বেলায়েতের আয়াতের ব্যাকরণগত দিক সম্পর্কে একটি গবেষণামূলক বিশ্লেষণমূলক পোস্টপর্ব (((৩)))অনুরূপভাবে বলা হয়েছে “কাসর” (সীমিতকরণ) ইন্নামা দ্বারা প্রকাশ করাই অধিক উপযুক্ত।ইন্নামা আতফের (সংযোজন) বিপরীতে কোন কিছুর জন্য কোন বৈশিষ্ট্যকে প্রমাণ করার সাথে সাথেই অন্যদের জন্য তা থাকার সম্ভাবনাকে বাতিল করে। এর বিপরীতে যে সমস্ত হরফে আতফ (সংযোজনসূচক অব্যয়) হাসরের অর্থ দেয় তা থেকে প্রথমে কোন কিছুর কোন একটি বৈশিষ্ট্য থাকার বিষয়টি বোঝা যায় পরে অন্যদের যে তা নেই তা স্পষ্ট হয় অথবা প্রথমে অন্যদের থেকে ঐ বৈশিষ্ট্য নাকচ করে পরে তার জন্য তা প্রমাণ করে। (তাফতাজানী, আল মুতাওয়াল, পৃ. ৪১; জুরজানী, আল ইশারাত ওয়াত তানবিহাত ফি ইলমিল বালাগা, পৃ. ৮১; হাশেমী, জাওয়াহেরুল বালাগা, পৃ. ১৫২।)পরিশেষে আমরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে, “ইন্নামা”কে হাসর নির্দেশ করার জন্যই প্রণয়ন করা হয়েছে, এমনকি অন্যান্য সীমাবদ্ধতা নির্দেশের ক্ষেত্রে তা অন্যান্য সীমাবদ্ধতাসূচক অব্যয়গুলোর থেকেও শক্তিশালী। এই কারণে কোন কোন বাক্যে ইন্নামা “সীমাবদ্ধতা” অর্থ দান করে না- এ দাবি আরবি ব্যাকরণের রীতিবিরুদ্ধ। আর তাই কোন ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা অর্থ না দিলে তা এর প্রকৃত «حقیقی» অর্থের পরিপন্থী বিধায় এ ধরনের বাক্যের সাথে অবশ্যই সমর্থক কোন দলীল «قرینه» ও প্রমাণ থাকা প্রয়োজন। আর যখন তা না থাকবে তখন প্রকৃত অর্থেই তা ব্যবহৃত হয়েছে ধরতে হবে, রূপক অর্থে গ্রহণের কোন সুযোগ নেই।সুতরাং ফখরুদ্দীন রাযীর যুক্তি সঠিক নয় তিনি ভ্রমাত্মক যুক্তি প্রদর্শন করেছেন। কেননা হাসর দুই প্রকার, অথচ তিনি মনে করেছেন এক প্রকার।মা’আনী ও বায়ান (অলংকার শাস্ত্রের দুটি শাখা) শাস্ত্রবিদগণ দ্ব্যর্থহীন ভাবে ঘোষণা করেছেন যে, হাসর দুই প্রকার। এক. হাসরে হাক্বিকী (প্রকৃত হাসর)। দুই. হাসরে গায়রে হাক্বিকী (অপ্রকৃত হাস)। (তাফতাজানী, শারহে আল-মুখতাসার, পৃ. ১৭৩)হাসরে হাক্বীকি সকল বাস্তব দৃষ্টান্তকে অন্তর্ভুক্ত করে বলে একটি সর্বজনীন বিষয় কিন্তু হাসরে গায়রে হাক্বীকি আপেক্ষিক এবং তা কোন বিশেষ ব্যক্তি বা গোষ্ঠির মধ্যে সীমাবদ্ধতা নির্দেশে ব্যবহৃত হয়। যেমন যখন কোন ব্যক্তি ধারণা করছে, আমরও যায়েদের সাথে এসেছে তখন তাকে যদি বলা হয় «انّما جاء زید» এর অর্থ দাঁড়াবে শুধু যায়েদ এসেছে তার সাথে আমর আসেনি কিন্তু তার অর্থ এটা নয় যে, যায়েদ ছাড়া অন্য কেউই আসেনি। অতএব এরূপ ক্ষেত্রে কেবল আমর যে আসেনি এটা নিশ্চিত করার জন্য انّما দ্বারা একদিকে যাইদের আসাকে সমর্থন করা হয়েছে অপর দিকে আমরের আগমনকে নাকচ করা হয়েছে।উল্লিখিত দুটি আয়াতে কাসরে গায়রে হাক্বীকি অথবা ইবনে হিশামের ভাষায় কাসরে মোকাইয়্যাদ (ইবনে হিশাম আনসারী, মুগনি আল লাবিব আন কুতুবিল আ’আরিব, ১ম খণ্ড, পৃ. ৬২) ব্যবহৃত হয়েছে। এমন নয় যে তাতে কোন হাসরই ব্যবহৃত হয়নি।«انّما الحیاة الدنیا لعب و لهو» অর্থাৎ পার্থিব জীবন তো কেবল খেলাধূলা ও আমোদ প্রমোদ। একই বিষয় বস্তু সম্পর্কিত আয়াত পবিত্র কোরআনে «ما النافیة» অর্থাৎ না বোধক ‘মা’ এবং “ইল্লা” যা حروف استثناء (বা ব্যতিক্রম সূচক অব্যয়) সহযোগে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ বলেছেন : «و ما الحیاة الدنیا الا لعب و لهو» পার্থিব জীবন তো কেবল খেলাধুলা ও আমোদ প্রমোদ। (সূরা আনআম, আয়াত-৩২) ফখরুদ্দীন রাযি এখানে হাসরকে অস্বীকার করতে পারেননা এমনকি এ আয়াত দ্বারা তার যুক্তিও খণ্ডন করা হয়েছে। কেননা না বোধক অব্যয় «لا و ما» যখনই ইস্তিসনা অর্থাৎ ব্যতিক্রমসূচক কোন অব্যয়ের সাথে আসে তখন স্পষ্টতই তা সীমাবদ্ধতার অর্থ দেয়।অনুরূপভাবে ফখরুদ্দীন রাযি সূরা আনআমের পবিত্র এই আয়াতে হাসরের বা সীমাবদ্ধতার অর্থকে সঠিকভাবে করেননি। কেননা উল্লিখিত আয়াতটিতে «محصور فیه» (অর্থাৎ যার মধ্যে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে) হল لعب و لهو । ফখরুদ্দীন রাযি যে অর্থ করেছেন তার দিকে লক্ষ্য করলে দেখতে পাই যে, তিনি «حیاة الدنیا» পার্থিব জীবনকে «محصور فیه» ধরেছেন। কিন্তু সমস্ত অলংকার শাস্ত্রবিদগণ বলেছেন “ইন্নামা” এর মাহসূর ফি সবসময় বাক্যের শেষে আসে। (তাফতাজানী, আল মুতাওয়াল, পৃ. ৪১; জুরজানী, আল ইশারাত ওয়াত তানবিহাত ফি ইলমিল বালাগা, পৃ. ৮১; হাশেমী, জাওয়াহিরুল বালাগা, পৃ. ১৫২) অতএব এ আয়াতের সঠিক অর্থ হচ্ছে- দুনিয়া শুধু খেলাধুলা ও আমোদ ফুর্তির। আবু হাইয়্যানও ফখরুদ্দীন রাযির ন্যায় যামাখশারীর প্রতি আপত্তি জানিয়েছেন। قُلْ إِنَّمَا يُوحَى إِلَيَّ أَنَّمَا إِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ‘বলুন আমাকে তো এ আদেশই দেয়া হয়েছে, তোমাদের উপাস্যই একমাত্র উপাস্য’ (সূরা আম্বিয়া : ১০৮)এ আয়াতের ব্যাপারে যামাখশারী বলেছেন: «أنما» (আন্নামা)«إنما» (ইন্নামা)র মতই হাসরের অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এই আয়াতে আন্নামা গুণিতের «موصوف» জন্য সিফাত বা গুণকে সীমাবদ্ধ করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে এবং ইন্নামা সিফাতের জন্য মাউসূফ বা গুণিতকে সীমাবদ্ধ করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। (যামাখশারী, আল কাশিফ আন হাক্বায়িকি গাওয়ামিজিত তানযিল, পৃ. ১৩৯)। আবু হাইয়্যান, যামাখশারীর এই বক্তব্যকে প্রত্যাখান করে বলেছেন- আন্নামাও ইন্নামার ন্যায় হাসরের প্রতি ইঙ্গিত করে এটা শুধু যামাখশারী বলেছেন যা অন্য কেউ বলেননি।আবু হাইয়্যান আরো বলেছেন: যদি এই আয়াতে হাসর থেকে থাকে, তাহলে অর্থ হবে যে, তাওহীদ (আল্লাহর একমাত্র উপাস্য হওয়ার বিষয়) ছাড়া নবী (সা.) এর নিকট অন্য কোন বিষয়ে ওহী আসেনি অথচ নবী (সা.) এর নিকট তাওহীদ ছাড়া অন্য বিষয়েও ওহী এসেছে।ইবনে হিশাম আনসারী যামাখশারীর পক্ষ অবলম্বন করে আবু হাইয়্যান এর যুক্তিকে প্রত্যাখ্যান করে লিখেছেন : আবু হাইয়্যানের এই বক্তব্য ঠিক নয়, কেননা এই আয়াতে “হাসরে মোকাইয়্যাদ” রয়েছে এবং আয়াতের অর্থ হবে : প্রভুত্ব ও রুবুবিয়্যাতের ব্যাপারে তাওহীদ (আল্লাহর একত্ব) ছাড়া আমার প্রতি কোন ওহী নাযিল হয়নি। এমন কাসরকেকে কাসরে ক্বালব বলা হয়। কেননা শ্রোতার আস্থা এবং বিশ্বাসকে পরিবর্তন করে (কারণ মুশরিকরা ধারণা করত মানুষের ওপর তাদের উপাস্য মুর্তিগুলোরও প্রভুত্ব রয়েছে, এ আয়াতে তাদের এ বিশ্বাসকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে)। (ইবনে হিশাম আনসারী, মুগনি আল লাবিব আন কুতুবিল আ’আরিব, ১ম খণ্ড, পৃ-৬২)।ইবনে হিশাম এমন একটি খণ্ডনমূলক উত্তরও দিয়েছেন যা স্পষ্টভাবে আবু হাইয়্যানের যুক্তিকে ভুল প্রমাণ করে। তিনি পবিত্র কোরআনের একটি আয়াতের উল্লেখ করেছেন যাতে না বাচক ‘মা’ এবং ‘ইল্লা’ ব্যবহৃত হওয়া সত্ত্বেও সার্বিকভাবে সীমাবদ্ধতা নির্দেশ করে না। তিনি বলেছেন:« وَمَا مُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُولٌ »অর্থাৎ মুহাম্মদ রাসূল ছাড়া কিছুই নয়। (সূরা আলে ইমরান : ১৪৪)এই আয়াতে না বাচক ‘মা’ «ما النافیة» এবং ‘ইল্লা’ নিঃসন্দেহে হাসরের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। অথচ আমরা জানি যে মহানবীর (সা.) সিফাত শুধুমাত্র রেসালাতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এতদসত্বেও হাসর ব্যবহার করা হয়েছে। (ইবনে হিশাম, প্রাগুক্ত) সুতরাং এখানে হাসরে মোকাইয়্যাদ বা আপেক্ষিক সীমাবদ্ধতা নির্দেশিত হয়েছে। তেমনি সুরা আহযাবের ৪০নং আয়াতেও «ما النافیة» এবং لکن আপেক্ষিক সীমাবদ্ধতা নির্দেশ করছে অর্থাৎ হযরত মুহাম্মদ (সা.) তোমাদের মধ্যকার কোন পুরুষের পিতা নন, বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং সর্বশেষ নবী।যেমনটি পরিলক্ষিত হয় যে, যামাখশারীর প্রতি আবু হাইয়্যানের আপত্তি কোনভাবেই ধোপে টেকে না।তাফতাজানী এবং কুশচীর বক্তব্যও সঠিক নয়। কেননা হাসর সব সময় বিদ্যমান কোন বিষয় ও বাস্তবে অস্তিত্বমান কিছুকে প্রত্যাখ্যান করতে ব্যবহৃত হয়না। বরং কখনও কখনও ভবিষ্যতে দ্বিধা-সংকোচ বা বিবাদের সৃষ্টি করতে পারে এমন সম্ভাবনাকে প্রতিরোধ করার জন্য ব্যবহার করা হয়; অর্থাৎ যদি কোন ব্যক্তি তার বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে ভবিষ্যতে দ্বিধা-সংকোচ বা বিবাদ সৃষ্টির আশংকা করে, তবে এরূপ ক্ষেত্রেও সে হাসর ব্যবহার করতে পারে। এটা অন্যভাবেও বলা যায় যে, হাসর কখনও সন্দেহকে দূরীভূত করার জন্য আবার কখনও তাকে প্রতিরোধ করার জন্য ব্যবহার করা হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে মা’আনী ও বায়ান শাস্ত্রবিদগণ মত দিয়েছেন যে, হাসর ব্যবহারের জন্য সন্দেহের অবকাশ ও সম্ভাবনা থাকাই যথেষ্ট, বাস্তবে সন্দেহের অস্তিত্ব থাকতে হবে এমন কথা নেই।বেলায়াত সম্পর্কিত আয়াতে সম্ভাব্য দ্বিধা-সংকোচ বা সন্দেহ প্রতিরোধ করার জন্য হাসর ব্যবহৃত হয়েছে। কারণ আল্লাহ তাআলা ভালভাবেই জানতেন যে ভবিষ্যতে খেলাফত নিয়ে সংশয় ও দ্বিধার সৃষ্টি হবে তাই এই আয়াতে হাসর ব্যবহার করেছেন।সুতরাং এই বিষয়ে কুশচীও ভুলের শিকার হয়েছেন কারণ তিনি মনে করেরেছন যে, হাসরকে কেবল বিদ্যমান দ্বিধা, সন্দেহ, ইচ্ছাকৃত উপেক্ষা ও উদাসীনতা দূরীভূত করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় অর্থাৎ তিনি হাসরকে, হাসরে রাফয়ি «رفعی» বা প্রতিহতকারী অর্থের মধ্যে সীমাবদ্ধ করেছেন।এই ভ্রান্তধারণার আরেকটি জবাব হল যে, বালাগাত শাস্ত্রবিদগণ “ইন্নামা” এবং অন্যান্য সীমাবদ্ধসূচক অব্যয়গুলির মধ্য পার্থক্য করেছেন। তারা বলেছেন “ইন্নামা” ঐ সকল ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় যেখানে শ্রোতা কোন বিষয়ের আবশ্যকতা সম্পর্কে অজ্ঞ নয় বা অস্বীকারকারীও নয় বরং তাকে সচেতন এবং স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য ব্যবহার করা হয় যেন শ্রোতা তার গুরুত্ব সম্পর্কে অবহিত হয় ও তার প্রতি নিবেদিত থাকে। (জুরজানী, আল-ইশারাত ওয়াত তানবিহাত ফি ইলমিল বালাগা : পৃ. ৮২) এই বর্ণনা অনুযায়ী বলা যেতে পারে যে, এই আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার সময় সকল মুসলমান জানতেন যে “ওয়ালি” পদটি আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং হযরত আলী (আ.) এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তার পরেও আল্লাহ তাআলা মুসলমানদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য এই আয়াতে “ইন্নামা” ব্যবহার করেছেন যেন মুসলমানেরা তাদের জ্ঞাত এই বিষয়টির আবশ্যক দাবিগুলো পূরণ করে।তৃতীয় : আহলে সুন্নাতের কিছু কিছু আলেম, যেমন- যামাখশারী (যামাখশারী, আল কাশশাফ আন হাকায়েক ওয়া গাওয়ামেজুত তানযিল, ১ম খণ্ড, পৃ. ৬৪৮) বলেছেন যে “ইন্নামা” এই আয়াতে সীমাবদ্ধতার অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে ।«و هم راکعون» বাক্যটির এ’রাব «اعراب» বা পদচিহ্ন :আলেমদের মধ্যে আরেকটি বাকরণগত মতবিরোধ হচ্ছে «و هم راکعون» বাক্যটির এ’রাব নিয়ে। তাফতাজানী এবং কুশচী এই বাক্যটির এ’রাব সম্পর্কে বলেছেন :আয়াতে উল্লিখিত গুণাবলী হযরত আলী (আ.) এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকার অর্থ হচ্ছে «و هم راکعون» (হুম রাকেউন) বাক্যটি «یؤتون» ক্রিয়াটির মধ্যে নিহিত ضمیر (সর্বনাম) টির حال (অবস্থাসূচক বাক্য) যদিও এই তারকিব ওয়াজিব নয়। এটি তার পূর্ববর্তী বাক্যের সাথে عطف (সংযোজিত)ও হতে পারে, এই অর্থে যে মুসলমানরাও তাদের নামাজে রুকু করে অর্থাৎ তাদের নামাজ ইয়াহুদিদের মত রুকু বিহীন নয়।তাফতাজানী এবং কুশচীর এই বক্তব্য সঠিক নয়। নিম্নোক্ত কারণে এই বাক্যটি অবস্থাসূচক বাক্য এবং «واو» টি অবস্থাসূচক অব্যয়।আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুমচলবে______________
বেলায়েতের আয়াতের ব্যাকরণগত দিক সম্পর্কে
একটি গবেষণামূলক বিশ্লেষণমূলক পোস্ট
পর্ব (((৩)))
অনুরূপভাবে বলা হয়েছে “কাসর” (সীমিতকরণ) ইন্নামা দ্বারা প্রকাশ করাই অধিক উপযুক্ত।
ইন্নামা আতফের (সংযোজন) বিপরীতে কোন কিছুর জন্য কোন বৈশিষ্ট্যকে প্রমাণ করার সাথে সাথেই অন্যদের জন্য তা থাকার সম্ভাবনাকে বাতিল করে। এর বিপরীতে যে সমস্ত হরফে আতফ (সংযোজনসূচক অব্যয়) হাসরের অর্থ দেয় তা থেকে প্রথমে কোন কিছুর কোন একটি বৈশিষ্ট্য থাকার বিষয়টি বোঝা যায় পরে অন্যদের যে তা নেই তা স্পষ্ট হয় অথবা প্রথমে অন্যদের থেকে ঐ বৈশিষ্ট্য নাকচ করে পরে তার জন্য তা প্রমাণ করে। (তাফতাজানী, আল মুতাওয়াল, পৃ. ৪১; জুরজানী, আল ইশারাত ওয়াত তানবিহাত ফি ইলমিল বালাগা, পৃ. ৮১; হাশেমী, জাওয়াহেরুল বালাগা, পৃ. ১৫২।)
পরিশেষে আমরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে, “ইন্নামা”কে হাসর নির্দেশ করার জন্যই প্রণয়ন করা হয়েছে, এমনকি অন্যান্য সীমাবদ্ধতা নির্দেশের ক্ষেত্রে তা অন্যান্য সীমাবদ্ধতাসূচক অব্যয়গুলোর থেকেও শক্তিশালী। এই কারণে কোন কোন বাক্যে ইন্নামা “সীমাবদ্ধতা” অর্থ দান করে না- এ দাবি আরবি ব্যাকরণের রীতিবিরুদ্ধ। আর তাই কোন ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা অর্থ না দিলে তা এর প্রকৃত «حقیقی» অর্থের পরিপন্থী বিধায় এ ধরনের বাক্যের সাথে অবশ্যই সমর্থক কোন দলীল «قرینه» ও প্রমাণ থাকা প্রয়োজন। আর যখন তা না থাকবে তখন প্রকৃত অর্থেই তা ব্যবহৃত হয়েছে ধরতে হবে, রূপক অর্থে গ্রহণের কোন সুযোগ নেই।
সুতরাং ফখরুদ্দীন রাযীর যুক্তি সঠিক নয় তিনি ভ্রমাত্মক যুক্তি প্রদর্শন করেছেন। কেননা হাসর দুই প্রকার, অথচ তিনি মনে করেছেন এক প্রকার।
মা’আনী ও বায়ান (অলংকার শাস্ত্রের দুটি শাখা) শাস্ত্রবিদগণ দ্ব্যর্থহীন ভাবে ঘোষণা করেছেন যে, হাসর দুই প্রকার। এক. হাসরে হাক্বিকী (প্রকৃত হাসর)। দুই. হাসরে গায়রে হাক্বিকী (অপ্রকৃত হাস)। (তাফতাজানী, শারহে আল-মুখতাসার, পৃ. ১৭৩)
হাসরে হাক্বীকি সকল বাস্তব দৃষ্টান্তকে অন্তর্ভুক্ত করে বলে একটি সর্বজনীন বিষয় কিন্তু হাসরে গায়রে হাক্বীকি আপেক্ষিক এবং তা কোন বিশেষ ব্যক্তি বা গোষ্ঠির মধ্যে সীমাবদ্ধতা নির্দেশে ব্যবহৃত হয়। যেমন যখন কোন ব্যক্তি ধারণা করছে, আমরও যায়েদের সাথে এসেছে তখন তাকে যদি বলা হয় «انّما جاء زید» এর অর্থ দাঁড়াবে শুধু যায়েদ এসেছে তার সাথে আমর আসেনি কিন্তু তার অর্থ এটা নয় যে, যায়েদ ছাড়া অন্য কেউই আসেনি। অতএব এরূপ ক্ষেত্রে কেবল আমর যে আসেনি এটা নিশ্চিত করার জন্য انّما দ্বারা একদিকে যাইদের আসাকে সমর্থন করা হয়েছে অপর দিকে আমরের আগমনকে নাকচ করা হয়েছে।
উল্লিখিত দুটি আয়াতে কাসরে গায়রে হাক্বীকি অথবা ইবনে হিশামের ভাষায় কাসরে মোকাইয়্যাদ (ইবনে হিশাম আনসারী, মুগনি আল লাবিব আন কুতুবিল আ’আরিব, ১ম খণ্ড, পৃ. ৬২) ব্যবহৃত হয়েছে। এমন নয় যে তাতে কোন হাসরই ব্যবহৃত হয়নি।
«انّما الحیاة الدنیا لعب و لهو» অর্থাৎ পার্থিব জীবন তো কেবল খেলাধূলা ও আমোদ প্রমোদ। একই বিষয় বস্তু সম্পর্কিত আয়াত পবিত্র কোরআনে «ما النافیة» অর্থাৎ না বোধক ‘মা’ এবং “ইল্লা” যা حروف استثناء (বা ব্যতিক্রম সূচক অব্যয়) সহযোগে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ বলেছেন :
«و ما الحیاة الدنیا الا لعب و لهو» পার্থিব জীবন তো কেবল খেলাধুলা ও আমোদ প্রমোদ। (সূরা আনআম, আয়াত-৩২) ফখরুদ্দীন রাযি এখানে হাসরকে অস্বীকার করতে পারেননা এমনকি এ আয়াত দ্বারা তার যুক্তিও খণ্ডন করা হয়েছে। কেননা না বোধক অব্যয় «لا و ما» যখনই ইস্তিসনা অর্থাৎ ব্যতিক্রমসূচক কোন অব্যয়ের সাথে আসে তখন স্পষ্টতই তা সীমাবদ্ধতার অর্থ দেয়।
অনুরূপভাবে ফখরুদ্দীন রাযি সূরা আনআমের পবিত্র এই আয়াতে হাসরের বা সীমাবদ্ধতার অর্থকে সঠিকভাবে করেননি। কেননা উল্লিখিত আয়াতটিতে «محصور فیه» (অর্থাৎ যার মধ্যে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে) হল لعب و لهو । ফখরুদ্দীন রাযি যে অর্থ করেছেন তার দিকে লক্ষ্য করলে দেখতে পাই যে, তিনি «حیاة الدنیا» পার্থিব জীবনকে «محصور فیه» ধরেছেন। কিন্তু সমস্ত অলংকার শাস্ত্রবিদগণ বলেছেন “ইন্নামা” এর মাহসূর ফি সবসময় বাক্যের শেষে আসে। (তাফতাজানী, আল মুতাওয়াল, পৃ. ৪১; জুরজানী, আল ইশারাত ওয়াত তানবিহাত ফি ইলমিল বালাগা, পৃ. ৮১; হাশেমী, জাওয়াহিরুল বালাগা, পৃ. ১৫২) অতএব এ আয়াতের সঠিক অর্থ হচ্ছে- দুনিয়া শুধু খেলাধুলা ও আমোদ ফুর্তির।
আবু হাইয়্যানও ফখরুদ্দীন রাযির ন্যায় যামাখশারীর প্রতি আপত্তি জানিয়েছেন।
قُلْ إِنَّمَا يُوحَى إِلَيَّ أَنَّمَا إِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ
‘বলুন আমাকে তো এ আদেশই দেয়া হয়েছে, তোমাদের উপাস্যই একমাত্র উপাস্য’ (সূরা আম্বিয়া : ১০৮)
এ আয়াতের ব্যাপারে যামাখশারী বলেছেন: «أنما» (আন্নামা)«إنما» (ইন্নামা)র মতই হাসরের অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এই আয়াতে আন্নামা গুণিতের «موصوف» জন্য সিফাত বা গুণকে সীমাবদ্ধ করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে এবং ইন্নামা সিফাতের জন্য মাউসূফ বা গুণিতকে সীমাবদ্ধ করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। (যামাখশারী, আল কাশিফ আন হাক্বায়িকি গাওয়ামিজিত তানযিল, পৃ. ১৩৯)। আবু হাইয়্যান, যামাখশারীর এই বক্তব্যকে প্রত্যাখান করে বলেছেন- আন্নামাও ইন্নামার ন্যায় হাসরের প্রতি ইঙ্গিত করে এটা শুধু যামাখশারী বলেছেন যা অন্য কেউ বলেননি।
আবু হাইয়্যান আরো বলেছেন: যদি এই আয়াতে হাসর থেকে থাকে, তাহলে অর্থ হবে যে, তাওহীদ (আল্লাহর একমাত্র উপাস্য হওয়ার বিষয়) ছাড়া নবী (সা.) এর নিকট অন্য কোন বিষয়ে ওহী আসেনি অথচ নবী (সা.) এর নিকট তাওহীদ ছাড়া অন্য বিষয়েও ওহী এসেছে।
ইবনে হিশাম আনসারী যামাখশারীর পক্ষ অবলম্বন করে আবু হাইয়্যান এর যুক্তিকে প্রত্যাখ্যান করে লিখেছেন : আবু হাইয়্যানের এই বক্তব্য ঠিক নয়, কেননা এই আয়াতে “হাসরে মোকাইয়্যাদ” রয়েছে এবং আয়াতের অর্থ হবে : প্রভুত্ব ও রুবুবিয়্যাতের ব্যাপারে তাওহীদ (আল্লাহর একত্ব) ছাড়া আমার প্রতি কোন ওহী নাযিল হয়নি। এমন কাসরকেকে কাসরে ক্বালব বলা হয়। কেননা শ্রোতার আস্থা এবং বিশ্বাসকে পরিবর্তন করে (কারণ মুশরিকরা ধারণা করত মানুষের ওপর তাদের উপাস্য মুর্তিগুলোরও প্রভুত্ব রয়েছে, এ আয়াতে তাদের এ বিশ্বাসকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে)। (ইবনে হিশাম আনসারী, মুগনি আল লাবিব আন কুতুবিল আ’আরিব, ১ম খণ্ড, পৃ-৬২)।
ইবনে হিশাম এমন একটি খণ্ডনমূলক উত্তরও দিয়েছেন যা স্পষ্টভাবে আবু হাইয়্যানের যুক্তিকে ভুল প্রমাণ করে। তিনি পবিত্র কোরআনের একটি আয়াতের উল্লেখ করেছেন যাতে না বাচক ‘মা’ এবং ‘ইল্লা’ ব্যবহৃত হওয়া সত্ত্বেও সার্বিকভাবে সীমাবদ্ধতা নির্দেশ করে না। তিনি বলেছেন:
« وَمَا مُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُولٌ »
অর্থাৎ মুহাম্মদ রাসূল ছাড়া কিছুই নয়। (সূরা আলে ইমরান : ১৪৪)
এই আয়াতে না বাচক ‘মা’ «ما النافیة» এবং ‘ইল্লা’ নিঃসন্দেহে হাসরের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। অথচ আমরা জানি যে মহানবীর (সা.) সিফাত শুধুমাত্র রেসালাতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এতদসত্বেও হাসর ব্যবহার করা হয়েছে। (ইবনে হিশাম, প্রাগুক্ত) সুতরাং এখানে হাসরে মোকাইয়্যাদ বা আপেক্ষিক সীমাবদ্ধতা নির্দেশিত হয়েছে। তেমনি সুরা আহযাবের ৪০নং আয়াতেও «ما النافیة» এবং لکن আপেক্ষিক সীমাবদ্ধতা নির্দেশ করছে অর্থাৎ হযরত মুহাম্মদ (সা.) তোমাদের মধ্যকার কোন পুরুষের পিতা নন, বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং সর্বশেষ নবী।
যেমনটি পরিলক্ষিত হয় যে, যামাখশারীর প্রতি আবু হাইয়্যানের আপত্তি কোনভাবেই ধোপে টেকে না।
তাফতাজানী এবং কুশচীর বক্তব্যও সঠিক নয়। কেননা হাসর সব সময় বিদ্যমান কোন বিষয় ও বাস্তবে অস্তিত্বমান কিছুকে প্রত্যাখ্যান করতে ব্যবহৃত হয়না। বরং কখনও কখনও ভবিষ্যতে দ্বিধা-সংকোচ বা বিবাদের সৃষ্টি করতে পারে এমন সম্ভাবনাকে প্রতিরোধ করার জন্য ব্যবহার করা হয়; অর্থাৎ যদি কোন ব্যক্তি তার বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে ভবিষ্যতে দ্বিধা-সংকোচ বা বিবাদ সৃষ্টির আশংকা করে, তবে এরূপ ক্ষেত্রেও সে হাসর ব্যবহার করতে পারে। এটা অন্যভাবেও বলা যায় যে, হাসর কখনও সন্দেহকে দূরীভূত করার জন্য আবার কখনও তাকে প্রতিরোধ করার জন্য ব্যবহার করা হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে মা’আনী ও বায়ান শাস্ত্রবিদগণ মত দিয়েছেন যে, হাসর ব্যবহারের জন্য সন্দেহের অবকাশ ও সম্ভাবনা থাকাই যথেষ্ট, বাস্তবে সন্দেহের অস্তিত্ব থাকতে হবে এমন কথা নেই।
বেলায়াত সম্পর্কিত আয়াতে সম্ভাব্য দ্বিধা-সংকোচ বা সন্দেহ প্রতিরোধ করার জন্য হাসর ব্যবহৃত হয়েছে। কারণ আল্লাহ তাআলা ভালভাবেই জানতেন যে ভবিষ্যতে খেলাফত নিয়ে সংশয় ও দ্বিধার সৃষ্টি হবে তাই এই আয়াতে হাসর ব্যবহার করেছেন।
সুতরাং এই বিষয়ে কুশচীও ভুলের শিকার হয়েছেন কারণ তিনি মনে করেরেছন যে, হাসরকে কেবল বিদ্যমান দ্বিধা, সন্দেহ, ইচ্ছাকৃত উপেক্ষা ও উদাসীনতা দূরীভূত করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় অর্থাৎ তিনি হাসরকে, হাসরে রাফয়ি «رفعی» বা প্রতিহতকারী অর্থের মধ্যে সীমাবদ্ধ করেছেন।
এই ভ্রান্তধারণার আরেকটি জবাব হল যে, বালাগাত শাস্ত্রবিদগণ “ইন্নামা” এবং অন্যান্য সীমাবদ্ধসূচক অব্যয়গুলির মধ্য পার্থক্য করেছেন। তারা বলেছেন “ইন্নামা” ঐ সকল ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় যেখানে শ্রোতা কোন বিষয়ের আবশ্যকতা সম্পর্কে অজ্ঞ নয় বা অস্বীকারকারীও নয় বরং তাকে সচেতন এবং স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য ব্যবহার করা হয় যেন শ্রোতা তার গুরুত্ব সম্পর্কে অবহিত হয় ও তার প্রতি নিবেদিত থাকে। (জুরজানী, আল-ইশারাত ওয়াত তানবিহাত ফি ইলমিল বালাগা : পৃ. ৮২)
এই বর্ণনা অনুযায়ী বলা যেতে পারে যে, এই আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার সময় সকল মুসলমান জানতেন যে “ওয়ালি” পদটি আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং হযরত আলী (আ.) এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তার পরেও আল্লাহ তাআলা মুসলমানদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য এই আয়াতে “ইন্নামা” ব্যবহার করেছেন যেন মুসলমানেরা তাদের জ্ঞাত এই বিষয়টির আবশ্যক দাবিগুলো পূরণ করে।
তৃতীয় : আহলে সুন্নাতের কিছু কিছু আলেম, যেমন- যামাখশারী (যামাখশারী, আল কাশশাফ আন হাকায়েক ওয়া গাওয়ামেজুত তানযিল, ১ম খণ্ড, পৃ. ৬৪৮) বলেছেন যে “ইন্নামা” এই আয়াতে সীমাবদ্ধতার অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে ।
«و هم راکعون» বাক্যটির এ’রাব «اعراب» বা পদচিহ্ন :
আলেমদের মধ্যে আরেকটি বাকরণগত মতবিরোধ হচ্ছে «و هم راکعون» বাক্যটির এ’রাব নিয়ে। তাফতাজানী এবং কুশচী এই বাক্যটির এ’রাব সম্পর্কে বলেছেন :
আয়াতে উল্লিখিত গুণাবলী হযরত আলী (আ.) এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকার অর্থ হচ্ছে «و هم راکعون» (হুম রাকেউন) বাক্যটি «یؤتون» ক্রিয়াটির মধ্যে নিহিত ضمیر (সর্বনাম) টির حال (অবস্থাসূচক বাক্য) যদিও এই তারকিব ওয়াজিব নয়। এটি তার পূর্ববর্তী বাক্যের সাথে عطف (সংযোজিত)ও হতে পারে, এই অর্থে যে মুসলমানরাও তাদের নামাজে রুকু করে অর্থাৎ তাদের নামাজ ইয়াহুদিদের মত রুকু বিহীন নয়।
তাফতাজানী এবং কুশচীর এই বক্তব্য সঠিক নয়। নিম্নোক্ত কারণে এই বাক্যটি অবস্থাসূচক বাক্য এবং «واو» টি অবস্থাসূচক অব্যয়।
আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম
চলবে______________
মন্তব্যসমূহ