বেলায়েতের আয়াতের ব্যাকরণগত দিক সম্পর্কে একটি গবেষণামূলক বিশ্লেষণ পোস্ট((পর্ব ২))আলোচনার ইতিহাসকালাম শাস্ত্রের বিভিন্ন গ্রন্থে প্রাসঙ্গিকভাবে এই আয়াতের ব্যাকরণগত দিকটি আলোচিত হয়েছে। কিন্তু বিশেষ শিরোনামে স্বতন্ত্রভাবে কখনোই এ বিষয়টির ওপর পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ হয়নি। এ দৃষ্টিতে আলোচ্য প্রবন্ধটি এই বিষয়ক স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি আলোচনা বলে গণ্য হতে পারে কারণ এখানে গবেষক তুসীর যুক্তি উপস্থাপনের পর ফাজেল কুশচী ছাড়াও বিশিষ্ট কিছু মনীষী ও বিশেষজ্ঞের মত ও এ সংক্রান্ত তাদের প্রশ্ন ও আপত্তি উত্থাপিত হয়েছে অতপর আহলে বাইতের অনুসারী কালামশাস্ত্রবিদদের দৃষ্টিতে তার উত্তরও প্রদান করা হয়েছে। উপরন্তু নতুন কিছু উত্তরও উপস্থাপন করা হয়েছে।প্রথমে সংক্ষিপ্তাকারে পবিত্র কোরআনের আয়াতে ব্যবহৃত শব্দাবলী ও বাক্যকে গঠনিক ও ব্যাকরণগত দৃষ্টিতে বিশ্লেষণ (তারকীব) করা হয়েছে অতপর উল্লিখিত বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।বেলায়াতের আয়াতের শব্দাবলী ও বাক্যের স্বরূপ বিশ্লেষণ :«انما» ইন্নামা যুক্তশব্দটিতে বিদ্যমান «ان»ইন্না শব্দটি হুরুফে মুশাব্বাহ বেল ফেল (حروف مشبهه بالفعل বা ক্রিয়াপদের সদৃশ অব্যয়সমূহ, যা এর পরে আসা নামবোধক শব্দ বা বিশেষ্যের স্বর বা পদচিহ্নকে নাসব نصب-এ রূপান্তরিত করে।) এর অন্তর্ভুক্ত যার শেষে «ما» ‘মা’ অব্যয়টি সংযুক্ত হয়ে তাকে আমল (পরবর্তী শব্দের পদচিহ্নের উপর প্রভাব বিস্তার) করা থেকে বিরত রেখেছে। «ما» মা অব্যয়টি অতিরিক্ত এবং বাধাদানকারী যার কারণে «ان» ইন্নার আমল রহিত (বাতিল) হয়েছে। «ولی» ওয়ালি শব্দটি خبر (বিধেয়) যাকে পূর্বে এবং «الله» শব্দটি مبتدا (উদ্দেশ্য) যাকে পরে উল্লেখ করা হয়েছে। «رسول» রাসূল এবং «الذین آمنوا» যারা ইমান এনেছে «الله» শব্দটির প্রতি عطف (সংযোজিত) হয়েছে। «الذین یقیمون» অর্থাৎ যারা কায়েম করেছে বাক্যটি «الذین آمنوا» অর্থাৎ যারা ইমান এনেছে বাক্যটির বাদাল بدل» « অথবা আতফে বায়ান «عطف بیان»। «آمنوا» এবং «یقیمون» موصول (সম্বন্ধবাচক সর্বনামের) এর صله (সম্বন্ধ) স্বরূপ। «یؤتون الزکوة» বাক্যটি «یقیمون الصلوة» বাক্যটির প্রতি عطف (সংযোজিত) হয়েছে। «هم راکعون» বাক্যটি অবস্থাসূচক বাক্য এবং «یؤتون» ক্রিয়াটির মধ্যে নিহিত فاعل (কর্তা) এর حال (অবস্থা) যা কিছু সংখ্যক আলেমের দৃষ্টিতে বৈধ। (তাফতাজানী, শারহে মাকাছেদ ফি ইলমুল কালাম, ৩য় খণ্ড, পৃ-৫০২; কুশচী, শারহে তাজরীদুল ইতিকাদ, পৃ-৩৬৯।) আবার «یقیمون الصلوة» বাক্যটির প্রতিও عطف (সংযোজিত)। (নূহাশ, এরাবুল কোরআন, ১ম খণ্ড, পৃ-২৭৩; দারউইশ, এরাবুল কোরআন ও বায়ানুহু, ২য় খণ্ড, পৃ-৫০৮।)«انّما»সীমাবদ্ধতার অর্থে ব্যবহৃত হয় :পবিত্র এই আয়াতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাকরণশাস্ত্রীয় আলোচনা হচ্ছে «انّما» শব্দটির সীমাবদ্ধতার অর্থ নিয়ে। আহলে বাইতের অনুসারী আলেমগণ ‘ওয়ালি’ শব্দটি যে এই আয়াতে বন্ধু বা সাহায্যকারী হিসেবে ব্যবহৃত হয়নি তা প্রমাণ করতে حصر (সীমাবদ্ধতা) এর অর্থকে দলীল হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। কেননা এটা হতে পারেনা যে ওয়ালি শব্দটি বন্ধু বা সাহায্যকারী অর্থে শুধুমাত্র আল্লাহ, তাঁর রাসূল (সা.) এবং কিছু সংখ্যক মুসলমান যারা নামাযরত অবস্থায় যাকাত প্রদান করেছে তাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেছেন : সকল মুমিন অবশ্যই একে অন্যের সাহায্যকারী ও শুভাকাংখী। গবেষক তুসীর দলীল প্রমাণভিত্তিক বর্ণনায়ও এ দিকটিই ফুটে উঠেছে। অর্থাৎ তিনিও এই আয়াতটিকে তার মতের সপক্ষে প্রমাণ হিসেবে পেশ করার জন্য «انّما» শব্দটিকে حصر (সীমাবদ্ধ) এর অর্থে গ্রহণ করেছেন।"وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ" অর্থাৎ সকল মুসলমান নরনারী পরস্পর পরস্পরের সাহায্যকারী। (সূরা আত-তওবাহ, আয়াত নং-৭১)ফখরুদ্দীন রাযী, তাফতাজানী এবং মোল্লা আলী কুশচীর ন্যায় আহলে সুন্নাতের বিশিষ্ট আলেমগণ আলোচ্য আয়াতে ওয়ালি শব্দটির অর্থ যে বন্ধু অথবা সাহায্যকারী তা প্রমাণ করার জন্য ইন্নামা শব্দটি حصر বা সীমাবদ্ধতা নির্দেশক হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। কুশচী লিখেছেন :নিশ্চয় حصر (সীমাবদ্ধতা) শুধুমাত্র কোন বিষয়ে বিদ্যমান সংশয় বা বিবাদকে দূরীভূত করার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। আর যেহেতু এই আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার সময় খেলাফত ও নেতৃত্বের বিষয় নিয়ে কোন সংশয় বা বিবাদই ছিলনা যে حصر (সীমাবদ্ধতা) নির্দেশক শব্দ দ্বারা তার অবসান ঘটানো হবে। (তাফতাজানী, শারহে মাকাছেদ ফি ইলমিল কালাম, ৩য় খণ্ড, পৃ-৫০২; কুশচী, শারহু তাজরীদিল আকায়িদ, পৃ-৩৬৮।)ফখরুদ্দীন রাযীও তার নিজের দাবীকে প্রমাণ করার জন্য পবিত্র কোরআনের দুটি আয়াতকে দলীল হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। তিনি দাবী করেছেন যে এই দুই আয়াতে ইন্নামা সীমাবদ্ধতার অর্থে ব্যবহৃত হয়নি। তিনি তার মাফাতিহুল গাইব তাফসীরগ্রন্থে আলোচ্য আয়াতটি সম্পর্কে লিখেছেন :“ইন্নামা শব্দটি সীমাবদ্ধতার অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে তা আমরা মানিনা। তার প্রমাণ আল্লাহ তাআলার বাণী- « إِنَّمَا مَثَلُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا كَمَاءٍ أَنْزَلْنَاهُ مِنَ السَّمَاءِ » অর্থাৎ নিশ্চয় পার্থিব জীবনের উপমা সেই পানির মত যা আমি আসমান থেকে বর্ষণ করি। (সূরা ইউনুস, আয়াত নং-২৪।) নিঃসন্দেহে পার্থিব জীবনের জন্য এই উপমা ব্যতিত অন্য উপমাও রয়েছে (অর্থাৎ দুনিয়ার উদাহরণ শুধুমাত্র এই এক দৃষ্টান্তের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়)। তেমনি মহান আল্লাহ অন্যত্র বলেছেন-« إِنَّمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا لَعِبٌ وَلَهْو» অর্থাৎ পার্থিব জীবন তো কেবল খেলাধূলা ও আমোদ প্রমোদ। (সূরা মুহাম্মদ : ৩৬।) অথচ নিঃসন্দেহে পার্থিব জীবন ছাড়াও অন্য স্থানে খেলাধূলা ও আমোদ প্রমোদ হতে পারে।”সমালোচনা ও পর্যালোচনা :ফখরুদ্দীন রাযী ও কুশচী ইন্নামা শব্দটির সীমাবদ্ধতার অর্থ শর্তহীনভাবে অস্বীকার করেননি বরং তারা এ শব্দটির সীমাবদ্ধতার অর্থকে সবসময়ের জন্য মনে করেন না। তারা মনে করেন তা বিশেষ ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতার অর্থে ব্যবহৃত হয়।তবে ফখরুদ্দীন রাযীর এই বক্তব্য ঠিক নয় কারণ ইন্নামা সব সময় এবং সব ক্ষেত্রেই অপরিহার্য ভাবে সীমাবদ্ধতার অর্থ দেয়। কেননা : প্রথমত : সর্ব সম্মতভাবে «انّما» (ইন্নামা) সবসময়ই হাসরের (সীমাবদ্ধতার) অর্থে ব্যবহৃত হয়। অলংকার শাস্ত্রের সমস্ত গ্রন্থসমূহে «ادوات حصر» অর্থাৎ সীমাবদ্ধসূচক অব্যয় সমূহের অলোচনায় «انّما» কে তারই একটা প্রকার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। (সাক্কাকী, মিফতাহুল উলুম, পৃ. ১৩০; তাফতাজানী, মুখতাসারুল মাআনী, পৃ. ১৮০)। এমনকি নাহু শাস্ত্রে (আরব ব্যাকরণের একটি শাখা) “কখন مبتدا (উদ্দেশ্য) অথবা خبر (বিধেয়) কে পরে নিয়ে আসা অপরিহার্য' এবং “কখন فاعل (কর্তা) অথবা مفعول কে (কর্মবাচক পদ) পরে নিয়ে আসা অপরিহার্য” শীর্ষক আলোচনায় «محصور فیه» বা কোন কিছুর মধ্যে সীমাবদ্ধ হওয়াকে পরে আসার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে এবং ইন্নামাকে এর উদাহরণ হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে।দ্বিতীয়ত : অলংকার শাস্ত্রবিদগণ দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করেছেন যে, ইন্নামা হাসর বা সীমিতকরণের জন্য প্রণীত হয়েছে। অলংকারশাস্ত্রের কোন কোন গ্রন্থে সীমাবদ্ধসূচক অব্যয়গুলোর মধ্যকার পার্থক্যে বলা হয়েছে : “ইন্নামা শাব্দিক ক্ষেত্রে হাসর বা সীমাবদ্ধতা নির্দেশ করে।” (জুরজানী, আল ইশারাত ওয়া আত তানবিহাত ফি ইলমুল বালাগা,পৃ-৮১; হাশেমী, জাওয়াহেরুল বালাগা, পৃ. ১৫২।) অনুরূপভাবে বলা হয়েছে “কাসর” (সীমিতকরণ) ইন্নামা দ্বারা প্রকাশ করাই অধিক উপযুক্ত।ইন্নামা আতফের (সংযোজন) বিপরীতে কোন কিছুর জন্য কোন বৈশিষ্ট্যকে প্রমাণ করার সাথে সাথেই অন্যদের জন্য তা থাকার সম্ভাবনাকে বাতিল করে। এর বিপরীতে যে সমস্ত হরফে আতফ (সংযোজনসূচক অব্যয়) হাসরের অর্থ দেয় তা থেকে প্রথমে কোন কিছুর কোন একটি বৈশিষ্ট্য থাকার বিষয়টি বোঝা যায় পরে অন্যদের যে তা নেই তা স্পষ্ট হয় অথবা প্রথমে অন্যদের থেকে ঐ বৈশিষ্ট্য নাকচ করে পরে তার জন্য তা প্রমাণ করে। (তাফতাজানী, আল মুতাওয়াল, পৃ. ৪১; জুরজানী, আল ইশারাত ওয়াত তানবিহাত ফি ইলমিল বালাগা, পৃ. ৮১; হাশেমী, জাওয়াহেরুল বালাগা, পৃ. ১৫২।)ইয়া আমিরুল মোমেনীন আলী ইবনে আবী তালিব আঃ মাদাদচলবে
বেলায়েতের আয়াতের ব্যাকরণগত দিক সম্পর্কে একটি গবেষণামূলক বিশ্লেষণ পোস্ট
আলোচনার ইতিহাস
কালাম শাস্ত্রের বিভিন্ন গ্রন্থে প্রাসঙ্গিকভাবে এই আয়াতের ব্যাকরণগত দিকটি আলোচিত হয়েছে। কিন্তু বিশেষ শিরোনামে স্বতন্ত্রভাবে কখনোই এ বিষয়টির ওপর পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ হয়নি। এ দৃষ্টিতে আলোচ্য প্রবন্ধটি এই বিষয়ক স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি আলোচনা বলে গণ্য হতে পারে কারণ এখানে গবেষক তুসীর যুক্তি উপস্থাপনের পর ফাজেল কুশচী ছাড়াও বিশিষ্ট কিছু মনীষী ও বিশেষজ্ঞের মত ও এ সংক্রান্ত তাদের প্রশ্ন ও আপত্তি উত্থাপিত হয়েছে অতপর আহলে বাইতের অনুসারী কালামশাস্ত্রবিদদের দৃষ্টিতে তার উত্তরও প্রদান করা হয়েছে। উপরন্তু নতুন কিছু উত্তরও উপস্থাপন করা হয়েছে।
প্রথমে সংক্ষিপ্তাকারে পবিত্র কোরআনের আয়াতে ব্যবহৃত শব্দাবলী ও বাক্যকে গঠনিক ও ব্যাকরণগত দৃষ্টিতে বিশ্লেষণ (তারকীব) করা হয়েছে অতপর উল্লিখিত বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
বেলায়াতের আয়াতের শব্দাবলী ও বাক্যের স্বরূপ বিশ্লেষণ :
«انما» ইন্নামা যুক্তশব্দটিতে বিদ্যমান «ان»ইন্না শব্দটি হুরুফে মুশাব্বাহ বেল ফেল (حروف مشبهه بالفعل বা ক্রিয়াপদের সদৃশ অব্যয়সমূহ, যা এর পরে আসা নামবোধক শব্দ বা বিশেষ্যের স্বর বা পদচিহ্নকে নাসব نصب-এ রূপান্তরিত করে।) এর অন্তর্ভুক্ত যার শেষে «ما» ‘মা’ অব্যয়টি সংযুক্ত হয়ে তাকে আমল (পরবর্তী শব্দের পদচিহ্নের উপর প্রভাব বিস্তার) করা থেকে বিরত রেখেছে। «ما» মা অব্যয়টি অতিরিক্ত এবং বাধাদানকারী যার কারণে «ان» ইন্নার আমল রহিত (বাতিল) হয়েছে। «ولی» ওয়ালি শব্দটি خبر (বিধেয়) যাকে পূর্বে এবং «الله» শব্দটি مبتدا (উদ্দেশ্য) যাকে পরে উল্লেখ করা হয়েছে। «رسول» রাসূল এবং «الذین آمنوا» যারা ইমান এনেছে «الله» শব্দটির প্রতি عطف (সংযোজিত) হয়েছে। «الذین یقیمون» অর্থাৎ যারা কায়েম করেছে বাক্যটি «الذین آمنوا» অর্থাৎ যারা ইমান এনেছে বাক্যটির বাদাল بدل» « অথবা আতফে বায়ান «عطف بیان»। «آمنوا» এবং «یقیمون» موصول (সম্বন্ধবাচক সর্বনামের) এর صله (সম্বন্ধ) স্বরূপ। «یؤتون الزکوة» বাক্যটি «یقیمون الصلوة» বাক্যটির প্রতি عطف (সংযোজিত) হয়েছে। «هم راکعون» বাক্যটি অবস্থাসূচক বাক্য এবং «یؤتون» ক্রিয়াটির মধ্যে নিহিত فاعل (কর্তা) এর حال (অবস্থা) যা কিছু সংখ্যক আলেমের দৃষ্টিতে বৈধ। (তাফতাজানী, শারহে মাকাছেদ ফি ইলমুল কালাম, ৩য় খণ্ড, পৃ-৫০২; কুশচী, শারহে তাজরীদুল ইতিকাদ, পৃ-৩৬৯।) আবার «یقیمون الصلوة» বাক্যটির প্রতিও عطف (সংযোজিত)। (নূহাশ, এরাবুল কোরআন, ১ম খণ্ড, পৃ-২৭৩; দারউইশ, এরাবুল কোরআন ও বায়ানুহু, ২য় খণ্ড, পৃ-৫০৮।)
«انّما»সীমাবদ্ধতার অর্থে ব্যবহৃত হয় :
পবিত্র এই আয়াতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাকরণশাস্ত্রীয় আলোচনা হচ্ছে «انّما» শব্দটির সীমাবদ্ধতার অর্থ নিয়ে। আহলে বাইতের অনুসারী আলেমগণ ‘ওয়ালি’ শব্দটি যে এই আয়াতে বন্ধু বা সাহায্যকারী হিসেবে ব্যবহৃত হয়নি তা প্রমাণ করতে حصر (সীমাবদ্ধতা) এর অর্থকে দলীল হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। কেননা এটা হতে পারেনা যে ওয়ালি শব্দটি বন্ধু বা সাহায্যকারী অর্থে শুধুমাত্র আল্লাহ, তাঁর রাসূল (সা.) এবং কিছু সংখ্যক মুসলমান যারা নামাযরত অবস্থায় যাকাত প্রদান করেছে তাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেছেন : সকল মুমিন অবশ্যই একে অন্যের সাহায্যকারী ও শুভাকাংখী। গবেষক তুসীর দলীল প্রমাণভিত্তিক বর্ণনায়ও এ দিকটিই ফুটে উঠেছে। অর্থাৎ তিনিও এই আয়াতটিকে তার মতের সপক্ষে প্রমাণ হিসেবে পেশ করার জন্য «انّما» শব্দটিকে حصر (সীমাবদ্ধ) এর অর্থে গ্রহণ করেছেন।
"وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ" অর্থাৎ সকল মুসলমান নরনারী পরস্পর পরস্পরের সাহায্যকারী। (সূরা আত-তওবাহ, আয়াত নং-৭১)
ফখরুদ্দীন রাযী, তাফতাজানী এবং মোল্লা আলী কুশচীর ন্যায় আহলে সুন্নাতের বিশিষ্ট আলেমগণ আলোচ্য আয়াতে ওয়ালি শব্দটির অর্থ যে বন্ধু অথবা সাহায্যকারী তা প্রমাণ করার জন্য ইন্নামা শব্দটি حصر বা সীমাবদ্ধতা নির্দেশক হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। কুশচী লিখেছেন :
নিশ্চয় حصر (সীমাবদ্ধতা) শুধুমাত্র কোন বিষয়ে বিদ্যমান সংশয় বা বিবাদকে দূরীভূত করার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। আর যেহেতু এই আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার সময় খেলাফত ও নেতৃত্বের বিষয় নিয়ে কোন সংশয় বা বিবাদই ছিলনা যে حصر (সীমাবদ্ধতা) নির্দেশক শব্দ দ্বারা তার অবসান ঘটানো হবে। (তাফতাজানী, শারহে মাকাছেদ ফি ইলমিল কালাম, ৩য় খণ্ড, পৃ-৫০২; কুশচী, শারহু তাজরীদিল আকায়িদ, পৃ-৩৬৮।)
ফখরুদ্দীন রাযীও তার নিজের দাবীকে প্রমাণ করার জন্য পবিত্র কোরআনের দুটি আয়াতকে দলীল হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। তিনি দাবী করেছেন যে এই দুই আয়াতে ইন্নামা সীমাবদ্ধতার অর্থে ব্যবহৃত হয়নি। তিনি তার মাফাতিহুল গাইব তাফসীরগ্রন্থে আলোচ্য আয়াতটি সম্পর্কে লিখেছেন :
“ইন্নামা শব্দটি সীমাবদ্ধতার অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে তা আমরা মানিনা। তার প্রমাণ আল্লাহ তাআলার বাণী-
« إِنَّمَا مَثَلُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا كَمَاءٍ أَنْزَلْنَاهُ مِنَ السَّمَاءِ » অর্থাৎ নিশ্চয় পার্থিব জীবনের উপমা সেই পানির মত যা আমি আসমান থেকে বর্ষণ করি। (সূরা ইউনুস, আয়াত নং-২৪।) নিঃসন্দেহে পার্থিব জীবনের জন্য এই উপমা ব্যতিত অন্য উপমাও রয়েছে (অর্থাৎ দুনিয়ার উদাহরণ শুধুমাত্র এই এক দৃষ্টান্তের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়)। তেমনি মহান আল্লাহ অন্যত্র বলেছেন-« إِنَّمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا لَعِبٌ وَلَهْو» অর্থাৎ পার্থিব জীবন তো কেবল খেলাধূলা ও আমোদ প্রমোদ। (সূরা মুহাম্মদ : ৩৬।) অথচ নিঃসন্দেহে পার্থিব জীবন ছাড়াও অন্য স্থানে খেলাধূলা ও আমোদ প্রমোদ হতে পারে।”
সমালোচনা ও পর্যালোচনা :
ফখরুদ্দীন রাযী ও কুশচী ইন্নামা শব্দটির সীমাবদ্ধতার অর্থ শর্তহীনভাবে অস্বীকার করেননি বরং তারা এ শব্দটির সীমাবদ্ধতার অর্থকে সবসময়ের জন্য মনে করেন না। তারা মনে করেন তা বিশেষ ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতার অর্থে ব্যবহৃত হয়।
তবে ফখরুদ্দীন রাযীর এই বক্তব্য ঠিক নয় কারণ ইন্নামা সব সময় এবং সব ক্ষেত্রেই অপরিহার্য ভাবে সীমাবদ্ধতার অর্থ দেয়। কেননা :
প্রথমত : সর্ব সম্মতভাবে «انّما» (ইন্নামা) সবসময়ই হাসরের (সীমাবদ্ধতার) অর্থে ব্যবহৃত হয়। অলংকার শাস্ত্রের সমস্ত গ্রন্থসমূহে «ادوات حصر» অর্থাৎ সীমাবদ্ধসূচক অব্যয় সমূহের অলোচনায় «انّما» কে তারই একটা প্রকার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। (সাক্কাকী, মিফতাহুল উলুম, পৃ. ১৩০; তাফতাজানী, মুখতাসারুল মাআনী, পৃ. ১৮০)। এমনকি নাহু শাস্ত্রে (আরব ব্যাকরণের একটি শাখা) “কখন مبتدا (উদ্দেশ্য) অথবা خبر (বিধেয়) কে পরে নিয়ে আসা অপরিহার্য' এবং “কখন فاعل (কর্তা) অথবা مفعول কে (কর্মবাচক পদ) পরে নিয়ে আসা অপরিহার্য” শীর্ষক আলোচনায় «محصور فیه» বা কোন কিছুর মধ্যে সীমাবদ্ধ হওয়াকে পরে আসার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে এবং ইন্নামাকে এর উদাহরণ হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে।
দ্বিতীয়ত : অলংকার শাস্ত্রবিদগণ দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করেছেন যে, ইন্নামা হাসর বা সীমিতকরণের জন্য প্রণীত হয়েছে। অলংকারশাস্ত্রের কোন কোন গ্রন্থে সীমাবদ্ধসূচক অব্যয়গুলোর মধ্যকার পার্থক্যে বলা হয়েছে : “ইন্নামা শাব্দিক ক্ষেত্রে হাসর বা সীমাবদ্ধতা নির্দেশ করে।” (জুরজানী, আল ইশারাত ওয়া আত তানবিহাত ফি ইলমুল বালাগা,পৃ-৮১; হাশেমী, জাওয়াহেরুল বালাগা, পৃ. ১৫২।) অনুরূপভাবে বলা হয়েছে “কাসর” (সীমিতকরণ) ইন্নামা দ্বারা প্রকাশ করাই অধিক উপযুক্ত।
ইন্নামা আতফের (সংযোজন) বিপরীতে কোন কিছুর জন্য কোন বৈশিষ্ট্যকে প্রমাণ করার সাথে সাথেই অন্যদের জন্য তা থাকার সম্ভাবনাকে বাতিল করে। এর বিপরীতে যে সমস্ত হরফে আতফ (সংযোজনসূচক অব্যয়) হাসরের অর্থ দেয় তা থেকে প্রথমে কোন কিছুর কোন একটি বৈশিষ্ট্য থাকার বিষয়টি বোঝা যায় পরে অন্যদের যে তা নেই তা স্পষ্ট হয় অথবা প্রথমে অন্যদের থেকে ঐ বৈশিষ্ট্য নাকচ করে পরে তার জন্য তা প্রমাণ করে। (তাফতাজানী, আল মুতাওয়াল, পৃ. ৪১; জুরজানী, আল ইশারাত ওয়াত তানবিহাত ফি ইলমিল বালাগা, পৃ. ৮১; হাশেমী, জাওয়াহেরুল বালাগা, পৃ. ১৫২।)
ইয়া আমিরুল মোমেনীন আলী ইবনে আবী তালিব আঃ মাদাদ
চলবে
মন্তব্যসমূহ