Imported post: Facebook Post: 2023-07-31T21:05:14

৬১ হিজরির ১২ মুহররম ইয়াজিদ সেনারা নবী পরিবার তথা ইমাম পরিবারের এবং ইমাম শিবিরের সকল নারী ও কন্যা শিশুকে বন্দী অবস্থায় কুফায় নিয়ে আসে। এ সময় ইয়াজিদ সেনারা শহীদদের বিচ্ছিন্ন মাথা বর্শায় বিদ্ধ করে নিয়ে আসে তাদের সঙ্গে। কুফায় বন্দীদেরকে ইয়াজিদের গভর্নর ইবনে জিয়াদের দরবারে আনা হলে জিয়াদ তাদেরকে উপহাসের চেষ্টা করে এবং ইমাম জাইনুল আবেদীন (আ.)-কে হত্যা করতে চায়। কিন্তু হযরত জাইনাব (সা.)’র সাহসী বক্তব্য ও বিশেষ করে নবী পরিবারের সদস্যদেরকে ত্যাগের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার ও শাহাদতের মর্যাদা দেয়ার জন্য মহান আল্লাহর প্রতি তাঁর প্রশংসাসূচক কথাগুলো জিয়াদকে হতভম্ব বা লা-জওয়াব করে দেয়। কারবালার অসম যুদ্ধে অশেষ বীরত্ব ও বিক্রম দেখিয়ে এবং ইয়াজিদের বহু সেনাকে জাহান্নামে পাঠিয়ে শহীদ হয়েছিলেন হযরত ইমাম হুসাইন (আ.)সহ ইসলামের ইতিহাসে অমর হয়ে থাকা ৭২ জন মহামানব। তাদের কেউ ছিলেন ইমামের যুবক পুত্র, শিশু পুত্র ভাই, ভাতিজা, ভাগিনা, চাচাতো ভাই এবং অন্যরা ছিলেন প্রাণ-উৎসর্গ করতে আসা নিবেদিত-প্রাণ সঙ্গী। ইমাম হুসাইন (আ.)'র শাহাদতের পর তাঁর বোন হযরত জাইনাব (সা.) ইমামের একমাত্র জীবিত ও অসুস্থ পুত্র হযরত জাইনুল আবেদীনের (আ.) জীবন রক্ষা করেন। অবশ্য এ জন্য তিনি শত্রুদের মুখাপেক্ষী হয়েছেন ভাতিজাকে বুকে জড়িয়ে ধরে তিনি জল্লাদকে বলেছিলেন, আমার ভাতিজাকে হত্যা করতে হলে আমাকেও হত্যা করতে হবে। এভাবে তিনি একজন নিষ্পাপ ইমামের জীবন রক্ষা করেন । দামেস্কেও এই মহান ইমামকে হত্যার চেষ্টা অলৌকিকভাবে ব্যর্থ হয় বলে বর্ণনা রয়েছে। কোনো কোনো বর্ণনা মতে কারবালায় জাইনুল আবেদীনের শিশু সন্তান ইমাম বাকির (আ.)ও উপস্থিত ছিলেন এবং হত্যাযজ্ঞের পর তিনিও বেঁচে ছিলেন। নবী বংশের কয়েকজন নারী সদস্যও বেঁচে ছিলেন কারবালার হত্যাযজ্ঞের পর। মহাপাপিষ্ঠ ও নরাধম ইয়াজিদের দরবারে উপনীত হলে তার বেয়াদবিপূর্ণ নানা কথা ও বিদ্রূপের জবাবে হযরত জাইনাব (সা.) এক দীর্ঘ ও ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন। তেজোদৃপ্ত সেই ভাষণের একাংশে তিনি বলেছিলেন: "আমাদের শাসন-কর্তৃত্ব (তোমার হাতে পড়ায়) তুমি মহিমান্বিত আল্লাহর সেই বাণী ভুলে গিয়েছ: 'কাফেররা যেন মনে না করে যে আমরা তাদের যে অবকাশ দান করি, তা নিজেদের জন্য কল্যাণকর। বরং আমরা তো তাদেরকে এ জন্যই অবকাশ দেই যাতে করে তাদের পাপগুলো বাড়তে থাকে এবং তাদের জন্য অপমানজনক শাস্তি অবধারিত।" তিনি ইয়াজিদকে 'সে ব্যক্তির পুত্র যাকে বন্দী করার পর ছেড়ে দেয়া হয়েছিল' বলেও সম্বোধন করেন!(কারণ, মুয়াবিয়া মক্কা বিজয়ের সময় বন্দী হয়েছিল মুসলিম বাহিনীর হাতে, ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দেয়ায় তাকে মুক্তি দেয়া হয়) হযরত জাইনাব (সা.) তাঁর ঐতিহাসিক সেই ভাষণে পবিত্র নবী বংশের, বিশেষ করে ইমাম হুসাইন (আ.)'র মর্যাদা তুলে ধরার পাশাপাশি ইয়াজিদ বাহিনীর জুলুম ও নৃশংসতাও তুলে ধরেছিলেন । তিনি ইমাম হুসাইন (আ.)'র সঙ্গে ইয়াজিদের নানা বেয়াদবি এবং নবী বংশের ওপর তার বাহিনীর নৃশংস জুলুম নির্যাতন চালানোসহ হত্যাযজ্ঞের জন্য তাকে খোদায়ী কঠোর শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে বলে উল্লেখ করেন। হযরত জাইনাব (সা.) এক পর্যায়ে ইয়াজিদের দরবারেই তাকে বলেন, "যদিও ঘটনাচক্রে আমি তোমার সঙ্গে কথা বলতে বাধ্য হয়েছি, কিন্তু আমি তোমাকে খুবই তুচ্ছ ও নীচ মনে করি এবং তোমাকে কঠোরভাবে তিরস্কার করছি ও অনেক বেশি নিন্দা করছি, কিন্তু (আমার ভাইয়ের হত্যার কারণে মুসলমানদের ) দৃষ্টিগুলো অশ্রুসজল আর হৃদয়গুলো কাবাবের মত দগ্ধীভূত।" হযরত মোহাম্মাদ (সা.)'র আহলে বাইতের প্রতি উম্মতের ভালবাসা ও তাঁদের স্মরণ যে ইয়াজিদ গোষ্ঠী কখনও বিলুপ্ত করতে পারবে না এবং আহলে বাইতের মর্যাদার ধারে কাছেও যে পৌঁছুতে পারবে না ইয়াজিদ গোষ্ঠী তিনি তাও ভবিষ্যদ্বাণী করেন। জালিমদের ওপর যে আল্লাহর লানত বর্ষিত হবে এবং ইহকালে তাদের পতন ও চরম লাঞ্ছনা এবং পরকালেও আরো কঠোর শাস্তি অপেক্ষা করছে হযরত জাইনাব (সা.) তাও উল্লেখ করেন ওই ভাষণে। তাঁর সেইসব অবিস্মরণীয় ভাষণ ও বক্তব্যগুলো মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচারিত হয়ে দামেস্ক ও কুফাসহ মুসলিম বিশ্বের জনগণের মধ্যে বিক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে দিয়েছিল। গোটা আরব উপদ্বীপের চার লাখ মানুষ হুসাইন (আ.) হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য অভ্যুত্থান করে। ফলে কুফায় মুখতারের নেতৃত্বে নবী বংশের অবমাননাকারী ও ঘাতকরা লাঞ্ছনাপূর্ণ মৃত্যুদণ্ডের মাধ্যমে নির্মূল হয়। আর এ জন্যই নবী(সা.) -নাতনী হযরত জাইনাব (সা.)-কে কারবালা বিপ্লবের অন্যতম সফল সংগঠক ও প্রধান পরিচালক বলা যায়। তাঁর বিপ্লবী তৎপরতা ও উপস্থিতি না থাকলে কারবালাতেই এ বিপ্লবের চির-সমাধি ঘটত এবং বাইরের কেউই এ বিপ্লব ও মহাট্র্যাজেডির খবরও হয়তো জানতো না। গণ-বিদ্রোহের আশঙ্কায় ইবনে জিয়াদের আতঙ্ক জিয়াদ নবী (সা.)’র পরিবারের অবমাননার জন্য কুফা শহরের রাস্তায় রাস্তায় বন্দীদেরকে ঘুরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে উদ্যত হলে আবারও স্বমহিমায় আত্মপ্রকাশ করেন নবী-নাতনী। তাঁর বাগ্মীতাপূর্ণ ও বিবেক-জাগানো এবং হৃদয়-বিদারক বক্তব্য শুনে কুফার জনগণ কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। ফলে ইবনে জিয়াদ গণ-বিদ্রোহের আশঙ্কায় ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় সে বন্দীদের কাফেলাকে দ্রুত দামেস্কে পাঠানোর নির্দেশ দেয় এবং এমন সব পথ দিয়ে তাদেরকে নিয়ে যেতে বলে যাতে জনগণ নবী-পরিবারের দুর্দশার কথা জানতে পেরে ইয়াজিদ সরকারের প্রতি গণ-বিদ্রোহ বা গণ-বিক্ষোভ শুরু করার সুযোগ না পায়। নতুন ইমাম হযরত জাইনুল আবেদীনের বীরত্বপূর্ণ ভাষণ ইবনে জিয়াদ ও ইয়াজিদের দরবারে তেজোদৃপ্ত বক্তব্য রেখেছিলেন হযরত জাইনাব (সা.)। একই ধরনের বক্তব্য রেখেছিলেন নতুন ইমাম হযরত জাইনুল আবেদীন (আ)। কুফায় ফুফু জাইনাব (সা.) ও বোন ফাতিমার ভাষণ শুনে জনগণ যখন মর্মাহত হয় ও কাঁদতে থাকে তখন তাদের সমাবেশে নতুন এই ইমামও বক্তব্য রেখেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: হে মানুষেরা, আমি আলী, হুসাইন ইবনে আলী (আ.)’র সন্তান। আমি তাঁর সন্তান যার সব কিছু লুট করা হয়েছে, যার পরিবারের সবাইকে বন্দী করে এখানে আনা হয়েছে। আমি তাঁর সন্তান, যে ফোরাতের কিনারায় মর্মান্তিক ও নৃশংসভাবে নিহত হয়েছে। হে লোকেরা! তোমরা কিয়ামতের দিন কিভাবে নবী(সা.)’র সামনে দাঁড়াবে? রাসূল (সা.) যখন তোমাদের বলবেন, “ তোমারা আমার পরিবারবর্গকে এভাবে কতল করেছ আর আমার মর্যাদাও অক্ষুণ্ণ রাখনি, তাই তোমরা আমার উম্মত নও।” নতুন ইমামের এ বক্তব্য শুনে কুফাবাসী চিৎকার ধ্বনি দিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে এবং একে-অপরকে তিরস্কার করে বলতে থাকে : আমরা এতই দুর্ভাগা যে নিজেরা যে ধ্বংস হয়ে গেছি তাও জানি না। মৃত্যুর ভয়হীন যুবক ইমাম জাইনুল আবেদীন (আ.) ইবনে জিয়াদ নতুন ইমামকে হত্যার নির্দেশ দিলে ফুফু জাইনাব বলেন, তাহলে আমাকেও হত্যা কর্ তাঁর সঙ্গে! নতুন ইমাম বললেন, আপনি ওর সঙ্গে কথা বলবেন না, আমি ওর সঙ্গে কথা বলছি। তিনি জিয়াদের দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন: “ ওহে জিয়াদের ছেলে! আমাকে হত্যার ভয় দেখাচ্ছ? তুমি কি জান না শহীদ হওয়া আমাদের প্রথা ও শাহাদত বরণ আমাদের মর্যাদা....।” ইয়াজিদের দরবারে নতুন ইমামের ভাষণ: সিরিয়ায় শহরের অলি-গলি দিয়ে ইমাম ও তাঁর পরিবারের কয়েকজনকে একই দড়িতে বেঁধে ইয়াজিদের দরবারে আনা হয়। এ সময় ইমাম জাইনুল আবেদীন (আ.) বীরত্বের সঙ্গে ইয়াজিদের দিকে তাকিয়ে বলেন: হে ইয়াজিদ! আল্লাহর রাসূলের (সা.) ব্যাপারে কি চিন্তা করেছ, যদি তিনি এভাবে আমাদেরকে দড়ি বাঁধা অবস্থায় দেখেন? ইমামের এ কথা শুনে উপস্থিত সবার মধ্যে কান্নার রোল ওঠে। সিরিয়ায় ইয়াজিদি প্রচারণায় বিভ্রান্ত এক বয়স্ক ব্যক্তি নবী পরিবারের বন্দীদের কাছে এসে বলল: আল্লাহকে অশেষ ধন্যবাদ যে তিনি তোমাদেরকে ধ্বংস করে ফিতনা নিভিয়ে দিয়েছেন। সে আরো কিছু আজে-বাজে কথা বলে। নতুন ইমাম (জাইনুল আবেদীন-আ.) তাকে বলেন: তুমি কি কুরআন পড়েছ। সে বলে: পড়েছি। ইমাম: এ আয়াতটি পড়েছ কি যেখানে এসেছে- বল হে রাসূল, আমি তোমাদের কাছে কোনো পারিশ্রমিক চাই না (ইসলাম প্রচারের বিনিময়ে), শুধু এটা চাই যে তোমরা আমার পরিবারকে ভালবাসবে? (সূরা আশুরা-২৩) হ্যাঁ, পড়েছি। রাসূলের আহলে বাইত (নবী-পরিবার) যে নিষ্পাপ তার প্রমাণ হিসেবে তিনি সুরা আহজাবের ৩৩ নম্বর আয়াতও তাকে শোনান। এভাবে তিনি নবী পরিবারের সম্মান ও অধিকারের দলিল হিসেবে নাজেল হওয়া আরো কয়েকটি আয়াতের কথা তুলে ধরলে ওই বয়স্ক লোকটি আকাশের দিকে হাত উঁচু করে তিনবার বলেন: হে আল্লাহ, আমি তওবা করেছি। আর তাঁদের হত্যা করাতে আমি অসন্তুষ্ট। আমি এর আগেও কুরআন পড়েছিলাম, কিন্তু এইসব সত্য জানতাম না। সিরিয়ার জামে মসজিদে নতুন ইমামের ভাষণ: সিরিয়ার মসজিদে নবী-বংশকে ও হযরত আলী (আ.)-কে গালি-গালাজ করা হত মুয়াবিয়ার আমল থেকেই। কারবালার ঘটনার পর একদিন এই মসজিদে হযরত আলী (আ.) ও ইমাম হুসাইন (আ.)-কে উদ্দেশ করে অপমানজনক কথা বলে বেতনভোগী খতিব। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ইমাম জাইনুল আবেদীন (আ.)। তিনি খতিবকে বললেন: খতিব তুমি ইয়াজিদকে সন্তুষ্ট করতে গিয়ে দোযখে স্থান তৈরি করেছ নিজের জন্য। তিনি ইয়াজিদের দিকে ফিরে বললেন, আমাকেও মিম্বরে যেতে দাও, কিছু কথা বলব যাতে আল্লাহ খুশি হবেন ও উপস্থিত লোকদের সওয়াব হবে। উপস্থিত লোকদের চাপের মুখে ইয়াজিদ অনিচ্ছা সত্ত্বেও রাজি হয়। (ইয়াজিদ লোকদের প্রতি বলেছিল ইনি এমন এক বংশের লোক যারা ছোটবেলায় মায়ের দুধ পানের সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞানও অর্জন করতে থাকে) নতুন ইমাম মহান আল্লাহর অশেষ প্রশংসাসূচক কিছু বাক্য বলার পর বলেছিলেন: হে জনতা! আল্লাহ আমাদের ছয়টি গুণ ও সাতটি মর্যাদা দিয়েছেন। জ্ঞান, সহনশীলতা, উদারতা, বাগ্মিতা, সাহস ও বিশ্বাসীদের অন্তরে আমাদের প্রতি ভালবাসা। আমাদের মর্যাদাগুলো হল রাসূল (সা.), আল্লাহর সিংহ ও সত্যবাদী আমিরুল মু’মিনিন আলী (আ.), বেহেশতে দুই পাখার অধিকারী হযরত জাফর আততাইয়ার (রা.), শহীদদের সর্দার হামজা (রা.), রাসূল (সা.)’র দুই নাতী হযরত হাসান ও হুসাইন (আ.) আমাদের থেকেই, আর আমরাও তাঁদের থেকেই। যারা আমাকে জানে তারা তো জানেই, যারা জানে না তাদেরকে জানাচ্ছি আমার বংশ-পরিচয়: হে জনতা! আমি মক্কা ও মিনার সন্তান, আমি যমযম ও সাফা’র সন্তান। আমি তাঁর সন্তান যিনি হজরে আসওয়াদ (কালো পাথর) তুলেছিলেন তাঁর কম্বলের প্রান্ত ধরে, আমি ওই শ্রেষ্ঠ ব্যক্তির সন্তান যিনি কাবা তাওয়াফ করেছেন ও সাই করেছেন (সাফা ও মারওয়ায়) তথা হজ করেছেন। আমি এমন এক ব্যক্তির সন্তান যাকে একরাতেই মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসাতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল (রাসূলের মেরাজের ইঙ্গিত)।... আমি হুসাইনের সন্তান যাকে কারবালায় নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে, আমি আলীর সন্তান যিনি মুর্তাজা (অনুমোদনপ্রাপ্ত), আমি মুহাম্মদের সন্তান যিনি বাছাইকৃত, আমি ফাতিমাতুজ জাহরার সন্তান, আমি সিদরাতুল মুনতাহার সন্তান, আমি শাজারাতুল মুবারাকাহ বা বরকতময় গাছের সন্তান, হযরত খাদিজা (সা.)’র সন্তান আমি, আমি এমন একজনের সন্তান যিনি তার নিজের রক্তে ডুবে গেছেন, আমি এমন একজনের সন্তান যার শোকে রাতের আধারে জিনেরা বিলাপ করেছিল, আমি এমন একজনের সন্তান যার জন্য শোক প্রকাশ করেছিল পাখিরা। ইমামের খোতবা এ পর্যন্ত পৌঁছলে উদ্বেলিত জনতা চিৎকার করে কাঁদতে লাগল ও বিলাপ শুরু করল। ফলে ইয়াজিদ আশঙ্কা করল যে গণ-বিদ্রোহ শুরু হতে পারে। সে মুয়াজ্জিনকে আযান দেয়ার নির্দেশ দিল। ইমাম (আ.) আজানের প্রতিটি বাক্যের জবাবে আল্লাহর প্রশংসাসূচক বাক্য বলছিলেন। যখন মুয়াজ্জিন বলল, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ-আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল- তখন ইমাম (আ.) মাথা থেকে পাগড়ী নামিয়ে মুয়াজ্জিনের দিকে তাকিয়ে বললেন, আমি এই মুহাম্মাদের নামে অনুরোধ করছি, এক মুহূর্ত নীরব থাক। এরপর তিনি ইয়াজিদের দিকে তাকিয়ে বললেন: এই সম্মানিত ও মর্যাদাপূর্ণ রাসূল কি আমার প্রপিতামহ না তোমার? যদি বল তোমার তাহলে গোটা পৃথিবী জানে তুমি মিথ্যা বলছ, আর যদি বল আমার তাহলে কেন তুমি আমার বাবাকে জুলুমের মাধ্যমে হত্যা করেছ, তাঁর মালপত্র লুট করেছ ও তাঁর নারী-স্বজনদের বন্দী করেছ? একথা বলে ইমাম(আ.) নিজের জামার কলার ছিঁড়ে ফেললেন এবং কাঁদলেন। এরপর বললেন, আল্লাহর কসম এ পৃথিবীতে আমি ছাড়া আর কেউ নেই যার প্রপিতামহ হলেন রাসূলুল্লাহ (সা.), কেন এ লোকগুলো আমার পিতাকে জুলুমের মাধ্যমে হত্যা করেছে এবং আমাদেরকে রোমানদের মত বন্দী করেছে?...অভিশাপ তোমার ওপর যেদিন আমার প্রপিতামহ ও পিতা তোমার ওপর ক্রুদ্ধ হবেন। গণ-বিদ্রোহের আশঙ্কায় দিশাহারা ও আতঙ্কিত ইয়াজিদ অবস্থা বেগতিক দেখে ইয়াজিদ নামাজ শুরু করার নির্দেশ দেয়। কিন্তু ক্রুদ্ধ ও ক্ষুব্ধ জনতার অনেকেই মসজিদ থেকে বেরিয়ে যান। পরিস্থিতির চাপে পড়ে ইয়াজিদ নিজেও ভোল পাল্টে ফেলে ইমাম হুসাইন (আ.) ও নবী পরিবারের সদস্যদের হত্যার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে এবং এর দায় জিয়াদের ওপর চাপিয়ে প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে। ইয়াজিদকে হত্যার পরিকল্পনা ইয়াজিদ ইমাম হুসাইন (আ.)’র বোন হযরত জাইনাব (সা.)’র অনুরোধে কারবালার শহীদদের জন্য শোক অনুষ্ঠান পালনের অনুমতি দেয়। সাত দিন ধরে শোক সমাবেশ হয়। বিপুল সংখ্যক সিরিয় নারী শোক অনুষ্ঠানে যোগ দেয়। সিরিয় পুরুষদের অনেকেই সিদ্ধান্ত নেন যে তারা ঝড়ের গতিতে ইয়াজিদের প্রাসাদে ঢুকে তাকে হত্যা করবে। ইয়াজিদের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি মারওয়ান এ পরিকল্পনার কথা জেনে ফেলে। সে ইয়াজিদকে পরামর্শ দেয় হুসাইনের পরিবারকে সিরিয়ায় বেশি দিন রাখা ঠিক হবে না। তাঁদেরকে মদীনায় ফেরত পাঠানো জরুরি। ইয়াজিদ নবী-পরিবারকে সফরের রসদপত্র দিয়ে তাঁদেরকে মদীনায় পাঠিয়ে দেয়। আসলে কারবালা বিপ্লবের ব্যাপারে ইমাম হুসাইন (আ.)’র বোন হযরত জাইনাব (সালামুল্লাহি আলাইহা) ও অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া ইমামের পুত্র ইমাম জাইনুল আবেদীনের (আ.) বলিষ্ঠ ভাষণ ও সত্য ঘটনা প্রচারের ফলেই জনগণ আসল ঘটনা বুঝতে পারে। ফলে অল্প কিছু দিনের মধ্যেই উমাইয়াদের বিরুদ্ধে ইরাকে ও হিজাজে (বর্তমান যুগের সৌদি আরব অঞ্চল) বিদ্রোহ দেখা দেয়। কুফায় মুখতারের নেতৃত্বে বিপ্লবী সরকার গঠিত হয় এবং এই সরকার ইমাম হুসাইন (আ.) হত্যাকারী ওমর সাদ ও শিমারসহ ইয়াজিদ বাহিনীর প্রায় সব ঘাতককে হত্যা করে। অনেক ঘাতক অলৌকিকভাবে কঠোর শাস্তি পেয়েছিল। চতুর্থ ইমাম ইমাম জয়নুল আবেদীন আঃ যাকে আমরা ইমাম সাজ্জাদ আঃ এ নামেও চিনে থাকি কারবালার ঘটনার পর তিনি যখনই পানি দেখতেন বাবাসহ কারবালার শহীদদের চরম পিপাসার কথা ভেবে কান্নায় ভেঙ্গে পড়তেন। কোনো ভেড়া বা দুম্বা জবাই করার দৃশ্য দেখলেও কেঁদে আকুল হতেন। তিনি প্রশ্ন করতেন এই পশুকে জবাইর আগে পানি পান করানো হয়েছে কিনা। পানি দেয়া হয়েছে একথা শোনার পর তিনি বলতেন, কিন্তু আমার (তৃষ্ণার্ত ও ক্ষুধার্ত) বাবাকে পানি না দিয়েই জবাই করেছিল ইয়াজিদ-সেনারা। তিনি সব সময় রোজা রাখতেন। ইফতারির সময় তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলতেন: রাসূল (সা.)’র সন্তানকে হত্যা করা হয়েছে ক্ষুধার্ত ও পিপাসার্ত অবস্থায়। ইমাম জাইনুল আবেদীন তাঁর বাবার জন্য ৩৪ বছর ধরে কেঁদেছিলেন তিনি সব সময় দিনে রোজা রাখতেন ও পুরো রাত জেগে ইবাদত করতেন। রোজা ভাঙ্গার সময় তিনি বাবার ক্ষুধার্ত ও পিপাসার্ত অবস্থার কথা উল্লেখ করে এত বেশি কাঁদতেন যে অশ্রুতে খাবার ভিজে যেত এবং খাবার পানিতেও অশ্রু মিশে যেত। জীবনের শেষ পর্যন্ত এই অবস্থা ছিল তাঁর। একদিন তাঁর খাদেম ইমামের কান্নারত অবস্থায় তাঁকে বলেন: আপনার দুঃখ ও আহাজারি শেষ হয়নি? উত্তরে তিনি বলেন: তোমার জন্য আক্ষেপ! ইয়াকুব (আ.) আল্লাহর একজন নবী ছিলেন। তাঁর ১২ জন সন্তান ছিল। কিন্তু আল্লাহ তাঁর এক পুত্র ইউসুফকে চোখের আড়ালে রাখায় শোকে, দুঃখে ও অতিরিক্ত কান্নায় তিনি প্রায় অন্ধ হয়ে পড়েন, চুল পেকে যায় ও পিঠ বাঁকা হয়ে যায়। সন্তান জীবিত থাকা সত্ত্বেও তাঁর এ অবস্থা হয়েছিল। আর আমি আমার পিতা, ভাই এবং পরিবারের ১৮ জন সদস্যকে মাটিতে পড়ে যেতে ও শহীদ হতে দেখেছি; তাই কিভাবে আমার দুঃখ ও অশ্রু থামতে পারে? গভীর ধার্মিকতা ও আল্লাহর প্রেমে সিজদা-প্রবণ ছিলেন বলে ইমাম জাইনুল আবেদীন (আ.)-কে বলা হত 'সাজ্জাদ'। ইমাম জাইনুল আবেদীন(আ.) সফরে বের হলে অপরিচিত ব্যক্তির কাছে কখনও রাসূলের বংশধর বলে পরিচয় দিতেন না যাতে লোকজন তাঁকে বিশেষ চোখে না দেখে। সত্য প্রচারে তাঁর সাহসিকতার প্রমাণ কুফা ও দামেস্কের দরবারেই সীমিত ছিল না। একবার খলিফা আবদুল মালিক ইমাম সাজ্জাদের (আ.) কাছে কিছু উপদেশ প্রার্থনা করলে তিনি বললেন, পবিত্র কুরআনের উপদেশের চেয়ে বড় উপদেশ কি হতে পারে? পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে-যারা ওজনে কম দেয় তাদের জন্যে আক্ষেপ! যখন ? কম ওজনদাতার ব্যাপারে আল্লাহ এতো কঠোর কথা বলেছেন তখন তার অবস্থা কেমন হতে পারে যে জনগণের সমস্ত সম্পদ লুট করে) সহিফায়ে সাজ্জাদিয়া ইমাম জাইনুল আবেদীনের (আ.) এক অনন্য সৃষ্টি। ইমাম সাজ্জাদের বেশিরভাগ বিখ্যাত দোয়া স্থান পেয়েছে এ সংকলনে। মত প্রকাশের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তিনি তাঁর বিভিন্ন প্রাণস্পর্শী দোয়া, আকুতি, মোনাজাত ও বাণীর মাধ্যমে মানুষকে বিভিন্ন দিকে শিক্ষা দিয়ে গেছেন। এসব দোয়ায় আত্মিক পরিশুদ্ধির জ্ঞান ছাড়াও রয়েছে খোদা পরিচিতি, বিশ্বদৃষ্টি, মানুষের পরিচিতি, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক দিক নির্দেশনা। এছাড়াও রিসালাতুল হুকুক নামে ইমামের একটি পুস্তিকা রয়েছে। এতে মানুষের ওপর মহান আল্লাহর অধিকারসহ নানা ধরনের অধিকারের বর্ণনা রয়েছে। ইমাম সাজ্জাদ (আ.)’র রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক তৎপরতা যখন সমাজকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে তখন তা উমাইয়া শাসকদের জন্যে অসহনীয় হয়ে ওঠে। তাই তৎকালীন উমাইয়া শাসক ওলীদ বিন আবদুল মালিক ইমামকে বিষ প্রয়োগে শহীদ করে। কিন্তু ইমাম সাজ্জাদের পথ নির্দেশনা তাঁর সন্তান ও অনুসারীদের মাধ্যমে অমর হয়ে আজো আলো বিকিরণ করে চলেছে। ইমাম বলেছেন, - আমি তাদের ব্যাপারে বিস্মিত যারা ক্ষতির কারণে বিভিন্ন ধরনের খাবার বর্জন করে অথচ তারা কদর্যতার কারণে পাপ বর্জন করে না। - তোমরা বেহেশতে সর্বোচ্চ স্থান লাভের চেষ্টা করবে। তোমরা মনে রেখো যারা অপর ভাইয়ের প্রয়োজন মেটায় এবং দীন-দুঃখীদের সাহায্য করে কেবল তাদেরকেই বেহেশতে সর্বোচ্চ স্থান দেয়া হয়ে থাকে। আল্লাহুম্মা লায়ান কাতালাতাল হুসাইন আঃ লানাতুল্লাহি আলাল কাজেবিন আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মাদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মাদ ওয়া আজ্জিল ফারাজাহুম নিবেদক মোঃ জাহিদ হোসেন

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিমআল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদপবিত্র কুরআন ও রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম এর হাদিস থেকে আমিরুল মোমেনীন আলী ইবনে আবি তালিব আঃ এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ হাদিসমহানবী হযরত মুহাম্মদ ‎(সা.)-এর উত্তরাধিকারী,তাঁর নবুওয়াতের মিশনের প্রধান সাহায্যকারী এবং দুনিয়া ও আখেরাতে রাসূলের ভ্রাতা আলী ‎(আ.) ‏আবরাহার পবিত্র মক্কা আক্রমণের ৩৩ বছর পর ১৩ রজব পবিত্র কা’বা শরীফে জন্মগ্রহণ করেন। মহান আল্লাহর আদেশে তাঁর নাম রাখা হয় আলী।শিশুকাল থেকেই মহানবী ‎(সা.)-এর সাথে হযরত আলীর বিশেষ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ সম্পর্কে আলী ‎(আ.) ‏নিজেই বলেছেন ‎: ‘...তিনি আমাকে তাঁর কোলে রাখতেন যখন আমি শিশু ছিলাম। তিনি আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরতেন এবং তাঁর বিছানায় শুইয়ে রাখতেন। তাঁর পবিত্র দেহ আমার দেহকে স্পর্শ করত এবং তিনি আমাকে তাঁর শরীরের সুগন্ধির ঘ্রাণ নেওয়াতেন। তিনি খাদ্য-দ্রব্য চিবিয়ে আমার মুখে পুরে দিতেন।...’১হযরত আবু তালিবের সংসারের ব্যয়ভার কমানোর জন্য হযরত আলীর বালক বয়সেই মহানবী ‎(সা.) ‏তাঁকে নিজের কাছে নিয়ে আসেন। তখন থেকে তিনি রাসূলের সার্বক্ষণিক সঙ্গী হয়ে যান। রাসূল হেরা পর্বতের গুহায় আল্লাহর ইবাদাত করতে গেলেও তাঁকে সাথে নিয়ে যেতেন। হযরত আলী বলেন ‎: ‘তিনি ‎(মহানবী) ‏প্রতি বছর হেরাগুহায় একান্ত নির্জনে বাস করতেন। আমি তাঁকে দেখতাম। আমি ব্যতীত আর কোন লোকই তাঁকে দেখতে পেত না। ঐ সময় রাসূলুল্লাহ্ ও খাদীজাহ্ ব্যতীত কোন মুসলিম পরিবারই পৃথিবীর বুকে ছিল না। আমি ছিলাম তাঁদের পরিবারের তৃতীয় সদস্য। আমি ওহী ও রেসালতের আলো প্রত্যক্ষ করেছি এবং নবুওয়াতের সুবাস ও সুঘ্রাণ অনুভব করেছি।’২তিনি মহানবীর প্রতি নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁকে অনুসরণ করতেন। তিনি বলেন ‎: ‘উষ্ট্র শাবক যেমনভাবে উষ্ট্রীকে অনুসরণ করে ঠিক সেভাবে আমি তাঁকে অনুসরণ করতাম। তিনি প্রতিদিন তাঁর উন্নত চরিত্র থেকে একটি নিদর্শন আমাকে শিক্ষা দিতেন এবং আমাকে তা পালন করার নির্দেশ দিতেন।... ‏তাঁর ওপর যখন ওহী অবতীর্ণ হয়েছিল তখন আমি শয়তানের ক্রন্দন ধ্বনি শুনেছিলাম। তাই আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম ‎: ‏হে রাসূলুল্লাহ্! ‏এ ক্রন্দন ধ্বনি কার? ‏তখন তিনি আমাকে বলেছিলেন ‎: ‏এই শয়তান এখন থেকে তার পূজা ‎(ইবাদাত) ‏করা হবে না বলে হতাশ হয়ে গেছে। নিশ্চয় আমি যা শুনি তুমি তা শোন এবং আমি যা দেখি তা দেখ। তবে তুমি নবী নও,কিন্তু ‎[নবীর] ‏সহকারী এবং নিঃসন্দেহে তুমি মঙ্গল ও কল্যাণের ওপরই আছ।’৩আর তাই মহানবী ‎(সা.)-এর নবুওয়াতের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসার পর তিনিই সর্বপ্রথম তাঁর ওপর ঈমান আনেন এবং তিনিই তাঁর সাথে নামায আদায় করা প্রথম ব্যক্তি। ইমাম মালেক বর্ণনা করেছেন ‎: ‘মহানবী ‎(সা.) ‏সোমবারে নবুওয়াত প্রাপ্ত হন এবং আলী মঙ্গলবারে তাঁর ওপর ঈমান আনেন।’৪হযরত আলী নিজেই বলেন ‎: ‘আমি আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসূলের ভ্রাতা এবং তাঁর নবুওয়াতের সবচেয়ে বড় বিশ্বাসস্থাপনকারী। একমাত্র মিথ্যাবাদী ছাড়া আমার পর কেউ এ দাবি করবে না। অন্য লোকদের নামায পড়ারও ৭ বছর আগে থেকে আমি নামায পড়েছি।’৫হযরত আলী ‎(আ.)-এর প্রসিদ্ধ উপাধিরাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏হযরত আলীকে বিভিন্ন উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন। এর মধ্যে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ হচ্ছে সিদ্দিকে আকবার,ফারুকে আযম,আসাদুল্লাহ ও মুরতাজা।পবিত্র কুরআনে হযরত আলী ‎(আ.)-এর মর্যাদাহযরত আলীর শানে পবিত্র কুরআনের অনেক আয়াত নাযিল হয়েছে। ইবনে আসাকির হযরত ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা করেছেন যে,কোন ব্যক্তির গুণ বর্ণনায় এত অধিক কুরআনের বাণী অবতীর্ণ হয়নি যা হযরত আলী সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস আরও বলেছেন যে,হযরত আলীর শানে তিনশ’ ‏আয়াত নাযিল হয়েছে এবং তাঁর গুণাবলি অত্যধিক ও প্রসিদ্ধ।৬ পবিত্র কুরআনের নাযিলকৃত আয়াতগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নিম্নে উল্লেখ করা হল ‎:১. ‏সূরা বাকারার ২০৭ নং আয়াতوَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَشْرِي نَفْسَهُ ابْتِغَاءَ مَرْضَاتِ اللَّهِ وَاللَّهُ رَءُوفٌ بِالْعِبَادِ‘এবং মানুষের মধ্যে এমনও আছে,যে আল্লাহর সন্তোষ লাভের জন্য নিজের জীবন পর্যন্ত বিক্রয় করে দেয় এবং আল্লাহ ‎(এরূপ) ‏বান্দাদের প্রতি অতিশয় অনুগ্রহশীল।’সালাবী তাঁর তাফসীর গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন যে,রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏যখন মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করার প্রস্তুতি নিলেন সেই সময় হযরত আলীকে তাঁর বিছানায় শুয়ে থাকার নির্দেশ দেন যাতে কাফির-মুশরিকরা মনে করে যে,রাসূল তাঁর নিজ ঘরেই রয়েছেন। আলী ‎(আ.) ‏নির্দ্বিধায় এ নির্দেশ পালন করলে মহান আল্লাহ এ আয়াত নাযিল করেন।৭ ২. ‏সূরা আলে ইমরানের ৬১ নং আয়াতفَمَنْ حَاجَّكَ فِيهِ مِنْ بَعْدِ مَا جَاءَكَ مِنَ الْعِلْمِ فَقُلْ تَعَالَوْا نَدْعُ أَبْنَاءَنَا وَأَبْنَاءَكُمْ وَنِسَاءَنَا وَنِسَاءَكُمْ وَأَنْفُسَنَا وَأَنْفُسَكُمْ ثُمَّ نَبْتَهِلْ فَنَجْعَلْ لَعْنَتَ اللَّهِ عَلَى الْكَاذِبِينَ‘অতঃপর তোমার নিকট যখন জ্ঞান ‎(কুরআন) ‏এসে গেছে,এরপরও যদি কেউ ‎(খ্রিস্টান) ‏তোমার সাথে তার ‎(ঈসার) ‏সম্বন্ধে তর্ক-বিতর্ক করে,তবে বল,‘(ময়দানে) ‏এস,আমরা আহ্বান করি আমাদের পুত্রদের ও তোমাদের পুত্রদের,আমাদের নারীদের ও তোমাদের নারীদের এবং আমাদের সত্তাদের ও তোমাদের সত্তাদের;’ ‏অতঃপর সকলে মিলে ‎(আল্লাহর দরবারে) ‏নিবেদন করি এবং মিথ্যাবাদীদের ওপর আল্লাহর অভিসম্পাত বর্ষণ করি।’ঘটনাটি এরূপ ‎: ‏রাসূলুল্লাহ্ ‎(সা.)-এর নবুওয়াতের সত্যতা যাচাই করার জন্য নাজরানের একটি খ্রিস্টান প্রতিনিধিদল মদীনায় আসল। তাদের সাথে আলোচনা ফলপ্রসূ হলো না। রাসূল ‎(সা.) ‏হযরত ঈসা ‎(আ.) ‏সম্বন্ধে প্রতিনিধিদের বললেন যে,তিনি আল্লাহর পুত্র নন,বরং আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। রাসূলুল্লাহ্ হযরত ঈসার জন্মের ব্যাপারে হযরত আদমের উদাহরণও দিলেন। কিন্তু তারা কোন কথাই শুনল না। অবশেষে তিনি আল্লাহর আদেশে পরস্পরের বিরুদ্ধে দোয়া ও মিথ্যাবাদীদের ওপর অভিশাপ বর্ষণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন,যাকে ‎‘মুবাহিলা’ ‏বলে। স্থির করা হল যে,নির্দিষ্ট স্থানে নির্দিষ্ট সময়ে উভয়ে নিজ নিজ পুত্রদের,নারীদের ‎(কন্যা সন্তানদের) ‏এবং তাদের নিজেদের ‎‘সত্তা’ ‏বলে গণ্য হওয়ার যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে একত্র হবে এবং প্রত্যেকে অপরের প্রতি অভিসম্পাত ও আল্লাহর শাস্তি কামনা করবে। রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏ইমাম হুসাইনকে কোলে নিয়ে ইমাম হাসানের হাত ধরলেন এবং হযরত ফাতিমাকে নিজের পেছনে,আর হযরত আলীকে তাঁর পেছনে রাখলেন। অর্থাৎ ছেলেদের স্থানে তিনি নাতিদের,নারীদের স্থানে নিজ কন্যাকে এবং ‎‘সত্তা’ ‏বলে গণ্যদের স্থানে আলীকে নিলেন এবং দোয়া করলেন,‘হে আল্লাহ! ‏প্রত্যেক নবীর আহলে বাইত থাকে,এরা আমার আহলে বাইত। এদের সকল দোষ-ত্রুটি হতে মুক্ত ও পাক-পবিত্র রেখ।’ ‏তিনি এভাবে ময়দানে পৌঁছলে খ্রিস্টানদের নেতা আকব তা দেখে বলল,‘আল্লাহর কসম,আমি এমন নূরানী চেহারা দেখছি যে,যদি এ পাহাড়কে নিজ স্থান হতে সরে যেতে বলেন,তবে অবশ্যই সরে যাবে। সুতরাং মুবাহিলা হতে হাত গুটিয়ে নেওয়াই কল্যাণকর,অন্যথায় কিয়ামত অবধি খ্রিস্টানদের কেউ অবশিষ্ট থাকবে না।’ ‏পরিশেষে তারা জিযিরা কর দিতে সম্মত হল। এটা হযরত আলীর একটি উঁচু স্তরের ফযিলত যে,তিনি আল্লাহর আদেশে রাসূলের ‎‘নাফ্স’ (অনুরূপ সত্তা) ‏সাব্যস্ত হলেন এবং সমুদয় নবীর থেকে শ্রেষ্ঠ হলেন।৮৩. ‏সূরা নিসার ৫৯ নং আয়াত ‎يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ‘হে বিশ্বাসিগণ! ‏তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূল ও তোমাদের মধ্যে যারা নির্দেশের অধিকর্তা,তাদের আনুগত্য কর...।’ইমাম জাফর সাদিক ‎(আ.)- ‏কে জিজ্ঞেস করা হলো যে,উত্তরাধিকারীর আদেশ মান্য করা কি অবশ্যই কর্তব্য? ‏তিনি বললেন ‎: ‏হ্যাঁ,তাঁরা ঐসব ব্যক্তি যাঁদের আদেশ পালন করা এ আয়াতে ওয়াজিব করা হয়েছে...। এ আয়াত হযরত আলী বিন আবি তালিব,হযরত হাসান ও হযরত হুসাইন ‎(আ.)-এর শানে অবতীর্ণ হয়েছে।৯ ৪. ‏সূরা মায়েদার ৫৫ নং আয়াতإِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَالَّذِينَ آمَنُوا الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُمْ رَاكِعُونَ‘(হে বিশ্বাসিগণ!) ‏তোমাদের অভিভাবক তো কেবল আল্লাহ,তাঁর রাসূল এবং সেই বিশ্বাসীরা যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে এবং রুকু অবস্থায় যাকাত প্রদান করে।’শীয়া-সুন্নি উভয় মাযহাবের তফসীরকাররা একমত যে,আয়াতটি হযরত আলী ‎(আ.)-এর শানে নাযিল হয়েছে। যেমন ইবনে মারদুইয়া এবং খাতীব বাগদাদী ইবনে আব্বাস সূত্রে এবং তাবরানী ও ইবনে মারদুইয়া আম্মার ইবনে ইয়াসির ও আলী ইবনে আবি তালিব সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে,আয়াতটি আলী ইবনে আবি তালিব ‎(আ.) ‏সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে যখন তিনি রুকু অবস্থায় যাকাত দেন।ঘটনাটি এরূপ ‎: ‏একদিন হযরত আলী ‎(আ.) ‏মদীনার মসজিদে নামায পড়ছিলেন। এমন সময় একজন ভিক্ষুক এসে ভিক্ষা চাইল। কিন্তু কোন ভিক্ষা না পাওয়ায় সে ফরিয়াদ করল যে,রাসূলের মসজিদ থেকে সে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছে। এ সময় হযরত আলী রুকু অবস্থায় ছিলেন। তিনি সেই অবস্থায় তাঁর ডান হাতের আঙ্গুল থেকে আংটি খুলে নেওয়ার জন্য ভিক্ষুকের প্রতি ইশারা করেন। ভিক্ষুক তাঁর হাত থেকে আংটি খুলে নেয়। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে উপরিউক্ত আয়াত নাযিল হয়।১০৫. ‏সূরা মায়েদার ৬৭ নং আয়াতيَا أَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ مِنْ رَبِّكَ وَإِنْ لَمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ وَاللَّهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْكَافِرِينَ‘হে রাসূল! ‏যা ‎(যে আদেশ) ‏তোমার প্রতিপালকের পক্ষ হতে তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে তা পৌঁছে দাও,আর যদি তুমি তা না কর,তবে তুমি ‎(যেন) ‏তার কোন বার্তাই পৌঁছাওনি,এবং ‎(তুমি ভয় কর না) ‏আল্লাহ তোমাকে মানুষের অনিষ্ট হতে রক্ষা করবেন;এবং নিশ্চয় আল্লাহ অবিশ্বাসী সম্প্রদায়কে সঠিক পথে পরিচালিত করেন না।’যখন রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏দশম হিজরিতে বিদায় হজ্ব থেকে মদীনায় প্রত্যাবর্তন করছিলেন সে সময় আল্লাহ্ তা‘আলা এ আয়াত নাযিল করেন। ইবনে আবী হাতিম ও ইবনে আসাকির আবু সাঈদ খুদরী হতে বর্ণনা করেছেন যে,এ আয়াত গাদীরে খুম প্রান্তরে হযরত আলী ‎(আ.)-এর শানে নাযিল হয়েছে।বিদায় হজ্ব থেকে প্রত্যাবর্তন করার সময় গাদীরে খুম নামক স্থানে মহানবী ‎(সা.) ‏হযরত আলীকে তাঁর পরে সকল মুমিনের অভিভাবক বলে ঘোষণা দেন।১১এ ঘোষণা দেয়ার পর হযরত ওমর হযরত আলীর সাথে সাক্ষাৎ করে অভিনন্দন জানান এবং বলেন ‎: ‘হে আলী ইবনে আবি তালিব! ‏আপনি আজ হতে প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর মাওলা হয়ে গেলেন।’১২৬. ‏সূরা রাদের ৭ নং আয়াতإِنَّمَا أَنْتَ مُنْذِرٌ وَلِكُلِّ قَوْمٍ هَادٍ‘(হে রাসূল!) ‏তুমি তো কেবল সতর্ককারী এবং প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে এক পথ প্রদর্শক।’ইবনে মারদুইয়্যা,ইবনে জারীর,আবু নাঈম তাঁর ‎‘মারেফাত’ ‏গ্রন্থে,ইবনে আসাকির,দাইলামী ও ইবনে নাজ্জার তাঁদের স্ব স্ব গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন যে,আয়াতটি নাযিল হলে মহানবী ‎(সা.) ‏তাঁর হাত নিজের বুকে রেখে বললেন,‘আমিই সতর্ককারী।’ ‏অতঃপর আলীর কাঁধের প্রতি তাঁর হাত দ্বারা ইশারা করে বললেন,‘হে আলী! ‏তুমিই পথপ্রদর্শক এবং মানুষ আমার পর তোমার মাধ্যমে হেদায়াতপ্রাপ্ত হবে।’ ‏উক্ত রেওয়ায়েতটি শব্দের তারতম্যে ইবনে মারদুইয়্যা সাহাবী আবু বারযাহ আসলামী হতে,জীয়াফীল হযরত ইবনে আব্বাস হতে,ইবনে আহমাদ তাঁর মুসনাদে এবং ইবনে মারদুইয়্যা ও ইবনে আসাকির স্বয়ং হযরত আলী ‎(আ.) ‏হতে বর্ণনা করেছেন।১৩৭. ‏সূরা রাদের ৪৩ নং আয়াতوَيَقُولُ الَّذِينَ كَفَرُوا لَسْتَ مُرْسَلًا قُلْ كَفَى بِاللَّهِ شَهِيدًا بَيْنِي وَبَيْنَكُمْ وَمَنْ عِنْدَهُ عِلْمُ الْكِتَابِযারা অবিশ্বাস করেছে তারা বলে,‘তুমি আল্লাহর রাসূল নও।’ ‏তুমি বল,‘আমার ও তোমাদের মধ্যে ‎(রেসালাতের) ‏সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট এবং সেই ব্যক্তি যার কাছে গ্রন্থের পূর্ণ জ্ঞান রয়েছে।’অধিকাংশ তাফসীরকার স্বীকার করেছেন যে,আয়াতে বর্ণিত সেই ব্যক্তি হলেন হযরত আলী ‎(আ.)। যেমন আসমী ‎‘যায়নুল ফাতা’ ‏নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন এবং সা’লাবী আবদুল্লাহ ইবনে আতা থেকে বর্ণনা করেছেন যে,আবদুল্লাহ বিন সালাম বলতেন,‘যার কাছে গ্রন্থের পূর্ণ জ্ঞান আছে’-এর উদ্দিষ্ট হযরত আলী ‎(আ.)। এজন্যই হযরত আলী ‎(আ.) ‏বারবার বলতেন,‘আমার কাছে আমার মৃত্যুর পূর্বে যা চাও জিজ্ঞেস কর।’১৪৮. ‏সূরা নাহলের ৪৩ নং আয়াতوَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ إِلَّا رِجَالًا نُوحِي إِلَيْهِمْ فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَতোমার পূর্বেও আমরা কেবল পুরুষদেরই ‎(রাসূল করে) ‏প্রেরণ করেছি যাদের প্রতি আমরা প্রত্যাদেশ প্রেরণ করতাম;যদি তোমরা না জেনে থাক তবে যারা জানে তাদের জিজ্ঞেস কর।আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেন ‎: ‏জ্ঞানী ব্যক্তিরা অর্থাৎ আহলুয যিকর হলেন হযরত মুহাম্মাদ ‎(সা.),হযরত আলী ‎(আ.),হযরত ফাতেমা ‎(আ.),হযরত হাসান ও হুসাইন ‎(আ.)। যাবের ইবনে আবদুল্লাহ বলেছেন ‎: ‏যখন এই আয়াত নাযিল হল তখন হযরত আলী বললেন ‎: ‏আমরাই হলাম জ্ঞানের ভাণ্ডার।১৫৯. ‏সূরা আহযাবের ৩৩ নং আয়াতوَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى وَأَقِمْنَ الصَّلَاةَ وَآتِينَ الزَّكَاةَ وَأَطِعْنَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا‘হে নবী পরিবার! ‏আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদের সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে।’উম্মুল মুমিনীন হযরত উম্মে সালামার ঘরে এ আয়াত নাযিল হলে রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏হযরত ফাতিমা,ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন ‎(আ.)-কে ডাকেন এবং তাঁদেরকে একটি চাদরে ঢেকে নেন। হযরত আলী তাঁর পেছনে ছিলেন। তিনি তাঁকেও চাদরে ঢেকে নেন। অতঃপর বলেন ‎: ‘হে আল্লাহ্! ‏এরা আমার আহলে বাইত। অতএব,তুমি তাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করে দাও এবং তাদেরকে উত্তমরূপে পবিত্র কর।’ ‏তখন উম্মে সালামা বলেন ‎: ‘হে আল্লাহর রাসূল! ‏আমিও কি তাদের অন্তর্ভুক্ত?’ ‏তিনি বলেন ‎: ‘তুমি স্ব স্থানে আছ এবং তুমি কল্যাণের মধ্যেই আছ।’১৬হযরত উম্মে সালামা ছাড়াও হযরত আবু সাঈদ খুদরী ও আনাস ইবনে মালিক কর্তৃক এ হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে।১৭১০. ‏সূরা শূরার ২৩ নং আয়াতقُلْ لَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا إِلَّا الْمَوَدَّةَ فِي الْقُرْبَى‘বল,আমি এর বিনিময়ে তোমাদের নিকট থেকে আমার নিকটাত্মীয়দের প্রতি ভালবাসা ছাড়া আর কোন প্রতিদান চাই না।’রাসূলুল্লাহ ‎(সা.)-এর নিকটাত্মীয় আহলে বাইতের সদস্যদের প্রতি ভালবাসা পোষণকে এ আয়াত দ্বারা মহান আল্লাহ মুসলমানদের জন্য ফরয বলে ঘোষণা করেন।হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেছেন ‎: ‏যখন এ আয়াত নাযিল হল তখন সাহাবিগণ জিজ্ঞেস করলেন,হে রাসূলুল্লাহ! ‏আপনার নিকটাত্মীয়,যাদেরকে ভালবাসা আমাদের ওপর ওয়াজিব করা হয়েছে তারা কারা? ‏রাসূল ‎(সা.) ‏বললেন ‎: ‏আলী,ফাতেমা,হাসান ও হুসাইন।১৮রাসূলুল্লাহ ‎(সা.)-এর হাদীসে আলী ‎(আ.)হযরত আলীর মর্যাদা সম্পর্কে মহানবী ‎(সা.)-এর নিকট থেকে অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এখানে কয়েকটি উল্লেখ করা হল ‎:১. ‏সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস বলেন,নবী ‎(সা.) ‏তাবুক যুদ্ধের সময় আলীকে লক্ষ্য করে বলেছেন ‎: ‘তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে,মর্যাদার দিক থেকে মূসার নিকট হারুন যে পর্যায়ে ছিলেন,তুমিও আমার নিকট ঐ পর্যায়ে রয়েছ?’১৯২. ‏অন্য একটি হাদীসে এসেছে ‎: ‏রাসূল বলেন ‎: ‘তুমি তো আমার নিকট তদ্রূপ যেরূপ হারুনের স্থান মূসার নিকট। পার্থক্য এতটুকু যে,আমার পরে কোন নবী নেই।’২০৩. ‏রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏ইমাম হাসান ও হুসাইনের হাত ধরে বলেন ‎: ‘যে ব্যক্তি আমাকে ভালবাসে এবং এ দু’জন ও তাদের পিতা-মাতাকে ভালবাসে,সে কিয়ামতের দিন আমার সাথে একই মর্যাদায় অবস্থান করবে।’২১৪. ‏আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণিত। রাসূল বলেছেন ‎: ‘আলীর চেহারার দিকে তাকানোও ইবাদত।’২২৫. ‏রাসূলুল্লাহ্ ‎(সা.) ‏আলী ‎(আ.)-কে সম্বোধন করে বলেছিলেন ‎: ‘মুমিনরাই তোমাকে মহব্বত করবে এবং মুনাফিকরাই তোমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবে।’২৩৬. ‏তিরমিযী,নাসাঈ ও ইবনে মাযাহ হুবশী ইবনে জুনাদাহ্ ‎(রা.) ‏থেকে বর্ণনা করেছেন। রাসূল ‎(সা.) ‏বলেছেন ‎: ‘আলী আমা থেকে এবং আমি আলী থেকে। যে ব্যক্তি আলীকে ভালবেসেছে,সে আমাকে ভালোবেসেছে। আর যে ব্যক্তি আলীকে ভালবেসেছে,সে আল্লাহকে ভালবেসেছে। যে ব্যক্তি আলীর সাথে শত্রুতা পোষণ করেছে সে আমার সাথে শত্রুতা পোষণ করেছে। আর যে আমার শত্রু সে আল্লাহর শত্রু। যে ব্যক্তি আলীকে কষ্ট দিয়েছে,সে আমাকে কষ্ট দিয়েছে।’২৪৭. ‏রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏বলেন ‎: ‘(হে আলী!) ‏দুনিয়া ও আখেরাতে তুমি আমারই ভাই।’২৫৮. ‏আবদুল্লাহ ইবনে বুরাইদা ‎(র.) ‏থেকে তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন ‎: ‏রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏বলেছেন ‎: ‘চার ব্যক্তিকে ভালবাসতে আল্লাহ আমাকে আদেশ করেছেন এবং তিনি আমাকে এও অবহিত করেছেন যে,তিনিও তাদের ভালবাসেন। বলা হল ‎: ‏হে আল্লাহর রাসূল! ‏আমাদের তাদের নামগুলো বলুন। তিনি বলেন ‎: ‏আলীও তাদের অন্তর্ভুক্ত। এ কথা তিনি তিনবার বলেন। ‎(অবশিষ্ট তিনজন হলেন) ‏আবু যার,মিকদাদ ও সালমান।...’২৬৯. ‏জাবির ‎(রা.) ‏থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন ‎: ‏তায়েফ অভিযানের দিন রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏আলীকে কাছে ডেকে তার সাথে চুপিসারে আলাপ করেন। লোকেরা বলল ‎: ‏তিনি তাঁর চাচাত ভাইয়ের সাথে দীর্ঘক্ষণ চুপিসারে কথা বললেন। রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏বলেন ‎: ‏আমি তার সাথে চুপিসারে কথা বলিনি;বরং আল্লাহই তার সাথে চুপিসারে কথা বলেছেন। ‎(অর্থাৎ তার সাথে চুপিসারে কথা বলার জন্য আল্লাহ্ই আমাকে আদেশ করেছেন।)২৭হযরত আলী সম্পর্কে অন্যান্য সাহাবীহযরত আবু বকর প্রায়ই হয়রত আলীর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতেন। হযরত আয়েশা এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন ‎: ‘আমি রাসূলে করীমকে বলতে শুনেছি,আলীর মুখ দেখা ইবাদাতের শামিল।’২৮হযরত উমর বিন খাত্তাব বলতেন,হযরত আলী বিন আবি তালিবের তিনটি বৈশিষ্ট্য ছিল। যদি তার একটি আমার থাকত তাহলে আমি বলতাম যে,আমাকে লাল রঙের একটি উট দেয়া হলে তা অপেক্ষাও আমি তা পছন্দ করতাম। তাঁকে এ তিনটি বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন ‎: ‏১.তাঁর বিয়ে হয় রাসূল ‎(সা.)-এর কন্যার সাথে,২. ‏তাঁর সঙ্গে রাসূলে করীমের মসজিদে অবস্থান এবং যা রাসূলে করিমের জন্য বৈধ ছিল তার জন্যও তা বৈধ ছিল এবং ৩. ‏খায়বার যুদ্ধের পতাকা বহনের দায়িত্ব তাঁর ওপর ন্যস্ত ছিল।২৯হযরত উমর বলেছেন,হে আল্লাহ! ‏আমার ওপর এমন কোন বিপদ দিও না যখন আবুল হাসান ‎(আলী) ‏আমার নিকট উপস্থিত না থাকে। কারণ,তিনি আমার নিকট উপস্থিত থাকলে আমাকে সে বিপদ থেকে নিষ্কৃতি দেবেন।’৩০তাবরানী হযরত ইবনে আব্বাস থেকে রেওয়ায়াত করেছেন যে,হযরত আলীর আঠারটি বৈশিষ্ট্য এমন ছিল যা সমগ্র উম্মতের কারও ছিল না।’৩১তথ্যসূত্র১. ‏মমতাজ বেগম কর্তৃক প্রকাশিত নাহজ আল বালাঘা,২য় মুদ্রণ,আল খুতবাতুল কাসেয়াহ্,খুতবা নং ১৯১২. ‏প্রাগুক্ত৩. ‏প্রাগুক্ত৪. ‏মুসতাদরাকে হাকেম,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏১১২;এটি ইমাম মালেক কর্তৃক বর্ণিত। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে হেরা গুহায় জিবরাঈল ‎(আ.) ‏কর্তৃক রাসূলুল্লাহ ‎(সা.)-এর নবুওয়াত ঘোষণার পর পরই হযরত আলী ‎(আ.) ‏তাঁর ঈমান আনার বিষয়টি প্রকাশ করেন।৫. ‏সুনানে ইবনে মাজাহ্,১ম খণ্ড,পৃ. ‏৪৪৬. ‏নূর-এ-সাকালাইন কর্তৃক প্রকাশিত,সাইয়্যেদ আলী জাফরী প্রণীত আল মুরতাজা,পৃ. ‏৩০।৭. ‏এহইয়াউ উলুমিদ্দীন,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏২৩৮;নুরুল আবসার,পৃ. ‏৮৬,মুসতাদরাকে হাকেম,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏৪;তাফসীরে কুমী,১ম খণ্ড,পৃ. ‏৭১;তাযকিরাতু সিবতে ইবনে যাওযী,পৃ. ‏২১;ইয়ানাবিউল মাওয়াদ্দাহ,পৃ. ‏৯২।৮. ‏তাফসীরে জালালাইন,১ম খণ্ড,পৃ.৬০;বায়দ্বাভী,১ম খণ্ড,পৃ. ‏১১৮,তাফসীরে দুররুল মানসুর,২য় খণ্ড,পৃ. ‏৩৯,মিশর মুদ্রণ;মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বাল,১ম খণ্ড,পৃ. ‏১৮৫;৯. ‏মাজমাউল বায়ান,২য় খণ্ড,পৃ. ‏১৪১;তাফসীরে কুমী,১ম খণ্ড,পৃ. ‏১৪১;ইয়ানাবিউল মাওয়াদ্দাহ,পৃ. ‏২১;শাওয়াহেদুত তানযিল,১ম খণ্ড,পৃ. ‏১৪৮;তাফসীরে ফুরাত,পৃ.২৮১০. ‏তাফসীরে তাবারী,৬ষ্ঠ খণ্ড,পৃ. ‏১৬৫;তাফসীরে রাযী,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏৪৩১;মানাকেবে খাওয়ারেযমী,পৃ. ‏১৭৮;যাখায়েরুল উকবা,পৃ. ‏১০২;তাফসীরে ইবনে কাসীর,২য় খণ্ড,পৃ. ‏৭১;আল- ‏বেদায়া ওয়ান নেহায়া,৭ম খণ্ড,পৃ. ‏৩৫৭;সাওয়ায়েকে মুহরিকাহ,পৃ. ‏২৫;১১. ‏মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বাল,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ‏৩৭২;ইমাম নাসাঈ প্রণীত খাসায়েসে আমীরুল মুমিনীন,পৃ. ‏২১;মুসতাদরাকে হাকেম,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏১০৯;আল গাদীর,১ম খণ্ড,পৃ. ‏২১৪ ও ২২৯;শাওয়াহেদুত তানযিল,১ম খণ্ড,পৃ. ‏১৮৭ ।১২. ‏তাফসীরে তাবারী,৩য় খণ্ড,মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বল,৩য় খণ্ড,দারে কুতনী।১৩. ‏তাফসীরে দুররে মানসুর,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ‏৪৫ দ্রষ্টব্য।১৪. ‏তাফসীরে দুররে মানসুর,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ‏৬৯ ।১৫. ‏কেফাইয়াতুল মুওয়াহহিদীন,২য় খণ্ড,পৃ. ‏৬৫০;মাজমাউল বায়ান,২য় খণ্ড,পৃ. ‏৪১৩;কানযুল উম্মাল,৬ষ্ঠ খণ্ড,পৃ. ‏১৫৬;তাফসীরে তাবারী,১৪তম খণ্ড,পৃ. ‏১০৮ ।১৬. ‏বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত জামে আত-তিরমিযী,৬ষ্ঠ খণ্ড,হাদীস নং ৩৭২৫,পৃ. ‏৩৫৯ ।১৭. ‏মুসনাদে আহমাদ,১ম খণ্ড,পৃ. ‏৩৩১;যাখায়েরুল উকবা,পৃ. ‏২১,তাফসীরে তাবারী,২২তম খণ্ড,পৃ. ‏৮;মুসতাদরাকে হাকেম,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏২০৮;ফাজায়েলে খামসাহ,১ম খণ্ড,পৃ. ‏২২৪;শাওয়াহেদুত তানযিল,২য় খণ্ড,পৃ. ‏১০ ।১৮. ‏যাখায়েরুল উকবা,পৃ. ‏৯ ও ১২;তাফসীরে যামাখশারী,২য় খণ্ড,পৃ. ‏৩৩৯;সাওয়ায়েকে মুহরিকাহ,পৃ. ‏১০১,তাফসীরে দুররুল মানসূর,৬ষ্ঠ খণ্ড,পৃ. ‏৭;মুসনাদে আহমাদ,১ম খণ্ড,পৃ. ‏২২৯;আল গাদীর,৩য় খণ্ড,পৃ. ‏১৭২;শাওয়াহেদুত তানযিল,২য় খণ্ড,পৃ. ‏৩০ ।১৯. ‏আধুনিক প্রকাশনী কর্তৃক প্রকাশিত সহীহ আল বুখারী,৩য় খণ্ড,হাদীস নং ৩৪৩১;বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত সহীহ মুসলিম,৭ম খণ্ড,হাদীস নং ৬০৪২ ।২০. ‏বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত সহীহ মুসলিম,৭ম খণ্ড,হাদীস নং ৬০৪০ ও জামে আত-তিরমিযী,৬ষ্ঠ খণ্ড,হাদীস নং ৩৬৬৮ ।২১. ‏বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত জামে আত-তিরমিযী,৬ষ্ঠ খণ্ড,হাদীস নং ৩৬৭০২২. ‏এমদাদীয়া লাইব্রেরী কর্তৃক প্রকাশিত হযরত আলী ইবনে আবি তালিব ‎(রা.),পৃ. ‏১৫ ।২৩. ‏বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত জামে আত-তিরমিযী,৬ষ্ঠ খণ্ড,হাদীস নং ৩৬৭৩ ।২৪. ‏এমদাদিয়া লাইব্রেরী কর্তৃক প্রকাশিত হযরত আলী ‎(রা.),পৃ. ‏১৫-১৬ ।২৫. ‏বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত জামে আত-তিরমিযী,৬ষ্ঠ খণ্ড,হাদীস নং ৩৬৫৮;২৬. ‏প্রাগুক্ত,হাদীস নং ৩৬৫৬;২৭. ‏প্রাগুক্ত,হাদীস নং ৩৬৬৪২৮. ‏সাওয়ায়েকে মুহরিকাহ,পৃ. ‏১৭৫ ।২৯. ‏সাওয়ায়েকে মুহরিকাহ,৩য় খণ্ড,এবং মুসতাদরাকে হাকেম,৩য় খণ্ড ।৩০. ‏মুনতাখাবে কানজুল উম্মাল,৩য় খণ্ড ।৩১. ‏সাওয়ায়েকে মুহরিকাহ ১১৩ ।(প্রত্যাশা,৩য় বর্ষ, ‏১ম সংখ্যাপ্রচারে মোঃ জাহিদ হুসাইন

শিশু ইমাম হযরত জাওয়াদ (আ.)'র জন্মবার্ষিকীসকল মোমিন মোমিনা কে জানাই ঈদ মোবারক🎂🎂🎂🎂🎂(((পর্ব ১)))🎂🎂🎂🎂🎂দশই রজব ইসলামের মহাখুশির দিন। এই দিনে পৃথিবীতে এসেছিলেন মাওলা মোহাম্মদ (সা) পবিত্র আহলে বাইতের সদস্য নবম ইমাম হযরত জাওয়াদ বা তাকি(আ)। নবীজীর আহলে বাইতের সদস্যরা কেবল মুসলমানদেরই ধর্মীয় নেতা নন বরং যারাই সত্য পথের সন্ধানী কিংবা কল্যাণকামী-তাদের সবারই নেতা।আহলে বাইতের এই মহান ইমাম হযরত জাওয়াদ (আ) এর জন্ম-বার্ষিকীতে আপনাদের সবার প্রতি রইলো অশেষ অভিনন্দন ও প্রাণঢালা মোবারকবাদ এবং মাওলা মোহাম্মদ (সা.) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের শানে পেশ করছি অসংখ্য দরুদ ও সালাম ।ইমাম জাওয়াদের জন্ম হয়েছিল ১৯৫ হিজরিতে তথা ৮১১ খ্রিস্টাব্দের ১২ এপ্রিল পবিত্র মদীনায়। মজলুম ও দরিদ্রদের প্রতি ব্যাপক দানশীলতা ও দয়ার জন্য তিনি 'জাওয়াদ' উপাধি পেয়েছিলেন। তাকি বা খোদাভীরু ছিল তাঁর আরেকটি উপাধি। জগত-বিখ্যাত মহাপুরুষ ইমাম রেজা (আ) ছিলেন তাঁর বাবা। আর তাঁর মায়ের নাম ‘সাবিকাহ’ বলে জানা যায়। ইমাম রেজা (আ) তাঁর এই স্ত্রীর নাম রেখেছিলেন খিইজরান। তিনি ছিলেন মহানবীর স্ত্রী উম্মুল মু’মিনিন হযরত মারিয়া কিবতির (আ) বংশধর। ইমাম জাওয়াদ (আ) ১৭ বছর ইমামতের দায়িত্ব পালনের পর মাত্র ২৫ বছর বয়সে শাহাদত বরণ করেন। তিনিই হলেন ইসলামের ইতিহাসের সবচেয়ে কম বয়স্ক ইমাম। আহলে বাইতের অন্য ইমামগণের মত ইমাম জাওয়াদ (আ.)ও ছিলেন উচ্চতর নৈতিক গুণ, জ্ঞান ও পরিপূর্ণতার অধিকারী। ইসলামের মূল শিক্ষা ও সংস্কৃতির পুনরুজ্জীবন এবং বিকাশ ছিল তাঁর তৎপরতার মূল লক্ষ্য বা কেন্দ্রবিন্দু। সেযুগের সব মাজহাবের জ্ঞানী-গুণীরা ইমাম জাওয়াদ (আ.)'র উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন।সমসাময়িক যুগের প্রখ্যাত সুন্নি চিন্তাবিদ কামালউদ্দিন শাফেয়ি ইমাম জাওয়াদ (আ.) সম্পর্কে বলেছেন, "মুহাম্মাদ বিন আলী তথা ইমাম জাওয়াদ (আ.) ছিলেন অত্যন্ত উঁচু মর্যাদা ও গুণের অধিকারী। মানুষের মুখে মুখে ফিরতো তাঁর প্রশংসা। তাঁর উদারতা, প্রশস্ত দৃষ্টি ও সুমিষ্ট কথা সবাইকে আকৃষ্ট করত। যে-ই তাঁর কাছে আসতো নিজের অজান্তেই এই মহামানবের অনুরাগী হয়ে পড়ত এবং তাঁর কাছ থেকে জ্ঞান অর্জন করত।" ইমাম জাওয়াদ (আ) মাত্র সাত বা আট বছর বয়সে ইমামতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এতো অল্প বয়সে তাঁর ইমামতিত্বের বিষয়টি ছিল যথেষ্ট বিস্ময়কর। ফলে অনেকেই এ বিষয়ে সন্দেহ করতেন। অথচ আল্লাহর তো এই শক্তি আছে যে তিনি মানুষকে তার বয়সের স্বল্পতা সত্ত্বেও পরিপূর্ণ বিবেক-বুদ্ধির পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেন। কোরানের আয়াতের ভিত্তিতে পূর্ববর্তী উম্মতের মধ্যেও এরকম উদাহরণ বহু আছে। যেমন শিশুকালে হযরত ইয়াহিয়া (আ) এর নবুয়্যত প্রাপ্তি, মায়ের কোলে নবজাতক ঈসা (আ) এর কথা বলা ইত্যাদি সর্বশক্তিমান আল্লাহর অশেষ ক্ষমতারই নিদর্শন। ইমাম জাওয়াদ (আ) শৈশব-কৈশোরেই ছিলেন জ্ঞানে-গুণে, ধৈর্য ও সহনশীলতায়, ইবাদত-বন্দেগিতে, সচেতনতায়, কথাবার্তায় শীর্ষস্থানীয় মহামানব। একবার হজ্জ্বের সময় বাগদাদ এবং অন্যান্য শহরের বিখ্যাত ফকীহদের মধ্য থেকে আশি জন মদীনায় ইমাম জাওয়াদ (আ) এর কাছে গিয়েছিলেন। তাঁরা ইমামকে বহু বিষয়ে জিজ্ঞেস করে অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত ও সন্তোষজনক জবাব পেলেন। ফলে জাওয়াদ (আ)’র ইমামতিত্বের ব্যাপারে তাদের মনে যেসব সন্দেহ ছিল-তা দূর হয়ে যায়।প্রচারে মোঃ জাহিদ হুসাইন আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম‌লা'নাতুল্লাহি আলাল কাজেবিন🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂