শাজারায় আবু তালিব আঃ শাজারায়ে মোহাম্মদ (সা.)‘ শাজারা’ একটি আরবি শব্দ এর অর্থ হচ্ছে গাছ। এই গাছের সহিত মানুষের বংশ বিস্তার কিংবা বংশীয় ধারার মিল রয়েছে। যেমন একটি মাত্র বীজ থেকে যদিও বট বৃক্ষের মতো একটি বিশাল গাছের সূচনা হয়ে থাকে , তবে যখন তা পূর্ণাঙ্গ আকার ধারণ করে তখন তা পরিবেশ সমাজ তথা মানুষের কল্যাণে বিশেষ ভূমিকা রাখে। আর এই গাছের মূল থেকে শুরু করে ডাল-পালা শাখা-প্রশাখা কাণ্ড ও পাতার বিস্তৃতি তার বিশালতার বার্তাই প্রকাশ করে। আবার এই গাছ থেকেই সৃষ্টি হয় অসংখ্য গাছের বীজ।অনুরূপ মানব জাতি এক আদম থেকেই সৃষ্টি যেমন সত্য। তেমনই এর রয়েছে নানা রূপ-বর্ণ-গোত্র , জাতিসত্ত্বা ও ভাষার বৈচিত্রতা। এতে ভিন্নতা রয়েছে কৃষ্টি-কালচার ও সামাজিকতায় , ভিন্নতা রয়েছে শাজারা কিংবা বংশীয় ধারাতেও। মহান আল্লাহপাক তাঁর রেসালাতের ধারাকে কেয়ামত পর্যন্ত অক্ষুণড়ব রাখার নিমিত্তে নবী রাসূল ও ইমামদের শাজারা অর্থাৎ বংশীয় ধারাকে সর্বতোভাবে পূতপবিত্র রেখেছেন এবং এটি আল্লাহর বিশেষ নূরের ধারা যা নবী আদম (আ.) থেকে ইমাম মাহদী (আ.) পর্যন্ত প্রবাহিত।কোন কোন নবী রাসূল ও ইমাম রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন। আবার কেউ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। আবার অনেকে প্রশাসনিক পদে না থাকলেও জাতির কাছে ছিলেন সম্মানের সর্বোচ্চ আসনে। যেমন আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) , নবী দাউদ (আ.) , নবী সোলায়মান (আ.) তাঁরা প্রত্যেকেই যাঁর যাঁর সময়ে রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন। নবী ইউসুফ (আ.) তাঁর সময়ে রাষ্ট্রের খাদ্য ভান্ডারের দায়িত্বে অর্থাৎ খাদ্য মন্ত্রী ছিলেন। আবার ইমাম আলী (আ.) ও ইমাম হাসান (আ.) উভয়েই রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন।যদি আমরা একটু ইতিহাসে ফিরে যাই তবে দেখতে পাব যে , মহান আল্লাহ পাক কাবার দায়িত্ব বরাবরই কোরাইশ বংশীয় হাশেমিদের হাতে ন্যস্ত রেখেছেন। যারা সমাজের সর্বোচ্চ সম্মানের আসনে অলংকৃত ছিলেন। অর্থাৎ নবী ইব্রাহীম (আ.)-এর পরবর্তিতে তাঁরই বংশীয় ধারায় কাবার কর্তৃত্ব হাশেমিদের হাতেই বিদ্যমান ছিল। আর এ ধারাতেই রয়েছে অসংখ্য নবী-রাসূল-ইমাম ও কাবার মোতাওয়াল্লি। তাঁদেরই বংশীয় পরিচয় কিংবা শাজরা নিম্নে তুলে ধরছি।আল্লাহর নূর প্রথমে নবী আদম (আ.)-এর ছুলবে/পেশানীতে অন্তঃরীত হয়। পরে তাঁর থেকে নিম্নে বর্ণিত ধারায় প্রবাহিত হয়ে হযরত ইমাম মাহ্দী (আ.) পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করে।৩১উল্লিখিত শাজারায় যে বিষয়টি লক্ষনীয় তা হচ্ছে আবু তালিবের পূর্ব পুরুষগণের মধ্যে অসংখ্য নবী-রাসূল রয়েছেন। আবার রয়েছেন কাবার মোতাওয়াল্লী , যা তিনি নিজেও ছিলেন। সম্মানিত পাঠকগণ যদি গভীর ভাবে লক্ষ্য করেন তাহলে অনুধাবন করা সহজতর হবে যে , হযরত আবু তালিবের ভাতিজা মোহাম্মদ (সা.) সকল নবী-রাসূলের সর্দার ও জান্নাতের মালিক। যাঁর লালন-পালনকারী ছিলেন আবু তালিব স্বয়ং। আবু তালিবের সন্তান হযরত আলী , যিনি প্রিয় নবী (সা.)-এর‘ ওয়াসী’ ছিলেন। যিনি‘ কুল্লে ঈমান’ ছিলেন , যিনি‘ জ্ঞান নগরীর দরজা’ ছিলেন। যিনি ছিলেন নবী (সা.)-এর উপযুক্ত‘ জানাশীন’ । তাঁর সম্পর্কে নবী (সা.)-এর অসংখ্য হাদীস রয়েছে। নবী (সা.) বলেছেন ,“ আলী হচ্ছে সৃষ্টি কূল সেরা” ।৩২ রাসূল (সা.) আরো বলেছেন ,“ আলী কোরআনের সাথে আর কোরআন আলীর সাথে” ।৩৩হযরত আলী ইমামতের প্রথম ইমাম ও তাঁর বংশে ১১ জন ইমামের আর্বিভাব হবে। শেষ ইমামের নাম হবে মোহাম্মদ আল মাহ্দী। তাঁর চেহারা নবী (সা.)-এর চেহারার সাদৃশ্য , দ্বীন ইসলাম তাঁরই মাধ্যমে অন্য সকল দ্বীনের র ওপর জয়লাভ করবে। পাঠকের জ্ঞাতার্থে আমি এখানে কয়েকটি বিষয় স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি , হযরত আবু তালিবের পুত্র হযরত আলী রাসূল (সা.)-এর দ্বীনকারী পুরুষদের মধ্যে সর্বপ্রথম এবং তিনিই নবীজীর প্রথম সাহাবী। হযরত আবু তালিবের পুত্রবধূ নবী (সা.)-এর কলিজার টুকরা মা ফাতেমা জাহরা সালামুল্লাহ আলাইহা , তিনি জান্নাতে নারীদের সর্দার ও জগতের শ্রেষ্ঠ মহিয়সী নারী। আবু তালিবের দুই নাতি ইমাম হাসান ও ইমাম হোসেন মালিকে দোজাহান রাসূলে পাক (সা.)-এরও নাতি , যাঁরা হচ্ছেন জান্নাতে যুবকদের সর্দার। এবার পাঠক বিবেচনা করে দেখুন হযরত আবু তালিবের মর্যাদা কিরূপ হতে পারে ?হযরত আবু তালিবের নামে বিভ্রান্তি প্রচারের কারণসমূহআইয়্যামে জাহেলিয়াতের সময় মহান আল্লাহ পাক তাঁর সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠ মাখলুক নবী মোহাম্মদ (সা.)-কে এই ধরণীর মাঝে প্রেরণ করেন। সমগ্র দুনিয়া স্বীকৃত যে , নবী-রাসূলগণের শাজারা বা বংশধারা নিশ্চিত ভাবে পূত-পবিত্র। যদিও বহু মানুষের মাঝে এ ধারণাটি বিদ্যমান যে , নবীজী আমাদের মতোই মানুষ ছিলেন(!) আসলে ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। কারণ আমাদের মাঝে রয়েছে ভুল-ভ্রান্তি সহ নানাবিধ অসংগতি ও ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ প্রবণতা। আর পবিত্র কোরআনের সূরা নাজমের ১ থেকে ৪ নং আয়াতে আল্লাহ পাক তাঁর নবী সম্পর্কে বর্ণনা দিচ্ছেন:) وَالنَّجْمِ إِذَا هَوَى مَا ضَلَّ صَاحِبُكُمْ وَمَا غَوَى وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوَى إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَى(“ নক্ষত্রের কছম যখন তা অস্ত যায় , তোমাদের সাথি ভুল করে না পথ ভ্রষ্ট হয় না এবং নিজের নফ্সের তাড়নায় কথা বলে না। তাঁর কাছে ওহী প্রত্যাদেশ হয়” ।অর্থাৎ যা কিছু বলেন ওহি থেকে বলেন। উল্লিখিত আয়াতটিতে সাহাবিদের উদ্দ্যেশ করে বলা হয়েছে , তোমাদের সাথি ভুল করে না। অর্থাৎ সাহাবিদের কিছু অংশ মনে করতেন নবী (সা.) তাদের মতোই সাধারণ মানুষ। তাই মহান রব্বুল আলামিন তাঁর নবী সম্পর্কে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন ঐ সকল সাহাবির ধারণা সঠিক নয়। তাহলে নবী (সা.) আমাদের মতো মানুষ হলেন কী করে ?তবে হ্যাঁ নবী (সা.) অবয়বে মানুষ সাদৃশ্য , কিন্তু তাঁর সৃষ্টির মাঝে রয়েছে আল্লাহর বিশেষ নূর। আর আমরা অনুরূপ নই। সুতরাং সকল নবী , রসূল ও ইমামদের সৃষ্টিতে রয়েছে আল্লাহর বিশেষ বৈশিষ্ট্য। আর মানুষের সৃষ্টিতে রয়েছে সাধারণ ও অসাধারণ বৈশিষ্ট্য। যেমন পবিত্র কোরানের সূরা ওয়াকেয়ার ৭ থেকে ১০ নং আয়াতে উল্লেখ রয়েছে :) وَكُنْتُمْ أَزْوَاجًا ثَلَاثَةً فَأَصْحَابُ الْمَيْمَنَةِ مَا أَصْحَابُ الْمَيْمَنَةِ وَأَصْحَابُ الْمَشْأَمَةِ مَا أَصْحَابُ الْمَشْأَمَةِ وَالسَّابِقُونَ السَّابِقُونَ(“ তোমরা তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়বে। যারা ডান দিকের তাঁরা কত ভাগ্যবান। আর যারা বাম দিকের তারা কতই না হতভাগা। আর অগ্রবর্তীগণ তো অগ্রবর্তীই , তাঁরাই নৈকট্যশীল” ।উল্লিখিত আয়াতে কিয়ামত পরবর্তি ঘটনা প্রবাহের বর্ণনা রয়েছে। আর এতেই প্রতীয়মান হয় যে , সাধারণ সৃষ্ট্য পর্যায়ের মানুষ কখনও অগ্রবর্তীগণের দলভূক্ত হতে পারবে না। তবে সাধারণ পর্যায়ের তারাই অসাধারণদের দলভূক্ত হতে পারবেন। যাঁদের রয়েছে ধৈর্য , ন্যায়-নিষ্ঠা , সৎকাজ ও ক্ষমা প্রবণতা। তাঁরাই হচ্ছেন ডানদিকস্থ । আর নবী-রাসূল-ইমামগণ হচ্ছেন অগ্রবর্তীগণ।তবে আমি যে ইমামগণের কথা বলছি তাঁরা কিন্তু মসজিদের ইমাম নন। তাঁরা হচ্ছেন আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত মানব জাতির নেতৃত্ব দানকারী দ্বীন ইসলামের ইমাম। যেমন নবী ইব্রাহীম (আ.) যখন আল্লাহর দেয়া কঠিন পরীক্ষায় ঊত্তীর্ণ হলেন তখন আল্লাহ পাক বললেন:) إِنِّي جَاعِلُكَ لِلنَّاسِ إِمَامًا(“ আমি তোমাকে মানব জাতির জন্য ইমাম মনোনীত করলাম” ৩৪উল্লিখিত আয়াতে এ বিষয়টি সুস্পষ্ট যে , যখন তিনি ইমাম মনোনীত হলেন , তার পূর্বে তিনি নবী ছিলেন। অর্থাৎ মহান আল্লাহর কাছে ইমামের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই নবী ইব্রাহীম (আ.) ছিলেন ইমামতের ইমামগণের মডেল। আর দায়িত্বপ্রাপ্ত ইমামগণ হচ্ছেন , ইমাম আলী থেকে ইমাম মাহ্দী (আ.) পর্যন্ত মোট বার জন ইমাম। আমাদের সকল মাজহাব তথা ধর্মের লোকেরা জানেন যে , শেষ জামানায় একজন ইমামের আবির্ভাব ঘটবে , তিনি হচ্ছেন ইমাম মাহ্দী (আ.)। তিনি অন্ধকারাছন্ন পৃথিবীতে আলোর উন্মেষ ঘটাবেন এবং পাপে নিমজ্জিত পৃথিবীকে পূর্ণতার আলোয়ে উদ্ভাসিত করবেন। আর তিনি ন্যায় ও শান্তির মানণ্ড স্থাপন করবেন।যে বিষয়টি বলার জন্যে আমাকে উল্লিখিত ঘটনাসমূহের অবতারণা করতে হলো। তা হচ্ছে , প্রথমত জাহেলী যুগ ও তৎপরবর্তী সময়ে মহানবী (সা.)-কে সেই সময়কালীন কাফের-মুশরিক ও নব্য মুসলমানগণ কোন প্রকার মেনে নিলেও পরবর্তী সময়ে যখন তিনি বিদায় হজ্ব শেষে‘ গাদীর-এ-খোম’ নামক স্থানে সোয়া লক্ষ হাজীদের মহাসমাবেশে তাঁর পরবর্তী কালে ইসলামের দিক নির্দেশনা ও ওয়াসীর ঘোষণা দিলেন এবং তিনি বললেন ,“ আমি তোমাদের মাঝে দুটি ভারি বস্তু রেখে যাচ্ছি একটি হচ্ছে আল্লাহর কিতাব অপরটি আমার ইতরাতে আহলে বাইত” ।৩৫এই বলে হযরত আলীর হাত উঁচিয়ে ধরলেন এবং তাৎক্ষনিক উচ্চারণ করলেন ,“ আল্লাহ আমার মাওলা , আমি মোমিনদের মাওলা , আমি যার যার মাওলা এই আলীও তাদের মাওলা।” ৩৬সেদিন অনেকেই এ বিষয়টিকে মেনে নিতে পারেননি। কারণ শাসন ক্ষমতা ও নবুয়্যত দুটোই এতদিন হাশেমিদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এখন আবার নবী পরবর্তী সময়ে তা চলে যাচ্ছে ইমাম আলী ও তাঁর সন্তানদের নিয়ন্ত্রণে। তাহলে তো পুরো বিষয়টি মোহাম্মদ ও তাঁর বংশীয় লোকদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে। সেদিন যাদের অন্তরে এ বিদ্বেষের দানা বেঁধেছিল , তারাই বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ছিল নবী (সা.)-এর ইন্তেকালের পর। এর সাক্ষ্য মিলে সেই সমকালীন ঐতিহাসিক ঘটনা প্রবাহ থেকে।আমি এখানে শুধু ইঙ্গিত দিয়ে যাচ্ছি। প্রিয় নবী (সা.)-এর দাফন সম্পন্ন হতে দেরি হয়েছিল ৩ দিন। সামান্য কিছু সাহাবী ব্যতীত অধিকাংশ সাহাবী ছিলেন অনুপস্থিত। নবী (সা.)-এর মক্কা বিজয়ের পর যারা মুসলমান ও সাহাবী হয়েছেন , তাদের এক বিরাট অংশ নবী পরবর্তী সময়ে নবী বংশের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হন। যেমন আবু সুফিয়ান মক্কা বিজয়ের পূর্বে কাফের থাকা অবস্থায় নবী (সা.)-এর বিরুদ্ধে ২৬টি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মক্কা বিজয়ের পর তিনি ও তার পুত্র মুয়াবিয়া ইসলাম গ্রহণ করেন। উভয়ে রাসূল (সা.)-এর সাহাবী হয়ে পরবর্তী সময়ে হযরত আলী ও ইমাম হাসানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও যুদ্ধে লিপ্ত হন। ইসলামের ইতিহাসে মুয়াবিয়া দু’ টি বৃহৎ যুদ্ধে হযরত আলীর বিরুদ্ধে ভূমিকা রাখেন। একটি জঙ্গে জামাল ও অপরটি জঙ্গে সিফ্ফীন। প্রথমটিতে মুয়াবিয়া সরাসরি জড়িত না থাকলেও পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। আর দ্বিতীয়টিতে হাজার হাজার লোকের প্রাণহানি , বর্শার মাথায় কোরআনের পাতা বিধ্য ও শালিশী প্রতারণার মাধ্যমে , নিশ্চিত পরাজয় ঠেকানোর নিমিত্তে হযরত আলীকে যুদ্ধ বন্ধে বাধ্য করেন।আমি ভেবে পাই না হযরত আলী ও মুয়াবিয়া উভয়ই যদি হকের ওপর থাকেন তাহলে যুদ্ধ কিংবা হাজার হাজার লোকের প্রাণহানি কেন ? পবিত্র কোরানের কোথাও হকের সাথে হকের যুদ্ধের কথা উল্লেখ নাই। অথচ আমাদের আলেম-ওলামা বলেন ,“ উভয়ই হকের ওপর ছিলেন” ।যদি হযরত আলী এবং মুয়াবিয়া উভয়ই হকের ওপর ছিলেন , তাহলে প্রশ্ন থেকেই যায় ? ঐ দুই যুদ্ধের প্রথমটিতে মৃত্যুবরণ করেন ২০ হাজার লোক ও পরেরটিতে মৃত্যুবরণ করেন ৭০ হাজার লোক। তাহলে এ সকল লোকের মৃত্যুর জন্য কে বা কারা দায়ী ? আর যদি কেউ দায়ী না হন , তবে কি তাদের মৃত্যু অযথা ? এমন অনৈতিক অসঙ্গগতিপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনা নিশ্চই কোন আকল জ্ঞানসম্পন্ন মানুষ মেনে নিতে অপারগ। আর তখনই যারা অন্তত বিবেকসম্পন্ন তাদের অন্তরে সাড়া দিবে ,“ ডালমে কুচ কালা হ্যায়।” বাস্তবেও তাই , অর্থাৎ এখানে প্রকৃত ইসলাম ও নামধারী ইসলাম এই দুটোকে কৌশলে এক করে দেয়া হয়েছে।নবী (সা.) থাকাকালীন ইসলামের শত্রু ছিল , নবী (সা.)-এর ইন্তেকালের পরেও ছিল , আজও আছে। তবে কিছুটা পার্থক্য চোখে পড়বে যেমন , নবী থাকাকালীন ইসলাম বিরোধী কাফের মুশরিকরা সরাসরি ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে পরাজিত হয়েছে। আর অনেকে ইসলামও গ্রহণ করেছে। কিন্তু নামধারী ইসলাম গ্রহণকারী মুনাফেকরা নবী থাকা অবস্থায় সরাসরি যুদ্ধে না জড়ালেও তাদের নানাবিধ অপকর্মের দরুন মহান সৃষ্টিকর্তা তাঁর নবীকে বিভিন্ন সময়ে সতর্ক করেছেন। যার সাক্ষ্য মেলে পবিত্র কোরানের সূরা মুনাফিকুনে। দুঃখজনক হলেও সত্য ইসলাম সর্বাপেক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই মুনাফিকদের দ্বারাই। যাদের দেখলে মনে হয় মুসলিম কিন্তু কর্মকাণ্ড কাফেরের চেয়েও নিকৃষ্ট।পাঠক পাঠিকাদের জ্ঞাতার্থে আমি ঐতিহাসিক কিছু ঘটনা তুলে ধরছি। যারা ইসলামের নামে অনৈসলামিক কার্যক্রম কায়েম করে অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছে খোদ নবী বংশের লোকদের ওপর। যেমন চতুর্থ খলিফা হযরত আলীর সময় ও পরবর্তী সময়ে হযরত ইমাম হাসান থেকে চুক্তির মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহণের পর আমীরে মুয়াবিয়া চুক্তির সকল শর্ত ভঙ্গ করেন। প্রসাশনে নিজ বংশীয় অযোগ্য লোকদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল করেন। পবিত্র জুম্মার দিনে নামাজের খোতবায় মসজিদে মসজিদে হযরত আলী ও তাঁর সন্তানদের ওপর গালমন্দ করার প্রথা চালু করেন। যাহা দীর্ঘ ৮৩ বছর পর ওমর বিন আব্দুল আজিজের শাসনামলে রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ করা হয়। আল্লাহর রাসূল কর্তৃক নির্ধারিত ফেতরা এক’ সার পরিবর্তে মুয়াবিয়ার শাসন আমলে তা আধা’ সা নির্ধারন করা হয়। ঘুষখোর , দুর্নীতিবাজ অপরাধীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলেও মুয়াবিয়া তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতেন না। মুয়াবিয়া তার পরবর্তী সময়ে নিজ পুত্র ইয়াজিদকে ক্ষমতায় বসানোর নিমিত্তে নামী দামি লোকজন ও গোত্র প্রধানদের স্বীকৃতি আদায়ে অর্থ বল ও ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। মুয়াবিয়া নিজের ব্যক্তিগত কাজে রাষ্ট্রীয় অর্থ সম্পদ ব্যয় করতেন। মুয়াবিয়া জাল হাদীসের প্রচলন , প্রসার ও বিস্তার ঘটান। মুয়াবিয়া নব্য মুসলমানদের ওপর জিজিয়া কর আরোপ করেন।এমন অসঙ্গতিপূর্ণ বেশ কিছু কার্যক্রম মুয়াবিয়া ও তদীয় পুত্র ইয়াজিদ কর্তৃক ইসলামের নামে প্রচার ও প্রসার লাভ করে। ঐসময়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে ইয়াজিদ নিজের নামের সঙ্গে‘ আমীরুল মুমিনীন’ টাইটেল ব্যবহার করে। যদি আমরা একটু পেছনে ফিরে যাই তবে সহজেই অনুমেয় যে , নবী (সা.)-এর বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত হন আবু সুফিয়ান। তার পুত্র মুয়াবিয়া সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত হন ইমাম আলী ও ইমাম হাসানের বিরুদ্ধে। মুয়াবিয়ার পুত্র ইয়াজিদ সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত হয় ইমাম হোসাইনের বিরুদ্ধে।এই দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয়েছিল , হাশেমি ও উমাইয়া গোত্রের মধ্যে। উমাইয়াদের বরাবরই বিদ্বেষ ছিল কেন তাদের মধ্যে নবী আসেননি ? তাদের মতে হাশেমিদের মধ্যে‘ নবুয়াত’ ও‘ খেলাফত’ দুটিই থাকা সমীচীন নয়। সুতরাং একটা অন্তত তাদের চাই। আর এই কারণেই যত শক্রতা , হানাহানি , জোর-জুলুম , খুন-খারাবী ও মিথ্যার প্রচার প্রচারণার ধারাবাহিকতা দৃশ্যমান।আরব জনগণ হাশেমিদের ওপর সন্তুষ্ট থাকার মূল কারণ ছিল , তাঁরা ছিলেন উদার , ন্যায়পরায়ণ ও খোদাভীরু । তাঁরা কখনো মানুষের ওপর জুলুম করেননি। আবার জালেমদের শাস্তি প্রদানেও তাঁরা পিছপা হননি। যে কারণে সাধারণ মানুষ হাশেমিদের পক্ষাবলম্বী ছিলেন সর্বযুগে। আর এটাও ছিল উমাইয়াদের বিদ্বেষের আরেকটি কারণ। কেন সকলে হাশেমিদের পক্ষাবলম্বী হবে ?স্বয়ং আল্লাহ কিংবা রাসূলও যদি হযরত আলী ও তাঁর সন্তানদের প্রশংসা করে তবে তা মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে , (নাউজুবিল্লাহ) হযরত আলীর মর্যাদা যদি আকাশচুম্বী হয়ে যায় , তবে তা ধূলিস্মাৎ করতে হলে তাঁর মুমিন পিতাকে কাফের বানাতে হবে। আর এর জন্য যা কিছু করা প্রয়োজন তার বিন্দুমাত্র কমতি হয়নি। জাল হাদীস তৈরি , মিথ্যা ইতিহাস রচনা , উমাইয়া আলেমে দ্বীন তৈরির কারখানা সৃষ্টিসহ নানাবিধ কার্যক্রমের কোনটাতেই মুয়াবিয়া পিছিয়ে ছিলেন না।৩৭মুয়াবিয়ার প্রশংসা করতে গিয়ে , মওলানা শিবলী নোমানী তার সিরাতুন নবী গ্রন্থে রাসুলের পরবর্তীতে বার জন খলিফার নাম উল্লেখ করতে গিয়ে ৫ ও ৬ নম্বরে মুয়াবিয়া ও ইয়াজিদকে অন্তর্ভূক্ত করে‘ রাজিআল্লাহু আনহু’ বলতেও দ্বিধাবোধ করেনি এসব হচ্ছে ইতিহাস বিতর্কিত সুস্পষ্ট নমুনানিবেদক_______ রাকিব আলী ইমামি

শাজারায় আবু তালিব আঃ
 শাজারায়ে মোহাম্মদ (সা.)
‘ শাজারা’ একটি আরবি শব্দ এর অর্থ হচ্ছে গাছ। এই গাছের সহিত মানুষের বংশ বিস্তার কিংবা বংশীয় ধারার মিল রয়েছে। যেমন একটি মাত্র বীজ থেকে যদিও বট বৃক্ষের মতো একটি বিশাল গাছের সূচনা হয়ে থাকে , তবে যখন তা পূর্ণাঙ্গ আকার ধারণ করে তখন তা পরিবেশ সমাজ তথা মানুষের কল্যাণে বিশেষ ভূমিকা রাখে। আর এই গাছের মূল থেকে শুরু করে ডাল-পালা শাখা-প্রশাখা কাণ্ড ও পাতার বিস্তৃতি তার বিশালতার বার্তাই প্রকাশ করে। আবার এই গাছ থেকেই সৃষ্টি হয় অসংখ্য গাছের বীজ।

অনুরূপ মানব জাতি এক আদম থেকেই সৃষ্টি যেমন সত্য। তেমনই এর রয়েছে নানা রূপ-বর্ণ-গোত্র , জাতিসত্ত্বা ও ভাষার বৈচিত্রতা। এতে ভিন্নতা রয়েছে কৃষ্টি-কালচার ও সামাজিকতায় , ভিন্নতা রয়েছে শাজারা কিংবা বংশীয় ধারাতেও। মহান আল্লাহপাক তাঁর রেসালাতের ধারাকে কেয়ামত পর্যন্ত অক্ষুণড়ব রাখার নিমিত্তে নবী রাসূল ও ইমামদের শাজারা অর্থাৎ বংশীয় ধারাকে সর্বতোভাবে পূতপবিত্র রেখেছেন এবং এটি আল্লাহর বিশেষ নূরের ধারা যা নবী আদম (আ.) থেকে ইমাম মাহদী (আ.) পর্যন্ত প্রবাহিত।

কোন কোন নবী রাসূল ও ইমাম রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন। আবার কেউ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। আবার অনেকে প্রশাসনিক পদে না থাকলেও জাতির কাছে ছিলেন সম্মানের সর্বোচ্চ আসনে। যেমন আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) , নবী দাউদ (আ.) , নবী সোলায়মান (আ.) তাঁরা প্রত্যেকেই যাঁর যাঁর সময়ে রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন। নবী ইউসুফ (আ.) তাঁর সময়ে রাষ্ট্রের খাদ্য ভান্ডারের দায়িত্বে অর্থাৎ খাদ্য মন্ত্রী ছিলেন। আবার ইমাম আলী (আ.) ও ইমাম হাসান (আ.) উভয়েই রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন।

যদি আমরা একটু ইতিহাসে ফিরে যাই তবে দেখতে পাব যে , মহান আল্লাহ পাক কাবার দায়িত্ব বরাবরই কোরাইশ বংশীয় হাশেমিদের হাতে ন্যস্ত রেখেছেন। যারা সমাজের সর্বোচ্চ সম্মানের আসনে অলংকৃত ছিলেন। অর্থাৎ নবী ইব্রাহীম (আ.)-এর পরবর্তিতে তাঁরই বংশীয় ধারায় কাবার কর্তৃত্ব হাশেমিদের হাতেই বিদ্যমান ছিল। আর এ ধারাতেই রয়েছে অসংখ্য নবী-রাসূল-ইমাম ও কাবার মোতাওয়াল্লি। তাঁদেরই বংশীয় পরিচয় কিংবা শাজরা নিম্নে তুলে ধরছি।

আল্লাহর নূর প্রথমে নবী আদম (আ.)-এর ছুলবে/পেশানীতে অন্তঃরীত হয়। পরে তাঁর থেকে নিম্নে বর্ণিত ধারায় প্রবাহিত হয়ে হযরত ইমাম মাহ্দী (আ.) পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করে।৩১

উল্লিখিত শাজারায় যে বিষয়টি লক্ষনীয় তা হচ্ছে আবু তালিবের পূর্ব পুরুষগণের মধ্যে অসংখ্য নবী-রাসূল রয়েছেন। আবার রয়েছেন কাবার মোতাওয়াল্লী , যা তিনি নিজেও ছিলেন। সম্মানিত পাঠকগণ যদি গভীর ভাবে লক্ষ্য করেন তাহলে অনুধাবন করা সহজতর হবে যে , হযরত আবু তালিবের ভাতিজা মোহাম্মদ (সা.) সকল নবী-রাসূলের সর্দার ও জান্নাতের মালিক। যাঁর লালন-পালনকারী ছিলেন আবু তালিব স্বয়ং। আবু তালিবের সন্তান হযরত আলী , যিনি প্রিয় নবী (সা.)-এর‘ ওয়াসী’ ছিলেন। যিনি‘ কুল্লে ঈমান’ ছিলেন , যিনি‘ জ্ঞান নগরীর দরজা’ ছিলেন। যিনি ছিলেন নবী (সা.)-এর উপযুক্ত‘ জানাশীন’ । তাঁর সম্পর্কে নবী (সা.)-এর অসংখ্য হাদীস রয়েছে। নবী (সা.) বলেছেন ,“ আলী হচ্ছে সৃষ্টি কূল সেরা” ।৩২ রাসূল (সা.) আরো বলেছেন ,“ আলী কোরআনের সাথে আর কোরআন আলীর সাথে” ।৩৩

হযরত আলী ইমামতের প্রথম ইমাম ও তাঁর বংশে ১১ জন ইমামের আর্বিভাব হবে। শেষ ইমামের নাম হবে মোহাম্মদ আল মাহ্দী। তাঁর চেহারা নবী (সা.)-এর চেহারার সাদৃশ্য , দ্বীন ইসলাম তাঁরই মাধ্যমে অন্য সকল দ্বীনের র ওপর জয়লাভ করবে। পাঠকের জ্ঞাতার্থে আমি এখানে কয়েকটি বিষয় স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি , হযরত আবু তালিবের পুত্র হযরত আলী রাসূল (সা.)-এর দ্বীনকারী পুরুষদের মধ্যে সর্বপ্রথম এবং তিনিই নবীজীর প্রথম সাহাবী। হযরত আবু তালিবের পুত্রবধূ নবী (সা.)-এর কলিজার টুকরা মা ফাতেমা জাহরা সালামুল্লাহ আলাইহা , তিনি জান্নাতে নারীদের সর্দার ও জগতের শ্রেষ্ঠ মহিয়সী নারী। আবু তালিবের দুই নাতি ইমাম হাসান ও ইমাম হোসেন মালিকে দোজাহান রাসূলে পাক (সা.)-এরও নাতি , যাঁরা হচ্ছেন জান্নাতে যুবকদের সর্দার। এবার পাঠক বিবেচনা করে দেখুন হযরত আবু তালিবের মর্যাদা কিরূপ হতে পারে ?

হযরত আবু তালিবের নামে বিভ্রান্তি প্রচারের কারণসমূহ

আইয়্যামে জাহেলিয়াতের সময় মহান আল্লাহ পাক তাঁর সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠ মাখলুক নবী মোহাম্মদ (সা.)-কে এই ধরণীর মাঝে প্রেরণ করেন। সমগ্র দুনিয়া স্বীকৃত যে , নবী-রাসূলগণের শাজারা বা বংশধারা নিশ্চিত ভাবে পূত-পবিত্র। যদিও বহু মানুষের মাঝে এ ধারণাটি বিদ্যমান যে , নবীজী আমাদের মতোই মানুষ ছিলেন(!) আসলে ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। কারণ আমাদের মাঝে রয়েছে ভুল-ভ্রান্তি সহ নানাবিধ অসংগতি ও ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ প্রবণতা। আর পবিত্র কোরআনের সূরা নাজমের ১ থেকে ৪ নং আয়াতে আল্লাহ পাক তাঁর নবী সম্পর্কে বর্ণনা দিচ্ছেন:

) وَالنَّجْمِ إِذَا هَوَى مَا ضَلَّ صَاحِبُكُمْ وَمَا غَوَى وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوَى إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَى(

“ নক্ষত্রের কছম যখন তা অস্ত যায় , তোমাদের সাথি ভুল করে না পথ ভ্রষ্ট হয় না এবং নিজের নফ্সের তাড়নায় কথা বলে না। তাঁর কাছে ওহী প্রত্যাদেশ হয়” ।

অর্থাৎ যা কিছু বলেন ওহি থেকে বলেন। উল্লিখিত আয়াতটিতে সাহাবিদের উদ্দ্যেশ করে বলা হয়েছে , তোমাদের সাথি ভুল করে না। অর্থাৎ সাহাবিদের কিছু অংশ মনে করতেন নবী (সা.) তাদের মতোই সাধারণ মানুষ। তাই মহান রব্বুল আলামিন তাঁর নবী সম্পর্কে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন ঐ সকল সাহাবির ধারণা সঠিক নয়। তাহলে নবী (সা.) আমাদের মতো মানুষ হলেন কী করে ?

তবে হ্যাঁ নবী (সা.) অবয়বে মানুষ সাদৃশ্য , কিন্তু তাঁর সৃষ্টির মাঝে রয়েছে আল্লাহর বিশেষ নূর। আর আমরা অনুরূপ নই। সুতরাং সকল নবী , রসূল ও ইমামদের সৃষ্টিতে রয়েছে আল্লাহর বিশেষ বৈশিষ্ট্য। আর মানুষের সৃষ্টিতে রয়েছে সাধারণ ও অসাধারণ বৈশিষ্ট্য। যেমন পবিত্র কোরানের সূরা ওয়াকেয়ার ৭ থেকে ১০ নং আয়াতে উল্লেখ রয়েছে :

) وَكُنْتُمْ أَزْوَاجًا ثَلَاثَةً فَأَصْحَابُ الْمَيْمَنَةِ مَا أَصْحَابُ الْمَيْمَنَةِ وَأَصْحَابُ الْمَشْأَمَةِ مَا أَصْحَابُ الْمَشْأَمَةِ وَالسَّابِقُونَ السَّابِقُونَ(

“ তোমরা তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়বে। যারা ডান দিকের তাঁরা কত ভাগ্যবান। আর যারা বাম দিকের তারা কতই না হতভাগা। আর অগ্রবর্তীগণ তো অগ্রবর্তীই , তাঁরাই নৈকট্যশীল” ।

উল্লিখিত আয়াতে কিয়ামত পরবর্তি ঘটনা প্রবাহের বর্ণনা রয়েছে। আর এতেই প্রতীয়মান হয় যে , সাধারণ সৃষ্ট্য পর্যায়ের মানুষ কখনও অগ্রবর্তীগণের দলভূক্ত হতে পারবে না। তবে সাধারণ পর্যায়ের তারাই অসাধারণদের দলভূক্ত হতে পারবেন। যাঁদের রয়েছে ধৈর্য , ন্যায়-নিষ্ঠা , সৎকাজ ও ক্ষমা প্রবণতা। তাঁরাই হচ্ছেন ডানদিকস্থ । আর নবী-রাসূল-ইমামগণ হচ্ছেন অগ্রবর্তীগণ।

তবে আমি যে ইমামগণের কথা বলছি তাঁরা কিন্তু মসজিদের ইমাম নন। তাঁরা হচ্ছেন আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত মানব জাতির নেতৃত্ব দানকারী দ্বীন ইসলামের ইমাম। যেমন নবী ইব্রাহীম (আ.) যখন আল্লাহর দেয়া কঠিন পরীক্ষায় ঊত্তীর্ণ হলেন তখন আল্লাহ পাক বললেন:

) إِنِّي جَاعِلُكَ لِلنَّاسِ إِمَامًا(

“ আমি তোমাকে মানব জাতির জন্য ইমাম মনোনীত করলাম” ৩৪

উল্লিখিত আয়াতে এ বিষয়টি সুস্পষ্ট যে , যখন তিনি ইমাম মনোনীত হলেন , তার পূর্বে তিনি নবী ছিলেন। অর্থাৎ মহান আল্লাহর কাছে ইমামের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই নবী ইব্রাহীম (আ.) ছিলেন ইমামতের ইমামগণের মডেল। আর দায়িত্বপ্রাপ্ত ইমামগণ হচ্ছেন , ইমাম আলী থেকে ইমাম মাহ্দী (আ.) পর্যন্ত মোট বার জন ইমাম। আমাদের সকল মাজহাব তথা ধর্মের লোকেরা জানেন যে , শেষ জামানায় একজন ইমামের আবির্ভাব ঘটবে , তিনি হচ্ছেন ইমাম মাহ্দী (আ.)। তিনি অন্ধকারাছন্ন পৃথিবীতে আলোর উন্মেষ ঘটাবেন এবং পাপে নিমজ্জিত পৃথিবীকে পূর্ণতার আলোয়ে উদ্ভাসিত করবেন। আর তিনি ন্যায় ও শান্তির মানণ্ড স্থাপন করবেন।

যে বিষয়টি বলার জন্যে আমাকে উল্লিখিত ঘটনাসমূহের অবতারণা করতে হলো। তা হচ্ছে , প্রথমত জাহেলী যুগ ও তৎপরবর্তী সময়ে মহানবী (সা.)-কে সেই সময়কালীন কাফের-মুশরিক ও নব্য মুসলমানগণ কোন প্রকার মেনে নিলেও পরবর্তী সময়ে যখন তিনি বিদায় হজ্ব শেষে‘ গাদীর-এ-খোম’ নামক স্থানে সোয়া লক্ষ হাজীদের মহাসমাবেশে তাঁর পরবর্তী কালে ইসলামের দিক নির্দেশনা ও ওয়াসীর ঘোষণা দিলেন এবং তিনি বললেন ,“ আমি তোমাদের মাঝে দুটি ভারি বস্তু রেখে যাচ্ছি একটি হচ্ছে আল্লাহর কিতাব অপরটি আমার ইতরাতে আহলে বাইত” ।৩৫

এই বলে হযরত আলীর হাত উঁচিয়ে ধরলেন এবং তাৎক্ষনিক উচ্চারণ করলেন ,“ আল্লাহ আমার মাওলা , আমি মোমিনদের মাওলা , আমি যার যার মাওলা এই আলীও তাদের মাওলা।” ৩৬

সেদিন অনেকেই এ বিষয়টিকে মেনে নিতে পারেননি। কারণ শাসন ক্ষমতা ও নবুয়্যত দুটোই এতদিন হাশেমিদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এখন আবার নবী পরবর্তী সময়ে তা চলে যাচ্ছে ইমাম আলী ও তাঁর সন্তানদের নিয়ন্ত্রণে। তাহলে তো পুরো বিষয়টি মোহাম্মদ ও তাঁর বংশীয় লোকদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে। সেদিন যাদের অন্তরে এ বিদ্বেষের দানা বেঁধেছিল , তারাই বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ছিল নবী (সা.)-এর ইন্তেকালের পর। এর সাক্ষ্য মিলে সেই সমকালীন ঐতিহাসিক ঘটনা প্রবাহ থেকে।

আমি এখানে শুধু ইঙ্গিত দিয়ে যাচ্ছি। প্রিয় নবী (সা.)-এর দাফন সম্পন্ন হতে দেরি হয়েছিল ৩ দিন। সামান্য কিছু সাহাবী ব্যতীত অধিকাংশ সাহাবী ছিলেন অনুপস্থিত। নবী (সা.)-এর মক্কা বিজয়ের পর যারা মুসলমান ও সাহাবী হয়েছেন , তাদের এক বিরাট অংশ নবী পরবর্তী সময়ে নবী বংশের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হন। যেমন আবু সুফিয়ান মক্কা বিজয়ের পূর্বে কাফের থাকা অবস্থায় নবী (সা.)-এর বিরুদ্ধে ২৬টি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মক্কা বিজয়ের পর তিনি ও তার পুত্র মুয়াবিয়া ইসলাম গ্রহণ করেন। উভয়ে রাসূল (সা.)-এর সাহাবী হয়ে পরবর্তী সময়ে হযরত আলী ও ইমাম হাসানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও যুদ্ধে লিপ্ত হন। ইসলামের ইতিহাসে মুয়াবিয়া দু’ টি বৃহৎ যুদ্ধে হযরত আলীর বিরুদ্ধে ভূমিকা রাখেন। একটি জঙ্গে জামাল ও অপরটি জঙ্গে সিফ্ফীন। প্রথমটিতে মুয়াবিয়া সরাসরি জড়িত না থাকলেও পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। আর দ্বিতীয়টিতে হাজার হাজার লোকের প্রাণহানি , বর্শার মাথায় কোরআনের পাতা বিধ্য ও শালিশী প্রতারণার মাধ্যমে , নিশ্চিত পরাজয় ঠেকানোর নিমিত্তে হযরত আলীকে যুদ্ধ বন্ধে বাধ্য করেন।

আমি ভেবে পাই না হযরত আলী ও মুয়াবিয়া উভয়ই যদি হকের ওপর থাকেন তাহলে যুদ্ধ কিংবা হাজার হাজার লোকের প্রাণহানি কেন ? পবিত্র কোরানের কোথাও হকের সাথে হকের যুদ্ধের কথা উল্লেখ নাই। অথচ আমাদের আলেম-ওলামা বলেন ,“ উভয়ই হকের ওপর ছিলেন” ।

যদি হযরত আলী এবং মুয়াবিয়া উভয়ই হকের ওপর ছিলেন , তাহলে প্রশ্ন থেকেই যায় ? ঐ দুই যুদ্ধের প্রথমটিতে মৃত্যুবরণ করেন ২০ হাজার লোক ও পরেরটিতে মৃত্যুবরণ করেন ৭০ হাজার লোক। তাহলে এ সকল লোকের মৃত্যুর জন্য কে বা কারা দায়ী ? আর যদি কেউ দায়ী না হন , তবে কি তাদের মৃত্যু অযথা ? এমন অনৈতিক অসঙ্গগতিপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনা নিশ্চই কোন আকল জ্ঞানসম্পন্ন মানুষ মেনে নিতে অপারগ। আর তখনই যারা অন্তত বিবেকসম্পন্ন তাদের অন্তরে সাড়া দিবে ,“ ডালমে কুচ কালা হ্যায়।” বাস্তবেও তাই , অর্থাৎ এখানে প্রকৃত ইসলাম ও নামধারী ইসলাম এই দুটোকে কৌশলে এক করে দেয়া হয়েছে।

নবী (সা.) থাকাকালীন ইসলামের শত্রু ছিল , নবী (সা.)-এর ইন্তেকালের পরেও ছিল , আজও আছে। তবে কিছুটা পার্থক্য চোখে পড়বে যেমন , নবী থাকাকালীন ইসলাম বিরোধী কাফের মুশরিকরা সরাসরি ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে পরাজিত হয়েছে। আর অনেকে ইসলামও গ্রহণ করেছে। কিন্তু নামধারী ইসলাম গ্রহণকারী মুনাফেকরা নবী থাকা অবস্থায় সরাসরি যুদ্ধে না জড়ালেও তাদের নানাবিধ অপকর্মের দরুন মহান সৃষ্টিকর্তা তাঁর নবীকে বিভিন্ন সময়ে সতর্ক করেছেন। যার সাক্ষ্য মেলে পবিত্র কোরানের সূরা মুনাফিকুনে। দুঃখজনক হলেও সত্য ইসলাম সর্বাপেক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই মুনাফিকদের দ্বারাই। যাদের দেখলে মনে হয় মুসলিম কিন্তু কর্মকাণ্ড কাফেরের চেয়েও নিকৃষ্ট।

পাঠক পাঠিকাদের জ্ঞাতার্থে আমি ঐতিহাসিক কিছু ঘটনা তুলে ধরছি। যারা ইসলামের নামে অনৈসলামিক কার্যক্রম কায়েম করে অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছে খোদ নবী বংশের লোকদের ওপর। যেমন চতুর্থ খলিফা হযরত আলীর সময় ও পরবর্তী সময়ে হযরত ইমাম হাসান থেকে চুক্তির মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহণের পর আমীরে মুয়াবিয়া চুক্তির সকল শর্ত ভঙ্গ করেন। প্রসাশনে নিজ বংশীয় অযোগ্য লোকদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল করেন। পবিত্র জুম্মার দিনে নামাজের খোতবায় মসজিদে মসজিদে হযরত আলী ও তাঁর সন্তানদের ওপর গালমন্দ করার প্রথা চালু করেন। যাহা দীর্ঘ ৮৩ বছর পর ওমর বিন আব্দুল আজিজের শাসনামলে রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ করা হয়। আল্লাহর রাসূল কর্তৃক নির্ধারিত ফেতরা এক’ সার পরিবর্তে মুয়াবিয়ার শাসন আমলে তা আধা’ সা নির্ধারন করা হয়। ঘুষখোর , দুর্নীতিবাজ অপরাধীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলেও মুয়াবিয়া তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতেন না। মুয়াবিয়া তার পরবর্তী সময়ে নিজ পুত্র ইয়াজিদকে ক্ষমতায় বসানোর নিমিত্তে নামী দামি লোকজন ও গোত্র প্রধানদের স্বীকৃতি আদায়ে অর্থ বল ও ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। মুয়াবিয়া নিজের ব্যক্তিগত কাজে রাষ্ট্রীয় অর্থ সম্পদ ব্যয় করতেন। মুয়াবিয়া জাল হাদীসের প্রচলন , প্রসার ও বিস্তার ঘটান। মুয়াবিয়া নব্য মুসলমানদের ওপর জিজিয়া কর আরোপ করেন।

এমন অসঙ্গতিপূর্ণ বেশ কিছু কার্যক্রম মুয়াবিয়া ও তদীয় পুত্র ইয়াজিদ কর্তৃক ইসলামের নামে প্রচার ও প্রসার লাভ করে। ঐসময়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে ইয়াজিদ নিজের নামের সঙ্গে‘ আমীরুল মুমিনীন’ টাইটেল ব্যবহার করে। যদি আমরা একটু পেছনে ফিরে যাই তবে সহজেই অনুমেয় যে , নবী (সা.)-এর বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত হন আবু সুফিয়ান। তার পুত্র মুয়াবিয়া সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত হন ইমাম আলী ও ইমাম হাসানের বিরুদ্ধে। মুয়াবিয়ার পুত্র ইয়াজিদ সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত হয় ইমাম হোসাইনের বিরুদ্ধে।

এই দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয়েছিল , হাশেমি ও উমাইয়া গোত্রের মধ্যে। উমাইয়াদের বরাবরই বিদ্বেষ ছিল কেন তাদের মধ্যে নবী আসেননি ? তাদের মতে হাশেমিদের মধ্যে‘ নবুয়াত’ ও‘ খেলাফত’ দুটিই থাকা সমীচীন নয়। সুতরাং একটা অন্তত তাদের চাই। আর এই কারণেই যত শক্রতা , হানাহানি , জোর-জুলুম , খুন-খারাবী ও মিথ্যার প্রচার প্রচারণার ধারাবাহিকতা দৃশ্যমান।

আরব জনগণ হাশেমিদের ওপর সন্তুষ্ট থাকার মূল কারণ ছিল , তাঁরা ছিলেন উদার , ন্যায়পরায়ণ ও খোদাভীরু । তাঁরা কখনো মানুষের ওপর জুলুম করেননি। আবার জালেমদের শাস্তি প্রদানেও তাঁরা পিছপা হননি। যে কারণে সাধারণ মানুষ হাশেমিদের পক্ষাবলম্বী ছিলেন সর্বযুগে। আর এটাও ছিল উমাইয়াদের বিদ্বেষের আরেকটি কারণ। কেন সকলে হাশেমিদের পক্ষাবলম্বী হবে ?

স্বয়ং আল্লাহ কিংবা রাসূলও যদি হযরত আলী ও তাঁর সন্তানদের প্রশংসা করে তবে তা মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে , (নাউজুবিল্লাহ) হযরত আলীর মর্যাদা যদি আকাশচুম্বী হয়ে যায় , তবে তা ধূলিস্মাৎ করতে হলে তাঁর মুমিন পিতাকে কাফের বানাতে হবে। আর এর জন্য যা কিছু করা প্রয়োজন তার বিন্দুমাত্র কমতি হয়নি। জাল হাদীস তৈরি , মিথ্যা ইতিহাস রচনা , উমাইয়া আলেমে দ্বীন তৈরির কারখানা সৃষ্টিসহ নানাবিধ কার্যক্রমের কোনটাতেই মুয়াবিয়া পিছিয়ে ছিলেন না।৩৭

মুয়াবিয়ার প্রশংসা করতে গিয়ে , মওলানা শিবলী নোমানী তার সিরাতুন নবী গ্রন্থে রাসুলের পরবর্তীতে বার জন খলিফার নাম উল্লেখ করতে গিয়ে ৫ ও ৬ নম্বরে মুয়াবিয়া ও ইয়াজিদকে অন্তর্ভূক্ত করে‘ রাজিআল্লাহু আনহু’ বলতেও দ্বিধাবোধ করেনি এসব হচ্ছে ইতিহাস বিতর্কিত সুস্পষ্ট নমুনা

নিবেদক_______ রাকিব আলী ইমামি

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিমআল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদপবিত্র কুরআন ও রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম এর হাদিস থেকে আমিরুল মোমেনীন আলী ইবনে আবি তালিব আঃ এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ হাদিসমহানবী হযরত মুহাম্মদ ‎(সা.)-এর উত্তরাধিকারী,তাঁর নবুওয়াতের মিশনের প্রধান সাহায্যকারী এবং দুনিয়া ও আখেরাতে রাসূলের ভ্রাতা আলী ‎(আ.) ‏আবরাহার পবিত্র মক্কা আক্রমণের ৩৩ বছর পর ১৩ রজব পবিত্র কা’বা শরীফে জন্মগ্রহণ করেন। মহান আল্লাহর আদেশে তাঁর নাম রাখা হয় আলী।শিশুকাল থেকেই মহানবী ‎(সা.)-এর সাথে হযরত আলীর বিশেষ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ সম্পর্কে আলী ‎(আ.) ‏নিজেই বলেছেন ‎: ‘...তিনি আমাকে তাঁর কোলে রাখতেন যখন আমি শিশু ছিলাম। তিনি আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরতেন এবং তাঁর বিছানায় শুইয়ে রাখতেন। তাঁর পবিত্র দেহ আমার দেহকে স্পর্শ করত এবং তিনি আমাকে তাঁর শরীরের সুগন্ধির ঘ্রাণ নেওয়াতেন। তিনি খাদ্য-দ্রব্য চিবিয়ে আমার মুখে পুরে দিতেন।...’১হযরত আবু তালিবের সংসারের ব্যয়ভার কমানোর জন্য হযরত আলীর বালক বয়সেই মহানবী ‎(সা.) ‏তাঁকে নিজের কাছে নিয়ে আসেন। তখন থেকে তিনি রাসূলের সার্বক্ষণিক সঙ্গী হয়ে যান। রাসূল হেরা পর্বতের গুহায় আল্লাহর ইবাদাত করতে গেলেও তাঁকে সাথে নিয়ে যেতেন। হযরত আলী বলেন ‎: ‘তিনি ‎(মহানবী) ‏প্রতি বছর হেরাগুহায় একান্ত নির্জনে বাস করতেন। আমি তাঁকে দেখতাম। আমি ব্যতীত আর কোন লোকই তাঁকে দেখতে পেত না। ঐ সময় রাসূলুল্লাহ্ ও খাদীজাহ্ ব্যতীত কোন মুসলিম পরিবারই পৃথিবীর বুকে ছিল না। আমি ছিলাম তাঁদের পরিবারের তৃতীয় সদস্য। আমি ওহী ও রেসালতের আলো প্রত্যক্ষ করেছি এবং নবুওয়াতের সুবাস ও সুঘ্রাণ অনুভব করেছি।’২তিনি মহানবীর প্রতি নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁকে অনুসরণ করতেন। তিনি বলেন ‎: ‘উষ্ট্র শাবক যেমনভাবে উষ্ট্রীকে অনুসরণ করে ঠিক সেভাবে আমি তাঁকে অনুসরণ করতাম। তিনি প্রতিদিন তাঁর উন্নত চরিত্র থেকে একটি নিদর্শন আমাকে শিক্ষা দিতেন এবং আমাকে তা পালন করার নির্দেশ দিতেন।... ‏তাঁর ওপর যখন ওহী অবতীর্ণ হয়েছিল তখন আমি শয়তানের ক্রন্দন ধ্বনি শুনেছিলাম। তাই আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম ‎: ‏হে রাসূলুল্লাহ্! ‏এ ক্রন্দন ধ্বনি কার? ‏তখন তিনি আমাকে বলেছিলেন ‎: ‏এই শয়তান এখন থেকে তার পূজা ‎(ইবাদাত) ‏করা হবে না বলে হতাশ হয়ে গেছে। নিশ্চয় আমি যা শুনি তুমি তা শোন এবং আমি যা দেখি তা দেখ। তবে তুমি নবী নও,কিন্তু ‎[নবীর] ‏সহকারী এবং নিঃসন্দেহে তুমি মঙ্গল ও কল্যাণের ওপরই আছ।’৩আর তাই মহানবী ‎(সা.)-এর নবুওয়াতের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসার পর তিনিই সর্বপ্রথম তাঁর ওপর ঈমান আনেন এবং তিনিই তাঁর সাথে নামায আদায় করা প্রথম ব্যক্তি। ইমাম মালেক বর্ণনা করেছেন ‎: ‘মহানবী ‎(সা.) ‏সোমবারে নবুওয়াত প্রাপ্ত হন এবং আলী মঙ্গলবারে তাঁর ওপর ঈমান আনেন।’৪হযরত আলী নিজেই বলেন ‎: ‘আমি আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসূলের ভ্রাতা এবং তাঁর নবুওয়াতের সবচেয়ে বড় বিশ্বাসস্থাপনকারী। একমাত্র মিথ্যাবাদী ছাড়া আমার পর কেউ এ দাবি করবে না। অন্য লোকদের নামায পড়ারও ৭ বছর আগে থেকে আমি নামায পড়েছি।’৫হযরত আলী ‎(আ.)-এর প্রসিদ্ধ উপাধিরাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏হযরত আলীকে বিভিন্ন উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন। এর মধ্যে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ হচ্ছে সিদ্দিকে আকবার,ফারুকে আযম,আসাদুল্লাহ ও মুরতাজা।পবিত্র কুরআনে হযরত আলী ‎(আ.)-এর মর্যাদাহযরত আলীর শানে পবিত্র কুরআনের অনেক আয়াত নাযিল হয়েছে। ইবনে আসাকির হযরত ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা করেছেন যে,কোন ব্যক্তির গুণ বর্ণনায় এত অধিক কুরআনের বাণী অবতীর্ণ হয়নি যা হযরত আলী সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস আরও বলেছেন যে,হযরত আলীর শানে তিনশ’ ‏আয়াত নাযিল হয়েছে এবং তাঁর গুণাবলি অত্যধিক ও প্রসিদ্ধ।৬ পবিত্র কুরআনের নাযিলকৃত আয়াতগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নিম্নে উল্লেখ করা হল ‎:১. ‏সূরা বাকারার ২০৭ নং আয়াতوَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَشْرِي نَفْسَهُ ابْتِغَاءَ مَرْضَاتِ اللَّهِ وَاللَّهُ رَءُوفٌ بِالْعِبَادِ‘এবং মানুষের মধ্যে এমনও আছে,যে আল্লাহর সন্তোষ লাভের জন্য নিজের জীবন পর্যন্ত বিক্রয় করে দেয় এবং আল্লাহ ‎(এরূপ) ‏বান্দাদের প্রতি অতিশয় অনুগ্রহশীল।’সালাবী তাঁর তাফসীর গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন যে,রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏যখন মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করার প্রস্তুতি নিলেন সেই সময় হযরত আলীকে তাঁর বিছানায় শুয়ে থাকার নির্দেশ দেন যাতে কাফির-মুশরিকরা মনে করে যে,রাসূল তাঁর নিজ ঘরেই রয়েছেন। আলী ‎(আ.) ‏নির্দ্বিধায় এ নির্দেশ পালন করলে মহান আল্লাহ এ আয়াত নাযিল করেন।৭ ২. ‏সূরা আলে ইমরানের ৬১ নং আয়াতفَمَنْ حَاجَّكَ فِيهِ مِنْ بَعْدِ مَا جَاءَكَ مِنَ الْعِلْمِ فَقُلْ تَعَالَوْا نَدْعُ أَبْنَاءَنَا وَأَبْنَاءَكُمْ وَنِسَاءَنَا وَنِسَاءَكُمْ وَأَنْفُسَنَا وَأَنْفُسَكُمْ ثُمَّ نَبْتَهِلْ فَنَجْعَلْ لَعْنَتَ اللَّهِ عَلَى الْكَاذِبِينَ‘অতঃপর তোমার নিকট যখন জ্ঞান ‎(কুরআন) ‏এসে গেছে,এরপরও যদি কেউ ‎(খ্রিস্টান) ‏তোমার সাথে তার ‎(ঈসার) ‏সম্বন্ধে তর্ক-বিতর্ক করে,তবে বল,‘(ময়দানে) ‏এস,আমরা আহ্বান করি আমাদের পুত্রদের ও তোমাদের পুত্রদের,আমাদের নারীদের ও তোমাদের নারীদের এবং আমাদের সত্তাদের ও তোমাদের সত্তাদের;’ ‏অতঃপর সকলে মিলে ‎(আল্লাহর দরবারে) ‏নিবেদন করি এবং মিথ্যাবাদীদের ওপর আল্লাহর অভিসম্পাত বর্ষণ করি।’ঘটনাটি এরূপ ‎: ‏রাসূলুল্লাহ্ ‎(সা.)-এর নবুওয়াতের সত্যতা যাচাই করার জন্য নাজরানের একটি খ্রিস্টান প্রতিনিধিদল মদীনায় আসল। তাদের সাথে আলোচনা ফলপ্রসূ হলো না। রাসূল ‎(সা.) ‏হযরত ঈসা ‎(আ.) ‏সম্বন্ধে প্রতিনিধিদের বললেন যে,তিনি আল্লাহর পুত্র নন,বরং আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। রাসূলুল্লাহ্ হযরত ঈসার জন্মের ব্যাপারে হযরত আদমের উদাহরণও দিলেন। কিন্তু তারা কোন কথাই শুনল না। অবশেষে তিনি আল্লাহর আদেশে পরস্পরের বিরুদ্ধে দোয়া ও মিথ্যাবাদীদের ওপর অভিশাপ বর্ষণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন,যাকে ‎‘মুবাহিলা’ ‏বলে। স্থির করা হল যে,নির্দিষ্ট স্থানে নির্দিষ্ট সময়ে উভয়ে নিজ নিজ পুত্রদের,নারীদের ‎(কন্যা সন্তানদের) ‏এবং তাদের নিজেদের ‎‘সত্তা’ ‏বলে গণ্য হওয়ার যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে একত্র হবে এবং প্রত্যেকে অপরের প্রতি অভিসম্পাত ও আল্লাহর শাস্তি কামনা করবে। রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏ইমাম হুসাইনকে কোলে নিয়ে ইমাম হাসানের হাত ধরলেন এবং হযরত ফাতিমাকে নিজের পেছনে,আর হযরত আলীকে তাঁর পেছনে রাখলেন। অর্থাৎ ছেলেদের স্থানে তিনি নাতিদের,নারীদের স্থানে নিজ কন্যাকে এবং ‎‘সত্তা’ ‏বলে গণ্যদের স্থানে আলীকে নিলেন এবং দোয়া করলেন,‘হে আল্লাহ! ‏প্রত্যেক নবীর আহলে বাইত থাকে,এরা আমার আহলে বাইত। এদের সকল দোষ-ত্রুটি হতে মুক্ত ও পাক-পবিত্র রেখ।’ ‏তিনি এভাবে ময়দানে পৌঁছলে খ্রিস্টানদের নেতা আকব তা দেখে বলল,‘আল্লাহর কসম,আমি এমন নূরানী চেহারা দেখছি যে,যদি এ পাহাড়কে নিজ স্থান হতে সরে যেতে বলেন,তবে অবশ্যই সরে যাবে। সুতরাং মুবাহিলা হতে হাত গুটিয়ে নেওয়াই কল্যাণকর,অন্যথায় কিয়ামত অবধি খ্রিস্টানদের কেউ অবশিষ্ট থাকবে না।’ ‏পরিশেষে তারা জিযিরা কর দিতে সম্মত হল। এটা হযরত আলীর একটি উঁচু স্তরের ফযিলত যে,তিনি আল্লাহর আদেশে রাসূলের ‎‘নাফ্স’ (অনুরূপ সত্তা) ‏সাব্যস্ত হলেন এবং সমুদয় নবীর থেকে শ্রেষ্ঠ হলেন।৮৩. ‏সূরা নিসার ৫৯ নং আয়াত ‎يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ‘হে বিশ্বাসিগণ! ‏তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূল ও তোমাদের মধ্যে যারা নির্দেশের অধিকর্তা,তাদের আনুগত্য কর...।’ইমাম জাফর সাদিক ‎(আ.)- ‏কে জিজ্ঞেস করা হলো যে,উত্তরাধিকারীর আদেশ মান্য করা কি অবশ্যই কর্তব্য? ‏তিনি বললেন ‎: ‏হ্যাঁ,তাঁরা ঐসব ব্যক্তি যাঁদের আদেশ পালন করা এ আয়াতে ওয়াজিব করা হয়েছে...। এ আয়াত হযরত আলী বিন আবি তালিব,হযরত হাসান ও হযরত হুসাইন ‎(আ.)-এর শানে অবতীর্ণ হয়েছে।৯ ৪. ‏সূরা মায়েদার ৫৫ নং আয়াতإِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَالَّذِينَ آمَنُوا الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُمْ رَاكِعُونَ‘(হে বিশ্বাসিগণ!) ‏তোমাদের অভিভাবক তো কেবল আল্লাহ,তাঁর রাসূল এবং সেই বিশ্বাসীরা যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে এবং রুকু অবস্থায় যাকাত প্রদান করে।’শীয়া-সুন্নি উভয় মাযহাবের তফসীরকাররা একমত যে,আয়াতটি হযরত আলী ‎(আ.)-এর শানে নাযিল হয়েছে। যেমন ইবনে মারদুইয়া এবং খাতীব বাগদাদী ইবনে আব্বাস সূত্রে এবং তাবরানী ও ইবনে মারদুইয়া আম্মার ইবনে ইয়াসির ও আলী ইবনে আবি তালিব সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে,আয়াতটি আলী ইবনে আবি তালিব ‎(আ.) ‏সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে যখন তিনি রুকু অবস্থায় যাকাত দেন।ঘটনাটি এরূপ ‎: ‏একদিন হযরত আলী ‎(আ.) ‏মদীনার মসজিদে নামায পড়ছিলেন। এমন সময় একজন ভিক্ষুক এসে ভিক্ষা চাইল। কিন্তু কোন ভিক্ষা না পাওয়ায় সে ফরিয়াদ করল যে,রাসূলের মসজিদ থেকে সে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছে। এ সময় হযরত আলী রুকু অবস্থায় ছিলেন। তিনি সেই অবস্থায় তাঁর ডান হাতের আঙ্গুল থেকে আংটি খুলে নেওয়ার জন্য ভিক্ষুকের প্রতি ইশারা করেন। ভিক্ষুক তাঁর হাত থেকে আংটি খুলে নেয়। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে উপরিউক্ত আয়াত নাযিল হয়।১০৫. ‏সূরা মায়েদার ৬৭ নং আয়াতيَا أَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ مِنْ رَبِّكَ وَإِنْ لَمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ وَاللَّهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْكَافِرِينَ‘হে রাসূল! ‏যা ‎(যে আদেশ) ‏তোমার প্রতিপালকের পক্ষ হতে তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে তা পৌঁছে দাও,আর যদি তুমি তা না কর,তবে তুমি ‎(যেন) ‏তার কোন বার্তাই পৌঁছাওনি,এবং ‎(তুমি ভয় কর না) ‏আল্লাহ তোমাকে মানুষের অনিষ্ট হতে রক্ষা করবেন;এবং নিশ্চয় আল্লাহ অবিশ্বাসী সম্প্রদায়কে সঠিক পথে পরিচালিত করেন না।’যখন রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏দশম হিজরিতে বিদায় হজ্ব থেকে মদীনায় প্রত্যাবর্তন করছিলেন সে সময় আল্লাহ্ তা‘আলা এ আয়াত নাযিল করেন। ইবনে আবী হাতিম ও ইবনে আসাকির আবু সাঈদ খুদরী হতে বর্ণনা করেছেন যে,এ আয়াত গাদীরে খুম প্রান্তরে হযরত আলী ‎(আ.)-এর শানে নাযিল হয়েছে।বিদায় হজ্ব থেকে প্রত্যাবর্তন করার সময় গাদীরে খুম নামক স্থানে মহানবী ‎(সা.) ‏হযরত আলীকে তাঁর পরে সকল মুমিনের অভিভাবক বলে ঘোষণা দেন।১১এ ঘোষণা দেয়ার পর হযরত ওমর হযরত আলীর সাথে সাক্ষাৎ করে অভিনন্দন জানান এবং বলেন ‎: ‘হে আলী ইবনে আবি তালিব! ‏আপনি আজ হতে প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর মাওলা হয়ে গেলেন।’১২৬. ‏সূরা রাদের ৭ নং আয়াতإِنَّمَا أَنْتَ مُنْذِرٌ وَلِكُلِّ قَوْمٍ هَادٍ‘(হে রাসূল!) ‏তুমি তো কেবল সতর্ককারী এবং প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে এক পথ প্রদর্শক।’ইবনে মারদুইয়্যা,ইবনে জারীর,আবু নাঈম তাঁর ‎‘মারেফাত’ ‏গ্রন্থে,ইবনে আসাকির,দাইলামী ও ইবনে নাজ্জার তাঁদের স্ব স্ব গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন যে,আয়াতটি নাযিল হলে মহানবী ‎(সা.) ‏তাঁর হাত নিজের বুকে রেখে বললেন,‘আমিই সতর্ককারী।’ ‏অতঃপর আলীর কাঁধের প্রতি তাঁর হাত দ্বারা ইশারা করে বললেন,‘হে আলী! ‏তুমিই পথপ্রদর্শক এবং মানুষ আমার পর তোমার মাধ্যমে হেদায়াতপ্রাপ্ত হবে।’ ‏উক্ত রেওয়ায়েতটি শব্দের তারতম্যে ইবনে মারদুইয়্যা সাহাবী আবু বারযাহ আসলামী হতে,জীয়াফীল হযরত ইবনে আব্বাস হতে,ইবনে আহমাদ তাঁর মুসনাদে এবং ইবনে মারদুইয়্যা ও ইবনে আসাকির স্বয়ং হযরত আলী ‎(আ.) ‏হতে বর্ণনা করেছেন।১৩৭. ‏সূরা রাদের ৪৩ নং আয়াতوَيَقُولُ الَّذِينَ كَفَرُوا لَسْتَ مُرْسَلًا قُلْ كَفَى بِاللَّهِ شَهِيدًا بَيْنِي وَبَيْنَكُمْ وَمَنْ عِنْدَهُ عِلْمُ الْكِتَابِযারা অবিশ্বাস করেছে তারা বলে,‘তুমি আল্লাহর রাসূল নও।’ ‏তুমি বল,‘আমার ও তোমাদের মধ্যে ‎(রেসালাতের) ‏সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট এবং সেই ব্যক্তি যার কাছে গ্রন্থের পূর্ণ জ্ঞান রয়েছে।’অধিকাংশ তাফসীরকার স্বীকার করেছেন যে,আয়াতে বর্ণিত সেই ব্যক্তি হলেন হযরত আলী ‎(আ.)। যেমন আসমী ‎‘যায়নুল ফাতা’ ‏নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন এবং সা’লাবী আবদুল্লাহ ইবনে আতা থেকে বর্ণনা করেছেন যে,আবদুল্লাহ বিন সালাম বলতেন,‘যার কাছে গ্রন্থের পূর্ণ জ্ঞান আছে’-এর উদ্দিষ্ট হযরত আলী ‎(আ.)। এজন্যই হযরত আলী ‎(আ.) ‏বারবার বলতেন,‘আমার কাছে আমার মৃত্যুর পূর্বে যা চাও জিজ্ঞেস কর।’১৪৮. ‏সূরা নাহলের ৪৩ নং আয়াতوَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ إِلَّا رِجَالًا نُوحِي إِلَيْهِمْ فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَতোমার পূর্বেও আমরা কেবল পুরুষদেরই ‎(রাসূল করে) ‏প্রেরণ করেছি যাদের প্রতি আমরা প্রত্যাদেশ প্রেরণ করতাম;যদি তোমরা না জেনে থাক তবে যারা জানে তাদের জিজ্ঞেস কর।আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেন ‎: ‏জ্ঞানী ব্যক্তিরা অর্থাৎ আহলুয যিকর হলেন হযরত মুহাম্মাদ ‎(সা.),হযরত আলী ‎(আ.),হযরত ফাতেমা ‎(আ.),হযরত হাসান ও হুসাইন ‎(আ.)। যাবের ইবনে আবদুল্লাহ বলেছেন ‎: ‏যখন এই আয়াত নাযিল হল তখন হযরত আলী বললেন ‎: ‏আমরাই হলাম জ্ঞানের ভাণ্ডার।১৫৯. ‏সূরা আহযাবের ৩৩ নং আয়াতوَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى وَأَقِمْنَ الصَّلَاةَ وَآتِينَ الزَّكَاةَ وَأَطِعْنَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا‘হে নবী পরিবার! ‏আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদের সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে।’উম্মুল মুমিনীন হযরত উম্মে সালামার ঘরে এ আয়াত নাযিল হলে রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏হযরত ফাতিমা,ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন ‎(আ.)-কে ডাকেন এবং তাঁদেরকে একটি চাদরে ঢেকে নেন। হযরত আলী তাঁর পেছনে ছিলেন। তিনি তাঁকেও চাদরে ঢেকে নেন। অতঃপর বলেন ‎: ‘হে আল্লাহ্! ‏এরা আমার আহলে বাইত। অতএব,তুমি তাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করে দাও এবং তাদেরকে উত্তমরূপে পবিত্র কর।’ ‏তখন উম্মে সালামা বলেন ‎: ‘হে আল্লাহর রাসূল! ‏আমিও কি তাদের অন্তর্ভুক্ত?’ ‏তিনি বলেন ‎: ‘তুমি স্ব স্থানে আছ এবং তুমি কল্যাণের মধ্যেই আছ।’১৬হযরত উম্মে সালামা ছাড়াও হযরত আবু সাঈদ খুদরী ও আনাস ইবনে মালিক কর্তৃক এ হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে।১৭১০. ‏সূরা শূরার ২৩ নং আয়াতقُلْ لَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا إِلَّا الْمَوَدَّةَ فِي الْقُرْبَى‘বল,আমি এর বিনিময়ে তোমাদের নিকট থেকে আমার নিকটাত্মীয়দের প্রতি ভালবাসা ছাড়া আর কোন প্রতিদান চাই না।’রাসূলুল্লাহ ‎(সা.)-এর নিকটাত্মীয় আহলে বাইতের সদস্যদের প্রতি ভালবাসা পোষণকে এ আয়াত দ্বারা মহান আল্লাহ মুসলমানদের জন্য ফরয বলে ঘোষণা করেন।হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেছেন ‎: ‏যখন এ আয়াত নাযিল হল তখন সাহাবিগণ জিজ্ঞেস করলেন,হে রাসূলুল্লাহ! ‏আপনার নিকটাত্মীয়,যাদেরকে ভালবাসা আমাদের ওপর ওয়াজিব করা হয়েছে তারা কারা? ‏রাসূল ‎(সা.) ‏বললেন ‎: ‏আলী,ফাতেমা,হাসান ও হুসাইন।১৮রাসূলুল্লাহ ‎(সা.)-এর হাদীসে আলী ‎(আ.)হযরত আলীর মর্যাদা সম্পর্কে মহানবী ‎(সা.)-এর নিকট থেকে অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এখানে কয়েকটি উল্লেখ করা হল ‎:১. ‏সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস বলেন,নবী ‎(সা.) ‏তাবুক যুদ্ধের সময় আলীকে লক্ষ্য করে বলেছেন ‎: ‘তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে,মর্যাদার দিক থেকে মূসার নিকট হারুন যে পর্যায়ে ছিলেন,তুমিও আমার নিকট ঐ পর্যায়ে রয়েছ?’১৯২. ‏অন্য একটি হাদীসে এসেছে ‎: ‏রাসূল বলেন ‎: ‘তুমি তো আমার নিকট তদ্রূপ যেরূপ হারুনের স্থান মূসার নিকট। পার্থক্য এতটুকু যে,আমার পরে কোন নবী নেই।’২০৩. ‏রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏ইমাম হাসান ও হুসাইনের হাত ধরে বলেন ‎: ‘যে ব্যক্তি আমাকে ভালবাসে এবং এ দু’জন ও তাদের পিতা-মাতাকে ভালবাসে,সে কিয়ামতের দিন আমার সাথে একই মর্যাদায় অবস্থান করবে।’২১৪. ‏আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণিত। রাসূল বলেছেন ‎: ‘আলীর চেহারার দিকে তাকানোও ইবাদত।’২২৫. ‏রাসূলুল্লাহ্ ‎(সা.) ‏আলী ‎(আ.)-কে সম্বোধন করে বলেছিলেন ‎: ‘মুমিনরাই তোমাকে মহব্বত করবে এবং মুনাফিকরাই তোমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবে।’২৩৬. ‏তিরমিযী,নাসাঈ ও ইবনে মাযাহ হুবশী ইবনে জুনাদাহ্ ‎(রা.) ‏থেকে বর্ণনা করেছেন। রাসূল ‎(সা.) ‏বলেছেন ‎: ‘আলী আমা থেকে এবং আমি আলী থেকে। যে ব্যক্তি আলীকে ভালবেসেছে,সে আমাকে ভালোবেসেছে। আর যে ব্যক্তি আলীকে ভালবেসেছে,সে আল্লাহকে ভালবেসেছে। যে ব্যক্তি আলীর সাথে শত্রুতা পোষণ করেছে সে আমার সাথে শত্রুতা পোষণ করেছে। আর যে আমার শত্রু সে আল্লাহর শত্রু। যে ব্যক্তি আলীকে কষ্ট দিয়েছে,সে আমাকে কষ্ট দিয়েছে।’২৪৭. ‏রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏বলেন ‎: ‘(হে আলী!) ‏দুনিয়া ও আখেরাতে তুমি আমারই ভাই।’২৫৮. ‏আবদুল্লাহ ইবনে বুরাইদা ‎(র.) ‏থেকে তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন ‎: ‏রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏বলেছেন ‎: ‘চার ব্যক্তিকে ভালবাসতে আল্লাহ আমাকে আদেশ করেছেন এবং তিনি আমাকে এও অবহিত করেছেন যে,তিনিও তাদের ভালবাসেন। বলা হল ‎: ‏হে আল্লাহর রাসূল! ‏আমাদের তাদের নামগুলো বলুন। তিনি বলেন ‎: ‏আলীও তাদের অন্তর্ভুক্ত। এ কথা তিনি তিনবার বলেন। ‎(অবশিষ্ট তিনজন হলেন) ‏আবু যার,মিকদাদ ও সালমান।...’২৬৯. ‏জাবির ‎(রা.) ‏থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন ‎: ‏তায়েফ অভিযানের দিন রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏আলীকে কাছে ডেকে তার সাথে চুপিসারে আলাপ করেন। লোকেরা বলল ‎: ‏তিনি তাঁর চাচাত ভাইয়ের সাথে দীর্ঘক্ষণ চুপিসারে কথা বললেন। রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏বলেন ‎: ‏আমি তার সাথে চুপিসারে কথা বলিনি;বরং আল্লাহই তার সাথে চুপিসারে কথা বলেছেন। ‎(অর্থাৎ তার সাথে চুপিসারে কথা বলার জন্য আল্লাহ্ই আমাকে আদেশ করেছেন।)২৭হযরত আলী সম্পর্কে অন্যান্য সাহাবীহযরত আবু বকর প্রায়ই হয়রত আলীর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতেন। হযরত আয়েশা এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন ‎: ‘আমি রাসূলে করীমকে বলতে শুনেছি,আলীর মুখ দেখা ইবাদাতের শামিল।’২৮হযরত উমর বিন খাত্তাব বলতেন,হযরত আলী বিন আবি তালিবের তিনটি বৈশিষ্ট্য ছিল। যদি তার একটি আমার থাকত তাহলে আমি বলতাম যে,আমাকে লাল রঙের একটি উট দেয়া হলে তা অপেক্ষাও আমি তা পছন্দ করতাম। তাঁকে এ তিনটি বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন ‎: ‏১.তাঁর বিয়ে হয় রাসূল ‎(সা.)-এর কন্যার সাথে,২. ‏তাঁর সঙ্গে রাসূলে করীমের মসজিদে অবস্থান এবং যা রাসূলে করিমের জন্য বৈধ ছিল তার জন্যও তা বৈধ ছিল এবং ৩. ‏খায়বার যুদ্ধের পতাকা বহনের দায়িত্ব তাঁর ওপর ন্যস্ত ছিল।২৯হযরত উমর বলেছেন,হে আল্লাহ! ‏আমার ওপর এমন কোন বিপদ দিও না যখন আবুল হাসান ‎(আলী) ‏আমার নিকট উপস্থিত না থাকে। কারণ,তিনি আমার নিকট উপস্থিত থাকলে আমাকে সে বিপদ থেকে নিষ্কৃতি দেবেন।’৩০তাবরানী হযরত ইবনে আব্বাস থেকে রেওয়ায়াত করেছেন যে,হযরত আলীর আঠারটি বৈশিষ্ট্য এমন ছিল যা সমগ্র উম্মতের কারও ছিল না।’৩১তথ্যসূত্র১. ‏মমতাজ বেগম কর্তৃক প্রকাশিত নাহজ আল বালাঘা,২য় মুদ্রণ,আল খুতবাতুল কাসেয়াহ্,খুতবা নং ১৯১২. ‏প্রাগুক্ত৩. ‏প্রাগুক্ত৪. ‏মুসতাদরাকে হাকেম,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏১১২;এটি ইমাম মালেক কর্তৃক বর্ণিত। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে হেরা গুহায় জিবরাঈল ‎(আ.) ‏কর্তৃক রাসূলুল্লাহ ‎(সা.)-এর নবুওয়াত ঘোষণার পর পরই হযরত আলী ‎(আ.) ‏তাঁর ঈমান আনার বিষয়টি প্রকাশ করেন।৫. ‏সুনানে ইবনে মাজাহ্,১ম খণ্ড,পৃ. ‏৪৪৬. ‏নূর-এ-সাকালাইন কর্তৃক প্রকাশিত,সাইয়্যেদ আলী জাফরী প্রণীত আল মুরতাজা,পৃ. ‏৩০।৭. ‏এহইয়াউ উলুমিদ্দীন,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏২৩৮;নুরুল আবসার,পৃ. ‏৮৬,মুসতাদরাকে হাকেম,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏৪;তাফসীরে কুমী,১ম খণ্ড,পৃ. ‏৭১;তাযকিরাতু সিবতে ইবনে যাওযী,পৃ. ‏২১;ইয়ানাবিউল মাওয়াদ্দাহ,পৃ. ‏৯২।৮. ‏তাফসীরে জালালাইন,১ম খণ্ড,পৃ.৬০;বায়দ্বাভী,১ম খণ্ড,পৃ. ‏১১৮,তাফসীরে দুররুল মানসুর,২য় খণ্ড,পৃ. ‏৩৯,মিশর মুদ্রণ;মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বাল,১ম খণ্ড,পৃ. ‏১৮৫;৯. ‏মাজমাউল বায়ান,২য় খণ্ড,পৃ. ‏১৪১;তাফসীরে কুমী,১ম খণ্ড,পৃ. ‏১৪১;ইয়ানাবিউল মাওয়াদ্দাহ,পৃ. ‏২১;শাওয়াহেদুত তানযিল,১ম খণ্ড,পৃ. ‏১৪৮;তাফসীরে ফুরাত,পৃ.২৮১০. ‏তাফসীরে তাবারী,৬ষ্ঠ খণ্ড,পৃ. ‏১৬৫;তাফসীরে রাযী,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏৪৩১;মানাকেবে খাওয়ারেযমী,পৃ. ‏১৭৮;যাখায়েরুল উকবা,পৃ. ‏১০২;তাফসীরে ইবনে কাসীর,২য় খণ্ড,পৃ. ‏৭১;আল- ‏বেদায়া ওয়ান নেহায়া,৭ম খণ্ড,পৃ. ‏৩৫৭;সাওয়ায়েকে মুহরিকাহ,পৃ. ‏২৫;১১. ‏মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বাল,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ‏৩৭২;ইমাম নাসাঈ প্রণীত খাসায়েসে আমীরুল মুমিনীন,পৃ. ‏২১;মুসতাদরাকে হাকেম,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏১০৯;আল গাদীর,১ম খণ্ড,পৃ. ‏২১৪ ও ২২৯;শাওয়াহেদুত তানযিল,১ম খণ্ড,পৃ. ‏১৮৭ ।১২. ‏তাফসীরে তাবারী,৩য় খণ্ড,মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বল,৩য় খণ্ড,দারে কুতনী।১৩. ‏তাফসীরে দুররে মানসুর,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ‏৪৫ দ্রষ্টব্য।১৪. ‏তাফসীরে দুররে মানসুর,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ‏৬৯ ।১৫. ‏কেফাইয়াতুল মুওয়াহহিদীন,২য় খণ্ড,পৃ. ‏৬৫০;মাজমাউল বায়ান,২য় খণ্ড,পৃ. ‏৪১৩;কানযুল উম্মাল,৬ষ্ঠ খণ্ড,পৃ. ‏১৫৬;তাফসীরে তাবারী,১৪তম খণ্ড,পৃ. ‏১০৮ ।১৬. ‏বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত জামে আত-তিরমিযী,৬ষ্ঠ খণ্ড,হাদীস নং ৩৭২৫,পৃ. ‏৩৫৯ ।১৭. ‏মুসনাদে আহমাদ,১ম খণ্ড,পৃ. ‏৩৩১;যাখায়েরুল উকবা,পৃ. ‏২১,তাফসীরে তাবারী,২২তম খণ্ড,পৃ. ‏৮;মুসতাদরাকে হাকেম,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏২০৮;ফাজায়েলে খামসাহ,১ম খণ্ড,পৃ. ‏২২৪;শাওয়াহেদুত তানযিল,২য় খণ্ড,পৃ. ‏১০ ।১৮. ‏যাখায়েরুল উকবা,পৃ. ‏৯ ও ১২;তাফসীরে যামাখশারী,২য় খণ্ড,পৃ. ‏৩৩৯;সাওয়ায়েকে মুহরিকাহ,পৃ. ‏১০১,তাফসীরে দুররুল মানসূর,৬ষ্ঠ খণ্ড,পৃ. ‏৭;মুসনাদে আহমাদ,১ম খণ্ড,পৃ. ‏২২৯;আল গাদীর,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏১৭২;শাওয়াহেদুত তানযিল,২য় খণ্ড,পৃ. ‏৩০ ।১৯. ‏আধুনিক প্রকাশনী কর্তৃক প্রকাশিত সহীহ আল বুখারী,৩য় খণ্ড,হাদীস নং ৩৪৩১;বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত সহীহ মুসলিম,৭ম খণ্ড,হাদীস নং ৬০৪২ ।২০. ‏বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত সহীহ মুসলিম,৭ম খণ্ড,হাদীস নং ৬০৪০ ও জামে আত-তিরমিযী,৬ষ্ঠ খণ্ড,হাদীস নং ৩৬৬৮ ।২১. ‏বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত জামে আত-তিরমিযী,৬ষ্ঠ খণ্ড,হাদীস নং ৩৬৭০২২. ‏এমদাদীয়া লাইব্রেরী কর্তৃক প্রকাশিত হযরত আলী ইবনে আবি তালিব ‎(রা.),পৃ. ‏১৫ ।২৩. ‏বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত জামে আত-তিরমিযী,৬ষ্ঠ খণ্ড,হাদীস নং ৩৬৭৩ ।২৪. ‏এমদাদিয়া লাইব্রেরী কর্তৃক প্রকাশিত হযরত আলী ‎(রা.),পৃ. ‏১৫-১৬ ।২৫. ‏বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত জামে আত-তিরমিযী,৬ষ্ঠ খণ্ড,হাদীস নং ৩৬৫৮;২৬. ‏প্রাগুক্ত,হাদীস নং ৩৬৫৬;২৭. ‏প্রাগুক্ত,হাদীস নং ৩৬৬৪২৮. ‏সাওয়ায়েকে মুহরিকাহ,পৃ. ‏১৭৫ ।২৯. ‏সাওয়ায়েকে মুহরিকাহ,৩য় খণ্ড,এবং মুসতাদরাকে হাকেম,৩য় খণ্ড ।৩০. ‏মুনতাখাবে কানজুল উম্মাল,৩য় খণ্ড ।৩১. ‏সাওয়ায়েকে মুহরিকাহ ১১৩ ।(প্রত্যাশা,৩য় বর্ষ, ‏১ম সংখ্যাপ্রচারে মোঃ জাহিদ হুসাইন

শিশু ইমাম হযরত জাওয়াদ (আ.)'র জন্মবার্ষিকীসকল মোমিন মোমিনা কে জানাই ঈদ মোবারক🎂🎂🎂🎂🎂(((পর্ব ১)))🎂🎂🎂🎂🎂দশই রজব ইসলামের মহাখুশির দিন। এই দিনে পৃথিবীতে এসেছিলেন মাওলা মোহাম্মদ (সা) পবিত্র আহলে বাইতের সদস্য নবম ইমাম হযরত জাওয়াদ বা তাকি(আ)। নবীজীর আহলে বাইতের সদস্যরা কেবল মুসলমানদেরই ধর্মীয় নেতা নন বরং যারাই সত্য পথের সন্ধানী কিংবা কল্যাণকামী-তাদের সবারই নেতা।আহলে বাইতের এই মহান ইমাম হযরত জাওয়াদ (আ) এর জন্ম-বার্ষিকীতে আপনাদের সবার প্রতি রইলো অশেষ অভিনন্দন ও প্রাণঢালা মোবারকবাদ এবং মাওলা মোহাম্মদ (সা.) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের শানে পেশ করছি অসংখ্য দরুদ ও সালাম ।ইমাম জাওয়াদের জন্ম হয়েছিল ১৯৫ হিজরিতে তথা ৮১১ খ্রিস্টাব্দের ১২ এপ্রিল পবিত্র মদীনায়। মজলুম ও দরিদ্রদের প্রতি ব্যাপক দানশীলতা ও দয়ার জন্য তিনি 'জাওয়াদ' উপাধি পেয়েছিলেন। তাকি বা খোদাভীরু ছিল তাঁর আরেকটি উপাধি। জগত-বিখ্যাত মহাপুরুষ ইমাম রেজা (আ) ছিলেন তাঁর বাবা। আর তাঁর মায়ের নাম ‘সাবিকাহ’ বলে জানা যায়। ইমাম রেজা (আ) তাঁর এই স্ত্রীর নাম রেখেছিলেন খিইজরান। তিনি ছিলেন মহানবীর স্ত্রী উম্মুল মু’মিনিন হযরত মারিয়া কিবতির (আ) বংশধর। ইমাম জাওয়াদ (আ) ১৭ বছর ইমামতের দায়িত্ব পালনের পর মাত্র ২৫ বছর বয়সে শাহাদত বরণ করেন। তিনিই হলেন ইসলামের ইতিহাসের সবচেয়ে কম বয়স্ক ইমাম। আহলে বাইতের অন্য ইমামগণের মত ইমাম জাওয়াদ (আ.)ও ছিলেন উচ্চতর নৈতিক গুণ, জ্ঞান ও পরিপূর্ণতার অধিকারী। ইসলামের মূল শিক্ষা ও সংস্কৃতির পুনরুজ্জীবন এবং বিকাশ ছিল তাঁর তৎপরতার মূল লক্ষ্য বা কেন্দ্রবিন্দু। সেযুগের সব মাজহাবের জ্ঞানী-গুণীরা ইমাম জাওয়াদ (আ.)'র উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন।সমসাময়িক যুগের প্রখ্যাত সুন্নি চিন্তাবিদ কামালউদ্দিন শাফেয়ি ইমাম জাওয়াদ (আ.) সম্পর্কে বলেছেন, "মুহাম্মাদ বিন আলী তথা ইমাম জাওয়াদ (আ.) ছিলেন অত্যন্ত উঁচু মর্যাদা ও গুণের অধিকারী। মানুষের মুখে মুখে ফিরতো তাঁর প্রশংসা। তাঁর উদারতা, প্রশস্ত দৃষ্টি ও সুমিষ্ট কথা সবাইকে আকৃষ্ট করত। যে-ই তাঁর কাছে আসতো নিজের অজান্তেই এই মহামানবের অনুরাগী হয়ে পড়ত এবং তাঁর কাছ থেকে জ্ঞান অর্জন করত।" ইমাম জাওয়াদ (আ) মাত্র সাত বা আট বছর বয়সে ইমামতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এতো অল্প বয়সে তাঁর ইমামতিত্বের বিষয়টি ছিল যথেষ্ট বিস্ময়কর। ফলে অনেকেই এ বিষয়ে সন্দেহ করতেন। অথচ আল্লাহর তো এই শক্তি আছে যে তিনি মানুষকে তার বয়সের স্বল্পতা সত্ত্বেও পরিপূর্ণ বিবেক-বুদ্ধির পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেন। কোরানের আয়াতের ভিত্তিতে পূর্ববর্তী উম্মতের মধ্যেও এরকম উদাহরণ বহু আছে। যেমন শিশুকালে হযরত ইয়াহিয়া (আ) এর নবুয়্যত প্রাপ্তি, মায়ের কোলে নবজাতক ঈসা (আ) এর কথা বলা ইত্যাদি সর্বশক্তিমান আল্লাহর অশেষ ক্ষমতারই নিদর্শন। ইমাম জাওয়াদ (আ) শৈশব-কৈশোরেই ছিলেন জ্ঞানে-গুণে, ধৈর্য ও সহনশীলতায়, ইবাদত-বন্দেগিতে, সচেতনতায়, কথাবার্তায় শীর্ষস্থানীয় মহামানব। একবার হজ্জ্বের সময় বাগদাদ এবং অন্যান্য শহরের বিখ্যাত ফকীহদের মধ্য থেকে আশি জন মদীনায় ইমাম জাওয়াদ (আ) এর কাছে গিয়েছিলেন। তাঁরা ইমামকে বহু বিষয়ে জিজ্ঞেস করে অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত ও সন্তোষজনক জবাব পেলেন। ফলে জাওয়াদ (আ)’র ইমামতিত্বের ব্যাপারে তাদের মনে যেসব সন্দেহ ছিল-তা দূর হয়ে যায়।প্রচারে মোঃ জাহিদ হুসাইন আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম‌লা'নাতুল্লাহি আলাল কাজেবিন🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂