আহলে বাইত আঃ কাদের কে বলা হয়পর্ব (((((২)))))আকরামাহ ও মাক্বাতিল বিন সুলাইমান সূরা আহযাবের ৩৩ নং আয়াতে উল্লেখিত আহলে বাইতের মধ্যে শুধুমাত্র নবীর (সা.) স্ত্রীগণকে গন্য করেছেন । যদিও আমরা উক্ত আয়াতের পূর্ববর্তী দু’টি আয়াতে নবীর স্ত্রীগণের ব্যাপারে আল্লাহর পক্ষ থেকে সাবধান বাণী পরিলক্ষিত করি । তাদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেননি যে তারা সমস্ত ধরণের অপবিত্রতা থেকে মুক্ত । বরং তিনি আল কোরআনে উল্লেখ করেছেনঃيَا نِسَاءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِّنَ النِّسَاءِ إِنِ اتَّقَيْتُঅর্থাৎঃ হে নবীর স্ত্রীগণ, তোমরা তো অন্যান্য নারীদের মত নও যদি আল্লাহকে ভয় কর ।১২যদি নবীর (সা.) স্ত্রীরা পবিত্র এবং সকল প্রকার অপবিত্রতা থেকে মুক্ত হতেন তাহলে আল্লাহ কখনো তাদের উল্লেখ করে এ ধরণের বক্তব্য পেশ করতেন না । সাথে সাথে নিম্নের আয়াতটিও যথার্থ বলে পরিগণিত হতো না ।আল্লাহ বলেনঃيَا نِسَاءَ النَّبِيِّ مَن يَأْتِ مِنكُنَّ بِفَاحِشَةٍ مُّبَيِّنَةٍ يُضَاعَفْ لَهَا الْعَذَابُ ضِعْفَيْنِ ۚ وَكَانَ ذَٰلِكَ عَلَى اللَّـهِ يَسِيرًاঅর্থাৎঃ-হে, নবীর স্ত্রীগণ, তোমাদের মধ্যে যে প্রকাশ্য কোন অপবিত্র কাজে লিপ্ত হয় তার আযাব ও শাস্তি অন্যদের চেয়ে দ্বিগুন পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে এবং আল্লাহর জন্যে এ কাজ খুবই সহজ ।১৩আর যদি নবীর (সা.) স্ত্রীগণ সকল পাপ-পংকিলতা থেকে মুক্ত হবেন তাহলে নবীকে (সা.) কষ্ট দেয়া কি পবিত্রতার পরিপন্থি নয় ?আল বুখারী তার স্বীয় সহিহাতে এভাবে বর্ণনা দিচ্ছেন,انّ النبی هجر عایشة و حفصة شهرا کاملا و ذلک بسبب افشاء حفصة الحدیث الذی اسراه لها الی عایشة، قالت للنبی: انّک اقسمت ان لا تدخل علینا شهرا ؟অর্থাৎঃ- নবী (সা.) পূর্ণ এক মাস আয়েশা ও হাফসাকে বয়কট করেছিলেন । এটা এ কারণে যে হাফসা নবীর গোপন কথা আয়েশার কাছে ফাস করে দিয়েছিল । আয়েশা নবীকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ আপনি নাকি প্রতিজ্ঞা করেছেন একমাস আমাদের সাথে সম্পর্ক রাখবেন না ?১৪সহি আল-বুখারীতে অন্যত্র এভাবে উল্লেখ আছে যে, ইবনে আব্বাস বলেছেনঃابن عباس یقول: لم ازل حریصا علی ان عمر بن خطاب عن المراتین من ازواج النبی (ص) التین قال الله تعالی فیها: ان تتوبا الی الله فقدصغت قلوبکما.অর্থাৎঃ-আমি ওমর বিন খাত্তাবকে সে দু’জন নবীপত্নীর ব্যাপারে প্রশ্ন করার জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়েছিলাম, যাদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেছেনঃ যদি তারা দু’জন আল্লাহর কাছে তওবা করে তাহলে সে কাজটিই সঠিক হবে । কেননা তোমাদের দু’জনের অন্তর (বাতিলের দকে) ঝুকে গিয়েছিল ।১৫অতঃপর আল-বুখারী এভাবে বর্ণনা দিচ্ছেনঃحتی حج و حججت معه.....................حنی قال ابن عباس، فقلت للخلیفه: من المراتین؟ فقال عمر بن خطاب:و اعجب لک یا ابن عباس ! هما عایشة و حفصة...........................অর্থাৎঃ- (ইবনে আব্বাস বলেন) ইতিমধ্যে তিনি (হযরত ওমর) হজ্জ সম্পন্ন করেন আর আমিও তার সাথে হজ্জ আদায় করি ।……….ইবনে আব্বাস বলেনঃ আমি খলিফাকে জিজ্ঞেস করলাম ঐ দু’জন মহিলা কারা ছিলেন ? ওমর বিন খাত্তাব উত্তর দিলেনঃ আশ্চর্য তো, তুমি তা জান না হে ইবনে আব্বাস ! তারা হলেন আয়েশা ও হাফসা………………….১৬বিখ্যাত সুন্নী আলেম ও তাফসীরকারক আল্লামা ফাখরে রাযী তার তাফসীর গ্রন্থ ‘তাফসীর আল-কাবির’-এ সূরা তাহরীমের চতুর্থ আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেছেন যে, এ আয়াতটি হযরত আয়েশা ও হাফসাকে সম্বোধন করে নাযিল হয়েছে ।১৭অন্যত্র এভাবে বর্ণিত হয়েছে যে,ها هی عایشة تعقبها للنبی (ص) بعد ما فقدته فی لیالی نوبتها و قوله (ص) لها ما لک یا عایشة ! اغرت ؟ فقالت: و ما لی ان لا یغار مثلی علی مثلک ؟ فقال لها افاخذک شیطانک ؟!অর্থাৎঃ- যখন আয়েশা কয়েক রাত্র নবী (সা.) এর অনুপস্থিতি ও তার পালা অতিক্রম হওয়ায় চুপিসারে হযরতের পিছু লেগেছিল তখন মহানবী (সা.) তাকে উদ্দেশ্য করে বলেনঃ তোমার কি হয়েছে হে আয়েশা ? তুমি কেন আমাকে শুধু তোমার জন্য মনে করছো ? আয়েশা বলেনঃ আমার মত মানুষ কি আপনার মত ব্যক্তির ব্যাপারে ইর্ষা করতে পারে না ? অতঃপর নবী (সা.) তাকে বললেনঃ তোমাকে কি তোমার শয়তানে ধরেছে ?১৮এভাবে প্রিয় নবী (সা.) এর পিছু লাগা এবং মহানবীর (সা.) উক্তি ‘তোমাকে কি তোমার শয়তান ধরেছে ?’ কোনক্রমেই সূরা আহযাবের ৩৩ নং আয়াতে উল্লিখিত ‘আহলে বাইতকে আল্লাহ সমস্ত প্রকার অপবিত্রতা থেকে তুরে রেখেছেন এবং তাদেরকে পুত পবিত্র করেছেন;- উক্তির সাথে সংগতিপূর্ণ হতে পারে না ।হযরত আয়েশা নবী করিম (সা.) এর অমীয় বাণী ও ঐতিহাসিক নির্দেশ অমান্য করে ‘হাওয়াব’ নামক স্থান অতিক্রম করে আলীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিলেন । ইতিহাসে এ যুদ্ধ “জঙ্গে জামাল” বা “উষ্টের যুদ্ধ” নামে অভিহিত । এ যুদ্ধে উভয় পক্ষের বহু সাহাবী তাবেয়ীন ও হাফেজ-ক্বারী হতাহত হন । এ যুদ্ধের কারণ উদঘাটন করলেই বিবেকবান মানুষ মাত্রই উপলদ্ধি করতে পারবেন যে মা আয়েশা যদি কোরআনের পরিভাষায় ‘রেজস’ বা অপবিত্রতা থেকে মুক্ত থাকতেন তাহলে কখনো এ যুদ্ধ সংঘটিত হত না । এ ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ সম্বন্ধে অবগত হবার জন্য পাঠকদের নিম্নলিখিত পুস্তকগুলো অধ্যায়নের অনুরোধ করছি ।১. কামেল ফি আত তারিখ, খণ্ড-৩, পৃঃ-১০৭ ।২. আল ফুতুহ, খণ্ড-১, অধ্যায়-২, পৃঃ-৪৫৬ ও ৪৫৭ ।৩. আনসাব আল আশরাফ, খণ্ড-২, পৃঃ-২২৮, কায়রো ।৪. আত তাবাক্বাত আল কোবরা, খণ্ড-৩, পৃঃ-৩১, বৈরুত ।৫. কানযুল উম্মাল, খণ্ড-৩, পৃঃ-১৬১ ।৬. মুসনাদে আহমাদ, খণ্ড-৬, পৃঃ-৯৭, রৈুত ।৭. মাজমুআ আয-যাওয়ায়েদ, খণ্ড-৭, পৃঃ-৩৪ ।৮. সহি আল বুখারী, কিতাব বিদয় আল খালক ।৯. সহি আল বুখারী, কিতাব আল জিহাদ ওয়াল মিযার বাবে আয়ওয আন নাবী, খণ্ড-৪, পৃঃ-৪৬; খণ্ড-২, পৃঃ-১২৫ ।১০. সহি মুসলিম, খণ্ড-২, পৃঃ-৫৬০; খণ্ড-৮, পৃঃ-১৮১, মিশর, শেবকাত এলাহিয়া, শারহেন নাবাবী ।তাছাড়াও হযরত আয়েশা হযরত ওসমানকে কাফের ফতোয়া দিয়ে জনগণকে নির্দেশ দিয়েছিলেন খলিফাকে হত্যা করতে । তার ঐতিহাসিদ ফতোয়া ইতিহাস গ্রন্থসমূহে এভাবে উল্লেখ আছে যে তিনি বলেছেন,اقتلو نعثلا فقد کفرঅর্থাৎঃ- না’সালকে হত্যা কর সে কাফের হয়ে গেছে ।তিনি হযরত ওসমানকে না’সাল বলে একজন ইয়াহুদী বৃদ্ধের সাথে তুলনা করেছেন ।আবার কোন কোন ইতিহাস গ্রন্থে এভাবে বর্ণীত আছে যে, তিনি ওসমানকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন,اقتلو نعثلا فقد فجرঅর্থাৎঃ- না’সালকে হত্যা কর সে ফাজের হয়ে গেছে ।১৯এত কিছুর পর কি করে তাতহীরের পবিত্র আয়াতটিতে উল্লেখিত আহলে বাইতের মধ্যে নবী (সা.) এর স্ত্রীগণও গণ্য হতে পারেন ?বস্তুতঃ যদি আমারা তাফসীর ও হাদীস গ্রন্থাবলী পর্যবেক্ষণ করি তাহলে দেখতে পাবো যে, সেখানে আহলে বাইত বলতে হযরত মুহাম্মদ (সা.) হযরত আলী ইবনে আবি তালিব, হযরত ফাতিমা, হযরত হাসান ইবনে আলী ও হযরত হুসাইন ইবনে আলীকে বোঝানো হয়েছে । এ ধরণের হাদীসের সংখ্যা প্রচুর । তথাপি আমার সংক্ষিপ্ততার প্রতি দৃষ্টি রেখে নিম্নে বহুল উল্লেখিত ও প্রচারিত কয়েকটি হাদীস সম্মানিত পাঠকবৃন্দের জন্য উপস্থাপন করলাম । নিরপেক্ষ মন ও মুক্ত চিন্তা নিয়ে বিবেচনা করার অনুরোধ রইল ।একঃ নবী পত্নী উম্মে সালমা থেকে বর্ণীত আছে যে তিনিإِنَّمَا يُرِيدُ اللَّـهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًاআয়াতটির শানে নুযুল বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, “এ আয়াতটি আমার গৃহে অবতীর্ণ হয়েছে । তখন আমার গৃহে সাতজন লোক ছিলেন । তারা হলেনঃ জিবরাইল (আ.), মিকাইল (আ.), নবী (সা.), আলী, ফাতিমা, হাসান ও হুসাইন । আর আমি ছিলাম দরজার মুখে । আরজ করলাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ আমি কি আহলে বাইতের মধ্যে গন্য নই ? উত্তরে তিনি বললেনঃ (না, এরকম নয়) নিশ্চয় তুমি মঙ্গল পথের যাত্রী, তুমি আমার স্ত্রীদের মধ্যে গণ্য ।২০দুইঃ আব্দুল্লাহ বিন জা’ফর বিন আবি তালিব থেকে বর্ণীত আছে যে তিনি বলেছেন,کما نظر رسول الله (ص) الی رحمه هابطه، قال: ادعو لی، ادعو لی ! فقالت صفیحه- بنت حیی بن اخطب زوجه رسول الله (ص): من یا رسول الله ؟ قال (ص): اهل بیتی: علیا و فاطمة و الحسن و الحسین.অর্থাৎঃ একদা রাসুলুল্লাহ (সা.) জিবরাইল (আ.) এর প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন । তিনি বলেন, তাদেরকে আমার নিকট ডেকে আন, তাদেরকে আমার নিকট ডেকে পাঠাও ! সাফিয়্যা (নবী পত্নী, হুয়িয়্যা বিন আখতারের কন্যা) প্রশ্ন করলেনঃ কাদের কথা বলছেন হে আল্লাহর রাসুল ? প্রতিত্তোরে তিনি বললেনঃ তারা আমার আহলে বাইত-আলী, ফাতিমা, হাসান ও হুসাইন ।২১তিনঃ আনাস বিন মালেক থেকে বর্ণীত হেয়েছে যে তিনি বলেছেন, “রাসুলুল্লাহ (সা.) ছয় মাস পর্যন্ত ফজর নামাজের সময় ফাতিমার গৃহের নিকট থেকে অতিক্রম করতেন এবং বলতেনঃالصلاة یا اهل البیت، إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّـهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًاঅর্থাৎঃ-হে আহলে বাইত, সালাম ও দরুদ তোমাদের উপর । নিশ্চয় আল্লাহ মনস্থ করেছেন তোমাদের কাছ থেকে সকল প্রকার অপবিত্রতা দূরীভূত করতে হে আহলে বাইত এবং মনস্থ করেছেন তোমাদেরকে পুত-পবিত্র করতে ।২২নিবেদক________ মোঃ জাহিদ হোসেন
আহলে বাইত আঃ কাদের কে বলা হয়
পর্ব (((((২)))))
আকরামাহ ও মাক্বাতিল বিন সুলাইমান সূরা আহযাবের ৩৩ নং আয়াতে উল্লেখিত আহলে বাইতের মধ্যে শুধুমাত্র নবীর (সা.) স্ত্রীগণকে গন্য করেছেন । যদিও আমরা উক্ত আয়াতের পূর্ববর্তী দু’টি আয়াতে নবীর স্ত্রীগণের ব্যাপারে আল্লাহর পক্ষ থেকে সাবধান বাণী পরিলক্ষিত করি । তাদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেননি যে তারা সমস্ত ধরণের অপবিত্রতা থেকে মুক্ত । বরং তিনি আল কোরআনে উল্লেখ করেছেনঃ
يَا نِسَاءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِّنَ النِّسَاءِ إِنِ اتَّقَيْتُ
অর্থাৎঃ হে নবীর স্ত্রীগণ, তোমরা তো অন্যান্য নারীদের মত নও যদি আল্লাহকে ভয় কর ।১২
যদি নবীর (সা.) স্ত্রীরা পবিত্র এবং সকল প্রকার অপবিত্রতা থেকে মুক্ত হতেন তাহলে আল্লাহ কখনো তাদের উল্লেখ করে এ ধরণের বক্তব্য পেশ করতেন না । সাথে সাথে নিম্নের আয়াতটিও যথার্থ বলে পরিগণিত হতো না ।
আল্লাহ বলেনঃ
يَا نِسَاءَ النَّبِيِّ مَن يَأْتِ مِنكُنَّ بِفَاحِشَةٍ مُّبَيِّنَةٍ يُضَاعَفْ لَهَا الْعَذَابُ ضِعْفَيْنِ ۚ وَكَانَ ذَٰلِكَ عَلَى اللَّـهِ يَسِيرًا
অর্থাৎঃ-হে, নবীর স্ত্রীগণ, তোমাদের মধ্যে যে প্রকাশ্য কোন অপবিত্র কাজে লিপ্ত হয় তার আযাব ও শাস্তি অন্যদের চেয়ে দ্বিগুন পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে এবং আল্লাহর জন্যে এ কাজ খুবই সহজ ।১৩
আর যদি নবীর (সা.) স্ত্রীগণ সকল পাপ-পংকিলতা থেকে মুক্ত হবেন তাহলে নবীকে (সা.) কষ্ট দেয়া কি পবিত্রতার পরিপন্থি নয় ?
আল বুখারী তার স্বীয় সহিহাতে এভাবে বর্ণনা দিচ্ছেন,
انّ النبی هجر عایشة و حفصة شهرا کاملا و ذلک بسبب افشاء حفصة الحدیث الذی اسراه لها الی عایشة، قالت للنبی: انّک اقسمت ان لا تدخل علینا شهرا ؟
অর্থাৎঃ- নবী (সা.) পূর্ণ এক মাস আয়েশা ও হাফসাকে বয়কট করেছিলেন । এটা এ কারণে যে হাফসা নবীর গোপন কথা আয়েশার কাছে ফাস করে দিয়েছিল । আয়েশা নবীকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ আপনি নাকি প্রতিজ্ঞা করেছেন একমাস আমাদের সাথে সম্পর্ক রাখবেন না ?১৪
সহি আল-বুখারীতে অন্যত্র এভাবে উল্লেখ আছে যে, ইবনে আব্বাস বলেছেনঃ
ابن عباس یقول: لم ازل حریصا علی ان عمر بن خطاب عن المراتین من ازواج النبی (ص) التین قال الله تعالی فیها: ان تتوبا الی الله فقدصغت قلوبکما.
অর্থাৎঃ-আমি ওমর বিন খাত্তাবকে সে দু’জন নবীপত্নীর ব্যাপারে প্রশ্ন করার জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়েছিলাম, যাদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেছেনঃ যদি তারা দু’জন আল্লাহর কাছে তওবা করে তাহলে সে কাজটিই সঠিক হবে । কেননা তোমাদের দু’জনের অন্তর (বাতিলের দকে) ঝুকে গিয়েছিল ।১৫
অতঃপর আল-বুখারী এভাবে বর্ণনা দিচ্ছেনঃ
حتی حج و حججت معه.....................حنی قال ابن عباس، فقلت للخلیفه: من المراتین؟ فقال عمر بن خطاب:و اعجب لک یا ابن عباس ! هما عایشة و حفصة...........................
অর্থাৎঃ- (ইবনে আব্বাস বলেন) ইতিমধ্যে তিনি (হযরত ওমর) হজ্জ সম্পন্ন করেন আর আমিও তার সাথে হজ্জ আদায় করি ।……….ইবনে আব্বাস বলেনঃ আমি খলিফাকে জিজ্ঞেস করলাম ঐ দু’জন মহিলা কারা ছিলেন ? ওমর বিন খাত্তাব উত্তর দিলেনঃ আশ্চর্য তো, তুমি তা জান না হে ইবনে আব্বাস ! তারা হলেন আয়েশা ও হাফসা………………….১৬
বিখ্যাত সুন্নী আলেম ও তাফসীরকারক আল্লামা ফাখরে রাযী তার তাফসীর গ্রন্থ ‘তাফসীর আল-কাবির’-এ সূরা তাহরীমের চতুর্থ আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেছেন যে, এ আয়াতটি হযরত আয়েশা ও হাফসাকে সম্বোধন করে নাযিল হয়েছে ।১৭
অন্যত্র এভাবে বর্ণিত হয়েছে যে,
ها هی عایشة تعقبها للنبی (ص) بعد ما فقدته فی لیالی نوبتها و قوله (ص) لها ما لک یا عایشة ! اغرت ؟ فقالت: و ما لی ان لا یغار مثلی علی مثلک ؟ فقال لها افاخذک شیطانک ؟!
অর্থাৎঃ- যখন আয়েশা কয়েক রাত্র নবী (সা.) এর অনুপস্থিতি ও তার পালা অতিক্রম হওয়ায় চুপিসারে হযরতের পিছু লেগেছিল তখন মহানবী (সা.) তাকে উদ্দেশ্য করে বলেনঃ তোমার কি হয়েছে হে আয়েশা ? তুমি কেন আমাকে শুধু তোমার জন্য মনে করছো ? আয়েশা বলেনঃ আমার মত মানুষ কি আপনার মত ব্যক্তির ব্যাপারে ইর্ষা করতে পারে না ? অতঃপর নবী (সা.) তাকে বললেনঃ তোমাকে কি তোমার শয়তানে ধরেছে ?১৮
এভাবে প্রিয় নবী (সা.) এর পিছু লাগা এবং মহানবীর (সা.) উক্তি ‘তোমাকে কি তোমার শয়তান ধরেছে ?’ কোনক্রমেই সূরা আহযাবের ৩৩ নং আয়াতে উল্লিখিত ‘আহলে বাইতকে আল্লাহ সমস্ত প্রকার অপবিত্রতা থেকে তুরে রেখেছেন এবং তাদেরকে পুত পবিত্র করেছেন;- উক্তির সাথে সংগতিপূর্ণ হতে পারে না ।
হযরত আয়েশা নবী করিম (সা.) এর অমীয় বাণী ও ঐতিহাসিক নির্দেশ অমান্য করে ‘হাওয়াব’ নামক স্থান অতিক্রম করে আলীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিলেন । ইতিহাসে এ যুদ্ধ “জঙ্গে জামাল” বা “উষ্টের যুদ্ধ” নামে অভিহিত । এ যুদ্ধে উভয় পক্ষের বহু সাহাবী তাবেয়ীন ও হাফেজ-ক্বারী হতাহত হন । এ যুদ্ধের কারণ উদঘাটন করলেই বিবেকবান মানুষ মাত্রই উপলদ্ধি করতে পারবেন যে মা আয়েশা যদি কোরআনের পরিভাষায় ‘রেজস’ বা অপবিত্রতা থেকে মুক্ত থাকতেন তাহলে কখনো এ যুদ্ধ সংঘটিত হত না । এ ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ সম্বন্ধে অবগত হবার জন্য পাঠকদের নিম্নলিখিত পুস্তকগুলো অধ্যায়নের অনুরোধ করছি ।
১. কামেল ফি আত তারিখ, খণ্ড-৩, পৃঃ-১০৭ ।
২. আল ফুতুহ, খণ্ড-১, অধ্যায়-২, পৃঃ-৪৫৬ ও ৪৫৭ ।
৩. আনসাব আল আশরাফ, খণ্ড-২, পৃঃ-২২৮, কায়রো ।
৪. আত তাবাক্বাত আল কোবরা, খণ্ড-৩, পৃঃ-৩১, বৈরুত ।
৫. কানযুল উম্মাল, খণ্ড-৩, পৃঃ-১৬১ ।
৬. মুসনাদে আহমাদ, খণ্ড-৬, পৃঃ-৯৭, রৈুত ।
৭. মাজমুআ আয-যাওয়ায়েদ, খণ্ড-৭, পৃঃ-৩৪ ।
৮. সহি আল বুখারী, কিতাব বিদয় আল খালক ।
৯. সহি আল বুখারী, কিতাব আল জিহাদ ওয়াল মিযার বাবে আয়ওয আন নাবী, খণ্ড-৪, পৃঃ-৪৬; খণ্ড-২, পৃঃ-১২৫ ।
১০. সহি মুসলিম, খণ্ড-২, পৃঃ-৫৬০; খণ্ড-৮, পৃঃ-১৮১, মিশর, শেবকাত এলাহিয়া, শারহেন নাবাবী ।
তাছাড়াও হযরত আয়েশা হযরত ওসমানকে কাফের ফতোয়া দিয়ে জনগণকে নির্দেশ দিয়েছিলেন খলিফাকে হত্যা করতে । তার ঐতিহাসিদ ফতোয়া ইতিহাস গ্রন্থসমূহে এভাবে উল্লেখ আছে যে তিনি বলেছেন,
اقتلو نعثلا فقد کفر
অর্থাৎঃ- না’সালকে হত্যা কর সে কাফের হয়ে গেছে ।
তিনি হযরত ওসমানকে না’সাল বলে একজন ইয়াহুদী বৃদ্ধের সাথে তুলনা করেছেন ।
আবার কোন কোন ইতিহাস গ্রন্থে এভাবে বর্ণীত আছে যে, তিনি ওসমানকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন,
اقتلو نعثلا فقد فجر
অর্থাৎঃ- না’সালকে হত্যা কর সে ফাজের হয়ে গেছে ।১৯
এত কিছুর পর কি করে তাতহীরের পবিত্র আয়াতটিতে উল্লেখিত আহলে বাইতের মধ্যে নবী (সা.) এর স্ত্রীগণও গণ্য হতে পারেন ?
বস্তুতঃ যদি আমারা তাফসীর ও হাদীস গ্রন্থাবলী পর্যবেক্ষণ করি তাহলে দেখতে পাবো যে, সেখানে আহলে বাইত বলতে হযরত মুহাম্মদ (সা.) হযরত আলী ইবনে আবি তালিব, হযরত ফাতিমা, হযরত হাসান ইবনে আলী ও হযরত হুসাইন ইবনে আলীকে বোঝানো হয়েছে । এ ধরণের হাদীসের সংখ্যা প্রচুর । তথাপি আমার সংক্ষিপ্ততার প্রতি দৃষ্টি রেখে নিম্নে বহুল উল্লেখিত ও প্রচারিত কয়েকটি হাদীস সম্মানিত পাঠকবৃন্দের জন্য উপস্থাপন করলাম । নিরপেক্ষ মন ও মুক্ত চিন্তা নিয়ে বিবেচনা করার অনুরোধ রইল ।
একঃ নবী পত্নী উম্মে সালমা থেকে বর্ণীত আছে যে তিনি
إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّـهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا
আয়াতটির শানে নুযুল বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, “এ আয়াতটি আমার গৃহে অবতীর্ণ হয়েছে । তখন আমার গৃহে সাতজন লোক ছিলেন । তারা হলেনঃ জিবরাইল (আ.), মিকাইল (আ.), নবী (সা.), আলী, ফাতিমা, হাসান ও হুসাইন । আর আমি ছিলাম দরজার মুখে । আরজ করলাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ আমি কি আহলে বাইতের মধ্যে গন্য নই ? উত্তরে তিনি বললেনঃ (না, এরকম নয়) নিশ্চয় তুমি মঙ্গল পথের যাত্রী, তুমি আমার স্ত্রীদের মধ্যে গণ্য ।২০
দুইঃ আব্দুল্লাহ বিন জা’ফর বিন আবি তালিব থেকে বর্ণীত আছে যে তিনি বলেছেন,
کما نظر رسول الله (ص) الی رحمه هابطه، قال: ادعو لی، ادعو لی ! فقالت صفیحه- بنت حیی بن اخطب زوجه رسول الله (ص): من یا رسول الله ؟ قال (ص): اهل بیتی: علیا و فاطمة و الحسن و الحسین.
অর্থাৎঃ একদা রাসুলুল্লাহ (সা.) জিবরাইল (আ.) এর প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন । তিনি বলেন, তাদেরকে আমার নিকট ডেকে আন, তাদেরকে আমার নিকট ডেকে পাঠাও ! সাফিয়্যা (নবী পত্নী, হুয়িয়্যা বিন আখতারের কন্যা) প্রশ্ন করলেনঃ কাদের কথা বলছেন হে আল্লাহর রাসুল ? প্রতিত্তোরে তিনি বললেনঃ তারা আমার আহলে বাইত-আলী, ফাতিমা, হাসান ও হুসাইন ।২১
তিনঃ আনাস বিন মালেক থেকে বর্ণীত হেয়েছে যে তিনি বলেছেন, “রাসুলুল্লাহ (সা.) ছয় মাস পর্যন্ত ফজর নামাজের সময় ফাতিমার গৃহের নিকট থেকে অতিক্রম করতেন এবং বলতেনঃ
الصلاة یا اهل البیت، إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّـهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا
অর্থাৎঃ-হে আহলে বাইত, সালাম ও দরুদ তোমাদের উপর । নিশ্চয় আল্লাহ মনস্থ করেছেন তোমাদের কাছ থেকে সকল প্রকার অপবিত্রতা দূরীভূত করতে হে আহলে বাইত এবং মনস্থ করেছেন তোমাদেরকে পুত-পবিত্র করতে ।২২
নিবেদক________ মোঃ জাহিদ হোসেন
মন্তব্যসমূহ