Imported post: Facebook Post: 2023-07-28T20:26:02

আশুরা-বিপ্লবের রয়েছে বহুমাত্রিকতা। আসলে ইমাম হুসাইনের নেতৃত্বে সংঘটিত এ মহাবিপ্লব ইসলামেরই পরিপূর্ণ চিত্রের প্রতিচ্ছবি। কালের মহাপাখায় এ মহাবিপ্লব ইসলামেরই সব দিককে জানার এবং সবগুলো মহৎ গুণ চর্চার কেন্দ্র-বিন্দুতে পরিণত হয়েছে। কারবালা ও আশুরা একত্ববাদ বা আল্লাহর সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা, ইসলামী নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য, সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ, খোদাপ্রেম ও ইসলামী আদর্শের জন্য চরম ত্যাগ-তিতিক্ষা, চরম ধৈর্য, চরম দৃঢ়তা, মানবতা, মহত্ত্ব, বীরত্ব, বিশ্বস্ততা, মহানুভবতা, মুক্তিকামিতা , সততা, আধ্যাত্মিকতা ও আত্ম-সংশোধনের নানা দিক শেখার এক মহান বিশ্ববিদ্যালয়। কারবালা এটা প্রমাণ করে যে রক্ত তরবারির ওপর বিজয়ী হতে পারে। সত্যের পক্ষে মুষ্টিমেয় সেনানীও ভেঙ্গে দিতে পারে প্রবল পরাক্রান্ত তাগুতি শক্তির সিংহাসন। ইমাম হুসাইনের (আ.) বিপ্লব ইসলামের ইতিহাসে অনন্য। এ বিপ্লব বদলে দিয়েছে বিশ্বের ইতিহাসকে। আশুরা বিপ্লবে মহানবীর (সা) নাতি শহীদ সম্রাট ইমাম হুসাইন (আ) ও তাঁর সঙ্গীদের অনন্য বীরত্ব ও আত্মত্যাগ ইসলামকে এবং মানবতাকে দিয়েছে এক অনন্য মহিমা, গৌরব ও সৌন্দর্য। মানবতা ও ইসলামকে অমর্যাদা ও অপবিত্রতার হাত থেকে রক্ষার যে আন্দোলন ও বিপ্লব তিনি গড়ে তুলেছিলেন তা যে কোনো মুক্তিকামী ও স্বাধীনতাকামী মানুষকে দেয় অশেষ মহত্ত্ব ও মর্যাদাপূর্ণ সেই আদর্শকে অনুসরণের অনুপ্রেরণা এবং তাদের মধ্যে জাগিয়ে তোলে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের দুর্বার সংকল্প। ইমাম হুসাইনের (আ) মহাবিপ্লব ছিল এক অসাধারণ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত পবিত্র ও মহান আন্দোলন। ইতিহাসে এর কোনো জুড়ি নেই। আর এ কারণেই তা চিরকালের আদর্শে পরিণত হয়েছে। এর লক্ষ্য কোনো নির্দিষ্ট গোত্র, জাতি, দেশ ও মহাদেশে সীমিত নয়। সমস্ত মানবতার কল্যাণই ছিল ওই মহাবিপ্লবের টার্গেট। একত্ববাদ, সত্য ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা, সমতা, সহমর্মিতা এবং এ ধরনের মনুষ্যত্বের জন্য অপরিহার্য হাজারো উপাদানকে সুপ্রতিষ্ঠার করাই ছিল এ মহাবিপ্লবের কাঙ্ক্ষিত উদ্দেশ্য। এ কারণে ইমাম হুসাইন (আ) সমস্ত মানুষের। সবাই তাঁকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। রাসূলুল্লাহ (সা.) যেমনটি বলেছেন, ‘হুসাইন আমা হতে এবং আমি হুসাইন হতে।’ তেমনি আমরাও যেন সমস্বরে বলি, ‘হুসাইন আমা হতে এবং আমি হুসাইন হতে।’ কারণ প্রায় ১৪০০ বছর আগে তিনি আমাদের জন্য এবং মানবতার জন্য বিপ্লব করে গেছেন। তার বিপ্লব ছিল গোষ্ঠী স্বার্থের ঊর্ধ্বে এবং পবিত্র ও মহান। ইমাম হুসাইন (আ.) দূরদর্শী ছিলেন। তিনি যা দেখতেন সমসাময়িক কালের কোনো বুদ্ধিজীবী কিংবা চিন্তাবিদের মাথায়ও তা আসত না। তিনি জনগণের পরিত্রাণের উপায় জনগণের চেয়ে ভালো বুঝতেন। দশ, কুড়ি, পঞ্চাশ, শত বছর যখন পার হয় তখন মানুষ একটু একটু বুঝতে পারে যে, সত্যিই তো! তিনি তো এক মহাবিপ্লব করে গেছেন! আজ আমরা পরিস্কার বুঝতে পারি যে, ইয়াজিদ কেমন মানুষ ছিল আর মুয়াবিয়া কেমন ব্যক্তি ছিল বা উমাইয়াদের ষড়যন্ত্র কি ছিল! কিন্তু ইমাম হুসাইন (আ.) সেদিনই সবার চেয়ে ভালো বুঝতে পেরেছিলেন। সেকালে বিশেষ করে অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে মদিনার লোকজন ইমাম হুসাইন (আ.) কি চান তা বুঝতে পারেনি। কিন্তু ইমাম হুসাইনের (আ.) শাহাদাতের সংবাদ যেদিন তাদের কানে গেলো, অমনি যেন সবার টনক নড়ে উঠল। সবার একই প্রশ্ন: হুসাইন ইবনে আলীকে (আ.) কেন শহীদ করা হল? এ বিষয়ে তদন্ত করার জন্য মদিনার চিন্তাশীল লোকদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠিত হয়। এর প্রধান ছিলেন আব্দুল্লাহ ইবনে হানযালা। তদন্ত কমিটি সিরিয়ায় গিয়ে ইয়াজিদের দরবারে এসে উপস্থিত হল। মাত্র ক’ দিন অতিক্রান্ত হতে না হতেই তারা অবস্থাটি ধরে ফেলল। অত্যন্ত ক্ষিপ্ত হয়ে তারা শীঘ্রই মদিনায় ফিরে এলো। লোকজন জিজ্ঞেস করলো: কি দেখে এলেন? জবাবে তারা বলল, শুধু এইটুকুই তোমাদের বলি যে,আমরা যে ক’ দিন সিরিয়ায় ছিলাম সে ক’ দিন শুধু এ চিন্তায় ছিলাম যে, খোদা এক্ষুণি হয়তো এ জাতিকে পাথর নিক্ষেপ করে ধ্বংস করবেন! লোকজন বলল, কেন, কি হয়েছে!? তারা বলল, আমরা এমন এক খলিফার সামনে গিয়েছিলাম যে প্রকাশ্যে মদ খাচ্ছিলো, জুয়া খেলছিল, কুকুর-বানর নিয়ে খেলা করছিল, এমন কি নারীর সাথে যেনাও করছিল! যে ব্যক্তির নাম সর্বযুগের স্বৈরাচার ও অত্যাচারী শাসকের রাজ প্রাসাদ নড়বড়ে করে দিয়েছে তিনি কি বৃথা নিহত হলেন! আব্দুল্লাহ ইবনে হানযালার আটজন ছেলে ছিল। তিনি মদিনার জনগণকে বললেন, তোমরা বিদ্রোহ কর আর না করো আমি শুধু আমার আটজন ছেলেকে নিয়ে হলেও বিদ্রোহ করতে যাচ্ছি। কথামতো তিনি তার আটজন ছেলেকে নিয়ে বিদ্রোহ করলেন এবং ইয়াজিদের বিরুদ্ধে ‘হাররা বিদ্রোহে’ প্রথম তার আটজন ছেলের সবাই এবং পরে তিনি নিজেও শহীদ হন। (মুরুজুয যেহাব ৩/৬৯) আব্দুল্লাহ ইবনে হানযালা নিঃসন্দেহে একজন চিন্তাশীল লোক ছিলেন। কিন্তু তিন বছর আগে ইমাম হুসাইন (আ.) যখন মদিনা থেকে বেরিয়ে আসনে তখন তিনিও ইমামের (আ.) কাজকর্ম থেকে কিছুই বুঝতে পারেননি। ইমাম হুসাইন (আ.) বিদ্রোহ করলেন, আন্দোলন করলেন, জানমাল উৎসর্গ করলেন। তিনটি বছর কেটে গেল। তারপর আজ এসে আব্দুল্লাহ ইবনে হানযালার মতো ব্যক্তিরও টনক নড়ল। এ হল ইমাম হুসাইনের (আ.) দূরদর্শিতা এবং বিচক্ষণতার স্বরূপ মাত্র। আশুরা বিপ্লবের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বুঝতে পারেনি এমন লোকদের কেউ কেউ বলেন, ইমাম শহীদ হলেন যাতে উম্মতের সমস্ত পাপ মাফ হয়ে যায়। এই ব্যাখ্যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও বিভ্রান্ত খ্রিস্টানদের অনুকরণ মাত্র। খ্রিষ্টানদের আকীদার একটি মূল অংশ এই যে, তারা বিশ্বাস করে হযরত ঈসা (আ.) ক্রুশবিদ্ধ হন খ্রিষ্টানদের পাপের বোঝা নিজের কাঁধে তুলে নেবার জন্য। অর্থাৎ এখন থেকে খ্রিষ্টানরা যতই পাপ করুক,কোনো ভয় নেই। কেননা হযরত ঈসা (আ.) আছেন। উম্মতের সব পাপ তার কাঁধেই পড়বে। এ কারণে আজ খ্রিষ্ট সমাজে যত অনাচার, নৈরাজ্য, ব্যভিচার, হত্যা, লুণ্ঠন অবাধে চলছে। দ্বিতীয় যে ভ্রষ্ট ব্যাখ্যা হুসাইনি আদর্শকে অসার ও প্রভাবহীন করে দেয় তা হলোঃ আরেক দল মুসলমান বলে থাকে ইমাম হুসাইন (আ.) বিদ্রোহ করে নিহত হলেন এটি তাঁর ভাগ্যে লেখা ছিল বলেই। তিনি তাঁর দায়িত্ব পালন করেছেন। ব্যাস, এ নিয়ে আপনার আমার মাথা ঘামানোর কিছু নেই এবং এটি ইসলামের মূল করণীয় বিষয়গুলোর অন্তর্ভুক্ত নয়। অথচ ইমাম হুসাইন (আ.) চিৎকার করে বললেন যে, আমার বিদ্রোহের কারণ ইসলামের মৌলিক ও সার্বিক বিষয়াদির সাথে সরাসরি সম্পর্কিত। ইসলাম কোনো মুমিনকে জুলুম, অত্যাচার, সামাজিক অধঃপতন প্রভৃতির প্রেক্ষিতে নাকে তেল ঢেলে নিশ্চিন্তে ঘুমানোর অনুমতি দেয় না। ইমাম হুসাইনের (আ.) আদর্শ ছিল ইসলামী আদর্শেরই এক বাস্তব প্রতিফলন। অনেকে আবার এই বলে চোখের পানি ঝরাতে থাকে যে, নবীর (সা.) সন্তান ইমাম হুসাইনকে (আ.) বিনা দোষে হত্যা করা হয়েছে। অর্থাৎ ইমাম হুসাইন (আ.) নির্দোষ ছিলেন তবে দুঃখ হল যে তাকে মজলুম অবস্থায় হত্যা করা হয়েছে। শুধু এটিই তাদের আফসোস। অনর্থক তার রক্ত ধুলায় মেখেছে। তারা চোখের পানি দিয়ে যেন হযরত ফাতিমাকে (আ.) সান্ত্বনা দিতে চায়। এর চেয়ে বোকামি আর কী আছে? পৃথিবীতে যদি কোনো একজন লোক তার রক্তের প্রতিটি ফোটাকে সর্বশ্রেষ্ঠ মূল্য দান করে থাকেন তাহলে তা একমাত্র ইমাম হুসাইনই তা (আ.) পেরেছেন। সেই ৬১ হিজরি থেকে আজ ১৪৪৫ হিজরি পর্যন্ত ইমাম হুসাইনের (আ.) নামে যত টাকা-পয়সা খরচ করা হয়েছে তা যদি হিসাব করা হয় তাহলে দেখা যাবে যে তাঁর প্রতি ফোটা রক্তের জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। যে ব্যক্তির নাম সর্বযুগের স্বৈরাচার ও অত্যাচারী শাসকের রাজ প্রাসাদ নড়বড়ে করে দিয়েছে তিনি কি বৃথা নিহত হলেন! তাই আমরা যারা আফসোস করে বলি যে, মজলুম ইমাম হুসাইন (আ.) অকারণে নিহত হয়েছেন তাদের জানা উচিত মহানবীর (সা) এই বাক্য, ‘হুসাইন আমা থেকে ও আমি হুসাইন থেকে!’ শহীদ সম্রাট ইমাম হুসাইনের (আ.) মর্যাদায় একমাত্র শাহাদাতের মাধ্যমেই পৌঁছানো সম্ভব। তিনি শ্রেষ্ঠ মর্যাদার অধিকারী। তাই তাঁর নজিরবিহীন মজলুম অবস্থা ও বীরত্বপূর্ণ শাহাদাতের প্রেক্ষাপটে আমাদের মূলত এ উদ্দেশ্যেই চোখের পানি ঝরানো উচিত যাতে ইমাম হুসাইনের (আ.) ঈমান, দৃঢ়তা, সত্যকামিতা ও ন্যায়পরায়ণতা, মুক্তিকামিতা, সৎসাহস, বীরত্ব, খোদাভীতি প্রভৃতির সাগর থেকে এক বিন্দু হলেও যেন আমাদের ভাগ্যে জোটে!। হুসাইনী আদর্শকে হুবহু টিকিয়ে রাখা তখনই সম্ভব হবে যখন আমরা হুসাইনি আত্মার সাথে একাত্ম হতে পারব। ইমাম হুসাইনের (আ.) ঈমান, একত্ববাদ, মুক্তিকামিতা, তাকওয়া, সত্য ও ন্যায়পরায়ণতা থেকে আমরা যদি সামান্যটুকুও লাভের আশায় চোখের পানি ঝরাতে পারি তাহলে এ চোখের পানির মূল্য হবে অপরিসীম। এ অশ্রু একটি মাছির পাখনার সমান সূক্ষ্ণ হলেও তার মূল্য কেউ দিতে পারবে না। ইমাম হুসাইন আদর্শ প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। এই আদর্শের খাঁটি অনুসারী হবার আশায় কাঁদলে সে কান্নাই হচ্ছে সবচেয়ে বেশি মূল্যবান। ইমাম হুসাইনের (আ.) সুউন্নত আত্মা অপরাজেয়। এ আত্মার কোনো ধ্বংস নেই! হুসাইনী আদর্শকে টিকিয়ে রাখার ওপর বেশি জোর দেয়া হয় এ জন্যই যাতে মানুষ ইসলামের এই বাস্তব চেহারাকে সরাসরি দেখতে পারে। মানুষ নবী (সা.) বংশের এই ঈমান দেখে নবীর (সা.) নবুয়্যতকে সত্য বলে বুঝতে পারবে। কেউ যদি অসীম বীরত্ব ও ঈমানের পরিচয় দিয়ে কেবল কাফেরদের সাথে যুদ্ধ করে নিহত হয় তবুও এটি রাসূলুল্লাহর (সা.) রিসালাতের সত্যতার জন্য তেমন কোনো দলিল হতে পারে না। কিন্তু নবীর (সা.) সন্তান হযরত ইমাম হুসাইনকে (আ.) যখন ঐ অসীম ঈমান, সাহস, বীরত্ব, তৌহিদী অবস্থায় শহীদ হতে দেখে তখন যে কেউই রাসূলুল্লাহর (সা.) রিসালাতের সত্যতা বুঝতে সক্ষম হয়। পৃথিবীর কোনো লোকই হযরত আলীর (আ.) চেয়ে বেশী সময় রাসূলুল্লাহর (সা.) সান্নিধ্য পায়নি। রাসূলের (আ.) ঘরেই তিনি বড় হন। তাঁকে দেখে মানুষ যেমন রাসূলুল্লাহর (সা.) রেসালাতের সত্যতাকে বুঝতে পারে ঠিক তেমনিভাবে রাসূলুল্লাহর (সা.) আদর্শে অনুপ্রাণিত রাসূলের (সা.) সন্তানকেও যখন অসীম ঈমান ও বিশ্বস্ততার সাথে দেখে তখনও মানুষ রাসূলুল্লাহর (সা.) রিসালাতের সত্যতা বুঝতে পারে। কারণ রাসূলুল্লাহর (সা.) প্রতিচ্ছবি ইমাম হুসাইনের (আ.) মধ্যে দেখা যায়। মুসলমানরা ঈমান শব্দটি কতই শুনেছে কিন্তু বাস্তবে কমই দেখেছ। ইমাম হুসাইনের (আ.) দিকে তাকালেই এই ঈমানের প্রতিফলন দেখতে পায়। মানুষ অবাক হয়ে বলতে বাধ্য হয় যে,মানুষ কোথায় পৌঁছতে পারে!! মানুষের আত্মা এত অপরাজেয় হতে পারে!! তাঁর দেহকে খণ্ড -বিখণ্ড করা হয়, যুবক পুত্রকে তাঁর চোখের সামনে ছিন্ন-ভিন্ন করা হয়, তৃষ্ণার চোটে আকাশের দিকে চেয়ে যার চোখ অন্ধকার হয়ে আসে, পরিবার-পরিজনদেরকে একই শিকলে বেঁধে বন্দী করা হয়, সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হন। কিন্তু যে জিনিস অক্ষয় হয়ে রয়ে গেছে তা হল ইমাম হুসাইনের (আ.) সুউন্নত অপরাজেয় আত্মা। এ আত্মার কোনো ধ্বংস নেই। পৃথিবীতে আর মাত্র একটি ঘটনা খুঁজে বের করুন যাতে সমস্ত মানবিক গুণাবলী পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে হয়েছে রক্ষিত ও প্রতিফলিত। কারবালা ছাড়া দ্বিতীয় কোনো ঘটনায় যদি তা পাওয়া যেত তাহলে আমরা এখন থেকে কারবালার ঘটনাকে রেখে সেটাকেই স্মরণ করবো। না, কোথাও পাবেন না। তাই কারবালার মতো ঘটনাকেই বাঁচিয়ে রাখতে হবে যে ঘটনায় আত্মিক ও মানসিক উভয় দিক দিয়ে মাত্র ৭২ জনের এক বাহিনী ত্রিশ হাজার লোকের বাহিনীকে পরাজিত করেছে। তারা সংখ্যায় মাত্র ৭২ জন ছিলেন এবং মৃত্যু যে নির্ঘাত এটিও তারা নিশ্চিতভাবে জানতেন। তবুও কিভাবে তারা ত্রিশ হাজারের বাহিনীকে পরাজিত করতে সক্ষম হলেন? প্রথমত তারা এমন শক্তিতে শক্তিমান ছিলেন যে,শত্রুদের থেকে হুর ইবনে ইয়াজিদ রিয়াহীর মতো ত্রিশ জনেরও বেশি লোককে বেঁচে থাকার ঘাঁটি থেকে নির্ঘাত মৃত্যুর ঘাঁটিতে আকর্ষণ করতে সক্ষম হন! কিন্তু মৃত্যুর ঘাঁটি থেকে একজন লোকও ইয়াজিদের দুনিয়াবি ঘাঁটিতে যায়নি! তাহলে বুঝতে হবে যে, এ ঘাঁটিতে সংখ্যা কম এবং মৃত্যু নিশ্চিত হলেও এখানে শক্তি-সামর্থ্য অনেক বেশী যা দিয়ে শত্রুদেরকেও আকর্ষণ করা যায়। দ্বিতীয়ত আরবের চিরাচরিত নিয়মানুযায়ী একজনের মোকাবিলায় অন্য আরেকজন যুদ্ধ করতো। কারবালায় ইয়াজিদই সেনাপতি ইবনে সা’ দ প্রথমে এভাবেই যুদ্ধ করত রাজি হয়। কিন্তু যখন দেখল যে, এভাবে যুদ্ধ করলে ইমাম হুসাইনের (আ.) একজন সৈন্যই তাঁর সব সৈন্যকে সাবাড় করে দিতে যথেষ্ট তখন সে এ যুদ্ধ বর্জন করে দল বেঁধে আক্রমণ করার নির্দেশ দিতে বাধ্য হল। আশুরার দিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত একে একে ৭১ জন শহীদের লাশকে ইমাম হুসাইন কাঁধে বয়ে তাঁবুতে নিয়ে এসেছেন। তাদের কাছে গিয়ে অভয় বাণী দিয়েছেন, তাঁবুতে এসে সবাইকে শান্ত করেছেন, এছাড়া তিনি নিজেও কত দুঃখ-কষ্ট সহ্য করেছেন। ৫৭ বছরের একজন বৃদ্ধলোক এত ক্লান্ত, শ্রান্ত অবস্থায় যখন ময়দানে এলেন তখন শত্রুরা ভেবেছিল হয়তো সহজেই তাঁকে পরাস্ত করা যাবে। কিন্তু একটু পরেই তাদের সব আশা-ভরসা উড়ে গেল। ইমাম হুসাইনের (আ.) সামনে যে-ই এলো এক মুহূর্তও টিকে থাকতে পারলো না। ওমর ইবনে সাদ এ অবস্থা দেখে চিৎকার করে বলে উঠে: ‘তোমরা কি জানো ইনি কার সন্তান? এ তাঁরই সন্তান যে সমস্ত আরবকে নিশ্চিহ্ন করতে পারতো। এ তো আল্লাহর সিংহ শেরে খোদা আলীর (আ.) সন্তান!’ ( মাকতালু মোকাররম: ৩৪৬ বিহারুল আনওয়ারঃ ৪৫/৫৯ মানাকিবে ইবনে শাহের অশুবঃ ৪/১১০) ওমর ইবনে সাদ তারপর বলে : ‘আল্লাহর শপথ করে বলছি, তার দু’ বাহুতে তার বাবার মতোই শক্তি। আজ যে তাঁর মোকাবিলায় যাবে তার মৃত্যু অনিবার্য।’ এটি কি ওমর ইবনে সা’ দের পরাজয়ের প্রমাণ নয়? ত্রিশ হাজার সেনা নিয়ে যে একজন ক্লান্ত-শ্রান্ত, বয়োবৃদ্ধ, অপরিমেয় দুঃখ-কষ্টে জর্জরিত ব্যক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়ে পিছু হটে ছুটে পালায় এটি কি তাদের পরাজয় নয়? ( ইরশাদে মুফিদঃ ২৩০ বিহারুল আনওয়ারঃ ৪৪/৩৯০) তারা তলোয়ারের মুখে যেমন পরাজয় বরণ করে তেমনি ইমাম হুসাইনের (আ.) চিন্তাধারার কাছেও তাদের হীন চিন্তাধারা পরাজিত হয়। আশুরার দিন যুদ্ধ আরম্ভ হবার আগে ইমাম হুসাইন (আ.)-তিনবার বক্তৃতা দান করেন। এ বক্তৃতাগুলোর প্রত্যেকটিই ছিল বীরত্বপূর্ণ। যাদের বক্তৃতা করার অভ্যাস আছে তারা হয়তো জানেন যে বক্তৃতার ধরন অনুযায়ী উপযুক্ত মানসিকতার দরকার হয়। সাধারণ অবস্থায় মানুষ একটি অসাধারণ বক্তব্য রাখতে পারে না। যে হৃদয় আঘাত পেয়েছে সে ভালো শোক-গাঁথা পড়তে পারে। তেমনি কেউ যদি বীরত্বপূর্ণ বক্তব্য দিতে চায় তাহলে তার অস্তিত্ব বীরের ভাবানুভবে ভরা থাকতে হবে। ইমাম হুসাইন (আ.) আশুরার দিনে যখন বক্তৃতা দিতে দাঁড়ালেন তখন ইবনে সা’ দ চিন্তায় পড়ে গেল। সবার কানে যাতে ইমামের কথা পৌঁছায় সে জন্য ইমাম হুসাইন (আ.) একটি উঁচু জায়গা হিসাবে উটের পিঠে উঠে দাঁড়ালেন এবং চিৎকার করে বললেন, ‘হে জনগোষ্ঠী! তোমাদের জন্য ধ্বংস এ জন্য যে, তোমরা জটিল পরিস্থিতিতে আমার সাহায্য চেয়েছো। আমি তোমাদের সাহায্যের জন্য ছুটে এসেছি। কিন্তু যে তরবারি আমার সাহায্যে পরিচালনার শপথ তোমরা নিয়েছিলে আজ আমাকেই হত্যার জন্য সে তরবারি হাতে নিয়েছ।’ ( আল-লুহুফঃ ৪১ তুহফাল উকুলঃ ১৭৩ মানাকিবে ইবনে শাহরে অশুবঃ ৪/১১০ মাকতালু মোকাররামঃ ২৮৬/৬) সত্যিকার অর্থে হযরত আলীর (আ.) জ্ঞানগর্ভমূলক বাগ্মিতার পর এ ধরনের বক্তৃতা আর খুঁজে পাওয়া যায় না। ইমাম হুসাইনের (আ.) বক্তৃতায় যেন হযরত আলীরই (আ.) বিচক্ষণতা! যেন সেই একই জ্ঞান, সেই একই সাহস! সেই একই বীরত্ব! ইমাম হুসাইন (আ.) এ কথা তিনবার চিৎকার করে বললেন। তাতেই ইবনে সাদের মনে ভয় ঢুকে গেলো যে, এভাবে কথা বলতে দিলে এক্ষুণি তার বাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়বে। তাই ইমাম হুসাইন (আ.) যখন চতুর্থ বারের মত কথা বলতে যাবেন এ সময় পরাজিত মনোবৃত্তি নিয়ে কাপুরুষ ওমর ইবনে সাদ নির্দেশ দিল যে, সবাই হৈ-হুল্লোড় করে উঠবে যাতে ইমাম হুসাইনের (আ.) কথা কেউ শুনতে না পারে। এটি কি পরাজয় নয়? এটি কি ইমাম হুসাইনের (আ.) বিজয় নয়? মানুষ যদি ইমানদার হয়, একত্ববাদী হয়, যদি আল্লাহর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে এবং পরকালে বিশ্বাসী হয় তাহলে একাই বিশ-ত্রিশ হাজার সুসজ্জিত সৈন্যকে মানসিকভাবে পরাস্ত করতে পারে। এটি কি আমাদের জন্য একটা শিক্ষণীয় বিষয় নয়? এরূপ উদাহরণ আপনি দ্বিতীয়টি পাবেন কোথায়? পৃথিবীতে একজন লোক খুঁজে বের করুন, যে ইমাম হুসাইনের (আ.) মত দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে পড়েও মাত্র দুটো শব্দ ইমাম হুসাইনের (আ.) মতো বলতে পারে!। হুসাইনী আন্দোলনকে জিইয়ে রাখার জন্য এত জোর দেয়ার কারণ হল যে আমরা এটিকে সঠিক ভাবে বুঝবো, এর অনাবিষ্কৃত রহস্যগুলো উদ্ধার করবো এবং তা থেকে শিক্ষা নেব। আমরা যাতে ইমাম হুসাইনের (আ.) মহত্বকে অনুধাবন করতে পারি এবং যদি দু’ ফোটা চোখের পানি ঝরাই তা যেন সম্পূর্ণ মারেফাত সহকারে এবং জেনেশুনে ঝরাতে পারি। ইমাম হুসাইনের (আ.) পরিচিতি আমাদেরকে উন্নত করে, আমাদের মানুষ করে গড়ে তোলে, আমাদের মুক্তি দান করে। আমাদেরকে সত্য, হাকিকত এবং ন্যায়ের শিবিরে নিয়ে যায় এবং একজন খাঁটি মুসলমান তৈরি করে দেয়। হুসাইনী আদর্শ মানুষ গড়ার আদর্শ, পাপী তৈরি করার আদর্শ নয়। হুসাইনের (আ.) ঘাঁটি সৎ কর্মীর ঘাঁটি, পাপীদের এখানে কোন আশ্রয় নেই। ইতিহাসে আছে, আশুরার দিন ভোর বেলায় ইমাম হুসাইন নামাজ সেরে তার সঙ্গী-সাথীদেরকে বললেন, তৈরি হয়ে যাও। মৃত্যু এ দুনিয়া থেকে ঐ দুনিয়ার পার হবার জন্য একটা সাকো বৈ কিছুই নয়। একটা কঠিন দুনিয়া থেকে তোমাদেরকে একটা মর্যাদাশালী মহান জগতে পার করে দেব। এ ছিল ইমাম হুসাইনের (আ.) বক্তব্য । এ ঘটনাটি ইমাম হুসাইন (আ.) বর্ণনা করেননি। কারবালায় যারা উপস্থিত ছিল তারাই বর্ণনা করেছে। এমন কি ইবনে সা’দের নিযুক্ত গুপ্তচর বা সংবাদ সংগ্রহকারী হেলাল ইবনে নাফেও এ ঘটনা বর্ণনা করেছে যে, আমি হুসাইন ইবনে আলীকে (আ.) দেখে অবাক হয়ে যাই। তাঁর শেষ মুহূর্ত যতই ঘনিয়ে আসছিল এবং যতই তার কষ্ট অসহনীয় হয়ে উঠছিল ততই তাঁর চেহারা উজ্জ্বল হয়ে উঠছিল। যেন দীর্ঘ বিরহের পর কারো তাঁর আপনজনের সাথে মিলনের সময় হয়েছে!এমনকি যখন অভিশপ্ত শিমার ইমাম হুসাইনের শিরচ্ছেদ করছিল তখন অন্য এক ঘাতক বলছিল আমি তার চেহারায় এমন প্রসন্নতা এবং উজ্জ্বলতা দেখেছিলাম যে তাকে হত্যা করার কথা একবারে ভুলেই গিয়েছিলাম। (আল লুহুফঃ ৫৩, বিহারুল আনওয়ারঃ ৪৫/৫৭) ইমাম হুসাইন (আ) যখন পরিবারের কাছ থেকে শেষবারের মত বিদায় নিয়ে যুদ্ধ করতে যাচ্ছিলেন তখন বোন যাইনাবকেও কিছু উপদেশ দিয়ে বিদায় নেয়ার সময় যাইনাব আবারও ফিরে আসতে লাগল ভাইয়ের দিকে এবং বললেন: থামো থামো বা ধীরে চলুন ভাই! ইমাম বললেন, কি ব্যাপার! তাবুতে যেতে বললাম না! যাইনাব কাছে এসে বললেন: মায়ের একটা ওসিয়ত মনে পড়ল! তা পালন করতে এলাম! এ কথা বলে ভাইয়ের গলায় একটি চুমো খেলেন! মা ফাতিমা যাইনাবকে সেই বহু বছর আগে বলে রেখেছিলেন যে, আমার হুসাইন যখন নিশ্চিত শাহাদাতকামী যুদ্ধের উদ্দেশ্যে রওনা দেবে তখন তুমি আমার পক্ষ থেকে তাঁর গলায় একটি চুমো দিও। এ যেন মা ফাতেমারই চুম্বন সেই গলায় যা কিছুক্ষণ পরই জীবন্ত অবস্থায় কাটা হবে শিমারের মত জালিমদের হাতে! জালিমদের ওপর আল্লাহর চির-অভিশাপ ও কঠোর শাস্তি কামনা করছি লানাতুল্লাহি আলাল কাজেবিন আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মাদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মাদ ওয়া আজ্জিল ফারাজাহুম নিবেদক মোঃ জাহিদ হোসেন

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিমআল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদপবিত্র কুরআন ও রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম এর হাদিস থেকে আমিরুল মোমেনীন আলী ইবনে আবি তালিব আঃ এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ হাদিসমহানবী হযরত মুহাম্মদ ‎(সা.)-এর উত্তরাধিকারী,তাঁর নবুওয়াতের মিশনের প্রধান সাহায্যকারী এবং দুনিয়া ও আখেরাতে রাসূলের ভ্রাতা আলী ‎(আ.) ‏আবরাহার পবিত্র মক্কা আক্রমণের ৩৩ বছর পর ১৩ রজব পবিত্র কা’বা শরীফে জন্মগ্রহণ করেন। মহান আল্লাহর আদেশে তাঁর নাম রাখা হয় আলী।শিশুকাল থেকেই মহানবী ‎(সা.)-এর সাথে হযরত আলীর বিশেষ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ সম্পর্কে আলী ‎(আ.) ‏নিজেই বলেছেন ‎: ‘...তিনি আমাকে তাঁর কোলে রাখতেন যখন আমি শিশু ছিলাম। তিনি আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরতেন এবং তাঁর বিছানায় শুইয়ে রাখতেন। তাঁর পবিত্র দেহ আমার দেহকে স্পর্শ করত এবং তিনি আমাকে তাঁর শরীরের সুগন্ধির ঘ্রাণ নেওয়াতেন। তিনি খাদ্য-দ্রব্য চিবিয়ে আমার মুখে পুরে দিতেন।...’১হযরত আবু তালিবের সংসারের ব্যয়ভার কমানোর জন্য হযরত আলীর বালক বয়সেই মহানবী ‎(সা.) ‏তাঁকে নিজের কাছে নিয়ে আসেন। তখন থেকে তিনি রাসূলের সার্বক্ষণিক সঙ্গী হয়ে যান। রাসূল হেরা পর্বতের গুহায় আল্লাহর ইবাদাত করতে গেলেও তাঁকে সাথে নিয়ে যেতেন। হযরত আলী বলেন ‎: ‘তিনি ‎(মহানবী) ‏প্রতি বছর হেরাগুহায় একান্ত নির্জনে বাস করতেন। আমি তাঁকে দেখতাম। আমি ব্যতীত আর কোন লোকই তাঁকে দেখতে পেত না। ঐ সময় রাসূলুল্লাহ্ ও খাদীজাহ্ ব্যতীত কোন মুসলিম পরিবারই পৃথিবীর বুকে ছিল না। আমি ছিলাম তাঁদের পরিবারের তৃতীয় সদস্য। আমি ওহী ও রেসালতের আলো প্রত্যক্ষ করেছি এবং নবুওয়াতের সুবাস ও সুঘ্রাণ অনুভব করেছি।’২তিনি মহানবীর প্রতি নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁকে অনুসরণ করতেন। তিনি বলেন ‎: ‘উষ্ট্র শাবক যেমনভাবে উষ্ট্রীকে অনুসরণ করে ঠিক সেভাবে আমি তাঁকে অনুসরণ করতাম। তিনি প্রতিদিন তাঁর উন্নত চরিত্র থেকে একটি নিদর্শন আমাকে শিক্ষা দিতেন এবং আমাকে তা পালন করার নির্দেশ দিতেন।... ‏তাঁর ওপর যখন ওহী অবতীর্ণ হয়েছিল তখন আমি শয়তানের ক্রন্দন ধ্বনি শুনেছিলাম। তাই আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম ‎: ‏হে রাসূলুল্লাহ্! ‏এ ক্রন্দন ধ্বনি কার? ‏তখন তিনি আমাকে বলেছিলেন ‎: ‏এই শয়তান এখন থেকে তার পূজা ‎(ইবাদাত) ‏করা হবে না বলে হতাশ হয়ে গেছে। নিশ্চয় আমি যা শুনি তুমি তা শোন এবং আমি যা দেখি তা দেখ। তবে তুমি নবী নও,কিন্তু ‎[নবীর] ‏সহকারী এবং নিঃসন্দেহে তুমি মঙ্গল ও কল্যাণের ওপরই আছ।’৩আর তাই মহানবী ‎(সা.)-এর নবুওয়াতের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসার পর তিনিই সর্বপ্রথম তাঁর ওপর ঈমান আনেন এবং তিনিই তাঁর সাথে নামায আদায় করা প্রথম ব্যক্তি। ইমাম মালেক বর্ণনা করেছেন ‎: ‘মহানবী ‎(সা.) ‏সোমবারে নবুওয়াত প্রাপ্ত হন এবং আলী মঙ্গলবারে তাঁর ওপর ঈমান আনেন।’৪হযরত আলী নিজেই বলেন ‎: ‘আমি আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসূলের ভ্রাতা এবং তাঁর নবুওয়াতের সবচেয়ে বড় বিশ্বাসস্থাপনকারী। একমাত্র মিথ্যাবাদী ছাড়া আমার পর কেউ এ দাবি করবে না। অন্য লোকদের নামায পড়ারও ৭ বছর আগে থেকে আমি নামায পড়েছি।’৫হযরত আলী ‎(আ.)-এর প্রসিদ্ধ উপাধিরাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏হযরত আলীকে বিভিন্ন উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন। এর মধ্যে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ হচ্ছে সিদ্দিকে আকবার,ফারুকে আযম,আসাদুল্লাহ ও মুরতাজা।পবিত্র কুরআনে হযরত আলী ‎(আ.)-এর মর্যাদাহযরত আলীর শানে পবিত্র কুরআনের অনেক আয়াত নাযিল হয়েছে। ইবনে আসাকির হযরত ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা করেছেন যে,কোন ব্যক্তির গুণ বর্ণনায় এত অধিক কুরআনের বাণী অবতীর্ণ হয়নি যা হযরত আলী সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস আরও বলেছেন যে,হযরত আলীর শানে তিনশ’ ‏আয়াত নাযিল হয়েছে এবং তাঁর গুণাবলি অত্যধিক ও প্রসিদ্ধ।৬ পবিত্র কুরআনের নাযিলকৃত আয়াতগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নিম্নে উল্লেখ করা হল ‎:১. ‏সূরা বাকারার ২০৭ নং আয়াতوَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَشْرِي نَفْسَهُ ابْتِغَاءَ مَرْضَاتِ اللَّهِ وَاللَّهُ رَءُوفٌ بِالْعِبَادِ‘এবং মানুষের মধ্যে এমনও আছে,যে আল্লাহর সন্তোষ লাভের জন্য নিজের জীবন পর্যন্ত বিক্রয় করে দেয় এবং আল্লাহ ‎(এরূপ) ‏বান্দাদের প্রতি অতিশয় অনুগ্রহশীল।’সালাবী তাঁর তাফসীর গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন যে,রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏যখন মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করার প্রস্তুতি নিলেন সেই সময় হযরত আলীকে তাঁর বিছানায় শুয়ে থাকার নির্দেশ দেন যাতে কাফির-মুশরিকরা মনে করে যে,রাসূল তাঁর নিজ ঘরেই রয়েছেন। আলী ‎(আ.) ‏নির্দ্বিধায় এ নির্দেশ পালন করলে মহান আল্লাহ এ আয়াত নাযিল করেন।৭ ২. ‏সূরা আলে ইমরানের ৬১ নং আয়াতفَمَنْ حَاجَّكَ فِيهِ مِنْ بَعْدِ مَا جَاءَكَ مِنَ الْعِلْمِ فَقُلْ تَعَالَوْا نَدْعُ أَبْنَاءَنَا وَأَبْنَاءَكُمْ وَنِسَاءَنَا وَنِسَاءَكُمْ وَأَنْفُسَنَا وَأَنْفُسَكُمْ ثُمَّ نَبْتَهِلْ فَنَجْعَلْ لَعْنَتَ اللَّهِ عَلَى الْكَاذِبِينَ‘অতঃপর তোমার নিকট যখন জ্ঞান ‎(কুরআন) ‏এসে গেছে,এরপরও যদি কেউ ‎(খ্রিস্টান) ‏তোমার সাথে তার ‎(ঈসার) ‏সম্বন্ধে তর্ক-বিতর্ক করে,তবে বল,‘(ময়দানে) ‏এস,আমরা আহ্বান করি আমাদের পুত্রদের ও তোমাদের পুত্রদের,আমাদের নারীদের ও তোমাদের নারীদের এবং আমাদের সত্তাদের ও তোমাদের সত্তাদের;’ ‏অতঃপর সকলে মিলে ‎(আল্লাহর দরবারে) ‏নিবেদন করি এবং মিথ্যাবাদীদের ওপর আল্লাহর অভিসম্পাত বর্ষণ করি।’ঘটনাটি এরূপ ‎: ‏রাসূলুল্লাহ্ ‎(সা.)-এর নবুওয়াতের সত্যতা যাচাই করার জন্য নাজরানের একটি খ্রিস্টান প্রতিনিধিদল মদীনায় আসল। তাদের সাথে আলোচনা ফলপ্রসূ হলো না। রাসূল ‎(সা.) ‏হযরত ঈসা ‎(আ.) ‏সম্বন্ধে প্রতিনিধিদের বললেন যে,তিনি আল্লাহর পুত্র নন,বরং আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। রাসূলুল্লাহ্ হযরত ঈসার জন্মের ব্যাপারে হযরত আদমের উদাহরণও দিলেন। কিন্তু তারা কোন কথাই শুনল না। অবশেষে তিনি আল্লাহর আদেশে পরস্পরের বিরুদ্ধে দোয়া ও মিথ্যাবাদীদের ওপর অভিশাপ বর্ষণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন,যাকে ‎‘মুবাহিলা’ ‏বলে। স্থির করা হল যে,নির্দিষ্ট স্থানে নির্দিষ্ট সময়ে উভয়ে নিজ নিজ পুত্রদের,নারীদের ‎(কন্যা সন্তানদের) ‏এবং তাদের নিজেদের ‎‘সত্তা’ ‏বলে গণ্য হওয়ার যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে একত্র হবে এবং প্রত্যেকে অপরের প্রতি অভিসম্পাত ও আল্লাহর শাস্তি কামনা করবে। রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏ইমাম হুসাইনকে কোলে নিয়ে ইমাম হাসানের হাত ধরলেন এবং হযরত ফাতিমাকে নিজের পেছনে,আর হযরত আলীকে তাঁর পেছনে রাখলেন। অর্থাৎ ছেলেদের স্থানে তিনি নাতিদের,নারীদের স্থানে নিজ কন্যাকে এবং ‎‘সত্তা’ ‏বলে গণ্যদের স্থানে আলীকে নিলেন এবং দোয়া করলেন,‘হে আল্লাহ! ‏প্রত্যেক নবীর আহলে বাইত থাকে,এরা আমার আহলে বাইত। এদের সকল দোষ-ত্রুটি হতে মুক্ত ও পাক-পবিত্র রেখ।’ ‏তিনি এভাবে ময়দানে পৌঁছলে খ্রিস্টানদের নেতা আকব তা দেখে বলল,‘আল্লাহর কসম,আমি এমন নূরানী চেহারা দেখছি যে,যদি এ পাহাড়কে নিজ স্থান হতে সরে যেতে বলেন,তবে অবশ্যই সরে যাবে। সুতরাং মুবাহিলা হতে হাত গুটিয়ে নেওয়াই কল্যাণকর,অন্যথায় কিয়ামত অবধি খ্রিস্টানদের কেউ অবশিষ্ট থাকবে না।’ ‏পরিশেষে তারা জিযিরা কর দিতে সম্মত হল। এটা হযরত আলীর একটি উঁচু স্তরের ফযিলত যে,তিনি আল্লাহর আদেশে রাসূলের ‎‘নাফ্স’ (অনুরূপ সত্তা) ‏সাব্যস্ত হলেন এবং সমুদয় নবীর থেকে শ্রেষ্ঠ হলেন।৮৩. ‏সূরা নিসার ৫৯ নং আয়াত ‎يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ‘হে বিশ্বাসিগণ! ‏তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূল ও তোমাদের মধ্যে যারা নির্দেশের অধিকর্তা,তাদের আনুগত্য কর...।’ইমাম জাফর সাদিক ‎(আ.)- ‏কে জিজ্ঞেস করা হলো যে,উত্তরাধিকারীর আদেশ মান্য করা কি অবশ্যই কর্তব্য? ‏তিনি বললেন ‎: ‏হ্যাঁ,তাঁরা ঐসব ব্যক্তি যাঁদের আদেশ পালন করা এ আয়াতে ওয়াজিব করা হয়েছে...। এ আয়াত হযরত আলী বিন আবি তালিব,হযরত হাসান ও হযরত হুসাইন ‎(আ.)-এর শানে অবতীর্ণ হয়েছে।৯ ৪. ‏সূরা মায়েদার ৫৫ নং আয়াতإِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَالَّذِينَ آمَنُوا الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُمْ رَاكِعُونَ‘(হে বিশ্বাসিগণ!) ‏তোমাদের অভিভাবক তো কেবল আল্লাহ,তাঁর রাসূল এবং সেই বিশ্বাসীরা যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে এবং রুকু অবস্থায় যাকাত প্রদান করে।’শীয়া-সুন্নি উভয় মাযহাবের তফসীরকাররা একমত যে,আয়াতটি হযরত আলী ‎(আ.)-এর শানে নাযিল হয়েছে। যেমন ইবনে মারদুইয়া এবং খাতীব বাগদাদী ইবনে আব্বাস সূত্রে এবং তাবরানী ও ইবনে মারদুইয়া আম্মার ইবনে ইয়াসির ও আলী ইবনে আবি তালিব সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে,আয়াতটি আলী ইবনে আবি তালিব ‎(আ.) ‏সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে যখন তিনি রুকু অবস্থায় যাকাত দেন।ঘটনাটি এরূপ ‎: ‏একদিন হযরত আলী ‎(আ.) ‏মদীনার মসজিদে নামায পড়ছিলেন। এমন সময় একজন ভিক্ষুক এসে ভিক্ষা চাইল। কিন্তু কোন ভিক্ষা না পাওয়ায় সে ফরিয়াদ করল যে,রাসূলের মসজিদ থেকে সে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছে। এ সময় হযরত আলী রুকু অবস্থায় ছিলেন। তিনি সেই অবস্থায় তাঁর ডান হাতের আঙ্গুল থেকে আংটি খুলে নেওয়ার জন্য ভিক্ষুকের প্রতি ইশারা করেন। ভিক্ষুক তাঁর হাত থেকে আংটি খুলে নেয়। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে উপরিউক্ত আয়াত নাযিল হয়।১০৫. ‏সূরা মায়েদার ৬৭ নং আয়াতيَا أَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ مِنْ رَبِّكَ وَإِنْ لَمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ وَاللَّهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْكَافِرِينَ‘হে রাসূল! ‏যা ‎(যে আদেশ) ‏তোমার প্রতিপালকের পক্ষ হতে তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে তা পৌঁছে দাও,আর যদি তুমি তা না কর,তবে তুমি ‎(যেন) ‏তার কোন বার্তাই পৌঁছাওনি,এবং ‎(তুমি ভয় কর না) ‏আল্লাহ তোমাকে মানুষের অনিষ্ট হতে রক্ষা করবেন;এবং নিশ্চয় আল্লাহ অবিশ্বাসী সম্প্রদায়কে সঠিক পথে পরিচালিত করেন না।’যখন রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏দশম হিজরিতে বিদায় হজ্ব থেকে মদীনায় প্রত্যাবর্তন করছিলেন সে সময় আল্লাহ্ তা‘আলা এ আয়াত নাযিল করেন। ইবনে আবী হাতিম ও ইবনে আসাকির আবু সাঈদ খুদরী হতে বর্ণনা করেছেন যে,এ আয়াত গাদীরে খুম প্রান্তরে হযরত আলী ‎(আ.)-এর শানে নাযিল হয়েছে।বিদায় হজ্ব থেকে প্রত্যাবর্তন করার সময় গাদীরে খুম নামক স্থানে মহানবী ‎(সা.) ‏হযরত আলীকে তাঁর পরে সকল মুমিনের অভিভাবক বলে ঘোষণা দেন।১১এ ঘোষণা দেয়ার পর হযরত ওমর হযরত আলীর সাথে সাক্ষাৎ করে অভিনন্দন জানান এবং বলেন ‎: ‘হে আলী ইবনে আবি তালিব! ‏আপনি আজ হতে প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর মাওলা হয়ে গেলেন।’১২৬. ‏সূরা রাদের ৭ নং আয়াতإِنَّمَا أَنْتَ مُنْذِرٌ وَلِكُلِّ قَوْمٍ هَادٍ‘(হে রাসূল!) ‏তুমি তো কেবল সতর্ককারী এবং প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে এক পথ প্রদর্শক।’ইবনে মারদুইয়্যা,ইবনে জারীর,আবু নাঈম তাঁর ‎‘মারেফাত’ ‏গ্রন্থে,ইবনে আসাকির,দাইলামী ও ইবনে নাজ্জার তাঁদের স্ব স্ব গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন যে,আয়াতটি নাযিল হলে মহানবী ‎(সা.) ‏তাঁর হাত নিজের বুকে রেখে বললেন,‘আমিই সতর্ককারী।’ ‏অতঃপর আলীর কাঁধের প্রতি তাঁর হাত দ্বারা ইশারা করে বললেন,‘হে আলী! ‏তুমিই পথপ্রদর্শক এবং মানুষ আমার পর তোমার মাধ্যমে হেদায়াতপ্রাপ্ত হবে।’ ‏উক্ত রেওয়ায়েতটি শব্দের তারতম্যে ইবনে মারদুইয়্যা সাহাবী আবু বারযাহ আসলামী হতে,জীয়াফীল হযরত ইবনে আব্বাস হতে,ইবনে আহমাদ তাঁর মুসনাদে এবং ইবনে মারদুইয়্যা ও ইবনে আসাকির স্বয়ং হযরত আলী ‎(আ.) ‏হতে বর্ণনা করেছেন।১৩৭. ‏সূরা রাদের ৪৩ নং আয়াতوَيَقُولُ الَّذِينَ كَفَرُوا لَسْتَ مُرْسَلًا قُلْ كَفَى بِاللَّهِ شَهِيدًا بَيْنِي وَبَيْنَكُمْ وَمَنْ عِنْدَهُ عِلْمُ الْكِتَابِযারা অবিশ্বাস করেছে তারা বলে,‘তুমি আল্লাহর রাসূল নও।’ ‏তুমি বল,‘আমার ও তোমাদের মধ্যে ‎(রেসালাতের) ‏সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট এবং সেই ব্যক্তি যার কাছে গ্রন্থের পূর্ণ জ্ঞান রয়েছে।’অধিকাংশ তাফসীরকার স্বীকার করেছেন যে,আয়াতে বর্ণিত সেই ব্যক্তি হলেন হযরত আলী ‎(আ.)। যেমন আসমী ‎‘যায়নুল ফাতা’ ‏নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন এবং সা’লাবী আবদুল্লাহ ইবনে আতা থেকে বর্ণনা করেছেন যে,আবদুল্লাহ বিন সালাম বলতেন,‘যার কাছে গ্রন্থের পূর্ণ জ্ঞান আছে’-এর উদ্দিষ্ট হযরত আলী ‎(আ.)। এজন্যই হযরত আলী ‎(আ.) ‏বারবার বলতেন,‘আমার কাছে আমার মৃত্যুর পূর্বে যা চাও জিজ্ঞেস কর।’১৪৮. ‏সূরা নাহলের ৪৩ নং আয়াতوَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ إِلَّا رِجَالًا نُوحِي إِلَيْهِمْ فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَতোমার পূর্বেও আমরা কেবল পুরুষদেরই ‎(রাসূল করে) ‏প্রেরণ করেছি যাদের প্রতি আমরা প্রত্যাদেশ প্রেরণ করতাম;যদি তোমরা না জেনে থাক তবে যারা জানে তাদের জিজ্ঞেস কর।আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেন ‎: ‏জ্ঞানী ব্যক্তিরা অর্থাৎ আহলুয যিকর হলেন হযরত মুহাম্মাদ ‎(সা.),হযরত আলী ‎(আ.),হযরত ফাতেমা ‎(আ.),হযরত হাসান ও হুসাইন ‎(আ.)। যাবের ইবনে আবদুল্লাহ বলেছেন ‎: ‏যখন এই আয়াত নাযিল হল তখন হযরত আলী বললেন ‎: ‏আমরাই হলাম জ্ঞানের ভাণ্ডার।১৫৯. ‏সূরা আহযাবের ৩৩ নং আয়াতوَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى وَأَقِمْنَ الصَّلَاةَ وَآتِينَ الزَّكَاةَ وَأَطِعْنَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا‘হে নবী পরিবার! ‏আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদের সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে।’উম্মুল মুমিনীন হযরত উম্মে সালামার ঘরে এ আয়াত নাযিল হলে রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏হযরত ফাতিমা,ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন ‎(আ.)-কে ডাকেন এবং তাঁদেরকে একটি চাদরে ঢেকে নেন। হযরত আলী তাঁর পেছনে ছিলেন। তিনি তাঁকেও চাদরে ঢেকে নেন। অতঃপর বলেন ‎: ‘হে আল্লাহ্! ‏এরা আমার আহলে বাইত। অতএব,তুমি তাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করে দাও এবং তাদেরকে উত্তমরূপে পবিত্র কর।’ ‏তখন উম্মে সালামা বলেন ‎: ‘হে আল্লাহর রাসূল! ‏আমিও কি তাদের অন্তর্ভুক্ত?’ ‏তিনি বলেন ‎: ‘তুমি স্ব স্থানে আছ এবং তুমি কল্যাণের মধ্যেই আছ।’১৬হযরত উম্মে সালামা ছাড়াও হযরত আবু সাঈদ খুদরী ও আনাস ইবনে মালিক কর্তৃক এ হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে।১৭১০. ‏সূরা শূরার ২৩ নং আয়াতقُلْ لَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا إِلَّا الْمَوَدَّةَ فِي الْقُرْبَى‘বল,আমি এর বিনিময়ে তোমাদের নিকট থেকে আমার নিকটাত্মীয়দের প্রতি ভালবাসা ছাড়া আর কোন প্রতিদান চাই না।’রাসূলুল্লাহ ‎(সা.)-এর নিকটাত্মীয় আহলে বাইতের সদস্যদের প্রতি ভালবাসা পোষণকে এ আয়াত দ্বারা মহান আল্লাহ মুসলমানদের জন্য ফরয বলে ঘোষণা করেন।হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেছেন ‎: ‏যখন এ আয়াত নাযিল হল তখন সাহাবিগণ জিজ্ঞেস করলেন,হে রাসূলুল্লাহ! ‏আপনার নিকটাত্মীয়,যাদেরকে ভালবাসা আমাদের ওপর ওয়াজিব করা হয়েছে তারা কারা? ‏রাসূল ‎(সা.) ‏বললেন ‎: ‏আলী,ফাতেমা,হাসান ও হুসাইন।১৮রাসূলুল্লাহ ‎(সা.)-এর হাদীসে আলী ‎(আ.)হযরত আলীর মর্যাদা সম্পর্কে মহানবী ‎(সা.)-এর নিকট থেকে অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এখানে কয়েকটি উল্লেখ করা হল ‎:১. ‏সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস বলেন,নবী ‎(সা.) ‏তাবুক যুদ্ধের সময় আলীকে লক্ষ্য করে বলেছেন ‎: ‘তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে,মর্যাদার দিক থেকে মূসার নিকট হারুন যে পর্যায়ে ছিলেন,তুমিও আমার নিকট ঐ পর্যায়ে রয়েছ?’১৯২. ‏অন্য একটি হাদীসে এসেছে ‎: ‏রাসূল বলেন ‎: ‘তুমি তো আমার নিকট তদ্রূপ যেরূপ হারুনের স্থান মূসার নিকট। পার্থক্য এতটুকু যে,আমার পরে কোন নবী নেই।’২০৩. ‏রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏ইমাম হাসান ও হুসাইনের হাত ধরে বলেন ‎: ‘যে ব্যক্তি আমাকে ভালবাসে এবং এ দু’জন ও তাদের পিতা-মাতাকে ভালবাসে,সে কিয়ামতের দিন আমার সাথে একই মর্যাদায় অবস্থান করবে।’২১৪. ‏আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণিত। রাসূল বলেছেন ‎: ‘আলীর চেহারার দিকে তাকানোও ইবাদত।’২২৫. ‏রাসূলুল্লাহ্ ‎(সা.) ‏আলী ‎(আ.)-কে সম্বোধন করে বলেছিলেন ‎: ‘মুমিনরাই তোমাকে মহব্বত করবে এবং মুনাফিকরাই তোমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবে।’২৩৬. ‏তিরমিযী,নাসাঈ ও ইবনে মাযাহ হুবশী ইবনে জুনাদাহ্ ‎(রা.) ‏থেকে বর্ণনা করেছেন। রাসূল ‎(সা.) ‏বলেছেন ‎: ‘আলী আমা থেকে এবং আমি আলী থেকে। যে ব্যক্তি আলীকে ভালবেসেছে,সে আমাকে ভালোবেসেছে। আর যে ব্যক্তি আলীকে ভালবেসেছে,সে আল্লাহকে ভালবেসেছে। যে ব্যক্তি আলীর সাথে শত্রুতা পোষণ করেছে সে আমার সাথে শত্রুতা পোষণ করেছে। আর যে আমার শত্রু সে আল্লাহর শত্রু। যে ব্যক্তি আলীকে কষ্ট দিয়েছে,সে আমাকে কষ্ট দিয়েছে।’২৪৭. ‏রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏বলেন ‎: ‘(হে আলী!) ‏দুনিয়া ও আখেরাতে তুমি আমারই ভাই।’২৫৮. ‏আবদুল্লাহ ইবনে বুরাইদা ‎(র.) ‏থেকে তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন ‎: ‏রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏বলেছেন ‎: ‘চার ব্যক্তিকে ভালবাসতে আল্লাহ আমাকে আদেশ করেছেন এবং তিনি আমাকে এও অবহিত করেছেন যে,তিনিও তাদের ভালবাসেন। বলা হল ‎: ‏হে আল্লাহর রাসূল! ‏আমাদের তাদের নামগুলো বলুন। তিনি বলেন ‎: ‏আলীও তাদের অন্তর্ভুক্ত। এ কথা তিনি তিনবার বলেন। ‎(অবশিষ্ট তিনজন হলেন) ‏আবু যার,মিকদাদ ও সালমান।...’২৬৯. ‏জাবির ‎(রা.) ‏থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন ‎: ‏তায়েফ অভিযানের দিন রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏আলীকে কাছে ডেকে তার সাথে চুপিসারে আলাপ করেন। লোকেরা বলল ‎: ‏তিনি তাঁর চাচাত ভাইয়ের সাথে দীর্ঘক্ষণ চুপিসারে কথা বললেন। রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏বলেন ‎: ‏আমি তার সাথে চুপিসারে কথা বলিনি;বরং আল্লাহই তার সাথে চুপিসারে কথা বলেছেন। ‎(অর্থাৎ তার সাথে চুপিসারে কথা বলার জন্য আল্লাহ্ই আমাকে আদেশ করেছেন।)২৭হযরত আলী সম্পর্কে অন্যান্য সাহাবীহযরত আবু বকর প্রায়ই হয়রত আলীর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতেন। হযরত আয়েশা এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন ‎: ‘আমি রাসূলে করীমকে বলতে শুনেছি,আলীর মুখ দেখা ইবাদাতের শামিল।’২৮হযরত উমর বিন খাত্তাব বলতেন,হযরত আলী বিন আবি তালিবের তিনটি বৈশিষ্ট্য ছিল। যদি তার একটি আমার থাকত তাহলে আমি বলতাম যে,আমাকে লাল রঙের একটি উট দেয়া হলে তা অপেক্ষাও আমি তা পছন্দ করতাম। তাঁকে এ তিনটি বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন ‎: ‏১.তাঁর বিয়ে হয় রাসূল ‎(সা.)-এর কন্যার সাথে,২. ‏তাঁর সঙ্গে রাসূলে করীমের মসজিদে অবস্থান এবং যা রাসূলে করিমের জন্য বৈধ ছিল তার জন্যও তা বৈধ ছিল এবং ৩. ‏খায়বার যুদ্ধের পতাকা বহনের দায়িত্ব তাঁর ওপর ন্যস্ত ছিল।২৯হযরত উমর বলেছেন,হে আল্লাহ! ‏আমার ওপর এমন কোন বিপদ দিও না যখন আবুল হাসান ‎(আলী) ‏আমার নিকট উপস্থিত না থাকে। কারণ,তিনি আমার নিকট উপস্থিত থাকলে আমাকে সে বিপদ থেকে নিষ্কৃতি দেবেন।’৩০তাবরানী হযরত ইবনে আব্বাস থেকে রেওয়ায়াত করেছেন যে,হযরত আলীর আঠারটি বৈশিষ্ট্য এমন ছিল যা সমগ্র উম্মতের কারও ছিল না।’৩১তথ্যসূত্র১. ‏মমতাজ বেগম কর্তৃক প্রকাশিত নাহজ আল বালাঘা,২য় মুদ্রণ,আল খুতবাতুল কাসেয়াহ্,খুতবা নং ১৯১২. ‏প্রাগুক্ত৩. ‏প্রাগুক্ত৪. ‏মুসতাদরাকে হাকেম,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏১১২;এটি ইমাম মালেক কর্তৃক বর্ণিত। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে হেরা গুহায় জিবরাঈল ‎(আ.) ‏কর্তৃক রাসূলুল্লাহ ‎(সা.)-এর নবুওয়াত ঘোষণার পর পরই হযরত আলী ‎(আ.) ‏তাঁর ঈমান আনার বিষয়টি প্রকাশ করেন।৫. ‏সুনানে ইবনে মাজাহ্,১ম খণ্ড,পৃ. ‏৪৪৬. ‏নূর-এ-সাকালাইন কর্তৃক প্রকাশিত,সাইয়্যেদ আলী জাফরী প্রণীত আল মুরতাজা,পৃ. ‏৩০।৭. ‏এহইয়াউ উলুমিদ্দীন,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏২৩৮;নুরুল আবসার,পৃ. ‏৮৬,মুসতাদরাকে হাকেম,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏৪;তাফসীরে কুমী,১ম খণ্ড,পৃ. ‏৭১;তাযকিরাতু সিবতে ইবনে যাওযী,পৃ. ‏২১;ইয়ানাবিউল মাওয়াদ্দাহ,পৃ. ‏৯২।৮. ‏তাফসীরে জালালাইন,১ম খণ্ড,পৃ.৬০;বায়দ্বাভী,১ম খণ্ড,পৃ. ‏১১৮,তাফসীরে দুররুল মানসুর,২য় খণ্ড,পৃ. ‏৩৯,মিশর মুদ্রণ;মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বাল,১ম খণ্ড,পৃ. ‏১৮৫;৯. ‏মাজমাউল বায়ান,২য় খণ্ড,পৃ. ‏১৪১;তাফসীরে কুমী,১ম খণ্ড,পৃ. ‏১৪১;ইয়ানাবিউল মাওয়াদ্দাহ,পৃ. ‏২১;শাওয়াহেদুত তানযিল,১ম খণ্ড,পৃ. ‏১৪৮;তাফসীরে ফুরাত,পৃ.২৮১০. ‏তাফসীরে তাবারী,৬ষ্ঠ খণ্ড,পৃ. ‏১৬৫;তাফসীরে রাযী,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏৪৩১;মানাকেবে খাওয়ারেযমী,পৃ. ‏১৭৮;যাখায়েরুল উকবা,পৃ. ‏১০২;তাফসীরে ইবনে কাসীর,২য় খণ্ড,পৃ. ‏৭১;আল- ‏বেদায়া ওয়ান নেহায়া,৭ম খণ্ড,পৃ. ‏৩৫৭;সাওয়ায়েকে মুহরিকাহ,পৃ. ‏২৫;১১. ‏মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বাল,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ‏৩৭২;ইমাম নাসাঈ প্রণীত খাসায়েসে আমীরুল মুমিনীন,পৃ. ‏২১;মুসতাদরাকে হাকেম,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏১০৯;আল গাদীর,১ম খণ্ড,পৃ. ‏২১৪ ও ২২৯;শাওয়াহেদুত তানযিল,১ম খণ্ড,পৃ. ‏১৮৭ ।১২. ‏তাফসীরে তাবারী,৩য় খণ্ড,মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বল,৩য় খণ্ড,দারে কুতনী।১৩. ‏তাফসীরে দুররে মানসুর,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ‏৪৫ দ্রষ্টব্য।১৪. ‏তাফসীরে দুররে মানসুর,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ‏৬৯ ।১৫. ‏কেফাইয়াতুল মুওয়াহহিদীন,২য় খণ্ড,পৃ. ‏৬৫০;মাজমাউল বায়ান,২য় খণ্ড,পৃ. ‏৪১৩;কানযুল উম্মাল,৬ষ্ঠ খণ্ড,পৃ. ‏১৫৬;তাফসীরে তাবারী,১৪তম খণ্ড,পৃ. ‏১০৮ ।১৬. ‏বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত জামে আত-তিরমিযী,৬ষ্ঠ খণ্ড,হাদীস নং ৩৭২৫,পৃ. ‏৩৫৯ ।১৭. ‏মুসনাদে আহমাদ,১ম খণ্ড,পৃ. ‏৩৩১;যাখায়েরুল উকবা,পৃ. ‏২১,তাফসীরে তাবারী,২২তম খণ্ড,পৃ. ‏৮;মুসতাদরাকে হাকেম,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏২০৮;ফাজায়েলে খামসাহ,১ম খণ্ড,পৃ. ‏২২৪;শাওয়াহেদুত তানযিল,২য় খণ্ড,পৃ. ‏১০ ।১৮. ‏যাখায়েরুল উকবা,পৃ. ‏৯ ও ১২;তাফসীরে যামাখশারী,২য় খণ্ড,পৃ. ‏৩৩৯;সাওয়ায়েকে মুহরিকাহ,পৃ. ‏১০১,তাফসীরে দুররুল মানসূর,৬ষ্ঠ খণ্ড,পৃ. ‏৭;মুসনাদে আহমাদ,১ম খণ্ড,পৃ. ‏২২৯;আল গাদীর,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏১৭২;শাওয়াহেদুত তানযিল,২য় খণ্ড,পৃ. ‏৩০ ।১৯. ‏আধুনিক প্রকাশনী কর্তৃক প্রকাশিত সহীহ আল বুখারী,৩য় খণ্ড,হাদীস নং ৩৪৩১;বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত সহীহ মুসলিম,৭ম খণ্ড,হাদীস নং ৬০৪২ ।২০. ‏বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত সহীহ মুসলিম,৭ম খণ্ড,হাদীস নং ৬০৪০ ও জামে আত-তিরমিযী,৬ষ্ঠ খণ্ড,হাদীস নং ৩৬৬৮ ।২১. ‏বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত জামে আত-তিরমিযী,৬ষ্ঠ খণ্ড,হাদীস নং ৩৬৭০২২. ‏এমদাদীয়া লাইব্রেরী কর্তৃক প্রকাশিত হযরত আলী ইবনে আবি তালিব ‎(রা.),পৃ. ‏১৫ ।২৩. ‏বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত জামে আত-তিরমিযী,৬ষ্ঠ খণ্ড,হাদীস নং ৩৬৭৩ ।২৪. ‏এমদাদিয়া লাইব্রেরী কর্তৃক প্রকাশিত হযরত আলী ‎(রা.),পৃ. ‏১৫-১৬ ।২৫. ‏বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত জামে আত-তিরমিযী,৬ষ্ঠ খণ্ড,হাদীস নং ৩৬৫৮;২৬. ‏প্রাগুক্ত,হাদীস নং ৩৬৫৬;২৭. ‏প্রাগুক্ত,হাদীস নং ৩৬৬৪২৮. ‏সাওয়ায়েকে মুহরিকাহ,পৃ. ‏১৭৫ ।২৯. ‏সাওয়ায়েকে মুহরিকাহ,৩য় খণ্ড,এবং মুসতাদরাকে হাকেম,৩য় খণ্ড ।৩০. ‏মুনতাখাবে কানজুল উম্মাল,৩য় খণ্ড ।৩১. ‏সাওয়ায়েকে মুহরিকাহ ১১৩ ।(প্রত্যাশা,৩য় বর্ষ, ‏১ম সংখ্যাপ্রচারে মোঃ জাহিদ হুসাইন

শিশু ইমাম হযরত জাওয়াদ (আ.)'র জন্মবার্ষিকীসকল মোমিন মোমিনা কে জানাই ঈদ মোবারক🎂🎂🎂🎂🎂(((পর্ব ১)))🎂🎂🎂🎂🎂দশই রজব ইসলামের মহাখুশির দিন। এই দিনে পৃথিবীতে এসেছিলেন মাওলা মোহাম্মদ (সা) পবিত্র আহলে বাইতের সদস্য নবম ইমাম হযরত জাওয়াদ বা তাকি(আ)। নবীজীর আহলে বাইতের সদস্যরা কেবল মুসলমানদেরই ধর্মীয় নেতা নন বরং যারাই সত্য পথের সন্ধানী কিংবা কল্যাণকামী-তাদের সবারই নেতা।আহলে বাইতের এই মহান ইমাম হযরত জাওয়াদ (আ) এর জন্ম-বার্ষিকীতে আপনাদের সবার প্রতি রইলো অশেষ অভিনন্দন ও প্রাণঢালা মোবারকবাদ এবং মাওলা মোহাম্মদ (সা.) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের শানে পেশ করছি অসংখ্য দরুদ ও সালাম ।ইমাম জাওয়াদের জন্ম হয়েছিল ১৯৫ হিজরিতে তথা ৮১১ খ্রিস্টাব্দের ১২ এপ্রিল পবিত্র মদীনায়। মজলুম ও দরিদ্রদের প্রতি ব্যাপক দানশীলতা ও দয়ার জন্য তিনি 'জাওয়াদ' উপাধি পেয়েছিলেন। তাকি বা খোদাভীরু ছিল তাঁর আরেকটি উপাধি। জগত-বিখ্যাত মহাপুরুষ ইমাম রেজা (আ) ছিলেন তাঁর বাবা। আর তাঁর মায়ের নাম ‘সাবিকাহ’ বলে জানা যায়। ইমাম রেজা (আ) তাঁর এই স্ত্রীর নাম রেখেছিলেন খিইজরান। তিনি ছিলেন মহানবীর স্ত্রী উম্মুল মু’মিনিন হযরত মারিয়া কিবতির (আ) বংশধর। ইমাম জাওয়াদ (আ) ১৭ বছর ইমামতের দায়িত্ব পালনের পর মাত্র ২৫ বছর বয়সে শাহাদত বরণ করেন। তিনিই হলেন ইসলামের ইতিহাসের সবচেয়ে কম বয়স্ক ইমাম। আহলে বাইতের অন্য ইমামগণের মত ইমাম জাওয়াদ (আ.)ও ছিলেন উচ্চতর নৈতিক গুণ, জ্ঞান ও পরিপূর্ণতার অধিকারী। ইসলামের মূল শিক্ষা ও সংস্কৃতির পুনরুজ্জীবন এবং বিকাশ ছিল তাঁর তৎপরতার মূল লক্ষ্য বা কেন্দ্রবিন্দু। সেযুগের সব মাজহাবের জ্ঞানী-গুণীরা ইমাম জাওয়াদ (আ.)'র উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন।সমসাময়িক যুগের প্রখ্যাত সুন্নি চিন্তাবিদ কামালউদ্দিন শাফেয়ি ইমাম জাওয়াদ (আ.) সম্পর্কে বলেছেন, "মুহাম্মাদ বিন আলী তথা ইমাম জাওয়াদ (আ.) ছিলেন অত্যন্ত উঁচু মর্যাদা ও গুণের অধিকারী। মানুষের মুখে মুখে ফিরতো তাঁর প্রশংসা। তাঁর উদারতা, প্রশস্ত দৃষ্টি ও সুমিষ্ট কথা সবাইকে আকৃষ্ট করত। যে-ই তাঁর কাছে আসতো নিজের অজান্তেই এই মহামানবের অনুরাগী হয়ে পড়ত এবং তাঁর কাছ থেকে জ্ঞান অর্জন করত।" ইমাম জাওয়াদ (আ) মাত্র সাত বা আট বছর বয়সে ইমামতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এতো অল্প বয়সে তাঁর ইমামতিত্বের বিষয়টি ছিল যথেষ্ট বিস্ময়কর। ফলে অনেকেই এ বিষয়ে সন্দেহ করতেন। অথচ আল্লাহর তো এই শক্তি আছে যে তিনি মানুষকে তার বয়সের স্বল্পতা সত্ত্বেও পরিপূর্ণ বিবেক-বুদ্ধির পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেন। কোরানের আয়াতের ভিত্তিতে পূর্ববর্তী উম্মতের মধ্যেও এরকম উদাহরণ বহু আছে। যেমন শিশুকালে হযরত ইয়াহিয়া (আ) এর নবুয়্যত প্রাপ্তি, মায়ের কোলে নবজাতক ঈসা (আ) এর কথা বলা ইত্যাদি সর্বশক্তিমান আল্লাহর অশেষ ক্ষমতারই নিদর্শন। ইমাম জাওয়াদ (আ) শৈশব-কৈশোরেই ছিলেন জ্ঞানে-গুণে, ধৈর্য ও সহনশীলতায়, ইবাদত-বন্দেগিতে, সচেতনতায়, কথাবার্তায় শীর্ষস্থানীয় মহামানব। একবার হজ্জ্বের সময় বাগদাদ এবং অন্যান্য শহরের বিখ্যাত ফকীহদের মধ্য থেকে আশি জন মদীনায় ইমাম জাওয়াদ (আ) এর কাছে গিয়েছিলেন। তাঁরা ইমামকে বহু বিষয়ে জিজ্ঞেস করে অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত ও সন্তোষজনক জবাব পেলেন। ফলে জাওয়াদ (আ)’র ইমামতিত্বের ব্যাপারে তাদের মনে যেসব সন্দেহ ছিল-তা দূর হয়ে যায়।প্রচারে মোঃ জাহিদ হুসাইন আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম‌লা'নাতুল্লাহি আলাল কাজেবিন🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂