পোস্টগুলি

সুফিবাদ বা সুফী দর্শন একটি ইসলামি আধ্যাত্মিক দর্শন ( ১ম পর্ব)সুফি তথা সুফিজমের উৎপত্তি নিয়ে রয়েছে একাধিক মত। সাধারণভাবে বলা হয়ে থাকে ‘সুফ’ তথা ছাগল বা ভেড়ার লোম থেকে সুফি নামটি এসেছে । কেউ কেউ বলেন ‘সাফি’ অর্থাৎ ময়লা পরিষ্কারক থেকে সুফি কথাটি এসেছে। আরবি ‘সাফা’ (পবিত্র) শব্দ থেকে সুফি শব্দটির উৎপত্তি বলে গণ্য করা হয়ে থাকে। বস্তুত: অন্তরের ময়লাকে পরিষ্কার করার লক্ষ্যেই সুফিরা নিজেদের নিয়োজিত রাখেন। সুফিবাদ (সুফীবাদ বা সুফী দর্শন ) একটি ইসলামি আধ্যাত্মিক দর্শন। আত্মা সম্পর্কিত আলোচনা এর মুখ্য বিষয়। আত্মার পরিশুদ্ধির মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনই হলো এই দর্শনের মর্মকথা। পরম সত্তা মহান আল্লাহ কে জানার আকাঙ্খা মানুষের চিরন্তন। স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক আধ্যাত্মিক ধ্যান ও জ্ঞানের মাধ্যামে জানার প্রচেষ্টাকে সূফী দর্শন বা সূফীবাদ বলা হয়। হযরত ইমাম গাজ্জালী(রঃ) মতে, " মন্দ সবকিছু থেকে আত্মাকে প্রবিত্র করে সর্বদা আল্লাহর আরাধনায় নিমজ্জিত থাকা এবং সম্পূর্ন রূপে আল্লাহতে নিমগ্ন হওয়ার নামই সূফী বাদ। আত্মার পবিত্রতার মাধ্যমে ফানাফিল্লাহ (আল্লাহর সঙ্গে অবস্থান করা) এবং ফানাফিল্লাহর মাধ্যমে বাকাবিল্লাহ (আল্লাহর সঙ্গে স্থায়িভাবে বিলীন হয়ে যাওয়া) লাভ করা যায়। যেহেতু আল্লাহ নিরাকার, তাই তাঁর মধ্যে ফানা হওয়ার জন্য নিরাকার শক্তির প্রতি প্রেমই একমাত্র মাধ্যম। মহব্বতের মাধ্যমে নিজের অস্তিত্বকে বিলীন করে দিয়ে আল্লাহর অস্তিত্বে লীন হয়ে যাওয়া। যাকে মনছুর হাল্লাজ (র.) পরিণত করেছিলেন ‘ফানা ফিল্লা’তে। যে মতবাদ ধর্মের গতানুগতিকতাকে প্রশ্রয় না দিয়ে হৃদয়ের উপলব্ধি দিয়ে বিচার করে, সেটাই সুফিবাদ। হজরত জুনাইদ বোগদাদি (র.) সুফিবাদকে অভিহিত করেছেন ‘নিজের অজ্ঞতার উপলব্ধি’ বলে। অজ্ঞতা বলতে বলা হচ্ছে "বিশালত্ব" তথা আল্লাহকে জানার ও তাঁকে চেনার ব্যাপারে অজ্ঞতা। আল্লাহকে জানার ও চেনার উপায় হোল ভক্তি ও প্রেম । এই প্রেমের অন্য নামই সুফিবাদ। আর এই প্রেমের সাধকরাই সুফি সাধক। অনেকে নবী পাক (স.)’র মাধ্যমে সুফিজমের প্রারম্ভ বলতে চেয়েছেন। এর পক্ষে যৌক্তিকতা হল নবী পাক (স.) নবুওয়্যাত প্রাপ্তির আগে পবিত্র কাবার প্রায় ৫ কি.মি. দূরত্বে গারে হেরায় মহান আল্লাহ পাকের ধ্যানে মগ্ন থাকতেন। এখানেই পবিত্র কুরআনের প্রথম শব্দ "ইকরা" নাযিল হয়। এক মতে হযরত হাসান আল বসরী (রহ.) সর্বপ্রথম সুফি বলে গণ্য হয়ে থাকেন । প্রিয় নবী (সাঃ) সাহাবাদেরকে ৪টি বিদ্যা শিক্ষা দিতেন---শরিয়ত, তরিকত, হাকিকত ও মারেফত। মোরাকাবা করলে হৃদয়ের কালিমা বিদুরিত হয়, হৃদয় আলোকিত হয়। মোরাকাবার নিয়ম হল প্রতি ওয়াক্ত নামাজ শেষে ও রাত্রির তৃতীয় অংশে (রহমতের সময়) জেগে বা অন্য যে কোন সময় আল্লার ধ্যনে মগ্ন থাকা নিজের জীবনের ভুল, বেয়াদবী জন্য মহান আল্লাহর কাকুতি মিনতি করে ক্ষমা প্রার্থনা করা । এভাবে অধিককাল মোরাকাবা করলে দিলের চোখ খুলে যায়। আর ঐ চোখেই কেবল মো'মেন বান্দার নামাযের মেরাজ হয়ে থাকে। মোরাকাবা হল নফল ইবাদত। নফল ইবাদত হল আল্লাহর নৈকট্য লাভের উত্তম পন্থা। তাই মোরাকাবা সাধকের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। সাহাবায়ে কেরামগণ প্রথমে মোরাকাবা করেছেন। পরে আল্লাহর পক্ষ থেকে পর্যায়ক্রমে নামাজ, রোজা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি ইবাদত নির্দেশিত হয়েছে। অবশ্য আরেক মত হচ্ছে পবিত্রআসহাব-ই-সুফফা অর্থাৎ বারান্দার এ সাহাবাগণের আদর্শই সুফিরা গ্রহণ করেছিলেন এবং সূফফা থেকে সুফি শব্দটি নেয়া হয়েছে। রাসুল(সাঃ) মদিনায় হিজরতের পরে মসজিদে নববীর বারান্দায় একটা ছাউনির নিচে থাকতেন। রাসুল(সাঃ) সাহাবাদের জন্য ধ্যান বা মোরাকাবার ব্যবস্থা করেছিলেন। এখানে বসে হজ্ব ও ওমরায় আসা নবীর আশেকরা কুরআন পাঠ, নফল নামাজ, ধ্যান বা মোরাকাবা, দরুদ ও মিলাদ শরীফ পড়ে থাকেন। ছাউনি শব্দটা থেকেই এসেছে সুফি শব্দটা। তাঁরা সেখানে থাকতেন সংসার তথা যাবতীয় কিছু ত্যাগ করে। তাঁরা লোমের কম্বল এবং পোশাক ব্যবহার করতেন । ওই সাহাবিগণ ব্যবসা-বাণিজ্য-চাষাবাদ কিছু করতেন না, এমনকি থাকতেন না পরিবারের সাথেও। মক্কা - মদিনা অথবা যেখানেরই অধিবাসী হোন না কেন- যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের প্রেমে নিবেদিত ও সমর্পিত হয়েছিলেন তাঁরাই এসে থাকতেন ওই তিনদিক খোলা ছাউনির তলায়। পুরো দলের মধ্যে হয়ত দু-চারজন কাঠ কাটতে গেলেন, বিক্রি করে সবার জন্য দু-চার টুকরা করে রুটির জোগান দেবেন- বাকিরা ওই ছাউনিতেই। রাসূলের গোলামিতে। তাঁর পায়ের তলায়। দিন নেই, রাত নেই। গ্রীষ্ম-শীত-ধূলিঝড় নেই। তাঁদের না আছে এক টুকরা বাড়তি কাপড়, না একটা বাক্স-পেঁটরা। দাঁড়াতে পারেন না, অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান- এই এঁরাই আবার কী করে যেন রাতের পর রাত পার করে দেন সালাতে। দয়ার সাগর রাসূল (সাঃ) তাঁদের ছাড়া খাবেন না। বসবেন না। উঠবেন না। এই আসহাবে সুফফারা দিনের পর দিন রোজা রেখে রাতের পর রাত কুরআন তিলাওয়াত ও আধ্যাত্ম্যসাধনায় এমন মগ্ন ছিলেন, যে ইসলামের ব্যবহারিক প্রকৃত রূপ হিসাবে তাঁদের দেখেই মানুষ দলে দলে শামিল হত। এসে পড়ত তাদের পান্ডিত্য দেখে, মোহ- বরজনের আজব মোহ দেখে। এভাবে যারা করেছেন, তারাই শুধু সুফী নন। ইসলামের পূরো রীতিটা যেই অনুসরণ করেন, শেষতক তিনিই সুফী। কাশফ কি ;-- কাশফ মানে হল অজানা কোন বিষয় নিজের কাছে প্রকাশিত হওয়া। অর্থাৎ আল্লাহ কর্তৃক তার কোন বান্দার নিকট এমন কিছুর জ্ঞান প্রকাশ করা যা অন্যের নিকট অপ্রকাশিত। আর এটি কেবলমাত্র নবী-রাসূলগণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘তিনি অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারী। তিনি তাঁর অদৃশ্যের জ্ঞান কারু নিকট প্রকাশ করেন না’। ‘তাঁর মনোনীত রাসূল ব্যতীত। তিনি তার (অহীর) সম্মুখে ও পশ্চাতে প্রহরী নিযুক্ত করেন’ (জিন ৭২/২৬-২৭)। এখানে ‘রাসূল’ বলতে জিবরীল ও নবী-রাসূলগণকে বুঝানো হয়েছে। তবে কখনও কখনও রীতি বহির্ভূতভাবে অন্য কারু নিকট থেকে অলৈাকিক কিছু ঘটতে পারে বা প্রকাশিত হতে পারে। যেমন ছাহাবী ও তাবেঈগণ থেকে হয়েছে। অতএব এরূপ যদি কোন মুমিন থেকে হয়, তবে সেটা হবে ‘কারামত’। অর্থাৎ আল্লাহ্ তাকে এর দ্বারা সম্মানিত করেন। (চলবে

মাওলা মোহাম্মদ (সা.)এর দেখানো পথ ও সৌভাগ্যের সিঁড়ি (পর্ব-১৮)মাওলা (সা.) বলেছেন : কল্যাণের চেয়ে কল্যাণকারী হলো উত্তম আর মন্দের চেয়েও মন্দ কাজে জড়িত ব্যক্তি নিকৃষ্টতর। তিনি বলেন : আল্লাহ্ যাকে অবাধ্যতার লাঞ্ছনা থেকে আনুগত্যের স্থানে স্থানান্তরিত করেন তাকে বিনা সম্পদে ধনী করেন এবং বিনা পরিজনে তাকে সম্মানিত করেন ও বিনা (বন্ধু বা) সঙ্গীতে তাকে শান্তি দেন। যে আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ্ তার প্রতি সবকিছুকে ভীত রাখেন, আর যে আল্লাহকে ভয় করে না আল্লাহ্ তার জন্য সবকিছুকে ভয়ানক করেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর দেয়া কম জীবিকাতেই খুশী থাকে আল্লাহ্ তার খুব কম কাজেই সন্তুষ্ট হন। আর যে ব্যক্তি হালাল রিজিক বা জীবিকা অন্বেষণে লজ্জা পায় না সে মিতব্যয়ী হয় ও নিশ্চিন্ত থাকে আর তার পরিবার নেয়ামতের মধ্যে বিচরণ করে। যে ব্যক্তি দুনিয়ার প্রতি নির্মোহ থাকে আল্লাহ্ তার অন্তরে প্রজ্ঞাকে প্রোথিত করে দেন এবং তার জিহ্বাকে তা দিয়ে কথা বলান এবং তাকে দুনিয়ার ভুলগুলোর প্রতি দৃষ্টি খুলে দেন যাতে এর যন্ত্রণাকেও উপলব্ধি করে আর তার ঔষধকেও জানতে পারে। আর তাকে নিরাপদে দুনিয়া থেকে বের করে স্থায়ী আবাসস্থলে নিয়ে যান। মাওলা মোহাম্মদ (সা.) বলেছেন : বিপদগ্রস্তদের বিচ্যুতিগুলোকে মার্জনা করো। মহানবী বলেন : দুনিয়ার সংযমশীলতা হলো আশাকে খাটো করা এবং প্রত্যেক নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা আর আল্লাহ্ যা নিষিদ্ধ করেছেন তার সবকিছু থেকে বিরত থাকা। তিনি বলেন : কোনো উত্তম কাজকেই লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে করো না আর লজ্জার বশে তা পরিত্যাগ করো না। রাসূলে পাক (সা.) বলেন : আমি আমার উম্মতের ওপর তিনটি জিনিসের কারণে উদ্বিগ্ন : পাল্লাভারী কার্পণ্য, অনুসৃত রিপুর কামনা আর পথভ্রষ্ট নেতা।মহানবী বলেন : যে ব্যক্তির দুঃখ বেশি তার দেহ রুগ্ন আর যে ব্যক্তির চরিত্র খারাপ সে নিজেকে শাস্তি দেয় আর যে পুরুষদের সাথে সংঘাতে লিপ্ত হয় তার পৌরুষত্ব ও মর্যাদা হারিয়ে যায়। তিনি আরো বলেছেন : জেনে রাখ, আমার উম্মতের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট হলো তারা যাদের অনিষ্টতার ভয়ে সম্মান করে। আর সাবধান, যে মানুষের অনিষ্টতার ভয়ে তাকে সম্মান করে সে আমার থেকে নয়। মাওলা মোহাম্মদ (সা.) বলেছেন : আমার উম্মতের মধ্যে যে দিনাতিপাত করে আর তার উদ্দেশ্য থাকে আল্লাহ্ ভিন্ন অন্য কিছু, সে আল্লাহর রহমত ও সাহায্যপ্রাপ্ত নয়। আর যে মুসলমানদের সমস্যার ব্যাপারে গুরুত্ব দেয় না সে তাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। আর যে সাগ্রহে অপমানকে মাথা পেতে নেয় সে আমাদের আহলে বাইতের অনুসারী নয়। মাওলা মোহাম্মদ (সা.) তিনি মুআযের পুত্র বিয়োগের শোকনামায় তাঁকে এভাবে লিখে পাঠান : এ পত্রটি মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর কাছ থেকে মুআয ইবনে জাবালের প্রতি, সালামুন আলাইকুম। আমি মহান আল্লাহর প্রশংসা জ্ঞাপন করছি যিনি ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই। পরসমাচার, আমার কাছে সংবাদ এসেছে যে, তুমি তোমার সেই পুত্রের শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েছ যাকে আল্লাহ স্বীয় সিদ্ধান্তে মৃত্যু দান করেছেন। নিশ্চয় তোমার সন্তান আল্লাহর সুখকর দান ছিল যাকে তিনি তোমার কাছে আমানতস্বরূপ রেখেছিলেন এবং মৃত্যুর সময় নির্দিষ্ট ক্ষণে তাকে ফিরিয়ে নিয়েছেন। নিশ্চয় আমরা আল্লার কাছ থেকে এসেছি এবং তাঁরই কাছে ফিরে যাব। মাওলা মোহাম্মদ (সা.)এর ওই লিখিত বাণীতে আরো এসেছে: (হে মুআয) তোমার অস্থিরতা যেন তোমার সওয়াবকে বিনষ্ট করে না দেয়। আর যদি তোমাদের বিপদের সওয়াব লাভ করতে চাও তা হলে জেনে রাখ যে, আত্মসমর্পণকারী ও ধৈর্যশীলদের ওপর আপতিত বিপদের বিনিময়স্বরূপ আল্লাহ্ তাদের জন্য যে সওয়াব প্রস্তুত করে রেখেছেন তার তুলনায় বিপদ খুবই কম এবং স্বল্পস্থায়ী। জেনে রাখ, অস্থিরতা ও বিলাপ মৃতকে ফিরিয়ে আনবে না আর তাঁর নির্ধারিত বিষয়কে প্রতিহত করতে পারবে না। কাজেই শোকে শান্ত হও এবং নির্ধারিত প্রতিশ্রুতিকে মেনে নাও। এমন যেন না হয়, যে বিষয়টি তোমার নিজের সাথে এবং সকল মানুষের সাথে অনিবার্য সম্বন্ধযুক্ত তা নিয়ে দুঃখ করবে যা নির্ধারিত মতে অবতীর্ণ হবে। ওয়াস্ সালামু আলাইকা ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ্।মাওলা মোহাম্মদ (সা.) বলেছেন : কিয়ামতের লক্ষণাগুলোর মধ্যে রয়েছে কোরআন পাঠকারীর আধিক্য আর ফকিহদের স্বল্পতা এবং শাসকদের আধিক্য আর বিশ্বস্তদের স্বল্পতা ও বেশি বৃষ্টি আর স্বল্প গাছ-গাছালি। তিনি বলেন : যে ব্যক্তি নিজ প্রয়োজনের কথা আমার কাছে প্রকাশ করতে পারে না তার প্রয়োজনের কথা আমার কাছে পৌঁছাও। কেননা, যে ব্যক্তি ঐ লোকের প্রয়োজনের কথা সুলতান (তথা শাসক) কাছে পৌঁছে দেয় যে তা প্রকাশ করতে পারে না, আল্লাহ্ কিয়ামতের দিন তার দুই পাকে সিরাতের ওপর অটল রাখবেন।মহানবী আরো বলেন : দু’টি জিনিস বিরল বিষয় : নির্বোধের কাছ থেকে প্রজ্ঞাময় কথা, তা গ্রহণ করবে। আর প্রজ্ঞাবানের কাছ থেকে অশালীন কথা, তা মার্জনা করবে। রাসূলে পাক (সা.) বলেন : অলসের তিনটি নিদর্শন রয়েছে : আলসেমি করবে যতক্ষণ না অবহেলায় পর্যবসিত হবে, আর অবহেলা করবে যতক্ষণ না হাতছাড়া হবে, আর হাতছাড়া করবে যতক্ষণ না পাপী হবে।নিবেদকমোঃ জাহিদ হুসাইন____________________________-------____________________________আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া বারিক ওয়া সাল্লিম

আল্লা হুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া বারিক ওয়াসাল্লিমমাওলা মোহাম্মদ (সা.)এর দেখানো পথ ও সৌভাগ্যের সিঁড়ি (পর্ব-১৬)মহানবী (সা.) বলেছেন : যখন তাঁর ওপর এ আয়াত অবতীর্ণ হলো : ‘আমরা তাদের বিভিন্ন দলকে যেসব সম্পদ দিয়ে সমৃদ্ধ করেছি তার দিকে তোমার চোখ দুটিকে নিবদ্ধ করো না...’ তখন বললেন : যার ওপর আল্লাহর সান্ত্বনা প্রভাব ফেলে না তার মন দুনিয়ার আফসোসে মরে।আর যে ব্যক্তি অন্য লোকের হাতে দুনিয়ার যা কিছু রয়েছে সেগুলোর দিকে দৃষ্টি দেয় তার দুঃখ দীর্ঘায়িত হয় এবং যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তার জন্য যে রুজি বরাদ্দ রেখেছেন তাতে অসন্তোষ দেখায়, জীবন তার জন্য অনাকাঙ্ক্ষিত হয়ে ওঠে। আর যে ব্যক্তি খাদ্য ও পানীয় ছাড়া তার ক্ষেত্রে আল্লাহর অন্য কোন নেয়ামতকে দেখতে পায় না, সে নির্ঘাত মূর্খ এবং আল্লাহর নেয়ামতকে অস্বীকার করেছে। তার চেষ্টা-প্রচেষ্টা ব্যর্থ আর তার শাস্তি আসন্ন।রাসূলে পাক (সা.) বলেছেন : মুসলমান না হয়ে কেউই বেহেশতে প্রবেশ করবে না। তখন হযরত আবু যর (রা.) বললেন : হে রাসূলুল্লাহ্! ইসলাম কী? তিনি বললেন : ইসলামের পোশাক হলো তাকওয়া বা খোদাভীতি। তার বাইরের আবরণ হলো হেদায়েত। আর তার ভেতরের আবরণ হলো লজ্জা। আর তার মাপকাঠি হলো সংযমশীলতা, আর তার পূর্ণাঙ্গতা হলো দীন বা ধর্ম আর তার ফল হলো সৎ কাজ। আর প্রত্যেক জিনিসের একটি ভিত থাকে। ইসলামের ভিত হলো আমার আহলে বাইত (আ.)-কে ভালোবাসা। মাওলা (সা.) বলেছেন, আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদের মধ্যে কিছু বান্দাকে সৃষ্টি করেছেন মানুষের উপকারের জন্য। তারা পরোপকারে তৃপ্তি লাভ করে এবং দানশীলতাকে মহৎ কাজ বলে মনে করে। আর আল্লাহ্ উত্তম চরিত্রকে পছন্দ করেন। তিনি আরো বলেছেন: নিশ্চয় আল্লাহর কিছু বান্দা রয়েছে মানুষ বিপদ-আপদে যাদের শরণাপন্ন হয়। এরাই হলো তারা যারা কিয়ামতের দিন আল্লাহর আযাব থেকে নিরাপদ থাকবে। মহানবী বলেছেন : নিশ্চয় মুমিন আল্লাহর শিষ্টাচারকে ধারণ করে। যখন আল্লাহ তাকে প্রশস্ততা দান করেন তখন সে প্রশস্ত হস্ত আর যখন তাকে সংকীর্ণতায় রাখেন সেও তখন নিবৃত্ত থাকে। আল্লাহর সর্বশেষ রাসুল বলেছেন : মানুষের জন্য এমন এক সময় আসবে যখন তার ধর্মে কতোটা ক্ষতি হলো এ বিষয়ে সে কোনো পরোয়া করবে না যদি তার দুনিয়া ঠিক থাকে।মহানবী (সা.) আরো বলেন : যে আল্লাহর বান্দাদের সঙ্গে সদাচার করে তাদের তথা বান্দাহদের অন্তরে আল্লাহ ওই ব্যক্তির জন্য ভালোবাসা সৃষ্টি করেন আর যে তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে আল্লাহ তার জন্য বান্দাহদের মধ্যে ঘৃণা জন্ম দেন। আল্লাহ এই স্বভাব দিয়েই মানুষ সৃষ্টি করেছেন। মহানবী আরো বলেছেন: যখন আমার উম্মত পনেরটি কাজ করে তখন তারা বিপদগ্রস্ত হয়: যখন গনিমতকে নিজেদের (একদলের) মধ্যে হাত বদল করবে (এবং তা থেকে সম্পদ জমা করবে), আমানতকে গনিমত হিসেবে গ্রহণ করবে (এবং নিজের অধিকারভুক্ত করে নেবে), যাকাত দেয়াকে ক্ষতি বলে মনে করবে, পুরুষ নিজ স্ত্রীর অনুসারী হবে, তার মায়ের সঙ্গে অবিচার করবে, বন্ধু বা সঙ্গীর উপকার করলেও নিজ পিতার সঙ্গে অন্যায় আচরণ করবে, মসজিদগুলোয় উচ্চস্বরে আওয়াজ করবে, কোনো ব্যক্তিকে তার অনিষ্টতা থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যেই সম্মান করবে, সম্প্রদায়ের নেতা হবে তাদের মধ্যে সবচেয়ে জঘন্য ব্যক্তি, রেশমি কাপড় পরবে, মদপান করবে ও বাইজী বা গায়িকার দল পুষবে এবং উম্মতের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম পূর্ববর্তীদেরকে অভিশম্পাত দেবে। আর এ অবস্থায় তিনটি ঘটনার প্রতীক্ষায় থাকতে হবে : লোহিত ঝড় বা রক্তের ঝড়, দৈহিক রূপান্তর ও সামাজিক নৈরাজ্য। মাওলা মোহাম্মদ (সা.) বলেছেন: দুনিয়া হলো মুমিনের জন্য জেলখানা আর কাফেরের জন্য বেহেশত। তিনি আরো বলেন : মানুষের জন্য এমন এক সময় আসবে যখন মানুষ হবে নেকড়ে। আর যে নেকড়ে না হবে তাকে অন্য নেকড়েরা খেয়ে ফেলবে।রাসূল (সা.) বলেন : শেষ জামানায় সবচেয়ে কম যে জিনিস থাকবে তা হলো বিশ্বস্ত ভাই, আর হালাল অর্থ।মহানবী বলেন : মানুষ সম্পর্কে কুধারণা থেকে দূরে থেকো। মাওলা মোহাম্মদ (সাঃ) সামনেই একদল লোক জনৈক ব্যক্তির ভূয়সী প্রশংসা করলো। এমনকি তারা সমস্ত গুণের কথা তার জন্য উল্লেখ করলো। রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বললেন : লোকটির বুদ্ধিমত্তা কেমন? তারা বলল : হে রাসূলুল্লাহ্! আমরা তাঁর ইবাদত ও সৎ কাজের পেছনে তার অবিশ্রান্ত চেষ্টার কথা আপনাকে জানাচ্ছি আর আপনি তার বুদ্ধিমত্তার কথা জানতে চেয়েছেন? তিনি বললেন : বুদ্ধিহীন লোক তার বোকামির কারণে লম্পটের লাম্পট্যের চেয়েও বড় অপকর্মের কবলে পড়ে আর কাল কিয়ামতে লোকেরা তাদের বুদ্ধিমত্তার অনুপাতে মর্যাদা লাভ করবে এবং নিজ প্রতিপালকের নৈকট্য অর্জন করবে। মহানবী (সা.) বলেছেন : আল্লাহ বুদ্ধিমত্তাকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন। যার মধ্যে সেগুলোর সব কয়টি থাকে তার বুদ্ধিমত্তা পূর্ণতা লাভ করে। আর যার মধ্যে সেগুলোর কোনোটিই নেই তার বুদ্ধিমত্তা নেই। আর সেই তিনটি দিক হল : আল্লাহকে ভালো মতো জানা, আল্লাহকে ভালোমতো আনুগত্য করা আর আল্লাহর কাজে ভালো মতো ধৈর্য ধারণ করা।মহানবী আরো বলেন : নাজরানের জনৈক খ্রিষ্টান মদীনায় আসল, সে ছিল স্পষ্টভাষী, প্রতিভাবান ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন। আরজ করা হলো : হে রাসূলুল্লাহ্! এ খ্রিস্টান লোকটির কি বুদ্ধিমত্তা রয়েছে? রাসূলুল্লাহ্ (সা.) প্রশ্নকারীকে থামিয়ে দিলেন এবং বললেন : চুপ থাকো। প্রকৃত বুদ্ধিমান হলো সেই ব্যক্তি যে আল্লাহকে এক বলে জানে এবং তাঁর আনুগত্য করে।মাওলা মোহাম্মদ (সা.) বলেছেন: জ্ঞান মুমিনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, অধ্যবসায় তার সহযোগী, আর বুদ্ধিমত্তা তার দিশারি, ধৈর্য তার সেনাদলের সেনাপতি এবং মমতা তার পিতা ও পুণ্যকর্ম তার ভাইয়ের মত। আদম (আ.) থেকেই বংশ আর তাকওয়া বা খোদাভীতি হচ্ছে মানুষের (আসল) পরিচয়। আর পৌরুষত্ব হলো সম্পদের পরিশুদ্ধিনিবেদক মোঃ জাহিদ হুসাইনআল্লা হুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম ওয়া বিলা ফাসাল

মাওলা মোহাম্মদ (সাঃ) দেখানো পথ ও সৌভাগ্যের সিঁড়ি (পর্ব-১৭)📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖আল্লা হুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া বারিক ওয়াসাল্লিম📖📖📖📖📖📖মাওলা মোহাম্মদ (সা.) বলেছেন : যার দিকে উপকারের হাত বাড়িয়ে দেয়া হয় তার উচিত এর প্রতিদান দেয়া। আর তা সম্ভব না হলে অন্তত উপকারীর প্রশংসা করতে হবে। আর কেউ যদি তা-ও না করে তা হলে সে নেয়ামতের কুফরি (অকৃতজ্ঞতা) করল। 📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧মহানবী(সা.) বলেন : পরস্পর করমর্দন করো। কারণ, করমর্দন (পারস্পরিক) বিদ্বেষ দূর করে। 📧📧📧📧📧📧📧📧📧তিনি বলেন : মুমিন যে কোনো বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হতে পারে তবে কখনোই মিথ্যা ও বিশ্বাসঘাতকতার বৈশিষ্ট্য তার মধ্যে থাকতে পারে না।তিনি আরো বলেন : নিশ্চয় কিছু কিছু কবিতায় প্রজ্ঞা রয়েছে, বর্ণনান্তরে কিছু কিছু কবিতা হলো প্রজ্ঞা। আর কিছু কিছু বক্তৃতা যাদুর প্রভাবসম্পন্ন।মহানবী আবু যারকে বললেন : ঈমানের কোন্ রশিটি বেশি শক্ত? তিনি বললেন : আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তিনি বললেন : আল্লাহর জন্য বন্ধুত্ব করা, আল্লাহর জন্য শত্রুতা করা আর আল্লাহর জন্য বিদ্বেষ পোষণ করা। 📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧মাওলা মোহাম্মদ (সা.) বলেছেন : মানব জাতির জন্য কল্যাণকর হলো আল্লাহর কাছ থেকে মঙ্গল কামনা করা আর আল্লাহ্ যা কিছু নির্ধারণ করেছেন তাতে সন্তুষ্ট থাকা আর মানব জাতির জন্য দুর্ভাগ্য হলো আল্লাহর কাছ থেকে মঙ্গল কামনা বর্জন করা আর আল্লাহ্ যা কিছু নির্ধারণ করেছেন তাকে মন্দ জ্ঞান করা।মহান আল্লাহর সর্বশেষ রাসূল বলেছেন : অনুতাপ নিজেই তওবা। 📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧দয়াল নবী আরো বলেন : সেই ব্যক্তি কোরআনে ঈমান আনে নি যে হারামকে হালাল গণ্য করে। 📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧এক ব্যক্তি মহানবী (সা.)-কে বলল : আমাকে উপদেশ দিন। তিনি বললেন : তোমার জিহ্বাকে রক্ষা করো। অতঃপর ওই ব্যক্তি বলল : হে রাসূলুল্লাহ্! আমাকে উপদেশ দিন। তিনি বললেন : তোমার জিহ্বাকে রক্ষা করো। পুনরায় সে বলল : হে রাসূলুল্লাহ্! আমাকে উপদেশ দিন। তিনি বললেন : আক্ষেপ তোমার ওপর! লোকেরা তাদের জিহ্বা দ্বারা যা কিছু ফসল তোলে তা ছাড়া অন্য কিছুর মাধ্যমে কি দোযখে নিক্ষিপ্ত হয়? 📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧মাওলা মোহাম্মদ (সাঃ) আরো বলেছেন : ভালো কাজগুলো মন্দ মৃত্যু থেকে রক্ষা করে আর গোপনে দান আল্লাহর ক্রোধকে প্রশমিত করে। আর আত্মীয়তার সম্পর্ককে জোড়া লাগানো আয়ু বাড়িয়ে দেয়। আর প্রত্যেক সদাচারই হলো সাদাকাহ্। আর দুনিয়ার সদাচারী ব্যক্তি পরকালে সদাচার লাভের যোগ্য। আর যে দুনিয়ায় খারাপ কাজ করে সে পরকালে মন্দ লাভ করার যোগ্য। আর সদাচারীরাই সর্বপ্রথম বেহেশতে প্রবেশ করবে। 📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧রাসূলে পাক বলেছেন : নিশ্চয় আল্লাহ্ যখন তাঁর বান্দাকে নেয়ামত দান করেন তখন তার ওপর সে নেয়ামতের প্রভাবকে দেখতে পছন্দ করেন। আর জীবনকে মন্দ করা ও মন্দভাবে জীবন যাপন করাকে ঘৃণা করেন। 📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧মাওলা মোহাম্মদ (সাঃ) আরো বলেছেন : উত্তম প্রশ্ন হলো জ্ঞানের অর্ধেক। আর নমনীয়তা তথা অন্যের সাথে মানিয়ে চলা হলো জীবিকার অর্ধেক।মহানবী (সা.) বলেন : আদম সন্তানরা বৃদ্ধ হয়ে যায়, কিন্তু তার মধ্যে দু’টি জিনিস যৌবন লাভ করে : লোভ ও উচ্চাশা।তিনি আরো বলেন : লজ্জা ঈমানের অঙ্গ। 📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧মাওলা মোহাম্মদ (সা.) বলেছেন : যখন কিয়ামত সংঘটিত হবে তখন কোনো বান্দারই পা সরবে না যতক্ষণ না তাকে চারটি বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হবে : তার আয়ুষ্কাল সম্পর্কে তা কোন্ পথে নিঃশেষ করেছে, তার যৌবন সম্পর্কে তা কোন্ কাজে পরীক্ষা করেছে, তার আয়-উপার্জন সম্পর্কে তা কোন্ পথে অর্জন করেছে এবং কোন্ কাজে ব্যয় করেছে আর আমার আহলে বাইতের প্রতি ভালোবাসা সম্পর্কে। 📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧রাসূলে পাক বলেন : যে ব্যক্তি মানুষের সাথে লেনদেন করে অথচ তাদের সঙ্গে অন্যায় বা অবিচার করে না ; তাদের সাথে কথা বলে তবে মিথ্যাচার করে না ; তাদের সাথে অঙ্গীকার করে তবে তা ভঙ্গ করে না- সে হলো এমন ব্যক্তি যার পৌরুষত্ব পূর্ণতা পেয়েছে এবং তার ন্যায়পরায়ণতা প্রকাশ পেয়েছে ও তার প্রতিদান অপরিহার্য হয়েছে আর তার গীবত করা নিষিদ্ধ হয়েছে। 📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧তিনি আরো বলেন : মুমিনের আপাদমস্তক সম্মানীয় : তাঁর সম্ভ্রম, তাঁর মাল-সম্পদ এবং তাঁর রক্ত।মহানবী (সা.) বলেন : তোমাদের আত্মীয়তার সম্পর্ককে জোড়া লাগাও যদি তা সালাম দেয়ার মাধ্যমেও হয়। 📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧মাওলা মোহাম্মদ (সাঃ) আরো বলেছেন : ঈমান হলো অন্তরে বিশ্বাস করা, জিহ্বা দিয়ে ব্যক্ত করা, আর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মাধ্যমে পালন করা।মহানবী বলেন : প্রাচুর্য বেশি মাল-সম্পদের অধিকারী হওয়ার মধ্যে নেই, বরং তা রয়েছে মনের অমুখাপেক্ষিতার মধ্যে।তিনি বলেন : মন্দ করা থেকে বিরত থাকাই সদ্কাস্বরূপ। 📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧তিনি আরো বলেন : চারটি জিনিস রয়েছে যা আমার প্রত্যেক হৃদয়বান বুদ্ধিমান উম্মতের জন্য আবশ্যক। আরজ করা হলো : হে রাসূলুল্লাহ্! সেগুলো কী কী? তিনি বললেন : জ্ঞান শ্রবণ করা, তা রক্ষা করা, তা প্রচার করা এবং তা মেনে চলা। 📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧রাসূলে পাক (সা.) বলেন : নিশ্চয় কিছু কিছু বক্তৃতা হলো যাদু আর কিছু কিছু জ্ঞান হলো অজ্ঞতা আর কিছু কিছু কথা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧মাওলা মোহাম্মদ (সা.) বলেন : প্রথা হলো দু’টি। একটি প্রথা হলো যা কাজে লাগানো জরুরি এবং আমার পরে তা আমল করা হেদায়েত ও তা বর্জন করা পথভ্রষ্টতার নামান্তর। আরেক প্রথা হলো যা জরুরি নয়, তবে তা কাজে লাগানো মর্যাদাকর এবং তা বর্জন করা গুনাহ নয়। 📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧📧তিনি আরো বলেন : যে ব্যক্তি আল্লাহকে রাগিয়ে শাসককে সন্তুষ্ট করে সে আল্লাহর দীন বা ধর্ম থেকে বেরিয়ে গেছেনিবেদক 📧📧📧📖📖📖📚📚📚📖📖📖📧📧📧♥️♥️♥️_____________________________________♥️♥️♥️মোঃ জাহিদ হুসাইনআল্লা হুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম

আল্লা হুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুমমাওলা মোহাম্মদ(সা.)এর দেখানো পথ ও সৌভাগ্যের সিঁড়ি (পর্ব-১৫)মাওলা মোহাম্মদ (সা.) বলেছেন : কোনো ব্যক্তি যদি সকাল ও সন্ধ্যা এভাবে অতিবাহিত করে যে পরকালই তার সবচেয়ে বড় উদ্দেশ্য থাকে, তাহলে আল্লাহ্ তার অন্তরকে অমুখাপেক্ষী করে দেন এবং তার কাজকে সহজ করে দেন। আর দুনিয়ায় সব রিজিক লাভ না করা পর্যন্ত তার মৃত্যু হয় না। আর যে ব্যক্তির সকাল ও সন্ধ্যা অতিবাহিত হয় এভাবে যে দুনিয়া অর্জনই হয় তার সবচেয়ে বড় উদ্দেশ্য আল্লাহ্ তখন তার চোখের সামনে অভাব রাখেন, আর তার কাজকে বিশৃঙ্খল করে দেন। আর দুনিয়া থেকে সে কিছুই লাভ করে না শুধু তার জন্য নির্ধারিত অংশটুকু ছাড়া। রাসূলে পাক বলেন : আমি কি তোমাদেরকে সংবাদ দেব না যে, তোমাদের মধ্যে কোন্ ব্যক্তির চরিত্রের সঙ্গে আমার চরিত্রের বেশি মিল রয়েছে? সবাই বলল : অবশ্যই, হে রাসূলুল্লাহ্! তখন তিনি বললেন : তোমাদের মধ্যে যে অন্যদের চেয়ে বেশি সচ্চরিত্রবান এবং বেশি শৌর্যবান ও নিজ আত্মীয়দের সঙ্গে বেশি সদাচারী, আর যারা সন্তুষ্ট ও ক্রুদ্ধ উভয় অবস্থায় নিজের পক্ষ থেকে অন্যদের চেয়ে বেশি মাত্রায় ন্যায়বিচার মেনে চলে। মহানবী বলেছেন : যে ব্যক্তি খায় এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে নীরব তথা অকৃতজ্ঞ রোজাদারের চেয়ে উত্তম। রাসূলে পাক বলেছেন : আল্লাহর জন্য মুমিনের সাথে মুমিনের বন্ধুত্ব হলো ঈমানের একটি বড় শাখা। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য ভালোবাসে ও আল্লাহর জন্য ঘৃণা করে আর আল্লাহর জন্য দান করে এবং আল্লাহর জন্যই দান থেকে বিরত থাকে সে হলো নির্বাচিত বান্দাদের মধ্যে একজন। তিনি আরো বলেছেন : আল্লাহর বান্দাদের মধ্য থেকে সেই ব্যক্তিই আল্লাহর বেশি প্রিয় যে তাঁর বান্দাদের জন্য অন্যদের চেয়ে বেশি উপকারী আর বেশি মাত্রায় ন্যায় প্রতিষ্ঠাকারী এবং সদাচার ও সৎকর্মই যার পছন্দনীয় বিষয়। মহানবী আরো বলেছেন : যে ব্যক্তি নমনীয়তা থেকে বঞ্চিত সে সকল কল্যাণ থেকে বঞ্চিত।মহানবী বলেছেন : মুমিন হলো সদাচারী এবং হাসিখুশি আর মুনাফিক হলো অভদ্র ও রুক্ষ। আল্লাহর সর্বশেষ্ঠ নবী বলেছেন: উপহার তিন ধরনের : উপহারের বিনিময়ে উপহার, কৃত্রিম উপহার এবং আল্লাহর জন্য উপহার।তিনি আরো বলেছেন : ধন্য সেই ব্যক্তি যে বর্তমান ভোগ-বিলাসকে পরিহার করে এমন প্রতিশ্রুতির আশায় যা দেখে নি। এক ব্যক্তি মহানবীকে তাঁর উম্মতের জামায়াতের অর্থ কী তথা ‘সেই দল, আল্লাহর সাহায্য যাদের সাথে রয়েছে, তারা কারা?’- এই প্রশ্ন করলে তার উত্তরে তিনি বলেন: আমার উম্মতের জামায়াত হলো হকপন্থীরা, হোক তারা সংখ্যায় মুষ্টিমেয়। মাওলা মোহাম্মদ (সা.) আরো বলেছেন : তোমাদের কেমন লাগবে যখন তোমাদের নারীরা নষ্টা হবে, যুবকরা অনাচারী হবে, তোমরা সৎ কাজে আদেশ করবে না এবং অসৎ কাজে নিষেধ করবে না? বলা হলো : হে রাসূলুল্লাহ্! এমন কি হবে? বললেন : হ্যাঁ, এর চেয়েও খারাপ হবে। তোমাদের কেমন লাগবে যখন মন্দের দিকে আদেশ করা হবে আর ভালো থেকে ফিরিয়ে আনা হবে? আরজ করা হলো : হে রাসূলুল্লাহ্! এমন কি হবে? বললেন : হ্যাঁ, এর চেয়েও খারাপ হবে। তোমাদের কেমন লাগবে যখন তোমরা ভালোকে মন্দ আর মন্দকে ভালো বলে বিবেচনা করবে? তিনি আরো বলেছেন, আমার উম্মত থেকে নয়টি ক্ষেত্রে শাস্তি তুলে নেয়া হয়েছে : ভুল-প্রসূত কর্ম, বিস্মৃতিজনিত কর্ম, এমন বিষয় যা তার ওপর জোর কোরে চাপিয়ে দেয়া হয়, যে বিষয়ে সে জ্ঞান রাখে না, যার সামর্থ্য তার নেই, যে বিষয়ে সে নিরুপায় হয়ে পড়ে, হিংসা যা অপ্রকাশিত রয়েছে ও বাস্তব রূপ লাভ করে নি, অশুভ ভাগ্য পরীক্ষা, আর বিশ্বের স্রস্টা ও সৃষ্টির বিষয়ে প্ররোচনামূলক চিন্তা যতক্ষণ না সেটাকে মুখে ও ভাষায় প্রকাশ করে। মহানবী (সা.) আরো বলেছেন: যখন আমার উম্মতের মধ্যে দুই শ্রেণী ভালো হয় তখন আমার উম্মত ভালো থাকে, আর যদি তারা খারাপ হয় তা হলে আমার উম্মতও খারাপ থাকে। আরজ করা হলো : হে রাসূলুল্লাহ্! তারা কারা? বললেন : ফকিহ বা ইসলামী আইনবিদ আর শাসকরা। মহানবী বলেছেন : বুদ্ধিমত্তায় পূর্ণতম মানুষ হলো তারা, যারা আল্লাহকে বেশি ভয় করে চলে এবং তাঁর আনুগত্য করে। আর বুদ্ধিমত্তায় ত্রুটিপূর্ণতম মানুষ হলো তারা যারা শাসককে বেশি ভয় করে চলে এবং তার আনুগত্য করে।তিনি আরো বলেছেন, তিন শ্রেণীর ব্যক্তির সাথে ওঠাবসা অন্তরকে মেরে ফেলে : বখাটেদের সাথে চলাফেরা, নারীদের সাথে কথা বলা, আর বিত্তবানদের সাথে ঘোরাফেরা করা।মাওলা মোহাম্মদ (সা.) বলেন : যখন আল্লাহ্ কোনো উম্মতের ওপর ক্রুদ্ধ হন এবং তাদের ওপর শাস্তি নাজিল করেন, তখন তাদের দ্রব্যমূল্য বেড়ে যায়, তাদের আয়ু কমে যায়, তাদের ব্যবসায় লাভ হয় না, তাদের ফলমূল ভালো হয় না, তাদের নদী-নালাগুলো পানিতে পূর্ণ থাকে না, তাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষিত হয় না, এবং তাদের দুষ্টরা তাদের ওপর কর্তৃত্বশীল হয়।মহানবী (সা.) আরো বলেছেন : যখন আমার পরে ব্যভিচার বেড়ে যাবে তখন আকস্মিক মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়ে যাবে। আর যখন ওজনে কম দেয়া হবে তখন আল্লাহ্ তাদের দুর্ভিক্ষ ও অনটনের শিকার করবেন, আর যখন যাকাত দেয়া হবে না, তখন মাটি চাষাবাদ, ফসলাদি এবং খনিজ থেকে কল্যাণ দানে কার্পণ্য করবে, আর যখন বিচারে অন্যায় রায় প্রদান করবে তখন তারা অত্যাচার ও শত্রুতায় পরস্পরের সহযোগী হবে, আর যখন চুক্তিভঙ্গ করবে তখন আল্লাহ্ শত্রুদেরকে তাদের ওপর কর্তৃত্বশীল করবেন। আর যখন আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করবে তখন মাল-সম্পদ দুষ্টদের হাতে পড়বে। আর যখন সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করার দায়িত্ব পালন করবে না এবং আমার আহলে বাইতের মধ্য থেকে পুণ্যবানদের অনুসরণ করবে না তখন আল্লাহ্ তাদের থেকে দুষ্টদেরকে তাদের ওপর ক্ষমতাসীন করে দেবেন। তখন তাদের মধ্যে সৎ লোকেরা দোয়া করলেও তাতে জবাব বা সাড়া পাবে নানিবেদক মোঃ জাহিদ হুসাইন

আল্লা হুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুমমাওলা মোহাম্মদ (সা.)'এর দেখানো পথ ও সৌভাগ্যের সিঁড়ি (পর্ব-১২)মাওলা (সা.) বলেছেন : নিশ্চয় বড় বিপদের জন্য রয়েছে বড় পুরস্কার। তাই যখন আল্লাহ্ কোনো বান্দাকে ভালোবাসেন তখন তাকে বিপদগ্রস্ত করেন। এ অবস্থায় যে ব্যক্তি অন্তর থেকে খুশি থাকে তার জন্য আল্লাহর কাছে রয়েছে সন্তুষ্টি আর যে রেগে যায় তার জন্য রয়েছে ক্রোধ। তিনি আরো বলেছেন : আল্লাহর সাথে কোনো কিছুকে শরিক বা শির্ক করো না, এমনকি যদি আগুনেও পোড় এবং শাস্তির মুখোমুখি হও। ফলে তোমার অন্তর ঈমানে অবিচল হবে। আর তোমার বাবামায়ের আনুগত্য করো এবং তাদের সঙ্গে সদাচার করো, তাদের জীবদ্দশায় এবং মৃত্যুর পর। আর ফরয নামাযকে ইচ্ছাকৃতভাবে ত্যাগ করো না। কারণ, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে একটি ফরয নামাযকে ত্যাগ করে সে আল্লাহর আশ্রয় থেকে বিতাড়িত। আর মদ ও অন্য কোনো নেশা-দ্রব্য পান করো না, কারণ, এ দু’টি হলো সকল অনিষ্টের চাবিকাঠি।বনি তামীমের জনৈক ব্যক্তি যাকে আবু উমাইয়্যা নামে ডাকা হতো, হুজুর (সা.)-এর কাছে এসে বলল : হে মুহাম্মদ! আপনি মানুষকে কিসের দিকে আহ্বান জানান? উত্তরে রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বলেন : “আমি আল্লাহর দিকে আহ্বান জানাই অন্তর্দৃষ্টিসহ- আমি ও যারা আমাকে অনুসরণ করেছে তারাও।” (ইউসুফ:১০৮) আমি তাঁর দিকেই আহ্বান জানাই যিনি তোমার থেকে ক্ষতিকে দূর করে দেন যখন তা তোমাকে স্পর্শ করে এবং তুমি তাঁকে ডাক। আর বিপদগ্রস্ত অবস্থায় তুমি যদি তাঁকে ডাক, তা হলে তোমাকে সাহায্য করেন। আর নিঃস্ব অবস্থায় তুমি যদি তাঁর কাছে সাহায্য চাও, তা হলে তোমাকে অভাবমুক্ত করে দেবেন।এরপর লোকটি বলল : হে মুহাম্মদ! আমাকে উপদেশ দিন। তখন তিনি বললেন : ক্রুদ্ধ হবে না। সে বলল : আরো কিছু বলুন। তিনি বললেন: মানুষের জন্য সেটাই পছন্দ করো, যা তোমার নিজের জন্য পছন্দ করো। সে বলল : আরো কিছু বলুন। তিনি বললেন : মানুষকে গালমন্দ করো না। এতে তারা তোমার শত্রুতে পরিণত হবে। সে বলল : আরো কিছু বলুন। তিনি বললেন : উপযুক্ত পাত্রদের উপকার করতে কার্পণ্য কোরো না।সেই ব্যক্তি মাওলা (সা.)-কে আরো বললেন : আরো কিছু বলুন। তিনি বললেন : মানুষকে ভালোবাসবে, তা হলে তারাও তোমাকে ভালোবাসবে। আর তোমার ভাইয়ের সাথে প্রসন্ন মুখে সাক্ষাত করো। আর অসদাচারণ করো না, তা হলে তা তোমাকে ইহকাল ও পরকাল (উভয় জগতের কল্যাণ) থেকে বঞ্চিত করবে। আর পায়ের গোঁছার মাঝখান পর্যন্ত লম্বা জামা পড়বে। আর নিজের জামা ও পায়জামাকে এত দীর্ঘ করো না যে তা মাটিতে ঘেঁষে যায়। কারণ, এ কাজ হলো অহংকারের পরিচায়ক। আর আল্লাহ্ অহংকারীকে পছন্দ করেন না। তিনি আরো বলেন : নিশ্চয় আল্লাহ্ ঘৃণা করেন বৃদ্ধ ব্যভিচারীকে, বিত্তবান অত্যাচারীকে, অহংকারী গরীবকে এবং নাছোড়বান্দা ভিক্ষুককে। আর নিষ্ফল করেন প্রচার করে বেড়ানো দানশীলদের পুরস্কারকে আর ঘৃণা করেন এমন ফুর্তিবাজকে যে বেপরোয়া ও মিথ্যাচারী।তিনি আরো বলেন : যে ব্যক্তি নিজেকে নিঃস্ব হিসাবে প্রকাশ করে সে অভাবগ্রস্ত হয়।মাওলা (সা.) বলেছেন : মানুষের সাথে মানিয়ে চলা ঈমানের অর্ধাংশ। আর তাদের সঙ্গে নরম ব্যবহার হলো সুখী জীবনের অর্ধাংশ।তিনি বলেন : আল্লাহর প্রতি ঈমানের পর সবচেয়ে বড় বুদ্ধিমত্তার কাজ হলো মানুষের সাথে মানিয়ে চলা যতক্ষণ না কোনো অধিকার ত্যাগ করা হয়। আর পুরুষের জন্য কল্যাণকর হলো তার দাড়ি হালকা রাখা। তিনি বলেন : আমার জন্য মূর্তি পূজা নিষিদ্ধ হওয়ার পর সবচেয়ে কড়াকড়িভাবে যেটা নিষেধ করা হয়েছে তা হল মানুষের সঙ্গে বিবাদ করা।মহানবী আরো বলেন : যে ব্যক্তি মুসলমানকে ফাঁকি দেয় কিংবা তার ক্ষতি করে অথবা তার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়।মহানবী (সা.) মসজিদুল খিফ-এ দাঁড়িয়ে বললেন : আল্লাহ্ প্রফুল্ল করেন সেই বান্দাকে যে আমার কথা শুনে তা স্মৃতিতে ধরে রাখে এবং যে শোনে নি তার কাছে পৌঁছে দেয়। কত জ্ঞান প্রচারকারীর চেয়ে ঐ ব্যক্তি বেশি ব্যুৎপত্তিসম্পন্ন যার কাছে সে জ্ঞানকে পৌঁছায়। কত জ্ঞানের বাহক রয়েছে যে আদৌ জ্ঞানী নয়।মহানবী (সা.) আরো বলেছেন: তিনটি বিষয়ে কোনো মুসলমানের অন্তরে বিদ্বেষ থাকতে পারে না : আল্লাহর জন্য কাজে একনিষ্ঠতা, মুসলিম নেতৃবৃন্দের জন্য কল্যাণকামিতা এবং তাদের ঐক্যের অপরিহার্যতা। সব মুমিনই ভাই ভাই। তাদের রক্ত (মর্যাদার দিক থেকে) পরস্পর সমান। অন্যদের বিপরীতে তারা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকবে আর তাদের অঙ্গীকার পালনের প্রচেষ্টা চালাবে এমনকি যদি তাদের নিম্নশ্রেণীর কোন লোকও (তাদের ভিন্ন অন্যের সাথে) কোন বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়। তিনি বলেন : আল্লাহ্ ঐ বান্দাকে অনুগ্রহ করেন যে হয় উত্তম কথা বলে এবং লাভবান হয়, অথবা মন্দ থেকে নীরব থাকে, ফলে নিরাপদ থাকে।মাওলা(সা.) বলেন : তিনটি জিনিস যার মাঝে থাকে তার ঈমানের বৈশিষ্ট্য পূর্ণাঙ্গ হয় : যার সন্তুষ্টি তাকে বাতিল বা মিথ্যার দিকে নেয় না, আর যখন রাগ হয় তখন তার রাগ তাকে সত্য ও ন্যায় থেকে বিচ্যুত করে না, আর যখন ক্ষমতা পায় তখন যা তার প্রাপ্য নয় তার দিকে হাত বাড়ায় না।মাওলা (সা.) আরো বলেন : নামাযের অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত করা নামাযের বাইরে কুরআন তিলাওয়াতের চেয়ে উত্তম। (প্রথম দিকের মুসলমানদের মধ্যে এ পন্থা চালু ছিল যে, নফল নামাযের মধ্যে কোরআন পাঠ ও হিফজ করার অনুশীলন করত। নফলের পেছনে হিকমত ছিল এটাই। আর এ কারণে তা ফোরাদা বা একাকী পড়া আবশ্যক যাতে মনোসংযোগ বজায় থাকে।) আল্লাহর যিকর সাদাকার চেয়ে উত্তম। আর সাদাকাহ্ রোযার চেয়ে উত্তম। আর রোযা হলো ভালো কাজ। এরপর বলেন : কাজ ছাড়া কোনো কথা নেই। আর কোনো কথা ও কাজ নেই নিয়ত ছাড়া। আর কোনো কথা, কাজ এবং নিয়তই নেই সঠিক পন্থা তথা ধর্মীয় বিধান-সম্মত হওয়া ছাড়া।মহানবী (সা.) আরে বলেছেন : ধীরতা আল্লাহর থেকে আর তাড়াহুড়া শয়তানের থেকে।নিবেদক মোঃ জাহিদ হুসাইনপ্রচারে মোঃ শামসীর হায়দার

আল্লা হুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুমমাওলা মোহাম্মদ (সা.)'এর দেখানো পথ ও সৌভাগ্যের সিঁড়ি (পর্ব-১৩) মাওলা মোহাম্মদ (সা.) বলেছেন : নিশ্চয় যে ব্যক্তি জ্ঞান শিক্ষা করে নির্বোধদের সাথে বিতর্ক করার জন্য কিংবা জ্ঞানীদের সাথে গর্ব করার জন্য কিংবা জনগণকে তার দিকে আকৃষ্ট করার জন্য যাতে তারা তাকে বড় বলে মানে, তার স্থান হবে জাহান্নামে। কারণ, আল্লাহ্ ও তার (জ্ঞানের প্রকৃত) অধিকারীদের ছাড়া আর কারো জন্য নেতৃত্ব শোভা পায় না।আর যে ব্যক্তি নিজেকে এমন পদে বসায় যা আল্লাহর পক্ষ থেকে তার জন্য নির্ধারিত স্থান থেকে ভিন্ন, আল্লাহ্ তার ওপর ক্রুদ্ধ হন। আর যে ব্যক্তি জনগণকে নিজের দিকে আহ্বান করে এবং বলে আমি তোমাদের সর্দার, অথচ সে সেরূপ নয়, আল্লাহ্ তার দিকে তাকান না যতক্ষণ না সে তার কথা থেকে ফিরে আসে এবং আল্লাহর দরবারে নিজের ওই দাবি থেকে তওবা করে।তিনি আরো বলেন : তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি আমার থেকে সবচেয়ে দূরে যে কৃপণ, কটুভাষী ও গালমন্দকারী। মহানবী (সা.) বলেন : দুর্ব্যবহার হল অনিষ্টতা। মাওলা (সা.) বলেছেন : যখন কোনো লোককে দেখবে যে, নিজে কি বলে কিংবা তার সম্পর্কে কি বলা হয় সে ব্যাপারে পরোয়া করে না নিশ্চয় সে জারজ, না হয় শয়তান। তিনি বলেন : আল্লাহ্ বেহেশত নিষিদ্ধ করেছেন প্রত্যেক কটুভাষী গালমন্দকারী ও লজ্জাহীন লোকের জন্য যে পরোয়াই করে না যে, কি বলছে কিংবা তার সম্পর্কে কি বলা হচ্ছে। জেনে রাখ, যদি তার বংশ তল্লাশি করো তা হলে দেখতে পাবে যে, হয় সে জারজ, না হয় শয়তানের ঔরস থেকে। বলা হলো : হে রাসূলুল্লাহ্! মানুষের মধ্যে কি শয়তান রয়েছে? বললেন : হ্যাঁ, তোমরা কি পড়ো না, আল্লাহর বাণী, ‘আর অংশীদার হও তাদের মাল-সম্পদে আর সন্তান-সন্ততিতে।’ তিনি আরো বলেন : যাকে তুমি উপকার করবে সে তোমার উপকার করবে। আর যে ব্যক্তি সময়ের অপ্রত্যাশিত দিনগুলোর জন্য ধৈর্যের প্রস্তুতি গ্রহণ করবে না সে ব্যর্থ হবে। আর যে মানুষের ভুল-ত্রুটি ধরে তারাও তার ভুল-ত্রুটি ধরবে। আর যতই মানুষকে ছাড় দিক না কেনো তারা তাকে ছাড় দিবে না। বলা হলো : হে রাসূলুল্লাহ্! তা হলে আমরা কী করব? তিনি বললেন : তোমরা তোমাদের সম্মান বা সম্পদ থেকে তাদেরকে ধার তথা তাদের জন্য শ্রম ও অর্থ দাও তোমাদের অভাবের দিনের জন্য।মহানবী (সা.) বলেন : আমি কি তোমাদেরকে ইহকাল ও পরকালের সবচেয়ে উত্তম চরিত্রের নির্দেশনা দান করব না? তার সাথে সম্পর্ক জোড়া লাগাও যে তোমার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করেছে, আর দান করো তাকে যে তোমার সঙ্গে কৃপণতা করেছে, আর ক্ষমা করো তাকে যে তোমার ওপর অত্যাচার করেছে। একদিন মাওলা (সা.) বের হলেন যখন একদল লোক একটি পাথরকে নিক্ষেপ করছিল। তখন তিনি বললেন : তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যক্তি হলো সে যে রাগের সময় আত্মসংবরণ করতে পারে আর সবচেয়ে বড় ভারোত্তলনকারী হলো সে যে (প্রতিশোধ গ্রহণের) ক্ষমতা থাকার পরও ক্ষমা প্রদর্শন করে।তিনি বলেছেন : তোমাদের মধ্যে ঈমানের দিক দিয়ে সেই সর্বোত্তম যে সবচেয়ে বেশি সচ্চরিত্রবান। মহানবী বলেন : সচ্চরিত্র তার অধিকারীকে সারাদিন রোযা রাখা ও সারারাত জেগে ইবাদত করা ব্যক্তির সমান মর্যাদায় পৌঁছে দেয়। তখন বলা হলো : বান্দার প্রতি সবচেয়ে উত্তম দান কী? তিনি বললেন : উত্তম চরিত্র। তিনি বলেন : সচ্চরিত্র বন্ধুত্বকে মজবুত করে।তিনি আরো বলেছেন : হাসিখুশি মুখ শত্রুতাকে দূর করে দেয়। আল্লাহর সর্বশেষ রাসূল (সা.) বলেন : তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে সচ্চরিত্রবান ব্যক্তিরাই হলো সর্বোত্তম যারা (অপরের সাথে সহজেই) সম্পর্ক গড়ে এবং (তাদের) সম্প্রীতির আহ্বানকে গ্রহণ করে। মহানবী বলেন : হাতগুলো তিন ধরনের : প্রার্থীর, দানশীলের আর কৃপণের। আর সর্বোৎকৃষ্ট হাত হলো দানশীল হাত।তিনি বলেন : লজ্জা দু’টি : বুদ্ধিমত্তার লজ্জা আর বোকামি-প্রসূত লজ্জা। বুদ্ধিমত্তার লজ্জা জ্ঞানের পরিচয় বহন করে আর বোকামি-প্রসূত লজ্জা মূর্খতার পরিচায়ক।তিনি এ প্রসঙ্গে আরো বলেন : যে ব্যক্তি লজ্জার ঢাকনাটি দূরে ফেলে দেয় তার গীবতে (বা পরনিন্দা) কোনো দোষ নেই।মহানবী বলেন : যে ব্যক্তি আল্লাহতে এবং পরকালে বিশ্বাস রাখে সে যেন কৃত অঙ্গীকার রক্ষা করে।মাওলা (সা.) বলেছেন : আমানতদারী (বিশ্বস্ততা) রুজি আনে আর বিশ্বাসঘাতকতা আনে অভাব ও দরিদ্রতা।তিনি বলেন : সন্তান যখন তার বাবা মায়ের দিকে মমতাপূর্ণ দৃষ্টি দেয় তা হয় ইবাদতের সমতুল্য। তিনি বলেন : কঠিন বিপদ হলো যখন কোনো লোককে হাত বেঁধে সামনে আনা হয় এবং তার গর্দান নেয়া হয়। আর বন্দী যতক্ষণ শত্রুর হাতে আটক থাকে এবং কোনো পুরুষ তার স্ত্রীর পেটের ওপর আরেক জন পুরুষকে দেখতে পায়। রাসূল (সা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ.) তাঁর সহচরদের বলেন : নিজেদেরকে আল্লাহর বন্ধু করো এবং তাঁর নৈকট্য লাভ করো। তারা বলল : হে রুহুল্লাহ্! কিভাবে আমরা নিজেদেরকে আল্লাহর বন্ধু করব? তিনি বললেন : অবাধ্য ও পাপাচারী লোকদেরকে ঘৃণা আর তাদের ক্রোধের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টিকে অন্বেষণ করো। তারা বলল : হে রুহুল্লাহ্! তা হলে কাদের সাথে আমরা ওঠাবসা করব? তিনি বললেন : তার সাথে যাকে দেখলে তোমার মনে আল্লাহর কথা স্মরণ হয়, আর যার কথা তোমার জ্ঞানকে বাড়িয়ে দেয়, আর যার কাজ তোমাকে পরকালের প্রতি উৎসাহিত করে। রাসূল (সা.) থেকে আরো বর্ণিত হয়েছে, মহান আল্লাহ্ বলেছেন : 'এটা তথা ইসলাম হলো সেই ধর্ম যা আমি নিজের জন্য পছন্দ করেছি। আর উদারতা ও সচ্চরিত্র ছাড়া তা উপযুক্ত বলে বিবেচিত হয় না। কাজেই তোমরা যতক্ষণ ইসলামের সহচর থাকবে এবং এ দু’টির মাধ্যমে তার মর্যাদা রক্ষা করবে।নিবেদক মোঃ জাহিদ হুসাইন

আল্লা হুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুমমাওলা মোহাম্মদ (সা.)'এর দেখানো পথ ও সৌভাগ্যের সিঁড়ি (পর্ব-১৪)মহান আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল ও নবী (সা.) বলেছেন : জ্ঞান হলো মুমিনের অন্তরঙ্গ সঙ্গী, আর অধ্যবসায় হলো তার সহযোগী, আর বুদ্ধিমত্তা হলো তার পথনির্দেশক, আর ধৈর্য হলো তার সৈন্যদলের সেনাপতি এবং মমতা তার পিতা ও পুণ্যকর্ম তার ভাইয়ের ন্যায়। আদম (আ.) থেকেই বংশ আর তাকওয়া (খোদাভীতি) দ্বারা পরিচয়। আর পৌরুষত্ব হলো সম্পদের পরিশুদ্ধি। তিনি বলেন : এক ব্যক্তি পান করার জন্য দুধ ও মধু আনল। তখন তিনি (সা.) বললেন : দু’টি পানীয় রয়েছে। এ দুটি থেকে একটিই যথেষ্ট। আমি একটা পান করব না, নিষিদ্ধও করব না। কিন্তু আল্লাহর জন্য বিনয়ী হব। কারণ, যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য বিনয়ী হয়, আল্লাহ্ তাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরেন। আর যে অহংকার করে, আল্লাহ্ তাকে অপদস্থ করেন। আর যে ব্যক্তি জীবনে মধ্যপন্থা অবলম্বন করে, আল্লাহ্ তাকে রুজি দান করেন। আর যে ব্যক্তি বাড়াবাড়ি করে আল্লাহ্ তাকে বঞ্চিত করেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে বেশি বেশি জিকর বা স্মরণ করে আল্লাহ্ তাকে পুরস্কার দান করেন।মহানবী (সা.) বলেন : কাল কিয়ামতের মাঠে তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি আমার বেশি কাছে থাকবে যে তোমাদের মধ্যে বেশি সত্যবাদী, বেশি আমানত রক্ষাকারী, বেশি বিশ্বস্ত, বেশি সচ্চরিত্রবান, আর মানুষের বেশি কাছে।তিনি বলেন : যখন লম্পট প্রশংসিত হয় তখন আরশ কেঁপে ওঠে আর মহাপ্রতিপালক ক্রুদ্ধ হন। এক ব্যক্তি রাসূল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করল : হায্ম বা পরিণামদর্শিতা কী? তিনি উত্তরে বললেন : কোনো বিশেষজ্ঞ ব্যক্তির সাথে পরামর্শ করবে ও এরপর তা মেনে চলবে। একদিন মহানবী (সা.) বললেন : হে লোকেরা তোমাদের মধ্যে আঁটকুড়ে কে? তারা বলল : যে কোনো সন্তান না রেখে মারা যায়। তিনি বললেন : প্রকৃত আঁটকুড়ে হল সেই লোক যে মারা যায়, অথচ এমন সন্তান রেখে যায় নি যে আল্লাহর উদ্দেশ্যে তার জন্য সৎ কাজ করবে। যদিও মৃত্যুর পরে তার অনেক সন্তান-সন্ততিও থাকে। এরপর বললেন : তোমাদের মধ্যে নিঃস্ব কে? তারা বলল : যার কোনো সম্পদ নেই। তিনি বললেন : প্রকৃত অর্থে নিঃস্ব হলো সে যে নিজ মাল-সম্পদ থেকে কোনো কিছুই আগে পাঠায়নি যা আল্লাহর কাছে গচ্ছিত থাকবে। যদিও তার পরে অনেক মাল-সম্পদই থেকে যায়।এরপর মোহাম্মদ (সা.) বললেন : তোমাদের মধ্যে বীর কে? সবাই বলল : যে ব্যক্তি কঠোর এবং শক্তিশালী, কখনো সে ধরাশায়ী হয় না। তিনি বললেন : প্রকৃত অর্থে বীর হলো সেই ব্যক্তি যার মনে শয়তান মুষ্টাঘাত মারে এবং প্রচণ্ড ক্রুদ্ধ হয় ও তার রক্ত টগবগ করে ফুটতে থাকে। এরপর সে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজ শৌর্য দিয়ে রাগ দমন করে। তিনি বলেন : যে ব্যক্তি না জেনে কাজ করে সে যতটা না ভালো করে তার চেয়ে বেশি খারাপ করে।তিনি আরো বলেন : মসজিদের নামাযের অপেক্ষায় বসে থাকা ইবাদত যতক্ষণ না কোনো মন্দ করে। বলা হলো : হে রাসূলুল্লাহ্! কি মন্দ করে? তিনি বললেন : পরনিন্দা। রাসূল (সা.) বলেন : রোজাদার ব্যক্তি ইবাদতের মধ্যে থাকে, এমনকি যদি নিজ বিছানায় ঘুমিয়েও থাকে। যতক্ষণ না সে কোনো মুসলমানের গিবত করে।মোহাম্মদ (সা.) বলেছেন: যে অশ্লীলতাকে প্রকাশ করে সে তা সম্পাদনকারীর সমতুল্য, আর যে কোনো মুমিনকে কোনো দোষে দোষারোপ করে সে ততক্ষণ মৃত্যুবরণ করে না যতক্ষণ সে নিজেও সেই দোষের কাজ করে।তিনি বলেন : তিন ধরনের লোক রয়েছে যাদেরকে তুমি অত্যাচার না করলেও তারা তোমাকে অত্যাচার করবে। নিকৃষ্টরা, তোমার স্ত্রী আর তোমার ভৃত্য। ( উল্লেখ্য, এখানে উদ্দেশ্য হলো এ তিন দল তাদের প্রাপ্য নিয়ে সন্তুষ্ট হয় না। তাই তাদের বাড়াবাড়ির প্রবণতা থাকে। কিন্তু এর অর্থ এটা নয় যে, তাদের ওপর অত্যাচার জায়েজ। বরং তাদের সাথে মানিয়ে চলতে হবে এবং বৈধভাবে তাদের প্রতি কঠোরতা প্রদর্শন করতে হবে যেন তারা মানুষকে পেয়ে না বসে।) মহানবী (সা.) বলেন, হতভাগ্যের লক্ষণ চারটি : চোখের শুষ্কতা বা ক্রন্দনহীনতা, অন্তরের কাঠিন্য, দুনিয়া কামনায় অতিশয় লোভ আর পাপকর্মে পীড়াপীড়ি।এক ব্যক্তি রাসূল (সা.)-কে বলল : আমাকে উপদেশ দিন। তখন তিনি বললেন : রাগ করবে না। পুনরায় সে আবেদন জানালো। তিনি বললেন : রাগ করবে না। এরপর বললেন : বীরত্ব এটা নয় যে, প্রতিপক্ষকে ধরাশায়ী করবে। নিশ্চয়ই বীরত্ব হলো রাগের সময় ধৈর্য ধরতে পারা। মাওলা মোহাম্মদ (সা.) বলেন : সেই মুমিনই ঈমানে পূর্ণাঙ্গতর যে চরিত্রে বেশি উন্নত বা উত্তম।তিনি বলেন : কোনো বিষয়ে নমনীয়তা মানুষের জন্য অলংকার হয়ে দাঁড়ায় আর কোনো বিষয়ে বেশি কঠোরতা তার জন্য অসুন্দর হয়ে দাঁড়ায়। তিনি আরো বলেছেন : পোশাক বিত্তের প্রকাশ করে আর ভৃত্যের প্রতি দয়া শত্রুকে দমন করে। আমি আদিষ্ট হয়েছি মানুষের সাথে মানিয়ে চলতে যেমনভাবে আদিষ্ট হয়েছি রেসালাত প্রচারে। তোমার প্রত্যেক কাজে গোপনীয়তার সাহায্য নাও। কারণ, প্রত্যেক নেয়ামতের অধিকারীকে হিংসা গ্রাস করে।তিনি বলেন : ঈমানের দু’টি ভাগ। অর্ধেক হলো ধৈর্যের মধ্যে আর অর্ধেক কৃতজ্ঞতার মধ্যে।রাসূলে পাক (সা.) আরো বলেন : অঙ্গীকার মেনে চলা ঈমানের অঙ্গ ও বাজারে খাওয়া হীন কাজ।মাওলা মোহাম্মদ (সা.) বলেন : সবই প্রার্থনা করো আল্লাহর দরবারে। সেগুলোকে তার মাধ্যমগুলোর মাধ্যমে কায়মনে আল্লাহর কাছ থেকে কামনা করো। এরপর আল্লাহ সেসব থেকে যা কিছু তোমাদেরকে দান করেন, সেগুলোকে ধৈর্যসহ গ্রহণ করো। তিনি আরো বলেছেন : মুমিনের জন্য বিস্ময় যে, আল্লাহ্ তার জন্য কোনো কিছুই ধার্য করেন না যদি না তা তার জন্য কল্যাণকর হয়, চাই সে খুশী হোক আর চাই অপছন্দ করুক। যদি তাকে বিপদ দেন তা হলে সেটা তার পাপের খণ্ডন আর যদি তাকে কিছু দান করেন এবং সম্মানিত করেন তা হলে এটা তার প্রতি আল্লাহর দাননিবেদক মোঃ জাহিদ হুসাইন

আল্লা হুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুমমহানবীর পবিত্র বংশধারার ১১ তম নক্ষত্রহিজরি আটই রবিউসসানি ইসলামের ইতিহাসের মহাখুশির একটি দিন। ২৩২ হিজরির এই দিনে মাওলা হযরত মুহাম্মাদ (সা.)'র পবিত্র আহলে বাইতের অন্যতম সদস্য ইমাম হাসান আসকারি (আ.) জন্ম নিয়েছিলেন পবিত্র মদিনায়। তিনি ছিলেন হযরত ইমাম মাহদি (আ.)'র পিতা।এই মহাখুশির দিন উপলক্ষে সবাইকে জানাচ্ছি সালাম ও অজস্র শুভেচ্ছা এবং মাওলা মোহাম্মদ (সা.) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের শানেও পেশ করছি অশেষ সালাম আর দরুদ। ইমাম হাসান আসকারি (আ.) ছিলেন মাওলা মোহাম্মদ (সা.)'র রেখে যাওয়া আহলেবাইতভুক্ত ১২ জন ইমামের মধ্যে একাদশ ইমাম। তাঁর পিতা হলেন দশম ইমাম হযরত হাদী (আ.) ও মাতা ছিলেন মহীয়সী নারী হুদাইসা (সালামুল্লাহি আলাইহা)।শাসকদের চাপের মুখে ইমাম আসকারি (আ.) ও তাঁর পিতা ইমাম হাদী (আ.) প্রিয় মাতৃভূমি মদিনা শহর ছেড়ে আব্বাসীয়দের তৎকালীন শাসনকেন্দ্র সামেরায় আসতে বাধ্য হন। ইমাম হাসান আসকারি (আ.) আব্বাসীয় শাসকদের পক্ষ থেকে সবচেয়ে বেশি রাজনৈতিক চাপ ও দমনপীড়নের শিকার হয়েছিলেন। সামেরায় ততকালীন শাসকদের সামরিক কেন্দ্র তথা 'আসকার' অঞ্চলে কঠোর নজরদারির মধ্যে ইমাম আসকারি (আ.)কে বসবাস করতে হয়েছিল বলে তিনি আসকারি নামেও পরিচিত ছিলেন।কঠোর প্রতিকূল পরিস্থিতি সত্ত্বেও ইমাম হাসান আসকারি (আ.) অশেষ ধৈর্য নিয়ে তাঁর অনুসারীদেরকে জ্ঞানগত, সামাজিক ও রাজনৈতিক দিকসহ সব ক্ষেত্রেই পথনির্দেশনা দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। পিতা ইমাম আলী নাকী তথা হাদী (আ.)'র শাহাদতের পর ইমাম হাসান আসকারি (আ.) ২২ বছর বয়সে ইমামতের দায়িত্ব লাভ করেন। তিনি ৬ বছর ধরে ইসলামী জাহানের পথপ্রদর্শকের দায়িত্ব পালনের পর মাত্র ২৮ বছর বয়সে ২৬০ হিজরিতে শাহাদত বরণ করেন।ইমাম হাসান আসকারি (আ.)'র যুগে জালিম আব্বাসীয় শাসকরা সব ক্ষেত্রেই ন্যায় নীতি থেকে বহু দূরে সরে গিয়েছিল। কিন্তু জনগণ একথা শুনেছিল যে, ইমাম হাসান আসকারি (আ.)'র সন্তান ইমাম মাহদির (আ.) মাধ্যমে গোটা বিশ্ব জুলুম আর অন্যায়-অবিচার থেকে মুক্তি পাবে। শাসক গোষ্ঠীও এই খবরের কথা জানতো। তাই তারা ইমাম ও জনগণের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টির চেষ্টা জোরদার করে এবং ইমামের যেন কোনো সন্তান জন্ম নিতে না পারে সে জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়। কিন্তু এতসব বাধা সত্ত্বেও ইমাম হাসান আসকারির (আ.)'র সন্তান তথা মানবজাতির শেষ ত্রাণকর্তা ইমাম মাহদি (আ.) জন্ম গ্রহণ করেন মহান আল্লাহর বিশেষ ইচ্ছায় ঠিক যেভাবে ফেরাউনের বাধা সত্ত্বেও মুসা (আ.)'র জন্মগ্রহণকে ঠেকানো সম্ভব হয়নি। ইমাম মাহদি (আ.)'র জন্মের পর ইমাম হাসান আসকারি (আ.) মুসলিম সমাজকে ভবিষ্যত নানা প্রতিকূলতা মোকাবেলার জন্য দিক-নির্দেশনা দেন। এ ছাড়াও ইমাম নানা কুপ্রথা ও ভুল চিন্তাধারা সম্পর্কে মুসলমানদের সন্দেহ দূর করেন এবং খাঁটি মুহাম্মাদি ইসলামের চিন্তাধারা তুলে ধরেন। ইমাম জ্ঞান-পিপাসুদেরকে জ্ঞানের স্বচ্ছ ও বাস্তব ঝর্ণাধারায় পরিতৃপ্ত করতেন। জ্ঞানগত বিতর্কে তাঁর যুক্তি ছিল অকাট্য ও মোক্ষম যে ইয়াকুব বিন ইসহাক কিন্দির মত প্রখ্যাত বস্তুবাদী দার্শনিক এই মহান ইমামের সঙ্গে বিতর্কের পর বাস্তবতা বুঝতে সক্ষম হন এবং ধর্মীয় কোনো কোনো বিষয়ের সমালোচনা করে যে বই তিনি লিখেছিলেন তা নিজেই পুড়ে ফেলেন। আব্বাসীয়দের মন্ত্রী আহমাদ বিন খাক্বান ইমাম হাসান আসকারি (আ.)'র যোগ্যতা, গুণ ও কারামত সম্পর্কে বলেছেন: ' বিনম্রতা, চারিত্রিক ও নৈতিক পবিত্রতা এবং মহানুভবতার মত ক্ষেত্রগুলোতে মানুষের মধ্যে তাঁর মত আর কাউকে দেখিনি। তিনি এত উচ্চ সম্মানের অধিকারী যে শত্রু ও বন্ধু সবাই তাঁর প্রশংসা করতেন।'ইমাম হাসান আসকারি (আ.)'র নামাজের উচ্চ পর্যায়ের কোয়ালিটি অন্যদেরকে আল্লাহর ইবাদতে আকৃষ্ট করত। দেখা গেছে কারাগারের জল্লাদরা তাঁর নামাজ ও রোজায় প্রভাবিত হয়ে পাকা নামাজি হয়ে গিয়েছিল।ইমাম হাসান আসকারি (আ.) এর চারিত্রিক পবিত্রতা ও ব্যক্তিত্বের মাধুর্য তাঁর অনুসারীদের ব্যাপকভাবে আকৃষ্ট করতো। অন্যদিকে মুনাফিক এবং বিচ্যুতরা বিকর্ষিত হত। এ মহান ইমামের দিক-নির্দেশনার কারণে সে যুগে মহানবীর আহলেবাইতপন্থীদের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ ও ইমামের বার্তা পাঠানোর অনেক নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছিল ও জোরদার হয়েছিল।ইমাম হাসান আসকারি (আ.) ইমামতির ছয় বছরে আব্বাসীয় শাসকদের তিনজনকে পেয়েছিলেন। এরা ছিল মোতায, মোহতাদি এবং মোতামেদ। ইমাম এদের স্বেচ্ছাচারিতা চুপ করে সহ্য করেননি, ফলে তারা ইমামের ওপর রুষ্ট হয়ে পড়ে। তাই তাঁকে বহুবার কারাবরণ করতে হয়েছে। কিন্তু তারপরও ইমাম বলদর্পি শাসকদের কাছে মাথা নত করেননি। অবশেষে জালিম মোতামেদ ইমামকে গোপনে বিষ প্রয়োগ করে। ফলে ইমাম ২৬০ হিজরির ৮ ই রবিউল আউয়াল শাহাদত বরণ করেন । মোতামেদ এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি গোপন রাখতে চেয়েছিল যাতে গণ-বিদ্রোহ দেখা না দেয়। এবারে ইমাম হাসান আসকারি (আ.)'র একটি মু'জেজা তুলে ধরব। একবার এক নাসেবি তথা বিশ্বনবী (সা,)'র আহলে বাইতের বিদ্বেষী নবীবংশের এই মহান ইমামকে পরীক্ষা করার জন্য কতগুলো প্রশ্ন কাগজে লিখেছিল কালিবিহীন কলমে। একই কলমে আরো কয়েকজন কিছু বিষয় লেখে একই উদ্দেশ্যে। সেগুলো ইমাম হাসান আসকারি (আ.)'র কাছে পাঠানো হলে ইমাম সবগুলো প্রশ্নের উত্তর লিখে পাঠান এবং নাসেবির কাগজের ওপর তার নাম, তার বাবার ও মায়ের নামও লিখে পাঠান। নাসেবি তা দেখে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। তাঁর হুঁশ ফিরে আসার পর সে ইমামের প্রতি বিশ্বাস এন তাঁর একনিষ্ঠ অনুসারী হয়ে যায়। ইমাম হাসান আসকারী (আ) এর মূল্যবান একটি বাণী । তিনি বলেছেন : আল্লাহর অত্যধিক প্রশংসা করবে ও আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করবে। মৃত্যুর কথাও বেশি বেশি স্মরণ করবে ও তা ভুলবে না; বেশি বেশি কুরআন পাঠ করবে এবং রাসূল (সা.) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের উদ্দেশে বেশি বেশি দরুদ পাঠাবে, কারণ, তাঁদের শানে দরুদ পাঠানোতে রয়েছে দশটি নেকি ও কল্যাণকর প্রভাব।সবাইকে আরো একবার মুবারকবাদ । অসংখ্য দরুদ ও রহমত বর্ষিত হোক ইমাম হাসান আসকারি (আঃ.)'এর ওপর।নিবেদক মোঃ শামসীর হায়দার

আল্লা হুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুমআলীউন ওয়ালিউল্লাহহে আমার বিরুদ্ধবাদীগণ আমি কেন আলি উন ওয়ালি উল্লাহ এই সাক্ষ্য দেয় জান?যেন তাওহীদে এলাহীর সৌন্দর্য অবলোকন করা যায়।হে আমার বিরুদ্ধবাদীগণ আমি কেন আলি উন ওয়ালি উল্লাহ এই সাক্ষ্য দেয় জান?যেন তাওহীদে এলাহীকে পরিপূর্ণ ভাবে বুঝতে পারা যায়।হে আমার বিরুদ্ধবাদীগণ আমি কেন আলি উন ওয়ালি উল্লাহ এই সাক্ষ্য দেয় জান?যেন নুরে এলাহীর তাজাল্লী দৃষ্টি গোচর হয়।হে আমার বিরুদ্ধবাদীগণ আমি কেন আলি উন ওয়ালি উল্লাহ এই সাক্ষ্য দেয় জান?যেন সুন্নতে এলাহীর সৌন্দর্য দেখা যায়।হে আমার বিরুদ্ধবাদীগণ আমি কেন আলি উন ওয়ালি উল্লাহ এই সাক্ষ্য দেয় জান।যেন আল্লাহ ও মুহাম্মাদের সৌন্দর্য দেখার সৌভাগ্য হয়।হে আমার বিরুদ্ধবাদীগণ আমি কেন আলি উন ওয়ালি উল্লাহ এই সাক্ষ্য দেয় জান?যেন আল্লাহর ন্যায়পরায়ণতার সৌন্দর্য দেখতে পাই।হে আমার বিরুদ্ধবাদীগণ আমি কেন আলি উন ওয়ালি উল্লাহ এই সাক্ষ্য দেয় জান?যেন ইলমে এলাহীর সৌন্দর্য দেখতে পাই।হে আমার বিরুদ্ধবাদীগণ আমি কেন আলি উন ওয়ালি উল্লাহ এই সাক্ষ্য দেয় জান?যেন আল্লাহর কৌশলের সৌন্দর্য দেখতে পাই।হে আমার বিরুদ্ধবাদীগণ আমি কেন আলি উন ওয়ালি উল্লাহ এই সাক্ষ্য দেয় জান?যেন আল্লাহর পরাক্রমশালীতার সৌন্দর্য দেখতে পাই।হে আমার বিরুদ্ধবাদীগণ আমি কেন আলি উন ওয়ালি উল্লাহ এই সাক্ষ্য দেয় জান?যেন আল্লাহর মহানুভবতার সৌন্দর্য দেখতে পাই।হে আমার বিরুদ্ধবাদীগণ আমি কেন আলি উন ওয়ালি উল্লাহ এই সাক্ষ্য দেয় জান?যেন আমি আল্লাহর বান্দাহ ও আবেদ হতে পারি।হে আমার বিরুদ্ধবাদীগণ আমি কেন আলি উন ওয়ালি উল্লাহ এই সাক্ষ্য দেয় জান?যেন আমি আল্লাহর স্নেহের ক্ষমা পেতে পারি।হে আমার বিরুদ্ধবাদীগণ আমি কেন আলি উন ওয়ালি উল্লাহ এই সাক্ষ্য দেয় জান?যেন আল্লাহর ধৈর্যের সৌন্দর্য দেখতে পাই।হে আমার বিরুদ্ধবাদীগণ আমি কেন আলি উন ওয়ালি উল্লাহ এই সাক্ষ্য দেয় জান?যেন আল্লাহর সৃষ্টি রহস্যের সৌন্দর্য দেখতে পাই।হে আমার বিরুদ্ধবাদীগণ আমি কেন আলি উন ওয়ালি উল্লাহ এই সাক্ষ্য দেয় জান?যেন আল্লাহ সকল সৃষ্টির প্রতি রহমান কিন্তু বিশেষ কিছু সৃষ্টির প্রতি রহিম এই রহস্যের ভেদ বুঝতে পারা যায়।হে আমার বিরুদ্ধবাদীগণ আমি কেন আলি উন ওয়ালি উল্লাহ এই সাক্ষ্য দেয় জান?যেন আল্লাহ প্রকাশ্য গোপন এই রহস্যের ভেদ বুঝতে পারা যায়।হে আমার বিরুদ্ধবাদীগণ আমি কেন আলি উন ওয়ালি উল্লাহ এই সাক্ষ্য দেয় জান?যেন যে আলী, আলীকে সৃষ্টি করেছে সেই আলীর মর্যদা অনুধাবন করতে পারি।হে আমার বিরুদ্ধবাদীগণ আমি কেন আলি উন ওয়ালি উল্লাহ এই সাক্ষ্য দেয় জান?যেন নবুওয়াতে মুহাম্মাদীর( সা) সৌন্দর্য অবলোকন করতে পারি।হে আমার বিরুদ্ধবাদীগণ আমি কেন আলি উন ওয়ালি উল্লাহ এই সাক্ষ্য দেয় জান?যেন আমি রিসালাতেমুহাম্মাদীর( সা) সুগন্ধ অনুভব করতে পারি।হে আমার বিরুদ্ধবাদীগণ আমি কেন আলি উন ওয়ালি উল্লাহ এই সাক্ষ্য দেয় জান?যেন খতমে নবুওয়াতে মুহাম্মাদীর( সা) প্রমাণ দিতে পারি।হে আমার বিরুদ্ধবাদীগণ আমি কেন আলি উন ওয়ালি উল্লাহ এই সাক্ষ্য দেয় জান?যেন নবুওয়াত ও রিসালাতে মুহাম্মাদী( সা) কে পরিপূর্ণ ভাবে বুঝতে পারি।হে আমার বিরুদ্ধবাদীগণ আমি কেন আলি উন ওয়ালি উল্লাহ এই সাক্ষ্য দেয় জান?যেন রাউফ ও রহিম নবী মুহাম্মাদের( সা) কৃপা দৃষ্টি পেতে পারি।হে আমার বিরুদ্ধবাদীগণ আমি কেন আলি উন ওয়ালি উল্লাহ এই সাক্ষ্য দেয় জান?যেন শাফায়াতে মুস্তাফা( স) পাওয়া যায়।হে আমার বিরুদ্ধবাদীগণ আমি কেন আলি উন ওয়ালি উল্লাহ এই সাক্ষ্য দেয় জান?যেন ইলমে মুস্তাফা তথা ইলমে লাদুন্নি পাওয়া যায়।হে আমার বিরুদ্ধবাদীগণ আমি কেন আলি উন ওয়ালি উল্লাহ এই সাক্ষ্য দেয় জান?যেন আমি মুহাম্মাদী(সা) রাজ্যের বাসিন্দা হতে পারি।হে আমার বিরুদ্ধবাদীগণ আমি কেন আলি উন ওয়ালি উল্লাহ এই সাক্ষ্য দেয় জান?যেন আমি মুহাম্মাদী(সা) ঝর্ণার সুমিষ্ট জল পান করতে পারি।হে আমার বিরুদ্ধবাদীগণ আমি কেন আলি উন ওয়ালি উল্লাহ এই সাক্ষ্য দেয় জান?যেন আলীর( আ) অভিভাবক মুহাম্মাদের( সা) মর্যদা উপলব্ধি করতে পারি।হে আমার বিরুদ্ধবাদীগণ আমি কেন আলি উন ওয়ালি উল্লাহ এই সাক্ষ্য দেয় জান?যেন আমি ওয়াক্তের মুহাম্মাদ ( আ ফ শ) এর দর্শণ ও শাফায়াত পায় এবং তাঁর আনসাদের মধ্যে অন্তর্ভুক্তীর সৌভাগ্য হয়।হে আমার বিরুদ্ধবাদীগণ আমি কেন আলি উন ওয়ালি উল্লাহ এই সাক্ষ্য দেয় জান?যেন সিরাতাল মুস্তাকিমের উপর দৃঢ় থাকতে পারি।হে আমার বিরুদ্ধবাদীগণ আমি কেন আলি উন ওয়ালি উল্লাহ এই সাক্ষ্য দেয় জান?যেন আমি আল্লাহর নিয়ামতপ্রাপ্ত বান্দাদের অন্তর্ভূক্ত হতে পারি।হে আমার বিরুদ্ধবাদীগণ আমি কেন আলি উন ওয়ালি উল্লাহ এই সাক্ষ্য দেয় জান?যেন মায়ের পবিত্রতার সৌন্দর্য অবলোকন করতে পারি,কারণ আলী প্রেম মায়ের পবিত্রতার প্রমাণ।হে আমার বিরুদ্ধবাদীগণ আমি কেন আলি উন ওয়ালি উল্লাহ এই সাক্ষ্য দেয় জান?যেন আমি সত্য থেকে মিথ্যাকে পৃথক করতে পারি।হে আমার বিরুদ্ধবাদীগণ আমি কেন আলি উন ওয়ালি উল্লাহ এই সাক্ষ্য দেয় জান?যেন মুমিন হতে পারি,কারণ আলীই মুমিনদের অভিভাবক।হে আমার বিরুদ্ধবাদীগণ আমি কেন আলি উন ওয়ালি উল্লাহ এই সাক্ষ্য দেয় জান?যেন আমি ইলমে কোরআন অর্জন করতে পারি,কারণ আলীই সবাক কোরআন।হে আমার বিরুদ্ধবাদীগণ আমি কেন আলি উন ওয়ালি উল্লাহ এই সাক্ষ্য দেয় জান?যেন আমি জান্নাত হতে জাহান্নামকে পৃথক করার ইলম অর্জন করতে পারি,কারণ আলীই জান্নাত-জাহান্নাম বন্টনকারী।হে আমার বিরুদ্ধবাদীগণ আমি কেন আলি উন ওয়ালি উল্লাহ এই সাক্ষ্য দেয় জান?যেন আমি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর সৌন্দর্য আলী উন ওয়ালি উল্লাহ তা উপলব্ধি করতে পারি।হে আমার বিরুদ্ধবাদীগণ আমি কেন আলি উন ওয়ালি উল্লাহ এই সাক্ষ্য দেয় জান?যেন আমি মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহর সুগন্ধ আলী উন ওয়ালি উল্লাহ তা উপলব্ধি করতে পারি।হে আমার বিরুদ্ধবাদীগণ আমি কেন আলি উন ওয়ালি উল্লাহ এই সাক্ষ্য দেয় জান?যেন আমি মুমিনের পরিচয় আলী উন ওয়ালি উল্লাহ এই সাক্ষ্যকে মনে প্রাণে ধারণ করতে পারিনিবেদক বিধি তুমার ধর্ম কি

আল্লা হুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুমহযরত আলী (আ.) বলেছেন : ‘আমি মিথ্যা বলিনি। আমার ওপর মিথ্যা আরোপ করা হয়নি। আর আমি পথভ্রষ্ট হইনি এবং আমার দ্বারা কেউ পথভ্রষ্ট হয়নি।’- নাহজুল বালাগা, উক্তি নং ১৭৬হযরত আলী (আ.) বলেছেন : ‘অন্যায় সূচনাকারী যালেম আগামী দিন (অর্থাৎ কিয়ামতের দিন) স্বীয় হাত কামড়ে খাবে।’- নাহজুল বালাগা, উক্তি নং ১৭৭যেমন পবিত্র কুরআনেও বলা হয়েছে : “যালিম ব্যক্তি সেদিন নিজ হস্তদ্বয় দংশন করতে করতে বলবে : ‘হায়! আমি যদি রাসূলের সাথে সৎপথ অবলম্বন করতাম।”- সূরা ফুরকান : ২৭হযরত আলী (আ.) মৃত্যু সম্পর্কে বলেছেন : ‘প্রস্থান (অর্থাৎ দুনিয়া থেকে চলে যাওয়া) অতি নিকটে। সুতরাং সে ব্যক্তিই জ্ঞানী যে মৃত্যুকালে নিয়ে যাওয়ার মতো পাথেয় সঞ্চয় ও প্রস্তুত করে রাখে।- নাহজুল বালাগা, উক্তি নং ১৭৮হযরত আলী (আ.) বলেছেন : ‘ধৈর্য যাকে পরিত্রাণ দিল না, অধৈর্য ও অস্থিরতা তাকে ধ্বংস করে দিল।’ (অর্থাৎ ধৈর্য মানুষের জন্য মুক্তি আনে আর অধৈর্য ধ্বংসের কারণ)।- নাহজুল বালাগা, উক্তি নং ১৮০হযরত আলী (আ.) বলেছেন : ‘মানুষ তো এই পৃথিবীতে লক্ষ্যবস্তুর ন্যায় যাকে লক্ষ্য করে বানের ন্যায় মৃত্যু ছুটে আসে। সে লুণ্ঠিত বস্তুর ন্যায় যাকে লুণ্ঠন করে নেওয়ার জন্য বিপদ-আপদ দ্রুত বেগে তার দিকে ধাবিত হয়। পান করার ক্ষেত্রে প্রতিটি ঢোক গলায় আটকে যাওয়ার মতো এবং প্রতিটি লোকমা (গ্রাস) কষ্টদায়ক। বান্দাকে কোন একটি নিয়ামত লাভ করতে হলে তাকে অন্য একটি নিয়ামত হাতছাড়া করতে হয়। তার জীবনের একটি দিন ভবিষ্যতে করায়ত্ত করতে হলে স্বীয় জীবন থেকে অনুরূপ একটি দিন হাতছাড়া করতে হয়। অতএব, আমরা মৃত্যুর নিত্য সহচর। আর আমাদের জীবনাত্মা সহসা মৃত্যুমুখে পতিত হওয়ার লক্ষ্যবস্তুকে পরিণত হয়েছে। কাজেই আমাদের স্থায়িত্বের আশা কোথায়? এই দিবারাত্রি (অর্থাৎ সময়) যা কিছু উন্নত ও মহান করে তোলে পরক্ষণেই তা ধ্বংস করে দেয়, যা কিছু সৃষ্টি করে তা নষ্ট করে দেয় এবং যা কিছু পুঞ্জিভূত ও একত্র করে তা বিশৃঙ্খল করে দেয়।’- নাহজুল বালাগা, উক্তি নং ১৮২হযরত আলী (আ.) বলেছেন : ‘হে আদম সন্তান! তুমি তোমার জীবন ধারণের অধিক যা কিছু উপার্জন কর, অন্যের জন্য তুমি তার ভাণ্ডার রক্ষক মাত্র।’ (অর্থাৎ আদম সন্তান তার জীবন ধারণের অধিক যা উপার্জন করে তা তার উওরাধিকারীর অথবা অন্যদের জন্যই হয়ে থাকে, সে শুধু ধন-সম্পদের রক্ষক মাত্র।)- নাহজুল বালাগা, উক্তি নং ১৮৩নিবেদক মোঃ জাহিদ হুসাইন

আল্লা হুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুমমাওলা মোহাম্মদের (সা.)এর দেখানো পথ ও সৌভাগ্যের সিঁড়ি (পর্ব-১১)মাওলা (সা.)'র কিছু অমূল্য বাণী ও সংক্ষিপ্ত উপদেশ: মাওলা (সা.) বলেছেন : (মানুষের) সৌন্দর্য হলো জিহ্বায়।তিনি বলেছেন : জ্ঞানকে জনগণের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া যায় না, কিন্তু যতক্ষণ অবধি জ্ঞানীরা থাকে ততক্ষণ জ্ঞানীদের অপহরণ করা হয় ফলে আর কোন জ্ঞানী অবশিষ্ট থাকে না, আর তখন জনগণ মূর্খদেরকেই নেতা হিসাবে গ্রহণ করে। ফতোয়া চাওয়া হয় আর তারা না জেনে ফতোয়া প্রদান করে। ফলে নিজেরাও পথভ্রষ্ট থাকে, আর অন্যদেরকেও পথভ্রষ্ট করে।তিনি বলেন : আমার উম্মতের সর্বশ্রেষ্ঠ জিহাদ হলো ফারাজ তথা মুক্তির অপেক্ষা করা (তথা ইমাম মাহদি –আ.’র বিশ্ব-বিপ্লবের সদস্য হওয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখা)।আমরা (আমিসহ আমার আহলে বাইতের) আহলে বাইতের পৌরুষত্ব হলো যে আমাদের ওপর অত্যাচার করে তাকে ক্ষমা করা আর যে আমাদের প্রতি কৃপণতা করে তাকে দান করা। তিনি আরো বলেন : আমার উম্মতের মধ্যে থেকে আমার সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত বন্ধুরা হলো যে ব্যক্তির বোঝা হালকা, নামাজি, নির্জনে নিজ প্রতিপালকের উত্তম ইবাদত করে, জনগণের মধ্যে থাকে অজ্ঞাত, তার রুজি হয় দিনাতিপাত করার পরিমাণে এবং তার ওপরেই ধৈর্যধারণ করে থাকে। আর যখন মৃত্যুবরণ করে তখন তার উত্তরাধিকারের সম্পদ থাকে স্বল্প আর তার ওপর ক্রন্দনকারীর সংখ্যা হয় কম।মাওলা (সা.) বলেছেন : মুমিনকে কোনো কাঠিন্য, অসুস্থতা ও দুঃখ স্পর্শ করলে তাতে যদি তার সামান্য কষ্টও হয় আল্লাহ সেটির বিনিময়ে তার পাপগুলো মোচন করেন।তিনি বলেন : যে ব্যক্তি ইচ্ছামত খায়, ইচ্ছামত পরিধান করে আর ইচ্ছামত বাহনে আরোহণ করে, আল্লাহ্ তার ওপর অনুগ্রহের দৃষ্টি ফেলেন না যতক্ষণ না সে তা হারায় কিংবা বর্জন করে (এবং তওবা করে)।মহানবী বলেন : মুমিন হলো একটি গমের শীষের মতো যা কখনো মাটিতে নুয়ে পড়ে আবার কখনো নিজ পায়ে দাঁড়ায়। আর কাফের হলো শক্ত গাছের মতো যা সব সময় দাঁড়িয়ে থাকে এবং কোনো সংবেদনের অধিকারী নয় (যে ন্যায়ের কাছে মাথা নত করবে।)তাঁকে প্রশ্ন করা হলো, মানুষের মধ্যে কোন্ ব্যক্তি কঠিনতর পরীক্ষার সম্মুখীন? উত্তরে রাসূল (সা.) বললেন : নবীগণ, অতঃপর সত্য পথে তাদের অনুরূপ ও সদৃশতমগণ। আর মুমিনের ঈমানের মাত্রা ও সৎকর্মের পরিমাণ অনুযায়ী তাকে পরীক্ষা করা হয়। যখন তার ঈমান সঠিক এবং কর্ম সৎ হবে তখন তার পরীক্ষাও কঠিনতর হবে। আর যার ঈমান নিকৃষ্ট আর কর্ম দুর্বল হবে তার পরীক্ষাও কম হবে।মহানবী (সা.) আরো বলেন : যদি আল্লাহর কাছে দুনিয়া(র মূল্য) একটি মশার ডানার সমানও হতো তা হলে কাফের ও মুনাফিকদেরকে কিছুই দিতেন না। দুনিয়া পরিবর্তনশীল (এক হাত থেকে আরেক হাতে আবর্তনশীল)। যা কিছু তোমার প্রাপ্য সেটা তোমার শত অক্ষমতা সত্ত্বেও অর্জিত হয়। আর (দুনিয়ার) যা কিছু তোমার জন্য অনিষ্টকর সেটা তুমি তোমার শক্তি দিয়ে প্রতিহত করতে পারবে না। যে ব্যক্তি তার হারানো জিনিস ফিরে পাওয়ার আশা ত্যাগ করে তার শরীর আরামে থাকে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তার জন্য যা কিছু বরাদ্দ করেছে তাতে সন্তুষ্ট থাকে তার চোখ উজ্জ্বল হয়। হুজুর (সা.) বলেন : সত্যি কথা বলতে কি, খোদার কসম! এমন কোনো কাজই নেই যা তোমাদেরকে জাহান্নামের কাছে নেয় আর আমি তোমাদেরকে সে ব্যাপারে অবগত করিনি কিংবা তোমাদেরকে তা থেকে বারণ করিনি। অন্যদিকে এমন কোনো কাজই নেই যা তোমাদেরকে বেহেশতের কাছে নেয় আর আমি তোমাদেরকে সে ব্যাপারে অবগত করিনি কিংবা তার আদেশ করি নি। কারণ, রুহুল আমিন (জিবরাইল) আমার হৃদয়ে এ কথা প্রক্ষিপ্ত করেন যে, কখনোই কোনো প্রাণী মৃত্যুবরণ করে না, যতক্ষণ না নিজের নির্ধারিত রুজি লাভ করে থাকে। রুজির কামনায় মধ্যপন্থা অবলম্বন কর (ও বাড়াবাড়ি কর না)। বিলম্বে রুজি পৌঁছানো যেন তোমাদেরকে ঐ পথে ঠেলে না দেয় যে, আল্লাহর কাছে যা কিছু তোমাদের জন্য রয়েছে সেগুলোকে অবাধ্যতার পথ দিয়ে অন্বেষণ করো (হারামভাবে অর্জন করো) কারণ, যা কিছু আল্লাহর কাছে রয়েছে তা শুধু তাঁর আনুগত্যের মাধ্যম ছাড়া অন্য কোনোভাবে লাভ করা যায় না। মাওলা (সা.) আরো বলেছেন : আল্লাহ্ দু’টি স্বরকে ঘৃণা করেন : বিপদের সময় চিৎকার করে কান্নাকাটি করা আর নেয়ামত লাভ ও খুশীর সময় বাঁশি বাজানো (গান-বাজনা করা)।তিনি বলেন : সৃষ্টির প্রতি আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষণ হলো তাদের (দ্রব্যগুলোর) মূল্য সস্তা হওয়া এবং তাদের শাসকের ন্যায়বিচারক হওয়া। আর সৃষ্টির প্রতি আল্লাহর ক্রোধের লক্ষণ হলো তাদের শাসকদের অবিচারক হওয়া এবং তাদের (পণ্য-দ্রব্যগুলোর) মূল্য চড়া হওয়া। তিনি আরো বলেন, চারটি জিনিস যার মধ্যে থাকে সে আল্লাহর মহিমাময় জ্যোতি-সমৃদ্ধ হয় : যার সব কাজের আশ্রয়স্থল হয় আল্লাহর একত্ববাদ এবং আমি তাঁর প্রেরিত হওয়ার সাক্ষ্য প্রদান, তার ওপর বিপদ আপতিত হলে বলে ‘ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ অর্থাত বলে, ‘নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর কাছ থেকে এসেছি আবার আল্লাহর কাছেই ফিরে যাব’।’আর ভালো কিছু লাভ করলে তখন বলে ‘আল হামদুলিল্লাহ্।’আর অপরাধ করলে বলে ‘আসতাগফিরুল্লাহ্ ওয়া আতুবু ইলাইহি। অর্থাত আমি আল্লাহর ক্ষমা চাচ্ছি ও আল্লাহর কাছেই ফিরছি।’মহান আল্লাহর সর্বশেষ রাসূল (সা.) বলেন, যাকে চারটি জিনিস দেয়া হয় তাকে আর চারটি জিনিস দেয়া থেকে কুণ্ঠা করা হয় না : যাকে ক্ষমা প্রার্থনার সুযোগ দেয়া হয় তাকে মার্জনা থেকে বঞ্চিত করা হয় না, আর যাকে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে দেয়া হয়, তাকে বেশি অনুগ্রহ লাভ থেকে বঞ্চিত করা হয় না, আর যাকে তওবা করার (অনুতপ্ত হয়ে ফিরে আসার) তৌফিক দেয়া হয় তাকে তওবা গৃহীত হওয়া থেকে বঞ্চিত করা হয় না। আর যাকে প্রার্থনার অনুমতি দেয়া হয় তাকে তা মঞ্জুর হওয়া থেকে বঞ্চিত করা হয় না।মহানবী (সা.) বলেন : জ্ঞান হলো গুপ্ত ভাণ্ডার তুল্য। আর তার চাবি হলো প্রশ্ন। অতএব, প্রশ্ন করো, আল্লাহ্ তোমাদের অনুগ্রহ করবেন। কারণ, চার ব্যক্তির জন্য পুরস্কার ও পারিশ্রমিক রয়েছে : প্রশ্নকারী, বক্তা, শ্রোতা আর তাদের ভক্তিকারী। তিনি আরো বলেন : জ্ঞানীদের কাছে প্রশ্ন করো আর হাকিম বা প্রজ্ঞাবানদের সাথে সংলাপ করো, আর দরিদ্রদের সাথে ওঠা-বসা করো।মহানবী (সা.) বলেন : আমার কাছে জ্ঞানের মর্যাদা ইবাদতের মর্যাদার চেয়ে বেশি প্রিয়। তোমাদের সবচেয়ে বড় ধর্ম হল পরহিজগারিতা (আত্মসংযম)। তিনি আরো বলেন : যে ব্যক্তি না জেনে জনগণের মধ্যে ফতোয়া প্রদান করে তার ওপরে আসমান ও জমিনের ফেরেশতারা অভিশাপ দেয়নিবেদন ।।।।। মোঃ জাহিদ হুসাইন

আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মুহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুমগভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়ে শুরু করছি 'ইমাম হাসান (আ)’র বেদনাবিধুর শাহাদাত'২৮ সফর ইসলামের ইতিহাসের সবচেয়ে শোকাবহ দিন। কারণ দশম হিজরির এই দিনে দুনিয়া থেকে বিদায় নেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা) এবং চল্লিশ বছর পর ৫০ হিজরির একই দিনে শাহাদত বরণ করেন তাঁরই প্রথম নাতি হযরত ইমাম হাসান (আ) মহানবী (সা.)-এর প্রিয় প্রথম নাতি তথা আমিরুল মুমিনীন হযরত আলী (আ.) ও হযরত ফাতেমা (সালামুল্লাহি আলাইহার.)-এর প্রথম সন্তান জন্ম নিয়েছিলেন তৃতীয় হিজরির পবিত্র রমজান মাসের ১৫ তারিখে। নবী করীম (সা.) অভিনন্দন জানাতে হযরত আলী (আঃ) এর ঘরে এসেছিলেন। তিনি এ নবজাত শিশুর নাম আল্লাহর পক্ষ থেকে রাখেন হাসান যার আভিধানিক অর্থ সুন্দর বা উত্তম।মহানবী (সা.)-এর সাথে তাঁর নাতীর জীবনকাল কেটেছে প্রায় সাত বছর।দয়াল নানা তাঁকে অত্যন্ত ভালবাসতেন। বহু বার তিনি নাতিকে কাঁধে নিয়ে বলেছেন : “হে প্রভু,আমি তাকে ভালবাসি। তুমিও তাকে ভালবাস।” তিনি আরো বলতেন : “যারা হাসান ও হুসাইনকে ভালবাসবে তারা আমাকেই ভালবাসলো। আর যারা এ দুজনের সাথে শত্রুতা করবে তারা আমাকেই তাদের শত্রু হিসাবে গণ্য করলো।” “হাসান ও হুসাইন বেহেশতের যুবকদের নেতা।” তিনি আরো বলেছেন,“আমার এই দু’নাতি উভয়ই মুসলমানদের ইমাম বা নেতা চাই তারা তাগুতি শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াক বা না দাঁড়াক।”হযরত ইমাম হাসান (আ) এতটা মহান ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন এবং তাঁর রুহ এতটা নিষ্কলুষ ছিল যে রাসূল (সা.) তাঁকে শৈশবেই অনেক চুক্তি-পত্রের মধ্যে সাক্ষী হিসেবে মনোনীত করতেন। ঐতিহাসিক ওয়াকেদী তার কিতাবে লিখেছেন : “রাসূল (সা.) ছাকিফ গোত্রের সাথে ‘জিম্মি চুক্তি’ স্বাক্ষর করেন। এ চুক্তিপত্র খালিদ বিন সাঈদ লিখেন আর ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন (আ.) সে পত্রে স্বাক্ষর করেন।” যখন আল্লাহর নির্দেশে মহানবী (সা.) নাজরানের খৃস্টানদের সাথে মুবাহিলা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন তখনও তিনি ইমাম হাসান,ইমাম হুসাইন,হযরত আলী ও হযরত ফাতেমাকে আল্লাহর নির্দেশক্রমে সঙ্গে নেন এবং সুরা আহজাবের ৩৩ নম্বর আয়াত তথা তাতহীরের আয়াত তাদের পবিত্রতা ও নিষ্পাপতার ব্যাপারেই অবতীর্ণ হয়।ইমাম হাসান (আ.) তাঁর পিতার পথে চলতেন এবং তাঁর সাথে ঐক্যমত্য পোষণ করতেন। পিতার সাথে তিনিও অত্যাচারীদের সমালোচনা এবং মজলুমদের সমর্থন করতেন।হিজরি ছত্রিশ সনে উষ্ট্রের যুদ্ধের আগুন নেভাতে পিতার সাথে মদীনা হতে বসরায় আসেন ইমাম হাসান। বসরাতে প্রবেশের আগে তিনি হযরত আলীর নির্দেশে সম্মানিত সাহাবী হযরত আম্মার বিন ইয়াসিরকে সাথে নিয়ে জনগণকে সংঘবদ্ধ করতে কুফায় যান। এরপর জনগণকে সাথে নিয়ে ইমাম আলীকে সাহায্যের জন্যে বসরায় ফিরে আসেন। ইমাম হাসান তাঁর সুদৃঢ় ও প্রাঞ্জল বক্তৃতার মাধ্যমে 'ওসমান হত্যার সাথে হযরত আলী জড়িত'- এ অপবাদের দাঁতভাঙ্গা জবাব দেন। ওই অপবাদ প্রচার করা হয়েছিল আবদুল্লাহ বিন যুবাইরের পক্ষ থেকে। তিনি এ যুদ্ধের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত নানা বিষয়ে ব্যাপক সহযোগিতা করেন ও পরিশেষে বিজয়ী হয়ে কুফায় ফিরে যান।ইমাম হাসান (আ) সিফফিনের যুদ্ধেও তাঁর পিতার সাথে অসামান্য ভূমিকা পালন করেছেন। এ যুদ্ধে মুয়াবিয়া তাঁর কাছে আবদুল্লাহ বিন ওমরকে এ কথা বলে পাঠায় যে,“যদি আপনার পিতার অনুসরণ থেকে বিরত থাকেন তাহলে আমরা আপনার পক্ষে খেলাফত ছেড়ে দেবো। কারণ,কোরাইশ গোত্রের লোকজন আপনার পিতার প্রতি তাদের পিতৃপুরুষদের হত্যার কারণে অসন্তুষ্ট। তবে তারা আপনাকে গ্রহণ করতে কোন আপত্তি করবেন না...।”ইমাম হাসান (আ.) উত্তরে বলেন : “কোরাইশরা ইসলামের পতাকা ভূলুণ্ঠিত করতে দৃঢ়চিত্ত ছিল। তবে আমার বাবা আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ইসলামের জন্যে তাদের মধ্যেকার অবাধ্য ও বিদ্রোহী ব্যক্তিদের হত্যা করে তাদের চক্রান্তকে নস্যাৎ করে দিয়েছিল। তাই তারা আমার পিতার বিরুদ্ধে শত্রুতার ঝাণ্ডা উত্তোলন করেছে।”নবী করীম (সা.)-এর জীবিত অবস্থায় তাঁরই নির্দেশ অনুযায়ী হযরত আলী (আ.) নিজের ইন্তেকালের সময় ইমাম হাসানকে তাঁর খেলাফতের উত্তরাধিকারী হিসেবে মনোনীত করেন। তিনি ইমাম হুসাইন (আ.) ও তাঁর অন্যান্য সন্তানদের এবং তাঁর উচ্চপদস্থ অনুসারীদের এ বিষয়ে সাক্ষী রাখেন।মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেছেন:'তিনিই তাঁর রাসূলকে পথনির্দেশ ও সত্যধর্মসহ প্রেরণ করেছেন যাতে একে সমুদয় ধর্মের ওপর বিজয়ী করেন, যদিও অংশীবাদীরা তা অপছন্দ করে। সূরা সাফ:৯আল্লাহর রাসূল(সা.)এর তিরোধানের পর মহান ইমামগণ এ লক্ষ্যকে সামনে রেখেই তাঁদের কর্ম নির্ধারণ করেছেন। তাই যদিও ইমামদের কর্মপদ্ধতির মধ্যে পার্থক্য ছিল কিন্তু সেটি তার পরিবেশ ও পরিস্থিতির দাবিতেই ছিল, কখনও তা তাদের বৈশিষ্ট্যগত তফাত থেকে উদ্ভূত ছিল না। তাই এ ধারণা ঠিক নয় যদি ইয়াজিদের সময় ইমাম হাসান জীবিত থাকতেন তবে তিনি সন্ধির নীতি গ্রহণ করতেন কিংবা এমনও নয় যে, তিনি যুদ্ধ পছন্দ করতেন না বলে শান্তিপূর্ণ পথকে প্রাধান্য দিতেন।আসলে মৌলিক বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইন উভয়েই একরূপ ছিলেন এবং নীতির ক্ষেত্রেও তাঁদের মধ্যে অভিন্নতা ছিল। তাঁরা উভয়েই একদিকে অত্যন্ত সাহসী ও অন্যদিকে বীর যোদ্ধা ছিলেন। নাহজুল বালাগার ২০৭ নং খুতবায় হজরত আলীর বক্তব্য থেকে বোঝা যায় যে, তিনি সিফফিনের যুদ্ধে ইমাম হাসানের দুঃসাহসিকতায় এতটা শঙ্কিত হন যে স্বীয় সঙ্গীদের বলেন : ‘হাসানকে এভাবে মরিয়া হয়ে যুদ্ধ করা থেকে নিবৃত কর আমি তাকে হারানোর আশঙ্কা করছি।’ তাই নিঃসন্দেহে বলা যায় মুয়াবিয়ার সাথে তিনি সঙ্গীদের অসহযোগিতার কারণে সন্ধি করতে বাধ্য হন, ভীরুতার কারণে নয়। ঐতিহাসিক মাসউদী তার ‘ইসবাতুল ওয়াসিয়া’ গ্রন্থে ইমাম হাসানের যে বক্তব্যটি উল্লেখ করেছেন তাতে তিনি বলেছেন : ‘আমি যদি উপযুক্ত সঙ্গী পেতাম তবে খেলাফত লাভের জন্য এমন বিপ্লব ও আন্দোলন করতাম যে কেউ তার নজির দেখেনি।’দ্বিতীয়ত মুয়াবিয়ার বাহ্যিক ধার্মিকতার বিষয়টি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার বৈধতাকে জনগণের সামনে স্পষ্ট করা বেশ কঠিন ছিল। একারণে আমরা দেখি ইমাম হাসানের শাহাদাতের পর মুয়াবিয়া দশ বছর জীবিত থাকলেও ইমাম হোসাইন তার বিরুদ্ধে আন্দোলনের আহ্বান জানাননি। এর বিপরীতে ইয়াজিদের সময় যেভাবে অধার্মিকতা প্রকাশ্য রূপ লাভ করেছিল ইমাম হাসানের জীবদ্দশায় এরূপ অবস্থার সৃষ্টি হলে সেক্ষেত্রে তিনিও বিন্দুমাত্র দ্বিধা না করে ইমাম হোসাইনের মতই বিপ্লব করতেন।আল্লাহ রাব্বুল আ’লামিনের প্রতি ইমাম হাসানের এক বিশেষ অনুরাগ ছিল। এই আসক্তির বহিঃপ্রকাশ ওযুর সময় অনেকে তাঁর চেহারায় দেখেছেন। যখন তিনি ওযুতে মগ্ন হতেন তখন তাঁর চেহারা বিবর্ণ হয়ে যেতো, তিনি ভয়ে কাঁপতে থাকতেন। যখনি তিনি মৃত্যু ও কিয়ামতের কথা স্মরণ করতেন,তখনি ক্রন্দন করতেন এবং বেহুশ হয়ে পড়তেন। তিনি পদব্রজে আবার কখনো নগ্নপদে পঁচিশ বার আল্লাহর ঘর যিয়ারত তথা হজ করেন।ইমাম হাসান (আ) ছিলেন খুবই দানশীল। তিনি জীবনে তিনবার তাঁর যা কিছু ছিল,এমন কি জুতো পর্যন্ত দু’অংশে ভাগ করে আল্লাহর পথে দান করে দেন।ইমাম হাসান (আ) ছিলেন ধৈর্য ও সহনশীলতার প্রতীক। মারওয়ান বিন হাকাম,যে ব্যক্তি ইমামকে বিরক্ত ও কষ্ট দেয়ার ব্যাপারে কোন কিছুই বাকী রাখেনি ইমাম হাসান (আ.)-এর ইন্তেকালের সময় তাঁর জানাযায় অংশ গ্রহণ করে। হযরত ইমাম হুসাইন (আ.) বলেন : আমার ভাইয়ের জীবদ্দশায় তাঁর সাথে আপনি যা মন চেয়েছে তাই করেছেন আর এখন তাঁর জানাযায় অংশ গ্রহণ করেছেন এবং কাঁদছেন?মারওয়ান উত্তর দেয় : “যা কিছু করেছি তা এমন এক মহান ব্যক্তির সঙ্গে করেছি যার সহনশীলতা মদীনার এই পাহাড়ের চেয়েও অনেক বেশি ছিল।”মুয়াবিয়া ইমামের বয়সের স্বল্পতার অজুহাত দেখিয়ে খেলাফত ইমামের হাতে সোপর্দ করতে প্রস্তুত ছিল না, সে তার নাপাক ও নোংরা পুত্র ইয়াজিদের জন্যে পরবর্তী শাসন কর্তৃত্ব পাকা-পোক্ত করতে কোমর বেঁধে লেগে যায় যেন তার খেলাফতের ক্ষেত্রে কোন অসুবিধা দেখা না দেয়। কিন্তু সে তার এই অভিসন্ধি চরিতার্থ করার পথে ইমামকে এক মস্ত বড় বাধা হিসেবে মনে করে। কারণ সে ধারণা করেছিল যদি তার মৃত্যুর পর ইমাম হাসান জীবিত থাকেন তাহলে সম্ভবত জনগণ যেহেতু মুয়াবিয়ার পরিবারের ব্যাপারে অসন্তুষ্ট তাই তারা ইমামের দিকে ঝুঁকে যেতে পারে। তাই সে কয়েক বার ইমামকে হত্যার চেষ্টা করে। অবশেষে চক্রান্ত করে পবিত্র ইমামকে বিষ প্রয়োগে শহীদ করে। তিনি পঞ্চদশ হিজরির সফর মাসের আটাশ তারিখে শাহাদাতের সুধা পান করে চিরনিদ্রায় শায়িত হন। তাঁকে জান্নাতুল বাকীর কবরস্থানে দাফন করা হয়। আল্লাহর অফুরন্ত দরুদ তাঁর উপর বর্ষিত হোক।লা'নাতুল্লাহি আলা কাওমে জালেমিননিবেদক মোঃ জাহিদ হুসাইন

মোহাম্মদ (সা.)'এর দেখানো পথ ও সৌভাগ্যের সিঁড়ি (পর্ব-১০)আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম মোহাম্মদ (সা.)'র আরো কিছু অমূল্য বাণী ও সংক্ষিপ্ত উপদেশ: মহানবী (সা.) বলেছেন : উপদেশ গ্রহণের জন্য মৃত্যুই যথেষ্ট আর অমুখাপেক্ষিতার জন্য খোদাভীতি বা পরহেজগারিতাই যথেষ্ট। আর কর্মব্যস্ততার জন্য ইবাদতই যথেষ্ট। আর কিয়ামতই একমাত্র ভবিষ্যৎ আর আল্লাহ্ই একমাত্র প্রতিদান দাতা। তিনি আরো বলেছেন, দু’টি কাজের চেয়ে উত্তম কোনো পুণ্যের কাজ নেই : আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস এবং আল্লাহর বান্দাদের উপকার করা। আর দু’টি কাজের চেয়ে জঘন্য কোনো কাজ নেই : আল্লাহর সঙ্গে শির্ক করা আর আল্লাহর বান্দাদের ক্ষতি করা। এক ব্যক্তি মোহাম্মদ (সা.)-কে বলল : আমাকে কিছু উপদেশ দিন যার মাধ্যমে আল্লাহ্ আমার মঙ্গল করবেন। তখন হুজুর (সা.) বললেন : বেশি বেশি মৃত্যুকে স্মরণ করো, তা তোমাকে দুনিয়া (প্রেম) থেকে মুক্ত করবে। (আল্লাহর প্রতি) কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করো, কারণ, তা নেয়ামতকে বাড়িয়ে দেয়। বেশি বেশি দোয়া করো, কেননা তুমি জান না কখন তোমার দোয়া গ্রহণ করা হবে। সীমালঙ্ঘন করো না। কারণ, আল্লাহ্ এরূপ নির্ধারণ করেছেন যে, যার সীমা লঙ্ঘিত হয় আল্লাহ্ অবশ্যই তার সহায় হন। (মহান আল্লাহ) ইরশাদ করেন,হে লোকেরা! তোমাদের সীমা লঙ্ঘনের ক্ষতি তোমাদের ওপরই বর্তাবে। (ইউনুস:২৩)📚📚📚📚📚📚📚 আর যেন প্রতারণা করো না। কারণ, আল্লাহ্ এরূপ নির্ধারণ করেছেন যে, ‘মন্দ প্রতারণা কেবল তার কর্তাকেই পরিবেষ্টন করে থাকে।’ (ফাতির:৪৩) 📚📚মহানবী (সা.) আরো বলেছেন : শিগগিরই তোমরা শাসন ক্ষমতার প্রতি লালায়িত হবে। তখন তোমাদের পরিণাম হবে আফসোস আর অনুতাপ। তিনি আরো বলেন : সেই জাতি কখনো সফল হবে না যারা তাদের সামাজিক নেতৃত্বভার নারীর হাতে ন্যস্ত করে।হুজুর (সা.)-এর কাছে আরজ করা হলো : কোন্ সঙ্গীরা উত্তম? তিনি বললেন : যখন তুমি তাকে স্মরণ করবে, সে তখন তোমাকে সাহায্য করবে; আর যখন ভুলে যাবে সে তখন তোমাকে স্মরণ করিয়ে দেবে। আরো বলা হলো : নিকৃষ্টতম লোক কারা? বললেন : জ্ঞানী লোকেরা যখন নষ্ট হয়ে যায়।মহানবী আরো বলেন, আমার প্রতিপালক আমাকে নয়টি বিষয়ের উপদেশ দিয়েছেন : প্রকাশ্য ও গোপনে নিষ্ঠা অবলম্বন করা, সন্তুষ্টি আর ক্রোধের অবস্থায় ন্যায়পরায়ণ থাকা, অভাব ও প্রাচুর্যের সময় মধ্যপন্থা অবলম্বন করা, আর যে আমার প্রতি অত্যাচার করে তাকে যেন ক্ষমা করি, আর আমার প্রতি যে কৃপণতা করে তাকে প্রদান করা, আর যে আমার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করে তার সাথে যেন সম্পর্ক গড়ি, আর আমার নীরবতা যেন হয় চিন্তা-গবেষণা, আর আমার কথা যেন হয় যিকির আর আমার তাকানো যেন হয় শিক্ষা গ্রহণ। মোহাম্মদ (সা.) বলেন : জ্ঞানকে লিপিবদ্ধ করার মাধ্যমে বেঁধে ফেল।তিনি আরো বলেন : যখন কোনো জাতির দুর্বৃত্তরা তাদের নেতা হয়, তাদের নিকৃষ্টরা হয় কর্ণধার আর দুষ্কৃতকারীদেরকে সম্মান করা হয়, তা হলে যেন তারা বিপদের অপেক্ষায় থাকে। মহানবী (সা.) বলেন, অন্যদিকে যখন তোমাদের নেতারা হয় তোমাদের উত্তম লোকেরা, আর তোমাদের সামর্থ্যবানরা হয় তোমাদের দানশীল লোকেরা, আর তোমাদের কাজকর্ম হয় তোমাদের সবার পরামর্শ অনুযায়ী তা হলে তোমাদের জন্য মাটির উপরিভাগই মাটির ভেতরের চেয়ে উত্তম হবে। আর যখন তোমাদের নেতারা হয় তোমাদের নিকৃষ্টরা, আর তোমাদের সামর্থ্যবানরা হয় তোমাদের কৃপণরা, আর তোমাদের কাজকর্ম ন্যস্ত হয় তোমাদের নারীদের ওপর তখন তোমাদের জন্য মাটির ওপরের চেয়ে নিচে থাকাই শ্রেয়।তিনি আরো বলেন : দ্রুত বেগে হাঁটা মুমিনের মূল্য কমিয়ে দেয়।মহানবী (সা.) বলেন : যার (মাল) চুরি হয় সে সবসময় নিরপরাধ লোকদেরকে দোষারোপ করতে থাকে। ফলে তার অপরাধ চোরের চেয়েও বড় হয়ে যায়।তিনি আরো বলেন : আল্লাহ্ তাকে ভালোবাসেন যে, তাঁর অধিকার আদায় করার ক্ষেত্রে উদারতা প্রদর্শন করে। মহানবী (সা.) বলেন : যে ব্যক্তির সকাল ও সন্ধ্যা অতিবাহিত হয় এ অবস্থায় যে, তার তিনটি জিনিস থাকে, তবে তার ওপর দুনিয়ার নেয়ামত পরিপূর্ণ হয়ে যায়। যার সকাল ও সন্ধ্যা অতিবাহিত হয় সুস্থ অবস্থায়, তার মনে প্রশান্তি থাকে আর তার কাছে একদিনের জীবিকা থাকে। আর যদি চতুর্থ বস্তুটিও যদি তার থাকে তা হলে তার দুনিয়া ও আখিরাতের সকল নেয়ামত পূর্ণ হয়। আর সেটা হলো ঈমান। তিনি আরো বলেন : দয়া করো সেই সম্মানিতের ওপর যে লাঞ্ছিত হয়েছে, আর সেই ধনীর ওপর যে নিঃস্ব হয়েছে আর ঐ জ্ঞানীর ওপর যে মূর্খদের কবলে পড়েছে।আল্লাহর নবী মুহাম্মদ (সাঃ) আরো বলেন : দুটি ব্যাপারে অসংখ্য মানুষ ধোঁকা খেয়ে থাকে, সুস্থতা আর অবসর। (অর্থাৎ এগুলোর সদ্ব্যবহার করে না।)তিনি আরো বলেন : অন্তরগুলো ঐসব লোকের বন্ধুত্বে বাধা পড়ে যারা তাদের প্রতি সদাচার করেছে আর ঐসব লোকের শত্রু হয় যারা তাদের প্রতি অনিষ্ট করেছে। হুজুর (সা.) বলেন : নবীদেরকে মানুষের সাথে তাদের বিবেক-বুদ্ধি অনুপাতে কথা বলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।তিনি আরো বলেন : সেই ব্যক্তি অভিশপ্ত যে নিজের রুজির ভার অন্যের ওপর ন্যস্ত করেছে।তিনি বলেন : ইবাদতের সাতটি অঙ্গ। তন্মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হলো হালাল রুজি অর্জন করা। মহানবী (সা.) আরো বলেন : নিশ্চয় আল্লাহ্ জোরজবরদস্তি করে আনুগত্য গ্রহণ করেন না আবার কারো অবাধ্যতার মাধ্যমে তিনি পরাস্তও হন না। বান্দাদের পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করা থেকে তিনি হাত গুটিয়ে নেন নি। অথচ তিনি যেসব জিনিসের ওপরে তাদেরকে ক্ষমতাশীল করেছেন সেসবের ওপর পূর্ণ ক্ষমতার অধিকারী। আর তিনিই হলেন সব রাজত্বের মালিক যা তাদেরকে দান করেছেন। সত্যিই যদি সব বান্দা খোদার আনুগত্যে অবিরত লিপ্ত থাকে, তা হলেও কোনো অন্তরায় ও প্রতিবন্ধক নেই। আবার যদি তারা আল্লাহর অবাধ্যতার কাজ করে তবে তিনি চাইলে তাদের এবং তারা যা করে তার মাঝে প্রতিবন্ধক হতে পারেন।মহানবীর পুত্র ইবরাহীম যখন মৃত্যুবরণ করছিল (তখন তিনি বলেন) : যা অতীত হয়েছে তা যদি (আল্লাহর কাছে) প্রেরিত সঞ্চিত বস্তু না হতো আর শেষও প্রথমের সাথেই সংযুক্ত (সকলকেই মৃত্যুর পরিণতি বরণ করতে) না হতো, তা হলে আমরা তোমার ওপর তীব্রভাবে শোকাহত হতাম হে ইবরাহীম। এরপর তাঁর চক্ষু অশ্রুসিক্ত হলো এবং তিনি বললেন, চক্ষু অশ্রু ঝরায়, আর অন্তর শোকার্ত হয়। আর আমরা শুধু সেটাই বলি যা আল্লাহর পছন্দনীয়। আর সত্যই হে ইবরাহীম! আমরা তোমার জন্য শোকাহতনিবেদক মোঃ জাহিদ হুসাইন

শেষ নবীকে কি বিষ প্রয়োগ হত্যা করা হয়েছিল ?? - পর্ব ১আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (স) বারবার বলে গেছেন -ইসলামের প্রকাশ্য দুশমনি করবে প্রধানত ইহুদিরা। তারা জানত যে, তিনি শেষ নবী। এই প্রসঙ্গে আল্লাহ্‌ বলেন “ইহুদিরা মোহাম্মেদ কে (সত্য নবী হিসাবে) এমনভাবে চিনে, যেভাবে তাদের সন্তানকে চেনে ” (সুরা আন-আম ২০)আল্লাহ্‌ আরও বলেন” আপনি (রাসুল) সব মানুষের চাইতে মুসলমানদের অধিক শত্রু হিসাবেপাবেন ইহুদী ও মুশরেকদেরকে । (সুরা মায়িদা ৮২) আল্লাহ্‌ই সবচেয়ে বেশী জ্ঞানী এবং একমাত্র তিনিই ভবিষ্যতের জ্ঞান রাখেন এই ব্যাপারে কারো দ্বিমত থাকার সম্ভাবনা নেই।অনেকেই বলতে পারে যে এইভাবে মানুষে মানুষে কোন্দল সৃষ্টির মানে কি ?? মানবতা বলে কিছুই কি নেই ?? তারা জেনে রাখুন,নিঃসন্দেহে আমরা আল্লাহ্‌র চেয়ে বেশীজ্ঞান রাখি না । যেখানে আল্লাহ্‌ নিজেই ঘোষণা করছেন যে ইহুদিরাই ইসলামের সবচেয়ে বড় শত্রু সেক্ষেত্রে আমার আপনার আপত্তি থাকার কথা না । আর এই জাতির ষড়যন্ত্রের কথা যদি জানতে চান তবে আমি তাদের ব্যাপারে ধারাবাহিক সিরিজ তৈরি করছি, একে একে পোস্ট হতে থাকবে ইনশাআল্লাহ। আশা করি পড়বেন আর প্রতিবার আকাশ থেকে পরবেন এই জাতির পৃথিবী নিয়ন্ত্রনের গুপ্ত রহস্য শুনলে।যেটা নিয়ে কথা হচ্ছিল, মুসা(আ) এর তাওরাতে শেষ নবীর ভবিষ্যৎবাণী আছে। ঈসা(আ) এর ইঞ্জিলে আছে। বলা হয় আল্লাহ্‌ এক লক্ষ চব্বিশ হাজার মতান্তরেদুই লক্ষ চব্বিশ হাজার নবী-রাসুল প্রেরন করেছেন দুনিয়াতে শুধু মানব জাতিকে এইসংবাদ পোঁছানোর জন্য যে – কে তাদের রব !! কার উপাসনা করতে হবে !! কার কাছে সাহায্য চাইতে হবে !! যুগে যুগে মানুষ তাদের রব কে ভুলে গেছে, ভুলে গেছে তাদের সাহায্য কারীকে। যখনই মানুষ ভুলে যায় তাদের রবের কথা তখন মনে করিয়ে দেয়ার জন্য আল্লাহ্‌ যুগে যুগে প্রতিটি জাতির কাছে শিক্ষক(নবী-রাসুল) পাঠিয়েছেন যার শুরু হয়েছিল আদাম(আ) এবং শেষ হয় মোহাম্মদ(সঃ) এর মাধ্যমে, তার পর আর কোন নবী আসবে না। প্রশ্ন হতে পারে –এখন যদি মানুষ তাদের রবকে ভুলে যায় তাহলে কি হবে ?? প্রশ্ন হতে পারে-আল্লাহ্‌ তো আর কোন সতর্ককারী পাঠাবেন না কিয়ামত পর্যন্ত, যদি তারা পথভ্রষ্ট হয় কে তাদের সত্য পথে আনবে ?? তার উত্তর এই পোস্ট এ লিখলে অনেক বিস্তারিত হয়ে যাবে তাই লিখলাম না, যদি জানার আগ্রহ থাকে বলবেন আমি দিয়ে দিব ইনশাআল্লাহ।অনেকের হয়ত মনে মনে একটা প্রশ্ন আসতে পারে, যদি ইহুদিরা জেনেই থাকে যে মোহাম্মেদ শেষ নবী তাহলে কেন তারামেনে নিতে পারছিল না ?? এর মূল কারন হল- তারা জাতিগত অহংকারেরকারনে মেনে নিতে চাচ্ছিল না । তাদের ধারনাছিল শেষ নবী আসবেন তাদের মত সম্ভ্রান্ত বনী-ইসরাইল বংশে (ইহুদি), কিন্তু তা না করে আল্লাহ্‌ শেষ নবীকে পাঠালেন পোত্তলিক আরব বংশে যারা কিনা মূর্তিপুজা করে, এইটাই ছিল ইহুদিদের শেষ নবীকে না মানার মুল কারন। তাই তারা উঠে পড়ে লাগে শেষ নবীকে হত্যা করতে। তারা অনেকভাবে চেষ্টা করেছিল। কালো জাদুতে তারা বেশ পারদর্শী ছিল , কিন্তু তাদের এই “ঐতিহ্যবাহী” কালো জাদু দিয়ে হত্যার চেষ্টাকরেও সফল হতে পারেনি।নিচের যে ছবি দেখতে পাচ্ছেন এটা আফ্রিকার কোন জঙ্গলিদেরনয়, জায়গাটি আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়াই নাম রেড ফরেস্ট (redforest) ছবিতে যাদের দেখছেন তারা কোন মূর্খঅশিক্ষিত জংলী নয় , তারা সবাই সেই সব ব্যক্তিত্ব যারা নিয়ন্ত্রণ করছে পৃথিবীরস্বর্গ আমেরিকা তথা গোটা বিশ্ব। আমেরিকারপ্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বুশ তাদের একজন। red forest এর জায়গাটিকে বহিমিয়ান গ্রুভ(Bohemian Grove) বলে.বিস্তারিত জানতে উইকি দেখতে পারেন কিন্তু একবার খুব কাছাকাছি চলে গিয়েছিল। সেটাই আজকের টপিক।বিষয়টা খুব সেনসিটিভ। তাই, কেউ যদি বিশ্বাস করতে না চায়, কোন সমস্যা নেই, কারণ এটার উপর আমাদের ঈমান নির্ভর করবে না। কেবল সত্য জানানোর জন্য বলা ।তবে, এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই নবী (স) সেই কষ্ট সহ্য করেই মারা গেছেন। তিনি মৃত্যুশয্যায় অনেক কষ্ট সহ্য করেছেন এরকারনে। আসুন সেই ঘটনাটা আগে দেখিঃ৬২৮ সালের জুন মাস। (হিজরি সালের সাথে আমরা কম পরিচিত বলে আমি খ্রিস্টীয় সাল ব্যবহার করলাম) মুহাম্মাদ (স) খায়বার জয় করেন। সেখানকার এক ইহুদী নারী জায়নাব বিনতে আল হারিস নবী এবং তার সাহাবীদের দাওয়াত করে। কিন্তু তার মনে ছিল নবী (স) কে হত্যা করার মতলব। সে বিশেষ উপায়ে খোজ নিয়ে জানতে পারল, নবী (স) এর প্রিয় খাবার মেষশাবকের কাঁধের গোশত। তাই সে মেষশাবক মেরে রান্না করল। কিন্তু, তার সাথে মিশিয়ে দিল খুবই শক্তিশালী প্রাণঘাতী বিষ। দাওয়াতের দিন, সে নবী (স) এবং সাহাবাদের সামনে পরিবেশন করল। মুহাম্মাদ (স) এক টুকরো গোশত মুখে দিলেন। অন্যদিকে, বিসর ইবনে আল বারা নামের এক সাহাবীও মুখে দিলেন। মুহাম্মাদ (স) সাথে সাথে বললেন, “খেও না!! এটা বিষাক্ত।” কিন্তু ততক্ষণে তিনি খেয়ে ফেলছেন, পরে বিসর(র) মারা যান ।রাসুল (স) জায়নাব কে আড়ালে ডেকে নিয়ে কৈফিয়ত চাইলেন। কিন্তু সে কেবল বলল, “আমি আপনাকে খুন করতে চেয়েছিলাম।” নবী (স) ব্যক্তিগতভাবে তাঁকে মাফ করে দেন। কিন্তু ঐ সাহাবির পরিবার কিসাস দাবি করলে জায়নাবকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় খুনের অভিযোগে। (সাহিহ আল বুখারি, হাদিস ৩৭৮৬, ৪৩৯৪)এই ছিল নবী (স) কে হত্যা চেষ্টার সবচেয়ে সফল ঘটনা। তিনি আল্লাহ্‌র নবী হওয়ায় আল্লাহ্‌ তাঁকে সেই বিষ এর প্রভাব থেকে রক্ষা করেছেন । ৪ বছর পর তার নবুওয়াতের কর্মের সমাপ্তি ঘোষিত হয়, “আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।” (মায়িদা, ৫:৩)এরপর রাসুল (স) অসুস্থ হয়ে পড়েন, খুবই অসুস্থ। তিনি মৃত্যুশয্যায় শায়িত হন। খেয়াল করে দেখুনঃতিনি কিসের ব্যথায় ভুগছিলেন ??? আল-বুখারির একটা হাদিস দিলাম আপনাদের জন্য-“হযরত আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স) তার মৃত্যুশয্যায় প্রায়ই বলতেন, ‘হে আয়িশা!! খায়বার এ যে খাবার আমি খেয়েছিলাম সেই (ইহুদীর বিষের) বেদনা আমি এখনো অনুভব করছি। আমার মনে হচ্ছে, আমার রক্তনালী যেন ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে সেই বিষের কারণে...’{সাহিহ বুখারি, ৫ম খণ্ড, বই ৫৯, হাদিস ৭১৩} এই কষ্ট নিয়েই আমাদের প্রিয় নবী (স) ইন্তেকাল করেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। সেটা ছিল ৬৩২ সাল।রাসুলের যে কয়জন ঘনিষ্ঠসাহাবা ছিলেন আব্দুল্লাহ ইবনে মাসাউদ (রা) তাদের মধ্যে অন্যতম আপনারা যারা তার বর্ণিত হাদিস পড়েছেন তারা জানেন। তিনি বলেছিলেন,“আমি দরকার হলে ৯ বার কসম খেয়ে বলতে পারব, রাসুল (স) কে হত্যা করা হয়েছে, কারণ আল্লাহ্‌ তায়ালা তাঁকে নবী করেছেন, আর করেছেন শহীদ।”মুহাম্মাদ (স) নবী ছিলেন দেখে তাঁকে কেউ হত্যা করতে পারবে না, এমন কোন কথা হতে পারে না। এক যুদ্ধের সময়ই রাসুলের মৃত্যুর গুজব রটে গেলে সাহাবিরা মানসিক ভাবেদুর্বল হয়ে পরে, তার প্রেক্ষিতে আল্লাহ্‌ পবিত্র কুরআনে কী বলেছেন এ নিয়ে দেখুনঃ“আর মুহাম্মদ তো একজন রাসুল ব্যতীত কিছু নন! তাঁর আগেও বহু রাসূল অতিবাহিত হয়ে গেছেন। তাহলে তিনি যদি মৃত্যুবরণ করেন অথবা তাঁকে ‘হত্যা’ করা হয়, তবে কি তোমরা পশ্চাদপসরণ করবে ?”(আলে ইমরান, ৩:১৪৪)আল্লাহ্‌ এখানে ২টি ক্ষেত্রের কথাই বলেছেন!! তিনি স্বাভাবিক মারাও যেতে পারেন, তাঁকে হত্যাও করা হতে পারে। তবে, কেউ নিশ্চিতভাবে বলতে পারবে না, যে তিনি কেবল বিষের কারণে মারা গেছেন, অথবা, কেবল বার্ধক্য এর কারণে মারা গেছেন। বরং, এটা বলা যায়, তিনি বার্ধক্যের কারণে মারা গিয়েছেন, কিন্তু তিনি মৃত্যুশয্যায় বিষের যন্ত্রণা ভোগ করেছেন। কারণ তিনি নবী, কিন্তু মানুষ বলে বিষের যন্ত্রণা হওয়াটাই স্বাভাবিক।। একমাত্র আল্লাহ্‌ই সব জানেন। তাঁর আগেও কি অনেক নাবীকে হত্যা করা হইনি ?? প্রমান দেখুন- মুহাম্মাদ (স) এর ঠিক আগের নবী ঈসা (আ) কে হত্যা চেষ্টা করেছে ইহুদীরা, যদিও অলৌকিকভাবে আল্লাহ্‌ তাঁকে বাঁচিয়ে তুলে নেন। তাঁর অপমৃত্যু হয়নি।তাঁর আগের জন, ইয়াহিয়া (আ) এর শিরশ্ছেদ করে মাথা আলাদা প্লেটে করে পরিবেশন করা হয়েছিল। তাঁর আগের ইয়াহিয়া (আ) পিতা জাকারিয়া (আ) কে ইহুদীরা বাইতুল মুকাদ্দাস এর কাছেই করাত দিয়ে দু টুকরা করে হত্যা করে।এর আগের অনেক নবীকেই হত্যা করা হয়। ইসরায়েল এর বাদশাহ আহাব এর স্ত্রী ইসাবেল এর আদেশে অসংখ্য নবীকে হত্যা করা হয়।ইসরায়েল এর নবী আরিয়াহ (আ) কে শিরশ্ছেদ করা হয়।এরকম উদাহরন দিয়ে হয়ত শেষ করা যাবে না। ইহুদীরা সর্বদাই চেষ্টা করে এসেছে মুহাম্মাদ(স) কে দুনিয়া থেকে সরাতে, তাঁর বংশধরদের হত্যা করতে। কারণ, মুহাম্মাদ (স) এর Direct Bloodline হবেন মুহাম্মাদ আল মাহদি যাকে আমরা ইমাম মাহদি বলে চিনি, যিনি ইহুদিদের ত্রাণকর্তা দাজ্জাল এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে মুসলিমদের নেতৃত্ব দেবেন। এইকথা রাসুল বলে গেছেন,তারাও জানে এটা সত্যি।নিবেদন মোঃ শামসীর হায়দার

ফাতেমার আ. ‏মৃত্যু ও নানাবিধ গোপণ রহস্যপ্রশ্ন: ‏উৎসুক হৃদয়ে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এমন হতে পারে যে, ‏কী কারণে হযরত ফাতেমা সালামুল্লাহি আলাইহা নবী স. ‏এর ওফাতের মাত্র তিন মাসের মধ্যে মারা যান? ‏তবে কি তিনি কোন রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন, ‏নাকি তাঁর সাভাবিক মৃত্যু হয়েছিল। যদি সাভাবিক মৃত্যু না হয়ে থাকে, ‏তবে কেন আমরা সুন্নি আলেম ওলামাদের মুখ থেকে তার কারণ সম্পর্কে কিছু শুনতে পাই না?উত্তর: ‏এ প্রশ্নের উত্তর দেয়ার আগে একটি ভূমিকা দেয়া প্রয়োজন মনে করছি। আর ভূমিকাটি হল আমার জীবনের বাস্তক একটি ঘটনা। ঘটনাটি এরূপ:ভূমিকানবীর স. ‏আহলে বাইতকে ভালবাসার কারণে অনেক বাধার সম্মুখিন হতে হয়েছে। একদিন আমার বড় ভাই আমাকে জিজ্ঞেস করে বলল যে, ‏তুই যে মাযহাবের অনুসরণ করিস, ‏আলেম ওলামারা কেন তার বিরোধিতা করে? ‏আমি বললাম ‎: ‏ভাই জান! ‏যে আলেম ওলামারা আমার মাযহাবের বিরেধিতা করে, ‏তাদেরকে প্রশ্ন করো যে, ‏হযরত ফাতেমা জাহরা কত বছর বয়সে মারা গিয়েছেন? ‏তাঁর মৃত্যুর কোন কারণ ছিল কি? ‏নাকি তিনি সাভাবিক মৃত্যু বরণ করেছিলেন। যদি তুমি আমার এসব প্রশ্নের উত্তর এনে দিতে পার, ‏তবে আমি তোমাকে বলব যে, ‏এসব আলেমরা কেন আমাদের বিরোধিতা করে।আমার সেই ভাই ১৮ মাস হল মারা গেছেন, ‏কিন্তু তিনি আমাকে সেই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যেতে পারেন নি; ‏হয়তো আলেমদের কাছ থেকে গ্রহণযোগ্য কোন উত্তর পান নি। তবে এ কথা সত্য যে, ‏তারপর থেকে আমার ভাই কখনো আমার সাথে বিরোধিতা করেন নি। আমি নিজেও যখন উপরোক্ত প্রশ্নাদির উত্তর জানতে পেরেছি, ‏তখন থেকেই আমি আহলে বাইতকে ভালবাসতে উদ্বুদ্ধ হয়েছি এবং আমি মনে করি: ‏যেকোন বিবেকবান মুসলমানই এসব প্রশ্নের উত্তর জানলে নবীর আহলে বাইতকে আগের চেয়ে আরো বেশি ভাল বাসবে।যেহেতু প্রশ্নের উত্তর দেয়ার আগে ভূমিকা টেনে পাঠকবর্গকে বিরক্ত করেছি, ‏তাই এ পর্যায়ে উপরোক্ত প্রশ্নাদির জবাব সংক্ষেপে উল্লেখ করব তার পর সম্ভব হলে প্রতিটি প্রশ্নে জবাব বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করব ইনশা আল্লাহ।সংক্ষিপ্ত উত্তরঠিক যেভাবে প্রশ্নে উল্লেখ করেছি যে, ‏নবী স. ‏এর ওফাতের তিনমাসের মধ্যেই ফাতেমা জাহরা মুত্যু বরণ করেছিলেন, ‏তার এ মৃত্যু স্বাভাবিক মৃত্যু ছিল না। রাসূল স. ‏এর ওফাতের পর হযরত আলীকে জোর করে বাইয়াত করানোর জন্য তাকে যখন বাড়ি থেকে নিয়ে যেতে আসা হয়, ‏তখন হযরত ফাতেমা সা. ‏বাধা দেন এবং আগন্তক লোকদের সামনে তিনি যান। যাতে তারা আলীকে নিতে না পারে। কিন্তু এই বাধাই অবশেষে ফাতেমার মৃত্যুর কারণ হয়ে যায়। এ জন্য বলা যায় যে, ‏নবী স. ‏এর মৃত্যুর পর তাঁর রেখে যাওয়া বেলায়াতের রক্ষক হিসেবে প্রথম শহীদ হল হযরত ফাতেমা সালামুল্লাহি আলাইহা।অথচ সুন্নি আলেম ওলামারা এ বিষয়ে কোন কথা বলেন না। হয়তো কেউ কেউ তার কারণ জানেন না, ‏অথবা জেনে বুঝেও তা বলেন না। কারণ তখন হয়তো সুন্নি মতাদর্শ প্রশ্নের সম্মুখিন হবে!ফাতেমার আ. ‏মৃত্যুর মূল রহস্যপ্রশ্ন ৩ ‎: ‏ফাতেমা আ. ‏এর মৃত্যুর মূল রহস্য কী?উত্তর ‎: ‏এ পশ্নের উত্তর দেয়ার পূর্বে তার দৈহিক আঘাতের কারনাদি সম্পর্কে অবগত হওয়া প্রয়োজন।ফাতেমা আ. ‏এর দৈহিক আঘাত প্রাপ্তির মূল কারণ সমূহফাতেমা আ. ‏এর দৈহিক আঘাত প্রাপ্তির মূল কারণ সমূহ নিম্নরূপ:১- ‏নবীর মৃত্যুতে গভীর শোক, ‏সবেদনা ও কান্না।২- ‏নবীর ওসি অর্থাৎ হযরত আলীর মজদুরিয়াত ও নিঃসঙ্গতার কারণে আত্মিক শোক ও প্রতিরক্ষা ছিল দৈহিক আঘাতের দ্বিতীয় কারণ।ইবনে শাহর অশুব ‎(মৃ: ‏৫৯৯ হি.) ‏বর্ণনা করেছেন ‎:“উম্মে সালমা ফাতেমার ঘরে প্রবেশ করে বলল ‎: ‏ওহে নবী কন্যা! ‏কিভাবে রাত কাটালেন।ফাতেমা বললেন ‎: ‏শোক ও দুঃখ-ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে রাত কাটিয়েছি। শোক এই কারণে যে, ‏প্রিয় নবীকে হারিয়েছি ও দুঃখ এই জন্য যে, ‏তাঁর স্থলাভিষিক্তের উপর আরোপিত জুলুম। আল্লাহর কসম করে বলছি: ‏এতে নবীর উত্তরসূরীর প্রতি অবমাননা হয়েছে ‎(মানাকিবু অলে আবি তালিব, ‏২/২০৫।)।[1]৩- ‏ফাতেমা সা. ‏এর পবিত্র পদ ও মর্যাদার অবমাননা ছিল তৃতীয় কারণ ‎(নাহজুল বালাগার শারহ, ‏ইবনে আবিল হাদিদ, ‏১৬/২১৪) ‏।আল্লামা তাবারসি ‎(মৃ: ‏ষষ্ট হিজরি) ‏বর্ণনা করেছিন:[ফাদাকের খোৎবা সমাপ্তির পর ফাতেমা বলেছিলেন ‎:لَیتَنِی مِتُّ قَبلَ هینَـتِی وَ دُونَ ذِلَّتِی...হায়, ‏যদি এমন জুলুমের স্বীকার হবার পূর্বে মারা যেতাম! (এহতিজাজ, ‏খন্ড ১, ‏পৃ ১০৭)।অতএব, ‏বলা যায় যে, ‏ফাতেমার শোকের কারণ শুধু পিতার মৃত্যুর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। বরং তার সাথে আরে দু’টি ব্যাথা যোগ হয়েছিল।৪- ‏ফাতেমার বাড়িতে হামলার সময় তাঁর দেহে মারাত্মক আঘাত হানা হয়েছিল। অন্য ভাষায় বলতে গেলে বলতে হয় ‎: ‏তার পিতার বিরহ বিচ্ছেদের সাথে সাথে তাকে এমন আঘাত করা হয়েছিল, ‏যার ফলে তিনি ধরাশায়ি হয়ে গিয়েছিল। এ বিষয়টি ভুলে গেলে চলবে না।কাজি নোমানি মাগরিবি বর্ণনা করেছেন ‎:[عَن أبِی عَبدِاللهِ جَعفَرِبنِ مُحَمَّدٍ الصادِقِ‌علیه‌السّلام عَن ‌أبِیهِ‌علیه‌السّلام: قالَ:]إنَّ رَسُولَ اللهِ‌صلّی‌الله‌علیه‌وآله أسَرَّ إلی فاطِمَة‌َعلیهاالسّلام أنَّها أولی(أوَّلُ) مَن یَلحَقُ بِهِ مِن أهلِ بَـیتِهِ فَلَمّا قُبِضَ وَ نالَها مِن القَومِ ما نالَها لَزِمَت الفِراشَ وَ نَحَلَ جِسمُها وَ ذابَ لَحمُها وَ صارَت کَالخَیالِ. *ইমাম জাফর সাদিক আ. ‏তাঁর পিতার কাছ থেকে বর্ণনা করেছেন ‎: ‏রাসূল স. ‏ফাতেমাকে চুপিসারে বললেন ‎: ‏তাঁর ওফাতের পর তার আহলে বাইতের মধ্য থেকে সর্ব প্রথম যে তাঁর সাথে গিয়ে মিলিত হবে, ‏সে হল ফাতেমা আ.। অতঃপর যখন নবী স. ‏মৃত্যু বরণ করলেন এবং তার ঘরে হামলা করে তাকে আহত করা হল, ‏তখন তিনি শয্যাশায়ী হয়ে গেলেন, ‏ক্রমশ দূর্বল হয়ে পড়লেন ও এমন ভাবে শুকিয়ে গেলেন যেন মনে হয়েছিল শুকনো কাঠি হয়ে গেছেন ‎(দায়ায়িমুল ইসলাম, ‏১/২৩২)।শেখ তুসি বর্ণনা করেন ‎:وَ المَشهُورُ الَّذِی لاخِلافَ فِیهِ بَـینَ الشِیعَةِ أنَّ عُمَرَ ضَرَبَ عَلی بَطنِها حَتّی أسـقَطَت...শিয়াদের মধ্যে এ বিষয়ে প্রসিদ্ধি রয়েছে ও কোনরূপ মতপার্থক্য নেই যে, ‏ফাতেমার পেটে ওমর এমন আঘাত হেনেছিল যে কারণে গর্ভের সন্তান পড়ে যায় ‎(তালখিছুশ শাফি, ‏৩/১৫৬)।মুহাম্মদ ইবনে জারির ইবনে রুস্তম তাবারি ‎(মৃ: ‏চতূর্থ হিজরি) ‏বর্ণনা করেন:فَلَمّا قُبِضَ رَسُولُ اللهِ‌صلّی‌الله‌علیه‌وآله وَ جَری ما جَری فِی یَومِ دُخُولِ القَومِ عَلَیها دارَها وَ إخراجِ ابنِ عَمِّها اَمِیرِالمُؤمِنِینَ ‌علیه‌السّلام وَ ما لَحِقَها مِن الرَجُلِ أسـقَطَت بِهِ وَلَداً تَماماً وَ کانَ ذلِکَ أصلَ مَرَضِها وَ وَفاتِها. ‏নবী স. ‏যখন মারা গেলেন, ‏তারপর যেদিন ফাতেমার ঘরে হামলার ঘটনা ঘটল, ‏আমিরুল মুমিনিনকে জোরপূর্বক বের করে আনা হল এবং ঐ পুরুষের দ্বারা যে বালা ফাতেমার উপর আসল, ‏যে কারণে তাঁর গর্ভের পূর্ণ ছেলে-সন্তানের গর্ভপাত ঘটল। আর এটাই ছিল তাঁর অসুস্থতা ও মৃত্যুর মূল কারণ ‎(দালায়েল উল ইমামাহ/২৭)।আল্লামা হিল্লি ‎(মৃ: ‏৭২৬ হি.) ‏বর্ণনা করেন,وَ ضُرِبَت فاطِمَةُ‌علیهاالسّلام فَألقَت جَنِیناً اسمُهُ مُحسِنٌ... ‏ফাতেমাকে আ. ‏এমন আঘাত হানা হল, ‏যে কারণে তার গর্ভের সন্তান ‎‘মোহসেন’ ‏পড়ে গেল ‎... (শারহুত তাজরিদ/৩৭৬)।অতএব, ‏উপরোক্ত কারণাদি পর্যালোচনা করার পর প্রমাণিত হয় যে, ‏ফাতেমা জাহরা সা. ‏আমিরুল মুমিনিন হযরত আলীর পৃষ্ঠপোষকতা করার কারণে আত্মিক ও দৈহিক ভাবে মারাত্মক আঘাত প্রাপ্ত হন। আর তাই ছিল তাঁর মৃত্যু ও অসুস্থতার মূল কারণ। যে আঘাত খলিফার দরবারি লোকদের পক্ষ থেকে ফাতেমার ঘরে হানা হয়েছিল।মুহাম্মদ ইবনে জারির ইবনে রুস্তম তাবারি ‎(মৃ: ‏চতূর্থ হিজরি) ‏বর্ণনা করেন:[عَن أبِی‌بَصِیرٍ عَن أبِی عَبدِاللهِ‌علیه‌السّلام: قالَ:]وَ کانَ سَبَبُ وَفاتِها أنَّ قُنفُذاً مَولی عُمَرَ لَکَزَها بِنَعلِ السَیفِ بِأمرِهِ، فَأسـقَطَت مُحسِناً وَ مَرِضَت مِن ذلِکَ مَرَضاً شَدِیداً...ইমাম আবু আব্দিল্লাহের কাছ থেকে আবু বাছির বর্ণনা করেছেন ‎: ‏ওমরের নির্দেশে তার ভৃত্য ‎‘কুনফুয’ ‏তরবারির গিলাফ দিয়ে ফাতেমাকে আঘাত হেনেছিল, ‏যে কারণে মুহসিনের গর্ভপাত ঘটে এবং সে কারণেই ফাতেমা আ. ‏মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন… (দালায়েল উল ইমামাহ/৪৫)।কাফয়ামি ‎(মৃ: ‏৯০৫ হি.) ‏বর্ণনা করেছেন ‎:إنَّ سَبَبَ وَفاتِهاعلیهاالسّلام هُوَ أنَّها ضُرِبَت وَ أسـقَطَت.নিশ্চয় ফাতেমার মৃত্যুর কারণ হল: ‏তিনি আঘাত প্রাপ্ত হলেন ও তাতে গর্ভপাত হল ‎(মেসবাহ/৫২২)।প্রিয় পাঠকবর্গ! ‏উপরোক্ত বিষয়াদি থেকে সত্যই কি বলা যায় না যে, ‏ফাতেমা জাহরার মৃত্যু ছিল শাহাদাতের মৃত্যু?তাবারসি বর্ণনা করেন ‎:وَ حالَت فاطِمَةُ‌علیهاالسّلام بَـینَ زَوجِها وَ بَـینَهُم عِندَ بابِ البَیتِ فَضَرَبَها قُنفُذٌ بِالسَوطِ عَلی عَضُدِها، فَبَـقِیَ أثَرُهُ فِی عَضُدِها مِن ذلِکَ مِثلَ الدُملُوجِ مِن ضَربِ قُنفُذٍ إیّاها فَأرسَلَ أبوبَکرٍ إلی قُنفُذٍ إضرِبها، فَألجَـأها إلی عِضادَةِ بَـیتـِها، فَدَفَعَها فَکَسَرَ ضِلعاً مِن جَنبِها وَ ألقَت جَنِیناً مِن بَطنِها، فَلَم ‌تَزَل صاحِبَةَ فِراشٍ حَتّی ماتَت مِن ذلِکَ شَهِیدَه ...হযরত ফাতেমা তাঁর স্বামি ও আক্রমনকারী ব্যক্তিদের মাঝে দাড়িয়ে প্রতিরোধ করেছিলেন, ‏তখন ‎‘কুনফুয’ ‏ফাতেমার উরুতে এমন আঘাত হানল যে, ‏তার দাগ বেন্ডেজের আকার ধারণ করল। আবুবকর কুনফুযকে ফাতেমাকে মারার জন্য পাঠিয়েছিল! ‏তাই কুনফুয ফাতেমাকে ঘর থেকে আছার দিয়ে ফেলে দিল, ‏তখন তাঁর উরুর হাড় ভেঙ্গে গেল ও পেটের সন্তানের গর্ভপাত ঘটল। অতঃপর দীর্ঘ শহ্যাশায়ী হল এবং সে অবস্থাতেই শহীদি মৃত্যু বরণ করলেন ‎…(এহতেজাজ, ‏১/৮৩)।নিবেদক মোঃ জাহিদ হুসাইন