বেলায়েতের আয়াতের ব্যাকরণগত দিক সম্পর্কে একটি গবেষণামূলক বিশ্লেষণমূলক পোস্ট((((পর্ব ৪))))১. « هم راکعون » যদি আতফ্ হয় তাহলে এক্ষেত্রে দুটি মৌলিক নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটেছে আর এক বাক্যে দুই মৌল নীতির ব্যতিক্রম ঘটা ব্যাকরণশাস্ত্রের রীতিবিরুদ্ধ ও বাগ্মিতার পরিপন্থী হিসাবে জায়েজ ও বৈধ নয়। বিশেষ করে পবিত্র কোরআনের -সাহিত্যিকমান ও আলংকারিক (বালাগাত ও ফাসাহাত) দৃষ্টিতে যার অবস্থান শীর্ষ চূড়ায়- মধ্যে এমন বিষয় থাকা অসম্ভব। (ইবনে হিশাম আনসারী, প্রাগুক্ত, ১ম খণ্ড, পৃ. ৩২৯) এ দু’টি পরিপন্থী নীতি হল :ক. جملة اسمیة (যে বাক্যের প্রথমে ইসম বা বিশেষ্য থাকে), جملة فعلیة (যে বাক্যের প্রথমে ফেল বা ক্রিয়া থাকে) এর সাথে আতফ বা সংযুক্ত হয়েছে। কেননা নাহুশাস্ত্রবিদগণের মতে, আতফের নিয়ম হল দুটি বাক্যের রূপ একই রকম হওয়া। (সূয়ুতী, আল বাহজাতুল মারজিয়াহ ফি শারহিল আলফিয়া, পৃ-১০৪)খ. « هم راکعون » বাক্যটিকে আতফ ধরলে এর পূর্বে «یقیمون الصلاة» বাক্যটির উল্লেখ থাকায় পুনরাবৃত্তি ঘটছে অথচ নিয়ম হল পুনরাবৃত্তি না হওয়া (অর্থাৎ নামাজের পর তার একটি অংশ রুকুর উল্লেখ বাচালতার শামিল বলে মানানসই নয়)। (সাইয়েদ মুরতাজা, আশ-শাফী ফিল ইমামাহ, ২য় খণ্ড, পৃ.-২৩৭) ২. আহলে বাইতের অনুসারী ও আহলে সুন্নাতের সূত্রে এই আয়াত সম্পর্কিত যে সব রেওয়াইয়াত বর্ণিত হয়েছে তা স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত করছে “ওয়াও” حالیة (অবস্থাসূচক) অব্যয়। শেখ হুররে আমেলী উল্লিখিত বিষয়ে উভয় সূত্র থেকে বর্ণিত হাদীসসমূহ বর্ণনা করেছেন। (হুররে আমেলী, ইছবাতুল হুদা, ৩য় খণ্ড, পৃ. ১৪১।) এসব হাদীসের কোন কোনটিতে এভাবে বলা হয়েছে : আলী (আ.) রুকু অবস্থায় যাকাত দিয়েছেন। (রাযী, মাফাতিহুল গাইব, ১২তম খণ্ড, পৃ.৩৮৩; সূয়ুতী, আদ্ দুররুল মানসূর ফি তাফসীরিল মা’ছুর, ২য় খণ্ড, পৃ. ২৯৩) অন্য আরেক রেওয়ায়েতে আরো সুন্দর ও স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে নবী করীম (সা.) ভিক্ষুককে জিজ্ঞাসা করলেন: “আলী কি অবস্থায় তোমাকে দান করেছে?” ভিক্ষুক বলল: “রুকু অবস্থায়।” (সূয়ুতী, পৃ.-৩৯৪; তাবারী, দালায়িলুল ইমামাহ, পৃ.-৫৪) নাহু শাস্ত্রবিদগণ বলেছেন: কোন ব্যক্তির অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তার উত্তরে حال আসে। এই হাদীসে রাসূল (সা.) হযরত আলী (আ.) এর আংটি দান কালীন অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে ভিক্ষুক বলল: “রুকু অবস্থায়”। সুতরাং « و هم راکعون» বাক্যটি جملة حالیة (অবস্থাসূচক বাক্য)।৩. যামাখশারীও তাফসীরে কাশ্শাফে বলেছেন: “ওয়াও” حالیة বা অবস্থাসূচক অব্যয়। আহলে সুন্নাতের অন্যান্য গবেষক ও মুফাচ্ছিরগণও স্বীকার করেছেন যে এ বাক্যটি حالیة। (রাযী, ১২তম খণ্ড, পৃ.-৩৮৫; আলুসী, রুহুল মাআনী ফি তাফসীরিল কোরআনিল আযিম, ৫ম খণ্ড, পৃ.- ৪৫৮; ছাআলাবী, আল জাওয়াহিরুল হাসান, ১ম খণ্ড, পৃ.-৪৩৮; দারউইশ, এরাবুল কোরআন ওয়া বায়ানুহু, ২য় খণ্ড, পৃ.-৫০৮; ছাফী, আল জাদওয়াল ফি এরাবিল কোরআন, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ.-৩৮৬; বায়দ্বাভী, আনওয়ারুত তানযিল ওয়া আসরারুত তা’বিল, ২য় খণ্ড, পৃ.-১৩২)আহলে বাইতের অনুসারীদের তাফসীর গ্রন্থসমূহে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, “ওয়াও” حالیة হওয়ার ব্যাপারে সকলেই একমত। (তাবাতাবাই, আল-মিযান ফি তাফসীরিল কোরআন, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ.-১২; তাবারসী, মাজমাউল বায়ান, ৩য় খণ্ড, পৃ.-৩২১; কাশানী, মিনহাজুস সাদেকীন, ৩য় খণ্ড, পৃ.-২৫৫)৪. ইসলামী যুগে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কবিতাও রচিত হয়েছে, ঐসব কবিতায় লক্ষ্য করলে দেখা যায় তারাও এই বাক্যকে حال হিসেবে ধরে নিয়েছেন। যা হাসসান বিন ছাবেত এর কবিতাতেও ফুটে উঠেছে, আল্লামা আমিনীও তার বিখ্যাত গ্রন্থ “আল গাদীরে” এ কবিতাটিকে আহলে বাইতের অনুসারী এবং সুন্নিদের বিভিন্ন সূত্র থেকে বর্ণনা করেছেন। ( আমিনী, আল গাদীর ফিল কিতাব ওয়াস সুন্নাহ ওয়াল আদাব, ৩য় খণ্ড, পৃ.-৬২; আলুসী, প্রাগুক্ত; হাসকানী, শাওয়াহেদুত তানযিল লে কাওয়ায়েদুত তাফযিল, ১ম খণ্ড, পৃ.-২১৪) কবিতাটি হচ্ছে :ابا حسن تفدیک نفسی و مهجتی وکل بطئ فی الهدی و مسارعأیذهب مدحی و المحبین ضائعاً و ما المدح فی ذات الاله بضائعفأنت الذی اعطیت اذ انت راکع فدتک نفوس القوم یا خیر راکعহে আবা হাসান আমার জান প্রাণ তোমার জন্য উৎসর্গ হোক। আরও উৎসর্গ হোক তাদের প্রাণ যারা ধীর অথবা দ্রুত গতিতে হেদায়েতের পথে চলে।আমার স্তুতি এবং প্রেমিকরা যদিও হারিয়ে কিংবা নষ্ট হয়ে যাবে? কিন্তু আল্লাহর কৃত প্রশংসা শেষ হবার নয়।তুমিই তো রুকুরত অবস্থায় দান করে ছিলে। আমাদের সকলের প্রাণ তোমার জন্য উৎসর্গ হোক হে উত্তম রুকুকারী।নাহুশাস্ত্রবিদগণ বর্ণনা করেছেন: অবস্থাসূচক বাক্যে واو এর পরিবর্তে (স্থান বা কালবাচক) اذ এরও ব্যবহার হতে পারে। (ইবনে হিশাম, ২য় খণ্ড, পৃ.-২৩) কবিতার শেষ লাইনেও «و انت» এর পরিবর্তে «اذ انت» ব্যবহৃত হয়েছে যা حال এর অর্থই দেয়। কেননা তখন অর্থ হবে : “রুকু করার সময় দান করেছ”।৫. আলোচ্য আয়াতের সাথে «رایت زیدا و هو راکب» অর্থাৎ ‘আমি যায়েদকে দেখেছি এমতাবস্থায় যে সে আরোহী ছিল’ এমন বাক্য থেকে প্রথমেই যা মনে ভেসে উঠে তা হচ্ছে তা হচ্ছে و هو راکب বাক্যটি যায়েদের অবস্থা বর্ণনা করছে যে, সে আরোহী অবস্থায় আছে। (বাহরানী, আন-নাজাতু ফিল কিয়ামাহ ফি তাহকীকি আমরিল ইমামাহ, পৃ.-৯৬)বহুবচন মূলক শব্দ একবচনের অর্থে ব্যবহার করা:কেন বহুবচন মূলক শব্দকে একবচনের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে? এর উত্তরে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর উল্লেখ করা যেতে পারে :১. এ বিষয়টি শুধুমাত্র এ আয়াতেই নয় পবিত্র কোরআন ও হাদীসের পাঠ্যে অনেক স্থানেও একবচনের জায়গায় বহুবচনের শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। তন্মধ্যে মুবাহেলার আয়াত (আলে ইমরান:৬১) যেখানে হযরত আলী (আ.) এর জন্য বহুবচন «انفسنا» ও হযরত ফাতেমা (আ.) এর জন্যও বহুবচন «نسائنا» ব্যবহৃত হয়েছে। এরূপ আরো অনেক স্থানে এরূপ ভাষা প্রয়োগের দৃষ্টান্ত মুফাসসিরগণ উপস্থাপন করেছেন। আল্লামা আমিনী তার আল গাদীর গ্রন্থে প্রায় বিশটি আয়াত উল্লেখ করেছেন যেসব আয়াতে একবচনের জন্য বহুবচনের শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। (আমিনী, আল গাদীর, ৩য় খণ্ড, পৃ. ১৬৪)২. যামাখশারী তাঁর ‘আল কাশশাফ’ তাফসীর গ্রন্থে এর কারণ হিসেবে বলেছেন:অন্যদের এমন কাজে মানুষকে উৎসাহিত করার জন্য এই আয়াতে বহুবচন ব্যবহার করা হয়েছে। মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে যে, মুমিন ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য এমনই হতে হবে যাতে করে তারা এরূপ ভাল কাজে আগ্রহী হয়ে উঠে এবং তা সম্পাদনে বিলম্ব না করে, যদি নামাজরত অবস্থায়ও থাকে। এমন ভালও মঙ্গলজনক কাজে যেন নামাজ শেষ হওয়ারও অপেক্ষা না করে। (যামাখশারী, কাশশাফ, ১ম খণ্ড, পৃ.-৬৪৯)৩. আল্লামা তাবারসী মনে করেন : হযরত আলী (আ.) এর সম্মান ও শ্রেষ্ঠত্ব নির্দেশের জন্যই বহুবচনের শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। সম্মান ও শ্রেষ্ঠত্বের কারণে বহুবচনের শব্দ একবচনের স্থানে ব্যবহৃত হয় আর এটা ভাষাবিদদের নিকট একটি মামূলী ব্যাপার, সে জন্য কোন দলীল প্রমাণেরও প্রয়োজন হয়না। (তাবারসী, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৩২৭)অন্যান্য গ্রন্থেও এ বিষয়টি গুরুত্বের সাথে আলোচনা করা হয়েছে। (ফাখরুদ্দিন রাযী, প্রাগুক্ত; তুসী, আল-ইকতিসাদ ফিমা ইয়াতাআল্লাকু বিল ইতিকাদ, পৃ.-৩২৩; তাবাতাবাই, প্রাগুক্ত; মিনহাজুস সাদেকীন, প্রাগুক্ত; আলুসী, প্রাগুক্ত)সূয়ুতী, আল-মাযহার গ্রন্থে লিখেছেন :একজন শ্রোতার ক্ষেত্রে বহুবচনের শব্দ ব্যবহার করা এটা আরবদের একটা রীতি। যেমন কোন উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিকে বলা হয়ে থাকে : «انظروا فی امری» অর্থাৎ আমার ব্যাপারে আপনারা খেয়াল রাখবেন এবং পবিত্র কোরআনেও এসেছে- «ربّ ارجعون» হে আমার পালন কর্তা আমাকে আপনারা (পুনরায় দুনিয়ায়) ফিরে যেতে দিন। (সূয়ুতী, আল-মাযহার ফি উলুমিল লুগাহ ওয়া আনওয়ায়িহা, ১ম খণ্ড, পৃ.-৩৩৩; আল-আমিন, আযওয়াউল বায়ান ফি ইযাহিল কোরআন বিল কোরআন, ৫ম খণ্ড, পৃ.-৩৫৫; হালাবি, আদ-দুররুল মাসূন ফি ইলমিল কিতাবিল মাকনূন, ৫ম খণ্ড, পৃ.-২০০; ছাফী, প্রাগুক্ত, ১৮তম খণ্ড, পৃ.-২০৯)৪. এই কারণে আহলে বাইতের অনুসারীদের বিভিন্ন গ্রন্থে যে সমস্ত রেওয়াইয়াত রয়েছে (কুলায়নি, উসূলে কাফি, ২য় খণ্ড, পৃ.-৩৯৭) এই আয়াত আহলে বাইতের ইমামদের সকলের ইমামতের প্রমাণ স্বরূপ। শুধু আলী (আ.) এর জন্যই নির্দিষ্ট নয় বরং সমস্ত ইমামের ইমামতকেই প্রমাণ করার জন্য। কিন্তু যেহেতু রাসূল (সা.) এর পর প্রথম খলিফা কে?- এ বিষয়টি নিয়ে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে একটা মৌলিক মতবিরোধ রয়েছে। সেজন্য আহলে বাইতের অনুসারীদের পক্ষ থেকে শুধু আলী (আ.) এর খেলাফতকে প্রমাণ করার জন্যই এটা উপস্থাপন করা হয়। আর একবচনের স্থলে বহুবচনের ব্যবহার আরবি ভাষার নিয়মানুসারেই হয়েছে।৫. হামল বার মা’না বা ভাবার্থের ওপর প্রয়োগ- এর নিয়ম অনুসারেও একবচনের ক্ষেত্রে বহুবচনের ব্যবহারের বিশুদ্ধতা প্রমাণিত হয়। এটি আরবি ব্যাকরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি, আরবি সাহিত্যের বিভিন্ন গ্রন্থে এর অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ: পুংলিঙ্গ কে স্ত্রীলিঙ্গ, আবার স্ত্রীলিঙ্গকে পুংলিঙ্গ, অনুরূপভাবে বহুবচনের শব্দ দ্বারা একবচনের উদ্দেশ্য আবার একবচনের শব্দ দ্বারা বহুবচনকে উদ্দেশ্য করা হয় এটা হামল বার মা’না এর নিয়মের অন্তর্ভুক্ত। (ইবনে জিন্নী, আল খাসায়িস, ২য় খণ্ড, পৃ.-৪১১) অর্থাৎ আরবি সাহিত্য ও ব্যাকরণে অনেক ক্ষেত্রেই সর্বনাম বা ইঙ্গিতবাচক বিশেষ্য «اسم اشارة» শব্দটি পূর্বের যে শব্দটিকে নির্দেশ করছে বচন ও লিঙ্গের ক্ষেত্রে তার অনুরূপ হয় না।আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম খলীফাতুল বিলা ফাশালনিবেদক__________ মোঃ আলী হুসাইনচলবে
বেলায়েতের আয়াতের ব্যাকরণগত দিক সম্পর্কে
একটি গবেষণামূলক বিশ্লেষণমূলক পোস্ট
((((পর্ব ৪))))
১. « هم راکعون » যদি আতফ্ হয় তাহলে এক্ষেত্রে দুটি মৌলিক নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটেছে আর এক বাক্যে দুই মৌল নীতির ব্যতিক্রম ঘটা ব্যাকরণশাস্ত্রের রীতিবিরুদ্ধ ও বাগ্মিতার পরিপন্থী হিসাবে জায়েজ ও বৈধ নয়। বিশেষ করে পবিত্র কোরআনের -সাহিত্যিকমান ও আলংকারিক (বালাগাত ও ফাসাহাত) দৃষ্টিতে যার অবস্থান শীর্ষ চূড়ায়- মধ্যে এমন বিষয় থাকা অসম্ভব। (ইবনে হিশাম আনসারী, প্রাগুক্ত, ১ম খণ্ড, পৃ. ৩২৯) এ দু’টি পরিপন্থী নীতি হল :
ক. جملة اسمیة (যে বাক্যের প্রথমে ইসম বা বিশেষ্য থাকে), جملة فعلیة (যে বাক্যের প্রথমে ফেল বা ক্রিয়া থাকে) এর সাথে আতফ বা সংযুক্ত হয়েছে। কেননা নাহুশাস্ত্রবিদগণের মতে, আতফের নিয়ম হল দুটি বাক্যের রূপ একই রকম হওয়া। (সূয়ুতী, আল বাহজাতুল মারজিয়াহ ফি শারহিল আলফিয়া, পৃ-১০৪)
খ. « هم راکعون » বাক্যটিকে আতফ ধরলে এর পূর্বে «یقیمون الصلاة» বাক্যটির উল্লেখ থাকায় পুনরাবৃত্তি ঘটছে অথচ নিয়ম হল পুনরাবৃত্তি না হওয়া (অর্থাৎ নামাজের পর তার একটি অংশ রুকুর উল্লেখ বাচালতার শামিল বলে মানানসই নয়)। (সাইয়েদ মুরতাজা, আশ-শাফী ফিল ইমামাহ, ২য় খণ্ড, পৃ.-২৩৭)
২. আহলে বাইতের অনুসারী ও আহলে সুন্নাতের সূত্রে এই আয়াত সম্পর্কিত যে সব রেওয়াইয়াত বর্ণিত হয়েছে তা স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত করছে “ওয়াও” حالیة (অবস্থাসূচক) অব্যয়। শেখ হুররে আমেলী উল্লিখিত বিষয়ে উভয় সূত্র থেকে বর্ণিত হাদীসসমূহ বর্ণনা করেছেন। (হুররে আমেলী, ইছবাতুল হুদা, ৩য় খণ্ড, পৃ. ১৪১।) এসব হাদীসের কোন কোনটিতে এভাবে বলা হয়েছে : আলী (আ.) রুকু অবস্থায় যাকাত দিয়েছেন। (রাযী, মাফাতিহুল গাইব, ১২তম খণ্ড, পৃ.৩৮৩; সূয়ুতী, আদ্ দুররুল মানসূর ফি তাফসীরিল মা’ছুর, ২য় খণ্ড, পৃ. ২৯৩) অন্য আরেক রেওয়ায়েতে আরো সুন্দর ও স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে নবী করীম (সা.) ভিক্ষুককে জিজ্ঞাসা করলেন: “আলী কি অবস্থায় তোমাকে দান করেছে?” ভিক্ষুক বলল: “রুকু অবস্থায়।” (সূয়ুতী, পৃ.-৩৯৪; তাবারী, দালায়িলুল ইমামাহ, পৃ.-৫৪) নাহু শাস্ত্রবিদগণ বলেছেন: কোন ব্যক্তির অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তার উত্তরে حال আসে। এই হাদীসে রাসূল (সা.) হযরত আলী (আ.) এর আংটি দান কালীন অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে ভিক্ষুক বলল: “রুকু অবস্থায়”। সুতরাং « و هم راکعون» বাক্যটি جملة حالیة (অবস্থাসূচক বাক্য)।
৩. যামাখশারীও তাফসীরে কাশ্শাফে বলেছেন: “ওয়াও” حالیة বা অবস্থাসূচক অব্যয়। আহলে সুন্নাতের অন্যান্য গবেষক ও মুফাচ্ছিরগণও স্বীকার করেছেন যে এ বাক্যটি حالیة। (রাযী, ১২তম খণ্ড, পৃ.-৩৮৫; আলুসী, রুহুল মাআনী ফি তাফসীরিল কোরআনিল আযিম, ৫ম খণ্ড, পৃ.- ৪৫৮; ছাআলাবী, আল জাওয়াহিরুল হাসান, ১ম খণ্ড, পৃ.-৪৩৮; দারউইশ, এরাবুল কোরআন ওয়া বায়ানুহু, ২য় খণ্ড, পৃ.-৫০৮; ছাফী, আল জাদওয়াল ফি এরাবিল কোরআন, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ.-৩৮৬; বায়দ্বাভী, আনওয়ারুত তানযিল ওয়া আসরারুত তা’বিল, ২য় খণ্ড, পৃ.-১৩২)
আহলে বাইতের অনুসারীদের তাফসীর গ্রন্থসমূহে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, “ওয়াও” حالیة হওয়ার ব্যাপারে সকলেই একমত। (তাবাতাবাই, আল-মিযান ফি তাফসীরিল কোরআন, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ.-১২; তাবারসী, মাজমাউল বায়ান, ৩য় খণ্ড, পৃ.-৩২১; কাশানী, মিনহাজুস সাদেকীন, ৩য় খণ্ড, পৃ.-২৫৫)
৪. ইসলামী যুগে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কবিতাও রচিত হয়েছে, ঐসব কবিতায় লক্ষ্য করলে দেখা যায় তারাও এই বাক্যকে حال হিসেবে ধরে নিয়েছেন। যা হাসসান বিন ছাবেত এর কবিতাতেও ফুটে উঠেছে, আল্লামা আমিনীও তার বিখ্যাত গ্রন্থ “আল গাদীরে” এ কবিতাটিকে আহলে বাইতের অনুসারী এবং সুন্নিদের বিভিন্ন সূত্র থেকে বর্ণনা করেছেন। ( আমিনী, আল গাদীর ফিল কিতাব ওয়াস সুন্নাহ ওয়াল আদাব, ৩য় খণ্ড, পৃ.-৬২; আলুসী, প্রাগুক্ত; হাসকানী, শাওয়াহেদুত তানযিল লে কাওয়ায়েদুত তাফযিল, ১ম খণ্ড, পৃ.-২১৪) কবিতাটি হচ্ছে :
ابا حسن تفدیک نفسی و مهجتی وکل بطئ فی الهدی و مسارع
أیذهب مدحی و المحبین ضائعاً و ما المدح فی ذات الاله بضائع
فأنت الذی اعطیت اذ انت راکع فدتک نفوس القوم یا خیر راکع
হে আবা হাসান আমার জান প্রাণ তোমার জন্য উৎসর্গ হোক। আরও উৎসর্গ হোক তাদের প্রাণ যারা ধীর অথবা দ্রুত গতিতে হেদায়েতের পথে চলে।
আমার স্তুতি এবং প্রেমিকরা যদিও হারিয়ে কিংবা নষ্ট হয়ে যাবে? কিন্তু আল্লাহর কৃত প্রশংসা শেষ হবার নয়।
তুমিই তো রুকুরত অবস্থায় দান করে ছিলে। আমাদের সকলের প্রাণ তোমার জন্য উৎসর্গ হোক হে উত্তম রুকুকারী।
নাহুশাস্ত্রবিদগণ বর্ণনা করেছেন: অবস্থাসূচক বাক্যে واو এর পরিবর্তে (স্থান বা কালবাচক) اذ এরও ব্যবহার হতে পারে। (ইবনে হিশাম, ২য় খণ্ড, পৃ.-২৩) কবিতার শেষ লাইনেও «و انت» এর পরিবর্তে «اذ انت» ব্যবহৃত হয়েছে যা حال এর অর্থই দেয়। কেননা তখন অর্থ হবে : “রুকু করার সময় দান করেছ”।
৫. আলোচ্য আয়াতের সাথে «رایت زیدا و هو راکب» অর্থাৎ ‘আমি যায়েদকে দেখেছি এমতাবস্থায় যে সে আরোহী ছিল’ এমন বাক্য থেকে প্রথমেই যা মনে ভেসে উঠে তা হচ্ছে তা হচ্ছে و هو راکب বাক্যটি যায়েদের অবস্থা বর্ণনা করছে যে, সে আরোহী অবস্থায় আছে। (বাহরানী, আন-নাজাতু ফিল কিয়ামাহ ফি তাহকীকি আমরিল ইমামাহ, পৃ.-৯৬)
বহুবচন মূলক শব্দ একবচনের অর্থে ব্যবহার করা:
কেন বহুবচন মূলক শব্দকে একবচনের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে? এর উত্তরে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর উল্লেখ করা যেতে পারে :
১. এ বিষয়টি শুধুমাত্র এ আয়াতেই নয় পবিত্র কোরআন ও হাদীসের পাঠ্যে অনেক স্থানেও একবচনের জায়গায় বহুবচনের শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। তন্মধ্যে মুবাহেলার আয়াত (আলে ইমরান:৬১) যেখানে হযরত আলী (আ.) এর জন্য বহুবচন «انفسنا» ও হযরত ফাতেমা (আ.) এর জন্যও বহুবচন «نسائنا» ব্যবহৃত হয়েছে। এরূপ আরো অনেক স্থানে এরূপ ভাষা প্রয়োগের দৃষ্টান্ত মুফাসসিরগণ উপস্থাপন করেছেন। আল্লামা আমিনী তার আল গাদীর গ্রন্থে প্রায় বিশটি আয়াত উল্লেখ করেছেন যেসব আয়াতে একবচনের জন্য বহুবচনের শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। (আমিনী, আল গাদীর, ৩য় খণ্ড, পৃ. ১৬৪)
২. যামাখশারী তাঁর ‘আল কাশশাফ’ তাফসীর গ্রন্থে এর কারণ হিসেবে বলেছেন:
অন্যদের এমন কাজে মানুষকে উৎসাহিত করার জন্য এই আয়াতে বহুবচন ব্যবহার করা হয়েছে। মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে যে, মুমিন ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য এমনই হতে হবে যাতে করে তারা এরূপ ভাল কাজে আগ্রহী হয়ে উঠে এবং তা সম্পাদনে বিলম্ব না করে, যদি নামাজরত অবস্থায়ও থাকে। এমন ভালও মঙ্গলজনক কাজে যেন নামাজ শেষ হওয়ারও অপেক্ষা না করে। (যামাখশারী, কাশশাফ, ১ম খণ্ড, পৃ.-৬৪৯)
৩. আল্লামা তাবারসী মনে করেন : হযরত আলী (আ.) এর সম্মান ও শ্রেষ্ঠত্ব নির্দেশের জন্যই বহুবচনের শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। সম্মান ও শ্রেষ্ঠত্বের কারণে বহুবচনের শব্দ একবচনের স্থানে ব্যবহৃত হয় আর এটা ভাষাবিদদের নিকট একটি মামূলী ব্যাপার, সে জন্য কোন দলীল প্রমাণেরও প্রয়োজন হয়না। (তাবারসী, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৩২৭)
অন্যান্য গ্রন্থেও এ বিষয়টি গুরুত্বের সাথে আলোচনা করা হয়েছে। (ফাখরুদ্দিন রাযী, প্রাগুক্ত; তুসী, আল-ইকতিসাদ ফিমা ইয়াতাআল্লাকু বিল ইতিকাদ, পৃ.-৩২৩; তাবাতাবাই, প্রাগুক্ত; মিনহাজুস সাদেকীন, প্রাগুক্ত; আলুসী, প্রাগুক্ত)
সূয়ুতী, আল-মাযহার গ্রন্থে লিখেছেন :
একজন শ্রোতার ক্ষেত্রে বহুবচনের শব্দ ব্যবহার করা এটা আরবদের একটা রীতি। যেমন কোন উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিকে বলা হয়ে থাকে : «انظروا فی امری» অর্থাৎ আমার ব্যাপারে আপনারা খেয়াল রাখবেন এবং পবিত্র কোরআনেও এসেছে- «ربّ ارجعون» হে আমার পালন কর্তা আমাকে আপনারা (পুনরায় দুনিয়ায়) ফিরে যেতে দিন। (সূয়ুতী, আল-মাযহার ফি উলুমিল লুগাহ ওয়া আনওয়ায়িহা, ১ম খণ্ড, পৃ.-৩৩৩; আল-আমিন, আযওয়াউল বায়ান ফি ইযাহিল কোরআন বিল কোরআন, ৫ম খণ্ড, পৃ.-৩৫৫; হালাবি, আদ-দুররুল মাসূন ফি ইলমিল কিতাবিল মাকনূন, ৫ম খণ্ড, পৃ.-২০০; ছাফী, প্রাগুক্ত, ১৮তম খণ্ড, পৃ.-২০৯)
৪. এই কারণে আহলে বাইতের অনুসারীদের বিভিন্ন গ্রন্থে যে সমস্ত রেওয়াইয়াত রয়েছে (কুলায়নি, উসূলে কাফি, ২য় খণ্ড, পৃ.-৩৯৭) এই আয়াত আহলে বাইতের ইমামদের সকলের ইমামতের প্রমাণ স্বরূপ। শুধু আলী (আ.) এর জন্যই নির্দিষ্ট নয় বরং সমস্ত ইমামের ইমামতকেই প্রমাণ করার জন্য। কিন্তু যেহেতু রাসূল (সা.) এর পর প্রথম খলিফা কে?- এ বিষয়টি নিয়ে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে একটা মৌলিক মতবিরোধ রয়েছে। সেজন্য আহলে বাইতের অনুসারীদের পক্ষ থেকে শুধু আলী (আ.) এর খেলাফতকে প্রমাণ করার জন্যই এটা উপস্থাপন করা হয়। আর একবচনের স্থলে বহুবচনের ব্যবহার আরবি ভাষার নিয়মানুসারেই হয়েছে।
৫. হামল বার মা’না বা ভাবার্থের ওপর প্রয়োগ- এর নিয়ম অনুসারেও একবচনের ক্ষেত্রে বহুবচনের ব্যবহারের বিশুদ্ধতা প্রমাণিত হয়। এটি আরবি ব্যাকরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি, আরবি সাহিত্যের বিভিন্ন গ্রন্থে এর অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ: পুংলিঙ্গ কে স্ত্রীলিঙ্গ, আবার স্ত্রীলিঙ্গকে পুংলিঙ্গ, অনুরূপভাবে বহুবচনের শব্দ দ্বারা একবচনের উদ্দেশ্য আবার একবচনের শব্দ দ্বারা বহুবচনকে উদ্দেশ্য করা হয় এটা হামল বার মা’না এর নিয়মের অন্তর্ভুক্ত। (ইবনে জিন্নী, আল খাসায়িস, ২য় খণ্ড, পৃ.-৪১১) অর্থাৎ আরবি সাহিত্য ও ব্যাকরণে অনেক ক্ষেত্রেই সর্বনাম বা ইঙ্গিতবাচক বিশেষ্য «اسم اشارة» শব্দটি পূর্বের যে শব্দটিকে নির্দেশ করছে বচন ও লিঙ্গের ক্ষেত্রে তার অনুরূপ হয় না।
আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম খলীফাতুল বিলা ফাশাল
নিবেদক
__________ মোঃ আলী হুসাইন
চলবে
মন্তব্যসমূহ