পোস্টগুলি

ডিসেম্বর, ২০২২ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

#শাহাদাৎ_ই_যাহরা_সাঃ_আঃ সুরা হাশরের একুশ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ্ বলেন “কোরান যদি পর্বতের উপর নাজিল করতাম তাহলে তা ধুলিকনাতে পরিনত হয়ে যেতো” সেই কোরান আল্লাহ্ নাজিল করলেন কোথায়? তার প্রিয় হাবিবের কলবে (হৃদয়ে/অন্তরে)- (রেফারেন্স সুরা আশ শুয়ারা, আয়াত ১৯৪)। আর নিজের কলব সম্পর্কে হাবিবুল্লাহ মুহাম্মদ সঃ কি বলেছেন? আসুন কিছু হাদিস দেখিঃ একদা রাসূল (সা.) হযরত ফাতেমাকে সঙ্গে নিয়ে বাইরে আসলেন এবং (উপস্থিত জনসাধারণকে উদ্দেশ্য করে) বললেন : “যে ফাতিমাকে চেনে সে তো চিনেছেই। আর যে তাকে চেনে না তার জেনে রাখা উচিত যে ফাতেমা মুহাম্মদের কন্যা। সে আমার শরীরের অংশ,আমার হৃদয়,আমার অন্তরাত্মা। সুতরাং যে তাকে কষ্ট দেবে সে আমাকেই কষ্ট দিল। আর যে আমাকে কষ্ট দিল সে আল্লাহকে কষ্ট দিল।”- কাশফুল গুম্মাহ্,২য় খণ্ড,পৃ. ২৪। আরেক হাদিসে মাওলা মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন : “আমার কন্যা ফাতিমা পৃথিবীর প্রথম দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত সকল নারীদের নেত্রী। সে আমার দেহের অংশ এবং আমার নয়নের মণি। ফাতেমা আমার হৃদয়ের ফসল এবং দেহের মধ্যে আমার অন্তর সমতুল্য। ফাতেমা মানুষরূপী একটি হুর। যখন সে ইবাদতে দণ্ডায়মান হয় তখন পৃথিবীর বুকে নক্ষত্রসমূহের মত তাঁর জ্যোতি আসমানের ফেরেশতাদের জন্যে প্রজ্বলিত হয়ে ওঠে। আর তখন মহান স্রষ্টা তাঁর ফেরেশতাদের বলেন : “হে আমার ফেরেশতাকুল! আমার দাসী ফাতেমা,আমার অন্যান্য দাসীদের নেত্রী। তাঁর প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ কর,দেখ সে আমার ইবাদতে দণ্ডায়মান এবং আমার ভয়ে তাঁর দেহ কম্পিত। সে মন দিয়ে আমার ইবাদতে মশগুল। তোমরা সাক্ষী থাক,আমি তাঁর অনুসারীদেরকে জাহান্নামের অগ্নি থেকে রক্ষা করবো।”- আমালী,সাদুক,পৃ. ৯৯,১০০। রাসূল (সা.) বলেছেন : “যে ফাতেমাকে কষ্ট দেয় সে যেন আমাকে কষ্ট দেয় আর যে আমাকে কষ্ট দিল সে আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করলো।- বিহারুল আনওয়ার,৪৩তম খণ্ড,পৃ. ৩৯। মানাকিবে শাহরে আশুব,৩য় খণ্ড,পৃ. ১১২। কানযুল ফাওয়াইদ,কারাজেকি,মাকতাবাহ্ মুসতাফাভী,কোম,পৃ. ৩৬০,পঞ্চম অধ্যায়; রেসালাহ্ আত্ তায়া'জ্জুব। ফুসুল আল মুখতারাহ্,শেখ মুফিদ,পৃ. ৫৭। আর এ কথাগুলি কিন্তু নবী সঃ কন্যার মন রাখতে বা নিজের সন্তানের শান উচু করার জন্য বলেননি, আয়াত টা ভুলে যান নি আশা করি, যে, “কোন কিছুই তিনি আপন প্রবৃত্তির তাড়নায় বলেন না,তার প্রতিটি কথাই ওহী বলে গণ্য যা তার প্রতি অবতীর্ণ হয়।”- আন নাজম : ৩,৪।“ কাজেই এটা প্রমানিত যে হাদিসের বাক্যগুলিও মাওলা নিজ থেকে বলেননি, আল্লাহ্‌ পাক তাকে দিয়ে বলিয়েছেন। মুহাম্মদের সঃ কথা যদি সত্য হয়ে থাকে আপনারা রাজি'আল্লাহ বলে গলায় রক্ত তুলে ফেললেও লাভ হবেনা। তারা লানতের মালা অলরেডি গলায় পরে নিয়েছেআর যিনি লানতুল্লাহর মুখমন্ডল থেকে রাজি’আল্লাহর মুখোশ খুলে দিয়েছেন উনার নাম জনাবে ফাতেমা যাহরা। আর সেজন্যই তাকে বিদায় নিতে হয় দুনিয়া থেকে। মাওলা মুহাম্মদ সঃ মা ফাতেমা সাঃ আঃ কে দেখে দাঁড়িয়ে যেতেন। যা উনি আর কারো সন্মানেই করেননি। কায়েনাতের সবাই মাওলার সন্মানে উঠে দাড়াতো, কিন্তু আমার মাওলা সঃ মা ফাতেমা সাঃ আঃ দেখে দাঁড়িয়ে সন্মান জানাতেন। হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, যখন হযরত ফাতেমা নবী (সা.) এর নিকট আসতেন তখন তিনি দাড়িয়ে তাঁকে স্বাগতম জানাতেন, তাঁর হাত ধরে চুমু খেতেন এবং তাঁকে নিজের জায়গায় বসাতেন। এটা কি মেয়ের প্রতি দেখানো বাবার সন্মান? নাকি নারীর প্রতি দেখানো পুরুষের সন্মান? কোনটাই না। যদি এর কোনটা হতো তাহলে দুটোই আমাদের জন্য সুন্নত হয়ে যেতো। আর আমাদের মোল্লারা সুন্নত ছাড়তে রাজীনা তাতে যদি ফরজও ছুটে যায় তবুও সুন্নত ছাড়বেনা ( চেইতেন না, সুন্নতের নামে আপনারা কি করেন তা সবাই জানে, ভরা রাস্তায় ঢিলা কুলুপ নিয়ে আপনারা ড্রাই ক্লিনিং এ লেগে যান সুন্নতের নামে।) বাবা যদি মেয়েকে দেখে দাড়াতেন তবে অন্তত কয়েকজন হলেও এই সুন্নত, পালন করতেন। আর পুরুষ যদি নারীকে দাঁড়িয়ে সন্মান করতেন তাহলে আরও কেউ কেউ দাবী করতেন যে রসুল আমাকে দেখেও দাঁড়াতেন। তাহলে কে দাঁড়াতেন কাকে দেখে? নবুয়ত দাঁড়াতেন ওহুদায়ে বতুল কে দেখে, রিসালাত দাঁড়াতেন উম্মে আবিহা কে দেখে। কোরানের মতে রসুল সঃ যা বলেন তা ওহী, আর রসুল সঃ বলেছেন ফাতেমা উম্মে আবিহা, ফাতিমা তার পিতার মা, আর মায়ের শান কে না জানে? মা না থাকলে সন্তান ভূমিষ্ঠ হতোনা, মা না থাকলে সন্তানের লালন পালন হতোনা, মা না থাকলে যা যা হয় না বা হতোনা সবই রসুল সঃ এর জন্য মা ফাতেমা সাঃ আঃ পালন করেছেন। আর এ কারনেই তিনি উম্মে আবিহা। সেই ফাতেমার ঘরে,( যে ঘরে রসুল গিয়ে ব্যথামুক্ত হয়েছেন, যে ঘরে জিবরাঈল চাক্কি পিষেছেন, যে ঘরে মিকাইল দোলনা ঝুলিয়েছেন, যে ঘরের সামনে তারকা নাজিল হয়েছে, যে ঘরে জিবরাঈল মিসকিন সেজে এসেছেন) আগুন দেয়া হয়েছিলো, রসুলের হৃদয়ে (ফাতেমা) পদাঘাত করে পাজর ভেংগে দেয়া হয়েছিলো, লাথি মেরে হত্যা করা হয়েছিলো গর্ভের সন্তানকে। এমনভাবে হাত ভেংগে দেয়া হয়েছিলো যে সেই হাত দিয়ে বাকি হায়াতে জিন্দেগীতে তিনি তসবির দানা পর্যন্ত টানতে পারেন নি। হায় হায়, এগুলি কোন কাফেরে কিন্তু করেনি, এগুলি করেছে বড় দলের ওস্তাদেরা ( আমরা কাফের এ জন্য যে আমরা তাদের নাম, পরিচয় বলে দেই) রাসুল (সাঃ)-এর ইন্তেকালের পর আহলে বায়াতে রসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর উপর রাজশক্তি কর্তৃক এত অত্যাচারের পাহাড় নেমে আসে এবং তা সহ্য করতে না পেরে ফাতেমা যাহারা সর্বক্ষণ ক্রন্দন ও পিতার উদ্দেশ্যে ফরিয়াদ করতেন । লোকেরা মাওলা আলীর (আঃ) কাছে অভিযোগ করে এবং হযরত আলী (আঃ) জান্নাতুল বাক্বীতে একটি ছোট ঘর তৈরী করে দেন, যেখানে গিয়ে মা ফাতেমা রোজ বসে তাঁর বাবাকে স্বরন করে কাঁদতেন ( রাসুল (সাঃ) এর ঐ সময়কার উম্মতেরা হযরত ফাতেমা যাহারা (সাঃ আঃ) কে পিতার শোকে কান্না করার শব্দ কেও সহ্য করতে পারতেন না এখানেও উনাদের আপত্তি অভিযোগ ছিলো, রাসুল (সঃ) কন্যা কে আরো অনেক ভাবে কষ্ট দিতো ঐ সময়ের মুসলমানেরা, মন খুলে পিতা জন্য কাঁদবে কিন্তু সেটাও করতে দিতো না বরং অভিযোগ করতো তাদের ডিস্টার্ব হয় বলে ) । এটাই ইতিহাসে 'বাইতুল হুজন' বলে প্রসিদ্ধ, অর্থাৎ শোক এবং ক্রন্দন করার ঘর বা শোকের ঘর নামে পরিচিত । ঘটনার শুরু কিন্তু সেদিনে না বন্ধুরা। ভেবে দেখুন, রসুল সঃ এর ওফাতের আগপর্যন্ত সাহাবীগনই সকল যুদ্ধ করেছেন। রসুল সঃ এর ওফাতের পাচদিন গত না হতেই ফাতেমার (সাঃ আঃ) ঘরে পঞ্চাশজন বা আরও বেশি সৈনিক সহ হুকুমতের প্রথম খলিফার গুন্ডাবাহিনী আসে কোথা থেকে!!! আসলে এর শুরু হয়েছে বদরের যুদ্ধের পর থেকেই। এদের বাপ চাচা রা যখন বদরের যুদ্ধে কুকুরের মতো মারা পরে আলী এবং হামজা সহ অন্যান্য মুসলিমের হাতে। কাপুরুষের দল তখন থেকেই নিজের জীবন বাচানোর জন্য মুখে মুখে ইসলামের কথা বলে, যোগ দেয়। মনে মনে লাতের পুজাই করতে থাকে, এই লাতখোরদের কাছে লাতও ছিলো ব্যবসার উপকরন, এজন্য কেউ লাতের মন্দিরের পুরোহিত (বাকি সময় দর্জি), কেউ লাতের মন্দিরের সামনে কোষ্ঠী বিচার ( পরে মালিকাতুল আরবের পয়সা মেরে গনী) আবার কেউ অন্ধকারে মরুযাত্রীদের হত্যা করে লুঠ (পরবর্তীতে রাগী যুবক) করা সত্তেও ইসলাম কবুল করে শুধু মাত্র নিজেরা টিকে থাকবে বলেই নয়, এদের গুরুমা ছিলো পতিতালয়ের সর্দারনী এক রাজি’ল্লাহু’আনহা যে বদরে প্রায় সবই খুইয়েছিলো, সে এবন তার স্বামী বরাবরই উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করে আসে, তার স্বামী ইবনে হার্ব ফান্ড তৈরী করে। আমরা জানি আরবদের প্রতিশোধস্পৃহা খুব বেশি, সে এটাকে পুজি করে। কাফেরদের যার যার আত্মীয় মারা গেছে মুসলিমদের হাতে তাদের কাছে গিয়ে প্রতিশোধ নিবে বলে ফান্ড কালেক্ট করে ( মনে আছে খন্দকের যুদ্ধে আমর কে ১৭ কাবিলার লোকে চাদা দিয়ে এনেছিলো?) এই ফান্ড যোগার এবং খরচ করতো পতিতার স্বামী ইবনে হার্ব। আর যেহেতু তারা কাফেরদের কাছ থেকে ফান্ড কালেক্ট করে কাজেই তারা কোন যুদ্ধেই সক্রিয় অংশগ্রহন করেনা, কাউকে হত্যা করা তো দুরের কথা ( আসলে এরা হুকুমতের লোভে এসেছিলো, পলিটিশিয়ান, আর সবাই জানে পলিটিশিয়ান কাউকে হত্যা করেনা,প্রক্সির মাধমে করায়) এদের বাধ ভেঙ্গে যায় গাদীরের দিনে, আলীকে মাওলা ঘোষনা তারা মেনে নিতে পারেনি, সেখান থেকেই তাদের খিলাফত দখল করার প্রস্তুতি চলতে থাকে। এতোদিনে ফান্ডও জমেছে বেশ, সৈন্য সংগ্রহও করা শুরু হয়। সকিফায় পায় চুড়ান্ত রূপ। ইসলামের মোড় এখান থেকে বিভক্ত হয়ে যায়। দ্বীনে ইসলাম আর হুকুমতে ইসলাম। এবার আসি ফাদাক প্রসংগেঃ আত্নীয়-স্বজনকে তার হক দান কর এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও এবং কিছুতেই অপব্যয় করো না (সুরা বণি ইসরাঈল/২৬)। ইবনে আব্বাস ও আবু সাঈদ খুদরীর কাছ থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, যখন এই আয়াতটি নাযিল হল, তখন নবী স. ফাতেমাকে ডেকে ফাদাক ও আওয়ালী নামক ভূ-খন্ড তাকে দান করলেন ও বললেন “এই অংশ মহান আল্লাহ তা’য়ালা তুমি ও তোমার বংশধরদের জন্য বন্টণ করছেন (সূয়ূতি, ৫/২৭৩; অলূসি, ১৫/৬২; মুত্তাকি হিন্দি, ৩/৭৬৭; যাহাবি/২২২৮, ইবনে কাসির. ৩/৩৬)। এই মর্মে মাওলা মুহাম্মদ সঃ অসিয়তনামাও লিখে যান, যার সাক্ষী ছিলেন হাসনাইন আঃ কিন্তু হুকুমতের প্রথম খলিফা (যার খিলাফতের একমাত্র যোগ্যতা তিনি ছিলেন সবচে বয়স্ক) তা অস্বীকার করে দখল করে নেন রাস্ট্রায়েত্বের কথা বলে তিনি তার ইলম দিয়ে ঘোষনা করেন নবীর ওয়ারিশ হয়না ( অথচ তিনি ভুলে গেলেন যে কোরানে ওয়ারিশের কথা বলা আছে, তিনি ভুলে গেলেন তা আমি মানিনা, তিনি কোরান পড়লে জানতেনই, তিনি উপেক্ষা করলেন খুমসের আয়াতও) চার ঘন্টা বিবি দাঁড়িয়ে থাকলেন, ফলাফল? নবীর স্বহস্তে লেখা অসিয়ত নামা ছিড়ে ফেলে দেয়ার আগে তাতে থুথু ছিটাতেও দেখলেন তিনি! (হায় হায়) হুকুমত লোভীরা বুঝে গিয়েছিলো এদের কে থামাতে হবে নইলে হুকুমতে টিকে থাকা যাবেনা, ফাদাক তো বাহানা! কাজেই এবারে আলীর বায়াত আদায় করতে হবে, তারা জানে যে আমাদের মতো লোকের কাছে আলী নত হবেনা, কাজেই সৈন্যদল নিয়ে তার বাড়ী আক্রমন করে। হায় হায়! আবার ঘুরে এলো সেই দিন! আমরা শুধু বুক চাপড়ানো ছাড়া আর কিছুই করতে পারিনা! আবারও এলো রসুলের (সঃ) হাত ভাঙা, পাঁজর ভাঙার কারনে মৃত্যু বরণ করার দিন! ভাবছেন ব্যাটা শোকে পাগল হয়ে গেছে!? রসুলে হাত আবার কে ভাংলো? কেই বা রসুলের পাঁজর ভাঙল? নিচের হাদিস টা আবার খেয়াল করে দেখুন মাওলা মুহাম্মদ সঃ বলেছেনঃ ফাতিমা আমারই একটি অঙ্গ ,যে তাঁকে অসন্তুষ্ট করল সে আমাকে অসন্তুষ্ট করল” (ফাতহুল বারি শরহে সহীহ বুখারী- খণ্ড:৭ ,পৃ:৮৪ ,বুখারী- খণ্ড: ৬ ,পৃ: ৪৯১।) তাহলে কি আমি মিথ্যা বলেছি?! মাওলা মুহাম্মদ কি বলেন নাই যে, হে ফাতিমা খোদা তোমার অসন্তুষ্টিতে অসন্তুষ্ট এবং তোমার সন্তুষ্টে সন্তুষ্ট হয়” (মুসতাদরাক-এ-হাকিম- খণ্ড:৩ ,পৃ:১৫৪ ,মাজমাউজ জাওয়ায়েদ- খণ্ড:৯ ,পৃ:২০৩ ,বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত ও সহীহ বলে গন্য হয়েছে।) আপনার ঘরে আগুন দেয়া হলে আপনার গর্ভের বাচ্চাকে লাথি মেরে হত্যা করা হলে, আপনার পাঁজর ও হাত ভেঙ্গে ফেললে কি আপনি অসন্তুষ্ট হবেন? বুখারী ও মুসলিম সাহেব বলেছেন যে ফাতেমা সাঃ আঃ এর অসন্তুষ্টি তে আল্লাহ্‌ অসন্তুষ্ট হোন। তাহলে নিমকহারামের দল কাকে সন্তুস্ট করতে তার গৃহে আক্রমন করেছিলো?? সেই ঘর যেখানে জিবরাইল এসেছেন মিসকিন হয়ে!! যেখানে মিকাইল এসেছেন চাক্কি পিষতে!! যেই ঘরের মর্যাদা সম্পর্কে মাওলা মুহাম্মদ নিজে বলেছেন যে এই ঘর নবীদের ঘরের চেয়েও উত্তম! যে ঘর সম্পর্কে হাদিসশাস্ত্রবিদরা উল্লেখ করেছেন: যখন এই পবিত্র আয়াত নবী (সাঃ) এর উপর অবতীর্ণ হয়ঃ “ ফি বুয়ুতিন আজেনাল্লাহো আন তুরফায়া ওয়া য়ুজকারা ফিহাসমুহু ইউসাব্বিহু লাহুফিহা- বিলগুদুওবি ওয়াল আসাল।” (সুরা নূর- আয়াত ৩৬।) নবী করীম এই আয়াতটি মসজিদে তেলাওয়াত করলেন সেই সময় এক ব্যক্তি উঠে প্রশ্ন করলেন: হে মহানবী (সা.) এই ঘরগুলি বলতে ও তার গুরুত্ব বলতে কি বোঝায় ? (অর্থাৎ: কোন ঘর ও তার কি গুরুত্ব) । রাসূল (সা.) বললেন: নবীগণের গৃহগুলিকে বোঝানো হয়েছে।তখনি হজরত আবুবকর উঠে হজরত আলী (আ.) ও ফাতিমা (সাঃ আঃ) এর গৃহের দিকে ইশারা করে বললেন: আচ্ছা এই গৃহ কি সেই গৃহের মধ্যে আছে ? উত্তরে নবী করীম (সা.) বললেন: হ্যাঁ, বরং তাদের থেকেও উত্তম।(দূররে মনছুর- খণ্ড:৬ ,পৃ:২০৩ ; তাফসিরে সুরা নূর। রুহুল মায়ানী- খণ্ড:১৮ ,পৃ:১৭৪।) সেই ঘরকে কেমন অসন্মান করা হয়েছে! অথচ মুমিনের কর্তব্য ছিলো সেই ঘরের প্রতি সর্বোচ্চ সন্মান প্রদর্শন করা। যে ঘর আল্লাহর নূরের কেন্দ্র এবং আল্লাহ যাকে সম্মান করার আদেশ দিয়েছেন তার সাথে অত্যন্ত সম্মান ও ভদ্রতার সঙ্গে আচরণ করা আবশ্যক।হায় নিকৃষ্ট! হায় জঘন্য!! ক্ষমতালোভী হারামীরা সেই গৃহের মর্যাদা তো দিলোই না, আমার মাওলার একমাত্র সন্তান যাকে তিনি কখনই মা ছাড়া ডাকেননি, যাকে তিনি উম্মে আবিহা বলেছেন তাকেও সেই নাজায়েজ মুসলিম নামধারী হন্তকের দল এভাবে আক্রমণ করলো! নবী করীম (সা.) দীর্ঘ নয় মাস পর্যন্ত নিজের কন্যার বাড়ি এসে তাঁর ও তাঁর স্বামীর উপর সালাম করতেন এবং এই আয়াতকে তেলাওয়াত করতেন: إ ِنَّمَا يُرِيدُ اللَّـهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا (সুরা আহযাব: ৩৩) (দূররে মনছুর- খণ্ড: ৬,পৃ: ৬০৬।) সেই ঘরের সাথে এমন আচরণ! সেই ঘরের বাসিন্দা যারা প্রত্যেকেই মাওলা মুহাম্মদের প্রাণস্বরূপ, তাদের সাথে কি ব্যবহার করলো!! হায় হায়! আবুবকর হজরত আলী (আ.) এর বাইয়াত নেওয়ার জন্য (লোক) পাঠায় কিন্তু হজরত আলী (আ.) অস্বীকার করার ফলে উমর আগুনের ফলতে নিয়ে আসল ,দ্বারেই হজরত ফাতিমা (আ.) এর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। হজরত ফাতিমা (আ.) বললেন: হে খাত্তাবের পুত্র! আমিতো দেখছি তুমি আমার ঘর জ্বালানোর পরিকল্পনা নিয়েছ ? উত্তরে উমর বলল: হ্যাঁ ,তোমার পিতা যার জন্য প্রেরিত হয়েছে (সেই কাজের সহযোগিতা ছাড়া অন্যকিছু নয়) আর এটা তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ।(আল ইমামাতো অল সেয়াসাতো- পৃ:১২ মুদ্রণ: মিশর।) বেজন্মা বলে কি!! নষ্ট খলিফার বায়াত নেয়া নাকি নবুয়তের চেয়েও গুরুত্বপুর্ন!!এদের জাহান্নামেও ঠাই হবে বলে মনে হয় না! যখন জনগণ আবুবকরের হাতে বাইয়াত করলেন ,হজরত আলী (আ.) ও যোবায়ের হজরত ফাতিমা (আ.) এর গৃহে পরামর্শ ও আলোচনা করছিলেন ,এই খবর উমর ইবনে খাত্তাবের কর্ণগোচর হল অতঃপর সে ফাতিমা (আ.) এর গৃহে এসে বলল: হে নবী নন্দিনী! আমার প্রিয়তম ব্যক্তি তোমার পিতা ,তোমার পিতার পর তুমি নিজে ; কিন্তু আল্লাহর কসম তোমাদের এই ভালোবাসা আমার জন্য বাধা সৃষ্টি করবে না তোমার এই ঘরে একত্রিত হওয়া ব্যক্তিদের উপর আগুন লাগানোর আদেশ দেওয়া থেকে যাতে তারা কিন্তু আল্লাহর কসম তোমাদের এই ভালোবাসা আমার জন্য বাধা সৃষ্টি করবে না তোমার এই ঘরে একত্রিত হওয়া ব্যক্তিদের উপর আগুন লাগানোর আদেশ দেওয়া থেকে যাতে তারা দগ্ধ হয়ে যায়। এই কথা বলে উমর চলে যায় ,অতঃপর হজরত আলী ও যোবায়ের গৃহে প্রত্যাবর্তন করেন ,হজরত ফাতিমা (আ.) আলী (আ.) ও যোবায়েরকে বললেন: উমর আমার নিকটে এসেছিল আল্লার কসম খেয়ে বলছিল যে যদি তোমাদের এই“ ইজতেমা ” সমাবেশ বন্ধ না হয় ,দ্বিতীয় বার অব্যাহত থাকে তাহলে তোমাদের গৃহকে জ্বালিয়ে দেব। আল্লার কসম! যার জন্য আমি কসম খেয়েছি অবশ্যই আমি সেটা করব। (আনসাবুল আশরাফ- খণ্ড:১ ,পৃ:৫৮৬ ,মুদ্রণ: দারে-এ-মায়া’ রিফ ,কাহেরা।) দেখুন কি ইম্পর্ট্যান্ট ছিলো তাদের কাছে বায়াত, যে কারনে শুধু হুমকি দিয়েই ক্ষ্যান্ত হয়নি তা করেও দেখিয়েছে! (এই বায়াত ছিলো হাতে হাত রেখে বায়াত) এর পরে হতে পারতো নবী ঘোষণা দেয়ঃ যার হাতে উমরের জান আছে তার কসম খেয়ে বলছি তোমরা ঘর থেকে বাইরে বের হয়ে এস ,নইলে ঘরে যারা আছে তাদের সহ ঘরকে জ্বালিয়ে দেব। খোদাভীরু কিছু লোক আল্লাহর ভয়ে এবং রসুলের ঘরের সম্মান রক্ষার জন্য উমরের উদ্দেশ্যে বলল: “ হে হাফসার পিতা! এই ঘরে ফাতিমা (আ.) আছেন ” সে চিৎকার করে বলল:“ থাকে থাকুক!!” (আব্দুল ফাত্তাহ আব্দুল মক্বসুদ- আলী ইবনে আবীতালিব - খণ্ড:৪,পৃ:২৭৬-২৭৭।) শুধু তাই? দেখুন আরওঃ উমর হজরত ফাতিমা (আ.) এর গর্ভে লাথিমারে তাঁর গর্ভে মহসিন (নামে বাচ্চা) ছিল সে গর্ভপাত হয়ে যায়।(মিজানুল এ’ তেদাল - খণ্ড:৩ ,পৃ:৪৫৯।) মাওলা মুহাম্মদ সঃ দোয়া করার সময় প্রায়ই ফাতেমা যাহ্‌রা( সাঃ আঃ) কে বলতেন “ফাতেমা আমি দোয়া করি তুমি আমিন বলো” মাওলা মুহাম্মদ এর দোয়া যার আমিনের মুখাপেক্ষী তার নাম ফাতেমা। সেই ফাতেমা কে নির্মমভাবে কষ্ট দিয়ে হত্যা করা হয়েছে।তার সামনে যখন রাসুলুল্লাহ সঃ এর ওসিয়ত ( বাগে ফেদাক এর) ছিড়ে ফেলা হয়( শুধু ছিড়েই ফেলেনি ছেড়ার আগে তাতে থুতু দিয়েছে দুশমনে যাহ্‌রা, যদিও আজ তাকেই হতে পারতো নবী মনে করা হয়।)চার ঘন্টা তার পিতার দরবারে দাঁড়িয়ে থেকে তার পিতার ওসিয়তের সাথে এমন ব্যবহার দেখে আর সইতে পারলেন না উম্মে আবিহা! মুহুর্তেই তার মাথার চুল সব সাদা হয়ে যায় (ইয়া উম্মে আবিহা! ইয়া যাহ্‌রা!!) রাসুল (সাঃ) বলেছেন, ‘ফাতিমা আমার অস্তিত্বের অংশ। যে তাঁকে রাগান্বিত করে সে আমাকে রাগান্বিত করে।’নবী (সাঃ) আরও বলেন,‘ফাতিমা কোন ব্যাপারে রাগান্বিত হলে আল্লাহ্ও রাগান্বিত হন এবং ফাতিমার আনন্দে আল্লাহ্ও আনন্দিত হন।’ অথচ তার সাথে কেমন আচরন করা হয়েছে!এই আচরন যদি অন্য দেশের অন্য ধর্মের কেউ করতো তাহলে হয়তো বলা যেতো যে ওরা প্রতিশোধ নিয়েছে! এরা যে প্রতিশোধ টা নিলো তা কিসের ছিলো?? চিন্তা করে দেখার অনুরোধ। শুধু তাই নয়, ফাতেমার ঘর যে ঘর কে মাওলা মুহাম্মদ সঃ যে কোন নবীর ঘর থেকেও আফজাল বলে ঘোষণা দিয়েছেন, সেই ঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে। লাথি দিয়ে দরজা ভেঙ্গে ফেলেছে, সেই দরজায় চাপা পরেছেন উম্মে আবিহা, পাষণ্ডরা নিচে চাপা পরা মা ফাতেমার গায়ে পারা দিয়ে( কেউ কেউ পা দিয়ে আঘাত করে) ঘরে ঢুকেছেন। দরজার নিচে শুয়ে রসুলের অংশ, রসুলের মা চিৎকার করে বলেছেন “ও আলী!! আমার মহসীন শহীদ হয়ে গেছে!!! ও আলী আমার হাত ভেঙ্গে গেছে!! ও আলী আমার পাঁজর ভেঙ্গে গেছে! হায় হায়! এরপর ইসলামের নেতাগন ঘর তছনছ করে বেড়িয়ে যাওয়ার পরে ফিজ্জা( ফাতেমার সেবিকা) এসে উম্মে আবিহা কে তোলার পরে মা ফাতেমা বলেন আলী কোথায়? ফিজ্জা কেদে বলে মাওলা কে গলায় রশি বেধে টেনে নিয়ে গেছে। এই জুলুমের পর (মাওলা মুহাম্মদ (সা.) এর ওফাতের) নব্বুই দিনের মতো অতিক্রান্ত হয়েছে। তিন তিনটি মাস রাসূল(স.) এর কন্যা ফাতেমাতুজ্জাহরা (সা.) এর জন্যে ছিল যথেষ্ট কষ্টদায়ক। একদিকে রাসূলে খোদার অনুপস্থিতির বেদনা অপরদিকে একদল লোকের অত্যাচার-সব মিলিয়ে তিনি এতো বেশি বিরক্ত ছিলেন যে একেবারে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। জীবনের শেষ মুহূর্তগুলোতে কেবল একটিমাত্র জিনিসই তাঁকে কিছুটা স্বস্তি দিতো। সেটা হলো নবীজীর দেয়া একটি প্রতিশ্রুতি। নবীজী ওফাতকালে বলেছিলেন: কন্যা আমার! আমার পরে আমার খান্দান থেকে তুমিই সর্বপ্রথম আমার কাছে আসবে। এ সময়টি আলী (আ) এবং তাঁর সন্তানদের জন্যে কঠিন সময় কাটছিলো। তিনি এমন এক মহীয়সী নারীকে হারাতে বসেছেন যাঁর উপস্থিতিতে তাঁর জীবনের মুহূর্তগুলো জ্ঞান-বিশ্বাস এবং ধৈর্যের পরাকাষ্ঠায় অলঙ্কৃত হয়ে ছিল। আলী (আ) তাঁর পরম বিশ্বস্ত স্ত্রীকে হারাতে বসেছেন যিনি প্রতি মুহূর্তে তাঁর দিকে তাকাচ্ছিলেন। মনে হচ্ছিলো তিনি এই পার্থিব জগতের সকল দুশ্চিন্তা ভুলতে বসেছেন। আলী (আ) ফাতেমা (সা) এর সর্বশেষ দৃষ্টিকে গভীরভাবে অনুসরণ করছিলেন। বুঝতে পেরেছিলেন এরপর আর তিনি ফাতেমা (সা) এর দৃষ্টির জ্যোতি দেখতে পাবেন না, যেই দৃষ্টি তাঁকে আন্তরিক প্রশান্তি দিতো। ফাতেমা (সা) এর কথায় নিরবতা ভাঙলো। তিনি বললেন: হে আলি! জেনে রাখো আর কয়েক মুহূর্ত পরই আমি আর তোমাদের মাঝে থাকছি না। বিদায় নেবার সময় এসে গেছে। আমার কথাগুলো শোনো। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে এক আল্লাহ ছাড়া আর কোনো স্রষ্টা নেই এবং মুহাম্মদ (সা) আল্লাহর বান্দা এবং রাসূল। বেহেশত এবং জাহান্নামের আগুন সত্য এবং বাস্তব। কিয়ামতের দিন অবশ্যই আসবে। তোমাকে ওসিয়্যৎ করছি , আমার ওফাতের পর আমাকে রাতের বেলা গোসল দিয়ো এবং রাতের বেলা দাফন করো; কাউকে খবর দেবে না। এরপর আমার শিয়রে সামনাসামনি বসো এবং কোরআন তিলাওয়াত করো আর দোয়া করো। তোমাকে আল্লাহর হাতে সঁপে যাচ্ছি। আমার সন্তানদের ওপর কিয়ামত পর্যন্ত সালাম এবং দরুদ পাঠালাম।" রেওয়ায়েত এ পাই, বিবি জাহরা সাঃ আঃ তার শেষ দিবসে মাওলা আলী আঃ কে বলেন যে তিনি আজ একটু ভালো বোধ করছেন, ভাঙ্গা হাত ও পাজরের ব্যথা তেমন অনুভব করছেন না, জ্বরও অনুভব করছেন না। তিনি বিছানায় উঠে বসলেন, আলী এবং ফিজ্জার সাহায্যে উঠে সন্তানদের গোসল করাতে শুরু করলেন, এবং গোসল শেষে কাপর পরিয়ে খাইয়ে তাদের চাচাতো ভাইয়ের বাসায় পাঠিয়ে দিলেন, এবং তিনি বাচ্চাদের কাপর কাচতে লাগলেন। মাওলা আলী তা দেখে অবাক হয়ে এর কারন জিজ্ঞেস করলেন। বিবি উত্তর দিলেন “আজ আমার শেষ দিন,আমি আমার বাচ্চাদের শেষ বারের মতো গোসল করিয়ে, খাইয়ে দিতে চেয়েছিলাম।তারা খুব দ্রুতই এতীম হয়ে যাচ্ছে।“ মাওলা আলী বললেন “হে রসুল কন্যা, তুমি কিভাবে জানলে? বিবি উত্তর দিলেন “বাবাকে স্বপ্নে দেখলাম তিনি বললেন আজ রাতে আমি উনার সাথে মিলিত হতে যাচ্ছি, উনি আমাকে আমার অসিয়ত করে যেতে বলেছেন”। মাওলা আলীর চোখ ভিজে উঠলো। সবাইকে বাইরে যেতে বলে তিনি বললেন “ হে নবী কন্যা, তুমি তোমার অসিয়ত করো”। বিবি শুরু করলেন “আমার প্রিয় স্বামী, আপনি খুব ভাল করেই জানেন যে আমি কেন এগুলি করেছি। আমার অস্থিরতা ক্ষমা করুন; তারা আমার সাথে এবং আমার অসুস্থতার সময় এতটা কষ্ট সহ্য করেছে যে আমি তাদের জীবনের শেষ দিনগুলিতে খুশি দেখতে চাই। আমি খুবই খুশি এবং আমি খুব দু:খিতও। আমি খুশি এজন্য যে আমার সমস্যাগুলি খুব শীঘ্রই শেষ হয়ে যাবে এবং আমি আমার বাবার সাথে দেখা করব এবং খুবই দুঃখিত এজন্য যে আমি আপনার মতো স্বামীর কাছ থেকে আলাদা হয়ে যাবো।" “প্রিয় স্বামী মিথ্যার সাথে আপনার কোন সম্পর্ক নেই, মাওলা! যখন থেকে আমি আপনার সঙ্গী হয়েছি তখন থেকে আজব্দি কোনদিন কি আপনাকে অমান্য করেছি?” আলী জবাব দিলেন “এসব কি বলো!তুমি আমার অবাধ্য!! তুমি অনেক বেশি নিষ্ঠাবতী, আল্লাহর ভয়ে ভীত। তোমা থেকে আলাদা হওয়া, তোমাকে হারানো আমার জন্য অনেক বেশি বেদনাদায়ক, তবে এটা অনিবার্য গন্তব্য। সবাইকেই যেতে হবে। তবে তোমার মৃত্যু আমার মাওলা মুহাম্মদ সঃ কে হারানোর ব্যথা তাজা করে দিবে, নতুন বিপর্যয় ডেকে আনবে, ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন। কি বেদনাদায়ক, তিক্ত ও করুণ দুর্যোগ। নিশ্চয় এটি এমন একটি দুর্যোগ, যার জন্য কোনও সান্তনা নেই এবং এর চে বড় বিপর্যয় নেই যার জন্য কোনও ক্ষতিপূরণ নেই।" তারা দুজনেই কেঁদে উঠলেন এবং ইমাম আলী (আঃ) তার মাথা জড়িয়ে ধরে বললেন: “তোমার অসিয়ত করো। আমাকে নির্দেশ দাও; তুমি অবশ্যই আমাকে নিবেদিত দেখতে পাবে এবং তুমি আমাকে যা করতে বলবে আমি তা সম্পাদন করব। তোমার বিষয় আমার কাছে অগ্রাধিকার পাবে”। বিবি প্রথমে পারিবারিক বিষয়ে অসিয়ত করেন, পরে বলেন “যারা আমার ও আমার পরিবারের উপর জুলুম করেছে,অন্যায় করেছে তারা যেন আমার জানাজায় শরিক না হয়।কারন তারা আমার ও রাসুলুল্লাহ সঃ এর দুশমন। তাদের বা তাদের অনুসারীদের কাউকে আমার জন্য দুয়াতেও শরিক হতে দিবেন না। আমাকে রাতে গোসল দিয়ে রাতেই জানাজা করে দাফন করে দিবেন।আমি চাই আপনি আমার কবরের পাশে বসে কোরান তিলাওয়াত করুন।আমার মৃত্যু যেন আপনাকে লক্ষ্যচ্যুত না করে দেয়, আপনাকে আরও অনেক দিন দ্বীন ও মানবতার সেবা করতে হবে,আমার কস্টগুলি যেন আপনাকে ধইর্যহারা না করে দেয়। প্রিয় স্বামী, আমার মাওলা! আমাকে কথা দিন”। আলী বলেন “হ্যা বিবি, কথা দিচ্ছি। তোমাকে ফুলের মতো তোমার বাবার কাছ থেকে নিয়ে এসেছিলাম, তোমাকে আমার সংসারে এনে যে কষ্ট আমি দিয়েছি, দয়া করে তুমি তোমার বাবার কাছে আমার নামে অভিযোগ কোরোনা, আমাকে ক্ষমা করে দিও”। বিবি যাহরা বলতে থাকেন “প্রিয় স্বামী!দয়া করে এসব বলবেন না, আমাকে আপনার চেয়ে ভালো আর কেউ বাসতে পারতোনা, কেউ রাখতে পারতোনা। আমি জানি আপনি বাচ্চাদের কতো ভালোবাসেন, আপনাকে ওদের দিকে খেয়াল রাখতে বলাটা বেয়াদবি, তবু বলি হুসাইনের দিকে একটু বেশি খেয়াল দিবেন, ও বড় বেশি মা পাগল।আমি আহত হওয়ার আগপর্যন্ত সে আমার বুকে ঘুমিয়েছে, বুকে ব্যথার জন্য এই কয়দিন ও বঞ্চিত হয়েছে। মাওলা আলী বিবি যাহরার ভাঙ্গা হাতে হাত বুলিয়ে আদর করছিলেন।উনার তপ্ত অশ্রু বিবির হাতের উপর পরলে তা দেখে বিবি যাহরা বললেন “স্বামী কেদোনা! আমি জানি তোমার অন্তর কতো কোমল, বাইরে থেকে যাই দেখাক, তুমি ইতিমধ্যেই অনেক সহ্য করেছো, কিন্তু তোমাকে আরও অনেক সইতে হবে। এরপর বিবি যাহরা শুয়ে থেকেই গোসল করলেন, তিনি তার রবের সাথে সাক্ষাতের প্রস্তুত ছিলেন তারপর আসমা বিনতে উমায়েস কে নির্দেশ দিলেন একটু অপেক্ষা করে বিবির নাম ধরে ডাকতে যদি উনি জবাব না দেন তো বুঝে নিতে যে উনি রবের কাছে চলে গেছেন। আসমা বিনতে উমায়েস কিছুক্ষন অপেক্ষা করে ডাকলেন, সাড়া পেলেন না। তিনি তখন বললেন “ ইয়া যাহরা, ও সর্বশ্রেস্টহ নবীর কন্যা!হে কন্টকাকীর্ণ পথে যারা হেটেছে তাদের সেরা! তারপর তিনি আন নাজমের ৯ নং আয়াত তিলাওয়াত করলেন। কোন উত্তর নেই, ঘর নীরব, আসমা বিনতে উমায়েস তখন যাহরা সাঃ আঃ দিকে এগিকে যান, গিয়ে দেখেন তিনি আর নেই, রবের ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেছেন। (ইন্নালিল্লাহে......) সে সময়ই ইমাম হাসান ও হুসাইন বাসায় ঢুকেন, আসমা বিনতে উমায়েস কে জিজ্ঞেস করেন “মা কোথায়? আমাদের মা তো এ সময়ে ঘুমায় না!” আসমা জবাব দেন “হে রসুলের সন্তানেরা তোমাদের মা ঘুমায়নি, সে আমাদের ছেড়ে চলে গেছে”। ইমাম হাসান কথাটা শোনার সাথে সাথে ঝাপ দিয়ে মায়ের বুকে পরে, মায়ের মুখে চুমু দিয়ে বলে “ মা! আমার সাথে কথা বলো। নইলে আমি মরে যাবো মা, আমার সাথে কথা বলো”। ইমাম হুসাইন মায়ের পায়ে চুমু খেয়ে বলে “মাগো! আমি তোমার হুসাইন, আমি মরে যাবার আগেই আমার সাথে কথা বলো মা!” এরপর হুসাইন ইমাম হাসানের দিকে ফিরে বললেন “আল্লাহ্‌ তোমাকে আমাদের মা হারানোর কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা দিন” বিবি যাহরার ওফাতের সময়টাতে মাওলা আলী কোথায় ছিলেন তা নিয়ে মতভেদ আছে, একদল বলেন তিনি যাহরার সাথেই ছিলেন, আরেকদল বলেন মসজিদে ছিলেন। হাসান হুসাইন মসজিদে গিয়ে বাবাকে মায়ের ওফাতের খবর দিলে মাওলা আলী অজ্ঞান হয়ে যান।যখন জ্ঞান ফিরে পান তখন তিনি কাদলেন, বললেন “কে এখন আমাকে সান্তনা দিবে, হে নবীকন্যা! আমার দুঃখ দুর্দশায় তুমিই আমাকে সান্তনা দিয়েছো এখন কে তোমার অভাব পুরন করবে!!একটি ফুল কলি অবস্থায় ছিঁড়ে ফেলা হলো । এটি জান্নাত হতে এসেছিল এবং জান্নাতেই চলে গেল । কিন্তু সুবাস রেখে গেল আমার মধ্যে। বিবির শাহাদাতে আমার মাওলা আলী রক্ত মাতম করেছেন। মদিনার লোকজন শুনেছে যে উনি চিৎকার করে কেদেছেন। এমন অবস্থায় এক লোক উনার দরজায় গিয়ে টোকা দেয়, মাওলা আলী এমন অবস্থায় বেড় হয়ে আসেন যে তার আমামা খুলে কাধে নেমে এসেছে! কপাল ফেটে রক্ত ঝরছে, অশ্রু আর রক্তে দাড়ি ভিজে গেছে। লোকটি এই অবস্থা দেখে জিজ্ঞেস করে মাওলা কি হয়েছে!! মাওলা ডুকরে কেদে উত্তর দেন "হে ইবনে নওফেল! আমার হাসান হুসাইন আজ এতিম হয়ে গেছে!! অন্য রেওয়ায়েত বিবি জাহরার এক দাসী আসমা বিনতে উমাইস তাঁর ওফাতের কাহিনী বর্ণনা করেন। ওফাতের দিন তিনি বাচ্চাদের জন্য খাবার প্রস্তুত করেন এবং আসমাকে কিছু নির্দেশনা দিয়ে তিনি তাঁর ইবাদাতের কক্ষে চলে যান। তিনি কিছুক্ষণ পর তাঁর কক্ষের মধ্যে জোরে জোরে তাকবীর ধ্বনি দিতে থাকেন। আসমা যখন তাঁর তাকবীর ধ্বনি আর শুনতে পেলেন না তখন মসজিদে গিয়ে আলী (আ.)-কে তাঁর স্ত্রীর ওফাতের খবর দিলেন। আসমার প্রতি নির্দেশ ছিল ছেলে-মেয়েরা ঘরে ফিরে এলে এ খবর দেয়ার পূর্বেই তাঁদের খাবার খাইয়ে দিতে হবে। আসমা সে কাজটিই করলেন। ইমাম হাসান ও হোসাইন এলে তিনি তাঁদের খাবার দিলেন। তাঁরা তাঁদের মায়ের হাতে ছাড়া খাবেন না বলে বায়না ধরলে আসমা তাঁদের মায়ের ওফাতের খবর দেন। তাঁরা মায়ের ঘরে প্রবেশ করার পর পরই ইমাম আলী (আ.) সেখানে উপস্থিত হন এবং নিজেকে সামলে নিয়ে কাফন-দাফনের প্রস্তুতি নেন। ইসলামের সাথে সাথে ইসলামের ইতিহাসও এই পরিবারের সাথে খুবই অমানবিক আচরণ করেছে। যে জন্য আমরা সহজে তাদের সম্পর্কে জানতে পারিনা। যাই হোক তাঁকে (বিবি যাহরা সাঃ আঃ) রাতের অন্ধকারে জান্নাতুল বাকী গোরস্তানে দাফনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। জানাজায় কয়েকজন পারিবারিক সদস্য উপস্থিত ছিলেন। এ সময় মাওলা আলী আঃ বলেন “হে আল্লাহ্‌র রাসুল! দয়া করে আমার এবং আপনার কন্যার ছালাম নিন। যাকে আপনার সান্নিধ্য থেকে অনতি দূরে দাফন করা হচ্ছে এবং অতি শীঘ্র তিনি আপনার সাথে মিলিত হচ্ছেন।হে নবী মোস্তফা, আপনার প্রিয় কন্যার মৃত্যু আমাকে ধৈর্য এবং সান্ত্বনাহারা করেছে। আমি আমার সমস্ত সংযম হারিয়ে ফেলেছি। হে আলাহর রাসুল, আপনার বিচ্ছেদ ভোগ করার পর আমাকে আবার ধৈর্যের সাথে আকস্মিক এই মহাদুর্ঘটনা সহ্য করতে হবে।আমি আপনাকে আমার নিজ হাতে কবরে স্থাপন করেছিলাম। আমার বুকের উপর বিশ্রাম অবস্থায় আমার গ্রীবা এবং বুকের মধ্যখানে আপনার মস্তক অবস্থিত থাকা অবস্থায় আপনার দেহ হতে নফস বিদায়গ্রহণ করেছিল। নিশ্চয় আমরা আল্লাহ্‌র জন্য এবং তার দিকে প্রত্যাবর্তনকারী।আপনার কন্যা যাকে আমার কাছে গচ্ছিত রাখা হয়েছিল তা আমার কাছ থেকে ফেরত নেওয়া হলো। এখন দুঃখ আমার সাথী হয়েছে এবং সুখ আমা হতে বিদায় নিয়েছে। এই দুঃখ এত তীব্র যে, অন্য সকল দুঃখকে এটি অভিভূত ও গ্রাস করে ফেলে এবং এটি আমাকে বিনিদ্র রজনী এবং নিরানন্দ দিনের মধ্যে ফেলে গেল।যতকাল আল্লাহ আমাকে তাঁর রহমত এবং শান্তির রাজ্যে আমার উভয়ের সঙ্গে মিলিত না করেন এখন হতে ততকাল আমার জীবন বিরামহীন একটি হৃদয়- বেদনায় পরিণত হলো। হে আল্লাহ্‌র রাসুল! আপনার সাহাবীরা আপনার কন্যার প্রতি কি আচরণ করেছে এবং কিরূপ দুর্ব্যবহার করেছে তা তিনিই বলবেন।আপনার পরলোক গমনের পর অল্পকালের মধ্যেই তাঁর উপর যা কিছু ঘটেছে তার বিস্তারিত বিষয়াদি তাকেই জিজ্ঞেস করবেন। আপনার কাছে হতে এই ব্যবধান এত অল্পকালের যে লোকেরা এখনো আপনাকে স্মরণ করে এবং আপনার বিষয় বলাবলি করে।দয়া করে আমার বিদায় সম্ভাষণ ও ছালাম আপনারা উভয়েগ্রহণ করুন। এই বিদায় সম্ভাষণ ও সালাম একটি সরল হৃদয়ের ইচ্ছা বা উৎসর্গ। সে হৃদয় আপনাদের কোমল স্নেহের স্মৃতি তার কবরের দিকে সানন্দে বহন করবে।হে আল্লাহ্‌র মনোনীত নবী কন্যা! বিদায়। তুমি শান্তিতে বিশ্রাম করো। যে শান্তি হতে লোকেরা ইহজগতে তোমাকে বঞ্চিত করেছে। তোমার কবর ছেড়ে আমার স্বস্থানে যাওয়া দারা এটা বুঝায় না এ আমি তোমার সঙ্গলাভের দ্বারা শ্রান্ত হয়েছি।আহা যদি আমি আজীবন তোমার সঙ্গলাভ করতাম এই আমার আশা। যারা দুঃখের সাথে ধৈর্য ধারণ করে তাদের জন্য আল্লাহ পুরষ্কার সংরক্ষিত রেখেছেন। এই বিষয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই যার কারণে আমি তোমার কবরের উপর স্থায়ী একটি বাসস্থান তৈরি করে থাকব। বিদায়!তোমার থাকুক আল্লাহ্‌র শান্তি ও আশীর্বাদ। (ভাব পাগলা আব্দ্দুল্লাহ) Ref: ১। তাবারি, ২য় খণ্ড, ১৯৮ পৃষ্ঠা । ২। ইবনে আব্দে রাব্বাহ লিখিত ' আকদুল ফরিদ ' ২য় খণ্ড, ১৭৯ পৃষ্ঠা , মিশরে মুদ্রিত। ৩। আবুল ফিদার ইতিহাস, ১ম খণ্ড, ১৫৬ পৃষ্ঠা, মিশরে মুদ্রিত । ৪। আল্লামা ইবনে কাতিবা লিখিত কিতাবুল ইমামত ওয়া সিয়াসাত ১ম খণ্ড, ২০ পৃষ্ঠা, মিশরে মুদ্রিত ( এই পুস্তক এই বিষয়ে অত্যন্ত বিস্তৃত একটি বর্ণনা দিয়েছে ) । ৫। মোরাভেজ- উল যাহাব মাসুদি, ১৫৯ পৃষ্ঠা । ৬। শাহরিসতানির লিখিত মিল্লাল ওয়া নাহাল ১ম খণ্ড, ২৫ পৃষ্ঠা, বোম্বাই, ভারত । ৭। শিবলী নোমানীর ' আল ফারুক ' ভারতে মুদ্রিত । ৮। ইবনে আবিল হাদিদের নাহজুল বালাগার ভাষ্য ।