প্রকৃত সত্য উদঘাটনে আমাদের ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাহাদীসে কুদ্সীর মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি মহান আল্লাহ পাক তাঁর নিজ পরিচয় প্রকাশের নিমিত্তে সর্ব প্রথম‘ নূর-এ-মোহাম্মদ’ -কে সৃষ্টি করেছেন। অপর আরেকটি হাদীসে নবী (সা.) বলেছেন ,“ আল্লাহ সর্বপ্রথম আমার নূর সৃষ্টি করেছেন।” ৪১উল্লিখিত হাদীস দুটিতে যে বিষয়টি সুস্পষ্ট তা হচ্ছে মহান সৃষ্টিকর্তার অনন্ত বিশালতা সম্পর্কে অবগত হওয়া , সর্বজ্ঞানের নগরী নবী মোহম্মদ (সা.) ব্যতীত যেমন আর কারো পক্ষে সম্ভব নয়। তদ্রুপ মহানবী (সা.)-এর শান ও মান বোঝার যোগ্যতা এক আল্লাহ ব্যতীত মানুষ তো দূরের কথা অনেক নবী (সা.)-এর পক্ষেও সম্ভব নয়। তবে হ্যাঁ , আরেকটি হাদীসে নবী (সা.) বলেছেন ,“ হে আলী আমাকে কেউ চিনতে/বুঝতে পারেনি তুমি এবং আল্লাহ ব্যতীত। তোমাকে কেউ বুঝতে পারেনি আমি এবং আল্লাহ ব্যতীত। আর আল্লাহকে কেউ বুঝতে পারেনি আমি এবং তুমি ব্যতীত” ।৪২উল্লিখিত হাদীসটি জানার পর আমি একটু চিন্তিত হয়ে পড়ি। হযরত আলীর নবী (সা.)-এর সমজ্ঞান আছে কি ? অতঃপর যখন নিন্মোক্ত হাদীস দু’ টি জানতে পারলাম তখন আমার ঐ ভুল ধারণাটি দূর হলো।নবী (সা.) বলেছেন ,“ আমি এবং আলী একই নূরের দুটি টুকরো” ।“ আমি হচ্ছি জ্ঞানের শহর আর আলী হচ্ছে তার দরজা।” ৪৩আমি পূর্বেই ইঙ্গিত দিয়েছি প্রকৃত সত্য উদঘাটনে আমাদেরকে কোরআন হাদীস ও সেই সমসাময়িক ঐতিহাসিক ঘটনার আলোকে যাচাই বাছাই করতে হবে। এখন আমি একটি বহুল প্রচারিত হাদীসের বর্ণনা করছি। হযরত আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত :“ রাসূল (সা.) বলেছেন বনী ইস্রাইলীরা ৭২ ফেরকায় (দলে) বিভক্ত হয়েছিল। আর আমার উম্মত বিভক্ত হবে ৭৩ ফেরকায় তন্মধ্যে মাত্র একটি ফেরকা হবে নাজাতপ্রাপ্ত ও জান্নাতী। তাছাড়া সবগুলো ফেরকা হবে জাহান্নামী।” ৪৪উল্লিখিত হাদীসের আলোকে পাঠকের দৃষ্টি-আকর্ষণ করছি :· আমরা কি কখনও নিজেদের যাচাই করে দেখেছি , আমার অবস্থান বাহাত্তরে না একে ?· যাচাইয়ের পথতো সর্বদা উন্মুক্ত এখন শুধু আমাদের ইচ্ছা প্রকাশের প্রয়োজন। যেমন· আমরা কি কোরানের আদেশ-নিষেধ মেনে চলি ?· আমরা কি সে সকল হাদীস অনুসরণ করি যার সাথে কোরআনের সম্পৃক্ততা রয়েছে ?· আমরা কি হারাম হালাল বিবেচনা করি ?· আমরা কি সুদ-ঘুষ থেকে নিজেকে রক্ষা করি ?· আমরা কি অপরাধ দুর্নীতি থেকে দূরে থাকি ?· আমরা কি ক্ষমতার সদ্ব্যবহার করি ?· আমারা কি আইনের শাসন ও অপরাধী দমনে সক্রিয় ?· আমরা কি সত্য প্রকাশের ভূমিকা ও মিথ্যা প্রচারে বাধা দেয়ার চেষ্টা করি ?· আমরা কি সত্য ও মিথ্যা এক করে দিই ?· আমরা কি সত্যকে গোপন করি ?· আমরা কি অঙ্গীকার কিংবা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করি ?· আমরা কি ন্যায় বিচার ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ?· আমরা কি স্বজনপ্রীতি আর সুযোগসন্ধানী থেকে মুক্ত ?· আমরা কি নিজ ত্রুটি সংশোধন না করে অন্যের ত্রুটি প্রচার থেকে সরে আসতে পেরেছি ?· আমাদের কথা এবং কাজে মিল আছে কি ?· আমরা কি নিঃস্বার্থভাবে মানবতার কল্যাণে কিছু করতে পেরেছি ?· আমরা কি নিজেকে ছাড়া দেশ ও দশের কথা ভাবি কখনো ?এই সকল প্রশ্নের উত্তর মহান আল্লাহ পাক তাঁর নবী (সা.)-এর মাধ্যমে সেই ১৪শ বছর পূর্বেই পবিত্র কোরআনে প্রকাশ করেছেন। অথচ এর মর্মবাণী অধিকাংশ মানুষ উপলব্ধি করেননি। আর ভুলে গেছেন আল্লাহর মনোনীত মহান ইমামদের। যে কারণে আমাদের সমাজ দেশ তথা সারা বিশ্বে অশান্তি , নৈরাজ্য , দুর্নীতি , চাঁদাবাজি , সুদ-ঘুষের অবাধ প্রচলন , নিয়ন্ত্রণহীন দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি , শাসনের নামে শোষণের উপস্থিতি , ব্যবসার নামে প্রতারণা , আমানতের খেয়ানত ও জালিয়াতির নব নব কৌশল আবিষ্কার , মানবতার মূল্যবোধের অবক্ষয় , শিষ্টাচার হীনতা , বেলাল্লাপনার প্রচার ও প্রসার সহ নানাবিধ অনৈতিক অবক্ষয়ে আমরা জর্জরিত।যদি ধর্ম কিংবা নীতি বলতে আমাদের মধ্যে কিছু থেকে থাকে তবে কেন এত বিপর্যয় ? সত্যি কথা বলতে কি আমাদের মধ্যে ধর্মের শুধু নামটাই বিদ্যমান আছে। এর অন্ত:র্নিহীত কার্যক্রম অর্থাৎ সততা , ন্যায়-নিষ্ঠা , পাপ কর্মের ভয় ও খোদাভীরুতা বহু পূর্বেই আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়েছে। এর প্রমাণ মেলে আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপে। যেমন , দিনের শুরু থেকে রাতের আঁধারের আগমণ পর্যন্ত যদি শুধু এইটুকু সময় আমারা নিজেরা নিজেদের কর্মকাণ্ড খাতায় লিপিবদ্ধ করি , তবে দেখতে পাব আমি প্রতিদিন কত মিথ্যা কর্মে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। আর এদিক থেকে আমরা বরাবরই দুর্ভাগা। রমজানের আগমণের পূর্বেই আমাদের ব্যবসায়ীগণ দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি করে দেন তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী। যদিও পৃথিবীর অন্যান্য দেশ আমাদের অনুরূপ নয়। দুখঃজনক হলেও সত্য যে , আমাদের দেশে খাদ্যে ভেজাল মিশ্রণ যেন মামুলি ব্যপার। অথচ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে তা বিরল। গানে কিংবা কবিতায় আমরা নিজেদের যেভাবে তুলে ধরি বাস্তবে যদি তাই হোতো , তবে কতই না সুন্দর হোতো। বাস্তবতা এটাই। আমাদের এমন কোন সেক্টর নেই যেখানে অপরাধ-দুর্নীতির মতো কোনো না কোন জটিল সমস্যা নেই। আর সমস্যা তো মানুষেরই সৃষ্ট। কবে আমরা এমন সব সমস্যা হতে মুক্ত হবো তা কেবল আল্লাহ পাকই জানেন।পবিত্র কোরআনে নামাজের বিষয়ে বেশ কয়েকবার তাগিদ দেয়া হয়েছে। তাই আমাদের সকলেরই নামাজে মনোযোগী হওয়া একান্ত প্রয়োজন। তবে যে বিষয়টি লক্ষ্যণীয় তা হচ্ছে , যদি আমরা নামাজী হয়ে যাই তাহলে আমাদের উচিৎ এতিম , মিসকীনদের সাহায্য করা এবং লোক দেখানো নামাজ না পড়া। আর অবশ্যই মন্দ কথা কিংবা মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকা। কিন্তু বাস্তবতা হলো আমরা অনেকেই দু’ টাই সমান্তরালে করে যাচ্ছি। যার প্রমাণ পাওয়া যায় ঐসকল নামাজী যখন নামাজ শেষে হাট-বাজারে কিংবা তাদের কর্মস্থলে এসে নিত্য কর্মে যোগ দেন , তাদের তখনকার আচার-আচরণ থেকেই তা প্রকাশিত হয়। আর অনূরূপ নামাজীদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক পূর্ব থেকেই অবগত।তাই তিনি সূরা মাউনের ৪-৬ নং আয়াতে তাদের প্রতি ধিক্কার জানিয়েছেন এভাবে :) فَوَيْلٌ لِلْمُصَلِّينَ الَّذِينَ هُمْ عَنْ صَلَاتِهِمْ سَاهُونَ الَّذِينَ هُمْ يُرَاءُونَ(“ ধিক সেই সব নামাজীর প্রতি , যারা তাদের নামাজ সম্পর্কে বে-খবর। যা তারা লোক দেখানোর জন্য করে” ।তাই আমাদের সকলের নামাজ ও কর্ম সেরূপ হওয়া বাঞ্ছণীয় যেন আমরা হতে পারি আল্লাহর করুণা প্রত্যাশী , ধিক্কারের অধিকারী নয়।মুসলমানদের দায়িত্ব-কর্তব্য ও আদেশ-নিষেধ সম্পর্কে পবিত্র কোরানে আল্লাহ পাক যে সকল আয়াত নাজিল করেছেন তার কিছু অংশ পাঠকদের খেদমতে উপস্থাপন করছি :১) এটি সেই কিতাব যাতে কোনো সন্দেহ নেই। পরহেজগারদের জন্য রয়েছে পথ প্রদর্শন ; যারা অদৃশ্যে বিশ্বাস করে , নামাজ কায়েম করে এবং তাদেরকে যে রুযী দান করা হয়েছে তা থেকে ব্যয় করে এবং আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে ও আপনার পূর্বে যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে যারা বিশ্বাস করে ও পরকালে যারা নিশ্চিত বিশ্বাসী। তারাই নিজেরদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে সুপথ প্রাপ্ত , তাঁরাই সফলকাম। (সূরা-২: আয়াত- ৫)২) তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশিয়ে দিয়ো না এবং জেনে শুনে সত্যকে গোপন করো না। আর নামাজ কায়েম করো , যাকাত প্রদান করো এবং অবনত হও তাদের সাথে , যারা অবনত হয়। (২ : ৪২-৪৩)৩) সাহায্য প্রার্থনা করো ধৈর্যের সাথে নামাজের মাধ্যমে। অবশ্য তা যথেষ্ট কঠিন কিন্তু সেই সমস্ত বিনয়ী লোকগণ ব্যতীত , যারা এ কথা বিশ্বাস করে যে , তাদেরকে উপস্থিত হতে হবে স্বীয় পালনকর্তার সামনে এবং তাঁরই দিকে ফিরে যেতে হবে। (২ : ৪৫-৪৬)৪) তোমাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ হতে এসেছে এক নূর এবং সুস্পষ্ট কিতাব। (৫ : ১৫)৫) তোমাদের অভিভাবক হচ্ছেন , আল্লাহ ও তাঁর রাসূল এবং সেই সব ঈমানদার ব্যক্তি যারা নামাজ কায়েম করে ও যাকাত প্রদান করে রুকু অবস্থায়। (৫ : ৫৫)৬) হে রাসূল পৌঁছিয়ে দিন , আপনার রবের পক্ষ থেকে যা আপনাকে বলা হয়েছে। যদি আপনি তা না পৌঁছান , তবে আপনার রেসালাতের কাজ পরিপূর্ণ হলো না। আল্লাহ আপনাকে মানুষের ক্ষতি থেকে রক্ষা করবেন। নিশ্চই আল্লাহ কাফেরদেরকে হেদায়েত প্রদান করেন না। (৫ : ৬৭)৭) আজ আমি তোমাদের জন্য দ্বীনকে পরিপূর্ণ করলাম , আমার নিয়ামত দ্বারা এবং ইসলামকে দীন হিসেবে মনোনীত করলাম। (৫ : ৩)৮) নামাজের ধারে কাছেও যেয়ো না নেশাগ্রস্ত অবস্থায়। (৪ : ৪৩)৯) হে ঈমানদারগণ তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের সামনে অগ্রণী হয়ো না এবং আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব কিছু শুনেন ও জানেন। হে ঈমানদারগণ তোমরা নবী (সা.)-এর কণ্ঠস্বরের ওপর তোমাদের কণ্ঠস্বর উঁচু করো না এবং তোমরা একে অপরের সাথে যেরূপ আচরণ করো। তাঁর সাথে সেরূপ আচরণ করো না। এতে তোমাদের আমল নিষ্ফল হয়ে যাবে তোমরা টের পাবে না। (৪৯ : ১-২)১০) সৎ কাজে প্রতিযোগিতামূলক ভাবে এগিয়ে যাও। তোমরা যেখানেই থাকবে , অবশ্যই আল্লাহ তোমাদেরকে সমবেত করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমতাশীল। (২ : ১৪৮)১১) সুতরাং তোমরা আমাকে স্মরণ কর , আমিও তোমাদের স্মরণ করব এবং আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর , অকৃতজ্ঞ হয়ো না। হে মুমিনগণ , তোমরা ধৈর্যের সাথে নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন। আর যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয় , তাদেরকে তোমরা মৃত বলো না বরং তারা জীবিত , কিন্তু তোমরা তা বুঝ না। অবশ্যই আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করবো কিছুটা ভয় , ক্ষুধা , জান ও মালের ক্ষয়ক্ষতি ও ফল-ফসলের বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের। (২ : ১৫২-১৫৫)১২) হে ঈমানদারগণ তোমরা পবিত্র বস্তু সামগ্রী আহার করো। যেগুলি আমি তোমাদের রুজী হিসেবে দান করেছি এবং শূকরিয়া আদায় করো আল্লাহর , যদি তোমরা তারই বন্দেগি করো। তিনি তোমাদের ওপর হারাম করেছেন মৃত জীব , রক্ত , শুকরের মাংস এবং যেসব জীবজন্তু আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে উৎসর্গ করা হয়। অবশ্য যে লোক নিরুপায় হয়ে পড়ে এবং নাফরমান ও সীমালঙ্ঘনকারী নয় , তার জন্য কোন পাপ নেই। নিঃসন্দেহে আল্লাহ মহান ক্ষমাশীল , অত্যন্ত দয়ালু। (২ : ১৭২-১৭৩)১৩) সৎকর্ম শুধু এই নয় যে , পূর্ব কিংবা পশ্চিম দিকে মুখ করবে , বরং সৎকাজ হলো এই যে , ঈমান আনবে আল্লাহর ওপর , কেয়ামত দিবসের ওপর , ফেরেস্তাদের ওপর , সকল কিতাবের ওপর এবং সমস্ত নবী রাসূলগণের ওপর। আর সম্পদ ব্যয় করবে আল্লাহর মহব্বতে। সাহায্য করবে আত্মীয়-স্বজন , এতিম , মিসকীন , মুসাফির , ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী কৃতদাসদের। আর যারা নামাজ প্রতিষ্ঠা করে , যাকাত প্রদান করে ও স্বীয় প্রতিজ্ঞা সম্পাদন করে এবং অভাবে রোগে শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্যধারণকারী তারাই হলো সত্য আশ্রয়ী এবং তারাই পরহেজগার। (২ : ১৭৭)।১৪) হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর। যেন তোমরা পরহেজগারী অর্জন করতে পার। (২ : ১৮৩)১৫) আর পানাহার করো যতক্ষণ না রাতের কালো রেখা থেকে ভোরের শুভ্র পরিষ্কার দেখা যায়। অতঃপর রোজা পূর্ণ করো রাত পর্যন্ত। (২ : ১৮৭)১৬) আর লড়াই করো আল্লাহর ওয়াস্তে তাদের সাথে , যারা লড়াই করে তোমাদের সাথে। অবশ্য কারো প্রতি বাড়াবাড়ি করো না। নিশ্চই আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না। (২ : ১৯০)১৭) আর তোমরা তাদের সাথে লড়াই করো , যে পর্যন্ত না ফেতনার অবসান হয় এবং আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হয়। অতঃপর যদি তারা নিবৃত হয়ে যায় , তাহলে কারো প্রতি কোনো জবরদস্তি নেই। কিন্তু যারা জালেম তাদের বিষয় আলাদা। (২ : ১৯৩)১৮) আর ব্যয় করো আল্লাহর পথে , তবে নিজের জীবনকে ধ্বংসের সম্মুখীন করে নয়। আর মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করো। আল্লাহ অনুগ্রহকারীদের ভালবাসেন। (২ : ১৯৫)১৯) পার্থিব জীবন কাফেরদের জন্য সুশোভিত করে দেয়া হয়েছে। তারা ঈমানদারদের লক্ষ্য করে উপহাস করে। পক্ষান্তরে , যারা পরহেযগার তারা সেই কাফেরদের তুলনায় কেয়ামতের দিন অত্যন্ত উচ্চ মর্যাদায় অবস্থান করবে। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সীমাহীন রুজি দান করেন। (২ : ২১২)২০) তারা আপনার কাছে জিজ্ঞেস করে কি তারা ব্যয় করবে ? বলে দিন যা তোমরা ব্যয় করবে তা হবে পিতা-মাতার জন্য নিকট আত্মীয়ের জন্য , এতিম , অসহায়ের জন্য ও মুসাফিরদের জন্য। আর তোমরা যেকোনো সৎ কাজ করবে , নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা ভালভাবে অবগত আছেন। (২ : ২১৫)২১) যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান খয়রাত করো , তবে তা উত্তম। আর যদি গোপনে অভাবগ্রস্তদের দিয়ে দাও তবে তা তোমাদের জন্য আরো উত্তম। এতে আল্লাহ তোমাদের কিছু গুনাহ্ মাফ করে দিবেন। আল্লাহ তোমাদের কাজকর্মের বিষয়ে সম্যক অবগত। (২ : ২৭১)২২) যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম তালাশ করে , কস্মিনকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে হবে ক্ষতিগ্রস্ত। (৩ : ৮৫)২৩) তোমরা কস্মিনকালেও কল্যাণ লাভ করতে পারবে না , যদি তোমদের প্রিয় বস্তু থেকে তোমরা ব্যয় না করো। আর তোমরা যা কিছু ব্যয় করবে আল্লাহ তা জানেন। (৩ : ৯২)।২৪) হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে যেভাবে ভয় করা উচিত , ঠিক তেমনি ভাবে ভয় করো অবশ্যই তোমরা মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না। (৩ : ১০২)২৫) আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ় হস্তে ধারণ করো , পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। আর তোমরা সেই নেয়ামতের কথা স্মরণ করো , যা আল্লাহ তোমাদের দান করেছেন। তোমরা পরস্পরের শত্রু ছিলে অতঃপর আল্লাহ তোমাদের অন্তরে সম্প্রীতি দান করেছেন। ফলে এখন তোমরা তাঁর অনুগ্রহে পরস্পরে ভাই ভাই হয়েছ। তোমরা এক অগ্নিকু-ের পাড়ে অবস্থান করছিলে। অতঃপর তিনি তোমাদেরকে তা থেকে মুক্তি দিয়েছেন। এভাবেই আল্লাহ তাঁর নিদর্শনসমূহ প্রকাশ করেন , যাতে তোমরা হেদায়েত প্রাপ্ত হতে পার। (৩ : ১০৩)২৬) যদি আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করেন , তাহলে কেউ তোমাদের পরাস্ত করতে পারবে না। আর যদি তিনি তোমাদের সাহায্য না করেন , তবে এমন কে আছে যে তোমাদের সাহায্য করতে পারে ? আর আল্লাহর ওপরই মুসলমানদের ভরসা করা উচিত। (৩ : ১৬০)২৭) প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। কিয়ামতের দিন তোমরা তোমাদের কর্মের পরিপূর্ণ ফলপ্রাপ্ত হবে। অতঃপর যাকে দোযখের আগুন থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে , সে-ই হবে সফলকাম। আর পার্থিব জীবন ধোঁকা ব্যতীত অন্য কিছু নয়। (৩ : ১৮৫)২৮) নিঃসন্দেহে আল্লাহ ক্ষমা করেন না , তাঁর সাথে শরীক করার অপরাধ তিনি ক্ষমা করেন এছাড়া অন্যান্য অপরাধ , যার জন্য ইচ্ছা। আর যে লোক অংশীদার সাব্যস্ত করে আল্লাহর সাথে , সে তো এক মহাপাপে লিপ্ত হলো। (৪ : ৪৮)২৯) হে ঈমানদারগণ! তোমরা আনুগত্য করো আল্লাহর ও তাঁর রাসূলের এবং উলিল আমরগণের। অতঃপর যদি তোমরা কোনো বিষয়ে বিবাদে লিপ্ত হও , তাহলে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে প্রত্যাবর্তণ করো। যদি তোমরা আল্লাহ ও কেয়ামত দিবসের ওপর বিশ্বাসী হয়ে থাক। আর এটাই কল্যাণকর এবং পরিণতির দিক থেকে উত্তম। (৪ : ৫৯)৩০) যে আল্লাহর নির্দেশে মস্তক অবনত করে সৎ কাজে নিয়োজিত থাকে এবং ইব্রাহীমের ধর্ম অনুসরণ করে , যিনি ছিলেন একনিষ্ঠ। তাঁর চেয়ে উত্তম ধর্ম কার হতে পারে ? আল্লাহ ইব্রাহিমকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করেছেন। (৪ : ১২৫)৩১) হে ঈমানদারগণ! তোমরা কাফেরদেরকে বন্ধু বানিয়ো না , মুসলমানদের বাদ দিয়ে। তোমরা কি এমনটি করে নিজেদের ওপর আল্লাহর প্রকাশ্য দলিল কায়েম করবে ? (৪ : ১৪৪)৩২) হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় করো তাঁর নৈকট্য অন্বেষণ করো এবং তাঁর পথে জিহাদ করো , যাতে তোমরা সফলকাম হও। (৫ : ৩৫)৩৩) হে ঈমানদারগণ! তোমাদের জন্য নিষেধ করা হলো মদ , জুয়া , প্রতিমা ও ভাগ্য নির্ধারক তীরসমূহ এই সবকিছু শয়তানের অপবিত্র কাজ ব্যতিত অন্য কিছু নয়। অতএব এগুলি থেকে বেঁচে থাকো যাতে তোমরা কল্যাণ প্রাপ্ত হও। (৫ : ৯০)৩৪) পার্থিব জীবন ক্রীড়া ও কৌতুক ব্যতীত আর কিছুই নয়। পরকালের আভাস পরহেযগারদের জন্য শ্রেষ্ঠতর। তোমরা কি বোঝো না ? (৬ : ৩২)৩৫) তোমরা তাদের মন্দ বলো না , যাদের তারা আরাধনা করে আল্লাহ ব্যতীত। তাহলে তারা ধৃষ্টতা করে অজ্ঞতাবশত আল্লাহকে মন্দ বলবে। এমনিভাবে আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের দৃষ্টিতে তাদের কৃতকর্মকে সুশোভিত করে দিয়েছি। অতঃপর তাদেরকে স্বীয় পালনকর্তার নিকট প্রত্যাবর্তন করতে হবে। তখন তিনি তাদের বলে দেবেন যা কিছু তারা করত। (৬ : ১০৮)৩৬) তিনি তোমাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেছেন এবং একে অন্যের ওপর মর্যাদায় সমুন্নত করেছেন , যাতে তোমাদে এ বিষয়ে পরীক্ষা করেন যা কিছু তোমাদের দিয়েছেন। আপনার প্রতিপালক দ্রুত শাস্তিদাতাও বটে এবং তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল , দয়ালু। (৬ : ১৬৫)৩৭) তোমরা স্বীয় প্রতিপালককে ডাক , কাকুতি-মিনতি করে এবং সঙ্গোপনে। তিনি সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না। (৭ : ৫৫)৩৮) আর ক্ষমা করার অভ্যাস গড়ে তোলো , সৎ কাজের নির্দেশ দাও এবং মূর্খ্য জাহিলদের থেকে দূরে থাকো। (৭ : ১৯৯)৩৯) আর যখন কোরআন পাঠ করা হয় , তোমরা তা মনযোগ দিয়ে শোন এবং নীরব থাক , যাতে তোমাদের ওপর রহমত হয়। (৭ : ২০৪)৪০) হে ঈমাদারগণ! তোমরা স্বীয় পিতা ও ভাইদের অভিভাবক রূপে গ্রহণ করো না , যদি তারা ঈমানের চেয়ে কুফরীকে অধিক ভালবাসে। আর তোমরা যারা তাদের অভিভাবকরূপে গ্রহণ করবে , তারাই সীমালঙ্ঘনকারী। (৯ : ২৩)৪১) যে কেউ শুধু পার্থিব জীবন ও তার চাকচিক্য কামনা করে , আমি দুনিয়াতেই তাদের কর্মফল পূর্ণরূপে দান করি। যাতে তাদের কিছু মাত্র কমতি না হয়। এরাই হল সেই সব লোক যাদের আখেরাতের জন্য আগুন ছাড়া আর কিছু নেই। তারা যা কিছু উপার্জন করেছে সবই বরবাদ ও বিনষ্ট হয়ে গেছে। (১১ : ১৫-১৬)৪২) আল্লাহ ক্রয় করে নিয়েছেন মোমেনদের থেকে তাদের জান ও মাল এই মূল্যে যে , তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। তারা যুদ্ধ করে আল্লাহর রাহে , অতঃপর মরে ও মারে। তাওরাত ইঞ্জিল ও কোরআনে এ সত্য প্রতিশ্রুতি রয়েছে। আর আল্লাহর চেয়ে অধিক প্রতিশ্রুতি রক্ষাকারী কে হতে পারে ? সুতরাং আনন্দিত হও সে লেনদেনের ওপর , যা তোমরা করেছ তাঁর সাথে। আর এ হচ্ছে মহাসাফল্য। তারাই তওবাকারী , ইবাদতকারী , শোকরগুজারকারী , দুনিয়ার সাথে সম্পর্ক চ্ছেদকারী , রুকু ও সেজদা আদায়কারী , সৎ কাজে আদেশদানকারী ও মন্দ কাজে নিবৃতকারী এবং আল্লাহর দেয়া সীমাসমূহের হেফাজতকারী। বস্তুত সুসংবাদ দাও সেই সব মুমিনদের। (৯ : ১১১-১১২)৪৩) যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং যাদের অন্তর আল্লাহর যিকিরে শান্তি লাভ করে , জেনে রাখো , আল্লাহর যিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ প্রশান্তি লাভ করে। (১৩ : ২৮)৪৪) নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাদের গোপন ও প্রকাশ্য যাবতীয় বিষয়ে অবগত। নিশ্চয়ই তিনি অহংকারীদের পছন্দ করেন না। (১৬ : ২৩)৪৫) আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চই এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ। (১৭ : ৩২)৪৬) আপনি সব মানুষের চাইতে মুসলমানদের অধিক শত্রু ইহুদী ও মুশরিকদের পাবেন এবং মুসলমানদের সাথে বন্ধুত্বের অধিক নিকবর্তী তাদের পাবেন , যারা নিজেদের খ্রীষ্টান বলে। এর কারণ এই যে , খ্রীষ্টানদের মধ্যে আলেম ও দরবেশ রয়েছে যারা অহংকার করে না। (৫ : ৮২)৪৭) নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর ফেরেস্তাগণ নবী (সা.)-এর ওপর দরুদ পাঠ করেন। হে ঈমানদারগণ! তোমরাও নবী (সা.)-এর ওপর দরুদ পাঠ কর বিনয়ের সাথে। (৫ : ৫৬)৪৮) নামাজ কায়েম করুন সূর্য হেলে যাওয়ার পর থেকে রাত্রির অন্ধকার পর্যন্ত , আর ফজরে কোরআন পাঠ করুন। নিশ্চই ফজরে কোরাআন পাঠ মুখোমুখি হয়। (১৭ : ৭৮)৪৯) তদুপরি যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও , তবে আল্লাহ তোমাদের পরিবর্তে অন্য এক জাতিকে প্রতিষ্ঠিত করবেন। তারা তোমাদের মতো হবে না। (৪৭ : ৩৮)৫০) আপনি কেবল তাদের সতর্ক করুন , যারা তাদের পালন কর্তাকে না দেখে ভয় করে এবং নামাজ কায়েম করে। (৩৫ : ১৮)

প্রকৃত সত্য উদঘাটনে আমাদের ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা
হাদীসে কুদ্সীর মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি মহান আল্লাহ পাক তাঁর নিজ পরিচয় প্রকাশের নিমিত্তে সর্ব প্রথম‘ নূর-এ-মোহাম্মদ’ -কে সৃষ্টি করেছেন। অপর আরেকটি হাদীসে নবী (সা.) বলেছেন ,“ আল্লাহ সর্বপ্রথম আমার নূর সৃষ্টি করেছেন।” ৪১

উল্লিখিত হাদীস দুটিতে যে বিষয়টি সুস্পষ্ট তা হচ্ছে মহান সৃষ্টিকর্তার অনন্ত বিশালতা সম্পর্কে অবগত হওয়া , সর্বজ্ঞানের নগরী নবী মোহম্মদ (সা.) ব্যতীত যেমন আর কারো পক্ষে সম্ভব নয়। তদ্রুপ মহানবী (সা.)-এর শান ও মান বোঝার যোগ্যতা এক আল্লাহ ব্যতীত মানুষ তো দূরের কথা অনেক নবী (সা.)-এর পক্ষেও সম্ভব নয়। তবে হ্যাঁ , আরেকটি হাদীসে নবী (সা.) বলেছেন ,“ হে আলী আমাকে কেউ চিনতে/বুঝতে পারেনি তুমি এবং আল্লাহ ব্যতীত। তোমাকে কেউ বুঝতে পারেনি আমি এবং আল্লাহ ব্যতীত। আর আল্লাহকে কেউ বুঝতে পারেনি আমি এবং তুমি ব্যতীত” ।৪২

উল্লিখিত হাদীসটি জানার পর আমি একটু চিন্তিত হয়ে পড়ি। হযরত আলীর নবী (সা.)-এর সমজ্ঞান আছে কি ? অতঃপর যখন নিন্মোক্ত হাদীস দু’ টি জানতে পারলাম তখন আমার ঐ ভুল ধারণাটি দূর হলো।

নবী (সা.) বলেছেন ,“ আমি এবং আলী একই নূরের দুটি টুকরো” ।“ আমি হচ্ছি জ্ঞানের শহর আর আলী হচ্ছে তার দরজা।” ৪৩

আমি পূর্বেই ইঙ্গিত দিয়েছি প্রকৃত সত্য উদঘাটনে আমাদেরকে কোরআন হাদীস ও সেই সমসাময়িক ঐতিহাসিক ঘটনার আলোকে যাচাই বাছাই করতে হবে। এখন আমি একটি বহুল প্রচারিত হাদীসের বর্ণনা করছি। হযরত আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত :“ রাসূল (সা.) বলেছেন বনী ইস্রাইলীরা ৭২ ফেরকায় (দলে) বিভক্ত হয়েছিল। আর আমার উম্মত বিভক্ত হবে ৭৩ ফেরকায় তন্মধ্যে মাত্র একটি ফেরকা হবে নাজাতপ্রাপ্ত ও জান্নাতী। তাছাড়া সবগুলো ফেরকা হবে জাহান্নামী।” ৪৪

উল্লিখিত হাদীসের আলোকে পাঠকের দৃষ্টি-আকর্ষণ করছি :

· আমরা কি কখনও নিজেদের যাচাই করে দেখেছি , আমার অবস্থান বাহাত্তরে না একে ?

· যাচাইয়ের পথতো সর্বদা উন্মুক্ত এখন শুধু আমাদের ইচ্ছা প্রকাশের প্রয়োজন। যেমন

· আমরা কি কোরানের আদেশ-নিষেধ মেনে চলি ?

· আমরা কি সে সকল হাদীস অনুসরণ করি যার সাথে কোরআনের সম্পৃক্ততা রয়েছে ?

· আমরা কি হারাম হালাল বিবেচনা করি ?

· আমরা কি সুদ-ঘুষ থেকে নিজেকে রক্ষা করি ?

· আমরা কি অপরাধ দুর্নীতি থেকে দূরে থাকি ?

· আমরা কি ক্ষমতার সদ্ব্যবহার করি ?

· আমারা কি আইনের শাসন ও অপরাধী দমনে সক্রিয় ?

· আমরা কি সত্য প্রকাশের ভূমিকা ও মিথ্যা প্রচারে বাধা দেয়ার চেষ্টা করি ?

· আমরা কি সত্য ও মিথ্যা এক করে দিই ?

· আমরা কি সত্যকে গোপন করি ?

· আমরা কি অঙ্গীকার কিংবা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করি ?

· আমরা কি ন্যায় বিচার ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ?

· আমরা কি স্বজনপ্রীতি আর সুযোগসন্ধানী থেকে মুক্ত ?

· আমরা কি নিজ ত্রুটি সংশোধন না করে অন্যের ত্রুটি প্রচার থেকে সরে আসতে পেরেছি ?

· আমাদের কথা এবং কাজে মিল আছে কি ?

· আমরা কি নিঃস্বার্থভাবে মানবতার কল্যাণে কিছু করতে পেরেছি ?

· আমরা কি নিজেকে ছাড়া দেশ ও দশের কথা ভাবি কখনো ?

এই সকল প্রশ্নের উত্তর মহান আল্লাহ পাক তাঁর নবী (সা.)-এর মাধ্যমে সেই ১৪শ বছর পূর্বেই পবিত্র কোরআনে প্রকাশ করেছেন। অথচ এর মর্মবাণী অধিকাংশ মানুষ উপলব্ধি করেননি। আর ভুলে গেছেন আল্লাহর মনোনীত মহান ইমামদের। যে কারণে আমাদের সমাজ দেশ তথা সারা বিশ্বে অশান্তি , নৈরাজ্য , দুর্নীতি , চাঁদাবাজি , সুদ-ঘুষের অবাধ প্রচলন , নিয়ন্ত্রণহীন দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি , শাসনের নামে শোষণের উপস্থিতি , ব্যবসার নামে প্রতারণা , আমানতের খেয়ানত ও জালিয়াতির নব নব কৌশল আবিষ্কার , মানবতার মূল্যবোধের অবক্ষয় , শিষ্টাচার হীনতা , বেলাল্লাপনার প্রচার ও প্রসার সহ নানাবিধ অনৈতিক অবক্ষয়ে আমরা জর্জরিত।

যদি ধর্ম কিংবা নীতি বলতে আমাদের মধ্যে কিছু থেকে থাকে তবে কেন এত বিপর্যয় ? সত্যি কথা বলতে কি আমাদের মধ্যে ধর্মের শুধু নামটাই বিদ্যমান আছে। এর অন্ত:র্নিহীত কার্যক্রম অর্থাৎ সততা , ন্যায়-নিষ্ঠা , পাপ কর্মের ভয় ও খোদাভীরুতা বহু পূর্বেই আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়েছে। এর প্রমাণ মেলে আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপে। যেমন , দিনের শুরু থেকে রাতের আঁধারের আগমণ পর্যন্ত যদি শুধু এইটুকু সময় আমারা নিজেরা নিজেদের কর্মকাণ্ড খাতায় লিপিবদ্ধ করি , তবে দেখতে পাব আমি প্রতিদিন কত মিথ্যা কর্মে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। আর এদিক থেকে আমরা বরাবরই দুর্ভাগা। রমজানের আগমণের পূর্বেই আমাদের ব্যবসায়ীগণ দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি করে দেন তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী। যদিও পৃথিবীর অন্যান্য দেশ আমাদের অনুরূপ নয়। দুখঃজনক হলেও সত্য যে , আমাদের দেশে খাদ্যে ভেজাল মিশ্রণ যেন মামুলি ব্যপার। অথচ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে তা বিরল। গানে কিংবা কবিতায় আমরা নিজেদের যেভাবে তুলে ধরি বাস্তবে যদি তাই হোতো , তবে কতই না সুন্দর হোতো। বাস্তবতা এটাই। আমাদের এমন কোন সেক্টর নেই যেখানে অপরাধ-দুর্নীতির মতো কোনো না কোন জটিল সমস্যা নেই। আর সমস্যা তো মানুষেরই সৃষ্ট। কবে আমরা এমন সব সমস্যা হতে মুক্ত হবো তা কেবল আল্লাহ পাকই জানেন।

পবিত্র কোরআনে নামাজের বিষয়ে বেশ কয়েকবার তাগিদ দেয়া হয়েছে। তাই আমাদের সকলেরই নামাজে মনোযোগী হওয়া একান্ত প্রয়োজন। তবে যে বিষয়টি লক্ষ্যণীয় তা হচ্ছে , যদি আমরা নামাজী হয়ে যাই তাহলে আমাদের উচিৎ এতিম , মিসকীনদের সাহায্য করা এবং লোক দেখানো নামাজ না পড়া। আর অবশ্যই মন্দ কথা কিংবা মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকা। কিন্তু বাস্তবতা হলো আমরা অনেকেই দু’ টাই সমান্তরালে করে যাচ্ছি। যার প্রমাণ পাওয়া যায় ঐসকল নামাজী যখন নামাজ শেষে হাট-বাজারে কিংবা তাদের কর্মস্থলে এসে নিত্য কর্মে যোগ দেন , তাদের তখনকার আচার-আচরণ থেকেই তা প্রকাশিত হয়। আর অনূরূপ নামাজীদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক পূর্ব থেকেই অবগত।

তাই তিনি সূরা মাউনের ৪-৬ নং আয়াতে তাদের প্রতি ধিক্কার জানিয়েছেন এভাবে :

) فَوَيْلٌ لِلْمُصَلِّينَ الَّذِينَ هُمْ عَنْ صَلَاتِهِمْ سَاهُونَ الَّذِينَ هُمْ يُرَاءُونَ(

“ ধিক সেই সব নামাজীর প্রতি , যারা তাদের নামাজ সম্পর্কে বে-খবর। যা তারা লোক দেখানোর জন্য করে” ।

তাই আমাদের সকলের নামাজ ও কর্ম সেরূপ হওয়া বাঞ্ছণীয় যেন আমরা হতে পারি আল্লাহর করুণা প্রত্যাশী , ধিক্কারের অধিকারী নয়।

মুসলমানদের দায়িত্ব-কর্তব্য ও আদেশ-নিষেধ সম্পর্কে পবিত্র কোরানে আল্লাহ পাক যে সকল আয়াত নাজিল করেছেন তার কিছু অংশ পাঠকদের খেদমতে উপস্থাপন করছি :

১) এটি সেই কিতাব যাতে কোনো সন্দেহ নেই। পরহেজগারদের জন্য রয়েছে পথ প্রদর্শন ; যারা অদৃশ্যে বিশ্বাস করে , নামাজ কায়েম করে এবং তাদেরকে যে রুযী দান করা হয়েছে তা থেকে ব্যয় করে এবং আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে ও আপনার পূর্বে যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে যারা বিশ্বাস করে ও পরকালে যারা নিশ্চিত বিশ্বাসী। তারাই নিজেরদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে সুপথ প্রাপ্ত , তাঁরাই সফলকাম। (সূরা-২: আয়াত- ৫)

২) তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশিয়ে দিয়ো না এবং জেনে শুনে সত্যকে গোপন করো না। আর নামাজ কায়েম করো , যাকাত প্রদান করো এবং অবনত হও তাদের সাথে , যারা অবনত হয়। (২ : ৪২-৪৩)

৩) সাহায্য প্রার্থনা করো ধৈর্যের সাথে নামাজের মাধ্যমে। অবশ্য তা যথেষ্ট কঠিন কিন্তু সেই সমস্ত বিনয়ী লোকগণ ব্যতীত , যারা এ কথা বিশ্বাস করে যে , তাদেরকে উপস্থিত হতে হবে স্বীয় পালনকর্তার সামনে এবং তাঁরই দিকে ফিরে যেতে হবে। (২ : ৪৫-৪৬)

৪) তোমাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ হতে এসেছে এক নূর এবং সুস্পষ্ট কিতাব। (৫ : ১৫)

৫) তোমাদের অভিভাবক হচ্ছেন , আল্লাহ ও তাঁর রাসূল এবং সেই সব ঈমানদার ব্যক্তি যারা নামাজ কায়েম করে ও যাকাত প্রদান করে রুকু অবস্থায়। (৫ : ৫৫)

৬) হে রাসূল পৌঁছিয়ে দিন , আপনার রবের পক্ষ থেকে যা আপনাকে বলা হয়েছে। যদি আপনি তা না পৌঁছান , তবে আপনার রেসালাতের কাজ পরিপূর্ণ হলো না। আল্লাহ আপনাকে মানুষের ক্ষতি থেকে রক্ষা করবেন। নিশ্চই আল্লাহ কাফেরদেরকে হেদায়েত প্রদান করেন না। (৫ : ৬৭)

৭) আজ আমি তোমাদের জন্য দ্বীনকে পরিপূর্ণ করলাম , আমার নিয়ামত দ্বারা এবং ইসলামকে দীন হিসেবে মনোনীত করলাম। (৫ : ৩)

৮) নামাজের ধারে কাছেও যেয়ো না নেশাগ্রস্ত অবস্থায়। (৪ : ৪৩)

৯) হে ঈমানদারগণ তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের সামনে অগ্রণী হয়ো না এবং আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব কিছু শুনেন ও জানেন। হে ঈমানদারগণ তোমরা নবী (সা.)-এর কণ্ঠস্বরের ওপর তোমাদের কণ্ঠস্বর উঁচু করো না এবং তোমরা একে অপরের সাথে যেরূপ আচরণ করো। তাঁর সাথে সেরূপ আচরণ করো না। এতে তোমাদের আমল নিষ্ফল হয়ে যাবে তোমরা টের পাবে না। (৪৯ : ১-২)

১০) সৎ কাজে প্রতিযোগিতামূলক ভাবে এগিয়ে যাও। তোমরা যেখানেই থাকবে , অবশ্যই আল্লাহ তোমাদেরকে সমবেত করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমতাশীল। (২ : ১৪৮)

১১) সুতরাং তোমরা আমাকে স্মরণ কর , আমিও তোমাদের স্মরণ করব এবং আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর , অকৃতজ্ঞ হয়ো না। হে মুমিনগণ , তোমরা ধৈর্যের সাথে নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন। আর যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয় , তাদেরকে তোমরা মৃত বলো না বরং তারা জীবিত , কিন্তু তোমরা তা বুঝ না। অবশ্যই আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করবো কিছুটা ভয় , ক্ষুধা , জান ও মালের ক্ষয়ক্ষতি ও ফল-ফসলের বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের। (২ : ১৫২-১৫৫)

১২) হে ঈমানদারগণ তোমরা পবিত্র বস্তু সামগ্রী আহার করো। যেগুলি আমি তোমাদের রুজী হিসেবে দান করেছি এবং শূকরিয়া আদায় করো আল্লাহর , যদি তোমরা তারই বন্দেগি করো। তিনি তোমাদের ওপর হারাম করেছেন মৃত জীব , রক্ত , শুকরের মাংস এবং যেসব জীবজন্তু আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে উৎসর্গ করা হয়। অবশ্য যে লোক নিরুপায় হয়ে পড়ে এবং নাফরমান ও সীমালঙ্ঘনকারী নয় , তার জন্য কোন পাপ নেই। নিঃসন্দেহে আল্লাহ মহান ক্ষমাশীল , অত্যন্ত দয়ালু। (২ : ১৭২-১৭৩)

১৩) সৎকর্ম শুধু এই নয় যে , পূর্ব কিংবা পশ্চিম দিকে মুখ করবে , বরং সৎকাজ হলো এই যে , ঈমান আনবে আল্লাহর ওপর , কেয়ামত দিবসের ওপর , ফেরেস্তাদের ওপর , সকল কিতাবের ওপর এবং সমস্ত নবী রাসূলগণের ওপর। আর সম্পদ ব্যয় করবে আল্লাহর মহব্বতে। সাহায্য করবে আত্মীয়-স্বজন , এতিম , মিসকীন , মুসাফির , ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী কৃতদাসদের। আর যারা নামাজ প্রতিষ্ঠা করে , যাকাত প্রদান করে ও স্বীয় প্রতিজ্ঞা সম্পাদন করে এবং অভাবে রোগে শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্যধারণকারী তারাই হলো সত্য আশ্রয়ী এবং তারাই পরহেজগার। (২ : ১৭৭)।

১৪) হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর। যেন তোমরা পরহেজগারী অর্জন করতে পার। (২ : ১৮৩)

১৫) আর পানাহার করো যতক্ষণ না রাতের কালো রেখা থেকে ভোরের শুভ্র পরিষ্কার দেখা যায়। অতঃপর রোজা পূর্ণ করো রাত পর্যন্ত। (২ : ১৮৭)

১৬) আর লড়াই করো আল্লাহর ওয়াস্তে তাদের সাথে , যারা লড়াই করে তোমাদের সাথে। অবশ্য কারো প্রতি বাড়াবাড়ি করো না। নিশ্চই আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না। (২ : ১৯০)

১৭) আর তোমরা তাদের সাথে লড়াই করো , যে পর্যন্ত না ফেতনার অবসান হয় এবং আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হয়। অতঃপর যদি তারা নিবৃত হয়ে যায় , তাহলে কারো প্রতি কোনো জবরদস্তি নেই। কিন্তু যারা জালেম তাদের বিষয় আলাদা। (২ : ১৯৩)

১৮) আর ব্যয় করো আল্লাহর পথে , তবে নিজের জীবনকে ধ্বংসের সম্মুখীন করে নয়। আর মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করো। আল্লাহ অনুগ্রহকারীদের ভালবাসেন। (২ : ১৯৫)

১৯) পার্থিব জীবন কাফেরদের জন্য সুশোভিত করে দেয়া হয়েছে। তারা ঈমানদারদের লক্ষ্য করে উপহাস করে। পক্ষান্তরে , যারা পরহেযগার তারা সেই কাফেরদের তুলনায় কেয়ামতের দিন অত্যন্ত উচ্চ মর্যাদায় অবস্থান করবে। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সীমাহীন রুজি দান করেন। (২ : ২১২)

২০) তারা আপনার কাছে জিজ্ঞেস করে কি তারা ব্যয় করবে ? বলে দিন যা তোমরা ব্যয় করবে তা হবে পিতা-মাতার জন্য নিকট আত্মীয়ের জন্য , এতিম , অসহায়ের জন্য ও মুসাফিরদের জন্য। আর তোমরা যেকোনো সৎ কাজ করবে , নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা ভালভাবে অবগত আছেন। (২ : ২১৫)

২১) যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান খয়রাত করো , তবে তা উত্তম। আর যদি গোপনে অভাবগ্রস্তদের দিয়ে দাও তবে তা তোমাদের জন্য আরো উত্তম। এতে আল্লাহ তোমাদের কিছু গুনাহ্ মাফ করে দিবেন। আল্লাহ তোমাদের কাজকর্মের বিষয়ে সম্যক অবগত। (২ : ২৭১)

২২) যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম তালাশ করে , কস্মিনকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে হবে ক্ষতিগ্রস্ত। (৩ : ৮৫)

২৩) তোমরা কস্মিনকালেও কল্যাণ লাভ করতে পারবে না , যদি তোমদের প্রিয় বস্তু থেকে তোমরা ব্যয় না করো। আর তোমরা যা কিছু ব্যয় করবে আল্লাহ তা জানেন। (৩ : ৯২)।

২৪) হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে যেভাবে ভয় করা উচিত , ঠিক তেমনি ভাবে ভয় করো অবশ্যই তোমরা মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না। (৩ : ১০২)

২৫) আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ় হস্তে ধারণ করো , পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। আর তোমরা সেই নেয়ামতের কথা স্মরণ করো , যা আল্লাহ তোমাদের দান করেছেন। তোমরা পরস্পরের শত্রু ছিলে অতঃপর আল্লাহ তোমাদের অন্তরে সম্প্রীতি দান করেছেন। ফলে এখন তোমরা তাঁর অনুগ্রহে পরস্পরে ভাই ভাই হয়েছ। তোমরা এক অগ্নিকু-ের পাড়ে অবস্থান করছিলে। অতঃপর তিনি তোমাদেরকে তা থেকে মুক্তি দিয়েছেন। এভাবেই আল্লাহ তাঁর নিদর্শনসমূহ প্রকাশ করেন , যাতে তোমরা হেদায়েত প্রাপ্ত হতে পার। (৩ : ১০৩)

২৬) যদি আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করেন , তাহলে কেউ তোমাদের পরাস্ত করতে পারবে না। আর যদি তিনি তোমাদের সাহায্য না করেন , তবে এমন কে আছে যে তোমাদের সাহায্য করতে পারে ? আর আল্লাহর ওপরই মুসলমানদের ভরসা করা উচিত। (৩ : ১৬০)

২৭) প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। কিয়ামতের দিন তোমরা তোমাদের কর্মের পরিপূর্ণ ফলপ্রাপ্ত হবে। অতঃপর যাকে দোযখের আগুন থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে , সে-ই হবে সফলকাম। আর পার্থিব জীবন ধোঁকা ব্যতীত অন্য কিছু নয়। (৩ : ১৮৫)

২৮) নিঃসন্দেহে আল্লাহ ক্ষমা করেন না , তাঁর সাথে শরীক করার অপরাধ তিনি ক্ষমা করেন এছাড়া অন্যান্য অপরাধ , যার জন্য ইচ্ছা। আর যে লোক অংশীদার সাব্যস্ত করে আল্লাহর সাথে , সে তো এক মহাপাপে লিপ্ত হলো। (৪ : ৪৮)

২৯) হে ঈমানদারগণ! তোমরা আনুগত্য করো আল্লাহর ও তাঁর রাসূলের এবং উলিল আমরগণের। অতঃপর যদি তোমরা কোনো বিষয়ে বিবাদে লিপ্ত হও , তাহলে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে প্রত্যাবর্তণ করো। যদি তোমরা আল্লাহ ও কেয়ামত দিবসের ওপর বিশ্বাসী হয়ে থাক। আর এটাই কল্যাণকর এবং পরিণতির দিক থেকে উত্তম। (৪ : ৫৯)

৩০) যে আল্লাহর নির্দেশে মস্তক অবনত করে সৎ কাজে নিয়োজিত থাকে এবং ইব্রাহীমের ধর্ম অনুসরণ করে , যিনি ছিলেন একনিষ্ঠ। তাঁর চেয়ে উত্তম ধর্ম কার হতে পারে ? আল্লাহ ইব্রাহিমকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করেছেন। (৪ : ১২৫)

৩১) হে ঈমানদারগণ! তোমরা কাফেরদেরকে বন্ধু বানিয়ো না , মুসলমানদের বাদ দিয়ে। তোমরা কি এমনটি করে নিজেদের ওপর আল্লাহর প্রকাশ্য দলিল কায়েম করবে ? (৪ : ১৪৪)

৩২) হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় করো তাঁর নৈকট্য অন্বেষণ করো এবং তাঁর পথে জিহাদ করো , যাতে তোমরা সফলকাম হও। (৫ : ৩৫)

৩৩) হে ঈমানদারগণ! তোমাদের জন্য নিষেধ করা হলো মদ , জুয়া , প্রতিমা ও ভাগ্য নির্ধারক তীরসমূহ এই সবকিছু শয়তানের অপবিত্র কাজ ব্যতিত অন্য কিছু নয়। অতএব এগুলি থেকে বেঁচে থাকো যাতে তোমরা কল্যাণ প্রাপ্ত হও। (৫ : ৯০)

৩৪) পার্থিব জীবন ক্রীড়া ও কৌতুক ব্যতীত আর কিছুই নয়। পরকালের আভাস পরহেযগারদের জন্য শ্রেষ্ঠতর। তোমরা কি বোঝো না ? (৬ : ৩২)

৩৫) তোমরা তাদের মন্দ বলো না , যাদের তারা আরাধনা করে আল্লাহ ব্যতীত। তাহলে তারা ধৃষ্টতা করে অজ্ঞতাবশত আল্লাহকে মন্দ বলবে। এমনিভাবে আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের দৃষ্টিতে তাদের কৃতকর্মকে সুশোভিত করে দিয়েছি। অতঃপর তাদেরকে স্বীয় পালনকর্তার নিকট প্রত্যাবর্তন করতে হবে। তখন তিনি তাদের বলে দেবেন যা কিছু তারা করত। (৬ : ১০৮)

৩৬) তিনি তোমাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেছেন এবং একে অন্যের ওপর মর্যাদায় সমুন্নত করেছেন , যাতে তোমাদে এ বিষয়ে পরীক্ষা করেন যা কিছু তোমাদের দিয়েছেন। আপনার প্রতিপালক দ্রুত শাস্তিদাতাও বটে এবং তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল , দয়ালু। (৬ : ১৬৫)

৩৭) তোমরা স্বীয় প্রতিপালককে ডাক , কাকুতি-মিনতি করে এবং সঙ্গোপনে। তিনি সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না। (৭ : ৫৫)

৩৮) আর ক্ষমা করার অভ্যাস গড়ে তোলো , সৎ কাজের নির্দেশ দাও এবং মূর্খ্য জাহিলদের থেকে দূরে থাকো। (৭ : ১৯৯)

৩৯) আর যখন কোরআন পাঠ করা হয় , তোমরা তা মনযোগ দিয়ে শোন এবং নীরব থাক , যাতে তোমাদের ওপর রহমত হয়। (৭ : ২০৪)

৪০) হে ঈমাদারগণ! তোমরা স্বীয় পিতা ও ভাইদের অভিভাবক রূপে গ্রহণ করো না , যদি তারা ঈমানের চেয়ে কুফরীকে অধিক ভালবাসে। আর তোমরা যারা তাদের অভিভাবকরূপে গ্রহণ করবে , তারাই সীমালঙ্ঘনকারী। (৯ : ২৩)

৪১) যে কেউ শুধু পার্থিব জীবন ও তার চাকচিক্য কামনা করে , আমি দুনিয়াতেই তাদের কর্মফল পূর্ণরূপে দান করি। যাতে তাদের কিছু মাত্র কমতি না হয়। এরাই হল সেই সব লোক যাদের আখেরাতের জন্য আগুন ছাড়া আর কিছু নেই। তারা যা কিছু উপার্জন করেছে সবই বরবাদ ও বিনষ্ট হয়ে গেছে। (১১ : ১৫-১৬)

৪২) আল্লাহ ক্রয় করে নিয়েছেন মোমেনদের থেকে তাদের জান ও মাল এই মূল্যে যে , তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। তারা যুদ্ধ করে আল্লাহর রাহে , অতঃপর মরে ও মারে। তাওরাত ইঞ্জিল ও কোরআনে এ সত্য প্রতিশ্রুতি রয়েছে। আর আল্লাহর চেয়ে অধিক প্রতিশ্রুতি রক্ষাকারী কে হতে পারে ? সুতরাং আনন্দিত হও সে লেনদেনের ওপর , যা তোমরা করেছ তাঁর সাথে। আর এ হচ্ছে মহাসাফল্য। তারাই তওবাকারী , ইবাদতকারী , শোকরগুজারকারী , দুনিয়ার সাথে সম্পর্ক চ্ছেদকারী , রুকু ও সেজদা আদায়কারী , সৎ কাজে আদেশদানকারী ও মন্দ কাজে নিবৃতকারী এবং আল্লাহর দেয়া সীমাসমূহের হেফাজতকারী। বস্তুত সুসংবাদ দাও সেই সব মুমিনদের। (৯ : ১১১-১১২)

৪৩) যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং যাদের অন্তর আল্লাহর যিকিরে শান্তি লাভ করে , জেনে রাখো , আল্লাহর যিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ প্রশান্তি লাভ করে। (১৩ : ২৮)

৪৪) নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাদের গোপন ও প্রকাশ্য যাবতীয় বিষয়ে অবগত। নিশ্চয়ই তিনি অহংকারীদের পছন্দ করেন না। (১৬ : ২৩)

৪৫) আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চই এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ। (১৭ : ৩২)

৪৬) আপনি সব মানুষের চাইতে মুসলমানদের অধিক শত্রু ইহুদী ও মুশরিকদের পাবেন এবং মুসলমানদের সাথে বন্ধুত্বের অধিক নিকবর্তী তাদের পাবেন , যারা নিজেদের খ্রীষ্টান বলে। এর কারণ এই যে , খ্রীষ্টানদের মধ্যে আলেম ও দরবেশ রয়েছে যারা অহংকার করে না। (৫ : ৮২)

৪৭) নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর ফেরেস্তাগণ নবী (সা.)-এর ওপর দরুদ পাঠ করেন। হে ঈমানদারগণ! তোমরাও নবী (সা.)-এর ওপর দরুদ পাঠ কর বিনয়ের সাথে। (৫ : ৫৬)

৪৮) নামাজ কায়েম করুন সূর্য হেলে যাওয়ার পর থেকে রাত্রির অন্ধকার পর্যন্ত , আর ফজরে কোরআন পাঠ করুন। নিশ্চই ফজরে কোরাআন পাঠ মুখোমুখি হয়। (১৭ : ৭৮)

৪৯) তদুপরি যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও , তবে আল্লাহ তোমাদের পরিবর্তে অন্য এক জাতিকে প্রতিষ্ঠিত করবেন। তারা তোমাদের মতো হবে না। (৪৭ : ৩৮)

৫০) আপনি কেবল তাদের সতর্ক করুন , যারা তাদের পালন কর্তাকে না দেখে ভয় করে এবং নামাজ কায়েম করে। (৩৫ : ১৮)

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিমআল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদপবিত্র কুরআন ও রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম এর হাদিস থেকে আমিরুল মোমেনীন আলী ইবনে আবি তালিব আঃ এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ হাদিসমহানবী হযরত মুহাম্মদ ‎(সা.)-এর উত্তরাধিকারী,তাঁর নবুওয়াতের মিশনের প্রধান সাহায্যকারী এবং দুনিয়া ও আখেরাতে রাসূলের ভ্রাতা আলী ‎(আ.) ‏আবরাহার পবিত্র মক্কা আক্রমণের ৩৩ বছর পর ১৩ রজব পবিত্র কা’বা শরীফে জন্মগ্রহণ করেন। মহান আল্লাহর আদেশে তাঁর নাম রাখা হয় আলী।শিশুকাল থেকেই মহানবী ‎(সা.)-এর সাথে হযরত আলীর বিশেষ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ সম্পর্কে আলী ‎(আ.) ‏নিজেই বলেছেন ‎: ‘...তিনি আমাকে তাঁর কোলে রাখতেন যখন আমি শিশু ছিলাম। তিনি আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরতেন এবং তাঁর বিছানায় শুইয়ে রাখতেন। তাঁর পবিত্র দেহ আমার দেহকে স্পর্শ করত এবং তিনি আমাকে তাঁর শরীরের সুগন্ধির ঘ্রাণ নেওয়াতেন। তিনি খাদ্য-দ্রব্য চিবিয়ে আমার মুখে পুরে দিতেন।...’১হযরত আবু তালিবের সংসারের ব্যয়ভার কমানোর জন্য হযরত আলীর বালক বয়সেই মহানবী ‎(সা.) ‏তাঁকে নিজের কাছে নিয়ে আসেন। তখন থেকে তিনি রাসূলের সার্বক্ষণিক সঙ্গী হয়ে যান। রাসূল হেরা পর্বতের গুহায় আল্লাহর ইবাদাত করতে গেলেও তাঁকে সাথে নিয়ে যেতেন। হযরত আলী বলেন ‎: ‘তিনি ‎(মহানবী) ‏প্রতি বছর হেরাগুহায় একান্ত নির্জনে বাস করতেন। আমি তাঁকে দেখতাম। আমি ব্যতীত আর কোন লোকই তাঁকে দেখতে পেত না। ঐ সময় রাসূলুল্লাহ্ ও খাদীজাহ্ ব্যতীত কোন মুসলিম পরিবারই পৃথিবীর বুকে ছিল না। আমি ছিলাম তাঁদের পরিবারের তৃতীয় সদস্য। আমি ওহী ও রেসালতের আলো প্রত্যক্ষ করেছি এবং নবুওয়াতের সুবাস ও সুঘ্রাণ অনুভব করেছি।’২তিনি মহানবীর প্রতি নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁকে অনুসরণ করতেন। তিনি বলেন ‎: ‘উষ্ট্র শাবক যেমনভাবে উষ্ট্রীকে অনুসরণ করে ঠিক সেভাবে আমি তাঁকে অনুসরণ করতাম। তিনি প্রতিদিন তাঁর উন্নত চরিত্র থেকে একটি নিদর্শন আমাকে শিক্ষা দিতেন এবং আমাকে তা পালন করার নির্দেশ দিতেন।... ‏তাঁর ওপর যখন ওহী অবতীর্ণ হয়েছিল তখন আমি শয়তানের ক্রন্দন ধ্বনি শুনেছিলাম। তাই আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম ‎: ‏হে রাসূলুল্লাহ্! ‏এ ক্রন্দন ধ্বনি কার? ‏তখন তিনি আমাকে বলেছিলেন ‎: ‏এই শয়তান এখন থেকে তার পূজা ‎(ইবাদাত) ‏করা হবে না বলে হতাশ হয়ে গেছে। নিশ্চয় আমি যা শুনি তুমি তা শোন এবং আমি যা দেখি তা দেখ। তবে তুমি নবী নও,কিন্তু ‎[নবীর] ‏সহকারী এবং নিঃসন্দেহে তুমি মঙ্গল ও কল্যাণের ওপরই আছ।’৩আর তাই মহানবী ‎(সা.)-এর নবুওয়াতের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসার পর তিনিই সর্বপ্রথম তাঁর ওপর ঈমান আনেন এবং তিনিই তাঁর সাথে নামায আদায় করা প্রথম ব্যক্তি। ইমাম মালেক বর্ণনা করেছেন ‎: ‘মহানবী ‎(সা.) ‏সোমবারে নবুওয়াত প্রাপ্ত হন এবং আলী মঙ্গলবারে তাঁর ওপর ঈমান আনেন।’৪হযরত আলী নিজেই বলেন ‎: ‘আমি আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসূলের ভ্রাতা এবং তাঁর নবুওয়াতের সবচেয়ে বড় বিশ্বাসস্থাপনকারী। একমাত্র মিথ্যাবাদী ছাড়া আমার পর কেউ এ দাবি করবে না। অন্য লোকদের নামায পড়ারও ৭ বছর আগে থেকে আমি নামায পড়েছি।’৫হযরত আলী ‎(আ.)-এর প্রসিদ্ধ উপাধিরাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏হযরত আলীকে বিভিন্ন উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন। এর মধ্যে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ হচ্ছে সিদ্দিকে আকবার,ফারুকে আযম,আসাদুল্লাহ ও মুরতাজা।পবিত্র কুরআনে হযরত আলী ‎(আ.)-এর মর্যাদাহযরত আলীর শানে পবিত্র কুরআনের অনেক আয়াত নাযিল হয়েছে। ইবনে আসাকির হযরত ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা করেছেন যে,কোন ব্যক্তির গুণ বর্ণনায় এত অধিক কুরআনের বাণী অবতীর্ণ হয়নি যা হযরত আলী সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস আরও বলেছেন যে,হযরত আলীর শানে তিনশ’ ‏আয়াত নাযিল হয়েছে এবং তাঁর গুণাবলি অত্যধিক ও প্রসিদ্ধ।৬ পবিত্র কুরআনের নাযিলকৃত আয়াতগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নিম্নে উল্লেখ করা হল ‎:১. ‏সূরা বাকারার ২০৭ নং আয়াতوَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَشْرِي نَفْسَهُ ابْتِغَاءَ مَرْضَاتِ اللَّهِ وَاللَّهُ رَءُوفٌ بِالْعِبَادِ‘এবং মানুষের মধ্যে এমনও আছে,যে আল্লাহর সন্তোষ লাভের জন্য নিজের জীবন পর্যন্ত বিক্রয় করে দেয় এবং আল্লাহ ‎(এরূপ) ‏বান্দাদের প্রতি অতিশয় অনুগ্রহশীল।’সালাবী তাঁর তাফসীর গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন যে,রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏যখন মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করার প্রস্তুতি নিলেন সেই সময় হযরত আলীকে তাঁর বিছানায় শুয়ে থাকার নির্দেশ দেন যাতে কাফির-মুশরিকরা মনে করে যে,রাসূল তাঁর নিজ ঘরেই রয়েছেন। আলী ‎(আ.) ‏নির্দ্বিধায় এ নির্দেশ পালন করলে মহান আল্লাহ এ আয়াত নাযিল করেন।৭ ২. ‏সূরা আলে ইমরানের ৬১ নং আয়াতفَمَنْ حَاجَّكَ فِيهِ مِنْ بَعْدِ مَا جَاءَكَ مِنَ الْعِلْمِ فَقُلْ تَعَالَوْا نَدْعُ أَبْنَاءَنَا وَأَبْنَاءَكُمْ وَنِسَاءَنَا وَنِسَاءَكُمْ وَأَنْفُسَنَا وَأَنْفُسَكُمْ ثُمَّ نَبْتَهِلْ فَنَجْعَلْ لَعْنَتَ اللَّهِ عَلَى الْكَاذِبِينَ‘অতঃপর তোমার নিকট যখন জ্ঞান ‎(কুরআন) ‏এসে গেছে,এরপরও যদি কেউ ‎(খ্রিস্টান) ‏তোমার সাথে তার ‎(ঈসার) ‏সম্বন্ধে তর্ক-বিতর্ক করে,তবে বল,‘(ময়দানে) ‏এস,আমরা আহ্বান করি আমাদের পুত্রদের ও তোমাদের পুত্রদের,আমাদের নারীদের ও তোমাদের নারীদের এবং আমাদের সত্তাদের ও তোমাদের সত্তাদের;’ ‏অতঃপর সকলে মিলে ‎(আল্লাহর দরবারে) ‏নিবেদন করি এবং মিথ্যাবাদীদের ওপর আল্লাহর অভিসম্পাত বর্ষণ করি।’ঘটনাটি এরূপ ‎: ‏রাসূলুল্লাহ্ ‎(সা.)-এর নবুওয়াতের সত্যতা যাচাই করার জন্য নাজরানের একটি খ্রিস্টান প্রতিনিধিদল মদীনায় আসল। তাদের সাথে আলোচনা ফলপ্রসূ হলো না। রাসূল ‎(সা.) ‏হযরত ঈসা ‎(আ.) ‏সম্বন্ধে প্রতিনিধিদের বললেন যে,তিনি আল্লাহর পুত্র নন,বরং আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। রাসূলুল্লাহ্ হযরত ঈসার জন্মের ব্যাপারে হযরত আদমের উদাহরণও দিলেন। কিন্তু তারা কোন কথাই শুনল না। অবশেষে তিনি আল্লাহর আদেশে পরস্পরের বিরুদ্ধে দোয়া ও মিথ্যাবাদীদের ওপর অভিশাপ বর্ষণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন,যাকে ‎‘মুবাহিলা’ ‏বলে। স্থির করা হল যে,নির্দিষ্ট স্থানে নির্দিষ্ট সময়ে উভয়ে নিজ নিজ পুত্রদের,নারীদের ‎(কন্যা সন্তানদের) ‏এবং তাদের নিজেদের ‎‘সত্তা’ ‏বলে গণ্য হওয়ার যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে একত্র হবে এবং প্রত্যেকে অপরের প্রতি অভিসম্পাত ও আল্লাহর শাস্তি কামনা করবে। রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏ইমাম হুসাইনকে কোলে নিয়ে ইমাম হাসানের হাত ধরলেন এবং হযরত ফাতিমাকে নিজের পেছনে,আর হযরত আলীকে তাঁর পেছনে রাখলেন। অর্থাৎ ছেলেদের স্থানে তিনি নাতিদের,নারীদের স্থানে নিজ কন্যাকে এবং ‎‘সত্তা’ ‏বলে গণ্যদের স্থানে আলীকে নিলেন এবং দোয়া করলেন,‘হে আল্লাহ! ‏প্রত্যেক নবীর আহলে বাইত থাকে,এরা আমার আহলে বাইত। এদের সকল দোষ-ত্রুটি হতে মুক্ত ও পাক-পবিত্র রেখ।’ ‏তিনি এভাবে ময়দানে পৌঁছলে খ্রিস্টানদের নেতা আকব তা দেখে বলল,‘আল্লাহর কসম,আমি এমন নূরানী চেহারা দেখছি যে,যদি এ পাহাড়কে নিজ স্থান হতে সরে যেতে বলেন,তবে অবশ্যই সরে যাবে। সুতরাং মুবাহিলা হতে হাত গুটিয়ে নেওয়াই কল্যাণকর,অন্যথায় কিয়ামত অবধি খ্রিস্টানদের কেউ অবশিষ্ট থাকবে না।’ ‏পরিশেষে তারা জিযিরা কর দিতে সম্মত হল। এটা হযরত আলীর একটি উঁচু স্তরের ফযিলত যে,তিনি আল্লাহর আদেশে রাসূলের ‎‘নাফ্স’ (অনুরূপ সত্তা) ‏সাব্যস্ত হলেন এবং সমুদয় নবীর থেকে শ্রেষ্ঠ হলেন।৮৩. ‏সূরা নিসার ৫৯ নং আয়াত ‎يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ‘হে বিশ্বাসিগণ! ‏তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূল ও তোমাদের মধ্যে যারা নির্দেশের অধিকর্তা,তাদের আনুগত্য কর...।’ইমাম জাফর সাদিক ‎(আ.)- ‏কে জিজ্ঞেস করা হলো যে,উত্তরাধিকারীর আদেশ মান্য করা কি অবশ্যই কর্তব্য? ‏তিনি বললেন ‎: ‏হ্যাঁ,তাঁরা ঐসব ব্যক্তি যাঁদের আদেশ পালন করা এ আয়াতে ওয়াজিব করা হয়েছে...। এ আয়াত হযরত আলী বিন আবি তালিব,হযরত হাসান ও হযরত হুসাইন ‎(আ.)-এর শানে অবতীর্ণ হয়েছে।৯ ৪. ‏সূরা মায়েদার ৫৫ নং আয়াতإِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَالَّذِينَ آمَنُوا الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُمْ رَاكِعُونَ‘(হে বিশ্বাসিগণ!) ‏তোমাদের অভিভাবক তো কেবল আল্লাহ,তাঁর রাসূল এবং সেই বিশ্বাসীরা যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে এবং রুকু অবস্থায় যাকাত প্রদান করে।’শীয়া-সুন্নি উভয় মাযহাবের তফসীরকাররা একমত যে,আয়াতটি হযরত আলী ‎(আ.)-এর শানে নাযিল হয়েছে। যেমন ইবনে মারদুইয়া এবং খাতীব বাগদাদী ইবনে আব্বাস সূত্রে এবং তাবরানী ও ইবনে মারদুইয়া আম্মার ইবনে ইয়াসির ও আলী ইবনে আবি তালিব সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে,আয়াতটি আলী ইবনে আবি তালিব ‎(আ.) ‏সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে যখন তিনি রুকু অবস্থায় যাকাত দেন।ঘটনাটি এরূপ ‎: ‏একদিন হযরত আলী ‎(আ.) ‏মদীনার মসজিদে নামায পড়ছিলেন। এমন সময় একজন ভিক্ষুক এসে ভিক্ষা চাইল। কিন্তু কোন ভিক্ষা না পাওয়ায় সে ফরিয়াদ করল যে,রাসূলের মসজিদ থেকে সে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছে। এ সময় হযরত আলী রুকু অবস্থায় ছিলেন। তিনি সেই অবস্থায় তাঁর ডান হাতের আঙ্গুল থেকে আংটি খুলে নেওয়ার জন্য ভিক্ষুকের প্রতি ইশারা করেন। ভিক্ষুক তাঁর হাত থেকে আংটি খুলে নেয়। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে উপরিউক্ত আয়াত নাযিল হয়।১০৫. ‏সূরা মায়েদার ৬৭ নং আয়াতيَا أَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ مِنْ رَبِّكَ وَإِنْ لَمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ وَاللَّهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْكَافِرِينَ‘হে রাসূল! ‏যা ‎(যে আদেশ) ‏তোমার প্রতিপালকের পক্ষ হতে তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে তা পৌঁছে দাও,আর যদি তুমি তা না কর,তবে তুমি ‎(যেন) ‏তার কোন বার্তাই পৌঁছাওনি,এবং ‎(তুমি ভয় কর না) ‏আল্লাহ তোমাকে মানুষের অনিষ্ট হতে রক্ষা করবেন;এবং নিশ্চয় আল্লাহ অবিশ্বাসী সম্প্রদায়কে সঠিক পথে পরিচালিত করেন না।’যখন রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏দশম হিজরিতে বিদায় হজ্ব থেকে মদীনায় প্রত্যাবর্তন করছিলেন সে সময় আল্লাহ্ তা‘আলা এ আয়াত নাযিল করেন। ইবনে আবী হাতিম ও ইবনে আসাকির আবু সাঈদ খুদরী হতে বর্ণনা করেছেন যে,এ আয়াত গাদীরে খুম প্রান্তরে হযরত আলী ‎(আ.)-এর শানে নাযিল হয়েছে।বিদায় হজ্ব থেকে প্রত্যাবর্তন করার সময় গাদীরে খুম নামক স্থানে মহানবী ‎(সা.) ‏হযরত আলীকে তাঁর পরে সকল মুমিনের অভিভাবক বলে ঘোষণা দেন।১১এ ঘোষণা দেয়ার পর হযরত ওমর হযরত আলীর সাথে সাক্ষাৎ করে অভিনন্দন জানান এবং বলেন ‎: ‘হে আলী ইবনে আবি তালিব! ‏আপনি আজ হতে প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর মাওলা হয়ে গেলেন।’১২৬. ‏সূরা রাদের ৭ নং আয়াতإِنَّمَا أَنْتَ مُنْذِرٌ وَلِكُلِّ قَوْمٍ هَادٍ‘(হে রাসূল!) ‏তুমি তো কেবল সতর্ককারী এবং প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে এক পথ প্রদর্শক।’ইবনে মারদুইয়্যা,ইবনে জারীর,আবু নাঈম তাঁর ‎‘মারেফাত’ ‏গ্রন্থে,ইবনে আসাকির,দাইলামী ও ইবনে নাজ্জার তাঁদের স্ব স্ব গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন যে,আয়াতটি নাযিল হলে মহানবী ‎(সা.) ‏তাঁর হাত নিজের বুকে রেখে বললেন,‘আমিই সতর্ককারী।’ ‏অতঃপর আলীর কাঁধের প্রতি তাঁর হাত দ্বারা ইশারা করে বললেন,‘হে আলী! ‏তুমিই পথপ্রদর্শক এবং মানুষ আমার পর তোমার মাধ্যমে হেদায়াতপ্রাপ্ত হবে।’ ‏উক্ত রেওয়ায়েতটি শব্দের তারতম্যে ইবনে মারদুইয়্যা সাহাবী আবু বারযাহ আসলামী হতে,জীয়াফীল হযরত ইবনে আব্বাস হতে,ইবনে আহমাদ তাঁর মুসনাদে এবং ইবনে মারদুইয়্যা ও ইবনে আসাকির স্বয়ং হযরত আলী ‎(আ.) ‏হতে বর্ণনা করেছেন।১৩৭. ‏সূরা রাদের ৪৩ নং আয়াতوَيَقُولُ الَّذِينَ كَفَرُوا لَسْتَ مُرْسَلًا قُلْ كَفَى بِاللَّهِ شَهِيدًا بَيْنِي وَبَيْنَكُمْ وَمَنْ عِنْدَهُ عِلْمُ الْكِتَابِযারা অবিশ্বাস করেছে তারা বলে,‘তুমি আল্লাহর রাসূল নও।’ ‏তুমি বল,‘আমার ও তোমাদের মধ্যে ‎(রেসালাতের) ‏সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট এবং সেই ব্যক্তি যার কাছে গ্রন্থের পূর্ণ জ্ঞান রয়েছে।’অধিকাংশ তাফসীরকার স্বীকার করেছেন যে,আয়াতে বর্ণিত সেই ব্যক্তি হলেন হযরত আলী ‎(আ.)। যেমন আসমী ‎‘যায়নুল ফাতা’ ‏নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন এবং সা’লাবী আবদুল্লাহ ইবনে আতা থেকে বর্ণনা করেছেন যে,আবদুল্লাহ বিন সালাম বলতেন,‘যার কাছে গ্রন্থের পূর্ণ জ্ঞান আছে’-এর উদ্দিষ্ট হযরত আলী ‎(আ.)। এজন্যই হযরত আলী ‎(আ.) ‏বারবার বলতেন,‘আমার কাছে আমার মৃত্যুর পূর্বে যা চাও জিজ্ঞেস কর।’১৪৮. ‏সূরা নাহলের ৪৩ নং আয়াতوَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ إِلَّا رِجَالًا نُوحِي إِلَيْهِمْ فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَতোমার পূর্বেও আমরা কেবল পুরুষদেরই ‎(রাসূল করে) ‏প্রেরণ করেছি যাদের প্রতি আমরা প্রত্যাদেশ প্রেরণ করতাম;যদি তোমরা না জেনে থাক তবে যারা জানে তাদের জিজ্ঞেস কর।আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেন ‎: ‏জ্ঞানী ব্যক্তিরা অর্থাৎ আহলুয যিকর হলেন হযরত মুহাম্মাদ ‎(সা.),হযরত আলী ‎(আ.),হযরত ফাতেমা ‎(আ.),হযরত হাসান ও হুসাইন ‎(আ.)। যাবের ইবনে আবদুল্লাহ বলেছেন ‎: ‏যখন এই আয়াত নাযিল হল তখন হযরত আলী বললেন ‎: ‏আমরাই হলাম জ্ঞানের ভাণ্ডার।১৫৯. ‏সূরা আহযাবের ৩৩ নং আয়াতوَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى وَأَقِمْنَ الصَّلَاةَ وَآتِينَ الزَّكَاةَ وَأَطِعْنَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا‘হে নবী পরিবার! ‏আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদের সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে।’উম্মুল মুমিনীন হযরত উম্মে সালামার ঘরে এ আয়াত নাযিল হলে রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏হযরত ফাতিমা,ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন ‎(আ.)-কে ডাকেন এবং তাঁদেরকে একটি চাদরে ঢেকে নেন। হযরত আলী তাঁর পেছনে ছিলেন। তিনি তাঁকেও চাদরে ঢেকে নেন। অতঃপর বলেন ‎: ‘হে আল্লাহ্! ‏এরা আমার আহলে বাইত। অতএব,তুমি তাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করে দাও এবং তাদেরকে উত্তমরূপে পবিত্র কর।’ ‏তখন উম্মে সালামা বলেন ‎: ‘হে আল্লাহর রাসূল! ‏আমিও কি তাদের অন্তর্ভুক্ত?’ ‏তিনি বলেন ‎: ‘তুমি স্ব স্থানে আছ এবং তুমি কল্যাণের মধ্যেই আছ।’১৬হযরত উম্মে সালামা ছাড়াও হযরত আবু সাঈদ খুদরী ও আনাস ইবনে মালিক কর্তৃক এ হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে।১৭১০. ‏সূরা শূরার ২৩ নং আয়াতقُلْ لَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا إِلَّا الْمَوَدَّةَ فِي الْقُرْبَى‘বল,আমি এর বিনিময়ে তোমাদের নিকট থেকে আমার নিকটাত্মীয়দের প্রতি ভালবাসা ছাড়া আর কোন প্রতিদান চাই না।’রাসূলুল্লাহ ‎(সা.)-এর নিকটাত্মীয় আহলে বাইতের সদস্যদের প্রতি ভালবাসা পোষণকে এ আয়াত দ্বারা মহান আল্লাহ মুসলমানদের জন্য ফরয বলে ঘোষণা করেন।হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেছেন ‎: ‏যখন এ আয়াত নাযিল হল তখন সাহাবিগণ জিজ্ঞেস করলেন,হে রাসূলুল্লাহ! ‏আপনার নিকটাত্মীয়,যাদেরকে ভালবাসা আমাদের ওপর ওয়াজিব করা হয়েছে তারা কারা? ‏রাসূল ‎(সা.) ‏বললেন ‎: ‏আলী,ফাতেমা,হাসান ও হুসাইন।১৮রাসূলুল্লাহ ‎(সা.)-এর হাদীসে আলী ‎(আ.)হযরত আলীর মর্যাদা সম্পর্কে মহানবী ‎(সা.)-এর নিকট থেকে অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এখানে কয়েকটি উল্লেখ করা হল ‎:১. ‏সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস বলেন,নবী ‎(সা.) ‏তাবুক যুদ্ধের সময় আলীকে লক্ষ্য করে বলেছেন ‎: ‘তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে,মর্যাদার দিক থেকে মূসার নিকট হারুন যে পর্যায়ে ছিলেন,তুমিও আমার নিকট ঐ পর্যায়ে রয়েছ?’১৯২. ‏অন্য একটি হাদীসে এসেছে ‎: ‏রাসূল বলেন ‎: ‘তুমি তো আমার নিকট তদ্রূপ যেরূপ হারুনের স্থান মূসার নিকট। পার্থক্য এতটুকু যে,আমার পরে কোন নবী নেই।’২০৩. ‏রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏ইমাম হাসান ও হুসাইনের হাত ধরে বলেন ‎: ‘যে ব্যক্তি আমাকে ভালবাসে এবং এ দু’জন ও তাদের পিতা-মাতাকে ভালবাসে,সে কিয়ামতের দিন আমার সাথে একই মর্যাদায় অবস্থান করবে।’২১৪. ‏আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণিত। রাসূল বলেছেন ‎: ‘আলীর চেহারার দিকে তাকানোও ইবাদত।’২২৫. ‏রাসূলুল্লাহ্ ‎(সা.) ‏আলী ‎(আ.)-কে সম্বোধন করে বলেছিলেন ‎: ‘মুমিনরাই তোমাকে মহব্বত করবে এবং মুনাফিকরাই তোমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবে।’২৩৬. ‏তিরমিযী,নাসাঈ ও ইবনে মাযাহ হুবশী ইবনে জুনাদাহ্ ‎(রা.) ‏থেকে বর্ণনা করেছেন। রাসূল ‎(সা.) ‏বলেছেন ‎: ‘আলী আমা থেকে এবং আমি আলী থেকে। যে ব্যক্তি আলীকে ভালবেসেছে,সে আমাকে ভালোবেসেছে। আর যে ব্যক্তি আলীকে ভালবেসেছে,সে আল্লাহকে ভালবেসেছে। যে ব্যক্তি আলীর সাথে শত্রুতা পোষণ করেছে সে আমার সাথে শত্রুতা পোষণ করেছে। আর যে আমার শত্রু সে আল্লাহর শত্রু। যে ব্যক্তি আলীকে কষ্ট দিয়েছে,সে আমাকে কষ্ট দিয়েছে।’২৪৭. ‏রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏বলেন ‎: ‘(হে আলী!) ‏দুনিয়া ও আখেরাতে তুমি আমারই ভাই।’২৫৮. ‏আবদুল্লাহ ইবনে বুরাইদা ‎(র.) ‏থেকে তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন ‎: ‏রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏বলেছেন ‎: ‘চার ব্যক্তিকে ভালবাসতে আল্লাহ আমাকে আদেশ করেছেন এবং তিনি আমাকে এও অবহিত করেছেন যে,তিনিও তাদের ভালবাসেন। বলা হল ‎: ‏হে আল্লাহর রাসূল! ‏আমাদের তাদের নামগুলো বলুন। তিনি বলেন ‎: ‏আলীও তাদের অন্তর্ভুক্ত। এ কথা তিনি তিনবার বলেন। ‎(অবশিষ্ট তিনজন হলেন) ‏আবু যার,মিকদাদ ও সালমান।...’২৬৯. ‏জাবির ‎(রা.) ‏থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন ‎: ‏তায়েফ অভিযানের দিন রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏আলীকে কাছে ডেকে তার সাথে চুপিসারে আলাপ করেন। লোকেরা বলল ‎: ‏তিনি তাঁর চাচাত ভাইয়ের সাথে দীর্ঘক্ষণ চুপিসারে কথা বললেন। রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏বলেন ‎: ‏আমি তার সাথে চুপিসারে কথা বলিনি;বরং আল্লাহই তার সাথে চুপিসারে কথা বলেছেন। ‎(অর্থাৎ তার সাথে চুপিসারে কথা বলার জন্য আল্লাহ্ই আমাকে আদেশ করেছেন।)২৭হযরত আলী সম্পর্কে অন্যান্য সাহাবীহযরত আবু বকর প্রায়ই হয়রত আলীর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতেন। হযরত আয়েশা এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন ‎: ‘আমি রাসূলে করীমকে বলতে শুনেছি,আলীর মুখ দেখা ইবাদাতের শামিল।’২৮হযরত উমর বিন খাত্তাব বলতেন,হযরত আলী বিন আবি তালিবের তিনটি বৈশিষ্ট্য ছিল। যদি তার একটি আমার থাকত তাহলে আমি বলতাম যে,আমাকে লাল রঙের একটি উট দেয়া হলে তা অপেক্ষাও আমি তা পছন্দ করতাম। তাঁকে এ তিনটি বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন ‎: ‏১.তাঁর বিয়ে হয় রাসূল ‎(সা.)-এর কন্যার সাথে,২. ‏তাঁর সঙ্গে রাসূলে করীমের মসজিদে অবস্থান এবং যা রাসূলে করিমের জন্য বৈধ ছিল তার জন্যও তা বৈধ ছিল এবং ৩. ‏খায়বার যুদ্ধের পতাকা বহনের দায়িত্ব তাঁর ওপর ন্যস্ত ছিল।২৯হযরত উমর বলেছেন,হে আল্লাহ! ‏আমার ওপর এমন কোন বিপদ দিও না যখন আবুল হাসান ‎(আলী) ‏আমার নিকট উপস্থিত না থাকে। কারণ,তিনি আমার নিকট উপস্থিত থাকলে আমাকে সে বিপদ থেকে নিষ্কৃতি দেবেন।’৩০তাবরানী হযরত ইবনে আব্বাস থেকে রেওয়ায়াত করেছেন যে,হযরত আলীর আঠারটি বৈশিষ্ট্য এমন ছিল যা সমগ্র উম্মতের কারও ছিল না।’৩১তথ্যসূত্র১. ‏মমতাজ বেগম কর্তৃক প্রকাশিত নাহজ আল বালাঘা,২য় মুদ্রণ,আল খুতবাতুল কাসেয়াহ্,খুতবা নং ১৯১২. ‏প্রাগুক্ত৩. ‏প্রাগুক্ত৪. ‏মুসতাদরাকে হাকেম,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏১১২;এটি ইমাম মালেক কর্তৃক বর্ণিত। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে হেরা গুহায় জিবরাঈল ‎(আ.) ‏কর্তৃক রাসূলুল্লাহ ‎(সা.)-এর নবুওয়াত ঘোষণার পর পরই হযরত আলী ‎(আ.) ‏তাঁর ঈমান আনার বিষয়টি প্রকাশ করেন।৫. ‏সুনানে ইবনে মাজাহ্,১ম খণ্ড,পৃ. ‏৪৪৬. ‏নূর-এ-সাকালাইন কর্তৃক প্রকাশিত,সাইয়্যেদ আলী জাফরী প্রণীত আল মুরতাজা,পৃ. ‏৩০।৭. ‏এহইয়াউ উলুমিদ্দীন,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏২৩৮;নুরুল আবসার,পৃ. ‏৮৬,মুসতাদরাকে হাকেম,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏৪;তাফসীরে কুমী,১ম খণ্ড,পৃ. ‏৭১;তাযকিরাতু সিবতে ইবনে যাওযী,পৃ. ‏২১;ইয়ানাবিউল মাওয়াদ্দাহ,পৃ. ‏৯২।৮. ‏তাফসীরে জালালাইন,১ম খণ্ড,পৃ.৬০;বায়দ্বাভী,১ম খণ্ড,পৃ. ‏১১৮,তাফসীরে দুররুল মানসুর,২য় খণ্ড,পৃ. ‏৩৯,মিশর মুদ্রণ;মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বাল,১ম খণ্ড,পৃ. ‏১৮৫;৯. ‏মাজমাউল বায়ান,২য় খণ্ড,পৃ. ‏১৪১;তাফসীরে কুমী,১ম খণ্ড,পৃ. ‏১৪১;ইয়ানাবিউল মাওয়াদ্দাহ,পৃ. ‏২১;শাওয়াহেদুত তানযিল,১ম খণ্ড,পৃ. ‏১৪৮;তাফসীরে ফুরাত,পৃ.২৮১০. ‏তাফসীরে তাবারী,৬ষ্ঠ খণ্ড,পৃ. ‏১৬৫;তাফসীরে রাযী,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏৪৩১;মানাকেবে খাওয়ারেযমী,পৃ. ‏১৭৮;যাখায়েরুল উকবা,পৃ. ‏১০২;তাফসীরে ইবনে কাসীর,২য় খণ্ড,পৃ. ‏৭১;আল- ‏বেদায়া ওয়ান নেহায়া,৭ম খণ্ড,পৃ. ‏৩৫৭;সাওয়ায়েকে মুহরিকাহ,পৃ. ‏২৫;১১. ‏মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বাল,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ‏৩৭২;ইমাম নাসাঈ প্রণীত খাসায়েসে আমীরুল মুমিনীন,পৃ. ‏২১;মুসতাদরাকে হাকেম,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏১০৯;আল গাদীর,১ম খণ্ড,পৃ. ‏২১৪ ও ২২৯;শাওয়াহেদুত তানযিল,১ম খণ্ড,পৃ. ‏১৮৭ ।১২. ‏তাফসীরে তাবারী,৩য় খণ্ড,মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বল,৩য় খণ্ড,দারে কুতনী।১৩. ‏তাফসীরে দুররে মানসুর,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ‏৪৫ দ্রষ্টব্য।১৪. ‏তাফসীরে দুররে মানসুর,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ‏৬৯ ।১৫. ‏কেফাইয়াতুল মুওয়াহহিদীন,২য় খণ্ড,পৃ. ‏৬৫০;মাজমাউল বায়ান,২য় খণ্ড,পৃ. ‏৪১৩;কানযুল উম্মাল,৬ষ্ঠ খণ্ড,পৃ. ‏১৫৬;তাফসীরে তাবারী,১৪তম খণ্ড,পৃ. ‏১০৮ ।১৬. ‏বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত জামে আত-তিরমিযী,৬ষ্ঠ খণ্ড,হাদীস নং ৩৭২৫,পৃ. ‏৩৫৯ ।১৭. ‏মুসনাদে আহমাদ,১ম খণ্ড,পৃ. ‏৩৩১;যাখায়েরুল উকবা,পৃ. ‏২১,তাফসীরে তাবারী,২২তম খণ্ড,পৃ. ‏৮;মুসতাদরাকে হাকেম,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏২০৮;ফাজায়েলে খামসাহ,১ম খণ্ড,পৃ. ‏২২৪;শাওয়াহেদুত তানযিল,২য় খণ্ড,পৃ. ‏১০ ।১৮. ‏যাখায়েরুল উকবা,পৃ. ‏৯ ও ১২;তাফসীরে যামাখশারী,২য় খণ্ড,পৃ. ‏৩৩৯;সাওয়ায়েকে মুহরিকাহ,পৃ. ‏১০১,তাফসীরে দুররুল মানসূর,৬ষ্ঠ খণ্ড,পৃ. ‏৭;মুসনাদে আহমাদ,১ম খণ্ড,পৃ. ‏২২৯;আল গাদীর,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏১৭২;শাওয়াহেদুত তানযিল,২য় খণ্ড,পৃ. ‏৩০ ।১৯. ‏আধুনিক প্রকাশনী কর্তৃক প্রকাশিত সহীহ আল বুখারী,৩য় খণ্ড,হাদীস নং ৩৪৩১;বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত সহীহ মুসলিম,৭ম খণ্ড,হাদীস নং ৬০৪২ ।২০. ‏বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত সহীহ মুসলিম,৭ম খণ্ড,হাদীস নং ৬০৪০ ও জামে আত-তিরমিযী,৬ষ্ঠ খণ্ড,হাদীস নং ৩৬৬৮ ।২১. ‏বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত জামে আত-তিরমিযী,৬ষ্ঠ খণ্ড,হাদীস নং ৩৬৭০২২. ‏এমদাদীয়া লাইব্রেরী কর্তৃক প্রকাশিত হযরত আলী ইবনে আবি তালিব ‎(রা.),পৃ. ‏১৫ ।২৩. ‏বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত জামে আত-তিরমিযী,৬ষ্ঠ খণ্ড,হাদীস নং ৩৬৭৩ ।২৪. ‏এমদাদিয়া লাইব্রেরী কর্তৃক প্রকাশিত হযরত আলী ‎(রা.),পৃ. ‏১৫-১৬ ।২৫. ‏বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত জামে আত-তিরমিযী,৬ষ্ঠ খণ্ড,হাদীস নং ৩৬৫৮;২৬. ‏প্রাগুক্ত,হাদীস নং ৩৬৫৬;২৭. ‏প্রাগুক্ত,হাদীস নং ৩৬৬৪২৮. ‏সাওয়ায়েকে মুহরিকাহ,পৃ. ‏১৭৫ ।২৯. ‏সাওয়ায়েকে মুহরিকাহ,৩য় খণ্ড,এবং মুসতাদরাকে হাকেম,৩য় খণ্ড ।৩০. ‏মুনতাখাবে কানজুল উম্মাল,৩য় খণ্ড ।৩১. ‏সাওয়ায়েকে মুহরিকাহ ১১৩ ।(প্রত্যাশা,৩য় বর্ষ, ‏১ম সংখ্যাপ্রচারে মোঃ জাহিদ হুসাইন

শিশু ইমাম হযরত জাওয়াদ (আ.)'র জন্মবার্ষিকীসকল মোমিন মোমিনা কে জানাই ঈদ মোবারক🎂🎂🎂🎂🎂(((পর্ব ১)))🎂🎂🎂🎂🎂দশই রজব ইসলামের মহাখুশির দিন। এই দিনে পৃথিবীতে এসেছিলেন মাওলা মোহাম্মদ (সা) পবিত্র আহলে বাইতের সদস্য নবম ইমাম হযরত জাওয়াদ বা তাকি(আ)। নবীজীর আহলে বাইতের সদস্যরা কেবল মুসলমানদেরই ধর্মীয় নেতা নন বরং যারাই সত্য পথের সন্ধানী কিংবা কল্যাণকামী-তাদের সবারই নেতা।আহলে বাইতের এই মহান ইমাম হযরত জাওয়াদ (আ) এর জন্ম-বার্ষিকীতে আপনাদের সবার প্রতি রইলো অশেষ অভিনন্দন ও প্রাণঢালা মোবারকবাদ এবং মাওলা মোহাম্মদ (সা.) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের শানে পেশ করছি অসংখ্য দরুদ ও সালাম ।ইমাম জাওয়াদের জন্ম হয়েছিল ১৯৫ হিজরিতে তথা ৮১১ খ্রিস্টাব্দের ১২ এপ্রিল পবিত্র মদীনায়। মজলুম ও দরিদ্রদের প্রতি ব্যাপক দানশীলতা ও দয়ার জন্য তিনি 'জাওয়াদ' উপাধি পেয়েছিলেন। তাকি বা খোদাভীরু ছিল তাঁর আরেকটি উপাধি। জগত-বিখ্যাত মহাপুরুষ ইমাম রেজা (আ) ছিলেন তাঁর বাবা। আর তাঁর মায়ের নাম ‘সাবিকাহ’ বলে জানা যায়। ইমাম রেজা (আ) তাঁর এই স্ত্রীর নাম রেখেছিলেন খিইজরান। তিনি ছিলেন মহানবীর স্ত্রী উম্মুল মু’মিনিন হযরত মারিয়া কিবতির (আ) বংশধর। ইমাম জাওয়াদ (আ) ১৭ বছর ইমামতের দায়িত্ব পালনের পর মাত্র ২৫ বছর বয়সে শাহাদত বরণ করেন। তিনিই হলেন ইসলামের ইতিহাসের সবচেয়ে কম বয়স্ক ইমাম। আহলে বাইতের অন্য ইমামগণের মত ইমাম জাওয়াদ (আ.)ও ছিলেন উচ্চতর নৈতিক গুণ, জ্ঞান ও পরিপূর্ণতার অধিকারী। ইসলামের মূল শিক্ষা ও সংস্কৃতির পুনরুজ্জীবন এবং বিকাশ ছিল তাঁর তৎপরতার মূল লক্ষ্য বা কেন্দ্রবিন্দু। সেযুগের সব মাজহাবের জ্ঞানী-গুণীরা ইমাম জাওয়াদ (আ.)'র উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন।সমসাময়িক যুগের প্রখ্যাত সুন্নি চিন্তাবিদ কামালউদ্দিন শাফেয়ি ইমাম জাওয়াদ (আ.) সম্পর্কে বলেছেন, "মুহাম্মাদ বিন আলী তথা ইমাম জাওয়াদ (আ.) ছিলেন অত্যন্ত উঁচু মর্যাদা ও গুণের অধিকারী। মানুষের মুখে মুখে ফিরতো তাঁর প্রশংসা। তাঁর উদারতা, প্রশস্ত দৃষ্টি ও সুমিষ্ট কথা সবাইকে আকৃষ্ট করত। যে-ই তাঁর কাছে আসতো নিজের অজান্তেই এই মহামানবের অনুরাগী হয়ে পড়ত এবং তাঁর কাছ থেকে জ্ঞান অর্জন করত।" ইমাম জাওয়াদ (আ) মাত্র সাত বা আট বছর বয়সে ইমামতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এতো অল্প বয়সে তাঁর ইমামতিত্বের বিষয়টি ছিল যথেষ্ট বিস্ময়কর। ফলে অনেকেই এ বিষয়ে সন্দেহ করতেন। অথচ আল্লাহর তো এই শক্তি আছে যে তিনি মানুষকে তার বয়সের স্বল্পতা সত্ত্বেও পরিপূর্ণ বিবেক-বুদ্ধির পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেন। কোরানের আয়াতের ভিত্তিতে পূর্ববর্তী উম্মতের মধ্যেও এরকম উদাহরণ বহু আছে। যেমন শিশুকালে হযরত ইয়াহিয়া (আ) এর নবুয়্যত প্রাপ্তি, মায়ের কোলে নবজাতক ঈসা (আ) এর কথা বলা ইত্যাদি সর্বশক্তিমান আল্লাহর অশেষ ক্ষমতারই নিদর্শন। ইমাম জাওয়াদ (আ) শৈশব-কৈশোরেই ছিলেন জ্ঞানে-গুণে, ধৈর্য ও সহনশীলতায়, ইবাদত-বন্দেগিতে, সচেতনতায়, কথাবার্তায় শীর্ষস্থানীয় মহামানব। একবার হজ্জ্বের সময় বাগদাদ এবং অন্যান্য শহরের বিখ্যাত ফকীহদের মধ্য থেকে আশি জন মদীনায় ইমাম জাওয়াদ (আ) এর কাছে গিয়েছিলেন। তাঁরা ইমামকে বহু বিষয়ে জিজ্ঞেস করে অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত ও সন্তোষজনক জবাব পেলেন। ফলে জাওয়াদ (আ)’র ইমামতিত্বের ব্যাপারে তাদের মনে যেসব সন্দেহ ছিল-তা দূর হয়ে যায়।প্রচারে মোঃ জাহিদ হুসাইন আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম‌লা'নাতুল্লাহি আলাল কাজেবিন🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂