বেলায়েতের আয়াতের ব্যাকরণগত দিক সম্পর্কে একটি গবেষণামূলক ও বিশ্লেষণমূলক পোস্টপর্ব ((((((৬)))))) ও এক থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত শেষআত তাহকিক ফি কালামাতিল কোরআনিল কারিম’ এর রচয়িতা মনে করেন এ শব্দটির আসল অর্থ হল “পরস্পর সম্পর্ক যুক্ত দুটি জিনিসের পাশাপাশি অবস্থান”। আর এ শব্দটির অন্যান্য সকল অর্থকে এই অর্থের দিকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন: ‘ওয়ালি শব্দটির জন্য অন্য যে সব অর্থ উল্লেখ করা হয়েছে যেমন- নিকটবর্তী, ভালবাসা, সাহায্য করা এবং অনুসরণ তা এই অর্থের থেকে উদ্ভূত আবশ্যিক ও অবিচ্ছেদ্য অর্থ। (মুস্তাফাভী, আত তাহকিক ফি কালামাতিল কোরআন আল কারিম, ১৩তম খণ্ড, পৃ.-২০২) প্রথমত: ওয়ালির যৌথ অর্থ রয়েছে অর্থাৎ একটা সামগ্রিক অর্থের (নৈকট্য ও সংযুক্তি) জন্য প্রণয়ন করা হয়েছে যার দৃষ্টান্ত রয়েছে যেগুলোর ওপর প্রযোজ্য হয়ে থাকে। উপরিউল্লিখিত কোন লেখকই ভালবাসা, সাহায্য করা, অনুসরণ এবং কর্তৃত্বের ক্ষেত্রে যোগ্যতম এসবকে ওয়ালির প্রকৃত অর্থ বলে উল্লেখ করেননি। (আর তাই এ অর্থগুলো গ্রহণের জন্য তার প্রতি নির্দেশক ও নির্দিষ্টকারী দলীল থাকতে হবে, তা না থাকলে ঐ অর্থ গ্রহণ বৈধ হবে না)।দ্বিতীয়ত: এই শব্দের প্রকৃত অর্থের ব্যাপারে দুটি ভিন্ন রকমের দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। একদল নিকটবর্তিতাকে অন্যদল দুটি জিনিসের পাশাপাশি অবস্থানকে এই শব্দের প্রকৃত অর্থ বলেছেন এবং নিকটবর্তিতাকে এই পাশাপাশি অবস্থানের অপরিহার্য পরিণতি হিসাবে তার আবশ্যিক অর্থ বলে চিহ্নিত করেছেন।দ্বিতীয় মতটিকেই অধিক যুক্তিযুক্ত বলে মনে হয় তবে নিকটবর্তিতাও মূল অর্থটির অন্যতম দৃষ্টান্ত। এই দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী ওয়ালি শব্দটির প্রকৃত অর্থ হচ্ছে পাশাপাশি দুটি জিনিসের এমনভাবে অবস্থান যেন তাদের মধ্যে কোন দূরত্ব না থাকে। অর্থাৎ দুটি জিনিস পরস্পরের সাথে এমনভাবে সংযুক্ত যেন অন্য কোন কিছুই তাদের মধ্যে না থাকে। যেমন যদি কয়েক ব্যক্তি পাশাপাশি বসে থাকে, তখন আমরা বলি যায়েদ সভার সামনের সারিতে বসে আছে আর যায়েদের পাশেই আমর এবং আমরের পাশেই বকর বসে আছে। (অর্থাৎ তাদের একে অপরের মধ্যে কোন ফাঁক নেই) এই কারণেই ولی শব্দটি قرب (নিকটবর্তিতা) এর ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয়েছে। সেটা স্থানের ক্ষেত্রেই হোক আর অবস্তুক কোন সত্তার ক্ষেত্রেই হোক (যেমন কোন সম্মানিত ও মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তির সাথে কারো ভাল সম্পর্ক আছে বুঝাতে তিনি তাঁর নৈকট্যপ্রাপ্ত বলা হয়ে থাকে)। এই নিকটবর্তিতার সম্পর্কের কারণেই বন্ধুত্ব, দায়িত্বলাভ, সাহায্যকারী, কর্তৃত্বশীল এবং এরূপ অন্যান্য অর্থে তা ব্যবহৃত হয়েছে, অর্থাৎ এ সকল অর্থেই (দুটি বস্তু বা বিষয়ের মধ্যে) এক ধরনের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক ও সংযোগ রয়েছে। তাই ولی শব্দটি যেখানেই ব্যবহৃত হবে সেখানে বাক্যের অর্থনির্দেশক অভ্যন্তরীণ ও সংযুক্ত শাব্দিক দলীল এবং অবস্থা ও ভাবগত দলীলের ভিত্তিতে তার অর্থ খুজে বের করতে হবে। (মুতাহ্হারী, মাজমুএ আছার, ৩য় খণ্ড, পৃ.-২৫৫-২৫৬)২. যেহেতু ولي و ولايت এর প্রকৃত অর্থ হল সংযুক্তি, সান্নিধ্য ও নিকটবর্তিতা, তাই আলোচ্য আয়াতে কর্তৃত্ব অর্থদানের সাথে পূর্ব ও পরবর্তী আয়াতের গৃহীত অর্থের (বন্ধু ও সাহায্যকারী) পার্থক্য বাচনভঙ্গি ও বর্ণনাধারার মধ্যে কোন ছেদ ঘটায়না। কেননা সমস্যা তখনই দেখা দিবে যখন ولایت একটি দ্ব্যর্থবোধক শব্দ হবে কিন্তু ইতি পূর্বেই প্রমাণিত হয়েছে যে, ولایت কোন দ্ব্যর্থবোধক শব্দ নয় বরং এর অভিন্ন অর্থ রয়েছে। তিনটি আয়াতেই সান্নিধ্য এবং নিকটবর্তিতার অর্থ রয়েছে। যদিও সংযুক্তি ও নৈকট্য নির্দেশকারী বস্তুর উদাহরণ ও দৃষ্টান্তের মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান কিন্তু একই ধারা ও ভাবার্থ নির্দেশের জন্য আয়াত তিনটির দৃষ্টান্তসমূহের মধ্যে এতটুকু ঐক্য থাকাই যথেষ্ট। মহান আল্লাহ তাআলা প্রথমে মুমিনদেরকে ইহুদী এবং খ্রীষ্টানদের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য তাদের সান্নিধ্য লাভের চেষ্টা এবং তাদের নিকটবর্তী হওয়া থেকে নিষেধ করেছেন। ইহুদীদের সাথে এই সংযোগ ও সান্নিধ্য শুধুমাত্র বন্ধুত্বের ব্যাপারে অঙ্গিকারাবদ্ধ হওয়ার দ্বারা এবং পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদার করার মাধ্যমেই সম্ভব। বেলায়াতের আয়াতেও মহান আল্লাহ তাআলা মুমিনদেরকে তাঁর এবং তাঁর রাসূল ও কিছু সংখ্যক মুমিনের সান্নিধ্যে যাওয়ার বা নিকটবর্তী হওয়ার আহবান জানিয়েছেন। কারণ আল্লাহর সান্নিধ্য কেবল তাঁর সৃষ্টিগত অনিবার্য (অলঙ্ঘনীয় প্রাকৃতিক) নিয়ম এবং মানুষের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তির গণ্ডিতে নির্ধারিত শরীয়তের বিধি বিধানের প্রতি নিজেকে সমর্পিত করার মাধ্যমেই লাভ করা সম্ভব। তেমনিভাবে রাসূলের (সা.) রেসালাতকে মেনে নিয়ে এবং তার অনুসরণ করেই শুধু রাসূলের সান্নিধ্য লাভ করা যায়।তেমনি ভাবে কর্তৃত্বের ক্ষেত্রে তাঁর মনোনীত ব্যক্তির অনুসরণ করা এবং তার আনুগত্যের পতাকাতলে একত্রিত হওয়ার মাধ্যমেই ঐ কর্তৃত্বশীল ব্যক্তির নিকটবর্তী হওয়া যায়। সুতরাং বন্ধু, সাহায্যকারী, অভিভাবক ও নেতা এদের সকলের ওপরেই বেলায়েত বা নৈকট্য ও সংযুক্তির বিষয়টি প্রযোজ্য। তবে এক্ষেত্রে তাদের মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে তা ঐ ব্যক্তির সাথে সম্পর্কের দৃষ্টিতে তাদের ঘনিষ্ঠতা ও প্রভাবের পর্যায়ের ভিন্নতা থেকে উদ্ভূত।৩. যদি বেলায়তের আয়াতে ওয়ালি শব্দটির অর্থ কর্তৃত্বের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত এবং তার পরবর্তী আয়াতে সাহায্যকারী হয় তবুও তা অসঙ্গত ও আলাদা তো নয়ই বরং সঙ্গতিপূর্ণ। কেননা আল্লাহ তাআলা প্রথমেই বলেছেন: আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং মুমিনদের কিছুসংখ্যক ওয়ালি (কর্তৃত্বের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত) এবং পরবর্তী আয়াতে এরশাদ করেছেন: যারা আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং মুমিনদের সাহায্য করবে তারাই বিজয়ী হবে।আয়াতের শুরুতে তিনি মুমিনদের একাংশের ইমামত ও বেলায়াতকে সত্যায়ন ও নিশ্চিত করেছেন অতপর পরের আয়াতে মুমিনদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন তাদেরকে সাহায্য করার জন্য। (সাইয়েদ মুরতাজা, প্রাগুক্ত, ২য় খণ্ড, পৃ.-২৩৫) যেভাবে রাসূল (সা.) গাদীরে খুমের ঘটনার সময় প্রথমে হযরত আলী (আ.) কে নিজের স্থলাভিষিক্ত হিসেবে পরিচিত করিয়েছেন, তারপর দোয়া করেছেন এবং বলেছেন: হে আল্লাহ যে আলীকে (আ.) সাহায্য করবে তুমি তাকে সাহায্য কর, আর যে তাকে অপদস্ত করতে চায় তুমিও তাকে অপদস্ত কর।৪. তদুপরি যদি কোন ক্ষেত্রে কোন আয়াতের অন্তস্থ অর্থগত দলীলের সাথে তার পূর্ব ও পরের আয়াতের বর্ণনাধারাগত অর্থের বৈপরীত্য দেখা যায় তবে সেক্ষেত্রে আয়াতের অন্তস্থ অর্থগত দলীলকে বর্ণনাধারাগত অর্থের মিল থাকার নীতির «سیاق» ওপর প্রাধান্য দিতে হবে। সুতরাং এই আয়াতে ওয়ালি শব্দটি কর্তৃত্বের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, এব্যপারে শেখ তুসীর যুক্তি প্রমাণই সঠিক। উপসংহার:পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে,১. «انما» এই আয়াতে সবসময়ের মতই সীমাবদ্ধতার (হাসর) অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। আর হাসর থাকার কারণে ওয়ালি শব্দটি “কর্তৃত্বের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত” অর্থের জন্যই নির্ধারিত হয়েছে। এ কারণে বন্ধু বা সাহায্যকারী অর্থ হতে পারেনা।২. «هم راکعون» বাক্যটি معطوف হওয়ার সম্ভাবনা নেই; কারণ এতে একই বিষয়ের পুনরাবৃত্তির ন্যায় অগ্রহণযোগ্য নীতির অবতারণা হয়। তাছাড়া এই বাক্যটি থেকে প্রথম যে অর্থটি শ্রোতার মনে আসে তা হল «هم راکعون» হল অবস্থাবাচক বাক্য বা حالیة جملة এবং আয়াতের শানে নুজুলসহ আয়াতের ব্যাখ্যাকারী বহির্গত অন্যান্য দলীলও উক্ত দাবির (معطوف হওয়ার) বিপরীত বিষয়কে প্রমাণ করে।৩. বহু সংখ্যক ভাষাবিদের মতে রুকু শব্দটির প্রকৃত অর্থ ‘উপুড় হওয়া’ এ শব্দটি বিনয়ী বা ন¤্রতার অর্থে ব্যবহারের জন্য قرینه বা সমর্থক দলীলের প্রয়োজন। অথচ এই আয়াতে এরূপ কোন قرینه নেই।৪. মহত্ব, শ্রেষ্ঠত্ব এবং ভালকাজের প্রতি মানুষকে আকৃষ্ট করার জন্য একবচনের ক্ষেত্রে বহুবচনের ব্যবহার আরবি সাহিত্যে প্রচলিত আছে। অনেক পণ্ডিত ব্যক্তি ও বৈয়াকরণ এর সত্যতা স্বীকার করেছেন।৫. «ولی» শব্দটির যৌথ অর্থ রয়েছে যা একটা সামগ্রিক অর্থ অর্থাৎ সান্নিধ্য বা নৈকট্য নির্দেশের জন্য প্রণয়ন করা হয়েছে। এই সামগ্রিক অর্থের অনেক দৃষ্টান্ত ( مصاﺪیق) রয়েছে যেমন- মুক্ত, মুক্তকারী, ভালবাসা পোষণকারী, সাহায্যকারী, অভিভাবক, নেতা ইত্যাদি। তবে পবিত্র এই আয়াতে বিদ্যমান «انما» সীমাবদ্ধতা নির্দেশক অব্যয়টি এবং অন্যান্য অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক দলীলের ভিত্তিতে বলা যায় যে, ওয়ালি শব্দটি কর্তৃত্বের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বা অভিভাবক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।সুতরাং হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর পরপরই হযরত আলী (আ.) এর নেতৃত্বের বিষয়টি এই আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় এবং এক্ষেত্রে ফাজেল কুশচী, ফাখরুদ্দীন রাজী ও অন্যরা যা বলেছেন তা এ মত খণ্ডনকারী দলীল বলে গণ্য হতে পারে না।টীকা :১. মুহাম্মাদ বিন মুহাম্মাদ বিন হাসান তুসী (জন্ম ৫৯৭ হি. ও মৃত্যু ৬৭২ হি.) বিশ্ব বিখ্যাত পণ্ডিত, ইরান এবং ইসলামের গর্ব। (হাসান আল-আমীন, আল ইসমাঈলিয়্যুন ওয়াল মোগল ওয়া নাসিরুদ্দীন তুসী) তিনি মোগল যুগের একজন উজ্জল নক্ষত্র ছিলেন তিনি তার জীবদ্দশায় ইসলামের অনেক খেদমত করেছেন। তিনি বিভিন্ন বিষয়ে যেমন-দর্শন, কালাম, গণিত এবং জ্যাতিষ শাস্ত্রে অসাধারণ পাণ্ডিত্যের অধিকারী ছিলেন। কালামশাস্ত্রে তার রচিত তাজরীদুল এ’তেকাদ গ্রন্থটি চির অমর হয়ে আছে। এই গ্রন্থের ভাষার মাধুর্যতা, বর্ণনার ধারা এবং বিভিন্ন যুক্তি প্রমাণ অনেককে এর ব্যাখ্যা গ্রন্থ রচনা করতে এবং এতে টীকা সংযোজন করতে উদ্বুদ্ধ করেছে। শুধুমাত্র আহলে বাইতের অনুসারীরাই নয় এমনকি আহলে সুন্নাতের অনেক গণ্যমান্য প্রসিদ্ধ আলেমও এর বিষয়বস্তুকে তাদের গ্রন্থে ব্যাখ্যা করেছেন।২. আলাউদ্দীন আলী বিন মুহাম্মাদ কুশচী (৮৭৯হি.) ফাজেল কুশচী এবং মোল্লা আলী কুশচী নামে প্রসিদ্ধ, তিনি আহলে সুন্নাতের আশআরী চিন্তাধারার একজন মনীষী। তিনি তাজরীদুল ইতিকাদ গ্রন্থটির অন্যতম ব্যখ্যাকারক। তিনি তার শারহে জাদীদে তাজরীদ নামের প্রসিদ্ধ গ্রন্থে ইমামতের আলোচনায় শেখ তুসীর দৃষ্টিভঙ্গির ত্রুটি ধরেছেন ও সমালোচনা করেছেন। (আগা বুজুর্গে তেহরানী, আয যারিয়াহ ইলা আছারিশ শিয়া, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৩৫৪; যারকুলী, আল আলাম, ৫ম খণ্ড, পৃ.-৯; কাহালা, মু’জামুল মুআল্লিফিন, ৭ম খণ্ড, পৃ. ২২৭; কুম্মি, আলকুনি ওয়াল আলকাব, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৯৪) গ্রন্থসূচী:১. আল কোরআনুল কারীম।২. ইবনে যিন্নী, আবিল ফাতহ ওসমান, আল খাসায়িস, গবেষণা মুহাম্মদ আলী নাজ্জার, বৈরুত, আলামুল কিতাব।৩. ইবনে ফারেস, মুকায়িসুল লুগাহ, মাকতাবুল এ’লামিল ইসলামী, ১৪০৪ হি:।৪. ইবনে হিশাম আনসারী, আব্দুল্লাহ, মুগনী আল-লাবিব আন কুতুবেল আ-আরিব, তেহরান, মুয়াসসাসে আস-সাদেক, প্রথম সংস্করণ, ১৩৮৬।৫. ইস্পাহানী, রাগেব, মুফরাদাতে আলফাজিল কোরআন, গবেষণা দাউদি, ছাফওয়ান আদনান, দামেস্ক ও বৈরুত, দারুল কালাম ও দারুস সামিয়াহ, প্রথম সংস্করণ।৬. আলুসী, মাহমুদ, রুহুল মাআনী ফি তাফসীরিল কোরআনুল আযিম, সাবউল মাছানী, বৈরুত, দারুল ইহইয়াউত তুরাছিল আরাবি, ১৪২০ হিজরি।৭. আমিনী, আব্দুল হোসাইন, আল-গাদীর ফিল কিতাব ওয়াস সুন্নাহ ওয়াল আদাব, বৈরুত, দারুল কিতাবিল আরাবি, ৪র্থ সংস্করণ, ১৩৭৯ হিজরি।৮. ইজি, আজদুদ্দিন আব্দুর রহমান বিন আহমাদ, আল-মাওয়াকিফ, বৈরুত, দারুল জিয়াল, ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দ।৯. বাহরানী, ইবনে মাইসাম, আন নাজাতু ফিল কিয়ামাহ ফি তাহকিকি আমরিল ইমামাহ, কুম, মুয়াসসাসে আল হাদী, ১ম সংস্করণ, ১৪১৭ হিজরি।১০. বাইদ্বাভী, আব্দুল্লাহ বিন ওমর, আনওয়ারুত তানযিল ওয়া আসরারুত তা’বিল, বৈরুত, দারুল ইহইয়াউত তুরাছিল আরাবি, ১৮১৮ হিজরি।১১. তাফতাজানী, মাসউদ বিন ওমর, আল মুতাওয়াল, বৈরুত, দারু ইহইয়াউত তুরাছিল আরাবি, ১ম সংস্করণ, ১৪২৫ হিজরি।১২. তাফতাজানী, মাসউদ বিন ওমর, শারহুল মুখতাছার, ইসমাঈলিয়্যান, ২য় সংস্করণ।১৩. তাফতাজানী, মাসউদ বিন ওমর, শারহুল মাকাসিদ ফি ইলমিল কালাম, পাকিস্তান, দারুল মাআরেফ আন নোমানিয়া, ১ম সংস্করণ।১৪. ছাআলাবি, আব্দুর রহমান, আল জাওয়াহিরুল হাসান, বৈরুত, দারুল কিতাবিল ইলমিয়্যাহ, ১৪১৬ হিজরি।১৫. জুরজানী, আলী বিন মুহাম্মাদ, শারহুল মাওয়াকিফ, মিসর, মাতবাআতুস সাআদাহ, ১ম সংস্করণ, ১৩২৫ হিজরি।১৬. জুরজানী, আল ইশারাত ওয়াত তানবিহাত ফি ইলমিল বালাগা, বৈরুত, ১ম সংস্করণ, ১৪২৩ হিজরি।১৭. হুররে আমেলী, ইছবাতুল হুদা, বৈরুত, মুয়াসসাসাহ আল আলামী, ১ম সংস্করণ, ১৪২২ হিজরি।১৮. হাসকানী, শাওয়াহিদুত তানযিল লি কাওয়ায়িদুত তাফযিল, তেহরান, বেজারাতে এরশাদে ইসলামী, ১৪১১হিজরি।১৯. হাসান আল আমিন, আল ইসমাঈলিয়্যুন ওয়াল মোগল ওয়া নাসিরুদ্দীন তুসী, কুম, মারকাজুল গাদীর লিদিরাসাতুল ইসলামিয়্যাহ, ২য় সংস্করণ, ১৪১৭ হিজরি।হোসাইনি কাফুমি, আবুল বাকা আইয়্যুব বিন মুসা, আল মুজাম ফিল মুস্তালাহাত ওয়াল ফুরুকুল লুগাবিয়্যাহ, তাহকিক আদনান দারউইশ, বৈরুত, মুয়াসসাসে আর রিসালাহ, ১৪১৯ হিজরি।২০. হালাবি, সামিন, আদ-দুররুল মাসূন ফি ইলমিল কিতাবিল মাকনূন, বৈরুত, দারুল কিতাবিল ইলমিয়্যাহ, ১৪১৪ হিজরি।২১. হালাবি, হাসান বিন ইউসুফ, কাশফুল মোরাদ ফি শারহি তাজরীদিল ইতিকাদ, তাহকিক হাসানযাদে আমুলী, কুম, মুয়াসসাসাতুন নাশরিল ইসলামী, ১০ম সংস্করণ, ১৪২৫ হিজরি।২২. দারউইশ, মহিউদ্দীন, এরাবুল কোরআন ওয়া বায়ানুহু, সিরিয়া, দারুল ইরশাদ, ১৪১৫ হিজরি।২৩. দোআস, এরাবুল কোরআনিল কারীম, দামেস্ক, দারুল মুনির, ১৪২৫ হিজরি।২৪. রাযী, আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মদ বিন ওমর, মাফাতিহুল গাইব, বৈরুত, দারুল ইহইয়াউত তুরাছিল আরাবি, ১৪২০হিজরি।২৫. যুবাইদি, মুহাম্মদ মুরতাজা, তাজুল আরুস মিন জাওয়াহিরুল ক্বামূস, বৈরুত, দারুস সাদর, ১৩৮৬ হিজরি।২৬. যারকুলী, খাইরুদ্দীন, আল এ’লাম, বৈরুত, দারুল ইলম, ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দ।২৭. যামাখশারী, মাহমুদ বিন ওমর, আসাসুল বালাগাহ, তাহকিক আব্দুর রাহিম মাহমুদ, বৈরুত, দারুল মা’রেফাহ।২৮. যামাখশারী, মাহমুদ বিন ওমর, আল কাশশাফ আন হাক্বায়িকি গাওয়ামিজিত তানযিল, বৈরুত, দারুল কিতাবুল আরাবি, ১৪০৭ হিজরি।২৯. সাকাকী, ইউসুফ বিন আবি বকর, মেফতাহুল উলুম, বৈরুত, দারুল কিতাবুল ইসলামিয়্যাহ, ১৪০৭ হিজরি।৩০. সূয়ুতী, জালাল উদ্দীন, আল বাহজাতুল মারজিয়াহ ফি শারহিল আলফিয়া, কুম, নাবিদে ইসলামী, ১ম সংস্করণ।৩১. সূয়ুতী, জালাল উদ্দীন, আদ্ দুররুল মানসূর ফি তাফসীরিল মা’ছুর, কুম, আয়াতুল্লাহ মারআশী নাজাফি লাইব্রেরী, ১৪০৪ হিজরি।৩২. সাইয়্যেদ শারাফ উদ্দীন আল মুসাভি, আব্দুল হোসাইন, আল মুরাজায়াত, তাহকিক হোসাইন আর রাযী, দারুল কিতাবুল ইসলামি।৩৩. সাইয়্যেদ মুরতাজা আলামুল হুদা, আশ শাফি ফিল ইমামাহ, কুম, মুয়াসসাসে ইসমাঈলিয়্যান, ২য় সংস্করণ।৩৪. সূয়ুতী, জালাল উদ্দীন, আল মাযহার ফি উলুমিল লুগাহ ওয়া আনওয়ায়েহা, দারুল ইহইয়ায়ে কিতাবুল আরাবি, ১ম সংস্করণ।৩৫. শাহরেস্তানী, মুহাম্মদ বিন আব্দুল করিম, আল মেলাল ওয়ান নেহাল, বৈরুত, দারুল মা’রেফাহ।৩৬. শেখ মুফিদ, আল ইফসাহ ফি ইমামাতি আমিরিল মুমিনিন, কুম, মুয়াসসাসেহ আল বে’সাত, ১ম সংস্করণ, ১৪১২ হিজরি।৩৭. ছাফী, মাহমুদ বিন আব্দুর রহিম, আল জাদওয়াল ফি এরাবিল কোরআন, বৈরুত, দারুর রাশিদ, ১৪১৮ হিজরি।৩৮. তাবাতাবাই, সাইয়্যেদ মুহাম্মদ হোসাইন, আল-মিযান ফি তাফসীরিল কোরআন, তেহরান, দারুল কিতাবুল ইসলামিয়্যাহ, ১৩৭২ ফার্সি সাল।৩৯. তাবারসী, ফাজল বিন হাসান, মাজমাউল বায়ান ফি তাফসীরিল কোরআন, তেহরান, নাসের খসরু, ১৩৭২ ফার্সি সাল।৪০. তাবারী, মুহাম্মদ বিন জারীর, দালায়েলুল ইমামাহ, কুম, দারুজ জাখায়ির লিলমাতবুআত।৪১. তুরাইহী, ফাখরুদ্দীন, মাজমাউল বাহরাইন, তেহরান।৪২. তুসী, মুহাম্মদ বিন হাসান, আল-ইকতিসাদ ফিমা ইয়তাআল্লাকু বিল ইতিকাদ, বৈরুত, দারুল আযওয়া, ১৪০৬ হিজরি।৪৩. তুসী, মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ, তাজরীদুল ইতিকাদ, দাফতারে তাবলিগাতে ইসলামী, ১ম সংস্করণ, ১৪০৭ হিজরি।৪৪. ফাইয়ুমি, আল মিসবাহুল মুনির, কুম, দারুল হিজর, ৩য় সংস্করণ, ১৪২৫ হিজরি।৪৫. কুম্মি, আব্বাস, আল কুনি ওয়াল আলকাব, তেহরান, মাকতাবাতুস সাদর।৪৬. কুশচী, আলী বিন মুহাম্মাদ, শারহে তাজরীদুল আকায়েদ, কুম, মানশূরাতে রাযী।৪৭. কাশানী, ফাতহুল্লাহ, মিনহাজুস সাদেকীন ফি ইলযামিল মুখালিফিন, তেহরান, ইসলামিয়্যা প্রেস, ১৩৭৮ ফার্সি সাল ।৪৮. কাহালী, ওমর রেজা, মু’জামুল মুআল্লিফিন, বৈরুত, মাকতাবাতুল মুসান্না।৪৯. কুলাইনি, মুহাম্মাদ বিন ইয়াকুব, উসূলে কফি, আনুবাদ মুহাম্মদ বাকের, তেহরান, আসওয়েহ প্রেস, ৪র্থ সংস্করণ।৫০. মুহাম্মদ আল আমিন, আসওয়াউল বায়ান ফি ইযাহেল কোরআন বিল কোরআন, বৈরুত, দারুর ফেকর, ১৪১৫ হিজরি।৫১. মুস্তাফাবী, আত তাহকিক ফি কালামাতিল কোরআন আল কারিম, ইরান, বেজারাতুছ ছাকাফাহ ওয়াল ইরশাদে ইসলামী, ১ম সংস্করণ।৫২. মুতাহ্হারী, মুরতাজা, মাজমুএ আছার, তেহরান, সাদর, ২য় সংস্করণ।৫৩. নূহাস, এরাবুল কোরআন, বৈরুত, দারুল কুতুবুল এলমিয়্যাহ, ১৪২১ হিজরি।৫৪. হাশেমী, আহমাদ, জাওয়াহেরুল বালাগাহ, কুম, ওয়ারিওন, ৪র্থ সংস্করণ।আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম খলীফাতুল বিলা ফাশালনিবেদক____________ মোঃ আলী হুসাইন

বেলায়েতের আয়াতের ব্যাকরণগত দিক সম্পর্কে 
একটি গবেষণামূলক ও বিশ্লেষণমূলক পোস্ট

পর্ব ((((((৬))))))  ও এক থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত শেষ

আত তাহকিক ফি কালামাতিল কোরআনিল কারিম’ এর রচয়িতা মনে করেন এ শব্দটির আসল অর্থ হল “পরস্পর সম্পর্ক যুক্ত দুটি জিনিসের পাশাপাশি অবস্থান”। আর এ শব্দটির অন্যান্য সকল অর্থকে এই অর্থের দিকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন: ‘ওয়ালি শব্দটির জন্য অন্য যে সব অর্থ উল্লেখ করা হয়েছে যেমন- নিকটবর্তী, ভালবাসা, সাহায্য করা এবং অনুসরণ তা এই অর্থের থেকে উদ্ভূত আবশ্যিক ও অবিচ্ছেদ্য অর্থ। (মুস্তাফাভী, আত তাহকিক ফি কালামাতিল কোরআন আল কারিম, ১৩তম খণ্ড, পৃ.-২০২) 

প্রথমত: ওয়ালির যৌথ অর্থ রয়েছে অর্থাৎ একটা সামগ্রিক অর্থের (নৈকট্য ও সংযুক্তি) জন্য প্রণয়ন করা হয়েছে যার দৃষ্টান্ত রয়েছে যেগুলোর ওপর প্রযোজ্য হয়ে থাকে। উপরিউল্লিখিত কোন লেখকই ভালবাসা, সাহায্য করা, অনুসরণ এবং কর্তৃত্বের ক্ষেত্রে যোগ্যতম এসবকে ওয়ালির প্রকৃত অর্থ বলে উল্লেখ করেননি। (আর তাই এ অর্থগুলো গ্রহণের জন্য তার প্রতি নির্দেশক ও নির্দিষ্টকারী দলীল থাকতে হবে, তা না থাকলে ঐ অর্থ গ্রহণ বৈধ হবে না)।

দ্বিতীয়ত: এই শব্দের প্রকৃত অর্থের ব্যাপারে দুটি ভিন্ন রকমের দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। একদল নিকটবর্তিতাকে অন্যদল দুটি জিনিসের পাশাপাশি অবস্থানকে এই শব্দের প্রকৃত অর্থ বলেছেন এবং নিকটবর্তিতাকে এই পাশাপাশি অবস্থানের অপরিহার্য পরিণতি হিসাবে তার আবশ্যিক অর্থ বলে চিহ্নিত করেছেন।

দ্বিতীয় মতটিকেই অধিক যুক্তিযুক্ত বলে মনে হয় তবে নিকটবর্তিতাও মূল অর্থটির অন্যতম দৃষ্টান্ত। এই দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী ওয়ালি শব্দটির প্রকৃত অর্থ হচ্ছে পাশাপাশি দুটি জিনিসের এমনভাবে অবস্থান যেন তাদের মধ্যে কোন দূরত্ব না থাকে। অর্থাৎ দুটি জিনিস পরস্পরের সাথে এমনভাবে সংযুক্ত যেন অন্য কোন কিছুই তাদের মধ্যে না থাকে। যেমন যদি কয়েক ব্যক্তি পাশাপাশি বসে থাকে, তখন আমরা বলি যায়েদ সভার সামনের সারিতে বসে আছে আর যায়েদের পাশেই আমর এবং আমরের পাশেই বকর বসে আছে। (অর্থাৎ তাদের একে অপরের মধ্যে কোন ফাঁক নেই) এই কারণেই ولی শব্দটি قرب (নিকটবর্তিতা) এর ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয়েছে। সেটা স্থানের ক্ষেত্রেই হোক আর অবস্তুক কোন সত্তার ক্ষেত্রেই হোক (যেমন কোন সম্মানিত ও মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তির সাথে কারো ভাল সম্পর্ক আছে বুঝাতে তিনি তাঁর নৈকট্যপ্রাপ্ত বলা হয়ে থাকে)। এই নিকটবর্তিতার সম্পর্কের কারণেই বন্ধুত্ব, দায়িত্বলাভ, সাহায্যকারী, কর্তৃত্বশীল এবং এরূপ অন্যান্য অর্থে তা ব্যবহৃত হয়েছে, অর্থাৎ এ সকল অর্থেই (দুটি বস্তু বা বিষয়ের মধ্যে) এক ধরনের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক ও সংযোগ রয়েছে। তাই ولی শব্দটি যেখানেই ব্যবহৃত হবে সেখানে বাক্যের অর্থনির্দেশক অভ্যন্তরীণ ও সংযুক্ত শাব্দিক দলীল এবং অবস্থা ও ভাবগত দলীলের ভিত্তিতে তার অর্থ খুজে বের করতে হবে। (মুতাহ্হারী, মাজমুএ আছার, ৩য় খণ্ড, পৃ.-২৫৫-২৫৬)

২. যেহেতু ولي و ولايت এর প্রকৃত অর্থ হল সংযুক্তি, সান্নিধ্য ও নিকটবর্তিতা, তাই আলোচ্য আয়াতে কর্তৃত্ব অর্থদানের সাথে পূর্ব ও পরবর্তী আয়াতের গৃহীত অর্থের (বন্ধু ও সাহায্যকারী) পার্থক্য বাচনভঙ্গি ও বর্ণনাধারার মধ্যে কোন ছেদ ঘটায়না। কেননা সমস্যা তখনই দেখা দিবে যখন ولایت একটি দ্ব্যর্থবোধক শব্দ হবে কিন্তু ইতি পূর্বেই প্রমাণিত হয়েছে যে, ولایت কোন দ্ব্যর্থবোধক শব্দ নয় বরং এর অভিন্ন অর্থ রয়েছে। তিনটি আয়াতেই সান্নিধ্য এবং নিকটবর্তিতার অর্থ রয়েছে। যদিও সংযুক্তি ও নৈকট্য নির্দেশকারী বস্তুর উদাহরণ ও দৃষ্টান্তের মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান কিন্তু একই ধারা ও ভাবার্থ নির্দেশের জন্য আয়াত তিনটির দৃষ্টান্তসমূহের মধ্যে এতটুকু ঐক্য থাকাই যথেষ্ট। মহান আল্লাহ তাআলা প্রথমে মুমিনদেরকে ইহুদী এবং খ্রীষ্টানদের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য তাদের সান্নিধ্য লাভের চেষ্টা এবং তাদের নিকটবর্তী হওয়া থেকে নিষেধ করেছেন। ইহুদীদের সাথে এই সংযোগ ও সান্নিধ্য শুধুমাত্র বন্ধুত্বের ব্যাপারে অঙ্গিকারাবদ্ধ হওয়ার দ্বারা এবং পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদার করার মাধ্যমেই সম্ভব। বেলায়াতের আয়াতেও মহান আল্লাহ তাআলা মুমিনদেরকে তাঁর এবং তাঁর রাসূল ও কিছু সংখ্যক মুমিনের সান্নিধ্যে যাওয়ার বা নিকটবর্তী হওয়ার আহবান জানিয়েছেন। কারণ আল্লাহর সান্নিধ্য কেবল তাঁর সৃষ্টিগত অনিবার্য (অলঙ্ঘনীয় প্রাকৃতিক) নিয়ম এবং মানুষের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তির গণ্ডিতে নির্ধারিত শরীয়তের বিধি বিধানের প্রতি নিজেকে সমর্পিত করার মাধ্যমেই লাভ করা সম্ভব। তেমনিভাবে রাসূলের (সা.) রেসালাতকে মেনে নিয়ে এবং তার অনুসরণ করেই শুধু রাসূলের সান্নিধ্য লাভ করা যায়।

তেমনি ভাবে কর্তৃত্বের ক্ষেত্রে তাঁর মনোনীত ব্যক্তির অনুসরণ করা এবং তার আনুগত্যের পতাকাতলে একত্রিত হওয়ার মাধ্যমেই ঐ কর্তৃত্বশীল ব্যক্তির নিকটবর্তী হওয়া যায়। সুতরাং বন্ধু, সাহায্যকারী, অভিভাবক ও নেতা এদের সকলের ওপরেই বেলায়েত বা নৈকট্য ও সংযুক্তির বিষয়টি প্রযোজ্য। তবে এক্ষেত্রে তাদের মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে তা ঐ ব্যক্তির সাথে সম্পর্কের দৃষ্টিতে তাদের ঘনিষ্ঠতা ও প্রভাবের পর্যায়ের ভিন্নতা থেকে উদ্ভূত।

৩. যদি বেলায়তের আয়াতে ওয়ালি শব্দটির অর্থ কর্তৃত্বের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত এবং তার পরবর্তী আয়াতে সাহায্যকারী হয় তবুও তা অসঙ্গত ও আলাদা তো নয়ই বরং সঙ্গতিপূর্ণ। কেননা আল্লাহ তাআলা প্রথমেই বলেছেন: আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং মুমিনদের কিছুসংখ্যক ওয়ালি (কর্তৃত্বের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত) এবং পরবর্তী আয়াতে এরশাদ করেছেন: যারা আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং মুমিনদের সাহায্য করবে তারাই বিজয়ী হবে।

আয়াতের শুরুতে তিনি মুমিনদের একাংশের ইমামত ও বেলায়াতকে সত্যায়ন ও নিশ্চিত করেছেন অতপর পরের আয়াতে মুমিনদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন তাদেরকে সাহায্য করার জন্য। (সাইয়েদ মুরতাজা, প্রাগুক্ত, ২য় খণ্ড, পৃ.-২৩৫) যেভাবে রাসূল (সা.) গাদীরে খুমের ঘটনার সময় প্রথমে হযরত আলী (আ.) কে নিজের স্থলাভিষিক্ত হিসেবে পরিচিত করিয়েছেন, তারপর দোয়া করেছেন এবং বলেছেন: হে আল্লাহ যে আলীকে (আ.) সাহায্য করবে তুমি তাকে সাহায্য কর, আর যে তাকে অপদস্ত করতে চায় তুমিও তাকে অপদস্ত কর।

৪. তদুপরি যদি কোন ক্ষেত্রে কোন আয়াতের অন্তস্থ অর্থগত দলীলের সাথে তার পূর্ব ও পরের আয়াতের বর্ণনাধারাগত অর্থের বৈপরীত্য দেখা যায় তবে সেক্ষেত্রে আয়াতের অন্তস্থ অর্থগত দলীলকে বর্ণনাধারাগত অর্থের মিল থাকার নীতির «سیاق» ওপর প্রাধান্য দিতে হবে।   

সুতরাং এই আয়াতে ওয়ালি শব্দটি কর্তৃত্বের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, এব্যপারে শেখ তুসীর যুক্তি প্রমাণই সঠিক।

 

উপসংহার:

পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে,

১. «انما»  এই আয়াতে সবসময়ের মতই সীমাবদ্ধতার (হাসর) অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। আর হাসর থাকার কারণে ওয়ালি শব্দটি “কর্তৃত্বের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত” অর্থের জন্যই নির্ধারিত হয়েছে। এ কারণে বন্ধু বা সাহায্যকারী অর্থ হতে পারেনা।

২. «هم راکعون»  বাক্যটি معطوف হওয়ার সম্ভাবনা নেই; কারণ এতে একই বিষয়ের পুনরাবৃত্তির ন্যায় অগ্রহণযোগ্য নীতির অবতারণা হয়। তাছাড়া এই বাক্যটি থেকে প্রথম যে অর্থটি শ্রোতার মনে আসে তা হল «هم راکعون»  হল অবস্থাবাচক বাক্য বা حالیة جملة এবং আয়াতের শানে নুজুলসহ আয়াতের ব্যাখ্যাকারী বহির্গত অন্যান্য দলীলও উক্ত দাবির (معطوف হওয়ার) বিপরীত বিষয়কে প্রমাণ করে।

৩. বহু সংখ্যক ভাষাবিদের মতে রুকু শব্দটির প্রকৃত অর্থ ‘উপুড় হওয়া’ এ শব্দটি বিনয়ী বা ন¤্রতার অর্থে ব্যবহারের জন্য قرینه বা সমর্থক দলীলের প্রয়োজন। অথচ এই আয়াতে এরূপ কোন قرینه নেই।

৪. মহত্ব, শ্রেষ্ঠত্ব এবং ভালকাজের প্রতি মানুষকে আকৃষ্ট করার জন্য একবচনের ক্ষেত্রে বহুবচনের ব্যবহার আরবি সাহিত্যে প্রচলিত আছে। অনেক পণ্ডিত ব্যক্তি ও বৈয়াকরণ এর সত্যতা স্বীকার করেছেন।

৫. «ولی»  শব্দটির যৌথ অর্থ রয়েছে যা একটা সামগ্রিক অর্থ অর্থাৎ সান্নিধ্য বা নৈকট্য নির্দেশের জন্য প্রণয়ন করা হয়েছে। এই সামগ্রিক অর্থের অনেক দৃষ্টান্ত ( مصاﺪیق) রয়েছে যেমন- মুক্ত, মুক্তকারী, ভালবাসা পোষণকারী, সাহায্যকারী, অভিভাবক, নেতা ইত্যাদি। তবে পবিত্র এই আয়াতে বিদ্যমান «انما» সীমাবদ্ধতা নির্দেশক অব্যয়টি এবং অন্যান্য অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক দলীলের ভিত্তিতে বলা যায় যে, ওয়ালি শব্দটি কর্তৃত্বের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বা অভিভাবক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।

সুতরাং হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর পরপরই হযরত আলী (আ.) এর নেতৃত্বের বিষয়টি এই আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় এবং এক্ষেত্রে ফাজেল কুশচী, ফাখরুদ্দীন রাজী ও অন্যরা যা বলেছেন তা এ মত খণ্ডনকারী দলীল বলে গণ্য হতে পারে না।

টীকা :

১. মুহাম্মাদ বিন মুহাম্মাদ বিন হাসান তুসী (জন্ম ৫৯৭ হি. ও মৃত্যু ৬৭২ হি.) বিশ্ব বিখ্যাত পণ্ডিত, ইরান এবং ইসলামের গর্ব। (হাসান আল-আমীন, আল ইসমাঈলিয়্যুন ওয়াল মোগল ওয়া নাসিরুদ্দীন তুসী) তিনি মোগল যুগের একজন উজ্জল নক্ষত্র ছিলেন তিনি তার জীবদ্দশায় ইসলামের অনেক খেদমত করেছেন। তিনি বিভিন্ন বিষয়ে যেমন-দর্শন, কালাম, গণিত এবং জ্যাতিষ শাস্ত্রে অসাধারণ পাণ্ডিত্যের অধিকারী ছিলেন। কালামশাস্ত্রে তার রচিত তাজরীদুল এ’তেকাদ গ্রন্থটি চির অমর হয়ে আছে। এই গ্রন্থের ভাষার মাধুর্যতা, বর্ণনার ধারা এবং বিভিন্ন যুক্তি প্রমাণ অনেককে এর ব্যাখ্যা গ্রন্থ রচনা করতে এবং এতে টীকা সংযোজন করতে উদ্বুদ্ধ করেছে। শুধুমাত্র আহলে বাইতের অনুসারীরাই নয় এমনকি আহলে সুন্নাতের অনেক গণ্যমান্য প্রসিদ্ধ আলেমও এর বিষয়বস্তুকে তাদের গ্রন্থে ব্যাখ্যা করেছেন।

২. আলাউদ্দীন আলী বিন মুহাম্মাদ কুশচী (৮৭৯হি.) ফাজেল কুশচী এবং মোল্লা আলী কুশচী নামে প্রসিদ্ধ, তিনি আহলে সুন্নাতের আশআরী চিন্তাধারার একজন মনীষী। তিনি তাজরীদুল ইতিকাদ গ্রন্থটির অন্যতম ব্যখ্যাকারক। তিনি তার শারহে জাদীদে তাজরীদ নামের প্রসিদ্ধ গ্রন্থে ইমামতের আলোচনায় শেখ তুসীর দৃষ্টিভঙ্গির ত্রুটি ধরেছেন ও সমালোচনা করেছেন। (আগা বুজুর্গে তেহরানী, আয যারিয়াহ ইলা আছারিশ শিয়া, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৩৫৪; যারকুলী, আল আলাম, ৫ম খণ্ড, পৃ.-৯; কাহালা, মু’জামুল মুআল্লিফিন, ৭ম খণ্ড, পৃ. ২২৭; কুম্মি, আলকুনি ওয়াল আলকাব, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৯৪)

 

গ্রন্থসূচী:

১. আল কোরআনুল কারীম।

২. ইবনে যিন্নী, আবিল ফাতহ ওসমান, আল খাসায়িস, গবেষণা মুহাম্মদ আলী নাজ্জার, বৈরুত, আলামুল কিতাব।

৩. ইবনে ফারেস, মুকায়িসুল লুগাহ, মাকতাবুল এ’লামিল ইসলামী, ১৪০৪ হি:।

৪. ইবনে হিশাম আনসারী, আব্দুল্লাহ, মুগনী আল-লাবিব আন কুতুবেল আ-আরিব, তেহরান, মুয়াসসাসে আস-সাদেক, প্রথম সংস্করণ, ১৩৮৬।

৫. ইস্পাহানী, রাগেব, মুফরাদাতে আলফাজিল কোরআন, গবেষণা দাউদি, ছাফওয়ান আদনান, দামেস্ক ও বৈরুত, দারুল কালাম ও দারুস সামিয়াহ, প্রথম সংস্করণ।

৬. আলুসী, মাহমুদ, রুহুল মাআনী ফি তাফসীরিল কোরআনুল আযিম, সাবউল মাছানী, বৈরুত, দারুল ইহইয়াউত তুরাছিল আরাবি, ১৪২০ হিজরি।

৭. আমিনী, আব্দুল হোসাইন, আল-গাদীর ফিল কিতাব ওয়াস সুন্নাহ ওয়াল আদাব, বৈরুত, দারুল কিতাবিল আরাবি, ৪র্থ সংস্করণ, ১৩৭৯ হিজরি।

৮. ইজি, আজদুদ্দিন আব্দুর রহমান বিন আহমাদ, আল-মাওয়াকিফ, বৈরুত, দারুল জিয়াল, ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দ।

৯. বাহরানী, ইবনে মাইসাম, আন নাজাতু ফিল কিয়ামাহ ফি তাহকিকি আমরিল ইমামাহ, কুম, মুয়াসসাসে আল হাদী, ১ম সংস্করণ, ১৪১৭ হিজরি।

১০. বাইদ্বাভী, আব্দুল্লাহ বিন ওমর, আনওয়ারুত তানযিল ওয়া আসরারুত তা’বিল, বৈরুত, দারুল ইহইয়াউত তুরাছিল আরাবি, ১৮১৮ হিজরি।

১১. তাফতাজানী, মাসউদ বিন ওমর, আল মুতাওয়াল, বৈরুত, দারু ইহইয়াউত তুরাছিল আরাবি, ১ম সংস্করণ, ১৪২৫ হিজরি।

১২. তাফতাজানী, মাসউদ বিন ওমর, শারহুল মুখতাছার, ইসমাঈলিয়্যান, ২য় সংস্করণ।

১৩. তাফতাজানী, মাসউদ বিন ওমর, শারহুল মাকাসিদ ফি ইলমিল কালাম, পাকিস্তান, দারুল মাআরেফ আন নোমানিয়া, ১ম সংস্করণ।

১৪. ছাআলাবি, আব্দুর রহমান, আল জাওয়াহিরুল হাসান, বৈরুত, দারুল কিতাবিল ইলমিয়্যাহ, ১৪১৬ হিজরি।

১৫. জুরজানী, আলী বিন মুহাম্মাদ, শারহুল মাওয়াকিফ, মিসর, মাতবাআতুস সাআদাহ, ১ম সংস্করণ, ১৩২৫ হিজরি।

১৬. জুরজানী, আল ইশারাত ওয়াত তানবিহাত ফি ইলমিল বালাগা, বৈরুত, ১ম সংস্করণ, ১৪২৩ হিজরি।

১৭. হুররে আমেলী, ইছবাতুল হুদা, বৈরুত, মুয়াসসাসাহ আল আলামী, ১ম সংস্করণ, ১৪২২ হিজরি।

১৮. হাসকানী, শাওয়াহিদুত তানযিল লি কাওয়ায়িদুত তাফযিল, তেহরান, বেজারাতে এরশাদে ইসলামী, ১৪১১হিজরি।

১৯. হাসান আল আমিন, আল ইসমাঈলিয়্যুন ওয়াল মোগল ওয়া নাসিরুদ্দীন তুসী, কুম, মারকাজুল গাদীর লিদিরাসাতুল ইসলামিয়্যাহ, ২য় সংস্করণ, ১৪১৭ হিজরি।

হোসাইনি কাফুমি, আবুল বাকা আইয়্যুব বিন মুসা, আল মুজাম ফিল মুস্তালাহাত ওয়াল ফুরুকুল লুগাবিয়্যাহ, তাহকিক আদনান দারউইশ, বৈরুত, মুয়াসসাসে আর রিসালাহ, ১৪১৯ হিজরি।

২০. হালাবি, সামিন, আদ-দুররুল মাসূন ফি ইলমিল কিতাবিল মাকনূন, বৈরুত, দারুল কিতাবিল ইলমিয়্যাহ, ১৪১৪ হিজরি।

২১. হালাবি, হাসান বিন ইউসুফ, কাশফুল মোরাদ ফি শারহি তাজরীদিল ইতিকাদ, তাহকিক হাসানযাদে আমুলী, কুম, মুয়াসসাসাতুন নাশরিল ইসলামী, ১০ম সংস্করণ, ১৪২৫ হিজরি।

২২. দারউইশ, মহিউদ্দীন, এরাবুল কোরআন ওয়া বায়ানুহু, সিরিয়া, দারুল ইরশাদ, ১৪১৫ হিজরি।

২৩. দোআস, এরাবুল কোরআনিল কারীম, দামেস্ক, দারুল মুনির, ১৪২৫ হিজরি।

২৪. রাযী, আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মদ বিন ওমর, মাফাতিহুল গাইব, বৈরুত, দারুল ইহইয়াউত তুরাছিল আরাবি, ১৪২০হিজরি।

২৫. যুবাইদি, মুহাম্মদ মুরতাজা, তাজুল আরুস মিন জাওয়াহিরুল ক্বামূস, বৈরুত, দারুস সাদর, ১৩৮৬ হিজরি।

২৬. যারকুলী, খাইরুদ্দীন, আল এ’লাম, বৈরুত, দারুল ইলম, ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দ।

২৭. যামাখশারী, মাহমুদ বিন ওমর, আসাসুল বালাগাহ, তাহকিক আব্দুর রাহিম মাহমুদ, বৈরুত, দারুল মা’রেফাহ।

২৮. যামাখশারী, মাহমুদ বিন ওমর, আল কাশশাফ আন হাক্বায়িকি গাওয়ামিজিত তানযিল, বৈরুত, দারুল কিতাবুল আরাবি, ১৪০৭ হিজরি।

২৯. সাকাকী, ইউসুফ বিন আবি বকর, মেফতাহুল উলুম, বৈরুত, দারুল কিতাবুল ইসলামিয়্যাহ, ১৪০৭ হিজরি।

৩০. সূয়ুতী, জালাল উদ্দীন, আল বাহজাতুল মারজিয়াহ ফি শারহিল আলফিয়া, কুম, নাবিদে ইসলামী, ১ম সংস্করণ।

৩১. সূয়ুতী, জালাল উদ্দীন, আদ্ দুররুল মানসূর ফি তাফসীরিল মা’ছুর, কুম, আয়াতুল্লাহ মারআশী নাজাফি লাইব্রেরী, ১৪০৪ হিজরি।

৩২. সাইয়্যেদ শারাফ উদ্দীন আল মুসাভি, আব্দুল হোসাইন, আল মুরাজায়াত, তাহকিক হোসাইন আর রাযী, দারুল কিতাবুল ইসলামি।

৩৩. সাইয়্যেদ মুরতাজা আলামুল হুদা, আশ শাফি ফিল ইমামাহ, কুম, মুয়াসসাসে ইসমাঈলিয়্যান, ২য় সংস্করণ।

৩৪. সূয়ুতী, জালাল উদ্দীন, আল মাযহার ফি উলুমিল লুগাহ ওয়া আনওয়ায়েহা, দারুল ইহইয়ায়ে কিতাবুল আরাবি, ১ম সংস্করণ।

৩৫. শাহরেস্তানী, মুহাম্মদ বিন আব্দুল করিম, আল মেলাল ওয়ান নেহাল, বৈরুত, দারুল মা’রেফাহ।

৩৬. শেখ মুফিদ, আল ইফসাহ ফি ইমামাতি আমিরিল মুমিনিন, কুম, মুয়াসসাসেহ আল বে’সাত, ১ম সংস্করণ, ১৪১২ হিজরি।

৩৭. ছাফী, মাহমুদ বিন আব্দুর রহিম, আল জাদওয়াল ফি এরাবিল কোরআন, বৈরুত, দারুর রাশিদ, ১৪১৮ হিজরি।

৩৮. তাবাতাবাই, সাইয়্যেদ মুহাম্মদ হোসাইন, আল-মিযান ফি তাফসীরিল কোরআন, তেহরান, দারুল কিতাবুল ইসলামিয়্যাহ, ১৩৭২ ফার্সি সাল।

৩৯. তাবারসী, ফাজল বিন হাসান, মাজমাউল বায়ান ফি তাফসীরিল কোরআন, তেহরান, নাসের খসরু, ১৩৭২ ফার্সি সাল।

৪০. তাবারী, মুহাম্মদ বিন জারীর, দালায়েলুল ইমামাহ, কুম, দারুজ জাখায়ির লিলমাতবুআত।

৪১. তুরাইহী, ফাখরুদ্দীন, মাজমাউল বাহরাইন, তেহরান।

৪২. তুসী, মুহাম্মদ বিন হাসান, আল-ইকতিসাদ ফিমা ইয়তাআল্লাকু বিল ইতিকাদ, বৈরুত, দারুল আযওয়া, ১৪০৬ হিজরি।

৪৩. তুসী, মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ, তাজরীদুল ইতিকাদ, দাফতারে তাবলিগাতে ইসলামী, ১ম সংস্করণ, ১৪০৭ হিজরি।

৪৪. ফাইয়ুমি, আল মিসবাহুল মুনির, কুম, দারুল হিজর, ৩য় সংস্করণ, ১৪২৫ হিজরি।

৪৫. কুম্মি, আব্বাস, আল কুনি ওয়াল আলকাব, তেহরান, মাকতাবাতুস সাদর।

৪৬. কুশচী, আলী বিন মুহাম্মাদ, শারহে তাজরীদুল আকায়েদ, কুম, মানশূরাতে রাযী।

৪৭. কাশানী, ফাতহুল্লাহ, মিনহাজুস সাদেকীন ফি ইলযামিল মুখালিফিন, তেহরান, ইসলামিয়্যা প্রেস, ১৩৭৮ ফার্সি সাল ।

৪৮. কাহালী, ওমর রেজা, মু’জামুল মুআল্লিফিন, বৈরুত, মাকতাবাতুল মুসান্না।

৪৯. কুলাইনি, মুহাম্মাদ বিন ইয়াকুব, উসূলে কফি, আনুবাদ মুহাম্মদ বাকের, তেহরান, আসওয়েহ প্রেস, ৪র্থ সংস্করণ।

৫০. মুহাম্মদ আল আমিন, আসওয়াউল বায়ান ফি ইযাহেল কোরআন বিল কোরআন, বৈরুত, দারুর ফেকর, ১৪১৫ হিজরি।

৫১. মুস্তাফাবী, আত তাহকিক ফি কালামাতিল কোরআন আল কারিম, ইরান, বেজারাতুছ ছাকাফাহ ওয়াল ইরশাদে ইসলামী, ১ম সংস্করণ।

৫২. মুতাহ্হারী, মুরতাজা, মাজমুএ আছার, তেহরান, সাদর, ২য় সংস্করণ।

৫৩. নূহাস, এরাবুল কোরআন, বৈরুত, দারুল কুতুবুল এলমিয়্যাহ, ১৪২১ হিজরি।

৫৪. হাশেমী, আহমাদ, জাওয়াহেরুল বালাগাহ, কুম, ওয়ারিওন, ৪র্থ সংস্করণ।

আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম খলীফাতুল বিলা ফাশাল

নিবেদক____________ মোঃ আলী হুসাইন

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

ইসলামে হযরত আবু তালিব আঃ এর অবদান:::::::::::::_________পর্ব (((((৩)))))_____________:::::::::::::::মহানবী (সা.) জন্মের পূর্বেই পিতাকে হারিয়েছেন। মায়ের কাছে তিনি পিতা আব্দুল্লার ইন্তেকালের কথা জানতে পেরেছেন। ছয় বছর বয়সে তিনি মাতা আমেনার স্নেহ থেকেও বঞ্চিত হন।ফলে তাঁর লালন-পালনের ভার পিতামহ জনাব আব্দুল মোতালিব গ্রহণ করেন। মাত্র দুই ছর পর তিনিও এ পৃথীবি ছেড়ে চলে গেলেন। শিশু মোহাম্মদ (সাঃ) অসহায় হয়ে পড়লেন। মহিমান্বিত আল্লাহ তাঁর হাবিবের জন্য নিজ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছেন। আট বছর বয়সে শুরু হলো নবী (সা.)-এর জীবনের এক নতুন অধ্যায় , তাঁর দায়িত্ব গ্রহণ করলেন পিতৃব্য হযরত আবু তালিব। মোহাম্মদ (সা.)-কে চাচা আবু তালিব ও চাচি ফাতেমা বিনতে আসাদ প্রাণাধিক ভালবাসতেন। মোহাম্মদ (সা.)-কে তিনি কখনো মায়ের শূন্যতা বুঝতে দেননি। নিজেদের সীমাবদ্ধতা থাকলেও মোহাম্মদ (সা.)-কে তা অনুধাবন করতে দেননি। এই মহিমান্বিত পরিবারের অকৃত্রিম ভালবাসা , আদর-যন্ন আর লালন-পালন ও ছত্রছায়ায় প্রিয় নবী (সা.)-এর শিশু , কিশোর ও যৌবনকাল অতিবাহিত হয়েছিল। জীবনের সেই সময়গুলো কত সুখময় ছিল নবী (সা.) তা বুঝতে পেরেছিলেন , যখন মাতৃসুলভ চাচি ইন্তেকাল করলেন।নবী (সা.) সেই মহিয়সী চাচিকে‘ মা’ বলেই ডাকতেন। তাঁর ইন্তেকালে নবী (সা.) দীর্ঘদিন অশ্রুসজল ছিলেন। হযরত আবু তালিব যেমনি পিতার ন্যায় স্নেহ ভালবাসা দিয়ে নবীকে আগলে রেখেছেন , তেমনি তাঁর ভরণ-পোষণ , পোশাক-পরিচ্ছেদ ও অন্যন্য প্রয়োজন মিটিয়েছেন অকৃপণ ভাবে। এমনকি নিজের সন্তানের চেয়েও নবীকে দিয়েছেন অগ্রাধিকার। নিজেরা কষ্টে থাকলেও নবী (সা.)-এর কষ্টে থাকা তিনি সহ্য করতে পারতেন না।এখানে আমি একটি হাদীস উপস্থাপন করছি: রাসূল (সা.) বলেছেন ,“ যে ব্যক্তি তার জান-মাল , ইজ্জত-সম্মান ও সন্তানসন্ততি এবং সকল মানুষের চাইতে আমাকে অধিক ভালবাসে না তার ঈমান পরিপূর্ণ নয়” । উল্লিখিত হাদীসের আলোকে প্রমাণ হয় হযরত আবু তালিব ছিলেন একজন পরিপূর্ণ ঈমানদার। একজন স্নেহবৎসল পিতা , দয়ালু চাচা ও একজন দরদি অভিভাবক। তাঁরা উভয়ই চাচা এবং ভ্রাতুষ্পুত্র একে অন্যের প্রতি এতটাই অনুরোক্ত ছিলেন যেন মনে হতো তাঁদের জীবন পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। দেশে বিদেশে হযরত আবু তালিব আঃ যেখানেই সফর করতেন নবীকে সাথে রাখতেন। যে কারণে আরবের লোকেরা মোহাম্মদ (সা.)-কে‘ আবু তালিবের ইয়াতিম’ নামেও ডাকত। ভাতিজাকে কখনও তিনি একা ছাড়তেন না , এমনকি ঘুমানো কালেও পাশে নিয়ে ঘুমাতেন এরূপে নবী (সা.)-এর 8 বছর বয়স থেকে 25 বছর বয়স পর্যন্ত সুদীর্ঘ 17 টি বছর তিনি হযরত আবু তালিবের গৃহে অবস্থান করেন।আর যেখানে এত বছর নবী (সা.) অবস্থান করলেন , সেখানে যে খাওয়া দাওয়া করেছেন তা নিশ্চই হালাল ছিল। কারণ নবী-রাসূলগণ হারাম খাদ্য গ্রহণ করেন না। তাহলে যারা বলেন ,“ আবু তালিব ঈমান আনেননি” । তারা নবী (সা.)-কে কোথায় পৌঁছালেন ? কারণ পবিত্র কোরআনে সূরা তওবার 28 নং আয়াতে আল্লাহ পাক উল্লেখ করছেন :) يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْمُشْرِ‌كُونَ نَجَسٌ(“ হে ইমানদারগন! নিশ্চই মুশরিকরা হচ্ছে অপবিত্র” ।📚📚📚📚তাই ঐ সকল ওলামাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই আপনাদের উক্তি সত্য হলে , নবী (সা.) কি 17 বছর হালাল খাদ্য গ্রহণ থেকে বঞ্চিত ছিলেন ? যা আদৌ বিশ্বাস যোগ্য নয়। পবিত্র কোরআনে আমরা জানতে পেরেছি নবী মূসা (আ.)-কে ফেরাউনের স্ত্রী আছিয়া (আ.) যখন লালন-পালনের সিদ্ধান্ত নিলেন এবং এই শিশুকে দুধ পান করানোর জন্য ধাত্রীর আহবান করলেন অতঃপর অসংখ্য ধাত্রীর আগমণ ঘটল কিন্তু কেউ শিশু মূসাকে দুগ্ধ পান করাতে সক্ষম হল না। তখন সেখানে উপস্থিত নবী মূসা (আ.)-এর আপন ভগ্নী বললেন ,“ আমি আপনাদের এমন এক ধাত্রীর সন্ধান দিতে পারি , হয়তো এই শিশু তাঁর দুগ্ধ পান করবে” । আর বাস্তবেও তাই ঘটল , অর্থাৎ আল্লাহ তাঁকে মায়ের কাছে ফিরিয়ে নিলেন এবং মায়ের দুগ্ধই পান করালেন। উক্ত ঘটনায় ইহাই প্রমানিত হয় যে , আল্লাহর মনোনীত নবী-রাসূলগণ আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত যখন যা ইচ্ছা খাদ্য কিংবা পানীয় গ্রহণ করেন না।দুঃখজনক হলেও সত্য যে , আমাদের প্রিয় নবী (সা.) সম্পর্কে কিছু সংখ্যক মুসলমান নামধারী উম্মত এমন সব প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন , যা শুনে অন্য ধর্মের অনুসারীরাও লজ্জাবোধ করেন। যেমন রাসূল (সা.)-কে সদা সর্বদা অভাবী , ক্ষুধার্ত ও অসহায় হিসেবে উপস্থাপন , তালিওয়ালা জামা পরিধারণ , রাসূল (সা.)-এর সিনাছাক করে ময়লা দূরিকরণ , রাসূল (সা.)-কে নিরক্ষর নির্ধারণ ও চল্লিশ বছর পর নবী নির্ধারণ সহ বেশ কিছু অসঙ্গতিপূর্ণ কিচ্ছা-কাহিনী আমাদের সমজে প্রচলিত আছে। অথচ পবিত্র কোরআনে বেশকিছু সংখ্যক নবীর নাম ও বর্ণনা রয়েছে , যাঁদের কারো কখনো সিনাছাক করতে হয়নি এবং কেহ নিরক্ষর ছিলেন এমন প্রমাণও নেই। তাই প্রিয় নবী (সা.)-এর উম্মত হিসাবে প্রত্যেক মুসলমানের অন্তত নূন্যতম আকিদা এই হওয়া উচিৎ ছিল যে , আমাদের সমাজে যে সকল বক্তব্য রাসূল (সা.)-এর মান-মর্যাদাকে হেয় প্রতিপন্ন করে এবং ভিন্ন ধর্মের লোকেদের কাছে রাসূল (সা.)-এর শাণ ও মানকে প্রশ্নের সন্মূখিন করে তোলে , অন্তত সে সকল প্রচার-প্রচারণা থেকে বিরত থাকা।উদহরণ স্বরুপ বলা যেতে পারে যে , ইসলামের ইতিহাসের প্রথম তিন খলিফার সন্মানিত পিতাগণ , কে কোন অবস্থানে ছিলেন বা তাঁরা প্রকাশ্যে কলেমা পড়ে ইসলামের ছায়াতলে এসেছিলেন কি না এবিষয়ে ইতিহাসে তেমন কোন আলোচনা পরিলক্ষিত হয় না। অথচ চতুর্থ খলিফার সম্মানিত পিতা সম্পর্কে যারা মর্যাদাহানীকর বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন তারা কি নিশ্চিত বলতে পারেন যে , দ্বীন ইসলাম এতে কত টুকু উপকৃত হয়েছে ?আমাদের প্রিয়নবী হযরত মোহাম্মাদ (সা.)-এর 8 বছর বয়স থেকে শুরু করে তাঁর 50 বছর বয়স পর্যন্ত সুদীর্ঘ 42 বছরের এক অকৃত্রিম অভিভাবক ছিলেন হযরত আবু তালিব। তিনি যে কেবলমাত্র নবী (সা.)-এর অভিভাবক ছিলেন এমন নয় , তিনি ছিলেন সত্য ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠাতা , কল্যানের অগ্রদূত , মজলুমের বন্ধু ও জালেমের শত্রু। নবী (সা.)-এর বিভিন্ন বক্তব্যের মাধ্যমেও তা প্রকাশ পেয়েছে।হযরত আবু তালিব সম্পর্কে কিছু লিখতে গিয়ে ক্ষুদ্র একজন লেখক হিসেবে যে বিষয়টি বারবার আমার অনুভূতিতে নাড়া দিয়েছে তা সমীপে প্রকাশ করছি।আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম খালিফা তুল বিলা ফাসাললা'নাতুল্লাহি আল্লাল কাজেবিননিবেদক______ কবির উদ্দিন

আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদদিন ওয়া আলে মোহাম্মদনবী-নন্দিনী হযরত ফাতিমা যাহরার মাহাত্ম্য যতই বর্ণনা করা হোক না তা অপূর্ণই থেকে যাবে ঠিক যেমনি জানা যায়নি তাঁর পবিত্র কবর কোথায় রয়েছে এবং তা গোপন বা অজ্ঞাত থাকার রহস্যই বা কী।তিনি কেবল সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নারী ছিলেন না। বলা হয় মহান আল্লাহর পর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হলেন মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা) এবং তাঁর পর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হলেন আমিরুল মু'মিনিন হযরত আলী (আ)। আর তাঁর পরই সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হলেন হযরত ফাতিমা। তাই এমন ব্যক্তিদের মহিমা ও মহত্ত্ব পুরোপুরি তুলে ধরা মহান আল্লাহর পর কেবল এই তিন শীর্ষ সৃষ্টির পক্ষেই সম্ভব। বলা হয় ইমাম হাসান ও হুসাইনসহ মাওলা মোহাম্মদ রাসুলুল্লাহর আহলে বাইতের ১১ জন সদস্য মা ফাতিমাকে তাঁদের জন্য আদর্শ বা হুজ্জাত বলে মনে করতেন।এমন কোনো নারীর কথা কি কল্পনা করা যায় যিনি তার দুই শিশু-সন্তানসহ তিন দিন ধরে ক্ষুধার্ত হওয়া সত্ত্বেও স্বামীকে খাবার সংগ্রহের কথা বলছেন না ইসলামের জন্য তাঁর গুরুত্বপূর্ণ কাজে মনোযোগ বিঘ্নিত হবে বলে? অথবা এমন নারীর কথা কি চিন্তা করা যায় যিনি পর পর তিন দিন শুধু পানি পান করে রোজা রাখা সত্ত্বেও ইফতারের সময় ক্ষুধার্ত সাহায্যপ্রার্থীকে খাদ্য দেয়ার জন্য সেই তিন দিন কেবল পানি দিয়েই ইফতার করেন? আসলে হযরত ফাতিমা যাহরা ছিলেন মানবজাতির চিরন্তন গৌরব ও আদর্শ মানুষের প্রতীক তথা মানবতা ও মনুষ্যত্বের পূর্ণতারঅন্যতম মডেল। এ ধরনের মানুষ পৃথিবীতে জন্ম না নিলে আদর্শের দিক থেকে মানবজাতির মধ্যে বিরাজ করতো ব্যাপক অপূর্ণতা এবং আদর্শিক শূন্যতা। মাওলা মোহাম্মদ সাঃ এর পুত্র সন্তানরা শৈশবেই ইন্তিকাল করায় মক্কার কাফিররা যখন মহানবীকে আবতার বা নির্বংশ বলে বিদ্রূপ করতো তখন মহান আল্লাহ তাঁকে দান করেন হযরত ফাতিমা যাহরা। পবিত্র কুরআনে তাঁকে উল্লেখ করা হয়েছে 'কাওসার' হিসেবে যার অর্থ মহত্ত্ব আর নেয়ামতের চির-প্রবহমান ঝর্ণা। আল্লামা ফখরুদ্দীন রাযী বলেছেন, হযরত ফাতিমার শানেই সুরা কাওসার নাযিল হয়েছে। তিনি বলেন, অনেক অত্যাচার সত্ত্বেও হযরত ফাতিমার বংশধারা পৃথিবীতে টিকে আছে, অন্যদিকে বনু উমাইয়্যা ধ্বংস হয়ে গেছে।অবশ্য পরবর্তী যুগে বনু আব্বাসও রাসূলের পরিবারের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন চালিয়েছিল। অবশেষে তারাও ধ্বংস হয়ে গেছে। যারা রাসূলের বিরুদ্ধে কথা বলত তাদের বংশধরদের কোন খবর পৃথিবীর মানুষ জানে না, নেয় না। রাসূলের বংশধরদের নিশ্চিহ্ন করার জন্য সব ধরনের চেষ্টা করেও তারা সফল হয়নি। একের পর এক রাসূলের বংশধরদের শহীদ করা সত্ত্বেও যারা পুত্রসন্তান নিয়ে গর্ব বোধ করত তাদের কোন খবর আজ বিশ্ববাসী জানে না, অথচ রাসূলের বংশধারা হযরত ফাতিমার মাধ্যমে কিয়ামত পর্যন্ত বজায় থাকবে। এ বংশেই ইমাম মাহদী (আ.) আবির্ভূত হবেন এবং তিনি সারা বিশ্বে আল্লাহর ধর্মকে প্রতিষ্ঠিত করবেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সকল নারীর সন্তানকে যুক্ত করা হয় বাবার সাথে শুধু ফাতিমা ছাড়া। ফাতিমার সন্তানদের আমার সাথে সম্পর্কিত করা হয়েছে।’আর সেজন্যই আমরা ইতিহাসে দেখতে পাই যে, হযরত ফাতিমার সন্তানদের মানুষ ‘ইয়াবনা রাসূলিল্লাহ’ অর্থাৎ ‘হে রাসূলের সন্তান’ বলে সম্বোধন করত।মহান আল্লাহর নির্দেশে মহানবী (সা.) তাঁর কন্যা সন্তানের নাম রাখেন ফাতিমা। ‘ফাত্‌ম্‌’ শব্দের অর্থ রক্ষা করা। এ সম্পর্কে মহানবী বলেন : ‘তাঁর নামকরণ করা হয়েছে ফাতিমা। কারণ, আল্লাহ তাঁকে ও তাঁর অনুসারীদের জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত রেখেছেন।’ হজরত ফাতিমা(সা) আদর্শ মানবাত্মার প্রতীকহযরত ফাতিমা ছিলেন নারী ও পুরুষ তথা গোটা মানব জাতির জন্য অসাধারণ ত্যাগ, বিশ্বস্ততা, অন্যায়ের ব্যাপারে আপোসহীনতা, সততা, দানশীলতা, ধৈর্য, চারিত্রিক পবিত্রতা, আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্টিসহ বহু মহান স্বর্গীয় গুণের আদর্শ। স্নেহময়ী জননীর মত বিশ্বনবীর সেবা-যত্ন করা এবং বিপদের সময় তাঁর সহায়তায় এগিয়ে আসার জন্য মহীয়সী নারী ফাতিমা'র অন্য একটি উপাধি উম্মে আবিহা বা পিতার জননী। বিশ্বনবী (সা:) তাঁকে সর্বযুগের শ্রেষ্ঠ নারী বলে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহর দরবারে তাঁর বিশেষ মর্যাদার কারণেই ফাতিমাকে দেখলে দাঁড়িয়ে তাকে সালাম দিতেন মহানবী (সা)। রাসুলে খোদা বলেছেন, 'ফাতিমা আমার দেহের অংশ, যা কিছু তাঁকে সন্তুষ্ট করে তা আমাকে সন্তুষ্ট করে এবং যা কিছু আমাকে সন্তুষ্ট করে তা আল্লাহকেও সন্তুষ্ট করে, আর যা কিছু ফাতিমা কে কষ্ট দেয়, তা আমাকে কষ্ট দেয়, আর যা আমাকে কষ্ট দেয়, তা আল্লাহকেও কষ্ট দেয়।' হযরত ফাতিমা বেহেশতে সর্ব প্রথম প্রবেশ করবেন বলে বিশ্বনবী উল্লেখ করেছেন। অনেকেই মনে করেন প্রিয় কন্যা ফাতিমাকে নিজের দেহের অংশ বলে মহানবী (সা) এটাও বুঝিয়েছেন যে পিতার রিসালাতের অন্যতম কাণ্ডারি ছিলেন ফাতিমা। এই মহীয়সী নারীর অনন্য ত্যাগ-তিতিক্ষা ও সেবা না থাকলে ইসলাম বিলুপ্ত হয়ে যেত।হযরত ফাতিমাকে কেউ কেউ কষ্ট দেবেন- এটা জানতেন বলেই বিশ্বনবী (সা) তাঁকে রাগানোর পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘ফাতিমা আমার অস্তিত্বের অংশ। যে তাঁকে রাগান্বিত করে সে আমাকে রাগান্বিত করে এবং ফাতিমা কোন ব্যাপারে ক্রুদ্ধ হলে আল্লাহও ক্রুদ্ধ হন এবং ফাতিমার আনন্দে আল্লাহও আনন্দিত হন।’অনেক মহৎ গুণের আদর্শ হযরত ফাতিমার রয়েছে অনেক উপাধি। যেমন, তাঁর উপাধি ছিল আস-সিদ্দিক্বা বা সত্য-নিষ্ঠ,আল-মুবারাকাহ বা বরকতপ্রাপ্ত,আত-ত্বাহিরা বা পবিত্র,আল-মারজিয়া বা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট, আজ জাকিয়া বা সতী, মুহাদ্দিসাহ বা হাদিসের বর্ণনাকারী, সাইয়্যিদাতুন নিসায়িল আলামিন বা নারীকুলের মধ্যে শ্রেষ্ঠ, খাতুনে জান্নাত বা বেহেশতি নারীদের নেত্রী, আয যাহরা বা দ্যুতিময় ইত্যাদি। আর পিতা মহানবীর প্রতি অশেষ ভালোবাসা ও সেবার কারণে তাঁকে বলা হত উম্মে আবিহা বা পিতার মাতা।হযরত ফাতিমা যখন নামাজের জন্য দাঁড়াতেন তখন তাঁর জ্যোতি আকাশের ফেরেশতা ও অন্যান্যদের দিকে ছড়িয়ে পড়ত। আর এ কারণে তাঁকে যাহরা উপাধি দেয়া হয়।রাসুল (সা)’র ওফাতের পর তাঁকে সান্ত্বনা দিতে আসতেন ওহির ফেরেশতা। ওহির ফেরেশতা তাঁকে ভবিষ্যৎ বিষয়ে অনেক কিছু জানান। আর তার থেকে সেসব বিষয় লিখে রাখেন হযরত আলী (আ)। আর এ জন্যই ফাতিমাকে বলা হয় মুহাদ্দিসা।হযরত ফাতিমা খুবই সাধারণ জীবন যাপন করতেন। সংসারের যাবতীয় কাজ তিনি নিজের হাতে করতেন। মশক দিয়ে পানি তুলতে তুলতে তাঁর শরীরে দাগ পড়ে গিয়েছিল। তিনি যাঁতার মাধ্যমে এত পরিমাণ আটা তৈরি করতেন যে, তাঁর হাতে ফোস্কা পড়ে যেত। আর সেই আটা দিয়ে রুটি তৈরি করে সেগুলো মদীনার দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করতেন। হযরত ফাতিমার কাপড়ের পোশাকে থাকতো তালি। পার্থিব কোন বস্তুই তাঁকে আকৃষ্ট করতে পারত না। আর এজন্যই রাসূল (সা.) তাঁকে ‘বাতুল’ উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন।হযরত ফাতিমা সারারাত জেগে নামায পড়তেন, মহান আল্লাহর যিকির করতেন এবং রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উম্মতের জন্য দো‘আ করতেন। তিনি এত বেশি নামায পড়তেন যে, তাঁর পা ফুলে যেত। সংসারের কাজ করার সময়ও তাঁর মুখে আল্লাহর যিকির থাকত।রাসূলের স্ত্রী হযরত উম্মে সালামাহ্ বলেন : রাসূলের ওফাতের পর ফাতিমাকে দেখতে যাই এবং তাঁর অবস্থা জানতে চাই। তিনি জবাব দিলেন : অত্যন্ত দুঃখ-কষ্টে দিন অতিবাহিত হচ্ছে।এ রকম কষ্টের মধ্য দিয়েই রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর ওফাতের অল্প কিছুদিন পরই হযরত ফাতিমা এ পৃথিবী থেকে বিদায় নেন। রাসূলে খোদা ওফাতের আগে হযরত ফাতিমার কানে কানে বলে গিয়েছিলেন যে, তিনিই তাঁর সাথে প্রথম মিলিত হবেন। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় রাসূলকে এও জানিয়েছিলেন যে, কীভাবে হযরত ফাতিমা তাঁর সাথে এত তাড়াতাড়ি মিলিত হবেন। আর সেজন্যই রাসূল (সা.) বারবার তাঁর উম্মতকে সতর্ক করছেন যে,তারা যেন হযরত ফাতিমাকে কষ্ট না দেয়,তাঁকে অসন্তুষ্ট না করে। হযরত ফাতিমা যাহরা পিতার শারীরিক বিদায়ের কারণে যতটা না দুঃখ পেয়েছিলেন তার চেয়েও বেশি ব্যথা পেয়েছিলেন পিতার আদর্শ তথা ইসলামের শিক্ষা ম্লান ও বিকৃত হয়ে পড়ার কারণে। রাসুলে খোদার কাছেই তিনি শুনেছিলেন তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের ওপর অনেক বিপদ ও মুসিবত তথা ইসলামের ওপরই অনেক দুর্যোগ নেমে আসবে। আর সেইসব বিপদ মুকাবিলার মত কঠিন ধৈর্যের খোদায়ী পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হয়েছিলেন সর্বকালের সেরা মহামানবী হযরত ফাতিমা ঠিক যেভাবে সিফফিন ও কারবালা প্রান্তরসহ যুগে যুগে নানা বিপদ, সংকট ও শত্রুতার মোকাবেলায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন বিশ্বনবী (সা)’র পবিত্র আহলে বাইতের অন্যান্য সদস্য।কোনো কোনো ঐতিহাসিক বর্ণনা অনুযায়ী রাজনৈতিক কারণে হযরত ফাতিমাকে আহত করা হয়েছিল প্রভাবশালী মহলের পক্ষ হতে এবং পরবর্তীকালে এ আঘাতজনিত কারণেই তিনি শাহাদাত বরণ করেন। ফাতিমা আমার দেহের অঙ্গ, চোখের জ্যোতি, অন্তরের ফল এবং আমার রূহস্বরূপ: মহানবী (সা)অনেকেই মনে করেন শত্রুতার প্রেক্ষাপটে হযরত ফাতিমাকে দাফন করা হয়েছিল মধ্যরাতে গোপনীয়ভাবে অতি গোপন স্থানে যা আজো গোপন রয়েছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত গোপন থাকবে। হযরত ফাতিমা জানতেন কখন তাঁর মৃত্যু হবে। আর এ জন্য তিনি নিজে গোসল করে নতুন ও পরিষ্কার পোশাক পরে কিবলামুখী হয়েছিলেন।তিনি নিজের মৃত্যু কবে হবে এবং তাঁর দুই প্রিয় সন্তান হযরত হাসান ও হুসাইন কিভাবে মারা যাবেন সেইসব তথ্যসহ ভবিষ্যৎ ইতিহাসের অনেক খবর রাখতেন। হুসাইন (আ.)'র হত্যাকারীদের অভিশাপ দিয়ে গেছেন তিনি। মদিনার নারী সমাজ ধর্মীয় বিষয়সহ নানা বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করত হযরত ফাতিমার কাছ থেকে। ফাদাক সম্পর্কিত তাঁর ভাষণ এই মহামানবীর অতুল জ্ঞান, খোদাভীরুতা এবং দূরদর্শিতাকেই তুলে ধরে।মাওলা মোহাম্মদ (সা.) বলেছেন, মহান আল্লাহ আলী, তাঁর স্ত্রী ও তাঁদের সন্তানদেরকে মানুষের জন্য হুজ্জাত বা দলিল করেছেন এবং তাঁরা হল জ্ঞানের দরজা।মহান আল্লাহর ইচ্ছায় হিজরতের দ্বিতীয় বর্ষে বা দ্বিতীয় হিজরিতে হযরত ফাতিমা যাহ্‌রা (সা.আ.) বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হন আমিরুল মু'মিনিন হযরত আলী (আ.)'র সঙ্গে। আলী (আ.) ছিলেন সত্য, ন্যায়বিচার ও খোদাভীরুতার প্রতীক। আলী (আ.)'র ঘরে তিনি হন আদর্শ স্ত্রী ও মাতা। গড়ে তোলেন বেহেশতি যুবকদের সর্দার হযরত ইমাম হাসান, ইমাম হুসাইন (আ.) এবং জাইনাব (সা.)'র মত ইসলামের ইতিহাসের প্রবাদতুল্য গৌরব সৃষ্টিকারী অনন্য সন্তান। বিয়ের দিন এক দরিদ্র নারী নবী-নন্দিনীর কাছে পোশাক সাহায্য হিসেবে চাইলে তিনি নিজের বিয়ের জন্য তৈরি নতুন পোশাকটি তাকে দান করে দেন। এর মাধ্যমে তিনি কুরআনের এই আয়াতটি বাস্তবায়ন করেছিলেন যেখানে সর্বোত্তম ও প্রিয় বস্তু থেকে দান করতে বলা হয়েছে। ফাতিমা যাহ্‌রা (সা.আ.) মুসলিম সমাজের বিচ্যুতি ঠেকানোর জন্য ও সত্যের জন্য সংগ্রামের সামাজিক দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রেও নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হন। নারীমুক্তির আদর্শ হিসেবে এই মহামানবীর জন্মদিন ইরানসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে পালিত হয় নারী ও মা দিবস হিসেবে। মাওলা হযরত মুহাম্মাদ (সা:) হযরত ফাতিমা (সা:) সম্পর্কে বলেছেন, ফাতিমা আমার দেহের অঙ্গ, চোখের জ্যোতি, অন্তরের ফল এবং আমার রূহস্বরূপ। সে হচ্ছে মানুষরূপী স্বর্গীয় হুর। প্রসিদ্ধ হাদীস গ্রন্থ বুখারীতে এসেছে, মহানবী (সা:) বলেছেন, ফাতিমা আমার অংশ। যে কেউ তাকে অসন্তুষ্ট ও ক্রোধান্বিত করলো সে আমাকেই অসন্তুষ্ট ও ক্রোধান্বিত করলো। একই ধরনের হাদীস বর্ণিত হয়েছে মুসলিম শরীফ ও আহমদ ইবনে শুয়াইব নাসায়ীর ফাজায়েল গ্রন্থসহ আরো অনেক হাদীস গ্রন্থে। হাদীসে এটাও এসেছে যে যা আল্লাহর রসূল (সা:)কে অসন্তুষ্ট করে তা আল্লাহকেও অসন্তুষ্ট বা ক্রুদ্ধ করে। হযরত ফাতিমা (সা:)'র উচ্চতর মর্যাদা উপলব্ধি করার জন্য কেবল এ হাদীসই যথেষ্ট। বিশ্বনবী (সা:)'র আহলে বাইত (আঃ)'র সদস্য হযরত ফাতিমা যে নিষ্পাপ ছিলেন তাও এসব বর্ণনা থেকে স্পষ্ট। হযরত ফাতিমা (সা:)'র সান্নিধ্য ও সেবা না পেলে আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী (আঃ)'র জীবনও পুরোপুরি বিকশিত ও পরিপূর্ণতা লাভ করতো না। তাঁরা ছিলেন একে-অপরের প্রতি পুরোপুরি সন্তুষ্ট। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা:) হযরত ফাতিমা (সা:)-কে মানুষের আকৃতিতে ফেরেশতা বলেও প্রশংসা করেছেন। তিনি বলতেন, আমি যখনই বেহেশতের সুবাস পেতে চাইতাম তখনই কন্যা ফাতিমার ঘ্রাণ নেই।আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগী করা ছাড়াও প্রায়ই রোজা রাখা ও গরীব-দুঃখীকে অসাধারণ মাত্রায় দান-খয়রাত করা ছিল হযরত ফাতিমা (সা:)'র একটি বড় বৈশিষ্ট্য। জনসাধারণ বা কারো উদ্দেশ্যে যে কোনো বক্তব্য রাখার আগে দীর্ঘক্ষণ ধরে মহান আল্লাহর বিভিন্ন নেয়ামতের কথা খুব সুন্দর ও হৃদয়স্পর্শী ভাষায় তুলে ধরে আল্লাহর প্রশংসা করা ছিল তাঁর অন্য একটি বড় বৈশিষ্ট্য। বিশ্বনবী (সা:)'র আহলে বাইতের অন্য সদস্যদের মত তিনিও কখনও অন্যায়ের সাথে আপোষ করেন নি। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করা বা সক্রিয় থাকার মধ্যে তিনি খুঁজে পেতেন আনন্দ। হযরত ফাতিমা (সা:) বলেছেন, আল্লাহর সেবায় মশগুল হয়ে যে সন্তুষ্টি পাই তা আমাকে অন্য সব সন্তুষ্টি বা আনন্দ থেকে বিরত রাখে এবং সব সময় মহান আল্লাহর সুন্দর দৃষ্টি আমার দিকে নিবদ্ধ রাখার প্রার্থনা ছাড়া আমার অন্য কোনো প্রত্যাশা নেই। ফাতিমা সিদ্দিকা (সা. আ.) ঐশী পন্থায় অনেক জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। 'মাসহাফই ফাতিমা' নামে খ্যাত গ্রন্থটির সমস্ত তথ্য সন্নিবেশিত হয়েছে জিবরাইল ফেরেশতার সঙ্গে ফাতিমা (সা. আ.)'র কথোপকথনের মাধ্যমে যা লিখে গেছেন হযরত আলী (আ.)। রাসূল (সা.)'র মৃত্যুর পর পিতার বিয়োগ-ব্যথায় কাতর ফাতিমাকে সান্ত্বনা দিতে আসতেন স্বয়ং জিবরাইল (আ.)। হযরত ফাতিমা ইমাম হুসাইন (আ.)'র হত্যাকারীদের অভিশাপ দিয়ে গেছেন। মদিনার নারী সমাজ ধর্মীয় বিষয়সহ নানা বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করত ফাতিমা (সা.আ.)'র কাছ থেকে। ফাদাক ও মানজিল শীর্ষক তাঁর ভাষণ এই মহামানবীর অতুল জ্ঞান, খোদাভীরুতা এবং দূরদর্শিতাকেই তুলে ধরে।নবী-নন্দিনী (সা:) বলেছেন, পৃথিবীতে তিনটি জিনিস আমার খুবই প্রিয়। আল্লাহর পথে ব্যয়, রাসূলে খোদা (সা:)র চেহারার দিকে তাকানো এবং কুরআন তিলাওয়াত। পবিত্র কুরআনের আয়াত শ্রবণ মুসলমানদেরকে মুক্তির তীরে পৌঁছে দেয়। ফাতিমা (সা. আ.) রাসূল (সা.)'র উম্মতের উদ্দেশে বলেছেন: আল্লাহ ঈমানকে তোমাদের জন্য শির্ক হতে পবিত্র হওয়ার ও নামাজকে অহংকার থেকে পবিত্র হওয়ার এবং আমাদের আনুগত্য করাকে ধর্মের ব্যবস্থায় বা ধর্মকে প্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যম করেছেন, আমাদের নেতৃত্বকে অনৈক্যের পথে বাধা ও আমাদের সঙ্গে বন্ধুত্বকে ইসলামের জন্য সম্মানের মাধ্যম করেছেন। ফাতিমা বা তাঁর বংশধরদের কেউই ঐশী সম্মানকে পার্থিব ভোগের কাজে লাগান নি। আত্মত্যাগের বিশালত্বে ফাতিমা এবং তাঁর বংশধররা ইতিহাসে অনন্য। ফাতিমার ত্যাগের শিক্ষাই হল কারবালার শিক্ষা। এ শিক্ষা আজও জুলুম-নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের আদর্শ। সত্যকে জানতে হলে, স্রষ্টার পথ চিনতে হলে এবং স্বাধীন ভাবে বেঁচে থাকতে হলে ধরতে হবে হযরত ফাতিমার পথ। তাই হজরত ফাতিমা(সা) আদর্শ মানবাত্মার প্রতীকবেশুমার লানত বর্ষিত হোক দুশমনে আহলে বায়েত পারআল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদদিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম31=12=202