শিয়া অর্থ অনুসারী প্রথম পর্বে আরবি ভাষায় শিয়া শব্দের প্রকৃত অর্থ হচ্ছে, এক, দুই অথবা একদল অনুসারী। শিয়া শব্দটি কোরআন শরীফে কয়েকবার এই অর্থে ব্যবহার হয়েছে। উদাহরণস্বরুপ: আল্লাহ তা'য়ালা হযরত মুসা (আ.)-এর একজন অনুসারীকে তাঁর শিয়া বলেছেন (সূরা কিছাছ, আয়াত-১৫)। অন্যক্ষেত্রে হযরত ইব্রাহীম (আ.) কে হযরত নুহ (আ.) এর শিয়া বলে পরিচয় দেয়া হয়েছে (সূরা ছাফ্ফাত, আয়াত-৩৭,৮৩)। ইসলামের প্রারম্ভে শিয়া শব্দটি প্রকৃত বা অভিধানিক অর্থে, বিভিন্ন ব্যক্তির অনুসারীগণকে বলা হত। যেমন, কিছু রেওয়ায়েতে আলী ইবনে আবি তালিব (আ.)-এর শিয়া এবং কিছু রেওয়ায়াতে মোয়াবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ানের শিয়া বলে ইঙ্গিত করা হয়েছে। কিন্তু এই শব্দটি ক্রমান্বয়ে দ্বিতীয় বা পারিভাষিক অর্থে পরিবর্তন হয় যার অর্থে শুধুমাত্র ইমাম আলী (আ.)-এর অনুসারীগণকে এবং যারা তার ইমামতের উপর বিশ্বাসী তাদেরকে শিয়া বলা হয়। শাহরেস্তানি (মৃত্যু-৫৪৮ হিজরি) আল মিলালু ওয়াননিহাল নামক গ্রন্থে যা বিভিন্ন দ্বীন ও মাযহাব সম্পর্কে লেখা একটি গুরুত্বপূর্ণ সূত্র, এইরূপ বলেছেন: 'শিয়া হচ্ছে তারাই যারা ইমাম আলী (আ.)-কে বিশেষভাবে অনুসরণ করে এবং তার ইমামত ও খেলাফতকে হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর ইচ্ছা এবং তারই শিক্ষাদানের ফল স্বরূপ বলে মনে করে (শাহরেস্তানি, আল মিলালু ওয়াননিহাল, খণ্ড-১,পৃ.-১৪৬)। এই সংজ্ঞাটি যথার্থ, কেননা শিয়ারা এই বিশ্বাসের উপর বিশ্বাসী যে হযরত আলী (আ.)-কে অনুসরণ করার কারণ হচ্ছে হযরত মোহম্মাদ (সা.)-এর আদেশ ও তারই ইচ্ছাস্বরূপ, না হযরত আলী (আ.)-এর নিজ ইচ্ছা, যেরূপ শিয়া ব্যতীত অনেকেই মনে করে হযরত মুহাম্মাদ (সা.) তাঁর স্থলাভিষিক্ত নির্ধারণের দায়িত্ব জনগণের উপর অর্পণ করে গিয়েছেন এবং তার মৃত্যুর পর এমন ব্যক্তির অনুসরণ করেছে যাকে তারা নিজেরাই সকিফাতে নির্ধারণ করেছিল। অবশ্যই উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে যে আবু বকর ইবনে আবি কোহাফা যে জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হয়েছিল সে নিজে এই বিশ্বাসের উপর বিশ্বাসী ছিল যে অবশ্যই স্থলাভিষিক্ত নির্ধারণ করতে হবে এবং উমর ইবনে খাত্তাবও ছয়জনের একটি পরামর্শ পরিষদ গঠন ও তার সমস্ত কর্মসূচী নির্ধারণ করে গিয়েছিলেন, যাতে করে এই কমিটির মধ্যে থেকে একজনকে নিজের স্থলাভিষিক্ত হিসাবে নির্ধারণ করতে পারে। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, যে আলী (আ.) চতুর্থ খলীফা ছিলেন এবং সমস্ত মুসালমানরা তাকে নির্বাচন করেছিল কিন্তু তিনি তৃতীয় খলীফা উছমান বিন আফ্ফানের মৃত্যুর পর, খেলাফত দায়িত্বকে বাধ্য হয়ে মেনে নেন। হাসান ইবনে মুসা নো'বাখতি (মৃত্যু-৩১৩ হিযরি) শিয়া মাযহাবের একজন বিখ্যাত গবেষক তার ফিরাকুশ শিয়া নামক গ্রন্থে এরুপ বলেন: শিয়া, ইমাম আলী (আ.)-এর দল ও গোষ্ঠী। তারা হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর জামানায় এবং তার পরেও শিয়া নামে পরিচিত ছিল এবং আলী (আ.)-এর অনুসারী ও তার ইমামতের উপর বিশ্বাসী । শেইখ মুফিদ (মৃত্যু-৪১৩ হিযরি) একজন বিখ্যাত আলেম, শিয়া শব্দের ব্যাখ্যাতে এরূপ বলেন: শিয়া হচ্ছে তারাই যারা ইমাম আলী (আ.)-কে অনুসরণ করে এবং তাঁকে হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর অব্যবহিত পরে তার স্থলাভিষিক্ত হিসেবে মেনে থাকে (মুফিদ, আওয়ায়েলুল মাকালাত, পৃ.-৩৬)। (শিয়া মাযহাবের অনুসারীদেরকে পরবর্তীতে ইমামিয়া বলা হত) শেইখ মুফিদ শিয়া মাযহাবের নামের পরিবর্তন ও ইমামিয়া বলার কারণে বলেন: এই সংজ্ঞাটি তাদের ক্ষেত্রে বলা হয় যারা ইমামতের প্রয়োজনীয়তা ও তা সব জামানাই (যুগেই) অব্যাহত থাকার এবং সুস্পষ্টভাবে ইমাম (আ.)-কে নির্ধারণের প্রয়োজনীয়তা, এছাড়াও তার নিষপাপত্ব ও পরিপূর্ণতার উপর ঈমান রাখে (মাছদার, পৃ.-৩৭)। এমতাবস্থায় বলতে পারি শিয়া মুসলমান বলতে তাদেরকে বোঝায় যারা হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর অসিয়ত ও তার স্থলাভিষিক্তের উপর এরূপ বিশ্বাস রাখে: ক)- হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর স্থলাভিষিক্তির পদ একটি ঐশী পদ। খ)- যেরূপ হযরত মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহ তা"য়ালার পক্ষ থেকে মনোনীত হয়েছেন, সেইরূপ তার স্থলাভিষিক্তও আল্লাহর পক্ষ থেকে মনোনীত এবং হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর দ্বারা মানুষের মাঝে উপস্থাপিত হবে। গ)- ইমাম আলী (আ.), হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর ঠিক পরবর্তী স্থলাভিষিক্ত। আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মাদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মাদ ওয়া আজ্জিল ফারাজাহুম নিবেদক মোঃ জাহিদ হোসেন
শিয়া অর্থ অনুসারী
প্রথম পর্বে
আরবি ভাষায় শিয়া শব্দের প্রকৃত অর্থ হচ্ছে, এক, দুই অথবা একদল অনুসারী। শিয়া শব্দটি কোরআন শরীফে কয়েকবার এই অর্থে ব্যবহার হয়েছে। উদাহরণস্বরুপ: আল্লাহ তা'য়ালা হযরত মুসা (আ.)-এর একজন অনুসারীকে তাঁর শিয়া বলেছেন (সূরা কিছাছ, আয়াত-১৫)। অন্যক্ষেত্রে হযরত ইব্রাহীম (আ.) কে হযরত নুহ (আ.) এর শিয়া বলে পরিচয় দেয়া হয়েছে (সূরা ছাফ্ফাত, আয়াত-৩৭,৮৩)।
ইসলামের প্রারম্ভে শিয়া শব্দটি প্রকৃত বা অভিধানিক অর্থে, বিভিন্ন ব্যক্তির অনুসারীগণকে বলা হত। যেমন, কিছু রেওয়ায়েতে আলী ইবনে আবি তালিব (আ.)-এর শিয়া এবং কিছু রেওয়ায়াতে মোয়াবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ানের শিয়া বলে ইঙ্গিত করা হয়েছে। কিন্তু এই শব্দটি ক্রমান্বয়ে দ্বিতীয় বা পারিভাষিক অর্থে পরিবর্তন হয় যার অর্থে শুধুমাত্র ইমাম আলী (আ.)-এর অনুসারীগণকে এবং যারা তার ইমামতের উপর বিশ্বাসী তাদেরকে শিয়া বলা হয়।
শাহরেস্তানি (মৃত্যু-৫৪৮ হিজরি) আল মিলালু ওয়াননিহাল নামক গ্রন্থে যা বিভিন্ন দ্বীন ও মাযহাব সম্পর্কে লেখা একটি গুরুত্বপূর্ণ সূত্র, এইরূপ বলেছেন: 'শিয়া হচ্ছে তারাই যারা ইমাম আলী (আ.)-কে বিশেষভাবে অনুসরণ করে এবং তার ইমামত ও খেলাফতকে হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর ইচ্ছা এবং তারই শিক্ষাদানের ফল স্বরূপ বলে মনে করে (শাহরেস্তানি, আল মিলালু ওয়াননিহাল, খণ্ড-১,পৃ.-১৪৬)। এই সংজ্ঞাটি যথার্থ, কেননা শিয়ারা এই বিশ্বাসের উপর বিশ্বাসী যে হযরত আলী (আ.)-কে অনুসরণ করার কারণ হচ্ছে হযরত মোহম্মাদ (সা.)-এর আদেশ ও তারই ইচ্ছাস্বরূপ, না হযরত আলী (আ.)-এর নিজ ইচ্ছা, যেরূপ শিয়া ব্যতীত অনেকেই মনে করে হযরত মুহাম্মাদ (সা.) তাঁর স্থলাভিষিক্ত নির্ধারণের দায়িত্ব জনগণের উপর অর্পণ করে গিয়েছেন এবং তার মৃত্যুর পর এমন ব্যক্তির অনুসরণ করেছে যাকে তারা নিজেরাই সকিফাতে নির্ধারণ করেছিল।
অবশ্যই উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে যে আবু বকর ইবনে আবি কোহাফা যে জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হয়েছিল সে নিজে এই বিশ্বাসের উপর বিশ্বাসী ছিল যে অবশ্যই স্থলাভিষিক্ত নির্ধারণ করতে হবে এবং উমর ইবনে খাত্তাবও ছয়জনের একটি পরামর্শ পরিষদ গঠন ও তার সমস্ত কর্মসূচী নির্ধারণ করে গিয়েছিলেন, যাতে করে এই কমিটির মধ্যে থেকে একজনকে নিজের স্থলাভিষিক্ত হিসাবে নির্ধারণ করতে পারে। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, যে আলী (আ.) চতুর্থ খলীফা ছিলেন এবং সমস্ত মুসালমানরা তাকে নির্বাচন করেছিল কিন্তু তিনি তৃতীয় খলীফা উছমান বিন আফ্ফানের মৃত্যুর পর, খেলাফত দায়িত্বকে বাধ্য হয়ে মেনে নেন।
হাসান ইবনে মুসা নো'বাখতি (মৃত্যু-৩১৩ হিযরি) শিয়া মাযহাবের একজন বিখ্যাত গবেষক তার ফিরাকুশ শিয়া নামক গ্রন্থে এরুপ বলেন: শিয়া, ইমাম আলী (আ.)-এর দল ও গোষ্ঠী। তারা হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর জামানায় এবং তার পরেও শিয়া নামে পরিচিত ছিল এবং আলী (আ.)-এর অনুসারী ও তার ইমামতের উপর বিশ্বাসী ।
শেইখ মুফিদ (মৃত্যু-৪১৩ হিযরি) একজন বিখ্যাত আলেম, শিয়া শব্দের ব্যাখ্যাতে এরূপ বলেন: শিয়া হচ্ছে তারাই যারা ইমাম আলী (আ.)-কে অনুসরণ করে এবং তাঁকে হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর অব্যবহিত পরে তার স্থলাভিষিক্ত হিসেবে মেনে থাকে (মুফিদ, আওয়ায়েলুল মাকালাত, পৃ.-৩৬)। (শিয়া মাযহাবের অনুসারীদেরকে পরবর্তীতে ইমামিয়া বলা হত) শেইখ মুফিদ শিয়া মাযহাবের নামের পরিবর্তন ও ইমামিয়া বলার কারণে বলেন: এই সংজ্ঞাটি তাদের ক্ষেত্রে বলা হয় যারা ইমামতের প্রয়োজনীয়তা ও তা সব জামানাই (যুগেই) অব্যাহত থাকার এবং সুস্পষ্টভাবে ইমাম (আ.)-কে নির্ধারণের প্রয়োজনীয়তা, এছাড়াও তার নিষপাপত্ব ও পরিপূর্ণতার উপর ঈমান রাখে (মাছদার, পৃ.-৩৭)।
এমতাবস্থায় বলতে পারি শিয়া মুসলমান বলতে তাদেরকে বোঝায় যারা হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর অসিয়ত ও তার স্থলাভিষিক্তের উপর এরূপ বিশ্বাস রাখে:
ক)- হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর স্থলাভিষিক্তির পদ একটি ঐশী পদ।
খ)- যেরূপ হযরত মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহ তা"য়ালার পক্ষ থেকে মনোনীত হয়েছেন, সেইরূপ তার স্থলাভিষিক্তও আল্লাহর পক্ষ থেকে মনোনীত এবং হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর দ্বারা মানুষের মাঝে উপস্থাপিত হবে।
গ)- ইমাম আলী (আ.), হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর ঠিক পরবর্তী স্থলাভিষিক্ত।
আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মাদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মাদ ওয়া আজ্জিল ফারাজাহুম
নিবেদক মোঃ জাহিদ হোসেন
মন্তব্যসমূহ