সুবিচার ও ন্যায়পরায়ণতাআলী ইবনে আবি তালিবের শাহাদাতের পর ,একদা হামদান গোত্রের সাওদা (আম্মারের কন্যা) নামক এক নারী মুয়াবিয়ার নিকট গিয়েছিল। মুয়াবিয়া সাওদার কঠোর পরিশ্রমের কথা (যা সিফ্ফীনের যুদ্ধে হযরত আলী ও তাঁর সৈন্যদের জন্য করেছিল) স্মরণ করিয়ে দিয়ে তাকে ভর্ৎসনা করল অতঃপর তার নিকট জানতে চাইল : কি জন্যে এখানে এসেছে ?সাওদা জবাবে বলল : হে মুয়াবিয়া! মহান আল্লাহ্ আমাদের অধিকার হরণের জন্য তোমাকে জিজ্ঞাসা করবেন ,তুমি সর্বদা আমাদের জন্য এমন শাসক নির্বাচন করছ ,যে আমাদেরকে ফসলের মত কর্তন করে ,এসপান্দের বীজের মত পদদলিত করে এবং আমাদেরকে হত্যা করে। এখন এই বুসর ইবনে আরতাতকে পাঠিয়েছ ,যে আমাদের লোকদেরকে হত্যা করে ,আমাদের সম্পদ ছিনেয়ে নেয় ;যদি কেন্দ্রীয় শাসনের অনুসরণ না করতে চাইতাম ,তবে এখন আমি সম্মান ও ক্ষমতার অধিকারী হতাম ;যদি ওকে পদচ্যুত কর ,তবে তো উত্তম ;আর যদি না কর ,তবে ‘ স্বয়ং আমরাই বিদ্রোহ ও অভ্যূত্থান করব...। মুয়াবিয়া অস্বস্থি বোধ করল এবং বলল : আমাকে স্বীয় গোত্রের ভয় দেখাচ্ছ ,তোমাকে নিকৃষ্টতম অবস্থায় ঐ বুসরের কাছেই প্রেরণ করব ,যাতে তোমার জন্য যা সে উপযুক্ত মনে করবে তাই করে।সাওদা কিছুক্ষণ নীরব থাকল ,যেন তার স্মৃতিপটে অতীতের স্মৃতিগুলো ভেসে উঠল ;অতঃপর এ পংক্তিগুলো আবৃতি করল :প্রভু হে ! তাঁর উপর শান্তি কর বর্ষণযে শায়িত আজ কবরে ,যার মৃত্যুর সাথে যুগপৎন্যায় ও আদালতের হয়েছে সমাধি।সে তো সত্যের দিশারীসত্যকে কভু করেনি কোন কিছুর বিনিময়ে পরিহারসত্য ও বিশ্বাসের ,তাঁরই মাঝে ছিল সমাহারমুয়াবিয়া জিজ্ঞাসা করল : সে কে ?সাওদা জবাবে বলল : আলী ইবনে আবি তালিব (আ.)। মনে পড়ে ,একদা যাকাত গ্রহণের জন্যে নিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ করার জন্যে তাঁর শরণাপন্ন হয়েছিলাম। আমি যখন পৌঁছলাম তখন তিনি নামাযে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু যখনই আমাকে দেখলেন নামায শুরু না করে উদার ও দয়াদ্র কন্ঠে আমাকে বললেন : কিছু বলবে কি ?বললাম : জী হ্যাঁ এবং আমার অভিযোগ উপস্থাপন করলাম। ঐ মহান ব্যক্তি স্বীয় নামাযের স্থানে দাঁড়িয়েই ক্রন্দন করলেন এবং মহান আল্লাহর উদ্দেশ্যে বললেন : ‘ প্রভু হে ,তুমি জেনে রাখ ও সাক্ষী থাক যে ,আমি কখনোই তাকে (আদিষ্ট) তোমার বান্দাদের প্রতি অত্যাচারের নির্দেশ দেইনি। অতঃপর তিনি ,অবিলম্বে এক চিলতে চামড়া বের করলেন এবং মহান আল্লাহর নাম ও কোরআনের আয়াত লিখার পর এরূপ লিখেছিলেন :আমার পত্র পাঠ করার সাথে সাথেই তোমার হিসাব-নিকাশ সম্পন্ন কর ,যাতে কাউকে তোমার পরিবর্তে পাঠানোর পর ঐগুলো তোমার নিকট থেকে বুঝে নিতে পারে...।তিনি পত্রখানা আমাকে দিলেন। আল্লাহর শপথ ,ঐ পত্রখানা বন্ধ কিংবা মোহরাংকিতও ছিল না। পত্রখানা ঐ দায়িত্বশীলের নিকট পৌঁছালাম এবং সে পদচ্যুত হল ও আমাদের নিকট থেকে চলে গেল... । ’‘ মুয়াবিয়া এ কাহিনী শ্রবণান্তে নিরুপায় হয়ে আদেশ দিল ,“ যা সে চায় ,তা-ই তার জন্য লিখে দাও। ”আলী (আ.) ও খলিফাত্রয়মহানবী (সা.) যখন তাঁর দয়ালু আঁখিযুগল বাহ্যতঃ পৃথিবী থেকে নির্লিপ্ত করলেন এবং যখন তার অস্তিত্বের জ্যোতির্ময় নক্ষত্র মানুষের দৃষ্টিসীমা থেকে অস্তমিত হলো ,তখন কিছু কপট ‘ সাকিফায়ে বনি সায়েদায় ’ মিলিত হলো এবং মহানবী (সা.) যে হযরত আলীকে মহান আল্লাহর আদেশক্রমে স্বীয় উত্তরাধিকারী নির্বাচন করেছিলেন ,তা তারা আবু বকরের (আবু কোহাফার পুত্র) অধিকারে ন্যস্ত করল। তারপর যথাক্রমে ওমর ও ওসমান মোটামুটি একই ধরনের চক্রান্ত ও পরিকল্পনার মাধ্যমে খেলাফতের অধিকারী হয়েছিল। আর এভাবেই অবিরাম ২৫ বছর ধরে তারা নবী (সা.)-এর তিরোধানের পর মানুষের উপর হুকুমত করেছিল। স্বভাবতঃই এ সুদীর্ঘ সময় ব্যাপী অদ্বিতীয় ও সর্বাধিক যোগ্য ,ঐশী ও ইসলামী হুকুমতের প্রকৃত নেতা এবং নবী (সা.)-এর উত্তরাধিকারী অর্থাৎ ন্যায়পরায়ণ পথপ্রদর্শক হযরত আলী ইবনে আবি তালিব (আ.) ধৈর্য ও স্থৈর্যের আশ্রয় নিলেন ও নিজেকে গৃহবন্দী করে রাখলেন। আর এ ঘটনাটি মানবতার ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা দুঃখজনক কাহিনী। অন্যান্য ধর্মের অনুসারীরা ,এমন কি যাদের কোন দীন নেই তারাও ইসলামের পথে হযরত আলীর অক্লান্ত শ্রম ও প্রচেষ্টা ,তাঁর সরলতা ,নির্মলতা ,বিরত্ব ,চিন্তা শক্তি ,জ্ঞানের বিস্তৃতি ,ন্যায়পরায়ণতা ও সুবিচারের কথা জানলে ,ইসলামী সমাজের ভাগ্যে তারা যে অন্যায় ও অত্যাচারের কালিমা লেপন করেছে তার জন্য অপ্রত্যাশিত ভাবে অনুতাপ ও পরিতাপ করে। তাহলে সুবিচারক মুসলমানদের ক্ষেত্রে কি ঘটবে! এ মর্মান্তিক ঘটনার জন্য আমাদের দুঃখ ও পরিতাপ সুদীর্ঘ পর্বত শ্রেণীর চেয়েও বিস্তৃততর ,সুউচ্চ পর্বত চূড়ার চেয়েও উচ্চতর।যাহোক ,আবু বকর দশম হিজরীতে খলিফা হলো এবং ত্রয়োদশ হিজরীতে ৬৩ বছর বয়সে মৃত্যু বরণ করল। আর ইতোমধ্যেই তার খেলাফতের দু ’ বছর ,তিন মাস দশ দিন অতিবাহিত হলো। ১৭তার পর ওমর ইবনে খাত্তাব খেলাফত লাভ করল এবং জিলহজ মাসের শেষ দিকে তেইশ হিজরীতে ‘ আবু লুলু ফিরোজের ’ হাতে নিহত হয়েছিল। তার খেলাফত কাল ছিল দশ বছর ছয় মাস চার দিন। ১৮ওমর নিজের পর খলিফা নির্বাচনের জন্য একটি পরিষদ গঠনের নির্দেশ দিয়েছিল ,যা ওসমান ইবনে আফফানের পক্ষে গিয়েছিল। সে ওমরের পর ,পরিষদের মাধ্যমে চব্বিশ হিজরীর মহরম মাসের প্রথম দিকে খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিল। অতঃপর পয়ত্রিশ হিজরীর জিলহজ মাসে অন্যায় আচরণের কারণে একদল মুসলমানের হাতে নিহত হয়। তার খেলাফত কাল ছিল বার বছর (কয়েকদিন কম)। ১৯মহানবী (সা.)-এর ইন্তেকালের পর হযরত আলী (আ.) স্বেচ্ছাচারীদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ছিলেন ,যারা তাঁর অধিকার পদদলিত করেছিল এবং ইসলামী বিধান যতটুকু অনুমতি দেয় ,তার সর্বোচ্চ সীমা পর্যন্ত যথাসাধ্য প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। একই সাথে বক্তব্য ও দলিলের মাধ্যমে বিষয়টিকে সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করেছিলেন এবং মানুষকে অবহিত করেছিলেন যে ,এরা হলো খেলাফতের অধিকার হরণকারী। বেহেশতে নারীদের নেত্রী হযরত ফাতেমা যাহরা (আ.) এ ক্ষেত্রে ইমাম আলীর সহকারী ও সহযোগী ছিলেন এবং কার্যক্ষেত্রে আবু বকরের হুকুমতকে অবৈধ বলে বর্ণনা করেছেন।সালমান ,আবু যার ,মেকদাদ ও আম্মার ইয়াসিরের মত প্রিয় নবীর একদল সম্মানিত সাহাবী আবেগময় বক্তব্যের মাধ্যমে আবু বকরের শাসন ব্যবস্থার বিরোধিতা করেছিলেন এবং মহানবীর উত্তরসূরী হিসেবে হযরত আলীর অধিকার সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করেছিলেন। তবে হযরত আলী (আ.) ইসলামের কল্যাণার্থে ,আর যেহেতু ইসলামের তখনো নব ও বিকাশমান অবস্থা ,এবং তখনও ইসলাম যথেষ্ট পরিমাণে সুস্থিত হয়নি ,সেহেতু তরবারি হাতে তুলে নেন নি বা সমরাগ্নি জ্বালানো থেকে বিরত থেকেছিলেন। (স্বভাবতই এর ফলে ইসলামেরই ক্ষতি হতো এবং মহানবীর সকল চেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে পারত) বরং অপরিহার্য পরিস্থিতিতে আলী (আ.) ইসলামের সম্মান অক্ষুন্ন রক্ষার্থে কোন প্রকার দিক নির্দেশনা ও পরামর্শ দিতে কুন্ঠাবোধ করেন নি। আর তাই দ্বিতীয় খলিফা প্রায়ই বলত :لو لا عليّ لهلك عمر‘ যদি আলী না থাকত তবে ওমর ধ্বংস হয়ে যেত। ’ধর্মীয় ও রাজনৈতিক কিংবা অন্য যে কোন সমস্যা যা তাদেরকে হতবুদ্ধি ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় করত সেক্ষেত্রে হযরত আলীর সুনির্দেশনা ও সদুপদেশ ,তাদেরকে তা থেকে উদ্ধার করত। সকল ক্ষেত্রে তারা প্রায় আলীর দিকনির্দেশনা ,মহত্ব ও জ্ঞানের কথা তারা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে। এখন আমরা এ ধরনের কিছু ঘটনা উল্লেখ করব।হযরত আবু বকরের সময়ইহুদীদের কিছু আলেম আবু বকরের নিকট এসেছিল এবং তাকে জিজ্ঞাসা করেছিল : আমরা তৌরাতে পড়েছি যে নবীর উত্তরসূরী হবে সর্বাপেক্ষা জ্ঞানী ব্যক্তি ,যদি তুমি এ উম্মতের নবীর উত্তরসূরী হয়ে থাক ,তবে আমাদেরকে বল যে ,আল্লাহ্ কি আকাশে আছেন ,না ভূপৃষ্ঠে ?আবু বকর জবাব দিল : তিনি আকাশে আরশের উপর অধিষ্ঠিত আছেন।তারা বলল : তাহলে ভূপৃষ্ঠে তিনি নেই। সুতরাং জানা গেল যে ,তিনি কোথাও আছেন আবার কোথাও বা নেই।আবু বকর বলল : এটা কাফেরদের কথা। দূর হও ,নতুবা তোমাদেরকে হত্যা করার নির্দেশ দিব।তারা ইসলামকে উপহাস করতে করতে ফিরে যাচ্ছিল। হযরত আলী ইবনে আবি তালিব (আ.) তাদের একজনকে ডেকে বললেন : আমি জানি ,তোমরা কী জিজ্ঞাসা করেছ এবং কী জবাব পেয়েছ ;তবে জেনে রাখ যে ইসলাম বলে : মহান আল্লাহ্ স্বয়ং স্থানের অস্তিত্ব দানকারী ,সুতরাং তিনি কোন স্থানে সীমাবদ্ধ নন এবং কোন স্থান তাঁকে ধারণ করতে অক্ষম ;কোন প্রকার সংলগ্ন ও স্পর্শ ব্যতীতই তিনি সর্বত্র বিরাজমান এবং তাঁর জ্ঞান সবকিছুকেই পরিবেষ্টন করে আছে...।ইহুদী পণ্ডিতগণ ইসলামে বিশ্বাস স্থাপন করলেন এবং বললেন : ‘ আপনিই নবীর উত্তরাধিকারী হওয়ার যোগ্য ,অন্য কেউ নয়। ২০হযরত ওমরের সময়‘ কোদামাত ইবনে মাযয়ূন ’ নামক একব্যক্তি মদ পান করেছিল। ওমর তার উপর শরীয়তের বিধান প্রয়োগ করতে চেয়েছিল ( অর্থাৎ এক্ষেত্রে ৮০ টি চাবুক মারতে হবে ) । কোদামা বলল : আমার উপর চাবুক প্রয়োগ করা অপরিহার্য নয়। কারণ ,মহান আল্লাহ্ বলেন : যারা ঈমান এনেছে এবং সত্য কর্ম করেছে ,তারা যতক্ষণ পর্যন্ত তাকওয়া অবলম্বন ও সৎকর্ম করতে থাকবে ,তারা যা ভক্ষণ করে তার জন্য তাদের কোন আশঙ্কা বা ভয় নেই। ২১ওমর তাকে শাস্তি প্রযোগ থেকে বিরত থাকল। হযরত আলীর নিকট এ সংবাদ পৌঁছল। তিনি ওমরের নিকট গেলেন এবং ওমরের নিকট জানতে চাইলেন ,কেন আল্লাহর বিধান প্রয়োগ করনি ?ওমর প্রাগুক্ত আয়াতটি পাঠ করল। ইমাম বললেন : কোদামাহ এ আয়াতের অন্তর্ভূক্ত নয়। কারণ ,যারা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে ও কল্যাণকর্ম সম্পাদন করে ,তারা আল্লাহর হারামকে হালাল করে না ;কোদামাহকে ফিরিয়ে আন এবং ওকে তওবা করতে বল। যদি তওবা করে তবে তার উপর আল্লাহর বিধান প্রয়োগ কর। নতুবা তাকে হত্যা করতে হবে। কারণ মদ পানের নিষিদ্ধতাকে অস্বীকার করে সে ইসলাম থেকে বহিস্কৃত হয়েছে।কোদামাহ একথা শুনে ফিরে এসে তওবা করল এবং পাপাচার থেকে বিরত থাকল। কিন্তু ওমর জানতো না যে ,তার শাস্তির পরিমাণ কতটুতু হবে। সুতরাং ইমাম আলীর নিকট জিজ্ঞাসা করেছিল। তিনি বললেন : আশিটি চবুক। ২২হযরত ওসমানের সময়আল্লামা মাজলিসি কাশশাফ ,ছা ’ লাবী ও খতিবের ‘ আরবাইন ’ থেকে বর্ণনা করেছেন যে ,এক নারী ওসমানের সময় ছয় মাসে বাচ্চা জন্ম দিয়েছিল। ওসমান ব্যভিচারের হদ জারি করার হুকুম দিল। কারণ ,হতে পারে এ বাচ্চা তার স্বামী থেকে নয় এবং সে পূর্বেই কারো মাধ্যমে অন্তঃসত্তা হয়েছিল। তাই তাকে পাথর নিক্ষেপে হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছিল।ইমাম এ ঘটনা শুনে ওসমানকে বললেন : আমি মহান আল্লাহর কিতাব নিয়ে এ ব্যাপারে তোমার সাথে বিতর্ক করতে চাই। কারণ মহান আল্লাহ্ এক আয়াতে অন্তঃসত্তা থেকে দুগ্ধ পান করানো পর্যন্ত ত্রিশ মাস সময়ের কথা উল্লেখ করেছেন। যেমন :) وحمله و فصاله ثلاثون شهرا (গর্ভ ধারণ থেকে স্তন্য পান সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত ,সময় হলো ত্রিশ মাস। (সূরা আহকাফ : ১৫)। অন্যত্র স্তন্য পানের সময়কাল ২৪ মাস বলে উল্লেখ করা হয়েছে।যেমন :) والوالدات يرضعن اولادهنّ حولين كاملين لمن اراد ان يتمّ الرّضاعة (‘ যে স্তন্য কাল পূর্ণ করতে চায় তার জন্য জননীগণ তাদের সন্তানদেরকে পূর্ণ দুই বৎসর স্তন্য পান করাবে (সূরা বাকারা : ২৩৩)। ’অতএব ,যদি নিশ্চিতরূপে চব্বিশ মাস নির্ধারিত হয়ে থাকে ,তবে প্রথম আয়াতের মতে যে গর্ভধারণ ও স্তন্য প্রদানের মোট সময় কাল ত্রিশ মাস বলে উল্লেখ করা হয়েছে ,এতদুভয়ের অন্তর ছয় মাস হয়ে থাকে ,যা গর্ভধারণের সর্বনিম্নকাল। অতএব ,এ নারী কোরআনের মতে কোন প্রকার পাপাচারে লিপ্ত হয়নি...।অতঃপর ওসমানের আদেশে তাকে মুক্তি দেয়া হলো। জ্ঞানীগণ ও আমাদের ফকীহগণ এ দু ’ আয়াত ব্যবহার করেই গর্ভধারণের সর্বনিম্ন সময় কাল ছয় মাস বলে জানেন। অর্থাৎ স্বীয় বৈধ পিতার বীর্য থেকে ছয় মাসে বাচ্চা জন্ম গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু তা অপেক্ষা কম সময়ে বাচ্চা জন্ম গ্রহণ করতে পারে না। হযরত আলীর মতও এরকমই ছিল।হযরত আলীর (আ.)-এর শাহাদাতচল্লিশ হিজরীতে খারেজীদের একদল মক্কায় মিলিত হলো এবং চক্রান্তমূলক পরিকল্পনা করেছিল যে ,হযরত আলীকে ,মুয়াবিয়াকে ও আমর ইবনে আসকে যথাক্রমে কুফা ,শাম ও মিশরে নির্দিষ্ট সময়ে হত্যা করবে। পবিত্র রমযান মাসের ১৯ তারিখের রাত্রে হত্যার তারিখ নির্ধারণ করা হলো। এ পরিকল্পনা কার্যকরী করার জন্য নির্বাহীও যথাক্রমে এরূপে নির্দিষ্ট করা হলো : আবদুর রহমান (মুলজামের পুত্র) হযরত আলীকে হত্যা করবে ,মুয়াবিয়াকে হত্যা করবে হাজ্জাজ (আবদুল্লাহ্ সূরাইমীর পুত্র) এবং আমর আসকে হত্যা করবে আমর (বাকর তামীমীর পুত্র)।এ উদ্দেশ্যে ইবনে মুলজাম কুফায় আসল। কিন্তু কাউকেই সে তার স্বীয় নোংরা উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবহিত করেনি। একদা একজন খারেজীর গৃহে আশ্রয় নিল। কোতামাহর (সুদর্শনা ও মনোহারীণী রমনী) সাথে সাক্ষাৎ লাভের পর ,তার প্রতি আকৃষ্ট হলো। অতঃপর তার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার চিন্তা করল। যখন তাকে বিবাহের প্রস্তাব দিল ,সে বলল : ‘ আমার মোহরানা হবে তিন হাজার দেরহাম ,এক গোলাম এবং আলী ইবনে আবি তালিবের হত্যা। ’ কোতামাহ পূর্ব থেকেই নাহরাওয়ানের যুদ্ধে তার পিতা ও ভাই ,হযরত আলীর হাতে নিহত হওয়ার ফলে তাঁর প্রতি শত্রুতা পোষণ করত এবং চরম প্রতিহিংসায় জ্বলছিল। ইবনে মুলজাম ,কোতামাহর কাছে ব্যক্ত করেছিল যে ,ঘটনাক্রমে আমি এ কর্ম সম্পাদনের জন্যেই কুফায় এসেছি ?আর এভাবেই ইবনে মুলজামের পূর্ব পরিকল্পনা কোতামাহর কামাতুর প্রেমের ছোঁয়ায় দৃঢ়তর হলো।অবশেষে সে বিষাদ রজনী উপস্থিত হলো ইবনে মুলজাম তার দু ’ একজন একান্ত সহযোগীর সাথে ,এ কলুষ চিন্তা মাথায় নিয়ে মসজিদে রাত্রিযাপন করল...। ২৩এ বিষাদময় রজনীর ত্রিশ বছরের ও অধিক পূর্বে হযরত আলী (আ.) মহানবীর নিকটে জানতে পেরেছিলেন যে ,তিনি রমযান মাসে শহীদ হবেন। এ ব্যাপারটি হযরত আলীর নিকট শুনবো :...যখন মহানবী (সা.) রমযান মাসের ঐ বিখ্যাত খোতবাটি পাঠ করলেন ,আমি উঠে দাঁড়ালাম ও জানতে চাইলাম : হে আল্লাহর রসূল (সা.)! এ মাসের উৎকৃষ্ট কর্মসমূহ কি কি ?তিনি বললেন : পাপাচার থেকে দূরে থাকা। অতঃপর মহানবী (সা.) বেদনাগ্রস্থ হয়ে কাঁদলেন এবং এ মাসে আমার শাহাদাত সম্পর্কে সংবাদ প্রদান করলেন...। ২৪ইমামের কথাবার্তা ও আচার-আচরণেও সুস্পষ্ট ছিল যে ,এ মাসে তিনি শাহাদাত বরণ করবেন ,একথা তিনি জানতেন। ঐ বছরেই তিনি বলেছিলেন : ‘ এ বছর হজের সময় আমি তোমাদের মাঝে থাকব না।অনুরূপ তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো : কেন ইফতারের সময় সল্প খাবার গ্রহণ করেন ?তখন তিনি বলতেন : খালি পেটে মহান আল্লাহর সাক্ষাতে যেতে চাই। ২৫কিন্তু ঊনিশের রাত্রিতে বিন্দুমাত্র নিদ্রা গ্রহণ করেন নি। অধিকাংশ সময় বলতেন : আল্লাহর শপথ ,মিথ্যা বলব না ও আমাকেও মিথ্যা বলা হয়নি ,‘ অদ্যরজনী সে প্রতিশ্রুত রজনী। ২৬অবশেষে ঐ প্রাতে যখন হযরত আলী (আ.) মসজিদে এলেন। ফজরের নামায পড়া অবস্থায় নিকৃষ্টতম ব্যক্তি ইবনে মুলজামের বিষাক্ত রক্তলোলুপ তরাবারি হযরত আলীর উপর হানা হলো। আর সেই সাথে সত্যের মেহরাবে রঞ্জিত হলো বিভাকর। এর দু ’ দিন পর একুশে রমযানের রাত্রিতে চল্লিশ হিজরী সনে অস্তমিত হলো রঞ্জিত রবি। ২৭তাঁর পবিত্র দেহ নাজাফের পবিত্র মাটিতে সমাহিত করা হলো ,যা আজ মুসলমানদের বিশেষ করে শিয়াদের হৃদয় মণিতে পরিণত হয়েছে।ইমাম যেরূপ আজীবন মহান আল্লাহর স্মরণের মাধ্যমে বেঁচে ছিলেন ,ঐ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটার সময়ও আল্লাহর স্মরণেই ছিলেন। ...যখন ইবনে মুলজামের তরবারি তাঁর দীপ্তিময় মাথায় আঘাত হানল ,তখন প্রথম যে কথাটি তিনি উচ্চারণ করেছিলেন তা হলো :فزت وربّ الكعبة“ কাবার প্রভুর শপথ ,আমি সফলকাম হলাম। ”অতঃপর তাঁকে রক্তে রঞ্জিত অবস্থায় গৃহে নিয়ে আসা হলো...। শাহাদাতের শয্যায় দু ’ দিন পর চির নিদ্রায় চক্ষু মুদন করলেন। ...তিনি প্রতিটি মুহূর্তে তারপরও মানুষের কল্যাণ ও সৌভাগ্যের চিন্তায় ছিলেন। ...যদি ও ইমাম হাসান (আ.) এবং তদনুরূপ ইমাম হোসাইন (আ.) ও দ্বাদশ ইমাম পর্যন্ত তাঁর সন্তানগণের ইমামত সম্পর্কে নবী (সা.) ও আলী (আ.) থেকে পূর্বেও একাধিক বার বর্ণিত হয়েছিল ,তথাপি কর্তব্য সমাপনার্থে জীবনের অন্তিম লগ্নগুলোতে পুনরায় তা মানুষের জন্য বর্ণনা করলেন...। ২৮অন্তিম বাণীজীবনের শেষ লগ্নগুলোতে সন্তানসন্ততি ও পরিবার-পরিজন এবং মুসলমানদের জন্য এরূপ অসিয়ত করলেন :“ তোমাদেরকে সংযমের দিকে আহবান জানাব এবং তোমরা তোমাদের কর্মগুলোকে বিন্যস্ত কর। সর্বদা মুসলমানদের সংশোধন ও সংস্কারের চিন্তায় থেকো...। অনাথদেরকে বিস্মৃত হয়ো না ;প্রতিবেশীদের অধিকার সংরক্ষণ করো। কোরআনকে জীবনের কর্মসূচী হিসাবে গ্রহণ কর।الله الله في الصّلاة فانّها عمود دينكم“ নামাযকে অধিক গুরুত্ব প্রদান করো ,যা তোমাদের দ্বীনের স্তম্ভ। ”মহান আল্লাহর পথে তোমাদের ধন-সম্পদ ,বক্তব্য ও জীবন দিয়ে জিহাদ ও ত্যাগ তিতীক্ষা করো।পরস্পর মিলেমিশে থেকো সৎ কর্মের আদেশ ও অসৎ কর্মে নিষেধ করা থেকে বিরত থেক না। কেননা ,যদি প্রভুর প্রদত্ত এ কর্তব্য পালনে অসচেতন থাক ,তবে সমাজে নিকৃষ্টজন তোমাদের উপর শাসন করবে ,আর তখন যতই তাদেরকে অভিশম্পাত কর না কেন ,তা গৃহিত হবে না। ২৯আল্লাহর সন্তুষ্টি বর্ষিত হোক এ মহান পবিত্র ইমামের উপর। আর অব্যাহত থাকুক তাঁর জন্য পবিত্রগণের ও সৎকর্মশীলদের দরূদ ,যিনি ছিলেন অসাধারণ। আর তিনি তো বিশ্বের বিস্ময় ,বিস্ময়কর তার জীবন ব্যবস্থা ,বিস্ময়কর তার বিদায়।তথ্যসূত্র১ . বিহারুল আনওয়ার ,৩৫তম খণ্ড ,পৃ. ৮।২ . এরশাদ ,শেখ মুফিদ ,পৃ. ৩।৩ . নাহজুল বালাগা ,খোতবা নং ২৩৪- এর কিছু অংশ ,পৃ. ৮০২।৪ . সীরাতে ইবনে হিশাম ,১ম খণ্ড ,পৃ. ২৪৫। অনুরূপ আল গাদীর ,৩য় খণ্ড ,পৃ.২২০-২৪০ তে আহলে সুন্নাতের প্রসিদ্ধ গ্রন্থসমূহ থেকে অনেক রেওয়ায়েত উল্লিখিত আছে।৫ . তারিখে তাবারি ,৩য় খণ্ড ,পৃ. ১১৭১-১১৭৪ ,এছাড়া মাজমায়ুল বায়ান ,৭ম খণ্ড ,পৃ. ২০৬ দ্রষ্টব্য।৬ . তাবিখে তাবারি ,৩য় খণ্ড ,পৃ. ১২৩২-১২৩৪।৭ . প্রাগুক্ত ,পৃ. ১২৩২-১২৩৪।৮ . এরশাদ ,শেখ মুফিদ ,পৃ. ২২-২৩।৯ .প্রাগুক্ত ,পৃ. ৪৩-৪৫।১০ .বিহারুল আনওয়ার ,২০তম খণ্ড ,পৃ. ২০৫।১১ .এরশাদ ,শেখ মুফিদ ,পৃ. ৫৭- ৫৮১২ .প্রাগুক্ত ,পৃ. ১৫-১৬।১৩ . ( النبیُّ اولی بالمؤمنين من انفسهم ) সূরা আহযাব : ৬।১৪ . আল গাদীর ,১ম খণ্ড ,পৃ. ৯-১১।১৫ . ওসায়েল ,১১তম খণ্ড ,পৃ. ৭৯।১৬ . প্রাগুক্ত ,পৃ. ৮০।১৭ .মুরুজুয যাহাব ,২য় খণ্ড ,পৃ. ২৯৮।১৮ .প্রাগুক্ত ,পৃ. ৩০৪।১৯ .প্রাগুক্ত ,পৃ. ৩৩১।২০ . ইহতিজাযে তাবরিসি ,নতুন সংস্করণ ,১ম খণ্ড ,পৃ. ৩১২।২১ . সূরা মায়িদাহ : ৯৩।২২ . এরশাদ ,শেখ মুফিদ ,পৃ. ৯৭ ।২৩ . প্রাগুক্ত ,পৃ. ৯।২৪ . উয়ুনু আখবারির রিজা ,১ম খণ্ড ,পৃ. ২৯৭।২৫ . এরশাদ ,শেখ মুফিদ ,পৃ. ১৫১।২৬ . প্রাগুক্ত ,পৃ. ৮।২৭ . এরশাদ ,শেখ মুফিদ ,পৃ. ৫ ;বিহারুল আনওয়ার ,৪২তম খণ্ড ,পৃ. ২৮১।২৮ . প্রাগুক্ত ।২৯ . নাহজুল বালাগাহ ,২য় খণ্ড ,পৃ. ৪৭ ,দামেস্ক থেকে প্রকাশিত (লক্ষণীয় যে ,এ অসিয়তের মূলবক্তব্য সংক্ষিপ্তাকারে প্রাসঙ্গিকরূপে অনুবাদ করা হয়েছে)।

সুবিচার ও ন্যায়পরায়ণতা
আলী ইবনে আবি তালিবের শাহাদাতের পর ,একদা হামদান গোত্রের সাওদা (আম্মারের কন্যা) নামক এক নারী মুয়াবিয়ার নিকট গিয়েছিল। মুয়াবিয়া সাওদার কঠোর পরিশ্রমের কথা (যা সিফ্ফীনের যুদ্ধে হযরত আলী ও তাঁর সৈন্যদের জন্য করেছিল) স্মরণ করিয়ে দিয়ে তাকে ভর্ৎসনা করল অতঃপর তার নিকট জানতে চাইল : কি জন্যে এখানে  এসেছে ?সাওদা জবাবে বলল : হে মুয়াবিয়া! মহান আল্লাহ্ আমাদের অধিকার হরণের জন্য তোমাকে জিজ্ঞাসা করবেন ,তুমি সর্বদা আমাদের জন্য এমন শাসক নির্বাচন করছ ,যে আমাদেরকে ফসলের মত কর্তন করে ,এসপান্দের বীজের মত পদদলিত করে এবং আমাদেরকে হত্যা করে। এখন এই বুসর ইবনে আরতাতকে পাঠিয়েছ ,যে আমাদের লোকদেরকে হত্যা করে ,আমাদের সম্পদ ছিনেয়ে নেয় ;যদি কেন্দ্রীয় শাসনের অনুসরণ না করতে চাইতাম ,তবে এখন আমি সম্মান ও ক্ষমতার অধিকারী হতাম ;যদি ওকে পদচ্যুত কর ,তবে তো উত্তম ;আর যদি না কর ,তবে ‘ স্বয়ং আমরাই বিদ্রোহ ও অভ্যূত্থান করব...। মুয়াবিয়া অস্বস্থি বোধ করল এবং বলল : আমাকে স্বীয় গোত্রের ভয় দেখাচ্ছ ,তোমাকে নিকৃষ্টতম অবস্থায় ঐ বুসরের কাছেই প্রেরণ করব ,যাতে তোমার জন্য যা সে উপযুক্ত মনে করবে তাই করে।

সাওদা কিছুক্ষণ নীরব থাকল ,যেন তার স্মৃতিপটে অতীতের স্মৃতিগুলো ভেসে উঠল ;অতঃপর এ পংক্তিগুলো আবৃতি করল :

প্রভু হে ! তাঁর উপর শান্তি কর বর্ষণ

যে শায়িত আজ কবরে ,

যার মৃত্যুর সাথে যুগপৎ

ন্যায় ও আদালতের হয়েছে সমাধি।

সে তো সত্যের দিশারী

সত্যকে কভু করেনি কোন কিছুর বিনিময়ে পরিহার

সত্য ও বিশ্বাসের ,তাঁরই মাঝে ছিল সমাহার

মুয়াবিয়া জিজ্ঞাসা করল : সে কে ?

সাওদা জবাবে বলল : আলী ইবনে আবি তালিব (আ.)। মনে পড়ে ,একদা যাকাত গ্রহণের জন্যে নিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ করার জন্যে তাঁর শরণাপন্ন হয়েছিলাম। আমি যখন পৌঁছলাম তখন তিনি নামাযে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু যখনই আমাকে দেখলেন নামায শুরু না করে উদার ও দয়াদ্র কন্ঠে আমাকে বললেন : কিছু বলবে কি ?বললাম : জী হ্যাঁ এবং আমার অভিযোগ উপস্থাপন করলাম। ঐ মহান ব্যক্তি স্বীয় নামাযের স্থানে দাঁড়িয়েই ক্রন্দন করলেন এবং মহান আল্লাহর উদ্দেশ্যে বললেন : ‘ প্রভু হে ,তুমি জেনে রাখ ও সাক্ষী থাক যে ,আমি কখনোই তাকে (আদিষ্ট) তোমার বান্দাদের প্রতি অত্যাচারের নির্দেশ দেইনি। অতঃপর তিনি ,অবিলম্বে এক চিলতে চামড়া বের করলেন এবং মহান আল্লাহর নাম ও কোরআনের আয়াত লিখার পর এরূপ লিখেছিলেন :

আমার পত্র পাঠ করার সাথে সাথেই তোমার হিসাব-নিকাশ সম্পন্ন কর ,যাতে কাউকে তোমার পরিবর্তে পাঠানোর পর ঐগুলো তোমার নিকট থেকে বুঝে নিতে পারে...।

তিনি পত্রখানা আমাকে দিলেন। আল্লাহর শপথ ,ঐ পত্রখানা বন্ধ কিংবা মোহরাংকিতও ছিল না। পত্রখানা ঐ দায়িত্বশীলের নিকট পৌঁছালাম এবং সে পদচ্যুত হল ও আমাদের নিকট থেকে চলে গেল... । ’

‘ মুয়াবিয়া এ কাহিনী শ্রবণান্তে নিরুপায় হয়ে আদেশ দিল ,“ যা সে চায় ,তা-ই তার জন্য লিখে দাও। ”

আলী (আ.) ও খলিফাত্রয়
মহানবী (সা.) যখন তাঁর দয়ালু আঁখিযুগল বাহ্যতঃ পৃথিবী থেকে নির্লিপ্ত করলেন এবং যখন তার অস্তিত্বের জ্যোতির্ময় নক্ষত্র মানুষের দৃষ্টিসীমা থেকে অস্তমিত হলো ,তখন কিছু কপট ‘ সাকিফায়ে বনি সায়েদায় ’ মিলিত হলো এবং মহানবী (সা.) যে হযরত আলীকে মহান আল্লাহর আদেশক্রমে স্বীয় উত্তরাধিকারী নির্বাচন করেছিলেন ,তা তারা আবু বকরের (আবু কোহাফার পুত্র) অধিকারে ন্যস্ত করল। তারপর যথাক্রমে ওমর ও ওসমান মোটামুটি একই ধরনের চক্রান্ত ও পরিকল্পনার মাধ্যমে খেলাফতের অধিকারী হয়েছিল। আর এভাবেই অবিরাম ২৫ বছর ধরে তারা নবী (সা.)-এর তিরোধানের পর মানুষের উপর হুকুমত করেছিল। স্বভাবতঃই এ সুদীর্ঘ সময় ব্যাপী অদ্বিতীয় ও সর্বাধিক যোগ্য ,ঐশী ও ইসলামী হুকুমতের প্রকৃত নেতা এবং নবী (সা.)-এর উত্তরাধিকারী অর্থাৎ ন্যায়পরায়ণ পথপ্রদর্শক হযরত আলী ইবনে আবি তালিব (আ.) ধৈর্য ও স্থৈর্যের আশ্রয় নিলেন ও নিজেকে গৃহবন্দী করে রাখলেন। আর এ ঘটনাটি মানবতার ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা দুঃখজনক কাহিনী। অন্যান্য ধর্মের অনুসারীরা ,এমন কি যাদের কোন দীন নেই তারাও ইসলামের পথে হযরত আলীর অক্লান্ত শ্রম ও প্রচেষ্টা ,তাঁর সরলতা ,নির্মলতা ,বিরত্ব ,চিন্তা শক্তি ,জ্ঞানের বিস্তৃতি ,ন্যায়পরায়ণতা ও সুবিচারের কথা জানলে ,ইসলামী সমাজের ভাগ্যে তারা যে অন্যায় ও অত্যাচারের কালিমা লেপন করেছে তার জন্য অপ্রত্যাশিত ভাবে অনুতাপ ও পরিতাপ করে। তাহলে সুবিচারক মুসলমানদের ক্ষেত্রে কি ঘটবে! এ মর্মান্তিক ঘটনার জন্য আমাদের দুঃখ ও পরিতাপ সুদীর্ঘ পর্বত শ্রেণীর চেয়েও বিস্তৃততর ,সুউচ্চ পর্বত চূড়ার চেয়েও উচ্চতর।

যাহোক ,আবু বকর দশম হিজরীতে খলিফা হলো এবং ত্রয়োদশ হিজরীতে ৬৩ বছর বয়সে মৃত্যু বরণ করল। আর ইতোমধ্যেই তার খেলাফতের দু ’ বছর ,তিন মাস দশ দিন অতিবাহিত হলো। ১৭

তার পর ওমর ইবনে খাত্তাব খেলাফত লাভ করল এবং জিলহজ মাসের শেষ দিকে তেইশ হিজরীতে ‘ আবু লুলু ফিরোজের ’ হাতে নিহত হয়েছিল। তার খেলাফত কাল ছিল দশ বছর ছয় মাস চার দিন। ১৮

ওমর নিজের পর খলিফা নির্বাচনের জন্য একটি পরিষদ গঠনের নির্দেশ দিয়েছিল ,যা ওসমান ইবনে আফফানের পক্ষে গিয়েছিল। সে ওমরের পর ,পরিষদের মাধ্যমে চব্বিশ হিজরীর মহরম মাসের প্রথম দিকে খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিল। অতঃপর পয়ত্রিশ হিজরীর জিলহজ মাসে অন্যায় আচরণের কারণে একদল মুসলমানের হাতে নিহত হয়। তার খেলাফত কাল ছিল বার বছর (কয়েকদিন কম)। ১৯

মহানবী (সা.)-এর ইন্তেকালের পর হযরত আলী (আ.) স্বেচ্ছাচারীদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ছিলেন ,যারা তাঁর অধিকার পদদলিত করেছিল এবং ইসলামী বিধান যতটুকু অনুমতি দেয় ,তার সর্বোচ্চ সীমা পর্যন্ত যথাসাধ্য প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। একই সাথে বক্তব্য ও দলিলের মাধ্যমে বিষয়টিকে সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করেছিলেন এবং মানুষকে অবহিত করেছিলেন যে ,এরা হলো খেলাফতের অধিকার হরণকারী। বেহেশতে নারীদের নেত্রী হযরত ফাতেমা যাহরা (আ.) এ ক্ষেত্রে ইমাম আলীর সহকারী ও সহযোগী ছিলেন এবং কার্যক্ষেত্রে আবু বকরের হুকুমতকে অবৈধ বলে বর্ণনা করেছেন।

সালমান ,আবু যার ,মেকদাদ ও আম্মার ইয়াসিরের মত প্রিয় নবীর একদল সম্মানিত সাহাবী আবেগময় বক্তব্যের মাধ্যমে আবু বকরের শাসন ব্যবস্থার বিরোধিতা করেছিলেন এবং মহানবীর উত্তরসূরী হিসেবে হযরত আলীর অধিকার সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করেছিলেন। তবে হযরত আলী (আ.) ইসলামের কল্যাণার্থে ,আর যেহেতু ইসলামের তখনো নব ও বিকাশমান অবস্থা ,এবং তখনও ইসলাম যথেষ্ট পরিমাণে সুস্থিত হয়নি ,সেহেতু তরবারি হাতে তুলে নেন নি বা সমরাগ্নি জ্বালানো থেকে বিরত থেকেছিলেন। (স্বভাবতই এর ফলে ইসলামেরই ক্ষতি হতো এবং মহানবীর সকল চেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে পারত) বরং অপরিহার্য পরিস্থিতিতে আলী (আ.) ইসলামের সম্মান অক্ষুন্ন রক্ষার্থে কোন প্রকার দিক নির্দেশনা ও পরামর্শ দিতে কুন্ঠাবোধ করেন নি। আর তাই দ্বিতীয় খলিফা প্রায়ই বলত :

لو لا عليّ لهلك عمر

‘ যদি আলী না থাকত তবে ওমর ধ্বংস হয়ে যেত। ’

ধর্মীয় ও রাজনৈতিক কিংবা অন্য যে কোন সমস্যা যা তাদেরকে হতবুদ্ধি ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় করত সেক্ষেত্রে  হযরত আলীর সুনির্দেশনা ও সদুপদেশ ,তাদেরকে তা থেকে উদ্ধার করত। সকল ক্ষেত্রে তারা প্রায় আলীর দিকনির্দেশনা ,মহত্ব ও জ্ঞানের কথা তারা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে। এখন আমরা এ ধরনের কিছু ঘটনা  উল্লেখ করব।

হযরত আবু বকরের সময়
ইহুদীদের কিছু আলেম আবু বকরের নিকট এসেছিল এবং তাকে জিজ্ঞাসা করেছিল : আমরা তৌরাতে পড়েছি যে নবীর উত্তরসূরী হবে সর্বাপেক্ষা জ্ঞানী ব্যক্তি ,যদি তুমি এ উম্মতের নবীর উত্তরসূরী হয়ে থাক ,তবে আমাদেরকে বল যে ,আল্লাহ্ কি আকাশে আছেন ,না ভূপৃষ্ঠে ?

আবু বকর জবাব দিল : তিনি আকাশে আরশের উপর অধিষ্ঠিত আছেন।

তারা বলল : তাহলে ভূপৃষ্ঠে তিনি নেই। সুতরাং জানা গেল যে ,তিনি কোথাও আছেন আবার কোথাও বা নেই।

আবু বকর বলল : এটা কাফেরদের কথা। দূর হও ,নতুবা তোমাদেরকে হত্যা করার নির্দেশ দিব।

তারা ইসলামকে উপহাস করতে করতে ফিরে যাচ্ছিল। হযরত আলী ইবনে আবি তালিব (আ.) তাদের একজনকে ডেকে বললেন : আমি জানি ,তোমরা কী জিজ্ঞাসা করেছ এবং কী জবাব পেয়েছ ;তবে জেনে রাখ যে ইসলাম বলে : মহান আল্লাহ্ স্বয়ং স্থানের অস্তিত্ব দানকারী ,সুতরাং তিনি কোন স্থানে সীমাবদ্ধ নন এবং কোন স্থান তাঁকে ধারণ করতে অক্ষম ;কোন প্রকার সংলগ্ন ও স্পর্শ ব্যতীতই তিনি সর্বত্র বিরাজমান এবং তাঁর জ্ঞান সবকিছুকেই পরিবেষ্টন করে আছে...।

ইহুদী পণ্ডিতগণ ইসলামে বিশ্বাস স্থাপন করলেন এবং বললেন : ‘ আপনিই নবীর উত্তরাধিকারী হওয়ার যোগ্য ,অন্য কেউ নয়। ২০

হযরত ওমরের সময়
‘ কোদামাত ইবনে মাযয়ূন ’ নামক একব্যক্তি মদ পান করেছিল। ওমর তার উপর শরীয়তের বিধান প্রয়োগ করতে চেয়েছিল ( অর্থাৎ এক্ষেত্রে ৮০ টি চাবুক মারতে হবে ) । কোদামা বলল : আমার উপর চাবুক প্রয়োগ করা অপরিহার্য নয়। কারণ ,মহান আল্লাহ্ বলেন : যারা ঈমান এনেছে এবং সত্য কর্ম করেছে ,তারা যতক্ষণ পর্যন্ত তাকওয়া অবলম্বন ও সৎকর্ম করতে থাকবে ,তারা যা ভক্ষণ করে তার জন্য তাদের কোন আশঙ্কা বা ভয় নেই। ২১

ওমর তাকে শাস্তি প্রযোগ থেকে বিরত থাকল। হযরত আলীর নিকট এ সংবাদ পৌঁছল। তিনি ওমরের নিকট গেলেন এবং ওমরের নিকট জানতে চাইলেন ,কেন আল্লাহর বিধান প্রয়োগ করনি ?ওমর প্রাগুক্ত আয়াতটি পাঠ করল। ইমাম বললেন : কোদামাহ এ আয়াতের অন্তর্ভূক্ত নয়। কারণ ,যারা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে ও কল্যাণকর্ম সম্পাদন করে ,তারা আল্লাহর হারামকে হালাল করে না ;কোদামাহকে ফিরিয়ে আন এবং ওকে তওবা করতে বল। যদি তওবা করে তবে তার উপর আল্লাহর বিধান প্রয়োগ কর। নতুবা তাকে হত্যা করতে হবে। কারণ মদ পানের নিষিদ্ধতাকে অস্বীকার করে সে ইসলাম থেকে বহিস্কৃত হয়েছে।

কোদামাহ একথা শুনে ফিরে এসে তওবা করল এবং পাপাচার থেকে বিরত থাকল। কিন্তু ওমর জানতো না যে ,তার শাস্তির পরিমাণ কতটুতু হবে। সুতরাং ইমাম আলীর নিকট জিজ্ঞাসা করেছিল। তিনি বললেন : আশিটি চবুক। ২২

হযরত ওসমানের সময়
আল্লামা মাজলিসি কাশশাফ ,ছা ’ লাবী ও খতিবের ‘ আরবাইন ’ থেকে বর্ণনা করেছেন যে ,এক নারী ওসমানের সময় ছয় মাসে বাচ্চা জন্ম দিয়েছিল। ওসমান ব্যভিচারের হদ জারি করার হুকুম দিল। কারণ ,হতে পারে এ বাচ্চা তার স্বামী থেকে নয় এবং সে পূর্বেই কারো মাধ্যমে অন্তঃসত্তা হয়েছিল। তাই তাকে পাথর নিক্ষেপে হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছিল।

ইমাম এ ঘটনা শুনে ওসমানকে বললেন : আমি মহান আল্লাহর কিতাব নিয়ে এ ব্যাপারে তোমার সাথে বিতর্ক করতে চাই। কারণ মহান আল্লাহ্ এক আয়াতে অন্তঃসত্তা থেকে দুগ্ধ পান করানো পর্যন্ত ত্রিশ মাস সময়ের কথা উল্লেখ করেছেন। যেমন :

) وحمله و فصاله ثلاثون شهرا (

গর্ভ ধারণ থেকে স্তন্য পান সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত ,সময় হলো ত্রিশ মাস। (সূরা আহকাফ : ১৫)। অন্যত্র স্তন্য পানের সময়কাল ২৪ মাস বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

যেমন :

) والوالدات يرضعن اولادهنّ حولين كاملين لمن اراد ان يتمّ الرّضاعة (

‘ যে স্তন্য কাল পূর্ণ করতে চায় তার জন্য জননীগণ তাদের সন্তানদেরকে পূর্ণ দুই বৎসর স্তন্য পান করাবে (সূরা বাকারা : ২৩৩)। ’

অতএব ,যদি নিশ্চিতরূপে চব্বিশ মাস নির্ধারিত হয়ে থাকে ,তবে প্রথম আয়াতের মতে যে গর্ভধারণ ও স্তন্য প্রদানের মোট সময় কাল ত্রিশ মাস বলে উল্লেখ করা হয়েছে ,এতদুভয়ের অন্তর ছয় মাস হয়ে থাকে ,যা গর্ভধারণের সর্বনিম্নকাল। অতএব ,এ নারী কোরআনের মতে কোন প্রকার পাপাচারে লিপ্ত  হয়নি...।

অতঃপর ওসমানের আদেশে তাকে মুক্তি দেয়া হলো। জ্ঞানীগণ ও আমাদের ফকীহগণ এ দু ’ আয়াত ব্যবহার করেই গর্ভধারণের সর্বনিম্ন সময় কাল ছয় মাস বলে জানেন। অর্থাৎ স্বীয় বৈধ পিতার বীর্য থেকে ছয় মাসে বাচ্চা জন্ম গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু তা অপেক্ষা কম সময়ে বাচ্চা জন্ম গ্রহণ করতে পারে না। হযরত আলীর মতও এরকমই ছিল।

হযরত আলীর (আ.)-এর শাহাদাত
চল্লিশ হিজরীতে খারেজীদের একদল মক্কায় মিলিত হলো এবং চক্রান্তমূলক পরিকল্পনা করেছিল যে ,হযরত আলীকে ,মুয়াবিয়াকে ও আমর ইবনে আসকে যথাক্রমে কুফা ,শাম ও মিশরে নির্দিষ্ট সময়ে হত্যা করবে। পবিত্র রমযান মাসের ১৯ তারিখের রাত্রে হত্যার তারিখ নির্ধারণ করা হলো। এ পরিকল্পনা কার্যকরী করার জন্য নির্বাহীও যথাক্রমে এরূপে নির্দিষ্ট করা হলো : আবদুর রহমান (মুলজামের পুত্র) হযরত আলীকে হত্যা করবে ,মুয়াবিয়াকে হত্যা করবে হাজ্জাজ (আবদুল্লাহ্ সূরাইমীর পুত্র) এবং আমর আসকে হত্যা করবে আমর (বাকর তামীমীর পুত্র)।

এ উদ্দেশ্যে ইবনে মুলজাম কুফায় আসল। কিন্তু কাউকেই সে তার স্বীয় নোংরা উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবহিত করেনি। একদা একজন খারেজীর গৃহে আশ্রয় নিল। কোতামাহর (সুদর্শনা ও মনোহারীণী রমনী) সাথে সাক্ষাৎ লাভের পর ,তার প্রতি আকৃষ্ট হলো। অতঃপর তার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার চিন্তা করল। যখন তাকে বিবাহের প্রস্তাব দিল ,সে বলল : ‘ আমার মোহরানা হবে তিন হাজার দেরহাম ,এক  গোলাম এবং আলী ইবনে আবি তালিবের হত্যা। ’ কোতামাহ পূর্ব থেকেই নাহরাওয়ানের যুদ্ধে তার পিতা ও ভাই ,হযরত আলীর হাতে নিহত হওয়ার ফলে তাঁর প্রতি শত্রুতা পোষণ করত এবং চরম প্রতিহিংসায় জ্বলছিল। ইবনে মুলজাম ,কোতামাহর কাছে ব্যক্ত করেছিল যে ,ঘটনাক্রমে আমি এ কর্ম সম্পাদনের জন্যেই কুফায় এসেছি ?আর এভাবেই ইবনে মুলজামের পূর্ব পরিকল্পনা কোতামাহর কামাতুর প্রেমের ছোঁয়ায় দৃঢ়তর হলো।

অবশেষে সে বিষাদ রজনী উপস্থিত হলো ইবনে মুলজাম তার দু ’ একজন একান্ত সহযোগীর সাথে ,এ কলুষ চিন্তা মাথায় নিয়ে মসজিদে রাত্রিযাপন করল...। ২৩

এ বিষাদময় রজনীর ত্রিশ বছরের ও অধিক পূর্বে হযরত আলী (আ.) মহানবীর নিকটে জানতে পেরেছিলেন যে ,তিনি রমযান মাসে শহীদ হবেন। এ ব্যাপারটি হযরত আলীর নিকট শুনবো :...যখন মহানবী (সা.) রমযান মাসের ঐ বিখ্যাত খোতবাটি পাঠ করলেন ,আমি উঠে দাঁড়ালাম ও জানতে চাইলাম : হে আল্লাহর রসূল (সা.)! এ মাসের উৎকৃষ্ট কর্মসমূহ কি কি ?তিনি বললেন : পাপাচার থেকে দূরে থাকা। অতঃপর মহানবী (সা.) বেদনাগ্রস্থ হয়ে কাঁদলেন এবং এ মাসে আমার শাহাদাত সম্পর্কে সংবাদ প্রদান করলেন...। ২৪

ইমামের কথাবার্তা ও আচার-আচরণেও সুস্পষ্ট ছিল যে ,এ মাসে তিনি শাহাদাত বরণ করবেন ,একথা তিনি জানতেন। ঐ বছরেই তিনি বলেছিলেন : ‘ এ বছর হজের সময় আমি তোমাদের মাঝে থাকব না।

অনুরূপ তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো : কেন ইফতারের সময় সল্প খাবার গ্রহণ করেন ?তখন তিনি বলতেন : খালি পেটে মহান আল্লাহর সাক্ষাতে যেতে চাই। ২৫

কিন্তু ঊনিশের রাত্রিতে বিন্দুমাত্র নিদ্রা গ্রহণ করেন নি। অধিকাংশ সময় বলতেন : আল্লাহর শপথ ,মিথ্যা বলব না ও আমাকেও মিথ্যা বলা হয়নি ,‘ অদ্যরজনী সে প্রতিশ্রুত রজনী। ২৬

অবশেষে ঐ প্রাতে যখন হযরত আলী (আ.) মসজিদে এলেন। ফজরের নামায পড়া অবস্থায় নিকৃষ্টতম ব্যক্তি ইবনে মুলজামের বিষাক্ত রক্তলোলুপ তরাবারি হযরত আলীর উপর হানা হলো। আর সেই সাথে সত্যের মেহরাবে রঞ্জিত হলো বিভাকর। এর দু ’ দিন পর একুশে রমযানের রাত্রিতে চল্লিশ হিজরী সনে অস্তমিত হলো রঞ্জিত রবি। ২৭

তাঁর পবিত্র দেহ নাজাফের পবিত্র মাটিতে সমাহিত করা হলো ,যা আজ মুসলমানদের বিশেষ করে শিয়াদের হৃদয় মণিতে পরিণত হয়েছে।

ইমাম যেরূপ আজীবন মহান আল্লাহর স্মরণের মাধ্যমে বেঁচে ছিলেন ,ঐ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটার সময়ও আল্লাহর স্মরণেই ছিলেন। ...যখন ইবনে মুলজামের তরবারি তাঁর দীপ্তিময় মাথায় আঘাত হানল ,তখন প্রথম যে কথাটি তিনি উচ্চারণ করেছিলেন তা হলো :

فزت وربّ الكعبة

“ কাবার প্রভুর শপথ ,আমি সফলকাম হলাম। ”

অতঃপর তাঁকে রক্তে রঞ্জিত অবস্থায় গৃহে নিয়ে আসা হলো...। শাহাদাতের শয্যায় দু ’ দিন পর চির নিদ্রায় চক্ষু মুদন করলেন। ...তিনি  প্রতিটি মুহূর্তে তারপরও মানুষের কল্যাণ ও সৌভাগ্যের চিন্তায় ছিলেন। ...যদি ও ইমাম হাসান (আ.) এবং তদনুরূপ ইমাম হোসাইন (আ.) ও দ্বাদশ ইমাম পর্যন্ত তাঁর সন্তানগণের ইমামত সম্পর্কে নবী (সা.) ও আলী (আ.) থেকে পূর্বেও একাধিক বার বর্ণিত হয়েছিল ,তথাপি কর্তব্য সমাপনার্থে জীবনের অন্তিম লগ্নগুলোতে পুনরায় তা মানুষের জন্য বর্ণনা করলেন...। ২৮

অন্তিম বাণী
জীবনের শেষ লগ্নগুলোতে সন্তানসন্ততি ও পরিবার-পরিজন এবং মুসলমানদের জন্য এরূপ অসিয়ত করলেন :

“ তোমাদেরকে সংযমের দিকে আহবান জানাব এবং তোমরা তোমাদের কর্মগুলোকে বিন্যস্ত কর। সর্বদা মুসলমানদের সংশোধন ও সংস্কারের চিন্তায় থেকো...। অনাথদেরকে বিস্মৃত হয়ো না ;প্রতিবেশীদের অধিকার সংরক্ষণ করো। কোরআনকে জীবনের কর্মসূচী হিসাবে গ্রহণ কর।

الله الله في الصّلاة فانّها عمود دينكم

“ নামাযকে অধিক গুরুত্ব প্রদান করো ,যা তোমাদের দ্বীনের স্তম্ভ। ”

মহান আল্লাহর পথে তোমাদের ধন-সম্পদ ,বক্তব্য ও জীবন দিয়ে জিহাদ ও ত্যাগ তিতীক্ষা করো।

পরস্পর মিলেমিশে থেকো সৎ কর্মের আদেশ ও অসৎ কর্মে নিষেধ করা থেকে বিরত থেক না। কেননা ,যদি প্রভুর প্রদত্ত এ কর্তব্য পালনে অসচেতন থাক ,তবে সমাজে নিকৃষ্টজন তোমাদের উপর শাসন করবে ,আর তখন যতই তাদেরকে অভিশম্পাত কর না কেন ,তা গৃহিত হবে না। ২৯

আল্লাহর সন্তুষ্টি বর্ষিত হোক এ মহান পবিত্র ইমামের উপর। আর অব্যাহত থাকুক তাঁর জন্য পবিত্রগণের ও সৎকর্মশীলদের দরূদ ,যিনি ছিলেন অসাধারণ। আর তিনি তো বিশ্বের বিস্ময় ,বিস্ময়কর তার জীবন ব্যবস্থা ,বিস্ময়কর তার বিদায়।

তথ্যসূত্র
১ . বিহারুল আনওয়ার ,৩৫তম খণ্ড ,পৃ. ৮।

২ . এরশাদ ,শেখ মুফিদ ,পৃ. ৩।

৩ . নাহজুল বালাগা ,খোতবা নং ২৩৪- এর কিছু অংশ ,পৃ. ৮০২।

৪ . সীরাতে ইবনে হিশাম ,১ম খণ্ড ,পৃ. ২৪৫। অনুরূপ আল গাদীর ,৩য় খণ্ড ,পৃ.২২০-২৪০ তে আহলে সুন্নাতের প্রসিদ্ধ গ্রন্থসমূহ থেকে অনেক রেওয়ায়েত উল্লিখিত আছে।

৫ . তারিখে তাবারি ,৩য় খণ্ড ,পৃ. ১১৭১-১১৭৪ ,এছাড়া মাজমায়ুল বায়ান ,৭ম খণ্ড ,পৃ. ২০৬ দ্রষ্টব্য।

৬ . তাবিখে তাবারি ,৩য় খণ্ড ,পৃ. ১২৩২-১২৩৪।

৭ . প্রাগুক্ত ,পৃ. ১২৩২-১২৩৪।

৮ . এরশাদ ,শেখ মুফিদ ,পৃ. ২২-২৩।

৯ .প্রাগুক্ত ,পৃ. ৪৩-৪৫।

১০ .বিহারুল আনওয়ার ,২০তম খণ্ড ,পৃ. ২০৫।

১১ .এরশাদ ,শেখ মুফিদ ,পৃ. ৫৭- ৫৮

১২ .প্রাগুক্ত ,পৃ. ১৫-১৬।

১৩ . ( النبیُّ اولی بالمؤمنين من انفسهم ) সূরা আহযাব : ৬।

১৪ . আল গাদীর ,১ম খণ্ড ,পৃ. ৯-১১।

১৫ . ওসায়েল ,১১তম খণ্ড ,পৃ. ৭৯।

১৬ . প্রাগুক্ত ,পৃ. ৮০।

১৭ .মুরুজুয যাহাব ,২য় খণ্ড ,পৃ. ২৯৮।

১৮ .প্রাগুক্ত ,পৃ. ৩০৪।

১৯ .প্রাগুক্ত ,পৃ. ৩৩১।

২০ . ইহতিজাযে তাবরিসি ,নতুন সংস্করণ ,১ম খণ্ড ,পৃ. ৩১২।

২১ . সূরা মায়িদাহ : ৯৩।

২২ . এরশাদ ,শেখ মুফিদ ,পৃ. ৯৭ ।

২৩ . প্রাগুক্ত ,পৃ. ৯।

২৪ . উয়ুনু আখবারির রিজা ,১ম খণ্ড ,পৃ. ২৯৭।

২৫ . এরশাদ ,শেখ মুফিদ ,পৃ. ১৫১।

২৬ . প্রাগুক্ত ,পৃ. ৮।

২৭ . এরশাদ ,শেখ মুফিদ ,পৃ. ৫ ;বিহারুল আনওয়ার ,৪২তম খণ্ড ,পৃ. ২৮১।

২৮ . প্রাগুক্ত ।

২৯ . নাহজুল বালাগাহ ,২য় খণ্ড ,পৃ. ৪৭ ,দামেস্ক থেকে প্রকাশিত (লক্ষণীয় যে ,এ অসিয়তের মূলবক্তব্য সংক্ষিপ্তাকারে প্রাসঙ্গিকরূপে অনুবাদ করা হয়েছে)।

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিমআল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদপবিত্র কুরআন ও রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম এর হাদিস থেকে আমিরুল মোমেনীন আলী ইবনে আবি তালিব আঃ এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ হাদিসমহানবী হযরত মুহাম্মদ ‎(সা.)-এর উত্তরাধিকারী,তাঁর নবুওয়াতের মিশনের প্রধান সাহায্যকারী এবং দুনিয়া ও আখেরাতে রাসূলের ভ্রাতা আলী ‎(আ.) ‏আবরাহার পবিত্র মক্কা আক্রমণের ৩৩ বছর পর ১৩ রজব পবিত্র কা’বা শরীফে জন্মগ্রহণ করেন। মহান আল্লাহর আদেশে তাঁর নাম রাখা হয় আলী।শিশুকাল থেকেই মহানবী ‎(সা.)-এর সাথে হযরত আলীর বিশেষ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ সম্পর্কে আলী ‎(আ.) ‏নিজেই বলেছেন ‎: ‘...তিনি আমাকে তাঁর কোলে রাখতেন যখন আমি শিশু ছিলাম। তিনি আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরতেন এবং তাঁর বিছানায় শুইয়ে রাখতেন। তাঁর পবিত্র দেহ আমার দেহকে স্পর্শ করত এবং তিনি আমাকে তাঁর শরীরের সুগন্ধির ঘ্রাণ নেওয়াতেন। তিনি খাদ্য-দ্রব্য চিবিয়ে আমার মুখে পুরে দিতেন।...’১হযরত আবু তালিবের সংসারের ব্যয়ভার কমানোর জন্য হযরত আলীর বালক বয়সেই মহানবী ‎(সা.) ‏তাঁকে নিজের কাছে নিয়ে আসেন। তখন থেকে তিনি রাসূলের সার্বক্ষণিক সঙ্গী হয়ে যান। রাসূল হেরা পর্বতের গুহায় আল্লাহর ইবাদাত করতে গেলেও তাঁকে সাথে নিয়ে যেতেন। হযরত আলী বলেন ‎: ‘তিনি ‎(মহানবী) ‏প্রতি বছর হেরাগুহায় একান্ত নির্জনে বাস করতেন। আমি তাঁকে দেখতাম। আমি ব্যতীত আর কোন লোকই তাঁকে দেখতে পেত না। ঐ সময় রাসূলুল্লাহ্ ও খাদীজাহ্ ব্যতীত কোন মুসলিম পরিবারই পৃথিবীর বুকে ছিল না। আমি ছিলাম তাঁদের পরিবারের তৃতীয় সদস্য। আমি ওহী ও রেসালতের আলো প্রত্যক্ষ করেছি এবং নবুওয়াতের সুবাস ও সুঘ্রাণ অনুভব করেছি।’২তিনি মহানবীর প্রতি নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁকে অনুসরণ করতেন। তিনি বলেন ‎: ‘উষ্ট্র শাবক যেমনভাবে উষ্ট্রীকে অনুসরণ করে ঠিক সেভাবে আমি তাঁকে অনুসরণ করতাম। তিনি প্রতিদিন তাঁর উন্নত চরিত্র থেকে একটি নিদর্শন আমাকে শিক্ষা দিতেন এবং আমাকে তা পালন করার নির্দেশ দিতেন।... ‏তাঁর ওপর যখন ওহী অবতীর্ণ হয়েছিল তখন আমি শয়তানের ক্রন্দন ধ্বনি শুনেছিলাম। তাই আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম ‎: ‏হে রাসূলুল্লাহ্! ‏এ ক্রন্দন ধ্বনি কার? ‏তখন তিনি আমাকে বলেছিলেন ‎: ‏এই শয়তান এখন থেকে তার পূজা ‎(ইবাদাত) ‏করা হবে না বলে হতাশ হয়ে গেছে। নিশ্চয় আমি যা শুনি তুমি তা শোন এবং আমি যা দেখি তা দেখ। তবে তুমি নবী নও,কিন্তু ‎[নবীর] ‏সহকারী এবং নিঃসন্দেহে তুমি মঙ্গল ও কল্যাণের ওপরই আছ।’৩আর তাই মহানবী ‎(সা.)-এর নবুওয়াতের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসার পর তিনিই সর্বপ্রথম তাঁর ওপর ঈমান আনেন এবং তিনিই তাঁর সাথে নামায আদায় করা প্রথম ব্যক্তি। ইমাম মালেক বর্ণনা করেছেন ‎: ‘মহানবী ‎(সা.) ‏সোমবারে নবুওয়াত প্রাপ্ত হন এবং আলী মঙ্গলবারে তাঁর ওপর ঈমান আনেন।’৪হযরত আলী নিজেই বলেন ‎: ‘আমি আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসূলের ভ্রাতা এবং তাঁর নবুওয়াতের সবচেয়ে বড় বিশ্বাসস্থাপনকারী। একমাত্র মিথ্যাবাদী ছাড়া আমার পর কেউ এ দাবি করবে না। অন্য লোকদের নামায পড়ারও ৭ বছর আগে থেকে আমি নামায পড়েছি।’৫হযরত আলী ‎(আ.)-এর প্রসিদ্ধ উপাধিরাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏হযরত আলীকে বিভিন্ন উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন। এর মধ্যে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ হচ্ছে সিদ্দিকে আকবার,ফারুকে আযম,আসাদুল্লাহ ও মুরতাজা।পবিত্র কুরআনে হযরত আলী ‎(আ.)-এর মর্যাদাহযরত আলীর শানে পবিত্র কুরআনের অনেক আয়াত নাযিল হয়েছে। ইবনে আসাকির হযরত ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা করেছেন যে,কোন ব্যক্তির গুণ বর্ণনায় এত অধিক কুরআনের বাণী অবতীর্ণ হয়নি যা হযরত আলী সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস আরও বলেছেন যে,হযরত আলীর শানে তিনশ’ ‏আয়াত নাযিল হয়েছে এবং তাঁর গুণাবলি অত্যধিক ও প্রসিদ্ধ।৬ পবিত্র কুরআনের নাযিলকৃত আয়াতগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নিম্নে উল্লেখ করা হল ‎:১. ‏সূরা বাকারার ২০৭ নং আয়াতوَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَشْرِي نَفْسَهُ ابْتِغَاءَ مَرْضَاتِ اللَّهِ وَاللَّهُ رَءُوفٌ بِالْعِبَادِ‘এবং মানুষের মধ্যে এমনও আছে,যে আল্লাহর সন্তোষ লাভের জন্য নিজের জীবন পর্যন্ত বিক্রয় করে দেয় এবং আল্লাহ ‎(এরূপ) ‏বান্দাদের প্রতি অতিশয় অনুগ্রহশীল।’সালাবী তাঁর তাফসীর গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন যে,রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏যখন মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করার প্রস্তুতি নিলেন সেই সময় হযরত আলীকে তাঁর বিছানায় শুয়ে থাকার নির্দেশ দেন যাতে কাফির-মুশরিকরা মনে করে যে,রাসূল তাঁর নিজ ঘরেই রয়েছেন। আলী ‎(আ.) ‏নির্দ্বিধায় এ নির্দেশ পালন করলে মহান আল্লাহ এ আয়াত নাযিল করেন।৭ ২. ‏সূরা আলে ইমরানের ৬১ নং আয়াতفَمَنْ حَاجَّكَ فِيهِ مِنْ بَعْدِ مَا جَاءَكَ مِنَ الْعِلْمِ فَقُلْ تَعَالَوْا نَدْعُ أَبْنَاءَنَا وَأَبْنَاءَكُمْ وَنِسَاءَنَا وَنِسَاءَكُمْ وَأَنْفُسَنَا وَأَنْفُسَكُمْ ثُمَّ نَبْتَهِلْ فَنَجْعَلْ لَعْنَتَ اللَّهِ عَلَى الْكَاذِبِينَ‘অতঃপর তোমার নিকট যখন জ্ঞান ‎(কুরআন) ‏এসে গেছে,এরপরও যদি কেউ ‎(খ্রিস্টান) ‏তোমার সাথে তার ‎(ঈসার) ‏সম্বন্ধে তর্ক-বিতর্ক করে,তবে বল,‘(ময়দানে) ‏এস,আমরা আহ্বান করি আমাদের পুত্রদের ও তোমাদের পুত্রদের,আমাদের নারীদের ও তোমাদের নারীদের এবং আমাদের সত্তাদের ও তোমাদের সত্তাদের;’ ‏অতঃপর সকলে মিলে ‎(আল্লাহর দরবারে) ‏নিবেদন করি এবং মিথ্যাবাদীদের ওপর আল্লাহর অভিসম্পাত বর্ষণ করি।’ঘটনাটি এরূপ ‎: ‏রাসূলুল্লাহ্ ‎(সা.)-এর নবুওয়াতের সত্যতা যাচাই করার জন্য নাজরানের একটি খ্রিস্টান প্রতিনিধিদল মদীনায় আসল। তাদের সাথে আলোচনা ফলপ্রসূ হলো না। রাসূল ‎(সা.) ‏হযরত ঈসা ‎(আ.) ‏সম্বন্ধে প্রতিনিধিদের বললেন যে,তিনি আল্লাহর পুত্র নন,বরং আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। রাসূলুল্লাহ্ হযরত ঈসার জন্মের ব্যাপারে হযরত আদমের উদাহরণও দিলেন। কিন্তু তারা কোন কথাই শুনল না। অবশেষে তিনি আল্লাহর আদেশে পরস্পরের বিরুদ্ধে দোয়া ও মিথ্যাবাদীদের ওপর অভিশাপ বর্ষণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন,যাকে ‎‘মুবাহিলা’ ‏বলে। স্থির করা হল যে,নির্দিষ্ট স্থানে নির্দিষ্ট সময়ে উভয়ে নিজ নিজ পুত্রদের,নারীদের ‎(কন্যা সন্তানদের) ‏এবং তাদের নিজেদের ‎‘সত্তা’ ‏বলে গণ্য হওয়ার যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে একত্র হবে এবং প্রত্যেকে অপরের প্রতি অভিসম্পাত ও আল্লাহর শাস্তি কামনা করবে। রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏ইমাম হুসাইনকে কোলে নিয়ে ইমাম হাসানের হাত ধরলেন এবং হযরত ফাতিমাকে নিজের পেছনে,আর হযরত আলীকে তাঁর পেছনে রাখলেন। অর্থাৎ ছেলেদের স্থানে তিনি নাতিদের,নারীদের স্থানে নিজ কন্যাকে এবং ‎‘সত্তা’ ‏বলে গণ্যদের স্থানে আলীকে নিলেন এবং দোয়া করলেন,‘হে আল্লাহ! ‏প্রত্যেক নবীর আহলে বাইত থাকে,এরা আমার আহলে বাইত। এদের সকল দোষ-ত্রুটি হতে মুক্ত ও পাক-পবিত্র রেখ।’ ‏তিনি এভাবে ময়দানে পৌঁছলে খ্রিস্টানদের নেতা আকব তা দেখে বলল,‘আল্লাহর কসম,আমি এমন নূরানী চেহারা দেখছি যে,যদি এ পাহাড়কে নিজ স্থান হতে সরে যেতে বলেন,তবে অবশ্যই সরে যাবে। সুতরাং মুবাহিলা হতে হাত গুটিয়ে নেওয়াই কল্যাণকর,অন্যথায় কিয়ামত অবধি খ্রিস্টানদের কেউ অবশিষ্ট থাকবে না।’ ‏পরিশেষে তারা জিযিরা কর দিতে সম্মত হল। এটা হযরত আলীর একটি উঁচু স্তরের ফযিলত যে,তিনি আল্লাহর আদেশে রাসূলের ‎‘নাফ্স’ (অনুরূপ সত্তা) ‏সাব্যস্ত হলেন এবং সমুদয় নবীর থেকে শ্রেষ্ঠ হলেন।৮৩. ‏সূরা নিসার ৫৯ নং আয়াত ‎يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ‘হে বিশ্বাসিগণ! ‏তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূল ও তোমাদের মধ্যে যারা নির্দেশের অধিকর্তা,তাদের আনুগত্য কর...।’ইমাম জাফর সাদিক ‎(আ.)- ‏কে জিজ্ঞেস করা হলো যে,উত্তরাধিকারীর আদেশ মান্য করা কি অবশ্যই কর্তব্য? ‏তিনি বললেন ‎: ‏হ্যাঁ,তাঁরা ঐসব ব্যক্তি যাঁদের আদেশ পালন করা এ আয়াতে ওয়াজিব করা হয়েছে...। এ আয়াত হযরত আলী বিন আবি তালিব,হযরত হাসান ও হযরত হুসাইন ‎(আ.)-এর শানে অবতীর্ণ হয়েছে।৯ ৪. ‏সূরা মায়েদার ৫৫ নং আয়াতإِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَالَّذِينَ آمَنُوا الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُمْ رَاكِعُونَ‘(হে বিশ্বাসিগণ!) ‏তোমাদের অভিভাবক তো কেবল আল্লাহ,তাঁর রাসূল এবং সেই বিশ্বাসীরা যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে এবং রুকু অবস্থায় যাকাত প্রদান করে।’শীয়া-সুন্নি উভয় মাযহাবের তফসীরকাররা একমত যে,আয়াতটি হযরত আলী ‎(আ.)-এর শানে নাযিল হয়েছে। যেমন ইবনে মারদুইয়া এবং খাতীব বাগদাদী ইবনে আব্বাস সূত্রে এবং তাবরানী ও ইবনে মারদুইয়া আম্মার ইবনে ইয়াসির ও আলী ইবনে আবি তালিব সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে,আয়াতটি আলী ইবনে আবি তালিব ‎(আ.) ‏সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে যখন তিনি রুকু অবস্থায় যাকাত দেন।ঘটনাটি এরূপ ‎: ‏একদিন হযরত আলী ‎(আ.) ‏মদীনার মসজিদে নামায পড়ছিলেন। এমন সময় একজন ভিক্ষুক এসে ভিক্ষা চাইল। কিন্তু কোন ভিক্ষা না পাওয়ায় সে ফরিয়াদ করল যে,রাসূলের মসজিদ থেকে সে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছে। এ সময় হযরত আলী রুকু অবস্থায় ছিলেন। তিনি সেই অবস্থায় তাঁর ডান হাতের আঙ্গুল থেকে আংটি খুলে নেওয়ার জন্য ভিক্ষুকের প্রতি ইশারা করেন। ভিক্ষুক তাঁর হাত থেকে আংটি খুলে নেয়। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে উপরিউক্ত আয়াত নাযিল হয়।১০৫. ‏সূরা মায়েদার ৬৭ নং আয়াতيَا أَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ مِنْ رَبِّكَ وَإِنْ لَمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ وَاللَّهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْكَافِرِينَ‘হে রাসূল! ‏যা ‎(যে আদেশ) ‏তোমার প্রতিপালকের পক্ষ হতে তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে তা পৌঁছে দাও,আর যদি তুমি তা না কর,তবে তুমি ‎(যেন) ‏তার কোন বার্তাই পৌঁছাওনি,এবং ‎(তুমি ভয় কর না) ‏আল্লাহ তোমাকে মানুষের অনিষ্ট হতে রক্ষা করবেন;এবং নিশ্চয় আল্লাহ অবিশ্বাসী সম্প্রদায়কে সঠিক পথে পরিচালিত করেন না।’যখন রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏দশম হিজরিতে বিদায় হজ্ব থেকে মদীনায় প্রত্যাবর্তন করছিলেন সে সময় আল্লাহ্ তা‘আলা এ আয়াত নাযিল করেন। ইবনে আবী হাতিম ও ইবনে আসাকির আবু সাঈদ খুদরী হতে বর্ণনা করেছেন যে,এ আয়াত গাদীরে খুম প্রান্তরে হযরত আলী ‎(আ.)-এর শানে নাযিল হয়েছে।বিদায় হজ্ব থেকে প্রত্যাবর্তন করার সময় গাদীরে খুম নামক স্থানে মহানবী ‎(সা.) ‏হযরত আলীকে তাঁর পরে সকল মুমিনের অভিভাবক বলে ঘোষণা দেন।১১এ ঘোষণা দেয়ার পর হযরত ওমর হযরত আলীর সাথে সাক্ষাৎ করে অভিনন্দন জানান এবং বলেন ‎: ‘হে আলী ইবনে আবি তালিব! ‏আপনি আজ হতে প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর মাওলা হয়ে গেলেন।’১২৬. ‏সূরা রাদের ৭ নং আয়াতإِنَّمَا أَنْتَ مُنْذِرٌ وَلِكُلِّ قَوْمٍ هَادٍ‘(হে রাসূল!) ‏তুমি তো কেবল সতর্ককারী এবং প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে এক পথ প্রদর্শক।’ইবনে মারদুইয়্যা,ইবনে জারীর,আবু নাঈম তাঁর ‎‘মারেফাত’ ‏গ্রন্থে,ইবনে আসাকির,দাইলামী ও ইবনে নাজ্জার তাঁদের স্ব স্ব গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন যে,আয়াতটি নাযিল হলে মহানবী ‎(সা.) ‏তাঁর হাত নিজের বুকে রেখে বললেন,‘আমিই সতর্ককারী।’ ‏অতঃপর আলীর কাঁধের প্রতি তাঁর হাত দ্বারা ইশারা করে বললেন,‘হে আলী! ‏তুমিই পথপ্রদর্শক এবং মানুষ আমার পর তোমার মাধ্যমে হেদায়াতপ্রাপ্ত হবে।’ ‏উক্ত রেওয়ায়েতটি শব্দের তারতম্যে ইবনে মারদুইয়্যা সাহাবী আবু বারযাহ আসলামী হতে,জীয়াফীল হযরত ইবনে আব্বাস হতে,ইবনে আহমাদ তাঁর মুসনাদে এবং ইবনে মারদুইয়্যা ও ইবনে আসাকির স্বয়ং হযরত আলী ‎(আ.) ‏হতে বর্ণনা করেছেন।১৩৭. ‏সূরা রাদের ৪৩ নং আয়াতوَيَقُولُ الَّذِينَ كَفَرُوا لَسْتَ مُرْسَلًا قُلْ كَفَى بِاللَّهِ شَهِيدًا بَيْنِي وَبَيْنَكُمْ وَمَنْ عِنْدَهُ عِلْمُ الْكِتَابِযারা অবিশ্বাস করেছে তারা বলে,‘তুমি আল্লাহর রাসূল নও।’ ‏তুমি বল,‘আমার ও তোমাদের মধ্যে ‎(রেসালাতের) ‏সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট এবং সেই ব্যক্তি যার কাছে গ্রন্থের পূর্ণ জ্ঞান রয়েছে।’অধিকাংশ তাফসীরকার স্বীকার করেছেন যে,আয়াতে বর্ণিত সেই ব্যক্তি হলেন হযরত আলী ‎(আ.)। যেমন আসমী ‎‘যায়নুল ফাতা’ ‏নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন এবং সা’লাবী আবদুল্লাহ ইবনে আতা থেকে বর্ণনা করেছেন যে,আবদুল্লাহ বিন সালাম বলতেন,‘যার কাছে গ্রন্থের পূর্ণ জ্ঞান আছে’-এর উদ্দিষ্ট হযরত আলী ‎(আ.)। এজন্যই হযরত আলী ‎(আ.) ‏বারবার বলতেন,‘আমার কাছে আমার মৃত্যুর পূর্বে যা চাও জিজ্ঞেস কর।’১৪৮. ‏সূরা নাহলের ৪৩ নং আয়াতوَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ إِلَّا رِجَالًا نُوحِي إِلَيْهِمْ فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَতোমার পূর্বেও আমরা কেবল পুরুষদেরই ‎(রাসূল করে) ‏প্রেরণ করেছি যাদের প্রতি আমরা প্রত্যাদেশ প্রেরণ করতাম;যদি তোমরা না জেনে থাক তবে যারা জানে তাদের জিজ্ঞেস কর।আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেন ‎: ‏জ্ঞানী ব্যক্তিরা অর্থাৎ আহলুয যিকর হলেন হযরত মুহাম্মাদ ‎(সা.),হযরত আলী ‎(আ.),হযরত ফাতেমা ‎(আ.),হযরত হাসান ও হুসাইন ‎(আ.)। যাবের ইবনে আবদুল্লাহ বলেছেন ‎: ‏যখন এই আয়াত নাযিল হল তখন হযরত আলী বললেন ‎: ‏আমরাই হলাম জ্ঞানের ভাণ্ডার।১৫৯. ‏সূরা আহযাবের ৩৩ নং আয়াতوَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى وَأَقِمْنَ الصَّلَاةَ وَآتِينَ الزَّكَاةَ وَأَطِعْنَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا‘হে নবী পরিবার! ‏আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদের সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে।’উম্মুল মুমিনীন হযরত উম্মে সালামার ঘরে এ আয়াত নাযিল হলে রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏হযরত ফাতিমা,ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন ‎(আ.)-কে ডাকেন এবং তাঁদেরকে একটি চাদরে ঢেকে নেন। হযরত আলী তাঁর পেছনে ছিলেন। তিনি তাঁকেও চাদরে ঢেকে নেন। অতঃপর বলেন ‎: ‘হে আল্লাহ্! ‏এরা আমার আহলে বাইত। অতএব,তুমি তাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করে দাও এবং তাদেরকে উত্তমরূপে পবিত্র কর।’ ‏তখন উম্মে সালামা বলেন ‎: ‘হে আল্লাহর রাসূল! ‏আমিও কি তাদের অন্তর্ভুক্ত?’ ‏তিনি বলেন ‎: ‘তুমি স্ব স্থানে আছ এবং তুমি কল্যাণের মধ্যেই আছ।’১৬হযরত উম্মে সালামা ছাড়াও হযরত আবু সাঈদ খুদরী ও আনাস ইবনে মালিক কর্তৃক এ হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে।১৭১০. ‏সূরা শূরার ২৩ নং আয়াতقُلْ لَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا إِلَّا الْمَوَدَّةَ فِي الْقُرْبَى‘বল,আমি এর বিনিময়ে তোমাদের নিকট থেকে আমার নিকটাত্মীয়দের প্রতি ভালবাসা ছাড়া আর কোন প্রতিদান চাই না।’রাসূলুল্লাহ ‎(সা.)-এর নিকটাত্মীয় আহলে বাইতের সদস্যদের প্রতি ভালবাসা পোষণকে এ আয়াত দ্বারা মহান আল্লাহ মুসলমানদের জন্য ফরয বলে ঘোষণা করেন।হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেছেন ‎: ‏যখন এ আয়াত নাযিল হল তখন সাহাবিগণ জিজ্ঞেস করলেন,হে রাসূলুল্লাহ! ‏আপনার নিকটাত্মীয়,যাদেরকে ভালবাসা আমাদের ওপর ওয়াজিব করা হয়েছে তারা কারা? ‏রাসূল ‎(সা.) ‏বললেন ‎: ‏আলী,ফাতেমা,হাসান ও হুসাইন।১৮রাসূলুল্লাহ ‎(সা.)-এর হাদীসে আলী ‎(আ.)হযরত আলীর মর্যাদা সম্পর্কে মহানবী ‎(সা.)-এর নিকট থেকে অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এখানে কয়েকটি উল্লেখ করা হল ‎:১. ‏সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস বলেন,নবী ‎(সা.) ‏তাবুক যুদ্ধের সময় আলীকে লক্ষ্য করে বলেছেন ‎: ‘তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে,মর্যাদার দিক থেকে মূসার নিকট হারুন যে পর্যায়ে ছিলেন,তুমিও আমার নিকট ঐ পর্যায়ে রয়েছ?’১৯২. ‏অন্য একটি হাদীসে এসেছে ‎: ‏রাসূল বলেন ‎: ‘তুমি তো আমার নিকট তদ্রূপ যেরূপ হারুনের স্থান মূসার নিকট। পার্থক্য এতটুকু যে,আমার পরে কোন নবী নেই।’২০৩. ‏রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏ইমাম হাসান ও হুসাইনের হাত ধরে বলেন ‎: ‘যে ব্যক্তি আমাকে ভালবাসে এবং এ দু’জন ও তাদের পিতা-মাতাকে ভালবাসে,সে কিয়ামতের দিন আমার সাথে একই মর্যাদায় অবস্থান করবে।’২১৪. ‏আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণিত। রাসূল বলেছেন ‎: ‘আলীর চেহারার দিকে তাকানোও ইবাদত।’২২৫. ‏রাসূলুল্লাহ্ ‎(সা.) ‏আলী ‎(আ.)-কে সম্বোধন করে বলেছিলেন ‎: ‘মুমিনরাই তোমাকে মহব্বত করবে এবং মুনাফিকরাই তোমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবে।’২৩৬. ‏তিরমিযী,নাসাঈ ও ইবনে মাযাহ হুবশী ইবনে জুনাদাহ্ ‎(রা.) ‏থেকে বর্ণনা করেছেন। রাসূল ‎(সা.) ‏বলেছেন ‎: ‘আলী আমা থেকে এবং আমি আলী থেকে। যে ব্যক্তি আলীকে ভালবেসেছে,সে আমাকে ভালোবেসেছে। আর যে ব্যক্তি আলীকে ভালবেসেছে,সে আল্লাহকে ভালবেসেছে। যে ব্যক্তি আলীর সাথে শত্রুতা পোষণ করেছে সে আমার সাথে শত্রুতা পোষণ করেছে। আর যে আমার শত্রু সে আল্লাহর শত্রু। যে ব্যক্তি আলীকে কষ্ট দিয়েছে,সে আমাকে কষ্ট দিয়েছে।’২৪৭. ‏রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏বলেন ‎: ‘(হে আলী!) ‏দুনিয়া ও আখেরাতে তুমি আমারই ভাই।’২৫৮. ‏আবদুল্লাহ ইবনে বুরাইদা ‎(র.) ‏থেকে তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন ‎: ‏রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏বলেছেন ‎: ‘চার ব্যক্তিকে ভালবাসতে আল্লাহ আমাকে আদেশ করেছেন এবং তিনি আমাকে এও অবহিত করেছেন যে,তিনিও তাদের ভালবাসেন। বলা হল ‎: ‏হে আল্লাহর রাসূল! ‏আমাদের তাদের নামগুলো বলুন। তিনি বলেন ‎: ‏আলীও তাদের অন্তর্ভুক্ত। এ কথা তিনি তিনবার বলেন। ‎(অবশিষ্ট তিনজন হলেন) ‏আবু যার,মিকদাদ ও সালমান।...’২৬৯. ‏জাবির ‎(রা.) ‏থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন ‎: ‏তায়েফ অভিযানের দিন রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏আলীকে কাছে ডেকে তার সাথে চুপিসারে আলাপ করেন। লোকেরা বলল ‎: ‏তিনি তাঁর চাচাত ভাইয়ের সাথে দীর্ঘক্ষণ চুপিসারে কথা বললেন। রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏বলেন ‎: ‏আমি তার সাথে চুপিসারে কথা বলিনি;বরং আল্লাহই তার সাথে চুপিসারে কথা বলেছেন। ‎(অর্থাৎ তার সাথে চুপিসারে কথা বলার জন্য আল্লাহ্ই আমাকে আদেশ করেছেন।)২৭হযরত আলী সম্পর্কে অন্যান্য সাহাবীহযরত আবু বকর প্রায়ই হয়রত আলীর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতেন। হযরত আয়েশা এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন ‎: ‘আমি রাসূলে করীমকে বলতে শুনেছি,আলীর মুখ দেখা ইবাদাতের শামিল।’২৮হযরত উমর বিন খাত্তাব বলতেন,হযরত আলী বিন আবি তালিবের তিনটি বৈশিষ্ট্য ছিল। যদি তার একটি আমার থাকত তাহলে আমি বলতাম যে,আমাকে লাল রঙের একটি উট দেয়া হলে তা অপেক্ষাও আমি তা পছন্দ করতাম। তাঁকে এ তিনটি বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন ‎: ‏১.তাঁর বিয়ে হয় রাসূল ‎(সা.)-এর কন্যার সাথে,২. ‏তাঁর সঙ্গে রাসূলে করীমের মসজিদে অবস্থান এবং যা রাসূলে করিমের জন্য বৈধ ছিল তার জন্যও তা বৈধ ছিল এবং ৩. ‏খায়বার যুদ্ধের পতাকা বহনের দায়িত্ব তাঁর ওপর ন্যস্ত ছিল।২৯হযরত উমর বলেছেন,হে আল্লাহ! ‏আমার ওপর এমন কোন বিপদ দিও না যখন আবুল হাসান ‎(আলী) ‏আমার নিকট উপস্থিত না থাকে। কারণ,তিনি আমার নিকট উপস্থিত থাকলে আমাকে সে বিপদ থেকে নিষ্কৃতি দেবেন।’৩০তাবরানী হযরত ইবনে আব্বাস থেকে রেওয়ায়াত করেছেন যে,হযরত আলীর আঠারটি বৈশিষ্ট্য এমন ছিল যা সমগ্র উম্মতের কারও ছিল না।’৩১তথ্যসূত্র১. ‏মমতাজ বেগম কর্তৃক প্রকাশিত নাহজ আল বালাঘা,২য় মুদ্রণ,আল খুতবাতুল কাসেয়াহ্,খুতবা নং ১৯১২. ‏প্রাগুক্ত৩. ‏প্রাগুক্ত৪. ‏মুসতাদরাকে হাকেম,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏১১২;এটি ইমাম মালেক কর্তৃক বর্ণিত। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে হেরা গুহায় জিবরাঈল ‎(আ.) ‏কর্তৃক রাসূলুল্লাহ ‎(সা.)-এর নবুওয়াত ঘোষণার পর পরই হযরত আলী ‎(আ.) ‏তাঁর ঈমান আনার বিষয়টি প্রকাশ করেন।৫. ‏সুনানে ইবনে মাজাহ্,১ম খণ্ড,পৃ. ‏৪৪৬. ‏নূর-এ-সাকালাইন কর্তৃক প্রকাশিত,সাইয়্যেদ আলী জাফরী প্রণীত আল মুরতাজা,পৃ. ‏৩০।৭. ‏এহইয়াউ উলুমিদ্দীন,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏২৩৮;নুরুল আবসার,পৃ. ‏৮৬,মুসতাদরাকে হাকেম,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏৪;তাফসীরে কুমী,১ম খণ্ড,পৃ. ‏৭১;তাযকিরাতু সিবতে ইবনে যাওযী,পৃ. ‏২১;ইয়ানাবিউল মাওয়াদ্দাহ,পৃ. ‏৯২।৮. ‏তাফসীরে জালালাইন,১ম খণ্ড,পৃ.৬০;বায়দ্বাভী,১ম খণ্ড,পৃ. ‏১১৮,তাফসীরে দুররুল মানসুর,২য় খণ্ড,পৃ. ‏৩৯,মিশর মুদ্রণ;মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বাল,১ম খণ্ড,পৃ. ‏১৮৫;৯. ‏মাজমাউল বায়ান,২য় খণ্ড,পৃ. ‏১৪১;তাফসীরে কুমী,১ম খণ্ড,পৃ. ‏১৪১;ইয়ানাবিউল মাওয়াদ্দাহ,পৃ. ‏২১;শাওয়াহেদুত তানযিল,১ম খণ্ড,পৃ. ‏১৪৮;তাফসীরে ফুরাত,পৃ.২৮১০. ‏তাফসীরে তাবারী,৬ষ্ঠ খণ্ড,পৃ. ‏১৬৫;তাফসীরে রাযী,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏৪৩১;মানাকেবে খাওয়ারেযমী,পৃ. ‏১৭৮;যাখায়েরুল উকবা,পৃ. ‏১০২;তাফসীরে ইবনে কাসীর,২য় খণ্ড,পৃ. ‏৭১;আল- ‏বেদায়া ওয়ান নেহায়া,৭ম খণ্ড,পৃ. ‏৩৫৭;সাওয়ায়েকে মুহরিকাহ,পৃ. ‏২৫;১১. ‏মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বাল,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ‏৩৭২;ইমাম নাসাঈ প্রণীত খাসায়েসে আমীরুল মুমিনীন,পৃ. ‏২১;মুসতাদরাকে হাকেম,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏১০৯;আল গাদীর,১ম খণ্ড,পৃ. ‏২১৪ ও ২২৯;শাওয়াহেদুত তানযিল,১ম খণ্ড,পৃ. ‏১৮৭ ।১২. ‏তাফসীরে তাবারী,৩য় খণ্ড,মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বল,৩য় খণ্ড,দারে কুতনী।১৩. ‏তাফসীরে দুররে মানসুর,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ‏৪৫ দ্রষ্টব্য।১৪. ‏তাফসীরে দুররে মানসুর,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ‏৬৯ ।১৫. ‏কেফাইয়াতুল মুওয়াহহিদীন,২য় খণ্ড,পৃ. ‏৬৫০;মাজমাউল বায়ান,২য় খণ্ড,পৃ. ‏৪১৩;কানযুল উম্মাল,৬ষ্ঠ খণ্ড,পৃ. ‏১৫৬;তাফসীরে তাবারী,১৪তম খণ্ড,পৃ. ‏১০৮ ।১৬. ‏বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত জামে আত-তিরমিযী,৬ষ্ঠ খণ্ড,হাদীস নং ৩৭২৫,পৃ. ‏৩৫৯ ।১৭. ‏মুসনাদে আহমাদ,১ম খণ্ড,পৃ. ‏৩৩১;যাখায়েরুল উকবা,পৃ. ‏২১,তাফসীরে তাবারী,২২তম খণ্ড,পৃ. ‏৮;মুসতাদরাকে হাকেম,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏২০৮;ফাজায়েলে খামসাহ,১ম খণ্ড,পৃ. ‏২২৪;শাওয়াহেদুত তানযিল,২য় খণ্ড,পৃ. ‏১০ ।১৮. ‏যাখায়েরুল উকবা,পৃ. ‏৯ ও ১২;তাফসীরে যামাখশারী,২য় খণ্ড,পৃ. ‏৩৩৯;সাওয়ায়েকে মুহরিকাহ,পৃ. ‏১০১,তাফসীরে দুররুল মানসূর,৬ষ্ঠ খণ্ড,পৃ. ‏৭;মুসনাদে আহমাদ,১ম খণ্ড,পৃ. ‏২২৯;আল গাদীর,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏১৭২;শাওয়াহেদুত তানযিল,২য় খণ্ড,পৃ. ‏৩০ ।১৯. ‏আধুনিক প্রকাশনী কর্তৃক প্রকাশিত সহীহ আল বুখারী,৩য় খণ্ড,হাদীস নং ৩৪৩১;বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত সহীহ মুসলিম,৭ম খণ্ড,হাদীস নং ৬০৪২ ।২০. ‏বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত সহীহ মুসলিম,৭ম খণ্ড,হাদীস নং ৬০৪০ ও জামে আত-তিরমিযী,৬ষ্ঠ খণ্ড,হাদীস নং ৩৬৬৮ ।২১. ‏বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত জামে আত-তিরমিযী,৬ষ্ঠ খণ্ড,হাদীস নং ৩৬৭০২২. ‏এমদাদীয়া লাইব্রেরী কর্তৃক প্রকাশিত হযরত আলী ইবনে আবি তালিব ‎(রা.),পৃ. ‏১৫ ।২৩. ‏বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত জামে আত-তিরমিযী,৬ষ্ঠ খণ্ড,হাদীস নং ৩৬৭৩ ।২৪. ‏এমদাদিয়া লাইব্রেরী কর্তৃক প্রকাশিত হযরত আলী ‎(রা.),পৃ. ‏১৫-১৬ ।২৫. ‏বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত জামে আত-তিরমিযী,৬ষ্ঠ খণ্ড,হাদীস নং ৩৬৫৮;২৬. ‏প্রাগুক্ত,হাদীস নং ৩৬৫৬;২৭. ‏প্রাগুক্ত,হাদীস নং ৩৬৬৪২৮. ‏সাওয়ায়েকে মুহরিকাহ,পৃ. ‏১৭৫ ।২৯. ‏সাওয়ায়েকে মুহরিকাহ,৩য় খণ্ড,এবং মুসতাদরাকে হাকেম,৩য় খণ্ড ।৩০. ‏মুনতাখাবে কানজুল উম্মাল,৩য় খণ্ড ।৩১. ‏সাওয়ায়েকে মুহরিকাহ ১১৩ ।(প্রত্যাশা,৩য় বর্ষ, ‏১ম সংখ্যাপ্রচারে মোঃ জাহিদ হুসাইন

শিশু ইমাম হযরত জাওয়াদ (আ.)'র জন্মবার্ষিকীসকল মোমিন মোমিনা কে জানাই ঈদ মোবারক🎂🎂🎂🎂🎂(((পর্ব ১)))🎂🎂🎂🎂🎂দশই রজব ইসলামের মহাখুশির দিন। এই দিনে পৃথিবীতে এসেছিলেন মাওলা মোহাম্মদ (সা) পবিত্র আহলে বাইতের সদস্য নবম ইমাম হযরত জাওয়াদ বা তাকি(আ)। নবীজীর আহলে বাইতের সদস্যরা কেবল মুসলমানদেরই ধর্মীয় নেতা নন বরং যারাই সত্য পথের সন্ধানী কিংবা কল্যাণকামী-তাদের সবারই নেতা।আহলে বাইতের এই মহান ইমাম হযরত জাওয়াদ (আ) এর জন্ম-বার্ষিকীতে আপনাদের সবার প্রতি রইলো অশেষ অভিনন্দন ও প্রাণঢালা মোবারকবাদ এবং মাওলা মোহাম্মদ (সা.) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের শানে পেশ করছি অসংখ্য দরুদ ও সালাম ।ইমাম জাওয়াদের জন্ম হয়েছিল ১৯৫ হিজরিতে তথা ৮১১ খ্রিস্টাব্দের ১২ এপ্রিল পবিত্র মদীনায়। মজলুম ও দরিদ্রদের প্রতি ব্যাপক দানশীলতা ও দয়ার জন্য তিনি 'জাওয়াদ' উপাধি পেয়েছিলেন। তাকি বা খোদাভীরু ছিল তাঁর আরেকটি উপাধি। জগত-বিখ্যাত মহাপুরুষ ইমাম রেজা (আ) ছিলেন তাঁর বাবা। আর তাঁর মায়ের নাম ‘সাবিকাহ’ বলে জানা যায়। ইমাম রেজা (আ) তাঁর এই স্ত্রীর নাম রেখেছিলেন খিইজরান। তিনি ছিলেন মহানবীর স্ত্রী উম্মুল মু’মিনিন হযরত মারিয়া কিবতির (আ) বংশধর। ইমাম জাওয়াদ (আ) ১৭ বছর ইমামতের দায়িত্ব পালনের পর মাত্র ২৫ বছর বয়সে শাহাদত বরণ করেন। তিনিই হলেন ইসলামের ইতিহাসের সবচেয়ে কম বয়স্ক ইমাম। আহলে বাইতের অন্য ইমামগণের মত ইমাম জাওয়াদ (আ.)ও ছিলেন উচ্চতর নৈতিক গুণ, জ্ঞান ও পরিপূর্ণতার অধিকারী। ইসলামের মূল শিক্ষা ও সংস্কৃতির পুনরুজ্জীবন এবং বিকাশ ছিল তাঁর তৎপরতার মূল লক্ষ্য বা কেন্দ্রবিন্দু। সেযুগের সব মাজহাবের জ্ঞানী-গুণীরা ইমাম জাওয়াদ (আ.)'র উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন।সমসাময়িক যুগের প্রখ্যাত সুন্নি চিন্তাবিদ কামালউদ্দিন শাফেয়ি ইমাম জাওয়াদ (আ.) সম্পর্কে বলেছেন, "মুহাম্মাদ বিন আলী তথা ইমাম জাওয়াদ (আ.) ছিলেন অত্যন্ত উঁচু মর্যাদা ও গুণের অধিকারী। মানুষের মুখে মুখে ফিরতো তাঁর প্রশংসা। তাঁর উদারতা, প্রশস্ত দৃষ্টি ও সুমিষ্ট কথা সবাইকে আকৃষ্ট করত। যে-ই তাঁর কাছে আসতো নিজের অজান্তেই এই মহামানবের অনুরাগী হয়ে পড়ত এবং তাঁর কাছ থেকে জ্ঞান অর্জন করত।" ইমাম জাওয়াদ (আ) মাত্র সাত বা আট বছর বয়সে ইমামতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এতো অল্প বয়সে তাঁর ইমামতিত্বের বিষয়টি ছিল যথেষ্ট বিস্ময়কর। ফলে অনেকেই এ বিষয়ে সন্দেহ করতেন। অথচ আল্লাহর তো এই শক্তি আছে যে তিনি মানুষকে তার বয়সের স্বল্পতা সত্ত্বেও পরিপূর্ণ বিবেক-বুদ্ধির পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেন। কোরানের আয়াতের ভিত্তিতে পূর্ববর্তী উম্মতের মধ্যেও এরকম উদাহরণ বহু আছে। যেমন শিশুকালে হযরত ইয়াহিয়া (আ) এর নবুয়্যত প্রাপ্তি, মায়ের কোলে নবজাতক ঈসা (আ) এর কথা বলা ইত্যাদি সর্বশক্তিমান আল্লাহর অশেষ ক্ষমতারই নিদর্শন। ইমাম জাওয়াদ (আ) শৈশব-কৈশোরেই ছিলেন জ্ঞানে-গুণে, ধৈর্য ও সহনশীলতায়, ইবাদত-বন্দেগিতে, সচেতনতায়, কথাবার্তায় শীর্ষস্থানীয় মহামানব। একবার হজ্জ্বের সময় বাগদাদ এবং অন্যান্য শহরের বিখ্যাত ফকীহদের মধ্য থেকে আশি জন মদীনায় ইমাম জাওয়াদ (আ) এর কাছে গিয়েছিলেন। তাঁরা ইমামকে বহু বিষয়ে জিজ্ঞেস করে অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত ও সন্তোষজনক জবাব পেলেন। ফলে জাওয়াদ (আ)’র ইমামতিত্বের ব্যাপারে তাদের মনে যেসব সন্দেহ ছিল-তা দূর হয়ে যায়।প্রচারে মোঃ জাহিদ হুসাইন আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম‌লা'নাতুল্লাহি আলাল কাজেবিন🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂