শিয়া মাযহাবের সূচনা সাধারণত এই প্রশ্ন হয়ে থাকে যে শিয়া মাযহাব কোন সময় থেকে শুরু হয়েছে। ইমামত সম্পর্কে অনেক হাদীস বিভিন্ন সূত্রে শিয়া এবং অন্যান্য মাযহাব থেকে বর্ণিত হয়েছে যা পরবর্তিতে "শিয়া মাযহাবের আক্বাইদ" নামক অধ্যায়ে উল্লেখ ও পর্যালোচনা করা হবে। এখানে আমরা হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এর থেকে বর্ণিত হাদীসগুলি যেখানে কোন গোষ্ঠীকে আলী (আ.)-এর শিয়া বা অনুসারী বলে স্মরণ করেছেন সেগুলি, অতঃপর এই বিষয়ের উপর উল্লেখিত দলিলগুলি যা বিভিন্ন হাদীসসমূহে ও ইসলামী ইতিহাসে এসেছে এবং আমাদের আলোচ্য বিষয়কে বুঝতে সহায়তা করবে, সেগুলি উল্লেখ করব। যে সমস্ত হাদীসগুলি এখানে উল্লেখ করা হবে তা আহলে সুন্নাতের গুরুত্বপূর্ণ সূত্রগুলি থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। উল্লেখিত হাদীসগুলি (যা এই বিষয়ে বর্ণিত হয়েছে) শুধুমাত্র উদাহরণ স্বরূপ আনা হল কিন্তু এ বিষয়ক অন্যান্য হাদীসগুলি এই সূত্রে অথবা অন্যান্য সূত্রে পাওয়া যাবে। ১- ইবনে আসাকির (মৃত্যু ৫৭১ হিজরি) জাবির ইবনে আবদুল্লাহ আনসারি থেকে বলেন: একদিন আমরা হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এর নিকট ছিলাম যখন আলী (আ.) প্রবেশ করলেন। এমন সময় হযরত মুহাম্মাদ (সা.) বললেন: 'তারই কসম, যার হাতে আমার জীবন, এই ব্যক্তির (আলী) ও তার শিয়ারা (অনুসারী) কিয়ামত দিবসে মুক্তিপ্রাপ্ত হবে' অতঃপর সূরা বাইয়েনার সাত নং আয়াতটি নাযিল হয় 'অবশ্যই যারা ঈমান এনেছে এবং নেককাজ করবে সমস্ত মানব জাতির থেকে তারা উত্তম'। এর পর থেকে যখন হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এর সাহাবাগণ আলী (আ.)-কে দেখতেন, বলতেন মানুষের মধ্যে উত্তম ব্যক্তি এসেছে (ইবনে আছাকির, তারিখে ইবনে আছাকির, খণ্ড- ২, পৃঃ- ৪৪২, সুয়ুতি, আদ্দুররুল মানছুর, খণ্ড-৮, পৃঃ-৫৮৯০)। ২- ইবনে হাজার (মৃত্যু-৯৭৪ হিজরি) ইবনে আববাস থেকে বর্ণনা করে যে : হযরত মুহাম্মাদ (সা.) সূরা বাইয়েনার সাত নং আয়াতটি নাযিল হওয়ার পর আলী (আ.)-কে বলেন: 'ঐ (উত্তম) ব্যক্তি তুমি এবং তোমার শিয়ারা। তুমি এবং তোমার শিয়ারা কিয়ামতের দিনে উপস্থিত হবে যখন আল্লাহ তা'য়ালা তোমাদের উপর সন্তুষ্ট এবং তোমরাও তাঁর উপর সন্তুষ্ট। আর তোমার শত্রুরা উপস্থিত হবে রাগান্বিত অবস্থায় এবং তাদের গর্দান ধরে নিয়ে যাওয়া হবে' (ইবনে হাজার, আছছাওয়াইকুল মোহরিকাহ, অধ্যায়-১১)। এই গ্রন্থেই ইবনে হাজার উম্মে সালামা থেকে বর্ণনা করে : এক রাতে হযরত মুহাম্মাদ (সা.) যখন তার বাড়ীতে ছিল, তাঁর কন্যা ফাতিমা (সা. আ.) ও তাঁর সাথে আলী (আ.) প্রবেশ করেন। অতঃপর হযরত মুহাম্মাদ (সা.) বলেন: "হে আলী, তুমি ও তোমার সাহাবাগণ বেহেশত্বাসী। তুমি ও তোমার শিয়ারা বেহেশতবাসী"। ৩- ইবনে আছির (মৃত্যু-৬০৬ হিজরি) বলেন: হযরত মুহাম্মাদ (সা.) আলী (আ.)-কে উদ্দেশ্য করে বলেন : "হে আলী, তুমি আল্লাহর সম্মুখে উপস্থিত হবে এমন অবস্থায় যে, তুমি ও তোমার শিয়ারা আল্লাহর উপর সন্তুষ্ট এবং আল্লাহ তা'য়ালা তোমাদের উপর সন্তুষ্ট আর তোমার শত্রুরা উপস্থিত হবে রাগান্বিত এবং তাদের গর্দান ধরা হবে' এবং হযরত মুহাম্মাদ (সা.) তাঁর নিজ হাতে গর্দান ধরে দেখিয়ে দেন (ইবনে আছির, আননিহায়াহ, কামাহ ধাতুমূল)। অন্যান্য আরো হাদীস আছে যেখানে হযরত মুহাম্মাদ (সা.) আলী (আ.)-কে "আমাদের শিয়া' বলে সম্বোধন করেছেন। এবং এই ব্যাখ্যাটি পুর্বে উল্লেখিত সংজ্ঞাগুলির সাথে একমত, যেমন আমরা পূর্বে বলেছি শিয়া হচ্ছে তারাই যারা হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর শিক্ষাদানের ফলে ইমাম আলী (আ.)-কে অনুসরণ করে, না আলী (আ.)-এর নিজ সিদ্ধান্তে। প্রকৃত অর্থে আলী (আ.)-এর শিয়া, অর্থাত্ত হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর শিয়া। উদাহরণ স্বরূপ, ইবনে আসাকির হযরত মুহাম্মাদ (সা.) থেকে বর্ণনা করেছে যে : 'অবশ্যই বেহেশ্তে একটি ঝর্না আছে যা ফুলের মধুর থেকেও মিষ্টি, মাখনের থেকেও নরম, বরফের থেকেও ঠাণ্ডা এবং তার সুগন্ধ মেশকের থেকেও বেশি। ঐ ঝর্নার তলদেশে যে মাটি আছে তা থেকে আমি এবং আমার আহলে বাইত তৈরি হয়েছে আর আমাদের শিয়ারাও ঐ মাটির অংশ বিশেষ থেকে তৈরি হয়েছে' (তারিখে ইবনে আছাকির, খণ্ড-১, পৃ.-১৩১)। অন্যান্য অনেক হাদীস আছে যেখানে হযরত মুহাম্মাদ (সা.) আলী (আ.)-কে 'তোমার বংশধরের শিয়া' বলে সম্বোধন করেছেন। এই উক্তিটিও পূর্বের আলোচ্য বিষয়ের সমর্থক। কেননা পূর্বে আমরা বলেছি, শিয়া হচ্ছে ইমাম আলী (আ.)-এর অনুসারী এবং তার ইমামতের উপর বিশ্বাসীগণ। ঠিক যেরূপ আমরা তৃতীয় অধ্যায়ে এই বিষয়ের উপর বিস্তারিত আলোচনা করব যে, শিয়া মাযহাবিগণ এই বিষয়ের উপর বিশ্বাসী যে, ইমাম আলী (আ.) হচ্ছেন প্রথম ইমাম এবং তারপর 'ইমামত বিষয়টি' হযরত ফাতিমা (সা. আ.) ও তাঁর বংশের থেকে আল্লাহ তা'য়ালা যাদেরকে মনোনীত এবং হযরত মুহাম্মাদ (সা.) উপস্থাপন করেছেন, তাদের মধ্যে অব্যাহত থাকবে। উদাহরণ স্বরূপ, যামাখশারি (মৃত্যু-৫২৮হিজরি ) তার নিজ গ্রন্থে 'রাবিউল আবরার' বলেন: হযরত মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন: 'হে আলী, যখন কিয়ামত দিবস আসবে, আমি আল্লাহ তা'য়ালার রহমত ও অনুগ্রহে আশ্রয় নেব এবং তুমি আমার প্রতি আশ্রয় নিবে, তোমার সন্তানরা তোমার প্রতি আর তাঁদের শিয়ারা (অনুসারীরা) তাদের কাছে আশ্রয় নিবে। ঐ সময় দেখবে যে আমাদেরকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়' (সুবহানি, আল মিলালু ওয়াননিহাল, খণ্ড-৬, পৃ.-১০৪) আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মাদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মাদ ওয়া আজ্জিল ফারাজাহুম নিবেদক মোঃ জাহিদ হোসেন
শিয়া মাযহাবের সূচনা
সাধারণত এই প্রশ্ন হয়ে থাকে যে শিয়া মাযহাব কোন সময় থেকে শুরু হয়েছে।
ইমামত সম্পর্কে অনেক হাদীস বিভিন্ন সূত্রে শিয়া এবং অন্যান্য মাযহাব থেকে বর্ণিত হয়েছে যা পরবর্তিতে "শিয়া মাযহাবের আক্বাইদ" নামক অধ্যায়ে উল্লেখ ও পর্যালোচনা করা হবে। এখানে আমরা হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এর থেকে বর্ণিত হাদীসগুলি যেখানে কোন গোষ্ঠীকে আলী (আ.)-এর শিয়া বা অনুসারী বলে স্মরণ করেছেন সেগুলি, অতঃপর এই বিষয়ের উপর উল্লেখিত দলিলগুলি যা বিভিন্ন হাদীসসমূহে ও ইসলামী ইতিহাসে এসেছে এবং আমাদের আলোচ্য বিষয়কে বুঝতে সহায়তা করবে, সেগুলি উল্লেখ করব। যে সমস্ত হাদীসগুলি এখানে উল্লেখ করা হবে তা আহলে সুন্নাতের গুরুত্বপূর্ণ সূত্রগুলি থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। উল্লেখিত হাদীসগুলি (যা এই বিষয়ে বর্ণিত হয়েছে) শুধুমাত্র উদাহরণ স্বরূপ আনা হল কিন্তু এ বিষয়ক অন্যান্য হাদীসগুলি এই সূত্রে অথবা অন্যান্য সূত্রে পাওয়া যাবে।
১- ইবনে আসাকির (মৃত্যু ৫৭১ হিজরি) জাবির ইবনে আবদুল্লাহ আনসারি থেকে বলেন: একদিন আমরা হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এর নিকট ছিলাম যখন আলী (আ.) প্রবেশ করলেন। এমন সময় হযরত মুহাম্মাদ (সা.) বললেন: 'তারই কসম, যার হাতে আমার জীবন, এই ব্যক্তির (আলী) ও তার শিয়ারা (অনুসারী) কিয়ামত দিবসে মুক্তিপ্রাপ্ত হবে' অতঃপর সূরা বাইয়েনার সাত নং আয়াতটি নাযিল হয় 'অবশ্যই যারা ঈমান এনেছে এবং নেককাজ করবে সমস্ত মানব জাতির থেকে তারা উত্তম'। এর পর থেকে যখন হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এর সাহাবাগণ আলী (আ.)-কে দেখতেন, বলতেন মানুষের মধ্যে উত্তম ব্যক্তি এসেছে (ইবনে আছাকির, তারিখে ইবনে আছাকির, খণ্ড- ২, পৃঃ- ৪৪২, সুয়ুতি, আদ্দুররুল মানছুর, খণ্ড-৮, পৃঃ-৫৮৯০)।
২- ইবনে হাজার (মৃত্যু-৯৭৪ হিজরি) ইবনে আববাস থেকে বর্ণনা করে যে : হযরত মুহাম্মাদ (সা.) সূরা বাইয়েনার সাত নং আয়াতটি নাযিল হওয়ার পর আলী (আ.)-কে বলেন: 'ঐ (উত্তম) ব্যক্তি তুমি এবং তোমার শিয়ারা। তুমি এবং তোমার শিয়ারা কিয়ামতের দিনে উপস্থিত হবে যখন আল্লাহ তা'য়ালা তোমাদের উপর সন্তুষ্ট এবং তোমরাও তাঁর উপর সন্তুষ্ট। আর তোমার শত্রুরা উপস্থিত হবে রাগান্বিত অবস্থায় এবং তাদের গর্দান ধরে নিয়ে যাওয়া হবে' (ইবনে হাজার, আছছাওয়াইকুল মোহরিকাহ, অধ্যায়-১১)। এই গ্রন্থেই ইবনে হাজার উম্মে সালামা থেকে বর্ণনা করে : এক রাতে হযরত মুহাম্মাদ (সা.) যখন তার বাড়ীতে ছিল, তাঁর কন্যা ফাতিমা (সা. আ.) ও তাঁর সাথে আলী (আ.) প্রবেশ করেন। অতঃপর হযরত মুহাম্মাদ (সা.) বলেন: "হে আলী, তুমি ও তোমার সাহাবাগণ বেহেশত্বাসী। তুমি ও তোমার শিয়ারা বেহেশতবাসী"।
৩- ইবনে আছির (মৃত্যু-৬০৬ হিজরি) বলেন: হযরত মুহাম্মাদ (সা.) আলী (আ.)-কে উদ্দেশ্য করে বলেন : "হে আলী, তুমি আল্লাহর সম্মুখে উপস্থিত হবে এমন অবস্থায় যে, তুমি ও তোমার শিয়ারা আল্লাহর উপর সন্তুষ্ট এবং আল্লাহ তা'য়ালা তোমাদের উপর সন্তুষ্ট আর তোমার শত্রুরা উপস্থিত হবে রাগান্বিত এবং তাদের গর্দান ধরা হবে' এবং হযরত মুহাম্মাদ (সা.) তাঁর নিজ হাতে গর্দান ধরে দেখিয়ে দেন (ইবনে আছির, আননিহায়াহ, কামাহ ধাতুমূল)। অন্যান্য আরো হাদীস আছে যেখানে হযরত মুহাম্মাদ (সা.) আলী (আ.)-কে "আমাদের শিয়া' বলে সম্বোধন করেছেন। এবং এই ব্যাখ্যাটি পুর্বে উল্লেখিত সংজ্ঞাগুলির সাথে একমত, যেমন আমরা পূর্বে বলেছি শিয়া হচ্ছে তারাই যারা হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর শিক্ষাদানের ফলে ইমাম আলী (আ.)-কে অনুসরণ করে, না আলী (আ.)-এর নিজ সিদ্ধান্তে। প্রকৃত অর্থে আলী (আ.)-এর শিয়া, অর্থাত্ত হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর শিয়া। উদাহরণ স্বরূপ, ইবনে আসাকির হযরত মুহাম্মাদ (সা.) থেকে বর্ণনা করেছে যে : 'অবশ্যই বেহেশ্তে একটি ঝর্না আছে যা ফুলের মধুর থেকেও মিষ্টি, মাখনের থেকেও নরম, বরফের থেকেও ঠাণ্ডা এবং তার সুগন্ধ মেশকের থেকেও বেশি। ঐ ঝর্নার তলদেশে যে মাটি আছে তা থেকে আমি এবং আমার আহলে বাইত তৈরি হয়েছে আর আমাদের শিয়ারাও ঐ মাটির অংশ বিশেষ থেকে তৈরি হয়েছে' (তারিখে ইবনে আছাকির, খণ্ড-১, পৃ.-১৩১)।
অন্যান্য অনেক হাদীস আছে যেখানে হযরত মুহাম্মাদ (সা.) আলী (আ.)-কে 'তোমার বংশধরের শিয়া' বলে সম্বোধন করেছেন। এই উক্তিটিও পূর্বের আলোচ্য বিষয়ের সমর্থক। কেননা পূর্বে আমরা বলেছি, শিয়া হচ্ছে ইমাম আলী (আ.)-এর অনুসারী এবং তার ইমামতের উপর বিশ্বাসীগণ। ঠিক যেরূপ আমরা তৃতীয় অধ্যায়ে এই বিষয়ের উপর বিস্তারিত আলোচনা করব যে, শিয়া মাযহাবিগণ এই বিষয়ের উপর বিশ্বাসী যে, ইমাম আলী (আ.) হচ্ছেন প্রথম ইমাম এবং তারপর 'ইমামত বিষয়টি' হযরত ফাতিমা (সা. আ.) ও তাঁর বংশের থেকে আল্লাহ তা'য়ালা যাদেরকে মনোনীত এবং হযরত মুহাম্মাদ (সা.) উপস্থাপন করেছেন, তাদের মধ্যে অব্যাহত থাকবে। উদাহরণ স্বরূপ, যামাখশারি (মৃত্যু-৫২৮হিজরি ) তার নিজ গ্রন্থে 'রাবিউল আবরার' বলেন: হযরত মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন: 'হে আলী, যখন কিয়ামত দিবস আসবে, আমি আল্লাহ তা'য়ালার রহমত ও অনুগ্রহে আশ্রয় নেব এবং তুমি আমার প্রতি আশ্রয় নিবে, তোমার সন্তানরা তোমার প্রতি আর তাঁদের শিয়ারা (অনুসারীরা) তাদের কাছে আশ্রয় নিবে। ঐ সময় দেখবে যে আমাদেরকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়' (সুবহানি, আল মিলালু ওয়াননিহাল, খণ্ড-৬, পৃ.-১০৪)
আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মাদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মাদ ওয়া আজ্জিল ফারাজাহুম
নিবেদক মোঃ জাহিদ হোসেন
মন্তব্যসমূহ