পোস্টগুলি

ফেব্রুয়ারী, ২০২০ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

ঈদে বিলাদতে হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম ২০শে জুমাদাল উখরা শরীফমহান আল্লাহ পাক উনার মহান কুদরত হচ্ছেন সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, উম্মু আবীহা, সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার সীমাহীন খুছুছিয়ত মুবারক হতে কতিপয় খুছুছিয়ত মুবারক-আল্লামা আবূ মুহম্মদ হুসাইন, ঢাকা।পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে,১. সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, ত্বাহিরা, ত্বয়িইবাহ, উম্মু আবীহা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতম জিসিম মুবারকের গোশত মুবারক উনার এক বিশেষ টুকরা মুবারক। সুবহানাল্লাহ!২. উনার পবিত্রতম মুহব্বত-ই হচ্ছে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতম মুহব্বত। সুবহানাল্লাহ!৩. উনি পবিত্রতম আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মূল-মধ্যমণি। সুবহানাল্লাহ!৪. উনার মাধ্যমে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতম নসব বা বংশ মুবারক ক্বিয়ামত পর্যন্ত জারি থাকবেন। সুবহানাল্লাহ!৫. তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতম ছূরত মুবারক, সীরত মুবারক উনার হাক্বীক্বী মিছদাক। সুবহানাল্লাহ!৬. তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতম হাক্বীক্বী আদর্শ মুবারক। সুবহানাল্লাহ!৭. উনার সাদী মুবারক স্বয়ং খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি সুসম্পন্ন করে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!৮. নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মতের নাজাতের জন্য যে দোয়া মুবারক করতেন ঠিক অনুরূপভাবে সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনিও মুসলিম উম্মাহর নাজাতের জন্য সারারাত কেঁদে কেঁদে মুনাজাত মুবারক-এ মশগুল থাকতেন। সুবহানাল্লাহ!৯. উনার পবিত্রতম মুহব্বতে উনার মুবারক তাশরীফে স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মুহব্বতে দাঁড়িয়ে যেতেন এবং পবিত্রতম হাত মুবারক ধরে চুমু মুবারক দিয়ে স্বীয় আসন মুবারকে বসিয়ে দিতেন। সুবহানাল্লাহ!১০. উনিই হচ্ছেন পবিত্র জান্নাতী মহিলা উনাদের সাইয়্যিদাহ।১১. উনাকে ও উনার পবিত্রতম আওলাদ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সবাইকে পবিত্রতম ঘুমের সময় হযরত জিবরীল আমীন আলাইহিস সালাম তিনিসহ অন্যান্য ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা স্বীয় নূরের পাখা দ্বারা বাতাস করতেন। সুবহানাল্লাহ!১২. উনাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্রতম জান্নাত থেকে উনার জন্য পবিত্রতম পোশাক মুবারক হাদিয়া করেছেন। সুবহানাল্লাহ!১৩. তিনি ‘যাহরা’ অর্থৎ ‘কুসুম কলি’১৪. তিনি ‘ত্বাহিরা’ তথা পবিত্রতম থেকে পবিত্রতম। উনার পবিত্রতম ৬ জন আওলাদ আলাইহিমুস সালাম উনারা সকলেই বাদ আছর যমীনে তাশরীফ মুবারক নিয়েছিলেন। এ ক্ষেত্রে যথারীতি পবিত্র আছর নামায আদায়ের পর পবিত্র মাগরিব নামায আদায় করেছেন। সাধারণত সন্তান আগমনের পরে যে স্বভাবিক মাজুরতা দেখা দেয় তা থেকে তিনি সম্পূর্ণরূপে পবিত্র থেকে পবিত্রতম। সুবহানাল্লাহ! তিনি انما يريد الله ليذهب عنكم الرجس اهل البيت و يطهركم تطهيرا ১৫. এই পবিত্রতম আয়াত শরীফ উনার হাক্বীক্বী মিছদাক। সুবহানাল্লাহ!১৬. তিনি পবিত্র পর্দা পালনে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের হাক্বীক্বী নমুনা। পবিত্র পর্দা পালনে যে দৃষ্টান্ত মুবারক রেখেছেন তা পৃথিবীর ইতিহাসে বে-নযীর ঘটনা। সুবহানাল্লাহ!১৭. খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ক্বিয়ামতের দিন হাশরবাসীদের প্রতি এ ফরমান মুবারক জারি করবেন যে, হে হাশরবাসী তোমরা সকলেই তোমাদের দৃষ্টিকে অবনত করো, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, খাতুনে জান্নাহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি পুলছিরাত পার হয়ে যাবেন। সুবহানাল্লাহ! সেই মুহূর্ত মুবারকে উনাকে ৭০ হাজার জান্নাতী হুর উনারা ইস্তিকবাল জানাবেন। উনাদের বেষ্টনী মুবারকের মধ্য দিয়ে অতিদ্রুত গতিতে পুলছিরাত পার হয়ে পবিত্র জান্নাত মুবারকে প্রবেশ করবেন। সুবহানাল্লাহ!১৮. মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের পবিত্রতম মুহব্বতে উম্মতের নাজাতের জন্য উনি স্বয়ং উনার পবিত্রতম জান-মালসহ উনার পবিত্রতম কালিজা উনার টুকরা দুই আওলাদ আলাইহিমাস সালাম উনাদেরকে কুরবান করে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!১৯. তিনি বাতাসের চেয়েও অধিক দ্রুতগতিতে নিজের মাল-সম্পদ গরিব দুঃখীদের মুহব্বতে অকাতরে বিলিয়ে দিতেন। এ ব্যাপারে তিনি ছিলেন বে-নযীর, একক ও অদ্বিতীয় অযুদ পাক। সুবহানাল্লাহ!

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিমআল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদসকল মুমিন মুমিনাত কে জানাই অনেক অনেক মোবারক বাদপঞ্চম ইমাম মুহাম্মদ বিন আলী বাকের (আ.) শুভো জন্মদিনরাসূলে কারিমের পবিত্র আহলে বাইতের মহান ইমাম হযরত বাকের (আ) এর পবিত্র জন্মবার্ষিকীতে আপনাদের সবার প্রতি রইলো প্রাণঢালা অভিনন্দন ও মোবারকবাদ। শুভ এই দিনে নবীজী গুরুত্বপূর্ণ একটি কথা বলেছিলেন। সম্ভবত আর কখনোই নবীজীর বক্তব্যের গুরুত্বটা এরচেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠে নি। তিনি বলেছিলেন-'হে জনগণ! আমি দুটি মূল্যবান জিনিস তোমাদের জন্যে রেখে গেলামঃ একটি আল্লাহর কিতাব কোরআন এবং অপরটি আমার আহলে বাইত।যতোদিন তোমরা তাদের দৃঢ়ভাবে ধারণ করবে ততোদিন তোমরা গোমরাহ হবে না।'এই দুটি মৌলিক বিষয় আজকের দিনে মুসলিম বিশ্বের ঐক্যের মাপকাঠি হিসেবে ইসলামী উম্মাতের তরী-কে মুক্তির উপকূলে পৌঁছাতে পারে। যাই হোক আহলে বাইতের এই মহান ইমামের জন্মদিনে তাঁরি জীবনাদর্শ থেকে খানিকটা আলোকপাত করে নিজেদের ধন্য করার চেষ্টা করবো।ইমাম বাকের (আ) ৫৭ হিজরীতে মদীনা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন ইমাম সাজ্জাদ (আ)। তাঁর জন্মের বহু বছর আগে নবীজী জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ আনসারী নামে তাঁর এক সঙ্গীকে বলেছিলেন-'হে জাবের! তুমি আমার পরে জীবিত থাকবে এবং আমার এক উত্তর প্রজন্ম দেখতে ঠিক আমার মতো হবে,তার নামও হবে আমার নামে,তুমি তাকে দেখতে পাবে। যেখানেই তুমি তাকে দেখতে পাও আমার সালাম পৌঁছে দিও।' বহু বছর পর জাবের শেষ পর্যন্ত ইমাম বাকের (আ) এর খেদমতে হাজির হয়ে রাসূলে খোদার সালাম তাঁকে পৌঁছে দেন।হিজরী প্রথম শতাব্দির শেষের বছরগুলোতে একদিকে উমাইয়া শাসকদের অত্যাচার, জুলুম নিপীড়ন এবং অন্যদিকে তাদের বিরোধীদের সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ব্যাপক মাত্রায় বেড়ে যায়। এ কারণে জনগণ দ্বীনি জ্ঞান চর্চায় মনোনিবেশ করতে পারছিলো না ঠিকমতো।ইতিহাসের পাতায় এমন বহু প্রমাণপঞ্জী রয়েছে যে তখন বহু মানুষ গুরুত্বপূর্ণ অনেক ধর্মীয় বিধি-বিধান সম্পর্কেও জানতো না। যেমন কীভাবে নামায পড়তে হয় জানতো না। হজ্বের ব্যাপারেও তারা ছিল উদাসীন। খেলাফত ব্যবস্থা এ সময় দিন দিন দুর্বল থেকে দুর্বলতরো এবং অক্ষম থেকে অক্ষমতরো হয়ে পড়ছিলো। নবীজীর আহলে বাইতের সম্মানিত ইমামগণ হলেন মুসলমানদের নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে সবচেয়ে উপযুক্ত ও যোগ্যতম। তাঁদের উপস্থিতি সত্ত্বেও সে সময় মানুষ খেলাফত এবং শাসনকার্য সংক্রান্ত বিষয়ে মতপার্থক্যে ভুগছিল। কেউ কেউ খেলাফতকে উমাইয়াদের অধিকার বলে মনে করতো,আবার অনেকেই আহলে বাইতের অবস্থান ও ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে বক্র চিন্তা তথা অনেকটা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে ভাবতো।এ রকম একটি সময়ে উজ্জ্বল সূর্যের মতো আবির্ভূত হন ইমাম বাকের (আ)। তাঁর আগমনে অজ্ঞতার আঁধারের সকল পর্দা সরে যায়। ধর্মের প্রকৃত শিক্ষার আলোকে তিনি মুসলমানদেরকে ইসলামের সঠিক পথ দেখান এবং সর্বপ্রকার বক্র চিন্তা,কু-সংস্কার আর অজ্ঞতার অভিশাপ থেকে মুসলমানদেরকে মুক্তি দেন। নবীজীর আহলে বাইতের মর্যাদা এবং ইমামতের অবস্থান সম্পর্কে তিনি জনগণকে সচেতন করে তোলেন। রাসূলে খোদার পর আহলে বাইতের নেতৃত্বকেই ইসলামী উম্মাহর মুক্তির সবচেয়ে উত্তম পথ বলে তিনি মনে করতেন। কেননা তিনি বিশ্বাস করতেন,বিশ্বাস ও চিন্তাগত বিভিন্ন বিষয়ে সমাধান দেওয়ার ক্ষেত্রে একমাত্র আহলে বাইতই হলো সবচেয়ে উপযুক্ত। তিনি বলেছেন-রাসূলে খোদার সন্তানেরা হলেন আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যে ঐশী জ্ঞানের দরোজা এবং জান্নাতের দিকে আহ্বানকারী।জ্ঞান ও বিজ্ঞানের উন্নতি এবং চিন্তাশীল ব্যক্তিত্বদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্যে ইমাম বাকের (আ) শিক্ষা ও সংস্কৃতির বহু কেন্দ্র স্থাপন করেন। তাঁর পরে তাঁরি উত্তরসূরি স্বীয় সন্তান ইমাম সাদেক (আ) বিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। হিজরী প্রথম শতাব্দির শেষের দিকে জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ইমাম বাকের (আ) এর চেষ্টা-প্রচেষ্টা সত্যিকার অর্থেই জনগণের মাঝে ইসলামী চিন্তা ও মূল্যবোধের প্রাণ সঞ্চারের ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। জাবের ইবনে ইয়াযিদ যোড়ফি ইমাম বাকের (আ) এর একজন ছাত্র ছিলেন। তিনি ইমামের কাছ থেকে অন্তত সত্তুর হাজার হাদিস বর্ণনা করেছেন। জাবের বলেছেন-আঠারো বছর ইমাম বাকের (আ) এর খেদমতে উপস্থিত ছিলাম। যখন তাঁর কাছ থেকে চলে আসতে চেয়েছি,তাঁকে বলেছি, হে রাসূলের সন্তান! আমাকে জ্ঞানে পরিতৃপ্ত করুন! ইমাম বাকের (আ) বললেন-'হে জাবের! আঠারো বছর পরও কি তুমি জ্ঞানে পরিতৃপ্ত হও নি? বললাম-আপনি হলেন অসীম এক ঝর্ণাধারা, এই ঝর্ণাধারার তো শেষ নেই।'ইমাম বাকের (আ) এর অস্তিত্ব ঝর্ণার জলের মতো ইসলামী চিন্তাবিদদের এমনকি ধর্মের অনুসারীদেরও আধ্যাত্মিক তৃষ্ণা মেটাতো। জ্ঞানের ভাণ্ডার হবার কারণে বহু অজানা বিষয়ে জানার জন্যে ইমামের কাছে ভিড় করতো জ্ঞান অন্বেষীগণ। যারা তাঁর কাছে আসতো তারা ইমামের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলো। মুসলিম ইতিহাসবিদ ইবনে হাজার হিসামি ইমাম বাকের (আ) এর জ্ঞান,চরিত্র , অন্তরের পবিত্রতা এবং আল্লাহর ইবাদাত-বন্দেগির ক্ষেত্রে তাঁর একাগ্রতার উল্লেখ করে বলেন- তিনি যতোটা উচ্চ মর্যাদার ব্যক্তিত্ব ছিলেন তাঁর সেই ব্যক্তিত্বকে উপলব্ধি করা এবং তাঁর প্রশংসা করার যোগ্যতা অনেকেরই নেই।অত্যাচারী এবং তাদের অনুসারীদের প্রসঙ্গে ইমামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণী ছিল এ রকম-জুলুম-নির্যাতনকারী নেতৃবৃন্দ এবং তাদের অনুসারীরা আল্লাহর দ্বীনের বাইরে অবস্থান করে।ইমাম বাকের (আ) এর জীবনের শেষ এগারোটি বছরে উমাইয়া শাসক হিশাম বিন আব্দুল মালেকের শাসন চলছিল। হিশাম ছিল বখিল,রূঢ় এবং নির্যাতনকারী শাসক। তার শাসনকালে মানুষের জীবন একেবারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিল। সেজন্যে জনগণ আগের তুলনায় আরো বেশি ইমামের শরণাপন্ন হতে লাগলো। হিশাম এমনিতেই ইমামের বিপুল জনপ্রিয়তার কারণে সবসময় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে থাকতো। তাই চেষ্টা করতো তাঁর আধ্যাত্মিক প্রভাব বিস্তারের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে। একবার হজ্জ্বের সময় ইমাম বাকের (আ) এবং তাঁর সন্তান ইমাম সাদেক (আ) এর প্রতি জনগণের ব্যাপক আকর্ষণ ও শ্রদ্ধাবোধ দেখে হিশাম উদ্বিগ্ন ও রুষ্ট হয়ে পড়ে। তাই হজ্জ্ব থেকে ফেরার পর তাঁদের দু'জনকেই মদীনা থেকে সিরিয়ায় তলব করা হয়। কিন্তু এই ঘটনায় জনগণের কাছে তাঁদের জনপ্রিয়তা তো কমেই নি বরং মুসলমানদের মাঝে বিশেষ করে সিরিয়াবাসীদের কাছে নবীজীর সন্তান হিসেবে তাঁদের পরিচিতি আরো বৃদ্ধি পায়। উপায়ন্তর না দেখে হিশাম তাঁদেরকে পুনরায় মদীনায় ফেরৎ পাঠায়।ইমাম বাকের (আ) ছিলেন একজন দানবীর ও পরোপকারী। তিনি নিজের জমিজমাতে নিজেই চাষবাস করতেন এবং উৎপাদিত পণ্য সামগ্রি দিয়ে গরীবদের সাহায্য করতেন। আসওয়াদ ইবনে কাসির নামে এক ব্যক্তি বলেছেন-আমি আমার অভাব-অনটন এবং আমার ভাইয়ের নির্দয়তার কথা ইমামকে জানাই। ইমাম তখন বলেন-সক্ষমতা এবং ধন-সম্পদ থাকাকালে যে তোমার সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক বজায় রাখে অথচ অভাব-অনটনের সময় তোমার কাছ থেকে দূরে সরে যায়,এই ভ্রাতৃত্ব একেবারেই হীন ও মন্দ। এটা বলে তিনি আমাকে সাতশ দিরহাম দেওয়ার আদেশ দিয়ে বললেন-এটা তুমি খরচ করো এবং যখনি প্রয়োজন পড়বে আমাকে তোমার অবস্থা সম্পর্কে জানাবে।আজকের আলোচনা শেষ করার আগে ইমামের আরো দুটি গুরুত্বপূর্ণ বাণীর উদ্ধৃতি দিচ্ছি।ইমাম বাকের (আ) বলেছেন, সর্বোৎকৃষ্ট পুঁজি হলো আল্লাহর ওপর বিশ্বাস।তিনি আরো বলেছেন,সর্বোৎকৃষ্ট পূর্ণতা হলো দ্বীন সম্পর্কে জানা ও সচেতন হওয়া,দুঃসময়ে ধৈর্য ধারণ করা এবং জীবন যাপনে শৃঙ্খলা বিধান করা।#আল হাসানাইন

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিমআল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদপর্ব ১ফাদাক সম্পর্কে –ফাদাক মদিনার নিকটবর্তী হিজাজের একটা সবুজ ,উর্বর গ্রাম এবং এটা শামরুখ নামক দুর্গ দ্বারা সংরক্ষিত স্থান ছিল (হামাবি ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ২৩৮ ;বুখারী ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ১০১৫ ;সামহুদী ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ১২৮০) । ফাদাক ইহুদিদের দখলে ছিল। ৭ম হিজরিতে এক শান্তিচুক্তির ফলে ফাদাকের মালিকানা রাসূলের (সা.) কাছে চলে যায়। এ চুক্তির মূল কারণ হলো খায়বার দুর্গের পতনের পর ইহুদিরা মুসলিম শক্তি অনুধাবন করতে পেরেছিল এবং তাদের মনোবল ভেঙ্গে গিয়েছিল। তাছাড়া কিছু সংখ্যক ইহুদি আশ্রয় প্রার্থনা করায় রাসূল (সা.) তাদের ছেড়ে দিয়েছেন। তারা একটা শান্তি প্রস্তাব পেশ করেছিল যে ,ফাদাক নিয়ে তাদের অবশিষ্ট এলাকায় কোন যুদ্ধ না করার জন্য। ফলে রাসূল (সা.) তাদের প্রস্তাব গ্রহণ করলেন এবং তাদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করলেন। এ ফাদাক তার ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত হলো এবং এতে অন্য কারো কোন স্বার্থ – স্বামীত্ব ছিল না। এতে কারো কোন স্বার্থ থাকতেও পারে না। কারণ জিহাদে অর্জিত গণিমতের মালে মুসিলিমদের অংশ ছিল। যেহেতু এ সম্পত্তি বিনা জিহাদে পাওয়া গেছে তাই এটাকে‘ ফায় ’ বলা হতো এবং রাসূল (সা.) একাই এর মালিক ছিলেন। এতে অন্য কারো কোন অংশ ছিল না। তাই আল্লাহ বলেনঃআল্লাহ ইহুদিদের কাছ থেকে তাঁর রাসূলকে যে ফায় দিয়েছেন তার জন্য তোমারা অশ্ব কিংবা উটে আরোহণ করে যুদ্ধ করনি। আল্লাহু যার ওপর ইচ্ছা তাঁর রাসূলের কর্তৃত্ব দান করেন।(কুরআন – ৫৯:৬)কোন প্রকার যুদ্ধ ছাড়া ফাদাক অর্জিত হয়েছে। এ বিষয়ে কারো কোন দ্বীমত নেই। সুতরাং এটা রাসূলের ব্যক্তিগত সম্পদ ছিল এবং এতে কারো কোন অধিকার ছিল না। ঐতিহাসিকগণ লিখেছনঃযেহেতু মুসলিমগণ তাদের ঘোড়া ও উট ব্যবহার করেনি। সেহেতু ফাদাক রাসূলের ব্যক্তিগত সম্পদ ছিল (তাবারী ,১ম খণ্ড ,পৃঃ ১৫৮২ – ১৫৮৩ আছীর ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ২২৪ – ২২৫ ;হিশাম ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ৩৬৮ খালদুন ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ৪০ ;বাকরী ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ৫৮ শাফী ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ৫০ ;বালাজুরী ,১ম খণ্ড ,পৃঃ ৩৩) ৷উমর ইবনে খাত্তাবও মনে করতেন যে ফাদাক রাসূলের (সা.) অংশীদারবিহীন সম্পত্তি। তিনি ঘোষণা করেছিলেন যে ,আল্লাহ তাঁর রাসূলকে যা দিয়েছিলেন বনি নজিরের সম্পত্তিও তার অন্তর্ভুক্ত। এতে কারো ঘোড়া বা উট ব্যবহৃত হয়নি। তাই এটা আল্লাহর রাসূলের ব্যক্তিগত সম্পদ (বুখারী ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ৪৬ ;৭ম খণ্ড ,পৃঃ ৮২: ৯ম খণ্ড ,পৃঃ ১২১ – ১২২ ;নিশাবুরী ,৫ম খণ্ড ,পৃঃ ১৫১ ;আশাছ ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ১৩৯ – ১৪১ ;নাসাঈ ,৭ম খণ্ড ,পৃঃ ১৩২ ;হাম্বল ,১ম খণ্ড ,পৃঃ ২৫ ,৪৮ ,৬০ ,২০৮ ;শাফী ,৬ষ্ঠ খণ্ড ,পৃঃ ২৯৬ – ২৯৯) ।বিশ্বস্ত সূত্রে এটা সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত যে ,রাসূল (সা.) তাঁর জীবদ্দশাতেই উক্ত ফাদাক তাঁর প্রাণপ্রিয় কন্যা ফাতিমাকে দান করেছিলেন। আল বাজ্জার , আবু ইয়ালা , ইবনে আবি হাতিম , ইবনে মারদুওয়াই ও অন্যান্য অনেকে আবু সাইদ খুদরী ও আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাসের বরাত দিয়ে বর্ণনা করেছেন যে ,যখন কুরআনের আয়াত -“ নিকটবর্তী আত্মীয় পরিজনকে তাদের প্রাপ্য দিয়ে দাও ” (১৭:২৬) – নাজিল হয়েছিল তখন রাসূল (সা.) ফাতিমাকে ডেকে এনে তাঁকে ফাদাক দান করে দিয়েছিলেন। (শাফী ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ১৭৭ ;শাফী ,৭ম খণ্ড ,পৃঃ ৪৬ ;হিন্দি ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ৪৯৩ ;শাফী ,১৫শ খণ্ড ,পৃঃ ৬২) ।আবু বকর যখন ক্ষমতা দখল করেছিল তখন ফাতিমাকে বঞ্চিত ও দখলচ্যুত করে ফাদাক রাষ্ট্রায়ত্ব করেছিলেন। ঐতিহাসিকগণ লিখেছেনঃনিশ্চয়ই ,আবু বকর ফাতিমার কাছ থেকে ফাদাক কেড়ে নিয়েছেন ( হাদীদ ,১৬শ খণ্ড ,পৃঃ ২১৯ সামহুদী ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ১০০০ ;হায়তামী ,পৃঃ ৩২) ।আবু বকরের এহেন কাজে ফাতিমা সোচ্চার হয়ে উঠলেন এবং তিনি প্রতিবাদ করে বললেন ,“ রাসূল (সা.) তাঁর জীবদ্দশায় আমাকে ফাদাক দান করে গিয়েছিলেন। অথচ আপনি তার দখল নিয়ে নিয়েছেন। ” এতে আবু বকর সাক্ষী উপস্থাপন করার জন্য বললেন। ফলে ,আমিরুল মোমেনিন ও উন্মে আয়মন ফাতিমার পক্ষে সাক্ষ্য দিলেন। এখানে উল্লেখ্য যে ,উম্মে আয়মন রাসূলের (সা.) একজন মুক্তিপ্রাপ্ত দাসী ছিলেন। তিনি উসামা ইবনে জায়েদ ইবনে আল – হারিছাহর মাতা ছিলেন। রাসূল করিম (সা.) প্রায়ই বলতেন ,“ আমার মাতার মৃত্যুর পরে উন্মে আয়মন আমার মাতা। ” রাসূল (সা.) তাকে বেহেশতবাসীদের একজন বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। (নিশাবুরী ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ৬৩ ;তাবারী ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ৩৪৬০ ;বার ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ১৭৯৩ ;আছীর ,৫ম খণ্ড ,পৃঃ ৫৬৭ ;সাদ ,৮ম খণ্ড ,পৃঃ ১৯২ ;হাজর ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ৪৩২) ।প্রচারে বিধি তুমার ধর্ম কি

নবী নন্দিনী ফাতেমা বিনতে মোহাম্মদ (আ.)আল্লা হুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদমহান আল্লাহর অশেষ রহমত যে তিনি এমন কয়েকজন মানুষকে সৃষ্টি করেছেন যাঁরা মানুষের জন্য সব ধরনের পূর্ণতা ও উন্নতির আদর্শ। নবী নন্দিনী খাতুনে জান্নাত হযরত ফাতেমা জাহরা (আ.) সেইসব অসাধারণ মানুষেরই একজন। যার জন্ম হয়েছিল হিজরি পূর্ব অষ্টম বছরের ২০শে জমাদি উস সানি তারিখে।হযরত ফাতেমা জাহরা (আ.) ছিলেন নারী ও পুরুষ তথা গোটা মানব জাতির জন্য অসাধারণ ত্যাগ, বিশ্বস্ততা, অন্যায়ের ব্যাপারে আপোসহীনতা, সততা, দানশীলতা, ধৈর্য, চারিত্রিক পবিত্রতা, আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্টিসহ অনেক মহান স্বর্গীয় গুণের আদর্শ। আর এ জন্যেই তাঁর উপাধি ছিল আসসিদ্দিকা বা সত্যনিষ্ঠ, আল-মুবারাকাহ বা বরকতপ্রাপ্ত, আত-ত্বাহিরা বা পবিত্র, আল-মারজিয়া বা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট, আয যাকিয়া বা সতী, আয জাহরা বা দ্যূতিময় প্রভৃতি।স্নেহময়ী জননীর মত বিশ্বনবী (সাঃ)এর সেবা-যত্ন করা এবং বিপদের সময় তাঁর সহায়তায় এগিয়ে আসার জন্য মহীয়সী নারী ফাতিমা (আ.)এর অন্য একটি নাম উম্মে আবিহা অর্থাৎ তাঁর পিতার জননী। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁকে সকল যুগের নারীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ বলে উল্লেখ করেছেন এবং আল্লাহর দরবারে তাঁর বিশেষ মর্যাদার কারণে তাঁকে দেখলে দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করতেন। মহানবী (সাঃ) বলেছেন, ফাতেমা আমার দেহের অংশ, যা কিছু তাকে সন্তুষ্ট করে তা আমাকে সন্তুষ্ট করে এবং যা কিছু ফাতেমাকে কষ্ট দেয়, তা আমাকে কষ্ট দেয়, আর যা আমাকে কষ্ট দেয়, তা আল্লাহকেও কষ্ট দেয়। হযরত ফাতিমা (সাঃ) বেহেশতে সর্বপ্রথম প্রবেশ করবেন বলে বিশ্বনবী (সাঃ) উল্লেখ করেছেন।অনেক ইসলামী পণ্ডিতের বর্ণনা অনুযায়ী পবিত্র কোরআনের সূরা কাওসার-এ উল্লেখিত কাওসার বলতে হযরত ফাতেমা (আ.)কেই বোঝানো হয়েছে। মক্কার কাফের ও মুশরিকরা যখন বিশ্বনবী (সাঃ)কে আবতার বা নির্বংশ বলে উপহাস করতো এবং রাসূলের ওফাতের পরই তার ধর্ম শেষ হয়ে যাবে বলে প্রচার করতো তখন এই সূরা নাজিল হয়। এ সূরায় কাফেররাই নির্বংশ হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। হযরত ফাতিমা (আ.)’র মাধ্যমে রাসূলে পাক(সাঃ) এর বংশধারা আজো অব্যাহত রয়েছে। অন্যদিকে নির্মূল হয়ে গেছে আবু লাহাব ও আবু জাহেলদের বংশধর।হযরত ফাতিমা (আ.) ছিলেন বিশ্বনবী (সাঃ) এর আহলে বাইত বা পবিত্র বংশধারায় জন্ম নেয়া মুসলমানদের ১১ জন ইমামের জননী। বিশ্বনবী (সাঃ) ও স্বামী আমীরুল মুমিনিন হযরত আলী (রাঃ)এর পর এই ১১ জনই ইসলামকে সব সংকট ও দুর্যোগের কবল থেকে রক্ষার কাণ্ডারি হিসেবে ভূমিকা রেখেছেন। এরই প্রমাণ দেখা যায় কারবালায় তাঁর পুত্র হযরত ইমাম হোসাইন (রাঃ) ও এর আগে হযরত ইমাম হাসান (রাঃ)এর নজিরবিহীন আত্মত্যাগে। মুসলমানদের নেতা হিসেবে ও বেহেশতী যুবকদের সর্দার হিসেবে এই দুই মহাপুরুষকে গড়ে তোলার প্রশিক্ষণ দিয়ে গেছেন হযরত ফাতেমা (আ.)। বিশ্বনবী (সাঃ) তাঁদেরকে নিজ সন্তান বলে উল্লেখ করতেন।একজন পরিপূর্ণ আদর্শ মানুষ হিসেবে হযরত ফাতিমা (আ.)এটা প্রমাণ করেছেন যে, পরিপূর্ণতার শিখরে ওঠার জন্য নারী হওয়া বা পুরুষ হওয়া জরুরী কোনো শর্ত নয়। তিনি জন্ম নিয়েছিলেন এমন এক যুগে যখন আরবরা নারীকে মনে করতো কেবল ভোগের সামগ্রী এবং জাত্যাভিমানী আরবদের ঘরে কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করলে তারা অমর্যাদার ভয়ে কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দিত বা গোপনে মেরে ফেলতো । কিন্তু মহান আল্লাহ তার সর্বশেষ রাসূল ও সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানবের ঘরে একজন কন্যা সন্তান পাঠিয়ে নারী জাতির জন্য অশেষ সম্মান ও মুক্তির ব্যবস্থা করেছেন।হযরত ফাতিমা (আ.) ছিলেন একজন আদর্শ জননী, একজন আদর্শ স্ত্রী বা গৃহিনী, একজন আদর্শ সমাজ সেবিকা। অর্থাৎ মুসলিম নারী যে শালীনতা বজায় রেখে জীবনের সবক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে তাঁর দৃষ্টান্ত দেখিয়ে গেছেন নবী নন্দিনী। আজকের যুগে যেসব মহিলা বা বুদ্ধিজীবী নারীমুক্তির কথা ভাবছেন তাদের জন্য প্রকৃত আদর্শ হযরত ফাতিমা (আ.)।বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)এর ওফাতের পর খুব বেশি দিন বাঁচেন নি হযরত ফাতিমা (আ.)। এ সময় ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা ও বাণীকে জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য তিনি অসম সাহসী ভূমিকা রেখেছিলেন ।হযরত ফাতিমা (আ.)মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ ও মুক্তির জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছিলেন। তাই মুক্তিকামী মুসলমানরা আজও কেবল তাঁর পবিত্র নাম স্মরণ করেই ইসলামের জন্য জীবন বিলিয়ে দিতে দ্বিধাবোধ করেন না।রাসূল (সাঃ) একবার প্রাণপ্রিয় কন্যাকে বলেছিলেন, হে ফাতেমা! আল্লাহ তোমাকে নির্বাচিত করেছেন, তোমাকে পরিপূর্ণ জ্ঞান ও প্রজ্ঞায় সজ্জিত করেছেন এবং তোমাকে বিশ্বের নারীকুলের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন।হযরত ইমাম হাসান মুজতাবা(রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, একবার শুক্রবার রাতে দেখলাম মা ফাতিমা (আ.)এবাদতে মগ্ন। একটানা রূকু ও আর সেজদায় থাকতে থাকতে ভোরের আলো ফুটে উঠলো। আমি শুনতে পেলাম তিনি মুমিন নারী ও পুরুষের জন্য অনেক দোয়া করছেন, কিন্তু নিজের জন্য কোনো দোয়াই করলেন না। আমি প্রশ্ন করলাম, মা, আপনি কেন নিজের জন্য দোয়া করলেন না, যেভাবে অন্যরা দোয়া করে থাকে? তিনি জবাবে বললেন, হে আমার পুত্র! আগে প্রতিবেশীর কথা ভাবতে হবে, এরপর নিজের ঘরের কথা… ।আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগী করা ছাড়াও প্রায়ই রোজা রাখা ও গরিব-দূঃখীকে অসাধারণ মাত্রায় দান-খয়রাত করা ছিল হযরত ফাতিমা (আ.)এর একটি বড় বৈশিষ্ট্য। জনসাধারণ বা কারো উদ্দেশ্যে যে কোনো বক্তব্য রাখার আগে দীর্ঘক্ষণ ধরে মহান আল্লাহর বিভিন্ন নেয়ামতের কথা খুব সুন্দর ও হৃদয়স্পর্শী ভাষায় তুলে ধরে আল্লাহর প্রশংসা করা ছিল তাঁর অন্য একটি বড় বৈশিষ্ট্য। বিশ্বনবী (সাঃ)এর আহলে বাইতের অন্য সদস্যদের মত তিনিও কখনও অন্যায়ের সাথে আপোস করেননি। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করা বা সক্রিয় থাকার মধ্যে তিনি খুঁজে পেতেন আনন্দ। হযরত ফাতিমা (আ.) বলেছেন, আল্লাহর সেবায় মশগুল হয়ে যে সন্তুষ্টি পাই তা আমাকে অন্য সব সন্তুষ্টি বা আনন্দ থেকে বিরত রাখে এবং সব সময় মহান আল্লাহর সুন্দর দৃষ্টি আমার দিকে নিবদ্ধ রাখার প্রার্থনা ছাড়া আমার অন্য কোনো প্রত্যাশা নেই।নবী নন্দিনী হজরত ফাতেমা(আঃ)বলেছেন, পৃথিবীতে তিনটি জিনিস আমার খুবই প্রিয়। আল্লাহর পথে ব্যয়, রাসূলে খোদা (সাঃ) এর চেহারার দিকে তাকানো এবং পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত। পবিত্র কোরআনের আয়াত শ্রবণ মুসলমানদের মুক্তির তীরে পৌঁছে দেয়।ফাতিমা (আ.) মানবজাতির চিরন্তন গৌরব। এ ধরনের মানুষ পৃথিবীতে জন্ম না নিলে আদর্শের দিক থেকে মানবজাতির মধ্যে বিরাজ করতো ব্যাপক অপূর্ণতা এবং আদর্শিক শূন্যতা ও আধ্যাত্মিক অপূর্ণতার অশেষ ঘূর্ণাবর্তে মানবজাতি হতো বিভ্রান্ত, ফলে মানুষ কাঙ্ক্ষিত উন্নতির সোপান থেকে চিরকালের জন্য থাকতো পিছিয়েপ্রচারে ইয়া আলী আঃ

৫৭ হিজরীর এই দিনে (১ রজব) মাতা উম্মে আব্দুল্লাহর গর্ভে ইমাম জয়নুল আবেদিন আঃ এর একটি পুত্র সন্তান জন্মগ্রহন করেন। যিনি পিতার দিক থেকে মাওলা হুসাইনের রক্ত বহন করেছেন, এবং মাতার দিক থেকে মাওলা হাসানের রক্ত বহন করেছেন। তার নাম করন করা হয় মুহাম্মদ আবু জাফর। বাকের উল উলুম (জ্ঞানের বিকাশদানকারী) উনার উপাধী। এই নামেই উনি পরিচিত হন। তিনি যে এ নামে পরিচিত হবেন তা মাওলা মুহাম্মদ সঃ ই জানিয়েছিলেন।মাওলা মুহাম্মদ (সা.) তাঁর মহান সাহাবী জাবির বিন আবদুল্লাহ্ আনসারী কে বলেছিলেন : হে জাবির! তুমি আমার সন্তান ‘মুহাম্মদ বিন আলী বিন হুসাইন বিন আলী বিন আবি তালিব’ যার নাম তৌরাতে ‘বাকের’ বলে সম্বোধন করা হয়েছে তাকে দেখা পর্যন্ত জীবিত থাকবে। যখন তোমার সাথে তাঁর দেখা হবে তাকে আমার সালাম পৌঁছে দিও।নবী (সা.)-এর ওফাতের পর তার ভবিষ্যত বাণী অনুযায়ী জাবির অনেক দিন জীবিত ছিলেন। একদিন ইমাম যয়নুল আবেদীন (আ.)-এর বাড়ীতে এসে শিশু অবস্থায় ইমাম বাকেরকে দেখে বললেন : কাছে এসো... ইমাম বাকের (আ.) তার কাছে এলে তিনি তাঁকে ফিরে যেতে বললেন. ইমাম ফিরে গেলেন। জাবির তাঁর পবিত্র দেহ ও পথ চলাকে লক্ষ্য করে বললেন : কাবার প্রভূর কসম! অবিকল নবী (সা.)-এর মত দেখতে হয়েছে। তারপর তিনি ইমাম সাজ্জাদকে জিজ্ঞাসা করলেন,এই শিশু কে? ইমাম বললেন : আমার সন্তান ‘মুহাম্মদ বাকের’' যে আমার পরে ইমাম। জাবির উঠে দাঁড়ালেন এবং ইমাম বাকের (আ.)-এর পায়ে চুম্বন দিয়ে বললেন : হে নবী (সা.)-এর সন্তান,আপনার জন্য আমার জীবন উৎসর্গিত হোক। আপনার প্রপিতা নবী (সা.)-এর সালাম ও দরুদ গ্রহণ করুন কেননা তিনি আপনাকে সালাম দিয়েছেন।ইমাম বাকের (আ.)-এর দৃষ্টি মোবারক পানিতে ভরে গেল। তিনি বললেন : সালাম ও দরুদ আমার পিতা নবী (সা.)-এর উপর,যতদিন এই আকাশ মণ্ডলী ও জমিন অবশিষ্ট থাকবে। আর আপনার উপরেও সালাম ও দরুদ হে জাবির। যেহেতু আপনি তাঁর সালামকে আমার কাছে পৌঁছিয়েছেন।- (আমালি, শেখ সাদুক, পৃ. ২১১।)ইমাম বাকের (আ.)-এর জ্ঞানও অন্যান্য ইমামগণের ন্যায় আল্লাহ্ প্রদত্ত ছিল। তাঁদের কোন শিক্ষক ছিল না বা অন্য মানুষদের মত কারো নিকট শিক্ষা গ্রহণ করেন নি। জাবির বিন আবদুল্লাহ্ প্রতিনিয়ত তাঁর কাছে এসে শিক্ষা লাভ করতেন আর প্রায়ই তাঁকে বলতেন : হে দীন ও দুনিয়ার জ্ঞানের বিকাশ দানকারী! সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আপনি শৈশব থেকেই আল্লাহর দেয়া জ্ঞানে জ্ঞানী। (ইলালুশ শারায়ে, শেখ সাদুক, পৃ. ২২২ ।)আবদুল্লাহ্ বিন আতা মাক্কী বলেন : কখনও কোন মনীষীকে কারো কাছে এমন ছোট হতে দেখিনি যতটা ইমাম বাকের (আ.)-এর কাছে তাদেরকে হতে দেখেছি। হাকাম বিন উতাইবাহ্ যিনি সকলের কাছে জ্ঞানের দিক দিয়ে অতি সম্মানের পর্যায়ে ছিলেন,তাকেও ইমামের সামনে শিশুর মত বসে থাকতে দেখেছি। ঠিক একজন বিজ্ঞ শিক্ষকের সামনে ছাত্রের বসে থাকার মত। (এরশাদ, শেখ মুফিদ, পৃ. ২৪৬ ।)এমনকি আব্দুল্লাহ ইবনে ওমরও তার গুনগান গাওয়া থেকে বিরত থাকতে পারেনি “আবদুল্লাহ্ ইবনে উমরের কাছে এক লোক একটি বিষয়ে প্রশ্ন করলে সে উত্তর দিতে ব্যর্থ হয়ে ইমামকে দেখিয়ে দিল এবং বলল এই শিশুর কাছে জিজ্ঞেস কর,আর তার দেয়া উত্তরটি আমাকে অবহিত কর। ঐ লোক ইমামের কাছে প্রশ্ন করল এবং তার উপযুক্ত জবাবও পেল। সে আবদুল্লাহ্ ইবনে উমরকে এই জবাব সমন্ধে অবহিত করলে আবদুল্লাহ্ বলেন : তাঁরা এমন বংশের যাদের জ্ঞান আল্লাহ্ কর্তৃক প্রদত্ত।“-(মানাকেব, ইবনে শারহে আশুব, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৩২৯)আজ তার বেলাদত দিবসে সবাইকে মোবারকবাদ জানাচ্ছি। আল্লাহুমা সাল্লেওয়ালা মুহাম্মাদিউ ওয়া আলে মুহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারাজাহুম।

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিমআল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদদুশমানে আহলে বায়াত পার বেশুমার নালত বর্ষিত হোকজান্নাতে বৃদ্বদের নেতা প্রসংগে –সপ্তম আব্বাসীয় খলীফা মামুনের বিশাল রাজকীয় দরবার ।আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের পক্ষ থেকে সকল জ্ঞানীগুনিজনের এক বিশাল সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছিল ।সপ্তম আব্বাসীয় খলীফা মামুন স্বয়ং নিজে সেখানে প্রধান ব্যক্তিত্ব হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ।ঐ সমাবেশে অনেকক্ষন ব্যপী এক মুনাযিরা অনুস্ঠিত হয় , যা ছিল নিম্নরুপ —একজন বিজ্ঞ সুন্নি আলেম বললেন , রেওয়াতে আছে যে , নবী (সাঃ) হযরত আবু বকর ও হযরত ওমরের শানে বলেছেন ,” হযরত আবু বকর ও হযরত ওমর হচ্ছেন বেহেশতে বৃদ্বদের নেতা “।খলীফা মামুন তীব্র প্রতিবাদের সুরে বললেন যে , এই হাদিসটি মোটেই গ্রহনযোগ্য নয় । কেননা বেহেশতে কোন বৃদ্ব ও বৃদ্বা থাকবেই না ।এছাড়া এ ব্যাপারে রেওয়ায়েত রয়েছে যেমন , নবীজী (সাঃ) এর কাছে এক বৃদ্বা মহিলা এসেছিলেন । আর মহানবী (সাঃ) সেই বৃদ্বা মহিলাকে বলেছিলেন যে , বৃদ্বা মহিলা কখনইবেহেশতে প্রবেশ করবে না ।এই কথা শুনে বৃদ্বা মহিলা কাঁদতে শুরু করেন ।মৃদু হেসে দয়াল নবীজী (সাঃ) তাকে বললেন , আল্লাহ বলেছেন , বেহেশতে যারা প্রবেশ করবে, আমরা তাদেরকে নতুন জন্ম দান করাব এবং সকলকে যুবক যুবতীর রুপ দান করব , পুরুষগন তাদের স্ত্রীগনের সাথে ভালবাসার বন্ধনে আবদ্ব হবে এবং তারা মিষ্টভাষী ও সমব য়সের অধিকারী হবে ।সূত্র – ওয়াকীহা – ৩৫-৩৭ ।যেহেতু তোমাদের চিন্তা মতে হযরত আবু বকর ও হযরত ওমর যুবক হয়ে যাবে ও তারা বেহেশতে প্রবেশ করবে , সেহেতু তোমরা কিভাবে এই রেওয়ায়েত উল্লেখ কর , যখন কিনা রাসুল (সাঃ) বলেছেন , ” হাসান এবং হোসেন (আঃ) হচ্ছেন পূর্বের ও পরের বেহেশতবাসী যুবকদের সর্দার এবং তাদের পিতা আলী (আঃ) এর মর্যাদা তাদের থেকেও উচ্চে “।সূত্র – বিহারুল আনোয়ার ,খন্ড-৪৯,পৃ-১৯৩