বেলায়েতের আয়াতের ব্যাকরণগত দিক সম্পর্কে একটি গবেষণামূলক বিশ্লেষণমূলক পোস্ট((((পর্ব ৪))))১. « هم راکعون » যদি আতফ্ হয় তাহলে এক্ষেত্রে দুটি মৌলিক নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটেছে আর এক বাক্যে দুই মৌল নীতির ব্যতিক্রম ঘটা ব্যাকরণশাস্ত্রের রীতিবিরুদ্ধ ও বাগ্মিতার পরিপন্থী হিসাবে জায়েজ ও বৈধ নয়। বিশেষ করে পবিত্র কোরআনের -সাহিত্যিকমান ও আলংকারিক (বালাগাত ও ফাসাহাত) দৃষ্টিতে যার অবস্থান শীর্ষ চূড়ায়- মধ্যে এমন বিষয় থাকা অসম্ভব। (ইবনে হিশাম আনসারী, প্রাগুক্ত, ১ম খণ্ড, পৃ. ৩২৯) এ দু’টি পরিপন্থী নীতি হল :ক. جملة اسمیة (যে বাক্যের প্রথমে ইসম বা বিশেষ্য থাকে), جملة فعلیة (যে বাক্যের প্রথমে ফেল বা ক্রিয়া থাকে) এর সাথে আতফ বা সংযুক্ত হয়েছে। কেননা নাহুশাস্ত্রবিদগণের মতে, আতফের নিয়ম হল দুটি বাক্যের রূপ একই রকম হওয়া। (সূয়ুতী, আল বাহজাতুল মারজিয়াহ ফি শারহিল আলফিয়া, পৃ-১০৪)খ. « هم راکعون » বাক্যটিকে আতফ ধরলে এর পূর্বে «یقیمون الصلاة» বাক্যটির উল্লেখ থাকায় পুনরাবৃত্তি ঘটছে অথচ নিয়ম হল পুনরাবৃত্তি না হওয়া (অর্থাৎ নামাজের পর তার একটি অংশ রুকুর উল্লেখ বাচালতার শামিল বলে মানানসই নয়)। (সাইয়েদ মুরতাজা, আশ-শাফী ফিল ইমামাহ, ২য় খণ্ড, পৃ.-২৩৭) ২. আহলে বাইতের অনুসারী ও আহলে সুন্নাতের সূত্রে এই আয়াত সম্পর্কিত যে সব রেওয়াইয়াত বর্ণিত হয়েছে তা স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত করছে “ওয়াও” حالیة (অবস্থাসূচক) অব্যয়। শেখ হুররে আমেলী উল্লিখিত বিষয়ে উভয় সূত্র থেকে বর্ণিত হাদীসসমূহ বর্ণনা করেছেন। (হুররে আমেলী, ইছবাতুল হুদা, ৩য় খণ্ড, পৃ. ১৪১।) এসব হাদীসের কোন কোনটিতে এভাবে বলা হয়েছে : আলী (আ.) রুকু অবস্থায় যাকাত দিয়েছেন। (রাযী, মাফাতিহুল গাইব, ১২তম খণ্ড, পৃ.৩৮৩; সূয়ুতী, আদ্ দুররুল মানসূর ফি তাফসীরিল মা’ছুর, ২য় খণ্ড, পৃ. ২৯৩) অন্য আরেক রেওয়ায়েতে আরো সুন্দর ও স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে নবী করীম (সা.) ভিক্ষুককে জিজ্ঞাসা করলেন: “আলী কি অবস্থায় তোমাকে দান করেছে?” ভিক্ষুক বলল: “রুকু অবস্থায়।” (সূয়ুতী, পৃ.-৩৯৪; তাবারী, দালায়িলুল ইমামাহ, পৃ.-৫৪) নাহু শাস্ত্রবিদগণ বলেছেন: কোন ব্যক্তির অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তার উত্তরে حال আসে। এই হাদীসে রাসূল (সা.) হযরত আলী (আ.) এর আংটি দান কালীন অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে ভিক্ষুক বলল: “রুকু অবস্থায়”। সুতরাং « و هم راکعون» বাক্যটি جملة حالیة (অবস্থাসূচক বাক্য)।৩. যামাখশারীও তাফসীরে কাশ্শাফে বলেছেন: “ওয়াও” حالیة বা অবস্থাসূচক অব্যয়। আহলে সুন্নাতের অন্যান্য গবেষক ও মুফাচ্ছিরগণও স্বীকার করেছেন যে এ বাক্যটি حالیة। (রাযী, ১২তম খণ্ড, পৃ.-৩৮৫; আলুসী, রুহুল মাআনী ফি তাফসীরিল কোরআনিল আযিম, ৫ম খণ্ড, পৃ.- ৪৫৮; ছাআলাবী, আল জাওয়াহিরুল হাসান, ১ম খণ্ড, পৃ.-৪৩৮; দারউইশ, এরাবুল কোরআন ওয়া বায়ানুহু, ২য় খণ্ড, পৃ.-৫০৮; ছাফী, আল জাদওয়াল ফি এরাবিল কোরআন, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ.-৩৮৬; বায়দ্বাভী, আনওয়ারুত তানযিল ওয়া আসরারুত তা’বিল, ২য় খণ্ড, পৃ.-১৩২)আহলে বাইতের অনুসারীদের তাফসীর গ্রন্থসমূহে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, “ওয়াও” حالیة হওয়ার ব্যাপারে সকলেই একমত। (তাবাতাবাই, আল-মিযান ফি তাফসীরিল কোরআন, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ.-১২; তাবারসী, মাজমাউল বায়ান, ৩য় খণ্ড, পৃ.-৩২১; কাশানী, মিনহাজুস সাদেকীন, ৩য় খণ্ড, পৃ.-২৫৫)৪. ইসলামী যুগে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কবিতাও রচিত হয়েছে, ঐসব কবিতায় লক্ষ্য করলে দেখা যায় তারাও এই বাক্যকে حال হিসেবে ধরে নিয়েছেন। যা হাসসান বিন ছাবেত এর কবিতাতেও ফুটে উঠেছে, আল্লামা আমিনীও তার বিখ্যাত গ্রন্থ “আল গাদীরে” এ কবিতাটিকে আহলে বাইতের অনুসারী এবং সুন্নিদের বিভিন্ন সূত্র থেকে বর্ণনা করেছেন। ( আমিনী, আল গাদীর ফিল কিতাব ওয়াস সুন্নাহ ওয়াল আদাব, ৩য় খণ্ড, পৃ.-৬২; আলুসী, প্রাগুক্ত; হাসকানী, শাওয়াহেদুত তানযিল লে কাওয়ায়েদুত তাফযিল, ১ম খণ্ড, পৃ.-২১৪) কবিতাটি হচ্ছে :ابا حسن تفدیک نفسی و مهجتی وکل بطئ فی الهدی و مسارعأیذهب مدحی و المحبین ضائعاً و ما المدح فی ذات الاله بضائعفأنت الذی اعطیت اذ انت راکع فدتک نفوس القوم یا خیر راکعহে আবা হাসান আমার জান প্রাণ তোমার জন্য উৎসর্গ হোক। আরও উৎসর্গ হোক তাদের প্রাণ যারা ধীর অথবা দ্রুত গতিতে হেদায়েতের পথে চলে।আমার স্তুতি এবং প্রেমিকরা যদিও হারিয়ে কিংবা নষ্ট হয়ে যাবে? কিন্তু আল্লাহর কৃত প্রশংসা শেষ হবার নয়।তুমিই তো রুকুরত অবস্থায় দান করে ছিলে। আমাদের সকলের প্রাণ তোমার জন্য উৎসর্গ হোক হে উত্তম রুকুকারী।নাহুশাস্ত্রবিদগণ বর্ণনা করেছেন: অবস্থাসূচক বাক্যে واو এর পরিবর্তে (স্থান বা কালবাচক) اذ এরও ব্যবহার হতে পারে। (ইবনে হিশাম, ২য় খণ্ড, পৃ.-২৩) কবিতার শেষ লাইনেও «و انت» এর পরিবর্তে «اذ انت» ব্যবহৃত হয়েছে যা حال এর অর্থই দেয়। কেননা তখন অর্থ হবে : “রুকু করার সময় দান করেছ”।৫. আলোচ্য আয়াতের সাথে «رایت زیدا و هو راکب» অর্থাৎ ‘আমি যায়েদকে দেখেছি এমতাবস্থায় যে সে আরোহী ছিল’ এমন বাক্য থেকে প্রথমেই যা মনে ভেসে উঠে তা হচ্ছে তা হচ্ছে و هو راکب বাক্যটি যায়েদের অবস্থা বর্ণনা করছে যে, সে আরোহী অবস্থায় আছে। (বাহরানী, আন-নাজাতু ফিল কিয়ামাহ ফি তাহকীকি আমরিল ইমামাহ, পৃ.-৯৬)বহুবচন মূলক শব্দ একবচনের অর্থে ব্যবহার করা:কেন বহুবচন মূলক শব্দকে একবচনের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে? এর উত্তরে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর উল্লেখ করা যেতে পারে :১. এ বিষয়টি শুধুমাত্র এ আয়াতেই নয় পবিত্র কোরআন ও হাদীসের পাঠ্যে অনেক স্থানেও একবচনের জায়গায় বহুবচনের শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। তন্মধ্যে মুবাহেলার আয়াত (আলে ইমরান:৬১) যেখানে হযরত আলী (আ.) এর জন্য বহুবচন «انفسنا» ও হযরত ফাতেমা (আ.) এর জন্যও বহুবচন «نسائنا» ব্যবহৃত হয়েছে। এরূপ আরো অনেক স্থানে এরূপ ভাষা প্রয়োগের দৃষ্টান্ত মুফাসসিরগণ উপস্থাপন করেছেন। আল্লামা আমিনী তার আল গাদীর গ্রন্থে প্রায় বিশটি আয়াত উল্লেখ করেছেন যেসব আয়াতে একবচনের জন্য বহুবচনের শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। (আমিনী, আল গাদীর, ৩য় খণ্ড, পৃ. ১৬৪)২. যামাখশারী তাঁর ‘আল কাশশাফ’ তাফসীর গ্রন্থে এর কারণ হিসেবে বলেছেন:অন্যদের এমন কাজে মানুষকে উৎসাহিত করার জন্য এই আয়াতে বহুবচন ব্যবহার করা হয়েছে। মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে যে, মুমিন ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য এমনই হতে হবে যাতে করে তারা এরূপ ভাল কাজে আগ্রহী হয়ে উঠে এবং তা সম্পাদনে বিলম্ব না করে, যদি নামাজরত অবস্থায়ও থাকে। এমন ভালও মঙ্গলজনক কাজে যেন নামাজ শেষ হওয়ারও অপেক্ষা না করে। (যামাখশারী, কাশশাফ, ১ম খণ্ড, পৃ.-৬৪৯)৩. আল্লামা তাবারসী মনে করেন : হযরত আলী (আ.) এর সম্মান ও শ্রেষ্ঠত্ব নির্দেশের জন্যই বহুবচনের শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। সম্মান ও শ্রেষ্ঠত্বের কারণে বহুবচনের শব্দ একবচনের স্থানে ব্যবহৃত হয় আর এটা ভাষাবিদদের নিকট একটি মামূলী ব্যাপার, সে জন্য কোন দলীল প্রমাণেরও প্রয়োজন হয়না। (তাবারসী, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৩২৭)অন্যান্য গ্রন্থেও এ বিষয়টি গুরুত্বের সাথে আলোচনা করা হয়েছে। (ফাখরুদ্দিন রাযী, প্রাগুক্ত; তুসী, আল-ইকতিসাদ ফিমা ইয়াতাআল্লাকু বিল ইতিকাদ, পৃ.-৩২৩; তাবাতাবাই, প্রাগুক্ত; মিনহাজুস সাদেকীন, প্রাগুক্ত; আলুসী, প্রাগুক্ত)সূয়ুতী, আল-মাযহার গ্রন্থে লিখেছেন :একজন শ্রোতার ক্ষেত্রে বহুবচনের শব্দ ব্যবহার করা এটা আরবদের একটা রীতি। যেমন কোন উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিকে বলা হয়ে থাকে : «انظروا فی امری» অর্থাৎ আমার ব্যাপারে আপনারা খেয়াল রাখবেন এবং পবিত্র কোরআনেও এসেছে- «ربّ ارجعون» হে আমার পালন কর্তা আমাকে আপনারা (পুনরায় দুনিয়ায়) ফিরে যেতে দিন। (সূয়ুতী, আল-মাযহার ফি উলুমিল লুগাহ ওয়া আনওয়ায়িহা, ১ম খণ্ড, পৃ.-৩৩৩; আল-আমিন, আযওয়াউল বায়ান ফি ইযাহিল কোরআন বিল কোরআন, ৫ম খণ্ড, পৃ.-৩৫৫; হালাবি, আদ-দুররুল মাসূন ফি ইলমিল কিতাবিল মাকনূন, ৫ম খণ্ড, পৃ.-২০০; ছাফী, প্রাগুক্ত, ১৮তম খণ্ড, পৃ.-২০৯)৪. এই কারণে আহলে বাইতের অনুসারীদের বিভিন্ন গ্রন্থে যে সমস্ত রেওয়াইয়াত রয়েছে (কুলায়নি, উসূলে কাফি, ২য় খণ্ড, পৃ.-৩৯৭) এই আয়াত আহলে বাইতের ইমামদের সকলের ইমামতের প্রমাণ স্বরূপ। শুধু আলী (আ.) এর জন্যই নির্দিষ্ট নয় বরং সমস্ত ইমামের ইমামতকেই প্রমাণ করার জন্য। কিন্তু যেহেতু রাসূল (সা.) এর পর প্রথম খলিফা কে?- এ বিষয়টি নিয়ে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে একটা মৌলিক মতবিরোধ রয়েছে। সেজন্য আহলে বাইতের অনুসারীদের পক্ষ থেকে শুধু আলী (আ.) এর খেলাফতকে প্রমাণ করার জন্যই এটা উপস্থাপন করা হয়। আর একবচনের স্থলে বহুবচনের ব্যবহার আরবি ভাষার নিয়মানুসারেই হয়েছে।৫. হামল বার মা’না বা ভাবার্থের ওপর প্রয়োগ- এর নিয়ম অনুসারেও একবচনের ক্ষেত্রে বহুবচনের ব্যবহারের বিশুদ্ধতা প্রমাণিত হয়। এটি আরবি ব্যাকরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি, আরবি সাহিত্যের বিভিন্ন গ্রন্থে এর অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ: পুংলিঙ্গ কে স্ত্রীলিঙ্গ, আবার স্ত্রীলিঙ্গকে পুংলিঙ্গ, অনুরূপভাবে বহুবচনের শব্দ দ্বারা একবচনের উদ্দেশ্য আবার একবচনের শব্দ দ্বারা বহুবচনকে উদ্দেশ্য করা হয় এটা হামল বার মা’না এর নিয়মের অন্তর্ভুক্ত। (ইবনে জিন্নী, আল খাসায়িস, ২য় খণ্ড, পৃ.-৪১১) অর্থাৎ আরবি সাহিত্য ও ব্যাকরণে অনেক ক্ষেত্রেই সর্বনাম বা ইঙ্গিতবাচক বিশেষ্য «اسم اشارة» শব্দটি পূর্বের যে শব্দটিকে নির্দেশ করছে বচন ও লিঙ্গের ক্ষেত্রে তার অনুরূপ হয় না।আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম খলীফাতুল বিলা ফাশালনিবেদক__________ মোঃ আলী হুসাইনচলবে

বেলায়েতের আয়াতের ব্যাকরণগত দিক সম্পর্কে
 একটি গবেষণামূলক বিশ্লেষণমূলক পোস্ট
((((পর্ব ৪))))

১. « هم راکعون » যদি আতফ্ হয় তাহলে এক্ষেত্রে দুটি মৌলিক নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটেছে আর এক বাক্যে দুই মৌল নীতির ব্যতিক্রম ঘটা ব্যাকরণশাস্ত্রের রীতিবিরুদ্ধ ও বাগ্মিতার পরিপন্থী হিসাবে জায়েজ ও বৈধ নয়। বিশেষ করে পবিত্র কোরআনের -সাহিত্যিকমান ও আলংকারিক (বালাগাত ও ফাসাহাত) দৃষ্টিতে যার অবস্থান শীর্ষ চূড়ায়- মধ্যে এমন বিষয় থাকা অসম্ভব। (ইবনে হিশাম আনসারী, প্রাগুক্ত, ১ম খণ্ড, পৃ. ৩২৯) এ দু’টি পরিপন্থী নীতি হল :

ক. جملة اسمیة (যে বাক্যের প্রথমে ইসম বা বিশেষ্য থাকে), جملة فعلیة (যে বাক্যের প্রথমে ফেল বা ক্রিয়া থাকে) এর সাথে আতফ বা সংযুক্ত হয়েছে। কেননা নাহুশাস্ত্রবিদগণের মতে, আতফের নিয়ম হল দুটি বাক্যের রূপ একই রকম হওয়া। (সূয়ুতী, আল বাহজাতুল মারজিয়াহ ফি শারহিল আলফিয়া, পৃ-১০৪)

খ. « هم راکعون » বাক্যটিকে আতফ ধরলে এর পূর্বে «یقیمون الصلاة» বাক্যটির উল্লেখ থাকায় পুনরাবৃত্তি ঘটছে অথচ নিয়ম হল পুনরাবৃত্তি না হওয়া (অর্থাৎ নামাজের পর তার একটি অংশ রুকুর উল্লেখ বাচালতার শামিল বলে মানানসই নয়)। (সাইয়েদ মুরতাজা, আশ-শাফী ফিল ইমামাহ, ২য় খণ্ড, পৃ.-২৩৭)

 

২. আহলে বাইতের অনুসারী ও আহলে সুন্নাতের সূত্রে এই আয়াত সম্পর্কিত যে সব রেওয়াইয়াত বর্ণিত হয়েছে তা স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত করছে “ওয়াও” حالیة (অবস্থাসূচক) অব্যয়। শেখ হুররে আমেলী উল্লিখিত বিষয়ে উভয় সূত্র থেকে বর্ণিত হাদীসসমূহ বর্ণনা করেছেন। (হুররে আমেলী, ইছবাতুল হুদা, ৩য় খণ্ড, পৃ. ১৪১।) এসব হাদীসের কোন কোনটিতে এভাবে বলা হয়েছে : আলী (আ.) রুকু অবস্থায় যাকাত দিয়েছেন। (রাযী, মাফাতিহুল গাইব, ১২তম খণ্ড, পৃ.৩৮৩; সূয়ুতী, আদ্ দুররুল মানসূর ফি তাফসীরিল মা’ছুর, ২য় খণ্ড, পৃ. ২৯৩) অন্য আরেক রেওয়ায়েতে আরো সুন্দর ও স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে নবী করীম (সা.) ভিক্ষুককে জিজ্ঞাসা করলেন: “আলী কি অবস্থায় তোমাকে দান করেছে?” ভিক্ষুক বলল: “রুকু অবস্থায়।” (সূয়ুতী, পৃ.-৩৯৪; তাবারী, দালায়িলুল ইমামাহ, পৃ.-৫৪) নাহু শাস্ত্রবিদগণ বলেছেন: কোন ব্যক্তির অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তার উত্তরে حال আসে। এই হাদীসে রাসূল (সা.) হযরত আলী (আ.) এর আংটি দান কালীন অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে ভিক্ষুক বলল: “রুকু অবস্থায়”। সুতরাং « و هم راکعون» বাক্যটি جملة حالیة (অবস্থাসূচক বাক্য)।

৩. যামাখশারীও তাফসীরে কাশ্শাফে বলেছেন: “ওয়াও” حالیة বা অবস্থাসূচক অব্যয়। আহলে সুন্নাতের অন্যান্য গবেষক ও মুফাচ্ছিরগণও স্বীকার করেছেন যে এ বাক্যটি حالیة। (রাযী, ১২তম খণ্ড, পৃ.-৩৮৫; আলুসী, রুহুল মাআনী ফি তাফসীরিল কোরআনিল আযিম, ৫ম খণ্ড, পৃ.- ৪৫৮; ছাআলাবী, আল জাওয়াহিরুল হাসান, ১ম খণ্ড, পৃ.-৪৩৮; দারউইশ, এরাবুল কোরআন ওয়া বায়ানুহু, ২য় খণ্ড, পৃ.-৫০৮; ছাফী, আল জাদওয়াল ফি এরাবিল কোরআন, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ.-৩৮৬; বায়দ্বাভী, আনওয়ারুত তানযিল ওয়া আসরারুত তা’বিল, ২য় খণ্ড, পৃ.-১৩২)

আহলে বাইতের অনুসারীদের তাফসীর গ্রন্থসমূহে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, “ওয়াও” حالیة হওয়ার ব্যাপারে সকলেই একমত। (তাবাতাবাই, আল-মিযান ফি তাফসীরিল কোরআন, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ.-১২; তাবারসী, মাজমাউল বায়ান, ৩য় খণ্ড, পৃ.-৩২১; কাশানী, মিনহাজুস সাদেকীন, ৩য় খণ্ড, পৃ.-২৫৫)

৪. ইসলামী যুগে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কবিতাও রচিত হয়েছে, ঐসব কবিতায় লক্ষ্য করলে দেখা যায় তারাও এই বাক্যকে حال হিসেবে ধরে নিয়েছেন। যা হাসসান বিন ছাবেত এর কবিতাতেও ফুটে উঠেছে, আল্লামা আমিনীও তার বিখ্যাত গ্রন্থ “আল গাদীরে” এ কবিতাটিকে আহলে বাইতের অনুসারী এবং সুন্নিদের বিভিন্ন সূত্র থেকে বর্ণনা করেছেন। ( আমিনী, আল গাদীর ফিল কিতাব ওয়াস সুন্নাহ ওয়াল আদাব, ৩য় খণ্ড, পৃ.-৬২; আলুসী, প্রাগুক্ত; হাসকানী, শাওয়াহেদুত তানযিল লে কাওয়ায়েদুত তাফযিল, ১ম খণ্ড, পৃ.-২১৪) কবিতাটি হচ্ছে :

ابا حسن تفدیک نفسی و مهجتی     وکل بطئ فی الهدی و مسارع

أیذهب مدحی و المحبین ضائعاً      و ما المدح فی ذات الاله بضائع

فأنت الذی اعطیت اذ انت راکع          فدتک نفوس القوم یا خیر راکع

হে আবা হাসান আমার জান প্রাণ তোমার জন্য উৎসর্গ হোক। আরও উৎসর্গ হোক তাদের প্রাণ যারা ধীর অথবা দ্রুত গতিতে হেদায়েতের পথে চলে।

আমার স্তুতি এবং প্রেমিকরা যদিও হারিয়ে কিংবা নষ্ট হয়ে যাবে? কিন্তু আল্লাহর কৃত প্রশংসা শেষ হবার নয়।

তুমিই তো রুকুরত অবস্থায় দান করে ছিলে। আমাদের সকলের প্রাণ তোমার জন্য উৎসর্গ হোক হে উত্তম রুকুকারী।

নাহুশাস্ত্রবিদগণ বর্ণনা করেছেন: অবস্থাসূচক বাক্যে واو এর পরিবর্তে (স্থান বা কালবাচক) اذ এরও ব্যবহার হতে পারে। (ইবনে হিশাম, ২য় খণ্ড, পৃ.-২৩) কবিতার শেষ লাইনেও «و انت» এর পরিবর্তে «اذ انت» ব্যবহৃত হয়েছে যা حال এর অর্থই দেয়। কেননা তখন অর্থ হবে : “রুকু করার সময় দান করেছ”।

৫. আলোচ্য আয়াতের সাথে «رایت زیدا و هو راکب» অর্থাৎ ‘আমি যায়েদকে দেখেছি এমতাবস্থায় যে সে আরোহী ছিল’ এমন বাক্য থেকে প্রথমেই যা মনে ভেসে উঠে তা হচ্ছে তা হচ্ছে و هو راکب বাক্যটি যায়েদের অবস্থা বর্ণনা করছে যে, সে আরোহী অবস্থায় আছে। (বাহরানী, আন-নাজাতু ফিল কিয়ামাহ ফি তাহকীকি আমরিল ইমামাহ, পৃ.-৯৬)

বহুবচন মূলক শব্দ একবচনের অর্থে ব্যবহার করা:

কেন বহুবচন মূলক শব্দকে একবচনের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে? এর উত্তরে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর উল্লেখ করা যেতে পারে :

১. এ বিষয়টি শুধুমাত্র এ আয়াতেই নয় পবিত্র কোরআন ও হাদীসের পাঠ্যে অনেক স্থানেও একবচনের জায়গায় বহুবচনের শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। তন্মধ্যে মুবাহেলার আয়াত (আলে ইমরান:৬১) যেখানে হযরত আলী (আ.) এর জন্য বহুবচন «انفسنا» ও হযরত ফাতেমা (আ.) এর জন্যও বহুবচন «نسائنا» ব্যবহৃত হয়েছে। এরূপ আরো অনেক স্থানে এরূপ ভাষা প্রয়োগের দৃষ্টান্ত মুফাসসিরগণ উপস্থাপন করেছেন। আল্লামা আমিনী তার আল গাদীর গ্রন্থে প্রায় বিশটি আয়াত উল্লেখ করেছেন যেসব আয়াতে একবচনের জন্য বহুবচনের শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। (আমিনী, আল গাদীর, ৩য় খণ্ড, পৃ. ১৬৪)

২. যামাখশারী তাঁর ‘আল কাশশাফ’ তাফসীর গ্রন্থে এর কারণ হিসেবে বলেছেন:

অন্যদের এমন কাজে মানুষকে উৎসাহিত করার জন্য এই আয়াতে বহুবচন ব্যবহার করা হয়েছে। মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে যে, মুমিন ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য এমনই হতে হবে যাতে করে তারা এরূপ ভাল কাজে আগ্রহী হয়ে উঠে এবং তা সম্পাদনে বিলম্ব না করে, যদি নামাজরত অবস্থায়ও থাকে। এমন ভালও মঙ্গলজনক কাজে যেন নামাজ শেষ হওয়ারও অপেক্ষা না করে। (যামাখশারী, কাশশাফ, ১ম খণ্ড, পৃ.-৬৪৯)

৩. আল্লামা তাবারসী মনে করেন : হযরত আলী (আ.) এর সম্মান ও শ্রেষ্ঠত্ব নির্দেশের জন্যই বহুবচনের শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। সম্মান ও শ্রেষ্ঠত্বের কারণে বহুবচনের শব্দ একবচনের স্থানে ব্যবহৃত হয় আর এটা ভাষাবিদদের নিকট একটি মামূলী ব্যাপার, সে জন্য কোন দলীল প্রমাণেরও প্রয়োজন হয়না। (তাবারসী, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৩২৭)

অন্যান্য গ্রন্থেও এ বিষয়টি গুরুত্বের সাথে আলোচনা করা হয়েছে। (ফাখরুদ্দিন রাযী, প্রাগুক্ত; তুসী, আল-ইকতিসাদ ফিমা ইয়াতাআল্লাকু বিল ইতিকাদ, পৃ.-৩২৩; তাবাতাবাই, প্রাগুক্ত; মিনহাজুস সাদেকীন, প্রাগুক্ত; আলুসী, প্রাগুক্ত)

সূয়ুতী, আল-মাযহার গ্রন্থে লিখেছেন :

একজন শ্রোতার ক্ষেত্রে বহুবচনের শব্দ ব্যবহার করা এটা আরবদের একটা রীতি। যেমন কোন উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিকে বলা হয়ে থাকে : «انظروا فی امری» অর্থাৎ আমার ব্যাপারে আপনারা খেয়াল রাখবেন এবং পবিত্র কোরআনেও এসেছে- «ربّ ارجعون»  হে আমার পালন কর্তা আমাকে আপনারা (পুনরায় দুনিয়ায়) ফিরে যেতে দিন। (সূয়ুতী, আল-মাযহার ফি উলুমিল লুগাহ ওয়া আনওয়ায়িহা, ১ম খণ্ড, পৃ.-৩৩৩; আল-আমিন, আযওয়াউল বায়ান ফি ইযাহিল কোরআন বিল কোরআন, ৫ম খণ্ড, পৃ.-৩৫৫; হালাবি, আদ-দুররুল মাসূন ফি ইলমিল কিতাবিল মাকনূন, ৫ম খণ্ড, পৃ.-২০০; ছাফী, প্রাগুক্ত, ১৮তম খণ্ড, পৃ.-২০৯)

৪. এই কারণে আহলে বাইতের অনুসারীদের বিভিন্ন গ্রন্থে যে সমস্ত রেওয়াইয়াত রয়েছে (কুলায়নি, উসূলে কাফি, ২য় খণ্ড, পৃ.-৩৯৭) এই আয়াত আহলে বাইতের ইমামদের সকলের ইমামতের প্রমাণ স্বরূপ। শুধু আলী (আ.) এর জন্যই নির্দিষ্ট নয় বরং সমস্ত ইমামের ইমামতকেই প্রমাণ করার জন্য। কিন্তু যেহেতু রাসূল (সা.) এর পর প্রথম খলিফা কে?- এ বিষয়টি নিয়ে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে একটা মৌলিক মতবিরোধ রয়েছে। সেজন্য আহলে বাইতের অনুসারীদের পক্ষ থেকে শুধু আলী (আ.) এর খেলাফতকে প্রমাণ করার জন্যই এটা উপস্থাপন করা হয়। আর একবচনের স্থলে বহুবচনের ব্যবহার আরবি ভাষার নিয়মানুসারেই হয়েছে।

৫. হামল বার মা’না বা ভাবার্থের ওপর প্রয়োগ- এর নিয়ম অনুসারেও একবচনের ক্ষেত্রে বহুবচনের ব্যবহারের বিশুদ্ধতা প্রমাণিত হয়। এটি আরবি ব্যাকরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি, আরবি সাহিত্যের বিভিন্ন গ্রন্থে এর অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ: পুংলিঙ্গ কে স্ত্রীলিঙ্গ, আবার স্ত্রীলিঙ্গকে পুংলিঙ্গ, অনুরূপভাবে বহুবচনের শব্দ দ্বারা একবচনের উদ্দেশ্য আবার একবচনের শব্দ দ্বারা বহুবচনকে উদ্দেশ্য করা হয় এটা হামল বার মা’না এর নিয়মের অন্তর্ভুক্ত। (ইবনে জিন্নী, আল খাসায়িস, ২য় খণ্ড, পৃ.-৪১১) অর্থাৎ আরবি সাহিত্য ও ব্যাকরণে অনেক ক্ষেত্রেই সর্বনাম বা ইঙ্গিতবাচক বিশেষ্য «اسم اشارة» শব্দটি পূর্বের যে শব্দটিকে নির্দেশ করছে বচন ও লিঙ্গের ক্ষেত্রে তার অনুরূপ হয় না।

আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম খলীফাতুল বিলা ফাশাল

নিবেদক
__________ মোঃ আলী হুসাইন

চলবে

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিমআল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদপবিত্র কুরআন ও রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম এর হাদিস থেকে আমিরুল মোমেনীন আলী ইবনে আবি তালিব আঃ এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ হাদিসমহানবী হযরত মুহাম্মদ ‎(সা.)-এর উত্তরাধিকারী,তাঁর নবুওয়াতের মিশনের প্রধান সাহায্যকারী এবং দুনিয়া ও আখেরাতে রাসূলের ভ্রাতা আলী ‎(আ.) ‏আবরাহার পবিত্র মক্কা আক্রমণের ৩৩ বছর পর ১৩ রজব পবিত্র কা’বা শরীফে জন্মগ্রহণ করেন। মহান আল্লাহর আদেশে তাঁর নাম রাখা হয় আলী।শিশুকাল থেকেই মহানবী ‎(সা.)-এর সাথে হযরত আলীর বিশেষ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ সম্পর্কে আলী ‎(আ.) ‏নিজেই বলেছেন ‎: ‘...তিনি আমাকে তাঁর কোলে রাখতেন যখন আমি শিশু ছিলাম। তিনি আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরতেন এবং তাঁর বিছানায় শুইয়ে রাখতেন। তাঁর পবিত্র দেহ আমার দেহকে স্পর্শ করত এবং তিনি আমাকে তাঁর শরীরের সুগন্ধির ঘ্রাণ নেওয়াতেন। তিনি খাদ্য-দ্রব্য চিবিয়ে আমার মুখে পুরে দিতেন।...’১হযরত আবু তালিবের সংসারের ব্যয়ভার কমানোর জন্য হযরত আলীর বালক বয়সেই মহানবী ‎(সা.) ‏তাঁকে নিজের কাছে নিয়ে আসেন। তখন থেকে তিনি রাসূলের সার্বক্ষণিক সঙ্গী হয়ে যান। রাসূল হেরা পর্বতের গুহায় আল্লাহর ইবাদাত করতে গেলেও তাঁকে সাথে নিয়ে যেতেন। হযরত আলী বলেন ‎: ‘তিনি ‎(মহানবী) ‏প্রতি বছর হেরাগুহায় একান্ত নির্জনে বাস করতেন। আমি তাঁকে দেখতাম। আমি ব্যতীত আর কোন লোকই তাঁকে দেখতে পেত না। ঐ সময় রাসূলুল্লাহ্ ও খাদীজাহ্ ব্যতীত কোন মুসলিম পরিবারই পৃথিবীর বুকে ছিল না। আমি ছিলাম তাঁদের পরিবারের তৃতীয় সদস্য। আমি ওহী ও রেসালতের আলো প্রত্যক্ষ করেছি এবং নবুওয়াতের সুবাস ও সুঘ্রাণ অনুভব করেছি।’২তিনি মহানবীর প্রতি নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁকে অনুসরণ করতেন। তিনি বলেন ‎: ‘উষ্ট্র শাবক যেমনভাবে উষ্ট্রীকে অনুসরণ করে ঠিক সেভাবে আমি তাঁকে অনুসরণ করতাম। তিনি প্রতিদিন তাঁর উন্নত চরিত্র থেকে একটি নিদর্শন আমাকে শিক্ষা দিতেন এবং আমাকে তা পালন করার নির্দেশ দিতেন।... ‏তাঁর ওপর যখন ওহী অবতীর্ণ হয়েছিল তখন আমি শয়তানের ক্রন্দন ধ্বনি শুনেছিলাম। তাই আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম ‎: ‏হে রাসূলুল্লাহ্! ‏এ ক্রন্দন ধ্বনি কার? ‏তখন তিনি আমাকে বলেছিলেন ‎: ‏এই শয়তান এখন থেকে তার পূজা ‎(ইবাদাত) ‏করা হবে না বলে হতাশ হয়ে গেছে। নিশ্চয় আমি যা শুনি তুমি তা শোন এবং আমি যা দেখি তা দেখ। তবে তুমি নবী নও,কিন্তু ‎[নবীর] ‏সহকারী এবং নিঃসন্দেহে তুমি মঙ্গল ও কল্যাণের ওপরই আছ।’৩আর তাই মহানবী ‎(সা.)-এর নবুওয়াতের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসার পর তিনিই সর্বপ্রথম তাঁর ওপর ঈমান আনেন এবং তিনিই তাঁর সাথে নামায আদায় করা প্রথম ব্যক্তি। ইমাম মালেক বর্ণনা করেছেন ‎: ‘মহানবী ‎(সা.) ‏সোমবারে নবুওয়াত প্রাপ্ত হন এবং আলী মঙ্গলবারে তাঁর ওপর ঈমান আনেন।’৪হযরত আলী নিজেই বলেন ‎: ‘আমি আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসূলের ভ্রাতা এবং তাঁর নবুওয়াতের সবচেয়ে বড় বিশ্বাসস্থাপনকারী। একমাত্র মিথ্যাবাদী ছাড়া আমার পর কেউ এ দাবি করবে না। অন্য লোকদের নামায পড়ারও ৭ বছর আগে থেকে আমি নামায পড়েছি।’৫হযরত আলী ‎(আ.)-এর প্রসিদ্ধ উপাধিরাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏হযরত আলীকে বিভিন্ন উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন। এর মধ্যে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ হচ্ছে সিদ্দিকে আকবার,ফারুকে আযম,আসাদুল্লাহ ও মুরতাজা।পবিত্র কুরআনে হযরত আলী ‎(আ.)-এর মর্যাদাহযরত আলীর শানে পবিত্র কুরআনের অনেক আয়াত নাযিল হয়েছে। ইবনে আসাকির হযরত ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা করেছেন যে,কোন ব্যক্তির গুণ বর্ণনায় এত অধিক কুরআনের বাণী অবতীর্ণ হয়নি যা হযরত আলী সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস আরও বলেছেন যে,হযরত আলীর শানে তিনশ’ ‏আয়াত নাযিল হয়েছে এবং তাঁর গুণাবলি অত্যধিক ও প্রসিদ্ধ।৬ পবিত্র কুরআনের নাযিলকৃত আয়াতগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নিম্নে উল্লেখ করা হল ‎:১. ‏সূরা বাকারার ২০৭ নং আয়াতوَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَشْرِي نَفْسَهُ ابْتِغَاءَ مَرْضَاتِ اللَّهِ وَاللَّهُ رَءُوفٌ بِالْعِبَادِ‘এবং মানুষের মধ্যে এমনও আছে,যে আল্লাহর সন্তোষ লাভের জন্য নিজের জীবন পর্যন্ত বিক্রয় করে দেয় এবং আল্লাহ ‎(এরূপ) ‏বান্দাদের প্রতি অতিশয় অনুগ্রহশীল।’সালাবী তাঁর তাফসীর গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন যে,রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏যখন মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করার প্রস্তুতি নিলেন সেই সময় হযরত আলীকে তাঁর বিছানায় শুয়ে থাকার নির্দেশ দেন যাতে কাফির-মুশরিকরা মনে করে যে,রাসূল তাঁর নিজ ঘরেই রয়েছেন। আলী ‎(আ.) ‏নির্দ্বিধায় এ নির্দেশ পালন করলে মহান আল্লাহ এ আয়াত নাযিল করেন।৭ ২. ‏সূরা আলে ইমরানের ৬১ নং আয়াতفَمَنْ حَاجَّكَ فِيهِ مِنْ بَعْدِ مَا جَاءَكَ مِنَ الْعِلْمِ فَقُلْ تَعَالَوْا نَدْعُ أَبْنَاءَنَا وَأَبْنَاءَكُمْ وَنِسَاءَنَا وَنِسَاءَكُمْ وَأَنْفُسَنَا وَأَنْفُسَكُمْ ثُمَّ نَبْتَهِلْ فَنَجْعَلْ لَعْنَتَ اللَّهِ عَلَى الْكَاذِبِينَ‘অতঃপর তোমার নিকট যখন জ্ঞান ‎(কুরআন) ‏এসে গেছে,এরপরও যদি কেউ ‎(খ্রিস্টান) ‏তোমার সাথে তার ‎(ঈসার) ‏সম্বন্ধে তর্ক-বিতর্ক করে,তবে বল,‘(ময়দানে) ‏এস,আমরা আহ্বান করি আমাদের পুত্রদের ও তোমাদের পুত্রদের,আমাদের নারীদের ও তোমাদের নারীদের এবং আমাদের সত্তাদের ও তোমাদের সত্তাদের;’ ‏অতঃপর সকলে মিলে ‎(আল্লাহর দরবারে) ‏নিবেদন করি এবং মিথ্যাবাদীদের ওপর আল্লাহর অভিসম্পাত বর্ষণ করি।’ঘটনাটি এরূপ ‎: ‏রাসূলুল্লাহ্ ‎(সা.)-এর নবুওয়াতের সত্যতা যাচাই করার জন্য নাজরানের একটি খ্রিস্টান প্রতিনিধিদল মদীনায় আসল। তাদের সাথে আলোচনা ফলপ্রসূ হলো না। রাসূল ‎(সা.) ‏হযরত ঈসা ‎(আ.) ‏সম্বন্ধে প্রতিনিধিদের বললেন যে,তিনি আল্লাহর পুত্র নন,বরং আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। রাসূলুল্লাহ্ হযরত ঈসার জন্মের ব্যাপারে হযরত আদমের উদাহরণও দিলেন। কিন্তু তারা কোন কথাই শুনল না। অবশেষে তিনি আল্লাহর আদেশে পরস্পরের বিরুদ্ধে দোয়া ও মিথ্যাবাদীদের ওপর অভিশাপ বর্ষণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন,যাকে ‎‘মুবাহিলা’ ‏বলে। স্থির করা হল যে,নির্দিষ্ট স্থানে নির্দিষ্ট সময়ে উভয়ে নিজ নিজ পুত্রদের,নারীদের ‎(কন্যা সন্তানদের) ‏এবং তাদের নিজেদের ‎‘সত্তা’ ‏বলে গণ্য হওয়ার যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে একত্র হবে এবং প্রত্যেকে অপরের প্রতি অভিসম্পাত ও আল্লাহর শাস্তি কামনা করবে। রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏ইমাম হুসাইনকে কোলে নিয়ে ইমাম হাসানের হাত ধরলেন এবং হযরত ফাতিমাকে নিজের পেছনে,আর হযরত আলীকে তাঁর পেছনে রাখলেন। অর্থাৎ ছেলেদের স্থানে তিনি নাতিদের,নারীদের স্থানে নিজ কন্যাকে এবং ‎‘সত্তা’ ‏বলে গণ্যদের স্থানে আলীকে নিলেন এবং দোয়া করলেন,‘হে আল্লাহ! ‏প্রত্যেক নবীর আহলে বাইত থাকে,এরা আমার আহলে বাইত। এদের সকল দোষ-ত্রুটি হতে মুক্ত ও পাক-পবিত্র রেখ।’ ‏তিনি এভাবে ময়দানে পৌঁছলে খ্রিস্টানদের নেতা আকব তা দেখে বলল,‘আল্লাহর কসম,আমি এমন নূরানী চেহারা দেখছি যে,যদি এ পাহাড়কে নিজ স্থান হতে সরে যেতে বলেন,তবে অবশ্যই সরে যাবে। সুতরাং মুবাহিলা হতে হাত গুটিয়ে নেওয়াই কল্যাণকর,অন্যথায় কিয়ামত অবধি খ্রিস্টানদের কেউ অবশিষ্ট থাকবে না।’ ‏পরিশেষে তারা জিযিরা কর দিতে সম্মত হল। এটা হযরত আলীর একটি উঁচু স্তরের ফযিলত যে,তিনি আল্লাহর আদেশে রাসূলের ‎‘নাফ্স’ (অনুরূপ সত্তা) ‏সাব্যস্ত হলেন এবং সমুদয় নবীর থেকে শ্রেষ্ঠ হলেন।৮৩. ‏সূরা নিসার ৫৯ নং আয়াত ‎يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ‘হে বিশ্বাসিগণ! ‏তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূল ও তোমাদের মধ্যে যারা নির্দেশের অধিকর্তা,তাদের আনুগত্য কর...।’ইমাম জাফর সাদিক ‎(আ.)- ‏কে জিজ্ঞেস করা হলো যে,উত্তরাধিকারীর আদেশ মান্য করা কি অবশ্যই কর্তব্য? ‏তিনি বললেন ‎: ‏হ্যাঁ,তাঁরা ঐসব ব্যক্তি যাঁদের আদেশ পালন করা এ আয়াতে ওয়াজিব করা হয়েছে...। এ আয়াত হযরত আলী বিন আবি তালিব,হযরত হাসান ও হযরত হুসাইন ‎(আ.)-এর শানে অবতীর্ণ হয়েছে।৯ ৪. ‏সূরা মায়েদার ৫৫ নং আয়াতإِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَالَّذِينَ آمَنُوا الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُمْ رَاكِعُونَ‘(হে বিশ্বাসিগণ!) ‏তোমাদের অভিভাবক তো কেবল আল্লাহ,তাঁর রাসূল এবং সেই বিশ্বাসীরা যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে এবং রুকু অবস্থায় যাকাত প্রদান করে।’শীয়া-সুন্নি উভয় মাযহাবের তফসীরকাররা একমত যে,আয়াতটি হযরত আলী ‎(আ.)-এর শানে নাযিল হয়েছে। যেমন ইবনে মারদুইয়া এবং খাতীব বাগদাদী ইবনে আব্বাস সূত্রে এবং তাবরানী ও ইবনে মারদুইয়া আম্মার ইবনে ইয়াসির ও আলী ইবনে আবি তালিব সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে,আয়াতটি আলী ইবনে আবি তালিব ‎(আ.) ‏সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে যখন তিনি রুকু অবস্থায় যাকাত দেন।ঘটনাটি এরূপ ‎: ‏একদিন হযরত আলী ‎(আ.) ‏মদীনার মসজিদে নামায পড়ছিলেন। এমন সময় একজন ভিক্ষুক এসে ভিক্ষা চাইল। কিন্তু কোন ভিক্ষা না পাওয়ায় সে ফরিয়াদ করল যে,রাসূলের মসজিদ থেকে সে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছে। এ সময় হযরত আলী রুকু অবস্থায় ছিলেন। তিনি সেই অবস্থায় তাঁর ডান হাতের আঙ্গুল থেকে আংটি খুলে নেওয়ার জন্য ভিক্ষুকের প্রতি ইশারা করেন। ভিক্ষুক তাঁর হাত থেকে আংটি খুলে নেয়। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে উপরিউক্ত আয়াত নাযিল হয়।১০৫. ‏সূরা মায়েদার ৬৭ নং আয়াতيَا أَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ مِنْ رَبِّكَ وَإِنْ لَمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ وَاللَّهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْكَافِرِينَ‘হে রাসূল! ‏যা ‎(যে আদেশ) ‏তোমার প্রতিপালকের পক্ষ হতে তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে তা পৌঁছে দাও,আর যদি তুমি তা না কর,তবে তুমি ‎(যেন) ‏তার কোন বার্তাই পৌঁছাওনি,এবং ‎(তুমি ভয় কর না) ‏আল্লাহ তোমাকে মানুষের অনিষ্ট হতে রক্ষা করবেন;এবং নিশ্চয় আল্লাহ অবিশ্বাসী সম্প্রদায়কে সঠিক পথে পরিচালিত করেন না।’যখন রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏দশম হিজরিতে বিদায় হজ্ব থেকে মদীনায় প্রত্যাবর্তন করছিলেন সে সময় আল্লাহ্ তা‘আলা এ আয়াত নাযিল করেন। ইবনে আবী হাতিম ও ইবনে আসাকির আবু সাঈদ খুদরী হতে বর্ণনা করেছেন যে,এ আয়াত গাদীরে খুম প্রান্তরে হযরত আলী ‎(আ.)-এর শানে নাযিল হয়েছে।বিদায় হজ্ব থেকে প্রত্যাবর্তন করার সময় গাদীরে খুম নামক স্থানে মহানবী ‎(সা.) ‏হযরত আলীকে তাঁর পরে সকল মুমিনের অভিভাবক বলে ঘোষণা দেন।১১এ ঘোষণা দেয়ার পর হযরত ওমর হযরত আলীর সাথে সাক্ষাৎ করে অভিনন্দন জানান এবং বলেন ‎: ‘হে আলী ইবনে আবি তালিব! ‏আপনি আজ হতে প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর মাওলা হয়ে গেলেন।’১২৬. ‏সূরা রাদের ৭ নং আয়াতإِنَّمَا أَنْتَ مُنْذِرٌ وَلِكُلِّ قَوْمٍ هَادٍ‘(হে রাসূল!) ‏তুমি তো কেবল সতর্ককারী এবং প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে এক পথ প্রদর্শক।’ইবনে মারদুইয়্যা,ইবনে জারীর,আবু নাঈম তাঁর ‎‘মারেফাত’ ‏গ্রন্থে,ইবনে আসাকির,দাইলামী ও ইবনে নাজ্জার তাঁদের স্ব স্ব গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন যে,আয়াতটি নাযিল হলে মহানবী ‎(সা.) ‏তাঁর হাত নিজের বুকে রেখে বললেন,‘আমিই সতর্ককারী।’ ‏অতঃপর আলীর কাঁধের প্রতি তাঁর হাত দ্বারা ইশারা করে বললেন,‘হে আলী! ‏তুমিই পথপ্রদর্শক এবং মানুষ আমার পর তোমার মাধ্যমে হেদায়াতপ্রাপ্ত হবে।’ ‏উক্ত রেওয়ায়েতটি শব্দের তারতম্যে ইবনে মারদুইয়্যা সাহাবী আবু বারযাহ আসলামী হতে,জীয়াফীল হযরত ইবনে আব্বাস হতে,ইবনে আহমাদ তাঁর মুসনাদে এবং ইবনে মারদুইয়্যা ও ইবনে আসাকির স্বয়ং হযরত আলী ‎(আ.) ‏হতে বর্ণনা করেছেন।১৩৭. ‏সূরা রাদের ৪৩ নং আয়াতوَيَقُولُ الَّذِينَ كَفَرُوا لَسْتَ مُرْسَلًا قُلْ كَفَى بِاللَّهِ شَهِيدًا بَيْنِي وَبَيْنَكُمْ وَمَنْ عِنْدَهُ عِلْمُ الْكِتَابِযারা অবিশ্বাস করেছে তারা বলে,‘তুমি আল্লাহর রাসূল নও।’ ‏তুমি বল,‘আমার ও তোমাদের মধ্যে ‎(রেসালাতের) ‏সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট এবং সেই ব্যক্তি যার কাছে গ্রন্থের পূর্ণ জ্ঞান রয়েছে।’অধিকাংশ তাফসীরকার স্বীকার করেছেন যে,আয়াতে বর্ণিত সেই ব্যক্তি হলেন হযরত আলী ‎(আ.)। যেমন আসমী ‎‘যায়নুল ফাতা’ ‏নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন এবং সা’লাবী আবদুল্লাহ ইবনে আতা থেকে বর্ণনা করেছেন যে,আবদুল্লাহ বিন সালাম বলতেন,‘যার কাছে গ্রন্থের পূর্ণ জ্ঞান আছে’-এর উদ্দিষ্ট হযরত আলী ‎(আ.)। এজন্যই হযরত আলী ‎(আ.) ‏বারবার বলতেন,‘আমার কাছে আমার মৃত্যুর পূর্বে যা চাও জিজ্ঞেস কর।’১৪৮. ‏সূরা নাহলের ৪৩ নং আয়াতوَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ إِلَّا رِجَالًا نُوحِي إِلَيْهِمْ فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَতোমার পূর্বেও আমরা কেবল পুরুষদেরই ‎(রাসূল করে) ‏প্রেরণ করেছি যাদের প্রতি আমরা প্রত্যাদেশ প্রেরণ করতাম;যদি তোমরা না জেনে থাক তবে যারা জানে তাদের জিজ্ঞেস কর।আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেন ‎: ‏জ্ঞানী ব্যক্তিরা অর্থাৎ আহলুয যিকর হলেন হযরত মুহাম্মাদ ‎(সা.),হযরত আলী ‎(আ.),হযরত ফাতেমা ‎(আ.),হযরত হাসান ও হুসাইন ‎(আ.)। যাবের ইবনে আবদুল্লাহ বলেছেন ‎: ‏যখন এই আয়াত নাযিল হল তখন হযরত আলী বললেন ‎: ‏আমরাই হলাম জ্ঞানের ভাণ্ডার।১৫৯. ‏সূরা আহযাবের ৩৩ নং আয়াতوَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى وَأَقِمْنَ الصَّلَاةَ وَآتِينَ الزَّكَاةَ وَأَطِعْنَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا‘হে নবী পরিবার! ‏আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদের সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে।’উম্মুল মুমিনীন হযরত উম্মে সালামার ঘরে এ আয়াত নাযিল হলে রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏হযরত ফাতিমা,ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন ‎(আ.)-কে ডাকেন এবং তাঁদেরকে একটি চাদরে ঢেকে নেন। হযরত আলী তাঁর পেছনে ছিলেন। তিনি তাঁকেও চাদরে ঢেকে নেন। অতঃপর বলেন ‎: ‘হে আল্লাহ্! ‏এরা আমার আহলে বাইত। অতএব,তুমি তাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করে দাও এবং তাদেরকে উত্তমরূপে পবিত্র কর।’ ‏তখন উম্মে সালামা বলেন ‎: ‘হে আল্লাহর রাসূল! ‏আমিও কি তাদের অন্তর্ভুক্ত?’ ‏তিনি বলেন ‎: ‘তুমি স্ব স্থানে আছ এবং তুমি কল্যাণের মধ্যেই আছ।’১৬হযরত উম্মে সালামা ছাড়াও হযরত আবু সাঈদ খুদরী ও আনাস ইবনে মালিক কর্তৃক এ হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে।১৭১০. ‏সূরা শূরার ২৩ নং আয়াতقُلْ لَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا إِلَّا الْمَوَدَّةَ فِي الْقُرْبَى‘বল,আমি এর বিনিময়ে তোমাদের নিকট থেকে আমার নিকটাত্মীয়দের প্রতি ভালবাসা ছাড়া আর কোন প্রতিদান চাই না।’রাসূলুল্লাহ ‎(সা.)-এর নিকটাত্মীয় আহলে বাইতের সদস্যদের প্রতি ভালবাসা পোষণকে এ আয়াত দ্বারা মহান আল্লাহ মুসলমানদের জন্য ফরয বলে ঘোষণা করেন।হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেছেন ‎: ‏যখন এ আয়াত নাযিল হল তখন সাহাবিগণ জিজ্ঞেস করলেন,হে রাসূলুল্লাহ! ‏আপনার নিকটাত্মীয়,যাদেরকে ভালবাসা আমাদের ওপর ওয়াজিব করা হয়েছে তারা কারা? ‏রাসূল ‎(সা.) ‏বললেন ‎: ‏আলী,ফাতেমা,হাসান ও হুসাইন।১৮রাসূলুল্লাহ ‎(সা.)-এর হাদীসে আলী ‎(আ.)হযরত আলীর মর্যাদা সম্পর্কে মহানবী ‎(সা.)-এর নিকট থেকে অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এখানে কয়েকটি উল্লেখ করা হল ‎:১. ‏সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস বলেন,নবী ‎(সা.) ‏তাবুক যুদ্ধের সময় আলীকে লক্ষ্য করে বলেছেন ‎: ‘তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে,মর্যাদার দিক থেকে মূসার নিকট হারুন যে পর্যায়ে ছিলেন,তুমিও আমার নিকট ঐ পর্যায়ে রয়েছ?’১৯২. ‏অন্য একটি হাদীসে এসেছে ‎: ‏রাসূল বলেন ‎: ‘তুমি তো আমার নিকট তদ্রূপ যেরূপ হারুনের স্থান মূসার নিকট। পার্থক্য এতটুকু যে,আমার পরে কোন নবী নেই।’২০৩. ‏রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏ইমাম হাসান ও হুসাইনের হাত ধরে বলেন ‎: ‘যে ব্যক্তি আমাকে ভালবাসে এবং এ দু’জন ও তাদের পিতা-মাতাকে ভালবাসে,সে কিয়ামতের দিন আমার সাথে একই মর্যাদায় অবস্থান করবে।’২১৪. ‏আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণিত। রাসূল বলেছেন ‎: ‘আলীর চেহারার দিকে তাকানোও ইবাদত।’২২৫. ‏রাসূলুল্লাহ্ ‎(সা.) ‏আলী ‎(আ.)-কে সম্বোধন করে বলেছিলেন ‎: ‘মুমিনরাই তোমাকে মহব্বত করবে এবং মুনাফিকরাই তোমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবে।’২৩৬. ‏তিরমিযী,নাসাঈ ও ইবনে মাযাহ হুবশী ইবনে জুনাদাহ্ ‎(রা.) ‏থেকে বর্ণনা করেছেন। রাসূল ‎(সা.) ‏বলেছেন ‎: ‘আলী আমা থেকে এবং আমি আলী থেকে। যে ব্যক্তি আলীকে ভালবেসেছে,সে আমাকে ভালোবেসেছে। আর যে ব্যক্তি আলীকে ভালবেসেছে,সে আল্লাহকে ভালবেসেছে। যে ব্যক্তি আলীর সাথে শত্রুতা পোষণ করেছে সে আমার সাথে শত্রুতা পোষণ করেছে। আর যে আমার শত্রু সে আল্লাহর শত্রু। যে ব্যক্তি আলীকে কষ্ট দিয়েছে,সে আমাকে কষ্ট দিয়েছে।’২৪৭. ‏রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏বলেন ‎: ‘(হে আলী!) ‏দুনিয়া ও আখেরাতে তুমি আমারই ভাই।’২৫৮. ‏আবদুল্লাহ ইবনে বুরাইদা ‎(র.) ‏থেকে তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন ‎: ‏রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏বলেছেন ‎: ‘চার ব্যক্তিকে ভালবাসতে আল্লাহ আমাকে আদেশ করেছেন এবং তিনি আমাকে এও অবহিত করেছেন যে,তিনিও তাদের ভালবাসেন। বলা হল ‎: ‏হে আল্লাহর রাসূল! ‏আমাদের তাদের নামগুলো বলুন। তিনি বলেন ‎: ‏আলীও তাদের অন্তর্ভুক্ত। এ কথা তিনি তিনবার বলেন। ‎(অবশিষ্ট তিনজন হলেন) ‏আবু যার,মিকদাদ ও সালমান।...’২৬৯. ‏জাবির ‎(রা.) ‏থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন ‎: ‏তায়েফ অভিযানের দিন রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏আলীকে কাছে ডেকে তার সাথে চুপিসারে আলাপ করেন। লোকেরা বলল ‎: ‏তিনি তাঁর চাচাত ভাইয়ের সাথে দীর্ঘক্ষণ চুপিসারে কথা বললেন। রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏বলেন ‎: ‏আমি তার সাথে চুপিসারে কথা বলিনি;বরং আল্লাহই তার সাথে চুপিসারে কথা বলেছেন। ‎(অর্থাৎ তার সাথে চুপিসারে কথা বলার জন্য আল্লাহ্ই আমাকে আদেশ করেছেন।)২৭হযরত আলী সম্পর্কে অন্যান্য সাহাবীহযরত আবু বকর প্রায়ই হয়রত আলীর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতেন। হযরত আয়েশা এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন ‎: ‘আমি রাসূলে করীমকে বলতে শুনেছি,আলীর মুখ দেখা ইবাদাতের শামিল।’২৮হযরত উমর বিন খাত্তাব বলতেন,হযরত আলী বিন আবি তালিবের তিনটি বৈশিষ্ট্য ছিল। যদি তার একটি আমার থাকত তাহলে আমি বলতাম যে,আমাকে লাল রঙের একটি উট দেয়া হলে তা অপেক্ষাও আমি তা পছন্দ করতাম। তাঁকে এ তিনটি বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন ‎: ‏১.তাঁর বিয়ে হয় রাসূল ‎(সা.)-এর কন্যার সাথে,২. ‏তাঁর সঙ্গে রাসূলে করীমের মসজিদে অবস্থান এবং যা রাসূলে করিমের জন্য বৈধ ছিল তার জন্যও তা বৈধ ছিল এবং ৩. ‏খায়বার যুদ্ধের পতাকা বহনের দায়িত্ব তাঁর ওপর ন্যস্ত ছিল।২৯হযরত উমর বলেছেন,হে আল্লাহ! ‏আমার ওপর এমন কোন বিপদ দিও না যখন আবুল হাসান ‎(আলী) ‏আমার নিকট উপস্থিত না থাকে। কারণ,তিনি আমার নিকট উপস্থিত থাকলে আমাকে সে বিপদ থেকে নিষ্কৃতি দেবেন।’৩০তাবরানী হযরত ইবনে আব্বাস থেকে রেওয়ায়াত করেছেন যে,হযরত আলীর আঠারটি বৈশিষ্ট্য এমন ছিল যা সমগ্র উম্মতের কারও ছিল না।’৩১তথ্যসূত্র১. ‏মমতাজ বেগম কর্তৃক প্রকাশিত নাহজ আল বালাঘা,২য় মুদ্রণ,আল খুতবাতুল কাসেয়াহ্,খুতবা নং ১৯১২. ‏প্রাগুক্ত৩. ‏প্রাগুক্ত৪. ‏মুসতাদরাকে হাকেম,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏১১২;এটি ইমাম মালেক কর্তৃক বর্ণিত। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে হেরা গুহায় জিবরাঈল ‎(আ.) ‏কর্তৃক রাসূলুল্লাহ ‎(সা.)-এর নবুওয়াত ঘোষণার পর পরই হযরত আলী ‎(আ.) ‏তাঁর ঈমান আনার বিষয়টি প্রকাশ করেন।৫. ‏সুনানে ইবনে মাজাহ্,১ম খণ্ড,পৃ. ‏৪৪৬. ‏নূর-এ-সাকালাইন কর্তৃক প্রকাশিত,সাইয়্যেদ আলী জাফরী প্রণীত আল মুরতাজা,পৃ. ‏৩০।৭. ‏এহইয়াউ উলুমিদ্দীন,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏২৩৮;নুরুল আবসার,পৃ. ‏৮৬,মুসতাদরাকে হাকেম,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏৪;তাফসীরে কুমী,১ম খণ্ড,পৃ. ‏৭১;তাযকিরাতু সিবতে ইবনে যাওযী,পৃ. ‏২১;ইয়ানাবিউল মাওয়াদ্দাহ,পৃ. ‏৯২।৮. ‏তাফসীরে জালালাইন,১ম খণ্ড,পৃ.৬০;বায়দ্বাভী,১ম খণ্ড,পৃ. ‏১১৮,তাফসীরে দুররুল মানসুর,২য় খণ্ড,পৃ. ‏৩৯,মিশর মুদ্রণ;মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বাল,১ম খণ্ড,পৃ. ‏১৮৫;৯. ‏মাজমাউল বায়ান,২য় খণ্ড,পৃ. ‏১৪১;তাফসীরে কুমী,১ম খণ্ড,পৃ. ‏১৪১;ইয়ানাবিউল মাওয়াদ্দাহ,পৃ. ‏২১;শাওয়াহেদুত তানযিল,১ম খণ্ড,পৃ. ‏১৪৮;তাফসীরে ফুরাত,পৃ.২৮১০. ‏তাফসীরে তাবারী,৬ষ্ঠ খণ্ড,পৃ. ‏১৬৫;তাফসীরে রাযী,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏৪৩১;মানাকেবে খাওয়ারেযমী,পৃ. ‏১৭৮;যাখায়েরুল উকবা,পৃ. ‏১০২;তাফসীরে ইবনে কাসীর,২য় খণ্ড,পৃ. ‏৭১;আল- ‏বেদায়া ওয়ান নেহায়া,৭ম খণ্ড,পৃ. ‏৩৫৭;সাওয়ায়েকে মুহরিকাহ,পৃ. ‏২৫;১১. ‏মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বাল,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ‏৩৭২;ইমাম নাসাঈ প্রণীত খাসায়েসে আমীরুল মুমিনীন,পৃ. ‏২১;মুসতাদরাকে হাকেম,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏১০৯;আল গাদীর,১ম খণ্ড,পৃ. ‏২১৪ ও ২২৯;শাওয়াহেদুত তানযিল,১ম খণ্ড,পৃ. ‏১৮৭ ।১২. ‏তাফসীরে তাবারী,৩য় খণ্ড,মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বল,৩য় খণ্ড,দারে কুতনী।১৩. ‏তাফসীরে দুররে মানসুর,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ‏৪৫ দ্রষ্টব্য।১৪. ‏তাফসীরে দুররে মানসুর,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ‏৬৯ ।১৫. ‏কেফাইয়াতুল মুওয়াহহিদীন,২য় খণ্ড,পৃ. ‏৬৫০;মাজমাউল বায়ান,২য় খণ্ড,পৃ. ‏৪১৩;কানযুল উম্মাল,৬ষ্ঠ খণ্ড,পৃ. ‏১৫৬;তাফসীরে তাবারী,১৪তম খণ্ড,পৃ. ‏১০৮ ।১৬. ‏বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত জামে আত-তিরমিযী,৬ষ্ঠ খণ্ড,হাদীস নং ৩৭২৫,পৃ. ‏৩৫৯ ।১৭. ‏মুসনাদে আহমাদ,১ম খণ্ড,পৃ. ‏৩৩১;যাখায়েরুল উকবা,পৃ. ‏২১,তাফসীরে তাবারী,২২তম খণ্ড,পৃ. ‏৮;মুসতাদরাকে হাকেম,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏২০৮;ফাজায়েলে খামসাহ,১ম খণ্ড,পৃ. ‏২২৪;শাওয়াহেদুত তানযিল,২য় খণ্ড,পৃ. ‏১০ ।১৮. ‏যাখায়েরুল উকবা,পৃ. ‏৯ ও ১২;তাফসীরে যামাখশারী,২য় খণ্ড,পৃ. ‏৩৩৯;সাওয়ায়েকে মুহরিকাহ,পৃ. ‏১০১,তাফসীরে দুররুল মানসূর,৬ষ্ঠ খণ্ড,পৃ. ‏৭;মুসনাদে আহমাদ,১ম খণ্ড,পৃ. ‏২২৯;আল গাদীর,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏১৭২;শাওয়াহেদুত তানযিল,২য় খণ্ড,পৃ. ‏৩০ ।১৯. ‏আধুনিক প্রকাশনী কর্তৃক প্রকাশিত সহীহ আল বুখারী,৩য় খণ্ড,হাদীস নং ৩৪৩১;বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত সহীহ মুসলিম,৭ম খণ্ড,হাদীস নং ৬০৪২ ।২০. ‏বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত সহীহ মুসলিম,৭ম খণ্ড,হাদীস নং ৬০৪০ ও জামে আত-তিরমিযী,৬ষ্ঠ খণ্ড,হাদীস নং ৩৬৬৮ ।২১. ‏বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত জামে আত-তিরমিযী,৬ষ্ঠ খণ্ড,হাদীস নং ৩৬৭০২২. ‏এমদাদীয়া লাইব্রেরী কর্তৃক প্রকাশিত হযরত আলী ইবনে আবি তালিব ‎(রা.),পৃ. ‏১৫ ।২৩. ‏বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত জামে আত-তিরমিযী,৬ষ্ঠ খণ্ড,হাদীস নং ৩৬৭৩ ।২৪. ‏এমদাদিয়া লাইব্রেরী কর্তৃক প্রকাশিত হযরত আলী ‎(রা.),পৃ. ‏১৫-১৬ ।২৫. ‏বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত জামে আত-তিরমিযী,৬ষ্ঠ খণ্ড,হাদীস নং ৩৬৫৮;২৬. ‏প্রাগুক্ত,হাদীস নং ৩৬৫৬;২৭. ‏প্রাগুক্ত,হাদীস নং ৩৬৬৪২৮. ‏সাওয়ায়েকে মুহরিকাহ,পৃ. ‏১৭৫ ।২৯. ‏সাওয়ায়েকে মুহরিকাহ,৩য় খণ্ড,এবং মুসতাদরাকে হাকেম,৩য় খণ্ড ।৩০. ‏মুনতাখাবে কানজুল উম্মাল,৩য় খণ্ড ।৩১. ‏সাওয়ায়েকে মুহরিকাহ ১১৩ ।(প্রত্যাশা,৩য় বর্ষ, ‏১ম সংখ্যাপ্রচারে মোঃ জাহিদ হুসাইন

শিশু ইমাম হযরত জাওয়াদ (আ.)'র জন্মবার্ষিকীসকল মোমিন মোমিনা কে জানাই ঈদ মোবারক🎂🎂🎂🎂🎂(((পর্ব ১)))🎂🎂🎂🎂🎂দশই রজব ইসলামের মহাখুশির দিন। এই দিনে পৃথিবীতে এসেছিলেন মাওলা মোহাম্মদ (সা) পবিত্র আহলে বাইতের সদস্য নবম ইমাম হযরত জাওয়াদ বা তাকি(আ)। নবীজীর আহলে বাইতের সদস্যরা কেবল মুসলমানদেরই ধর্মীয় নেতা নন বরং যারাই সত্য পথের সন্ধানী কিংবা কল্যাণকামী-তাদের সবারই নেতা।আহলে বাইতের এই মহান ইমাম হযরত জাওয়াদ (আ) এর জন্ম-বার্ষিকীতে আপনাদের সবার প্রতি রইলো অশেষ অভিনন্দন ও প্রাণঢালা মোবারকবাদ এবং মাওলা মোহাম্মদ (সা.) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের শানে পেশ করছি অসংখ্য দরুদ ও সালাম ।ইমাম জাওয়াদের জন্ম হয়েছিল ১৯৫ হিজরিতে তথা ৮১১ খ্রিস্টাব্দের ১২ এপ্রিল পবিত্র মদীনায়। মজলুম ও দরিদ্রদের প্রতি ব্যাপক দানশীলতা ও দয়ার জন্য তিনি 'জাওয়াদ' উপাধি পেয়েছিলেন। তাকি বা খোদাভীরু ছিল তাঁর আরেকটি উপাধি। জগত-বিখ্যাত মহাপুরুষ ইমাম রেজা (আ) ছিলেন তাঁর বাবা। আর তাঁর মায়ের নাম ‘সাবিকাহ’ বলে জানা যায়। ইমাম রেজা (আ) তাঁর এই স্ত্রীর নাম রেখেছিলেন খিইজরান। তিনি ছিলেন মহানবীর স্ত্রী উম্মুল মু’মিনিন হযরত মারিয়া কিবতির (আ) বংশধর। ইমাম জাওয়াদ (আ) ১৭ বছর ইমামতের দায়িত্ব পালনের পর মাত্র ২৫ বছর বয়সে শাহাদত বরণ করেন। তিনিই হলেন ইসলামের ইতিহাসের সবচেয়ে কম বয়স্ক ইমাম। আহলে বাইতের অন্য ইমামগণের মত ইমাম জাওয়াদ (আ.)ও ছিলেন উচ্চতর নৈতিক গুণ, জ্ঞান ও পরিপূর্ণতার অধিকারী। ইসলামের মূল শিক্ষা ও সংস্কৃতির পুনরুজ্জীবন এবং বিকাশ ছিল তাঁর তৎপরতার মূল লক্ষ্য বা কেন্দ্রবিন্দু। সেযুগের সব মাজহাবের জ্ঞানী-গুণীরা ইমাম জাওয়াদ (আ.)'র উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন।সমসাময়িক যুগের প্রখ্যাত সুন্নি চিন্তাবিদ কামালউদ্দিন শাফেয়ি ইমাম জাওয়াদ (আ.) সম্পর্কে বলেছেন, "মুহাম্মাদ বিন আলী তথা ইমাম জাওয়াদ (আ.) ছিলেন অত্যন্ত উঁচু মর্যাদা ও গুণের অধিকারী। মানুষের মুখে মুখে ফিরতো তাঁর প্রশংসা। তাঁর উদারতা, প্রশস্ত দৃষ্টি ও সুমিষ্ট কথা সবাইকে আকৃষ্ট করত। যে-ই তাঁর কাছে আসতো নিজের অজান্তেই এই মহামানবের অনুরাগী হয়ে পড়ত এবং তাঁর কাছ থেকে জ্ঞান অর্জন করত।" ইমাম জাওয়াদ (আ) মাত্র সাত বা আট বছর বয়সে ইমামতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এতো অল্প বয়সে তাঁর ইমামতিত্বের বিষয়টি ছিল যথেষ্ট বিস্ময়কর। ফলে অনেকেই এ বিষয়ে সন্দেহ করতেন। অথচ আল্লাহর তো এই শক্তি আছে যে তিনি মানুষকে তার বয়সের স্বল্পতা সত্ত্বেও পরিপূর্ণ বিবেক-বুদ্ধির পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেন। কোরানের আয়াতের ভিত্তিতে পূর্ববর্তী উম্মতের মধ্যেও এরকম উদাহরণ বহু আছে। যেমন শিশুকালে হযরত ইয়াহিয়া (আ) এর নবুয়্যত প্রাপ্তি, মায়ের কোলে নবজাতক ঈসা (আ) এর কথা বলা ইত্যাদি সর্বশক্তিমান আল্লাহর অশেষ ক্ষমতারই নিদর্শন। ইমাম জাওয়াদ (আ) শৈশব-কৈশোরেই ছিলেন জ্ঞানে-গুণে, ধৈর্য ও সহনশীলতায়, ইবাদত-বন্দেগিতে, সচেতনতায়, কথাবার্তায় শীর্ষস্থানীয় মহামানব। একবার হজ্জ্বের সময় বাগদাদ এবং অন্যান্য শহরের বিখ্যাত ফকীহদের মধ্য থেকে আশি জন মদীনায় ইমাম জাওয়াদ (আ) এর কাছে গিয়েছিলেন। তাঁরা ইমামকে বহু বিষয়ে জিজ্ঞেস করে অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত ও সন্তোষজনক জবাব পেলেন। ফলে জাওয়াদ (আ)’র ইমামতিত্বের ব্যাপারে তাদের মনে যেসব সন্দেহ ছিল-তা দূর হয়ে যায়।প্রচারে মোঃ জাহিদ হুসাইন আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম‌লা'নাতুল্লাহি আলাল কাজেবিন🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂