীমাবদ্ধতা নির্দেশক অব্যয় ‘ইন্নামা’) থাকার কারণে বেলায়াত (শাসনক্ষমতা, কর্তৃত্ব) শব্দটি সাহায্যকারী অর্থে ব্যবহৃত হতে পারেনা। কেননা পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে-وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍঅর্থাৎ সকল মুসলমান নরনারী পরস্পর পরস্পরের সাহায্যকারী। (সূরা আত-তওবাহ, আয়াত নং-৭১)।সুতরাং সূরা মায়েদার আলোচ্য আয়াতটিতে «ولي» শব্দটি সাহায্যকারী অর্থে ব্যবহৃত হওয়ার পক্ষে কোন দলীল প্রমাণ নেই কারণ তাহলে এ (সাহায্যকারী) অর্থটি কেবল ঐসব মুসলমান যারা রুকু অবস্থায় যাকাত প্রদান করে তাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়বে।৪. «ولي» ওয়ালি শব্দের অর্থ ইমাম বা নেতা।৫. যেহেতু আয়াতে উল্লিখিত গুণাবলীর সমাবেশ শুধুমাত্র আলী (আ.) এর মধ্যেই ঘটেছে সেহেতু একমাত্র তিনিই ইমামত বা নেতৃত্বের যোগ্য। (কুশচী, শারহে তাজরিদুল ইতিকাদ, পৃ-৩৬৮।)কালাম শাস্ত্রের বিভিন্ন গ্রন্থে দু’দল কালাম শাস্ত্রবিদের মধ্যে এ বিষয়ে আয়াতটির ব্যাকরণগত দিক নিয়ে বেশ বিতর্ক পরিলক্ষিত হয়। পাঁচটি ব্যাকরণগত বিষয়কে কেন্দ্র করে এই আয়াতে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা রয়েছে। এ পাঁচটি বিষয় যথাক্রমে :১. «انّما» ইন্নামা এর সীমাবদ্ধতা।২. «هم راکعون» অবস্থা নির্দেশক বাক্য (جملة حالية), না কি সংযোজিত (معطوف বা সম্বন্ধসূচক) বাক্য?৩. রুকু শব্দের অর্থ।৪. বহুবচনমূলক শব্দরূপকে একবচনের ক্ষেত্রে প্রয়োগ।৫. «ولی» ওয়ালি শব্দের অর্থ।
বেলায়েতের আয়াতের ব্যাকরণগত দিক সম্পর্কে একটি গবেষণামূলক পোস্ট
কালামশাস্ত্রে আয়াত এবং রেওয়ায়েতসমূহের ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে ব্যাকরণগত দিক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনুরূপ ভাবে বেলায়েত ও নেতৃত্বের বিষয়টিও কালামশাস্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে পরিগণিত হয়। এই লেখনীতে বেলায়েতের আয়াত (সূরা মায়েদার ৫৫ নং আয়াত) সম্পর্কে দু’দল কালাম শাস্ত্রবিদ তাদের মতের সপক্ষে যে সকল ব্যাকরণগত যুক্তি উপস্থাপন করেছেন তার মধ্যে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এই বিষয়টি উপস্থাপন করতে গিয়ে ইসলামী বিশ্বের দু’জন প্রসিদ্ধ কালামশাস্ত্রবিদ ‘তাজরিদুল ইতিকাদ’ গ্রন্থের রচয়িতা গবেষক তুসী এবং এ গ্রন্থের ব্যাখ্যাকারক ফাজেল কুশচীর মতকে মূল ধরা হয়েছে। প্রথমেই এই আয়াত দ্বারা হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর পর পরই হযরত আলী (আ.) এর বেলায়েত ও খেলাফতকে প্রমাণ করার ক্ষেত্রে গবেষক তুসীর ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রমাণ এবং ব্যাকরণগত যুক্তি বর্ণনা করা হয়েছে। অতপর তার মত খণ্ডন করে গবেষক ফাজেল কুশচী যে যুক্তি-প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন তা উল্লেখ করে তাদের দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচনা ও পর্যালোচনা করা হয়েছে।
ভূমিকা : বেলায়েত ও নেতৃত্ব সম্পর্কিত আলোচনা কালাম শাস্ত্রের উৎপত্তির শুরু থেকেই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। শাহরেস্তানীর মতে রাসূল (সা.) এর ওফাতের পর মুসলমানদের মধ্যে সর্ব প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল তা তার স্থলাভিষিক্তি এবং পরবর্তী নেতৃত্ব নিয়েই। (শাহরেস্তানী, আল-মেলাল ওয়ান নেহাল, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-২৪।) মুসলমানরা এ বিষয়টি নিয়ে দুদলে বিভক্ত হয়। তাদের একদল বিশ্বাস করে যে, হযরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর পর হযরত আলী (আ.) কে খলিফা হিসাবে মনোনীত করেছেন। অপরদল বিশ্বাস করে তিনি কাউকেই নেতা নিযুক্ত করে যাননি।
তাদের প্রথম দল হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর পর পরই হযরত আলী (আ.) এর খেলাফতকে প্রমাণ করার জন্য বিভিন্ন আকলী (বুদ্ধিবৃত্তিক) এবং নাকলী (কোরআন ও হাদীসের) দলীল উপস্থাপন করে থাকেন। নাকলী দলীল হিসাবে তারা কোরআনের বিভিন্ন আয়াত এবং রাসূল (সা.) এর হাদীস ব্যবহার করে থাকেন।
তন্মধ্যে একটি হচ্ছে, সূরা আল-মায়েদার ৫৫ নং আয়াত যা আহলে বাইতের অনুসারীদের মধ্যে বেলায়েতের আয়াত নামে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। এই আয়াতটি হচ্ছে-
إِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَالَّذِينَ آمَنُوا الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُمْ رَاكِعُونَ
তোমাদের অভিভাবক হচ্ছেন কেবল আল্লাহ ও তার রাসূল এবং যারা ঈমান এনেছে, নামাজ কায়েম করেছে আর রুকুরত অবস্থায় যাকাত প্রদান করেছে।
আহলে বাইতের অনুসারীদের বিশ্বাস এই আয়াত অকাট্যভাবে হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর পরপরই হযরত আমিরুল মু’মেনীন (আ.) এর খেলাফতকে প্রমাণ করে।
গবেষক তুসী তার “তাজরিদুল ই’তিকাদ” গ্রন্থে নবী (সা.) এর উত্তরাধিকারী যে ঐশীভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত, তা দুই দলীল যথা নিষ্পাপতা (ইসমাত) এবং রাসূল (সা.) এর সীরাত বা কর্মনীতি দ্বারা প্রমাণ করে বলেছেন: যে সব দলীল প্রমাণ হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর পরপরই হযরত আমিরুল মু’মেনিন আলী (আ.) এর ইমামত ও খেলাফতের দিকে ইঙ্গিত করে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বেলায়েতের আয়াত। কেননা এই আয়াতে যে সব গুণাবলীর কথা উল্লেখ করা হয়েছে একমাত্র আলী (আ.) এর মধ্যেই তার সমাবেশ ঘটেছে। (তুসী, তাজরিদুল এ’তেকাদ, পৃষ্ঠা নং-২২৫)
তাজরিদুল ই’তিকাদ এর ব্যাখ্যাকারক আল্লামা কুশচী, গবেষক তুসীর বক্তব্যকে এভাবে বর্ণনা করেছেন :
১. সকল মুফাসসির এব্যাপারে একমত যে, এ আয়াতটি হযরত আলী (আ.) এর শানে অবতীর্ণ হয়েছে। এ আয়াত এমন সময় অবতীর্ণ হয়েছিল যখন হযরত আলী (আ.) রুকুরত অবস্থায় একজন অসহায় নিঃস্ব ব্যক্তিকে নিজের আংটি দান করেছিলেন।
২. «انّما» (ইন্নামা) শব্দটি মূলত আরবি ব্যাকরণশাস্ত্রে হাসর (حصر) বা সীমাবদ্ধতা নির্দেশ করতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে এবং কোরআন ও হাদীসের বর্ণনাতেও এর সপক্ষে দলীল রয়েছে।
৩. «ولي» শব্দটি কখনো সাহায্যকারী অর্থে আবার কখনো কোন বিষয়ে কর্তৃত্বকারী এবং কর্তৃত্বের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন যখন বলা হয়: স্ত্রীর বড়ভাই তার অভিভাবক, অথবা শাসক হলেন অভিভাবকহীনের অভিভাবক এবং অনুরূপভাবে রক্তের দাবিদার ও উত্তরাধিকারীরা নিহত ব্যক্তির রক্তের প্রতিশোধ গ্রহণের অধিকারপ্রাপ্ত। উল্লিখিত সকল ক্ষেত্রেই «ولي» শব্দটি (কোন কিছুর ওপর) কর্তৃত্বের অধিকারী বা অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
এই আয়াতেও ওয়ালি শব্দটি দ্বিতীয় অর্থে অর্থাৎ কর্তৃত্বের অধিকারী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এই আয়াতে হাসর (সীমাবদ্ধতা নির্দেশক অব্যয় ‘ইন্নামা’) থাকার কারণে বেলায়াত (শাসনক্ষমতা, কর্তৃত্ব) শব্দটি সাহায্যকারী অর্থে ব্যবহৃত হতে পারেনা। কেননা পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে-
وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ
অর্থাৎ সকল মুসলমান নরনারী পরস্পর পরস্পরের সাহায্যকারী। (সূরা আত-তওবাহ, আয়াত নং-৭১)।
সুতরাং সূরা মায়েদার আলোচ্য আয়াতটিতে «ولي» শব্দটি সাহায্যকারী অর্থে ব্যবহৃত হওয়ার পক্ষে কোন দলীল প্রমাণ নেই কারণ তাহলে এ (সাহায্যকারী) অর্থটি কেবল ঐসব মুসলমান যারা রুকু অবস্থায় যাকাত প্রদান করে তাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়বে।
৪. «ولي» ওয়ালি শব্দের অর্থ ইমাম বা নেতা।
৫. যেহেতু আয়াতে উল্লিখিত গুণাবলীর সমাবেশ শুধুমাত্র আলী (আ.) এর মধ্যেই ঘটেছে সেহেতু একমাত্র তিনিই ইমামত বা নেতৃত্বের যোগ্য। (কুশচী, শারহে তাজরিদুল ইতিকাদ, পৃ-৩৬৮।)
কালাম শাস্ত্রের বিভিন্ন গ্রন্থে দু’দল কালাম শাস্ত্রবিদের মধ্যে এ বিষয়ে আয়াতটির ব্যাকরণগত দিক নিয়ে বেশ বিতর্ক পরিলক্ষিত হয়। পাঁচটি ব্যাকরণগত বিষয়কে কেন্দ্র করে এই আয়াতে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা রয়েছে। এ পাঁচটি বিষয় যথাক্রমে :
১. «انّما» ইন্নামা এর সীমাবদ্ধতা।
২. «هم راکعون» অবস্থা নির্দেশক বাক্য (جملة حالية), না কি সংযোজিত (معطوف বা সম্বন্ধসূচক) বাক্য?
৩. রুকু শব্দের অর্থ।
৪. বহুবচনমূলক শব্দরূপকে একবচনের ক্ষেত্রে প্রয়োগ।
৫. «ولی» ওয়ালি শব্দের অর্থ।
মন্তব্যসমূহ