আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুমগত পর্বে আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রাণপ্রিয় কন্যা হযরত ফাতিমা জাহরা সালামুল্লাহি আলাইহার জীবনী সম্পর্কে আলোচনা শুরু করেছি। আজকের পর্বে আমি এই মহীয়সী নারীর জীবন ও কর্ম নিয়ে খানিকটা কথা বলার চেষ্টা করব।আমি নবীনন্দিনী হযরত ফাতেমা জাহরা সালামুল্লাহি আলাইহাল জন্ম ও শিশুকাল নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বলেছি, কুরাইশ বংশের কাফেরদের অত্যাচার ও হুমকির মুখে মাওলা মোহাম্মদ (সা.) মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি রাতের বেলা হযরত আলী (আ.)কে নিজের বিছানায় শুইয়ে রেখে মদীনার উদ্দেশ্যে মক্কা ত্যাগ করেন এবং কাফেররা রাসূলকে হত্যা করতে এসে তার বিছানায় হযরত আলীকে দেখে তাজ্জব হয়ে যায়। এভাবে রাসূলকে হত্যার পরিকল্পনা বানচাল হয়ে যায়। মাওলা মোহাম্মদ মক্কা ত্যাগ করার আগে হযরত আলীকে বলে গিয়েছিলেন, হযরত ফাতেমা জাহরা সালামুল্লাহি আলাইহাসহ বনি হাশেম গোত্রের একদল নারীকে নিয়ে তিনি যেন পরবর্তীতে মদীনায় চলে আসেন। হযরত আলী (আ.) এ নির্দেশ পালন করেন এবং সবাইকে নিয়ে মদীনার নিকটবর্তী কুবা এলাকায় রাসূলের সঙ্গে মিলিত হন।মদীনায় হযরত ফাতেমা জাহরার জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হয়। সেখানে তাঁর জীবনের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল হযরত আলী (আ.)-এর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া। দ্বিতীয় হিজরিতে এই ঐশী বিয়ে সংঘটিত হয়। ওই বছর বদর যুদ্ধে মক্কার কাফেরদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের বিজয়ে মদীনায় আনন্দের বন্যা বয়ে যায় এবং সেখানকার ইসলামি সমাজের ভিত্তি মজবুত হয়। এ সময় কিছু সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি হযরত ফাতেমাকে বিয়ে করার জন্য রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে প্রস্তাব নিয়ে আসেন। কিন্তু তিনি এসব প্রস্তাবের কোনোটিই গ্রহণ করেননি। এই ব্যক্তিবর্গই একথা উপলব্ধি করতে পারছিলেন যে, আল্লাহর রাসূল চান হযরত ফাতেমাকে হযরত আলী (আ.)-এর হাতে তুলে দিতে। এ কারণে তারাই হযরত আলীকে রাসূলুল্লাহর কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাওয়ার জন্য উৎসাহ দিতে থাকেন। এদিকে হযরত আলী (আ.) নিজের অর্থনৈতিক দৈন্য এবং লজ্জাবোধের কারণে বিষয়টি নিয়ে দোটানায় পড়ে যান। কিন্তু বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের পীড়াপিড়িতে শেষ পর্যন্ত আল্লাহর রাসূলের কাছে গিয়ে হাজির হন। তিনি বলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য উৎসর্গীত হোক। আমি আপনার ঘরে বড় হয়েছি এবং এতদিন আপনার অনেক অনুগ্রহ আমি গ্রহণ করেছি। আপনি আমাকে আমার পিতা-মাতার চেয়ে বেশি স্নেহ করেছেন এবং আপনার মাধ্যমে আমি হেদায়েতপ্রাপ্ত হয়েছি। এখন আমার সময় হয়েছে বিয়েশাদি করে সংসার গঠন করার যাতে স্ত্রীর সঙ্গে নিজের দুঃখকষ্টগুলো ভাগাভাগি করে নিতে পারি। আপনি যদি আপনার কন্যা ফাতেমাকে আমার সঙ্গে বিয়ে দেন তাহলে সেটা হবে আমার প্রতি আপনার অনেক বড় অনুগ্রহ এবং আমার জন্য পরম সৌভাগ্যের ব্যাপার।হযরত আলী (আ.)-এর প্রস্তাব শুনে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন: তুমি প্রস্তাব নিয়ে আসার আগে জিব্রাইল আমার কাছে এসে আল্লাহর নির্দেশ শুনিয়ে গেছেন। আল্লাহ তায়ালা চান আমি তোমার হাতেই ফাতেমাকে তুলে দেই। আলী! জিব্রাইল আল্লাহর নির্দেশ শুনিয়ে আসমানের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়ার আগেই তুমি আমার দরজায় কড়া নেড়েছ। এরপর আল্লাহর রাসূল মুহাজির ও আনসারদেরকে মসজিদে নববীতে ডেকে পাঠানোর জন্য হযরত বেলালকে নির্দেশ দেন। সবাই মসজিদে এলে রাসূলে আকরাম (সা.) মিম্বারে উঠে হামদ ও সানা পাঠ করার পর বলেন, হে লোকসকল! আপনারা জেনে রাখুন আল্লাহর পক্ষ থেকে জিব্রাইল এসে আলীর সঙ্গে ফাতেমার বিয়ে দেয়ার নির্দেশ জানিয়ে গেছেন। এরপর রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজেই বিয়ের খুতবা পাঠ করেন। তখন উপস্থিত সবাই নবদম্পতির সুখ-স্বাচ্ছন্দের জন্য আল্লাহর কাছে দু’হাত তুলে দোয়া করেন। এরপর আল্লাহর রাসূল ঘরে ফিরে আলী (আ.)কে নিজের ডানপাশে এবং ফাতেমা সালামুল্লাহি আলাইহাকে বামপাশে বসান।এরপর আল্লাহর দরবারে দোয়া করেন: হে আল্লাহ! আপনি এই বিয়ে কবুল করে নিন এবং এদেরকে পুতপবিত্র বংশধর দান করুন।এভাবে হযরত আলী (আ.) ও ফাতেমা জাহরা সালামুল্লাহি আলাইহার দাম্পত্য জীবন শুরু হয়। কয়েকদিন পর মাওলা মোহাম্মদ (সাঃ) নিজ কন্যাকে জিজ্ঞাসা করেন: কেমন স্বামী পেয়েছ মা? ফাতেমা সালামুল্লাহি আলাইহা জবাব দেন: আব্বাজান! আল্লাহ তায়ালা এ যুগের শ্রেষ্ঠ পুরুষকে আমার ভাগ্যে জুড়ে দিয়েছেন। কিন্তু কুরাইশের নারীরা আমাকে বলছে, আপনি নাকি অনেক ধনী ব্যক্তির বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে আমাকে একজন হতদরিদ্র ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে দিয়েছেন। এ সময় আল্লাহর রাসূল নিজ কন্যাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন: আমি পার্থিব জীবনের ধন-সম্পদ ও চাকচিক্যকে পায়ে ঠেলে পরকালীন জীবনের অসীম নেয়ামতকে প্রাধান্য দিয়েছি। মা আমার, আমি এমন একজনের হাতে তোমাকে তুলে দিয়েছি যে সবার আগে ইসলাম গ্রহণ করেছে এবং বিদ্যা, বুদ্ধি, জ্ঞান ও প্রজ্ঞার দিক দিয়ে যে সবার চেয়ে শ্রেষ্ঠ। এরপর হযরত আলী (আ.)কে ডেকে আল্লাহর রাসূল বলেন: স্ত্রীর সঙ্গে সদাচারণ করবে।জেনে রেখো, ফাতেমা আমার কলিজার টুকরা। যে তাকে কষ্ট দেবে সে যেন আমাকেই কষ্ট দিল এবং যে তাকে খুশি করল সে যেন আমাকেই খুশি করল।হযরত আলী (আ.) ও ফাতেমা জাহরার সমন্বয়ে যে সংসার গঠিত হয় সেখানে দু’জনই ছিলেন সব ধরনের গোনাহ ও অপবিত্রতা থেকে মুক্ত। আলী ছিলেন একজন পরিপূর্ণ মানুষ এবং হযরত জাহরা ছিলেন ইসলামের দৃষ্টিতে একজন পরিপূর্ণ নারী। দু’জনই জন্মের পর থেকে আল্লাহর রাসূলের সরাসরি তত্ত্বাবধানে ইসলামের পূর্ণাঙ্গ দিকনির্দেশনা অনুযায়ী লালিত পালিত হয়েছেন। পবিত্র কুরআনের সূরা রুমের ২১ নম্বর আয়াতে যে কথা বলা হয়েছে তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ছিল এই দম্পতি। ওই আয়াতে আল্লাহ বলছেন: “আর এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সংগিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। ”তৃতীয় হিজরিতে ফাতেমা সালামুল্লাহি আলাইহার কোল জুড়ে আসে তাদের বড় সন্তান হযরত হাসান (আ.)। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ওই বছরই ওহুদের যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর অন্তত ৭০ জন সাহাবী শহীদ হয়ে যান যাদের অন্যতম ছিলেন মাওলা মোহাম্মদ (সাঃ) এর প্রাণপ্রিয় চাচা হযরত হামজা। ওহুদের যুদ্ধে আহত মুসলিম যোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন হযরত ফাতেমা জাহরা সালামুল্লাহি আলাইহা। দুঃখজনকভাবে আল্লাহর রাসূল (সা.) নিজেও ওই যুদ্ধে আহত হয়েছিলেন এবং হযরত জাহরা নিজ হাতে পিতার আহত স্থান পরিস্কার করে ওষুধ লাগিয়ে দিয়েছিলেনচলবে
গত পর্বে আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রাণপ্রিয় কন্যা হযরত ফাতিমা জাহরা সালামুল্লাহি আলাইহার জীবনী সম্পর্কে আলোচনা শুরু করেছি। আজকের পর্বে আমি এই মহীয়সী নারীর জীবন ও কর্ম নিয়ে খানিকটা কথা বলার চেষ্টা করব।
আমি নবীনন্দিনী হযরত ফাতেমা জাহরা সালামুল্লাহি আলাইহাল জন্ম ও শিশুকাল নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বলেছি, কুরাইশ বংশের কাফেরদের অত্যাচার ও হুমকির মুখে মাওলা মোহাম্মদ (সা.) মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি রাতের বেলা হযরত আলী (আ.)কে নিজের বিছানায় শুইয়ে রেখে মদীনার উদ্দেশ্যে মক্কা ত্যাগ করেন এবং কাফেররা রাসূলকে হত্যা করতে এসে তার বিছানায় হযরত আলীকে দেখে তাজ্জব হয়ে যায়। এভাবে রাসূলকে হত্যার পরিকল্পনা বানচাল হয়ে যায়। মাওলা মোহাম্মদ মক্কা ত্যাগ করার আগে হযরত আলীকে বলে গিয়েছিলেন, হযরত ফাতেমা জাহরা সালামুল্লাহি আলাইহাসহ বনি হাশেম গোত্রের একদল নারীকে নিয়ে তিনি যেন পরবর্তীতে মদীনায় চলে আসেন। হযরত আলী (আ.) এ নির্দেশ পালন করেন এবং সবাইকে নিয়ে মদীনার নিকটবর্তী কুবা এলাকায় রাসূলের সঙ্গে মিলিত হন।
মদীনায় হযরত ফাতেমা জাহরার জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হয়। সেখানে তাঁর জীবনের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল হযরত আলী (আ.)-এর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া। দ্বিতীয় হিজরিতে এই ঐশী বিয়ে সংঘটিত হয়। ওই বছর বদর যুদ্ধে মক্কার কাফেরদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের বিজয়ে মদীনায় আনন্দের বন্যা বয়ে যায় এবং সেখানকার ইসলামি সমাজের ভিত্তি মজবুত হয়। এ সময় কিছু সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি হযরত ফাতেমাকে বিয়ে করার জন্য রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে প্রস্তাব নিয়ে আসেন। কিন্তু তিনি এসব প্রস্তাবের কোনোটিই গ্রহণ করেননি। এই ব্যক্তিবর্গই একথা উপলব্ধি করতে পারছিলেন যে, আল্লাহর রাসূল চান হযরত ফাতেমাকে হযরত আলী (আ.)-এর হাতে তুলে দিতে। এ কারণে তারাই হযরত আলীকে রাসূলুল্লাহর কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাওয়ার জন্য উৎসাহ দিতে থাকেন।
এদিকে হযরত আলী (আ.) নিজের অর্থনৈতিক দৈন্য এবং লজ্জাবোধের কারণে বিষয়টি নিয়ে দোটানায় পড়ে যান। কিন্তু বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের পীড়াপিড়িতে শেষ পর্যন্ত আল্লাহর রাসূলের কাছে গিয়ে হাজির হন। তিনি বলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য উৎসর্গীত হোক। আমি আপনার ঘরে বড় হয়েছি এবং এতদিন আপনার অনেক অনুগ্রহ আমি গ্রহণ করেছি। আপনি আমাকে আমার পিতা-মাতার চেয়ে বেশি স্নেহ করেছেন এবং আপনার মাধ্যমে আমি হেদায়েতপ্রাপ্ত হয়েছি। এখন আমার সময় হয়েছে বিয়েশাদি করে সংসার গঠন করার যাতে স্ত্রীর সঙ্গে নিজের দুঃখকষ্টগুলো ভাগাভাগি করে নিতে পারি। আপনি যদি আপনার কন্যা ফাতেমাকে আমার সঙ্গে বিয়ে দেন তাহলে সেটা হবে আমার প্রতি আপনার অনেক বড় অনুগ্রহ এবং আমার জন্য পরম সৌভাগ্যের ব্যাপার।
হযরত আলী (আ.)-এর প্রস্তাব শুনে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন: তুমি প্রস্তাব নিয়ে আসার আগে জিব্রাইল আমার কাছে এসে আল্লাহর নির্দেশ শুনিয়ে গেছেন। আল্লাহ তায়ালা চান আমি তোমার হাতেই ফাতেমাকে তুলে দেই। আলী! জিব্রাইল আল্লাহর নির্দেশ শুনিয়ে আসমানের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়ার আগেই তুমি আমার দরজায় কড়া নেড়েছ। এরপর আল্লাহর রাসূল মুহাজির ও আনসারদেরকে মসজিদে নববীতে ডেকে পাঠানোর জন্য হযরত বেলালকে নির্দেশ দেন। সবাই মসজিদে এলে রাসূলে আকরাম (সা.) মিম্বারে উঠে হামদ ও সানা পাঠ করার পর বলেন, হে লোকসকল! আপনারা জেনে রাখুন আল্লাহর পক্ষ থেকে জিব্রাইল এসে আলীর সঙ্গে ফাতেমার বিয়ে দেয়ার নির্দেশ জানিয়ে গেছেন। এরপর রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজেই বিয়ের খুতবা পাঠ করেন। তখন উপস্থিত সবাই নবদম্পতির সুখ-স্বাচ্ছন্দের জন্য আল্লাহর কাছে দু’হাত তুলে দোয়া করেন। এরপর আল্লাহর রাসূল ঘরে ফিরে আলী (আ.)কে নিজের ডানপাশে এবং ফাতেমা সালামুল্লাহি আলাইহাকে বামপাশে বসান।
এরপর আল্লাহর দরবারে দোয়া করেন: হে আল্লাহ! আপনি এই বিয়ে কবুল করে নিন এবং এদেরকে পুতপবিত্র বংশধর দান করুন।
এভাবে হযরত আলী (আ.) ও ফাতেমা জাহরা সালামুল্লাহি আলাইহার দাম্পত্য জীবন শুরু হয়। কয়েকদিন পর মাওলা মোহাম্মদ (সাঃ) নিজ কন্যাকে জিজ্ঞাসা করেন: কেমন স্বামী পেয়েছ মা? ফাতেমা সালামুল্লাহি আলাইহা জবাব দেন: আব্বাজান! আল্লাহ তায়ালা এ যুগের শ্রেষ্ঠ পুরুষকে আমার ভাগ্যে জুড়ে দিয়েছেন। কিন্তু কুরাইশের নারীরা আমাকে বলছে, আপনি নাকি অনেক ধনী ব্যক্তির বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে আমাকে একজন হতদরিদ্র ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে দিয়েছেন। এ সময় আল্লাহর রাসূল নিজ কন্যাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন: আমি পার্থিব জীবনের ধন-সম্পদ ও চাকচিক্যকে পায়ে ঠেলে পরকালীন জীবনের অসীম নেয়ামতকে প্রাধান্য দিয়েছি। মা আমার, আমি এমন একজনের হাতে তোমাকে তুলে দিয়েছি যে সবার আগে ইসলাম গ্রহণ করেছে এবং বিদ্যা, বুদ্ধি, জ্ঞান ও প্রজ্ঞার দিক দিয়ে যে সবার চেয়ে শ্রেষ্ঠ। এরপর হযরত আলী (আ.)কে ডেকে আল্লাহর রাসূল বলেন: স্ত্রীর সঙ্গে সদাচারণ করবে।
জেনে রেখো, ফাতেমা আমার কলিজার টুকরা। যে তাকে কষ্ট দেবে সে যেন আমাকেই কষ্ট দিল এবং যে তাকে খুশি করল সে যেন আমাকেই খুশি করল।
হযরত আলী (আ.) ও ফাতেমা জাহরার সমন্বয়ে যে সংসার গঠিত হয় সেখানে দু’জনই ছিলেন সব ধরনের গোনাহ ও অপবিত্রতা থেকে মুক্ত। আলী ছিলেন একজন পরিপূর্ণ মানুষ এবং হযরত জাহরা ছিলেন ইসলামের দৃষ্টিতে একজন পরিপূর্ণ নারী। দু’জনই জন্মের পর থেকে আল্লাহর রাসূলের সরাসরি তত্ত্বাবধানে ইসলামের পূর্ণাঙ্গ দিকনির্দেশনা অনুযায়ী লালিত পালিত হয়েছেন। পবিত্র কুরআনের সূরা রুমের ২১ নম্বর আয়াতে যে কথা বলা হয়েছে তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ছিল এই দম্পতি। ওই আয়াতে আল্লাহ বলছেন: “আর এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সংগিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। ”
তৃতীয় হিজরিতে ফাতেমা সালামুল্লাহি আলাইহার কোল জুড়ে আসে তাদের বড় সন্তান হযরত হাসান (আ.)। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ওই বছরই ওহুদের যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর অন্তত ৭০ জন সাহাবী শহীদ হয়ে যান যাদের অন্যতম ছিলেন মাওলা মোহাম্মদ (সাঃ) এর প্রাণপ্রিয় চাচা হযরত হামজা। ওহুদের যুদ্ধে আহত মুসলিম যোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন হযরত ফাতেমা জাহরা সালামুল্লাহি আলাইহা। দুঃখজনকভাবে আল্লাহর রাসূল (সা.) নিজেও ওই যুদ্ধে আহত হয়েছিলেন এবং হযরত জাহরা নিজ হাতে পিতার আহত স্থান পরিস্কার করে ওষুধ লাগিয়ে দিয়েছিলেন
চলবে
মন্তব্যসমূহ