আহলে বাইত আঃ কাদের কে বলা হয়েছেبسم الله الرحمن الرحیمপর্ব (((((১)))))নবী করিম (সা.)-এর আহলে বাইতকে ভালবাসার ব্যাপারে মুসলমানদের মধ্যে কোন দ্বিমত নেই । তবে আহলে বাইত কারা– এ ব্যাপারে যথেষ্ট মতানৈক্য বিদ্যমান । মুসলমানদের কোন এক সম্প্রদায় আহলে বাইত বলতে শুধুমাত্র তার সম্মানীতা স্ত্রীগণকে বুঝিয়ে থাকেন । আবার অন্য এক সম্প্রদায় এ ক্ষেত্রে শুধুমাত্র হযরত ফাতিমা, তার স্বামী ও সন্তানদ্বয়কে রাসুলের সাথে সংযোগ করে থাকেন । আবার নবী (সা.) এর আহলে বাইতের মধ্যে হযরত আব্বাস, আক্বীল ও জাফর তাইয়্যারকেও শামিল করে থাকেন ।প্রকৃতপক্ষে আহলে বাইতের সদস্যগণ কারা ? এ প্রশ্নের উত্তরে প্রথমে আমরা ‘আহল’ ও ‘বাইত’ শব্দদ্বয়ের আভিধানিক ও পারিভাষিক অর্থের উল্লেখ করে মূল অর্থের দিকে দৃষ্টিপাত করবো।আরবী অভিধানে ‘আহল’ এর অর্থ হচ্ছেঃاهل الرجال، عشیرته و ذو قرباه، جمع : اهلون و اهلان، و اهل یأهل یأهل اهولا تأهل و اتهل: اتخذ اهلا.অর্থাৎঃ-একটি পুরুষের পরিবার, তার আত্মীয়-স্বজন, ‘আহল’ এর বহুবচন হচ্ছে ‘আহলুন’ অতীত কাল বুঝানোর জন্য ‘আহালা’ এবং বর্তমান ও ভবিষ্যৎ কালের জন্যে ‘ইয়াহেলুন’ বা ‘ইয়াহালু’ ব্যবহৃত হয়ে থাকে । আর ‘আহুলান’ হচ্ছে মূল ক্রিয়া সূচক শব্দ । ‘তায়াহহালা’ বা এত্তাহালার অর্থ হচ্ছে পরবিার গঠন করেন ।و اهل الامر : ولایته وللبیت سکانه و للمذهب من یدیه به، و للرجل زوجته کأهلته. للنبی (ص) ازواجه و بناته و صهره علی (رضی الله عنه) او نسائه، و الرجال الذین هم و لکل نبی امنه........অর্থাৎঃ-কোন কাজের জন্যে আহল বলতে তার কতৃত্ব আর ঘরের জন্যে ‘আহল’ বলতে গৃহবাসীদের বুঝায় । মাযহাবের জন্য ‘আহল’–এর অর্থ হচ্ছে মাযহাবের পরিচালক । একটা পুরুষের ‘আহল’ বলতে তার স্ত্রীকে বুঝানো হয় । নবী (সা.) এর জন্যে ‘আহল’ বলতে বুঝায় তার স্ত্রীবর্গ কন্যাগণ, তার জামাতা আলী (রাজীঃ) এবং ঘরের মহিলারা অতঃপর নবীদের আহল হচ্ছে তাদের উম্মত…………………।১‘আহল’ শব্দটি পবিত্র আল কোরআনে ৫৪ বার ব্যবহার হয়েছে । প্রতিবারে ভিন্ন ভিন্ন অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে এ শব্দটিকে । ‘আহল’ শব্দের অর্থ কখনো শুধুমাত্র স্ত্রী ও সন্তান উভয়কেই বুঝানো হয়েছে আল-কোরআনে । কোথাও আবার আহল বলতে আত্মীয়-স্বজনকেও বুঝানো হয়েছে ।দৃষ্টান্ত স্বরূপ আল-কোরআনে আল্লাহ বলেনঃفَلَمَّا قَضَىٰ مُوسَى الْأَجَلَ وَسَارَ بِأَهْلِهِ آنَسَ مِن جَانِبِ الطُّورِ نَارًا قَالَ لِأَهْلِهِ امْكُثُوا إِنِّي آنَسْتُ نَارًا لَّعَلِّي آتِيكُم مِّنْهَا بِخَبَرٍ أَوْ جَذْوَةٍ مِّنَ النَّارِ لَعَلَّكُمْ تَصْطَلُونَঅর্থাৎঃ-অতঃপর যখন মূসা (আঃ) তার প্রতিশ্রুত কর্মের সময়সীমা অতিক্রম করেন তখন তিনি তার স্ত্রীকে নিয়ে স্বদেশ পানে যাত্রা করেন । পথিমধ্যে তুর পর্বতের সন্নিকটে আগুন দেখতে পেলেন। তিনি তার স্ত্রীকে বললেন, তোমরা অপেক্ষা কর, আমি আগুন দেখতে পাচ্ছি । সম্ভবতঃ আমি সেখান থেকে তোমাদের কাছে কোন সংবাদ নিয়ে আসতে পারি অথবা তোমাদের জন্য আগুনের ব্যবস্থা করতে পারি ।২উক্ত আয়াতে আল্লাহ দু’বার ‘আহল’ শব্দ ব্যবহার করেছেন । এখানে ‘আহল’ শব্দের অর্থ স্ত্রী । উক্ত আয়াতে ‘আহল’ শব্দের উদ্দেশ্য হযরত মুসা (আ.) এর স্ত্রী অন্য কেউ নয় ।আল-কোরআনে আল্লাহ বলেনঃإِنَّا مُنَجُّوكَ وَأَهْلَكَ إِلَّا امْرَأَتَكَ كَانَتْ مِنَ الْغَابِرِينَঅর্থাৎঃ-“নিশ্চয় আমি তোমাকে (হযরত লুত আ.) এবং তোমার পরিবারকে নাজাত দিব, তোমার স্ত্রী ব্যতীত, কেননা সে অভিশপ্ত এবং পশ্চাদপদের শিকার ।৩উক্ত আয়াতে আল্লাহ পাক ‘আহল’ বলতে স্ত্রী, পরিবার পরিজন, সন্তান-সন্তুতি সকলকে বুঝিয়েছেন । যদিও লুতের স্ত্রীকে আল্লাহ অভিশপ্ত বলে আখ্যায়িত করেছেন ।আল্লাহ অন্যত্র হযরত লুত (আ.) সম্পর্কে বলেনঃوَنَادَىٰ نُوحٌ رَّبَّهُ فَقَالَ رَبِّ إِنَّ ابْنِي مِنْ أَهْلِي وَإِنَّ وَعْدَكَ الْحَقُّ وَأَنتَ أَحْكَمُ الْحَاكِمِينَ قَالَ يَا نُوحُ إِنَّهُ لَيْسَ مِنْ أَهْلِكَ ۖ إِنَّهُ عَمَلٌ غَيْرُ صَالِحٍ…..অর্থাৎঃ-“নূহ (আঃ) তাঁর প্রতিপালকের কাছে প্রার্থনা করলো-হে আমার প্রতিপালক, আমার পুত্র তো আমার পরিবারের অন্তর্ভুক্ত; আর আপনার ওয়াদাও নিঃসন্দেহে সত্য আর আপনিই সর্বাপেক্ষা বিজ্ঞ ফয়সালাকারী । (আল্লাহ) বলেন, হে নূহ! নিশ্চয় সে (তোমার পুত্র) তোমার পরিবারভুক্ত নয়। নিশ্চই সে অসৎ!৪এক্ষেত্রে ‘আহল’ অর্থ ঐ ব্যক্তির পদাংক অনুসরণকারী পরিবারের সদস্য । এ কারণে আল্লাহ হযরত নুহ (আ.) এর পুত্রকে তার আহল এর মধ্যে গন্য করেননি । কেননা সে অসৎ কাজে লিপ্ত ।উপসংহারে বলা যায় ‘আহল’ শব্দের একক কোন অর্থ নেই । স্থান ভেদে এর অর্থ বিভিন্ন হতে পারে ।আর ‘বাইত’ শব্দও কোরআন ও হাদীসের বহু স্থানে ব্যবহৃত হয়েছে । ‘বাইতের’ অর্থও বিভিন্ন ধরণের । কোথাও ‘বাইত’ অর্থ মসজিদুল হারাম আবার কোথাও মসজিদুন্নাবী ইত্যাদি বুঝানো হয়েছে ।তবে আল-কোরআনের ‘বাইত’ শব্দ ‘আহল’ শব্দের সাথে সংযোগ করে ব্যবহৃত হয়েছে দু’বার ।সূরা হুদে আল্লাহ বলেন,رَحْمَتُ اللَّـهِ وَبَرَكَاتُهُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الْبَيْتِঅর্থাৎঃ-আল্লাহর রহমত ও বরকত আহলে বাইতের উপর বর্ষিত ।৫সূরা আহযাবে আল্লাহ আরো বলেন,إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّـهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًاঅর্থাৎঃ-আল্লাহ মনস্থ করলেন তোমাদেরকে সমস্ত প্রকার অপবিত্রতা থেকে দূরে রাখতে হে আহলে বাইত এবং মনস্থ করলেন তোমাদেরকে পুত-পবিত্র করতে ।৬মহানবী (সা.) এর হাদীসেও ‘আহলে বাইত’ শব্দটি বহুল ব্যবহৃত হয়েছে । শিয়া-সুন্নি উভয় মাযহাবের বর্ণিত হাদীসগুলোতে প্রায় ৮০ পন্থায় ‘আহলে বাইত’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে । তার পরও মুসলমানদের মধ্যে আহলে বাইতের সংজ্ঞা ও অর্থ এবং সদস্যদের ব্যাপারে যথেষ্ট মতপার্থক্য ও অস্পষ্টতা বিদ্যমান । মুসলমানরা তাদের নিজ নিজ মাযহাবের পক্ষে আহলে বাইতের অর্থ করেই দায়িত্ব সমাপ্ত করে থাকেন । অনেকে বলে থাকেন, তাতহীরের আয়াতে উল্লেখিত আহলে বাইতের উদ্দেশ্য বনি হাশিমের লোকজন । আবার অনেকের মতে বনি হাশিমের মু’মিন সন্তানগণ অর্থাৎ আব্দুল মুত্তালিবের সন্তান ব্যতীত অন্য কেউ আহলে বাইতের মধ্যে গন্য নয় ।৭আবার কেউ কেউ বলেন, আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিব ও তার সন্তানরা শুধুমাত্র আহলে বাইতের সদস্য ।৮কোন এক মুসলিম সম্প্রদায় বলেন, রাসুলের (সা.) সম্মানিতা স্ত্রীগণ, হযরত আলী ইবনে আবি তালিব, হযরত ফাতিমা, হযরত হাসান ইবনে আলী ও হযরত হুসাইন ইবনে আলী আহলে বাইতের সদস্যবৃন্দ ।৯অনেকে বলেন, নবীর স্ত্রীরা শুধুমাত্র আহলে বাইতের মধ্যে গন্য । কেননা আকরামাহ বিন আব্দুল্লাহ নাজদাহ আল হারুরী-যিনি আলীর সাথে শত্রুতার ক্ষেত্রে অন্যান্যদের অতিক্রম করেছে, সে ‘নবীর (সা.) স্ত্রীগণ শুধুমাত্র আহলে বাইতের সদস্য বলে প্রচার করত । সে আরো বিশ্বাস করত খারেজী দল বহির্ভূত সকল মুসলমান কাফের । হজ্বের সময় সে চিৎকার করে বলত, ‘যদি আমার হাতে শক্তি থাকতো তাহলে আমার ডানে বায়ে যত লোক আছে তাদের সকলকে হত্যা করতাম ।’ সে মসজিদুল হারামে দাড়িয়ে উচ্চস্বরে ধ্বনি দিত, ‘এখানে কাফের ব্যাতীত অন্য কেউ নেই ।’ তার আক্বিদা-বিশ্বাসের মধ্যে আরেকটি দিক হলো যে সে বিশ্বাস করত,انما انزل الله متسابه القرآن لیضل بهঅর্থাৎঃ আল্লাহ কোরআনের ‘মুতাশাবেহ’ আয়াতগুলো মানুষকে পথভ্রষ্ট করার জন্য অবতীর্ণ করেছেন ।সে সমসাময়িক কালে মিথ্যাবাদী বলে খ্যাতি লাভ করেছিল । আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিব ও ইবনে মাসউদ বলেছেন, ‘আকরামার হাদীস জালকারী ও মিথ্যাবাদী বলে কুখ্যাতি আছে ।’ ইয়াহইয়া বিন সাঈদ আল আনসারী তার সম্পর্কে বলেছেন, সে একজন মিথ্যাবাদী ।১০আকরামার ন্যায় আরো একজন ব্যক্তি নবীর (সা.) স্ত্রীগণকে শুধুমাত্র আহলে বাইতের মধ্যে শামিল করেছেন । তিনি হচ্ছেন মাক্বাতিল ইবনে সুলাইমান আল-বালখী আল আযুদী আল খোরাসানী । তিনি তৌহিদ ও রেসালাতের ব্যাপারে অনেক আপত্তিমূলক বক্তব্য পেশ করেছেন যা আহলে সুন্নাতের আক্বিদার সম্পূর্ণ পরিপন্থি ।১১নিবেদক______ মোঃ জাহিদ হোসেন
আহলে বাইত আঃ কাদের কে বলা হয়েছে
بسم الله الرحمن الرحیم
পর্ব (((((১)))))
নবী করিম (সা.)-এর আহলে বাইতকে ভালবাসার ব্যাপারে মুসলমানদের মধ্যে কোন দ্বিমত নেই । তবে আহলে বাইত কারা– এ ব্যাপারে যথেষ্ট মতানৈক্য বিদ্যমান । মুসলমানদের কোন এক সম্প্রদায় আহলে বাইত বলতে শুধুমাত্র তার সম্মানীতা স্ত্রীগণকে বুঝিয়ে থাকেন । আবার অন্য এক সম্প্রদায় এ ক্ষেত্রে শুধুমাত্র হযরত ফাতিমা, তার স্বামী ও সন্তানদ্বয়কে রাসুলের সাথে সংযোগ করে থাকেন । আবার নবী (সা.) এর আহলে বাইতের মধ্যে হযরত আব্বাস, আক্বীল ও জাফর তাইয়্যারকেও শামিল করে থাকেন ।
প্রকৃতপক্ষে আহলে বাইতের সদস্যগণ কারা ? এ প্রশ্নের উত্তরে প্রথমে আমরা ‘আহল’ ও ‘বাইত’ শব্দদ্বয়ের আভিধানিক ও পারিভাষিক অর্থের উল্লেখ করে মূল অর্থের দিকে দৃষ্টিপাত করবো।
আরবী অভিধানে ‘আহল’ এর অর্থ হচ্ছেঃ
اهل الرجال، عشیرته و ذو قرباه، جمع : اهلون و اهلان، و اهل یأهل یأهل اهولا تأهل و اتهل: اتخذ اهلا.
অর্থাৎঃ-একটি পুরুষের পরিবার, তার আত্মীয়-স্বজন, ‘আহল’ এর বহুবচন হচ্ছে ‘আহলুন’ অতীত কাল বুঝানোর জন্য ‘আহালা’ এবং বর্তমান ও ভবিষ্যৎ কালের জন্যে ‘ইয়াহেলুন’ বা ‘ইয়াহালু’ ব্যবহৃত হয়ে থাকে । আর ‘আহুলান’ হচ্ছে মূল ক্রিয়া সূচক শব্দ । ‘তায়াহহালা’ বা এত্তাহালার অর্থ হচ্ছে পরবিার গঠন করেন ।
و اهل الامر : ولایته وللبیت سکانه و للمذهب من یدیه به، و للرجل زوجته کأهلته. للنبی (ص) ازواجه و بناته و صهره علی (رضی الله عنه) او نسائه، و الرجال الذین هم و لکل نبی امنه........
অর্থাৎঃ-কোন কাজের জন্যে আহল বলতে তার কতৃত্ব আর ঘরের জন্যে ‘আহল’ বলতে গৃহবাসীদের বুঝায় । মাযহাবের জন্য ‘আহল’–এর অর্থ হচ্ছে মাযহাবের পরিচালক । একটা পুরুষের ‘আহল’ বলতে তার স্ত্রীকে বুঝানো হয় । নবী (সা.) এর জন্যে ‘আহল’ বলতে বুঝায় তার স্ত্রীবর্গ কন্যাগণ, তার জামাতা আলী (রাজীঃ) এবং ঘরের মহিলারা অতঃপর নবীদের আহল হচ্ছে তাদের উম্মত…………………।১
‘আহল’ শব্দটি পবিত্র আল কোরআনে ৫৪ বার ব্যবহার হয়েছে । প্রতিবারে ভিন্ন ভিন্ন অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে এ শব্দটিকে । ‘আহল’ শব্দের অর্থ কখনো শুধুমাত্র স্ত্রী ও সন্তান উভয়কেই বুঝানো হয়েছে আল-কোরআনে । কোথাও আবার আহল বলতে আত্মীয়-স্বজনকেও বুঝানো হয়েছে ।
দৃষ্টান্ত স্বরূপ আল-কোরআনে আল্লাহ বলেনঃ
فَلَمَّا قَضَىٰ مُوسَى الْأَجَلَ وَسَارَ بِأَهْلِهِ آنَسَ مِن جَانِبِ الطُّورِ نَارًا قَالَ لِأَهْلِهِ امْكُثُوا إِنِّي آنَسْتُ نَارًا لَّعَلِّي آتِيكُم مِّنْهَا بِخَبَرٍ أَوْ جَذْوَةٍ مِّنَ النَّارِ لَعَلَّكُمْ تَصْطَلُونَ
অর্থাৎঃ-অতঃপর যখন মূসা (আঃ) তার প্রতিশ্রুত কর্মের সময়সীমা অতিক্রম করেন তখন তিনি তার স্ত্রীকে নিয়ে স্বদেশ পানে যাত্রা করেন । পথিমধ্যে তুর পর্বতের সন্নিকটে আগুন দেখতে পেলেন। তিনি তার স্ত্রীকে বললেন, তোমরা অপেক্ষা কর, আমি আগুন দেখতে পাচ্ছি । সম্ভবতঃ আমি সেখান থেকে তোমাদের কাছে কোন সংবাদ নিয়ে আসতে পারি অথবা তোমাদের জন্য আগুনের ব্যবস্থা করতে পারি ।২
উক্ত আয়াতে আল্লাহ দু’বার ‘আহল’ শব্দ ব্যবহার করেছেন । এখানে ‘আহল’ শব্দের অর্থ স্ত্রী । উক্ত আয়াতে ‘আহল’ শব্দের উদ্দেশ্য হযরত মুসা (আ.) এর স্ত্রী অন্য কেউ নয় ।
আল-কোরআনে আল্লাহ বলেনঃ
إِنَّا مُنَجُّوكَ وَأَهْلَكَ إِلَّا امْرَأَتَكَ كَانَتْ مِنَ الْغَابِرِينَ
অর্থাৎঃ-“নিশ্চয় আমি তোমাকে (হযরত লুত আ.) এবং তোমার পরিবারকে নাজাত দিব, তোমার স্ত্রী ব্যতীত, কেননা সে অভিশপ্ত এবং পশ্চাদপদের শিকার ।৩
উক্ত আয়াতে আল্লাহ পাক ‘আহল’ বলতে স্ত্রী, পরিবার পরিজন, সন্তান-সন্তুতি সকলকে বুঝিয়েছেন । যদিও লুতের স্ত্রীকে আল্লাহ অভিশপ্ত বলে আখ্যায়িত করেছেন ।
আল্লাহ অন্যত্র হযরত লুত (আ.) সম্পর্কে বলেনঃ
وَنَادَىٰ نُوحٌ رَّبَّهُ فَقَالَ رَبِّ إِنَّ ابْنِي مِنْ أَهْلِي وَإِنَّ وَعْدَكَ الْحَقُّ وَأَنتَ أَحْكَمُ الْحَاكِمِينَ قَالَ يَا نُوحُ إِنَّهُ لَيْسَ مِنْ أَهْلِكَ ۖ إِنَّهُ عَمَلٌ غَيْرُ صَالِحٍ…..
অর্থাৎঃ-“নূহ (আঃ) তাঁর প্রতিপালকের কাছে প্রার্থনা করলো-হে আমার প্রতিপালক, আমার পুত্র তো আমার পরিবারের অন্তর্ভুক্ত; আর আপনার ওয়াদাও নিঃসন্দেহে সত্য আর আপনিই সর্বাপেক্ষা বিজ্ঞ ফয়সালাকারী । (আল্লাহ) বলেন, হে নূহ! নিশ্চয় সে (তোমার পুত্র) তোমার পরিবারভুক্ত নয়। নিশ্চই সে অসৎ!৪
এক্ষেত্রে ‘আহল’ অর্থ ঐ ব্যক্তির পদাংক অনুসরণকারী পরিবারের সদস্য । এ কারণে আল্লাহ হযরত নুহ (আ.) এর পুত্রকে তার আহল এর মধ্যে গন্য করেননি । কেননা সে অসৎ কাজে লিপ্ত ।
উপসংহারে বলা যায় ‘আহল’ শব্দের একক কোন অর্থ নেই । স্থান ভেদে এর অর্থ বিভিন্ন হতে পারে ।
আর ‘বাইত’ শব্দও কোরআন ও হাদীসের বহু স্থানে ব্যবহৃত হয়েছে । ‘বাইতের’ অর্থও বিভিন্ন ধরণের । কোথাও ‘বাইত’ অর্থ মসজিদুল হারাম আবার কোথাও মসজিদুন্নাবী ইত্যাদি বুঝানো হয়েছে ।
তবে আল-কোরআনের ‘বাইত’ শব্দ ‘আহল’ শব্দের সাথে সংযোগ করে ব্যবহৃত হয়েছে দু’বার ।
সূরা হুদে আল্লাহ বলেন,
رَحْمَتُ اللَّـهِ وَبَرَكَاتُهُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الْبَيْتِ
অর্থাৎঃ-আল্লাহর রহমত ও বরকত আহলে বাইতের উপর বর্ষিত ।৫
সূরা আহযাবে আল্লাহ আরো বলেন,
إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّـهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا
অর্থাৎঃ-আল্লাহ মনস্থ করলেন তোমাদেরকে সমস্ত প্রকার অপবিত্রতা থেকে দূরে রাখতে হে আহলে বাইত এবং মনস্থ করলেন তোমাদেরকে পুত-পবিত্র করতে ।৬
মহানবী (সা.) এর হাদীসেও ‘আহলে বাইত’ শব্দটি বহুল ব্যবহৃত হয়েছে । শিয়া-সুন্নি উভয় মাযহাবের বর্ণিত হাদীসগুলোতে প্রায় ৮০ পন্থায় ‘আহলে বাইত’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে । তার পরও মুসলমানদের মধ্যে আহলে বাইতের সংজ্ঞা ও অর্থ এবং সদস্যদের ব্যাপারে যথেষ্ট মতপার্থক্য ও অস্পষ্টতা বিদ্যমান । মুসলমানরা তাদের নিজ নিজ মাযহাবের পক্ষে আহলে বাইতের অর্থ করেই দায়িত্ব সমাপ্ত করে থাকেন । অনেকে বলে থাকেন, তাতহীরের আয়াতে উল্লেখিত আহলে বাইতের উদ্দেশ্য বনি হাশিমের লোকজন । আবার অনেকের মতে বনি হাশিমের মু’মিন সন্তানগণ অর্থাৎ আব্দুল মুত্তালিবের সন্তান ব্যতীত অন্য কেউ আহলে বাইতের মধ্যে গন্য নয় ।৭
আবার কেউ কেউ বলেন, আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিব ও তার সন্তানরা শুধুমাত্র আহলে বাইতের সদস্য ।৮
কোন এক মুসলিম সম্প্রদায় বলেন, রাসুলের (সা.) সম্মানিতা স্ত্রীগণ, হযরত আলী ইবনে আবি তালিব, হযরত ফাতিমা, হযরত হাসান ইবনে আলী ও হযরত হুসাইন ইবনে আলী আহলে বাইতের সদস্যবৃন্দ ।৯
অনেকে বলেন, নবীর স্ত্রীরা শুধুমাত্র আহলে বাইতের মধ্যে গন্য । কেননা আকরামাহ বিন আব্দুল্লাহ নাজদাহ আল হারুরী-যিনি আলীর সাথে শত্রুতার ক্ষেত্রে অন্যান্যদের অতিক্রম করেছে, সে ‘নবীর (সা.) স্ত্রীগণ শুধুমাত্র আহলে বাইতের সদস্য বলে প্রচার করত । সে আরো বিশ্বাস করত খারেজী দল বহির্ভূত সকল মুসলমান কাফের । হজ্বের সময় সে চিৎকার করে বলত, ‘যদি আমার হাতে শক্তি থাকতো তাহলে আমার ডানে বায়ে যত লোক আছে তাদের সকলকে হত্যা করতাম ।’ সে মসজিদুল হারামে দাড়িয়ে উচ্চস্বরে ধ্বনি দিত, ‘এখানে কাফের ব্যাতীত অন্য কেউ নেই ।’ তার আক্বিদা-বিশ্বাসের মধ্যে আরেকটি দিক হলো যে সে বিশ্বাস করত,
انما انزل الله متسابه القرآن لیضل به
অর্থাৎঃ আল্লাহ কোরআনের ‘মুতাশাবেহ’ আয়াতগুলো মানুষকে পথভ্রষ্ট করার জন্য অবতীর্ণ করেছেন ।
সে সমসাময়িক কালে মিথ্যাবাদী বলে খ্যাতি লাভ করেছিল । আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিব ও ইবনে মাসউদ বলেছেন, ‘আকরামার হাদীস জালকারী ও মিথ্যাবাদী বলে কুখ্যাতি আছে ।’ ইয়াহইয়া বিন সাঈদ আল আনসারী তার সম্পর্কে বলেছেন, সে একজন মিথ্যাবাদী ।১০
আকরামার ন্যায় আরো একজন ব্যক্তি নবীর (সা.) স্ত্রীগণকে শুধুমাত্র আহলে বাইতের মধ্যে শামিল করেছেন । তিনি হচ্ছেন মাক্বাতিল ইবনে সুলাইমান আল-বালখী আল আযুদী আল খোরাসানী । তিনি তৌহিদ ও রেসালাতের ব্যাপারে অনেক আপত্তিমূলক বক্তব্য পেশ করেছেন যা আহলে সুন্নাতের আক্বিদার সম্পূর্ণ পরিপন্থি ।১১
নিবেদক______ মোঃ জাহিদ হোসেন
মন্তব্যসমূহ